Friday, December 31, 2010

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ তৃতীয় স্থানে

সাম্প্রতিক মাসগুলোয় তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ প্রতিদ্বন্দ্বী ইন্দোনেশিয়া ও মেক্সিকোকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। ২০১০ সালের আগস্ট পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ পঞ্চম স্থানে ছিল। চীন, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও মেক্সিকোর পেছনে ছিল বাংলাদেশের নাম।

কিন্তু মাসভিত্তিক রপ্তানির হিসাবে সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ মেক্সিকোকে পেছনে ফেলে দেয়। ওই মাসে বাংলাদেশ ৩৫৮ ও মেক্সিকো ৩২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি করে। এরপর অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ অপর প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানিমূল্যকে ছাড়িয়ে যায়। সে সময় বাংলাদেশের ৩৭৪ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানির বিপরীতে ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি ছিল ৩৬৫ মিলিয়ন ডলার।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে শুধু চীন ও ভিয়েতনাম অগ্রবর্তী অবস্থানে রয়েছে।
ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাসের বাণিজ্যিক উইংয়ের পর্যালোচনা মোতাবেক ২০১০ সালের জুলাই-অক্টোবর সময়ে বাংলাদেশ প্রায় ১ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে, যা বিগত ২০০৯ সালের একই সময়ের রপ্তানির তুলনায় ২০ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেশি। উল্লেখ্য, একই সময়ে চীনের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল ২১ দশমিক ১৫, ভিয়েতনামের ১৭ দশমিক ২৬, ইন্দোনেশিয়ার ১৬ দশমিক ১৭, মেক্সিকোর সাড়ে ৩ এবং ভারতের ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। তথ্য বিবরণী।

উত্তর লেখা ছিল প্রশ্নের পাশেই!

প্রশ্ন করা হয় উত্তর পাওয়ার আশায়। কিন্তু প্রশ্নের সঙ্গেই যদি উত্তর জানিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে আর প্রশ্ন করা কেন? কেউ প্রত্যাশা না করলেও সে কাজটিই করেছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

জানা গেছে, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ শুক্রবার সকালে প্রথম বর্ষের (সম্মান) ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১০০ নম্বরের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নপত্রের মোট চারটি সেট পরীক্ষার্থীদের দেওয়া হয়। এর মধ্যে ‘ডি’ সেটের ২৫ থেকে ৪১ নম্বর পর্যন্ত মোট ১৭টি প্রশ্নের সঙ্গে সম্ভাব্য চারটি উত্তর আছে। এর মধ্যে যেটি সঠিক উত্তর, সেটির পাশে একটি পৃথক কলামে সেটি লিখে দেওয়া আছে।
যেমন ৩৯ নম্বর প্রশ্নটি ছিল: O' Henry is one of the famous short story writers in- A. Australia, B. America, C. England, D. Spain. এই প্রশ্নের পাশেই আলাদা কলামে লেখা আছে B.
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক পরীক্ষার্থী জানিয়েছেন, ‘ডি’ সেট পাওয়া পরীক্ষার্থীদের ওই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে কোনো বেগ পেতে হয়নি। কেননা, প্রশ্নগুলোর উত্তর পাশে লিখে দেওয়া আছে। এ জন্য যারা ‘ডি’ সেট পেয়েছেন, তাঁরা নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে উত্তরপত্র জমা দিয়ে দেন। এতে অন্য সেটের পরীক্ষার্থীরা ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, এক ঘণ্টার পরীক্ষার শেষ দিকে বিষয়টি হলের পরিদর্শকদের নজরে আসে। তাত্ক্ষণিকভাবে তাঁরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পরিদর্শকেরা পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে উত্তরপত্রের সঙ্গে প্রশ্নপত্রটিও জমা রেখে দেন।
উপাচার্য এ কে এম সাঈদুল হক চৌধুরী ‘ডি’ সেটের প্রশ্নপত্রে ১৭টি প্রশ্নের সঙ্গে উত্তর ছাপা হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি নিছক ভুল। আমরা তাত্ক্ষণিক সিদ্ধান্ত দিয়ে দিয়েছি। এই ভুলের কারণে কোনো পরীক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হবে না কিংবা কেউ বেশি সুবিধাও পাবে না।’

ফিক্সিং বিতর্কে ক্ষমা চাইলেন ইয়াসির হামিদ

‘পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার বিষয়টি নতুন নয়। প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই গড়াপেটা করে থাকেন ক্রিকেটাররা,’ স্পন্সরশিপ চুক্তির প্রলোভন দেখিয়ে ইয়াসির হামিদের মুখ থেকে গত সেপ্টেম্বরের শুরুতে এমন কয়েকটি বিস্ফোরক কথা বের করেছিলেন লর্ডস টেস্টে স্পট কেলেঙ্কারি ফাঁস করা ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ডের এক সাংবাদিক। প্রায় চার মাস পর আজ শুক্রবার সকালে সেই ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন পাকিস্তানের এই ক্রিকেটার।

পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) ইন্টিগ্রিটি কমিটির সামনে হামিদ বলেন, ‘আমাকে ফাঁদে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু অপরিচিত কারও সঙ্গে ওসব বলা আমার উচিত হয়নি। এ ঘটনায় যেসব ক্রিকেটার দুঃখ পেয়েছেন, তাঁদের সবার কাছেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আমি।’
পুরো ঘটনার ভিডিও থাকার পরও নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ডের প্রতিবেদনকে প্রথমে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন ইয়াসির। কিন্তু পরদিনই লন্ডনে অবস্থিত পাকিস্তান হাইকমিশনে হাজির হয়ে নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন তিনি। সেখানে পাকিস্তানের এই ক্রিকেটার দাবি করেন, আবিদ খান পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি তাঁকে ৫০ হাজার পাউন্ডের স্পন্সরশিপ চুক্তির প্রস্তাব দেন। কথা বলার একপর্যায়ে দলের অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয় বলে ফেলেন তিনি। ইংল্যান্ডে সেই সফরের পর থেকেই পাকিস্তান দলের বাইরে আছেন ইয়াসির।—ক্রিকইনফো।

ফিক্সিং বিতর্কে ক্ষমা চাইলেন ইয়াসির হামিদ

‘পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার বিষয়টি নতুন নয়। প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই গড়াপেটা করে থাকেন ক্রিকেটাররা,’ স্পন্সরশিপ চুক্তির প্রলোভন দেখিয়ে ইয়াসির হামিদের মুখ থেকে গত সেপ্টেম্বরের শুরুতে এমন কয়েকটি বিস্ফোরক কথা বের করেছিলেন লর্ডস টেস্টে স্পট কেলেঙ্কারি ফাঁস করা ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ডের এক সাংবাদিক। প্রায় চার মাস পর আজ শুক্রবার সকালে সেই ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন পাকিস্তানের এই ক্রিকেটার।

পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) ইন্টিগ্রিটি কমিটির সামনে হামিদ বলেন, ‘আমাকে ফাঁদে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু অপরিচিত কারও সঙ্গে ওসব বলা আমার উচিত হয়নি। এ ঘটনায় যেসব ক্রিকেটার দুঃখ পেয়েছেন, তাঁদের সবার কাছেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আমি।’
পুরো ঘটনার ভিডিও থাকার পরও নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ডের প্রতিবেদনকে প্রথমে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন ইয়াসির। কিন্তু পরদিনই লন্ডনে অবস্থিত পাকিস্তান হাইকমিশনে হাজির হয়ে নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন তিনি। সেখানে পাকিস্তানের এই ক্রিকেটার দাবি করেন, আবিদ খান পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি তাঁকে ৫০ হাজার পাউন্ডের স্পন্সরশিপ চুক্তির প্রস্তাব দেন। কথা বলার একপর্যায়ে দলের অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয় বলে ফেলেন তিনি। ইংল্যান্ডে সেই সফরের পর থেকেই পাকিস্তান দলের বাইরে আছেন ইয়াসির।—ক্রিকইনফো।

চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর ভবনে আগুন

ট্টগ্রাম নগরীর বন্দরটিলা এলাকায় অবস্থিত নৌবাহিনীর একটি ভবনে শুক্রবার আগুন লেগে কয়েক লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে। এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ইপিজেড ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র অফিসার এম এ মালেক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে একথা জানিয়েছেন।

তিনি জানান, বন্দর থানাধীন বন্দরটিলা এলাকার ২ নম্বর নেভি গেইটের ভেতরে একটি দোতলা ভবনে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে দুপুর পৌনে ২টার দিকে ওই আগুন লাগে। খবর পেয়ে দমকল বাহিনীর দুটি ইউনিটের তিনটি গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছে ৩টার দিকে তা নিয়ন্ত্রণে আনে।

নৌবাহিনীর দোতলা ভবনটিতে তাদের পুরাতন বিভিন্ন মালামাল রাখা হতো। নৌবাহিনীর কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে দমকল কর্মকর্তা মালেক বলেন, "আগুনো তাদের পুরনো বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স ও অন্যান্য সরঞ্জাম পুড়ে গেছে বলে নৌ কর্মকর্তারা আমাদের জানিয়েছেন। তার বলছেন, আগুনে প্রায় আট লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে।"

র‌্যাবের 'ধরে নেওয়া' ব্যবসায়ী ৯ মাস 'নিখোঁজ'

র‌্যাবের 'ধরে' নেওয়া এক ব্যবসায়ী নয় মাস ধরে 'নিখোঁজ' বলে অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে বিষয়টি তদন্ত করছে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। 'নিখোঁজ' ওই যুবকের নাম ইউসুফ আলী সুজন (৩১)। তিনি রাজধানীর কলাবাগানে বসবাস করতেন। সুজনকে জোস্না বেগম নামে এক তরুণীসহ র‌্যাব ধরে নেয় বলে জানান সুজনের ভাই মাহবুব। এই জোস্না সুজনদের বাড়ির এক ভাড়াটের বান্ধবী।

সুজনের ভাইয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, গত ২৪ মার্চ জোস্নার ফোন পেয়ে ফার্মগেটে একটি রেস্তোরাঁর সামনে যান সুজন। সেখান থেকে তাকে 'ধরে নিয়ে যায়' র‌্যাব-২-এর সদস্যরা। মাহবুব জানান, সুজনকে র‌্যাব 'ধরে নিয়ে যাওয়ার' পর জোস্নাই প্রথম তাকে ঘটনাটি জানান।

তবে এ নিয়ে র‌্যাবের শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেছেন, তারা এ বিষয়ে কিছু জানেন না। সুজনের ভাই মাহবুব গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, 'নিখোঁজ' হওয়ার পর থেকে এখনো সুজনের খোঁজ পাওয়া যায়নি।

"র‌্যাবের এক কর্মকর্তা সুজনকে ধরে নিয়ে গেছেন", বলেন তিনি। গত ২৯ মার্চ শেরে বাংলা নগর থানায় এ বিষয়ে মামলা করেন মাহবুব। 'সুজন নিখোঁজ হওয়ার' ঘটনাটি এখন তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তদন্তের কথা জানালেও ডিবি পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মাহবুবুর রহমান গত শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "মামলার স্বার্থে তদন্ত প্রসঙ্গে এই মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না।"

সুজনের পরিবারের অভিযোগ, র‌্যাব-২-এর সদস্যরা ওই সময় জোস্নাকেও তাদের হেফাজতে নেয়। পরে জোস্নাকে ছেড়ে দেওয়া হলেও আর খোঁজ মেলেনি সুজনের। সুজনকে 'ধরে নেওয়ার' দিনই জোস্নাকে সিরাজগঞ্জে নিজের বাড়িতে যেতে ছেড়ে দেন লেফটেন্যান্ট ফরহাদ। ছাড়া পাওয়ার একদিন পর বাড়ি যান জোস্না।

মাহবুবের মামলার পর জোস্নাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলায় জোস্নার স্বামী আনিসকেও আসামি করা হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জোস্না জানান, আনিসের ফোন পেয়ে তিনি ফার্মগেটে একটি রেস্তোরাঁর সামনে যান। সেখানে গিয়ে আনিসকে দেখতে পাননি তিনি।

"ওখানে গিয়ে দেখি, র‌্যাবের অফিসার ইকবালসহ একদল সদস্য সুজনকে তাদের গাড়িতে ওঠার জন্য টানাটানি করছে।" সে সময় তিনি সুজনকে ছেড়ে দিতে র‌্যাব সদস্যদের অনুরোধ করলে তারা তাকেও ধরে নিয়ে যান বলে জানান জোস্না।

তিনি বলেন, "সুজনকে নিয়ে র‌্যাব-২-এর অফিসে ফরহাদ স্যারের হাতে দেওয়া হয়।" পুলিশকে দেওয়া জোস্নার জবানবন্দির ভিডিও ফুটেজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সংগ্রহে রয়েছে। সুজন গ্রেপ্তার হওয়ার দিন নৌবাহিনী থেকে র‌্যাব-২ এ প্রেষণে যোগ দেওয়া লেফটেন্যান্ট ফরহাদ এবং দুজন ডিএডি'র সঙ্গে জোস্নার ঘনঘন টেলিফোন সংলাপ এবং সুজনকে ফার্মগেটে ডেকে নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

ওইদন (গত ২৪ মার্চ) বিকেল ৫টা এক মিনিট থেকে বিকেল ৫টা ৫৩ মিনিট পর্যন্ত লেফটেন্যান্ট ফরহাদসহ র‌্যাবের তিন সদস্যের সঙ্গে ঘনঘন কথা হয় জোস্নার। সেদিন লেফটেন্যান্ট ফরহাদ, ডিএডি রফিক ও ডিএডি সামসু তাদের অফিসের মোবাইল নম্বর থেকে ঘনঘন যোগাযোগ করেন জোস্নার সঙ্গে। একই সময় জোস্না তার পুরনো মোবাইল ফোন থেকে যোগাযোগ করেন সুজনের মোবাইলে।

জোস্নার সঙ্গে লেফটেন্যান্ট ফরহাদ ও দুই ডিএডি'র ক'বার টেলিফোন সংলাপ হয়েছে তার বিস্তারিত তথ্যও জানতে পেরেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ফরহাদ ১৯ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত জোস্নার সঙ্গে মোবাইল ফোনে ২৫ বার, ডিএডি সামসু ১৭ বার ও ডিএডি রফিক তিনবার কথা বলেছেন। সুজনকে 'ধরে নেওয়ার' অভিযোগ ওঠার পর লেফটেন্যান্ট ফরহাদকে র‌্যাব-২ থেকে নৌবাহিনীতে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

'তাদের সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনুন' ___জিম্মিদের পরিবার

যেকোন কিছুর বিনিময়ে তাদের সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনুন- সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি ২৬ বাংলাদেশির স্বজনদের এই একটিই আকুতি ছিনতাই হওয়া জাহাজের মালিকপক্ষের প্রতি। বৃহস্পতিবার বিকালে চট্টগ্রাম নগরীর একটি হোটেলে জিম্মিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ছিনতাই হওয়া জাহাজ এমভি জাহান মনি'র মালিকপক্ষ মতবিনিময় করে। এসময় এ আকুতি জানান জিম্মিদের কারও মা-বাবা, কারও ভাই-বোন বা চাচা।

জাহাজ ছিনতাই হওয়ার ২৬ দিন পর মালিকপক্ষ জিম্মিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বসলেন। তবে এর আগে মালিকপক্ষ অনানুষ্ঠানিকভাবে নাবিকদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। গত ৫ ডিসেম্বর আরব সাগরে ভারতীয় জলসীমায় ২৫ জন বাংলাদেশি নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলির স্ত্রীসহ বাংলাদেশি জাহাজ জাহান মনি ছিনতাই হয়।

গত ১১ ডিসেম্বর জাহাজটিকে জলদস্যুরা সোমালীয় উপকূলে নিয়ে যায়। ১২ ডিসেম্বর জাহাজ মালিকপক্ষের সঙ্গে জলদস্যুরা যোগাযোগ করে এবং নাবিকদের সঙ্গে কথা বলতে দেয়। এরপর থেকে জলদস্যুরা প্রায় নিয়মিত বিরতিতেই মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। জাহাজে জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারের জন্য পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে ঢাকায় ও চট্টগ্রামে মানববন্ধন করে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

অশ্র"সজল পরিবেশ
বৈঠকের এক পর্যায়ে জিম্মি নাবিক শাহরিয়ার রাব্বীর মা বিলকিস রহমান কাঁদতে কাঁদতে সভাস্থলের মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে তার সন্তানের মুক্তির জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করতে মালিকপক্ষের কাছে আহবান জানান। জিম্মিদের পরিবারের সদস্যদের অশ্র"সজল আকুতিতে সভাস্থলের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।

এসময় শাহরিয়ারের ক্যান্সার আক্রান্ত বাবা জিয়াউর রহমান নিজের মৃত্যুর আগে তার সন্তানকে দেখে যাওয়ার আকুতি প্রকাশ করে কেঁদে ফেলেন। তিনি মালিকপক্ষের কাছে তার সন্তানের মুক্তির সম্ভাব্য সময় জানতে চান। এছাড়া জাহাজের প্রধান প্রকৌশলির স্ত্রীর বড়ো ভাই, সেকেন্ড ক্যাডেট মাইনুদ্দিনের বাবা, নাবিক নাজিম উদ্দিনের চাচা জসিম উদ্দিন, নাবিক আবু নাছের আব্দুল্লাহ মজুমদারের পরিবারের সদস্যরা কান্নাভেজা কণ্ঠে তাদের স্বজনদের ফিরিয়ে আনার আকুতি জানান।

এর জবাবে জাহাজ মালিক প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক মেহেরুল করিম বলেন, "আমরা মুক্তিপণ দিতে রাজি, কিন্তু জলদস্যুরা মুক্তিপণের পরিমাণ নিয়ে ওঠানামা করছেন। এছাড়া মুক্তিপণ কাকে-কোথায়-কিভাবে দেব তা নিয়েও আমরা সন্দিহান।" জলদস্যু থেকে সদ্য মুক্ত জার্মান রাসায়নিকবাহী জাহাজ এমটি মারিয়া মার্গারিটের ছেড়ে দেওয়ার উদাহরণ দিয়ে মেহেরুল বলেন, "২৩০ দিন পর মুক্তিপণ নিয়ে এমটি মারিয়াকে ছাড়া হয়েছে। তাদের সব নাবিক সুস্থ আছেন।"

'জলদস্যুদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা হচ্ছে"
মতবিনিময়ের সময় স্বজনদের অনেকেই কান্নায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তারা সবাই জলদস্যুদের দাবি করা মুক্তিপণের পরিমাণ এবং জলদস্যুদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চান।

ছিনতাই হওয়া জাহাজ মালিকের পক্ষ জানায়, জিম্মি নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে তারা জলদস্যুদের দাবি করা মুক্তিপণের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু জানাননি। তাদের ভাষ্যমতে, আইনি বাধ্যবাধকতা এবং নাবিকদের নিরাপত্তার দিকটি বিবেচনা করে আমরা মুক্তিপণের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে তারা এই মুহূর্তে কিছু বলছেন না।

তবে জিম্মি নাবিকরা ভালো আছেন এবং জলদস্যুরা তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করছেন বলে জানায় মালিকপক্ষ। সভায় ব্রেভ রয়েল শিপিং ম্যানেজম্যান্ট লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মেহেরুল করিম উপস্থিত পরিবারের সদস্যদের বলেন, "জলদস্যুদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত আলোচনা হচ্ছে। ২৫ ডিসেম্বর সর্বশেষ কথা হয়েছে। ওইদিন জাহাজের ক্যাপ্টেন ফরিদের সঙ্গেও কথা হয়।"

"জাহাজের নাবিকরা সবাই সুস্থ এবং এখনো খাবার ও পানি রয়েছে বলে স্যাটেলাইট ফোনে ক্যাপ্টেন ফরিদ জানিয়েছেন।" ব্রেভ রয়েল শিপিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান পরিবারের সদস্যদের ধৈর্য না হারানোর অনুরোধ জানিয়ে বলেন, "জাহাজ ও জিম্মি নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে আমরা সব ধরণের উদ্যোগ নিয়েছি। তবে তাদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার স্বার্থে এখনই সব জানাতে চাই না।"

তিনি নাবিকদের পরিবারের সদস্যদের ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানান। এসময় জিম্মি নাবিকদের পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন হাবীবুর রহমান ও মালিকপক্ষের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ইংরেজি নববর্ষ: অতিরিক্ত সাত হাজার পুলিশ

ইংরেজি নববর্ষের রাতে উচ্ছৃঙ্খলতা দমনে রাজধানীতে পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার বেনজির আহমেদ। তিনি জানান, শুক্রবার রাতে নগরীর নিরাপত্তায় র‌্যাব ও মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের সদস্য, নিয়মিত পুলিশের বাইরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সাত হাজার সদস্য মাঠে থাকবে।
বৃহস্পতিবার সকালে ডিএমপি সদর দপ্তরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, "প্রতিবছর কিছু লোক নববর্ষ উদযাপনের নামে নিজস্ব সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যবিরোধী কাজে জড়িত হয়। মহিলাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ, বেপরোয়া গাড়িচালানোর মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটায়।" পুলিশ কমিশনার জানান, ৩১ ডিসেম্বর রাতে নগরীর সব বার বন্ধ থাকবে। হোটেল, রেস্তোরাঁ, জনসমাবেশ বা কোনো উৎসবস্থলে কোনো ধরনের বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র বহন করা যাবে না।

নিরাপত্তার স্বার্থে রাস্তার মোড়, ফ্লাইওভার বা রাস্তায় কোনো জমায়েত করা যাবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসিন্দাদের রাত ৯টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রবেশ করতে হবে। প্রয়োজনে পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে হবে। গুলশান বনানী ও বারিধারা এলাকায় যারা বসবাস করেন না, রাতে তাদের এসব এলাকায় প্রবেশ না করতেও পুলিশ অনুরোধ জানিয়েছে। তবে হাসপাতাল ও ক্লিনিকে যাতায়াতকারীরা এর বাইরে থাকবে।

এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও গুলশান-বনানী এলাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কয়েকটি রাস্তা ব্যবহার করার জন্যে সবাইকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নববর্ষের রাতে পটকাবাজি, আতশবাজি, বেপরোয়া গাড়ি, মটরসাইকেল চালানো, কোনো ধরনের অশোভন আচরণ ও বেআইনি কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকতে সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ।

বুধবার র‌্যাব সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ইংরেজি নববর্ষের রাতে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে রাজধানীতে আড়াই হাজার এবং সারা দেশে সাড়ে পাঁচ হাজার র‌্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে।

আহমাদিনেজাদের ঘোষণাঃ ইরান এখন পরমাণু শক্তিধর দেশ

রানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর দেশ এখন পরমাণু শক্তিধর। সে দেশের জ্বালানির চাহিদা পূরণে তাঁরা এ পরমাণু শক্তি অর্জন করেছেন। প্রেস টিভির এক খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আহমাদিনেজাদের বরাত দিয়ে টেলিভিশন চ্যানেলটি জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো তেহরানকে পরমাণু কর্মসূচি থেকে বিরত রাখতে নানা রাজনৈতিক প্রচারণা চালিয়ে আসছে। তেহরানের ওপর অবরোধ আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু কোনো কিছুই তেহরানকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। পশ্চিমা বিশ্বের সব তৎপরতা ব্যর্থ করে দিয়ে ইরান এখন পরমাণু শক্তিধর দেশে পরিণত হয়েছে।

ইরানের উত্তরাঞ্চলীয় কারাজ শহরে এক সমাবেশে দেওয়া ভাষণে আহমাদিনেজাদ এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, সংঘাত নয়; বরং পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির বিষয়ে সুরাহা হতে পারে।
আহমাদিনেজাদ বলেন, ‘আমাদের অধিকার অক্ষণ্ন রেখে এ বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে আমরা রাজি আছি। তবে তেহরানকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে যেকোনো অপতৎপরতা রুখে দেওয়া হবে। এ ধরনের অপতৎপরতার দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে।’
ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, তেহরানের ওপর জাতিসংঘের অবরোধ আরোপের ঘটনা ‘অবৈধ’ ছিল। এ ধরনের অবরোধ ইরানের শক্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তেহরানের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করেছে।
পশ্চিমা বিশ্বের অভিযোগ, পারমাণবিক বোমা তৈরির উদ্দেশ্যে বিতর্কিত এ পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে আসছে ইরান। তবে তেহরান বলছে, দেশের জ্বালানির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে তারা ওই কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। এটা তাদের অধিকার। কোনো শর্তেই এ কর্মসূচি থেকে সরে দাঁড়াবে না তারা। হিন্দুস্তান টাইমস অনলাইন।

ঝিনাইদহে নির্বাচনী সংঘর্ষ, তিন যুবলীগ কর্মী নিহত

ঝিনাইদহ শহরে যুবলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে শহরের পবহাটি চৌরাস্তা মোড়ে এ সংঘর্ষ হয়। নিহত ব্যক্তিরা হলেন সদর উপজেলার ভুটিয়ারগাতি গ্রামের বজলুর রহমান (৪০), পবহাটি এলাকার আলমগীর হোসেন ওরফে আলম (৩৫) ও পোড়াহাটি গ্রামের সোহান ওরফে সোহাগ (২৭)। তাঁরা যুবলীগের কর্মী বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার (এসপি) মো. রেজাউল করিম।

এসপি জানান, পৌরসভা নির্বাচনে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আগে থেকেই পবহাটি এলাকার যুবলীগের নেতা জাহাঙ্গীরের সঙ্গে মাসুদের বিরোধ চলছিল। আসন্ন পৌর নির্বাচনে মাসুদ ১ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদপ্রার্থী জাহিদুল ইসলামের পক্ষ নেন। অন্যদিকে জাহাঙ্গীর ওই ওয়ার্ডের আরেক প্রার্থী আকতার হোসেনকে সমর্থন করেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল সন্ধ্যায় জাহিদুল ইসলামের পক্ষে যুবলীগের নেতা মাসুদ ও অপর কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আকতার হোসেনের পক্ষে যুবলীগের নেতা জাহাঙ্গীর তাঁদের লোকজন নিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছিলেন। রাত আটটার দিকে দুই পক্ষের সমর্থকেরা শহরের পবহাটি চৌরাস্তা মোড়ে পৌঁছালে তাঁদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। তাঁরা লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে তুমুল সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের তিনজন গুরুতর আহত হন।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে জাহাঙ্গীরের বড় ভাই আলমগীর হোসেন ও বজলুর রহমানকে সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁরা মারা যান। আহত সোহানকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হচ্ছিল। পথে তাঁর অবস্থা খারাপ হলে মাগুরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। বজলুর ও সোহান মাসুদ পক্ষের বলে জানা গেছে।
পূর্বশত্রুতার জের ধরে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে পুলিশ ধারণা করছে। এ ঘটনার পর এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে এসপি জানান।

গহিন বনে যুবলীগ নেতার ইটভাটা by সুনীল বড়ুয়া

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার গহিন বনে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে একটি ইটভাটা। এই ভাটার ইট তৈরি হচ্ছে পাহাড় কেটে। ইট পোড়াতে জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে বনেরই গাছ। এতে হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ।
নাইক্ষ্যংছড়ি-চাকঢালা সড়কের বিছামারা এলাকায় পাহাড় আর সবুজ গাছপালার মাঝে ‘জেড আর সি’ নামের এই ইটভাটা গড়ে তুলেছেন উপজেলা যুবলীগের অর্থ সম্পাদক জহির আহম্মদ।

এতে টিন দিয়ে বানানো হয়েছে চিমনি, যা পরিবেশসম্মত নয় এবং যেকোনো সময় ভেঙে পড়ে প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পূর্বে বিছামারা এলাকায় সড়কের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে প্রায় আট একর জমির ওপর ইট তৈরি এবং পোড়ানোর কাজ চলছে। চারপাশে উঁচু পাহাড় আর সবুজ গাছপালার মধ্যে ভাটাটি করা হয়েছে। সড়কের উত্তরে ইট পোড়ানো এবং দক্ষিণে প্রায় ১০০ ফুট উঁচু একটি পাহাড়ের এক-তৃতীয়াংশ কেটে সমান করে সেখানে ইট তৈরি করা হচ্ছে। সড়কের মাত্র ১০ গজ দূরে স্থাপিত ভাটার চুলায় কাঠ দিয়ে ইট পোড়াতে দেখা যায়। ইট বানানোর কাজে নিয়োজিত কয়েকজন শ্রমিক জানান, গত নভেম্বর থেকে ভাটায় ইট পোড়ানো শুরু হয়েছে। এক দফায় পাঁচ লাখ ইট পোড়ানো হয়। তাই কাঁচা ইট তৈরির জন্য বিপুল পরিমাণ মাটির দরকার পড়ে। পাহাড় কাটা মাটি দিয়েই ইট তৈরি করা হয়েছে।
এ সময় কাজ তদারকি করছিলেন ভাটার মালিক জহির আহম্মদ। এই ইটভাটার যথাযথ অনুমোদন এবং বৈধ কাগজপত্র নেই বলে তিনি স্বীকার করেন। তবে তিনি বলেন, নাইক্ষ্যংছড়ির চাকঢালা-আছাড়তলি সড়কের পাঁচ কিলোমিটার অংশে গত বছর ইট বিছানোর কাজ শুরু হয়। সরকারের ব্যয় কমাতে জেলা প্রশাসক গত বছর ওই ইটভাটায় ইট তৈরির অনুমতি দেন। ওই প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এ ভাটায় পরিবেশবান্ধব জিগজাগ চিমনি করার পরিকল্পনা আছে। সে জন্য প্রায় দুই লাখ ইট লাগবে। বনের কাঠ প্রকাশ্যে পোড়ানোর ব্যাপারে তিনি বলেন, কয়লা দিয়ে এখানে পোষানো যাবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, নভেম্বর থেকে মে পর্যন্ত একটি ইটভাটায় প্রায় ছয় দফায় ইট পোড়ানো যায়। প্রতিবারে চার-পাঁচ হাজার মণ কাঠ লাগে। এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, বিপুল পরিমাণ কাঠের জোগান দিতে আশপাশের বনাঞ্চল উজাড় করা হচ্ছে। ভাটার মালিক টাকার বিনিময়ে বন বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসনকে পক্ষে নিয়ে এই অবৈধ ইটভাটা চালাচ্ছেন।
বন বিভাগের নাইক্ষ্যংছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, টাকার বিনিময়ে ইটভাটার মালিকের পক্ষে কাজ করার বিষয়টি সত্য নয়। তিনি যোগ দেওয়ার আগে এসব (পাহাড় কাটা) হয়েছে। আর কাঠ পোড়ানো হয় বনকর্মীদের অগোচরে।
আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ সত্য নয় উল্লেখ করে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম সোহেল প্রথম আলোকে জানান, ওই ইটভাটা সম্পর্কে তিনি অবগত নন। কেউ অভিযোগও করেনি। এ ব্যাপারে তিনি খোঁজ নেবেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের পরিচালক মো. জাফর আলম বলেন, ‘নতুন নীতিমালা অনুযায়ী পার্বত্য এলাকায় ইটভাটা হতেই পারে না। ওই ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্রও নেই। পত্রপত্রিকায় অবৈধভাবে ইটভাটা গড়ে ওঠার খবর পেয়ে আমরা ইতিমধ্যে ইটভাটা বন্ধে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও ইউএনও বরাবর চিঠি দিয়েছি।’
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এলাকার উন্নয়নকাজের জন্য ইটের দরকার আছে। কিন্তু অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না।
সড়কের উন্নয়নকাজের জন্য ইট তৈরির অনুমতি দেওয়া প্রসঙ্গে মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমার মনে পড়ছে না। আর গত বছর অনুমতি দেওয়া হলেও এত দিনে মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ভাটাটি বন্ধ করতে ইউএনওকে নির্দেশ দেওয়া হবে।’

বিশ্বকাপ টিকিট বিক্রি ২ জানুয়ারি থেকে

বাংলাদেশে ক্রিকেট বিশ্বকাপের টিকিট বিক্রি ১ জানুয়ারি থেকে নয়, ২ জানুয়ারি রোববার থেকে শুরু হচ্ছে। বিশ্বকাপ স্থানীয় আয়োজক কমিটির মিডিয়া ম্যানেজার শিকদার নিজামুল হক বৃহস্পতিবার জানান, ১ জানুয়ারি ব্যাংক হলি ডে থাকায় এইদিন ব্যাংকের সব লেনদেন বন্ধ থাকবে।

তাই জনগণের সুবিধার জন্য ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য ম্যাচগুলির টিকেট ২ জানুয়ারি রোববার থেকে দেশের ৬৪টি জেলা শহরে একযোগে বিক্রি শুরু হবে।

সিটি ব্যাংকের ৫০টি ও অগ্রণী ব্যাংকের ৩০টি শাখার মাধ্যমে টিকেট বিক্রি কার্যক্রম চলবে। তবে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের টিকেট আপাতত বাজারে ছাড়া হচ্ছে না।

Thursday, December 30, 2010

যুবলীগের সংঘর্ষে তিনজন নিহত

পৌর নির্বাচন নিয়ে সরকার সমর্থক যুবলীগের দুই গ্র"পের সংঘর্ষে ঝিনাইদহ শহরে তিনজন নিহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে শহরের পবহাটি চৌরাস্তা মোড়ে দুই গ্র"পের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। নিহতরা হলেন- ভুটিয়ারগাতি গ্রামের বজলুর রহমান (৪০), পবহাটি এলাকার আলমগীর হোসেন ওরফে আলম (৩৫) ও সোহান ওরফে সোহাগ (২৭)।
এরা তিনজন স্থানীয় যুবলীগের কর্মী বলে জানিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট (এসপি) মো. রেজাউল করিম। এসপি জানান, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আগে থেকেই পবহাটি এলাকার যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীরের সঙ্গে মাসুদ গ্র"পের বিরোধ চলে আসছিলো।

আসন্ন পৌর নির্বাচনে মাসুদ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রার্থী জাহিদুল ইসলামের পক্ষ নেন। অপরদিকে জাহাঙ্গীর গ্র"প আরেক প্রার্থী আকতার হোসেনকে সমর্থন করে। এ নিয়ে রাত সাড়ে ৭টার দিকে দুই গ্র"পের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষের সময় প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জাহাঙ্গীরের বড় ভাই আলমগীর এবং মাসুদ গ্র"পের বজলু ও সোহান গুরুতর জখম হন।

পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আহতদের ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর আলমগীর ও বজলুর রহমান মারা যান। ঢাকা নেওয়ার পথে মারা যান সোহান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে এসপি জানান। জেলা যুবলীগের নজরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মাসুদ পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক। জাহাঙ্গীর কোনো পদে নেই।

তিনি আরো বলেন, নিহতরা দুই জনের সমর্থক ছিলেন। এটা রাজনৈতিক কোন ঘটনা নয়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ চলছিলো। এর মধ্যে পৌর নির্বাচনে তারা দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষ নেয়। ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান বলেন, "এটা কোনো রাজনৈতিক ঘটনা নয়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মাসুদ ও জাহাঙ্গীরের সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়েছে।"

টিআইবি'র উপাত্ত পর্যালোচনায় সুপ্রিম কোর্টের কমিটি

সুপ্রিম কোর্টকে টিআইবি'র দেওয়া সর্বশেষ জরিপের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনায় চারজন বিচারপতিকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের একজন শীর্ষ কর্মকতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সুপ্রিম কোর্টের ওই কর্মকর্তা জানান, বুধবার বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বে চারজন বিচারপতিকে নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি জানান, ইত্যেমধ্যে ওই কমিটি টিআইবির দেওয়া তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা শুরু করেছে।

গত বৃহস্পতিবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) প্রকাশিত এক জরিপে বলা হয়, সেবা খাতের মধ্যে বিচার বিভাগেই দুর্নীতি বেশি হয়। এর মধ্যে ঘুষ লেনদেন বেশি হয় উচ্চ আদালতে। গত মঙ্গলবার ওই জরিপের সংশ্লিষ্ট তথ্য চেয়ে টিআইবিকে চিঠি দেয় দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

বৃহস্পতিবারই জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, "টিআইবির জরিপ দুর্নীতির সার্বিক চিত্র নয়। এটা আংশিক চিত্র। দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা আরো অনেক বেশি।"

রোববার চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় দুটি মামলায় টিআইবিপ্রধান এম হাফিজউদ্দিন খান, নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ও গবেষক ওয়াহিদ আলমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। কুমিল্লার যে মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয় সেটি সেদিন সন্ধ্যায় আবার বাতিল করে আদালত।

এছাড়া চট্টগ্রামে টিআইবিপ্রধান হাফিজউদ্দিন খানসহ তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আরো দুটি মামলা হয়। ওই দুই মামলায় তাদের জানুয়ারি মাসের দুটি আলাদা তারিখে আদালতে সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই জরিপ প্রসঙ্গে রোববারই আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, "কিছু লোকের দোষ পুরো বিচার বিভাগের ওপর চাপানো হয়েছে।"

পৌরসভা ও উপ-নির্বাচন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অগি্নপরীক্ষা ___বিএনপি

বিএনপি নেতারা বলেছেন, আসন্ন পৌরসভা ও দু'টি সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের জন্য অগি্নপরীক্ষা । বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তাই বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশন নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করার চক্রান্ত করতে পারে জেনেও গণতন্ত্রকে নিরাপদ ও শক্তিশালী করার প্রত্যয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নবীগঞ্জ-বাহুবলের উপ-নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা বলেন, বিচার বিভাগকে দলীয় আদালতে পরিণত করায় টিআইবির রিপোর্ট সঠিক।

গতকাল বুধবার বিকালে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে একথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এসময় মঙ্গলবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্তসমূহ পাঠ করে শোনান তিনি। বৈঠকের সিদ্ধান্তে বলা হয়, প্রবীণ নেতা বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন, সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, সাবেক ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকীকে জনগণের চোখে হেয় ও রাজনৈতিক কারণে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে বানোয়াট মামলা করা হয়েছে। সভায় এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এমপিকে রিমাণ্ডে নিয়ে দৈহিকভাবে নির্যাতন এবং নতুন করে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তার আশু মুক্তি ও নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়।

একই সঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সভাশেষে দলের মনোনয়ন বোর্ড এই দুই আসনে দলীয় প্রার্থী দেয়ার ক্ষমতা দলের চেয়ারপারসনকে প্রদান করে। সভা আশা করে যে, নির্বাচনের সঙ্গে সংশিস্নষ্ট সকল মহল অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সকল বাধা দূর করবে এবং ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে তা নিশ্চিত করবে।

স্থায়ী কমিটির সভা আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে সব ধরনের সহিংসতা, কারচুপি, সন্ত্রাস ও ভোট ডাকাতি রোধের কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনসহ সংশিস্নষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানায়।

সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এড. আহম্মদ আজম খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এরশাদের বিচার হতেই হবেঃ সপ্তম সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ে হাইকোর্ট

সামরিক শাসন জারির জন্য এইচ এম এরশাদ ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার সমান অপরাধ করেছেন। এ জন্য তাঁর ও তাঁর সহযোগীদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। শুধু এরশাদই নন, এর আগে ১৯৭৫ সাল থেকে যাঁরা সামরিক শাসন জারি করে দেশ চালিয়েছেন এবং তাঁদের মধ্যে যাঁরা এখনো জীবিত আছেন, তাঁদের বিচারও হতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে কেউ সামরিক শাসন জারি বা জারির চেষ্টা করতে না পারেন, সে জন্যই তাঁদের প্রত্যেকেরই বিচার হওয়া উচিত।

সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী বাতিল করে দেওয়া হাইকোর্টের রায়ে এসব কথা বলা হয়েছে। গত ২৬ আগস্ট দেওয়া রায়ে সংবিধানের সপ্তম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এ-সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ রায় গতকাল বুধবার প্রকাশ করা হয়েছে।
বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের বেঞ্চ এ রায়ে স্বাক্ষর করেছেন।
যেসব বিচারক সামরিক শাসকদের সহযোগিতা করবেন তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
রায়ে বলা হয়েছে, দণ্ডবিধির ১২১ ক (রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র), ১২৪ (কোনো আইনানুগ ক্ষমতা প্রয়োগে বাধ্য করার বা বাধা দান করার অভিপ্রায়ে রাষ্ট্রপতি, গভর্নর প্রমুখ ব্যক্তিকে আক্রমণ করা) ও ১২৪ ক (রাষ্ট্রদ্রোহ) ধারা অনুযায়ী এরশাদ অপরাধ করেছেন, বিষয়টি প্রতিষ্ঠার জন্য সাক্ষ্যপ্রমাণ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখবে সংসদ।
আদালতের রায়ে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের নজির উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এরশাদসহ এ দেশে অন্য সামরিক শাসকদের আমাদের ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
রায়ে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে যাতে কেউ সামরিক শাসন জারি করার সাহস না পান সেজন্য সামরিক শাসকদের শাস্তির ব্যবস্থা করে নির্ভুল আইন প্রণয়ন করতে হবে। বারবার সামরিক শাসন জারির ফলে দেশে, সমাজে দুর্নীতি ও অস্ত্রবাজি বাড়ে বলেও রায়ে বলা হয়।
রায়ে বিশ্বের সামরিক শাসক সুহার্তো, পিনোসে, গর্টিয়ারি, ইদিআমিন, আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া, জিয়াউল হক ও পারভেজ মোশাররফের পরিণতির কথা উল্লেখ করে বলেন, তাঁদের ভাগ্যে কী ঘটেছিল তাও সামরিক শাসকদের খতিয়ে দেখা উচিত। দিনের শেষে সামরিক শাসকদের এমনই পরিণতি বরণ করতে হয়। এ কারণে আমাদের দেশের সামরিক শাসকদেরও ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে বিচারের ব্যবস্থা করা জরুরি।
রায়ে আরো উল্লেখ করা হয়, এরশাদ প্রত্যক্ষভাবে সংবিধানের কোনো মূল স্তম্ভ ধ্বংস করেননি। তবে জিয়াউর রহমান যেভাবে সংবিধানের মূল স্তম্ভ ধ্বংস করেছেন তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে তিনি সংবিধান ধ্বংসের অপরাধ করেছেন যা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধের শামিল। তিনি জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা ও জনগণের সাংবিধানিক অধিকার পদদলিত করে বাংলাদেশের সংবিধান দীর্ঘ চার বছর স্থগিত রেখেছিলেন। এর ফলে সামরিক আদালত বা ক্যাঙ্গারু আদালতের মাধ্যমে দেশে বিচার চলেছে।
আদালত রায়ে বলেন, দেশে সামরিক শাসনের দ্বার উন্মোচন করেন খন্দকার মোশতাক আহমদ ও জিয়াউর রহমান। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় রাজাকারদের চক্রান্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর সংবিধানের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেন মোশতাক-জিয়াচক্র। তাঁরাই সামরিক শাসনের মাধ্যমে সংবিধানের প্রতি প্রথম কুঠারাঘাত করেন।
রায়ে উল্লেখ করা হয়, জিয়া শুধু সামরিক আইন প্রণয়ন করেই ক্ষান্ত হননি। তিনি সংবিধানের দুটি মূল স্তম্ভ ধর্ম নিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ ধ্বংস করে দিয়েছেন। সাম্প্রদায়িকতার দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি বাঙালি থেকে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ প্রচলন করেন।
রায়ে উল্লেখ করা হয়, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনা ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদকে প্রতিষ্ঠিত করা। এ জন্য আপামর জনসাধারণ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতীয়তাবাদকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেন। অথচ জিয়া সামরিক কায়দায় ক্ষমতায় গিয়ে এই তত্ত্বটি ধূলিসাৎ করে দেন। দেশের জনগণের পাসপোর্ট ও অন্যান্য দলিলপত্রের কারণে আপাতত বাঙালি জাতীয়তাবাদ সংবিধানে পুনঃ প্রতিষ্ঠিত না হলেও অচিরেই বাঙালি জাতীয়তাবাদ আবার সংবিধানে ফিরে আসবে বলে রায়ে আশা করা হয়েছে।
রায়ে বলা হয়, যে ‘জয় বাংলা’ ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার উদ্দীপক স্লোগান, তা পাল্টিয়ে জিয়াউর রহমান পাকিস্তানি কায়দায় ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ প্রচলন করেন। তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন রাজাকার শাহ আজিজুর রহমানকে দেশের প্রধানমন্ত্রী, আরেক শীর্ষ রাজাকার কর্নেল মোস্তাফিজুর রহমানকে পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে এনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে বসান। এ ছাড়াও বাংলাদেশবিরোধী লোকজনকে দেশের উচ্চতর পদমর্যাদায় বসিয়েছিলেন।
যেখানে পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণ করেছিল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ভাষণ দিয়েছিলেন সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সেসব স্মৃতি মুছে ফেলার জন্য জিয়াউর রহমানের সময় সে স্থানটি শিশু পার্কে পরিণত করা হয় বলে রায়ে অভিমত জানান আদালত।
‘আমি রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতি কঠিন করে দেব’ জিয়ার এ বক্তব্য উদ্ধৃত করে রায়ে বলা হয়, তিনি বহু অপ্রত্যাশিত ব্যক্তিকে রাজনীতিতে নিয়ে আসেন। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে উচ্চ মর্যাদায় চাকরি দেন।
সংবিধান সংশোধনী বিষয়ে আদালত রায়ে বলেন, হাইকোর্ট কোনো আইন অবৈধ ঘোষণা করলে এমনিতেই তা বাতিল হয়ে যায়। এ জন্য সংশোধনীর জন্য তা সংসদে উত্থাপন করার প্রয়োজন নেই। কারণ হাইকোর্ট আইন প্রণয়ন করে না বরং সংবিধানের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ হলে তা বাতিল করে। এটি হাইকোর্টের চিরন্তন ক্ষমতা।
সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী-সংক্রান্ত রায়কে একটি বৈপ্লবিক রায় উল্লেখ করে আদালত বলেন, সংসদ ছাড়া আইন প্রণয়ন করার ক্ষমতা কারোর নেই। সংসদই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আইন প্রণয়ন করতে পারে।
রায়ে আরো বলা হয়েছে, সংবিধানের ১৫০ অনুচ্ছেদে মুজিবনগর সরকার গঠন থেকে সংবিধান কার্যকর করার সময় পর্যন্ত গৃহীত সমস্ত কাজকে ক্রান্তিকালীন বিধান হিসেবে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে সামরিক শাসকরা তাঁদের অবৈধ কাজকে ওই অনুচ্ছেদে যুক্ত করে বৈধতা দিয়েছেন। এই অনুচ্ছেদে ভবিষ্যতে কোনো বিধান যুক্ত করার পথ চিরতরে বন্ধ করা হলো। কোনো সংসদ সংবিধানপরিপন্থী কোনো আইন পাস করতে পারে না এবং বৈধতা দিতে পারে না। সামরিক আইন, আদেশ অবৈধ হওয়ায় এর অধীনে জারি করা সমস্ত কাজ, ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা এবং সেই আদালতে বিচারও অবৈধ।
এরশাদের সামরিক শাসনের সময় চট্টগ্রামের একটি সামরিক আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত সিদ্দিক আহমেদের দায়ের করা রিট আবেদনে সপ্তম সংশোধনী অবৈধ বলে রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ক্ষমতা গ্রহণকে অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ জারি করা সামরিক শাসন, ওই সময় থেকে ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত জারি করা সামরিক আইন, সামরিক বিধি, সামরিক আদেশসহ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের সমস্ত আদেশ ও নির্দেশকে সংবিধানপরিপন্থী এবং অবৈধ ঘোষণা করা হয়।
এরশাদের সামরিক শাসনামলের সকল আদেশ, কার্যক্রম, রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের আদেশ অবৈধ। তবে ওই সময়ে জনস্বার্থে নেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত বা কাজ ভবিষ্যৎ বিশৃঙ্খলা এড়ানোর জন্য ক্ষমা করা হয়। রায়ে বলা হয়, মার্জনার অর্থ এই নয় যে, এসব কাজ বৈধ হয়ে গেল। ভবিষ্যতের জন্য এমন কাজ কেউ করলে তা অবৈধ হবে।
আদালত রায়ে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর খন্দকার মোশতাক, আবু সা’দাত মোহাম্মদ সায়েম, জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছেন। জিয়ার উত্তরসূরি বিচারপতি আবদুস সাত্তারের কাছ থেকে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছেন জেনারেল এইচ এম এরশাদ। অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী হিসেবে এরশাদ তাঁর দায় এড়াতে পারেন না। এরশাদ ক্ষমতা দখল করে সামরিক আইন জারি করেছেন। সংবিধান স্থগিত করেছেন। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে সামরিক আইনকে দেশের সর্বোচ্চ আইন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। অথচ সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন। সংবিধান স্থগিত করে সামরিক আইন মেনে নেওয়া যায় না। এমন কার্যক্রম মার্জনীয় নয়। আরো বলা হয়, সংবিধান জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন। জনগণই সকল ক্ষমতার মালিক। সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন। এই আইনের ওপর সামরিক আইনসহ কোনো আইনেরই অবস্থান হতে পারে না।
রিট আবেদনকারীর বিচারের বিষয়ে আদালত বলেছেন, ন্যায়বিচার পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার তাঁর অবশ্যই রয়েছে। সামরিক আদালত ক্যাঙ্গারু আদালত ছাড়া কিছুই নয়, কিন্তু কিছু জটিলতার কারণে রিট এখতিয়ারের মাধ্যমে তাঁর প্রতিকার পাওয়া সম্ভব নয়। তাই তাঁকে প্রতিকার পেতে হলে তাঁকে অন্য কোনো আইনি পন্থায় আবেদন করতে হবে, অবশ্য যদি তিনি চান। রিট আবেদনকারীর সাজার বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করে তাঁকে নিম্ন আদালতে আÍসমর্পণ করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

শিশুদের পঙ্গু করে নামানো হচ্ছে ভিক্ষায়

ট-নয় বছরের এক শিশুকে জড়সড় করে আটকে রাখা হয়েছিল অ্যালুমিনিয়ামের পাতিলের ভেতর। টানা ছয় মাস। খাবার বলতে দিনে একবার সামান্য ভাত অথবা রুটি আর পানি। এতে দিনে দিনে শিশুটি হয়ে পড়ে কঙ্কালসার। এরপর তাকে ভাড়া দেওয়া হয় ভিক্ষাবৃত্তিতে।

শিশুদের নিয়ে এমন ঘৃণ্য ব্যবসা জমিয়ে তুলছে একটি সন্ত্রাসী চক্র। তারা শুধু শিশুদের পাতিলের ভেতরই রাখছে না, কারও হাত কেটে দিচ্ছে, কারও পায়ের রগ কেটে পঙ্গু করছে। র্যাব কর্মকর্তারা গতকাল বুধবার এক বিশেষ অভিযান চালিয়ে এ চক্রের সদস্য শরিফুল ইসলাম ওরফে কোরবানকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তারের পর সাংবাদিকদের সামনে এসব অপকর্মের কথা স্বীকার করেন কোরবান।
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, পথেঘাটে এমন কঙ্কালসার শিশু দেখে হূদয়বান মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন, সাহায্য করছেন। কিন্তু তাঁরা জানেন না, সে অর্থ চলে যাচ্ছে সন্ত্রাসী চক্রের হাতে। ভয়ংকর এ সন্ত্রাসী চক্রের আস্তানাটি গড়ে উঠেছে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের আশ্রাফাবাদে।
শিশুদের নিয়ে ব্যবসা ফাঁদার এই নিষ্ঠুর ও ঘৃণ্য চক্রের সঙ্গে জড়িত এক সদস্যকে গ্রেপ্তারের খবর জানাতে গতকাল দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে র্যাব। সংবাদ সম্মেলনে এ চক্রের সর্বশেষ শিকার শিশু নিয়ামুল ও তার দরিদ্র মাকে হাজির করা হয়। শিশুটি তার ওপর নির্যাতনের ভয়াবহ বিবরণ দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও জনসংযোগ শাখার পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল বলেন, একটি বেসরকারি টেলিভিশনের এক অনুষ্ঠানের সূত্র ধরে তাঁরা এ চক্রের সন্ধান পান। বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এলিনা খান ও ব্ল্যাক ট্রুথ প্রডাকশনস সেন্টারের পরিচালক অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী ওই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন। তাঁরা অনুষ্ঠান করতে গিয়ে এ চক্রের হদিস পান। তাঁদের অনুষ্ঠানে ওই চক্রের হোতারা তাদের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে। এরপর তথ্য-প্রমাণসহ অনুষ্ঠানের আয়োজকেরা বিষয়টি র্যাবকে জানান। গতকাল রাজধানীর উত্তরা এলাকার ১২ নম্বর সেক্টর থেকে কোরবানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। সংবাদ সম্মেলনে টিভি অনুষ্ঠানের দুই আয়োজকও উপস্থিত ছিলেন।
র্যাবের পরিচালক বলেন, কামরাঙ্গীরচরের এ চক্রের মূল হোতা ওমর ফারুক নামের এক সন্ত্রাসী। কামরাঙ্গীচরের আশ্রাফাবাদে তাঁর একটি ক্লাবঘর আছে। সেখানেই এসব অপকর্ম চলে। ওমর ফারুকের সঙ্গে আছে সালাউদ্দিন, এমরান, রাসেল, রনি, সাদ্দাম, কাওসারসহ কয়েকজন। এরা ওমর ফারুকের নির্দেশে ছিনতাই করে। আর পথে পথে ঘুরে বেড়ানো শিশুদের দেখলেই তাদের ধরে নিয়ে যায়। এরপর সেই শিশুকে ভিক্ষাবৃত্তির ‘উপযোগী’ করতে পঙ্গু করা হয়।
র্যাব পরিচালক জানান, গ্রেপ্তার হওয়া কোরবান স্বীকার করেন যে চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের কাজ করে আসছে। এর মধ্যে ২০০৪ সালে শরীফ নামের এক বালককে তারা কামরাঙ্গীরচরের বেড়িবাঁধে নিয়ে হাতের কবজি কেটে পঙ্গু করে দেয়। এরপর তাকে দিয়ে ভিক্ষা করানো হয়। শরীফের বাড়ি কোথায়, তা তারা জানে না। তবে সে খুলনার আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলত। ২০০৬ সালে রাহাত নামের আরেক শিশুকে তারা পায়ের রগ কেটে দেয়। রাহাতের বাড়ি যশোরে। ২০০৮ সালে অজ্ঞাতনামা একটি শিশুকে তারা ছয় মাস একটি পাতিলের মধ্যে আটকে রাখে। পরে তাকে বিকলাঙ্গ করে ভিক্ষায় ভাড়া দেওয়া হয়। কোরবান জানান, এ চক্রের সর্বশেষ শিকার ছিল নিয়ামুল। দরিদ্র রিকশাচালক উমেদ আলীর ছেলে নিয়ামুলকে তারা এ বছরের ৬ সেপ্টেম্বর অপহরণ করে। এরপর ব্লেড দিয়ে তার পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলে, গলা ও বুকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। কিন্তু একপর্যায়ে শিশুটি মারা গেছে বলে মনে করে তারা তাকে ফেলে দিয়ে চলে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে ব্ল্যাক ট্রুথ প্রডাকশনস সেন্টারের পরিচালক অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী বলেন, টিভি অনুষ্ঠান করতে গিয়ে তাঁরা শিশুটির এ ভয়ংকর ঘটনার হদিস পান। তাঁরা জানতে পারেন, আহত শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে খবর পেয়ে চক্রের সদস্যরা নিজেরাই আসামি ও বাদী সেজে কামরাঙ্গীরচর থানায় একটি সাজানো মামলা করে। পরে নিজেরা আপস করেছে বলে সেই মামলা তুলে নেয়। কিন্তু শিশু নিয়ামুল হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তার বাবা উমেদ আলী এ নিয়ে মামলা করতে গেলে থানা আর মামলা নেয়নি। পরে তাঁরা আদালতে যান। তিনি বলেন, ঘটনার এখানেই শেষ নয়। সন্ত্রাসী চক্রের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার পর সন্ত্রাসীরা আরেকটি সাজানো মামলা করে শিশুটির পিতা ও তাঁর মামলার সাক্ষীদের আসামি করে। এ মামলায় তারা অভিযোগ করে, র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া কোরবানকে অপহরণ করা হয়েছে। রাজধানীর কদমতলী থানার পুলিশ সেই মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তারও করে। শিশুটির বাবা এখন এই সাজানো মামলার আসামি।
হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এলিনা খান অভিযোগ করেন, এ চক্রের সঙ্গে কদমতলী ও কামরাঙ্গীরচর থানার পুলিশের সখ্য আছে। তারা প্রকৃত নির্যাতনকারীর মামলা না নিলেও সাজানো মামলা নিয়ে আসামি গ্রেপ্তার করেছে। তাদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করে আসামি ধরতে অনুরোধ করা হলেও তারা সহযোগিতা করেনি।
গ্রেপ্তার হওয়া কোরবান সাংবাদিকদের জানান, এ সন্ত্রাসী চক্রের সদস্য আট-নয়জন। তাদের নেতা ওমর ফারুক। সবকিছু হয় তাঁরই নিয়ন্ত্রণে। দলের সবাই তাঁর কথামতো সবকিছু করে। কামরাঙ্গীরচরের আশ্রাফাবাদ নতুন গলিতে স্কুলের ডান পাশে ওমর ফারুকের ক্লাবঘর। ওমর ফারুক এলাকায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত। তিনি দিনের বেলায় ঘুমান। সন্ধ্যার পর ক্লাবে এসে এলাকার বিচার-সালিসের নামে চাঁদাবাজি করেন। আর রাতের কারবারের হিসাবনিকাশ নেন। ভোরবেলা ঘুমাতে যান। কত শিশুকে নির্যাতন করে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামানো হয়েছে, তার সঠিক হিসাব তিনি জানেন না। তবে সংবাদ সম্মেলনে ‘কয়েকটি ঘটনা মনে পড়ছে’ বলে উল্লিখিত ঘটনাগুলোর বিবরণ দেন।

পতনের পর এই সরকারের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা হবে

র্তমান সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে—এমন অভিযোগ তুলেছেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, এই সরকারের পতন হলে তাদের সময় মানবতাবিরোধী যত অপরাধ ঘটেছে, সেগুলোর বিচার করা হবে।

আজ বুধবার বিকেলে পুরানা পল্টনে ঢাকা মহানগর জামায়াতের কার্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সমাবেশে এ টি এম আজহার এ কথা বলেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে ‘ডিজিটাল কারচুপির নির্বাচন’ আখ্যা দিয়ে এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে জামায়াত।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আজহার বলেন, ‘সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে যুদ্ধাপরাধের কথা বলে তাদের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করছে।...আওয়ামী লীগ আসলে যুদ্ধাপরাধীদের আতঙ্কে ভুগছে। এই অসুখে আপনারা (আওয়ামী লীগ) শেষ হয়ে যাবেন। এই অসুখের চিকিত্সা কী জানি না।’
স্বাধীনতার এত বছর পর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা আইনসম্মত নয় বলেও দাবি করেন জামায়াতের এই নেতা। তিনি বলেন, ‘৩৯ বছর আগে কারা খুন করেছেন, তার সাক্ষী জোগাড় করে বিচার করা যায় না। যাঁরা বলেন বিচার করা যায়, তাঁরা মিথ্যা কথা বলছেন। যেসব দেশে দীর্ঘদিন পর বিচার করা হয়েছে, সেসব দেশে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হয় সঙ্গে সঙ্গে মামলা করা হয়েছিল, নয় তাঁরা আটক ছিলেন বা বিদেশে পালিয়ে ছিলেন। কিন্তু জামায়াতের নেতাদের ক্ষেত্রে এসবের কোনোটিই খাটে না।...মানবতাবিরোধী অপরাধ শুধু যুদ্ধের সময়ই হয়নি। এই সরকারের আমলেও মানবতাবিরোধী অপরাধ হচ্ছে। এই সরকারের পতন হলে মানবতাবিরোধী যত অপরাধ হয়েছে, সেগুলোর বিচার করা হবে।’
ঢাকা মহানগর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির সাংসদ হামিদুর রহমান আযাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। দলের কেন্দ্রীয় প্রচারবিষয়ক সেক্রেটারি তাসনীম আলম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য নূরুল ইসলাম, আবদুল হালিম প্রমুখ এ সময় বক্তব্য দেন।
সাম্প্রতিক সময় এই এলাকায় আয়োজিত সমাবেশগুলোর তুলনায় আজকের সমাবেশটি ছিল একটু অন্য রকম। অন্য সমাবেশগুলোতে জামায়াত ও তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। তারা পুরানা পল্টনে গ্র্যান্ড আযাদ হোটেলের সামনের গলিতে যানচলাচল বন্ধ করে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। অথচ কার্যালয়ের সামনের জায়গা একদম ফাঁকা ছিল।

সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণাঃ এরশাদ রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ করেছেন

সামরিক শাসন জারির জন্য এরশাদ ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ করেছেন। এ বিষয়ে সাক্ষ্য ও প্রমাণ আছে কি না, সরকার তা খতিয়ে দেখবে। দণ্ডবিধির ১২২ ও ১২৪ ধারায় মামলা করার সাক্ষ্য আছে কি না, সরকার তা খতিয়ে দেখবে বলে আদালত প্রত্যাশা করে। ভবিষ্যতে যাতে কেউ এ ধরনের সামরিক শাসন জারির প্রচেষ্টা করতে না পারে, সে জন্য সামরিক শাসকদের বিচার হওয়া আবশ্যক। আর তাই নির্ভুল আইন প্রণয়ন হওয়া জরুরি।

আজ বুধবার সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে প্রকাশিত হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে এসব কথা বলা হয়। গত ২৬ আগস্ট সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে এরশাদের সামরিক শাসনকে সংবিধানপরিপন্থী ঘোষণা করা হয়। এ সংশোধনীতে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলের বৈধতা দেওয়া হয়েছিল। বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এ রায় দেন।
রায়ে আরও বলা হয়, পারভেজ মোশাররফদের ভাগ্যে কী আছে তা স্মরণ রাখা দরকার। দিনের শেষে কোনো সামরিক শাসকের ভাগ্যেই সুফল আসেনি।
এ ব্যাপারে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের নজির তুলে ধরে আদালত রায়ে বলেন, এরশাদসহ সামরিক অভিলাসীদের ক্ষমা করা হলেও তাঁদের ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। যেসব বিচারপতি সামরিক শাসনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, তাঁরাও অসদাচরণের দায়ে শাস্তিযোগ্য অপরাধী হবেন।
যদিও এরশাদ প্রত্যক্ষ্যভাবে সংবিধানের কোনো স্তম্ভ ধ্বংস করেননি কিন্তু জিয়াউর রহমান সংবিধানের মূল স্তম্ভ ধ্বংস করেছিলেন। এর ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এরশাদ সংবিধান ধ্বংসের অপরাধ করেছেন, যা রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধের শামিল।
এ ছাড়া এরশাদ জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও তাঁদের সাংবিধানিক অধিকার পদদলিত করে দীর্ঘ চার বছর সংবিধান স্থগিত রেখেছিলেন। ক্যাঙারু আদালতের মাধ্যমে বিচার চালিয়েছিলেন।
দেশে প্রথম সামরিক শাসনের দ্বার উন্মুক্ত করেন জেনারেল জিয়া ও মোশতাক। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় রাজারকারদের চক্রান্তের ফলে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর সংবিধানের প্রতি বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে জিয়া-মোশতাক চক্র সামরিক শাসন প্রচলন করে সংবিধানের ওপর প্রথম কুঠারাঘাত করেন। জিয়া শুধু সামরিক আইন প্রণয়ন করেই ক্ষান্ত হননি, তিনি সংবিধানের দুটি মূল স্তম্ভ ধূলিসাত্ করে দিয়েছেন। একটি হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা ও অপরটি বাঙালি জাতীয়তাবাদ। সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ প্রবর্তন করেন তিনি।
‘জয় বাংলা’ স্লোগান ছিল স্বাধীনতা-উদ্দীপক স্লোগান। মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার স্লোগান পাল্টিয়ে পাকিস্তানি কায়দায় জিয়া ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ প্রবর্তন করেন। তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিপূর্ণ রাজাকার শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। এ ছাড়া শীর্ষ রাজাকার কর্নেল মোস্তাফিজকে (আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচারক) পাকিস্তান থেকে এনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত করেন। বাংলাদেশবিরোধী বহু ব্যক্তিকে উচ্চমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেন।
এরশাদের শাসনামলে সামরিক আদালতের রায়ে সাজাপ্রাপ্ত চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সিদ্দিক আহমেদ হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ এপ্রিল হাইকোর্ট রুল জারি করেন। সাবেক সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ক্ষমতা গ্রহণ ও ১৯৮২ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত জারি করা সামরিক আইন, ফরমান, আদেশ ও নির্দেশকে বৈধতাদানকারী সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী কেন অবৈধ নয়, তা জানাতে চাওয়া হয়। রুলের ওপর সাত দিন শুনানি শেষে গত ২৬ আগস্ট আদালত রায় দেন।
ফিরে দেখা হত্যা মামলা ও সপ্তম সংশোধনী: ১৯৮৪ সালের ১২ নভেম্বর চট্টগ্রামের মসলা ব্যবসায়ী আবু তাহের খুন হন। ওই বছরের ২৪ ডিসেম্বর এ ঘটনায় চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। সাধারণ আদালতে মামলাটি চলছিল। ১৯৮৬ সালের ১২ মার্চ এক আদেশে মামলাটি বিশেষ মার্শাল ল আদালত-৩ ( চট্টগ্রাম) স্থানান্তর করা হয়। ওই বছরের ২০ মার্চ আদালত সিদ্দিক আহমেদ, নূর মোহাম্মদ ও নুরুল আনোয়ারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে রায় দেন। রায়ের সময় সিদ্দিক আহমেদ পলাতক ছিলেন। এরপর ২০০৬ সালের ২ আগস্ট তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ বছরের ২৪ জানুয়ারি সামরিক শাসন জারি, সামরিক আদালতে বিচার ও দণ্ডের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটটি দায়ের করেন সিদ্দিক আহমেদ। বর্তমানে তিনি জামিনে আছেন।
উল্লেখ্য, গত ২ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের আবেদন খারিজ করেন আপিল বিভাগ। ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট দেওয়া হাইকোর্টের রায়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত খন্দকার মোশতাক আহমেদ, আবু সা’দাত মোহাম্মদ সায়েম ও জিয়াউর রহমানের শাসনকে বেআইনি ঘোষণা করা হয়।

মার্কিন সিনেটরের পদটা জামায়াতের দখলে? by সিপাহসালার

মার্কিন সিনেটর আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে যে চিঠি লিখেছেন তাতে সন্দেহ হচ্ছে মার্কিন সিনেটরের পদটা কি জামায়াত দখল করেছে? না হলে এমন চিঠিতো লেখার কথা নয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত সিনেটর জন বুজম্যান যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও বাংলাদেশের সংবিধান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি চিঠি লিখেছেন। গত ৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে প্রেরিত এ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ (আদালত) অ্যাক্ট ১৯৭৩ (ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) অ্যাক্ট অব ১৯৭৩) বিষয়ে এ চিঠি লিখছি। ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধের বিচারের যে উদ্যোগ বাংলাদেশ সরকার নিয়েছে সে বিষয়ে আমার সমানুভূতি আছে। আপনার সরকার অতীতের এ অপরাধের বিচার সম্পন্ন করে যে নজির স্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছে তার সঙ্গে আমি একমত। সে লক্ষ্যে বিশেষ আদালত স্থাপন, বিচারক প্যানেল গঠন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ (আদালত) অ্যাক্টকে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ করার লক্ষ্যে বিতর্কিত কিছু ধারাও পরিবর্তন করা হয়েছে মর্মে জেনেছি আমি।
চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত স্বচ্ছ বিচারের যে মানদণ্ড রয়েছে তা বাংলাদেশের আইনটিতে অনুপস্থিত রয়েছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। আইনটির বিষয়ে সবচেয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে যেসব সংস্থা থেকে সেগুলো হল—হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এশিয়া বিভাগ, দ্য ওয়ার ক্রাইমস কমিশন অব দ্য ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশন, দ্য ওয়ার ক্রাইমস প্রজেক্ট এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত অন্যান্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা এই আইনকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না এবং এই আইনের মাধ্যমে তাদের যে সাজা প্রদান করা হবে তার বিরুদ্ধেও তারা কোনো প্রতিকার চাইতে পারবে না—বিদ্যমান সংবিধানে যাই থাকুক না কেন। এ জাতীয় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা আছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ (আদালত) আইনে।
অন্যান্য অপরাধ আইনের ক্ষেত্রে যে নিয়ম প্রযোজ্য তা এই অ্যাক্টের ক্ষেত্রে রাখা হয়নি। এ কারণে এ আইনটির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগও রাখা হয়নি যা সংবিধানে স্বীকৃত অধিকার হরণের মাধ্যমে করা হয়েছে। আইনের চোখে সবাই সমান বলে যে মৌলিক বিধান আছে তাও এখানে খর্ব করা হয়েছে। বিচারকে আন্তর্জাতিক মানের এবং স্বচ্ছ করার জন্য এ আইনের সংশোধন খুবই জরুরি। ওই আইন এবং বিচারকে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না মর্মে যে সাংবিধানিক সুরক্ষা প্রদান করা হয়েছে তা-ই আইনটিকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ বিচারের পরিপন্থী করে তুলেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তির নীরব থাকা, নিজেকে নির্দোষ ঘোষণার অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে এবং সাক্ষীর দায়-দায়িত্ব সম্পর্কে কোনো কিছু বলা হয়নি আইনে। আইনটি যেহেতু যুগোস্লাভিয়া এবং রুয়ান্ডা যুদ্ধাপরাধ আদালত গঠনের (এ আদালতের ধারা আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন হিসেবে স্বীকৃত) আগে প্রণীত হয়েছে তাই ২০০২ সালে প্রণীত রোম সংবিধি অনুযায়ী আইনটি সংস্কার করা উচিত। বাংলাদেশও রোম সংবিধিতে স্বাক্ষরকারী একটি দেশ। প্রয়োজনীয় সংশোধন ছাড়া এই আইনের মাধ্যমে বিচার কাজ চালিয়ে গেলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিতর্ক বাড়বে। উদাহরণস্বরূপ বর্তমান আইন অনুযায়ী যিনি সাধারণ সামরিক আদালতের বিচারক হওয়ার যোগ্য তিনি ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বা মেম্বার হতে পারবেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক বিধান অনুযায়ী সামরিক আদালতের বিচারকরা কেবল সামরিক বাহিনী সংক্রান্ত বিষয়েই বিচার করতে পারেন। উপরন্তু, এই আইনে রয়েছে ট্রাইব্যুনালের কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা যাবে না এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি ট্রাইব্যুনালের কোনো ধারার বিরুদ্ধেও কোনো চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন না। আমার আশঙ্কা, আইনটিকে সংশোধন করে যদি আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা না হয় তাহলে এ আইনের মাধ্যমে বিচার কাজ পরিচালনা করা হলে অভিযুক্ত ব্যক্তির মানবাধিকার রক্ষা অসম্ভব হবে। আইনটি বর্তমানে যে অবস্থায় আছে তাতে দায়মুক্তি থেকে বের হয়ে আসার যে উদ্যোগ আপনার সরকার নিয়েছে তা যেমন চাপা পড়ে যাবে তেমনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এ বার্তা ছড়িয়ে পড়বে যে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্যই এ আয়োজন করা হচ্ছে।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ মোতাবেক ধর্মীয় অনভূতিতে আঘাত করার মতো ক্ষুদ্র বিষয়ের সঙ্গে জড়িয়ে জামায়াতের প্রথম সারির বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব অভিযোগে গ্রেফতার করে তাদেরকে যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এতে করে আইনটি রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে। যেহেতু আপনার সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ দলের একনিষ্ঠ মিত্র জামায়াত। তাই জামায়াতকে ক্ষতিগ্রস্ত করার মাধ্যমে প্রধান প্রতিপক্ষকে দুর্বল করাই হলো ট্রাইব্যুনালের প্রথম কাজ। এ বিশ্বাসই সমাজে এখন বিদ্যমান। আইনটি যথাযথ সংশোধন করে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির জন্য একটি নিরপেক্ষ ও ভয়ভীতিমুক্ত বিচার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আপনার সরকার ন্যায় বিচারকে সমুন্নত রাখবে এবং দায়মুক্তির সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার উদ্যোগকে সামনে এগিয়ে নেবে বলে আশা করি। যুদ্ধাপরাধ আদালত গঠনের উদ্যোগকে আন্তর্জাতিক বিচার অঙ্গনের অনেকেই স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচার অনুষ্ঠানে অনাগ্রহের বিষয়ে তারা সবাই উদ্বিগ্ন যে, এর মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা হতে পারে। আমি আশা করি আপনার সরকার রোম সংবিধি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ধারা মোতাবেক আইনটি সংশোধনের যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। আইনটি যথোপযুক্ত সংশোধন করে প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় আনার বিষয়ে আপনার সরকার উদ্যোগ নিলে আমি সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি।

Wednesday, December 29, 2010

‘রাজধানীর দক্ষিণখানে খুন ও ডাকাতির মামলা রাজনৈতিক বিবেচনার শিকার’: পলাতক আসামিকেও মামলা থেকে খালাস

‘রাজনৈতিক বিবেচনায়’ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বহুল আলোচিত প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ বিশ্বাস হত্যা মামলার প্রধান পাঁচ আসামির নাম প্রত্যাহারের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক কানিজ আখতার নাসরীনা খানম এই আদেশ দেন। এতে বিচারাধীন মামলাটির এজাহারভুক্ত এই পাঁচ আসামি— জয়নাল আবেদীন মোল্লা, শাহীন, শরীফ, হুমায়ুন ও ইকবাল হোসেন খালাস পেলেন। তাঁদের মধ্যে হুমায়ুন ও শাহীন প্রায় ছয় বছর ধরেই পুলিশের খাতায় পলাতক আসামি।

মামলার নথিপত্রে দেখা যায়, রাজধানীর দক্ষিণখানে ডাকাতিকালে চিনে ফেলায় আসামিদের মধ্যে শাহীন নিজ হাতে প্রকৌশলী হামিদকে গুলি করেছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ রয়েছে। উত্তরা থানার এই মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত মোট ১০ জন আসামির মধ্যে বাকি পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা চলবে। তাঁরা হলেন লিটন ওরফে সুন্দরী লিটন, আশরাফুল ইসলাম ওরফে দীপু, জাকির হোসেন, ফিরোজ মিয়া ও নিরঞ্জন চন্দ্র পাল। তাঁদের মধ্যে জাকির ও নিরঞ্জন পলাতক। নথিপত্রে দেখা যায়, এই পাঁচজনের নাম এজাহারে ছিল না, তদন্তে তাঁদের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, ডাকাতি ও হত্যার অভিযোগে করা এই মামলার বাদী ও আসামিদের কেউই কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো পদে নেই। তবু আসামিদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ২৬ আগস্ট এ মামলাটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ বিচারিক আদালতে প্রত্যাহারের আবেদন করে।
এ ঘটনায় প্রথম আলোতে গত ২২ ডিসেম্বর ‘খুন ও ডাকাতির মামলা রাজনৈতিক বিবেচনার শিকার’ শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
ঘটনা: ২০০৫ সালের ২৯ জানুয়ারি রাজধানীর দক্ষিণখানের আনল এলাকায় নিজ বাসায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ বিশ্বাস। আহত হয় তাঁর স্কুলপড়ুয়া মেয়ে। দুর্বৃত্তরা আলমারি ভেঙে বিভিন্ন মালামাল নিয়ে যায়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিহতের স্ত্রী সাঈদা হামিদ বাদী হয়ে উত্তরা থানায় হত্যা ও ডাকাতির মামলা করেন। একই বছরের ৮ আগস্ট পুলিশ ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। এরপর মামলাটির বিচার শুরু হয়। ২০০৬ সালে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে যায়। ইতিমধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা ছাড়া বাকি সব সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। মামলাটি প্রায় শেষপর্যায়ে ছিল বলে আইনজীবীরা জানান।
বাদী সাঈদা হামিদের ভাই আফজাল হোসেন জানান, খুনের মামলাটি তুলে নিতে আসামি জয়নাল মোল্লা ও তাঁর পরিবার নানাভাবে চাপ দিচ্ছিল। চাপের মুখে ২০০৭ সালে সাঈদা হামিদ বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে মেয়েদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।
সাঈদা হামিদ টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘জয়নাল মোল্লা তাঁর দুই ছেলে, জামাতাসহ অন্য কয়েকজনকে নিয়ে রাত তিনটার দিকে আমাদের বাসার ভেতরে ঢোকেন। শব্দ শুনে আমরা বাতি জ্বালিয়ে দেখতে যাই, কী হচ্ছে। আমি, আমার দুই মেয়ে ও কাজের মেয়ের চোখের সামনেই জয়নাল মোল্লার ছেলে শাহীন নিজ হাতে গুলি চালিয়েছেন।’
প্রতিক্রিয়া: এদিকে ‘রাজনৈতিক হয়রানির বিবেচনায়’ মামলার পলাতক আসামিসহ প্রধান পাঁচ আসামির নাম প্রত্যাহারে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী যুক্তরাষ্ট্র-প্রবাসী সাঈদা হামিদ। তিনি গতকাল টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তারা আমার স্বামীকে আমার চোখের সামনে গুলি করে হত্যা করেছে। এ জন্য রাষ্ট্রের কাছে বিচার চাইলাম। রাষ্ট্রই মামলা তুলে নিল। এখন কার কাছে যাব?’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমরা রাজনীতি করি না বলে কি আমরা বিচার পাব না? আমরা কি বাংলাদেশের মানুষ না!’
সাঈদা হামিদ এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বাদীর পক্ষে মামলাটির তদারককারী সাঈদার ভাই আফজাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করবেন।
এই ব্যাপারে ট্রাইব্যুনালের বিশেষ কৌঁসুলি সামছুল হক সাংবাদিকদের বলেন, সরকার মামলাটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ কারণে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৪ ধারায় আবেদন করা হয়েছে। আদালত যাঁদের নাম প্রত্যাহারযোগ্য মনে করেছেন, তাঁদের নাম প্রত্যাহার করে খালাস দিয়েছেন।

চিঠিকে স্বাগত জানিয়েছে টিআইবি। আজই তথ্য উপাত্ত পাঠাবেঃ টিআইবির প্রতিবেদনের তথ্য উপাত্ত চেয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সাম্প্রতিক জরিপের প্রতিবেদন ও তথ্য-উপাত্ত চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পত্রবাহকের মাধ্যমে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বরাবর এ চিঠি পাঠানো হয়।

সূত্র জানায়, ডেপুটি রেজিস্ট্রার বদরুল আলম ভুঞা স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘২৪ ডিসেম্বর বিভিন্ন দৈনিকে বিচার বিভাগের দুর্নীতি-সংক্রান্ত সংবাদ আমাদের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে অবগত হয়েছি। প্রতিবেদনের অনুলিপি ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র প্রেরণ করে বাধিত করবেন। যেসব তথ্য-উপাত্ত ও সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে ওই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে, তা সরবরাহ করে সহযোগিতা করুন। অভিযোগের সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেলে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তথ্য-উপাত্ত চেয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বরাবর এই চিঠি পাঠানো হয়। সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি রেজিস্ট্রার বদরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, টিআইবির প্রতিবেদন ও তথ্য-উপাত্ত চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জন্য চিঠিতে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে পাঠানো চিঠি ইতিবাচক। এটাকে স্বাগত জানাই।’ টিআইবির প্রতিবেদন ও তথ্য-উপাত্ত আজ সকালে সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হবে বলে জানানো হয়। তিনি বলেন, প্রতিবেদনের বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত চেয়ে চিঠি পাঠানো উৎসাহব্যঞ্জক।
টিআইবির প্রতিবেদন: টিআইবি ২৩ ডিসেম্বর সেবা খাতে দুর্নীতিসংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলেছে, দেশের ১৩টি সেবা খাতের মধ্যে বিচার বিভাগে গিয়ে সবচেয়ে বেশি হয়রানি, অনিয়ম, ঘুষ দেওয়া তথা দুর্নীতির শিকার হয়েছে সাধারণ মানুষ। ২০০৯-১০ সালে বিচারপ্রার্থীদের ৮৮ শতাংশ শুনানির সময় নির্ধারণ থেকে শুরু করে নথিপত্র গায়েব, উৎকোচ দেওয়াসহ নানা অনিয়মের শিকার হয়েছে। নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে উচ্চ আদালত—বিচার বিভাগের প্রতিটি স্তরে ঘুষের দৃষ্টান্ত থাকলেও জরিপের শীর্ষে রয়েছেন উচ্চ আদালত।
২০০৯ সালের ৯ জুন থেকে এ বছরের ২০ জুলাই পর্যন্ত দেশের সব বিভাগীয় শহর ও গ্রামাঞ্চলের ছয় হাজার খানার (পরিবার) ওপর পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে ‘সেবা খাতে দুর্নীতি: জাতীয় খানা জরিপ ২০১০’ প্রকাশ করা হয়।
টিআইবি বলছে, ২০০৭ সালের খানা জরিপে ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ পরিবার বিচার বিভাগের দুর্নীতির শিকার হয়েছিল। কিন্তু এ দফায় তা বেড়েছে। জরিপে অংশ নেওয়াদের শতকরা ১০ দশমিক ৯ শতাংশ বিচার বিভাগ থেকে সেবা নিয়েছে। তাদের ৮৮ শতাংশ দুর্নীতির শিকার হয়েছে।
টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, জুন ২০০৯ থেকে মে ২০১০ পর্যন্ত যারা বিচার বিভাগের শরণাপন্ন হয়েছে, তাদের মধ্যে ৮৮ শতাংশ মানুষ ঘুষ ও অনিয়মের শিকার। ২০০৭ সালের তুলনায় এই হার অনেক বেশি। তিন বছর আগে পরিচালিত ওই জরিপে ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ ঘুষ ও অনিয়মের শিকার হয়।

উপনির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি

বিগঞ্জ-১ ও ব্রাক্ষণবাড়িয়া-৩ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নেবে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। বুধবার রাতে গুলশানের কার্যালয়ে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান স্থায়ী কমিটির সদস্য আর এ গনি। বৈঠক শেষে আর এ গনি সাংবাদিকদের বলেন, "বৃহস্পতিবার বিকাল তিনটায় নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত ও প্রস্তাবসমূহ সংবাদ ব্রিফিংয়ে গণমাধ্যমকে জানানো হবে।"

তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে পার্লামেন্টারি বোর্ড এই সাক্ষাৎকার দেবে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে। এর আগে বুধবার রাতে গুলশানের কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

রাত ৮টা ২০ মিনিট থেকে ১০টা পর্যন্ত বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, উপনির্বাচন ও পৌর নির্বাচনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আর এ গনি, এম শামসুল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান, এম কে আনোয়ার, জমিরউদ্দিন সরকার, আ স ম হান্নান শাহ, সারোয়ারি রহমান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও রফিকুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।

মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন অসুস্থ থাকায় বৈঠকে আসতে পারেননি। এর আগেও শূন্য আসনের উপনির্বাচনে অংশ নিয়েছিলো বিএনপি। সর্বশেষ এ বছরের ২৪ এপ্রিল ভোলা-৩ আসনের উপনির্বাচনে দলটি অংশ নেয়। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নূরন্নবী চৌধুরী শাওন বিএনপির হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে হারিয়ে নির্বাচিত হন।

গত বছরের ১৫ জুন সুনামগঞ্জ-৪ আসনের উপনির্বাচনে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগের মতিউর রহমান। বিএনপি থেকে নির্বাচন করেন ফজলুল হক আসপিয়া। ওই বছরের ২ এপ্রিল হয় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের ছেড়ে দেওয়া ছয়টি আসনে।

এ ছয়টি আসন হল- রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের ছেড়ে দেওয়া কিশোরগঞ্জ-৬, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রংপুর-৬, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার বগুড়া-৬ ও ৭, জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রংপুর-৩ ও কুড়িগ্রাম-২।

এর মধ্যে আওয়ামী লীগ তিনটি, বিএনপি দুটি ও জাতীয় পার্টি একটি আসন পায়। জামায়াত নেতাদের সঙ্গে বৈঠক: জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল হোসেন ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক পরপরই খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার গুলশানের কার্যালয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে উপনির্বাচন ও পৌর নির্বাচন বিষয়ে আলোচনা হয়।

টিআইবি জরিপের নথি চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট

টিআইবি'র সা¤প্রতিক জরিপের সংশ্লিষ্ট তথ্য চেয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, এতে অভিযোগের প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তথ্য-উপাত্ত চেয়ে টিআইবি'র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বরাবর মঙ্গলবার চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের ডিপুটি রেজিস্ট্রার বদরুল আলম ভুউঞা।

এ বিষয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে টেলিফোনে বলেন, "চিঠিটা বিকালে আমার কাছে এসেছে। আমরা আগামীকাল (বুধবার) সকালে সুপ্রিম কোর্টের কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত জমা দেবো।" সুপ্রিমকোর্টের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে তিনি আরো বলেন, "বিষয়টিকে আমরা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবেই দেখছি।"

টিআইবি'র চেয়ারম্যান এম হাফিজউদ্দিন খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আশা করছি সুপ্রিম কোর্ট এটা বিবেচনায় নেবে। ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে।" সুপ্রিম কোর্টের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, প্রধান বিচারপতির উপস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের নিয়ে পর্যালোচনা করে এ চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) প্রকাশিত ওই জরিপে বলা হয়, সেবা খাতের মধ্যে বিচার বিভাগেই দুর্নীতি বেশি হয়। এর মধ্যে ঘুষ লেনদেন বেশি হয় উচ্চ আদালতে। জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, "টিআইবির জরিপ দুর্নীতির সার্বিক চিত্র নয়। এটা আংশিক চিত্র। দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা আরো অনেক বেশি।"

জরিপ প্রসঙ্গে রোববার আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, "কিছু লোকের দোষ পুরো বিচার বিভাগের ওপর চাপানো হয়েছে।" ডেপুটি রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত সুপ্রিম কোর্টের মঙ্গলবারের চিঠিতে বলা হয়েছে, "গত ২৪ ডিসেম্বর বিভিন্ন দৈনিকে বিচার বিভাগের দুর্নীতি সংক্রান্ত সংবাদ আমাদের নজরে এসেছে। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তি টিআইব'র প্রতিবেদন বলে প্রতীয়মান হয়েছে।

"ওই প্রতিবেদনের সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেলে এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হবে।" "তাই অনুগ্রহ করে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ করে বাধিত করবেন," বলা হয় চিঠিতে। ডেপুটি রেডিজস্ট্রার বদরুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমক বলেন, তথ্য-উপাত্ত চাওয়া হয়েছে সহযোগিতার জন্য। এতে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

রোববার চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় দুটি মামলায় টিআইবিপ্রধান এম হাফিজউদ্দিন খান, নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ও গবেষক ওয়াহিদ আলমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। কুমিল্লার যে মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয় সেটি সেদিন সন্ধ্যায় আবার বাতিল করে আদালত। এছাড়া চট্টগ্রামে টিআইবিপ্রধান হাফিজউদ্দিন খানসহ তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আরো দুটি মামলা হয়। ওই দুই মামলায় তাদের জানুয়ারি মাসের দুটি আলাদা তারিখে আদালতে সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

২০১১ সালে 'দুঃশাসন' থেকে সরে আসুন: খালেদা জিয়া

'দুঃশাসন' এর পথ থেকে সরে এসে সরকারকে নতুন বছরে (২০১১ সালে) গণতান্ত্রিকভাবে দেশ পরিচালনা করার আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এই আহ্বান জানান।

নতুন বছরে সরকার দুঃশাসনের পথ থেকে সরে এসে সঠিকভাবে দেশ পরিচালনা করবে- এই আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, "নইলে জনগণই তাদের বিরুদ্ধে রাজপথে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।'' 'দেশ রক্ষার' চলমান আন্দোলনে খ্রিষ্টান স¤প্রদায়ের সহযোগিতা চান তিনি।

বড়দিন উপলক্ষে খ্রীষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের সঙ্গে এই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন খালেদা জিয়া। এ সময় আর্চ বিশপ পৌলিনিস কস্তা, এলার্ট পি কস্তাসহ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বিরোধীদলীয় নেতা খ্রিস্টান স¤প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে বড়দিনের কেক কাটেন এবং কুশল বিনিময় করেন।

খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের কাছে দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, "দেশের মানুষ ভালো নেই, কষ্টের মধ্যে আছেন। দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি কেমন তা সবাই টের পাচ্ছেন। কেবল তাই নয়, দেশে গণতন্ত্রও নেই। গণতন্ত্র থাকলে জনগনকে সভা-সমাবেশ করায় বাধা দেওয়া হতো না।''

সারাদেশে সরকারি দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি ও দখলবাজির অভিযোগ তুলে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, "তারা কেবল টেন্ডারবাজিই নয়, মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডাসহ ধর্মীয় জায়গা-জমিও দখল করছে। আওয়ামী লীগ, ছাত্র লীগ ও যুবলীগের হাতে আজ বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হচ্ছে।"

বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও তাদেরকে হয়রানি করা এবং সরকারের দমননীতির কঠোর সমালোচনাও করে তিনি বলেন, "সরকারের এহেন অত্যাচার-নির্যাতন চলতে থাকলে জনগনই প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।" এসময় অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ, আবদুল মঈন খান ও সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন বক্তব্য রাখেন।

'সরকার অপকর্মের সমালোচনা সহ্য করছে না'

'বর্তমান সরকার অতীতের মতো অপকর্মের সমালোচনা' সহ্য করছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার। এমকে আনোয়ার বলেন, ''১৯৭২-৭৫ সালের সরকার ভিন্নমতের সমালোচনা সহ্য করতো না। আজো নির্যাতন চালিয়ে তারা সব কিছু দাবিয়ে রাখতে চায়।''

মঙ্গলবার বিকালে নয়াপল্টনে মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর তিন দশক উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এই অভিযোগ করেন। আগামী ৩০ ডিসেম্বর কৃষক দলের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। বর্তমান প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে দলীয়করণের মাধ্যমে এক দলীয় শাসনে সরকার দেশ পরিচালনা করছে বলেও অভিযোগ করেন এমকে আনোয়ার।

বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থাকে সংকটজনক অভিহিত করে তিনি বলেন, "দেশে কোনো দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ নেই। ভারতীয় ব্যাংকের দেওয়া ঋণের প্রকল্প অনুমোদন করতে হবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এভাবে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিকিয়ে দিয়ে দেশকে সরকার অকার্যকর করে ফেলেছে।"

সরকারের বিরুদ্ধে দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, "আওয়ামী লীগ বহুদল ও গণতন্ত্র বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগে থাকলে রাজাকারও মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যায়।" উচ্চতর আদালতে জামিন আদেশ সরকারের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তার কার্যালয়ে স্থগিত করে রাখছে অভিযোগ তুলে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে আনোয়ার বলেন, "প্রধান বিচারপতি নিজেই বলেছেন, কেউ বিচারের ঊর্ধ্বে নয়। তাহলে আপনার অথবা হাইকোর্টের জামিন আদেশ কিভাবে অ্যার্টনি জেনারেল আটকিয়ে রাখেন তা আমরা জানতে চাই।"

বিএনপির জ্যেষ্ঠ এ সাংসদ বলেন, "রাজনেতিক বিবেচনার নামে সরকার ছয় হাজার সাতশ মামলা প্রত্যাহার করে বিচার বিভাগের ওপর অনাস্থা প্রকাশ করেছে। এসব মামলায় দেড় লাখ দাগী আসামিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের মুক্তির ফলে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি, খুন ও ধর্ষণ বেড়েছে।" রাষ্ট্রপতি বির্তকিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নাটোরের ২০ ফাঁসির আসামিকে ক্ষমা করে দেওয়া আইনসম্মত হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, "ওই আসামিরা মুক্তি পেয়ে নাটোরের উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ নুর বাবুকে হত্যা করেছে।"

সভাপতির বক্তব্যে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, "টিআইবি প্রতিবেদনে দেশে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছেÑ প্রকাশ হওয়ার পর তাদের ওপরও সরকারের মন্ত্রীরা বিষোদ্গার করছেন। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের মতো গর্বিত ব্যক্তিকেও তারা প্রশ্নের মুখে ফেলে বির্তকিত করছেন।"

আলোচনা সভায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য শামসুজ্জামান দুদু, অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম আজাদ, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শরফত আলী সপু, ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এ্যাব'র সদস্য সজিব হাসান জাফির তুহিন প্র্রমুখ বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে সাবেক প্রতিমন্ত্রী গৌতম চক্রবর্তী, সাংসদ শাম্মী আখতার, মহিলা দলের সভাপতি নুরে আরা সাফা, কৃষক দলের সহসভাপতি এমএ তাহের, সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমি, সহ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তকদির হোসেন মো. জসিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Tuesday, December 28, 2010

দেশীয় সংস্কৃতি রক্ষায় জিয়ার পথ অনুসরণ করতে হবে __খালেদা জিয়া

বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে দেশীয় সংস্কৃতিকে বাঁচাতে শহীদ জিয়ার প্রদর্শিত পথ অনুসরণের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় তিনি বলেন, জিয়া যেমন গুণী শিল্পীদের খুঁজে বের করে দেশীয় সংস্কৃতির একটি মজবুত ভিত গড়েছিলেন, তেমনিভাবে জাসাসকে দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে গুণী শিল্পী খুঁজে বের করে দেশীয় সংস্কৃতিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে।
দেশীয় সংস্কৃতির ওপর বিদেশি আগ্রাসন চলছে মন্তব্য করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খালেদা জিয়া আরো বলেন, এ আগ্রাসন থেকে বেরিয়ে আসতে হলে দেশীয় সংস্কৃতির চর্চা ব্যাপক হারে বাড়াতে হবে। বিদেশি সংস্কৃতির ব্যক্তিরা এ দেশে এলে তাদের সামনে দেশীয় সংস্কৃতি তুলে ধরতে হবে।
খালেদা জিয়া বলেন, 'সংগীত আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত হতে প্রেরণা জুগিয়েছিল। এ প্রত্যয় নিয়েই শহীদ জিয়াউর রহমান বেশকিছু শিল্পীকে খুঁজে এনে প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। সময় এসেছে, এখন জিয়াউর রহমান প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করতে হবে।'
এর আগে খালেদা জিয়া অনুষ্ঠানস্থলে পেঁৗছালে জাসাস ও বিএনপি নেতা-কর্মীরা করতালি-স্লোগান ও গানের মধ্য দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান। কোরআন তিলাওয়াতের পর শুরু হয় আলোচনা অনুষ্ঠান। আলোচনা শেষে সাংস্কৃৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন জাসাসের বিভিন্ন পর্যায়ের শিল্পীরা।
জাসাস সভাপতি এম এ মালেকের সভাপতিত্বে সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক গীতিকার গাজী মাযহারুল আনোয়ার, সিনিয়র সহসভাপতি চিত্রনায়ক আশরাফ উদ্দিন উজ্জ্বল, সাধারণ সম্পাদক কণ্ঠশিল্পী মনির খানসহ জাসাসের মহানগর ও কেন্দ্রীয় নেতারা আলোচনায় অংশ নেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আ স ম হান্নান শাহ, ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুল হালিম, ড. ওসমান ফারুক, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেছেঃ আবার বাড়ছে পাইকারি দর

পাইকারি বাজারে কমার পর রাজধানীর খুচরা বাজারেও কমেছে পেঁয়াজের দাম। খুচরা বাজারে সর্বনিম্ন ৪০ টাকা বেজি দরে বিক্রি হচ্ছে দেশীয় নতুন পেঁয়াজ। তবে গত শনিবারের তুলনায় গতকাল পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়েছে। চলতি সপ্তাহে খুচরা বাজারে দেশীয় নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৫৫ টাকা দরে।


গতকাল কারওয়ান বাজার ও বঙ্গবাজার-সংলগ্ন আনন্দবাজারে নতুন পেঁয়াজ ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তবে কারওয়ান বাজারে গতকাল বড় আকারের পেঁয়াজের দাম ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা কেজি। কারওয়ান বাজারে পুরনো দেশীয় পেঁয়াজ ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। বিক্রেতারা জানান, এর দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা কমেছে।
খুচরা বাজারে কমলেও পাইকারি বাজারে আবার কিছুটা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর সবচেয়ে বড় পেঁয়াজের আড়ত শ্যামবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৪০ টাকা কেজি দরে। শুক্রবার সন্ধ্যায় তা কমে এসেছিল কেজিপ্রতি ২৬ টাকায়। কিন্তু শনিবার তা আবার ৩৪-৩৫ টাকায় উঠে যায়। গতকাল খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩৯ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আনন্দবাজারের ১২৯ নম্বর দোকানের বিক্রেতা শামীম আহমেদ জানান, তিনি ৫৫ টাকা দরে পেঁয়াজ কিনে এনেছিলেন। কিন্তু বাজার কমে যাওয়ায় তিনি ৪০ টাকা দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি বলেন, 'কেজিতে ১৫ টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে। আমরা ভাবতেও পারিনি দাম এত বাড়বে, আবার কমে যাবে।'
শ্যামবাজারের ঢাকা বাণিজ্যালয়ের বিক্রেতা আবদুর রহিম কালের কণ্ঠকে জানান, আড়তে ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কমে গেছে। এ কারণে দাম কিছুটা বেড়েছে। তিনি বলেন, 'কাঁচামালের দামের কোনো ঠিক নেই। এই বাড়ে, আবার কমে যায়। তবে কয়েক দিনের মধ্যে দাম আবার কমবে। কারণ বাড়তি দামের আশায় কৃষক এখন আবার ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ তোলা শুরু করবে।'
গত ২০ ডিসেম্বর অনির্দিষ্টকালের জন্য পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে ভারত। ভারতের রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার কারণে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি দুদিনে ২০ টাকা বেড়ে যায়। ৩৫ টাকা কেজির দেশীয় পেঁয়াজ কয়েক দিনে ৫৫ টাকা ও ৫৫ টাকার ভারতীয় পেঁয়াজ ৮০ টাকা হয়ে যায়।
প্রসঙ্গত বাংলাদেশের বর্তমানে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ১৬ লাখ টন। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, প্রতিবছর সোয়া লাখ থেকে দেড় লাখ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়ে থাকে। এতে উৎপাদিত হয় প্রায় ৯ লাখ টন পিঁয়াজ। বাকি চাহিদা আমদানি করেই মেটাতে হয়। আমদানির সিংহভাগ হয় ভারত থেকে।

Monday, December 27, 2010

 লালমনিরহাট সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী সীমান্তে আজ সোমবার ভোরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে একজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। নিহত ব্যক্তির নাম বেলাল হোসেন (২৫)। তিনি গরুর ব্যবসায়ী। একই ঘটনায় মো. বাবু মিয়া (২৪) নামের আরেকজন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন।

বিডিআর জানায়, নিহত বেলালের বাড়ি পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের নামাজিটারী গ্রামে। আহত বাবুর বাড়ি একই ইউনিয়নের বামনদল গ্রামে।
জানা যায়, আজ ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে বুড়িমারী সীমান্ত পার হওয়ার সময় ৮৩৮ মেইন পিলার-সংলগ্ন এলাকায় বেলাল ও বাবুকে লক্ষ্য করে বিএসএফের সদস্যরা গুলি চালায়। এতে বেলাল গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। বাবুর পিঠে গুলি লাগে। বেলালের লাশ বিএস বাড়ি এলাকার বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা ভারতের ভেতরে নিয়ে গেছে। বাবু বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
বুড়িমারী বিওপি ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার সাঈদ প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে এবং নিহত বাংলাদেশির লাশ ফেরত চেয়ে বিএস বাড়ি এলাকার বিএসএফ ক্যাম্পে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
লালমনিরহাট ৩১ রাইফেল ব্যাটালিয়নের (বিডিআর) উপ-অধিনায়ক মেজর শফিক উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

রাঙামাটিতে সন্তু লারমার গাড়িবহরে হামলা

পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির প্রধান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমার গাড়িবহরে আজ সোমবার সকালে হামলা হয়েছে। খাগড়াছড়ি থেকে রাঙামাটি ফেরার পথে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার বেতছড়ি এলাকায় তাঁর গাড়িবহর হামলার শিকার হয়। এ সময় বহরে থাকা দুটি গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। তবে যাত্রীদের সবাই অক্ষত আছে।

রাঙামাটির পুলিশ সুপার মাসুদুল হাসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
সন্তু লারমার ব্যক্তিগত সহকারী বরুণ চাকমা জানান, সকাল ১০টার দিকে গাড়িবহর বেতছড়ি এলাকায় পৌঁছালে হামলা চালানো হয়। তিনি দাবি করেন, এ সময় গাড়িবহর লক্ষ্য করে গুলি করা হয়েছে। গুলিটি গাড়িবহরে থাকা মাইক্রোবাসে আঘাত করে। এতে মাইক্রোবাসের কাচ ভেঙে যায়। এ ছাড়া অন্য একটি জিপ গাড়িরও কাচ ভেঙেছে।
তবে জেলা পুলিশ সুপার গুলি হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেননি। তিনি দাবি করেন, পাহাড়ের ওপর থেকে পাথর মারা হয়েছিল।
সন্তু লারমার ব্যক্তিগত সহকারী আরও জানান, সন্তু লারমা পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির সভায় যোগ দিতে গতকাল রোববার রাঙামাটি থেকে খাগড়াছড়ি যান।
প্রসঙ্গত, এ বছরের ২৭ জানুয়ারি রাঙামাটি থেকে খাগড়াছড়ি যাওয়ার পথে একই এলাকায় সন্তু লারমার গাড়িবহর হামলার শিকার হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে এসে রোগীদের ভোগান্তি

মেয়ে ফরিদা বেগমের চিকিৎসা করাতে গত শনিবার রাতে ফেনী থেকে ঢাকায় এসেছিলেন শফিকুর রহমান। দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাসায় রাত কাটিয়ে গতকাল সকাল সাতটার মধ্যেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) গেটে এসে পৌঁছান তিনি। কিন্তু ষাটোর্ধ্ব শফিকুর রহমান ভেতরে ঢুকতে পারেননি। মেয়েকে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন
সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা। শফিকুর রহমানের মতো অসংখ্য ব্যক্তিকে রোগী নিয়ে বিএসএমএমইউর গেটে এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এক্স-রে রিপোর্ট, ব্যবস্থাপত্রসহ চিকিৎসাসংক্রান্ত কাগজপত্র নিয়ে রোগীদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। নিরাপত্তাকর্মীরা সকাল থেকেই গেট বন্ধ করে রেখেছিলেন। ভেতরে ঢুকতে চাইলে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান, ভেতরে যাওয়া চলবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বহির্বিভাগ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং ৪০ শয্যার আইসিইউ ও ওটি কমপ্লেক্সের উদ্বোধন করেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জরুরি ও বহির্বিভাগের গেট ছাড়াও দক্ষিণের গেটটিও বন্ধ ছিল দুপুর ১২টা পর্যন্ত। তবে ওই গেট দিয়ে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী, গণমাধ্যমকর্মী এবং অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ব্যক্তিদের ঢুকতে দেওয়া হয়।
বহির্বিভাগের বাইরে একটি কাপড়ের ব্যানারে লেখা ছিল, ‘আজ দুপুর সাড়ে ১২টার পর জরুরি ও বহির্বিভাগের রোগীদের চিকিৎসা শুরু হবে।’ প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে আসেন সাড়ে ১০টার দিকে। অনুষ্ঠান শেষে বের হন ১২টায়। কিন্তু গেটগুলো বন্ধ ছিল সকাল থেকেই। সোয়া ১২টার পর মূল গেট খুলতেই রোগী ও তাদের সঙ্গে আসা লোকদের ঢল নামে।
কুমিল্লা থেকে আসা আলী আশরাফ বলেন, তিনি সকাল নয়টা থেকে পেটে ব্যথা নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। দুপুরের আগে চিকিৎসা পাওয়া যাবে না, এটা তিনি জানতেন না।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থেকে আসা মনোয়ারা বেগম জানান, তাঁর হাঁটুব্যথার চিকিৎসার জন্য ভোরে রওনা দিয়ে এসে দেখেন গেট বন্ধ। তাই ফুটপাতে বসে কাটিয়েছেন সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা।
ঢাকার কুড়িল বিশ্বরোডের বাসিন্দা সাজেদা বেগম জানান, তিনি এক বছরের শিশুর চিকিৎসা করানোর জন্য সকাল নয়টায় এসেছেন। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীরা ভেতরে যেতে দেননি। তিনি সন্তান নিয়ে কয়েক ঘণ্টা বাইরে বসে ছিলেন।
মো. ওয়াহিদ স্ত্রী ও নবজাতককে নিয়ে সাভার থেকে এসেছিলেন। শিশুটির পায়ে সমস্যা। নয়টা থেকে ১২টা পর্যন্ত গেটের বাইরে কোলের শিশু নিয়ে বসে ছিলেন।
যেসব রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছে, তাদের স্বজনদেরও ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। অনেকে অভিযোগ করেন, ওয়ার্ডগুলোতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কোনো চিকিৎসক ছিলেন না।
জানতে চাইলে বিএসএমএমইউয়ের পরিচালক আবদুল মজিদ ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালের উত্তর দিকের মাঠে বিকল্প বহির্বিভাগ বসিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেখানে রোগীরা চিকিৎসা নিয়েছেন।
বিকল্প বহির্বিভাগের ব্যাপারে আগে কোনো নোটিশ দিয়েছিলেন কি না, জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, বিকল্প বহির্বিভাগে রোগীদের নিয়ে যাওয়ার জন্য সাদা পোশাকের আনসার প্রস্তুত ছিল। সবকিছুর পরও অল্প কিছু অসুবিধা হয়ে থাকতে পারে।

আইবির জরিপঃ কুমিল্লায় সকালে মামলা, সন্ধ্যায় খারিজ

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) শীর্ষস্থানীয় তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গতকাল রোববার সকালে কুমিল্লার আদালতে মামলা করেন এক আইনজীবী। দুপুরে আদালত ওই মামলায় টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম হাফিজউদ্দিন খান, নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ও জ্যেষ্ঠ ফেলো মো. ওয়াহিদ আলমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পরে সন্ধ্যায় একই আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন।

একই দিন চট্টগ্রামের আদালতেও টিআইবির এই তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেন সেখানকার দুই আইনজীবী। এ দুটি মামলায় টিআইবির তিনজনকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি করা হয়।
গতকাল সকালে কুমিল্লার ১ নম্বর আমলি আদালতে টিআইবির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন বিএনপি-সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কুমিল্লা জেলা শাখার সদস্য তৌহিদুর রহমান। ৫০১/৫০২/১০৯ ধারায় কুমিল্লার ১ নম্বর আমলি আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম গাজী সাইদুর রহমান মামলাটি আমলে নেন এবং বিবাদী তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
বাদী তৌহিদুর রহমান গতকাল দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি একজন আইনজীবী হিসেবে ওই মামলা দায়ের করেছি। বিচারক মামলার আরজি দেখে বিবাদীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।’
কুমিল্লার সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. মজিবুর রহমানও সন্ধ্যায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পরে রাত সাড়ে আটটায় পিপি মজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ফরম (তলবানা) পূরণের কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে, যাতে বিবাদীর পূর্ণ ঠিকানাসহ যোগাযোগের আনুষঙ্গিক বিষয়াদি লিখতে হয়। কিন্তু বাদী তা না করায় একই আদালত সন্ধ্যায় মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন।
তবে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের একটি সূত্র জানায়, মামলাটি দায়েরের পর বাদী দলের পক্ষ থেকে চাপে পড়েন।
অবশ্য রাতে যোগাযোগ করা হলে বাদী তৌহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি তলবানার ফরম পূরণ না করায় আদালত পরে মামলাটি খারিজ করেছেন।
মামলায় অভিযোগ: মামলার আরজিতে বলা হয়, ২৩ ডিসেম্বর প্রকাশ করা টিআইবির জরিপ সম্পূর্ণ অসত্য, উদ্দেশ্যমূলক এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিক প্রকাশ বটে। জরিপের ফলাফল প্রকাশের দিন ২০০৭ সালে বিচার বিভাগের অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে ২০১০ সালের একটি তুলনামূলক পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়। ওই পরিসংখ্যানে দুর্নীতির মাত্রা ২০০৭ সালের তুলনায় ২০১০ সালে বেশি দেখানো হয়। টিআইবি উদ্দেশ্যমূলক ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সদ্য পৃথক হওয়া স্বাধীন বিচার বিভাগকে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপপ্রয়াস চালিয়েছে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
মামলার আরজিতে কুমিল্লার সহকারী পাবলিক প্রসিকিউর (এপিপি) আবুল কালাম আজাদসহ ১৩ জন সাক্ষীর নাম উল্লেখ করা হয়।
প্রসঙ্গত, টিআইবি ২৩ ডিসেম্বর ‘সেবা খাতে দুর্নীতি: জাতীয় খানা জরিপ-২০১০’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে সেবা খাতগুলোর মধ্যে বিচার বিভাগের দুর্নীতি সবচেয়ে বেশি বলে উল্লেখ করা হয়।
চট্টগ্রামের দুই মামলা: স্থানীয় আইনজীবী মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও মোহাম্মদ মুজিবুল হক বাদী হয়ে টিআইবির তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যথাক্রমে চট্টগ্রামে মহানগর হাকিম মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমানের আদালতে ও বিচারিক হাকিম কেশব রায় চৌধুরীর আদালতে পৃথক মামলা দুটি করেন।
তিন বিবাদীকে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে আগামী ১৩ জানুয়ারি এবং চট্টগ্রামের বিচারিক হাকিম আদালতে ৩১ জানুয়ারি হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন উভয় আদালত।
এর মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান অভিযোগ আমলে নিয়ে বলেন, টিআইবির প্রতিবেদনের একটি অংশে ‘উকিলের হয়রানির শিকার হয়েছেন ৩৯ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ’ বলে উল্লেখ করা হয়। বিচার বিভাগের অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় না আনলেও প্রতিবেদনের এ অংশের কারণে একজন আইনজীবী হিসেবে অভিযোগকারী সংক্ষুব্ধ বলে ধরে নেওয়া যায়। সার্বিক বিবেচনায় অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা থাকায় ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৫০০ ও ৫০১ এবং তৎসহ ১০৯ ধারার অধীনে আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নেওয়া হলো।
অন্য মামলায় চট্টগ্রাম জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম কেশব রায় আদেশে বলেন, ‘অভিযোগ পর্যালোচনায় আসামিদের বিরুদ্ধে ৫০০, ৫০১ এবং ১০৯ ধারা আমলে নেওয়া হলো।’
উভয় মামলার আরজিতে বলা হয়, নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর একটি প্রতিক্রিয়াশীল ও স্বার্থান্বেষী মহল বিভিন্নভাবে স্বাধীন বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন ও অকার্যকর করতে তৎপর। আসামিরা এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত। আসামিরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে সীমিতসংখ্যক ব্যক্তির শুধু অনুমাননির্ভর অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে কথিত জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
মহানগর হাকিম আদালতে করা মামলার বাদী মোহাম্মদ মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিআইবির প্রতিবেদন গোটা বিচার বিভাগের মর্যাদা প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। একজন আইনজীবী হিসেবে সমাজে আমাকেও খাটো করা হয়েছে। তাই আদালতের কাছে ফরিয়াদ জানিয়েছি।’
টিআইবির প্রতিক্রিয়া: মামলার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আইনের শাসনে বিশ্বাস করি। আইনি প্রক্রিয়ায় বিষয়টি শেষ করব। আশা করি, ন্যায় বিচার পাব এবং ন্যায় বিচারের মধ্য দিয়ে দেশে যে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে, সেটাও নিশ্চিত হবে। এ ব্যাপারে আমাদের আত্মবিশ্বাস রয়েছে।’
সনাকের নিন্দা: টিআইবির সহযোগী সংগঠন সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় মামলা দায়ের নিন্দা জানিয়েছে। গতকাল সনাকের কুমিল্লা ও লালমনিরহাট শাখার নেতারা বলেন, এটি একটি অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ এবং প্রতিষ্ঠানের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি নগ্ন হস্তক্ষেপ।

বিদ্যুতের দুঃসময় শুরু হবে বোরোর মৌসুম দিয়ে by অরুণ কর্মকার

সারা দেশে বিদ্যুতের গ্রাহকদের জন্য আরেকটি দুঃসময় এগিয়ে আসছে। আগামী জানুয়ারি মাসের শেষার্ধ থেকে বোরো চাষে পুরোদমে সেচ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে এই দুঃসময় শুরু হবে। ফেব্রুয়ারির শেষার্ধ থেকে এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত অবস্থা হবে দুঃসহ। সরকারের পরিকল্পিত প্রায় ৩৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র এ সময় (নভেম্বর-ডিসেম্বর) চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। ফলে সেচ মৌসুমে সংকট বাড়বে। এ ছাড়া, আগামী মার্চ-এপ্রিল মাস থেকে নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন শুরুর আশা করা হলেও একই সময় গ্রীষ্মকালীন বাড়তি চাহিদা যোগ হওয়ায় বিদ্যুৎ-সংকট তীব্রই থাকবে।
অবশ্য বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নে সরকারের মহাপরিকল্পনায় বেসরকারি খাতে (আইপিপি) এক হাজার ৩০০ মেগাওয়াটের আরও পাঁচটি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম যুক্ত করা হয়েছে। ২০১৪ সালের মধ্যে সাত হাজার মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে পরিকল্পনা ছিল, এ উদ্যোগ তার বাইরে।
তবে চলমান শীত মৌসুমেও চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ঘাটতি থাকায় এখনো ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র লোডশেডিং হচ্ছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) হিসাব অনুযায়ী প্রায় চার হাজার মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে এখন দৈনিক উৎপাদন তিন হাজার ৭০০ মেগাওয়াটের মতো। বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ কম এবং মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বেশ কয়েকটি কেন্দ্র বন্ধ থাকাই এর কারণ।
পিডিবির সূত্র জানায়, বর্তমানে গ্যাসস্বল্পতার কারণে ৫১৪ মেগাওয়াট এবং মেরামত-রক্ষণাবেক্ষণের কারণে এক হাজার ১৩২ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র চলছে না। পুরোনো অনেক কেন্দ্রে কারিগরি ত্রুটি দেখা দিয়ে হঠাৎ বন্ধ (ফোর্সড আউটেজ) হয়ে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে এসব কেন্দ্র মেরামত-রক্ষণাবেক্ষণে নিতে হচ্ছে। এ অবস্থার কারণে গত বছর নভেম্বর মাসের তুলনায় এ বছর নভেম্বর মাসে গড় উৎপাদন কম হয়েছে।
জানতে চাইলে বিদ্যুৎসচিব মো. আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসন্ন সেচ মৌসুম ও আগামী গ্রীষ্মটাই বিদ্যুতের শেষ কষ্টের সময় হবে বলে আমরা মনে করছি। আগামী মার্চ-এপ্রিল থেকে বছরের শেষ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে পরিস্থিতি স্থিতিশীল ও সহনীয় পর্যায়ে আসবে।’ তিনি বলেন, নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে যেসব কেন্দ্র চালু হওয়ার কথা ছিল, তার মধ্যে ভেড়ামারা ১১৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রটিতে গতকাল রোববার সকাল থেকে উৎপাদন শুরু হয়েছে। অন্য দুটি কেন্দ্রে উৎপাদন শুরু হতে আরও কিছুদিন লাগবে।
প্রসঙ্গত, বর্তমান সরকারের গত প্রায় দুই বছরে এক হাজার ১৩৬ মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ভেড়ামারা কেন্দ্রটিসহ বর্তমান সরকারের পরিকল্পিত উৎপাদন হচ্ছে ৪১৫ মেগাওয়াট।
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, বর্তমানে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের উৎপাদন-ক্ষমতায় ঘাটতি প্রায় ৪০ শতাংশ। আগামী বছর তা ১৭ শতাংশে নেমে আসবে। ২০১২ সালে তা হবে চার শতাংশ। এরপরের বছর চাহিদার তুলনায় উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।
লোড-ব্যবস্থাপনা করে সেচ: বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে অন্যান্য বছরের মতো এবারও লোড-ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সেচ মৌসুম সামাল দেওয়ার চেষ্টা করবে সরকার। এর অংশ হিসেবে সন্ধ্যায় সর্বোচ্চ চাহিদার সময় পানির পাম্পসহ কোনো ভারী যন্ত্র চালানো যাবে না। প্রতিদিন রাত ১১টা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত সেচের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজন হলে মার্চ মাসে সারকারখানায় গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হবে। গতকাল বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে এক আন্তমন্ত্রণালয় সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সভায় বিতরণ কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, এ বছর সেচের জন্য দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় এক হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ দরকার হবে। পিডিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সেচ মৌসুমে বিদ্যুতের গড় উৎপাদন চার হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের কিছু বেশি থাকবে।
প্রসঙ্গত, সেচের জন্য সারা দেশে প্রায় ২৫ হাজার নতুন সংযোগ চেয়ে আবেদন করেছেন গ্রাহকেরা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাঁদের বোঝাতে চেষ্টা করছে, নতুন সংযোগ ছাড়াই গত বছর যিনি যে ব্যবস্থাপনায় চাষ করেছিলেন এবারও সেভাবেই করতে।
অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জ বন্ধ: ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র নতুন বাহন হিসেবে চালু হওয়া ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যানগুলোর ব্যাটারি চার্জ করার জন্য গ্রিডের বিদ্যুৎ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দিয়েছে বলে জানা যায়।
ভাড়াভিত্তিক আর নয়: সরকার আর কোনো ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন নাও করতে পারে। অন্তত অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত এ রকমই। গত সপ্তাহে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়কে লেখা অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনামূলক চিঠিতে এই মত জানানো হয়েছে। কারণ হিসেবে ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে অতিরিক্ত ব্যয় এবং এই কেন্দ্রগুলো সময়মতো চালু না হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই অভিমত সম্পর্কে জানতে চাইলে বিদ্যুৎসচিব বলেন, এখন পর্যন্ত কত ক্ষমতার ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং সামগ্রিক পরিকল্পনা অনুযায়ী কতটা করতে হবে, তা হিসাব-নিকাশ করে এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আরও পাঁচটি আইপিপি: বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নে সরকারের মহাপরিকল্পনায় বেসরকারি খাতে (আইপিপি) আরও পাঁচটি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম যুক্ত করা হয়েছে। এই পাঁচটির মোট ক্ষমতা হবে এক হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। এর আগে ২০১৪ সালের মধ্যে সাত হাজার মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে মহাপরিকল্পনা ছিল, এই পাঁচটি তার বাইরে।
সরকারি সূত্র জানায়, ২০১৪ সাল নাগাদ নতুন বিদ্যুৎ দরকার হবে নয় হাজার মেগাওয়াট। তাই নতুন পাঁচটি আইপিপি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় প্রতিনিধিদল আসছে: বাগেরহাটের রামপালে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে যৌথ উদ্যোগের চুক্তি (জেভিএ) স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে ভারতের ন্যাশনাল থারমাল পাওয়ার করপোরেশন (এনটিপিসি) এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব ইন্ডিয়া লিমিটেডের (পিজিসিআইএল) একটি প্রতিনিধিদল আজ সোমবার ঢাকা আসছে। পাঁচ সদস্যের এই প্রতিনিধিদলটি জানুয়ারি মাসের মধ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সঙ্গে জেভিএ স্বাক্ষরের লক্ষ্যে আলোচনা করবে। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই ও দুই দেশের মধ্যে গ্রিড সংযুক্তির ব্যাপারেও এবারের বৈঠকে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
বিদ্যুৎসচিব বলেন, আগামী মার্চ মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সম্ভাব্য বাংলাদেশ সফরের সময় যাতে রামপালের কেন্দ্রটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা যায়, সে লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে।

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর ফলাফল মঙ্গলবার

দেশের সবচেয়ে বড় পাবলিক পরীক্ষা প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল আগামী মঙ্গলবার প্রকাশিত হচ্ছে। অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হবে ৩১ ডিসেম্বর। ওয়েবসাইট ও মুঠোফোনের খুদেবার্তার (এসএমএস) মাধ্যমেও ফলাফল জানা যাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় ফলাফল প্রকাশ করা হবে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শ্যামল কান্তি ঘোষ প্রথম আলোকে এ কথা জানিয়ে বলেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ফলাফল পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এ ছাড়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট (.িফঢ়ব.মড়া.নফ) ও মুঠোফোনের খুদেবার্তার মাধ্যমেও ফলাফল জানা যাবে।
প্রসঙ্গত, গত ২৩ নভেম্বর সারা দেশের ছয় হাজার কেন্দ্রে একযোগে শুরু হয়েছিল প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। প্রায় ২৫ লাখ শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নেয়। দেশের বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীর মোট ২১ লাখ ৫৭ হাজার ১৫ জন পরীক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী আর তিন লাখ ৩১ হাজার ১৩৩ জন মাদরাসা শিক্ষার্থী ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছিল। এর মধ্যে দুই লাখ ৮১ হাজার ১২১ জন পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। বিভিন্ন অভিযোগে বহিষ্কার হয়েছে ৬৬১ জন।
জেএসসি: অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জেএসসি ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জেডিসি পরীক্ষার ফলাফল ৩১ ডিসেম্বর প্রকাশ করা হবে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ও বাংলাদেশ আন্তশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন প্রথম আলোকে এ তথ্য জানান। তিনি জানান, ৩১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফলাফল তুলে দেওয়ার পর দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে আনুুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল প্রকাশ করা হবে। জেএসসি, জেডিসির ফলাফল নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান ছাড়াও শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট, ই-মেইল ও মুঠোফোনে খুদেবার্তার মাধ্যমে জানা যাবে।
আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে গত ৪ নভেম্বর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা শুরু হয়ে ২২ নভেম্বর শেষ হয়েছিল। পরীক্ষায় ১৫ লাখের বেশি শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৯১ জন জেএসসি এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দুই লাখ ৭২ হাজার শিক্ষার্থী জেডিসি পরীক্ষা দেয়।

পৌরসভা ও সংসদ উপনির্বাচনঃ খুলনা ও বরিশালে আ.লীগ সমর্থিত প্রার্থী চূড়ান্ত

খুলনা ও বরিশাল বিভাগের পৌরসভায় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। গতকাল রোববার বিভাগীয় দুই সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক এবং আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন নিয়ে দল-সমর্থিত প্রার্থী চূড়ান্ত করেন। জেলা, উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের চিঠি দিয়ে ওই প্রার্থীকে সমর্থনের বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জোটগতভাবে নির্বাচন করায় খুলনা বিভাগে সাতক্ষীরা সদর ও দাকোপ পৌরসভায় জাতীয় পার্টি-সমর্থিত প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। একই বিভাগের আলমডাঙ্গায় জাসদ-সমর্থিত প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। খুলনা ও বরিশাল বিভাগে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন আজ সোমবার। গতকাল রাত পর্যন্ত খুলনা বিভাগের মহেশপুর, কলারোয়া, গাংনী, পাইকগাছা, বাঘারপাড়া ও মনিরামপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি। আজ সকালের মধ্যে এসব পৌরসভায় প্রার্থী চূড়ান্ত করে সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেওয়া হবে।
খুলনা বিভাগ: খুলনা বিভাগে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীরা হলেন চুয়াডাঙ্গার জীবননগর পৌরসভায় জাহাঙ্গীর আলম, দর্শনায় মতিউর রহমান, কুষ্টিয়ার খোকসায় আলাউদ্দিন, মিরপুরে এনামুল হক মালিথা, ভেড়ামারায় শামীমুল ইসলাম, ঝিনাইদহ সদরে সাইদুল করিম, শৈলকূপায় তৈয়ব আলী, কালিগঞ্জে মোস্তাফিজুর রহমান, কোটচাঁদপুরে কাজী আলমগীর, হরিণাকুণ্ডতে শাহীনুর রেজা, নড়াইল সদরে সোহরাব হোসেন বিশ্বাস, কালিয়ায় আকরামুল হক, মেহেরপুর সদরে পিয়ারুল ইসলাম, যশোর সদরে এস এম কামারুজ্জামান, অভয়নগরে এনামুল হক, কেশবপুরে মিলন মিত্র, চৌগাছায় এস এম সাইফুর রহমান, বেনাপোলে মো. আশরাফুল আলম, বাগেরহাট সদরে হাবিবুর রহমান খান, মোরেলগঞ্জে মনিরুল ইসলাম তালুকদার ও মাগুরা সদরে আলতাফ হোসেন।
বরিশাল বিভাগ: বরিশাল বিভাগে চূড়ান্ত হওয়া প্রার্থীরা হলেন ভোলা সদরে আবদুল মমিন, লালমোহনে এমদাদুল ইসলাম, চরফ্যাশনে সালাম তালুকদার, বোরহানউদ্দিনে রফিকুল আলম, দৌলতখানে আলী আজম, পটুয়াখালী সদরে শফিকুল ইসলাম, কলাপাড়ায় এস এম রাকিবুল আহসান, পিরোজপুর সদরে হাবিবুর রহমান, মঠবাড়িয়ায় রফিকউদ্দিন আহমেদ, স্বরূপকাঠিতে দেলোয়ার হোসেন, বরিশালের গৌরনদীতে আরিফুর রহমান, মেহেন্দীগঞ্জে কামালউদ্দিন খান, মুলাদীতে মো. শফিকুজ্জামান, বানারীপাড়ায় গোলাম সালেহ মঞ্জু, আমতলীতে শামসুল হক গাজী, পাথরঘাটায় আনোয়ার হোসেন, বেতাগীতে আলতাফ হোসেন, নলছিটিতে তসলিমউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ও বাকেরগঞ্জে লোকমান হোসেন।