Saturday, March 24, 2012

ডিসেম্বরে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাজ শুরু হবে

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান বলেছেন,
ডিসেম্বরের মধ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার অবকাঠামোগত কাজ শুরু হবে এবং দ্রুতগতিতে এর কাজ সম্পন্ন করা হবে।

শনিবার রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে ‘ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পর্যটনমন্ত্রী একথা বলেন।

মন্ত্রী জানান, কক্সবাজার বিমানবন্দরের জন্য  ইতোমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে। এর জন্য ৮০০ একর ভূমি প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে ৭০০ একর খাস জমি এবং প্রায় ১০০ একর ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ভূমি। এটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা আরো বাড়বে।

বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী বলেন, পর্যটনের জন্য যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন একটি বড় শর্ত। এ উপলব্ধি থেকে সরকার কুয়াকাটা যাওয়ার সড়কে ইতোমধ্যে নতুন ৩টি সেতু নির্মাণ করেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাকি সেতুগুলোর নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

কক্সবাজারের পর্যটন সুবিধার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সরকার ইতোমধ্যে পরিকল্পিত এলাকার উন্নয়নের জন্য কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করেছে। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্রের তীর ঘেঁষে মেরিন ড্রাইভের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

তিনি বলেন, টেকনাফে এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন নির্মিত হলে বিদেশি পর্যটকরা আরো নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে পারবে।

মন্ত্রী জানান, বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য ‘অন এরাইভাল ভিসা’ প্রদান করা দেশের তালিকায় আরো নতুন দেশ অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ফারুক খান বলেন, সরকার ‘ট্যুরিজম অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিমান ও পর্যটন সচিব মো. আতাহারুল ইসলাম, বাংলাদেশে নিযুক্ত শ্রীলংকার রাষ্ট্রদূত, পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান হেমায়েত উদ্দিন তালুকদার, ইন্ডাস্ট্রি স্কিল কাউন্সিল অব ট্যুরিজম-এর চেয়ারম্যান এ কে এম বারী ও আইএলও বাংলাদেশের পরিচালক আন্দ্রে বুগি।

বিভিন্ন পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ ও অংশগ্রহণকারীদের চিন্তাধারা ও মতামতের মাধ্যমে এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের সমন্বয়ে বাংলাদেশে পর্যটন ও হসপিটালিটি খাতের উন্নয়নে একটি সুপরিকল্পিত ও সুনিয়ন্ত্রিত কার্যকরি পরিকল্পনা গ্রহণের জন্যে সম্মেলনটি আহ্বান করা হয়। মানব সম্পদ উন্নয়নে দক্ষতা, প্রশিক্ষণ, সার্ক অঞ্চলে পর্যটন ও হসপিটালিটি খাতের উন্নয়নে প্রতিদ্ধন্দ্বিতা মোকাবিলা, এ খাতে সরকারি, বেসরকারি ও দাতা সংস্থাদের ভূমিকা এবং বাংলাদেশে পর্যটন ব্রান্ডিং -এর উপর ৪টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ প্রতি বিদেশি পর্যটক থেকে গড়পড়তা মাত্র ১৪৭ মার্কিন ডলার আয় করছে যা অন্যান্য দেশের তুলানায় খুবই অপ্রতুল। জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৬ দেশের মধ্যে ১২৯তম। এটাকে তারা হতাশাজনক বলে উল্লেখ করেন। তারা বলেন, বিশ্বমন্দার কারণে দূরবর্তী দেশের পর্যটকের সংখ্যা কমে আসছে। তার পরিবর্তে আঞ্চলিক পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে ভারত ও চীনের পর্যটকদের প্রতি বেশি মনোযোগী হওয়ার উপর তারা গুরুত্বারোপ করেন। এ ক্ষেত্রে ইকো ট্যুরিজম ও রুরাল ট্যুরিজমের প্রতি পর্যটকদের আকর্ষণের কথা বক্তারা তুলে ধরেন।

আগের চেহারা ফিরে পাচ্ছে সোনাদিয়া দ্বীপ

আগের চেহারা ফিরে পাচ্ছে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ সোনাদিয়া দ্বীপ।
সামুদ্রিক পাখির বিচরণ, নতুন করে সৃষ্ট প্যারাবনে সবুজের সমারোহ আর সেখানে বসবাসকারী ৩ শতাধিক পরিবারের মানুষের সচেতন কার্যক্রমে দ্বীপটিতে ফিরে আসছে প্রাকৃতিক পরিবেশ।
এতে অনেকেই আশাবাদী এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই সোনাদিয়া ফিরে পাবে তার সেই পূর্বের রূপ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে সোনাদিয়া দ্বীপের প্রায় ৬০০ হেক্টর প্যারাবন নিধন করে তৈরি করা হয় চিংড়ি ঘের। যার প্রভাবে এখানকার জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ে।

পরে সোনাদিয়া দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ব্যাপক তৎপরতা শুরু করে নেকম, আইইউসিএন, এসবিএফ ও হেল্প নামের ৪ টি সংস্থা। বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তর, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক তহবিল এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অধিনে চলছে এসব কার্যক্রম।

ধ্বংস হওয়া প্যারাবন নতুন করে সৃষ্টি, সামুদ্রিক প্রাণী রক্ষা এবং ওই সব প্রাণীর অবাসস্থল উপযোগী পরিবেশ তৈরি করাই এ কার্যক্রমের লক্ষ্য।

সরেজমিন সোনাদিয়া দ্বীপ ঘুরে দেখা যায়, এক সময় লাকড়ি ব্যবহার, চিংড়ি ঘের তৈরির জন্য যারা দ্বীপের প্যারাবনের উদ্ভিদ নিধন করেছেন, তারাই এখন তা রক্ষায় সচেতনভাবে কাজ করছেন। যার কারণে সোনাদিয়া দ্বীপের প্রায় ১৮৮ হেক্টর জমিতে নতুন করে তৈরি হয়েছে প্যারাবনের কেউড়া, বাইনসহ নানা প্রজাতের উদ্ভিদ।

সোনাদিয়া দ্বীপের মাঝামাঝি এলাকায় নতুন করে তৈরি করা এসব প্যারাবনে গহীন অরণ্যের মতো পরিবেশ দেখা যায়। আর প্যারাবনের ভেতরে দেখা যায় বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক পাখি বসতি গড়েছে। ঝাঁক-ঝাঁক সামুদ্রিক গাঙচিল, মাছরাঙা, ঈগলের বিচরণ এক অন্যরকম পরিবেশ তৈরি করেছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর সিবিএ ইসিএ প্রকল্প কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, কক্সবাজার উপকুলীয় এলাকায় ১ হাজার ২১৫ ধরনের প্রাণী ও উদ্ভিত রয়েছে। এর মধ্যে উদ্ভিদ ৫৬৭, শামুক ১৬২, কাঁকড়া ২১, চিংড়ি ১৯, লবস্টার ২, মাছ ২০৭, উভচর প্রাণী ১২, সরীসৃপ ১৯,  পাখি ২০৬ প্রজাতের দেখা যায়। জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ বিনষ্টের কারণে এ জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে।

তিনি আরও জানান, প্রকল্পের অধীনের ইতোমধ্যে সোনাদিয়ায় ১৮৮ হেক্টর ও কক্সবাজারের নুনিয়ারছড়া এলাকায় ১০০ একর নতুন প্যারাবন সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তা রক্ষা করা হচ্ছে।

প্রকল্প কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম সুমন বাংলানিউজকে জানান, দ্বীপের বাসিন্দাদের উন্নত চুলা ব্যবহারে উৎসাহী করা, চুলা সরবরাহ, গ্রাম সংরক্ষণ দল গঠন করে সচেতনতা সৃষ্টি, গ্রামভিত্তিক কর্মশালা, স্থানীয়দের জীবন উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ নানা কর্মকান্ডের কারণে জীববৈচিত্র্য রক্ষার মতো পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

এ প্রকল্পের অধীনে প্যারাবন পাহারায় কাজ করছেন দ্বীপের ৪ ব্যক্তি। তাদেরই একজন আজিজুর রহমান।

তিনি জানান, প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্যারাবন পাহারা দেন তিনি। প্যারাবন নিধন, পশুদের কবল থেকে প্যারাবন রক্ষার জন্য তিনি সচেতন।

পরিবেশ অধিদপ্তর সিবিএ ইসিএ প্রকল্প কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ধারাবাহিকভাবে দ্বীপের পুরো অংশ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে আরও নানান কার্যক্রম চলছে।

তিনি বাংলানিউজকে জানান, কক্সবাজারের সোনাদিয়া, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন এলাকায় রয়েছে জীববৈচিত্র্যের সমাহার।

তিনি জানান, বর্তমানে বিশ্বে ৪৭৫ প্রজাতের মাছ রয়েছে। এক গবেষণায় কক্সবাজারে ২০৭ ধরনের মাছ দেখা গেছে। তার মধ্যে কোমলাস্থি ১৯ ও কঠিনাস্থি রয়েছে ১৮৮ প্রজাতির।

২০৬ প্রজাতির পাখির মধ্যে দেশি ১৪৯টি এবং ৫৭ ধরনের অতিথি পাখি দেখা যায়। বিশ্বের বিলুপ্ত প্রায় পাখিদের অনেক প্রজাতি কক্সবাজারে রয়েছে। এসব রক্ষায় চলছে তাদের কার্যক্রম।

ডিসেম্বরে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাজ শুরু হবে

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার অবকাঠামোগত কাজ শুরু হবে এবং দ্রুতগতিতে এর কাজ সম্পন্ন করা হবে।

Sunday, March 18, 2012

উখিয়ায় মৃত্যুমুখে ৮ খাল

মৃত্যুমুখে রয়েছে কক্সবাজারের উখিয়ার আটটি খাল।
অবৈধভাবে একের পর এক স্থাপনা নির্মাণ করে দখল হয়ে যাচ্ছে এসব দখল।

এতে খালগুলো হারিয়ে ফেলছে পানি ধারণক্ষমতা। আবার বাঁধ দিয়ে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে খালের পানিপ্রবাহ। এসব কারণে এক পশলা বৃষ্টিতেই দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। গত বর্ষায়ও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে শত শত ঘরবাড়ি। এতে নষ্ট হয়ে যায় শত শত একর জমির ফসল। শিগগির এসব খাল অবৈধ দখলমুক্ত করা না হলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমেও বন্যাসহ ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বঙ্গোপসাগরের মোহনা থেকে উৎপত্তি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী রেজু খালের। একসময় এ খালের পানির ওপর নির্ভরশীল ছিল আশপাশের শত শত পরিবার। আবার এ পানি দিয়েই বছরজুড়ে শত শত একর জমিতে চলত ফসল উৎপাদন। কিন্তু ক্রমাগত দখলে এটি এখন পরিণত হয়েছে মরা খালে। রাজাপালং ইউনিয়নের পশ্চিম দরগাহ বিল গ্রামের আবদুল করিম (৬৫), নুর আহমদ (৫০) ও আলী চান মেম্বার জানান, এক সময় রেজু খালের জোয়ারের পানি দিয়ে শাকসবজি উৎপাদন করে শত শত পরিবার আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছিল। কিন্তু এ খাল থেকে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালীর প্রতিনিয়ত বালু উত্তোলন এবং খাল দখল করে বসতঘর নির্মাণের কারণে খালের নাব্যতা হারিয়ে গেছে।
দখল থেমে নেই নাফ নদীর মোহনা থেকে উৎপত্তি হওয়া পালংখালী খালেও। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, খালের ওপর গড়ে উঠেছে শত শত স্থাপনা। এভাবে নির্বিঘ্নে দখল চলতে থাকায় খালটি এখন হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এক সময় জোয়ারের পানিতে খালটি থৈ থৈ করলেও এখন এটি মৃতপ্রায়। স্থানীয় ইউপি সদস্য সিরাজুল হক, আওয়ামী লীগ নেতা এমএ মনজুর জানান, পালংখাল খাল দখল হয়ে যাওয়ায় পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এটি এখন আর আগের মতো পানি ধারণ করতে পারে না। তাই গত বর্ষায় পালংখালী এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়ে শত শত বসতবাড়ি ও ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে যায়। এ সময় দেয়ালচাপা পড়ে একই পারিবারের দু'জন নিহতও হন। চলতি শুষ্ক মৌসুমে খালটি খনন করে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করা না হলে আগামী বর্ষায়ও বড় ধরনের দুর্যোগের শঙ্কা করেন তারা।
সরেজমিনে ঘুরে দখলের চিত্র দেখা গেছে ভালুকিয়া থিমছড়ি খাল, মরিচ্যা খাল, পাতাবাড়ি খাল, গয়ালমারা খাল, দোছরি খাল এবং হিজলিয়া রেজুর খালেও। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই এসব খালের ওপর গড়ে তোলা হয়েছে স্থাপনা। এমনকি খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে বাঁধও!
এদিকে উপজেলা মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় সভায় খাল দখলের বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। উখিয়া-টেকনাফের সাংসদ আবদুর রহমান বদি এসব খাল খননের আওতায় এনে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে একটি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিনি খালের ওপর অবৈধভাবে গড়ে তোলা স্থাপনা উচ্ছেদেরও নির্দেশ দেন। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ইউএনও মোঃ জহিরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, 'খালের ওপর যেসব অবৈধ স্থাপনা রয়েছে সেগুলো উচ্ছেদ করা হবে। একই সঙ্গে খালের স্বাভাবিক পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধেও নেওয়া হবে আইনগত ব্যবস্থা।'
একই প্রসঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম শাহ জালাল চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি শিগগির উপজেলার আটটি খাল খনন প্রক্রিয়ায় এনে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে বলে মন্তব্য করেন।

পানের বরজ স্থাপনে চলছে পাহাড় কাটা

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় সংরক্ষিত পাহাড় দখল করে
অন্তত আট হাজার পানের বরজ স্থাপন করা হয়েছে।

বনের গাছ ও পাহাড় কেটে এসব বরজ করা হলেও তা উচ্ছেদে বন বিভাগ কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া নতুন করে বরজ স্থাপনের জন্য বিচ্ছিন্নভাবে স্থানীয় লোকজন পাহাড় কাটছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭৫ সালের পর থেকে উপজেলার বড় মহেশখালী, হোয়ানক, কালারমারছড়া, শাপলাপুর ও ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সংরক্ষিত বনের ভেতরে পাহাড়ের ঢালু ও চওড়ায় অবৈধভাবে পানের বরজ স্থাপন করে স্থানীয় লোকজন। আর এসব বরজ স্থাপন করতে গিয়ে কাটতে হয়েছে সংরক্ষিত বনের গাছ ও পাহাড়। প্রতিনিয়ত পাহাড় কেটে সংরক্ষিত বনের ভেতরে গজিয়ে উঠেছে বরজ।
হোয়ানক ইউনিয়নের কালালিয়াকাটার বাসিন্দা আমির হোসেন, কলিম উল্লাহ ও নুর মোহামঞ্চদ জানান, পাহাড় কাটা আইনগতভাবে অপরাধ, সেই কথা এই এলাকার অনেকেই জানেন না। তাই পাহাড় কেটে বরজ তৈরি করছে বলে তাঁরা দাবি করেন। কালারমারছড়া ইউনিয়নের পূর্ব আধারঘোনার বাসিন্দা নূর মোহামঞ্চদ জানান, এক সপ্তাহ আগে পানের বরজে মাটি দেওয়ার জন্য পাহাড় কাটতে গিয়ে মোহামঞ্চদ ইদ্রিচ (৩৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। আহত হন আরও ছয়জন। এর পরও পাহাড় কেটে বরজ স্থাপন বন্ধ হচ্ছে না।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহেশখালীতে এক হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে সংরক্ষিত পাহাড়ের ভেতর ও চওড়ায় পান চাষ হচ্ছে এক হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টর জমিতে ছয়টি পানের বরজ করা যায়। আর পাহাড়ে পানের বরজের সংখ্যা ছোট-বড় মিলে প্রায় আট হাজার। পানচাষিদের সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার।
উপকূলীয় বন বিভাগের মহেশখালীর রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহামঞ্চদ বজলুর রহমান বলেন, উপজেলার কালারমারছড়া, হোয়ানক, বড় মহেশখালী, ছোট মহেশখালী ও শাপলাপুর এলাকায় বন বিভাগের ১৮ হাজার ২৮৬ একর সংরক্ষিত বনভূমি রয়েছে। তার মধ্যে ১০ হাজার একরের সংরক্ষিত পাহাড়ি বনভূমি অবৈধ দখলে রয়েছে। এসব পাহাড়ি বনভূমির গাছ ও পাহাড় কেটে অবৈধভাবে হাজার হাজার পানের বরজ স্থাপন করে। তবে জনবল না থাকায় এসব বরজ উচ্ছেদ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে তিনি দাবি করেন।

Saturday, March 17, 2012

সেনা মোতায়েনের বিষয়টি গুজবঃ নাসাকা

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক আদালতে
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারেরর সমুদ্র সীমানা নির্ধারণ বিষয়ে দেয়া রায়কে স্বাগত জানিয়েছে নাসাকা বাহিনী।

পাশাপাশি দু’দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি সৌহার্দ্যপূর্ণ সর্ম্পক বজায় রাখার আশ্বাস দিয়েছে তারা। এসময় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি কাল্পনিক ও গুজব বলেও দাবি করে তারা।
শনিবার সকাল ১০টায় সীমান্তে সৈন্যসমাবেশ ঘটানোর পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিজিবি-নাসাকা মিয়ানমারের মংডুতে পতাকা বৈঠকে বসে।

প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠকের পর বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল টেকনাফে ফিরে এসে ৪২ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্নেল জাহিদ হাসান সাংবাদিকদের উপরোক্ত বিষয়গুলো জানান।

মিয়ানমারের পক্ষে নাসাকা ৫ নং সেক্টরের ডেপুটি ডাইরেক্টর ইউ ডি মিং থিংক নেতৃত্বে সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়।

অপরদিকে নয় সদস্যের বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেয় ৪২ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্নেল জাহিদ হাসান।

Friday, March 16, 2012

তামাকের রাজ্যে ফুল by পুষ্পেন চৌধুরী

কক্সবাজারের চকোরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় তামাকের চাষ হয়।
ক্ষতি জেনেও চাষিরা দীর্ঘদিন ধরে তামাকের আবাদ করে আসছেন।

তবে বছর কয়েক ধরে উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নে ব্যতিক্রমী একটি ঘটনা অনেকের চোখ খুলে দিয়েছে।
সারি সারি তামাকখেতের মাঝে গোলাপ, গ্ল্যাডিওলাস, গাঁদা ফুলের চাষ করছেন কিছু চাষি। তামাক চাষে লাভ বেশি। ফুল চাষেও কম নয়। বরং তামাক জমির উর্বরতা কমায়, স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ঝুঁকি বাড়ায়। তাই বরইতলীর সচেতন অনেক চাষি এখন ফুলের চাষ করছেন।
এমনই একজন সিরাজুল ইসলাম। গোলাপ ও গ্ল্যাডিওলাসের চাষ করে দিন বদলেছেন। তিনি শিক্ষকতা করেন উত্তর বরইতলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। তাঁকে দেখে এলাকার অনেকে ফুল চাষে উৎসাহী হয়েছেন।
শুরুটা যেভাবে: স্বাবলম্বী হওয়ার চিন্তা থেকে ফুলের চাষ শুরু করেন সিরাজুল। বাড়ি তাঁর উপজেলার পূর্ব বড় ভেউলা গ্রামে।
সিরাজুলের শুরুর গল্পটা এ রকম: ২০০২ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর জাহাঙ্গীর কবির বরইতলীতে গোলাপের চাষ করতেন। তাঁর কাছে ফুল চাষের হাতেখড়ি। জাহাঙ্গীর কবির বেঁচে নেই। কিন্তু তাঁর শেখানো পথ ধরে অনেক দূর এগিয়েছেন সিরাজুল। বরইতলীতে ২৮০ শতাংশ জমি নব্বই হাজার টাকায় পাঁচ বছরের জন্য ইজারা নেন। ওই জমিতে একসময় তামাকের চাষ হতো। ওই বছরই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কসংলগ্ন ওই জমিতে গোলাপ (আমেরিকান মেরিন্ডা) ও গ্ল্যাডিওলাসের চাষ শুরু করেন। সার, চারা ও শ্রমিক মিলে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন। শুরুর বছর খুব একটা লাভ হয়নি।
পরের বছর থেকে লাভের মুখ দেখা শুরু করেন। বর্তমানে গোলাপের কলমের চারা তিনি বরইতলী নার্সারি থেকে এবং গ্ল্যাডিওলাসের চারা ঢাকা ও যশোর থেকে সংগ্রহ করেন। ফুল চাষে এখন সিরাজুলের সাত-আট লাখ টাকা বিনিয়োগ আছে। নারী-পুরুষ মিলে তাঁর বাগানে ১৪ জন শ্রমিক আছেন।
সিরাজুল জানান, নভেম্বর-ফেব্রুয়ারির দিকে ফুলের উৎপাদন ভালো হয়। চাহিদাও থাকে প্রচুর। গোলাপের চারা রোপণের দুই মাস পর ফুল ধরে। গ্ল্যাডিওলাসের চারা রোপণের ৬০-৭০ দিনের মাথায় ফুল বিক্রি করা যায়। একটি গোলাপ গাছ তিন-চার বছর ফুল দেয়। আর গ্ল্যাডিওলাস ফুল ফোটার ১৫-২০ দিনের মধ্যে বিক্রি করতে হয়।
ফুল চাষের জমিতে সাথি ফসল হিসেবে সিরাজুল ক্যাপসিকাম, শসা, টমেটো ও শিমের চাষ করেছেন। গত বছর সাথি ফসল বিক্রি করে এক লাখ টাকা আয় হয়েছে তাঁর।
ফুল বাজারজাতকরণ: সিরাজুলকে দেখে বরইতলীর অনেকে এখন ফুলের চাষ করছেন। তাঁদের মধ্যে মইনুল ইসলাম, এজাহার আহমদ, মো. করিম, ওসমান গণি, এহসানুল হক, ইদ্রিচ, মো. ইউনুস, মো. এনাম, জায়েদুল ইসলাম, আবসারুজ্জামান রয়েছেন। এসব চাষির অনেকে আগে তামাকের চাষ করতেন।
চাষিরা জানান, প্রতিদিন বরইতলী থেকে গড়ে তিন লাখ টাকার ফুল বিক্রি হয়। তাঁদের ভাষ্যমতে, সরকার যদি বিদেশে রপ্তানির উদ্যোগ নিত বা বাজার সৃষ্টিতে সহযোগিতা করত, তাহলে এখানে ফুল চাষের বিপ্লব হতো। তামাক চাষে নিরুৎসাহিত হতো অনেকে। পাশাপাশি ফুলচাষিদের প্রশিক্ষণ, সুলভ মূল্যে সার, বীজ ও ঋণ-সুবিধার দাবি জানান। বর্তমানে বরইতলী থেকে ফুল সারা দেশে পাঠানো হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় ও চাষিরা জানান, বর্তমানে চকোরিয়ায় ২২ হাজার হেক্টর কৃষিজমি রয়েছে। আর বরইতলী ইউনিয়নে কৃষিজমি আছে দুই হাজার ৪৫ হেক্টর। উপজেলায় তামাকের চাষ হয় এক হাজার হেক্টরে। এর মধ্যে বরইতলীতে ১২০ হেক্টর জমিতে তামাকের আবাদ হয়। ওই ইউনিয়নে ফুলের চাষ হচ্ছে ৬১ হেক্টরে। এর মধ্যে গোলাপের চাষ হচ্ছে ৪০ হেক্টর, গ্ল্যাডিওলাস ২০ হেক্টর ও গাদা এক হেক্টর জমিতে।
লাভের খতিয়ান: বরইতলীতে প্রতিটি গোলাপ এক থেকে পাঁচ টাকায় বিক্রি হয়। পাশাপাশি গ্ল্যাডিওলাস প্রতিটি পাঁচ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হয়। চাষিরা জানান, গত বছর তাঁরা আট লাখ টাকার গোলাপ ও চার লাখ টাকার গ্ল্যাডিওলাস বিক্রি করেন। খরচ বাদে লাভ হয় প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। ফুলের উৎপাদন বাড়িয়ে এ বছর তা দ্বিগুণ হবে বলে আশাবাদী তাঁরা।
তামাক চাষিরা জানান, চকোরিয়ায় ৪০ শতাংশ জমিতে তামাকের চাষ করলে কোম্পানিগুলো বছরে ২০-২২ হাজার টাকা জমির মালিককে দেয়। এ ছাড়া সার, বীজ, কীটনাশকসহ সহজ শর্তে তামাকচাষিদের ঋণ দেওয়া হয়। ফুল, সবজি ও ধান চাষে এসব সুবিধা পাওয়া যায় না। আর্থিক সুবিধা ও দীর্ঘদিনের অভ্যাসের কারণে অনেকে তামাকের চাষ ছাড়তে পারছেন না।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যা বলেন: উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিকউল্লাহ জানান, তামাক জমির প্রচুর পুষ্টি শোষণ করে বিধায় জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। মাটির জৈব পদার্থের ক্ষতি হয়। পাশাপাশি তামাক পুড়তে প্রচুর জ্বালানি কাঠের প্রয়োজন হওয়ায় আশপাশের বনাঞ্চল ধ্বংস হয়। ধান ও শাক-সবজির উৎপাদন হ্রাস পায়। তামাক পোড়ানোর ধোঁয়ায় শিশুদের শ্বাসকষ্ট, ক্যানসার, চর্মরোগ বাড়ে।
বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়া উদ্দিন বলেন, তামাকের বিষে বরইতলী তথা চকোরিয়ার বাতাস বিষাক্ত হয়ে উঠছে। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পেলে এখানে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ করা যাবে এবং বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে।

Thursday, March 15, 2012

জাপানি শিক্ষার্থীদের কক্সবাজার সফর

ভিন দেশীয় ভিন্ন ভাষা আর প্রকৃতির সাদা-কালো পরিবেশকে ভেদ করে
হৃদ্যতা বেরিয়ে এলো দু’রাজ্যের শিক্ষার্থীদের মধ্যে। একে অপরের ভাষা, ব্যবহার,

শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক ভাগাভাগি করে আনন্দে মেতে উঠলো।
বুধবার দুপুরে কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও তাদেরকে হেসে-খেলে আপন করে নেন। জাপানের হিরোশিমা চুজুগামিনে গার্লস হাই স্কুল’র ১৮ শিক্ষার্থীর একটি টিম সোমবার কক্সবাজারে আসেন। বুধবার তারা কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের গিয়ে বাংলাদেশি শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন অবস্থা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা নিয়ে মত বিনিময় করেন।

বেসরকারি উন্নয়নমূলক সংস্থা ‘পালস কক্সবাজার’র আমন্ত্রণে জাপানি এই শিশুরা এসেছেন। বুধবার সকালে পালস ডায়ামা ইন্টিগ্রেটেট স্কুলে যান শিক্ষার্থীদের ওই টিম। সেখানে তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। খেলেন। ছবি তুলেন। এরপর তারা পৌঁছান কক্সবাজার পৌরসভার উত্তর ডিগকুলের পালস প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। যেটি চুজুগামিনে স্কুলে শিক্ষার্থীদের টিপিনের অর্থ থেকে জমা করা টাকা দিয়ে পরিচালিত হয়। সেখানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে খাতা, কলম-পেন্সিলসহ বিভিন্ন শিক্ষা ও ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ করা হয়।

পালস কক্সবাজারের চেয়ারম্যান আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, “গত আট বছর ধরে জাপানি শিশুরা পালস এর আমন্ত্রণে কক্সবাজার আসছেন। তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, সংস্কৃতি, ভাষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা যেমন জানতে পারছে। তেমনি জাপানিরাও বাঙালি সংস্কৃতি, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে অভিজ্ঞতা সংঞ্চয় করে লাভবান হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি উভয় দেশের মধ্যে যে বন্ধুত্বপূর্ণ যে সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে এটি একমাত্র শিক্ষার্থী টিমের সফরের কারণে।”

তিনি এ ধারাবাহিতকা বজায় রাখতে প্রশাসনসহ সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

Sunday, March 04, 2012

মৎস্যভান্ডার সম্পর্কে ধারণা নেই খোদ মৎস্য বিভাগের-সমুদ্র জরিপ হচ্ছে না ২১ বছর by আব্দুল কুদ্দুস

‘১০ বছর আগেও সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমে এলিফ্যান্ট পয়েন্টে সাগরে জাল ফেললেই ধরা পড়ত ইলিশসহ নানা প্রজাতির মাছ। উপকূল থেকে সকালে গিয়ে রাতে মাছ ধরে পরের দিন সকালে ঘাটে ফিরতেন জেলেরা। মাছ বিক্রির টাকায় চলত জেলেদের সংসার। আর এখন সাগরের ১০০ থেকে ২০০ কিলোমিটারেও মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। ১০ থেকে ২০ দিন সাগরে কাটিয়ে ঘাটে ফিরতে হচ্ছে সামান্য কিছু মাছ নিয়ে।’


গত বৃহস্পতিবার বিকেলে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়াছটা ফিশারিঘাটে আক্ষেপের সঙ্গে কথাগুলো বলেন স্থানীয় জেলে আবদুল মজিদ (৫৬)। তিনি ২৬ বছর ধরে সাগরে ট্রলার নিয়ে মাছ ধরছেন। মজিদের কথার সমর্থন করেন জেলে মনির উল্লাহ (৪৫) ও গিয়াস উদ্দিন (৪৯)।
নুনিয়াছটা এলাকার ট্রলার মালিক গিয়াস উদ্দিন জানান, ২০ জন জেলে নিয়ে একটি ট্রলার সাগরে মাছ ধরতে গেলে খরচ হয় দুই থেকে তিন লাখ টাকা। সাগরে থাকতে হয় ১০ থেকে ১৫ দিন। ঘুরে ফিরে প্রায় সময় মাছ ছাড়াই ফিরছে ট্রলারগুলো। তখন খরচের তালিকা দীর্ঘ হয়।
কক্সবাজার ফিশিং বোট মালিক সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, জেলার আটটি উপজেলায় ছোটবড় সাত হাজার ট্রলার প্রায় ১২০ কিলোমিটারের এই বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাচ্ছে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি ট্রলার মাছ ছাড়াই ঘাটে ফিরে আসছে। মাছ না থাকায় হাজার হাজার ট্রলার ঘাটে নোঙর করে আছে। এতে ৮০ হাজারের বেশি জেলে বেকার হয়ে পড়েছেন। বঙ্গোপসাগর ক্রমান্বয়ে মাছ শূন্য হচ্ছে কেন? মাছের অবাধ বিচরণক্ষেত্র ঠিক আছে কিনা-এসব অনুসন্ধান জরুরি হয়ে পড়েছে।
জরিপ কার্যক্রম বন্ধ ২১ বছর ধরে: বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ জলসীমানায় মৎস্যসম্পদ বা ভান্ডারের মজুদ কত? এই হিসাব খোদ মৎস্য বিভাগেই নেই। কারণ গত ২১ বছর ধরে সাগরের মৎস্যভান্ডারের জরিপ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে সাগরে বিচরণরত মাছের প্রজাতি, মাছের অবাধ বিচরণক্ষেত্র এবং মজুদের পরিমাণ নির্ণয় সম্ভব হচ্ছে না।
এর সত্যতা নিশ্চিত করে কক্সবাজারের সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণাকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শাহাবুদ্দিন জানান, প্রায় এক লাখ ৬৬ হাজার বর্গকিলোমিটার জলসীমার বঙ্গোপসাগরের মৎস্যভান্ডারের মজুদ নির্ণয়, মাছের অবাধ বিচরণক্ষেত্র চিহ্নিত করাসহ নানা সম্ভাবনার দুয়ার উদ্ঘাটনের জন্য সরকার অত্যাধুনিক একটি সমুদ্র জরিপ জাহাজ কিনছে। সমুদ্র জরিপসহ মাছের বংশবৃদ্ধি-উন্নয়ন, পরিকল্পনা, মৎস্য আহরণ নিয়ন্ত্রণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সমপ্রতি প্রায় ১০০ কোটি টাকার ‘মেরিন ফিশারিজ ক্যাপাসিটি বিল্ডিং’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৫০ কোটি টাকায় জরিপ জাহাজ কেনা হচ্ছে। ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) এবং মালয়েশিয়া সরকার যৌথভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়ন করছে। প্রকল্পের লক্ষ্য উদ্দেশ্য এবং কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে ধারণা দিতে গত ১৯ জানুয়ারি ঢাকার সাভারে মৎস্য কর্মকর্তাদের তিন দিনের বিশেষ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই কর্মশালায় যোগ দেন কক্সবাজার সদর উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মইনুদ্দিন আহমদ।
মইনুদ্দিন আহমদ জানান, ওই কর্মশালায় বঙ্গোপসাগরের মৎস্যসম্পদ মজুদ নির্ণয়সহ সামুদ্রিক নানা বিষয়ে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। চলতি সালেই এই সমুদ্র জরিপ পরিচালিত হবে।
তিনি আরও জানান, ২১ বছর ধরে বঙ্গোপসাগর জরিপের কাজ বন্ধ রয়েছে। তাই সাগরের কোন লেভেলে কোন কোন মাছ বিচরণ করে, তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে মাছ আহরণও কঠিন হয়ে পড়েছে।
মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, স্বাধীনতার পর অর্থাৎ ১৯৭২ সালে জাপানের সহায়তায় প্রথম বঙ্গোপসাগরে মৎস্যসম্পদ জরিপ পরিচালিত হয়। এরপর ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বিশ্বখাদ্য সংস্থার (এফএও) সহায়তায় অনুদানে পাওয়া দুটি জাহাজ ‘আরভি অনুসন্ধানী’ ও ‘আরভি মাছরাঙা’ দিয়ে সমুদ্র জরিপের কাজ পরিচালনা করা হয়। ঘূর্ণিঝড় ও যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে পড়ে জাহাজ দুটি বিকল হলে জরিপের কার্যক্রমও দীর্ঘ ২১ বছর ধরে বন্ধ থাকে।

কক্সবাজারে দুই দিনের অকালবর্ষণঃ লবণ শুঁটকি রবিশস্য উৎপাদন ব্যাহত, বোরোর জন্য আশীর্বাদ

কক্সবাজারে দুই দিন ধরে অকাল বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। গত শুক্রবার সকাল থেকেই কক্সবাজারের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে শুরু হয় বৃষ্টি।
বর্ষণে কক্সবাজার উপকূলের ৭০ হাজার একর জমির লবণের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।

শুক্রবার বৃষ্টি শুরুর পর পরই বন্ধ হয়ে যায় লবণের উৎপাদন। বৃষ্টির কারণে শুঁটকিমহাল ও রবিশস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে বর্ষণ এ এলাকার বোরো ফসলের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। কক্সবাজারে শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে গতকাল শনিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
আবহাওয়া অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার উপকূলের কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, কক্সবাজার সদর, টেকনাফ ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলাসহ প্রায় ৭০ হাজার একর উপকূলীয় জমিতে প্রতি মৌসুমে লবণ উৎপাদন হয়ে থাকে। অন্যান্য মৌসুমের মতো এবারও গত ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে লবণের উৎপাদন। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা (বিসিক) কক্সবাজারের লবণ প্রকল্পের কর্মকর্তা মোহাম্মদ নিজামুদ্দিন গতকাল কালের কণ্ঠকে জানান, সরকার চলতি মৌসুমে দেশে লবণের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১৩ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। এবার মৌসুমের শুরুতে লবণের দাম মাঠপর্যায়ে কম ছিল। এ কারণে উৎপাদন শুরু হয় বিলম্বে। এবার ভারত ও মিয়ানামার থেকে চোরাই পথে লবণ পাচার বন্ধ থাকায় মাঠপর্যায়ে লবণের দাম বেড়ে যায়। শেষ সময়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে উৎপাদনকারীরা মাঠে নামে। গত সপ্তাহ পর্যন্ত বিসিকের হিসাব মতে, উৎপাদন হয়েছে প্রায় চার লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন লবণ। গত বছরও উৎপাদন হয়েছিল ১৩ লাখ মেট্রিক টন। দেশে প্রতিবছর লবণের চাহিদা রয়েছে ১২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন।
বিসিকের এক কর্মকর্তা জানান, লবণ সূর্যতাপে প্রাকৃতিকভাবে সামুদ্রিক লবণাক্ত পানি থেকে উৎপাদন করা হয়। এত দিন শীত মৌসুম থাকায় সূর্যতাপের প্রখরতা ছিল না। তাই উৎপাদনের পরিমাণ ছিল কম। সাধারণত মার্চ-এপ্রিলের প্রখর সূর্যতাপেই বেশি লবণ উৎপাদন হয়ে থাকে। আগামী মধ্য এপ্রিল পর্যন্ত হচ্ছে লবণ উৎপাদনের সময়। বর্ষণে উৎপাদন সাময়িক ব্যাহত হলেও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদন আশা করছেন বিসিক কর্মকর্তারা।
এদিকে অব্যাহত বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে বোরো চাষে এক প্রকার বিপর্যয় নেমে এসেছিল। আর এমন সময়ে গত দুই দিনের বৃষ্টিপাত বোরো চাষের জন্য 'বড় নিয়ামক' হয়ে এসেছে। কক্সবাজারের উখিয়ার রত্নাপালং গ্রামের বোরোচাষি আবুল মনসুর চৌধুরী কালের কণ্ঠকে জানান, এবারের রমজান মাস থেকে বিদ্যুতের লোডশেডিং ছিল না। মনে করেছিলাম বিদ্যুতের লোডশেডিং নামক অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়েছি। এ কারণে এবার আশায় বুক বেঁধে নেমেছিলাম। প্রধানমন্ত্রীও বারবার বলছিলেন দেশে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা হবে। এ কারণে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার আরো বেশি জমিতে চাষ দিয়েছিলাম। কিন্তু চাষের মাঝপথে এসে দেখি ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং। ফসলের ত্রাহি অবস্থার মুখে অবশেষে গতকালের বর্ষণ পেয়ে কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে। এদিকে বৃষ্টিতে কক্সবাজার উপকূলের শুঁটকি মহাল এবং রবিশস্য আলু, টমেটো, বেগুন, ঢেঁড়সসহ অন্যান্য সবজিও ক্ষতির শিকার হয়েছে।

মাতামুহুরী সেতুর মাঝখানে দেবে গেছেঃ দুর্ঘটনা ঘটছে চকরিয়ায়

ব্যস্ততম চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার মাতামুহুরী সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
সেতুর মাঝখানে বেশকিছু অংশ দেবে যাওয়া এবং কয়েক স্থানে রেলিং ভেঙে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

তবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) ক্ষতস্থানে জোড়াতালি এবং পাটাতন দিয়ে কোনোভাবে যানবাহন চলাচল উপযোগী করলেও সেই উদ্যোগ বেশিদিন টিকছে না। এটিকে স্থানীয় অনেকে 'সওজের কবর' বলে আখ্যায়িত করছেন। এর কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনায় হতাহত হচ্ছে পথচারীরা। এমনকি দেবে যাওয়া স্থানের উভয়পাশে চালকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য নেওয়া হয়নি কোন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা এবং দেওয়া হয়নি সাইনবোর্ডও।
মাতামুহুরী সেতুর এ সমস্যা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন টিআইবির সহযোগী সংগঠন সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) চকরিয়ার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল ইসলাম ছিদ্দিকী। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'প্রতিদিন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক দিয়ে হাজার হাজার যানবাহন মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে ব্রিজের ওপর দিয়ে চলাচল করছে। বিশেষ করে দিনের বেলায় তেমন একটা সমস্যা না হলেও রাতের বেলায় দূরপাল্লার পর্যটকবাহী বাসগুলো এই ব্রিজ পার হওয়ার সময় এই সওজর কবরের কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে এবং অনেক সময় দুর্ঘটনায়ও পতিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, 'ওই ব্রিজের মাত্র দুইশ' গজ দূরে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কার্যালয়। যদি সময়মতো এই সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে ব্রিজের বিশাল অংশ ধসে গিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ওই ব্রিজের নিকটবর্তী সংলগ্ন বিকল্প কোন সড়ক না থাকায় একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে ব্যস্ততম এই মহাসড়কে যান চলাচল। আর এ ধরনের কিছু ঘটলে হয়তো-বা তখনই কর্তৃপক্ষের ঘুম ভাঙবে এবং তোড়জোড় চালানো হবে।
কাকারা ইউনিয়নের লাগোয়া হাজিয়ান এলাকার বাসিন্দা বাবু লাল সেন বলেন, 'মাতামুহুরী ব্রিজের মাঝখানের সওজ'র ওই কবরের কারণে সমপ্রতি আমার বাবা রবীন্দ্র লাল সেনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আমার জানামতে এ পর্যন্ত সওজর এই কবরের কারণে অসংখ্য পথচারী হতাহত হয়েছে।'
যোগাযোগ করা হলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ চকরিয়ার উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবদুল মোতালেব বলেন, 'ওটা তো রাস্তা নয় যে, আমরা চাইলে সমস্যা সমাধান করতে পারবো। এরপরেও আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু করার তা করা হয়েছে। তিনি বলেন, 'বিষয়টি নিয়ে আমাদের উচ্চ পর্যায়ে অনেকবার লেখালেখি করা হয়েছে। কিন্তু, তাদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।'
প্রশ্নের জবাবে আবদুল মোতালেব বলেন, 'বর্তমান ব্রিজের উত্তর পাশে ৩৫০ মিটার দীর্ঘ আরেকটি নতুন ব্রিজ করার জন্য প্রোফর্মা তৈরি করে সেতু বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর পর ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে সংশ্লিষ্টরা এসে মাটি পরীক্ষা, সার্ভেসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু করে গেছেন। কিন্তু দীর্ঘসময় পার হলেও এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।' তিনি আক্ষেপ করে বলেন, 'এই সরকারের আমলে হয়তো ওই ব্রিজের কাজ শুরু করার সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনটি আমার মনে হচ্ছে না।'
সওজর চকরিয়ার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এস.ডি.ই) আমির হোসেন বলেন, 'আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি যানবাহন চলাচলে যাতে কোনো বিঘ্ন না ঘটে। গত বছরের প্রথমদিকে ব্রিজের মাঝখানে দেবে যাওয়া স্থানে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে যান চলাচল উপযোগী করা হয় এবং এ পর্যন্ত অন্তত চারবার সংস্কার করা হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'লবণ বোঝাই ট্রাক চলাচলের কারণে এমনিতেই মহাসড়কের নাজুক অবস্থা। এ কারণে প্রয়োজনীয় সংস্কার করেও ব্রিজের এই সমস্যা সমাধান করা যাচ্ছে না।'
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হয় কক্সবাজারস্থ নির্বাহী প্রকৌশলী (এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার) জাহাঙ্গীর আলমের সাথে। তিনি বলেন, 'মাতামুহুরী ব্রিজের এই সমস্যার কথা আমি আপনার কাছ থেকে জেনেছি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং দেবে যাওয়া স্থানের উভয় পাশে চালকদের সতর্কতামূলক ব্যবস্থাও গ্রহন করা হবে।' বর্তমান ব্রিজের উত্তর পাশে আরেকটি নতুন ব্রিজ স্থাপনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, 'নতুন করে ওই ব্রিজের ডিজাইন কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে।' তবে মাটি পরীক্ষা এবং সার্ভে করার কাজ শেষ হয়েছে বলে তিনি জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তৎকালীন আরাকান সড়কের চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর ওপর ৩০০ মিটার দীর্ঘ ব্রিজটির নির্মাণকাজ শুরু হয় দেশ স্বাধীনের আগে ১৯৬০ সালে। এই ব্রিজটির নির্মাণকাজের দায়িত্ব পায় 'দি ইঞ্জিনিয়ার লিমিটেড' নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৪ বছর ধরে এই ব্রিজটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার পর যান চলাচলে উম্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সেই থেকে অদ্যাবধি এই ব্রিজের দেখভাল করে আসছিল সড়ক ও জনপথ বিভাগ। তবে সেই থেকে তেমন কোনো সংস্কার বা রক্ষণাবেক্ষণ চোখে পড়েনি। বিভিন্ন স্থানে ভেঙে পড়েছে এই ব্রিজের রেলিংও। এতে এই ব্রিজ দিয়ে পারাপার করতে হয় চরম ঝুঁকি নিয়ে।
তবে এ সড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনের চালক এবং সওজর নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, বর্তমান ব্রিজটির প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে এবং নতুন ব্রিজটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত এই ব্রিজ দিয়ে যানবাহন চলাচলে কোনো বেগ পেতে হবে না। তাদের মতে, এখনো বর্তমান ব্রিজটির সেই ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। শুধু অভাব প্রয়োজনীয় উদ্যোগের।

দুই দিনের ভারী বৃষ্টিঃ মহেশখালীতে ভেসে গেছে কয়েক কোটি টাকার লবণ

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় গত শুক্র ও গতকাল শনিবারের ভারী বৃষ্টিতে লবণচাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে অন্তত ছয় কোটি টাকার লবণ। স্থানীয় কৃষকেরা জানান, গত বছর নভেম্বর মাসের শুরুতেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চাষিরা লবণ চাষ শুরু করেন।

তাঁরা মাঠ থেকে উৎপাদিত লবণ বিক্রি করছিলেন মণপ্রতি ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা দরে। লবণচাষিরা জানান, গত ডিসেম্বর ও চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতি মণ সাদা লবণ ১৮০ টাকা ও কালো লবণ ১৬০ টাকা দরে বিক্রি করেন। এতে তাঁদের মুখে হাসি ফোটে এবং লবণের বাম্পার ফলনের জন্য পুরোদমে কাজ করেন। কিন্তু হঠাৎ করে গত মাস থেকে মাঠপর্যায়ে লবণের দাম পড়ে যাওয়ায় চাষিরা কিছুটা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তার পরও মাঠে লবণ উৎপাদন করতে মরিয়া হয়ে চাষিরা কাজ করেন। কিন্তু দুই দিনের বৃষ্টিতে চাষিদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদন করা লবণ ভেসে যায়।
উপজেলা লবণ চাষি ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও বড়মহেশখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শরীফ বাদশাহ প্রথম আলোকে বলেন, এতে এই উপজেলার লবণচাষিরা অন্তত ছয় কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
মাতারবাড়ি ইউনিয়নের মগডেইল এলাকার লবণচাষি হারুন অর রশিদ বলেন, ‘এ বছর লবণের ন্যায্যমূল্যের আশায় পাঁচ একর জমিতে লবণ চাষ করেছি। আশা করেছিলাম, এবারের লবণ বিক্রির টাকা দিয়ে মেয়ে বিয়ে দেব। কিন্তু অসময়ে প্রবল বৃষ্টির পানিতে মাঠ থেকে প্রায় ৮০০ মণ লবণ ভেসে গেছে।’
কালারমার ছড়া ঝাপুয়া এলাকার লবণচাষি মনির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দুই দিনের বৃষ্টিতে চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হলেও তাঁরা হাল ছাড়েননি। এই মুহূর্তে বৃষ্টি আর না হলে মাঠ থেকে লবণ উৎপাদন করতে চাষিদের সময় লাগবে আরও ১৫ দিন। এ সময় অনেক চাষি তাঁদের পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করবেন বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কক্সবাজারের গবেষণা কর্মকর্তা এ টি এম ওয়ালি উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, এবারের লবণ মৌসুমে মহেশখালীতে ১৭ হাজার ৮০০ একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। কিন্তু গত দুই দিনে জেলার অন্তত ২৫-৩০ হাজার টন উৎপাদিত লবণ ভেসে গেছে। এ ছাড়া বৃষ্টির কারণে মাঠপর্যায়ে পুনরায় লবণ উৎপাদন করতে চাষিদের আরও সাত থেকে ১০ দিন সময় লাগবে।

কক্সবাজারের উন্নয়নে ২৭ দফা দাবি জানিয়েছে তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটি

কক্সবাজারের সার্বিক উন্নয়ন, প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশ রক্ষা এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগ নিরসনে
২৭ দফা দাবি জানিয়েছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির কক্সবাজার জেলা শাখা।

গতকাল শনিবার কক্সবাজার প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরা হয়। ২৭ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে ২০ মার্চ শহরের পাবলিক হল মাঠে সমাবেশ ডাকা হয়েছে।
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটির জেলা আহ্বায়ক ইদ্রিস আহমদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নানা সম্পদে সমৃদ্ধ কক্সবাজার নানা ক্ষেত্রে অবহেলিত। শহরের দৃষ্টিনন্দন পাহাড়গুলো ভূমিদস্যুদের দখলে চলে যাচ্ছে। বিমানবন্দর সম্প্রসারণের নামে ৩০ হাজার জলবায়ু উদ্বাস্তুকে উচ্ছেদের চক্রান্ত চলছে। শহরের প্রধান নদী বাঁকখালীর দুই পাড় দখলের মহোৎসব চলছে। এতে পরিবেশ-প্রতিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) জেলা সভাপতি দিলীপ দাশ, জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আযাদ, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বশিরুল আলম প্রমুখ।
২৭ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে: চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন দ্রুত সম্প্রসারণ, কক্সবাজার পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে রূপান্তর করে নগর পরিকল্পনা বোর্ড গঠন, নির্বিচারে পাহাড় কাটা বন্ধ, সরকার-নির্ধারিত মূল্যে এলপি গ্যাস সরবরাহ, কক্সবাজার পর্যন্ত গ্যাসলাইন সম্প্রসারণ ইত্যাদি।
জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আযাদ বলেন, কক্সবাজার শহরের আয়তন, কক্সবাজার পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে রূপান্তর করা সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, ২৭ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে ২০ মার্চ পাবলিক হলের শহীদ দৌলত ময়দানে সমাবেশ ডাকা হয়েছে। দাবি আদায়ে ওই সমাবেশ থেকে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

রামুর ঐতিহ্যবাহী প্রজ্ঞামিত্র বনবিহার ধসে পড়ার আশঙ্কা

কক্সবাজারের রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের উত্তর মিঠাছড়ি এলাকার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী প্রজ্ঞামিত্র বনবিহারটি সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।
যে কোনো মুহূর্তে এটি ধসে পড়ার আশঙ্কায় নতুন করে বনবিহার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন স্থানীয় গ্রামবাসী।

সরেজমিন জানা যায়, ১৭৬৭ সালে তত্কালীন রাখাইন সম্প্রদায় প্রায় ১২ একর জমিতে এ বনবিহারটি প্রতিষ্ঠা করেছিল। প্রায় আড়াইশ’ বছর আগে কাঠ দিয়ে তৈরি বনবিহারের সঙ্গে নির্মাণ করা হয় দৃষ্টিনন্দন বুদ্ধধাতু জাদি, সীমাবিহার ও চৈত্যমন্দির। কালের পরিক্রমায় এগুলো এখন অতি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। জনশ্রুতি রয়েছে, এ মন্দিরে শতাধিক বুদ্ধমূর্তি ছিল। যথাযথ তদারকি ও রক্ষণা্বেক্ষণের অভাবে অধিকাংশ মূর্তি উধাও হয়ে গেছে। অনেক মূর্তি বিনষ্ট ও স্থান সঙ্কুুলান না হওয়ায় জেলার বিভিন্ন মন্দিরে স্থাপন করা হয়েছে। প্রজ্ঞামিত্র বনবিহারের অধ্যক্ষ, শ্রীমত্ সারমিত্র মহাথের জানান, এটি বহু পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী মন্দির। প্রায় আড়াইশ’ বছর আগে রাখাইন সম্প্রদায় মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করে। পরে মিয়ানমারে চলে যান। সেই থেকে গ্রামবাসী এ মন্দিরটি দেখাশোনা করে আসছেন। বর্তমানে মন্দিরটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তাই এ বিহারের পাশে নতুন একটি পাকা মন্দির নির্মাণ করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, অর্থাভাবে দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় পুরনো এ মন্দিরটি এখন ভেঙে ফেলা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
বিহার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নীতিশ বড়ুয়া জানান, প্রায় আড়াইশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ মন্দির এলাকাবাসী রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছেন। বুদ্ধ পূর্ণিমা, স্বর্গপুরী উত্সব, কঠিন চীবর দানসহ নানা ধর্মীয় আয়োজনে দূর-দূরান্তের পুণ্যার্থীর উপস্থিতিতে এ মন্দির সারাবছর মুখরিত থাকে। তিনি এ মন্দিরের উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি সহায়তা কামনা করেছেন।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শহীদ মোহাম্মদ ছাইদুল হক জানান, প্রজ্ঞামিত্র বনবিহার একটি পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধমন্দির। এ মন্দিরের উন্নয়নে সরকারিভাবে সহায়তা দেয়া হবে। মন্দিরের জমি দখলের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Saturday, March 03, 2012

ইনানীর আকাশে রাজা-রানি সাপ-কাঁকড়া

কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে পাথুরে সৈকত ইনানী।
এই সমুদ্রসৈকতের বিশাল আকাশজুড়ে গতকাল শুক্রবার ছিল বুনো অজগর, জলচর হাঙর, ডলফিন, জেলিফিশ, জলকন্যা, কাঁকড়ার ওড়াউড়ি।


এ ছাড়া সেই আকাশে ভেসে বেড়াতে দেখা যায় ডাঙাবাসী রাজা-রানিসহ আরও অনেককে। সাদা মেঘের আকাশে রংবেরঙের প্রাণিকুল যেন কিছুক্ষণের জন্য আলো ছড়াচ্ছিল। সৈকতে আসা বিপুলসংখ্যক পর্যটক যেন মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে সেই রাঙা আলোয়।
ইনানী সৈকতে অষ্টম বারের মতো ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করে ঢাকার চারুশিল্পীদের সংগঠন ‘ছবির হাট’। জাতীয় সংগীত পরিবেশন শেষে গতকাল বেলা তিনটায় ঘুড়িয়ালরা নেমে পড়ে সৈকতে। প্রত্যেকের হাতে ছিল মাছ, সাপ, কাঁকড়া, প্রজাপতি, জাতীয় পতাকাসহ বিভিন্ন আকার-আকৃতির নানা রঙের আকর্ষণীয় ঘুড়ি। বালুচরে দাঁড়িয়ে তারা শুরু করে ঘুড়ি প্রতিযোগিতা। সন্ধ্যা পর্যন্ত আকাশে অব্যাহত থাকে অজগর, হাঙর, ডলফিন, লবস্টার, জেলিফিশ, মৎস্যকন্যা, কাঁকড়া, প্রজাপতিসহ উড়ন্ত মাছেদের দৌড়ঝাঁপ।
‘ছবির হাটের’ ২১ ‘ঘুড়িয়াল’ আর ৬০ জন ‘উড়াল’ ছাড়াও স্থানীয় বহু শিশু-কিশোর, পর্যটক ইচ্ছেমতো ঘুড়ি ওড়ানোর আনন্দে অংশ নেয়। বালুচরে দাঁড়িয়ে প্রজাপতি ঘুড়ি ওড়াচ্ছিল উখিয়ার জালিয়া পালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র মনিরুল ইসলাম। বাবার হাত ধরে সে এই উৎসবে গত বছরও এসেছিল। তবে এ বছর সে নিজের হাতে ঘুড়ি উড়িয়েছে।
ছবির হাটের সদস্য গিয়াস আহমদ বলেন, উৎসবের আগে ইনানী সৈকতে পাঁচ দিনব্যাপী ঘুড়ি ওড়ানো প্রশিক্ষণ কর্মশালা সম্পন্ন হয়। তৈরি করা হয় দুই শতাধিক ঘুড়ি। এসব ঘুড়ি উৎসবের শেষ দিনে গতকাল সৈকতে ওড়ানো হয়। ‘ঘুড়ির সঙ্গে শিশু মনের স্বপ্ন উড়ুক’—এই হলো ঘুড়ি উৎসবের লক্ষ্য। আর তাই ঘুড়ি ওড়াতে বেশি উৎসাহিত করা হচ্ছে শিশুদের।
ছবির হাটের সদস্য ও উৎসবের সমন্বয়কারী কার্টুনিস্ট বিপুল শাহ্ বলেন, ‘ঘুড়ির ঐতিহ্য ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে দেশ থেকে। হারিয়ে যাচ্ছে শিশুদের মুক্ত মনে উড়ে বেড়ানোর স্বপ্নটাও। আমরা চাই, শিশু মনে স্বপ্ন বিকাশের পরিবেশ। এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নই ঘুড়ি উৎসবের লক্ষ্য।’

লোকজ উৎসবে মাতল সৈকত

মারমা, চাকমা, খেয়াং, ত্রিপুরা, মণিপুরি, খাসিয়া, তঞ্চঙ্গ্যা, বম, ম্রো, পাংখোয়া, রাখাইন ও লুসাই সম্প্রদায়ের এক অর্পূব মিলনমেলা বসেছিল
গতকাল শুক্রবার কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে।


দেশের নৃ-তাত্তি্বক জনগোষ্ঠীর জীবনধারা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য উপস্থাপনা নিয়ে 'পার্বত্য লোকজ মেলা' ছিল এটি। এর আয়োজক বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ও চ্যানেল আই।
এর আগে তিনবার 'আদিবাসী মেলা' নামে এ আয়োজন হলেও এবারই প্রথমবারের মতো 'পার্বত্য লোকজ মেলা' নামে এ উৎসব হলো। দুপুর ২টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে বিকেল ৪টায় বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সমুদ্রসৈকতের লাবণী পয়েন্টে এই মেলা চলে।
উদ্বোধনী বক্তব্যে মন্ত্রী ফারুক খান বলেন, 'পর্যটন শিল্পের বিকাশে পার্বত্য লোকজ মেলা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের দেশে বিচিত্র জাতিগোষ্ঠীর বাস। এদের কিছু অংশ নৃ-তাত্তি্বক জনগোষ্ঠী। এই জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতিকে পরিচয় করিয়ে দিতে এ উদ্যোগ বিশেষ ভূমিকা রাখবে।' বর্তমান সরকারকে পর্যটনবান্ধব উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সরকারই উপহার দিয়েছে পর্যটন আইন ২০১০, পর্যটন নীতিমালা ২০১০। এ ছাড়া কক্সবাজারের উন্নয়নে ৮০০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) খসড়া আইন মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের করা হচ্ছে। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত এখন আর কেবল কক্সবাজারবাসী কিংবা বাংলাদেশের সম্পদ নয়। কক্সবাজার এখন বিশ্ববাসীর অনন্য সম্পদ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান হেমায়েত উদ্দিন তালুকদার, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জয়নুল বারী, চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর ও পরিচালক (বার্তা) শাইখ সিরাজ। কিউট-চ্যানেল আই পার্বত্য লোকজ মেলা প্রকল্পের পরিচালক আবদুর রহমান জানান, ১২টি নৃ-তাত্তি্বক জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা তাঁদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য মেলা মঞ্চে তুলে ধরেছেন। তিনি জানান, বাংলাদেশের 'ক্ষুদ্র নৃ-তাত্তি্বক গোষ্ঠীর' সংস্কৃতিকে আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরার লক্ষ্যে এ মেলায় ৩৫টি স্টল অংশ নেয়। স্টলগুলোতে তাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও শৌর্যবীর্যের বহিঃপ্রকাশ হবে এমন পণ্য উপস্থাপন করা হয়। ক্ষুদ্র নৃ-তাত্তি্বক গোষ্ঠীর প্রাণবন্ত অংশগ্রহণে অপু মাহফুজ ও ফারজানা ব্রাউনিয়া মেলা মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন।

শাহপরীর দ্বীপ ও ইনানিকে বিশেষ জোন করা হবেঃ পর্যটন মন্ত্রী

বেসরকারি বিমান পরিবহণ ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান বলেছেন,
“বিদেশী পর্যটকদের সুবিধার্থে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও ইনানি সৈকতকে বিশেষ জোন করা হবে।


এছাড়া কক্সবাজারে প্রতি ক্ষেত্রে পরিকল্পিত উন্নয়ন করা হবে।”

শুক্রবার বিকাল চারটায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টে ‘পার্বত্য লোকজ মেলা’র উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল আই যৌথভাবে চতুর্থ বারের মতো এই মেলার আয়োজন করেছে।

ফারুক খান আরো বলেন, “সরকার পর্যটন আইন ও পর্যটন নীতিমালা-২০১০ উপহার দিয়েছে। সরকার কক্সবাজারের উন্নয়নে ৮০০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) খসড়া আইন মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। স্থানীয় বিমানবন্দরকেও আন্তর্জাতিক মানের করা হচ্ছে।”

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান হেমায়েত উদ্দিন তালুকদার, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জয়নুল বারী, চ্যানেল আই’র পরিচালনা পরিষদের সদস্য আব্দুল গফুর বাবু, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর ও পরিচালক (বার্তা) শাইখ সিরাজ।

দেশের নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর জীবনধারা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরতে এ মেলায় আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় দেশের ১৯টি নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠী নিজ নিজ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরে নাচ-গান পরিবেশন করেছে। অনুষ্ঠানে দেশের জনপ্রিয় শিল্পীরা গান পরিবেশন করে। অনুষ্ঠানটি চ্যানেল আই সরাসরি সম্প্রচার করছে।

টেকনাফ জইল্যার দ্বীপ প্রভাবশালীদের চিংড়ি প্রকল্প

টেকনাফের জইল্যার দ্বীপ এখন প্রভাবশালীদের চিংড়ি প্রকল্প। দ্বীপটির চারপাশে নাফ নদী ও বাইন কেওড়া গাছে ভরপুর। দ্বীপটি যেন জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের মডেল। দেশ-বিদেশি ভ্রমণকারীরা ছোট ডিঙি নিয়ে নদী পার হয়ে দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে যেত। সেখানে যেতে হলে অনুমতি প্রয়োজন।


একসময় ওখানে সারি সারি কেওড়া গাছ ছিল। গাছে গাছে বানর, নানান পাখির কলকাকলি, রাতে শিয়ালের ডাক এখন আর শোনা যায় না। সমাজের প্রভাবশালীরা বাগান উজাড় করে চিংড়ি চাষ করছেন। দ্বীপে নানা প্রজাতির মাছ কাঁকড়া, সাপ ও হরেক প্রজাতির রাক্ষসী মাছের উপযুক্ত স্থান ছিল। টেকনাফ উপকূলীয় বন কর্মর্কতা সিরাজুল ইসলাম জানান, দ্বীপে প্রচুর বাইন, কেওড়া বাগান ছিল যা দখলদাররা কেটে ফেলেন।

Friday, March 02, 2012

উখিয়ায় পানের দর চড়াঃ বেজায় খুশি কৃষক

উখিয়ায় পানের বাজার এখন চড়া।
এখানকার হাট-বাজার ও পাইকারি মোকামগুলোতে উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে পান।


যে কারণে বেজায় খুশি স্থানীয় পানচাষিরা। আগে যেখানে প্রতি বিড়া পান ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন তা কয়েকগুণ বেড়ে ১৪০-১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে উখিয়ার পানের কদর ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে রফতানি হচ্ছে এখানকার পান। স্বল্প পুঁজিতে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকরা ব্যাপক ভিত্তিতে পান চাষে ঝুঁকছে।

ঘূর্ণিঝড়, কালবৈশাখীসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত না হানলে এ মৌসুমে উখিয়া থেকে অন্তত ২০ কোটি টাকার পান রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলে ধারনা করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।

উখিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার জালিয়া পালং, রত্না পালং, হলদিয়া পালং, রাজা পালং ও পালংখালী ইউনিয়নের ২০০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছে।

প্রায় ৬ হাজার কৃষক পান চাষের সঙ্গে জড়িত। উখিয়া উপজেলার আবহাওয়া, জলবায়ু ও মাটি পান চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এক সময় বাজারে পানের ন্যায্যমূল্য না থাকায় অনেক কৃষক পান চাষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

কিন্তু এখন আর সে অবস্থা নেই। আগে যেখানে প্রতি বিড়া পান ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হতো এখন তা ১৪০-১৫০ টাকা।

হলদিয়া পালং ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা জাবেদ চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, ১০ শতক জমিতে পান চাষ করতে ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়।

জমিতে পরিমাণ মতো জৈব সার ও ইউরিয়া ব্যবহার করে সঠিক পরিচর্যা নিলে প্রতি বছর ১০ শতক জমি থেকে এক থেকে দেড়লাখ টাকার পান বিক্রি করা সম্ভব।

জাবেদ আরও জানান, উপজেলা কৃষি বিভাগ পানচাষিদের যথেষ্ঠ সহযোগিতা দিয়ে থাকে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে তদারকি করায় চাষিরা আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করে পান চাষ করে যাচ্ছে।

তিনি উদ্বেগ প্রকাশ বলেন, সরকারিভাবে পানচাষিদের জন্য ইউরিয়া সার বরাদ্দ থাকে না। যে কারণে ভর মৌসুমে সার না পেয়ে অনেক কৃষক হতাশার মধ্যে থাকে। সারের বিষয়টি বার বার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। 

রাজাপালং ইউনিয়নের পূর্বডিগলি পালংয়ের পানচাষি নুরুল আলম বাংলানিউজকে জানান, গতবছর তিনি ১০ শতক জমিতে পান চাষ করে খরচ বাদ দিয়ে ৪০ হাজার টাকা লাভ করেছিলেন।

তিনি জানান, সময় মতো ইউরিয়া সার পেলে তার দেড়গুণ লাভ হতো। এ বছর তিনি ২০ শতক জমিতে পান চাষ করেছেন।

রত্না পালংয়ের পানচাষি মুহাম্মদ সৈয়দ নুর জানান, এখানে সাধারণত মিষ্টি ও ঝাল পানের চাষ হয়ে থাকে। আশ্বিন মাস থেকে পৌষ মাস পর্যন্ত চাষিরা পানের চারা লাগায়। ফাল্গুন থেকে বৈশাখ, জৈষ্ঠ্য, আষাঢ়, শ্রাবণ মাস পর্যন্ত পান বিক্রির সময়।

এছাড়া সারা বছরই পান বিক্রি করা যায়। রাজাপালংয়ের আরেক চাষি সব্বির আহমদ জানান, পান চাষের প্রধান উপকরণ হচ্ছে বাঁশ ও ছন। কিন্তু সময় মতো বাঁশ ও ছন না পাওয়ায় কৃষকের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যায়।

তবে বাজারে পানের মূল্য থাকায় চাষিরা এখন বেজায় খুশি। রত্না পালংয়ের পান ব্যবসায়ী আবুল কাশেম জানান, পালংয়ের পানের চাহিদা সারা দেশে রয়েছে। অন্যান্য উপজেলার চেয়ে উখিয়া উপজেলার পানের চাহিদা বেশি।

তারা হাটহাজারী, চট্টগ্রাম, দোহাজারী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পানের আড়তে পান পাঠিয়ে থাকেন। সেখান থেকে ব্যবসায়ীরা দুবাই, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পান রপ্তানি করেন।

গতবছর উখিয়া, কোটবাজার, সোনার পাড়া ও মরিচ্যা বাজার থেকে কমপক্ষে ১০ কোটি টাকার পান রপ্তানি হয়েছে।

স্থানীয় কৃষকদের অভিমত সরকারি উদ্যোগে পানচাষিদের সহজ শর্তে ঋণ বিতরণসহ পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা দিলে আবাদ আরও বেশি হবে।

Thursday, March 01, 2012

উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নিয়ে বিশিষ্টজনরা কী বলেন ...

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়া অনুমোদন ও মাস্টার প্ল্যান
আটকে থাকার বিষয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর মোসতাক আহমেদ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন,


'শুধু কক্সবাজারবাসী নয়, বিশ্বের পর্যটকরা যারা কক্সবাজার বেড়াতে আসবেন সবাই কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সুফল ভোগ করবেন। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন অনুমোদন জেলাবাসীর জন্য খুশির সংবাদ।'
জেলার বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সে মহাপরিচালক আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন অনুমোদন আমাদের জন্য অত্যন্ত খুশির সংবাদ। তবে কর্তৃপক্ষের বাস্তব এবং পরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এগিয়ে নিতে হবে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থ বিবেচনায় রেখে।'
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, 'একটি আদর্শ পর্যটন শহর হিসেবে কক্সবাজারকে গড়তে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষই মাস্টার প্ল্যানসহ সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করবে।' কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী কালের কণ্ঠকে জানান, মাস্টার প্ল্যান ঝুলিয়ে রাখার মাধ্যমে এতদিন কক্সবাজারের উন্নয়ন আটকে রাখা হয়েছে। বর্তমান সরকার কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের মধ্য দিয়ে কক্সবাজারকে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছেন। তবে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারে গতিশীল ও উন্নয়নকামী লোকজনকে বসাতে হবে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এর সহ-সভাপতি এম এ শুক্কুর বলেন, 'কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন অনুমোদনে খুবই খুশি হয়েছি। তবে সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে নিতে পারে এমন লোকজনকে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে।'

রাজনীতির ঊর্ধে উঠে পরিকল্পিত নগরী বানাতে হবেঃ আহমদ হোছাইন

'দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজারকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে
প্রধানমন্ত্রী বরাবরই আন্তরিক-এটা প্রমাণ হলো কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) গঠনের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে।


এমনিতেই জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের এক মহাসন্ধিক্ষণের স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে সাগরপাড়ের শহর কক্সবাজার। ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার এক অন্ধকার সময়ে জাতিরজনক বেশ কিছুদিনের সময় অতিবাহিত করেছেন এখানেই। তাই পর্যটনকেন্দ্র এই কক্সবাজারের গুরুত্ব এসব ঐতিহাসিক কারণেও কম নয়। এ কারণে আমি সরকার প্রধান ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এগিয়ে আসায়।'
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রবীণ আইনজীবী এ্যাডভোকেট এ,কে আহমদ হোছাইন গতকাল কালের কণ্ঠকে এসব বলেন।
তিনি বলেন, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) গঠনের মাধ্যমে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যের শহর কক্সবাজারকে সাজানো হবে অপরূপ সাজে। আর কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) নেতৃত্বে সরকারি কর্মকর্তা নাকি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থাকবেন সেটা বড় কথা নয়-আসল কথা হচ্ছে একটি পরিকল্পিত আধুনিক নগরী বলতে যা বুঝায় সেরকম একটি নগরী গড়ে তোলার প্রয়াস চালাতে হবে।'
কক্সবাজারের প্রবীণ এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এ প্রসঙ্গে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত যেটি ব্যক্ত করেছেন সেটি হচ্ছে, 'আমরা কে কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃত্ত রয়েছি সেটার চাইতে আমাদের সবাইকে রাজনৈতিক বিবেচনার ঊধর্ে্ব থেকেই পরিকল্পিত নগরী গড়ার কাজে শামিল হতে হবে। তাঁর মতে কক্সবাজার হচ্ছে একটি আন্তর্জাতিকমানের পর্যটন শহর। এটি পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের শহর হবার কারণে এখানে আসেন দেশ-বিদেশের ভ্রমণপিপাসু লোকজন। তাদের কাছে রাজনীতি নয় অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাদিই সবচেয়ে বড় বিষয়। এ কারণে আমি রাজনীতির ঊর্ধে থেকে কাজ করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি বেশি।'

কক্সবাজারের উন্নয়নঃ গেজেট প্রকাশের অপেক্ষায় মাস্টার প্ল্যান by তোফায়েল আহমদ

সুন্দর ও পরিকল্পিত পর্যটন নগরী গড়তে কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত ৮০ হাজার একর জমি নিয়ে ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান (মাস্টার প্ল্যান) চূড়ান্ত করেছে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর। গত কয়েক মাস আগে এই মাস্টার প্ল্যানের অনুমোদন দেয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এখন শুধু গেজেট প্রকাশের কাজটি বাকি আছে।


২০১১ সালের ১১ মে এই মাস্টার প্ল্যানের খসড়া প্রকাশ করেছিল নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর। মাস্টার প্ল্যানের অগ্রগতি বিষয়ে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি শাহীনুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, মাস্টার প্ল্যানের কাজটি গত কয়েক মাস আগে মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত অনুমোদনের পর গেজেট প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। গেজেট প্রকাশের পর ২০ বছর মেয়াদি এই মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করবে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের শহর কক্সবাজারে পর্যটনশিল্পের প্রসার শুরু হয় এক যুগ আগে। বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আগমনে মুখরিত কক্সবাজারে দেখা দেয় আবাসন, বিনোদনসহ নানা সংকট। আর এ সুযোগে পর্যটকদের সুবিধা দিতে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত গড়ে উঠে শত শত বহুতল ভবন। গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে কক্সবাজার সাগরপাড়কে হোটেল মোটেল জোন ঘোষণার মাধ্যমে গড়ে তোলা হয় 'বিএনপি পল্লী'। আর সেখানে পরে গড়ে তোলা হয় বহুসংখ্যক অপরিকল্পিত অট্টালিকা।
হোটেল মোটেল জোনের পূর্ব পাশে গণপূর্ত বিভাগের আবাসিক এলাকায় শতাধিক গেস্ট হাউস বাণিজ্যিকভাবে হোটেল ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ঢাকায় যেখানে দুইটি পাঁচ তারকা মানের হোটেল নেই, সেখানে কক্সবাজারে গড়ে উঠেছে এক ডজনেরও বেশি পাঁচ তারকা মানের হোটেল। নির্মিত হচ্ছে আরো বেশ ক'টি হোটেল। এছাড়া স্টুডিও টাইপ তিন তারকা ও পাঁচ তারকা মানের অ্যাপার্টমেন্টও রয়েছে অর্ধশতাধিক। এসব নির্মাণে কক্সবাজারে বর্তমানে ৫৭ টি ডেভেলপার কম্পানি কাজ করছে বলে জানা গেছে।
দেশ-বিদেশের ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করেছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। ফলে কক্সবাজার একটি দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনৈতিক অঞ্চলে রূপ নিতে যাচ্ছে। কিন্তু সরকারিভাবে কোন ধরনের মাস্টার প্ল্যান না থাকায় পুরো কক্সবাজারেই অপরিকল্পিত নগরায়ণ শুরু হয়। এ অবস্থায় সরকারের পক্ষে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর ও বেসরকারি সংস্থা শেলটেক কনসালটেন্ট যৌথভাবে মাস্টার প্ল্যান তৈরির উদ্যোগ নেয়। প্রায় দুই বছর কাজ করার পর গত ১১ মে মাস্টার প্ল্যানের খসড়া প্রকাশ করে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর। 'প্রিপারেশন অব ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান অব কক্সবাজার টাউন অ্যান্ড সি- বিচ আপ টু টেকনাফ' নামক প্রকল্পের আওতায় এ মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হয়।
মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান শেলটেক সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের মহেশখালী পৌরসভা ও আদিনাথ মন্দির এলাকা থেকে শুরু করে কক্সবাজার পৌরসভা, কক্সবাজার সদর উপজেলার একাংশ, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে টেকনাফ সৈকত পর্যন্ত এলাকা, রামু ও উখিয়া উপজেলার একাংশ, টেকনাফ পৌরসভা এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রায় ৮০ হাজার একর জমি নিয়ে মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে।
খসড়া মাস্টার প্ল্যানে পুরো কক্সবাজারকে নয়টি গুরুত্বপূর্ণ জোনে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলে মহেশখালী ইকোনমিক অ্যান্ড হিস্টোরিক্যাল জোন, কক্সবাজার সিটি ডেভেলপমেন্ট এরিয়া, হিমছড়ি মাল্টিকালচার ট্যুরিস্ট জোন, ইনানী এঙ্ক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন, হোয়াই্যকং ইকোনমিক জোন, নাফ ট্যুরিস্ট জোন, টেকনাফ ট্যুরিস্ট জোন, শাহপরীর দ্বীপ ট্যুরিস্ট জোন এবং ইকোলজিক্যাল ক্রিটিকেল জোন। এসব জোনে রাখা হয়েছে- আরবান রেসিডেন্সিয়াল জোন, কর্মাশিয়াল জোন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন, মিঙ্ড ইউজড জোন, এডমিনিস্ট্রেটিভ জোন, রূরাল সেটেলমেন্ট জোন, ওপেন স্পেস, অ্যাগ্রিকালচারাল অ্যান্ড প্রাইমারি অ্যাক্টিভিটি জোন, লো টাইডাল জোন, ট্যুরিস্ট ফ্যাসিলিটিজ জোন, বিচ রিক্রিয়েশন জোন, ইনস্টিটিউশনাল জোন, ফরেস্ট অ্যান্ড ভেজিটেশন জোন, ওয়াটার বডি এবং রেসটিক্টেট জোন। এছাড়া মাস্টার প্ল্যানে সৈকত থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে কোনো স্থাপনা না করা, ৫০০ থেকে ১০০০ মিটারের মধ্যে ১৫ ফুট উচ্চতার কটেজ সিস্টেম, ১০০০ মিটার থেকে ১৫০০ মিটার পর্যন্ত ৫০ ফুট উচ্চতা, ১৫০০ মিটার থেকে ২০০০ মিটার পর্যন্ত ৭০ ফুট উচ্চতা, ২ হাজার মিটার থেকে ২৫০০ মিটার পর্যন্ত ১১০ ফুট উচ্চতা ও ২৫০০ মিটার থেকে ৩০০০ মিটার পর্যন্ত ১১০ ফুট এর বেশি উচ্চতার স্থাপনা নির্মাণ করার বিধান রাখা হয়েছে।
এই বিধানের ফলে ইতোমধ্যে সৈকতের ৫০০ মিটারের মধ্যে গড়ে উঠা অসংখ্য বহুতল ভবনের ভাগ্যে কী ঘটবে তা নিয়ে নতুন করে দেখা দিয়েছে বিতর্ক। এর মধ্যেই গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভায় কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর ৩ কোটি ৮৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত মাস্টার প্ল্যান তৈরির কাজ শুরু করে। গেল বছরের জুন মাসে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়।
খসড়া প্ল্যানে কক্সবাজারের মহেশখালী, কক্সবাজার সদর, রামু, উখিয়া, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রায় ছয় লাখ লোক অধ্যুষিত ৩৩ টি মৌজার ৭৯ হাজার ৬৫৭ একর জমি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্ল্যান প্রণয়নকারী প্রকল্পের টিম লিডার ড. নুরুল ইসলাম নাজেম এক সেমিনারে জানিয়েছিলেন, প্রকল্পটিতে দুই স্তর বিশিষ্ট উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম স্তর হচ্ছে স্ট্র্যাকচার প্ল্যান ২০ বছর (২০১১-২০৩১) এর আওতায় কাঠামো পরিকল্পনা নীতি ও কৌশল নির্ধারণপূর্বক পরবর্তী পরিকল্পনার অবকাঠামো ও দিকনিদের্শনা। আর দ্বিতীয় স্তরে রয়েছে ৫-১০ বছর (২০১১-২০২০) এর আওতায় বিস্তারিতভাবে নির্দিষ্ট এলাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা ও উন্নয়নের নিয়ন্ত্রণ। তিনি আরো বলেছিলেন, কক্সবাজার অঞ্চলের এই মহাপরিকল্পনা আগামী ২০ বছর কক্সবাজার শহর, সমুদ্রসৈকত এলাকা, মহেশখালী, টেকনাফ, শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিন অঞ্চলে উন্নয়ন প্রসারণ ও নিয়ন্ত্রণ করবে। ফলে পুরো অঞ্চলটি হবে প্রাকৃতিক ভারসাম্যযুক্ত একটি আদর্শ উন্নয়ন প্রবৃদ্ধির এলাকা।
কিন্তু কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ না থাকায় পর্যটন শহর কক্সবাজারের এ মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নকারী সংস্থা কে হবে তা নিয়ে সংশয় ছিল। অবশেষে ২৭ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) খসড়া আইন মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এদিকে গত ১০ মাস ধরে রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ এর ৪(১) ধারা মোতাবেক কক্সবাজারের জেলা প্রশাসককে সভাপতি করে গঠিত ৭ সদস্যের একটি কমিটি কক্সবাজারের সকল উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তবে উক্ত কমিটির কাছে পূর্ণাঙ্গ কোনো ক্ষমতা না থাকায় অনেক কিছুই তারা করতে পারছেন না। এ কমিটি কেবল শহরে অবকাঠামো নির্মাণের সিদ্ধান্ত দিতে পারলেও সৈকত ও মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন এলাকায় কোনো অবকাঠামো গড়ার ক্ষেত্রে কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারছে না। কমিটির কর্মকর্তারা বলেছেন, এসব এলাকা প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে গণ্য হবার কারণে তারা নানা জটিলতার সম্মুখীন হন।
অন্যদিকে কক্সবাজারে বিনিয়োগকারী ডেভেলপার্স কম্পানিগুলো তাদের স্থাপনাগুলোর ডিজাইন অনুমোদন দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন। কিন্তু বর্তমানে বিদ্যমান থাকা কমিটি নানা সীমাবদ্ধতা থাকার কারণে যত্রতত্র স্থাপনার অনুমোদন দিতে পারছে না বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক এবং কক্সবাজারের উন্নয়ন তদারকির জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেছেন, 'পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা না থাকায় এক্ষেত্রে নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এর পরেও কক্সবাজারের স্বার্থে আইন অনুসারে ইতোমধ্যে ৫৭টি ডেভেলপার্স কম্পানির নিবন্ধন, ১০টি ডেভেলপার্স কম্পানির অবকাঠামো ডিজাইন অনুমোদন ও ৭টি ব্যক্তি মালিকানাধীন অবকাঠামো অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।'

মামা ভয়ংকর!

কক্সবাজারের চকরিয়ায় সাদিয়া মণি ময়না (১৫) নামের
শারীরিক প্রতিবন্ধী কিশোরীকে জবাই করে হত্যা করেছে আপন মামা আবদুর রহিম!


গত রবিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ ছড়ারকুল গ্রামের পার্শ্ববর্তী আলু খেতে লোমহর্ষক এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মামাকে গ্রেপ্তার করেছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমি বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর কাছ থেকে শুনেছি দক্ষিণ ছড়ারকুল গ্রামের আবদুল জলিলের প্রতিবন্ধী কিশোরী সাদিয়া মণি ময়নাকে পার্শ্ববর্তী আলু খেতে নিয়ে গিয়ে জবাই করে হত্যা করে আপন মামা আবদুর রহিম। এ সময় ঘটনাকে ভিন্নখাতে নিতে সুচতুর মামা নিজেও একটু বিষ পান করে কিশোরীকে মুমূর্ষু অবস্থায় চকরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ েনিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। এরপর মামাও হাসপাতালে ভর্তি হয়। নিহত সাদিয়া শারীরিকভাবে একজন প্রতিবন্ধী এবং তার মামার বাড়ি ও বাপের বাড়ি একই স্থানে।'
এলাকাবাসী জানায়, নিহত কিশোরী ময়না তার নিজ বাড়িতে থাকতো ছোট দুইভাইকে নিয়ে। ময়নার বাবা গত তিনমাস পূর্বের একটি হত্যা মামলায় আত্মগোপনে রয়েছেন এবং মা হামিদা বেগম বেলু ওই মামলায় বর্তমানে জেলে। আগের হত্যা মামলায় পলাতক থাকা বাবার ইন্ধনে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মামা এ ধরনের নাটক সাজিয়েছেন।
স্থানীয় লোকজনের মতে, জবাই করার পর গুরুতর অবস্থায় কিশোরীকে নিয়ে মামা আবদুর রহিম প্রায় ২টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাতে কিশোরীকে নিয়ে আসে অপর দুই ব্যক্তি। একই সময় বিষ পান করে হাসপাতালে ভর্তি হন মামাও। এতে সন্দেহ হলে পুলিশে খবর দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে পুলিশ মামাকে হাসপাতাল থেকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
চকরিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ ইয়াছিন বলেন, 'প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী মামা আবদুর রহিমই এ ঘটনার সাথে জড়িত রয়েছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। তবে মামা কি কারণে কিশোরীকে হত্যা করেছে সেই রহস্য উদ্ঘাটনের জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন জানান, সামপ্রতিক সময়ে একই এলাকায় আরেকটি হত্যা মামলায় ওই কিশোরীর মা বর্তমানে কারাগারে বন্দি। পলাতক রয়েছেন কিশোরী সাদিয়ার বাবাও। তাই অধিকতর তদন্ত ছাড়া এখনই এ হত্যাকাণ্ডের আসল রহস্য বলা যাচ্ছে না। তিনি জানান, নিহত কিশোরীর দাদা নবী হোছন বাদী হয়ে সোমবার রাতে থানায় একটি মামলা করেছেন।
চকরিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ ফরহাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রতিপক্ষের লোকজনকে ফাঁসাতে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি হয়েছে মর্মে প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে। এই সূত্র ধরেই কিশোরী হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেমেছে পুলিশ এবং গ্রেপ্তারকৃত মামাকে প্রয়োজনে রিমান্ডে আনা হবে।

এখানকার উন্নয়নে চেয়ারে বসাতে হবে এখানকার মানুষকেইঃ লুৎফর রহমান কাজল

কক্সবাজার সদর-রামু আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য লুৎফর রহমান কাজল বলেন,
'দীর্ঘদিন পরে হলেও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নামের একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান গঠনের অনুমোদন পেয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।'


তিনি বলেন, 'এতদিন কক্সবাজারে একক কোনো প্রতিষ্ঠান না থাকায় পর্যটন শহরের উন্নয়ন ও বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। পর্যটন শহরে প্রায় এক বছর ধরে কোনো ধরনের অবকাঠামোগত কাজের নকশা অনুমোদন না পাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা পিছু হটেছেন।'
তিনি বলেন, 'মাস্টারপ্ল্যান এর ধোয়া তুলে কক্সবাজারে এখন কাজের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। যতটুকু জানি মাস্টারপ্ল্যানে কক্সবাজারের বহুল প্রত্যাশিত গভীর সমুদ্রবন্দরকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। সেখানে জনমতের কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। এরপরও কাঙ্ক্ষিত সেই মাস্টারপ্ল্যানের কোনো দেখা নেই। অথচ মাস্টারপ্ল্যানের কথা বলে থমকে দেওয়া হয়েছে কক্সবাজারের উন্নয়নকে।' বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত ও পাহাড় ঘেরা এ পর্যটন শহরকে সাজাতে পরিকল্পিত উন্নয়নের দাবি করে তিনি বলেন, 'জাতীয় সংসদে এ বিষয়ে আমি একাধিকবার প্রস্তাব উত্থাপন করেছি।' সৈকত দখল, পাহাড় কাটা, পরিবেশ ধ্বংস রোধ করে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য একটি শক্তিশালী কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কোনো বিকল্প নেই বলে জানান তিনি।
একই সাথে তিনি বলেন, 'কোনো আমলা দিয়ে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চালিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এটি জনপ্রতিনিধিদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। কক্সবাজারের উন্নয়নের জন্য কক্সবাজারের মানুষকে চেয়ারে বসাতে হবে। এছাড়া রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন এর অনুকূলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে সভাপতি করে গঠিত ৭ সদস্যের কমিটিও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে শহরে কোথায় কী হবে না হবে তার সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না। এ অবস্থায় পর্যটন শহরের উন্নয়নের জন্য কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নামের একটি পূর্ণাঙ্গ স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। এটি আরো আগে করা প্রয়োজন ছিল।'