Saturday, June 30, 2012

কক্সবাজারে আরো ৩ জনের লাশ উদ্ধার, নিখোঁজ ১২

কক্সবাজার জেলায় আরো তিন জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় বন্যা, পাহাড় ধস ও বজ্রপাতে এ পর্যন্ত ৫১ জনের প্রাণহানির খবর পওয়া গেছে।
এদিকে রামুতে নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ১২ জনের সন্ধান এখনো মিলেনি।

কক্সবাজারে বন্যার পানি নেমে গেলেও তার ধ্বংসলীলার চিহ্ন রেখে গেছে। ভেঙে বিলীন হয়ে গেছে বেড়িবাঁধ, রাস্তা, কালভার্টসহ মানুষের ঘর-বাড়ি। বাঁকখালী নদী দিয়ে ভেসে যাচ্ছে শত শত মৃত গবাদিপশু। বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের অভাবে চারদিকে চলছে বানভাসি মানুষের হাহাকার।

Friday, June 29, 2012

কক্সবাজারে আরো ৯ লাশ উদ্ধার, মৃত্যুর সংখ্যা ৪৮

কক্সবাজারে  টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্ট বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়া আরো নয় জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে কক্সবাজারে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৪৮ জনে।

বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ এখনো কমেনি। এক সপ্তাহ ধরে পানিতে ডুবে থাকা বসত-বাড়িগুলো এখন অধিকাংশই ভেঙে বসবাস অনুপযোগী হয়ে গেছে। তাই ঘরে ফেরা নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তার মধ্যে মধ্যে রয়েছে এলাকার বন্যাকবলিত মানুষ।
কেউ কেউ বাড়িতে ফিরতে শুরু করলেও তাদের অধিকাংশে’ই দিন কাটছে অনাহারে অর্ধাহারে। তাই কোথাও ত্রাণ বিতরণের খবর পেলেই ছুটে যাচ্ছে সবাই।

ব্যক্তিগত ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে কিছু ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। সরকারিভাবে যে বরাদ্দ দুর্গত এলাকার প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।

এদিকে উঁচু এলাকা থেকে বন্যার পানি সরে গিয়ে জেলার নিচু এলাকায় মারাত্মক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

এছাড়া গত বুধবার রাত থেকে পাহাড়ি ঢলের পানিতে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় ইউনিয়ন বদরখালী, পূর্ব বড় ভেওলা, পশ্চিম বড় ভেওলা,ঢেমুশিয়া, কক্সবাজার সদরের চৌফলদণ্ডীসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম।

বন্যাকবলিত এলাকার হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে এখনো অবস্থান করছে। বন্যার পানি নেমে গেলেও এখনো অনেক রাস্তা-ঘাট ডুবে রয়েছে।

এদিকে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঈদগাঁর কাছে বিধ্বস্ত একটি ব্রিজের দু’পাশে মাটি ও ইট দিয়ে সংস্কার করে যান চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে সতর্কতামূলকভাবে এই ব্রিজ দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। এছাড়া সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের তত্ত্বাবধানে পল্টুন দিয়ে ওই স্থানে বেইলি ব্রিজ স্থাপনের কাজ চলছে।

অপরদিকে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন বন্যা দুর্গতদের জন্য পাঁচশ’ মেট্টিকটন চাল এবং নগদ ৩০ লাখ টাকা ও শুকনো খাবার বরাদ্দ দিয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, এ বরাদ্দ দুর্গত এলাকার প্রয়োজনের তুলনায়  খুবই কম।

কক্সবাজারে পানি কমলেও অন্তহীন দুর্ভোগে মানুষ

কক্সবাজারে বন্যার পানি নেমে গেলেও তার ধ্বংসলীলার চিহ্ন রেখে গেছে। ভেঙে বিলীন হয়ে গেছে বেড়িবাঁধ, রাস্তা, কালভার্টসহ মানুষের ঘর-বাড়ি।

বাঁকখালী নদী দিয়ে ভেসে যাচ্ছে শত শত মৃত গবাদিপশু। বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের অভাবে চারদিকে চলছে বনভাসি মানুষের হাহাকার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল, রাজারকুল দক্ষিণ মিঠাছড়ি, কাউয়ারখোপ, রশিদনগর, খুনিয়াপালং, চাকমারকুল, জোয়ারিয়ানালা, গর্জনীয়া, কচ্ছপিয়া, ঈদগড় ইউনিয়নের প্রায় পাঁচশতাধিক গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়। তবে পানি নেমে গেলেও রয়ে গেছে অন্তহীন দুর্ভোগ।

রামু উপজেলার রাজারকুল এলাকার হাসমত আলী (৬৩) বাংলানিউজকে জানান, ৪/৫ ফুট পানিতে তলিয়ে ছিল পুরো এলাকা। এর ওপর পানির প্রচণ্ড স্র্রোত। ঘরের চাউনিতেই আশ্রয় নিয়েছিলেন পরিবারের ৫ সদস্যকে নিয়ে। সে সময় তার মতো এলাকার শত শত পরিবার আশ্রয় নিয়েছিলেন ঘরের ছাউনি, আশ্রয় কেন্দ্রে ও উঁচু কোনো জায়গায়। একদিন পানিবন্দি থাকার পর যখন পানি নেমে গেলো তখন দেখি চারদিকে শুধুই ধ্বংসের চিহ্ন।

পাহাড়ি ঢলের পানি ও পললে তলিয়ে গেছে রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ থেকে কক্সবাজার সদর উপজেলার চাঁন্দের পাড়া পর্যন্ত বাঁকখালী নদীর দু`তীরের শতাধিক একর বীজতলা ও সবজি ক্ষেত। ফলে ওইসব এলাকায় চলছে কৃষকের হাহাকার। পানিতে মারা পড়েছে শতাধিক পোল্ট্রি ফার্মের কয়েক হাজার মুরগী। নদীতে ভাসছে মৃত গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগী। মাছের ঘের ও পুকুর একাকার হয়ে গেছে পানির সঙ্গে।

রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল, রাজারকুল, দক্ষিণ মিঠাছড়ি, কাউয়ারখোপ, রশিদনগর, খুনিয়া পালং, চাকমারকুল, জোয়ারিয়ানালা, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া ও ঈদগড় ইউনিয়নের ৯৯টি ওয়ার্ডের সহস্রাধিক গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্রোতের তোড়ে এসব এলাকার শত শত গ্রামীণ সড়ক বিলীন হয়ে গেছে। যার কারণে মানুষকে এখন হেঁটেই পৌঁছতে হচ্ছে গন্তব্যে। এসব সড়কের প্রায় এক ডজন ছোট-বড় কালভার্ট পানির তোড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

বিলীন হওয়া সড়কে উপড়ে পড়েছে গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি। বাঁকখালী নদীর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের ভূতপাড়ায় দু`টি, হাইটুপী, তেমুহনী, অফিসেরচর আতিক্কাবিবির ঘাট, অফিসেরচর ডাকবাংলো এলাকা, রাজারকুল, চাকমারকুল মিস্ত্রিপাড়া, নয়াপাড়া, চরপাড়াসহ অন্তত ১৫টি স্থানে বাঁধ ও সড়ক ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল।

জানা যায়, রাস্তা ও কালভার্ট বিধ্বস্ত হওয়ার কারণে চলাচল বন্ধ রয়েছে রামু চৌমুহনী-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়ক, রামু-মরিচ্যা আরাকান সড়ক, রশিদনগর-ধলিরছড়া সড়ক, চেইন্দা-রাজারকুল সড়ক, ঈদগাঁহ-ঈদগড়, তেচ্ছিপুল-লম্বরীপাড়া সড়কসহ রামুর ছোট-বড় শতাধিক সড়কে।

দুর্গত এলাকার মানুষ জানিয়েছে, খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে অনেকেই অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। সরকারি-বেসরকারি কোনো ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছেনি অনেক এলাকায়। ব্যক্তি উদ্যোগে কেউ চিড়া, গুড়, বিস্কিট, মুড়ি দিলেও তা খুবই অপ্রতুল। দুর্গত এলাকায় চলছে মানুষের হাহাকার।

জেলার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর মোশতাক আহমদ বাংলানিউজকে জানান, এ রকম ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি রামুতে এই প্রথম। বর্তমানে বন্যাকবলিত প্রতিটি ঘরে ঘরে চলছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট।

রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল বাংলানিউজকে জানান, স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় ৪ লাখ মানুষ পানিবন্দি ছিল। এখনও বেশিরভাগ মানুষ পানিবন্দি। উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের রাস্ত-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, মৎস্য ও পোল্ট্রি খামার, অসংখ্য বসতঘর বন্যায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। কিছু এলাকায় পানি নামতে শুরু করলেও বর্তমানে সবখানেই খাদ্য সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।

এদিকে, চকরিয়ায় দু`লক্ষাধিক মানুষ সড়ক ও বেড়িবাঁধের ওপর মানবেতর বসবাস করছে। চকরিয়া-বাঁশখালী আঞ্চলিক সড়কের চকরিয়া অংশে প্রায় ৩০ হাজার বানভাসি মানুষ গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি, মালামাল নিয়ে খোলা আকাশের নিচে দিনাতিপাত করছেন।

পেকুয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও প্রায় শতাধিক গ্রামের মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবুল কালাম মিয়াজী বাংলানিউজকে জানান, উপজেলার ৭ ইউনিয়নের ৯৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা, ৬৫ হাজার লোক ও ১৫ হাজার পরিবারের বসতবাড়ি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

পেকুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু বাংলানিউজকে জানান, পেকুয়া উপকূল থেকে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। এ পর্যন্ত সরকারিভাবে ৫৯ টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

পাহাড়কে বেআব্রু করায় এই দুর্যোগ

'একসময় সাগর ও নদীর তীর ছিল ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা, নিরাপদ ছিল পাহাড়। সাগর উন্মত্ত হলে, নদীর তীর ভাঙলে মানুষ আশ্রয় নিত পাহাড়ে।

পাহাড়ই ছিল এখানকার সাইক্লোন শেল্টার। কিন্তু এখন সবই যেন উল্টাপাল্টা। পাহাড় এখন সবচেয়ে অনিরাপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোথায় যাবে মানুষ?' সাগরপারের বাসিন্দা কঙ্বাজারের প্রবীণ শিক্ষাবিদ মোসতাক আহমদ গত কয়েক দিনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রসঙ্গে দীর্ঘশ্বাস ফেলে কালের কণ্ঠকে বলেন এ কথা।
মোসতাক আহমদ বলেন, "সামুদ্রিক ঝড়-ঝঞ্ঝা এ জীবনে কম দেখিনি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় অসহায় মানুষ সব সময় আশ্রয় নিয়েছে পাহাড়ে। কিন্তু এমন কী যে হলো_এই পাহাড়েই কিনা এখন নেমে এসেছে দুর্যোগ। 'পাহাড়ে বন্যা'_এ কথা বলতেও লজ্জা করছে। পাহাড়ের আব্রু বলতে যা বোঝায় সেই গাছগাছালি মানুষই ধ্বংস করেছে। উলঙ্গ হয়ে গেছে পাহাড়গুলো। এ কারণে দুর্যোগ নেমে এসেছে।"
কঙ্বাজার-বান্দরবানের সীমানাসংলগ্ন এলাকা কঙ্বাজারের রামু, উখিয়া, চকরিয়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা ও আলীকদম উপজেলার বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকা গত দুই দিন পাহাড়ি ঢলে লণ্ডভণ্ড হয়েছে। অনেক পাহাড় ধসে গেছে। ঢলের পানিতে এসব এলাকার শত শত মাটির ঘর মিশে গেছে মাটির সঙ্গে।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী গ্রামের একই পরিবারের সাতজন মঙ্গলবার প্রাণ হারিয়েছে এ রকম একটি মাটির ঘর ধসে পড়ায়। পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত বাঙালিদের পাশাপাশি আদিবাসীরাও এখন আতঙ্ক ও চিন্তায় পড়েছে আকস্মিক এই পাহাড়ি দুর্যোগ নিয়ে। বাইশারী মধ্যম চাকপাড়ার বাসিন্দা উসালা চাক (৫০) বলেন, 'পাহাড়ে বর্ষণ হয় বটে, সেই বর্ষণের পানি তৎক্ষণাৎ নেমে যায়। কিন্তু এবার পানিতে ডুবে গেছে পাহাড়ি এলাকা। এ এলাকায় শতাধিক চাক ও মুরুং উপজাতির ঘর মঙ্গলবারের বর্ষণজনিত দুর্যোগে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।' লামার ফাইতং এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম জানান, একদম নীরবেই পাহাড়ে এই দুর্যোগ আঘাত হেনেছে। এ রকম সাধারণত হয় না। এই দুর্যোগে পাহাড়ের রাবার বাগান থেকে শুরু করে উপজাতিদের জুম চাষেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
কঙ্বাজারের রামু উপজেলার ঈদগড়ের হাসনাকাটা গ্রামের ৯৫ বছর বয়সী ফরিদুল আলম বলেন, 'বন্যা হয় নিচু এলাকায়, এখন সেই বন্যা পাহাড়ে আঘাত করায় হতবাক হয়েছি। আমরা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি ডেকে আনছি পরিবেশ নষ্ট করে।'
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোকতার আহমেদ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'একটি দেশে ২৫ ভাগ বনাঞ্চল থাকা প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের তা নেই। তদুপরি আমাদের পাহাড়গুলোতে বন না থাকায় সামান্য বর্ষণেই মাটি ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। ফলে নতুন নতুন দুর্যোগের সৃষ্টি হচ্ছে।'

কক্সবাজারে আরও ৪ লাশ উদ্ধারঃ মৃতের সংখ্যা ৪৮

কক্সবাজার জেলায় আরও ৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় চলমান দুর্যোগে ৪৮ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এদিকে রামুতে নৌকা ডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ১২ জনের সন্ধান এখনও মিলেনি।

শুক্রবার দুপুর ২টায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার সদর উপজেলার খুটাখালীতে পানিতে ভেসে যাওয়া ২ শিশুর লাশ পাওয়া যায়।
শুক্রবার চকরিয়া উপজেলায় এক নারীর ও রামু উপজেলার মিঠাছড়িতে এক শিশুর লাশ পাওয়া যায়। ফলে কক্সবাজারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৮ জনে।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, এ পর্যন্ত কক্সবাজারে পাহাড় ধসে মারা গেছেন ২৯ জন, বজ্রপাতে ৬ জন, দেয়াল চাপায় ৩ জন ও পানিতে ডুবে মারা গেছেন ১০ জন।

এর মধ্যে পাহাড় ধসে রামু উপজেলায় ৪ জন, চকরিয়ায় ১০ জন, পেকুয়ায় ২ জন, মহেশখালীতে ৩ জন ও উখিয়া উপজেলায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বজ্রপাতে চকরিয়া উপজেলায় ৩ জন, পেকুয়ায় ২ জন ও মহেশখালীতে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

দেয়াল চাপায় কক্সবাজার সদরে ২ জন ও মহেশখালীতে ১ জনের এবং পানিতে ডুবে কক্সবাজার সদরে ৩ জন, চকরিয়ায় ১ জন, রামুতে ৪ জন ও কুতুবদিয়ায় ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. জয়নুল বারী বাংলানিউজকে মোট ৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন।

কক্সবাজারে বন্যার পানি কমলেও বাড়ছে দুর্ভোগ

কক্সবাজার জেলায় সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বন্যাকবলিত এলাকার লোকজনের দুর্ভোগ  কমছে না। বিশুদ্ধ পানিসহ পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে প্লাবিত মানুষের ভোগান্তি বেড়েই চলেছে।

এছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। যদিও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩৯ মেট্রিক টন চাল, ২১ লাখ টাকা, ৪২ বস্তা চিড়া ও ৫০০ কেজি গুড় ত্রাণ হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ইতোমধ্যে কক্সবাজার থেকে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত প্রত্যাহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে নতুন কোনো সংকেত দেওয়া হয়নি।

বুধবার সকাল থেকে কক্সবাজারের বৃষ্টিপাত কমে গেছে। বুধবার পুরোদিন বিরতি দিয়ে হালকা বৃষ্টি হলেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বৃষ্টিপাত হয়নি। ফলে, কক্সবাজার জেলার ৮ উপজেলার প্লাবিত এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমে যাচ্ছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. জয়নুল বারী বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, টানা ৫ দিনের বৃষ্টিতে জেলার ৫২টি ইউনিয়ন পানিতে প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত এলাকার প্রায় ২০ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।

তিনি জানান, এর মধ্যে ২১টি ইউনিয়ন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এসব ইউনিয়নে জরুরি ভিত্তিতে ৩৯ মেট্রিক টন চাল, ২১ লাখ টাকা, ৪২ বস্তা চিড়া ও ৫০০ কেজি গুড় ত্রাণ হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।

টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের পানিতে কক্সবাজার সদর, পেকুয়া, চকরিয়া, কুতুবদিয়া, রামু, মহেশখালী, টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার প্লাবিত হয়। প্লাবিত এলাকার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন। প্লাবিত এলাকার সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জেলার প্রধান নদী বাঁকখালী, মাতাহুরীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁও ফরিদ কলেজ সংলগ্ন সেতুতে ফাটলের কারণে এখনো কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এছাড়া অন্য কয়েকটি সড়কেও যানচলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে, বন্যায় রামু উপজেলার ৯৯টি ওয়ার্ড পানিতে প্লাবিত হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো.জয়নুল বারী, ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার উত্তম কুমার পাল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জসীম উদ্দিন, রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেবী চন্দসহ বিভিন্ন কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার রামুর বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন । বন্যাকবলিত এলাকায় হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু খাদ্য ও পানি সংকটে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন।

এবিষয়ে কাউয়াখোপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক বাংলানিউজকে জানান, কাউয়াখোপ এলাকায় হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। বেশিরভাগ মানুষ ঘরের চালে (ছাদে) আশ্রয় নেন। সরকারিভাবে ব্যবস্থা না থাকায় তারা নিজ উদ্যোগে স্পিডবোট ভাড়া করে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন।
বর্তমানে এ ইউনিয়নের প্রতিটি ঘরে ঘরে খাদ্য ও পানি সংকট চলছে। সরকারিভাবে ৮ বস্তা চাল-ডাল ও ৩ বস্তা চিড়া বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল বাংলানিউজকে জানান, বর্তমানে বন্যাকবলিত এলাকায় খাবার সংকট খুব প্রকট। এ সংকট মোকাবেলায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

উখিয়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে ওই এলাকায় ২৫টির বেশি চিংড়ি ঘের তলিয়ে গিয়ে লাখ লাখ টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।

উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মাহমুদুল হক চৌধুরী, ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মিন্টু বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষকে সাইক্লোন সেল্টারে আশ্রয় দিয়ে খাবার বিতরণসহ বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পুনর্বাসনের জন্য তালিকা তৈরি করতে ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চকরিয়া উপজেলায় বন্যায় প্রায় ৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চকরিয় পৌর শহরের ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে পৌর বাণিজ্যিক কেন্দ্র ও পৌর শহর ৭/৮ ফুট পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। মাতামুহুরী নদীর দুই তীরের কয়েক শ ঘরবাড়ি, সহস্রাধিক গরু, ছাগল ও অসংখ্য হাসমুরগি পাহাড়ি ঢলের পানিতে ভেসে গেছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, চকরিয়া, মহেশখালী সড়ক, চিরিংগা-পেকুয়া সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে ঢলের পানি উপচে পড়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

চকরিয়া পৌরসভা ও উপজেলার কয়েকটি এলাকায় পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জাফর আলমের উদ্যোগে লঙ্গরখানা খুলে মানুষকে খাবার দেওয়া হচ্ছে।

চকরিয়ার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জহিরুল হক বাংলানিউজকে জানান, চকরিয়ায় প্রায় ৪০ হাজার একর চিংড়ি ঘেরের ৫ শতাধিক চিংড়ি ঘের ও সহস্রাধিক পুকুর পাড় উপচে শতকোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। চকরিয়া বিমানবন্দরে সেনাক্যাম্পে ঢলের পানি ঢুকে তাদের স্থাপনাগুলো ৩ ফুট পানির নিচে রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও পরিষদ থেকে ৫ হাজার কেজি চিড়া, ২ হাজার কেজি গুড় ও ৮ টন চাল বানভাসীদের মধ্যে বিতরণ করেছেন।

পেকুয়ায় শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। প্লাবিত এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

পেকুয়ার মগনামার চেয়ারম্যান শহিদুল মোস্তফা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, প্রায় ৫ চেইন বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে পুরো মগনামা ইউনিয়নে জোয়ার-ভাটা চলছে।

উজানটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান এটিএম শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, বিচ্ছিন্ন দ্বীপ করিয়ারদিয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। ওই এলাকায় এখন বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-ই খাজা আলামীন বাংলানিউজকে জানান, বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। সরকারিভাবে ৭ টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

প্রসঙ্গত, টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ধস, বজ্রপাতে কক্সবাজারের ৪৪ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। মারা গেছে, অসংখ্য গবাদিপশু।

Thursday, June 28, 2012

বর্ষণ ও জোয়ারে প্লাবিত কুতুবদিয়া ক্রসড্যাম স্লুইস গেটের দাবি

১৯৯১ থেকে গত ২২ বছর বেড়িবাঁধের কোনো সংস্কার না হওয়ায় ওই ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে বিক্ষুব্ধ সাগরের জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে ভাসছে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া।

পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়ে এ উপজেলার প্রাণকেন্দ্রসহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আর গৃহহারা হয়েছে বেড়িবাঁধের আশপাশের হাজার হাজার মানুষ। পানিবন্দি হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আউশ চাষের নতুন রোপা ও বীজতলা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু ঘর-বাড়ি, প্রতিষ্ঠান, রাস্তা-ঘাট, মন্দির, মসজিদ ও পুকুরের মাছ। দ্বীপের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতিসহ হাজার হাজার মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের চিত্র দেখা গেছে। গণমাধ্যম ও মানবাধিকার কর্মী রেজাউল করিম বলেন, পানি সরানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে জলাবদ্ধতা সহজে কাটবে না।
কৈয়ারবিলের পশ্চিমে বেড়িবাঁধের বাইরে পড়া হাজারো ভূমিহীন পরিবার জোয়ার ও বৃষ্টির অথৈ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। ভঙ্গুর বেড়িবাঁধ, জলাবদ্ধতায় বসতঘর নষ্ট, আউশ ফসলের ক্ষয়-ক্ষতির তথ্য ইউএনওকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন বলে চেয়ারম্যান আজমগীর মাতবর জানান। দক্ষিণ ধূরুংয়ের অলিপাড়া, মদন্যা পাড়া, বাতিঘর পাড়া ও পশ্চিম আলী ফকির ডেইল এলাকার ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে বহু ঘর-বাড়ি, ফসলের বীজতলা নষ্টসহ জলাবদ্ধতার কথা জানিয়েছেন চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আল-আজাদ। উত্তর ধূরুংয়ের নজুবাপের পাড়া ও ফয়জানির পাড়া এলাকার ভাঙা বাঁধ দিয়ে সাগরের পানি এবং ভারি বর্ষণে কাঁচা ঘর-বাড়ি নষ্টসহ জলাবদ্ধতার বর্ণনা দিয়েছেন চেয়ারম্যান সিরাজদৌল্লাহ। আলী আকবর ডেইলের কুমিরা ছড়া, তাবালেরচর ও তেলিপাড়া এলাকায় ঘর-বাড়ি নষ্ট, বেড়িবাঁধের ভঙ্গুর দশা ও জলাবদ্ধতার চিত্র তুলে ধরেন চেয়ারম্যান ফিরোজ খান চৌধুরী। বড়ঘোপের দক্ষিণ অমজাখালী এলাকায় অনবরত জোয়ারের পানি ঢুকছে, পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতার কারণে উপজেলা প্রশাসনিক ভবন ও উত্তর বড়ঘোপের বিস্তীর্ণ এলাকার ঘর-বাড়িতে পানি ওঠার কথা জানিয়েছেন চেয়ারম্যান শাকের উল্লাহ। এদিকে ঝুঁকিপূর্ণ আবহাওয়ার জন্য দ্বীপ থেকে বইরের সঙ্গে যোগাযোগ কয়েকদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে জরুরি খাদ্যসহ অন্যান্য মালামালের দাম বৃদ্ধি ও সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে ভোক্তাসাধারণ জানিয়েছেন।
দক্ষিণ ধূরুং ও লেমশীখালী ইউপি চেয়ারম্যান ক্রসড্যাম স্লুইস গেটে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে বলে দাবি করেন। জরুরি বাঁধসহ ক্ষতির শিকার লোকজনের পুনর্বাসনের দাবি করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদ। প্রত্যন্ত এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে পানি সরানোর প্রচেষ্টাসহ জরুরি বেড়িবাঁধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার কথা জানিয়েছেন ইউএনও মো. ফিরোজ আহমেদ। খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থে বর্ষার জন্য উত্তর ধূরুংসহ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জরুরি বাঁধের পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান কুতুবদিয়া বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আ.শ.ম. শাহরিয়ার চৌধুরী।

কক্সবাজারে পাহাড় ধস ও বজ্রপাতে আরও ২০ জনের প্রাণহানি

টানা বৃষ্টিপাতের মধ্যে পাহাড় ধস, দেয়াল চাপা ও বজ্রপাতে কক্সবাজারে আরও ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট ২৭ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এছাড়া নৌকা ডুবির ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছে আরও প্রায় ১২ জন।

জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের প্রাপ্ত তথ্যমতে, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পাহাড় ধসে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় সাতজন, রামু উপজেলায় সাতজন, বজ্রপাতের ঘটনায় চকরিয়া উপজেলায় দুইজন, পেকুয়া উপজেলায় দুইজন, কুতুবদিয়া উপজেলায় একজন ও বাড়ির দেয়াল চাপায় কক্সবাজার সদরে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার দিনে পাহাড় ধসে মহেশখালী উপজেলায় মারা গেছেন চারজন, কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুলে একজন, চকরিয়া উপজেলায় একজন এবং পেকুয়া উপজেলায় মারা গেছেন একজন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. জয়নুল বারী মঙ্গলবার দিনে ও রাতে মোট ২৭ জনের লাশ উদ্ধারের ব্যাপারে নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ভারি বর্ষণের কারণে জেলায় পাহাড় ধস, বজ্রপাত, বাড়ির দেয়াল চাপায় এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

বিভিন্ন উপজেলা থেকে পাওয়া তথ্যমতে, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টায় উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের সোনাঘোনা পাড়ায় পাহাড় ধসে একই পরিবারের চারজনসহ ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাত তিনটার দিকে রামু উপজেলার কাউয়ারকোপ ইউনিয়নের মধ্যম পাহাড়পাড়ায় পাহাড় ধসে একই পরিবারের তিনজনসহ সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। ওই দুই এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

এছাড়া বজ্রপাতের ঘটনায় কুতুবদিয়া উপজেলায় বড়ঘোপ ইউনিয়নের লাল ফকিরপাড়ার খুকি আখতার (১৫) নামের এক কিশোরী নিহত হয়েছে। একই সঙ্গে চকরিয়া উপজেলায় দুইজন, পেকুয়া উপজেলায় দুইজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হলেও এদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

মঙ্গলবার রাত ১২টায় বাড়ির দেয়াল চাপায় কক্সবাজার সদরে ঈদগাঁও ইউনিয়নের দরগারপাড়া এলাকার আনোয়ারা বেগম (৫০) নামের এক নারী নিহত হয়েছে। আনোয়ারা বেগম ওই এলাকার মোহাম্মদ ইসলাম স্ত্রী।

অপরদিকে, রামু উপজেলার গর্জনীয়ার গর্জই খালে পারাপারের সময় নৌকা ডুবে ১২ নিখোঁজ রয়েছেন।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগরে মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় সাগর এখনো উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মংলা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নং স্থানীয় সতর্ক সংকেত বলবৎ রাখতে বলা হয়েছে। বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২৩৭ মিলিমিটার।

অব্যাহত ভারি বৃষ্টির কারণে কক্সবাজারের প্রায় দেড় শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক, চকরিয়া-মহেশখালী সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. জয়নুল বারী বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে দুযোর্গ কবলিত ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে সড়ক ও জনপদ বিভাগ, সেনাবাহিনী যৌথভাবে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঈদগাঁও ব্রিজ সংস্কার শুরু করেছে।

কক্সবাজারে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪০

কক্সবাজারে বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে। বন্যায় পাহাড় ধস, দেয়ালচাপা, বজ্রপাত ও ঢলের পানিতে ভেসে গিয়ে এ পর্যন্ত ৪০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম।

পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে ডুবে গেছে জেলার ছয়টি উপজেলার ২০ হাজার বসতবাড়ি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ। ঢলের পানির তোড়ে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঈদগাঁও নাছির ব্রিজ ধসে যাওয়ায় মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে কক্সবাজারের সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। যোগাযোগ পুনঃস্থাপন করতে ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর একটি টিম ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে।
কন্ট্রোল রুম সূত্র জানায়, পাহাড় ধসে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পাতাবাড়িতে একই পরিবারের চারজনসহ সাতজন, রতনা পালং এলাকায় তিনজন, মহেশখালীতে চারজন ও চকরিয়ায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।

বসতবাড়ির দেয়ালচাপা পড়ে কক্সবাজার সদরের দুইজন, রামুর কাউয়ারখোপের তিনজন, মহেশখালীতে একজন ও পেকুয়ায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।

বজ্রপাতে কক্সবাজার সদরে তিনজন, চকরিয়ায় একজন, পেকুয়ায় একজন ও কুতুবদিয়ায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।

এছাড়া পাহাড়ি ঢলের পানিতে ভেসে গিয়ে রামুতে চারজন ও চকরিয়ায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।

জেলা প্রশাসক জয়নুল বারী জানান, দুর্ঘটনাস্থলগুলো খুব দুর্গম এবং বন্যা কবলিত হওয়ায় এখনো উদ্ধার তৎপরতা শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে স্থানীয় প্রশাসনকে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে ৩৯ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

এ দিকে পাহাড়ি ঢলে ভেসে গিয়ে রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া গ্রাম ও উখিয়ায় ১৮ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জানিয়েছেন।

স্থানীয় আবহাওয়া অফিস জানায়, বুধবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানা গেছে, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে চকরিয়া, রামু ও সদর উপজেলায়। পাহাড়ি ঢলে চকরিয়া পৌর এলাকাসহ ১৫ ইউনিয়নই বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। প্রধান সড়কসহ পৌর এলাকার অনেক দোকান পানিতে ডুবে গেছে। সদর উপজেলার বিসিক শিল্প এলাকাসহ ১০টি ইউনিয়ন বন্যায় ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে। রামু পৌর শহরসহ অনেক এলাকা বন্যায় ডুবে গেছে। এসব এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।

মৃত্যুঝুঁকি জেনেও পাহাড়ে বাস

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় পাহাড়ের পাদদেশে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। মঙ্গলবার পাহাড়ধসে এক শিশুসহ চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় পাহাড়ে বসবাসরত লোকজনের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করলেও তারা অন্যত্র সরছে না।

এদিকে পাহাড় থেকে সরে গিয়ে নিরাপদ স্থানে (ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে) আশ্রয় নিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। কিন্তু তাতে সাড়া মিলছে না। এতে আবারও পাহাড়ধসে প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন উপজেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ১৯৭০ সালের পর থেকে পাহাড়ের পাদদেশে জায়গা দখল করে লোকজন বসতবাড়ি নির্মাণ শুরু করে। ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা পেতে নিরাপদ স্থান হিসেবে উপকূলীয় মাতারবাড়ী, ধলঘাট ও কুতুবদিয়ার লোকজন উপজেলার ২৮টি পাহাড়ের পাদদেশে বসতি স্থাপন করে। পাহাড়গুলো ছোট মহেশখালী, বড় মহেশখালী, শাপলাপুর, কালারমারছড়া ও হোয়ানক ইউনিয়নে অবস্থিত। এসব এলাকায় বন বিভাগের ১৮ হাজার ২৮৬ একর বনভূমি রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার একরই বেদখল। দখল হওয়া জায়গায় ২০ হাজার পরিবারের আনুমানিক ৫০ হাজার মানুষ বাস করছে।
কালারমারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মোহামঞ্চদ নাজেম উদ্দিন জানান, মঙ্গলবার পাহাড়ধসে চারজনের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত লোকজনের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। কিন্তু হতদরিদ্র এসব লোকজনের অন্যত্র জায়গা কিনে ঘর তৈরির সামর্থ্য নেই। এ কারণে পাহাড়ে মৃত্যুঝুঁকি নিয়েও বাস করছে তারা। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে প্রবল বৃষ্টিতে মহেশখালীতে পাহাড়ধসে একই পরিবারের চারজনসহ ছয়জন প্রাণ হারায়।
কালারমারছড়া ইউনিয়নের উত্তর নলবিলা এলাকার বাসিন্দা আমান উল্লাহ, আবুল কালাম ও রবিউল হাসান বলেন, ‘পাহাড় থেকে সরে অন্যত্র গিয়ে বসতবাড়ি করার মতো কোনো সম্বল আমাদের নেই। এ কারণে জীবনের ঝুঁকি জেনেও সরতে পারছি না।’
কালারমারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা ইউপি সদস্য আবুল কালাম বলেন, পাহাড়ে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে বসবাসরত পরিবারগুলোকে অন্যত্র সরে যেতে বলা হলেও তারা সরছে না। ভারী বৃষ্টি হলে আবারও পাহাড়ধসে বড় রকমের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ টি এম কাউসার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মাইকিং করার পর কিছু লোক ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে। তবে অধিকাংশই এ আহ্বানে সাড়া দিচ্ছে না।

Wednesday, June 27, 2012

কক্সবাজারে পাহাড়ধস ও বজ্রপাতে ৭ জনের মৃত্যু

কক্সবাজারের অব্যাহত বৃষ্টির কারণে ২৬জুন মঙ্গলবার বজ্রপাত, পাহাড়ি ঢল ও ধসের ঘটনায় ৭ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে মহেশখালী উপজেলায় ৪ জন, কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুলে ১ জন, চকরিয়া উপজেলায় ১ জন এবং পেকুয়া উপজেলায় ১ জন নিহত হয়েছেন।

প্রবল বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসে ও পানিতে ডুবে মঙ্গলবার কক্সবাজারের মহেশখালী দ্বীপে ৪ জন নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে আরো ৫ জন।
দ্বীপের কালারমারছড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ ঝাপুয়ায় পাহাড় ধসে একটি বাড়ি চাপা পড়ে ঘটনাস্থলে মারা যান সখিনা বেগম (৪৫) নামে এক গৃহবধূ। এ ঘটনায় তার স্বামী শফিউল আলম (৫৩) আহত হয়েছেন। একই সময় উত্তর ঝাপুয়া গ্রামে পাহাড় ধসে ২টি ঘর চাপা পড়ে সাদ্দাম হোসেন (২৪) নামে এক তরুণ ও কিশোরী রাফি আকতার (১২) নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ৪ জন। দ্বীপের শাপলাপুর ইউনিয়নের জে.এম.ঘাট এলাকায় পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে ভেসে মারা গেছেন আবদুল মজিদ (৩৫) নামে এক ব্যক্তি। তিনি একজন মৃগী রোগী ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

এবিষয়ে মহেশখালী থানার পরিদর্শক (ওসি) রণজিত কুমার বড়ুয়া ৪ জন নিহত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। একিকে, বিকেল ৩টায় পেকুয়া উপজেলার সাবজীবন পাড়ার মৃত মোহাম্মদ সব্বিরের ছেলে মুবিনুল হক (৩২) বজ্রপাতে মারা গেছেন। এতে আহত হয়েছেন আবদুল আজিজ (২০) নামে আরও একজন।

পেকুয়া থানার পরিদর্শক (ওসি) মনিরুজ্জামান হতাহতের ঘটনা নিশ্চিত করেছেন। মঙ্গলবার একই সময়ে কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নে কাউয়ার পাড়া এলাকার মনজুর আলম (৪০) নামে এক ব্যক্তির বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে। খুরুশকুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুর রহিম জানান, মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়। অপরদিকে, চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের ৩নং ব্লকের খালকাচা পাড়ায় বজ্রপাতে একজন নিহত ও অপর একজন আহত হয়েছেন। বিকেল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিক আহমদ জানান, নিহত আলী আকবর (২৫) বদরখালী ইউনিয়নের ৩নং ব্লকের খাল কাঁচাপাড়ার ছাবের আহমদের ছেলে। আহত আলী আজগরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। একই সঙ্গে কক্সবাজার জেলার ৬ উপজেলার ৭৫ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। প্রায় একশ কিলোমিটার বেঁড়িবাধ ভেঙে জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে। জেলার ৩টি প্রধান নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

প্রবল বর্ষণে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রামঃ পরিস্থিতি চরম অবনতি

রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম শহরের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা তলিয়ে গেছে। গতকাল সকাল থেকে চট্টগ্রামে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরে পণ্য ওঠানামা ছিল বন্ধ।

বিকেলে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ গত রাতে ঢাকা ও সিলেটের সঙ্গে চট্টগ্রামের ট্রেন যোগাযোগও বন্ধ হয়ে যায়। পুরো শহরই কার্যত বিচ্ছিন্ন। পাহাড় ধসে ও দেওয়াল চাপায় মারা গেছেন অন্তত ১১জন।
নগরের বাকুলিয়া, চান্দগাঁও, আগ্রাবাদ, সিডিএ আবাসিক এলাকা, হালিশহরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গতকাল বিকেল থেকে ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ বিদ্যুতের সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সন্ধ্যার পর এসব এলাকা পানির সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। শহরের দুই-তৃতীয়াংশ তলিয়ে যাওয়ায় নগরে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় রিকশাই ছিল একমাত্র ভরসা।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে রেকর্ড ৩৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সারা দিনে নগরের প্রধান প্রধান সড়ক, উপসড়ক, অলিগলি ডুবে বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়ে। নগরের বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, চান্দগাঁও, খতিবেরহাট, বাকলিয়া, চাক্তাই, আছদগঞ্জ, আগ্রাবাদ, ট্রাঙ্ক রোড, সিডিএ আবাসিক এলাকা, মোগলটুলী, হালিশহর, এক্সেস রোড, ডিসি রোড, ষোলশহর, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, নালাপাড়া, মুরাদপুর, প্রবর্তক, কাপাসগোলা, বাদুড়তলাসহ বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গেছে।

চকবাজারের নাসির কলোনিতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি বাসায় হাঁটুপানিতে দাঁড়িয়ে আছে বাসিন্দারা। এই বৃষ্টিতে পাহাড়ি এলাকা খ্যাত নগরের আসকার দীঘিরপাড়, জামালখান, লালখান বাজারেও পানি উঠেছে। জামালখানের বাসিন্দা সৌমেন দত্ত জানান, ভারী বর্ষণের কারণে নালা ডুবে গিয়ে তাঁদের বাসায় পানি ঢোকে। এতে বাসার আসবাব নষ্ট হয়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার থেকে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় বৃষ্টিপাত শুরু হয়। গতকাল ভোর ছয়টা থেকে টানা বৃষ্টিতে নগরের বিভিন্ন স্থানে পানি উঠতে শুরু করে।

চট্টগ্রাম বন্দর: চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব সৈয়দ ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ জানান, বৃষ্টির কারণে বহির্ণোঙরে ১৩টি জাহাজ থেকে মালামাল খালাস হয়নি। বহির্ণোঙর থেকে বন্দর জেটিতে গতকাল আটটি জাহাজ ভেড়ার কথা ছিল, কিন্তু ভিড়েছে মাত্র চারটি। একটি জাহাজ বন্দর জেটি ছেড়ে গেছে। কনটেইনার জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানামা হয়েছে।

শাহ আমানত বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক স্কোয়াড্রন লিডার রবিউল হোসেন বলেন, ‘রানওয়েতে পানি উঠে যাওয়ায় বিকেল সাড়ে চারটা থেকে বিমানবন্দর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’ তিনি জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় রানওয়ের বাতি থেকে পর্যাপ্ত আলো পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার পর পানি নেমে গেলে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। তাতেও স্বাভাবিক হয়ে আসতে অন্তত ছয়-সাত ঘণ্টা তো লাগবেই।’

রেলওয়ে সূত্র জানায়, গতকাল বিকেল থেকে শুরু হওয়া ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সীতাকুণ্ডের কুমিরা ও ভাটিয়ারী এলাকায় রেললাইন তলিয়ে যায়। ফলে কুমিরা ও ভাটিয়ারীর মাঝামাঝি জায়গায় ৩৪ নম্বর সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকা ও সিলেটের ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। গতকাল সন্ধ্যার পর ঢাকাগামী তূর্ণা ও ঢাকা মেইল ও সিলেটগামী উদয়নের যাত্রা বাতিল করা হয়। একইভাবে ঢাকা ও সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনগুলো চট্টগ্রাম স্টেশনে ভিড়তে পারেনি।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী আখতারুজ্জামান হায়দার বলেন, ‘বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সীতাকুণ্ডের কুমিরা ও ভাটিয়ারি স্টেশনের মাঝামাঝি ৩৪ নম্বর রেল সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকা ও সিলেটের রেলযোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তাই আমরা সন্ধ্যার পর সব ধরনের ট্রেন চলাচল বাতিল করেছি।’

পিডিবির প্রধান প্রকৌশলী রইসউদ্দিন সরকার বলেন, ‘প্রবল বর্ষণে সাব-স্টেশন ও বিতরণকেন্দ্রগুলোর যন্ত্রপাতি পানিতে তলিয়ে যায়। নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছি। আরও কিছু এলাকায় ট্রান্সফরমারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়।’

Tuesday, June 26, 2012

কক্সবাজারের ৫০ গ্রাম পানিবন্দি, সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে কক্সবাজার জেলার উপকূলবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জেলার অনন্ত ৫০টি গ্রামের মানুষ।

রামু উপজেলার খুনিয়া পলাং এলাকায় একটি ব্রিজ বিধ্বস্ত হয়ে কক্সবাজার-টেকনাফের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা বিএম মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, রোববার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২১৫ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শনিবার রাতভর থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হলেও রোববার ভোর থেকে মুষলধারে বর্ষণ হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, মৌসুমী বায়ু প্রবল থাকায় সমুদ্র বন্দরগুলোকে তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত অব্যাহত রাখা হয়েছে। দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস, যা অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে সর্বোচ্চ ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হতে পারে। এবারের জুন-জুলাই মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে বলেও তিনি জানান।

টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান শফিক মিয়া বাংলানিউজকে জানান, ভারী বৃষ্টিপাতে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কেরুনতলী, উলুবনিয়া, লম্বাবিল, মহেশখালীয়া পাড়া, হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার, হোয়াব্রাং, পানখালী, লেচুয়া প্রাং, ক্যাং পাড়া, রঙ্গিখালী, আলীখালী, লেদা, জাদিমোরা, বাহারছরা ইউনিয়নের মাথাভাঙ্গা, কচ্চপিয়া, জাহাজপুরা, শীলখালী, টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া, চৌধুরী পাড়া, সাবরাং ইউনিয়নের নাফনদী সংলগ্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। 

বৃষ্টির কারণে কক্সবাজার টেকনাফ সড়কের রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ব্রিজ ভেঙে গেছে। এর কারণে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বিকল্পভাবে কোটবাজার হয়ে মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।

প্রশাসন এবং বিভিন্ন উপজেলা থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার হারবাং, কৈয়ারবিল, বরইতলী, কাকারা, ফাঁসিয়াখালী, লইক্ষ্যারচর, কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁও, ইসলামাবাদ, জালালাবাদ, পিএমখালী, ঝিলংজা, রামু উপজেলার চাকমারকুল, ফতেকার কুল, রাজারকুল, কাউয়ারখোপ ও কচ্ছপিয়া এলাকার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। মাতামুহুরী, বাঁকখালী, ঈদগাঁওসহ জেলার প্রধান প্রধান নদী ও খালের পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

একই সঙ্গে বিভিন্ন উপকূল ভাঙনের কবলে রয়েছে।

পরিকল্পনার অভাবঃ বর্ষার শুরুতেই ভাঙছে মেরিন ড্রাইভ

ভাঙছেই মেরিন ড্রাইভ। বর্ষার শুরুতে তীব্র ভাঙনের মুখে পড়েছে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক। বেশ কিছুদিন ধরে মেরিন ড্রাইভের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন শুরু হয়।

বাস্তবসম্মত পরিকল্পনার অভাবে এ অবস্থার কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই। এমনকি জিইও (বালুভর্তি বস্তা ফেলার ব্যবস্থা) দিয়েও ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না। এরই মধ্যে মেরিন ড্রাইভের অসংখ্য কালভার্ট দিয়ে পাহাড়ের পানি সাগরে ধাবিত হচেছ। অপর দিকে জোয়ারের তোড়ে প্রচন্ড ঢেউ এসে সরাসরি আঘাত করছে সড়কের এসব স্থানে। এতে সড়কের ভাঙন বাড়ছে। ফলে ভেঙে যাওয়া সড়ক রক্ষাণাবেক্ষণ করতে দিনরাত চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হচ্ছে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন (ইসিবি)।
জানা যায়, পর্যটন শিল্পের বিকাশ, বনজ সম্পদ সংরক্ষণ এবং সামুদ্রিক জ্বলোচ্ছাস থেকে রক্ষার জন্য মেরিন ড্রাইভ সড়কের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে যেমন গুরুত্ববহন করে তেমনি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চলতি বর্ষা শুরু হতেই মেরিন ড্রাইভ সড়কের হিমছড়ি নামক স্থান থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার জায়গায় অসংখ্য ভাঙন । যার ফলে সাগরের তীব্র ঢেউয়ের আঘাতে মেরিন ড্রাইভ সড়কটির অস্থিত্ব বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত বছরও বর্ষার সময় এ সড়কটি বিধ্বস্ত হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।

সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর রিয়াজ কালের কণ্ঠকে বলেন, সড়কটি সাগরের ঢেউ হতে রক্ষা করার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বিশেষ করে জিইও পদ্ধতি ব্যবহার করে ভাঙন ঠেকানোর জন্য সেনাসদস্যরা রাতদিন কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তিনি আরো জানান, গত বছর মেরিন ড্রাইভ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ছয় কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু গত অর্থ বছর ও চলতি অর্থ বছরে কোন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। এরপরও সেনাবাহিনীর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভাঙন রোধ করার জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি। তা না পেলে মেরিন ড্রাইভ রক্ষা করা কঠিন হতো। এদিকে সময়মতো টাকা না পেলে মেরিন ড্রাইভের কাজ আগামী তিন বছরের মধ্যে শেষ করাও সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মেরিন ড্রাইভ সড়কটি নির্মাণে নকশা ভুল ছিল বলে প্রতিবছর সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে এ সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়াও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যুরো অব রিসার্চ, টেষ্টিং এন্ড কনসালটেশনের (বিআরটিসি) কারিগরি সম্ভাব্যতা যাচাই-বাচাই যথাযথ ছিল না বলেও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

জানা যায়, ১৯৯৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রায় ১১৭ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন (ইসিবি) মেরিন ড্রাইভ প্রকল্পটির কাজ শুরু করে। ১৯৯৪ সালের জুলাইয়ে এটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে প্রকল্পটির আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। এরপর প্রায় ১৪৮ কোটি টাকা ব্যয় ধার্য করে প্রকল্পটি ফের সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থের সংকুলান না থাকায় ৮০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই প্রকল্পকে তিন ভাগে ভাগ করে তিন পর্বে সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৩ সালে প্রকল্পটি যখন হাতে নেওয়া হয় তখন জিনিসপত্রের দাম ছিল কম। এখন নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকল্পের খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ প্রকল্প এবং এর আশপাশে যাঁরা বিনিয়োগ করেছেন তাঁরা ধারণা করেন, দ্রুত ও নিয়মিত অর্থ বরাদ্দ দিলে দ্বিতীয় পর্বের কাজও এত দিনে অর্ধেকের বেশি শেষ হয়ে যেত। তাঁরা আরো মনে করেন, সরকার চাইলেই প্রকল্পটির জন্য বৈদেশিক সাহায্য নিয়ে তা দ্রুত সম্পন্ন করতে পারে।

এছাড়াও কক্সবাজার হতে ইনানীর মোহাম্মদ শফির বিল পর্যন্ত সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু ভাঙনের কবল থেকে এটি রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছেনা। প্রতিবছর বর্ষায় এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে।

মহেশখালী কুতুবদিয়ার বিস্তীর্ন অঞ্চল পানির নিচে

গত তিন দিনে আষাঢ়ের ধারাবাহিক বৃষ্টিপাত ও সমুদ্রে অমাবস্যার জোয়ারের প্রভাবে কক্সবাজারের উপকূলীয় দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী, কুতুবদিয়ার নিম্নাঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

অব্যাহত বৃষ্টি ও বেড়ি বাঁধের ভাঙ্গনের কারণে মহেশখালীর ধলঘাটায় অমানবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় চেয়াম্যান আহছান উল্লাহ বাচ্চু। কুতুবদিয়াতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন।
মহেশখালীর কালারমার ছড়ার বাসিন্দা সৈয়দুল কাদের বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, মহেশখালী  ধলঘাটায় অমাবশ্যার জোয়ারে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্রায় সহস্রাধিক বসতবাড়িতে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। ভেসে গেছে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের চিংড়ি পোনা।

গত ২৪ জুন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, ঝড়ো বৃষ্টি ও অমাবশ্যার জোয়ারে মহেশখালীর ধলঘাটায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্রায় সহস্রাধিক বসতবাড়ি জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। পাশাপাশি প্রায় ২০ টি চিংড়ি ঘের জোয়ারের পানিতে ডুবে যাওয়ার কারণে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের চিংড়ি পোনা ভেসে গেছে বলে জানা গেছে।

ধলঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহ বাচ্চু বাংলানিউজকে জানান, ঝড়ো হাওয়ার কারণে জোয়ারের পানি অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়ে সরাইতলা ও নয়াঘোনা এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে পুরো ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। সরাইতলাসহ বিভিন্ন এলাকায় এক হাজারেরও বেশি বসতবাড়ি এখন পানির নিচে।

ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় অনেক বাসিন্দা এখন সাইক্লোন শেল্টার সেল্টারে অবস্থান নিয়েছে। সদ্য নির্মিত বেড়িবাঁধে দেওয়া ব্লকগুলো উপড়ে গেছে। মানুষ আতংকিত হয়ে পড়ায় ইতিমধ্যে ধলঘাট ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যেতে শুরু করেছে।

সুতরিয়া ইউপি সদস্য  আনসার উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, এই ওয়ার্ডের সাইক্লোন সেল্টারগুলো চরম ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় মানুষ আশ্রয় নিতে পারছে না।

চিংড়ি মৌসুমের শুরুতে ঘের গুলোতে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ায় চাষীরাও দিশেহারা হয়ে পড়েছে। জোয়ারের পানি ও ঝড়ো হাওয়ায় এই ওয়ার্ডের প্রায় অর্ধশত বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাছাড়া মহেশখালীর পৌরসভা, কুতুবজোম, তেলীপাড়াসহ দুটি প্রধান সড়কে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে বিদুৎ বিতরণেও সমস্যা হয় বলে স্থানীয় বিদুৎ অফিস সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে কুতুবদিয়ায় বেড়িবাঁধের ভাঙ্গন ও বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ না থাকায় দ্বীপের নিম্মাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। ৬টি ইউনিয়নের ১৭টি জায়গায় বেড়িবাধ ভাঙ্গা থাকায় সমুদ্রের জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে।

কুতুবদিয়ার কৈয়াবিল এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান আজমগীর মাতব্বর সাংবাদিকদের জানান, এমন অবস্থায় তার এলাকায় বেড়িবাঁধের বাইরে পরাণ সিকদার পাড়া, মহাজন পাড়া, ঘিলাছড়ি, বিন্দাপাড়া, মফজল ডিলার পাড়ায় বাসিন্দা ৫শ’ পরিবারের ৫ হাজার লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এসব এলাকার তিন হাজারের মত লোক বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাছাড়া আলীআকবর ডেইল তবলার চর, কুমিরার ছড়ি, জাইল্যা পাড়া এলাকায় বেড়িবাঁধ না থাকায় ফসলি জমিতে লোনা পনি ঢুকে পড়েছে। তাছাড়া আনিছের ডেইল, পূর্ব তবলার চরের ব্যাপক এলাকা তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। একইভাবে লেমশিখালী, পেয়ারাকাটা, বড়ঘোপের আজম কলোনি, দক্ষিণ আজমখালী, উত্তর দ্রুং, ফয়জনের বাপের পাড়াসহ দ্বীপের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

রোববার রাত সাড়ে ৯ টায় মহেশখালীর ধলঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহছান উল্লাহ বাচ্চু বাংলানিউজকে জানান, তার এলাকায় ব্যাপক ভাবে সমুদ্রের পানি ঢুকে পড়ায় এক প্রকার মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিএম কাউছার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, তারা ক্ষয়ক্ষতির যথাযথ তথ্য বিস্তারিতভাবে  জানতে না পারায় সাহায্যের কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।

মিয়ানমার সীমান্তে ৮ দিন ধরে বাণিজ্য বন্ধ

টেকনাফ সীমান্তে মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য এবং ট্রানজিট ৮ দিন ধরে অঘোষিতভাবে বন্ধ রয়েছে। গত ১৭ জুন ৯০ টন হিমায়িত রুই মাছ নিয়ে একটি ট্রলার স্থলবন্দরে আসে।

এরপর থেকে আর কোনো পণ্যবাহী জাহাজ বন্দরে আসেনি। মিয়ানমারের জাতিগত সংঘাতের পরবর্তী পরিস্থিতি এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে এ অবস্থা দেখা দিয়েছে। এতে দৈনিক গড়ে প্রায় ৩০ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা বাংলানিউজকে জানান, ১৯৯৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর টেকনাফ-মিয়ানমারের সীমান্ত বাণিজ্য চালু করা হয়। এর পর থেকে উভয় দেশের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পণ্যসামগ্রী আমদানি রফতানি বাণিজ্য চলতে থাকে। এবারই প্রথমবারের মতো কোনো কারণে অনেকদিন ধরে সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে।

সরেজমিন টেকনাফ স্থলবন্দর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বন্দরের জেটিতে একটি মাত্র ট্রলার নোঙর অবস্থায় রয়েছে।

ব্যবসায়ী এম আবছার সোহেলের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স শফি অ্যান্ড ব্রাদার্সের মাধ্যমে গত ১৭ জুন ৯০ টন হিমায়িত রুই মাছ নিয়ে একটি ট্রলার স্থলবন্দরে আসে। মাছভর্তি ট্রলারটি পণ্য খালাস করা হলেও সাগর উত্তাল থাকায় মিয়ানমারে আর ফিরে যেতে পারেনি।

এদিকে, ৮ দিন ধরে অঘোষিতভাবে সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা কাজের অভাবে বেকার জীবন-যাপন করছেন।

টেকনাফ স্থলবন্দরের অভিবাসন কেন্দ্র ও কায়ুকখালীয়া খালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) নিয়ন্ত্রণাধীন একদিনের ট্রানজিট ঘাট দিয়ে ৮ জুনের দাঙ্গার পর থেকে যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। মিয়ানমার থেকে আসা আটকে পড়া ব্যবসায়ীরা স্বদেশে ফিরে যেতে স্থলবন্দরের অভিবাসন কেন্দ্রে ভিড় করছেন।

টেকনাফ স্থলবন্দরের অভিবাসন কেন্দ্রের কর্মকর্তা আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বাংলানিউজকে জানান, মিয়ানমার সরকার অঘোষিতভাবে নৌপথ বন্ধ রাখায় এখনও বাংলাদেশি ৪ নাগরিক আব্দুল জলিল, আবু বক্কর, রিয়াজ উদ্দিন ও জসিম উদ্দিন মিয়ানমারে আটকা পড়ে আছেন। তাদের ফেরত পাঠানোর জন্য একাধিক চিঠি পাঠানো হয়েছে।

নাসাকাবাহিনী ও মিয়ানমার অভিবাসন কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে যোগাযোগ করে একটি ট্রলারে করে  রোববার ২৬ জনকে মিয়ানমারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) টেকনাফের ৪২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. জাহিদ হাসান বাংলানিউজকে জানান, মিয়ানমারে জাতিগত দাঙ্গার পর থেকে ৮ দিন ধরে টেকনাফ-মিয়ানমারে একদিনের ট্রানজিট বন্ধ রয়েছে।

টেকনাফ স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর বাংলানিউজকে বলেন, “৮ দিন ধরে সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ থাকায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।” আমদানি ও রফতানিকারকদের দৈনিক কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।

ইউনাইটেড ল্যান্ডপোর্ট টেকনাফ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক আব্দুল মোহাইমেন বাংলানিউজকে বলেন, “মিয়ানমারের জাতিগত সংঘাতের কারণে দু’দেশের সীমান্ত বাণিজ্য অঘোষিতভাবে বন্ধ রয়েছে।”

টেকনাফ শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তা কাজী আবুল হোসাইন বাংলানিউজকে জানান, মিয়ানমারের জাতিগত দাঙ্গার কারণে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় দৈনিক ৩০ লাখ টাকা করে কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

টেকনাফে বেড়িবাঁধে ভাঙন, পানিবন্দী শতাধিক পরিবার

সামুদ্রিক জোয়ারের তোড়ে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ ও নাজির পাড়ার প্রায় এক কিলোমিটা বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। ফলে জোয়ারের পানি ঢুকে জালিয়াপাড়া, কোনারপাড়া, মিস্ত্রিপাড়াসহ বেশ কয়েকটি প্লাবিত হয়েছে।

পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েকশ’পরিবার। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও অমাবস্যার জোয়ারে নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরে পানি বেড়ে যায়। এতে উপকূলীয় এলাকায় পানি ঢুকে এলাকার রাস্তা ঘাট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মকতব, চিংড়ি ঘের, ফসলি জমি, বসত বাড়ি প্লাবিত হয়। এমনকি  উপকূলীয় এলাকাবাসীকে ঘর-বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হচেছ।
সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, বঙ্গোপসাগর ও নাফনদী বেড়িবাঁধের কিছু এলাকায় ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। যেকোনো মুহূর্তে শাহপরীরদ্বীপ বঙ্গোপসাগরে বিলীন হয়ে যেতে পাড়ে বলে আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।

কর্মশালায় ইসি সচিবঃ রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না

‘অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের কোনো অবস্থাতেই ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। এ ব্যাপারে সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’

গত রোববার কক্সবাজার শহরের একটি হোটেলে হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রণয়নসংক্রান্ত দিনব্যাপী কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব মোহামঞ্চদ সাদিক এসব কথা বলেন। মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশন ছবিযুক্ত নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন করেছিল। এখন সেই তালিকা হালনাগাদের কাজ চলছে। এই তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন ১০ মার্চ থেকে সারা দেশে ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণের কাজ শুরু করে। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাপ্রধান অঞ্চল হিসেবে কক্সবাজার, বান্দরবান ও রাঙামাটি জেলাকে বিশেষ অঞ্চল ঘোষণা দিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের এ কাজ চলছে। আগামী ১ জানুয়ারি যাঁদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তাঁদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ ছাড়া যেসব ভোটারের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে।
নির্বাচন কমিশন আয়োজিত কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব ও এসইএমবির জাতীয় প্রকল্প পরিচালক সিরাজুল ইসলাম, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব এন আই খান, জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আখতারুজ্জামান সিদ্দিকী প্রমুখ। কর্মশালায় জেলার সাতটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, নির্বাচন কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।

সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা লুট

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার লক্ষারচর ইউনিয়নের জিদ্দাবাজার এলাকায় গত শনিবার রাতে একটি মাইক্রোবাস থামিয়ে সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা লুট করেছে একদল লোক।

এর সাত লাখ টাকা পুলিশ উদ্ধার করলেও বাকি টাকার হদিস পাচ্ছে না। পুলিশ ও স্থানীয় ব্যক্তিরা জানায়, শনিবার রাত ১১টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে আসা একটি মাইক্রোবাস জিদ্দাবাজার এলাকায় পৌঁছালে ২০-৩০ জন লোক বাসটি থামায়।

এখনো আসছে রোহিঙ্গারা

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকছে। দিনের বেলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ড বাহিনীর সদস্যরা সীমান্ত ও নাফ নদীতে তত্পর থাকেন।

তাই অনুপ্রবেশের জন্য রোহিঙ্গারা রাতের অন্ধকারকেই বেছে নিচ্ছে। টেকনাফ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিক মিয়া জানান, দিনের বেলায় রোহিঙ্গারা ছোট ছোট নৌকা নিয়ে নাফ নদীতে অবস্থান করে। রাতের বেলায় তারা বাংলাদেশ সীমান্তে এসে নদী সাঁতরে বাংলাদেশে ঢোকে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত তিন দিনে উপজেলার নীলা, জাদিমুরা, শাহপরীর দ্বীপ, জালিয়াপাড়া, সাবরাংসহ ১০-১২টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে পাঁচ শতাধিক রোহিঙ্গা ঢুকে বিভিন্ন লোকজনের বাড়িতে আত্মগোপন করেছে।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুল হক জানান, সীমান্তে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অবৈধভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেওয়ার সময় বহু রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। অন্যদেরও আটক করা হবে। গত কয়েক দিন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে স্থানীয় পাঁচজনকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বিজিবির টেকনাফ ৪২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. জাহিদ হাসান জানান, মিয়ানমারে জাতিগত দাঙ্গার পর থেকে রোহিঙ্গারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা চালাচ্ছে। ১৬ দিনে প্রায় এক হাজার রোহিঙ্গাকে আটক করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

Sunday, June 24, 2012

কুতুবদিয়ায় হুমকির মুখে বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প

চলতি বর্ষায় ঝুঁকির মুখে রয়েছে কক্সবাজারের দ্বীপাঞ্চল কুতুবদিয়ার বায়ুবিদ্যুৎ পাইলট প্রকল্প। বাঁধের নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) অর্থায়নে নির্মিত প্রকল্পটি বর্তমানে হুমকির মুখে রয়েছে।

প্রকল্পটি রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবোর) অধীনে প্রায় ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত ৯ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে বাঁধ নির্মাণের কাজ। অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদার ও পাউবো কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে এখনও নির্মিত হয়নি বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প রক্ষা বাঁধ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানায়, বিউবোর তত্ত্বাবধানে প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে কুতুবদিয়ার সাগর উপকূল তাবলের চর এলাকায় বায়ুবিদ্যুৎ পাইলট প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। ২০০৬ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ২০০৮ সালের ১৫ মার্চ। এরপর প্রকল্পটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে প্রকল্পের গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। প্রকল্প থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সরবরাহ করা হয় উপজেলা সদরের সাত শতাধিক গ্রাহকের কাছে। এর ঠিক তিন মাসের মাথায় জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এতে প্রকল্পের ৫০টি বায়ুকল পাখার (উইং) বেশিরভাগ ভেঙে যায়। সেই থেকে প্রকল্পটির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এর চেয়ে বড় ব্যাপার বরাদ্দের পরও নির্মিত হয়নি বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প রক্ষা বাঁধ। যে কারণে প্রকল্পটি এখন চরম হুমকির মুখে রয়েছে।
এ ব্যাপারে বিউবোর কুতুবদিয়ার আবাসিক প্রকৌশলী অশোক দাশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বায়ুবিদ্যুৎ পাইলট প্রকল্পের ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। কবে নাগাদ প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে তাও নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। তিনি এসব তথ্য জানতে বিউবোর কক্সবাজার জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, 'বর্তমানে পিডিবির ৫শ' কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন কামিন্স জেনারেটর মেশিন দিয়ে কুতুবদিয়া উপজেলা সদরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।' সরবরাহকৃত বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা কত জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এদিকে বিউবোর কক্সবাজার জেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, কুতুবদিয়ার বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের কাজ ২০০৬ সালে শুরু হয়ে ২০০৮ সালে শেষ করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। বিউবোর তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে প্যান এশিয়া পাওয়ার সাভির্সেস লিমিটেড নামে একটি সংস্থা। প্রকল্পটিতে এক হাজার কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ৫০টি বায়ুকল (উইং টারবাইন) স্থাপন করা হয়। প্রতিটি বায়ুকল থেকে প্রতিদিন গড়ে ২০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। প্রতিটি বায়ুকল গণ্য হবে একটি ইউনিট হিসেবে। প্রতিটি ইউনিটে ৫০ মিটার উঁচু একটি টাওয়ার এবং টাওয়ারের মাথায় দেড় টন ওজনের ডানাবিশিষ্ট একটি ইস্পাতের পাখা স্থাপন করা হয়। একটি উইং টারবাইন থেকে অপরটির দূরত্ব তিনশ' গজ। বায়ুচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের যন্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে টাওয়ার জেনারেটর, কন্ট্রোল প্যানেল ও টারবাইন বেল্গড।
পাউবোর কক্সবাজার জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুল ইসলাম জানান, বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পটি চালু করতে সম্প্রতি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নিয়েছে। বাঁধের কাজ শেষ হলেই কুতুবদিয়া দ্বীপের বিদ্যুৎবঞ্চিত মানুষের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।
অন্যদিকে পাউবো কুতুবদিয়ার কর্মকর্তা এটিএম মাসুদুর রাবি্ব বলেন, 'বায়ুবিদ্যুৎ পাইলট প্রকল্পটি রক্ষায় পাউবোর কর্তৃপক্ষ এ এলাকায় তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করছেন। বর্তমানে দুটি প্রকল্পের বাঁধের কাজ শেষ পর্যায়ে। তবে আইনি জটিলতায় বাকি একটি প্রকল্পের কাজ করা যাচ্ছে না।

কুতুবদিয়ার আজম সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেই

বিপর্যস্ত দ্বীপের আড়াই লাখ মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা
কুতুবদিয়ার অভ্যন্তরীণ গ্রামীণ সড়কগুলো দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার হচ্ছে না। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দ্বীপের আড়াই লাখ মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা।

দ্বীপের প্রধান চলাচলের পথ আজম সড়কসহ গ্রামীণ সড়কগুলোর অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে স্থানীয়রা। এবড়োখেবড়ো সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যানবাহান বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কায় রয়েছে।

১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়া দ্বীপের রাস্তাগুলো যৌথভাবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এবং এলজিইডির মাধ্যমে সংস্কার করা হয়েছিল। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, এরপর শুধু সরকার বদল হলেও কুতুবদিয়া বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হওয়ায় এখানকার রাস্তাঘাটগুলোর সংস্কারসহ তেমন উল্লেখযোগ্য কাজ হয়নি। এ ছাড়া গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে কুতুবদিয়ার আজম সড়ক সংস্কারে নামে সরকারের সংশিল্গষ্ট দফতর থেকে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী বিএনপি নেতারা নামমাত্র কাজ করে ব্যাপক লুটপাট চালিয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল করিম, সালাম কুতুবী ও নুরুল আলম কুতুবী জানান, বিএনপি নেতারা শুধু সরকারি অর্থ বরাদ্দ এনে লুটপাটে ব্যস্ত থাকায় সড়কগুলোর কোনো উন্নয়ন কাজ না হওয়ায় আজ আমাদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে।
গতকাল শনিবার সকালে কুতুবদিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নে সরেজমিন এসব রাস্তাঘাটের বেহাল দশার বাস্তব চিত্র পাওয়া গেছে। রাস্তাঘাটের এমন বেহাল দশায় ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্বীপের বৃহত্তম বড়ঘোপ বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আওরঙ্গজেব মাতবর বলেন, যে সরকারই ক্ষমতায় আসে সড়ক সংস্কারের জন্য কাজের বরাদ্দ দেয়। তবে বরাদ্দ দেওয়া টাকায় স্থানীয় কিছু স্বার্থলোভী নেতা ও ঠিকাদারদের ভাগ-ভাটোয়ারার কারণে রাস্তা-ঘাটের লোক দেখানো সংস্কার হলেও তার মেয়াদ থাকে সর্বোচ্চ ২-৩ মাস।
উত্তর ধুরং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সিরাজদৌল্লাহ জানান, তার এলাকার রাস্তাগুলোর এতই করুণ অবস্থা যা না দেখলে বোঝা যাবে না। তার ইউনিয়নে সংস্কারের অভবে বাইঙ্গাকাটা সড়ক, জুম্মাপাড়া সড়ক, আজিজিয়া সড়ক, সতরুদ্দীন সড়কসহ আরও কয়েকটি রাস্তার অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়।
কুতুবদিয়ার বিসিক শিল্প নগরীখ্যাত লেমশীখালী ইউনিয়ন। প্রতি বছর এ ইউনিয়নের সড়কগুলো দিয়ে লবণের মৌসুমে লবণ পরিবহন করায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়। আর এসব ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক কোনো কালেই সংস্কার হয় না।
এ ব্যাপারে লেমশীখালী ইউপি চেয়ারম্যান আখতার হোসাইন জানান, তার ইউনিয়নের মতিবাপেরপাড়া রোড, সেন্টার রোড, মিরাখালী রোড, গাইনা কাটা রোড ও দরবার ঘাট রোডের অবস্থা সবচেয়ে নাজুক।
দ্বীপের কৈয়ারবিল ইউনিয়নের রাস্তাঘাটের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেড়িবাঁধ। এ ইউনিয়নে বেড়িবাঁধের বাইরে প্রায় ৯৭৫টি পরিবার অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে।
কৈয়ারবিল ইউপি চেয়ারম্যান আজমগীর মাতবর জানান, বেড়িবাঁধের বাইরে থাকা পরিবারগুলোর জন্য সরকারিভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসককে কয়েকবার লিখিতভাবে অবহিত করা হলেও কোনো কাজ হয়নি।
দক্ষিণ ধুরং ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন আল-আযাদ জানান, তার ইউনিয়নে বাতিঘর রোড, শাহরুম সিকদারপাড়া রোড, ধুরুং কাঁচা রোড, ধুরুং বাজার রোড চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
ঊড়ঘোপ ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাকের উল্লাহ জানান, দ্বীপের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হয়েও অবহেলিত তার এলাকা। সরকারের কোনো বাজেট না থাকায় রাস্তাগুলো সংস্কার হচ্ছে না বলে তিনি জানান। তার এলাকায় ডিসি রোড, মুরালিয়া রোড, আজম কলোনি রোড, আজম সড়কের অবস্থা করুণ বলে জানান।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের কুতুবদিয়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. মহসিন জানান, চলতি বছরে মিরাখালী রোড, আশ্রয়ণ প্রকল্প রোড সংস্কারের জন্য বরাদ্দ হয়েছে। বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে দ্বীপের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর সংস্কার করা হবে বলে তিনি জানান।

সড়ক সংস্কার না করলে মহাসড়ক অবরোধ

কক্সবাজারের রামু উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও ব্রিজ সংস্কার না করলে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অচল করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে এলাকাবাসী।

শনিবার দুপুরে রামু-মরিচ্যা সড়ক ও ছিকলঘাটা ব্রিজসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো সংস্কারের দাবিতে রামু উন্নয়ন নাগরিক কমিটির ব্যানারে আয়োজিত দীর্ঘ মানববন্ধনে এলাকাবাসী এই হুমকি দেয়।

মানববন্ধনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর মোস্তার আহমদ। রামু প্রেস ক্লাব সভাপতি নুরুল  ইসলাম সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানবন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন রাজারকুল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাফর আলম চৌধুরী, আলহাজ্ব ফজল আম্বিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক আমান উল্লাহ, রামু উন্নয়ন নাগরিক কমিটির সহ-সভাপতি সোলতান আহমদ মনিরী, সাধারণ সম্পাদক ওসমান সরওয়ার মামুন, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদ উল্লাহ, তথ্য সম্পাদক খালেদ হোসেন টাপু ও রামু লাইনের পরিচালক মুজিবুর রহমান মুজিব।

রামুর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আলহাজ্ব ফজল আম্বিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধনে বলা শতাধিক এলাকাবাসী ছাড়াও অন্তত পাঁচ শতাধিক ছাত্রছাত্রী অংশ নেয়।

মানববন্ধনে বলা হয়, দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে রামুর প্রধান সড়কসহ এলাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও ব্রিজ সংস্কার না করায় চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এতে পর্যটকসহ এলাকাবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

কক্সবাজারে বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত

কক্সবাজারে গত কয়েকদিনের জোয়ারের পানিতে উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সামুদ্রিক জোয়ারের তোড়ে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের প্রায় এক কিলোমিটা বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি ঢুকে জালিয়াপাড়া, কোনারপাড়া, মিস্ত্রি পাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম তলিয়ে গেছে।

ডুবে গেছে ওই এলাকার রাস্তা ঘাট। জোয়ারের তোড়ে পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের কাকপাড়া বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এ ছাড়া কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়া, বন্দরপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, উত্তর নুনিয়াছড়া এবং মহেশখালীর ধলঘাটা, মাতারবাড়ি ও কুতুবদিয়া উপজেলার কয়েকটি গ্রামে বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, অমাবস্যার জোয়ারের পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে দুই/তিন ফুট বেড়েছে। এছাড়া সাগর উত্তাল রয়েছে এবং কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৩নং সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

রামুতে সেতু ও সড়ক সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন, সমাবেশ

কক্সবাজারের রামুতে বাঁকখালী নদীর ঝুঁকিপূর্ণ শিকলঘাট সেতু ও রামু-মরিচ্যা আরাকান সড়ক সংস্কারের দাবিতে গতকাল শনিবার মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

রামু নাগরিক উন্নয়ন কমিটির আয়োজনে গতকাল বেলা ১১টায় শিকলঘাট সেতুর পাশে ওই মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় রামু ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোশতাক আহমদ বলেন, রামু-মরিচ্যা আরাকান সড়ক কয়েক বছর ধরে সংস্কার না করায় তা যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কটি দিয়ে নিয়মিত আসা-যাওয়াকারী শিক্ষার্থীদেরও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তা ছাড়া সড়কের বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মিত অনেক পুরোনো শিকলঘাট সেতুটি সংস্কারের অভাবে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এটি যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। সমাবেশে নাগরিক কমিটি ও রামু প্রেসক্লাবের সভাপতি নুরুল ইসলাম, ওমর ফারুক, জাফর আলম চৌধুরী, আমানুল হক, এম সুলতান আহমদ, হাবিবুল হক, আবু বকর ছিদ্দিক প্রমুখ বক্তৃতা করেন। কর্মসূচিতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেন।

উদ্ধারের পর ফের বনভূমি দখল পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় ৩০ একর বনভূমি উদ্ধারের পর পুনরায় তা দখল হয়ে গেছে। শুক্রবার এ ঘটনা ঘটে। ওই দিন সকালে বন বিভাগের কর্মীরা জমি উদ্ধার করলেও সন্ধ্যায় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ইজারা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করে তা ফের দখল করে নেন।

এ নিয়ে উভয় পক্ষ থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিয়েছে। উপকূলীয় বন বিভাগ গোরকঘাটা রেঞ্জ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ঘটিভাঙ্গা এলাকার মোসখালী খালের পাশে নতুন করে প্যারাবন উজাড় করে এক মাস ধরে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অবৈধভাবে চিংড়িঘেরের বাঁধ নির্মাণ করছেন। প্রায় ১০০ একর জমিতে এ ঘের করতে ইতিমধ্যে তিন হাজার বাইনগাছ কাটা হয়েছে।
গোরকঘাটার রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহামঞ্চদ জাহাঙ্গীর ইকবাল বলেন, নতুন করে প্যারাবন উজাড় করে এক মাস ধরে অবৈধভাবে চিংড়িঘেরের জন্য বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছিল। শুক্রবার সকালে বনকর্মীরা সেখানে অভিযান চালান এবং চিংড়িঘেরের বাঁধ কেটে দিয়ে ৩০ একর বনভূমি উদ্ধার করেন। কিন্তু সন্ধ্যায় কেটে দেওয়া বাঁধ নির্মাণ করে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা পুনরায় ওই জমি দখল করে নেন। এ নিয়ে স্থানীয় আবদুল মালেকসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
ওই বনভূমি নিয়ে ইজারাদারের পক্ষে আবদুল মালেকের মেয়ে আনজুমান আরা থানায় অভিযোগ দেন এবং বন কর্মকর্তা চারজনের বিরুদ্ধে শুক্রবার রাতেই থানায় একটি পাল্টা অভিযোগ দেন। এতে বলা হয়, ওই জমি চিংড়িচাষের জন্য ইজারা নেওয়া হয়েছে। ঘের করার সময় বন বিভাগের লোকজন তাঁদের কাছে উৎকোচ দাবি করেন। কিন্তু উৎকোচ না পেয়ে বনকর্মীরা বহিরাগত লোকজন নিয়ে শুক্রবার সকালে গিয়ে চিংড়িঘেরের বাঁধ কেটে দেন।
মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রণজিৎ কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘দুই পক্ষের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সরেজমিনে তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কক্সবাজার সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের ডিও নিয়ে ব্যবসা

কক্সবাজার সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী মোহাম্মদ হাশিমের বিরুদ্ধে চার উপজেলার দায়িত্বে থেকে টিআর, কাবিখা ও বিশেষ বরাদ্দের শত শত মেট্রিক টন চাল-গম এর ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) ইস্যু করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এ অবস্থায় গ্রাম-গঞ্জের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির কর্মকর্তারাও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। এতে টিআর ও কাবিখা প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজও ব্যাহত হচ্ছে।
গত জানুয়ারি মাসে কুমিল্লার ধর্মপুর থেকে কক্সবাজার সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে যোগদান করেন কাজী মোহাম্মদ হাশিম। চাকরির আরো ২ বছরের মেয়াদ বৃদ্ধি পাওয়ায় কক্সবাজারে যোগদানের পর থেকেই শহরের মোটেল রোডের জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের রেস্ট হাউস দখল করে বসবাস শুরু করেন তিনি। সরকারি নিয়ম অনুসারে রেস্ট হাউসের ভাড়া পরিশোধের জন্য কর্তৃপক্ষ তাকে তাগাদা দিলেও তিনি এসবের কোনো পরোয়া করছেন না। সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক ১০০ টাকা হারে গত ছয় মাসে রেস্ট হাউসের ভাড়া দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার টাকা। কিন্তু কর্তৃপক্ষকে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন রেস্ট হাউসের ভাড়া তিনি পরিশোধ করবেন না।
কক্সবাজার সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক একই সাথে টেকনাফ, কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও কক্সবাজার সদরসহ ৪ টি উপজেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগ রয়েছে, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অনুপস্থিতির সুযোগে পুরো খাদ্য বিভাগকে তিনি জিম্মি করে ফেলেছেন। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সব কাজ অলিখিতভাবে তার উপর ন্যস্ত হওয়ায় তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। ইতোমধ্যেই দায়িত্বপ্রাপ্ত চার উপজেলার টিআর, কাবিখা ও বিশেষ বরাদ্দের শত শত মেট্রিক টন চাল-গম এর ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) ইস্যু করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রতিটি ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) থেকে তিনি ৫০০ টাকা করে নেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার পছন্দের মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের কাছে ডিও বিক্রি করতে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির কর্মকর্তাদের বাধ্য করেন তিনি। অন্যথায় ডিও ইস্যু করতে গড়িমসি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির কর্মকর্তাদের হয়রানি করা হয়। কোনো ব্যবসায়ী যদি ১০ টনের বেশি চাল বা গম কিনেন তাহলে তার কাছ থেকে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দাবি করা হয়। বিশেষ করে, কুতুবদিয়া ও মহেশখালীতে এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
এভাবে ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি বরাদ্দকৃত চাল ও গমের প্রকৃত দাম পাচ্ছে না। ফলে সরকারের টিআর ও কাবিখা প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ ব্যাহত হয়ে পড়েছে বলে জানান একাধিক ডিও'র মালিক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ পাওয়া কিছু গম/চাল প্রকল্পের ব্যয় নির্বাহের জন্য বিক্রি করতে হয়। যেসব ব্যবসায়ী এসব খাদ্যশস্যের ন্যায্যমূল্য দেন তাদের কাছেই আমরা চাল/গম বিক্রি করে থাকি। কিন্তু উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী মোহাম্মদ হাশিম টেকনাফ, কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও কক্সবাজার সদরে সিন্ডিকেট করে তার পছন্দের ব্যবসায়ীদের কাছে কম দামে খাদ্যশস্য বিক্রি করতে আমাদের বাধ্য করেন। তার কথা মতো কাজ না করলে ডিও ইস্যুতে গড়িমসি করা হয়। খাদ্য গুদামেও আমাদের হয়রানি করতে তিনি সংশ্লিষ্টদের চাপ প্রয়োগ করেন।'
তারা অভিযোগ করে বলেন, হয়রানির ভয়ে তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস করে না। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে চলমান ওএমএস কার্যক্রমেও ডিলারদের কাছ থেকে প্রতি মেট্রিক টন চালের ডিও'তে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত নেন তিনি। কক্সবাজার শহরের বেশ কয়েকজন ওএমএস ডিলার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা খাদ্য বিভাগের হাতে জিম্মি।
এছাড়া নিয়মিত অফিস না করার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। প্রতি সপ্তাহের বুধবার তিনি চট্রগ্রাম চলে যান এবং সেখান থেকে কর্মস্থলে ফিরেন পরবর্তী সপ্তাহের সোমবার। চট্টগ্রাম শহরের নাসিরাবাদে বাস করেন তিনি। এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী মোহাম্মদ হাশিম এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে রেস্ট হাউসে থাকার কথা তিনি নিশ্চিত করে ভাড়া দেওয়ার নিয়ম রয়েছে বলে কালের কণ্ঠের কাছে স্বীকার করেন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, 'অফিসের কারা এসব অভিযোগ আপনাকে জানাচ্ছে তা আমি ভালো করে জানি। আপনি আমাকে ফোন করায় খুব ভালো হয়েছে। আমি আগামী সোমবার অফিসে আসব, আমার সাথে একটু দেখা করবেন।'
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাজমে আরা বেগম পারিবারিক সমস্যার কারণে নিয়মিত অফিস করতে পারেন না-তাই আমিই তার কাজ কর্ম পরিচালনা করে থাকি।' এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাজমে আরা বেগমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার অফিসের এসব অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন বলে কালের কণ্ঠকে জানান।

Friday, June 22, 2012

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নৌকায় হেলিকপ্টার থেকে গুলি

আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিজিবি-কোস্টগার্ড মিয়ানমারের জলসীমায় ঠেলে দেয়ার পর (পুশব্যাক) হেলিকপ্টার থেকে তাদের নৌকায় গুলি চালানো হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সাংবাদিকদের বরাতে বৃহস্পতিবার ‘রেডিও ফ্রি এশিয়া’ এ খবর দেয়ার পর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে শুক্রবার।
আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় তহবিল ও সমর্থনে পরিচালিত রেডিও ফ্রি এশিয়া জানিয়েছে, রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও সংখ্যাগুরু রাখাইনদের যৌথ সহিংসতার শিকার হয়ে মিয়ানামরের আরাকান প্রদেশের (রাখাইন) রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুরা অজস্র নৌকায় করে টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন উপকূলে আশ্রয় নেয়। এদের মধ্যে ছয়টি নৌকার মধ্যে শেষ পর্যন্ত বেঁচে যাওয়া তিনটি নৌকা আরোহী রোহিঙ্গারা ছয় বারের চেষ্টায় বাংলাদেশী সীমান্তরক্ষীদের এড়িয়ে স্থানীয় বাংলাদেশীদের কাছে পৌঁছে আশ্রয় পান গত বৃহস্পতিবার।

এর আগে বাংলাদেশে ঢুকতে পাঁচবারের ব্যর্থ চেষ্টার মাঝখানের সময়ে তারা নাফ নদী ও বঙ্গোপসগার মোহনায় অসহায়ভাবে ভেসে ছিলেন চারদিন। তারই মধ্যে একদিন একটি হেলিকপ্টার থেকে তাদের নৌকা বহরে গুলি চালানো হয়। তাতে তাদের তিনটি নৌকায় আগুন ধরে ডুবে যায় এবং আরোহীরা মারা যান। তবে তারা বলছেন যে, তারা বাংলাদেশ বা মিয়ানমারের হেলিকপ্টার বলে কিছু শনাক্ত করতে পারছেন না।

রেডিও ফ্রি এশিয়ার সঙ্গে আলাপে ওই বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের কয়েকজন বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন। দশ বছর বয়সী কন্যাশিশু মিনার বেগম এখনো ভুলতে পারছেন না ওই চারদিনের কষ্ট ও তাদের সহযাত্রী তিনটি নৌকা আরোহীর মর্মান্তিক মৃত্যুর কথা। একই ধরনের অনুভূতির কথা জানালেন তরুণ মোহাম্মদ ইসলাম। আকিয়াব (সিতউয়ি) থেকে আসা ইসলাম জানালেন, “জ্বলন্ত বাড়ি ও মসজিদ পেছনে ফেলে আমরা এসেছি এখানে। আকিয়াবে আমার দুই সন্তান ও পঁচিশজন আত্মীয় নিহত হয়েছে।”

তিনি জানান, “প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম এটা বুঝি আমাদের বহরের পেছনে পড়ে যাওয়া নৌকার ইঞ্জিনের শব্দই। কিন্তু পরে ওপরে হেলিকপ্টার দেখতে পেলাম এবং নৌকাগুলো আগুন লেগে ডুবে গেল।”

মিনারা ও ইসলামসহ আরো চারজন ভুক্তভোগী তাদের করুণ অভিজ্ঞতার কথা জানান রেডিও ফ্রি এশিয়াকে।

প্রসঙ্গত, চলমান সহিংসতার শিকার হয়ে এখন পর্যন্ত আসতে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে অস্বীকার করে আসছে বাংলাদেশ সরকার। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সম্প্রতি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ‘ধর্ষক’ ও ‘সন্ত্রাসী’ বলে আখ্যা করেছেন।

অন্যদিকে, সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ওপর কোনো ধরনের চাপ সৃষ্টি না করে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের ওপর শরণার্থী গ্রহণে চাপ দেয়ার ওপরই মনোযোগ বহাল রেখেছে বলে দেখা যাচ্ছে।

পেকুয়ার মগনামায় পোনা ধরা বন্ধ

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার উপকূলীয় ইউনিয়ন মগনামার সাগরচরে মৎস্যজীবীদের কাছ থেকে অঘোষিত ট্যাক্স আদায় এবং আধিপত্য বিস্তারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে জেলে ও মৎস্যজীবীরা ১৫-২০ দিন ধরে পোনা ধরা বন্ধ রেখেছেন।

দুই সপ্তাহের ব্যবধানে থানায় দুটি মামলায় অর্ধশতাধিক লোককে আসামি করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আর এতে পক্ষ-বিপক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকদফা সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুচ চৌধুরীসহ অনেকে।
সাগরের নিকটবর্তী মগনামা ইউনিয়নের পশ্চিমের কুতুবদিয়া চ্যানেলের চরে দীর্ঘদিন ধরে বেড়িবাঁধ সংশ্লিষ্ট এলাকার শত শত মৎস্যজীবী সাগরে জাল বসিয়ে গলদা ও বাগদা চিংড়ির রেণু পোনা আহরণ করে আসছিলেন।
পেকুয়া থানার ওসি নুরুল আমিন জানান, মগনামায় জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ শিগগিরই সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে অভিযান চালাবে। কোনোভাবেই সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।

ফেরার অপেক্ষায় ৩৪ রোহিঙ্গা

কক্সবাজারের টেকনাফের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে মিয়ানমার থেকে বৃহস্পতিবার ভোরে অনুপ্রবেশ করা ১৬ জন রোহিঙ্গাকে নিজ হেফাজতে রেখেছে বিজিবি।

এছাড়া আগের আটক করা ১৮ জনসহ বর্তমানে বিজিবি হেফাজতে স্বদেশে ফেরতের অপেক্ষায় রয়েছে ৩৪ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী।

বৃহস্পতিবার ভোরে কক্সবাজারের টেকনাফের নীল ইউনিয়নের জাদিমুরা পয়েন্ট থেকে তিনজন, টেকনাফের নাজিরপাড়া পয়েন্ট থেকে ১১জন ও নাইটংপাড়া পয়েন্ট থেকে দু’জনকে আটক করে হেফাজতে রাখে বিজিবি। এ সময় পাচারের কাজে অনুপ্রবেশের কাজে ব্যবহৃত একটি নৌকাও জব্দ করে। এছাড়া বুধবার এসব পয়েন্ট দিয়ে ৯জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীকে ফেরত পাঠায় বিজিবি।

বিজিবি-৪২ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার লে. কর্ণেল জাহিদ হাসান বার্তা২৪ ডটনেটকে জানান, কিছু অনুপ্রবেশকারী শাহপুরীর দ্বীপ এলাকায় টহল জোরদার থাকায় টেকনাফের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে। এসব পয়েন্টেও স্পীটবোট নিয়ে টহল জোরদার করা হয়েছে।

এ পর্যন্ত ৯৪৬ জন অনুপ্রবেশকারীর মধ্যে ৯১২ জনকে স্বদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে এবং বর্তমানে বিজিবি হেফাজতে স্বদেশে ফেরতের অপেক্ষায় রয়েছে ৩৪ জন  রোহিঙ্গা।

এদিকে টেকনাফ স্থলবন্দরে একটি মাছ ধরার ট্রলার ও একটি তুলার ট্রলার আসলেও ব্যবসায়ীদের যাতায়াত বন্ধ রয়েছে।

আটকের পর মিয়ানমারের ৭ নাগরিককে দেশে পাঠালো বিজিবি

কক্সবাজারের টেকনাফে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকালে মিয়ানমারের ৭ নাগরিককে আটক করে দেশে টাফিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

শুক্রবার ভোরে টেকনাফ উপজেলার নাইট্যংপাড়া এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। পরে বিকেল ৫টার দিকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

বিজিবির টেকনাফ ৪২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. জাহিদ হাসান বাংলানিউজকে জানান, অবৈধভাবে আসা মিয়ানমারের ৭ নাগরিককে আটক করার পর স্বদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। রোহিঙ্গা সনাক্ত করণের লক্ষ্যে সীমান্তের বিভিন্ন চেকপয়েন্টেসহ কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ঢাকাগামী যানবাহনে তল্লাশি করা হচ্ছে।

Wednesday, June 20, 2012

সংরক্ষিত বনে তিন মাসে ১৩০০ ঘর!

বন আইনে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া সংরক্ষিত বনাঞ্চল দখল করে দেদারসে বসতবাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে।

গত তিন মাসে এই বনের জমি দখল করে এক হাজার ৩০০টির বেশি বসতঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এতে বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং ওই এলাকার জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়েছে।
কক্সবাজার বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন আইন ১৯২৭ (২০০০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতরে ঘরবাড়িসহ কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
১২ জুন সরেজমিনে দেখা গেছে, বারবাকিয়া বনবিটের অধীন সংরক্ষিত বনাঞ্চলের লাইনের শিরা এলাকায় ২০০৩, ২০০৪ ও ২০০৬ সালে সৃজিত বনের ভেতরে বাঁশের বেড়া ও শণের ছাউনি দিয়ে বসতঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই এলাকার বনভূমি দখল করে স্থানীয় মোহামঞ্চদ নূর, জামাল হোসেন, শামসুল আলম, রমিজ উদ্দিন ও আবুল হোছন দুটি করে; নেজাম উদ্দিন ও বদি আলম একটি করে; নূর মোহামঞ্চদ ও আশকর আলী তিনটি করে এবং দুলা মিয়া চারটি বসতঘর নির্মাণ করেছেন।
দখলদার নূর মোহামঞ্চদ, বদি আলম ও জামাল হোসেন জানান, সংশ্লিষ্ট বনবিটের কর্মকর্তাকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ দিয়ে বনভূমি দখলে নিয়ে বসতঘর নির্মাণ করছেন। গত তিন মাসে তাঁদের কেউ বাধা দেয়নি।
পাশের আরগিলার দাঁরা, লম্বা শিরা, ছনখোলার জুম, সংগ্রামের জুম, আবাদিঘোনা, হঁউতুইল্লাহ, পুটিবিন্না, ঢালার মুখ, টৈটং বিটের বটতলী, খুইন্যাভিটা, ডাইনের ছড়া, মধুখালী, বনকানন, পুঁইছড়ির টিলা, বড় জিরিসহ বেশ কিছু এলাকায় এক হাজার ৩০০টির বেশি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন দখলদার জানান, গত তিন মাসে সংরক্ষিত বনের জমিতে এক হাজার ৩১২টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে এখানে আরও কমপক্ষে এক হাজার ঘর নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। বনের গাছ কেটেই বেশির ভাগ ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে বনাঞ্চল উজাড়ের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যও ধ্বংস হচ্ছে।
স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, বারবাকিয়া বনবিটের মালী সোহাগের মাধ্যমে বিট কর্মকর্তা কাউসার হোসেন পাঁচ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত উৎকোচ নিয়ে বনভূমি দখলের সুযোগ দিচ্ছেন। গত ২৩ মে বেলা ১১টায় বড়ছড়া এলাকার অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের কাছ থেকে মাসোয়ারা তুলতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হন এক বনকর্মী।
উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে কাউসার হোসেন জানান, সংঘবদ্ধভাবে কিছু লোক সংরক্ষিত বনভূমি দখল করে বসতঘর নির্মাণ করছে। লোকবলসংকটের কারণে এসব বসতঘর উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না।
চট্টগ্রাম (দক্ষিণ) বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মাকসুদুর রহমান জানান, পুলিশ ও বন বিভাগ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে এসব বসতঘর উচ্ছেদ করবে। আর অবৈধভাবে বসতি স্থাপনে সহায়তার সঙ্গে কোনো বন কর্মকর্তা বা কর্মচারী জড়িত থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্যারাবন নিধন করে চিংড়ি ঘের নির্মাণ চলছেই

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের ঘটিভাঙ্গা এলাকায় নতুনভাবে প্যারাবন নিধন করেই চিংড়ি ঘেরের বাঁধ নির্মাণকাজ চলছে।

প্রকাশ্যে পরিবেশ ধ্বংস করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রায় ১০০ একরের বনভূমি জবরদখল করে এ চিংড়ি ঘেরের বাঁধ নির্মাণ করছে। তবে বেশ কয়েকবার স্থানীয় বনকর্মীরা বাঁধা দিলেও তা উপেক্ষা করে ভূমিদস্যুরা কাজ চালাচ্ছে। ফলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হলেও তা দেখার যেন কেউ নেই।
জানা গেছে, উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের ঘটিভাঙ্গা এলাকার মোসখালী খালের পাশে প্যারাবন নিধন করে দুই সপ্তাহ ধরে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বনভূমি জবরদখল করে অবৈধভাবে চিংড়ি ঘেরের বাঁধ নির্মাণ করছে। প্রায় একশ' একরের এ ঘের করতে ইতিমধ্যে তিন হাজারের অধিক বাইন গাছ কাটা পড়েছে। আর দিনদুপুরে প্যারাবন কেটে ঘেরের জন্য বাঁধ নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে নির্বিচারে প্যারাবন নিধন করার ফলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
ঘটিভাঙ্গার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রকাশ্যে প্যারাবন নিধন করেই স্থানীয় আবদুুল মালেকসহ বেশ কয়েকজন মিলে দুই সপ্তাহ ধরে প্রায় ১০০ একরের একটি চিংড়ি ঘের করার জন্য বাঁধ নির্মাণ করছে। ইতিমধ্যে প্যারাবন নিধন করে বাঁধ নির্মাণ করার সময় বনকর্মী ও পরিবেশ অধিদফতরের লোকজন বেশ কয়েকবার বাধা দেন। কিন্তু কয়েক দিন বাঁধ নির্মাণকাজ বন্ধ থাকলেও আবার শতাধিক শ্রমিক দিয়ে ওই প্রভাবশালী লোকজন প্যারাবন কেটে বাঁধ নির্মাণের কাজ চালাচ্ছে। এতে পরিবেশের ক্ষতি হলেও তা দেখার কেউ নেই।
পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজার অফিস সূত্রে জানা গেছে , 'বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫'-এর আওতায় ১৯৯৯ সনে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সোনাদিয়া দ্বীপ ও এর পাশের ঘটিভাঙ্গা মৌজাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে। ইসিএর জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য পরিবেশ অধিদফতর ও এর সহযোগী সংস্থা নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (নেকম) ও সুখী বাংলা ফাউন্ডেশন (এসবিএফ) কাজ করছে। আর এ প্রকল্পের মাধ্যমে সোনাদিয়া দ্বীপের ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণ ও সৃজন, বালিয়াড়ির উদ্ভিদ সংরক্ষণ ও সৃজন, সামুদ্রিক কাছিম সংরক্ষণ, প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভরশীল দরিদ্র ও হতদরিদ্র মানুষ নিয়ে দল গঠন ও তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য আর্থিক সহযোগিতা প্রদান এবং বিভিন্ন সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে উপকূলীয় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করছে। আর ইসিএর প্যারাবন নিধন করে অবৈধ চিংড়ি ঘের নির্মাণ ও পরিবেশ নষ্ট করলে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)-এর ৫(১) ও ৫(৪) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ ।
পরিবেশ অধিদফতরের সহযোগী এনজিও সংস্থা সুখী বাংলা ্ফাউন্ডেশনের জীববিদ আবদুুল কাইয়ুম বলেন, প্রায় একশ' একরের মতো চিংড়ি ঘের করার জন্য ওই প্রভাবশালী লোকজন প্যারাবন উজাড় করেই বাঁধ নির্মাণ করছে। তিনি বলেন, গত ২৮ মে সরেজমিন গিয়ে ওই ঘেরের বাঁধ নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিই এবং জবরদখলকারীদের পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু এর পরও বিচ্ছিন্নভাবে প্যারাবন নিধন করেই ওই প্রভাবশালীরা বাঁধ নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে ঘটিভাঙ্গা বিট কর্মকর্তা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, প্যারাবন কেটে বাঁধ নির্মাণ করার সময় বনকর্মীরা বেশ কয়েকবার বাধা দেন। কিন্তু বনকর্মীদের বাধা উপেক্ষা করেই ভূমিদস্যু আবদুুল মালেকের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন লোক বনভূমি জবরদখল করেই ঘেরের বাঁধ নির্মাণকাজ চালিয়ে নেন। কিন্তু লোকবল চরম সংকটের কারণে ভূমিদস্যুদের কবল থেকে বনভূমি রক্ষা করতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে।
উপকূলীয় বন বিভাগের গোরকঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ইকবাল বলেন, প্যারাবন নিধন করে নতুন করে চিংড়ি ঘেরের বাঁধ নির্মাণ করার অভিযোগে ভূমিদস্যু আবদুল মালেকসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে বন ও পরিবেশ আইনে আদালতে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম কাউসার হোসেন বলেন, ঘটিভাঙ্গায় নতুন করে প্যারাবন নিধন করেই চিংড়ি ঘের নির্মাণের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বন বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পেকুয়ার ৮ সড়ক চলাচল অনুপযোগী

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার অভ্যন্তরীণ ৮টি সড়ক চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় এসব সড়ক বেহাল।

এ ছাড়া গত বর্ষা মৌসুমে বন্যায় লণ্ডভণ্ড হয়েছে শিলখালী ইউনিয়নের দুটি সড়ক। এসব সড়ক সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পেকুয়া উপজেলার কাটাফাঁড়ি ব্রিজ-উজানটিয়ার করিমদাদ মিয়ার ঘাট সড়ক, পূর্ব গোয়াখালী-ছিরাদিয়া সড়ক, শিলখালীর কাছারি মোড়া-বারবাকিয়া সওদাগর হাট সড়ক, বারবাকিয়ার ফাঁসিয়াখালী-মৌলভীবাজার সড়ক, মগনামার ফুলতলা স্টেশন-কাজির মার্কেট সড়ক, পেকুয়ার মৌলভীপাড়া-বারবাকিয়া বাজার সড়ক, পশ্চিম গোয়াখালী রাবার ড্যাম-জালিয়াখালী সড়ক, টৈটং বাজার-বাঁশখালী সড়ক বর্তমানে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এসব বেহাল সড়ক দিয়ে যান চলাচল তো দূরের কথা হাঁটাও কষ্টসাধ্য। পূর্ব গোয়াখালী এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ শাহজাহান জানান, পূর্ব গোয়াখালী সড়কটি গত এক যুগ ধরে সংস্কার করা হচ্ছে না। গত সরকারের সময়ে পেকুয়ায় ব্যাপক উন্নয়ন হলেও এ সড়কটিতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।
এলজিইডির পেকুয়া উপজেলা প্রকৌশলী মোল্লা আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, বর্তমানে কয়েকটি সড়কের সার্ভে চলছে। শিগগিরই এসব সড়ক সংস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।
উজানটিয়া ইউনিয়নের সোনালী বাজার এলাকার ওসমান গণি, নুরুল আজিম, ফেরাসিঙ্গা পাড়ার মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন জানান, এখানে কোনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স না থাকায় যে কোনো রোগীকে উপজেলা সদরে নিয়ে যেতে হয়। তার ওপর রাস্তার নাজুক অবস্থার কারণে এখানে কোনো প্রকার যানবাহন পাওয়া যায় না। তার জন্য দায়ী এই ভাঙাচোরা রাস্তা। এদিকে গত অর্থবছরে চকরিয়া পেকুয়ার বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত সংসদ সদস্য সাফিয়া খাতুন উজানটিয়ার সোনালী বাজার থেকে উজানটিয়া স্টিমার ঘাট পর্যন্ত সড়কের সংস্কার কাজের জন্য প্রায় ৭৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়।
পেকুয়া এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী হারু কুমার পাল জানান, পেকুয়া বাজার থেকে আরবশাহ বাজার, চড়াপাড়া থেকে বারবাকিয়া সওদাগর হাট, মগনামার আরএসডি থেকে উচ্চ বিদ্যালয়, কাটাফাঁড়ি থেকে সোনালী বাজার সড়কের সার্ভে চলছে। শিগগিরই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসব সড়ক পরিদর্শন করবেন।
এ বিষয়ে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-ই-খাজা আলামিন বলেন, অতিরিক্ত লবণবোঝাই নিয়ে ট্রাক আসা যাওয়ার কারণে মগনামার সড়কগুলো নষ্ট হচ্ছে। পেকুয়ার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর বেহাল অবস্থার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন মহলকে অবহিত করা হয়েছে।

কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়নে ব্যয় হবে ৪১৬ কোটি টাকা

পর্যটন নগরী কক্সবাজারে বিমানবন্দর উন্নয়নে ৪১৬ কোটি টাকা ব্যয় করতে যাচ্ছে সরকার। আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ নিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে তুরস্কের কুয়ানতা ইনসাত তাহাত নামের একটি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এ-সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য আজ বুধবার সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উঠছে।
সূত্র জানায়, কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) ঠিকাদার নিয়োগের জন্য ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য ২০ মে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের জন্য একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছিল। প্রস্তাবে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে তুরস্কের কুয়ানতা ইনসাত তাহাতের নাম সুপারিশ করা হয়েছিল। বৈঠকে প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহী নির্মাতা সংস্থাটির সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছিল। ২৮ মে আবার ক্রয় কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হলে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির রানওয়ে পেভমেন্ট নির্মাণে নিরাপত্তা এবং গুণগত মান নিশ্চিত করা, মূল্য পরিশোধের সময় মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি টাকার বিনিময় হার কীভাবে নির্ধারণ করা হবে এবং দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের রানওয়ে পেভমেন্ট কাজের অভিজ্ঞতা, একসঙ্গে একাধিক কাজ করার যোগ্যতা ও সামর্থ্যের বিষয়টি আমলে নিয়ে দরপ্রস্তাবটি পুনর্মূল্যায়ন করার সুপারিশ করে।
সূত্র জানায়, তুরস্কের ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের রানওয়ে পেভমেন্ট নির্মাণকাজের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে কি-না তা যাচাইয়ের জন্য তুরস্কে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। দূতাবাস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ৫ জুন তাদের মতামত পাঠায়। এতে প্রতিষ্ঠানটির এক কোটি ৮০ লাখ ডলারের বেশি পেভমেন্ট কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে বলে জানানো হয়। প্রতিষ্ঠানটি যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকে রানওয়ে পেভমেন্ট নির্মাণ করেছে বলেও জানানো হয়। প্রতিষ্ঠানটি আঙ্কারা চেম্বার অব কমার্সের নিবন্ধিত একটি প্রতিষ্ঠান। সূত্র জানায়, এ কাজের জন্য দেশীয় কোম্পানি আবদুল মোনেম লিমিটেড(এএমএল) ও ট্রান্স রিসোর্সেস করপোরেশন (টিআরসিএসবি) নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে দরপত্রে অংশ নিয়েছিল। তাদের দরপ্রস্তাব ছিল ৪৪৭ কোটি টাকা। ফলে তারা দ্বিতীয় দরদাতা হিসেবে পরিগণিত হয়। নিয়ম অনুযায়ী সর্বনিম্ন দরদাতার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। ক্রয় কমিটির বৈঠকে তুরস্কের প্রতিষ্ঠানটির প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।

শরণার্থী দিবস পালন করছে না কক্সবাজারের রোহিঙ্গারা

আজ ২০ জুন বিশ্ব শরণার্থী দিবস। বিগত বছরগুলোতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো কক্সবাজারে অবস্থিত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীরাও দিবসটি পালন করে আসছিলেন।

সম্প্রতি মিয়ানমারে আরকানে রোহিঙ্গা মুসলিম ও রাখাইনদের মধ্যে দাঙ্গা সৃষ্টি হওয়ায় বিশ্ব শরণার্থী দিবসের আয়োজন করছেন না রোহিঙ্গা শরণার্থীরা।
অনেকে মতে, বিশ্ব শরণার্থী দিবস রোহিঙ্গাদের ভাগ্য পরিবর্তনের বড় কোনো আবেদন না থাকায় রোহিঙ্গারা এ দিবস উদযাপনে অনাগ্রহী হয়ে পড়েছে।

অপরদিকে আবারো আরকানে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর রাখাইনদের সহিংসতা চলছে। যেকোনো ধরনের অনুপ্রবেশের বিরোধিতা করছে স্থানীয় বাংলাদেশীরা। তারা মনে করছে রোহিঙ্গাদের কারণে সমগ্র কক্সবাজারে আর্থসামাজিক অবস্থার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

এ ব্যাপারে রোহিঙ্গা শরণার্থী যুবক মুজিবুর রহমানের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, আমি ১৯৯১ সালে মা-বাবার সঙ্গে মিয়ানমার সামরিক জান্তার অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে আশ্রায় নিই। বাংলাদেশ সরকার বলছে আমরা মিয়ানমারে রোহিঙ্গা, অপরদিকে মিয়ামান সরকার বলছে আমরা বাঙালি। মাঝখানে আমরা দেশবিহীন জাতি পরিণত হয়েছি।

সরেজমিন পরিদর্শনে জানা গেছে, কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে এক হাজার ১৯৮ পরিবারে ১০ হাজার ১৬১ জন এবং টেকনাফের নয়াপাড়া শরনার্থী শিবিরে এক হাজার ৭৭১ পরিবারের ১৪ হাজার ৭২১ জনসহ প্রায় ২৫ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছে।

তবে ইউএনএইচসিআর’র সূত্র মতে, দুটি শিবিরে শিশুসহ বৈধ শরণার্থীর সংখ্যা ২৮ হাজারেরও বেশি। এছাড়া উখিয়া-টেকনাফের দু’টি নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের প্রায় ২৮ হাজার রোহিঙ্গা ছাড়া টেকনাফের লেদা অনিবন্ধিত ২২ হাজার আর উখিয়া কুতুপালং ক্যাম্পের পাশ্ববর্তী লক্ষাধিক অনিবন্ধিত শরণার্থী রছে। এছাড়া কক্সবাজার, বান্দবন ও চট্রগ্রাম জেলায় আরো চার লাখ রোহিঙ্গা অবৈধ বসবাস করছে।

সম্প্রতি আরকান রাজ্যে আবারো রোহিঙ্গা মুসলিম ও রাখাইনদের মধ্যে সহিংসতা সৃষ্টি হওয়ায় অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ১৯৯২ সালের শুরুর দিকে মিয়ানমারে তৎকালীন সামরিক জান্তা সরকারের নির্যাতনের শিকার হয়ে দুই লাখ ৫২ হাজার রোহিঙ্গা  বাংলাদেশে চলে এসেছিল।

পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের মধ্যস্থতায় দুই লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৯ জন শরণার্থী স্বদেশে ফিরে গেলেও মিয়ানমার সরকারের ছাড়পত্র না দেয়ার কারণে আরো ২৫ হাজার শরণার্থী দেশে ফেরত যায়নি। সর্বশেষ ২০০৫ সালে ২৯ জনের শরণার্থী দল স্বদেশে গিয়েছিল, তারা আবার বাংলাদেশে ফিরে আসে।

গত চার বছরে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ফিরে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অবৈধভাবে অবস্থান করছে কুতুপালং শরণার্থী শিবির সংলগ্ন চার-পাঁচটি পাহাড়ে। এছাড়া নয়াপাড়া ক্যাম্প সংলগ্ন লেদা গ্রামে অবস্থান করছে প্রায় ২০ হাজার রোহিঙ্গার সবাই অনিবন্ধিত শরণার্থী। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই বিপুলসংখ্যক বৈধ অবৈধ রোহিঙ্গার কারণে উখিয়া টেকনাফে দেখা দিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা অবনতিসহ নানা সামাজিক অস্থিরতা। রোহিঙ্গারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে এদেশের মূল জনগোষ্ঠীর মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। এই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা কক্সবাজারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

টেকনাফ উপজেলা নিবার্হী অফিসার আনম নাজিম উদ্দিন বার্তা২৪ ডটনেটকে জানান, ‘বর্তমান সরকার দ্বি-পাক্ষিক কুটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন কার্যক্রম আবারো শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।’

সম্প্রতি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির ও শাহপরী দ্বীপ সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউএনএইচসিআর এর প্রতিনিধি ক্রেইক সেন্ডাস। সেখানে তিনি ইউএনএইচসিআর এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে সার্বিক বিষয়ে কথা বলেন। পরে তিনি টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের যে পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছিল-সেসব স্থান পরিদর্শন করেন।

এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “মিয়ানমারের জাতিগত দাঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা শান্ত করতে প্রথমে মিয়ানমারকেই উদ্যোগ নিতে হবে।”

স্থানীয়রা মনে করেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন বন্ধ থাকার সুযোগে আরো নতুন নতুন রোহিঙ্গা আসার সুযোগ পাচ্ছে। এভাবে আরো রোহিঙ্গা আসতে থাকলে এই অঞ্চলে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত সাতটি এনজিওকে সতর্ক

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ও টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে কর্মরত সাতটি বেসরকারি সংস্থাকে (এনজিও) মিয়ানমারের অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে নাক না গলাতে সতর্ক করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেল চারটায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সভায় ওই এনজিওর কর্মকর্তাদের এ নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জয়নুল বারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার সেলিম মো. জাহাঙ্গীর, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) খন্দকার জহিরুল ইসলাম, এনজিও সংস্থা এমএসএফ হল্যান্ড, এসিএফ, মুসলিম এইড, ভার্ক, আরটিআই, রিভ ও সেভ দ্য চিলড্রেনের কর্মকর্তারা।
এডিসি (শিক্ষা) খন্দকার জহিরুল ইসলাম গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশি তহবিল নিয়ে এই সাতটি এনজিও কয়েক বছর ধরে উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে শিক্ষা, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু কিছু এনজিও কর্মকর্তা চিকিৎসার নাম দিয়ে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাই রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে নাক না গলাতে কর্মকর্তাদের সতর্ক করা হয়। যদিও বৈঠকে তাঁরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
পুলিশ সুপার সেলিম মো. জাহাঙ্গীর জানান, সাতটি এনজিওর মধ্যে কয়েকটির সীমান্ত এলাকায় কাজ করার অনুমোদন নেই। কয়েকটির অনুমোদন থাকলেও ইতিমধ্যে তার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তাই নতুনভাবে জেলা প্রশাসন থেকে অনুমোদন নিয়ে কাজ করার জন্য সাতটি এনজিওর কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন ছাড়া রোহিঙ্গা শিবিরে কাজ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলে দেওয়া হয়েছে।

টেকনাফে আরও ১৫ রোহিঙ্গা আটক

কক্সবাজারের টেকনাফে অনুপ্রবেশের অভিযোগে ১৫ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও পুলিশ।

বিজিবি ও পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল মঙ্গলবার ভোরে নাফ নদী অতিক্রম করে অনুপ্রবেশের পর উপজেলার সাবরাং এলাকার বেড়িবাঁধ থেকে তাদের আটক করা হয়। অন্যদিকে, গতকাল বিকেলে টেকনাফ থানা পুলিশ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা এলাকা থেকে চারজন রোহিঙ্গাকে আটক করে। তাঁরা সবাই মিয়ানমারের মংডু টাউনশিপের বাসিন্দা।
৪২ বর্ডার গার্ড টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত মেজর সাইফুল ওয়াদুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মিয়ানমারের ১৫ নাগরিককে আটক করা হয়েছে। হঠাৎ করে সাগর ও নাফ নদী উত্তাল হওয়ায় তাদের এখনই ফেরত পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। আবহাওয়া ভালো হলে তাদের ফেরত পাঠানো হবে।’

Tuesday, June 19, 2012

টেকনাফ সীমান্তে দেড় বছরে চার হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে পুশব্যাক

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। গত দেড় বছরে টেকনাফসহ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা প্রায় ৪ হাজার রোহিঙ্গাকে আটক করে

টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে পুশব্যাক করেছে সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি)। এর মধ্যে শুধু গত ৮-১৮ জুনের মধ্যে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে রাখাইন ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে চলমান দাঙ্গার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গারা দলে দলে প্রবেশের সময় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে পুশব্যাক হয়েছে ৮৮৯ জন রোহিঙ্গা।
বিজিবি সূত্র জানায়, বাংলা-দেশ-মিয়ানমার সীমান্তপথে ২০১১ সালে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে পুশব্যাক করা হয়েছে ১ হাজার ৭৮৯ রোহিঙ্গাকে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৬৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৭৬ জন, মার্চে ৮৩ জন, এপ্রিলে ১৩২ জন, মে’তে ২৫৫ জন, জুনে ১৩১ জন, জুলাইতে ৭৩ জন, আগস্টে ১২৮ জন, সেপ্টেম্বরে ১৬১ জন, অক্টোবরে ১শ’ জন, নভেম্বরে ২৮৩ জন এবং ডিসেম্বরে ৩০৫ জনকে পুশব্যাক করা হয়েছে।
আর ২০১২ সালের জানুয়ারিতে ২১৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৪৪৫ জন, মার্চে ২৭৫ জন, এপ্রিলে ১৮৮ জন, মে মাসে ১৩২ জন এবং জুন মাসের গত ১৮ দিনে ৮৮৯ জনকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বিজিবি সূত্র জানিয়েছে, বুধবার থেকে গত যাদের আটক করা হয়েছে তাদের মধ্যে নতুনভাবে এসেছে এমন কেউ নেই। তাদের অনেককে আগেও পুশব্যাক করা হয়েছিল।
সূত্র আরও জানায়, নাফ নদী দিয়ে ২৪টি পয়েন্টে অনুপ্রবেশকারীদের ঢোকা সম্ভব। এর মধ্যে নাজিরপাড়াসহ ৬-৭টি পয়েন্ট আছে, যেগুলো দিয়ে বেশিরভাগ রোহিঙ্গা প্রবেশের চেষ্টা করে। তবে এসব পয়েন্ট সিল করে দেয়া হয়েছে বলে সূত্র জানায়।
বিজিবির ৪২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক জানান, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদীপথে বিজিবির নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে। ৯টি জলযান রাতভর নাফ নদীতে টহল দিচ্ছে। এছাড়াও গ্রামে গ্রামে রোহিঙ্গা লুকিয়ে আছে কি-না সেটা জানতেও সোর্স নিয়োগ করা হয়েছে।
বিজিবি সূত্র জানায়, নাফ নদীর উপকূলে মিয়ানমার এলাকায় ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে ৪৮ কিলোমিটারে কাঁটাতারের বেড়া আছে। বিজিবি কর্মকর্তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন, এসব কাঁটাতারের চেকপোস্ট পার হয়ে নাফ নদীতে নামার ক্ষেত্রে নাসাকা বাহিনীও এখন রোহিঙ্গাদের বাধা দিচ্ছে। এর ফলে অনুপ্রবেশের চেষ্টকারীর সংখ্যা আস্তে আস্তে কমে আসছে।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিরোধে টেকনাফ, শাহপরীর দ্বীপ, নাইক্ষ্যংছড়ির মনজয়পাড়া, রেজুপাড়া ও লেমুছড়ি সীমান্ত এলাকায় অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। সরেজমিন পরির্দশনকালে শাহপরীর দ্বীপের বেড়িবাঁধ এলাকার প্রায় চার কিমি সড়কে অতিরিক্ত বিজিবিকে টহলে দেখা যায়। স্থানীয় শ্রমিক আলী হোসেন জানান, গভীর রাতে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা নদীপথে এসে বিভিন্ন গ্রামে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বিজিবি বেশ কয়েক রোহিঙ্গাকে আটক করে পুশব্যাক করেছে।
নাইক্ষ্যংছড়ির ১৫ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, নাইক্ষ্যংছড়ির মনজয়পাড়া, রেজুপাড়া এবং লেমুছড়ি সীমান্ত ব্যবহার করে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করতে পারে। এ কারণে এসব সীমান্ত পয়েন্টের বর্ডার অবজারবেশন পোস্টগুলোকে কড়া প্রহরায় থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় জনগণ ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী (ভিডিপি) রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সজাগ রয়েছে বলে জানান তিনি।
৪২ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অপারেশন কর্মকর্তা এইচ কামরুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, গত এক সপ্তাহে অনু-প্রবেশের ৭৮৬ জনকে আটক করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহাবুবুল হক জানান, চলমান রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি পুলিশও বিভিন্ন এলাকায় টহল জোরদার করেছে।
এদিকে সজেমিন পরির্দশনকালে স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিয়ানমারে চলমান জাতিগত সহিংসতার কারণে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় অবস্থানরত তাদের আত্মীয়স্বজনদের সহযোগিতায় অনেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে।
বাংলাদেশীরা অবৈধ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে। তবে সীমান্ত এলাকার অনেক গ্রামে রোহিঙ্গারা লুকিয়ে থাকতে পারে—এমন সম্ভাবনার ভিত্তিতে বিজিবি কয়েকটি গ্রামে তল্লাশি চালিয়েছে।
গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার সময় পাঁচটি ট্রলারযোগে মংডু থেকে পালিয়ে এসে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ সীমান্ত দিয়ে দেশে প্রবেশের চেষ্টাকালে ১০৩ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা (সোমবার বেলা ৩টা পর্যন্ত) পর্যন্ত তাদের পুশব্যাক করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল বিজিবি ও কোস্টগার্ড।

কক্সবাজার শহরের 'রোহিঙ্গা ডিপো'

মিয়ানমারে চলমান জাতিগত সহিংসতার আগেও ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন কৌশলে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে এ দেশে। এক প্রকার ফ্রি স্টাইলে রোহিঙ্গাদের যাতায়াত আছে পর্যটন শহর কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায়।

এর মধ্যে সবচেয়ে বড় রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা হচ্ছে শহরের দক্ষিণ পাহাড়তলীর বিশাল পাহাড়ি এলাকা। রোহিঙ্গাদের কারণে উক্ত এলাকায় স্থানীয় লোকজন সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে! মাত্র এক দশকের ব্যবধানে দক্ষিণ পাহাড়তলী ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী ইসলামপুর, বার্মাপাড়া, জিয়ানগর, হালিমাপাড়া, ইসুলুঘোনা, ফাতেরঘোনাসহ বিশাল পাহাড়ি এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে রোহিঙ্গাদের জাল। এলাকাটি বর্তমানে রোহিঙ্গাদের ডিপোতে পরিণত হয়েছে। সেখান থেকে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে পর্যটন শহরের নানা অপরাধ।
হালিমাপাড়া সমাজ কমিটির সভাপতি আবদুশ শুক্কুর (৬৫) জানান, এক দশক আগেও শহরের পাশে দক্ষিণ পাহাড়তলীতে স্থানীয় লোকজনের বসবাস ছিল হাতেগোনা। এখন সেখানে হাজার হাজার রোহিঙ্গার বসবাস। এমনকি ওই এলাকার পাশেই ইসলামপুর, বার্মা পাড়া, হালিমাপাড়া, জিয়া নগর, ইসুলুঘোনা, ফাতেরঘোনাসহ বেশ কয়েকটি পাড়া গড়ে ওঠে রোহিঙ্গাদের নিয়ে। রোহিঙ্গারা সেখানে পাহাড়ের পর পাহাড় নিধন করে হাজার হাজার ঘর গড়ে তুলেছে।
তিনি আরো জানান, এখানে নিয়মিত রোহিঙ্গারা আসেন। তারা প্রথমে ভাড়া বাসা ও আত্মীয়-স্বজনের বাসায় অবস্থান করেন। সেখান থেকে পাহাড় দখল, কখনো কখনো পাহাড়ের দখল ক্রয় করে বাসা-বাড়ি তৈরি করেন। অনেকে সেখানে অবস্থান করে বিভিন্ন কৌশলে পাসপোর্ট তৈরি করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমায়।
হালিমাপাড়া সমাজ কমিটির সহ-সভাপতি মৌলভী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এসব পাড়ায় প্রায় প্রতিদিন ১০/১২ জন করে রোহিঙ্গা আসে। তারা ভাড়া বাসা ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। তারা বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডেও লিপ্ত। তিনি জানান, শহরের পাহাড়ি এসব এলাকায় হাজার হাজার রোহিঙ্গার বসবাস রয়েছে। দিন দিন বাড়ছে রোহিঙ্গাদের বসতি। তারা সরকারি খাস জমি ও বন বিভাগের পাহাড় কেটে তা দখল করে বসবাস করছে। অথচ সেখানে প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকরা বসবাসের সুযোগ পাচ্ছে না। তাদের কাছে স্থানীয়রা অনেকটা অসহায় বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা এলাকায় এতই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে, জরুরি অবস্থার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়নে রোহিঙ্গা যাচাই-বাছাই কমিটিতে আমি সদস্য ছিলাম। সেখানে রোহিঙ্গাদের পক্ষে সমর্থন না দেওয়ায় সেনাবাহিনীর সদস্যদের সামনেই রোহিঙ্গারা আমার ওপর হামলার চেষ্টা চালায়। তিনি আরো বলেন, এসব এলাকায় বর্তমানে হাজার হাজার রোহিঙ্গা জাতীয় পরিচয়পত্র বিহীনভাবে বসবাস করছে। আবার অনেকে টাকার বিনিময়ে ও ভোটের রাজনীতির কারণে কতিপয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছে। এ ধরনেরও শত শত রোহিঙ্গা এলাকায় রয়েছে বলে তিনি জানান।
জিয়ানগর সমাজ কমিটির সভাপতি সোহেল বলেন, এলাকায় ভাসমান রোহিঙ্গার সংখ্যা বেশি। এরা উক্ত এলাকায় আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কোনো অভিযান না থাকায় তারা এলাকায় এসে বসবাসের সুযোগ পাচ্ছে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, রোহিঙ্গারা উক্ত এলাকায় বেশ কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে খুন, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, অপহরণ, জমি দখলসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত। গ্রুপের সদস্যরা পর্যটন শহরের বিভিন্ন স্পটে অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে এসব এলাকায় এসে আশ্রয় নিয়ে থাকে। এসব রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের কারণে অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় লোকজন তাদের কাছে অসহায়।
সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে আসা ইসুলুঘোনার নুরুল ইসলাম নিজেকে মিয়ানমারের নাগরিক নয় দাবি করে বলেন, তার প্রকৃত গ্রামের বাড়ি টেকনাফের হোয়াইক্যং এলাকায়। তার কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমার কাছে চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট আছে।' তবে তা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কঙ্বাজারের পুলিশ সুপার সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, 'কঙ্বাজারের আইনশৃঙ্খলা অবনতির পেছনে রোহিঙ্গাদের বিষয়টি জড়িত। তারা খুন, ছিনতাই, মাদক পাচার, চুরি, ডাকাতি, জমি দখলসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যা তারা করছে না। জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় জেলার অধিকাংশ অপরাধের সাথে রোহিঙ্গারা জড়িত বলে প্রতিবেদন দেওয়া হয়।'
এছাড়া রোহিঙ্গারা গাছকাটা, পাহাড়কাটা থেকে শুরু করে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টিতে জড়িত বলে মনে করেন কঙ্বাজার বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা।