Thursday, May 15, 2014

ভারতের লোকসভা নির্বাচন: সুষমা ও আদভানিকে নিয়ে সমস্যা- সরকার গঠনে মশগুল বিজেপি, বিমর্ষ কংগ্রেস by সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়

বুথ-ফেরত জরিপে উৎফুল্ল বিজেপি সরকার গঠনের চিন্তায় মশগুল। নরেন্দ্র মোদির সরকারে কারা থাকবেন, কে কোন মন্ত্রণালয় পেতে পারেন, বিজেপিতে সাংগঠনিক রদবদল কী রকম হবে বা নতুন কোন কোন দল এ সরকারের সমর্থনে এগিয়ে আসতে পারে, গতকাল বুধবার দিনভর এ বিষয়গুলো নিয়ে বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা তৎপর থেকেছেন। অন্যদিকে চূড়ান্ত ফল না বেরোলেও কংগ্রেস বেশ বিমর্ষ। আকবর রোডের সদর দপ্তরে বিষণ্নতা ছেয়ে আছে যেন। কংগ্রেস সহসভাপতি রাহুল গান্ধী আজ বৃহস্পতিবার দলের মুখপাত্রদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন। উদ্দেশ্য, ফল নিয়ে সবার এক সুরে কথা বলা। বিজেপির তৎপরতা বহুমুখী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভায় কাদের স্থান হচ্ছে, সেটাই প্রাধান্য পাচ্ছে। সমস্যা প্রধানত লালকৃষ্ণ আদভানি, মুরিল মনোহর যোশি ও সুষমা স্বরাজকে নিয়ে। তিনজনেই দলে সব সময় মোদিবিরোধী হিসেবে পরিচিত। আদভানি ও যোশি দুজনেই অশীতিপর, বাজপেিয়-মন্ত্রিসভায় আদভানি উপপ্রধানমন্ত্রীও ছিলেন। মোদির মন্ত্রিসভায় তাঁদের স্থান কী হবে, সেটা একটা বড় সমস্যা। দলে দুজনের অবস্থান এমনই যে তাঁদের উপেক্ষা করাও শোভন আর সহজ হবে না। এ মুহূর্তে বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটের (এনডিএ) চেয়ারম্যান আদভানি। মোদি জমানায় তাঁকে সেই দায়িত্বে রাখাও মুশকিল হতে পারে। সুষমা ও মোদি প্রায় সমবয়সী। কিন্তু চিরদিন বিরোধী শিবিরের বলে সুষমাকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো মন্ত্রণালয় দিতে মোদির বিশেষ আগ্রহ নেই। তাঁকে লোকসভার স্পিকার করে সমস্যার সমাধান করা যায় িক না, সেই ভাবনাও রয়েছে। সুষমা গতকাল আদভানির সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁর সঙ্গে দেখা করেন দলের সাবেক সভাপতি নীতিন গড়কড়িও। নীতিন, অরুণ জেটলি, অমিত শাহ ও দলের সভাপতি রাজনাথ সিংও পরস্পরের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। দুদিন আগে তাঁরা মোদির সঙ্গেও বৈঠক করেন।
মোদির মন্ত্রিসভায় যাঁদের স্থান প্রায় নিশ্চিত মনে করা হচ্ছে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন অরুণ জেটলি, রবিশঙ্কর প্রসাদ, শাহনওয়াজ হুসেন, স্মৃতি ইরানি, অনুরাগ ঠাকুর, সাবেক সেনাপ্রধান ভি কে সিং ও সুব্রানিয়াম স্বামী। রাজনাথ সিং প্রাথমিকভাবে মন্ত্রী হতে গররাজি ছিলেন। কিন্তু ইদানীং তিনিও উৎসাহী হয়েছেন। রাজনাথ মন্ত্রী হলে বিজেপির সভাপতি কে হবেন, দলকে তা ঠিক করতে হবে। সাবেক সভাপতি নীতিন গড়কড়ি তাঁর পুরোনো পদ ফিরে পেতে আগ্রহী। দুর্নীতির অভিযোগে তিনি সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছিলেন। এতে চাপ সৃষ্টি করেছিলেন আদভানি নিজে। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় নীতিন দেখা করেছিলেন প্রভাবশালী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের নেতাদের সঙ্গে। আদভানির সঙ্গেও তাঁর আলোচনা হয়েছে। নীতিন সংঘের খুবই কাছের। তাই মোদিকে সংঘের প্রতি অনুগত রাখতে তাঁকে আবার সভাপতি করা হলেও হতে পারে। মোদিকে লাগামছাড়া রেখে দিতে সংঘ একেবারেই চায় না। নীতিনকে সভাপতি পদে পুনর্বহাল না করা গেলে তিনি চান অবকাঠামোসংক্রান্ত কোনো মন্ত্রণালয়। বুথ-ফেরত জরিপ আশাতিরিক্ত ফল দেখানোয় বিজেপি ধরেই নিয়েছে, এনডিএ নিজের ক্ষমতাতেই সরকার গঠন করতে পারবে। কিন্তু একান্তই তা না হলে তাদের বন্ধু প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বিজেপির অধিকাংশ নেতা ওডির বিজু জনতা দল এবং অন্ধ্র প্রদেশের তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি ও ওয়াইএসআর কংগ্রেসের মতো 'নির্ঝঞ্ঝাট' দলের সমর্থন নেওয়ার পক্ষে। এ তিন দল ছাড়া উত্তর-পূর্ব ভারতের ছোট ছোট দলগুলোকেও তারা ধরে রাখছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, একান্তই সমর্থন নিতে হলে এদের থেকে নেওয়াই ভালো। কারণ, এদের বায়না কম। জাতীয় স্তরে রাজনীতি করার উচ্চাশাও নেই। তা ছাড়া এ দলগুলো অযথা চাপের রাজনীতি করে না।
অবশ্য জয়ললিতা ও নবীন পট্টনায়েক সব সম্ভাবনার রাস্তা খোলা রাখছেন। বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাবেন না, এমন কথা দুজনের কেউই বুধবার বলেননি। বরং দুজনেই বলেছেন, তাঁরা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। ফল বেরোনোর অপেক্ষায় রয়েছেন। ওডিশায় বিজু জনতা দলের চিফ হুইপ প্রভাত ত্রিপাঠি অবশ্য এক ধাপ এগিয়ে 'রাজ্যের স্বার্থে শর্তাধীন সমর্থনের' কথা শুনিয়ে রেখেছেন। শর্তটা হলো, অনুন্নত ওডিশাকে বিশেষ মর্যাদা দিতে হবে। বিজেপির সঙ্গে ঘেঁষার ইঙ্গিত দিয়ে এনসিপির প্রফুল্ল প্যাটেল ইতিমধ্যেই বলেছেন, তাঁরা একটা স্থায়ী ও শক্তিশালী সরকার গঠনের অপেক্ষায় রয়েছেন। এনসিপি ইউপিএর অনেক দিনের শরিক। মহারাষ্ট্রে কংগ্রেসের সঙ্গে তারা একযোগে সরকার চালাচ্ছে। প্রফুল্লের এ মন্তব্যে তাই ব্যাপক জল্পনা চলছে। বিজেপির এ তৎপরতার উল্টো ছবি কংগ্রেসে। দলকে ঘিরে বিরাজ করছে অদ্ভুত এক নীরবতা। বুথ-ফেরত জরিপ মেনে নিতে অনীহা থাকলেও তৃতীয়বারের ইউপিএ সরকার গঠন নিয়ে তারা একেবারেই আশাবাদী নয়। কংগ্রেস ফল বেরোনোর আগে চুপ থাকাই শ্রেয় মনে করছে। তাদের তৎপরতা একটাই, রাহুল গান্ধীর নেতৃত্ব যেন প্রশ্নের মুখে না পড়ে। এটা নিশ্চিত করতে গান্ধী পরিবারের অনুগতরা আগেভাগেই রাহুলকে রক্ষা করতে নেমে পড়েছেন। বিপর্যয়ের জন্য তাঁরা রাহুল-সোনিয়ার নেতৃত্বকে নয়, দায়ী করছেন মনমোহন-সরকারের ভালো কাজগুলো ঠিকমতো তুলে ধরতে না পারার ব্যর্থতাকে। এ অবস্থায় আজ রাহুল দলীয় মুখপাত্রদের বৈঠক ডেকেছেন। উদ্দেশ্য, সবাই যাতে একরকমভাবে ফলের ব্যাখ্যা করে নেতৃত্বকে রক্ষা করতে পারেন।

প্রধানমন্ত্রীর একনায়কতন্ত্র চলছে-টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন

নির্বাহী বিভাগের প্রধান হিসেবে দেশে 'প্রধানমন্ত্রীর একনায়কতন্ত্র' প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী একচ্ছত্র ক্ষমতার চর্চা করেন৷ সংবিধান প্রধানমন্ত্রীকে একচ্ছত্র ক্ষমতা দিয়েছে৷ অন্যদিকে বেশির ভাগ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে দলীয়করণ ও দুর্নীতি প্রধান সমস্যা৷ এর সঙ্গে নেতৃত্বের অযোগ্যতা ও অদক্ষতার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না৷ ফলে দেশের শুদ্ধাচার-ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়েছে৷
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) তৈরি 'বাংলাদেশের জাতীয় শুদ্ধাচার-ব্যবস্থার বিশ্লেষণ' শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে৷ প্রতিবেদনে শুদ্ধাচার-ব্যবস্থা বিশ্লেষণের জন্য ১৫টি প্রতিষ্ঠানের চিত্র তুলে ধরা হয়৷ ২০১২ সালে সরকার জাতীয় শুদ্ধাচার বিষয়ে যে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতেই টিআইবি এ গবেষণাটি পরিচালনা করে৷ গতকাল বুধবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণাটি তুলে ধরা হয়৷
সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নীতি, নৈতিকতা ও সততার উন্নয়নের জন্য ২০০৮ সালে জাতীয় শুদ্ধাচার-ব্যবস্থার কর্মপরিকল্পনা তৈরি শুরু হওয়ার পর ২০১২ সালে মিন্ত্রপরিষদ এই পরিকল্পনার অনুমোদন দেয়৷ পরিকল্পনার আওতায় প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে শুদ্ধাচার উন্নয়নবিষয়ক কমিটি রয়েছে৷ আর কেন্দ্রীয়ভাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে জাতীয় শুদ্ধাচার উপদেষ্টা কমিটি রয়েছে৷
গতকাল প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অধিকতর দক্ষ৷ এর পরই অবস্থান নির্বাহী বিভাগ ও সুশীল সমাজের৷ তবে প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই সুশাসনের কার্যকারিতা নিম্ন পর্যায়ে৷ সুশাসনের অভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির সুযোগ বাড়ছে৷ সক্ষমতা ও সুশাসনের তুলনামূলক ঘাটতির পরও গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজ তাদের দুর্নীতিবিরোধী ভূমিকার জন্য যথেষ্ট শক্ত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে৷ নির্বাহী বিভাগের ইতিবাচক দিক সম্পর্কে বলা হয়েছে, এই বিভাগের বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে৷ স্বাধীনভাবে কাজ করার নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব রয়েছে৷
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল বলেন, জাতীয় শুদ্ধাচার গঠনের কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় নেই৷ অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের ক্ষমতার চেয়ে বেশি চর্চা করছে৷ আবার অনেক কমিশন নিজেদের ক্ষমতা নিজেরাই ছোট করে ফেলতে চাইছে৷ অনেক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্বাধীনতাবোধেরও অভাব আছে৷ যেকোনো প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা-জবাবদিহির অভাব তৈরি হলেই শুদ্ধাচার-ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটে—এই মন্তব্য কর সুলতানা কামাল বলেন, যে কারণে লিমনের মতো নিরীহ ছেলের ওপরে মামলার খড়্গ ঝুলছে৷ আর বড় অপরাধীরা নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক সুশাসন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর উদ্বেগজনক মাত্রায় দলীয় রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্বল তদারকি, অপর্যাপ্ত সম্পদ, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতির বিস্তার ও দুর্নীতির ফলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে৷
গবেষণা প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রীর একনায়কতন্ত্রের যে কথা বলা হয়েছে, তা কি সাংবিধানিক কারণে তৈরি হচ্ছে, নাকি এটা চর্চার ব্যাপার—সাংবাদিকেরা এ প্রশ্ন তুললে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংবিধানে নির্বাহী বিভাগের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে একচ্ছত্র ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে৷ আবার অনেক বিষয় চর্চাতেও আছে৷ যেমন: কোনো একটি খুন বা গুমের মতো বিষয় দেখার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হলেও প্রধানমন্ত্রীকে এসব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে দেখা যাচ্ছে৷
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১২ সালের আগস্ট থেকে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে গবেষণাটি পরিচালিত হয়৷ বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সহায়তায় একই ধরনের গবেষণা বাংলাদেশ ছাড়াও মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় পরিচালিত হয়েছে৷ গবেষণাটি যুগ্মভাবে পরিচালনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সালাহউদ্দিন এম. আমিনুজ্জামান এবং টিআইবির উপনির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের৷ তাঁরা গবেষণাটির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন৷
সংসদ: একটি শক্তিশালী সংসদীয় রীতির সরকারের ব্যাপারে বাংলাদেশে সাংবিধানিক ও আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে৷ তবে দ্বন্দ্বমুখর রাজনীতি, দুর্বল সংসদীয় সংস্কৃতি, নির্বাহী বিভাগের বিস্তৃত নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমতাসীন দলের আধিপত্য এবং বিরোধী দলের অব্যাহতভাবে সংসদ বর্জনের সংস্কৃতির কারণে সংসদীয় ধাঁচে সরকার পরিচালনার স্পৃহা ও পদ্ধতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ নির্বাহী বিভাগের ওপর সংসদের দুর্বল নিয়ন্ত্রণ এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সংসদে খুব কমই আলোচিত হয়৷ জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহির আওতায় আনার ক্ষেত্রে জনগণের জন্য তেমন কোনো সুযোগ নেই৷ জনপ্রতিনিধিরা প্রায়ই দুর্নীতি এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে পৃষ্ঠপোষকতায় নিবেদিত থাকায় আইন প্রণয়নের দায়িত্বের ক্ষেত্রটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷
নির্বাহী বিভাগ: আইনসভা, নির্বাহী ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার বিভাজন পুরোপুরি অসমতল এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রাধান্যকৃত৷ রাষ্ট্রের বা সরকারপ্রধানের এবং মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের সম্পদের বিবরণ প্রকাশের কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থাও নেই৷
বিচার বিভাগ: আনুষ্ঠানিকভাবে পৃথক হলেও নির্বাহী বিভাগ এখনো নিম্ন আদালতকে প্রভাবিত করছে৷ সব সরকারের আমলেই বিচার বিভাগ অব্যাহতভাবে রাজনৈতিকভাবে দলীয়করণ হওয়ায় বিতর্কিত নিয়োগ, পদোন্নতি, চাকরিচ্যুতি এবং বিচারকের আচরণের মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সার্বিকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে৷ উচ্চ আদালতের বিচারকদের সম্পদ বিবরণী প্রকাশিত না হওয়ায় তা বিচারব্যবস্থার অন্যতম দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে৷
জনপ্রশাসন: বিগত সময়ে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা রাজনীতিকীকরণের শিকার হয়েছেন৷ শুধু রাজনৈতিক বিবেচনা থেকে বিপুলসংখ্যক সরকারি কর্মকর্তাকে ক্ষমতাসীন দল ওএসডি করে রেখেছে৷ কোনো সুনির্দিষ্ট কাজ না থাকলেও তাদের জনগণের অর্থ থেকে বেতন দেওয়া হচ্ছে৷ সরকারি কর্মকর্তাদের সততা ও নিয়োগের প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে৷ পদোন্নতির ব্যবস্থাও অস্বচ্ছ এবং সরকারি সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল৷
স্থানীয় সরকার: স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থ-সংকটে ভুগছে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় বিকেন্দ্রীকরণ হচ্ছে না৷ স্থানীয় সরকারের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাবও রয়েছে৷ দলীয়করণের কারণে স্থানীয় সরকারপ্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বের ভাবমূর্তির সংকট তৈরি হয়েছে৷
পুলিশ প্রশাসন: নাগরিকদের পুরোপুরিভাবে নিরাপত্তা দেওয়া এবং গণতান্ত্রিক আচরণে ব্যর্থতার কারণে পুলিশ প্রশাসন সব সময়ই সমালোচনার শিকার৷ আইনের শাসন সমুন্নত রাখার পরিবর্তে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে পুলিশ প্রশাসন নির্বিচারে ব্যবহৃত হয়ে আসছে৷ এর ফলে পুলিশ তাদের কর্মতৎপরতায় রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা এবং বিচারের ঊর্ধ্বে থাকার সুযোগ ভোগ করায় বিচারহীনতার সংস্কৃতির প্রসার ঘটছে৷ এতে জবাবদিহির কাঠামো ভেঙে পড়েছে৷
নির্বাচন কমিশন: রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হওয়ায় নির্বাচন কমিশন তার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠায় সফল হয়নি৷ কমিশনের সদস্যদের নির্দলীয় হওয়ার কথা থাকলেও তাঁদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে৷ এ ছাড়া ভোটার তালিকা প্রণয়ন, নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ, নির্বাচনকালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং সাধারণভাবে নির্বাচন পরিচালনায় সরকারের ওপর নির্ভরশীল থাকায় নির্বাচন কমিশনের কর্মকাণ্ডের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে৷ প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করায় নির্বাচন কমিশন নির্বাচনবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে অধিকাংশ সময় ব্যর্থ হয়েছে৷
মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক: মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় জনগণের অর্থের অদক্ষ এবং অপব্যবহার রোধে তুলনামূলকভাবে সাফল্যের সঙ্গে তার ভূমিকা পালন করছে৷ যদিও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এই কার্যালয়ে তাদের প্রতিবেদন সঠিক সময়ে পাঠায় না৷
দুদক: 'দন্তহীন বাঘ' হিসেবে চিহ্নিত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রাতিষ্ঠানিক ও রাজনৈতিক কারণে জর্জরিত, যা তার সার্বিক দক্ষতা ও কার্যকারিতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে৷ দুদকের সমস্যাগুলো হচ্ছে—দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, ক্ষমতাসীন দলের দলীয় লোকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যপারে কোনো কার্যক্রম গ্রহণ না করা, স্বপ্রণোদিতভাবে তদন্তের উদ্যোগে অনীহা, দক্ষ আইনজীবীর অনুপস্থিতি, গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সক্ষমতার ঘাটতি এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব৷ প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্ব, দক্ষতা, বিশ্বাসযোগ্যতা ও সততা প্রশ্নবিদ্ধ৷
মানবাধিকার কমিশন: কমিশনের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সততা নিশ্চিতকরণে আইনি কাঠামো অপর্যাপ্ত৷ প্রায়োগিক ক্ষমতাহীন এই কমিশন শুধু সুপারিশকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করছে৷ সংস্থাটির তদন্ত খুব দুর্বল এবং ক্রমবর্ধমান অভিযোগ বৃদ্ধির বিপরীতে যথাযথভাবে সাড়া দিতে সক্ষম নয়৷ অন্য সরকারি সংস্থাগুলো এই কমিশনকে সহযোগিতা করছে না৷ মানবাধিকার সম্পর্কে কিছু সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পরিবর্তনের পক্ষে ওকালতি প্রয়াস সত্ত্বেও কমিশনের কাজের প্রভাব বাস্তবে তেমন দৃশ্যমান নয়৷
তথ্য কমিশন: তথ্য কমিশনের ব্যাপারে উচ্চ প্রত্যাশা সত্ত্বেও কমিশন সরকার ও অন্যান্য সংস্থা থেকে জাতীয় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্বপ্রণোদিতভাবে তথ্য চাওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য পায়নি৷ দুর্বল নেতৃত্ব, পেশাগত দক্ষতার অভাব এবং সরকারি সংস্থাগুলোর অসহযোগিতার কারণে কমিশন ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না৷
রাজনৈতিক দল: কেন্দ্রীভূত সিদ্ধান্তের প্রক্রিয়া, দলের অভ্যন্তরীণ কাঠামোর ব্যক্তিগতকরণ এবং অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি রাজনৈতিক দলগুলোর বৈশিষ্ট্য৷ দেশের সব ক্ষমতাসীন দলই জনস্বার্থের নামে দলীয় স্বার্থের সম্প্রসারণে জনগণের সম্পদের ওপর একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে৷ আইন মান্য করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো খুবই দুর্বল৷ রাজনৈতিক ব্যবস্থা 'দুর্বৃত্তায়ন' ও বাণিজ্যিকীকরণের অংশ হয়ে গেছে৷ ভয়ভীতি বা সুবিধা দেওয়ার নামে রাজনৈতিক দলগুলো অস্বচ্ছভাবে দলীয় তহবিল সংগ্রহ করে থাকে৷
সুশীল সমাজ: একটি সুসংহত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় জনদাবি সৃষ্টি, রাজনৈতিক মূল্যবোধের চর্চা, সমান সুযোগের নীতি বজায় রাখা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বের ওপরে চাপ সৃষ্টিতে সুশীল সমাজ তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে৷ তবে টিকে থাকা এবং কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে তারা বিদেশি অনুদাননির্ভর হয়ে পড়ছে৷ সুশীল সমাজভুক্ত সংস্থাগুলোর গঠন ও নিবন্ধনে আইনগত প্রক্রিয়ায় নমনীয়তা ও নিয়ন্ত্রণের মিশ্রণ ঘটায় তাদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে সরকারের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করেছে৷
গণমাধ্যম: গণমাধ্যম স্বাধীন হলেও নিয়ন্ত্রণমূলক আইনি কাঠামোর কারণে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা, সরকারি গোপনীয়তা ও আদালত অবমাননার অজুহাতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কার্যকরভাবে খর্ব করা হয়েছে৷ বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনৈতিকীকরণ ঘটেছে৷ কার্যকর স্বনিয়ন্ত্রণী ব্যবস্থার অভাবে গণমাধ্যমের জবাবদিহি ও সততা ক্ষয়িষ্ণু৷ ব্যক্তিমালিকানাধীন গণমাধ্যমগুলো সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি এবং সরকারের বিভিন্ন অনিয়ম ও অন্যান্য বিরোধপূর্ণ বিষয়ে উচ্চকিত হলেও সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর ভয়ে একধরনের সেলফ-সেন্সরিশপের অনুশীলন ও চর্চা করছে৷
ব্যবসা খাত: দেশের ব্যবসা খাতের আইনি কাঠামো একই সঙ্গে সহযোগিতামূলক ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ৷ সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে অভিযোগ বা মামলা দায়ের কঠিন হয়ে পড়েছে৷ অনেক ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের সঙ্গে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রশ্নবিদ্ধ সম্পর্ক দেখা যায়৷ সরকারি কাজ, পানি-গ্যাস, ফোন, বিদ্যুৎসেবা ও লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতি একটি অতি সাধারণ ঘটনা৷
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় শুদ্ধাচার-ব্যবস্থার অন্তর্গত ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ৬৩টি সুপারিশ উত্থাপন করা হয়৷ উল্লেখযোগ্য সুপারিশ হলো: সংসদকে কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, আইন করে সংসদ বর্জনের সংস্কৃতি বন্ধ করা, সংসদ সদস্যদের আচরণবিধি বিল আইনে রূপান্তর করা; নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করতে কার্যবিধির সংস্কার, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বা বিচারকদের সমন্বয়ে গঠিত স্বাধীন সংস্থার মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ, বিচারকদের আয় ও সম্পদের তথ্য প্রকাশ ইত্যাদি৷

তদন্ত কমিটিসহ বিবাদীদের কার্যক্রমের শুনানি আজ @প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে অপহরণ ও খুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটিসহ বিবাদীদের কার্যক্রমের অগ্রগতির বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার বেলা দুইটায় শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ সময় নির্ধারণ করেন। বেলা ১১টার দিকে বিষয়টি আদালতে উত্থাপিত হলে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ এস এম নাজমুল হক বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল এই মামলায় অংশ নেবেন। তিনি অন্য মামলায় নিয়োজিত থাকবেন। তাই সময় প্রয়োজন। পরে আদালত বেলা দুইটায় সময় নির্ধারণ করেন। গতকাল বুধবার নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে অপহরণ ও খুনের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি ও বিবাদীরা অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে পক্ষগুলো কমিটি গঠনসহ কর্মক্রমের অগ্রগতি বিষয়ে পৃথক প্রতিবেদন জমা দেয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জনপ্রশাসন সচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র্যাবের মহাপরিচালক, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের পক্ষে প্রতিনিধিরা কার্যক্রম সম্পর্কে অগ্রগতি জানিয়ে গতকাল সংশ্লিষ্ট আইন কর্মকর্তার কাছে পৃথক প্রতিবেদন দাখিল করে। আদালতের নির্দেশ অনুসারে ওই ঘটনার সার্বিক তদন্তে গঠিত সাত সদস্যের কমিটির পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। ৫ মে বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত রুল জারির পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা দেন। এতে সাতজনকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কোনো গাফিলতি আছে কি না, এটিসহ পুরো ঘটনা তদন্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ঘটনায় র্যাবের সম্পৃক্ততা আছে কি না, এ বিষয়ে বিভাগীয় তদন্ত করতে র্যাবের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া এ ঘটনায় করা মামলা গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) পাশাপাশি সিআইডিকে (অপরাধ তদন্ত বিভাগ) তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেন। নির্দেশনার অনুসারে কার্যক্রম বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন সাত দিনের মধ্যে অ্যাটর্নি জেনারেল মাধ্যমে আদালতে দাখিল করতে বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরবর্তী আদেশের জন্য বিষয়টি ১৫ মে (আজ) কার্যতালিকায় আসবে বলে আদেশে বলা হয়। ওই সাতজনের মৌলিক অধিকার রক্ষায় তাত্ক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণে বিবাদীদের ব্যর্থতা চ্যালেঞ্জ করে ১১ মে হাইকোর্টে রিট করা হয়। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারির পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন। সাত খুনের ঘটনার পর অবসরে পাঠানো র্যাবের তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেন আদালত। স্বতঃপ্রণোদিত রুলের সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে শুনানি হবে বলে জানানো হয়। গত ২৭ এপ্রিল দুপুুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোড থেকে অপহূত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। এর তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যায় একে একে ভেসে ওঠে সাতজনের মরদেহ। এই সাতজন হলেন এক গাড়িতে থাকা কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, তাঁর সঙ্গী তাজুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান স্বপন, লিটন ও তাঁর গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং আরেকটি গাড়িতে থাকা আইনজীবী চন্দন সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহিম। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে মামলাও করেছে নজরুলের পরিবার।

Wednesday, May 14, 2014

নারায়ণগঞ্জে সাত খুন: র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হননি- সেনা কর্তৃপক্ষের অনুমতির অপেক্ষায় পুলিশ @প্রথম আলো

হাইকোর্টের আদেশের তিন দিন পরও চাকরি হারানো র‌্যাবের সেই তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশ কোনো অভিযান চালায়নি। শুধু আদেশ মানতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চেয়ে চিঠি দিয়েছে তারা। মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিন কর্মকর্তা সেনানিবাসে আছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সেখানে গিয়ে অভিযান চালানো তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। আদালতের আদেশের পরও কেন গ্রেপ্তার অভিযান হচ্ছে না, জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, আদালত যেভাবে আদেশ দিয়েছেন, তা অক্ষরে অক্ষরে মানা হচ্ছে। আদেশ অনুসারেই পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, গ্রেপ্তার এড়াতে র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা আজ উচ্চ আদালতে যেতে পারেন। তাঁদের স্বজনেরা আইনগত সহায়তা চেয়ে কয়েকজন আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১১ মে হাইকোর্টের বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের আদেশ দেন। আদেশে বলা হয়, দণ্ডবিধি বা বিশেষ কোনো আইনে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া না গেলে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করতে হবে। নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে অপহরণ ও খুনের ঘটনায় এই তিন কর্মকর্তা জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে৷ অভিযোগ ওঠার পর র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মাদ, মেজর আরিফ হোসেন ও নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পের সাবেক প্রধান লে. কমান্ডার এম এম রানাকে অবসর দেওয়া হয়। এঁদের মধ্যে সেনাবাহিনীর দুজনকে অকালীন ও নৌবাহিনীর একজনকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়। পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, আদালত আদেশ দিলেও তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে কোনো সবুজ সংকেত মেলেনি৷ এ কারণে শুরু থেকেই পুলিশ 'ধীরে চলো' নীতি অনুসরণ করছে। এ জন্যই আদালতের আদেশ হাতে পাওয়ার পর গ্রেপ্তার অভিযান না করে সহায়তা চেয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়। ওই মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, সোমবার বিকেলের দিকে মন্ত্রণালয় পুলিশের চিঠি পেয়েছে। কিন্তু গতকাল ছুটি থাকায় এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশের চিঠিটি আজ সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে পাঠানো হবে। এরপর সেই চিঠি যাবে সেনা ও নৌবাহিনীর হাতে। অভিযানের ব্যাপারে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, পুলিশ কোনো কালক্ষেপণ করছে না। আইন মেনেই সব করছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, তিন দিনেও র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা গ্রেপ্তার না হওয়ায় শুধু আইনজীবী নন, নারায়ণগঞ্জের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ, হতাশা ও বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও পরিবহন চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রক রফিকুল ইসলাম রতনকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। নূর হোসেনের অন্য সহযোগীদের তালিকা তৈরি করে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। গত ২৭ এপ্রিল দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। এরপর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যায় একে একে ছয়জনের এবং পরদিন আরও একজনের লাশ ভেসে ওঠে৷

খুনের সঙ্গে ১৮ জন জড়িত? by তানভীর সোহেল @প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের ঘটনায় অন্তত ১৮ জন জেনে বা না জেনে যুক্ত হয়েছিলেন। এর পক্ষে প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। না জেনে জড়িত থাকা বলতে পুলিশ তাঁদেরকে বুঝিয়েছে, যাঁরা অন্যের আদেশ অনুসরণ করেছেন মাত্র। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশ পুরো ঘটনাটি দুই ভাগে ভাগ করে তদন্ত করছে। প্রথম ভাগে অপহরণ ও খুনের সঙ্গে সরাসরি জড়িতদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। দ্বিতীয় ভাগে যাঁরা খুনের নির্দেশ দিয়েছেন তাঁদের চিহ্নিত করা হবে। প্রথম ধাপের তদন্তে জড়িতদের চিহ্নিত করার কাজ গুছিয়ে এনেছেন তদন্তকারীরা।
তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, যাঁরা খুনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাঁদের ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে। তদন্তকারীরাও ধরে নিচ্ছেন, নিহতদের সঙ্গে এক বা একাধিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে শত্রুতার কারণে একটি গোষ্ঠী অর্থের বিনিময়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এ জন্য সন্দেহভাজন হত্যাকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সে বিষয়টি উদ্ঘাটনে গুরুত্ব দিচ্ছে তদন্ত দল। এই কর্মকর্তারা বলেন, খুনের সঙ্গে জড়িতরা কোনো বাহিনীর কি না, তা বিবেচ্য বিষয় নয়। এখন পর্যন্ত খুনের সঙ্গে জড়িত থাকা যাঁদের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করার বিষয়টি এখন সামনে চলে এসেছে। এমন কিছু লোকের জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে, যাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত আসাটা জরুরি।
ঘটনার প্রথম অংশে খুন হওয়া নজরুল ইসলামকে আদালত চত্বরে সাদা পোশাকে অনুসরণ করা এক ব্যক্তি এবং তাঁকে ছাড়িয়ে নেওয়া অপর এক ব্যক্তিকেও চিহ্নিত করেছে বলেও দাবি করেছে পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্র। এ ছাড়া অপহরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুটি গাড়ির চালকের সঙ্গেও তদন্তকারীরা কথা বলেছেন। ঘটনার দ্বিতীয় অংশে আছে, প্রথমে পাঁচজন ও পরে দুজনকে অপহরণের ঘটনা। তৃতীয় অংশ হলো, অপহৃতদের একটি স্থানে নিয়ে রাখা ও হত্যা করা। চতুর্থ অংশ, লাশগুলো শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলা। এই চারটি পর্বে ১৮ জনের কারও না কারও উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে পুলিশের তদন্তকারী দলের সূত্রে জানা গেছে। তদন্তের সঙ্গে যুক্ত সূত্র জানায়, অপহরণের পর অপহৃতদের নারায়ণগঞ্জ শহরের কাছেই একটি স্থানে রাখা হয় বলে তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন। সেখানেই সাতজনতে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। সেই স্থানটিও চিহ্নিত করা হয়েছে৷ তবে ওই স্থানে প্রবেশ করে তদন্ত করতে হলেও অনুমতির প্রয়োজন বলে তাঁরা জানান।
সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত পুলিশ অপহরণের জন্য ব্যবহৃত তিনটি মাইক্রোবাস চিহ্নিত করেছে। এগুলো এখন তদন্তকারীদের নজরদারিতেই আছে। তবে যে দুটি নৌকায় করে সাতজনের লাশ শীতলক্ষ্যায় ডোবানোর চেষ্টা করা হয়েছে বলে পুলিশের কাছে খবর আছে, সেই দুটি নৌকার মালিক ও দুজন মাঝির ব্যাপারে তদন্ত দল এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পায়নি। জানা গেছে, নিহত নজরুলের শ্বশুরের অভিযোগের কারণে সম্প্রতি অবসরে পাঠানো র‌্যাব-১১-এর সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ কয়েকজনের ওই দিনের মোবাইলে যোগাযোগ, এর আগের কয়েক দিনের ফোনের কললিস্ট, তাঁদের অবস্থান এবং তাঁদের সঙ্গে থাকা 'ব্যাকম্যান-রানার'দের বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করেছেন তদন্তকারীরা।
গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম পার হয়ে দুই শ গজ সামনে থেকে গাড়িচালক, তিন সহযোগীসহ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকার এবং তাঁর গাড়িচালককে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর তাঁদের ছয়জন এবং পরদিন আরেকজনের মৃতদেহ পাওয়া যায় শীতলক্ষ্যা নদীতে। র‌্যাব-১১-এর কয়েকজন কর্মকর্তাকে দিয়ে নজরুলের প্রতিদ্বন্দ্বী আরেক কাউন্সিলর নূর হোসেন এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে নজরুলের পরিবার দাবি করে আসছে। জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, মামলার তদন্ত নিয়ে তিনি গণমাধ্যমের সামনে এখনই কিছু বলতে পারবেন না। তবে তিনি বলেন, তদন্তে ভালো অগ্রগতি আছে। তদন্ত সঠিক পথেই চলছে। তদন্তে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, তদন্ত অনেকটাই গুছিয়ে এনেছে পুলিশ। এখন অভিযোগ ওঠা র‌্যাবের ওই সময়কার কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা পেলেই তদন্ত শেষ করে আনার গুরুত্বপূর্ণ ধাপ পেরোতে পারবেন তাঁরা। ওই সূত্রটি জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কিছু সন্দেহভাজনকে তাঁরা চিঠি দিয়েছেন।
তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, কেবল তারাই যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনার অপেক্ষা করছেন, তা নয়। হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত কমিটিও প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাউকে এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। মামলার তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা তদন্তের বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। তদন্ত-প্রক্রিয়ায় জানা প্রয়োজন এমন অন্তত ২০টি প্রশ্ন করা হলে একজন গুরুত্বপূর্ণ পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এসব প্রশ্নের বেশির ভাগেরই উত্তর তাঁরা ইতিমধ্যে বের করতে সক্ষম হয়েছেন। যাঁদেরকে চিহ্নিত করা হয়েছে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলে সব প্রশ্নের জবাব এক করে পুরো ঘটনার একটি 'মালা গাঁথা' সম্ভব হবে। পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেছেন, তাঁরা মামলার পর্যাপ্ত আলামত সংগ্রহ করেছেন। প্রমাণাদিও যতটা সম্ভব সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কাজ অব্যাহত থাকবে।
সাত খুনের ঘটনার সাত দিন পর মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের বাড়িতে তল্লাশি এবং কয়েকজন আত্মীয়কে গ্রেপ্তার, মাইক্রোবাস আটক, নূর হোসেনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ, ট্রাকস্ট্যান্ডে তল্লাশি করে মদ ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনাগুলোর মধ্যে কেবল নূর হোসেনের বাড়িতে তল্লাশি করাকে তদন্তকাজের অংশ বলেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। র‌্যাব-১১-এর সদস্যদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক (ডিজি) মোকলেছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কে জড়িত সেটা বিষয় নয়, যাঁরাই জড়িত তাঁদের বিচার হবে। তিনি বলেন, র‌্যাবের বিষয়টি আসায় তাঁরা ইতিমধ্যে একজন কর্মকর্তাকে নিয়ে তদন্ত করাচ্ছেন। তাঁর প্রতিবেদন পেলে এ ব্যাপারে কথা বলা যাবে।

ছাত্রলীগের সন্ত্রাস- এখনই রাশ টেনে ধরতে হবে

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসা—কোথায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসী হাত নেই? চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে অবরোধ এবং সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়ে ঝুলছে তালা৷ রাঙামাটিতে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষেও তারা ছিল সামনের সারিতে৷ সাম্প্রতিক সময়ে দেশময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ভূমিকা থেকে বোঝার উপায় নেই, তারা কি বৃহত্তম ছাত্রসংগঠন, নাকি একটি অপরাধী চক্র? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মীকে অপহরণ ব্যবসায় জড়িত থাকতে দেখা গেছে৷ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁদের নির্যাতনে নিহত হয়েছেন এক ছাত্র৷ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের অন্তঃকোন্দলে কিছুদিন পর পরই কেউ না কেউ নিহত হচ্ছেন৷ গত মঙ্গলবারের প্রথম আলোয় দেখা যাচ্ছে, রাঙামাটিতে আওয়ামী লীগেরই দুই পক্ষের টেন্ডার-দখলের মারামারিতে লাঠিয়ালের ভূমিকায় ব্যবহৃত হয়েছে ছাত্রলীগ৷ ছাত্রলীগে এখন ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় দশা৷
দীর্ঘ ঐতিহ্যের দাবিদার ছাত্রসংগঠনের এমন পরিণতি নিয়ে কি কিছু ভাবছে আওয়ামী লীগ? সবখানেই আওয়ামী লীগ-যুবলীগের প্রভাবশালী নেতারা ব্যবসা-দখলদারি, টেন্ডারবাজি, এলাকায় দাপট ইত্যাদি কারণে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে৷ চোরাকারবারি, মাদক ব্যবসায়ী, ভূমিদস্যু, অস্ত্রবণিক থেকে শুরু করে অন্ধকার জগতের হেন শক্তি নেই, যারা ছাত্রলীগকে ব্যবহার করছে না! বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রলীগের কাজ উন্নয়ন ও নিয়োগ-বাণিজ্যের বখরা আদায়৷ এই বখরা আদায়ের জন্যই তারা লিপ্ত হয় গ্রুপবাজির সংঘাতে৷ এই অবস্থায় ছাত্রলীগ আর ছাত্রদের অধিকার রক্ষা কিংবা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আদর্শ বাস্তবায়নের সহায়ক হয়ে নেই৷ সন্ত্রাস-দুর্নীতি-অপরাধের লাঠিয়াল হিসেবে তাদের দ্বারা কল্যাণকর কিছু করা আর কিছু সম্ভব কি না, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন৷ কেবল ছাত্রলীগ নয়, ছাত্রদল, জাতীয় ছাত্র সমাজ ও ছাত্রশিবিরের অবস্থাও অতীতে এ রকমই ছিল; ভবিষ্যতেও ভিন্ন কিছু হবে, তেমন আশা করার কারণ নেই৷ ছাত্রলীগের এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অবিলম্বে বন্ধ না হলে ছাত্ররাজনীতি তো বটেই, জাতীয় রাজনীতিকেও চরম মূল্য দিতে হবে৷ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বুঝতে হবে, ক্রমাগত ছাড় ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি ছাত্রলীগকে বেপরোয়া করে তুলছে৷ ভবিষ্যতে তাদের দ্বারা বড় বিপর্যয় ঘটার আগেই সরকারের উচিত রাশ টেনে ধরা৷

বুথ–ফেরত জরিপের জন্য এবার কঠিন পরীক্ষা

১৯৪৮ সালের কথা৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষে বুথ-ফেরত ভোটারদের ওপর জরিপ চালানো হয়৷ বেিশর ভাগ জরিপে এগিয়ে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী টমাস ই ডিওয়ে৷ বেিশর ভাগ গণমাধ্যমে তাঁকে ৩১তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে খবর প্রকাশ করা হয়৷ কিন্তু আনুষ্ঠানিক ফলাফলে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন ডেমোক্রেটিক পার্টির হ্যাির এস ট্রুম্যান৷ ভারতেও বুথ-ফেরত ভোটারদের ওপর পরিচালিত জরিপে ব্যর্থতার পাল্লা বেশ ভারী৷ ১৯৯৮ সালের লোকসভা নির্বাচন বাদ দিলে, বিগত চারটি লোকসভা নির্বাচনেই তার প্রমাণ পাওয়া গেছে৷ এসব জরিপে যেসব পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত ফল তার ধারেকাছেও নেই৷ বিশেষ করে ২০০৪ ও ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর পরিচালিত জরিপগুলোর ফলাফল এ ধরনের জরিপের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে৷ এবারের জরিপের ফলাফল সঠিক না হলে ভারতে এ ধরনের জরিপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়তে পারে৷
দিল্লিভিত্তিক জরিপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব ডেভেলপিং সোসাইটির (সিএসডিএস) প্রবীণ রায় আশা করছেন, এবার আর তেমনটি ঘটবে না৷ এবারের জরিপগুলোর পূর্বাভাস সত্যি হলে গত দুটি লোকসভা নির্বাচন নিয়ে দেওয়া পূর্বাভাস সত্যি না হওয়ার পাপমোচন হবে৷ আর এবার ভুল প্রমাণিত হলে, পুরো মতামত-জরিপ শিল্প অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হবে৷ জাতীয়তাবাদী ভাবধারায় ভর করে ১৯৯৬ সালের লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)৷ তখন অটল বিহারির নেতৃত্বে দলটি সরকার গঠন করলেও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য অন্যান্য দলের সমর্থন না পাওয়ায় ১৩ দিনের মাথায় সরকারের পতন ঘটে৷ এরপর বিজেপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) ১৯৯৮ সালের নির্বাচনে ৩১৫টির বেশি পাবে বলে বিভিন্ন জরিপে আভাস দেওয়া হয়েছিল৷ তবে তারা পেয়েছিল ২৯৬টি৷
২০০৪ সালে পরিচালিত বুথ-ফেরত জরিপ ব্যর্থতার প্রতীক হয়ে আছে আজও৷ সে সময় কোনো জরিপই আন্দাজ করতে পারেনি, কংগ্রেস আবার ক্ষমতায় ফিরছে৷ তখন কেউ বলেছিল, বিজেপি বড় ব্যবধানে, অন্যরা বলেছিল সামান্য ব্যবধানে জিতবে৷ বিজেপি যে হারছে, তেমন আভাস দিতে সব জরিপই ব্যর্থ হয়েছিল৷ ২০০৯ সালে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা (ইউপিএ) এগিয়ে থাকবে বলে সবাই আভাস দিলেও একটা প্রবণতা ধরতে তারা ঠিকই ব্যর্থ হয়েছিল৷ কংগ্রেস সেবার নিজেদের ভোট বাড়াতে না পারলেও অতিরিক্ত ৪০টি আসন ঠিকই নিজেদের ঝুলিতে ভরেছিল৷ হিন্দুস্তান টাইমস৷

ভারতের লোকসভা নির্বাচন- উজ্জীবিত বিজেপির নানা তৎপরতা

বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার গঠন করার মতো প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে—বুথ-ফেরত জরিপে এ আভাস পাওয়ার পর করণীয় নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছেন দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা৷ এদিকে ভোট গ্রহণের শেষ দিন সোমবার বুথ-ফেরত জরিপের যেসব ফল প্রকাশিত হয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছে কংগ্রেস দল৷ তারা আরও বলেছে, নির্বাচনের ফলাফল যা-ই হোক, তা রাহুল গান্ধীর সাফল্য-ব্যর্থতার মূল্যায়ন নয়৷ বুথ-ফেরত সব জরিপের ফলাফলেই কংগ্রেসের ভরাডুবি ও ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার স্পষ্ট আভাস পাওয়া গেছে৷ বিপরীতে ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় অন্তত ২৭২ আসন পাবে বলে দেখা যাচ্ছে৷ বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার গঠন করতে চলেছে—জরিপে এ আভাস পাওয়ার পর নির্বাচন-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সলাপরামর্শে ব্যস্ত ছিলেন দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা৷ বিজেপির একটি সূত্র জানায়, যেহেতু দলটির জন্য সরকার গঠনের সম্ভাবনা অনেকটাই নিশ্চিত, তাই ১৬ মের ভোট গণনা-পরবর্তী প্রত্যাশিত দৃশ্যের প্রেক্ষাপটে কৌশল নির্ধারণ করতে বিজেপি নেতারা বৈঠক করছেন৷
দলের শীর্ষ পর্যায়ের আলাপ-আলোচনার অংশ হিসেবে বিজেপির সাবেক সভাপতি নীতিন গড়কাির গতকাল প্রভাবশালী নেতা লালকৃষ্ণ আদভানির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন৷ এর আগের দিন তিনি প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করেন৷ জয়ের হাওয়া বুঝে গত কয়েক দিন ধরেই বিজেপির শীর্ষস্থানীয় অন্য নেতারা পরস্পরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে৷ দলের সভাপতি রাজনাথ সিং দেখা করেছেন সুষমা স্বরাজের সঙ্গে৷ মোদি সংঘ নেতাদের পাশাপাশি বৈঠক করেছেন রাজনাথ সিংসহ দলের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে৷ ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী রমণ সিংও মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন গত সোমবার৷ গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গুজরাটের গান্ধীনগরে মোদি রাজ্য বিধানসভার সব বিজেপি সদস্যকে এক বৈঠকে ডাকেন৷ মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে তাঁর উত্তরসূরি খোঁজার চেষ্টাতেই এ বৈঠক আহ্বান করা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছিল৷ তবে বিজেপির কিছু সূত্র জানায়, এটি দলের নিয়মিত বৈঠক৷ জরিপের ফল প্রত্যাখ্যান কংগ্রেসের বুথ-ফেরত ভোটারদের জনমত জরিপের অবমাননাকর ফলের এক দিন পর গতকাল মঙ্গলবার দলটি এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে৷
কংগ্রেস ঘোষণা করে, বুথ-ফেরত জরিপের ফলাফল নিয়ে কোনো বিতর্কেও তারা অংশ নেবে না৷ কংগ্রেসের মুখপাত্র শাকিল আহমেদ বলেন, 'দলের প্রচলিত রীতিনীতি মেনে আমরা এসব জরিপ নিয়ে বিতর্কে অংশ নেব না৷ গতবারের নির্বাচনে বুথ-ফেরত জরিপগুলোর ফলাফলে আমাদের প্রাপ্ত আসনের চেয়ে ৬৮টি আসন কম দেখানো হয়েছিল৷' কংগ্রেস নেতারা বলছেন, ২০০৪ ও ২০০৯ সালের নির্বাচনে বুথ-ফেরত জিরপেও বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের আসন নিয়ে 'ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে' ফলাফল প্রকাশ করা হয়৷ অথচ শেষ পর্যন্ত জয়ী হয় কংগ্রেস৷ রাহুল গান্ধীর অন্যতম উপদেষ্টা হিসেবে পরিচিত জ্যেষ্ঠ নেতা জয়রাম রমেশ এ বিষয়ে বলেন, 'তাঁরা (বিজেপি নেতারা) আগের মতোই এবারও ভুল প্রমাণিত হবেন৷ কংগ্রেস যথেষ্ট ভালো ফল করবে এবং বিজেপি কাঙ্ক্ষিত ফল পাবে না৷'
এবারের লোকসভা নির্বাচনের বৈতরণী পার হতে কংগ্রেসের হাল ধরেন দলটির চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধীর ছেলে অপেক্ষাকৃত তরুণ সহসভাপতি রাহুল গান্ধী (৪৩)৷ কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চার (ইউপিএ) নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার সামনে থেকেছেন তিনি৷ কিন্তু বুথ-ফেরত জরিপে দলটির বিপর্যয়কর ফলাফলের যে আভাস দেওয়া হয়েছে, সে দায় সহসভাপতি রাহুলের ওপর চাপাতে নারাজ কংগ্রেস৷ গতকাল ইিঙ্গত দেওয়া হয়, জরিপের আভাস পুরোপুরি মিলে গিয়ে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলে কংগ্রেসের ভরাডুবি যদি নিশ্চিতও হয়, তবুও তাকে রাহুলের ব্যর্থতা বলে মনে করা হবে না৷ এ ব্যাপারে মুখপাত্র শাকিল বলেন, 'রাহুল গান্ধী এই সরকারে নেই৷ (ফলাফলের জন্য) আমাদের সবাইকে দায়দায়িত্ব নেওয়া উচিত৷' তবে তিনি আশা প্রকাশ করে এ-ও বলেন, 'আমরা অবশ্যই ভালো ফল করব এবং আপনারা সবাই বিস্মিত হবেন৷' মুখপাত্রের কথার মতোই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কমল নাথ বলেন, 'নির্বাচনী ফলাফল হবে সরকারের সাফল্যের ওপর নির্ভর করে৷ রাহুল গান্ধী এ সরকারের কোনো অংশ নন৷'
প্রধান বিরোধী দল বিজেপি বলেছে, সমালোচনার তির থেকে সোনিয়া গান্ধী ও তাঁর ছেলেকে বাঁচাতে কংগ্রেস দলটির প্রবীণ নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে শেষমেশ 'বলির পাঁঠা' বানাতে পারে৷ জরিপের ফলাফলকে ঘিরে কংগ্রেসের এই প্রতিক্রিয়ার জবাবে বিজেপির মুখপাত্র প্রকাশ জাভাদেকার বলেন, 'খারাপ কিছু হলে কংগ্রেসের নীতি-নির্ধারকেরা অন্যদের ওপর দোষ চাপান৷ তবে ভালো কিছু ঘটলে তার সব কৃিতত্ব দলের চেয়ারপারসন ও সহসভাপতিকে দেন৷ তাই, (পরাজয়ের জন্য) প্রধানমন্ত্রী ও অন্যদের দোষী করা হবে৷ তাঁদের উচিত, সম্মিলিত দায়ভার নিয়ে কথা বলা৷' বিজেপির মুখপাত্র দাবি করেন, বুথ-ফেরত জরিপে দেওয়া আভাসের চেয়েও ভালো ফলাফল করবেন তাঁরা৷ তাঁর আশা, বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট ৩০০ আসন অতিক্রম করবে৷ সরকার গঠনের জন্য লোকসভায় ২৭২টি আসনের প্রয়োজন৷
কংগ্রেসকে ত্যাগ করবে এনসিপি?
জরিপ অনুযায়ী ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের বিদায়ের সম্ভাবনা জোরালো হয়ে ওঠায় দলটির জোটের শরিক ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) বিজেপির প্রতি ঝোঁকার ইঙ্গিত দিয়েছে৷ দলের অন্যতম নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য প্রফুল প্যাটেল গতকাল বলেন, তাঁর দল 'স্থিতিশীল সরকার' দেখতে চায়৷ আর বিজেপি যদি একক বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে তবে তার জনসমর্থনের প্রতি সম্মান দেখানো উচিত৷
জরিপ প্রত্যাখ্যান নীতিশ ও ওমরের
প্রকাশিত জরিপের ফল প্রত্যাখ্যান করেছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার ও জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ৷ জনতা দলের (জেডি-ইউ) বাজে ফল করার আভাস প্রত্যাখ্যান করে গতকাল নীতিশ বলেন, ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে৷ বিহারে জেডি-ইউ ৪০টির মধ্যে মাত্র পাঁচটির মতো আসন পেতে পারে বলে জরিপে আভাস দেওয়া হয়৷ অন্যদিকে ওমর আবদুল্লাহ বলেন, 'একমাত্র যে বুথ-ফেরত জরিপে কিছু আসে-যায় তা হচ্ছে শুক্রবার যা হবে৷ বাকি সব সময় কাটানোর দারুণ উপায় মাত্র৷' উল্লেখ্য, শুক্রবার নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হবে৷ এনডিটিভি, পিটিআই ও টাইমস অব ইন্ডিয়া৷

Tuesday, May 13, 2014

র‌্যাবই নূর হোসেনকে বাইরে পাঠিয়েছে: খালেদা জিয়া

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে অপহরণ ও সাত খুনের ঘটনার প্রধান সন্দেহভাজন নূর হোসেনকে র‌্যাবই দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে। অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের তদন্ত বাধাগ্রস্ত করতে বিভিন্ন চেষ্টা চলছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। গতকাল সোমবার একটি পত্রিকায় র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসানের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। সেখানে কর্নেল জিয়া বলেন, নূর হোসেন ঘটনার তিন দিন পর ভারতে পালিয়ে গেছেন। তিনি এখন কলকাতায় অবস্থান করছেন। কর্নেল জিয়ার এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়া এ কথা বলেন। আজ মঙ্গলবার বেলা একটার দিকে অপহরণ ও পরে খুন হওয়া জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকারের নারায়ণগঞ্জের বাসায় যান খালেদা জিয়া। সেখানে নিহত গাড়িচালক ইব্রাহিমের পরিবারের সদস্যরা ছিলেন। সেখানে খালেদা জিয়া নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের সান্ত্বনা দেন। পরে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি নিহত নজরুল ইসলামের বাসায় তাঁর স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনার তদন্তকাজে সন্দেহ প্রকাশ করে বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া আরও বলেন, একজন মন্ত্রীর জামাতা হয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ (সাত খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার জন্য অভিযুক্ত) নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে মনে করেন।

র‌্যাব থাকলে আতঙ্ক থাকবে
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মিজিমিজি এলাকায় নিহত নজরুল ইসলামের বাসায় স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আবার র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) বিলুপ্তি চান বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, 'এই বাহিনী এখন জনগণের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। এদের আর প্রয়োজন নেই। র‌্যাব যত দিন থাকবে, তত দিন আতঙ্ক থাকবে। শান্তি থাকবে না।' এ সময় সেখানে নিহত তাজুল, লিটন, স্বপন ও জাহাঙ্গীরের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। খালেদা জিয়া নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের সান্ত্বনা দেন। পরে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। খালেদা জিয়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, খুন, গুমের ঘটনার উল্লেখ করে সরকারের উদ্দেশে বলেন, 'অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। না হলে মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে। তারাই আপনাদের পতন ঘটাবে।' নিহত নজরুল ইসলামের বাসা থেকে খালেদা জিয়া আইনজীবী চন্দন সরকারের বাসায় যান। সেখানে চন্দন সরকারের গাড়িচালক ইব্রাহিমের পরিবার রয়েছেন। বেলা সোয়া ১১টার দিকে খালেদা জিয়া নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হন। পরে দুইটার দিকে তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। বিএনপির চেয়ারপারসনের সঙ্গে দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা রয়েছেন।

টিভি চ্যানেলে সম্প্রচার বন্ধ করার অভিযোগ
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচার করার সময় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারের বাসায় স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর খালেদা জিয়ার বক্তব্য কয়েকটি টিভি চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচার করে। এ সময় ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের স্যাটেলাইট টিভি সংযোগ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এসবি স্যাটেলাইট কোম্পানির মালিক আবদুল করিমের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

Monday, May 12, 2014

ভারতের লোকসভা নির্বাচন- ৩০ আসনে নজর মমতার by রজত রায়

আজ সোমবার শেষ হচ্ছে ভারতের নয় পর্বের ভোটযজ্ঞ৷ পশ্চিমবঙ্গে আজ হবে পঞ্চম দফা ভোট৷ রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে ২৫টি আসনের ভোট গ্রহণ। আজ শেষ পর্বে ভোট হচ্ছে বািক ১৭টি আসনে। রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য শেষ দফার নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই পর্বের সবগুলো আসনই দক্ষিণবঙ্গে, যেখানে তৃণমূলের আধিপত্য তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। ২০০৯ সালের নির্বাচনে এই ১৭টি আসনের ১৪টিতেই জিতেছিল দলটি৷ এ ছাড়া, আরও একটি করে আসন পেয়েছিল তৃণমূলের তখনকার জোটসঙ্গী কংগ্রেস (বহরমপুর) এবং সোশ্যালিস্ট ইউনিটি সেন্টার (জয়নগর)। বামফ্রন্ট মাত্র একটি আসন (ঘাটাল) জিতেছিল। এবার অবশ্য তৃণমূল একাই লড়ছে, ফলে ক্ষমতাসীন দলের লড়াইটা আগের তুলনায় কিছুটা হলেও কঠিন। কিন্তু তৃণমূল নেত্রী এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বভারতীয় রাজনীতিতে নিজের গুরুত্ব বাড়াতে উদগ্রীব৷ ভোটের প্রচারেও মমতা বারবার দাবি করছেন, এবার কেন্দ্রে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে তাঁর দল নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা নেবে। অর্থাৎ, তাঁর হিসাবে, বিজেপি বা কংগ্রেস তাদের জোট সহযোগীদের নিয়েও এবারের ভোটে সরকার গড়ার জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক আসন (ন্যূনতম ২৭২) পাবে না। ফলে, সরকার গঠনে আঞ্চলিক দলগুলোর সমর্থন দরকার হবে৷ যদি জয়ললিতা, মায়াবতী, িনতীশ কুমার বা নবীন পট্টনায়কের দলগুলো মিলিতভাবে সেই সরকার করতে পারে, সে ক্ষেত্রে তাদের কংগ্রেসের সমর্থন নিতে হতে পারে। আবার, যদি নরেন্দ্র মোদির বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ জোট এগিয়ে যায়, তা হলেও আঞ্চলিক দলগুলোর সমর্থন দরকার হলে, তারা বিজেপির ওপর অনেক শর্ত চাপাতে পারে সমর্থনের বিনিময়ে। এই দড়ি টানাটানির খেলায় যেসব আঞ্চলিক দলের হাতে ৩০ বা ৩৫ আসন থাকবে, তারাই ভালো দর-কষাকষি করতে পারবে। এটা বুঝেই মমতা এবার নিজের রাজ্য থেকে অন্তত ৩০টি আসন জিততে চান৷ শেষ দফার ১৭টি আসনের মধ্যে যত বেশি সম্ভব আসন জিততে মরিয়া তৃণমূল।
আর এ কারণেই ভোটের আগের ৭২ ঘণ্টায় ওই সব এলাকা থেকে হিংসাত্মক ঘটনার খবর আসছে। বেশির ভাগ এলাকায় বিরোধীদের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা, বিরোধী দলের কর্মীদের মারধর করা, এমনকি পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে সিপিএম প্রার্থীকে এবং দমদমে বিজেপি প্রার্থীকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করার ঘটনাও ঘটেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগের তিরটা শাসক দল তৃণমূলের দিকে। আজ ভোটের দিন এই ধরনের ঘটনা আরও বাড়বে বলেই রাজনৈতিক মহলের আশঙ্কা। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে অবশ্য কলকাতাসহ উত্তেজনাপ্রবণ এলাকাগুলোতে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী শনিবার থেকেই টহল দিতে শুরু করেছে। কিন্তু সহিংসতার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি সন্নিহিত গ্রামাঞ্চলে। অথচ সেখানকার অনেক জায়গাতেই নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি নেই বললেই চলে। আর বীরভূমে যেমন পেশিশক্তি প্রদর্শনের জন্য তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল কুখ্যাত হয়েছেন, তেমনি দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ভাঙ্গড়ের সাবেক তৃণমূল বিধায়ক আরাবুল ইসলামও গুন্ডামি, কলেজশিক্ষিকাকে আক্রমণ এবং সাবেক সিপিএম মন্ত্রী ও বর্তমান বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লাকে গুরুতর আহত করে কুখ্যাত হয়েছেন। যাদবপুর আসনে তৃণমূল প্রার্থী ও নেতাজি সুভাষের পরিবারের সদস্য সুগত বসুকেও এখন এই আরাবুলের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে ভোটের জন্য। সিপিএম আমলের সাবেক অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত এবার দমদমে ভোটে লড়ছেন গতবারের বিজয়ী ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সৌগত রায়ের বিরুদ্ধে। উত্তর কলকাতায় তৃণমূলের গতবারের বিজয়ী প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবার চতুর্মুখী লড়াইয়ে পড়েছেন। অবাঙালি ব্যবসায়ীপ্রধান এই আসনে বিজেপি হাওয়ায় ভর করে দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ লড়াইয়ের ময়দানে জাঁকিয়ে বসেছেন। এ ছাড়া, রয়েছেন কংগ্রেসের সোমেন মিত্র ও সিপিএমের রূপা বাগচী। সোমেন মিত্র উত্তর কলকাতারই দীর্ঘদিনের কংগ্রেস বিধায়ক থাকার পরে গতবার দল ছেড়ে ডায়মন্ড হারবার থেকে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে লোকসভায় যান। এবার তিনি কংগ্রেসে ফিরে নিজে জেতার চাইতে সুদীপের পথের কাঁটা হতেই বেশি আগ্রহী। একই ভাবে জয়নগরে সোশ্যালিস্ট ইউনিটি সেন্টারের (এসইউসি) নিজস্ব ভোট ধরে রাখতে পারলে এবার সেখানেও লড়াই হাড্ডাহাড্ডি হওয়ার সম্ভাবনা।
পশ্চিমবঙ্গে এবারের নির্বাচনের বড় বিশেষত্ব হলো, ক্ষমতাসীন তৃণমূল ও বিরোধী বামপন্থীদের রাজনৈতিক লড়াইকে দূরে ঠেলে দিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রস্থলে বিজেপির উপস্থিতি। ফলে, কম-বেশি সব আসনেই বিজেপির ভোট বাড়ার সম্ভাবনা প্রবল। এরই জেরে বেশ কয়েকটি আসনের ফলাফল এবার অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তার মধ্যে আগে ভোট হয়ে যাওয়া আসন যেমন, হাওড়া, দার্জিলিং, আলিপুরদুয়ার, জঙ্গিপুর, রায়গঞ্জ, আসানসোল, শ্রীরামপুর, বাঁকুড়া প্রভৃতি রয়েছে, তেমনই সোমবার শেষ পর্বে যেসব জায়গায় ভোট হবে তার মধ্যে কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, দমদম, বারাসাত, ব্যারাকপুর ও উত্তর কলকাতা রয়েছে। দার্জিলিং, আসানসোল, শ্রীরামপুরের মতোই উত্তর কলকাতা ও কৃষ্ণনগরে বিজেপি এখন রীতিমতো সমানে সমানে টক্কর দিচ্ছে তৃণমূল ও বামপন্থীদের সঙ্গে। এ ছাড়া, জঙ্গিপুর, হাওড়া, রানাঘাট, বাঁকুড়ার মতো আধা ডজন আসনে বিজেপির প্রবল উপস্থিতি ভোটের ফলকে অনিশ্চিত করে দিয়েছে।বিজেপির এই বাড়বাড়ন্তের মধ্যে নিজেদের ভোট ধরে রাখতে পারাটাই এখন তৃণমূল ও বামপন্থীদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জের।
দক্ষিণবঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণার শুরুতে বামপন্থীরা, বিশেষ করে সিপিএম অনেকটাই পিছিয়ে ছিল। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচন, ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচন ও ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন—প্রতিটি নির্বাচনেই বামপন্থীদের ভোট কমেছিল। বিশেষ করে, দক্ষিণবঙ্গে তাদের তৃণমূল পর্যায়ের অনেক কর্মীই ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এই অবস্থায় শুরুতে তৃণমূল অন্যদের চাইতে এগিয়ে থাকলেও পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে এসে নরেন্দ্র মোদি সারদা কেলেঙ্কারির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর নামকে জড়িয়ে দিয়ে যেমন তৃণমূলকে প্রচণ্ড অস্বস্তিতে ফেলেছেন, তেমনি মোদির 'তথাকথিত বাংলাদেশিদের' জোর করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর হুমকি আবার রাজ্যের ক্ষমতাসীন নেতাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বনগাঁ প্রভৃতি বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী লোকসভা আসনে রাতারাতি মোদির এই হুমকিসংবলিত হাজার হাজার ফেস্টুন টাঙাচ্ছে তৃণমূল। যার বক্তব্য, মোদি ক্ষমতায় এলে ১৯৪৭ সাল থেকে যাঁরা (একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষ) সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশে এসেছেন, তাঁদের দেশ ছাড়তে হবে। তৃণমূলের এক নেতার দাবি, মোদির ওই কথায় দক্ষিণবঙ্গের সংখ্যালঘু ভোটের বেশিটাই তাঁদের ঝুলিতে পড়বে। বামপন্থীরা অবশ্য এটা মানতে রাজি নন।তাঁদের মতে, সংখ্যালঘুরা বিজেপিকে ঠেকাতে শুধু তৃণমূলকেই বেছে নেবেন, সেটা ভাবা ভুল। তাঁরা বেশ কয়েক জায়গায় বামপন্থীদের সঙ্গে রয়েছেন, আর কোনো কোনো জায়গায় কংগ্রেসের দিকেও ঝুঁকছেন।

নয় পর্বের ভোট শেষ হচ্ছে আজ- কঠিন পরীক্ষায় মমতা, মুলায়ম

ভারতের লোকসভা নির্বাচন শেষ হচ্ছে আজ সোমবার৷ নবম ও শেষ পর্বে আজ তিন রাজ্যের ৪১ আসনে ভোট গ্রহণ হবে৷ শেষ দফার নির্বাচনে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী পার্টির (এসপি) নেতা মুলায়ম সিং যাদব৷ মমতা-মুলায়মের সামনে আজ যদি থাকে কঠিন পরীক্ষা, তাহলে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদি ও আম আদমি পার্টির (এএপি) অরবিন্দ কেজরিওয়াল আজ কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি৷ কেউই কারও কাছে হারতে চান না৷ উত্তর প্রদেশের বারানসি আসনে আজ দুজন সর্বশক্তি নিয়ে লড়াইয়ে নামছেন৷ তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই দ্বৈরথে কে হাসবেন শেষ হাসি, তা ঠিক করে দেবেন বারানসির মানুষ৷ লোকসভার এবারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো এক মাসের বেশি সময় ধরে৷ শুরু হয়েছিল ৭ এপ্রিল, শেষ হচ্ছে আজ৷ ফলাফল ঘোষণা করা হবে ১৬ মে৷
মমতার দল তৃণমূল এবং মুলায়মের সমাজবাদী পার্টি তাদের নিজ নিজ রাজ্যে ক্ষমতায়৷ রাজ্যের বাইরে তাদের কোনো উপস্থিতি নেই বললেই চলে৷ তাদের দুই রাজ্যে এবার বড় করে ভাগ বসাতে চাইছে মোদির বিজেপি৷ পশ্চিমবঙ্গে হয়তো খুব ভালো করতে পারবে না, কিন্তু উত্তর প্রদেশে থাবা বসাতে চেষ্টার কোনো কমতি রাখেনি বিজেপি৷ নির্বাচনের আগের সব জনমত জরিপে আভাস পাওয়া যাচ্ছে, বিজেপিই সরকার গড়বে৷ এ জন্য উত্তর প্রদেশে তাদের ভালো করতেই হবে৷ পশ্চিমবঙ্গে লোকসভার আসন মোট ৪২টি৷ শেষ দফায় আজ ভোট হচ্ছে ১৭টি আসনে৷ এই ১৭ আসনের মধ্যে ১৬টি গতবার পেয়েছিল তৃণমূল৷ আর মুলায়মের রাজ্য উত্তর প্রদেশের ৮০ আসনের মধ্যে আজ ভোট ১৮ আসনে৷ এ ছাড়া বিহারে ছয়টি আসনে ভোট হচ্ছে৷ এবারই প্রথম কোনো দলের সঙ্গে গাঁটছড়া ছাড়াই নির্বাচন করছে মমতার তৃণমূল৷ ফলে পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের সব কটিতে প্রার্থী দিয়েছে দলটি৷ এই রাজ্যে আগাগোড়াই কংগ্রেস বা বিজেপির অবস্থা খুব একটা শক্ত ছিল না৷ বামফ্রন্টের দীর্ঘ শাসনের শেষ পর্যায়ে তাদের সঙ্গে টক্কর দিয়েছে তৃণমূল৷ বামদের দুর্গ ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের তছনছ করে দিতেও সক্ষম হয়েছেন মমতা৷ তাই গতবার ১৯টি আসন পেলেও এবার তিনি বলছেন, সবগুলো আসনই তৃণমূলের হবে৷ এতটা না হলেও দলের নেতারা আশা করছেন, তাঁদের আসনসংখ্যা ৩০ এর ওপরে থাকবেই৷
পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস নেই, বামফ্রন্ট তছনছ৷ তাই বলে সবটা একা তৃণমূলকে ছাড়তে রাজি নয় বিজেপি৷ এমনিতে এবার সারা দেশে বইছে মোদি হাওয়া৷ তার ওপর ক্ষমতায় থেকে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে তৃণমূলের তেমন কিছু করতে না পারা এবং শেষবেলায় সারদা কেলেঙ্কারিতে জেরবার মমতা৷ এসব সুযোগ কাজে লাগিয়ে এবার তূণমূলের ভাগে কামড় বসাতে উদ্যত বিজেপি৷ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির সভাপতি রাহুল সিনহা তাই আশা করছেন, 'আগের কোনো হিসাবনিকাশ এখন কাজ করবে না৷ পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির হাওয়া এবার ভিন্নদিকে বইছে৷ আমি নিশ্চিত, তৃণমূল যতটা আশা করছে, তাদের জন্য তা ততটা সহজ হবে না৷'
উত্তর প্রদেশের বারানসিতে বিজেপির মোদি, এএপির কেজরিওয়াল ও কংগ্রেসের অজয় রায়ের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইটা হতে যাচ্ছে৷ কিন্তু পুরো রাজ্যের লড়াইটা চতুর্মুখী হবে বলেই মনে হচ্ছে৷ এতে কংগ্রেস ও বিজেপির পাশাপাশি থাকছে রাজ্যের ক্ষমতাসীন সমাজবাদী পার্টি (এসপি) ও বিরোধী দল মায়াবতীর বহুজন সমাজবাদী পার্টি (বিএসপি)৷ তবে মূল লড়াইটা হতে পারে বিজেপি ও বিএসপির মধ্যে৷ এসপির প্রধান মুলায়ম লড়ছেন বারানসির পাশের আসন আজমগড় থেকে৷ সেখানেও আজ ভোট৷ তিনি হয়তো জিতে যাবেন৷ কিন্তু তাঁর দল এসপির অবস্থা গতবারের মতো অতটা সংহত নয়৷ বিহারে নির্বাচন আজ ছয়টি আসনে৷ এই রাজ্যে নির্বাচনের শেষ পর্যায়ে উন্নয়নের বিষয়টি পাশে সরিয়ে জাতপাতের বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছেন নরেন্দ্র মোদি৷ এই অনুভূতির ওপর ভর দিয়ে টক্কর দিতে চাইছেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) সঙ্গে৷ একই অস্ত্রে কাবু করতে চাইছেন রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের জনতা দলকে (সংযুক্ত)৷ সিএনএন-আইবিএন৷

Saturday, May 10, 2014

লড়াইটা জমিয়েছেন কেজরিওয়াল by সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় @প্রথম আলো

শুক্রবার সকাল থেকে বারানসির জগদ্বিখ্যাত অলিগলি ও রাজপথে একটাই আলোচনা, আগের রাতে নরেন্দ্র মোদির চার কিলোমিটার যাত্রাপথে কত মানুষের ঢল নেমেছিল? কারও মতে, এক লাখ। কারও ধারণা, কয়েক লাখ। বেনারস (এই প্রাচীন নগরের আরেক নাম) হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দলীয় কার্যালয়ের চার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে মোদির গাড়িবহরের সময় লাগে চার ঘণ্টা। এ পুরো সময় মোদি সারা দেশের টেলিভিশনের প্রাইম টাইমে আর কাউকে এক ইঞ্চি জায়গা ছাড়লেন না, আনুষ্ঠানিক 'রোড শো' না হলেও সেটা শেষ পর্যন্ত তা-ই হয়ে গেল। দ্বিতীয়ত, জাতীয় নির্বাচন কমিশন ও বারানসির জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইয়ে জয় হলো বিজেপির। এত কিছুর পরও বারানসির মোদি বাহিনী তক্কে তক্কে আছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের জন্য। আম আদমি পার্টির (এএপি) নেতা আর যাই হোক, এ তীর্থ নগরের মোদিবিরোধীদের সমীহ কিন্তু আদায় করে ছেড়েছেন। গোটা নগর এককথায় স্বীকার করছে, (এমনকি নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে যাঁদের পাগলামির শেষ নেই তাঁরাও) আর কিছু না হোক, লড়াইটাকে উপভোগ্য করে তুলেছেন এই অরবিন্দ কেজরিওয়াল। সকাল থেকেই মাথায় সাদা টুপি, হাতে দুর্নীতি তাড়ানোর ঝাঁটা (নির্বাচনী প্রতীক) নিয়ে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে আম আদমি পার্টির সদস্যরা শহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। গ্রামে গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ছেন। লোকজনকে তাঁরা ভোট দেওয়ার যন্ত্র ইভিএমের ছাপমারা কাগজ দিচ্ছেন, যাতে ভোটের বোতাম কোথায় টিপতে হবে বুঝতে অসুবিধা না হয়। এই যে কয়েক শ মানুষ কেজরিওয়ালের জন্য জীবনপণ করে বারানসির নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন, এঁদের সঙ্গে হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) নেতাদের অদ্ভুত মিল। সংঘের মানুষজনের মতোই আদর্শে ভর করে লক্ষ্যে অবিচল থেকে আম আদমি পার্টির লোকজন অনেক কষ্টে মোদির অর্থবল, লোকবল, বাহুবল ও কৌশলের মোকাবিলা করছেন। এঁদের অধিকাংশই বাইরের লোক। প্রচারণা শেষে এঁদের বারানসি ছেড়ে চলে যেতে হবে। প্রশাসনের হুকুম, প্রচারণা শেষ, এলাকার বাইরের লোকজনেরও বারানসিতে থাকার মেয়াদ শেষ।
কেজরিওয়ালের জন্য বিজেপির তক্কে তক্কে থাকার কারণ তাঁর রোড শো। দুই দফায় 'ঝাড়ু পার্টি' (এখানে এএপিকে এই নামেই ডাকা হচ্ছে) সেই শো গতকাল করল ঠিকই, কিন্তু মেজাজে বা জৌলুশে তা মোদির ধারেকাছেও আসতে পারল না। কী করেই বা আসবে? একদিকে দেশের করপোরেটকুলের দেদার দাক্ষিণ্য, অন্যদিকে দুয়োরানির দারিদ্র্যমাখা মালিন্য! মোদি-সমর্থকেরা আরও উৎফুল্ল যখন দেখলেন শেষবেলায় প্রচারে এসে মায়াবতীও তেমন একটা দাগ কাটতে পারলেন না। খুব শোনা যাচ্ছিল, মায়াবতীকে সামনে রেখে 'হাতি পার্টি' ধীর লয়ে শহরে দাপিয়ে বেড়াবে। কিন্তু 'বহিনজি' বাইরে বাইরে থেকে পাশ কাটিয়ে গেলেন 'সাম্প্রদায়িক' মোদিকে গালমন্দ করে। মোদি এলে দেশের মানুষের কী ধরনের বিপদের মোকাবিলা করতে হবে, সে বিষয়ে দেহাতের মানুষকে শিক্ষিত করে তিনি ভিভিআইপি আসন বারানসির আশা ত্যাগ করে পূর্বাঞ্চলের অন্যত্র মনোনিবেশ শ্রেয় মনে করছেন। মায়াবতীর কৌশলী রাজনীতিতে এটাই ঠিক। অর্থাৎ, বারানসি এসেও এলেন না। মুলায়ম নিজে আসবেন না ঠিক করেছেন। তবে তাঁর ছেলে অখিলেশ মনে করছেন, তিনিও না এলে বারানসির মুসলমানরা 'ভুল বার্তা' পেতে পারেন। সেটা বিধানসভার পরের ভোটে খারাপ প্রভাব ফেলবে। তাই আজ শনিবার সাইকেল পার্টির মনোবল বাড়াতে অখিলেশ রোড শো করবেন। কিন্তু অখিলেশ নন, বিজেপির আগ্রহ যাঁকে ঘিরে তিনি রাহুল গান্ধী। তাঁকে বেইজ্জত করতে মোদি যদি আমেথি যেতে পারেন, রাহুল তবে কেন বারানসি আসবেন না? এই যে পাল্লা, সাদা বাংলায় যাকে ইটের বদলে পাটকেল বলা হয় আজ প্রচারের শেষ দিনে সেই পাটকেল ছুড়তেই রাহুলের বারানসি আসা। তবে একটু তফাত রয়েছে। মোদি আমেথিতে গিয়ে জনসভা করেছিলেন, রাহুল করবেন রোড শো। তার প্রভাব কতটা পড়বে বারানসির ভোটারদের মনে, আপাতত সেই জল্পনাতেই শহর মশগুল। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ এখানে এসেছেন। রাহুলের রোড শো নিয়ে ঠাট্টা করলেন, 'কেজরিওয়াল বা রাহুলেরা রোড শো করুন বা এয়ার শো, বারানসিতে মোদির স্টাম্প লেগে গেছে।'
পাঁচ বছর আগে বিজেপির মুরলী মনোহর জোশি বারানসি থেকে কোনোরকমে ১৭ হাজার ভোটে জিতেছিলেন। মোদি এবার সেই আসনকে প্রায় হেলায় ঝোলায় পুরলে কে তার জন্য দায়ী হবেন? রাহুল গান্ধীর শুনতে খারাপ লাগতে পারে, তবে ঘটনা হলো এ আসনের সাড়ে তিন লাখের বেশি মুসলমান ভোটারের অধিকাংশ মনে করেন, কংগ্রেসই তার জন্য দায়ী। কেন? কারণ, কংগ্রেস গড়িমসি করতে করতে একেবারে শেষবেলায় অজয় রাইকে টিকিট দিল। অথচ অরবিন্দ কেজরিওয়াল তার এক মাস আগে থেকে এখানে ঘাঁটি গেড়ে বসে। নিট ফল? মুসলমানদের বেশির ভাগ ভোট এবার চিরায়ত হাতের পাঞ্জা ছেড়ে ঝাড়ুতেই আশ্রয় নিচ্ছে। ইটের বদলে পাটকেল মারতে রাহুল বারানসি না এলেই ভালো করতেন। তাতে আর যাই হোক, তিনি যে প্রতিহিংসাপরায়ণ নন, তা বোঝানো যেত।

২০১৪ হবে রাশিয়ার বছর- ক্রিমিয়া সফরে পুতিন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গতকাল শুক্রবার ক্রিমিয়া সফর করেছেন৷ ইউক্রেনের ওই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটি গত মার্চে রাশিয়া নিজেদের অংশ করে নেওয়ার পর সেখানে এটিই পুতিনের প্রথম সফর৷ ১৯৪৫ সালে নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয় উপলক্ষে ক্রিমিয়ার সিভাস্তোপোলে নাবিকদের একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পুতিন৷ তাঁর এই সফরকে 'ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের গুরুতর লঙ্ঘন' বলে মন্তব্য করেছে কিয়েভ৷ বন্দরনগর সিভাস্তোপোলে নৌঘাঁটিতে একটি সামরিক নৌযানের ওপর দাঁড়িয়ে পুতিন যখন নৌসেনাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন, তখন আকাশে কসরত প্রদর্শন করে রুশ জঙ্গি বিমানের বহর৷ পুতিন বলেন, 'আমি নিশ্চিত, ২০১৪ সাল হবে আমাদেরই একটি বছর৷ ঐতিহাসিক সত্য ও আমাদের পূর্বপুরুষদের স্মৃতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে এখানকার মানুষ এ বছর রাশিয়ার সঙ্গে থাকার মতো একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷'
এর আগে নাৎসি বাহিনীকে পরাজিত করার ৬৯তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজ করে রাশিয়া৷ বিজয় দিবসে মস্কোতে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, এটা এমন একটি দিন, যখন 'দেশপ্রেমের জয়' হয়৷ ক্রিমিয়ায় যে কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়েছিল, সেটি আকারে তেমন বড় ছিল না৷ তবে লোকজনের আগমন ছিল চোখে পড়ার মতো৷ তারা পতাকা নেড়ে পুতিনকে স্বাগত জানায়, পুতিন হাত নেড়ে তার জবাব দেন৷ রুশ উসকানির আশঙ্কা ইউক্রেনের: ইউক্রেন সংকট প্রশ্নে সম্প্রতি সুর নরম করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন৷ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে কথা বলেছেন, দেশটির পূর্বাঞ্চলের বিিচ্ছন্নতাবাদীদের গণভোট বন্ধ করতে বলেছেন এবং ইউক্রেন সীমান্ত থেকে রুশ সেনাদের সরিয়ে নেওয়ার কথাও বলেছেন৷ তবে এটাকে রাশিয়ার উসকানির পূর্বলক্ষণ হিসেবে দেখছেন ইউক্রেনের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী আরসেনিয়ে ইয়াটসেনিউক৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয় দিবস উপলক্ষে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে তিনি বলেন, 'আমি ভ্লাদিমির পুতিনের ওই বিবৃতি নিয়ে উদ্বিগ্ন৷ এটা একটা খারাপ অনুভূিত সৃষ্টি করছে৷ কারণ, তারা বলে এক, করে আরেক৷ ওই বিবৃতির পর, আমি ৯ মে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলাম৷' বিবিসি ও এএফিপ৷

নারায়ণগঞ্জে সাত খুন- ‘ইজ্জতের রশি’ দিয়ে লাশ বাঁধা

নদী এলাকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অস্ত্র নিয়ে চলাচলের সময় সঙ্গে রশি রাখতে হয়। সেই রশির এক মাথায় অস্ত্র বাঁধা থাকে, যাতে পানিতে পড়ে গেলে রশি দিয়ে হদিস মেলে। পুলিশ সদস্যরা রসিকতা করে বলেন, 'ইজ্জতের রশি।' পুলিশ প্রবিধানের ৯৬১ ধারা অনুসারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সরকারি-ভাবে এ রশি সরবরাহ করা হয়। নারায়ণগঞ্জের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাত খুনের মামলার তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নিহত ব্যক্তিদের শরীরের সঙ্গে ইটভরা বস্তাগুলো এ ধরনের রশি দিয়ে বাঁধা ছিল। সাত খুনের মামলা তদন্ত করছে নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মামুনুর রশিদ মণ্ডল। তদন্তের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, তদন্তকারী কর্মকর্তারা ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালত থেকে সাদাপোশাকে অস্ত্রসহ আটক হওয়া র‌্যাব সদস্য মোস্তফা কামালকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম অভিযোগ করেন, র‌্যাব সদস্যরা আগে থেকেই নজরুলকে নজরে রাখছিলেন। নজরুলের আদালতে হাজিরার দিন ২৭ এপ্রিল আদালতের ভেতরে র‌্যাবের একজন সদস্য সাদাপোশাকে অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করার সময় নজরুলের লোকজন সন্দেহবশত আটক করেছিলেন। পরে র‌্যাবের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর লোকটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওই সদস্যের নাম ও পরিচয় পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ দেন। গত বৃহস্পতিবার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে মোস্তফা কামাল সব অভিযোগ অস্বীকার করেন বলে জানা গেছে।
নারায়ণগঞ্জ পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পুলিশ ২৭ এপ্রিল দিবাগত রাত তিনটার দিকে একটি মাইক্রোবাসসহ তিনটি গাড়িকে তল্লাশির জন্য রাস্তায় থামায়। তিনটি গাড়ির সামনের গাড়িতে ছিলেন র‌্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মাদ। পেছনের গাড়িতে ছিলেন মেজর আরিফ হোসেন। র‌্যাবের অধিনায়ক গাড়ি থেকে নেমে টহল পুলিশকে জানান, তাঁরা বিশেষ অভিযানে যাচ্ছেন। এরপর পুলিশ গাড়িগুলো ছেড়ে দেয়। পুলিশ সদস্যরা জানান, গাড়িগুলো নারায়ণগঞ্জের নদীর পাড় দিয়ে চলে যায়। ৪৫ মিনিট পরে আবার সেগুলো র‌্যাব কার্যালয়ের দিকে চলে যায়। ওই তিনটি গাড়ি নিয়ে নানা সন্দেহ তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। এর আগে হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে চাকরি হারানো র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক তারেক সাঈদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার এম এম রানাকে অকালীন ও বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়। তাঁরা এখনো সেনানিবাসে আছেন বলে গেছে। সেনা সদর দপ্তরের প্রজ্ঞাপন অনুসারে এসব কর্মকর্তা সব ধরনের সুবিধা পাবেন। এ কারণে তাঁরা অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটি ভোগ করবেন এক বছর। ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুলসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাঁদের ছয়জনের এবং পরদিন একজনের লাশ ভেসে ওঠে।

Friday, May 09, 2014

পানির অভাবে নদী মরলে সরকারের লোক খুশি হয় @প্রথম আলো

অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেছেন, আমাদের দেশে যাঁরা সরকারে থাকেন তাঁদের লোকেরা নদীতে পানি না এলে খুশি হন। কেননা এতে নদী মরে গিয়ে জমিতে পরিণত হয়। আর তাঁরা ওই জমি দখল করতে পারেন। ফলে তাঁরা নৈতিকভাবেও ভারতের কাছ থেকে পানির ন্যায্য হিস্যা চাওয়ার শক্তি পান না। আজ শুক্রবার রাজধানীতে এক গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে আনু মুহাম্মদ এসব কথা বলেন। গণসংহতি আন্দোলন আয়োজিত 'অভিন্ন নদীতে ভারতের আগ্রাসী নীতি' শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় প্রেসক্লাবে। যুক্তরাজ্যের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ মুশতাক খান বলেন, বাংলাদেশের উচিত ভারতকে ট্রানজিট দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া; আর ভারত বাংলাদেশকে পানি না দেওয়ায় যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তার জন্য ক্ষতিপূরণ চাওয়া। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসেন বলেন, 'যখন আমরা তিস্তার পানি পেলাম না, তখন ভারতের অনেক পত্রিকা ও নাগরিক সমাজের লোক বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলেছেন।' এ ধরনের মিত্রদের খুঁজে বের করে পানির অধিকার বিষয়ে আঞ্চলিক ঐকমত্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর বলেন, 'আমাদের শাসক শ্রেণী মনে করে পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জির জন্য শাড়ি ও ইলিশ পাঠালেই পানি চলে আসবে। কিন্তু ভারতের কাছে পানি ন্যায্য হিস্যা চাওয়ার মতো হিম্মত তাদের নেই।'
পানির হিস্যা পেতে আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে হবে
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেন, সরকারগুলোর মেরুদণ্ডহীনতার কারণে ভারত থেকে আসা ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করা যাচ্ছে না। পানির হিস্যা পেতে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে হবে। বাংলাদেশকে জাতিসংঘের অভিন্ন নদীবিষয়ক চুক্তি 'কনভেনশন অব দ্য ল অব নননেভিগেশন ইউজেস অব ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটারকোরসেস'-এ স্বাক্ষর করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তাঁরা। বক্তারা বলেন, বিশ্বের ৩৪টি দেশ জাতিসংঘের এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। বাংলাদেশ এতে স্বাক্ষর করলে এটি একটি আইনে পরিণত হবে। আর এই আইনের আওতায় বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পেতে চাপ দিতে পারবে। গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, পানি বিশেষজ্ঞ ইনামুল হক, সংস্কৃতিকর্মী অরূপ রাহী প্রমুখ।

মুক্তিপণ নিতে গিয়ে ছাত্রলীগের পাঁচ নেতাসহ আটক ৭ @প্রথম আলো

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে অপহরণের পর মুক্তিপণ নেওয়ার সময় ছাত্রলীগের পাঁচ নেতাসহ সাতজনকে আটক করেছে শাহবাগ থানার পুলিশ। আজ শুক্রবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) থেকে এই সাতজনকে আটক করা হয়। একই সঙ্গে অপহূত মুঠোফোনে টাকা ভরার (রিচার্জ) ব্যবসায়ী ফরহাদ ইসলামকেও উদ্ধার করা হয়। এদিকে আটক হওয়া নেতাদের ছাড়িয়ে নিতে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে পুলিশের ওপর ব্যাপক চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান। আটক হওয়া ছাত্রলীগের নেতাদের শাহবাগ থানায় না রেখে রমনা থানার হাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। এর কারণ জানতে চাইলে শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাবিল হোসেন বলেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে ছাত্রলীগের ওই নেতাদের রমনা থানার পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। আটক হওয়া ব্যক্তিরা হলেন: ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-ক্রীড়া সম্পাদক সৃজন ঘোষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সহসভাপতি তানভীরুল ইসলাম, জগন্নাথ হল কমিটির সহসভাপতি অনুপম চন্দ্র, মুহসীন হল কমিটির ছাত্রবৃত্তিবিষয়ক সম্পাদক মামুন, জসীমউদ্দীন হল কমিটির সাবেক সহসম্পাদক বাপ্পী ও ছাত্রলীগের কর্মী হিমেল। এঁদের সঙ্গে আরফান পাটোয়ারি নামে আরেক ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করেছে। অপহূত ব্যবসায়ী ফরহাদ প্রথম আলোকে বলেন, এই আরফানের নেতৃত্বেই তাঁকে অপহরণ করা হয়েছিল।
শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হাবিল হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের সামনে থেকে ফরহাদকে অপহরণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁর পরিবারের কাছে ফোন করে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি পুলিশকে জানায়। পরে মুক্তিপণের টাকা দেওয়ার নামে ফাঁদ পেতে আজ বেলা আড়াইটার দিকে সাতজনকে আটক ও অপহূতকে উদ্ধার করে পুলিশ। রাতে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে হাতেনাতে ধরা পড়া সংগঠনের নেতাদের ছেড়ে দিতে পুলিশের ওপর চাপ সৃষ্টির বিষয়ে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি, তার আগেই তিনি 'প্রোগ্রামে আছি' বলে ফোনের লাইন কেটে দেন। এরপর এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামানকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। আজ সন্ধ্যায় শাহবাগ থানায় এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় ব্যবসায়ী ফরহাদের। তিনি জানান, তাঁর বাড়ি চাঁদপুরে। ঢাকায় মুঠোফোন রিচার্জের ব্যবসা করেন। অপহরণকারী দলের নেতৃত্বে থাকা আরফান তাঁর ছোটবেলার বন্ধু। ফরহাদ বলেন, তাঁর এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে ব্যবসায়িক প্রয়োজনে দেখা করতে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চ এলাকায় যান। তখন আরফান ১৫-১৬ জনকে সঙ্গে নিয়ে তাঁকে অপহরণ করেন। এরপর তাঁকে একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রাখা হয়। সেখানে রাতভর নির্যাতন করা হয়। এ সময় তিনি নির্যাতনের চিহ্ন হিসেবে শরীরে সিগারেটের পোড়া দাগ দেখান। ফরহাদকে অপহরণের এ ঘটনায় তাঁর বাবা তাজুল ইসলাম বাদী হয়ে সন্ধ্যায় শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন।

অভিযুক্ত তিন র‌্যাব কর্মকর্তা- ফৌজদারি আইনেও বিচার হতে হবে

নারায়ণগঞ্জ ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণ ও খুনের সাত দিন পর র৵াবের অভিযুক্ত দুই কর্মকর্তাকে অকালীন এবং একজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়ে সরকার বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে৷ এ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে অন্তত প্রাথমিকভাবে মেনে নেওয়া হলো যে অভিযোগের ভিত্তি রয়েছে৷ একটি গণতান্ত্রিক দেশে কোনো নাগরিকই আইনের ঊর্ধ্বে থাকতে পারেন না৷ র৵াবের আলোচিত তিন কর্মকর্তা 'ছয় কোটি টাকা ঘুষ' খেয়ে সাতজনকে অপহরণ ও খুন করেছেন বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যেত৷ অবশ্য ঘটনার পরপরই তিন কর্মকর্তাকে নিজ নিজ বাহিনীতে ফেরত পাঠানো হয়েছিল৷ কিন্তু সেটা যথেষ্ট ছিল না৷ এবং এখন যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক৷ অবসর কোনো শাস্তি নয়৷ অপহরণ ও খুনের মতো অপরাধে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় বিচার হতে হবে৷ সাত খুনের মামলায় যঁাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তঁাদের কাউকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে না পারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরাট ব্যর্থতা৷ এখন যদি অবসরে পাঠানো সাবেক সেনা ও নৌ কর্মকর্তাদেরও আইনের যথাযথ প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হয়, তাহলে আইনের প্রয়োগের বিষয়টি পরিহাসে পরিণত হবে৷
নারায়ণগঞ্জের রক্ত হিম করা ঘটনায় র৵াব, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সবার নির্দিষ্ট পরিসরে দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ জরুরি৷ কাউন্সিলর নজরুল আগে থেকেই তঁার জীবনের হুমকি সম্পর্কে সবাইকে জানিয়েছিলেন৷ বিষয়টি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকেও জানানো হয়৷ কিন্তু সবাই কেন নির্বিকার ছিলেন, তার রহস্য উদ্ঘাটিত হওয়া প্রয়োজন৷ এখানে সরকার ও প্রশাসনের জবাবদিহি নিশ্চিত না হলে বারবার এ ধরনের ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়৷ অনেক যাচাই-বাছাই করে দেশের সশস্ত্র বাহিনীতে নিয়োগ দেওয়া হয়৷ তাই তাদের প্রতি দেশবাসীর আস্থাও বেশি৷ র৵াব গঠনের সময় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করায় মানুষ এ জন্যই আশ্বস্ত হয়েছিল৷ কিন্তু বিভিন্ন অনৈতিক ঘটনায় র৵াবে কর্মরত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ হতাশাজনক৷ দু-চারজন সদস্যের পদস্খলনের কারণে পুরো বাহিনীর মর্যাদা নষ্ট হতে দেওয়া যায় না৷ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের দৈনন্দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত করা উচিত কি না, সে প্রশ্নটিও বিবেচনায় আনা যেতে পারে৷ এতে সমাজে বিরাজমান কলুষতায় কেউ সহজেই প্রলুব্ধ হতে পারে বলে সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন৷ সে ক্ষেত্রে এ ধরনের নিয়োগ সাময়িক হতে পারে৷ অবশ্য জাতিসংঘ শান্তি মিশনে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা যদি গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করতে পারেন, তাহলে দেশের ভেতরে পারবেন না কেন, সে প্রশ্নটিও আছে৷ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের ভিত্তিতে জটিল বিষয়টি পুনর্বিবেচনায় আনা যেতে পারে৷ আপাতত ন্যায়বিচারের স্বার্থে অভিযুক্ত সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যদের আইনের আওতায় আনা হোক৷

ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার অঙ্কিত তিওয়ারি @প্রথম আলো

'আশিকি ২' খ্যাত সংগীত তারকা অঙ্কিত তিওয়ারির বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করার অভিযোগ তুলেছেন এক তরুণী। এ অভিযোগে গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে মুম্বাই পুলিশ। আগে ছোট ও বড় পর্দায় সংগীত পরিচালনার কাজ করলেও গত বছর মুক্তি পাওয়া 'আশিকি ২' ছবির 'শুন রাহা হ্যায়' গানটি অঙ্কিতকে (২৪) ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। গানটিতে কণ্ঠ দেওয়ার পাশাপাশি এর সুর ও সংগীত পরিচালনাও করেছেন অঙ্কিত। সম্প্রতি এক তরুণী অভিযোগ তোলেন, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করেছেন অঙ্কিত। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ও ৫০৬ ধারায় অঙ্কিতকে গ্রেপ্তার করেছে মুম্বাই পুলিশ। মুম্বাইয়ের ভার্সোভা থানার একজন পুলিশ কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে গতকাল হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে এ তথ্য জানানো হয়। অভিযোগকারীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে অঙ্কিতের ভাই অঙ্কুর তিওয়ারিকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অঙ্কুরের বিরুদ্ধে ওই তরুণীর অভিযোগ, স্পর্শকাতর বিষয়টি জনসমক্ষে ফাঁস করলে তাঁকে ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুমকি দেন অঙ্কুর।
আজ শুক্রবার আন্ধেরি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হচ্ছে অঙ্কিত ও অঙ্কুরকে। তদন্তের প্রয়োজনে অভিযুক্ত দুজনকে কয়েক দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে রাখার অনুমতি চাওয়া হবে আদালতের কাছে। মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে ওই তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষা হয়েছে। ডাক্তারি পরীক্ষার প্রতিবেদন পুলিশের হাতে আসার পর মামলার তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়া পুরোদমে শুরু হবে। 'আশিকি ২' ছবির 'শুন রাহা হ্যায়' গানটি ব্যাপক শ্রোতাপ্রিয়তা পাওয়ার পাশাপাশি ফিল্মফেয়ার, আইফার মতো মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার প্রদান আসরে পুরস্কৃতও হয়। গানটির জন্য সেরা সংগীত পরিচালকের পুরস্কার অর্জন করেন অঙ্কিত। কিন্তু ধর্ষণের মতো জঘন্য অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে তাঁর ক্যারিয়ারে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। ধর্ষণের অভিযোগে অঙ্কিতের আগে গত ২৫ এপ্রিল গ্রেপ্তার হন বলিউডের অভিনেতা ইন্দর কুমার। ২২ বছর বয়সী উঠতি এক অভিনেত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। এ ছাড়া গৃহপরিচারিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে ২০০৯ সালের ১৪ জুন গ্রেপ্তার হয়েছিলেন 'ভুলভুলাইয়া'খ্যাত বলিউডের তারকা অভিনেতা শাইনি আহুজা। তাঁর সাত বছরের কারাদণ্ডও হয়। পরে অবশ্য জামিনে মুক্তি পান তিনি। বর্তমানে 'ওয়েলকাম ব্যাক' ছবির মাধ্যমে বলিউডে প্রত্যাবর্তনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ৩৯ বছর বয়সী শাইনি।

ব্যাংককে ব্যাপক বিক্ষোভ

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে আজ শুক্রবার সরকারবিরোধী হাজারো বিক্ষোভকারী বিক্ষোভ করছেন। প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রাকে সাংবিধানিক আদালত অপসারণ করার পর গঠিত নতুন মন্ত্রিসভা বাতিলের দাবিতে তাঁরা এ বিক্ষোভ করছেন। গতকাল বিক্ষোভকারীরা নতুন সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন৷ বিরোধীদের এই ঘোষণা চলমান সংকট আরও ঘনীভূত করতে পারে। আজ রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আশা করছে, আগামী ২০ জুলাই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তারা জয়ী হবে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা এই সরকারের পতন চান। একই সঙ্গে তাঁরা নির্বাচন স্থগিত ও ইংলাকের ভাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার প্রভাব শেষ করে দিতে সংস্কারের দাবি জানান। বিক্ষোভকারীদের নেতা সুথেপ থাউকসুবান বিক্ষোভকারীদের পার্লামেন্টের বাইরে, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বাইরে এবং পাঁচটি টেলিভিশন চ্যানেল কার্যালয়ের বাইরে মিছিল করার আহ্বান জানান। সরকার যাতে তাঁদের ব্যবহার করতে না পারে, তাঁরা এ উদ্যোগ নিয়েছেন। সুথেপ বলেন, 'আমরা দেশ থেকে থাকসিন-যুগের সব আবর্জনা ঝেঁটিয়ে পরিষ্কার করব।' ২০১১ সালে থাইল্যান্ডের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান থাবিল প্লিয়েনশ্রিক বদলির ঘটনায় সাংবিধানিক আদালত গত বুধবার ইংলাক ও তাঁর মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্যকে অপসারণ করেন। নিজের একজন আত্মীয়কে থাবিলের স্থলাভিষিক্ত করার মাধ্যমে ইংলাক ক্ষমতার অপব্যহার করেছেন বলে আদালত উল্লেখ করেন। পরে মন্ত্রিসভা পুয়ে থাই পার্টির নেতা উপপ্রধানমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রী নিওয়াত্তুমরং বুনসংপাইসানকে ইংলাকের স্থলাভিষিক্ত করে৷ ইংলাককে গতকাল ধান ক্রয় খাতে ভতুর্কি দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত করেছে থাইল্যান্ডের দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা৷ এ নিয়ে দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে ভোটাভুটি হবে৷ সিনেট ইংলাককে অভিশংসিত করলে তিনি রাজনীতিতে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারেন।

ব্যাংককে ব্যাপক বিক্ষোভ @প্রথম আলো

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে আজ শুক্রবার সরকারবিরোধী হাজারো বিক্ষোভকারী বিক্ষোভ করছেন। প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রাকে সাংবিধানিক আদালত অপসারণ করার পর গঠিত নতুন মন্ত্রিসভা বাতিলের দাবিতে তাঁরা এ বিক্ষোভ করছেন। গতকাল বিক্ষোভকারীরা নতুন সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন৷ বিরোধীদের এই ঘোষণা চলমান সংকট আরও ঘনীভূত করতে পারে। আজ রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আশা করছে, আগামী ২০ জুলাই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তারা জয়ী হবে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা এই সরকারের পতন চান। একই সঙ্গে তাঁরা নির্বাচন স্থগিত ও ইংলাকের ভাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার প্রভাব শেষ করে দিতে সংস্কারের দাবি জানান। বিক্ষোভকারীদের নেতা সুথেপ থাউকসুবান বিক্ষোভকারীদের পার্লামেন্টের বাইরে, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বাইরে এবং পাঁচটি টেলিভিশন চ্যানেল কার্যালয়ের বাইরে মিছিল করার আহ্বান জানান। সরকার যাতে তাঁদের ব্যবহার করতে না পারে, তাঁরা এ উদ্যোগ নিয়েছেন।
সুথেপ বলেন, 'আমরা দেশ থেকে থাকসিন-যুগের সব আবর্জনা ঝেঁটিয়ে পরিষ্কার করব।' ২০১১ সালে থাইল্যান্ডের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান থাবিল প্লিয়েনশ্রিক বদলির ঘটনায় সাংবিধানিক আদালত গত বুধবার ইংলাক ও তাঁর মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্যকে অপসারণ করেন। নিজের একজন আত্মীয়কে থাবিলের স্থলাভিষিক্ত করার মাধ্যমে ইংলাক ক্ষমতার অপব্যহার করেছেন বলে আদালত উল্লেখ করেন। পরে মন্ত্রিসভা পুয়ে থাই পার্টির নেতা উপপ্রধানমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রী নিওয়াত্তুমরং বুনসংপাইসানকে ইংলাকের স্থলাভিষিক্ত করে৷ ইংলাককে গতকাল ধান ক্রয় খাতে ভতুর্কি দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত করেছে থাইল্যান্ডের দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা৷ এ নিয়ে দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে ভোটাভুটি হবে৷ সিনেট ইংলাককে অভিশংসিত করলে তিনি রাজনীতিতে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারেন।

Thursday, May 08, 2014

লাশ ডোবাতে ব্যবহার করা হয় রেশনের বস্তা? সেদিন যা ঘটেছিল by কামরুল হাসান

বন্দর গুদারাঘাট থেকে হঠাৎ উধাও নৌকা দুটি। প্রায় চার বছর ধরে এগুলো এ ঘাটেই বাঁধা ছিল। গতকাল বুধবার সকালে সেখানে এগুলো আর দেখা যায়নি। নারায়ণগঞ্জের মানুষের কাছে এ নৌকাগুলো ছিল আতঙ্কের। মাঝেমধ্যে রাতের বেলা চোখবাঁধা লোককে তোলা হতো এসব নৌকায়। বন্দর এলাকার মানুষের ধারণা, নারায়ণগঞ্জের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণ করে হত্যার পর ইটবাঁধা লাশগুলো নদীতে ডোবাতে এ নৌকা দুটিই ব্যবহার করা হয়েছিল। সে কারণেই এগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নৌকা দুটি সরকারি বাহিনীর লোকজন ব্যবহার করতেন।
এদিকে লাশের সুরতহালের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, লাশের সঙ্গে যে বস্তায় ইট বাঁধা ছিল, সেই বস্তাগুলো সরকারি রেশনের জন্য ব্যবহার করা। বস্তায় সরকারি রেশনের সিলও রয়েছে। আর ওই বস্তায় যে ইটগুলো ভরা ছিল, সেই একই ধরনের ইট পাওয়া গেছে একটি বাহিনীর কার্যালয়ের পাশের নির্মাণাধীন ভবনে। নারায়ণগঞ্জের ১ নম্বর বন্দর গুদারাঘাটে পাশাপাশি বাঁধা আছে বিভিন্ন সংস্থার নৌকা। পুলিশেরও তিনটি নৌকা আছে। একই সারিতে ছিল র‌্যাবের দুটি বড় নৌকা। নৌকা চলাচলের জন্য সেখানে ছোট একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষও আছে। গতকাল সকালে সেটিও বন্ধ দেখা যায়। বন্দরের ইজারাদার ইকবাল জানান, নিয়ন্ত্রণকক্ষটি ২৪ ঘণ্টা খোলা ছিল। এখন নৌকাও নেই, কক্ষও বন্ধ।
র‌্যাবের নৌকার খোঁজ করতে শহরের ভেতরের কার্যালয়ে এলে সেখান থেকে জানানো হয়, ওই কার্যালয়ে কোনো কর্মকর্তা নেই। তিন কর্মকর্তা চাকরি হারানোর পর সব কর্মকর্তা এখন ঢাকায়। নারায়ণগঞ্জ শহরে এখন বলতে গেলে র‌্যাবের কোনো কার্যক্রম নেই। র‌্যাবের কার্যক্রম আপাতত না থাকলেও এ বাহিনীর বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভের অন্ত নেই। নিহত নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম গতকাল প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন, র‌্যাব তাঁর স্বামীকে অপহরণ করেছে। কিন্তু তাঁকে মেরে ফেলতে নূর হোসেনের সহায়তা নিয়েছে। লাশের ধরন দেখে তিনি এ ধারণা করেন বলে জানান। এ কথা বলার সময় স্থানীয় সাংবাদিকেরাও উপস্থিত ছিলেন। নজরুলের জীবনযাপন সম্পর্কে সেলিনা ইসলাম বলেন, সন্ত্রাসী নূর হোসেন দেড় মাস আগে নজরুলকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। এ হুমকির পর থেকে নজরুল খুব ভয়ে ভয়ে চলতেন। নজরুল তাঁকে বলতেন, র‌্যাব-পুলিশ নূর হোসেনের কেনা। প্রাণের ভয়ে তিনি মিজমিজির বাসা ছেড়ে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। দেড় মাস ধরে ঢাকাতেই ছিলেন। মামলার হাজিরার জন্য ২৭ এপ্রিল তিনি নারায়ণগঞ্জে আদালতে এসেছিলেন। আসার আগের দিন শামীম ওসমানকে তিনি বলেছিলেন, 'ভাই, একটু দেইখেন।'
সেলিনা জানালেন, নজরুল ১৭-১৮ জনের দল নিয়ে চলতেন। রাস্তার মোড়ে মোড়ে তাঁর লোক থাকতেন। প্রতি পাঁচ মিনিট পরপর তাঁরা যোগাযোগ রাখতেন। ওই দিন আদালতে তাঁর সঙ্গে এসব লোক ছিল। সেলিনার অভিযোগ, র‌্যাব সদস্যরা আগে থেকেই নজরুলকে নজরে রাখছিলেন। আদালতের ভেতরে র‌্যাবের একজন সদস্য সাদাপোশাকে অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করার সময় নজরুলের লোকজন তাঁকে সন্দেহবশত আটক করেন। ফতুল্লা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, র‌্যাবের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর লোকটিকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে পুলিশের কোর্ট পরিদর্শক তাঁকে জানিয়েছিলেন।
নজরুলের স্ত্রী আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জ আদালত থেকে বের হয়ে স্টেডিয়াম পার হয়ে একটু দূরে গিয়ে নজরুল তাঁকে ফোন করে ঢাকায় যাওয়ার কথা জানান। এর পাঁচ মিনিট পর মনির নামের এক যুবক জানান, নজরুলসহ পাঁচজনের ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। পরে তিনি পাহারায় থাকা নজরুলের কয়েকজন সহযোগীকে সেখানে পাঠান। তাঁরা ফিরে এসে জানান, র‌্যাবের তিনটি গাড়ি এসে নজরুলের গাড়িটি গতিরোধ করে। তাঁরা প্রথমে গাড়ির সবাইকে মারধর করেন। এরপর জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যান। এ সময় নজরুলের কাছে দুটি অস্ত্রও ছিল। ঘটনাস্থলে থাকা বালুশ্রমিকেরা এ দৃশ্য দেখেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বালুশ্রমিক প্রথম আলোকে বলেন, নজরুলকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর তিনি দেখেন, সামনে একটি গাড়ি সাইরেন বাজিয়ে যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ আদালতের একজন আইনজীবী প্রথম আলোকে বলেন, নজরুলকে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে ফেলেন আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার। তিনি কোনো কথা না বলে অপহরণকারীদের গাড়ির পিছু নেন। একপর্যায়ে তাঁর গাড়ি অপহরণকারীদের তিনটি গাড়ির একটির সামনে এসে পড়ে। তখন পেছন থেকে একটি গাড়ি চন্দনের গাড়িতে সজোরে ধাক্কা দিয়ে থামিয়ে দেয়। চন্দন গাড়ি থেমে নামলে চালকসহ তাঁকে ওই গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। সবগুলো গাড়িই চলে যায় নারায়ণগঞ্জ শহরের দিকে। সেলিনা জানান, এ ঘটনা শুনে তিনি প্রথমে শামীম ওসমানের কাছে যান। শামীম ওসমান সব শুনে বলেন, নূর হোসেন এ কাজ করতেই পারে না। এভাবে তিনি অনেক সময় কাটান। তবে এ সময় শামীম ওসমান র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসানের সঙ্গে কথা বলেন। সেলিনা মনে করেন, শামীম ওসমান ভালো করে নূর হোসেনকে বললে নজরুলের মৃত্যু হতো না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর্নেল জিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ওই দিন শামীম ওসমান তাঁকে বলেন, নজরুলকে র‌্যাব-১১-এর সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছেন। এ কথা শুনে তিনি শামীম ওসমানের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তিনি এটা কী করে জানলেন যে র‌্যাবই তাঁদের নিয়ে গেছে? জবাবে শামীম ওসমান বলেন, আদালতের লোকজন তাঁকে জানিয়েছেন, র‌্যাব-১১-এর লোকজন নজরুলসহ সবাইকে ধরে নিয়ে গেছেন। পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, সবাইকে একটি 'টর্চার সেলে' নেওয়ার পর ইনজেকশন দিয়ে অজ্ঞান করা হয়। এরপর মুখে গামছা ঢুকিয়ে দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও শ্বাসরোধের প্রমাণ মিলেছে। ওই সূত্রটি জানায়, সাতজনকে ওই দিনই মেরে ফেলা হয়। এরপর রাতের বেলা বড় নৌকায় করে লাশগুলো নেওয়া হয় শীতলক্ষ্যা নদীর নির্জন স্থানে। সেখানে নেওয়ার পর বুক-পেট চিরে প্রতিটি লাশের সঙ্গে ১৬টি করে ইট বেঁধে পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। আর এ দলে ছিলেন ২০ জনের মতো। এঁদের মধ্যে সরকারি বাহিনীর সদস্যও ছিলেন বলে শোনা যাচ্ছে।

মোদি বনাম ভারত-লড়াই by সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় @প্রথম আলো

আট দফায় লোকসভার ৫০২ আসনের ভোট শেষ হয়ে অপেক্ষা এখন শেষ পর্যায়ের। বাকি মাত্র ৪১ আসনের ভোট, ১২ মে যা অনুষ্ঠিত হবে। ১৬ মে জানা যাবে ভোটের ফলে কারা হাসছে। তার আগে নির্দ্বিধায় এ কথা বলা যায়, ষোড়শ লোকসভা ভোট হয়ে দাঁড়িয়েছে নরেন্দ্র মোদি বনাম অবশিষ্ট ভারতের লড়াই। একদিকে একজন ব্যক্তিবিশেষ, অন্যদিকে দেরিতে হলেও তাঁকে রোখার এক সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এটাই ভারতের এবারের সাধারণ নির্বাচনের বিশেষত্ব। চার মাস আগে বিজেপি নানা টালবাহানার পর আদর্শিক মিত্র রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (আরএসএস) সিদ্ধান্তের কাছে মাথা নুইয়ে নরেন্দ্র মোদিকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হয়। কিন্তু তখনো লড়াইটা এভাবে ভাগাভাগি হয়নি। তবে যত দিন গড়িয়েছে, সংঘ ও দলকে ছাপিয়ে মোদির মাথা ততই উঁচু হয়েছে এবং ক্রমে তিনি লড়াইকে ব্যক্তি বনাম সমষ্টিতে রূপান্তরিত করতে পেরেছেন। আজ সংবাদমাধ্যমের বিজ্ঞাপন কিংবা 'আউটডোর পাবলিসিটি', যেখানেই চোখ যায়, সর্বত্র একটাই স্লোগান, 'এবার, মোদি সরকার'। ১৯৯৮-৯৯ সালের ভোটেও এ রকম স্লোগান উঠেছিল, 'আব কি বারি, অটল বিহারি'। কিন্তু সেই ভোট এবারের মোদির মতো শুধুই বাজপেয়িকেন্দ্রিক ছিল না। অথচ এবারে প্রচারে মোদি ও দলীয় প্রতীক পদ্ম ফুল ছাড়া আর কারও উপস্থিতি সেভাবে চোখে পড়ে না। ব্যতিক্রম শুধু উত্তর প্রদেশের রাজধানী লক্ষেৗ। সেখানে মোদির সঙ্গে সহাবস্থানে রয়েছেন 'জীবন্মৃত' অটল বিহারি বাজপেয়ি, যাঁকে উপেক্ষা করার মতো ধৃষ্টতা মোদি এখনো অর্জন করেননি।
গতকাল বুধবার সাত রাজ্যের যে আসনগুলোতে ভোট হলো এবং ১২ মে যে রাজ্যগুলোতে ভোট আছে, সেগুলোর মধ্যে উত্তর প্রদেশে ৩৩, বিহারে ১৩, হিমাচল প্রদেশে চার ও উত্তরাখন্ডে পাঁচটি আসন রয়েছে। ক্ষমতায় আসতে হলে এই ৫৫টি আসনের অধিকাংশ বিজেপিকে কবজা করতে হবে। উত্তর প্রদেশের পূর্বাঞ্চলের ৩৩ আসনের মধ্যে ২০০৯ সালে বিজেপি পেয়েছিল মাত্র চারটি। কংগ্রেস ও বহুজন সমাজ পার্টি পেয়েছিল ১০টি করে। মোদির বারানসি থেকে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্যই এই পূর্বাঞ্চলে আসন বাড়ানো এবং তার প্রভাব বিহারে ছড়িয়ে দেওয়া। সে লক্ষ্যে তিনি প্রচারের শেষবেলায় দুটি কৌশল নিয়েছেন। নিজের জাতিগত অনগ্রসর সত্তা ও চা বিক্রির অতীত পেশাকে বড় করে তুলে ধরে 'নিম্নবর্গীয় মানসিকতায়' নাড়া দিতে চেয়েছেন। পাশাপাশি অযোধ্যায় রামমন্দির প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ নতুন করে তুলে ধরেছেন। কেন? কারণ, এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে দলিতরা মায়াবতী ও অনগ্রসর মানুষ মুলায়মকে ছাড়া অন্যদের ভরসা করেন না। তাঁদের সঙ্গেই এত বছর ধরে লেপ্টে থাকতে বাধ্য হয়েছে অতি অনগ্রসর 'সাব কাস্ট'-এর মানুষজন, যাঁরা দলিত 'জাটভ' ও অনগ্রসর 'যাদব'দের দাপাদাপিতে সংকুচিত বোধ করেন। মোদি যেহেতু জাতিগতভাবে এই গোষ্ঠীভুক্ত, তাই সেই সত্তায় সুড়সুড়ি দেওয়ার রাজনীতিকে আঁকড়ে ধরেছেন। এঁদের ভোট পেতেই বিজেপি জোট বেঁধেছে 'আপনা দল'-এর সঙ্গে, উত্তর প্রদেশে যাদের ১০-১২ শতাংশ ভোট আছে। ভোটের অনেক আগে থেকেই নরেন্দ্র মোদির নিজের হাতে সাজিয়ে নেন প্রচারের ছকটা। সেই ছকে প্রত্যক্ষ প্রাধান্য পায় তাঁর 'গুজরাট মডেল', 'দৃঢ়কঠিন উন্নয়নমুখী' মানসিকতা এবং 'চটজলদি সিদ্ধান্ত নেওয়ার' ক্ষমতা। অতিমাত্রায় গণতন্ত্রী না হয়ে দেশের স্বার্থে 'উপকারী একনায়ক' হয়ে ওঠাকেই ওই প্রচারে হাতিয়ার করা হয়। সেই সঙ্গে প্রাধান্য দেওয়া হয় মোদির একদা অতিদরিদ্র সামাজিক চরিত্রকে, যা এক বিপুল জনসমষ্টিকে 'আমরাও এমন হতে পারি' স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে। প্রচ্ছন্নভাবে এই প্রচারের পাশাপাশি পরোক্ষে উসকানি দেওয়া হতে থাকে আর্যাবর্তের গো বলয়ের হিন্দুত্বসর্বস্ব মানসিকতায়। অর্থাৎ একদিকে 'ইয়ং ইন্ডিয়ানদের' বড় হওয়ার কল্পনায় সাত রঙের পোঁচ আর অন্যদিকে কট্টর হিন্দুদের রামমন্দির গড়ার স্বপ্নে বাতাস দেওয়া। বিজেপি খুব চতুরভাবেই এই দুই জনসমষ্টিকে জুড়ে দিল। সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে মানসিকভাবে যুক্ত বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটির নেতা ও মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সদস্য জাফরইয়াব গিলানি লক্ষেৗতে নিজের বাড়িতে প্রথম আলোকে বলেন, 'মোদি বিজেপির প্রচারকে বহুমুখী করতে পেরেছেন। এ কারণে এবার উত্তর প্রদেশে ৩৫-৪০টি আসন তিনি আশা করতেই পারেন।' প্রদেশ কংগ্রেসের বড় নেতা সত্যদেও ত্রিপাঠি কিংবা বীরেন্দ্র মদনও প্রতিপক্ষের এতগুলো আসন পাওয়ার সম্ভাবনা অস্বীকার করেননি। তাঁদের ব্যাখ্যা: বিজেপির উচ্চবর্ণের ভোটব্যাংকের পাশে অনগ্রসর জাতিদের সমর্থন মিললে ও মুসলমান ভোটে বিভাজন হলে মোদির রণকৌশল সফল হতেই পারে।
লড়াই শুরুর আগে বিজেপির নজরে ছিল উত্তর প্রদেশ ও বিহারের মোট ১২০টি আসনের মধ্যে অন্তত ৬০টি। এনডিটিভির সর্বশেষ জরিপে শুধু উত্তর প্রদেশ থেকেই দলটিকে ৫৩টি আসন দেওয়া হয়েছে! এটা সম্ভব কি না, জানতে চাইলে উত্তর প্রদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষক রমেশ দীক্ষিত বলেন, 'একেবারে অসম্ভব বলব না। তার একটা বড় কারণ, নরেন্দ্র মোদির ভালো-মন্দ সম্বন্ধে সবাই বিশেষ একটা অবগত নন। আবার লাগাতার প্রচার তাঁর সম্বন্ধে একটা আকর্ষণীয় ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছে। তাঁকে গুজরাটের কসাই বলা হচ্ছে, কিন্তু হিন্দুপ্রধান ভারতে, বিশেষত দাঙ্গাপ্রবণ গো বলয়ে সেটা তাঁর পক্ষে যেতে পারে। মোদি একজন 'নো ননসেন্স' নেতা, এটা যত প্রচার পাচ্ছে, কট্টর হিন্দুদের মধ্যে ততই তাঁর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে। লোকসভার ভোটে অধিকাংশ মানুষ কেন্দ্রে একজন শক্তপোক্ত নেতাকে পেতে বেশি আগ্রহী।'
জাতীয় স্তরে বিজেপিকে রোখার মতো শক্তি এখন পর্যন্ত কংগ্রেসেরই রয়েছে। কিন্তু সেই কংগ্রেসকে অন্য 'ধর্মনিরপেক্ষ' দলগুলো গত দুই বছরে যেভাবে কোণঠাসা করেছে, কখনো কখনো বিজেপির সঙ্গে তাল ও হাত মিলিয়ে, তাতে দলটি দিন দিন দুর্বল হয়েছে। এই যে আট দফায় ভোট হয়ে গেল, তাতে বিরোধীদের টনক নড়েছে অনেক দেরিতে। কংগ্রেস ও মোদি দুজনকেই রুখে বিশ্বস্ত ও স্থায়ী বিকল্প সরকার গড়া যে সহজ নয়, সেই উপলব্ধি যখন হয়েছে, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। এখন এই শেষবেলায় বারানসিতে মুসলমান ভোট একজোট রাখার চেষ্টায় একটা উদ্যোগ হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু শুধুই তা কি মোদির রথ ঠেকাতে পারবে?
এবারের ভোট মোদিকেন্দ্রিক হয়ে ওঠার অনেক কারণের একটি যদি হয় প্রচারে 'টিম মোদির' উদ্ভাবনী ক্ষমতা, অন্যদিকে তা হলে থাকবে তাঁকে রুখতে কংগ্রেসের সার্বিক ব্যর্থতা। মনমোহন সিংকে নিয়ে দলের টালবাহানা, মোদির মোকাবিলায় রাহুলকে এগিয়ে দেওয়া না-দেওয়া নিয়ে দীর্ঘ দোলাচল এবং স্বাভাবিক মিত্রদের (তৃণমূল কংগ্রেস, ডিএমকে, টিআরএস) সঙ্গে সম্পর্কহানি এই লড়াইটা ক্রমে একপেশে করে তোলে। এখন কংগ্রেসের পক্ষে আশার আলো একটাই—প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। মত্ত ষাঁড়ের শিং ধরে মোকাবিলার মতো যেভাবে তিনি নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে টক্কর দিচ্ছেন, তাতে দেশের আপামর কংগ্রেসি এখন থেকেই তাঁর মধ্যে ইন্দিরা গান্ধীর ছায়া দেখতে পাচ্ছেন। প্রিয়াঙ্কাকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ গান্ধী পরিবার দেবে কি না, মোদিময় ভোট শেষ হওয়ার আগেই এই প্রশ্ন বড় হয়ে উঠছে। সেই প্রশ্নের মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত ষোড়শ লোকসভার ভোটে মূল লড়াই কংগ্রেস বনাম বিজেপির নয়, আঞ্চলিক দল বনাম কংগ্রেস বা বিজেপির মধ্যে নয়, ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম সাম্প্রদায়িকতারও নয়; লড়াইটা নরেন্দ্র মোদি বনাম অবশিষ্ট ভারতের।

Wednesday, May 07, 2014

ওবামার দুই মেয়েকে অনুসরণ নিয়ে তোলপাড়

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দুই মেয়ের মোটর শোভাযাত্রা অনুসরণের অভিযোগে এক গাড়িচালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় হোয়াইট হাউসে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে তোলপাড় হয়। গতকাল মঙ্গলবার পেনসিলভানিয়া অ্যাভিনিউয়ে এ ঘটনা ঘটে। আজ মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, পেনসিলভানিয়া অ্যাভিনিউয়ের সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশের অভিযোগে ম্যাথু ইভান গোল্ডস্টেইন (৫৫) নামের গাড়িচালককে গ্রেপ্তার করেছেন সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা। গাড়িটির চালক ওবামার দুই মেয়ের মালিয়া ও শাসার মোটর শোভাযাত্রা অনুসরণ করছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।  হোয়াইট হাউস থেকে ২০০ মিটার দূরে পেনসিলভানিয়া অ্যাভিনিউয়ের সংরক্ষিত এলাকায় ওই গাড়িটি প্রবেশ করে। তাত্ক্ষণিকভাবে সিক্রেট সার্ভিসের উর্দিধারী কর্মকর্তারা গাড়িটি থামান। তাঁরা গাড়ির চালককে গ্রেপ্তার ও গাড়িটি তল্লাশি করেন। এ ঘটনার সময় হোয়াইট হাউসে সংশ্লিষ্টদের আসা-যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় আধা ঘণ্টা পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। মোটর শোভাযাত্রায় মালিয়া ও শাসা ছিল বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।

Tuesday, May 06, 2014

চালকের গোঁয়ার্তুমিতেই লঞ্চডুবি- তদন্ত কমিটির তথ্য

চালকের গোয়ার্তুমির কারণে পটুয়াখালীর গলাচিপায় কালবৈশাখীর কবলে পড়ে যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি শাথিল-১ ডুবে গিয়েছিল। দুর্ঘটনার কারণ তদন্তে গঠিত কমিটি এমন তথ্য জানিয়েছে। লঞ্চডুবির ঘটনায় পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসন ৪ মে অতিরিক্ত জেলা হাকিম মো. দেলোয়ার হোসেন মাতুব্বরকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান প্রথম আলোকে বলেন, 'লঞ্চডুবির ঘটনা তদন্তে তিন দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। প্রথম ও  দ্বিতীয় দিন আমরা ঘটনাস্থল, উদ্ধার করা লঞ্চ ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান পরিদর্শন করেছি। ডুবে যাওয়া লঞ্চটি থেকে যেসব যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে তাঁদের সঙ্গে দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্বজন এবং দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য সংগ্রহ করা হয়েছে।' মো. দেলোয়ার হোসেন মাতুব্বর বলেন, তদন্তে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী গত শনিবার দুপুরে এমভি শাথিল-১ লঞ্চটি যখন গলাচিপার ইচাদি ঘাটে ছিল, তখনই কালবৈশাখী শুরু হয়। এ সময় যাত্রীরা ওই ঘাট থেকে লঞ্চটি না ছাড়ার জন্য লঞ্চের চালক সুধীর চন্দ্র দাসকে অনুরোধ করে। কিন্তু চালক তা উপেক্ষা করে ইচাদি ঘাট থেকে লঞ্চটি ছেড়ে দেন। এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঝড়ের কবলে পড়ে লঞ্চটি ডুবে যায়। লঞ্চটিতে তিন লাখ টাকারও বেশি দামের মাছ ছিল। এসব মাছ বিকেল পাঁচটার মধ্যে পটুয়াখালী থেকে ঢাকাগামী লঞ্চে তুলে দেওয়ার কথা ছিল। এ কারণে তাড়াহুড়ো করছিলেন চালক। এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য চালক সুধীর চন্দ্র দাসের মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে। লঞ্চডুবির পর থেকে তিনি আত্মগোপনে আছেন বলে জানা গেছে। ৩ মে দুপুরে পটুয়াখালীর গলাচিপায় যাত্রীবাহী এমভি শাথিল-১ লঞ্চটি ডুবে যায়। এতে ১৬ জন যাত্রী নিহত হন।

চট্টগ্রামে নকশাবহির্ভূত ভবন অপসারণ শুরু

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) নগরের নকশাবহির্ভূত ভবন চিহ্নিত ও অপসারণ করতে অভিযান শুরু করেছে। অভিযানের প্রথম দিন আজ মঙ্গলবার নগরের মেহেদীবাগ এলাকায় বিভিন্ন ভবন পরিদর্শন করে চউকের পরিদর্শক দল। এ সময় অবৈধভাবে নকশার বিচ্যুতি ঘটিয়ে ও সড়কের জায়গা দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করায় অন্তত ১০টি ভবনের মালিককে নোটিশ দিয়েছে চউক। এসব ভবনের নকশাবহির্ভূত কিছু অংশ অপসারণ করা হয়। আর ভবনের অবৈধ অংশ পুরোপুরি অপসারণ করতে ২১ মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় পরিদর্শক দল। নোটিশ দেওয়া ভবনগুলোর মধ্যে ভিশন ইসলাম ও ভিশন শাহানা ভবন, কমপোর্ট হাইটস, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের ছয়তলা ভবন রয়েছে। চউকের অনুমোদিত কর্মকর্তা-২ প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম প্রথম আলোকে জানান, পাঁচটি কারণে এই অভিযান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এগুলো হচ্ছে রাস্তা দখল করে ভবন নির্মাণ, চউকের নকশা অবৈধভাবে বিচ্যুতি ঘটিয়ে স্থাপনা নির্মাণ, ভবনের ব্যবহার পরিবর্তন, ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করা। মোহাম্মদ শামীম বলেন, নগরের অবৈধ ভবনগুলো চিহ্নিত করার জন্য এক মাস ধরে প্রাথমিকভাবে এই অভিযান চলবে। এরপর ভবনগুলো উচ্ছেদ করার জন্য বড় আকারের অভিযান পরিচালনা করা হবে। ভিশন ইসলাম ও ভিশন শাহানা ভবনের মালিক আতাউল হক বলেন, কোনো ধরনের নোটিশ না দিয়ে ভবনের সামনের অংশ ভেঙে ফেলা হচ্ছে। ভবনটি চউকের নকশা অনুযায়ী নির্মাণ করা হয়েছে। এদিকে আজকের অভিযানে উপস্থিত ছিলেন চউকের উপপ্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ শাহীনুল ইসলাম খান, অনুমোদিত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামীম, নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আবু ঈসা আনছারী প্রমুখ।

হল-মার্কের ১০ মামলায় আসামি ২১

বাংলাদেশে আর্থিক খাতে সবচেয়ে বিতর্কিত হল-মার্ক দুর্নীতির ২৭টি মামলার মধ্যে ১০টির অভিযোগপত্রের অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব মামলার অভিযোগপত্রে মোট ২১ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের ১১ কর্মকর্তা ও হল-মার্কের সহযোগী তিন প্রতিষ্ঠানের ১০ কর্মকর্তা রয়েছেন। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের নিয়মিত বৈঠকে এই ১০ মামলার অভিযোগপত্রের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. সাহাবুদ্দিন। অভিযুক্তদের মধ্যে আছেন সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হুমায়ুন কবির, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মাইনুল হক, দুই উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) শেখ আলতাফ হোসেন ও মোহাম্মদ সফিজ উদ্দিন আহমেদ এবং দুই সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) কামরুল হোসেন খান ও এজাজ আহমেদ। এ ছাড়া ব্যাংকের জিএম অফিসের দুই মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ননী গোপাল নাথ ও মীর মহিদুর রহমান এবং ব্যাংকের শেরাটন হোটেল শাখার ডিজিএম এ কে এম আজিজুর রহমান, এজিএম মো. সাইফুল হাসান, এক্সিকিউটিভ অফিসার মো. আবদুল মতিন রয়েছেন। এ ছাড়া প্যারাগন নিট কম্পোজিটের এমডি মো. সাইফুল ইসলাম রাজা, পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. মকুল হোসেন, ডিএন স্পোর্টসের চেয়ারম্যান মোতাহার উদ্দিন চৌধুরী, এমডি শফিকুর রহমান জন, পরিচালক ফাহমিদা আক্তার শিখা এবং খান জাহান আলী সোয়েটারের চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম, এমডি আবদুল জলিল শেখ, দুই পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম ও মীর মো, শওকত আলীকে অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ১০টি অভিযোগপত্রে এই ২১ আসামির বিরুদ্ধে ১৮ কোটি ৬৮ লাখ ৬১ হাজার ৪৫৭ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে।

পুরো চর্যাপদ মুখস্থ!

বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদ সম্পূর্ণ মুখস্থ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাকেরুল ইসলাম। তিনি বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। আজ মঙ্গলবার আর সি মজুমদার মিলনায়তনে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও আমন্ত্রিত অতিথিদের চর্যাপদের পদগুলো মুখস্থ শোনান তিনি। এটি যাচাই করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মেহের নিগার। অধ্যাপক সৌমিত্র শেখরের সভাপতিত্বে এ সময় প্রধান অতিথি ছিলেন অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সহসভাপতি ইসরাফিল আলম। এ ছাড়া সাংসদ ছলিম উদ্দীন তরফদার ও কবি মো. আবদুর রশীদ বিশেষ অতিথি ছিলেন। বাংলা সাহিত্যের বুদ্ধ সহজিয়াদের সান্ধ্য ভাষায় রচিত দুর্বোধ্য পদগুলো সাবলীলভাবে বই না দেখে পড়ে শোনান জাকেরুল ইসলাম। এতে তিনি মাত্র আধ ঘণ্টা সময় নেন। লেখকের নামসহ ধারাবাহিকভাবে পাঠ করে তিনি উপস্থিত শ্রোতাদের 'মুগ্ধ' করেন। ইসরাফিল আলম বলেন, চর্যাপদ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে কিন্তু সম্পূর্ণ চর্যাপদ মুখস্থের ঘটনা এটাই প্রথম। উল্লেখ্য, ১৯০৭ সালে নেপালের রাজগ্রন্থাগার থেকে ড. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চর্যাপদ উদ্ধার করেন। চর্যাপদের মোট ৫১টি পদ রয়েছে।

সরকার পতনের ক্ষমতা বিএনপির নেই: এরশাদ

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, বিএনপি সংসদে নেই, আন্দোলনেও নেই। আন্দোলন করে সরকার পতনের ক্ষমতাও দলটির নেই। সে বিবেচনায় জাতীয় পার্টি ভালো অবস্থানে রয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও সার্কিট হাউসের সভাকক্ষে এরশাদ দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন। এর আগে এরশাদ রানীশংকৈল উপজেলায় তাঁর খামারবাড়ি ঘুরে দেখেন।
খালেদার নিন্দা
জিয়া ও মঞ্জুর হত্যায় তাঁকে সম্পৃক্ত করে খালেদা জিয়ার বক্তব্য সম্পর্কে এরশাদ বলেন, 'খালেদা জিয়ার বক্তব্যে আমি বিস্মিত হয়েছি। বিএনপি কয়েকবার ক্ষমতায় ছিল। খালেদা জিয়াও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বেশ কয়েকবার। তখন তিনি এ প্রশ্ন তোলেননি। খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্যের আমি নিন্দা জানাই।' গত রোববার বিএনপির অনশন কর্মসূচিতে খালেদা জিয়া অভিযোগ করে বলেছিলেন, 'জিয়া ও মঞ্জুর হত্যায় এরশাদ জড়িত। তাঁর বিচার করতে হবে।'
এরশাদ বলেন, '১৫-১৬ বছর পর কেন আমার নামে মঞ্জুর হত্যা মামলা দেওয়া হলো, তা আপনারা ভালো বোঝেন।'
মানুষ এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে
দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে এরশাদ বলেন, দেশের মানুষ এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। মানুষ এখন শান্তিতে ঘুমাতে পারছে না। গুম, হত্যা ও অপহরণ সরকারের ভালো কাজগুলোকে ম্লান করে দিয়েছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করে সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে হবে। মতবিনিময় সভায় জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবদুল করিম, সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামল কুমার ঘোষ ও রাজিউর রাজি চৌধুরী বক্তব্য দেন।

নির্যাতনের শোধ নিতে বাবার প্রাণ নিল মেয়ে

বারবার নির্যাতিত হয়ে অবশেষে শোধ নিতে বাবার প্রাণ কেড়ে নিলেন ২৩ বছর বয়সী মেয়ে। ভারতের পশ্চিম দিল্লির রাজৌরি গার্ডেন এলাকায় গত ২৯ এপ্রিল রাতে এ ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ঘাতক মেয়ে ও তাঁর দুই ছেলেবন্ধুকে গ্রেপ্তার করেছে। আজ মঙ্গলবার এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (পশ্চিম) রণবীর সিং বলেন, কুলভিনদর কাউর নামের ওই তরুণী তাঁর দুই বন্ধুর সাহায্যে গত ২৯ এপ্রিল রাতে ৫৬ বছর বয়সী বাবাকে হত্যা করেন। পুলিশ কুলভিনদর এবং তাঁর দুই বন্ধু প্রিন্স সানধু (২২) ও অশোক শর্মাকে (২৩) গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশের ভাষ্যমতে, কুলভিনদর ওই রাতে বাড়ির ফটক খুলে দুই বন্ধুকে বাড়িতে নিয়ে যান। এরপর তাঁরা ঘুমিয়ে থাকা দলজিত সিংয়ের ওপর চড়াও হন এবং ক্রিকেটের স্টাম্প দিয়ে তাঁর ওপর নির্যাতন চালান। এরপর কুলভিনদর ও তাঁর বন্ধুরা ধারালো ভাঙা কাচ দিয়ে দলজিতের বুক চিরে পেসমেকার বের করে ফেলেন। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁরা দলজিতের পা ও গলা তার দিয়ে বেঁধে লাশ পশ্চিম দিল্লির খায়ালা এলাকায় একটি খালের কাছে ফেলে দেন। পরের দিন সকালে পুলিশ দলজিতের লাশ উদ্ধার করে। পুলিশ ওই বাড়ি থেকে ক্রিকেটের স্টাম্প, রক্তমাখা কাপড়, তার, নিহত দলজিতের মুঠোফোন এবং লাশ বহনকারী গাড়িটি জব্দ করেছে। দ্য হিন্দু জানায়, দলজিত সিং ট্রাভেল এজেন্সির গাড়িচালক ছিলেন। তিন বছর আগে তাঁর স্ত্রী মারা যান। তাঁর তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। তিনি ছোট মেয়ে কুলভিনদরকে সঙ্গে নিয়ে থাকতেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কুলভিনদর জানান, তাঁর বাবা ৩০ এপ্রিল ভোর পাঁচটার দিকে ট্যুরের জন্য বের হয়ে যান। কিন্তু পরবর্তী সময় জেরার মুখে কুলভিনদর বাবার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। মেয়ে জানান, মা মারা যাওয়ার পর থেকে বাবা সব সময় নির্যাতন করে আসছিলেন। তাঁর দুই বন্ধু যখন লাশ ফেলে আসতে যান তখন তিনি বাড়িতে পড়ে থাকা রক্ত পরিষ্কার করছিলেন। 

শনিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিলেন না.গঞ্জের আইনজীবীরা

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনের হত্যার ঘটনায় আগামী শনিবারের মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের আইনজীবীরা। এ সময়ের মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করা না হলে রোববার র্যাব-১১-এর কার্যালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সামনের সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। কর্মসূচি সম্পর্কে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, 'ঘটনার এত দিন পেরিয়ে গেলেও মূল আসামির কেউই গ্রেপ্তার হয়নি। আমরা চাই, দ্রুত আসামিরা গ্রেপ্তার হোক। সে কারণে শনিবার পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছি আমরা। শনিবারের মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করা না হলে রোববার র্যাব ১১-এর কার্যালয় ঘেরাও করব আমরা। এটা প্রতীকী ঘেরাও কর্মসূচি। আমরা আসলে দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার দেখতে চাই।'

Monday, May 05, 2014

বিমান নিখোঁজে সম্পৃক্ততা সন্দেহে আল কায়েদা সংশ্লিষ্ট ১১ জন গ্রেপ্তার

মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের নিখোঁজ বিমান নিয়ে রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। এবারে বিমান নিখোঁজের সঙ্গে সম্পৃক্ততা সন্দেহে আল কায়েদা সংশ্লিষ্ট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ খবর দিয়েছে বৃটেনের ইন্ডিপেন্ডেন্ট। সন্দেহভাজনদের বয়স ২২ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। তাদের মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর ও কেদাহ অঙ্গরাজ্য থেকে গত সপ্তাহে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে রয়েছে ছাত্র, শ্রমিক, অল্পবয়সী এক বিধবা ও কয়েকজন ব্যবসায়ী। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই ও বৃটেনের গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-৬ কে ডাকা হয়েছে। আটক ব্যক্তিরা নতুন একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। মালয়েশিয়ার বিশেষ বাহিনীর সন্ত্রাস বিরোধী বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেছেন, তাদেরকে গ্রেপ্তারের পর বিমান নিখোঁজের পেছনে সন্ত্রাসীদের হাত থাকতে পারে বলে সন্দেহ আরও বেড়েছে। তিনি বলেন, বিমানটির যাত্রাপথ পরিবর্তনের পেছনে জঙ্গিদের হাত থাকার আশঙ্কা এখনও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, সন্দেহভাজনদের কয়েকজন মালয়েশিয়াতে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের পরিকল্পনার কথা স্বীকার করেছে। তবে তারা নিখোঁজ বিমানের সঙ্গে কোন প্রকার সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছে। ৮ই মার্চ বেইজিংয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে ফ্লাইট এমএইচ-৩৭০। ২৩৯ আরোহী সহ তা নিখোঁজ হয়ে যায়। প্রায় দু'মাস পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত উদ্ধার অভিযানে সুনির্দিষ্ট কোন ফলাফল মেলেনি। বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়া ফ্লাইটটির শেষ মুহূর্তের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে তাদের প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ করে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী ৮ই মার্চ বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার ৪ ঘণ্টা পর কর্মকর্তারা উদ্ধার অভিযান শুরু করে। আন্তর্জাতিক উদ্ধার অভিযানের প্রধান অস্ট্রেলিয়ার অ্যাঙ্গাস হিউস্টন বলেন, কর্তৃপক্ষ এখনও বিমানটি খুঁজে বের করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে কোন ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করতে আরও ৮ থেকে ১২ মাস লাগতে পারে। উদ্ধার অভিযান তৎপরতার পরবর্তী দিকনির্দেশনা নিরূপণ করতে আগামী সপ্তাহে ক্যানবেরাতে মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও চীনের কর্মকর্তাদের একটি বৈঠকে বসার কথা রয়েছে।

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি আঁখি জানে না মা নেই by সাওরাত হোসেন সোহেল

শিশু আঁখি মণি (৩) হাসছে, কাঁদছে, খেলছে। দাদা-দাদী ও বাবার কাছে বায়নাও ধরছে। মাঝে-মধ্যে মায়ের কথাও বলছে। কিন্তু সে এখনও জানে না তার মা সালমা এক বছর আগে সাভার ট্র্যাজেডির 'রানা প্লাজা'র তলে হারিয়ে গেছে। তার দাদী আমিনা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, কি আর কমু বাবা মাঝে-মধ্যে যখন বায়না ধরে আম্মু যাব তখন বুকের ভিতর স্যাদ করে ওঠে, কোথায় পামু তার আম্মুকে। তাই নানান বুঝ দিয়ে শান্ত করে রাখি। এখনও আঁখি বলছে তার আম্মু ঢাকা গেছে কাজ করে অনেক টাকা-পয়সা আর তার জন্য নতুন জামা, আপেল, বিস্কুট আরও অনেক জিনিস আনবে। কিন্তু অবুঝ শিশুটি জানে না যে, তার মা আর কোন দিন তার জন্য জামা নিয়ে আসবে না। সাভার ট্র্যাজেডির ঘটনায় নিখোঁজ সালমার (২২) বাড়ি উপজেলার মাছাবান্দা ন'আড়ীর ভিটা এলাকায়। তার বাবার নাম সোলায়মান। কয়েক বছর আগে একই উপজেলার বড় কুষ্টারী এলাকার আবু তালেব মেকারের ছেলে আতিকুরের বিয়ে হয় বিয়ের কিছু দিন পর তাদের কোল জুড়ে আসে মেয়ে সন্তান সালমা অনেক আগে থেকেই আতিকুর ঢাকায় এক গার্মেন্টে কাজ করতো। সন্তান জন্মের প্রায় দেড় বছর পর দাদীর কাছে মেয়েকে রেখে কাজের সন্ধানে স্বামীর সঙ্গে চলে যায় ঢাকায়। যোগদান করে রানা প্লাজা'র ৩য় তলায়। ঘটনার দিন বুধবার বেতন নিতে গিয়েছিল সালমা। গার্মেন্টে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ধসে পড়ে 'রানা প্লাজা' আর ফিরে আসেনি বেতন নিয়ে। ওই ভবন ধসের পর থেকে নিখোঁজ হয় সালমা।

আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে মানবাধিকার হুমকির মুখে পড়ে: মিজানুর রহমান

একটি রাষ্ট্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে সেই রাষ্ট্রের মানবাধিকার হুমকির মুখে পড়ে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। সম্প্রতি দেশে ঘটে যাওয়া অপহরণ ও হত্যাকাণ্ড এই অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির লক্ষণ বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক গোলটেবিল বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেন মিজানুর রহমান। এর আগে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকের প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মিজানুর রহমান বলেন, 'জাতীয় মানবাধিকার কমিশন একটি সুপারিশমূলক প্রতিষ্ঠান। তাই আমরা একটি আধাসরকারি পত্রের মাধ্যমে রাষ্ট্র এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি কিছু সুপারিশ করেছি। যেমন, কাউকে গ্রেপ্তার করতে হলে, যিনি গ্রেপ্তার করতে যাবেন তাঁকে অবশ্যই পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। কাউকে সাদা পোশাকে গ্রেপ্তার করা যাবে না এবং কাউকে গ্রেপ্তার করতে হলে অবশ্যই স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্য থেকে কমপক্ষে দুজনকে সাক্ষী রেখে গ্রেপ্তার করতে হবে।' তিনি জানান, এসব সুপারিশের মধ্যে দু-একটি কার্যকর হয়েছে। তবে এ বিষয়ে স্পষ্ট করেননি তিনি। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, প্রয়োজনে মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্র ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করা হবে এবং আদালতের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশাবলি প্রদান করা হবে।

র‌্যাবের বিরুদ্ধে অপহরণ-খুনের অভিযোগ তদন্তে কমিটি

নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে অপহরণ ও খুনের ঘটনায় র‌্যাব সদস্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। র‌্যাবের পক্ষ থেকে আজ সোমবার ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এটিএম হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, তদন্ত কমিটির সদস্য চারজন। র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আফতাফ আহমেদকে ওই তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে। গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালত থেকে লিংক রোড ধরে ঢাকায় যাওয়ার পথে অপহূত হন সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম এবং তাঁর চার সহযোগী। প্রায় একই সময়ে একই সড়ক থেকে গাড়িচালকসহ অপহূত হন আইনজীবী চন্দন সরকার। তিন দিন পর গত ৩০ এপ্রিল একে একে ছয়জনের এবং পরদিন ১ মে আরেকজনের লাশ পাওয়া যায় শীতলক্ষ্যা নদীতে। নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম গতকাল রোববার র‌্যাবের বিরুদ্ধে একটি গুরুতর অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, নজরুলকে র‌্যাব তুলে নিয়ে হত্যা করেছে। এর জন্য আরেক কাউন্সিলর নূর হোসেনসহ কয়েকজনের কাছ থেকে ছয় কোটি টাকা নিয়েছেন র‌্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা। নারায়ণগঞ্জের রাইফেল ক্লাবে গতকাল রোববার সাংবাদিকদের কাছে এই অভিযোগ করেন শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদ চেয়ারম্যান। এ সময় নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সাংসদ শামীম ওসমান সেখানে উপস্থিত ছিলেন। শহীদুল ইসলাম বলেন, 'কাউন্সিলর নূর হোসেন ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মিয়ার কাছ থেকে ছয় কোটি টাকা নিয়ে র‌্যাব আমার জামাতা নজরুলসহ সাতজনকে খুন করেছে। ২৭ এপ্রিল দুপুরে যখন নজরুলকে দুটি গাড়িতে করে অপহরণ করা হয়, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন আমাদের জানিয়েছেন, দুটি মাইক্রোবাসে করে ওদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।' আপনি কী করে নিশ্চিত হলেন যে তাঁরা র‌্যাবের সদস্য? উত্তরে তিনি বলেন, র‌্যাব-১১ লেখা একটি গাড়ি সকাল থেকেই সেখানে ছিল। শহীদুল বলেন, 'ঘটনার পরপরই আমরা বিষয়টি এমপি শামীম ওসমানকে জানাই। শামীম ওসমান আমাকে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে র‌্যাব-১১-এর সিও তারেক সাঈদের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। আমি সেখানে গেলে সিও আমাকে কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে নানা রকম জিজ্ঞাসাবাদ করেন।'
শহীদুলের ব্যবসায়ী ছেলে সাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, 'আমরা বিকেল পাঁচটা-সাড়ে পাঁচটা নাগাদ র‌্যাবে পৌঁছাই। কিন্তু আমাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়। রাত নয়টায় র‌্যাবের সিও আমাদের দেখা দেন। তিনি এ সময় আমাদের বলেন, শামীম ওসমানের সঙ্গে আপনাদের কি কোনো ঝামেলা আছে? আপনারা শামীম ওসমানের কাছে যান। এরপর আমরা রাতে শামীম ওসমানের সঙ্গে রাইফেল ক্লাবে দেখা করতে যাই। তিনি আমাদের সামনেই নানা জায়গায় ফোন করেন।' অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, কেউ অভিযোগ করলেই তা সত্য হয়ে যায় না। ঘটনাটি খুবই স্পর্শকাতর। এখনো তদন্ত চলছে। তদন্ত আগে শেষ হোক, তারপর সব জানা যাবে। এর আগে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না। এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ওই ঘটনার পর সেনাবাহিনীতে ফেরত যাওয়া র‌্যাবের সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মাহমুদ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পুলিশকে কেন ঘটনা জানালেন না? এ প্রশ্ন করা হলে গতকাল শহীদুল ইসলাম বলেন, 'অপহরণের ঘটনার পরদিন আমি র‌্যাব-১১-এর সিও, মেজর জাহাঙ্গীর, মেজর রানা এবং নূর হোসেন, ইয়াসিনসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করতে পুলিশ সুপারের কাছে যাই। কিন্তু পুলিশ সুপার আমাকে বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিলে মামলা হালকা হয়ে যাবে। এরপর তাঁরা ছয়জন আসামির নাম বাদ দিতে বললে আমরা সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা দিই।' মামলার এজাহার লেখার কাজটি করেছিলেন সাইদুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, 'এসপি ও ডিসি ফতুল্লা থানার ওসিকে মামলা নিতে বলে দেন। আমরা দুপুরে থানায় যাই। কিন্তু পুলিশ মামলা লিখতে লিখতে রাত ১০টা বাজিয়ে দেয়।' শহীদুল ও তাঁর ছেলে সাইদুল দুজনেই অভিযোগ করেন, মামলা হলেও পুলিশ কোথাও অভিযান চালায়নি। অভিযান চালালে অবশ্যই নজরুলকে জীবিত উদ্ধার করা যেত।
সাংসদ শামীম ওসমানের সামনেই নজরুলের শ্বশুর র‌্যাবের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেন। পরে একই স্থানে শামীম ওসমান বলেন, 'প্রশাসনের অনেকেই অপরাধের সঙ্গে জড়িত। আমি বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী এটা জানেন না।' তিনি বলেন, 'পুলিশের দারোগা যদি অপরাধ করে, আইজির ওপর তা বর্তায় না। সমস্ত বাহিনী সেই দায় বহন করে না। তাই আমি মনে করি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ যদি জড়িত হয়ে থাকে, তাহলে তা তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।' এরপর বিকেলে রাইফেল ক্লাব থেকে সিদ্ধিরগঞ্জে নজরুল স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় শামীম ওসমান বলেন, 'এই হত্যায় নূর হোসেন জড়িত। এর আগে ইকবাল এক কোটি টাকায় র‌্যাবকে দিয়ে নজরুলকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। আমি গিয়ে তাকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছি। কাজেই এ ঘটনায় ইকবালও জড়িত। মামলার অপর আসামি হাসু হলো বোবা ডাকাত। যাদের নামে মামলা হয়েছে, তারা সবাই জড়িত। তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করতে হবে।'
নারায়ণগঞ্জের আইনজীবীরাও এ ঘটনার সঙ্গে র‌্যাব জড়িত বলে দাবি করেছেন। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, নজরুলের সঙ্গে আইনজীবী চন্দনের কোনো দিন দেখাও হয়নি। কিন্তু সেদিন চন্দন সরকার হয়তো দেখে ফেলেছিলেন কারা নজরুলকে অপহরণ করেছে। আর এ কারণে তাঁকেও হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারী কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'চন্দন সরকার নিখোঁজ হওয়ার পর আমরা র‌্যাবের কার্যালয়ে গিয়ে তাঁর ব্যাপারে জানার চেষ্টা করি। কিন্তু র‌্যাব আমাদের ঢুকতেই দেয়নি। র‌্যাবই এ কাজ করেছে। জড়িতদের বদলি করলেই হবে না, খুনের অভিযোগে তাদের বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।'

শাপলা চত্বরে অভিযানের এক বছর- থিতিয়ে পড়েছে হেফাজত by সেলিম জাহিদ

দেশ কাঁপিয়ে উত্থান, ৫ মে ঢাকা অবরোধ, দিনব্যাপী সহিংসতা, শাপলা চত্বরে অবস্থান, গভীর রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ছত্রভঙ্গ। এরপর এক বছরের মাথায় থিতিয়ে পড়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। উপরন্তু, শীর্ষ নেতৃত্বের কারও কারও বিরুদ্ধে সরকারের কাছ থেকে বৈষয়িক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে এখন হেফাজতের অভ্যন্তরে ক্ষোভ-হতাশা ও সন্দেহ-অবিশ্বাস প্রকট হয়ে উঠেছে। সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের বেশির ভাগ নেতাই বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন, হেফাজতের শীর্ষ নেতৃত্ব সরকারের কবজায় চলে গেছেন। আওয়ামী লীগ, সরকার ও ছাত্রলীগকে হেফাজতের বন্ধু বলে গত ১১ এপ্রিল হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফীর বক্তৃতার পর এ বিশ্বাস আরও জোরালো হয়। এখন অবস্থা এমন পর্যায়ে গেছে যে গত বছরের ৫ মে 'ঢাকা অবরোধ' কর্মসূচিতে হতাহতদের স্মরণে এ দিনটিতে আজ কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো কর্মসূচি দিতে পারেনি হেফাজত।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ সৃষ্টির পর কথিত নাস্তিকদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে হঠাৎ জেগে ওঠে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক এই অরাজনৈতিক সংগঠনটি। ৬ এপ্রিল ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দেশ-বিদেশে হইচই ফেলে দিয়েছিল। এরপর ৫ মের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি তখন ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের চরম উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছিল। নানা বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে সারা দেশ থেকে মাদ্রাসার লাখ লাখ ছাত্র-শিক্ষক রাজধানী ঢাকার চারপাশের প্রবেশপথগুলো অবরোধ করেন। একপর্যায়ে তাঁরা মতিঝিলের শাপলা চত্বরে গিয়ে অবস্থান নেন। দিনভর রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে চলে সহিংসতা, সম্পদের ক্ষতি ও প্রাণহানী। এরপর মধ্যরাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে শাপলা চত্বর থেকে সরিয়ে দেয় হেফাজতকে। নিহতদের তালিকা প্রকাশ করেনি: সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ওই রাতের অভিযানে কোনো প্রাণহানি হয়নি। আর হেফাজতের আমির ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ফিরে ৭ মে এক বিবৃতিতে দাবি করেছিলেন, ওই অভিযানের সময় আড়াই থেকে তিন হাজার লোক মারা গেছেন।
পরে হেফাজতের নেতারা জানিয়েছিলেন, তাঁরা হতাহতদের তালিকা করছেন, সেটা যথাসময়ে প্রকাশ করা হবে। হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী গত বছরের ৪ জুন এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, প্রশাসনের চাপ ও হয়রানির কারণে তাঁরা ঠিকমতো তথ্য সংগ্রহ করতে পারছেন না। তখন পর্যন্ত ৭৩ জন নিহত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পেরেছিলেন বলে তিনি দাবি করেন। এগারো মাস পর গত শনিবার রাতে ওই তালিকা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে আজিজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, নিহত ও নিখোঁজদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এর সংখ্যা কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'শুনলে গা শিউরে উঠবে।' তালিকাটি চাইলে তিনি বলেন, এটি প্রকাশে এখনো হুজুরের (আমির আহমদ শফী) অনুমতি নেই। হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক নূর হোসাইন কাসেমী প্রথম আলোকে বলেন, 'কেন্দ্রীয়ভাবে দায়িত্বপ্রাপ্তরা শাপলা চত্বরে শাহাদাতবরণকারী ভাইদের সঠিক তালিকা সংগ্রহের কাজ অনেকটা গুছিয়ে এনেছেন। ইনশাল্লাহ কেন্দ্রীয়ভাবেই তা দেশবাসীর সামনে প্রকাশ করা হবে।'
সরকারি লোকদের যাতায়াত: শাপলা চত্বর থেকে হেফাজতকে সরিয়ে দেওয়ার পর জুন ও জুলাই মাসে পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মাঠপর্যায়ে সক্রিয় ছিল হেফাজত। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীর পরাজয়ের জন্য হেফাজত একটা কারণ হিসেবে আলোচনায় এসেছিল। ফলে হেফাজত আবার সরকারের শীর্ষ মহলের উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে ওঠে। অবশ্য ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনের আগেই হেফাজতকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় সরকার। সংগঠনের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় গিয়ে শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর পর থেকে হেফাজতের আন্দোলনমুখী তৎপরতা থিতিয়ে আসে। একই সঙ্গে হেফাজতের আমিরের কাছে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের যাতায়াত বাড়ে। এ সময় সরকারের কাছ থেকে বৈষয়িক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগও ওঠে। ফলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি অন্যদের সন্দেহ-অবিশ্বাস বাড়তে থাকে। এর মধ্যে গত ১০ এপ্রিল সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী, ২২ এপ্রিল চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, এর আগে ১৭ মার্চ একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুজন পদস্থ কর্মকর্তা হাটহাজারী মাদ্রাসায় গিয়ে হেফাজতের আমিরের সঙ্গে দেখা করেন। প্রায় সব বৈঠকেই আমিরের ছেলে আনাস মাদানী উপস্থিত ছিলেন।
কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানান, শুরুর দিকে হেফাজতের আমির সরকারের মন্ত্রী, সাংসদ, সরকারি কোনো সংস্থার লোকজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ দিতে রাজি হতেন না। একদম এড়াতে না পারলে জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের ডেকে আনতেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের কেউ দেখা করতে এলে ছেলে আনাস ছাড়া অন্য কাউকে রাখা হয় না। অবশ্য হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির নূর হোসাইন কাসেমী দাবি করেন, 'হেফাজতের ইমানি আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রশ্নবিদ্ধ করার দুরভিসন্ধি নিয়ে অনেকে সরকারের সঙ্গে আঁতাত কিংবা অর্থ-সহায়তা গ্রহণের কাল্পনিক ও ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার করছে।' বিবৃতিনির্ভর তৎপরতা: সংগঠনের নেতারা জানান, গত ডিসেম্বর মাসের আগ পর্যন্ত হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সারা দেশের নেতৃস্থানীয় পর্যায়ের অন্তত অর্ধশত আলেম উপস্থিত থাকতেন। বর্তমানে কেবল হাটহাজারী মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষকসহ বৈঠকে উপস্থিতির সংখ্যা ৮-১০ জনে নেমে এসেছে। এ অবস্থায় হেফাজত এখন অনেকটা 'বিবৃতিনির্ভর' সংগঠনে পরিণত হয়েছে। হিসাব কষে দেখা গেছে, গত এক বছরে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ৭৫টির মতো বিবৃতি বা বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। এমনকি বৈঠক না করেও শীর্ষস্থানীয় আলেমদের অংশগ্রহণে সভা হয়েছে দাবি করে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছে বলে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সর্বশেষ গত ৩০ এপ্রিল আহমদ শফীর সভাপতিত্বে হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজতের জরুরি সভা হয়েছে বলে সংগঠনের প্রচার সম্পাদক আনাস মাদানীর নামে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। তাতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে হেফাজতের আমির ও তাঁর ছেলে আনাসের আর্থিক ও সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানানো হয়। 'হেফাজতে ইসলাম সরকারের সাথে আঁতাত বা অর্থনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করেনি' শিরোনামে ওই বিজ্ঞপ্তিতে ২৩ জনের উপস্থিতির কথা উল্লেখ করা হয়। তাঁদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীসহ কয়েকজনের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা বলেন, এ ধরনের কোনো সভার কথা তাঁরা জানেন না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনাস মাদানী গতকাল প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীসহ ওই সভায় যাঁরা আসতে পারেননি, তাঁদের সম্মতি নিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে নাম দেওয়া হয়েছে।
কর্মসূচি নিয়ে দ্বিধাবিভক্তি: কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানান, ৫ মে শাপলা চত্বরে হতাহতদের স্মরণে আজ সোমবার সারা দেশে 'দোয়া' কর্মসূচি দেওয়ার প্রস্তাব আসে। এ নিয়ে ২৯ এপ্রিল সকালে হেফাজতের আমিরের সঙ্গে কথা বলেন মহাসচিব মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরীসহ ছয়জনের একটি প্রতিনিধিদল। কিন্তু আমির কর্মসূচি দিতে রাজি হননি। এই অবস্থায় সংগঠনের কিছু নেতা আল-আমানাহ ফাউন্ডেশনের নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে হাটহাজারীর পার্বতী হাইস্কুল মাঠে আজ সোমবার সমাবেশ ডেকেছেন। হেফাজতের ঢাকা মহানগর কমিটিতে বারিধারা ও লালবাগ মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দুটি ধারার সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীর বারিধারার জামিয়া মাদানিয়া মাদ্রাসার প্রধান নূর হোসাইন কাসেমী হেফাজতের মহানগর কমিটির আহ্বায়ক। তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামেরও জ্যেষ্ঠ নেতা। আর জুনাইদ আল হাবীব হেফাজতের মহানগর কমিটির সদস্যসচিব, তিনি সম্প্রতি ইসলামী ঐক্যজোট থেকে জমিয়তে যোগ দিয়েছেন। অন্যদিকে হেফাজতের কেন্দ্রীয় ও মহানগর কমিটির নেতাদের বড় অংশ ইসলামী ঐক্যজোটের, তাঁরা লালবাগ মাদ্রাসাকেন্দ্রিক।
উভয় পক্ষ আজ পৃথক কর্মসূচি দিয়েছে। এর মধ্যে বারিধারা মাদ্রাসায় হেফাজতের ব্যানারে আজ '৫ ও ৬ মে শাপলা চত্বরসহ সারা দেশে শাহাদাত বরণকারীদের' স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের কর্মসূচি দেয় একাংশ। আরেক অংশ খেলাফত আন্দোলনের ব্যানারে আজ কামরাঙ্গীরচর মাদ্রাসায় জমায়েত হয়ে শাপলা চত্বরের উদ্দেশে 'কালেমা ও জাতীয় পতাকা' মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছে। এ ছাড়া শাপলা চত্বরে 'শহীদদের' স্মরণে কাল মঙ্গলবার ইসলামী ঐক্যজোট ও খেলাফত মজলিসের দুই অংশসহ আরও কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল যৌথভাবে লালবাগ মাদ্রাসায় দোয়া ও আলোচনার আয়োজন করেছে।