Thursday, January 27, 2011

গণসংগীতের স্বরূপ-সন্ধান by যতীন সরকার

বাংলাদেশের গণসংগীত: বিষয় ও সুরবৈচিত্র্য তরুণ গবেষক সাইম রানার বইটির শীর্ষনামেই এর পরিচয় পরস্ফুিট হয়ে উঠেছে। এ দেশের মনন সাহিত্যে এই বাণীসাধকের অভ্যুদয়কে আমি সর্বান্তঃকরণে অভিনন্দন জানাই।

বইটির ‘মুখবন্ধ’র প্রথম অনুচ্ছেদেই তিনি লিখেছেন, “...অস্ত্রই একমাত্র প্রতিরোধের ভাষা হতে পারে না। যে-কোনো সৃজন, মনন, সাধন কিংবা তান্ত্রিক জ্ঞান দিয়েও প্রতিরোধ করা সম্ভব জগতের যত পঙ্কিলতা। তা গানে হোক, দেহভঙ্গিমায় কিংবা ইশারা-ইঙ্গিতে হোক, চিত্রে বা ফসলের আবাদে হোক—নিষ্পেষিত মানুষেরা যুগে যুগে, কালে কালে কখনোই ঠগেত বসে থাকেনি। প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের ব্যাপ্তি সংস্কৃতির ভিতর দিয়ে বিকশিত হয়েছে। বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন ‘চর্যাপদ’ কিংবা লোকগীতি ‘ভাওয়াইয়া’, লোকনাট্য ‘গম্ভীরা’, তেমনি একেকটি জনপদের অধিকারের ভাষা। গণসংগীতও বিংশ শতাব্দীর অভিনব এক শিল্পদর্শন, যা সাম্রাজ্যবাদ, ফ্যাসিবাদ শোষকের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধ জাগরণের প্রতিষ্ঠিত আঙ্গিক হিসেবে মূল্যায়নযোগ্য।”
অনেক প্রস্তুতি নিয়ে ও আটঘাট বেঁধেই যে বাংলাদেশের গণসংগীতের স্বরূপ-উদ্ঘাটনে তিনি ব্রতী হয়েছেন—বইটির পাঠ-সমাপনান্তে যেকোনো পাঠককেই তা স্বীকার করতে হবে। সাইম রানা শুধু কৃতী গবেষকই নন, একজন কুশলী সংগীতরচয়িতা ও সংগীতশিল্পীও। তিনি তো ‘এক যুগ ধরে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মঞ্চ, টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিওতে নিজের লেখা ও সুর করা গান নিয়মিত পরিবেশন করে আসছেন।’ এ কারণেই যথাযথ কাণ্ডজ্ঞান, তত্ত্বজ্ঞান ও রসজ্ঞানের সমন্বয়ে গণসংগীতের সংজ্ঞার্থ নির্ণয়, বিষয়ের স্বরূপ-সন্ধান ও সুরবৈচিত্র্যের বিশ্লেষণে তিনি সমান দক্ষতা প্রদর্শন করতে পেরেছেন।
সূচনালগ্ন থেকেই আমাদের দেশে গণসংগীত যে ‘বাংলা গানের বিভিন্ন শাখা-উপশাখা এবং বিদেশি সংগীতকে আশ্রয় করে বেড়ে উঠেছে’ সেসবের বিস্তৃত আলোচনা এ বইয়ে ঠাঁই পেয়েছে। বাংলা গণসংগীতের অনুপুঙ্খসমেত সব বিষয়কেই লেখক স্পর্শ করেছেন। স্বাধীনতা-পূর্বকাল থেকে শুরু করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী একাল পর্যন্ত রচিত ও গীত সব ধরনের গণসংগীতের প্রতি মনোযোগ দেওয়া মোটেই সহজ কাজ নয়। সাইম রানা সেই কঠিন কাজেই প্রবৃত্ত হয়েছেন এবং সিদ্ধিকে করতলগত করতে সক্ষম হয়েছেন।
তিনটি অধ্যায় ও পরিশিষ্টে সাতটি ক্রোড়পঞ্জীসংবলিত এই বইয়ের দ্বিতীয় ক্রোড়পঞ্জীতে নির্বাচিত নয়টি গানের আন্তর্জাতিক পদ্ধতিসম্মত স্বরলিপি সংযোজন করায় শিল্পী-গবেষক সাইম রানা অবশ্যই গণসংগীতশিল্পীদের কৃতজ্ঞতাভাজন হবেন।
বইয়ের উপসংহারে তিনি দাবি করেছেন, ‘এই গ্রন্থটি সংগীতবিষয়ক হলেও তার ক্ষেত্র মূলত তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে। রাজনৈতিক ইতিহাস, প্রগতিশীল আন্দোলনের ইতিহাস এবং সমাজতান্ত্রিক দর্শন। উপযুক্ত তিনটি বাহনের ওপর ভর করে বিশ্লেষিত হয়েছে বলে বিষয়বৈচিত্র্যের নান্দনিকতা বা সাহিত্যমূল্য ঐতিহাসিক ক্রমবিকাশের ওপর ভিত্তি করে দাঁড় করানো হয়েছে। অন্যান্য শিল্পমাধ্যমের সঙ্গে তুলনামূলক অবস্থানও প্রাসঙ্গিকভাবে উঠে এসেছে বিভিন্ন অঞ্চলে। এই গ্রন্থের সার্থকতা যেমন পূর্ববর্তী গবেষকদের গভীর অনুসন্ধান ও প্রেরণার ফসল...অপরদিকে লেখকের নিজস্ব ধরনে বিশ্লেষণের ভেতর দিয়ে উঠে এসেছে আরও নতুন নতুন ক্ষেত্রের ইঙ্গিত।’
লেখকের এই দাবির যথার্থতা সম্পর্কে সন্দেহ পোষণের কোনো অবকাশ নেই বটে, কিন্তু ভাষা ব্যবহারে সর্বত্র তিনি আড়ষ্টতা কাটিয়ে উঠতে পারেননি বলেই আমার মনে হয়েছে। এ ধরনের বইয়ের রচনারীতিতে আরও স্বচ্ছতা ও প্রাঞ্জলতা কাঙ্ক্ষিত।

আল-কায়েদাকে দৌড়ের ওপর রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র

ঙ্গিবাদবিরোধী যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, আফগানিস্তান থেকে আরব উপসাগর পর্যন্ত আল-কায়েদাকে দৌড়ের ওপর রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। ৯/১১-এর হামলার ঘটনার পর থেকে প্রায় এক দশকের মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি চাপের মুখে রয়েছে জঙ্গি সংগঠনটি।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটনে মার্কিন কংগ্রেসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ ভাষণে ওবামা এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি দলীয় মতভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান।
ওবামার ভাষণে দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের বিষয়টিই মূলত গুরুত্ব পায়। এ ছাড়া তিনি আল-কায়েদা ও জঙ্গিবাদের হুমকি, ইরাক ও আফগান পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য দেন। আল-কায়েদা তাঁর দেশের নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা হুমকি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ৯/১১-এর হামলার পর বর্তমানে পাকিস্তানের আল-কায়েদা নেতৃত্ব সবচেয়ে চাপের মুখে রয়েছে। প্রতিবেশী আফগানিস্তানে যুদ্ধরত মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী পাকিস্তানে আল-কায়েদার আস্তানা গুঁড়িয়ে দিচ্ছে।
ওবামা বলেন, ‘আল-কায়েদার নেতা ও কর্মীদের তাদের আস্তানা থেকে উৎখাত করা হচ্ছে। তাদের আশ্রয় ধীরে ধীরে কমে আসছে।’ তিনি বলেন, ‘আফগান সীমান্ত থেকে আরব উপসাগর হয়ে বিশ্বের জন্য আমাদের বার্তা হচ্ছে, আমরা দমে যাব না, কোনো ছাড়ও দেব না। জঙ্গিদের পরাজিত করবই।’
দ্বিধাবিভক্ত মার্কিন কংগ্রেসে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য অন্যান্য দলের প্রতি আহ্বান জানান ওবামা। বাজেট ঘাটতি এবং বাণিজ্যে ভারত ও চীনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের মোকাবিলায় সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা নেওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণ দিলেন ওবামা। রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসে দাঁড়িয়ে প্রেসিডেন্ট ওবামা নতুন করে ঐক্য ও সংহতির আহ্বান জানান। প্রথা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বছরের শুরুতে কংগ্রেসের যৌথ সভায় বক্তব্য দিয়ে থাকেন। এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে দেশ পরিচালনায় আগামী এক বছরের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ধারণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ওবামার এবারের ভাষণে দেশে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জরুরি সব তৎপরতার কথা উচ্চারিত হয়েছে। দেশে ব্যাপক কর্মহীনতা লাঘবে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা প্রেসিডেন্ট উচ্চারণ করেছেন তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই। শিক্ষা, গবেষণা, প্রযুক্তি এবং যোগাযোগ খাতে ব্যাপক বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি তিনি জাতীয় বাজেট ঘাটতি মোকাবিলার জন্য সরকারি ঐচ্ছিক ব্যয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ ঘোষণা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রকে এখনো পৃথিবীর সেরা সম্ভাবনার দেশ উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, ‘আমাদের জনশক্তি সবচেয়ে উৎপাদনশীল। পৃথিবীর সেরা সাফল্যের সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রে। সেরা সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তরাষ্ট্রে। সারা বিশ্ব থেকে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী প্রতিবছর উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে এসে থাকে।’ সময়ের পরিবর্তনকে ধারণ করে যুক্তরাষ্ট্রের এ শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার জন্য তিনি দেশবাসীর ঐক্য কামনা করেন।
প্রেসিডেন্ট বলেন, তাঁরা স্বাস্থ্য সংস্কার আইনের যেকোনো ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী। উল্লেখ্য, রিপাবলিকানরা ইতিমধ্যে ওবামার সর্বজনীন স্বাস্থ্যনীতি বাতিলের আইন প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, স্বাস্থ্যনীতি নিয়ে আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো অবকাশ নেই। তবে জনগণের জন্য মঙ্গলজনক যেকোনো প্রস্তাব তিনি গ্রহণ করতে প্রস্তুত।
যুক্তরাষ্ট্রের ভেঙে পড়া অভিবাসন আইনের সংস্কার নিয়ে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁর বক্তব্যে কোনো সরাসরি ঘোষণা দেননি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত কয়েক লাখ অবৈধ অভিবাসী এবং অভিবাসন আইনের সংস্কারের জন্য আইনপ্রণেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটছে না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন বলেছেন, দেশে কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটছে না। সন্ত্রাসীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর চড়াও হলে তারা আত্মরক্ষার্থে গুলি করতে বাধ্য হয়।

গতকাল বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন। খবর বাসসের।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীসহ দেশে কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এসব ঘটনার তদন্ত নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের হাতে নিরীহ বাংলাদেশি হত্যা রোধে আলোচনা হয়েছে। ভারতীয় সীমান্তে ফেনসিডিল তৈরির কারখানা বন্ধ করতে কাজ করছি।’
তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সন্ত্রাসীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করলে তখন বুঝি মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্ব সভায় উপস্থিত ছিলেন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্রসচিব আব্দুস সোবহান শিকদার, পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার, র‌্যাাবের ডিজি মোখলেসুর রহমান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ডিজি মেজর জেনারেল রফিকুল ইসলাম, যুগ্ম-সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা।

উপনির্বাচন-দুই আসনে আজ অগ্নিপরীক্ষা

দেশজুড়ে পৌর নির্বাচন নিয়ে ভোট উৎসবের আমেজের মধ্যেই আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে জাতীয় সংসদের দুটি আসনের উপনির্বাচন। হবিগঞ্জ-১ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের এ নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

গত ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য দেওয়ান ফরিদ গাজীর মৃত্যুতে হবিগঞ্জের এবং ২২ নভেম্বর লুৎফুল হাই সাচ্চুর মৃত্যুতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আসন শূন্য হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছে এ দুটি আসন রক্ষা করা মর্যাদার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মরিয়া চেষ্টা হচ্ছে নির্বাচনের ফল নিজেদের অনুকূলে এনে সরকারকে চাপের মুখে ঠেলে দেওয়া। পৌরসভা নির্বাচনে ভালো ফলাফলের উৎসাহ নিয়ে তারা উপনির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে।
হবিগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হচ্ছেন ডা. মুশফিক হুসেন চৌধুরী। চার দলের প্রার্থী হলেন বিএনপির নেতা ও লন্ডন প্রবাসী শেখ সুজাত মিয়া। জাতীয় পার্টির হয়ে নির্বাচনে লড়ছেন এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু। এ আসনের অন্য প্রার্থীরা হলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের অ্যাডভোকেট মনমোহন দেবনাথ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল মালেক চৌধুরী ও খেলাফত মজলিসের শাইখ আব্দুল কালাম।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। বিএনপির প্রার্থী হলেন ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল। এ আসনের বাকি তিন প্রার্থী হলেন জাতীয় পার্টির মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের মো. ইউনুস মিয়া ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নিয়াজুল করিম।
এদিকে উপনির্বাচনে শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনী মোতায়েনের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে দুই নির্বাচনী এলাকায় গতকাল বুধবার দুই কম্পানি (১২৫ থেকে ১৩০ জন করে) বিজিবি মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তার পরও নির্বাচন কমিশন গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্ষীণ একটা প্রত্যাশা ধরে রেখেছিল। এ বিষয়ে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পক্ষে বলা হয়েছে, ‘বারবার সেনা চেয়েও নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হওয়ায় আমাদের ধারণা, সরকার এ নির্বাচনে নির্বিঘেœ কারচুপি করতে চাইছে।’ তবে কমিশনের পক্ষে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী না থাকলেও বিকল্প যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তাতে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবেই নির্বাচন সম্পন্ন হবে।
গতকাল রাত ১০টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা এএসপি (সদর সার্কেল) সঞ্জয় সরকার, সদর থানার ওসি শাখাওয়াত হোসেন ও বিজয়নগর থানার ওসি দুলাল মাহমুদকে যাঁর যাঁর নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে নির্বাচন কমিশন অব্যাহতি দিয়েছে বলে জানা যায়।
নির্বাচন কমিশন ২৭ তারিখের এসব নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন এলাকার নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিজস্ব পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ করেছে। নির্বাচনী এলাকা দুটির প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে মোট ৩৫ জন পর্যবেক্ষক কাজ করছেন। এ ছাড়া নির্বাচনী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য কমিশন সচিবালয়ে একজন উপসচিবের নেতৃত্বে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি পর্যবেক্ষণ সেল গঠন করা হয়েছে।

হবিগঞ্জ : একদিকে প্রেস্টিজ, অন্যদিকে চ্যালেঞ্জ
হবিগঞ্জের নির্বাচনকে শাসক দল আওয়ামী লীগ নিয়েছে প্রেস্টিজ ইস্যু হিসেবে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দল এটিকে নিয়েছে চ্যালেঞ্জ হিসেবে। আর প্রধান দুই শক্তির বাইরে জাতীয় পার্টি বিষয়টিকে নিয়েছে তাদের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের পরীক্ষা হিসেবে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সব মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে এখন এ আসনের ফলাফল। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দলের জনপ্রিয়তা দেখতে নির্বাচন সামনে রেখে দুবার হবিগঞ্জ ঘুরে গেছেন।
বিগত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সিলেট অঞ্চলে দুর্গ গড়ে তুলেছিল। এর মধ্যে হবিগঞ্জের চার আসনের সব কটিতেই জয় সেই দুর্গকে করে তোলে আরো সুরক্ষিত। কিন্তু সাম্প্রতিক পৌর নির্বাচনের ফলাফলে সেই দুর্গে ফাটল ধরার ইঙ্গিত থাকায় উপনির্বাচনে আসনটি ধরে রাখতে সর্বাÍক চেষ্টাই চালিয়েছে আওয়ামী লীগ। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ওপর গ্রেনেড হামলার সেই নির্মম দিনে হচ্ছে আজকের এই নির্বাচন।
নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের ব্যাপারে প্রথম দিক থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ার বিষয়টিকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন চার দল ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী। গতকাল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ সারির নেতাদের উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ-পাল্টাঅভিযোগের তীর ছোড়াছুড়ি চলেছে। এ ছাড়া কালো টাকার বিতরণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে বলে ভোটারদের মধ্যে আশঙ্কা রয়েছে।
নির্বাচন হবে নবীগঞ্জ ও বাহুবলের ১৭৫টি কেন্দ্রে। এর মধ্যে স্থানীয় প্রশাসন ৯২টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করেছে। উপনির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো. এমরান মিয়া প্রস্তুতির বিষয়ে গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে জানান, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২৭ সশস্ত্র সদস্য মোতায়েন থাকবেন। এ ছাড়া থাকবেন ৩৬টি ভ্রাম্যমাণ আদালত। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার ও বাক্স পাঠানোর কাজ শেষ হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ নির্বাচনী এলাকায় এবার মোট ভোটার তিন লাখ এক হাজার ৪৪৭। এর মধ্যে নারী ভোটার এক লাখ ৫৬ হাজার ৬১৯, পুরুষ এক লাখ ৪৪ হাজার ৮২৮। নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব জনবল দিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে কমিশনের লোকজন মাঠে তৎপর রয়েছেন। প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার আছেন দুই হাজার ৮২৩ জন।
এদিকে গতকাল রাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকা ঘুরে সহিংসতার বড় কোনো আশঙ্কা দেখা যায়নি। ঘরে ঘরে গোপন বৈঠকে ভোট চাওয়াসহ বিভিন্ন কৌশলের কারণে প্রধান প্রার্থীদের কেউই নিজেদের বিজয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেননি। তবে চা বাগান এলাকার প্রায় ১৮ হাজার ও সংখ্যালঘুদের প্রায় ৫০ হাজার ভোট এ নির্বাচনের হিসাবে বড় ভূমিকা রাখবে। কয়েক দিন আগেও চা বাগান এলাকার ভোটাররা নাখোশ ছিলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ওপর। কেন্দ্রীয় নেতাদের তৎপরতায় সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। নবীগঞ্জবাসীর প্রধান দাবি, এলাকায় গ্যাস সরবরাহের ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থী ভোট টানার চেষ্টা করেছেন।
গতকাল মহাজোটের মনোনীত প্রার্থী ডা. মুশফিক হুসেন চৌধুরীর নির্বাচন পরিচালনার প্রধান সমন্বয়কারী মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ কালের কণ্ঠের কাছে অভিযোগ করেন, ‘চার দলের মনোনীত বিএনপির শেখ সুজাত বিভিন্ন গ্রামে সমর্থকদের দিয়ে অর্থ বিতরণ করছেন। এ অর্থ নির্বাচনের ফলকে প্রভাবিত করতে পারে।’ শেখ সুজাত বলেন, ‘আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এলাকায় এ অভিযোগ তোলা হচ্ছে।’
হবিগঞ্জ-১ আসনটি আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির জন্য অনুকূল হলেও চার দলের জন্য তা সব সময়ই ছিল প্রতিকূলে। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগ তিনবার ও জাতীয় পার্টি একবার জয়লাভ করে। ১৯৯৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত হ্যাটট্রিক বিজয়ী প্রার্থী ছিলেন প্রয়াত দেওয়ান ফরিদ গাজী।
সংবাদ সম্মেলন : গতকাল বিকেল ৩টায় হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর তিন রঙা ব্যানার ও পুলিশ নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা প্রচারণায় অংশ নিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। তাদের আরো অভিযোগ, মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন। এতে নির্বাচনে কারচুপির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিএনপি। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াছ আলী, সহসাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মন্জু ও শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগ হবিগঞ্জের দলীয় কার্যালয়ে গতকাল বিকেল ৪টায় সংবাদ সম্মেলনে তাদের প্রার্থীর বিরুদ্ধে আনা আচরণবিধি ভঙ্গসহ অন্যান্য অভিযোগ অস্বীকার করে। পাল্টা অভিযোগ করে বলা হয়, যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিএনপির ধনাঢ্য প্রার্থী শেখ সুজাত মিয়া বিগত নির্বাচনের মতো এবারও গ্রামে গ্রামে কালো টাকা ছড়াচ্ছেন। এটা সুষ্ঠু নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ্ উদ্দিন সিরাজ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির ও সাংগঠনিক সম্পাদক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খান উপস্থিত ছিলেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যত ভয় এজেন্টদের মনে!
বুধবার সারা দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদ চত্বর ছিল উৎসবমুখর। এখান থেকেই ব্যালট পেপার ও বাক্সসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম বিভিন্ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও এখান থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব বুঝে নিয়ে কেন্দ্রে যান।
আজকের নির্বাচন উপলক্ষে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর) আসনে মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ১০ হাজার ২৩৮। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৪৯ হাজার ৬০০ এবং মহিলা ভোটার এক লাখ ৬০ হাজার ৬৩৮ জন। মোট ১২৬টি ভোটকেন্দ্রের বুথসংখ্যা ৫৯১। ৬২টি ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও আনসারের নেতৃত্বে ২৭ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অস্ত্রধারী ১০ জন পুলিশ ও পাঁচজন আনসার এবং ১২ জন লাঠিধারী আনসার। এ ছাড়া ২০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও চারজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে দুই কম্পানি বিজিবি সদস্য এবং র‌্যাবের ১০টি মোবাইল টিম।
কাগজে-কলমে পাঁচ প্রার্থী থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চারজন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়া মনোনয়নপত্র দাখিল করেও পরে মহাজোট প্রার্থী মোকতাদির চৌধুরীর সমর্থনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মহাজোট প্রার্থী মোকতাদির চৌধুরী ও চারদলীয় জোটের প্রার্থী খালেদ হোসেন মাহবুবের মধ্যে।
গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক আ. হান্নান কালের কণ্ঠকে জানান, লিখিতভাবে অফিসিয়াল নির্দেশ না এলেও জেলা সদর সার্কেল এসএসপি, সদর থানার ওসি ও বিজয়নগর থানার ওসিকে তাঁদের নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে বিরত রাখার মৌখিক নির্দেশ এসেছে। একই ধরনের কথা জানান রিটার্নিং অফিসার এম আনোয়ার হোসেন।
এদিকে গতকাল নির্বাচনের শেষবেলার প্রস্তুতি হিসেবে দরজা বন্ধ করে একেক এলাকার এজেন্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মৌলভীপাড়া এলাকায় সকাল থেকেই জেলা বিএনপির সভাপতি হারুন আল রশিদের বাড়ির দোতলায় চলে এ বৈঠক। এক গ্র“প বেরিয়ে যেতেই ডাক পড়ে আরেক গ্র“পের। কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কারো মুখ হাসি-খুশি, কারো অন্ধকার।
অন্ধকার মুখ নিয়ে বেরিয়ে আসার কারণ জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন এজেন্ট বলেন, ‘দলের স্বার্থে প্রার্থীর এজেন্ট হইছি, কিন্তু আমরার নিরাপত্তার জন্য প্রার্থী কী করল, বুঝলাম না। মাইর খাইলেও কেন্দ্রে বইয়া থাকতে অইবÑএইডা কেমনে অয়?’
কেন্দ্রে তো পুলিশসহ প্রশাসনিক নিরাপত্তার সব ব্যবস্থা থাকবেই, তার পরও দল বা প্রার্থীর কাছ থেকে কী আশা করছেনÑজানতে চাইলে বিএনপি প্রার্থীর ওই এজেন্ট ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘পুলিশ কি আমরার নিরাপত্তা দিব? দিব তো সরকারি দলের লোকজনরে!’
ভয় আছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর এজেন্টদের মধ্যেও। বিএনপি প্রার্থীর এজেন্ট বা কর্মীরা কিছু কিছু কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের এজেন্টদের ওপর চড়াও হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। তিনি গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগের প্রতিটি ভোটেই দেখেছি, অনেক কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্ট ও কর্মীরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর এজেন্টদের মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে নিজেরা ব্যালটে সিল মেরেছে। এসব অভিজ্ঞতার কারণেই আমরা এবার আমাদের দৃষ্টিতে ২৬টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে প্রশাসনকে অবহিত করেছি।’
বিএনপির এজেন্টদের ভয়ের কথা জানান জেলা বিএনপির সভাপতি হারুন আল রশিদ। সন্ধ্যায় তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা যেকোনো সময় সরকারি দলের প্রার্থীর পক্ষ থেকে যেকোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা করছি, আর এজেন্টদের মনে সাহস জোগানোর চেষ্টা করছি, যাতে তারা সব ধরনের ভয়ভীতি উপেক্ষা করে কেন্দ্রের ভেতরে অবস্থান করতে পারে।’ বিএনপির প্রার্থীর বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও এজেন্টদের নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে তিনি সময় দিতে পারেননি।
এদিকে রাত ৯টায় বিএনপি প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন, বিভিন্ন এলাকায় তাঁর কর্মী ও এজেন্টদের ভয়ভীতি ও মারধর করছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
আজকের ভোটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের ১২৬টি কেন্দ্রে ৫৯১টি বুথের প্রতিটিতে প্রত্যেক প্রার্থীর পক্ষে একজন করে এজেন্ট থাকার কথা। সে অনুযায়ী চার প্রার্থীর পক্ষে এজেন্টসংখ্যা হবে দুই হাজার ৩৬৪ জন। তবে এর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর পক্ষের এজেন্টদের নিয়েই যত সংশয়, বিশেষ করে বিএনপির এজেন্টরা আশঙ্কা করছেন, কেন্দ্রে কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর এজেন্টরা তাঁদের ওপর যেকোনো সময় চড়াও হতে পারে। একই আশঙ্কা আওয়ামী লীগের এজেন্টদেরও।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের উপনির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার আনোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কেন্দ্র ও কেন্দ্রের বাইরের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। আশা করি, কোনো সমস্যা হবে না। প্রিসাইডিং অফিসার বা এজেন্টদেরও ভয়-সংশয়ের কিছু নেই। নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের সরাসরি পর্যবেক্ষক উপস্থিত থাকবেন।’ বিএনপির অভিযোগ সম্পর্কে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি, এগুলো দেখা হচ্ছে।’