Monday, January 03, 2011

চিনির বাজার অস্থির তবু টিসিবির হেঁয়ালি by ফারজানা লাবনী

দেশে চিনির বাজার প্রায় তিন মাস ধরে অস্থির হয়ে আছে। দাম বাড়ছে তো বাড়ছেই। তিন মাস আগেও খুচরা বাজারে যে চিনি ৪৫ থেকে ৪৭ টাকা কেজি ছিল, এখন তা ৫৭ থেকে ৬০ টাকা। এ অস্থিরতা কাটাতে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির ব্যবস্থা থাকলেও সমাধান নেই। সত্যিকারের উদ্যোগের বদলে তাদের আছে হেঁয়ালিপনা। ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে চিনি আমদানি করে, প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা থাকলেও টিসিবি উš§ুক্ত পদ্ধতির দরপত্রে এমন দাম বেঁধে দিয়েছে যে, আমদানিকারকরা আর বিদেশ থেকে চিনি আনতে পারছেন না,
কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম অনেক বেশি। টিসিবির দামের সঙ্গে তার কোনো সামঞ্জস্য নেই। এতে করে ক্ষতি হচ্ছে কয়েক ধরনের-দেশে চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকছে না; ক্রেতারা ক্ষুব্ধ হচ্ছে সরকারের ওপর; আমদানিকারকরা জামানতের মোটা অঙ্কের টাকা হারাচ্ছেন, কেউ কেউ আবার এলসি খুলেও চিনি আনতে না পেরে বিপদগ্রস্ত হচ্ছেন। আর এসব সংকট সৃষ্টি হচ্ছে টিসিবির খামখেয়ালি নীতির কারণেই-এ অভিযোগ আমদানিকারকসহ সংশ্লিষ্ট মহলের।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বাজারে সরবরাহে ঘাটতি থাকায় চিনির দাম বাড়ছে। তাই সরকারি পর্যায়ে সাদা (পরিশোধিত) চিনি আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং একে শুল্কমুক্তও করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিনেও সে পদক্ষেপ কার্যকর হয়নি। কত দিনে আমদানির চিনি স্থানীয় বাজারে পাওয়া যাবে, তারও সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ জানাতে পারেননি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
টিসিবির সঙ্গে আমদানি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী মোট ব্যয়ের পাঁচ শতাংশ টাকা পারফরম্যান্স সিকিউরিটি বা জামানত বাবদ সরকারি খাতে জমা রাখতে হয়। বেঁধে দেওয়া সময়ে চিনি সরবরাহে ব্যর্থ হলে জমা দেওয়া অর্থ টিসিবি থেকে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ফেরত দেওয়া হয় না।
সূত্র জানায়, গত বুধবার পর্যন্ত টিসিবি থেকে ২৭টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিটিকে সাড়ে ১২ হাজার টন করে সাদা চিনি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে টিসিবির সঙ্গে সব শর্ত পূরণ করে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে সাতটি প্রতিষ্ঠান। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নাকোফ ও তানিয়া জামান ফুড প্রডাক্ট প্রতি টন চিনি ৫০০ ডলার হিসাবে, ইউনান দেহান কোং ও জাগো করপোরেশন প্রতি টন ৪৫৯ দশমিক ৫ ডলার, আল আমিন ট্রেডার্স ৪৯৫ ডলার, নাবিলা ৪৭৫ ডলার এবং ফাইন টেক ইন্টারন্যাশনাল ৫১০ ডলার হিসাবে চিনি সরবরাহে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। উš§ুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে টিসিবিই চূড়ান্ত দর ঠিক করে দেয়, সে দরেই চুক্তি হয়। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে অসংগতি দেখেও শুধু ব্যবসা ধরে রাখার জন্যই ব্যবসায়ীরা চুক্তিবদ্ধ হন।
কিন্তু আমদানিকারকরা বলছেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন চিনির দাম ৭২০ থেকে ৮০০ ডলারের মধ্যে। অন্যান্য খরচ যোগ হলে টিসিবির সঙ্গে চুক্তি হওয়া মূল্যের চেয়ে তা অনেক বেশি হয়ে যায়। তাতে বিপুল পরিমাণ টাকা লোকসান হয়। একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, বেশ কিছু দিন থেকে চিনি আমদানির চেষ্টা করছি, কিন্তু লোকসানে চিনি আনা সম্ভব হয়ে উঠছে না। নতুন করে আলোচনার মাধ্যমে চিনির আমদানি মূল্য না বাড়িয়ে টিসিবি জামানতের টাকা আটকে রাখছে। এ টাকা টিসিবি বাজেয়াপ্ত করেছে বলে তিনি জানান।
টিসিবির আমদানি শাখার ঊর্ধ্বতন কার্যনির্বাহী বজলুর রশিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উš§ুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে চিনির আমদানি মূল্য নির্ধারণ করা হয়। ইচ্ছুক প্রতিষ্ঠান আমাদের প্রস্তাবে সম্মত হয় বলেই তারা অনুমোদন পায়। চুক্তিবদ্ধ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে চিনি সরবরাহে একাধিকবার সময় বাড়ানো হয়েছে। পরে কেউ চিনি সরবরাহে ব্যর্থ হলে তার দায়ভার টিসিবির নয়।’ তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী টিসিবির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান পণ্য সরবরাহে ব্যর্থ হলে পারফরম্যান্স সিকিউরিটির টাকা সরকারি তহবিলে চলে যায়।
জাগো করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে টিসিবি দাম বেঁধে দিলে আমাদের পক্ষে চিনি সরবরাহ করা সম্ভব হবে।’
গত বছর চুক্তি বাতিলের পর প্রসেসিভ ইন্টারন্যাশনাল এবং এসএস ইন্টারন্যাশনালের জামানতের টাকা টিসিবির কাছে রয়েছে। তারা আদালতের আশ্রয় নিয়েও কোনো ফল পায়নি। চলতি বছর চুক্তি হওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে টিসিবি থেকে জাগো করপোরেশনের জামানত বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে।
আল আমিন ট্রেডার্সের বাংলাদেশ শাখার প্রধান রতি লাল দেবনাথ কালের কণ্ঠকে বলেন, এসব সমস্যার সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী হুমকি দিচ্ছেন যাতে চিনি সরবরাহ করতে না পারি। তিনি বলেন, ‘ব্যবসা এক দিনের নয়। লোকসান দিয়েই চিনি আনার প্রস্তুতি নিয়েছি। কাউকে সুবিধা দিতে ব্যবসা বন্ধ করব না।’ তবে সাদা চিনি আমদানি করতে পর্যাপ্ত সুবিধার দাবি জানান তিনি।
টিসিবির অনুমোদন পেয়ে চিনি আমদানির উদ্দেশ্যে ব্রাজিলের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা এক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কালের কণ্ঠকে জানান, এলসি খোলা হয়েছে। ব্যাংকের মাধ্যমে বড় অঙ্কের টাকাও বিদেশি প্রতিষ্ঠানটিকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা এখন কম দামে চিনি দিতে রাজি নয়। এতে তিনি চরম হতাশ ও বিপদগ্রস্ত বলে জানান।
সম্প্রতি সাদা চিনি আমদানি উৎসাহিত করতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ বি এম খোরশেদ আলম। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অপরিশোধিত চিনি আমদানিকারকদের একতরফা বাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা খর্ব করতেই সাদা চিনির ওপর থেকে আমদানি শুল্ক সাময়িক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
ওদিকে চিনির বাজার স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) থেকে ৫০ হাজার টন চিনি আমদানির প্রস্তুতি নেওয়া হয়। বিএসএফআইসি সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ৫০ হাজার টন চিনি আমদানির জন্য দুটি প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হয়। ২৫ হাজার টন করে প্রথম পর্যায়ে এশিয়া কমোডিটি লিমিটেড এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে রিয়া ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের মাধ্যমে চিনি আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় বিএসএফআইসি। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বাড়ায় দরপত্রের নির্ধারিত দামে আমদানি করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেয় এশিয়া কমোডিটি। ফলে প্রথম পর্যায়ে ২৫ হাজার টন চিনি আমদানির চুক্তি বাতিল হয়ে যায়। তখন রিয়া ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্যায়ের ২৫ হাজার টন চিনি আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রায় সাড়ে তিন মাস দেরিতে গত মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের আমদানি করা চিনি।
দেশে চিনির বাজার আমদানির ওপর নির্ভরশীল। চাহিদার সামান্যই রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো থেকে সরবরাহ করা হয়। শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর রাষ্ট্রায়ত্ত ১৫টি চিনিকলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ১৮ হাজার টন। অথচ সারা দেশে চিনির বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১৪ লাখ টন। চলতি মৌসুমে রাষ্ট্রায়ত্ত ১৫টি চিনিকলে গত বুধবার পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে ৩১ হাজার টন। চিনির মৌসুম ধরা হয় অক্টোবর থেকে মে মাস পর্যন্ত।
শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়–য়া কালের কণ্ঠকে বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো থেকে চাহিদ অনুযায়ী চিনি সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। পর্যাপ্ত উৎপাদন না হওয়ায় সম্পূর্ণভাবে বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে কিছু ব্যবসায়ী নিজেদের লাভের বিষয়ে এত বেশি মগ্ন যে, তাঁরা ভোক্তাদের বিষয়টি চিন্তাই করতে চান না। তবে চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে বলে মন্ত্রী জানান।
কিন্তু বাজারে চিনির দাম বেড়েই চলেছে। গত রমজানের শুরু থেকে ঈদের আগে পর্যন্ত ঢাকার খুচরা বাজারে চিনির দাম ছিল ৪৫ থেকে ৪৭ টাকা কেজি। ঈদের পর দাম বাড়তে শুরু করে। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে চিনি কেজিপ্রতি ৫৪ থেকে ৫৭ টাকা হয়। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে চিনি বিক্রি হয় ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা কেজি দরে। আর গত মাসের শেষ সপ্তাহে এ দর বেড়ে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। গতকাল মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি চিনি খুচরা বাজারে ৬০ টাকাই রয়েছে।

দাম বেড়েছে চাল আটা তেল পেঁয়াজের by রাজীব আহমেদ

রাজধানীর বাজারে চাল, আটা, ভোজ্য তেল, চিনি, পেঁয়াজÑএই পাঁচটি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। পরিবারের বাজার খরচের বড় অংশটি ব্যয় হয় এই পণ্যগুলোর পেছনে। এসব পণ্যের দাম কেজি/লিটারপ্রতি তিন থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে নিু ও মধ্য-আয়ের পরিবারগুলো।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তালিকায় চাল, আটা, ভোজ্য তেল, চিনি ও পেঁয়াজকে অতি নিত্যপ্রয়োজনীয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাজারে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত এক মাসে সব ধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি তিন থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আটার দাম বেড়েছে তিন থেকে চার টাকা, ভোজ্য তেলের দাম লিটারপ্রতি চার টাকা, চিনি কেজিপ্রতি তিন থেকে পাঁচ টাকা এবং পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১৫ টাকা বেড়েছে।
বাজারে মোটা চালের দাম রাখা হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩৫-৩৬ টাকা। মাঝারি মানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৭-৪১ টাকা দরে। এ ছাড়া ভালো মানের সরু চালের দাম চাওয়া হচ্ছে ৪৪-৫২ টাকা। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারের লাকসাম ট্রেডার্সে প্রতি কেজি ভালো মানের নাজিরশাইল চালের দাম চাওয়া হয়েছে ৫০-৫২ টাকা। মিনিকেট চালের দাম চাওয়া হয়েছে ৪৬ টাকা। ভালো মানের বাছাইকৃত পারিজাত ও বিআর-২৮ জাতের চালের দাম চাওয়া হয়েছে কেজিপ্রতি ৪০-৪২ টাকা। মোটা চাল সব দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না।
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের চাল ব্যবসায়ী কালিদাস গতকাল কালের কণ্ঠকে জানান, পাইকারি বাজারে মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ৩২ টাকার বেশি। সাধারণ মানের পাইজাম ও পারিজাত চাল পাইকারি সাড়ে ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা। মিনিকেট পাইকারি সাড়ে ৪৪ ও নাজিরশাইল ৪১ থেকে ৪৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
চালের দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে কালিদাস বলেন, কৃষক ধান বিক্রি করছেন না বলে দাম অনেক বেড়ে গেছে। মোটা ধানও বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ৮০০ টাকার বেশি। এ কারণেই চালের দাম বেশি।
টিসিবির হিসাবে এক মাস আগে প্রতি কেজি খোলা আটার দাম ছিল ২৯ টাকা। বর্তমানে তা ৩৩ টাকা, এক মাসে যা বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। কম্পানিগুলো তাদের আটার দাম কেজিপ্রতি দুই টাকা বাড়িয়েছে। রাজধানীর অলিগলির খুচরা দোকানে বিভিন্ন কম্পানির আটার প্রতি দুই কেজির প্যাকেট সর্বোচ্চ ৭৩ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। পূর্ব তেজতুরি বাজারের সাইদ অ্যান্ড ব্রাদার্স স্টোরে তীর ব্র্যান্ডের আটার দুই কেজির প্যাকেট গতকাল বিক্রি হয়েছে ৭২ টাকায়। বিক্রেতা জানান, এক সপ্তাহ আগে এটা ছিল ৬৬ টাকা। এ ছাড়া পুষ্টি, ফ্রেশ, ইফাদ ব্র্যান্ডের আটার দুই কেজির প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৯-৭২ টাকা দরে।
সম্প্রতি সরকার ভোজ্য তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সংগতি রেখে ১৫ দিন পরপর নির্ধারণ করার উদ্যোগ নেয়। ফলে চলতি মাসে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ে চার টাকা। গত ৫ ডিসেম্বর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে ঢাকায় খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার সয়াবিনের সর্বোচ্চ দাম ৮৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর ২২ ডিসেম্বর চার টাকা বাড়িয়ে ঢাকায় প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৯০ টাকা ও চট্টগ্রামে ৮৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ওই দিন পাইকারি পর্যায়ে ঢাকায় মিলগেটে সয়াবিন ৮৮ টাকা ও চট্টগ্রামে ৮৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এক ও দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রে খোলা ভোজ্য তেলের দামের চেয়ে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ বাড়ানোর সুযোগ পাবেন ব্যবসায়ীরা। ফলে এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিনের সর্বোচ্চ দাম পড়বে ১০১ টাকা ২০ পয়সা। আর পাঁচ লিটারের বোতলজাত তেলের ক্ষেত্রে বোতলের দাম সংযুক্ত হবে। রাজধানীর বাজারগুলোতে বর্তমানে রূপচাঁদা, তীর, ফ্রেশ, মুসকান, পুষ্টিসহ প্রায় সব কম্পানির পাঁচ লিটারের বোতল ৫০৫-৫১০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। গতকাল কারওয়ান বাজার, পলাশীতে বুয়েটের অস্থায়ী বাজার ও হাতিরপুল বাজার ঘুরে তেলের একই দাম দেখা গেছে। তবে কারওয়ান বাজারে বোতলপ্রতি আরো পাঁচ টাকা কম রাখছেন বিক্রেতারা।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হয় ৫৬-৫৮ টাকা দরে। পলাশী বাজারে তা ৬০ টাকা দাম চেয়েছেন বিক্রেতারা। টিসিবির হিসাবে দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি দুই টাকা।
পেঁয়াজের দাম নিয়ে গেল মাসে তুঘলকি কারবার ঘটেছে। ভারত রপ্তানি বন্ধ করায় মাসের মাঝামাঝিতে দেশীয় পুরনো পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৭০ টাকায় উঠে যায়। আর নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৫৫-৬০ টাকা দরে। পরে তা কমে ৪০ টাকায় নামে। আবার গত সপ্তাহে তা বেড়ে দেশীয় নতুন পেঁয়াজ এখন ৪৫-৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে এক মাস শেষে পেঁয়াজের দাম আগের মাসের চেয়ে ১৫ টাকা বেশি। আগের মাসে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
এক মাসে পাঁচটি অতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি সম্পর্কে জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারে বাজার করতে আসা তেজতুরি বাজারের গার্ডেন রোডের বাসিন্দা লিয়াকত হোসেন সিকদার বলেন, আদার দাম ১০ টাকা বাড়লেও তেমন প্রভাব পড়ে না। কিন্তু চালের দাম এক টাকা বাড়লে মানুষের অনেক ক্ষতি হয়। তিনি বলেন, এক মাসে পাঁচটি পণ্যের দাম বেড়েছে। এ পণ্যগুলোই পরিবারের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

আবাসন প্রতিষ্ঠানকে ৩ কোটি টাকা জরিমানা

পাহাড় কেটে আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলায় কক্সবাজারে একটি সমবায় সমিতিকে প্রায় তিন কোটি টাকা জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। নির্মাণাধীন প্রকল্পের জন্য পাহাড় কাটা ও পরিবেশের ক্ষতিসাধনমূলক সব তৎপরতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পরিবেশ আইন লঙ্ঘনকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) অনুযায়ী মামলা দায়ের করতে কক্সবাজার জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

রোববার অধিদপ্তরের পরিচালক (মনিটরিং ও এনফোর্সমেন্ট) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী শহরতলীর উত্তরণ গৃহায়ন সমবায় সমিতির এ প্রকল্পে অভিযান চালান।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলামকে দুই কোটি ৮৮ লাখ টাকার এ জরিমানা করা হয়। এছাড়া প্রায় ১৫ হাজার ইট, দেড় টন লোহার রড, মাটি বহনকারী ১৬টি ঠেলাগাড়ি ও সাড়ে ১০ টন সিমেন্ট জব্দ করা হয়। সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলা অভিযানে পুলিশ সহায়তা করে বলে অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জানান।

সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয়ে এ জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে হবে। মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, কক্সবাজারের সব আবাসন প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এলাকাজুড়ে পাহাড় কেটে প্রকল্প করেছে উত্তরণ গৃহায়ন সমবায় সমিতি। প্রায় সাড়ে সাতশ' একর জমিতে এ আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৯৬ একর এলাকায় পাহাড় কাটা হয়েছে।

মুনীর চৌধুরী আরো বলেন, প্রায় ৮০ ফুট উচ্চতার বেশ কয়েকটি পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি, পাহাড়ের ঢালু জমি ভরাট ও বিপুল সংখ্যক গাছপালা কেটে প্রকল্পের স্টেডিয়াম, অডিটোরিয়াম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ঈদগাহ ময়দান, পার্ক ও খেলার মাঠ করা হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এলাকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মুনীর চৌধুরী জানান।

তিনি জানান, এরইমধ্যে অবৈধভাবে পাহাড় কাটার ফলে প্রায় ১০০ একর পাহাড়ি এলাকার জীববৈচিত্র ধ্বংস, গাছপালা নষ্ট, ভূমিক্ষয়, টপ সয়েল বিনষ্ট, ফসলহানি ও ভূ-তাত্ত্বিক গঠনের ক্ষতি হয়েছে। অভিযানকালে প্রকল্পের কোনো শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে পাওয়া যায়নি। পরিবেশ আইন লঙ্ঘনের দায়ে টাকার অঙ্কে এটিই এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় অর্থদণ্ড বলে মুনীর চৌধুরী জানান।

উত্তরণ গৃহায়ন সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, উত্তরণ অনেকদিনের পুরনো সমিতি। সমিতিই তাদের আবাসন প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ করছে। এখানে ব্যক্তিগতভাবে সম্পাদককে জরিমানা করার সুযোগ নেই। প্রকল্পের জন্য পাহাড় কাটার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন।

তিনি আরো বলেন, তাকে জরিমানা করা হয়েছে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) অনুযায়ী। কিন্তু তাদের অনেক কাজ করা হয়েছে ১৯৯৫ এর আগে। সেক্ষেত্রে এ আইন প্রযোজ্য নয়। এ ব্যাপারে তারা সোমবার আদালতে যাবেন বলে জানান। কক্সবাজারের পরিবেশ কর্মকর্তা হাসিবুর রহমান বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জরিমানার টাকা পরিশোধ না করলে অধিদপ্তর আইনগত ব্যবস্থা নেবে।

স্থানীয় অধিবাসীদের অভিযোগ, প্রকল্পের লোকজন বিভিন্ন সময় প্রভাব খাটিয়ে সাধারণ মানুষকে উচ্ছেদ ও সরকারি বনভূমি দখল করে আবাসন প্রকল্পের কাজ করেছে। এলাকার আবদুর রহিম ও মাহফুজুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যেই প্রকল্পের ছয় শতাধিক প্লট তৈরি ও বিক্রি সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের প্লট ক্রেতা কিংবা সদস্য তালিকায় আছেন মন্ত্রী, সচিবসহ উচ্চপদস্থ বহু কর্মকর্তা বলে তারা জানান।

কোটি টাকা মূল্যের নকল বই উদ্ধার

বৈধভাবে বই ছাপিয়ে বাজারে বিক্রির অভিযোগে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান থেকে প্রায় কোটি টাকার বই জব্দ করেছে কপিরাইট টাস্কফোর্স। আজ রোববার বিকেলে এই অভিযান চালানো হয়। বই নকল করার অভিযোগে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের এক শিক্ষকসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ঢাকা উদ্যানে চারটি কক্ষে এসব বই মজুদ করে রাখা হয়েছিল। ব্রাদার্স পাবলিকেশনস নামের একটি প্রকাশনা সংস্থা ওই ঘরগুলো গুদাম হিসেবে ব্যবহার করত। ৯৯ ধরনের এসব ইংরেজি বইয়ের মধ্যে বেশির ভাগই বাণিজ্য ও প্রকৌশল শাখার। এগুলো আমেরিকার পিয়ারসনস পাবলিকেশনস ও ভারতের এস চান অ্যান্ড কোম্পানির বইগুলোর হুবহু নকল। পিয়ারসনস পাবলিকেশনসের বাংলাদেশের স্থানীয় পরিবেশক পরমা পাবলিশার্স এবং এস চান অ্যান্ড কোম্পানির পরিবেশক সিএস পাবলিকেশনস অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউটর। কোনো রকম অনুমতি ছাড়াই ব্রাদার্স এসব বই ছেপেছিল।
কপিরাইট পরীক্ষক দেলোয়ার জামিল এ ঘটনায় পাঁচজনকে আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। মামলার প্রধান আসামি ব্রাদার্স পাবলিকেশনসের চেয়ারম্যান ও রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষক মো. নুরুন্নবী। অন্য আসামিরা হলেন জহির, বিপ্লব সরকার, মো. ইয়াসির ও জামাল মিয়া।
কপিরাইট কর্মকর্তারা জানান, মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ ও কপিরাইট পাইরেসি প্রতিরোধকল্পে পুনর্গঠিত টাস্কফোর্স এই অভিযান চালিয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা ঢাকা উদ্যানের ৪ নম্বর সড়কের ১৩ নম্বর টিনশেড বাড়িতে অভিযান চালায়। এই বাড়ির চারটি কক্ষেই বইগুলো রাখা হয়েছিল।
মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. এনামুল জানান, থানায় নমুনা হিসেবে কিছু বই দিয়ে গেছে টাস্কফোর্স। বাকি বইসহ গুদাম সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।

দুদকের মামলায় হাজি সেলিমের সাজা বাতিল

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ হাজি সেলিমের সাজার রায় বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। আজ রোববার বিচারপতি এম এ হাই ও বিচারপতি মো. আবদুর রাজ্জাকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ সেলিমের আপিল মঞ্জুর করে এ রায় দেন।

আদালতে হাজি সেলিমের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার, সাঈদ আহমেদ ও দুদকের পক্ষে এম এ আজিজ খান মামলা পরিচালনা করেন। সাঈদ আহমেদ প্রথম আলোকে জানান, আদালত সাজার রায় বাতিল ঘোষণা করেছেন।
জানা যায়, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে দুদক হাজি সেলিমের বিরুদ্ধে মামলা করে। ওই মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল বিশেষ জজ আদালতের রায়ে তাঁকে ১৩ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এর বিরুদ্ধে সেলিম হাইকোর্টে আপিল করেন। শুনানি শেষে আপিল মঞ্জুর করে রায় দেন আদালত।