Monday, May 07, 2012

বসতবাড়ি হারানোর আশঙ্কায় মাতামুহুরী তীরের বাসিন্দারা

মাতামুহুরী নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর ও কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ৪২ গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ।
আগামী জুন মাসের আগে (বর্ষার আগে) নদীর প্রায় ১০ কিলোমিটার তীরে প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ না হলে পাহাড়ি ঢলের পানিতে ওই দুই ইউনিয়নের কয়েক হাজার বসতবাড়ি তলিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাশাপাশি লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের জালিয়াপাড়ার এক লাখ ৩২ হাজার কেভির বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের একটি টাওয়ার (বড় খুঁটি) নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে টাওয়ারের নিচের অর্ধেক অংশের মাটি সরে গেছে। বাকি অংশের মাটি সরে গেলে টাওয়ারটি যেকোনো মুহূর্তে নদীতে ধসে পড়ে কক্সবাজার পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামছুল আলম জানান, নদীর তীরে বিদ্যুতের খুঁটির কিছু অংশ বিলীন হলেও এটি শক্তভাবে (পাইলিং করে) স্থাপন করা হয়েছে। এতে নদীর স্রোত বা পাহাড়ি ঢলের পানিতে খুঁটিটি সহজে ধসে পড়বে না। তার পরও এ ব্যাপারে নজরদারি রাখা হচ্ছে।
লক্ষ্যারচর গ্রামের বাসিন্দা ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জানান, নদীর করালগ্রাসে পড়ে লক্ষ্যারচর ও কৈয়ারবিল ইউনিয়নে চলাচলের একমাত্র খতিবে আজম সড়কটি মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। বর্ষার আগে স্থায়ী বাঁধ দিয়ে সংরক্ষণ করা না গেলে কয়েক শ বসতঘর, স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা তলিয়ে যাবে।
চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম জানান, পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের স্রোতে (পানিতে) গত পাঁচ বছরে এই দুই ইউনিয়নের দেড় হাজার একরের মতো ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভেঙে গেছে কয়েক শ বসতবাড়ি। বর্তমানে মাতামুহুরী ব্রিজ ( সেতু) থেকে প্রায় ৭০০ মিটার এলাকা (নদীর পার) ঝুঁকিতে রয়েছে।
লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর মোহামঞ্চদ মানিক জানান, বরাদ্দের ওই ২০ লাখ টাকা দিয়ে নদীর তীরে প্রায় ১০০ মিটারের একটি স্থায়ী (সিমেন্ট আর বালুর ব্লক তৈরি) বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু আরও কয়েকটি স্থানে এ রকম স্থায়ী বাঁধ নির্মিত না হলে দুই ইউনিয়নের ৫০ হাজার মানুষ ঝুঁকির মুখে পড়বে।
স্থানীয় রুস্তম আলী চৌধুরীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব ইব্রাহীম চৌধুরী জানান, নদীর ভাঙনের কবল থেকে এলাকার ৫০ হাজার মানুষকে রক্ষার জন্য মাতামুহুরী সেতুর পূর্ব পাশ থেকে হাজীপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৭০০ মিটার প্রতিরক্ষা বাঁধ তৈরির জন্য ২০০৭ সালের ৬ জুলাই পাউবো কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর আবেদন করা হয়। ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর পাউবো কর্মকর্তারা সরেজমিন অনুসন্ধান করে সাড়ে তিন কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ঊর্ধ্বতন মহলে পাঠান। কিন্তু গত চার বছরেও ওই প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি।
পাউবো কক্সবাজারের সহকারী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম এর সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মাতামুরী নদীর তীর সংরক্ষণে (বাঁধ নির্মাণের জন্য) বিশেষ বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধ্বতন মহলে পত্র পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।