Tuesday, January 04, 2011

আওয়ামী লীগের সাংসদের মদদে ধান কেটে নেওয়ার অভিযোগ

খুলনার দাকোপ উপজেলায় এক ভূমিহীন পরিবারের পাকা ধান কেটে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরিবারটি অভিযোগ করেছে, ওই আসনের সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ননী গোপাল মণ্ডলের মদদে তার মামা দলীয় 'ক্যাডারদের' নিয়ে দুই দফায় ১৩ বিঘা জমির ধান কেটে নিয়ে গেছে।

পুলিশকে বিষয়টি জানানো হলেও তারা সহযোগিতা করেনি। পরিবারটির এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ। সংসদ সদস্য ননী গোপাল বলেছেন, এ বিষয়টি তিনি জানে না। ওই এলাকায় তার কোনো ক্যাডার নেই। তবে তার মামা বলেছেন, জমিটি তিনি ইজারা নিয়েছেন। সে সুবাদে তিনি জমির ধান কেটে নিয়েছেন।

মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে উপজেলার কৈলাসগঞ্জ ইউনিয়নের ধোপাদি গ্রামের ভূমিহীন পরিবারটি এই অভিযোগ করে। পরিবারটি জানায়, তারা জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে এই জমি ও পুকুর ইজারা নিয়েছে। সংসদ সদস্য ননী গোপালের মামা শিবপদ মণ্ডল ওরফে শিব ডিলার জোর করে ধান কেটে নেওয়া ছাড়াও পুকুরের মাছ মেরে নিয়ে গেছে।

পরিবারের কর্তা তপন রায় অভিযোগ করেন, শিব ডিলার ক্ষমতাসীন দলের 'ক্যাডার' গণেশ চন্দ্র সরকার, গোকুল সরকার, মথুর সরকার, দুর্গাপদ সরকার, আবুল হাওলাদার, রফিক হাওলাদার, ফারুক মল্লিক, রশিদ হাওলাদার, হামিদ মল্লিক, ফরিদ মল্লিক, বায়েজিদ মল্লিক, বেল্লাল মল্লিক, এমাদুল হাওলাদার, সুকুমার বৈদ্য, জোগেশ চন্দ্র মৃধাসহ ২০-২৫ জনের একটি দলসহ লাঠিসোটা ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তার জমির ধান কেটে নিয়ে গেছেন।

তিনি জানান, গত ১৭ ডিসেম্বর সাত বিঘা এবং ২৯ ডিসেম্বর ছয় বিঘা জমির প্রায় ১৪০ মণ ধান কেটে নিয়ে গেছে তারা। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় দুই লাখ টাকা। তপন জানান, গত ২৮ ডিসেম্বর জেলা জজ জমির ওপর স্থিতিবস্থা জারি করলেও তারা তা মানেনি।

তিনি অভিযোগ করেন, শিব ডিলার ও তার লোকজন এখন তাদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। তিন সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে তিনি এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ ব্যাপারে খুলনার পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট (এসপি) তানভীর হায়দার চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিষয়টি দেখার জন্য স্থানীয় থানাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো।

এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য ননী গোপাল বলেন, তার মামা আওয়ামী লীগ করেন। তিনি কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবেন। সে কারণে একটি মহল তপন রায়কে দিয়ে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। ওই এলাকায় তার কোনো লোক নেই দাবি করে সাংসদ বলেন, "এই কয় বিঘা জমির ধান কেটে নিয়ে আমার কি লাভ হবে।"

অভিযোগ অস্বীকার করে শিবপদ দাবি করেন, তপনের ইজারা ২/৩ বছর আগেই শেষ হয়ে গেছে। এরপর তিনি পুকুরসহ এই জমি ইজারা নিয়েছেন। তিনি বলেন, এর আগেও তপনকে জমিতে চাষ দিতে নিষেধ করা হয়েছিলো। কিন্তু তিনি শোনেনি। তাই এবার তিনি ধান কেটে নিয়ে এসেছেন।

দাকোপ থানার ওসি এরশাদুল কবীর চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "পুলিশ কারো পক্ষ নিয়ে সহযোগিতা করেনি। যাদের ধান তারাই কেটে নিয়ে গেছে।"

পাকিস্তানে পাঞ্জাব প্রদেশের গভর্নর নিহত

পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে দেহরক্ষীর গুলিতে নিহত হয়েছেন পাঞ্জাব প্রদেশের গভর্নর সালমান তাসির। তার মুখপাত্র মঙ্গলবার একথা জানিয়েছেন।

একটি বাজারের কাছে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ইসলামাবাদে গাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় নিজ নিরাপত্তারক্ষী সেনাদেরই কেউ তাসিরকে গুলি করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গুরুতর আহত অবস্থায় তাসিরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে তার মৃত্যু হয়।

তাসিরের মুখপাত্র তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বলেছেন, "হ্যাঁ তিনি মারা গেছেন।" নিহত সালমান তাসির ক্ষমতাসীন পাকিস্তান পিপলস পাটির্র (পিপিপি) ঊর্ধ্বতন সদস্য ছিলেন। পাকিস্তানে ক্ষমতাসীন জোট সরকার থেকে ২য় বৃহত্তম শরিক দল মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্টের (এমকিউএম) বেরিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট রাজনৈতিক জটিলতার মধ্যে তাসিরকে হত্যার এ ঘটনা ঘটলো।

হত্যাকান্ডের উদ্দেশ্য সম্পর্কে এখনও কিছু জানা যায়নি। তবে তাসির স¤প্রতি দেশের ব্ল্যাসফেমি আইনের বিরুদ্ধে সরব হয়ে ইসলামপন্থিদের ক্ষেপিয়ে তুলেছিলেন। ইসলামাবাদ থেকে বিবিসির সংবাদদাতা আলিম মকবুল বলেছেন, পাকিস্তানের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন তাসির। তার মৃত্যু পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় আরেকটি নতুন মাত্রা যোগ করবে।

সংসদ নিয়ে বিচারকদের মন্তব্যের জন্য সরকারকে দুষলেন মোশাররফ

রকার সংসদ অকার্যকর করে রেখেছে অভিযোগ করে বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, বিচারকরাও আজ বলছেন যে সংসদ সার্বভৌম নয়। মঙ্গলবার এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশাররফ বলেন, "বিরোধী দলের ওপর নানাভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র করছে সরকার। এভাবে প্রতিহিংসা ও সাংঘর্ষিক রাজনীতিকে লালন করে তারা সংসদকে অকার্যকর করে ফেলেছে। বিচারকরাও আজ বলছেন, এই সংসদ সার্বভৌম নয়।"

সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের ফুলকোর্ট সভায় বিচারপতিরা মত প্রকাশ করেন, বাংলাদেশের সংসদ সার্বভৌম নয়। তাই সংসদীয় কমিটির কাছে জবাবদিহি করতে সুপ্রিম কোর্ট বাধ্য নয়।

দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে মোশাররফ বলেন, "নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ প্রতিশ্র"তি দিয়েছিলো-ক্ষমতায় গেলে ১০ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়াবে। অথচ ক্ষমতায় যাওয়ার দুই বছরে মোটা চালের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা।"

এভাবে তারা সবক্ষেত্রে জনগণের কাছে দেওয়া অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে, বলেন মোশাররফ।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মেলন কক্ষে 'সুশীল সমাজ' নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে 'সাংঘর্ষিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সরকারের দুই বছর পূর্তি- জনগণের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি' শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন মোশাররফ।

সরকার দ্বৈতনীতি অবলম্বন করে সরকার দেশ পরিচালনা করছে অভিযোগ করে সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, "আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ৬ হাজার ৬৯০টি রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। অথচ বিরোধী দলের বিরুদ্ধে কোনো মামলাই সরকার প্রত্যাহার করেনি। উল্টো আরো নতুন নতুন মামলা দেওয়া হচ্ছে।"

দেশ পরিচালনায় ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে সরকারকে পদত্যাগের আহ্বান জানান তিনি।

সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক হামিদুল্লাহ খান, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আবদুল লতিফ নেজামী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) মহাসচিব শামীম আল মামুন, বিএনপি সংসদ সদস্য রেহানা আখতার রানু প্রমুখ।

নিয়মিত ছাত্রের হাতে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব তুলে দিতে হবে: ওবায়দুল

গুটি কয়েক ছাত্রের বেপরোয়া অপকর্মের জন্য ছাত্রলীগের গৌরবময় ঐতিহ্য ম্লান হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে নিয়মিত ছাত্রের হাতে
নেতৃত্ব তুলে দিতে হবে। ছাত্রলীগের ৬৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার পূর্বে এসব কথা বলেন ওবায়দুল।

সংগঠনের সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপনের সভাপতিত্বে এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, একেএম বাহাউদ্দিন নাসিম, আমিরুল ইসলাম আমির, আব্দুল মান্নান, ছাত্রলীগ নেতা মাহফুজুল হায়দার রোটন প্রমুখ।

ওবায়দুল বলেন, ছাত্রলীগ কোনো প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি বা নেতার হাতিয়ার হতে পারে না।

তিনি আরো বলেন, ছাত্রলীগ হলো আমাদের রোদেলা তারুণ্যের ভালবাসা, যৌবনের প্রথম প্রেম।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে ছাত্রলীগকে নতুনভাবে পথ চলা শুরু করার আহ্বান জানান ওবায়দুল।

এশিয়া মহাদেশের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলদেশের সরকার কাঠামো অনেক শক্তিশালী মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকারের মেরুদণ্ড অনেক শক্তিশালী। ধাক্কা দিলেই সরকার পতন হয়ে যাবে না।

এনালগ মন নিয়ে দেশকে ডিজিটাল করা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বিরোধী দলকে সংসদে গিয়ে দেশের জন্য কথা বলার আহ্বান জানান ওবায়দুল।

উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল থেকে যাত্রা শুরু করে। সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে  সংগঠনটি আজ পালন করছে তাদের ৬৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

বাংলাদেশের ইতিহাসের অনেক আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রলীগের আবদান ও ভূমিকা ছিল অপরিসীম।

বিনায়েক সেনের স্ত্রী রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতে পারেন

ভারতের শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার কর্মী বিনায়েক সেনের স্ত্রী ইলিনা সেন বলেছেন, তিনি উদারপন্থী এবং গণতান্ত্রিক কোনো দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতে পারেন। গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

ইলিনা সেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তাঁর স্বামীকে কারাদণ্ড দেওয়ার পর তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ভারতে নিরাপত্তা বোধ করছেন না।
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে মানবাধিকার কর্মী বিনায়েক সেনকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে ভারতের ছত্তিশগড়ের একটি আদালত। তাঁর বিরুদ্ধে মাওবাদীদের বার্তাবহন এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়।
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, বিনায়ক সেনের বিরুদ্ধে যে তথ্য-প্রমাণ দাঁড় করানো হয়েছে, তা সাজানো। অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, এই বিচার আন্তর্জাতিক মান লঙ্ঘন করেছে।
এদিকে মার্কিন লেখক নোয়াম চমস্কি, ভারতীয় ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপারসহ অনেক ভারতীয় খ্যাতিমান লেখক বিনায়েক সেনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডকে দুঃখজনক বলে অভিহিত করেছেন।
বিনায়েক সেনের স্ত্রী গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমার জন্য এখন একমাত্র পথ উদারপন্থী ও গণতান্ত্রিক কোনো দেশের দূতাবাসে যাওয়া এবং রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়া।’
ইলিনা সেন অভিযোগ করেন, ছত্তিশগড় রাজ্যের পুলিশ তাঁকে হয়রানি করছেন। তিনি বলেন, ‘পুলিশ আমাদের সার্বক্ষণিকভাবে অনুসরণ করছে। আমাকে বেনামে চিঠি পাঠানো হয়েছে। হুমকি দিয়ে ফোন দেওয়ার পাশাপাশি এবং আমাদের ফোনে আড়ি পাতা হচ্ছে।’
তবে ছত্তিশগড়ের পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বিবিসি।

পাঁচবিবির লকমা রাজবাড়ি by মো. ফিরোজ হোসেন

য়পুরহাট থেকে উত্তরে লকমা গ্রাম। এই গ্রামের নামেই ঐতিহাসিক স্থানটির নামও "লকমা রাজবাড়ি" রাখা হয়েছে। এটি এখন প্রায় কিছুটা বিলুপ্তির পথে। তবে আশার কথা এই যে, কিছু তরুণ এই ঐতিহাসিক স্থানটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তারা এই লকমা রাজবাড়ির একটি কমিটি গঠন করেছে।
সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য নানা প্রকার ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে এই স্থানে। এতে প্রবেশের মূল্য মাত্র ৫ টাকা । জানা যায়, হাজার বছর আগে নির্মাণ কাজ শেষে এ প্রাসাদটির নাম দেয়া হয় লকমা রাজবাড়ি। আজ পর্যন্ত এ নামেই পরিচিতি লাভ করছে এ স্থানটি। বংশানুক্রমে আজও এর মালিক বিদ্যমান। এই রাজবাড়ির মোট কক্ষের সংখ্যা ছিল ১৭টি। অধিকাংশ কক্ষ ছিলো ঘুটঘুটে অন্ধকার। প্রধান প্রাসাদকে ঘিরে এর পূর্ব পাশ্বর্ে আছে আরো একটি ছোট প্রাসাদ। আর এই ছোট প্রাসাদেই চৌধুরীর দূতরা রাখত এক পাল হাতি। দেশ ভাগ হয়ে যাওয়ার পর এই রাজবাড়ির কিছু অংশ ভারতের মধ্যে পড়ে। তার মধ্যে রয়েছে একটি আশ্চর্য পুকুর ও একটি কালী মন্দির। পুকুরটি অবস্থিত ছিল রাজবাড়ির পশ্চিম উত্তর কর্নারে। রাজবাড়ির পাশে আছে হাজার বছরের পুরাতন একটি মসজিদ। রাজবাড়ির কাজ শেষ হওয়ার পূর্বেই এই মসজিদের কাজ শেষ হয়। অনেক আগের কথা হলেও সত্য যে, রাজবাড়ির এই মসজিদটিতে চৌধুরী বংশের লোক ছাড়া আর অন্য কেউ নামাজ পড়তো না। কিন্তু বর্তমানে মসজিদটিতে সকল মুসলস্নী নামাজ পড়েন। পূর্বে রাজবাড়ি পরিদর্শন করার মতো তেমন কোন অবস্থা ছিল না। অনেক ভয়ানক অবস্থা ছিল রাজবাড়িটির। বর্তমানে এ স্থানটি পরিষ্কার করা হয়েছে এবং ফুলের বাগানসহ যাবতীয় কাজকর্ম চলছে। সুন্দর এই মনোরম পরিবেশে অনেক দর্শনার্থী ভিড় করে বিশেষ করে ছুটির দিনে। পূর্বে রাজবাড়ি কত তলা ছিল তা বলা মুসকিল কিন্তু বর্তমানে ৩য় তলা পর্যন্ত বিদ্যমান। জানা যায়, এক সময় একটি নতুন বউসহ একটি কক্ষ বন্ধ হয়ে যায়। আজও বন্ধ দরজাটি দেখা যায় প্রাসাদের নিচ তলার পূর্ব পাশ্বর্ে। রাজবাড়ি দর্শন করতে হলে অবশ্যই সাহস থাকা প্রয়োজন। কারণ দুইটি সিঁড়িসহ অধিকাংশ ঘর ঘুটঘুটে অন্ধকার। নিচ তলা থেকে উপর তলা এবং উপর তলা থেকে নিচ তলায় প্রবেশ করার জন্য সিঁড়িগুলো অত্যন্ত ঘন অন্ধকার। তবে আলোর ব্যবস্থা করে আসলে উপভোগ করা যাবে সম্পূর্ণ রাজবাড়িটি। এই ছিল রাজবাড়ির মোটামুটি স্মৃতি কথা। তবে এখানেই শেষ নয়, রাজবাড়ি দর্শন করতে আসলে আরো একটি সুন্দর জায়গা দেখতে পাওয়া যাবে তা হলো মিড়া পীর সাহেবের মাজার। এ মাজারটি হলো কড়িয়া বাজার হতে এক কিলোমিটার পশ্চিমে একটি ছোট নদীর পাশ্বর্ে। মাজারকে ঘিরে একটি মসজিদ এখানে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিবছর এখানে একটি বিশাল তাফসিরুল কোরআন মাহফিল হয়ে থাকে। এ মাহফিলে অনেক লোকজন সমাগম হয়। অনেকে আবার মুরগি, খাসি ও চাল দান করে এ মাহফিলে। আপনার যে কোন অসুখ হোক না কেন আপনি মাজারে এসে নিয়ত করে মাফ চাইবেন। আলস্নাহ তাআলা আপনার রোগ মাফ করে দিতে পারেন। এ বিষয়ে স্থানীয় লোকজনের কাছে অনেক প্রমাণ রয়েছে।

তেল-চিনির ডিও প্রথা বাতিল

খুচরা বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেসরকারি পর্যায়ে চিনি ও ভোজ্যতেল বাজারজাত করার ক্ষেত্রে ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) প্রথা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে চালু হচ্ছে পরিবেশক পদ্ধতি।

মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ভোজ্যতেল ও চিনি আমদানি ও পরিশোধনকারীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান বাণিজ্য সচিব গোলাম হোসেন।

সভায় 'নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ ও বিপণন নীতিমালা-২০১১'-এর খসড়া চূড়ান্ত হয়। সচিব জানান, নীতিমালাটি আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং শেষে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হবে। এরপর গেজেটে প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে নতুন পদ্ধতি কার্যকর হবে।

সবমিলিয়ে ১১১ দিনের মধ্যে পরিবেশক পদ্ধতি কার্যকর হবে বলে জানান গোলাম হোসেন। তিনি বলেন, "ভোজ্যতেল ও চিনির মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার জন্যই এ পদ্ধতির প্রবর্তন করা হচ্ছে। ডিও প্রথার মাধ্যমে মাধ্যমে মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের কারণে এসব পণ্যের দাম বেড়ে যায়।"

জনসংখ্যা রফতানি ও বাংলাদেশ by গাউসুর রহমান

নসংখ্যা রফতানি আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জনসংখ্যা সমস্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রেও জনসংখ্যা রফতানির অভাবনীয় অবদান রয়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়নে জনসংখ্যা রফতানি অন্যতম 'পাওয়ার হাউস' হিসাবে বিবেচিত। কিন্তু জনসংখ্যা রফতানি বাড়ার বদলে দিনে দিনে কমছে।
রফতানি বৃদ্ধিতে আমাদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগেরও অভাব রয়েছে। এ ব্যাপারে জোর প্রচেষ্টা চালানোর কোন ভূমিকা নেই। চলতি বছরে বিদেশে জনসংখ্যা রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ৭৫ হাজার কমেছে বলে সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় সংসদেও আলোচনা করা হয়েছে।

গত বছর বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও জনশক্তি রফতানি হয়েছে আমাদের দেশ থেকে ৪ লাখ ৭৫ হাজার, এবার সেখানে বিশ্বমন্দা কাটিয়ে ওঠা সত্ত্বেও জনসংখ্যা রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ। জনসংখ্যা রফতানির হ্রাসের এ প্রক্রিয়ার পিছনে কি রহস্য কাজ করছে, তা আমাদের জানা নেই। জনসংখ্যা রফতানি কমে আসলে তা আমাদের অর্থনীতিতে বিরূপ-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। জাতীয় অর্থনীতিতে এ অনাকাঙ্ক্ষিত চাপ আমাদের অর্থনীতির জন্যে দুঃসংবাদ। গত ১০ মাসে জনসংখ্যা রফতানি কমেছে প্রায় ২০ ভাগ। বিদেশ থেকে গত ১০ মাসে অর্ধ লাখেরও বেশি কর্মী দেশে ফিরে এসেছে।

আমাদের অর্থনৈতিক গতিশীলতার ক্ষেত্রে রেমিটেন্স গুরুত্বপূর্ণ নিউক্লিয়াস হিসাবে কাজ করে। রেমিটেন্স আমাদের মোট অভ্যন্তরীণ আয় বা জিডিপির ৩০ ভাগ। জাতীয় অর্থনীতির তাই অন্যতম চালিকাশক্তি এই রেমিটেন্স। জনসংখ্যা রফতানি কমলে রেমিটেন্সও কমে আসবে। রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ানোর ক্ষেত্রে জনসংখ্যা রফতানি বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। আর তাই রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ানোর প্রয়োজনে জনশক্তি রফতানির বর্ধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হবে। এমতাবস্থায় প্রবাসীদের তিন বন্ডে সুদের হার বাড়ানোর সরকারের চিন্তাকে আমরা স্বাগত জানাই। সাম্প্রতিককালে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাওয়ায় এবং হুন্ডি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় সরকার এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে চাইছে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সরকারকে বিষয়টি গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে। তিনটি বন্ডের সুদের হার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিলে এবং বন্ডে ফের বিনিয়োগ সুবিধা দিলে আমাদের অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক না নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে- সেটিও নতুন করে ভেবে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। ২০০৯ সালে দেশে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমাণ ছিল ১০ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার, যা বিগত সময়ের চেয়ে বেশি। আগেই বলা হয়েছে যে, দেশের রেমিটেন্স মোট জিডিপি'র ২০ ভাগ। বৈদেশিক বিনিয়োগের ১৮ গুণ ও বৈদেশিক সাহায্যের ১৯ গুণ বেশি। কিন্তু রহস্যজনক কারণে রেমিটেন্সের এই উচ্চ প্রবৃদ্ধি চলতি অর্থবছরে এসে কমে যায়। ১ জুলাই থেকে ওয়েজ আনার্স বন্ড, ইউএস ডলার বন্ড ও ইউএস প্রিমিয়ার বন্ডে পুনরায় বিনিয়োগের সুযোগ বাতিল করে উলেস্নখিত বন্ডসমূহের সুদের হার ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ১০ শতাংশ করার কারণেই রেমিটেন্স কমেছে বলে সংশিস্নষ্ট ক্ষেত্রের অভিজ্ঞদের কেউ কেউ মনে কেরন।

সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে রেমিটেন্স প্রবাহ কমেছে বলে কারো কারো ধারণা। তারা মনে করেন-এর ফলে কেবল রেমিটেন্স প্রবাহই কমেনি; বরং ইউএস ডলার বন্ড, ওয়েজ আনার্স বন্ড, ইউএস প্রিমিয়ার বন্ডে বিনিয়োগের হার ১১ শতাংশ কমে গেছে। প্রবাসীরা দেশে এই তিনটি বন্ডে বিনিয়োগ করা রেমিটেন্স তুলে নিয়ে নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বলেও সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়েছে। বাস্তবতা যা-ই হোক না কেন- সরকারকে মনে রাখতে হবে যে, আমাদের অর্থনীতির জন্যে সহায়ক রেমিটেন্স আয়ের খাতটি যেন প্রবাসীদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি না করে। প্রবাসীদের সঞ্চয়ী বন্ডে যেন নেতিবাচক চিত্র তৈরি না হয়; সেদিকে সরকারকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।

আমাদের দেশে জনসংখ্যা এখনও বড় জাতীয় সমস্যা। এই সমস্যাকে সমাধান করতে এবং জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে দক্ষ, আধা দক্ষ, অদক্ষ শ্রমিক, ওয়েজ আর্নাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারকে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে জনসংখ্যা রফতানির জন্যে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়াতে পারলে আমরা জনসংখ্যা রফতানি স্বাভাবিকভাবেই বাড়াতে পারবো। বিদেশে শ্রমবাজার সৃষ্টিতে আমাদের সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

মানব উন্নয়ন সূচকে আমরা যদি অগ্রগতি সাধন করতে চাই, তাহলেও আমাদের জনসংখ্যা রফতানি বাড়াতে হবে। এটি করতে পারলে অনিবার্যভাবেই রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়বে। রেমিটেন্সের অর্থ দেশে যাতে যথাযথভাবে বিনিয়োগ করা যায়, সেদিকেও বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। বিদেশে বেশি বেশি দক্ষ জনশক্তি রফতানি করা ছাড়া মানব উন্নয়ন সূচকের অগ্রগতি সাধন সম্ভব নয়। এজন্যে বিদেশে যেতে ইচ্ছুক জনগোষ্ঠীকে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করে সেই জনশক্তিকে বিদেশে রফতানি করা সম্ভব হলে রেমিটেন্স প্রবাহ যেমন বাড়বে, তেমনি অগ্রগতি সাধন হবে মানব উন্নয়ন সূচকে।

জনসংখ্যা রফতানি কিভাবে বাড়ানো যায়, বৈদেশিক কমংস্থান মন্ত্রণালয়কে নতুন করে ভাবতে হবে এবং যুগোপযোগী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, নার্স, মেকানিক্সসহ কারিগরি শিক্ষাপ্রাপ্ত ও কারিগরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনশক্তিকে কিভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেশি বেশি হারে রফতানি করা যায়, সেভাবে সংশিস্নষ্ট কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আমরা যদি বিদেশে জনসংখ্যা রফতানি বৃদ্ধি করতে না পারি, তাহলে জনসংখ্যা সমস্যার বিরূপ প্রভাব পড়বে আমাদের অর্থনীতিসহ জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে।

আমাদের দেশে কৃষি জমি দিনে দিনে কমছে। অথচ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে জনসংখ্যা। বাড়ছে অভাব-অনটন। এমতাবস্থায় জনসংখ্যা রফতানি, দক্ষ জনসংখ্যা রফতানি অমিত সম্ভাবনা ও কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। আমাদের অর্থনীতির বুনিয়াদ মজবুত করার ক্ষেত্রে এই জনসংখ্যা রফতানি নিশ্চিত বিনিয়োগ হিসাবে বিবেচিত। শুধু নিশ্চিত বিনিয়োগ নয়, নিরাপদ বিনিয়োগ হিসাবেও জনসংখ্যা রফতানিকে বিবেচনা করা যায়। রমিটেন্স প্রবাহ বাড়ানোর ক্ষেত্রে জনসংখ্যা রফতানির যেমন প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে, তেমনি বিদেশে কর্মরত জনশক্তির পারিশ্রমিক যাতে কাজ ও দক্ষতা অনুযয়ী নির্ধারিত হয়, সেজন্যেও সরকারকে উদ্যোগী ভূমিকা রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, জনসংখ্যা রফতানি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকার যদি কূটনীতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করে, তাহলে জনসংখ্যা রফতানির সুফল ও রেমিটেন্স প্রবাহ আমাদের অর্থনীতির ইতিবাচক খাতের সঙ্গে একই ধারায় প্রবাহিত হবে।

পুঁজিবাজারে ব্যাপক দরপতন

তারল্য প্রবাহের ঘাটতি ও শেয়ার বিক্রির চাপের মধ্যে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বড় ধরনের দরপতন হয়েছে।

মঙ্গলবার সাধারণ মূল্যসূচক গত দিনের চেয়ে ২০৩ পয়েন্ট বা ২.৪৮ শতাংশ পড়ে দিন শেষে দাঁড়ায় ৭ হাজার ৯৮০ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট। আগের দিনও সাধারণ সূচক ১১৯ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট কমে যায়। সেইসঙ্গে কমে বাজার মূলধন ও লেনদেনসহ সবগুলো সূচক।

বিনিয়োগকারীদের মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতার কারণে সোমবারও দ্বিতীয় দিনের মতো ডিএসইতে দরপতনের এ ধারা অব্যাহত থাকে। এদিন ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মিউচুয়াল ফান্ড, ইন্সুরেন্স, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও ওষুধ কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম কমে যায়।

লেনদেন হওয়া মোট ২৪৬টি শেয়ারের মধ্যে ২১১টির দাম কমে যায়, ২৯টির দাম বাড়ে ও ছয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম অপরিবর্তিত থাকে। ডিএসইতে দিন শেষে মোট লেনদেন দাঁড়ায় ১ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। যা গত দিনের চেয়ে ২১৬ কোটি টাকা কম।

লেনদেনের তালিকায় শীর্ষে ছিল ন্যাশনাল ব্যাংক, বে লিজিং, সাউথইস্ট ব্যাংক, এবি ব্যাংক ও পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স। এদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) লেনদেনে মন্দা ভাব দেখা গেছে। সিএসই মূল সূচক ৩৯৫ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৬২ পয়েন্ট কমে দিন শেষে দাঁড়ায় ১৪ হাজার ৬৬১ দশমিক ০৩ পয়েন্ট।

সোমবার সিএসইতে লেনদেন হওয়া মোট ১৮৯টি শেয়ারের মধ্যে ১৬৩টির দাম কমে যায়, ২০টির দাম বাড়ে ও ৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম অপরিবর্তিত থাকে।

যানজট ও ট্রাফিক আইন by মেরীনা চৌধুরী

টা সবার জানা বিদেশে সবাই ট্রাফিক আইন মেনে চলে। সেখানে ট্রাফিক আইন ভাঙার সাজা এতই কঠোর যে, সবাই এ বিষয়ে সব সময় সতর্ক থাকেন। কিন্তু আমাদের দেশে বিশেষ করে ঢাকায় সবই উল্টো। এদেশে ট্রাফিক আইন মেনে না চলাই যেন আইন। তাই ঢাকা শহর এখন যানজটের শহর।
গাড়ি, রিকশা, ট্যাক্সি ক্যাব যে কোন যানে উঠে বসুন না কেন, গন্তব্যে কখন পৌঁছাবেন জানেন না, আধঘন্টার রাস্তা কখনও কখনও দেড়-দু ঘন্টাও লেগে যায়। হূদরোগী, ডেলিভারি কিংবা মুমূষর্ু রোগীকে নিয়ে যানজটে আটকা পড়ে বিড়ম্বনায় পড়েননি এমন লোক কমই আছেন। অথচ নিয়ম মেনে পথ চললে বা গাড়ি চালালে যেমন অপ্রীতিকর ঘটনা অর্থাৎ অ্যাক্সিডেন্ট বা অন্য কোন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তেমনি নিজের নিরাপত্তা সুরক্ষিত থাকে, কেবল তাই-ই নয় শহরকেও রাখা যায় জ্যামমুক্ত ছিমছাম। আজকাল পথে-ঘাটে, বাসা-বাড়ি, অফিস-রেস্তোরাঁ, ক্লাবের আড্ডায় ট্রাফিক জ্যাম একটি আলোচনার মুখ্য বিষয়। যারা বাচ্চাদের স্কুলে পৌঁছান, অফিসে যান তারা সত্যই এক অতি বিড়ম্বনার শিকার হন। এক্ষেত্রে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে সবাই দোষ দেন গাড়ি চালকের। আবার যারা নিজেই চালক তারা পথচারীর পথ চলার ভুলভ্রান্তি তুলে ধরে সোচ্চার হন। তারা কখনই ভাবেন না এক্ষেত্রে তাদেরও কিছুটা হলেও দায়-দায়িত্ব রয়েছে। অর্থাৎ ট্রাফিক আইন মেনে চলা বাধ্যতামূলক তা মনে রাখতে হবে সবাইকে। ট্রাফিক আইন অনুযায়ী আমাদের দেশের নাগরিকদের দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। প্রথমটি গাড়ির চালক, অন্যটি পথচারী। স্বভাবতই দুই শ্রেণীর জন্য রয়েছে দুই রকমের নিয়ম-কানুন। গাড়ির (যেকোনও) চালককে নির্দিষ্ট গতিবেগের চেয়ে বেশি গতিতে গাড়ি চালানো নিষেধ। নির্ধারিত পার্কিং জোন ছাড়া যত্রতত্র গাড়ি পার্ক করতে পারবে না। ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে চলা বাধ্যতামূলক। কোন বিশেষ ক্ষেত্রে কর্মরত পুলিশ যদি চালককে কিছু নির্দেশ দেয় তিনি তা মানতে বাধ্য। বিশ বছরের পুরনো গাড়ি রাস্তায় নামানোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে মেট্রোপলিটন পুলিশ। অর্থাৎ বিশ বছরের পুরনো গাড়ি রাস্তায় চলাচল করা নিষিদ্ধ।

সর্বশেষ ট্রাফিক আইনের আওতায় চালককে গাড়ি চালানো অবস্থায় অবশ্যই সিটবেল্ট বাঁধতে হবে। গাড়ি চালানোর সময় কোনক্রমেই চালক মোবাইল ফোনে কথা বলতে পারবেন না। মোটর সাইকেল চালক ও সহযাত্রীকে হেলমেট ব্যবহার করাও বাধ্যতামূলক। সব ধরনের গাড়ির কাগজপত্র সর্বদা চালককে গাড়িতে রাখতে হবে। রাস্তায় যে কোনও কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ দেখতে চাইলে তা দেখাতে বাধ্য চালক। এছাড়া পরিবেশ দূষণরোধেও কিছু নিয়ম-কানুন বা আইন আছে। এটা দেখাশোনাও ট্রাফিক আইনের আওতাভুক্ত। বাস, লরি, ট্রাক, মিনিবাস, গাড়ি ইত্যাদি চালানোর সময় শহরের ভিতরে অযথা হর্ন বাজাতে পারবে না। শব্দ দূষণরোধে এই আইন করা হয়।

যেসব রাস্তায় নির্দিষ্ট গতিবেগের চেয়ে গাড়ি চালানো নিষেধ অবাধে তা লংঘন করে গাড়ি চলে। উপরে সাইনবোর্ড ঝোলানো" 'গাড়ি পার্কিং' নিষেধ। সেখানে লাইন দিয়ে গাড়ি পার্ক করা থাকে। এমন কি রাস্তার দু'পাশে গাড়ি পার্ক করে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে থাকে যে, জনগণকে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। বিশেষ করে সকালে স্কুল ও অফিসের সময়। হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ এলাকা তো বটেই, যানজটের কারণে গাড়ি সামনে এগোতে পারবে না জেনেও মুহুমর্ুহু হর্নের আওয়াজে কানপাতা দায়। হর্নের এই শব্দ শুধু শব্দ দূষণই করে না, মাথা, কান সব ইন্দ্রীয়তে আঘাত করে মানুষকে অসুস্থ করেও তোলে।

হেলমেট ছাড়া মটর সাইকেল চালানো নিষেধ, মোবাইল ফোনে কথা বলা, সিটবেল্ট বাঁধা কোনটাই মানা হয় না, বিশ বছর কেন পঞ্চাশ বছর আগের লক্কর-ঝক্কড় মার্কা বাস নিয়মিত রাস্তায় চলছে। এছাড়া পথচারীদের রাস্তা পারাপারের নির্দিষ্ট স্থান বা জেব্রাক্রসিং, ওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে ব্যস্ত সড়কের যত্রতত্র থেকে রাস্তা পার হচ্ছে পথচারী।

''ওয়ান ওয়ে" রাস্তারও একই হাল। তাড়াতাড়ি গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য ''ওয়ান ওয়ে" হোক, রিকশা ফ্রি রাস্তা হোক, রং সাইড দিয়ে বা রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে দ্বিধাবোধ করছে না। মাঝে-মধ্যে অথবা ট্রাফিক সপ্তাহ পালনের সময় ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতা দেখা যায়। কিছুদিন পরই এই তৎপরতা বন্ধ হয়ে যায়। আবার আইন না মেনে চলতে শুরু করে। এক্ষেত্রে এককভাবে গাড়ির চালক বা পথচারী কাউকে দোষারূপ করা উচিত নয়। ট্রাফিক আইন কার্যকরী করতে ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকাও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

নগর পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং দুর্ঘটনা কমিয়ে যানজটমুক্ত পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ও পথচারীদের নির্বিঘ্নে চলাচলের সুবিধার্থে ট্রাফিক আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিন্তকরণ জরুরী। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, নগর পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে যখন ট্রাফিক সপ্তাহ পালন করা হয় তখন এবং মাঝেমধ্যে ট্রাফিক পুলিশ বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে থাকে। কিছুদিন পরই আবার সব চুপচাপ, পুরনোরূপে ফিরে রাজধানী। গত ১ নভেম্বর পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়ে মাঠে নেমেছিল পুলিশ, কিন্তু এখন সে উদ্যোগ বজায় রাখার আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। পুরনো গাড়ির বিরুদ্ধে কঠোর নিয়ন্ত্রণ চালানো হয়েছিল। বর্তমানে কালো ধোঁয়ার গাড়িও রাস্তায় চলছে নির্বিঘ্নে। পথচারী, গাড়ির চালক হরহামেশাই নিষিদ্ধ রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে। যদিও এক্ষেত্রে অভিযোগ রয়েছে পুলিশকে 'সন্তুষ্ট' করতে পারলেই আইন অমান্য করা সম্ভব।

সর্বশেষে বলতে হয়, সবাইকে সচেতন হয়ে আইন মেনে চলতে হবে। ট্রাফিক আইন একবার মেনে চলতে অভ্যস্ত হয়ে উঠলে নিজেরাই হাতে-নাতে এর সুফল বুঝতে পারবে। পথচারী এবং গাড়ি চালক উভয়ের ক্ষেত্রে যেমন একথা সত্য, তেমনি কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ যদি ট্রাফিক আইন জনগণকে মানতে বাধ্য করেন তাহলে তাদের প্রতি কেউ ''সন্তুষ্ট'' করা বলে যে অভিযোগ করা হয় সে অভিযোগও কেউ করতে পারবে না সে কথাও সত্য।

ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, পুলিশসহ আহত ১৫

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনকে কেন্দ্র করে রাজশাহীর পুঠিয়ায় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে পুলিশসহ ১৫ জন আহত হয়েছে। তাদেরকে উপজেলা স্বাস্খ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে মহাসড়কে দুই পক্ষ অবস্খান নেয়ায় দেড় ঘন্টা রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ছাত্রলীগের এক পক্ষের নেতাকর্মীরা পদ্মা এক্সপ্রেস নামে একটি বাস ভাংচুর করে। সড়কের উপর ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনাস্খলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

কাজী মকবুলের সাজার রায় বাতিল

ওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ কাজী মকবুলের সাজার রায় বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। এর আগে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের মামলায় বিচারিক আদালতে তাঁর ১৩ বছরের সাজা হয়েছিল।

আজ মঙ্গলাবার বিচারপতি এম এ হাই ও মো. আবদুর রাজ্জাক সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ তাঁর আপিল মঞ্জুর করে এ রায় দেন।
জানা যায়, ২০০৭ সালের ১৬ আগস্ট মোহাম্মদপুর থানায় দুদক তাঁর (কাজী মকবুল) বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করে। ২০০৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি এ মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ওই বছরের ৬ মে তাঁকে বিচারিক আদালতে ওই সাজা দেওয়া হয়।
এ সাজার রায়ের বিরেদ্ধ তিনি হাইকোর্টে আপিল করেছিলেন। আপিলের ওপর শুনানি শেষে আদালত আজ এ রায় দেন।

মুন্সীগঞ্জে বিমানবন্দরের পক্ষে কর্মসূচিতে প্রতিমন্ত্রী

মুন্সীগঞ্জের আড়িয়াল বিলে বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর নির্মাণের পক্ষে মানববন্ধনে অংশ নিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান, দুই সপ্তাহ আগেই সেখানে বিমানবন্দরের বিপক্ষে মানববন্ধন হয়েছিলো।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ঢাকা-মাওয়া সড়কে শ্রীনগরের পুরনো ফেরিঘাট থেকে কুচিয়ামোড়া পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মানববন্ধনে ওই এলাকার একদল বাসিন্দা অংশ নেয়। এর দুই সপ্তাহ আগে ওই এলাকায় বিমানবন্দরের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া স্থানীয়রা মানববন্ধন এবং সড়ক অবরোধ করে।

প্রতিমন্ত্রী মানববন্ধনের পর শোভাযাত্রায়ও অংশ নেন। কর্মসূচিতে তার সঙ্গে জাতীয় সংসদের হুইপ সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, সরকারদলীয় সংসদ সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষও অংশ নেন। নিমতলী পয়েন্টে সমাবেশে প্রতিমন্ত্রী বলেন, "আড়িয়াল বিলে বিমানবন্দর হলে এ এলাকার মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন হবে। বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান হবে। এছাড়া এই অঞ্চল বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে উঠবে।"

সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া এই অঞ্চলের ব্যাপক জনগোষ্ঠীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণই বলে দেয় এ অঞ্চলের মানুষ বিমানবন্দর নির্মাণের পক্ষে। তিনি জানান, বিমানবন্দরকে কেন্দ্র করে এখানে নদী, সড়ক, রেল ও আকাশ পথে আধুনিক যোগাযোগের এক নতুন দ্বার উন্মোচন হবে।

সরকার মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, ঢাকার দোহার-নবাবগঞ্জ উপজেলার আড়িয়াল বিলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং আবাসন প্রকল্প বঙ্গবন্ধু সিটি নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় আড়াই হাজার একর ভূমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

বিমানবন্দর নির্মাণ না করার দাবিতে গত ২৭ ডিসেম্বর শ্রীনগরের লোকজন বিক্ষোভ করে। প্রায় ৩০ হাজার বিক্ষোভকারী সকাল ১০টা থেকে চার ঘণ্টা ঢাকা-মাওয়া সড়ক অবরোধ করে রাখে। দোহার ও নবাবগঞ্জের লোকজনও একই দাবিতে কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ করে আসছে।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর চিকিৎসাসংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে (সাকা) ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেওয়া-সংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশের কার্যকারিতা ছয় সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছে আপিল বিভাগ। আজ মঙ্গলবার দুপুরে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এস এক সিনহা এ আদেশ দেন।

হাইকোর্টের আদেশের স্থগিতাদেশ চেয়ে সরকার পক্ষের করা আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদালত আজ এ আদেশ দেন। গতকাল সোমবার হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ সাকা চৌধুরীকে দুই দিনের মধ্যে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সাকার পক্ষে তাঁর স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরী রিটটি করেছিলেন।
আজ শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, সাকা চৌধরী চিকিৎসাসেবা চেয়ে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো আবেদন করেননি। তিনি কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলে বিষয়টি বিবেচনা করা যেত। এ নিয়ে রিট আবেদন করা যায় না। এ জন্য হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত হওয়া প্রয়োজন।
এর বিরোধিতা করে সাকা চৌধুরীর কৌঁসুলি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ইতিমধ্যে তাঁকে (সাকা চৌধুরী) ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাই এ নিয়ে হাইকোর্টের আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত করা সমীচীন নয়।
জানা যায়, ২ জানুয়ারি সাকা চৌধুরীকে চিকিত্সাসেবা দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরী রিট আবেদনটি করেন।
এর আগে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর সাকা চৌধুরীকে বনানীর একটি বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে তিনি নারায়ণগঞ্জ কারাগারে আছেন।

মুফতি ইজহারুলের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

খুলনার হোমিও চিকিৎসক আজিজুর রহমান অপহরণ মামলায় ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের নেতা মুফতি ইজহারুল ইসলামের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার মহানগর হাকিম শামিরা পারভীন শুনানি শেষে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

১ জানুয়ারি আসামি ইজহারুল ইসলামকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তবে মামলার তদন্তসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (সিডি) না থাকায় আদালত আজ শুনানির দিন ধার্য করেছিলেন।
আদালতে দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, চিকিৎসক আজিজুর রহমান অপহরণের ঘটনায় তদন্তকালে ইজহারুলের জড়িত থাকার তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। মামলার সুষুম তদন্তের স্বার্থে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। মামলাটি তদন্ত করছেন, সিআইডি কর্মকর্তা ফজলুর কবির।
২০০৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর চিকিৎসক আজিজুর রহমানকে অপহরণ করা হয়। এ ঘটনায় আজিজুর রহমানের স্ত্রী ফারহানা রেজা মিরপুর থানায় ২৪ সেপ্টেম্বর এ মামলা করেন

দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত

দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চল দিয়ে বয়ে যাওয়া শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন অনেকটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দুর্ভোগে পড়েছে গরিব ও গৃহহীন মানুষ। শৈত্যপ্রবাহ আরও দুয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস থেকে জানানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, আজ ঘন কুয়াশার কারণে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট নামতে পারেনি। এটি মাসকাট থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকা যাওয়ার কথা ছিল। বিমানবন্দরে নামতে না পেরে সেটি ঢাকার দিকে চলে যায়। বিমানে ২২৫ জন যাত্রীর ১২২ জন ছিলেন চট্টগ্রামের।
বাংলাদেশ বিমানের চট্টগ্রামের স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ আবুল কাশেম জানান, এ ১২২ জন যাত্রীকে বিশেষ বিমানে করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে।
আমাদের পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, শৈত্যপ্রবাহের কারণে গত কয়েক দিনে জেলায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে। গত কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা ছয় থেকে সাত ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। গত এক সপ্তাহ ধরে চলা শৈত্যপ্রবাহ ও হিমেল হাওয়ার কারণে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। বিশেষ করে জেলার তিন লাখ দুস্থ মানুষ বেশি বিপাকে পড়েছে।
জেলার শীতার্ত মানুষের জন্য শীতবস্ত্র সংগ্রহ ও বিতরণের জন্য জেলা প্রশাসক গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক ও সুধীজনদের নিয়ে জরুরি সভা করেন। ঘন কুয়াশার কারণে আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত অনেক যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করে।
সভায় পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক জানান, ৬০ হাজার শীতবস্ত্র পেলে জেলার দুস্থ মানুষদের চাহিদা মেটানো যাবে। কিন্তু সরকারি সহযোগিতায় এ চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে না। সভায় একটি কমিটি গঠন করে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমই, ঢাকা ক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠন ও বিত্তবানদের কাছে শীতবস্ত্রের জন্য আবেদন জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সভায় জানানো হয়, আরও ১০ হাজার কম্বল ও স্থানীয়ভাবে ক্রয় করে বিতরণের জন্য ১০ লাখ টাকা চেয়ে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে জরুরি ফ্যাক্স বার্তা পাঠানো হয়েছে।
আমাদের চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, শৈত্যপ্রবাহে এখানকার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সন্ধ্যার পর থেকেই লোক চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। গতকাল তৃতীয় দিনের মতো দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় সাত দশমিক আট। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ সকাল নয়টার দিকে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে নয় দশমিক নয়। শীতজনিত রোগে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় ইজাতুল নামের ১৬ মাস বয়সী এক শিশু আজ ভোরে মারা গেছে। তবে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে শীতবস্ত্র বিতরণ না করায় দরিদ্র মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে।
জেলা প্রশাসক ভোলানাথ দে জানান, চুয়াডাঙ্গায় এক মাস আগে এক হাজার কম্বল এসেছে। তবে তা দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হয়নি।
আবহাওয়া অফিস আজ জানায়, শৈত্যপ্রবাহ আরও দুয়েক দিন অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে। রাজশাহী অঞ্চলসহ পাবনা, যশোর, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, মাদারীপুর ও শ্রীমঙ্গলের ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ শৈত্যপ্রবাহের তীব্রতা একটু বেড়ে দুয়েক দিনের মধ্যে কমে আসবে।
গতকালের আবহাওয়া বুলেটিনে জানানো হয়, এ মাসে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে আরও দুয়েকটি মাঝারি অথবা তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য জায়গায় দুই-তিনটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। চলতি মাসে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে এবং নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা ও অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ মাসে সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া নদ-নদীর প্রবাহ স্বাভাবিক থাকতে পারে।

গোয়েন্দা বিমান ভূপাতিত করার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্র

রানের রেভল্যুশনারি গার্ডদের পারস্য উপসাগরে দুইটি 'পশ্চিমা চালকহীন গোয়েন্দা বিমান' গুলি করে ভূপাতিত করার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার পেন্টাগন জানিয়েছে, কয়েকটি গোয়েন্দা বিমান ইতোপূর্বে যান্ত্রিক সমস্যার কারণে বিধ্বস্ত হয়েছে।

এর আগে রোববার ঊর্ধ্বতন এক ইরানি কমান্ডারের উদ্ধৃতি দিয়ে আধা সরকারি ফার্স বার্তা সংস্থা চালকহীন গোয়েন্দা বিমান ভূপাতিত করার খবর জানায়।।

ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের বিমান বাহিনী শাখার প্রধান আমির আলি হাজিজাদেহ বলেন, "আমাদের বাহিনী শত্র"পক্ষের বহু অত্যাধুনিক এবং চালকহীন বিমান ভূপাতিত করেছে.... পারস্য উপসাগরে দুটি গোয়েন্দা বিমানও আমরা গুলি করে ভূপাতিত করেছি। কিন্তু এবারই আমরা প্রথম একথা ঘোষণা করলাম।"

বিমান দুটি কখন ভূপাতিত করা হয়েছে সে সম্পর্কে তিনি কিছু বলেন নি। তবে বিমান দুটি পশ্চিমা চালকহীন গোয়েন্দা বিমান ছিলো বলে জানান হাজিজাদেহ। পেন্টাগনের মুখপাত্র কর্নেল ডেভ লাপান বলেন, "চালকহীন গোয়েন্দা বিমান ভূপাতিত করার যে দাবি ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডরা করছে সা¤প্রতিক সময়ে তার স্বপক্ষে কোনো তথ্য নেই।"

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর এক মার্কিন সেনা কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, পারস্য উপসাগরে সর্বশেষ চালকহীন বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার যে ঘটনা সম্পর্কে তারা জানেন সেটি ২০০৯ সালে যান্ত্রিক সমস্যার কারণে ঘটেছিল।

ওই মার্কিন কর্মকর্তা আরো বলেন, "পারস্য উপসাগরে চালকহীন বিমান অবতরণ বা বিধ্বস্ত হওয়ার কারণগুলো আমাদের জানা। কিন্তু ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডরা গুলি করে বিমান ভূপাতিত করেছে এ ধরনের কোনো কিছু আমাদের জানা নেই।"

এমন কী অতীতেও পারস্য উপসাগরে চালকহীন কোনো বিমান গুলি করে নামানো হয়নি বলেও দাবি করেন ওই মার্কিন সেনা কর্মকর্তা। প্রসঙ্গত, ইরান থেকে উপসাগরের অন্য অংশে বাহরাইনে মোতায়েন আছে যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম নৌবহর। ইরান গত অগাস্টে নিজ দেশে চালকহীন বিমান তৈরির কথা জানিয়েছিলো।

বন্ধ হোক দূষিত রক্তের কেনাবেচা by ডা. ডালিয়া নাসরীন লোপা

বেঁচে থাকার জন্য রক্তের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করতে এবং শরীরে আনুষঙ্গিক পুষ্টি পেঁৗছানোও রক্তের কাজ। এছাড়াও গস্নুকোজ, হরমোন এই রক্তের মাধ্যমেই শরীরের একস্থান হতে অন্যস্থানে পেঁৗছায়। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহে ৫-৬ লিটার রক্ত থাকে।

এই রক্ত আবার বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। রক্তরস এবং রক্তকণিকা, যেমন লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেতকণিকা এবং অনুচক্রিকা। গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনে বা মুমূষর্ু রোগীর জীবন বাঁচানোর জন্য প্রয়োজন হয় রক্তের। ভুক্তভোগীরাই জানেন রক্ত জোগাড় করার ঝক্কি ঝামেলা। ক্ষেত্রবিশেষে কিংবা অসুখের প্রকারভেদের ওপর ভিত্তি করে সম্পূর্ণ রক্ত, পোড়ারোগীর জন্য শুধুমাত্র পস্নাজমা, ডেঙ্গুজ্বরে অনুচক্রিকা বা পস্নাটিলেট রোগীর দেহে সঞ্চালন করা হয়।

বস্নাড ট্রান্সফিউশন বা রক্ত পরিসঞ্চালন বলতে রক্ত অথবা এর বিভিন্ন উপাদান রোগীর শরীরে প্রবেশ করানোকে বুঝায়। একটি পরিসংখ্যানে জানা যায়, বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৮.১ কোটি ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ২.৭ কোটি ইউনিট সংগ্রহ করা হয় স্বল্পোন্নত ও দরিদ্র দেশের যেখানে বিশ্বে প্রায় ৮০-৮২ ভাগ লোকের বসবাস। বিশ্বে প্রায় চার কোটি রক্তদাতা বছরে দু'বার স্বেচ্ছায় রক্তদান করে থাকেন, যার মধ্যে ৯০ ভাগ রক্তদাতা উন্নত বিশ্বের। আমাদের দেশে স্বেচ্ছায় রক্তদাতার হার ০.০৪ শতাংশ, যেখানে স্বেচ্ছায় রক্তদাতার সংখ্যা হওয়া দরকার দুই শতাংশ।

যেসব কারণে রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন পড়ে:হঠাৎ দুর্ঘটনায় প্রচুর রক্তক্ষরণ হলে, ডেঙ্গুজ্বর, মেজর সার্জারীর পূর্বে রক্তশূন্যতা থাকলে, ক্রনিক ইনিমিয়া বা রক্তশূন্যতা থাকলে, যেমন বিস্নডিং পেপটিক আলসার, ক্রিমিজনিত প্রদাহ বা 'হুক' ওয়ার্মের কারণে। পাইলস, হেমোলাইটিক এনিমিয়া প্রভৃতি কারণে রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন পড়ে। এছাড়াও বস্নাড ক্যান্সার, থ্যালাসিমিয়া, হেমোফিলিয়া প্রভৃতি রোগে নির্দিষ্ট সময় পরপর রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন সত্যি যেন এক দুর্লভ ব্যাপার। সম্প্রতি কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়, 'অবৈধ বস্নাড ব্যাংকে দূষিত রক্তের রমরমা ব্যবসা চলছে প্রকাশ্যে'" ব্যাপারটি সত্যিই উদ্বেগজনক। যদিও এটা কোন নতুন বিষয় নয়। প্রয়োজনের সময় নিরাপদ রক্তের সহজ প্রাপ্তিতাই যেন দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠে। তথ্যমতে, রাজধানীর অলিতে-গলিতে গড়ে উঠেছে বিপুলসংখ্যক লাইসেন্সবিহীন বেসরকারি বস্নাড ব্যাংক। অবৈধ এসব বস্নাড ব্যাংকে পেশাদার রক্তদাতারা উচ্চমূল্যে রক্ত বিক্রি করছে। পেশাদার এই রক্তদাতাদের অধিকাংশই মাদকাসক্ত এবং দেহে বহন করছে এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি.সি.ই প্রভৃতি মরণ ব্যাধির ভাইরাস ও বিভিন্ন সংক্রামক জীবাণু। প্রকাশ্যে এসব অবৈধ লাইসেন্সবিহীন বস্নাড ব্যাংকে উচ্চমূল্যে কেনাবেচা হয়। এগুলো দেখার যেন কেউ নেই। এসব ক্ষেত্রে রক্তের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই ডোনারদের কাছ থেকে রক্ত নেয়া হয় এবং বস্নাড ব্যাগের গায়ে ব্যবহারের কোন সময়সীমা উলেস্নখ থাকে না। এছাড়া বিভিন্ন দালাল শ্রেণীর যোগসাজশ থাকায় গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা অনেকেই ওই সব রক্ত ক্রয় করে এবং তা রোগীর গায়ে দেয়া হয়। কোন অবস্থাতেই তা ফেরতযোগ্য নয়। ফলে, অনেকেই পড়ে বিপাকে।

রাজধানীতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ৯টি বেসরকারি বস্নাড ব্যাংক রয়েছে। এগুলো হচ্ছে: ল্যাব এইড হাসপাতাল, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন, কিডনী ফাউন্ডেশন, ইউনাইটেড হাসপাতাল, এ্যাপোলো হাসপাতাল, গ্রীন ভিউ হাসপাতাল, স্কয়ার এবং আদ-দ্বীন হাসপাতাল। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সূত্রে জানা যায়, রাজধানীসহ দেশে ৯৭টি বস্নাডব্যাংক আছে। এগুলো প্রধানত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ইন্সটিটিউট জেলা সদর হাসপাতাল। এছাড়া রয়েছে সরকার নিয়ন্ত্রিত হেমোফিলিয়া সেন্টার। এসব সেন্টারে সরকারিভাবে নিরাপদ রক্ত নিশ্চিতকরণের ব্যবস্থা রয়েছে। পেশাদার ডোনারদের রক্ত দেয়া সরকারি বস্নাড ব্যাংকে বন্ধ। এখানে রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের স্বেচ্ছায় নিরাপদ রক্তদানে উৎসাহিত করা হয়। রক্ত দেবার সময় এবং রক্ত পরিসঞ্চালনের সময় মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ পাঁচটি রোগের স্ক্রিনিং টেস্ট যেমন, হেপাটাইটিস বি.সি.এইচ আইভি, সিফিলিস, ম্যালেরিয়া অবশ্যই করা বাঞ্ছনীয়। স্ক্রিনিং টেস্ট ছাড়া রক্তদান এবং রক্তগ্রহণ অনৈতিক। দেশে নিরাপদ রক্ত সঞ্চালনের আইন থাকলেও তার কার্যকর কোন প্রয়োগ নেই। ৬ বছর পূর্বে এই আইন প্রণীত হলেও তা কার্যকর করার মত প্রয়োজনীয় বিধিমালা আজ পর্যন্ত প্রণীত হয়নি। নিরাপদ পরিসঞ্চালন আইন থাকলেও সেসঙ্গে কোন বিধিমালা না থাকার ফলে এই মারাত্মক সমস্যার উদ্ভব হয়েছে। ফলে এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি, সিফিলিস, গনোরিয়া প্রভৃতি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি দিনদিন বেড়ে চলছে। মানুষের জীবন রক্ষা করার পরিবর্তে জীবনকে আরো ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। এ সব পরিস্থিতির সামাল দেয়া প্রয়োজন। জনস্বাস্থ্যের জন্য এই মারাত্মক হুমকি প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে অতিদ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। সে সাথে প্রয়োজন নিরাপদ রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে রক্তবাহিত রোগগুলি প্রতিরোধ করা এবং সুস্বাস্থ্যের নিশ্চিত বিধান করা।

আইনসম্মত হয়নি: মোজাফফর

মূল কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কহীন একটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের চুক্তি এবং তার আওতায় ঋণ দেওয়া আইনসম্মত হয়নি বলে মনে করেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ।
সোমবার রাতে চুক্তির বিষয়টি প্রকাশ্য হওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় সুজন সভাপতি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ কথা বলেন। একই বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদ বলেন, ওই চুক্তি ব্যক্তি স্বার্থে করা হয়েছে।

গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের 'পারিবারিক' একটি প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠানের চুক্তি হয় ২০ বছর আগে। প্যাকেজেস কর্পোরেশন নামে ওই প্রতিষ্ঠানকে ১৯৯০ থেকে '৯৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে চুক্তি সই করেন ইউনূসের বাবা দুলা মিয়া সওদাগর।

মোজাফফর আহমেদ বলেন, "গ্রামীণ ব্যাংক দরিদ্র্য জনগণের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ দেবে। কোনো পারিবারিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তি করাটা নৈতিক ছিলো না। এটা আইনসম্মতও নয়।"

এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপহীনতারও সমালোচনা করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য।

তিনি বলেন, "তখন বাংলাদেশ ব্যাংক কেন ব্যবস্থা নেয়নি। সরকারের কর্তা ব্যক্তিরাও কেন ব্যবস্থা নেয়নি?"

এ বিষয়ে ফয়েজ আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এটা ব্যক্তি স্বার্থে করা হয়েছে। অধ্যাপক ইউনূস নিঃস্বার্থভাবে কখনোই কিছু করেননি। যা কিছু করেছেন, নিজের স্বার্থেই করেছেন।"

ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমসহ ইউনূসের অন্যান্য কার্যক্রমের প্র্রসঙ্গ টেনে তিনি আরো বলেন, "তার অন্যান্য কর্মকাণ্ডকে ন্যায্যভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা উচিৎ।"

ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম নিয়ে অনেকের সমালোচনা থাকলেও স¤প্রতি তহবিল স্থানান্তর নিয়ে বড় ধরনের বিতর্কে পড়েন গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউনূস।

গত ৩০ নভেম্বর নরওয়ে টেলিভিশনে প্রচারিত একটি প্রামাণ্যচিত্রে ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংককে দেওয়া কোটি কোটি বিদেশি ডলার অন্য একটি তহবিলে সরানোর অভিযোগ তোলা হয়। যার ভিত্তিতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এ প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।

বিষয়টি প্রকাশ্য হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন নেতা ইউনূসকে নিয়ে বক্রোক্তি করেন। তহবিল সরানোর বিষয়টি তদন্তও সরছে সরকার। যদিও গ্রামীণ ব্যাংক ও ইউনূসের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিদেশি কোনো অর্থ আত্মসাৎ কিংবা অপব্যবহার করা হয়নি।

ফাঁসির আসামিকে জামিন দেওয়ায় বিচারককে ভর্সৎসনা

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশ অমান্য করে শিল্পপতি আবদুল কাদের হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিকে জামিন দেওয়ায় একজন বিচারককে ভর্ৎসনা করেছেন আদালত। গতকাল সোমবার আপিল বিভাগে হাজির হয়ে ভুল স্বীকার করলে আপিল বিভাগ ওই বিচারককে ভর্ৎসনা করেন।

গত ৯ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের এক আদেশে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক (দায়রা জজ) শামসুন্নাহার বেগমকে ব্যক্তিগতভাবে হাজির হয়ে আপিল বিভাগে কারণ দর্শাতে বলা হয়। ফাঁসির আসামিকে কেন জামিন দেওয়া হলো, তা জানতে চান আপিল বিভাগ।
বিচারক শামসুন্নাহার বেগম গতকাল নির্ধারিত দিনে আপিল বিভাগে হাজির হয়ে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান। তিনি আদালতকে বলেন, ‘আমি বুঝতে পারিনি।’
এ সময় আদালত প্রশ্ন করেন, ‘এমন একটি মামলায় জামিন দিলেন কিসের ভিত্তিতে?’
বিচারক বলেন, ‘আসামিকে যে কারাগারে পাঠাতে হবে, আপিল বিভাগের আদেশে তা উল্লেখ ছিল না।’
আদালত এ সময় বলেন, ‘কোনো আসামির বিষয়ে উচ্চ আদালত এভাবে নির্দেশ দেয় না।’
বিচারক শামসুন্নাহার তখন বলেন, ‘ভুল হয়ে গেছে।’
পরে আদালত আরো শুনানির জন্য মঙ্গলবার (আজ) দিন ধার্য করেন।
২০০১ সালের ১৭ অক্টোবর বিকেলে রাজধানীর মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ৫১ নম্বর আক্তার চেম্বারের দ্বিতীয় তলায় সোনারগাঁও চিংড়ি প্রকল্পের কার্যালয়ে ঢুকে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবদুল কাদেরকে গুলি করে হত্যা করে কয়েকজন সন্ত্রাসী। ওই ঘটনায় নিহত কাদেরের বড় ভাই আলহাজ মোহাম্মদ ইউসুফ মামলা করেন। ২০০৪ সালের ২৯ জানুয়ারি ওই মামলার রায়ে আসামি মোবাইল কাদেরসহ সাতজনকে মৃত্যুদণ্ড দেন নিু আদালত। অন্য চার আসামিকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
মামলার রায়ের সময় আসামি মোবাইল কাদের পলাতক ছিল। আসামিদের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ ও কারাগারে থাকা সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০০৭ সালের ২৫ নভেম্বর মোবাইল কাদেরকে খালাস দেন।
হাইকোর্টের দেওয়া ওই রায়ের বিরুদ্ধে মামলার বাদী আপিল বিভাগে আপিল করার অনুমতি চান। শুনানি শেষে গত বছরের ২১ মার্চ আপিল বিভাগ বাদীর লিভ টু আপিল গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে মোবাইল কাদেরকে বিচারিক আদালতে আÍসমর্পণের নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী মোবাইল কাদের গত ৮ আগস্ট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ আÍসমর্পণ করে জামিন চাইলে বিচারক শামসুন্নাহার বেগম তা মঞ্জুর করেন।
এই মামলার অপর আসামি আতাউর রহমানের আরেকটি আপিল শুনানির সময় গত ৯ ডিসেম্বর মোবাইল কাদেরের জামিনের বিষয়টি আপিল বিভাগের নজরে পড়ে। আদালত মোবাইল কাদেরকে ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে পুনরায় বিচারিক আদালতে আÍসমর্পণের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে সাবেক বিচারক শামসুন্নাহার বেগমকে ব্যক্তিগতভাবে হাজির হয়ে আসামিকে জামিন দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে বলা হয়।
এদিকে মোবাইল কাদের গত ২৬ ডিসেম্বর আদালতে হাজির হয়ে আবার জামিন চান। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক তাঁর জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান এবং তার বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা ইস্যু করেন।

চট্টগ্রামে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ বসানোর প্রস্তাব নাকচ

ট্টগ্রামে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ বসানোর সরকারি প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভা। গতকাল সোমবার বিকেলে বিস্তারিত আলোচনার পর এ সিদ্ধান্ত হয় বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
তবে সুপ্রিম কোর্ট প্রয়োজন মনে করলে সংবিধানের ১০০ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে দেশের যেকোনো জায়গায় সার্কিট বেঞ্চ বসাতে পারেন বলে ফুলকোর্ট মতামত দিয়েছেন।
এদিকে এ সভা থেকে প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের নিজ নিজ সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
এ ছাড়া আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারকে তলব করায় এর তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে সংসদীয় কমিটির এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
তবে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার মো. আশরাফুল ইসলাম সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আলোচ্যসূচি ছাড়াও আদালতের উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা স্বাক্ষরিত না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলার এখতিয়ার তাঁর নেই।
প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের সভাপতিত্বে গতকাল বিকেলে আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের নিয়ে ফুলকোর্ট সভা অনুষ্ঠিত হয়। এক ঘণ্টারও বেশি সময় স্থায়ী এ সভায় চট্টগ্রামে সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন, টিআইবির প্রতিবেদন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় চট্টগ্রামে সার্কিট বেঞ্চ বসানোর বিষয়টি ছিল প্রধান আলোচ্য বিষয়। এ নিয়েই বেশি সময় আলোচনার পর প্রস্তাবটি অনুমোদন করেননি বিচারপতিরা।
সভায় একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতির কাছে নিজের সম্পদ বিবরণী দাখিল করার তথ্য জানিয়ে অন্যান্য বিচারপতিকে সম্পদের হিসাব দেওয়ার আহ্বান জানান। প্রধান বিচারপতির এ আহ্বানকে বিচারপতিরা স্বাগত জানান বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া বিচার বিভাগ সম্পর্কে টিআইবির প্রতিবেদন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন এবং টিআইবিকে চিঠি দেওয়ার তথ্য জানানো হয়। ঢালাওভাবে বিচার বিভাগকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলায় বিচারপতিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে।
বৈঠক শেষে সন্ধ্যার পর সাংবাদিকরা সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে সভার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তথ্য জানতে চান। রেজিস্ট্রার এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
চট্টগ্রামে সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনে প্রধানমন্ত্রী গত ৮ সেপ্টেম্বর প্রতিশ্র“তি দেন। এ প্রতিশ্র“তি বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে গত ২১ নভেম্বর আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়। আইন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ১ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারকে চিঠি দেয়।
আইন মন্ত্রণালয়ের বিচার শাখা-৪-এর সিনিয়র সহকারী সচিব আজিজ আহমেদ ভূঞা স্বাক্ষরিত চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠি সংযুক্ত করে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী গত ৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম সফরকালে যেসব প্রতিশ্র“তি দেন, এর মধ্যে ১ নম্বর ক্রমিকে উল্লিখিত বিষয়টি হচ্ছে, ‘চট্টগ্রামে হাইকোর্টের সার্কিট সেশন বেঞ্চ স্থাপন’-সংক্রান্ত।
উল্লেখ্য, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ সুপ্রিম কোর্টের আসনসংক্রান্ত বিধানটি হলো : ‘১০০। রাজধানীতে সুপ্রিম কোর্টের স্থায়ী আসন থাকিবে, তবে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লইয়া প্রধান বিচারপতি সময়ে সময়ে অন্য যে স্থান বা স্থানসমূহ নির্ধারণ করিবেন, সেই স্থান বা স্থানসমূহে হাইকোর্ট বিভাগের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হইতে পারিবে।’
মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, ‘এমতাবস্থায় চট্টগ্রামে সার্কিট সেশন বেঞ্চ স্থাপন-সংক্রান্ত বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রদত্ত প্রতিশ্র“তি অনুযায়ী সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদের আলোকে উক্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’
ওই চিঠি প্রধান বিচারপতির কাছে উপস্থাপন করেন রেজিস্ট্রার। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সুপ্রিম কোর্টে ফুলকোর্ট সভায় চট্টগ্রামে সার্কিট বেঞ্চ গঠনের ওপর আলোচনা হয়।
সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলাম গত বছর ৪ ফেব্র“য়ারি চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির এক সভায় চট্টগ্রামে সার্কিট বেঞ্চ হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেছিলেন।
এ ছাড়া রাজশাহী ও বরিশালের আইনজীবীরা ইতিমধ্যে সার্কিট বেঞ্চ গঠনের দাবি জানিয়ে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে সমিতিগুলো উল্লেখ করেছে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে ঢাকায় গিয়ে মামলা পরিচালনায় ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হতে হয়।
এইচ এম এরশাদ সরকারের সময় ১৯৮৮ সালের ৯ জুন সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সারা দেশে আরো ছয়টি স্থায়ী বেঞ্চ গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ওই বছরই ছয়টি শহরে হাইকোর্ট বেঞ্চ বসে। পরে আইনজীবীদের আন্দোলন এবং অষ্টম সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে রিট হওয়ায় সুপ্রিম কোর্ট ১০০ অনুচ্ছেদ সংশোধন অবৈধ ও বাতিল করেন। এ কারণে হাইকোর্টের ওই ছয়টি স্থায়ী বেঞ্চ বাতিল হয়।

সারা দেশে এক দামে না বেচলে মামলা by আবুল কাশেম ও রাজীব আহমেদ

চিনি ও ভোজ্য তেল সারা দেশের খুচরা বাজারে একই দামে বিক্রি হবে। দাম ঠিক করবেন ব্যবসায়ীরা, তবে লাগাম থাকবে সরকারের হাতে। বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে কেউ চিনি বা ভোজ্য তেল বিক্রি করলে সংশ্লিষ্ট পরিবেশকের বিরুদ্ধে মামলা করার সুযোগ থাকবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য-সংক্রান্ত এক নীতিমালার খসড়ায় এ কড়া ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এ-সংক্রান্ত এক বৈঠকে খসড়া নীতিমালাটির চূড়ান্ত অনুমোদন হওয়ার কথা। এটি কার্যকর হলে ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ করে নজরদারির মাধ্যমে বাজার স্থিতিশীল রাখা সহজ হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।
‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ ও বিতরণ নীতিমালা-২০১০’ নামে এ খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, চিনি ও ভোজ্য তেলের উৎপাদক, পরিশোধক, আমদানিকারক ও এফবিসিসিআইয়ের সহযোগিতায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ট্যারিফ কমিশনে বাজার মনিটরিং সেল স্থাপন করা হবে।
এ সেল একটি অভিন্ন মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি ঠিক করে দেবে। ওই পদ্ধতি অনুসরণ করেই খুচরা মূল্যসহ বিভিন্ন পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করতে হবে। দাম নির্ধারণের ক্ষমতা ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হলেও সরকার প্রয়োজনে দাম নির্ধারণে হস্তক্ষেপ করতে পারবে। এসব নীতি মনিটরিংয়ের জন্য তিন ধরনের কমিটি করা হবে। কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা বা থানা পর্যায়ে এই তিন ধরনের শক্তিশালী বাজার মনিটরিং কমিটি থাকবে। নীতিমালাটি চূড়ান্ত হয়ে জারি হওয়ার ৯০ দিন পর চিনি ও ভোজ্য তেলের ক্ষেত্রে বর্তমানে বিদ্যমান ডিও প্রথার পরিবর্তে পরিবেশক প্রথা চালু হবে। শুরুতে এ নীতিমালার আওতায় কেবল চিনি ও ভোজ্য তেল থাকলেও পরে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যও এর আওতায় আনা যাবে।
খসড়া নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় মনিটরিং কমিটিও প্রয়োজনে কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মিলগেট ও ওয়্যারহাউস মূল্য, পাইকারি বা বিতরণ মূল্য ও খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দিতে পারবে। এ কমিটির উপদেষ্টা হবেন বাণিজ্যমন্ত্রী এবং আহ্বায়ক হবেন বাণিজ্যসচিব। মিলমালিক বা আমদানিকারকদের কখনো পণ্যের দাম পরিবর্তন করে বাজারে ছাড়তে হলে আগেই তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিং সেলকে অবশ্যই জানাতে হবে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য-সংক্রান্ত এ নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করতে গত রবিবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বৈঠক করে। আজকের বৈঠকে এটি চূড়ান্ত হতে পারে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
খসড়া নীতিমালার ১৪.৩ অনুচ্ছেদে উপজেলা/থানা মনিটরিং কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, ‘কমিটি প্রয়োজন মনে করিলে কোন পরিবেশকের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট আইনে মামলা করিতে পারিবে।’ তবে এ কমিটি মূলত পরিবেশকদের কাছে বিতরণ মূল্য ও খুচরা মূল্য তদারক করবে। কোনো পরিবেশক বা খুচরা ব্যবসায়ী নির্দিষ্ট মূল্যের বেশিতে পণ্য বিক্রি করলে কমিটি মামলা ছাড়াও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে সুপারিশ করবে।
বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় ও স্থিতিশীল রাখার জন্যই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এসব উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান ও বাণিজ্যসচিব মো. গোলাম হোসেন একাধিকবার বলেছেন, বিদ্যমান প্রথার কারণে ডিও ব্যবসায়ীরা বাজারে অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি করছেন। এ অবস্থায় পরিবেশক প্রথা চালু হলে পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে বাজার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হবে।
গত রবিবার বাণিজ্যসচিব এ বিষয়ে বলেন, পরিবেশক প্রথা চালু হলে দেশের কোথাও খোলা ভোজ্য তেল ও খোলা চিনি বিক্রি করা যাবে না। বোতলজাত করে অথবা পলিপ্যাকে তা বিক্রি করতে হবে। মূলত পামঅয়েল ও সুপার পামঅয়েল আমদানি করে বাজারে তা সয়াবিন নামে বিক্রি করে ক্রেতাদের ঠকানো হচ্ছে। ভোক্তার হাতে পৌঁছার আগ পর্যন্ত যাতে ভোজ্য তেল ও চিনিতে কোনো ভেজাল মেশানো না যায়, সেই জন্যই খোলা ভোজ্য তেল ও চিনি বিক্রি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যসচিব গোলাম হোসেন।
পরিবেশকদের ডিওর মেয়াদ ১০ দিন, হস্তান্তরযোগ্য নয় : খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিতরণের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করবে উপজেলাগুলো। একেকটি কম্পানি উপজেলা পর্যায়ে তার পণ্যের জন্য একজন পরিবেশক নিয়োগ করবে। সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রতি থানায় এক বা একাধিক পরিবেশক নিয়োগ করা যাবে। একজন ব্যবসায়ী কেবল একটি কম্পানির পরিবেশক হতে পারবেন। পরিবেশকদের তালিকা জমা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক ও বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের বাজার মনিটরিং সেলে।
পরিবেশকরা কোনো কম্পানির পণ্য উত্তোলনের সময় ব্যাংকে বা অফিসে টাকা দেওয়ার বিপরীতে মানি রিসিপ্ট ছাড়াও ডেলিভারি চালান বা ডিও পাবেন। ওই ডিওতে ক্রেতা বা পরিবেশকের নাম ও ঠিকানা ছাড়াও পণ্যের নাম, পরিমাণ, একক মূল্য ও মোট মূল্য উল্লেখ থাকতে হবে। এই ডিওর সর্বোচ্চ মেয়াদ হবে ১০ দিন। কোনো অবস্থাতেই ডিওর মেয়াদ বাড়ানো যাবে না। ১০ দিন পার হলে ওই ডিওর বিপরীতে কোনো পণ্য সরবরাহ করা যাবে না। এই ডিও কোনো অবস্থাতেই হস্তান্তর করা যাবে না। এর ফলে আগের মতো নিজেদের মধ্যে ডিও লেনদেন করে দাম বাড়ানোর সুযোগ থাকবে না বলে মনে করছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
পণ্যের ওজন মাপার ক্ষেত্রে কেজি ও তরল পদার্থের ক্ষেত্রে লিটার মাপের একক হিসেবে ব্যবহƒত হবে। এ ছাড়া সব পরিবেশককে বাধ্যতামূলকভাবে ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টারের (ইসিআর) মাধ্যমে হিসাব সংরক্ষণ করতে হবে।
ব্যবসায়ীদের মত : শুরু থেকেই পরিবেশক প্রথা চালুর ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। সংগঠনটির সভাপতি এ কে আজাদ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অনেক মিলমালিক ও আমদানিকারক চাচ্ছেন না যে এটা হোক। ডিও প্রথা থাকলেই তাঁরা বেশি লাভবান হন। পণ্য সরবরাহ করার আগে শুধু ডিও বিক্রি করেই অগ্রিম অর্থ পাওয়া যায়। ওই টাকা দিয়েই ব্যবসা করতে পারেন তাঁরা।’ তিনি আরো বলেন, ‘মুনাফা ছাড়াও সমাজের প্রতি ব্যবসায়ীদের দায়িত্ব রয়েছে। ঢালাওভাবে এখন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর অভিযোগ উঠছে। এ অভিযোগ থেকে ব্যবসায়ীদের বের হয়ে আসতে হবে। এ ছাড়া এমন নয় যে, পরিবেশক প্রথা সরকার ব্যবসায়ীদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সরকার এটি করতে যাচ্ছে।’
এস আলম গ্র“পের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পরিবেশক প্রথা চালু হলে অনেক ভালো হবে। পণ্য বেচাকেনায় ঝামেলা থাকবে না। পণ্যের বাজারে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হবে শতভাগ।’ এ প্রথার দ্রুত বাস্তবায়ন চেয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারি নীতিমালার বাইরে গেলে সারা দেশে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে মামলা করা হোক। সরকার কঠোরভাবে এটি মোকাবিলা করুক।’
দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক বিএসআরএম গ্র“পের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নিত্যপণ্য খুচরা বাজারজাত করতে হলে প্যাকেট ও বোতলজাত করতে পারলে ভালো হয়। এতে পণ্যের দাম লেখা থাকে। কেউ রাতারাতি দাম বাড়াতে পারে না, কমাতেও পারবে না।’ তবে তিনি সারা দেশে একদামে বিক্রির বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, ‘বাজারে কোনো পণ্যের দাম ভিন্ন ভিন্ন হতেই পারে। কারণ আমরা আমদানিনির্ভর দেশ। একেক আমদানিকারকের ক্রয়মূল্য একেক রকম থাকবে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজার প্রতিদিনই ওঠানামা করে। যিনি কম দামে আমদানি করবেন, তাঁর কম দামে বিক্রির সুযোগ রয়েছে। যাঁর পরতা বেশি পড়বে, তিনি তো কম দামে বিক্রি করতে পারবেন না।’
ভোক্তারা চান কম দামে পণ্য : ঢাকার মিরপুর ১৩ নম্বর সেকশনের বাসিন্দা আজিজুল হক বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য বাজার মনিটরিং, তালিকা টাঙানো, দাম বেঁধে দেওয়াসহ অনেক কিছুই করা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ তেমন কিছুই হয়নি। এখন পরিবেশক চালু হলে যদি তেল-চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাহলে আমরা খুশি।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল হোসেন মিঞা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ডিও প্রথার কারণে অনেক সময় পণ্যের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়। নির্দিষ্ট সময়ে ব্যবসায়ীরা পণ্য উত্তোলন করেন না। আবার ডিও হাতবদলের কারণে পণ্যের দাম বাড়ে। ডিস্ট্রিবিউটরশিপ চালু হলে তা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে বলে আমরা আশা করি। সারা বিশ্বেই এ ব্যবস্থা চালু আছে। সার সরবরাহে সরকার এ ব্যবস্থা সফলভাবে চালু রেখেছে। ভোজ্য তেল ও চিনিসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা চালু হলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।

হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের জন্য তারেকের আবেদনের শুনানি ২০ জানুয়ারি

মুদ্রা পাচার মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানের রিট আবেদন খারিজ করে দেয়া হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেনি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। রায় স্থগিতের জন্যে করা আবেদনটি আগামী ২০ জানুয়ারি শুনানির জন্যে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এস কে সিনহা।

গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তারেক রহমানের করা রিট আবেদন খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট। রবিবার বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান হাইকোর্টের ওই রায় স্থগিতের আবেদন করেন।

আদালতে তারেক রহমানের পক্ষে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ এবং রাষ্ট্রপক্ষে এটর্নি জেনারেল এডভোকেট মাহবুবে আলম শুনানি করেন। ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর দুদকের সহকারী পরিচালক মো. ইব্রাহিম বাদি হয়ে তারেক রহমান ও ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। গত বছরের ৬ জুলাই এ মামলায় তারেক ও মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। মামলায় অভিযোগ করা হয়, তারেক ও মামুন ২০০৩ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন উপায়ে ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৩ টাকা সিঙ্গাপুরে পাচার করেছেন।

মালয়েশিয়ায় যাওয়ার খরচই উঠছে না by শরিফুল হাসান

রাজশাহীর শফিক মিয়া দুই লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করে ২০০৮ সালে মালয়েশিয়ায় এসেছেন। কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করে এখনো তিনি খরচের টাকাই তুলতে পারেননি।
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে একটি খাবারের হোটেলে দেখা শফিক মিয়ার সঙ্গে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বললেন, ‘মালয়েশিয়ায় যখন আসি, তখন আমার ছেলের বয়স ছিল ছয় মাস। এখন চার বছরে পা দিয়েছে। ছেলেটার মুখ খুব দেখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু কী নিয়ে যাব? জমিজমা সব বিক্রি করে এসেছি। টাকা জমাতে না পারলে পথে বসতে হবে। তাই ছেলেটার কথা ভাবি আর কাজ করি।’
মুন্সিগঞ্জের রাজু আহমেদ ভাগ্য বদলাতে দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা খরচ করে ২০০৭ সালে এসেছেন মালয়েশিয়ায়। কিন্তু ভাগ্যের পরিবর্তন তো দূরের কথা, সাড়ে তিন বছরেও খরচের টাকাটাই তুলতে পারেননি তিনি।
কুয়ালালামপুরের পেট্টোনাস টুইন টাওয়ারের সামনের রাস্তায় কথা হয় রাজুর সঙ্গে। একরাশ হতাশা নিয়ে বললেন, ‘সারা দিন পরিশ্রম করি। খালি কাজ করি। শুরুতে ৬০০ রিঙ্গিত বেতন পেতাম। এখন ৯০০ পাই। এ পর্যন্ত মাত্র দেড় লাখ টাকা বাড়িতে পাঠাইছি। পুরো টাকা যত দিন তুলতে না পারব, তত দিন মাটি কামড়ে পড়ে থাকব।’
মালয়েশিয়ায় আসা বাংলাদেশের বেশির ভাগ প্রবাসী কর্মীর এখন এ রকমই দশা। অতিরিক্ত অভিবাসন খরচ তাঁদের অনিশ্চিত জীবনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। কেউ জমি বিক্রি করে বা ধারদেনা করে এসেছেন মালয়েশিয়ায়। ভেবেছিলেন আয় করে পরিশোধ করে দেবেন। কিন্তু তিন-চার বছর কাজ করেও অধিকাংশ শ্রমিক এখনো খরচের টাকাই তুলতে পারেননি। খরচের টাকা ওঠাতে বেশি বেতনের লোভে অনেকে চলে যাচ্ছেন অন্য কোম্পানিতে। এতে কাগজপত্র-পাসপোর্ট সব হারিয়ে অবৈধ হতে হচ্ছে। শ্রমিকেরা আটকে যাচ্ছেন ফাঁদে। অনেকেই টাকা জমানোর জন্য জীবনের অনেক আনন্দ বাদ দিয়েছেন, গাদাগাদি করে থাকেন। অনেক সময় দিনে দুই বেলা খান, আবার খানও না।
মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত চার বছরে মালয়েশিয়ায় এসেছেন চার লাখ ৩৮ হাজার ৬৪০ জন বাংলাদেশি শ্রমিক। ৮৪ হাজার টাকা করে এই শ্রমিকদের দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তাঁদের দিতে হয়েছে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। গড়ে দুই লাখ টাকা ধরলে বাংলাদেশি শ্রমিকদের খরচ হয়েছে আট হাজার ৭৭২ কোটি টাকা।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০১০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, গত পাঁচ অর্থবছরে মালয়েশিয়া থেকে প্রবাসী-আয় (রেমিটেন্স) এসেছে এক হাজার ১৪১ ডলার বা সাত হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। মালয়েশিয়ার দক্ষ (প্রফেশনাল) অভিবাসী, ব্যবসায়ী এবং নতুন চার লাখ ও পুরোনো আড়াই লাখ শ্রমিক মিলে এই টাকা পাঠিয়েছেন। তার পরও গত চার বছরে শ্রমিকদের খরচ হওয়া অর্থের তুলনায় প্রবাসী-আয়ের পরিমাণ কম।
ছয় লাখ শ্রমিক চার বছরে সাত হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা পাঠালে গড়ে একজন শ্রমিক পাঠিয়েছেন এক লাখ ৩৩ হাজার ৬৬ টাকা। এই হিসাবে এক বছরে পাঠানো টাকার পরিমাণ ৩৩ হাজার টাকা এবং মাসে প্রায় তিন হাজার টাকা। অর্থাৎ একজন শ্রমিক তিন বছরের চুক্তিতে দুই লাখ টাকা খরচ করে এসে চার বছরে মাত্র এক লাখ ৩৩ হাজার টাকা আয় পাঠাতে পেরেছেন। সুতরাং খরচের বাকি অর্থ তুলতে ত্াদের অবৈধভাবে আরও দুই বছর থাকতে হবে।
মালয়েশিয়ার জাতীয় ব্যাংক ব্যাংক নিগারার বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়া থেকে একজন বিদেশি শ্রমিক গড়ে তিন হাজার টাকা দেশে পাঠায়। এশিয়া অঞ্চলের অভিবাসন ও প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করে বেসরকারি সংস্থা কারাম এশিয়া। এই সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদনেও একই রকম তথ্য এসেছে।
দুশ্চিন্তায় প্রবাসীরা: ‘কলিং’ ভিসায় আসা বাংলাদেশিদের তিন বছর মালয়েশিয়ায় থাকার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু প্রবাসীরা বলছেন, তিন বছরে তাঁরা নিজেদের খরচের টাকাই তুলতে পারেননি। তাই দেশে ফেরার কথা ভাবছেন না। বরং পুলিশের গ্রেপ্তারের আতঙ্ক আর অবৈধদের সমস্যা নিয়েই তাঁরা থাকবেন।
মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরে বাড়ি শাহীন আলমের সঙ্গে কুয়ালামপুরের বাতুকেপস চুঙ্গাইদুয়া এলাকায় দেখা। তিনি জানালেন, জমিজমা বিক্রি করে আড়াই লাখ টাকা খরচ করে এসেছেন। প্রথম চার মাস কোনো কাজ ছিল না। পরে লোহার ফ্যাক্টরিতে কাজ পান। অমানবিক পরিবেশে দিনে ১৪ ঘণ্টা কাজ করেন, বেতন মাত্র ৯০০ রিঙ্গিত। শাহীন বলেন, ‘খরচের টাকা তুলে আরও কয়েক লাখ টাকা না নিয়ে দেশে ফিরতে পারব না।’
টঙ্গীর আরিফুল ইসলাম দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা খরচ করে এসেছেন। ফার্নিচারের একটি দোকানে কাজ করেন তিনি। শুরুতে ৪০০ রিঙ্গিত পেতেন, এখন পান এক হাজার রিঙ্গিত। তিনি জানালেন, ‘টাকা না নিয়ে বাড়ি ফেরার কোনো ইচ্ছে নেই। যত কষ্টই হোক, খেয়ে না-খেয়ে এখানে থাকতেই হবে।’ চুয়াডাঙ্গার মোমিনপুরের জাহাঙ্গীর আলমেরও একই কথা, ‘সাড়ে তিন বছরে কেবল খরচের টাকা তুলেছি। কিছু টাকা জমাতে না পারলে দেশে ফিরতে পারব না। তাই অবৈধ হলেও থাকতে হবে।’
বরগুনার বাদল মায়ের গয়না বেচে দুই লাখ ১০ হাজার টাকা খরচ করে এসেছেন আড়াই বছর আগে। যত দিন পর্যন্ত টাকা তুলতে না পারবেন, কাজ করবেন। চট্টগ্রামের নুরুল আমিন বলেন, ‘খরচের টাকা তুলতে না পারলে এখানে আসার কোনো মানে থাকবে না। তাই যত কষ্টই হোক, থাকতে হবে।’ একই পরিস্থিতি বগুড়ার উজ্জ্বল হোসেন, রাজধানীর বাসাবো এলাকার কদমতলার আবদুর রাজ্জাকসহ আরও অনেকের।
কম খরচে কুয়ালালমপুরের কোতারিয়ার বাংলা মার্কেট এলাকায় খেতে আসেন অনেকে। এখানকার রাজধানী রেস্টুরেন্টের মালিক কাজী সালাউদ্দিন ২০ বছর ধরে মালয়েশিয়ায় আছেন। জানালেন, সব শ্রমিকের একই সমস্যা। এবার তাঁদের কাছ থেকে এত বেশি টাকা নেওয়া হয়েছে যে খরচের টাকা তুলতেই অনেকের জীবন চলে যাচ্ছে। অনেকের খাওয়ার টাকাও থাকে না। অনেকে শুধু ডাল দিয়ে ভাত খেয়ে চলে যান।
মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মাসুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা এখানে আছেন, তাঁরা ভালো আয় করছেন। কিন্তু কলিং ভিসায় যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরা কিছু সমস্যায় পড়েছেন। প্রথম দিকে কাজ পাননি। সে সময় তো ভয়াবহ অবস্থা হয়েছিল। সেই তুলনায় এখন পরিস্থিতি ভালো। সবাই কাজ পেয়েছেন। যত দিন যাচ্ছে, তাঁদের বেতনও বাড়ছে।
বেসরকারি সংস্থা কারাম এশিয়ার প্রধান হারুন-অর-রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, উন্নয়নশীল অনেক দেশ এখন যেকোনো মূল্যে তার শ্রমিকদের বিদেশে পাঠিয়ে রেমিটেন্স আনতে চাইছে। সরকারগুলো ভাবছে, বিদেশে শ্রমিক পাঠালে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু অতিরিক্ত অভিবাসন খরচ আর প্রতারণার চক্রে পড়ছেন সাধারণ শ্রমিকেরা। খরচের টাকা তুলতে গিয়ে তাঁদের মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। যাঁর দক্ষতা ও শিক্ষা যত কম, তাঁর ক্ষেত্রে এই সমস্যা তত বেশি। এভাবে টাকার পেছনে দৌড়াতে গিয়ে একজন শ্রমিক তাঁর সব অধিকার হারাচ্ছেন।

আ.লীগের একলা চলা ও শরিকদের অবহেলা by জাহাঙ্গীর আলম

রকারে অংশীদারি থাকলেও গত দুই বছরে মহাজোটের শরিকদের মধ্যে খুব একটা সমন্বয় বা যোগাযোগ ছিল না। বলা যায়, অনেকটা নিষ্ক্রিয় ছিল মহাজোটের কর্মকাণ্ড। আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে হাতে গোনা কয়েকটি। ক্ষমতায় আসার পর সরকারের একলা চলার প্রবণতা কখনো কখনো শরিকদের ক্ষুব্ধ করেছে।

বড় দল হিসেবে শরিকদের গুরুত্ব কম দেওয়া বা অবহেলা করার অভিযোগ রয়েছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। প্রকাশ্যে কিছু না বললেও প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে মহাজোটে ক্ষোভ-বেদনা আছে। তবে পৌরসভা নির্বাচন ঘিরে সম্প্রতি মহাজোটের তৎপরতা বেড়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ও জাতীয় পার্টির সমন্বয়ে গড়া মহাজোট ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি ১৪ দলের শরিক সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া ও জাতীয় পার্টির জি এম কাদেরকে নিয়ে মহাজোটের মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। ১৪ দলের অপর দুই শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন ও জাসদের হাসানুল হক ইনুকে মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মজিবুর রহমানকেও সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি করা হয়। ১৪ দলের দুই শরিক ন্যাপের আমেনা বেগম ও গণতন্ত্রী পার্টির রুবী রহমানকে সংরক্ষিত মহিলা আসনে সাংসদ মনোনীত করা হয়।
এসব প্রাপ্তি সম্পর্কে শরিক দলের নেতাদের মত হচ্ছে, পদ বা সরকারে অবস্থান বড় কথা নয়। দল হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কি না, সেটাই দেখার বিষয়। তাঁদের অভিযোগ, সরকারের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে মহাজোটকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে অংশীদারিত্ব থাকলেও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সমন্বয় নেই। এ কারণে মফস্বল পর্যায়েও শরিক দলের নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ আছে।
শরিক দলের নেতারা মনে করেন, মহাজোট নিষ্ক্রিয় থাকায় সরকারের সাফল্য অনুধাবন করা সম্ভব হচ্ছে না। মহাজোটে অংশীদারিত্ব অনুধাবন করা গেলে আরও অনেক দূর এগোনো সম্ভব হতো।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য ওবায়দুল কাদের এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, শরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো দরকার। সমন্বয়ের উদ্যোগ নেওয়ার দায়িত্বও বড় দল হিসেবে আওয়ামী লীগের।
সরকার গঠনের পর প্রথম বর্ষপূর্তিতে প্রধানমন্ত্রীর তখনকার সরকারি বাসভবন যমুনায় মহাজোটের সব শরিকদের নিয়ে প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এ বৈঠকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদসহ শরিকদের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। এরপর এক বছরে ১৪ দল ও মহাজোটের কয়েকটি বৈঠক হয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও শরিক দলের নেতাদের কথাবার্তা হয়। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে মহাজোটের সমন্বয়ক করা হয়। গত নভেম্বরে ১৪ দলের বৈঠক মাসে একবার হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এক মাস পর গত ৩১ ডিসেম্বর ১৪ দলের মাসিক বৈঠক হয়। পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাসহ দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির কয়েক দফা বৈঠক হয়। জাতীয় পার্টিকে ১৯টি পৌরসভায় মহাজোটগতভাবে প্রার্থী সমর্থন দেওয়া হয়।
ক্ষোভ-বেদনা থাকলেও গত দুই বছর শরিকদের কেউ মহাজোটের ঐক্য-পরিপন্থী কিছু বলেনি। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনো বক্তব্যও কেউ দেয়নি। বরং মহাজোটের প্রয়োজনীয়তা এবং একে আরও সক্রিয় করার ব্যাপারে শরিকদের সবাই এক বাক্যে একমত।
শরিকদের মধ্যে জাতীয় পার্টির অভিযোগ বেশি। জাপার নেতারা বলেন, গত দুই বছরে মহাজোটের এজেন্ডাভিত্তিক কোনো বৈঠক হয়নি। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তাঁদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে না। এইচ এম এরশাদকে মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ দূত করার বিষয়টিও এগোয়নি।
সরকারের অবস্থান সম্পর্কে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় পার্টির এক নেতা বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীকে ছেড়ে যাইনি। উনিও আমাদের বের করে দেননি, আমাদের রেখেছেন।’
জাতীয় পার্টির নেতাদের অভিযোগ, পৌরসভা নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ১৯টিতে সমর্থন দেওয়া হলেও আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীরা সেসব পৌরসভা থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। জাপার মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, জনগণের কল্যাণে মহাজোট নামে যে ঐক্য স্থাপিত হয়েছে, তা থাকবে। কিছুটা মান-অভিমান থাকলেও মহাজোটের ঐক্য জোরদার করার বিকল্প নেই।
১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মহাজোটে লিয়াজোঁ শিথিল। এটা বাড়ানো দরকার। তা ছাড়া ভারতসহ অনেক দেশেই শরিক দলের মধ্যে ‘কোর’ কমিটি থাকে। এটা এখানে নেই। মহাজোটে কোর কমিটি থাকলে ভালো হতো। জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও মহাজোটকে কার্যকর রাখা দরকার। তাঁদের মতে, বিরোধী দল এ মুহূর্তে উঠে-পড়ে লেগেছে। তাই মহাজোট কার্যকর রাখা জরুরি। তাঁদের অভিযোগ, পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে ১৪ দলে কার্যকর কোনো আলোচনা হয়নি। কিছু জায়গায় ছাড় দেওয়া হলেও বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি রয়েছে।
১৪ দলের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন প্রথম আলোকে বলেন, অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে ১৪ দলের ঐক্য আরও শক্তিশালী করা দরকার।
১৪ দলের আরেক নেতা জাসদের হাসানুল হক ইনু বলেন, মৌখিকভাবে ঐক্যের প্রতি সমর্থন দেখানো হলেও মিত্রদের মহাঐক্যকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ গাফিলতি দেখিয়েছে। বিগত সময়ে তাদের একলা চলার নীতিটাই প্রাধান্য পেয়েছে। ঐক্যের অংশীদারদের অবহেলা ও উপেক্ষা করা হয়েছে।
শরিকদের এসব অভিযোগ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের সব কথা যে সঙ্গত, তা ঠিক নয়। আবার ক্ষোভ-বিক্ষোভও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে যোগাযোগ বাড়ানো দরকার। বসাবসি হলে দূরত্ব কমে, সম্পর্ক বাড়ে।

রাজনৈতিক সংকটে পাকিস্তান

পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক দল মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট (এমকিউএম) সরকার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় বড় ধরনের রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে দেশটি। সংকট মোকাবিলায় গতকাল সোমবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি।

পাকিস্তান এমনিতেই নানা ধরনের সংকটে ভুগছে। ২০১০ সালের ভয়াবহ বন্যার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে দেশটি। এছাড়া আফগান সীমান্তবর্তী উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে তালেবান ও আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট জঙ্গিদের নিয়েও সংকটে রয়েছে পাকিস্তান।
গত রোববার সরকার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় এমকিউএম। এর আগে দলটির দুইজন মন্ত্রী পদত্যাগ করেন।
এমকিউএমের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পেট্রোলিয়াম পণ্যের নয় শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি ও দুর্নীতির প্রতিবাদে তারা বিরোধী দলে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এমকিউএমের সিন্ধু প্রদেশের মন্ত্রিসভার স্বাস্থ্যমন্ত্রী সগির আহমেদ বলেন, বর্তমান সরকারসহ আমরা যে কাউকেই সমর্থন দেব, যারা পেট্রোলিয়াম পণ্যের দাম কমিয়ে দেবে। তিনি আরও বলেন ‘বিরোধী দলে থাকলেও সরকারের সব ইতিবাচক পদক্ষেপের প্রতি আমরা সমর্থন দেব। তবে সরকারের গণ-বিরোধী পদক্ষেপের খোলাখুলি বিরোধিতা করা হবে।’
কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করলেও এমকিউএম দক্ষিণাঞ্চলীয় সিন্ধু প্রদেশে পিপিপি সরকারের জোট সঙ্গী।
চলমান সংকট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি গতকাল পাকিস্তান মুসলিম লিগ কায়েদ-ই-আজম (পিএমএল-কিউ) নেতা চৌধুরী সুজাত হোসেন ও পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এর নেতা নওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ শরীফের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
পিএমএল-কিউ নেতা চৌধুরী সুজাত হোসেন গিলানির সঙ্গে বৈঠকে বলেছেন তিনি তাঁর দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা সিদ্ধান্ত জানাবেন। তবে তিনি ইঙ্গিত দেন যে তার দল হয়তো প্রধানমন্ত্রীকেই সমর্থন দেবে। সুজাত বলেন, আমরা জোট সরকারকে সমর্থন দেব একটি শর্তে- আর তা হচ্ছে পাকিস্তানের জনগণ এখন এসব সমস্যার মধ্যে রয়েছে তার সমাধান তাদের করতে হবে।
এমকিউএম সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ায় পিপিপি পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে যাচ্ছে। বিরোধী দলগুলো যদি অনাস্থা ভোট পাশ করানোর জন্য পরস্পরের সঙ্গে হাত মেলায় তাহলে সরকারের পতন হতে পারে।
৩৪২ সদস্যের জাতীয় পরিষদে এমকিউএমের আসন সংখ্যা ২৫টি। এমকিউএম ছাড়া পিপিপি জোটের আসন দাঁড়াবে ১৬০টিতে। যা সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ১৭২ আসনের চেয়ে ১২টি কম।
পার্লামেন্টে আস্থা ভোট আহ্বান করতে প্রধানমন্ত্রী বাধ্য নন। কিন্তু কোন আইন পাশ করতে মারাত্মক সংকটের মুখে পড়তে পারেন গিলানি। জুনে বাজেট পাশে কোনো ধরনের ব্যর্থতা দেশটিকে আগাম নির্বাচনের দিকে ঠেলে দেবে।
সরকারের ওপর প্রথম আঘাত আসে ধর্মভিত্তিক দল জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম ফজল (জেইউআইএফ) থেকে। প্রধানমন্ত্রী গিলানি দলটির একজন মন্ত্রীকে বরখাস্ত করার পর গত মাসে সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয় দলটি। দলটির মহাসচিব আবদুল গফুর হায়দারি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তাঁর সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন। এই মুহুর্তে পদত্যাগ করা তাঁর জন্য সবচেয়ে ভালো কাজ হবে।’
বর্তমান পরিস্থিতিতে সবার চোখ এখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানের প্রধান বিরোধী দল পিএমএল-এনের দিকে। পার্লামেন্টে সম্ভাব্য অনাস্থা প্রস্তাব আনার ক্ষেত্রে দলটির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তবে এই মুহুর্তে অনাস্থা ভোটের ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক হাসান আসকারি। তিনি বলেন, নওয়াজ শরীফ তাৎক্ষনিকভাবে সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশের অগুনতি সমস্যার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী নন বলেই তাঁর কাছে মনে হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, শরীফের দল ও এমকিউএমের মধ্যকার অস্বস্তিকর সম্পর্কের কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য সরকার কমপক্ষে তিন থেকে চার সপ্তাহ সময় পেয়ে যাবে।
আসকারি বলেন, সরকার এখন ছোট ছোট জোটগুলোর সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করবে। সুতরাং সামনে অনেক রাজনীতি দেখা যাবে। এএফপি, রয়টার্স ও ডন।

বিচারবহির্ভূত হত্যার তদন্ত হওয়া উচিত: মরিয়ার্টি

বিচারবহির্ভূত প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়া উচিত। র্যাব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে যাঁরা মারা গেলেন, তাঁদের বিষয়ে মানুষের জানার অধিকার আছে। প্রতিবছরই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
এই হত্যাকাণ্ডগুলো সম্পর্কে সরকারের উচিত তদন্ত করা। আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি এ কথা বলেন। তিনি সেখানে ‘সুশাসন: বিশ্বজুড়ে সামাজিক উন্নয়নে জ্ঞান তৈরি’ শীর্ষক একটি সিম্পোজিয়ামে অংশ নেন। বাংলাদেশের ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্রের মনমাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট যৌথভাবে এ সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করে।
বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী ও ইসলামি জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি) সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের যে পর্যালোচনা উইকিলিকসে প্রকাশিত হয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে জেমস মরিয়ার্টি বলেন, ‘আমরা আমাদের কর্মক্ষেত্রের বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াশিংটনে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাতে চেষ্টা করি। তাঁরা যাতে আমাদের কর্মক্ষেত্রের পরিস্থিতি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পান। এই আলোচনার মানে এই না যে, এটাই যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নীতি বা অবস্থান।’
উইকিলিকসের নথি প্রকাশের ফলে ভবিষ্যতে বেশ কিছু সমস্যায় পড়তে হবে উল্লেখ করে মরিয়ার্টি বলেন, ‘এই নথি প্রকাশের ফলে সবচেয়ে বড় যে সমস্যা তৈরি হয়েছে তা হলো—ভবিষ্যতে জনসমক্ষে কোনো বিষয় প্রকাশ করতে বা তুলে ধরতে গেলে তখন অনেকে বলবে, এটা তো উইকিলিকসের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে আগেই প্রকাশিত হয়ে গেছে। আমরা তো মরিয়ার্টির অবস্থান সম্পর্কে জানি।’
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের সামাজিক উন্নয়নে ব্র্যাক ও গ্রামীণ ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংক এবং ব্যক্তি হিসেবে অধ্যাপক ইউনূস সামাজিক উন্নয়নে নতুন ধারার সূচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতেও আমরা ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংককে সহায়তা করে যাব।’
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে বললে জেমস মরিয়ার্টি বলেন, ‘আমরা যেকোনো সরকারের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসনের কথা বলে থাকি। বিরোধী দলের মতামত নিয়ে কাজ করার পক্ষেও আমাদের অবস্থান আমরা সব সরকারের সময় জানিয়েছি। একই সঙ্গে আমরা এও আশা করি, বিরোধী দল সংসদে গিয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি রবার্ট ব্ল্যাকের বাংলাদেশ সফরের উদ্দেশ্য জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, রবার্ট ব্ল্যাক যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হয়ে বাংলাদেশ বিষয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। মূলত খাদ্যনিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য খাত নিয়ে আলোচনা করতে তিনি বাংলাদেশে আসছেন।

ফুলকোর্ট সভায় বিচারপতিরাঃ বাংলাদেশের সংসদ সার্বভৌম নয়

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা মনে করেন, বাংলাদেশের সংসদ সার্বভৌম নয়। তাই সংসদীয় কমিটির কাছে জবাবদিহি করতে সুপ্রিম কোর্ট বাধ্য নয়। সোমবার বিকালে সুপ্রিম কোর্টের সম্মেলন কক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের ফুলকোর্ট সভায় বিচারপতিরা এ মত প্রকাশ করেন।

দুই বিভাগের বিচারপতিদের নিয়ে ওই সভা করেন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। সভায় উপস্থিত নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সুপ্রিম কোর্টের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য জানান।

সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারকে সংসদীয় কমিটির তলব করার ঘটনাকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পরিপন্থী হিসেবে অভিহিত করা হয় সভায়। গত ২০ ডিসেম্বর আইন মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত জানান, সংসদীয় কমিটি চাইলে যেকোনো সরকারি চাকরিজীবীকে কমিটির সামনে হাজির হতে হবেÑ এমন একটি আইনের খসড়া তৈরি করেছে আইন মন্ত্রণালয়।

কমিটির সভা শেষে সংসদ ভবনের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, "কমিটির আগামী বৈঠকে মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে খসড়া আইন উপস্থাপন করবে।" এর পরদিন (২১ ডিসেম্বর) কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিচার বিভাগ কার কাছে জবাবদিহি করবে সে বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও বিচার বিভাগের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি।

সুপ্রিম কোর্টের সোমবারের ফুলকোট সভায়র্ চট্টগ্রামে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ গঠন প্রসঙ্গে বলা হয়, সরকারের প্রস্তাব অনুযায়ী চট্টগ্রামে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ গঠনের সিদ্ধান্ত নেবে না সুপ্রিম কোর্ট। এ বেঞ্চ গঠনে গতবছর আশা প্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সভায় বলা হয়, "সরকারের প্রস্তাব অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট সার্কিট বেঞ্চ গঠনের সিদ্ধান্ত নেবে না। সুপ্রিম কোর্ট যদি মনে করে সার্কিট বেঞ্চ গঠন প্রয়োজন তাহলে তারা নিজেরাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।"

সংসদের কাছে সুপ্রিম কোর্টের জবাবদিহিতার বিষয়ে সভায় বলা হয়, "বাংলাদেশের সংসদ সার্বভৌম নয়। যুক্তরাজ্যের সংসদ সার্বভৌম হলেও বিচারপতিদের জবাবদিহিতার জন্য কখনো ডাকেনি।" এছাড়া বিচার বিভাগের দুর্নীতি নিয়ে টিআইবি'র প্রতিবেদন এবং এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের পদক্ষেপের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি উপস্থিত বিচারপতিদের অবহিত করেন।

সভায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের সম্পদের হিসাব দেওয়ারও আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতি গত ৩০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির কাছে তার সম্পদের হিসাব দিয়েছেন জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, "সুপ্রিম কোর্টের সব বিচারপতি তাদের সম্পদের হিসাব দিলে স্বচ্ছতা বাড়বে।"

'প্রকৃত' যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সমর্থন দেবে বিএনপি

বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া বলেছেন, 'প্রকৃত' যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিএনপিও চায়। তাদের বিচার করা হলে সরকারকে সমর্থন দেবে দলটি। সেইসঙ্গে তিনি দাবি করেন যে, ক্ষমতাসীন দলের ভেতরে, ডানে-বাঁয়ে যুদ্ধাপরাধী রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিচ্যুত ৪৩ জন শিক্ষক সোমবার রাতে গুলশানের কার্যালয়ে খালেদার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি এ সব কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন অভিযোগ করেন, সরকার প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করে যারা সরকারের সমালোচনা করছে বা বিরুদ্ধে কথা বলছে, তাদেরকে যুদ্ধাপরাধী কিংবা জঙ্গি বলে গ্রেপ্তার করছে। তা দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আওয়ামী লীগে থাকলে রাজাকারও মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যায়।

তিনি বলেন, "আমরাও প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাই। কিন্তু কারা ওই সময় প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে ক্ষমা করেছিল? সত্যিকার যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে আসুন, আমরা ওদের বিচারে সরকারকে সমর্থন জানাব।'' বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব ) এর সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম আজিজুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেনের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিচ্যুত অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারি অধ্যাপকসহ ৪৩ জন শিক্ষক-চিকিৎসক রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করেন।

স¤প্রতি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের এসব শিক্ষক-চিকিৎসককে চাকরিচ্যুত করা হয়। এ সময় চাকরিচ্যুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মধ্যে অধ্যাপক সিরাজউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক মতিউর রহমান মোল্লা, অধ্যাপক শাহিদা আখতার, অধ্যাপক জাহাঙ্গীর কবির, অধ্যাপক নাসিমা আখতার জাহান, অধ্যাপক আবুল কাশেমসহ ১৩ জন অধ্যাপক, ১০ জন সহযোগী অধ্যাপক, ১৫ জন সহকারি অধ্যাপক ও পাঁচজন চিকিৎসক ছিলেন।

দুই বছরে মহাজোট সরকারের কোনো 'সফলতা' নেই বলে দাবি করেন বিরোধী দলীয় নেতা। তিনি বলেন, "দেশের মানুষ আর এই ব্যর্থ সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তারা অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। তাই আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।''

স¤প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের চাকরিচ্যুতির ঘটনার নিন্দা জানান খালেদা। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার এভাবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে যোগ্য ব্যক্তিদের চাকুরিচ্যুত করে নিজেদের অনুগতদের অবৈধভাবে নিয়োগ দিচ্ছে। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে অবশ্যই ওইসব নিয়োগ বাতিল করা হবে।

সেইসঙ্গে খালেদা আশ্বাস দেন যে, বর্তমান সরকারের আমলে চাকরিচ্যুত চিকিৎসকদের পুনর্বহালসহ মূল্যায়ন করা হবে। বিএনপি চেয়ারপারসন অভিযোগ করেন, সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশের সব প্রতিষ্ঠান থেকে যোগ্য কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে দলীয় অযোগ্য ব্যক্তিদের উচ্চ পদে বসাচ্ছে। ফলে সব কিছুই স্থবির হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ একটি অকার্যকর রাষ্ট্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, "অঘোষিত বাকশালের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনা করছেন। তিনি (হাসিনা) কেবল সরকার প্রধানই নন, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি ও পুলিশের আইজির দায়িত্বও পালন করছেন। এক ব্যক্তিই রাষ্ট্রের সব দায়িত্ব নিয়ে বসে আছেন। আদালতও নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি।''

এ সময় অধ্যাপক আবদুল কুদ্দুস, ড্যাব সভাপতি এ কে এম আজিজুল হক, মহাসচিব এ জেড এম জাহিদ হোসেন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন। বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মাযহারুল ইসলাম দোলনসহ ড্যাব নেতারা উপস্থিত ছিলেন।