Tuesday, January 25, 2011

শুকনো মরু হয়ে গিয়েছিল নায়াগ্রা

প্রাকৃতিক শক্তির এক অফুরান উৎস নায়াগ্রা জলপ্রপাত। এই জলপ্রপাত দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে পড়ছে ৬০ হাজার গ্যালনের বেশি পানি। কামান দাগার শব্দ সেই জলরাশির কান ফাটানো গর্জনের কাছে ম্লান। এমন শক্তিধর জলপ্রপাত যদি শুকিয়ে খটখটে মরুর মতো হয়ে যায়, তাহলে কেমন দেখাবে?

নায়াগ্রা সম্পর্কে যাঁরা জানেন, তাঁরা মোটেও পাত্তা দেবেন না এই প্রশ্ন। অনেকে বরং বাঁকা হেসে বলবেন, এটা আবার প্রশ্ন হলো? কিন্তু বাস্তব ঘটনা হচ্ছে, আজ থেকে ৪১ বছর আগে নায়াগ্রা জলপ্রপাতের একটি বড় অংশ সত্যিই ঊষর মরুর রূপ নিয়েছিল। নায়াগ্রা নদীতে অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে জলপ্রপাতের প্রবাহ সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল অন্যদিকে। ১৯৬৯ সালে জলপ্রপাতের তলদেশ থেকে আলগা পাথর অপসারণের লক্ষ্যে এ ব্যবস্থা নিয়েছিল মার্কিন কর্তৃপক্ষ। এর সাক্ষ্য বহন করছে ওই সময় তোলা কিছু ছবি।
দীর্ঘ চার দশক পর এসব ছবি উদ্ধার করেন যুক্তরাষ্ট্রের কানেটিকাট অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা রাস গ্ল্যাসন। তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন এসব ছবি তোলেন। পুরোনো একটি জুতার বাক্স থেকে ছবিগুলো উদ্ধার করা হয়। বাক্সটি পড়ে ছিল ওই বাড়ির গ্যারেজে।
এ ব্যাপারে গ্ল্যাসন বলেন, ‘১৯৬৯ সালের জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সেনাসদস্যরা জলপ্রপাতের ওই অংশে উন্নয়নমূলক কাজ করেন। এ সময় আমার শ্বশুরবাড়ির স্বজনেরা কয়েকবার সেখানে গিয়ে এসব ছবি তোলেন।’
১৯৩১ ও ১৯৫৪ সালে দুটি পাথরধসের ঘটনায় জলপ্রপাতের তলদেশে পাথরের বড়সড় স্তূপ জমে গিয়েছিল। ১৯৬৫ সালে স্থানীয় পত্রিকা নায়াগ্রা ফলস গেজেট-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, জমে থাকা এসব পাথর না সরালে জলপ্রপাতের ধারা কমতে কমতে একেবারে থেমে যেতে পারে। এর চার বছর পর সেনা প্রকৌশলীরা এসব পাথর সরানোর কাজে নামেন। এ জন্য নায়াগ্রা নদীতে ৬০০ ফুট চওড়া একটি বাঁধ নির্মাণ করেন তাঁরা। ওই বাঁধ নির্মাণে ২৭ হাজার ৮০০ টন পাথর লেগেছিল। জলপ্রপাতের গতিপথ বদলে বইয়ে দেওয়া হয় কানাডীয় অংশ দিয়ে, যা হর্সশু ফলস নামে পরিচিত। এর আগে ১২ হাজার বছর ধরে একটানা বয়ে গেছে এই জলপ্রপাত।
জলপ্রপাতের তলদেশ থেকে পাথর অপসারণকালে হাজার হাজার দর্শক এই ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়। ১৯৬৯ সালের ২৫ নভেম্বর দুই হাজার ৬৫০ জন দর্শকের সামনে সরিয়ে ফেলা হয় বাঁধ। তখন সগর্জনে আবার লাফিয়ে পড়তে থাকে জলপ্রপাতের অফুরান পানি। ডেইলি মেইল অনলাইন।

ভালোবাসা, জীবন—সব হেরেছে যৌতুকের কাছে!

ভালোবেসে সুমন সরদারকে বিয়ে করেছিলেন আইরিন আক্তার। যৌতুকের এক লাখ টাকা দিতে না পারায় সেই মনের মানুষের হাতেই খুন হতে হলো তাঁকে।

আইরিনকে খুন করেই ক্ষান্ত হননি সুমন সরদার, তাঁর লাশটিও গুম করার চেষ্টা চালিয়েছেন। পুলিশের কাছে এসব কথা স্বীকারও করেছেন তিনি। শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার চরমালগাঁও গ্রামে ১৪ ডিসেম্বর এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় নিহত আইরিনের মা লিপি বেগম গত শুক্রবার ডামুড্যা থানায় সুমন সরদারসহ সাতজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। ডামুড্যা থানার পুলিশ গত বৃহস্পতিবার রাতে একটি বিল থেকে আইরিনের লাশ উদ্ধার করেছে। একই দিন তারা সুমন সরদারকে গ্রেপ্তার করেছে।
ডামুড্যা থানা ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, চরমালগাঁও গ্রামের মজিবর সরদারের ছেলে সুমন সদর উপজেলার রুদ্রকর গ্রামের আব্বাস সরদারের মেয়ে আইরিন আক্তারকে (১৮) ছয় মাস আগে বিয়ে করেন। বিয়ের আগে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ের পর সুমন বদলে যান। তিনি আইরিনকে তাঁর মা-বাবার কাছ থেকে এক লাখ টাকা এনে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। টাকা না দেওয়ায় আইরিনকে তাঁর স্বামীর বাড়ি নেওয়া হয়নি। ১৩ ডিসেম্বর সুমন তাঁর শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসেন। এ সময় তিনি শাশুড়ি ও স্ত্রীকে টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে ঝগড়া হয়। পরের দিন স্ত্রীকে নিয়ে কেনাকাটা করার কথা বলে সুমন শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে যান।
মামলার এজাহার সূত্রে আরও জানা গেছে, ১৪ ডিসেম্বর রাতে কয়েকজন সহযোগীর সহায়তায় সুমন তাঁর স্ত্রী আইরিনকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরে তাঁরা আইরিনের লাশ বালিয়াকান্দি বিলের কচুরিপানার নিচে লুকিয়ে রাখেন। ১৬ ডিসেম্বর সুমনের মা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে জানান, তাঁর ছেলে আইরিনকে হত্যা করেছে। ইউপি চেয়ারম্যান আ. রাজ্জাক বিষয়টি ডামুড্যা থানার পুলিশকে জানান। পুলিশ সুমনকে আটক করে তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বালিয়াকান্দি বিল থেকে আইরিনের লাশ উদ্ধার করে।
ডামুড্যা থানা হাজতে থাকা সুমন সরদার বলেন, ‘আমার শাশুড়ি আমার সঙ্গে সব সময় দুর্ব্যবহার করতেন। তিনি আমাদের বিয়ে মেনে নিতে পারেননি। তাই মানুষের পরামর্শে ও সহযোগিতায় আইরিনকে হত্যা করেছি।’
ডামুড্যা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল কাদির ভূঁইয়া জানান, সুমন স্ত্রী আইরিনকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আইরিনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

মিসবাহউদ্দিন: অনেক কিছুর একজন by নীলুফার বেগম

মিসবাহউদ্দিন খান একাধারে ছিলেন অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ, কবি, লেখক, গবেষক, অনুবাদক, তীক্ষ বিশ্লেষক, ব্যবস্থাপনা বিশারদ, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, দক্ষ প্রশাসক, সফল সংগঠক, প্রশিক্ষক, সাংসদসহ আরও অনেক কিছু—সর্বোপরি দেশপ্রেমিক।

এত গুণের আধার হওয়া সত্ত্বেও তিনি ছিলেন অনেকটা প্রচারবিমুখ, আর জীবনাচরণে ছিলেন ধার্মিক, শৌখিন ও রুচিমান। বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী মিসবাহউদ্দিন খানের জন্ম ১৯২৯ সালে চাঁদপুরের পুরানবাজারসংলগ্ন নানাবাড়ি শ্রীরামদির জমিদার গৃহে। বাবা শিক্ষাবিদ আশেক আলী খান ছিলেন চাঁদপুর জেলার প্রথম মুসলমান গ্র্যাজুয়েট (চরিতাবিধান, বাংলা একাডেমী) মা সুলতানা আশেক ছিলেন খ্রিষ্টান নারী মিশনারিদের দ্বারা প্রশিক্ষিত হূদয়বান মহিলা। মিসবাহউদ্দিন খানের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানার গুলবাহারে। মিসবাহউদ্দিন খানেরা আট ভাই-বোন। সবাই জীবনে প্রতিষ্ঠিত। সাহিত্যিক, গবেষক ও অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর তাঁর ছোট ভাইদের একজন। মিসবাহউদ্দিন খানের তিন ছেলে। বড় ছেলে অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন একজন সুপরিচিত ইতিহাসবিদ।
ছাত্রজীবনে তিনি লেখাপড়ায়, খেলাধুলায় ও বক্তৃতায় ছিলেন তুখোড় আর চালচলনে ছিলেন চোখে পড়ার মতো রুচিমান মানুষ। তিনি ১৯৪৯ সালে ইতিহাসে স্নাতক সম্মান ও ১৯৫০ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপর ঢাকার তৎকালীন কায়েদে আজম কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি চট্টগ্রাম বন্দরে যোগদান করেন। এখানে একটানা ৩০ বছর চাকরি করে ১৯৮৬ সালে ডক শ্রমিক ব্যবস্থাপনা বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। কর্মরত অবস্থায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট ইউনিভার্সিটিতে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। কর্মসূত্রে বহু দেশ ভ্রমণ করেন।
প্রথম জীবনে তিনি কবিতা লিখতেন। তাঁর কবিতার বইয়ের নাম লুসাইবালা। ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তাঁর বই তত্ত্বাবধায়ন ও তত্ত্বাবধায়ক, ব্যবস্থাপনায় করণিক কাজ, অফিস ব্যবস্থাপনা: দক্ষতা ও উন্নয়ন, ব্যবস্থাপনায় পত্রালাপ ও ডাক চালনা সংশ্লিষ্ট মহল কর্তৃক প্রশংসিত। ব্যবস্থাপনা-সম্পর্কিত উল্লিখিত শেষের বই দুটি বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত। মিসবাহউদ্দিন খান ১২ খণ্ডে চট্টগ্রাম বন্দরের দলিলপত্র গ্রন্থনা ও সম্পাদনা করেছেন, যা বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করেছে। এর আগে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর বৃহদায়তন গ্রন্থ হিস্ট্রি অব দ্য পোর্ট অব চিটাগং। তাঁর মৃত্যুর কয়েক দিন পর প্রকাশিত বইয়ের নাম নবীজীর সাহাবারা (অনুবাদ)। কমপেনিয়াস অব দ্য প্রফেট বইটি চার খণ্ডে লন্ডনের মুসলিম এডুকেশন অ্যান্ড লিটারেরি সার্ভিস কর্তৃক প্রকাশিত। মূল বইয়ের লেখক ছিলেন আবদুল ওয়াহিদ হামিদ খান। মিসবাহউদ্দিন খান অতি যত্নের সঙ্গে বইটি অনুবাদ করেছিলেন। বইটির প্রচ্ছদও জীবদ্দশায় দেখে গিয়েছিলেন। তিনি আত্মজীবনীও লিখেছেন। এতে রয়েছে তৎকালীন সমাজকাঠামোর অবয়ব। বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষায় ছিলেন তিনি সিদ্ধহস্ত।
১৯৯১ সালে তিনি পঞ্চম জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে চাঁদপুরের কচুয়া থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। সংসদে থাকাকালীন বিভিন্ন সংসদীয় কমিটিতে তিনি একজন দক্ষ প্রশাসক, বন্দর বিশেষজ্ঞ, সমাজসচেতন সাংসদ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
তিনি একজন সফল সংগঠকও ছিলেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, তাঁরই উদ্যোগে ও প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম বন্দর প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গড়ে ওঠে। প্রশিক্ষকের ভূমিকাও দক্ষতার সঙ্গে পালন করেন তিনি। ১৯৮২ সালে তৎকালীন প্রশাসনিক স্টাফ কলেজ আয়োজিত প্রশিক্ষকদের সম্মেলনে তাঁর চেষ্টায় গড়ে ওঠা চট্টগ্রাম বন্দর প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে যে নিবন্ধ পাঠ করেছিলেন ও বক্তব্য দিয়েছিলেন, তা সে সময়ে উপস্থিত সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
মিসবাহউদ্দিন খান একজন অকৃত্রিম দেশপ্রেমিক ছিলেন। ৩০ বছর চট্টগ্রাম বন্দরে কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে শুধু বইপত্র লিখেই ক্ষান্ত হননি, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর কীভাবে পাকিস্তানি বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত করতে হবে, কীভাবে আয়ত্তে আনতে হবে—এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তথ্য সরবরাহ ছাড়াও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সরাসরি সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। নৌ-কমান্ড মো. খলিলুর রহমানের মুক্তিযুদ্ধে নৌ-অভিযান শীর্ষক বই থেকে জানা যায় (পৃ. সংখ্যা ৭৩-৭৫) মিসবাহউদ্দিন খান বাংলাদেশের নদী ও সমুদ্রবন্দরের টাইডাল চার্ট মুক্তিযোদ্ধাদের সরবরাহ করেন। তাঁর ৫ নম্বর পোর্টের আবাসিক বাংলোয় মুক্তিযোদ্ধাদের রাখা, প্রশিক্ষণ দেওয়া, নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে (গাড়ি নং ৮৬৮৬) তাঁদের সমগ্র নদীবন্দর এলাকা পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করেন নিজের দেশের বাড়ির আত্মীয়দের পোর্ট দেখাতে এনেছেন এই কথা বলে। এসব কাজে মিসবাহউদ্দিন খানের স্ত্রীরও পরোক্ষ সহযোগিতা ছিল। মিসহাবউদ্দিন খানের ভাইয়েরাও মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহায়তা করেছেন। মিসবাহউদ্দিন খানের কাজগুলো এ কালে লেখা যত সহজ, তৎকালীন সময়ে কত বিপজ্জনক ও ভয়াবহ তা অনুমান করা কঠিন। তাঁকে পাকিস্তানি বাহিনীর নৌ-ঘাঁটিতে মাঝেমধ্যে ডেকে পাঠালে পরিবার-পরিজনের মুখ ভয়ে পাংশু হয়ে যেত। তখন একবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে পাকিস্তানি আর্মির নায়কেরা তাঁকে ডেকে পাঠালে তিনি জানতেন নিশ্চিন্ত মৃত্যু—কিন্তু তাঁর ঊর্ধ্বতন (অবাঙালি) বসের কাছ থেকে টেলিফোনের মাধ্যমে কাজেকর্মে অতি দক্ষ অফিসার—এ প্রশংসা শুনে তাঁকে ছেড়ে দেওয়ায় তিনি বেঁচে যান।

১৬ ডিসেম্বরের শিক্ষা by আই এ রেহমান

পাকিস্তানের নীতিনির্ধারকেরা ১৬ ডিসেম্বর এলেই উপলক্ষকেন্দ্রিক আলাপ-আলোচনায় মেতে ওঠেন। অবশ্য এর সারবত্তা সম্পর্কে কেউই সন্তুষ্ট হন না। পাকিস্তানের স্থপতিরা সমগ্র উপমহাদেশে ১৯৪৫-৪৬ সালে মুসলিম লীগের বিরাট নির্বাচনী বিজয় ও এক বছর বাদের দেশভাগে বড় বেশি আপ্লুত ছিলেন।
তাঁদের কাছে স্বায়ত্তশাসনের জন্য প্রাদেশিক ইউনিটগুলোর আকাঙ্ক্ষার তীব্রতা উপেক্ষিত হলো। ১৯১৯ সালের দ্বৈতশাসন-ব্যবস্থায় প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষকে কৃষি, শিক্ষা, গণপূর্ত ও স্থানীয় সরকার নিয়ন্ত্রণের এখতিয়ার দেওয়া হয়েছিল। এর কারণ ছিল জনসংখ্যার বৃহত্তর অংশের সঙ্গে এসব বিভাগের ব্যাপক সংশ্লিষ্টতা। সে কারণেই ফজল-ই-হুসেইন কায়েদে আযমকে পাঞ্জাব ও সিকান্দার হায়াত থেকে শতভাগ দূরে থাকতে বলেছিলেন। আর সেটা ছিল লাহোর প্রস্তাবে বর্ণিত পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অন্যান্য প্রদেশে ছিল একই অনুভূতি। লাহোর প্রস্তাবের রূপকারেরা কিন্তু ভাষা-বিষয়ে প্রকৃত সত্য স্বীকার করেছিলেন। আর পরিহাস হলো, সেই একই সত্য পাকিস্তানি শাসকদের পুরো ৬৩ বছর ধরে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে।
প্রাদেশিক পর্যায়ে সর্বোচ্চ ক্ষমতা লাভে পূর্ব বাংলার মানুষের আকাঙ্ক্ষা ছিল শুধুই একটি বাড়তি মাত্রাগত ভিন্নতা। ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৭—এই এক দশক বাংলার জনগণ ক্ষমতার অংশীদারি পেয়েছিল। বাংলার সরকারগুলোর নেতৃত্বে ছিলেন মুসলিম প্রধানমন্ত্রীরা। কিন্তু তাঁরা এ কথা ভুলে যাননি, ১৯০৫ সালে প্রথম বাংলা ভাগের সময় তাঁরা কী করে অধিকতর ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছিলেন। ১৯৪৭ সালের দেশভাগ তাঁদের এমন একটি প্রদেশ দিয়েছিল, যেমনটা তাঁদের ১৯০৫ সালেই ছিল। পশ্চিমবঙ্গ, বিশেষ করে, কলকাতার ওপর তাঁদের যে কর্তৃত্ব ছিল, সেটা হারানোর একটা বেদনা ছিল তাঁদের। শুধু পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দিলে তাঁদের সেই বেদনা প্রশমিত হতে পারত।
পাকিস্তান একটি সাফল্যের গল্প হোক—সেটা বাঙালিরা দেখতে চেয়েছিল। সে কারণে তারা ক্ষমতার প্রশ্নে তাদের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে সংযমের পরিচয় দিয়েছিল। গণপরিষদে তারা সংখ্যালঘু প্রদেশ থেকে মুসলিম লীগের নেতাদের নির্বাচিত করতে রাজি হয়েছিল। আমলাদের পদোন্নতি প্রদানের ফর্মুলা তারা গ্রহণ করেছিল, যদিও একজন বাদে সেই পদোন্নতির সুবিধা যাঁরা পেয়েছিলেন, তাঁরা সবাই ছিলেন অবাঙালি। নতুন দেশের রাজধানী হিসেবে তারা করাচিকে মেনে নেয়; এমনকি গভর্নর জেনারেল, প্রধানমন্ত্রী, গণপরিষদের সভাপতি এবং পূর্ব বাংলার গভর্নর পদে অবাঙালিদেরও তারা মেনে নেয়। অথচ বাঙালিদের এই মহানুভবতার প্রশংসা পশ্চিম পাকিস্তানিরা করতে পারেনি। এর পরিবর্তে পূর্ব বাংলার জনগণকে তাদের জাতিসত্তার শেকড়-সন্ধানের দিকে ঠেলে দেওয়ার প্রবণতা দেখানো হলো।
দেশভাগের আগেই কায়েদে আযম পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের আকাঙ্ক্ষা সংক্ষেপে স্বীকার করেছিলেন। বাংলাকে অবিভক্ত রাখতে সোহরাওয়ার্দীর নেওয়া উদ্যোগের প্রতি সমর্থনের মধ্য দিয়ে আমরা তার বহিঃপ্রকাশ দেখি। কিন্তু পরবর্তীকালে পাকিস্তানের নেতারা বাঙালিদের স্বায়ত্তশাসনের দাবির প্রতি তাঁদের কর্ণকুহর রুদ্ধ করে রেখেছিলেন। এর শুরুটা ঘটেছিল অপরিপক্ব ভাষানীতির মধ্য দিয়ে। মুজিবের কথায় হয়তো অতিরঞ্জন ছিল। তিনি বলেছিলেন, গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে একজন বাঙালি সদস্যকে তাঁর মাতৃভাষায় শপথ গ্রহণের অধিকার প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল, সেটাই ছিল পাকিস্তান থেকে বাঙালিদের দূরে সরে যাওয়ার সূচনা। কিন্তু সত্য হলো, দেশের শাসকগোষ্ঠী এটা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন যে তাঁদের ভাষার অধিকার ক্ষুণ্ন করার মধ্য দিয়ে তাঁদের পরিচয় ও সার্বভৌমত্ব হুমকি-কবলিত হওয়া ছিল প্রথম সতর্কবার্তা।
কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিগুলোর কারণে পূর্ব বাংলার জনগণের বুঝতে অল্প সময় লেগেছিল যে তাদের মর্যাদা হলো একটি উপনিবেশের। পশ্চিম পাকিস্তানের প্রদেশগুলোতে নির্বাচন সম্পন্ন হলো ১৯৫১-৫২ সালে। আর বাঙালিদের অপেক্ষায় রাখা হলো ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত এবং তারপর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শান্তিতে শাসন করতে দেওয়া হলো না। ইস্কান্দার মির্জাকে পাঠানো হয়েছিল তাদের দমিয়ে রাখার কাজে। এভাবে পূর্ব বাংলার মানুষ ধীরে ধীরে তাদের বঞ্চনার স্বরূপ বুঝতে পারল। আইয়ুব খান বাঙালিদের অধিকার এবং বড় বড় প্রকল্প হাতে নেওয়ার মধ্য দিয়ে একটা সামঞ্জস্য আনার চেষ্টা করেছিলেন। তবে তিনি তাদের পেছনে লাগিয়ে দিলেন মোনেম খানকে। একই সঙ্গে লাহোরে প্রতিরক্ষা বহুগুণে শক্তিশালী করে পূর্ব বাংলাকে অরক্ষিত রাখার মনোভাব প্রকাশ পেল। এটা ছিল একটা মধ্যযুগীয় কৌশল, যখন সামরিক বিষয় ছিল একান্তভাবে রাষ্ট্রীয় বিষয়; প্রতিরক্ষার সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্কই বিবেচনায় নেওয়া হতো না।
ইয়াহিয়া খান পাকিস্তান অবলোপনের সভাপতিত্ব করতে দৃশ্যত সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। তিনি তাঁর সাধারণ নির্বাচনের ‘উপঢৌকন’ ব্যবহার করতে চেষ্টা করলেন। সংবিধান তৈরির প্রক্রিয়ায় তিনি ও তাঁর শ্রেণীস্বার্থ সুরক্ষার কাজে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিদের বাগে আনতে চেষ্টা করলেন। তাঁর এই কৌশল ব্যর্থ হলো। চাপালেন যুদ্ধ, যে যুদ্ধে জয়ের কোনো সম্ভাবনা ছিল না। স্বাধীনতার সংগ্রাম পরিচালনায় বাঙালিদের সাহস ও সহিষ্ণুতা ধারণার চেয়ে দ্রুততম সময়ে সাফল্য এনে দিল।
কোনো রাজনৈতিক বিপর্যয়ের বিশ্লেষণ চার দশক পরে সহজ ও একপেশে মনে হতে পারে, যতটা উল্লিখিত বিবরণ দিকনির্দেশক ছিল। সত্য বটে, একটি অনভিজ্ঞ, সম্পদের সংকটে ভুগতে থাকা এবং কেন্দ্রের অপ্রতুল নেতৃত্ব পূর্ব বাংলার আকাঙ্ক্ষা পূরণে সক্ষম ছিল না। নিরাপত্তা-সমস্যার পূর্বজটিলতা এবং বৈদেশিক ফ্যাক্টরগুলো পরিস্থিতিকে জটিল করেছিল।
ঐতিহাসিক ও বিশ্লেষকেরা পূর্ব বাংলার উপাখ্যানে কে নায়ক এবং কে খলনায়ক, তা চিহ্নিত করার প্রচেষ্টা এবং ঠিক কোন ঘটনায় পাকিস্তান ভাঙতে শুরু করেছিল, তা নিরূপণে নিজেদের বিরত রাখতে অনিচ্ছুক হতেই পারেন। সম্ভবত এটা উপলব্ধি করার সময় এসেছে যে প্রথম দিন থেকে পূর্ব বাংলার প্রতি ভ্রান্ত নীতি অনুসরণ করার পরিণতিতে পাকিস্তানকে তীব্র বেদনা সইতে হয়েছে।
কারণ যা-ই হোক না কেন, আমাদের রাষ্ট্রের স্থপতিরা প্রাদেশিক রাজনীতির চড়াই-উতরাই সম্পর্কে দূরদর্শী হতে পারেননি। গোলাম মোহাম্মদ যখন নাজিমউদ্দিনকে অপসারিত করলেন, গণপরিষদ বিলুপ্ত করলেন, তখন তিনি আসলে সাংবিধানিকতার প্রতি শাসকদের অঙ্গীকারের বিষয়ে পূর্ব বাংলার আস্থার জায়গাটিকে ধ্বংস করেছিলেন। উন্নয়ন ঘুষ এবং দালাল সৃষ্টি করে নিয়ন্ত্রণ করার মধ্য দিয়ে বাঙালি জনগণের হূদয় জয়ের কোনো চেষ্টা সফল হয়নি। জনগণ কখনোই রাজনৈতিক ক্ষমতা, সামাজিক অগ্রগতি ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতি তাঁদের অধিকার সমর্পণ করেনি, করবে না। পাকিস্তান রাষ্ট্রের অখণ্ডতা রক্ষায় দুই দশক ধরে ধর্ম ব্যবহারের প্রয়াসকে বাঙালিরা লক্ষ করেছে। বাঙালিরা তাদের পশ্চিম পাকিস্তানি ভাইদের তুলনায় অনেক বেশি ধর্মপরায়ণ। কিন্তু জবরদখল ও নিপীড়নের কাজে তারা ধর্মকে কখনো ব্যবহার করেনি। পাকিস্তান মানবজাতির (আরবসহ) ইতিহাসের পাঠ থেকে শিক্ষা না নেওয়ার মূল্য দিয়েছিল। ধর্ম ইতিহাসের কোনো পর্বেই ধেয়ে আসা জাতীয়তাবাদের স্রোতকে পরাস্ত করতে পারেনি।
১৬ ডিসেম্বর হলো এমন একটি জুতসই উপলক্ষ, যখন এটা উপলব্ধি করার সময়, ইতিহাসের বিধান মোটেই বদলে যায়নি।
আই এ রেহমান: পাকিস্তানি সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী।

মডেল তিন্নি হত্যা মামলা

ইনের চোখে পলাতক ব্যক্তির জন্য বিচারালয়ের দরজা রুদ্ধ। মডেল সৈয়দা তিন্নি হত্যা মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি ও সাবেক সাংসদ গোলাম ফারুক অভি দীর্ঘদিন ধরে আইনের চোখে পলাতক।

একটি অস্ত্র মামলায় ১৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত অভি জামিন নিয়ে দেশান্তরি হন। ২০০৭ সালে ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাঁকে গ্রেপ্তার ও দেশে ফেরাতে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছিল। কানাডা-প্রবাসী বলে কথিত অভি ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ দিয়ে হাইকোর্টে রিট করেছেন। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ ১৫ ডিসেম্বর তাঁর পাসপোর্ট নবায়ন বা নতুন করে কেন পাসপোর্ট দিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না, সে মর্মে সরকারের প্রতি রুল জারি করেছেন। আদালতের এ সিদ্ধান্ত আমাদের অবাক করেছে। কারণ, এ বিষয়ে আপিল বিভাগের সুমীমাংসিত আইন আছে। এর কথা হলো, আইনের কাছে আত্মসমর্পণ ছাড়া পলাতক ব্যক্তি কোনো আদালতের কাছে আবেদন করতে পারেন না। এর আগে অভির মায়ের করা রিটের সুরাহা হয়নি। পাসপোর্ট নাগরিকের জন্মগত অধিকার। ব্যক্তি যত অপরাধই করুন, তাঁর বিচার হবে। তাই বলে নাগরিককে নিজ দেশে আসতে না দেওয়ার যুক্তি নেই। কিন্তু অস্ত্র মামলায় দোষী সাব্যস্ত অভিকে দেশ থেকে জবরদস্তি করে বের করে দেওয়া হয়নি। তিনি স্বেচ্ছায় বিচার থেকে পালিয়ে যান। অথচ এখন তিনি তাঁর নাগরিক অধিকারের প্রশ্ন তুলেছেন। আমরা জানি না, রাষ্ট্রপক্ষ তাঁর রিটের বিরোধিতা করে কী যুক্তি আদালতে পেশ করেছিল। ১৭ বছরের কারাদণ্ড ও জামিনের অপব্যবহারের বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হয়েছিল কি না আমাদের সন্দেহ। ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট বহাল থাকলে কানাডার কর্তৃপক্ষের কাছেও তিনি পলাতক আসামি। এ রকম একটি অবস্থায় দণ্ডিত পলাতকের দায়ের করা রিট আবেদন আমলে নেওয়ার অর্থ দাঁড়ায়, দণ্ডিত পলাতক ব্যক্তির প্রতি অসংগত অনুকম্পা দেখানো।
বাংলাদেশে ক্ষমতাধর রাজনীতিকের বিরুদ্ধে দায়ের করা যেকোনো মামলাকে সাধারণত কিংবা অভ্যাসগতভাবে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক হিসেবে বর্ণনা করা হয়। পলাতক অভির বর্ণনায় তাই অভিনবত্ব নেই। তাঁর আইনজীবীরা আদালতে নিবেদন করেন, তিনি কেবলই বিশুদ্ধ রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার।
তিন্নি হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ আট বছর পর গত জুলাইয়ে অভির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। একটি রুল কখনো বছরের পর বছর ঝুলতে থাকে। শুনানি হয় না। তদুপরি অন্যায্য সুবিধা নিতে পারেন দণ্ডিত পলাতক। বিদেশি কর্তৃপক্ষকে বিভ্রান্ত করার কাজে উচ্চ আদালতের এসব কাগজপত্রের অপব্যবহার ঘটতে পারে। আমরা মনে করি, অভি যদি সত্যিই দণ্ডিত পলাতক হন, তাহলে আদালত হয়তো স্বপ্রণোদিতভাবে রুল ‘রিকল’ (প্রত্যাহার) করতে পারেন। যাঁর নামে ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট, তাঁকে কী করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিল, সেটাও বড় প্রশ্ন। অভির আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষমতা-ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরাও আছেন। এ বিষয়ে আমরা রাষ্ট্রপক্ষের তরফে আইনসম্মত সক্রিয় ভূমিকা আশা করি।

বারবার আত্মঘাতী হরতাল

প্রধান বিরোধী দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিতর্কিত নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আজ রোববার চট্টগ্রামে পূর্ণদিবস হরতালের ডাক দিয়েছে দলটি।

প্রথমে বলা হয়েছিল, হরতাল হবে সকাল ছয়টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত; কিন্তু তার পরই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঘোষণা করা হলো হরতাল হবে সকাল-সন্ধ্যা। বিএনপির এই সিদ্ধান্ত দায়িত্বশীল নয় বলে আমরা মনে করি।
অর্ধদিবস বা পূর্ণদিবস, কোনো ধরনের হরতালের প্রতিই জনগণের আর সমর্থন নেই। কারণ, হরতাল ইতিমধ্যে জবরদস্তিমূলক, জনস্বার্থবিরোধী, অর্থনীতির পক্ষে ক্ষতিকর কর্মসূচি বলে প্রমাণিত হয়েছে। হরতালে জনসাধারণ নিরাপত্তাহীন এক পরিবেশের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়। যানবাহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ নানা ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটে। গত ২৭ জুন বিএনপির ডাকা দেশব্যাপী হরতালের আগের রাতে রাজধানীর মগবাজারে গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ফলে একজন নিরীহ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সে মৃত্যুর দায় কার?
যাঁরা হরতাল আহ্বান করেন, তথাকথিত পিকেটিংয়ের নামে তাঁরা ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন। তাঁরা শান্তিপূর্ণ হরতালের কথা মুখে বলেন; কিন্তু মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে পারেন না। এমন নিশ্চয়তা দিতে পারেন না যে হরতাল শান্তিপূর্ণ হবে। তাঁরা হরতাল আহ্বান করে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়ার অপেক্ষায় না থেকে হরতাল ‘সফল’ করার লক্ষ্যে মাঠে নামেন। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জনশৃঙ্খলা রক্ষার কর্তব্য পালন করতে গিয়ে কখনো কখনো বাড়াবাড়ি করে। ফলে সংঘাত-সংঘর্ষ ঘটে।
সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় জাতীয় অর্থনীতির। কারণ, হরতালে কলকারখানার উৎপাদন ব্যাহত হয়, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় অচল হয়ে পড়ে। আর যেসব নিম্ন আয়ের মানুষ নানা ধরনের কাজকর্ম করে দিনাতিপাত করেন, তাঁরা অন্নকষ্টে পড়েন। ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক থেকে দেশের প্রধান বন্দরনগর চট্টগ্রামের গুরুত্ব বিরাট। আমদানি-রপ্তানির কাজ এক মুহূর্তের জন্যও বাধাগ্রস্ত হলে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে বঞ্চিত হতে পারে। রপ্তানিকারক যেসব প্রতিষ্ঠানের শিপমেন্ট আটকে যাবে, তাদের পণ্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে না। ফলে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ভাবমূর্তির দিক থেকেও সমস্যায় পড়তে পারে। বন্দরনগরে হরতালের মতো অচলাবস্থা সৃষ্টিকারী কর্মসূচি ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক থেকে দেশের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর।
গত মাসেই বিএনপি দুবার হরতাল করেছে। ৩০ নভেম্বর হরতাল ডাকা হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এর তীব্র প্রতিবাদ করে হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বান জানায়। কিন্তু বিএনপি কিছুই আমলে নেয়নি। আজ চট্টগ্রামে বিএনপির হরতালের ডাক ব্যবসায়ী সম্প্রদায়সহ জনমতের প্রতি তাদের চরম অবজ্ঞার বহিঃপ্রকাশ।
ওদিকে শিক্ষানীতি অনুমোদিত হওয়ার প্রতিবাদে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সংগঠিত সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ ২৬ ডিসেম্বর সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে। এটিও একই রকম দায়-দায়িত্বহীন সিদ্ধান্ত এবং তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কারণ, ওলামা-মাশায়েখদের বৃহত্তর অংশের সঙ্গে সরকার আলোচনা-পরামর্শ করেই শিক্ষানীতি প্রণীত করেছে। এ হরতালও প্রত্যাহার করা উচিত।

শক্তিধর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে চুপ

বিশ্বে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে চোখ বুজে থাকে। সমালোচনা বা আর্থিক সহায়তা বন্ধ করার পরিবর্তে অভিযুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে দেন-দরবার চালিয়ে যায় তারা। মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদনে এ দাবি করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

নিউ ইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক এ মানবাধিকার সংগঠন গতকাল সোমবার ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্রেরও সমালোচনা করা হয়েছে।
গত বছরের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বার্ষিক প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী দেশের তালিকায় বেলারুশ, চীন, কলম্বিয়া, কঙ্গো, কিউবা, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মিয়ানমার, উত্তর কোরিয়া, পাকিস্তান, সৌদি আরব, ইয়েমেন ও জিম্বাবুয়ের নাম আছে।
সংস্থাটির দাবি, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আছে এমন দেশগুলোর সঙ্গে গণতান্ত্রিক দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান আলোচনা ও পারস্পরিক সহযোগিতায় আসলে কিছুই অর্জিত হচ্ছে না। প্রতিবেদন প্রকাশের সময় ব্রাসেলসে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নির্বাহী পরিচালক কেনেথ রথ বলেন, 'আলোচনা ও সহযোগিতার পরও নিপীড়নকারী সরকারগুলো তাদের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে প্রত্যক্ষ কোনো অঙ্গীকার করছে না। এ অবস্থায় নিপীড়ন বন্ধের জন্য গণতান্ত্রিক সরকারগুলোর উচিত সরাসরি চাপ তৈরি করা।' তবে চাপ প্রয়োগের পরিবর্তে গণতান্ত্রিক দেশগুলো অনেক ক্ষেত্রে কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করছে বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এতে বলা হয়েছে, 'মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টি অনেক সময়ই সরকারগুলোর স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়। তারা যদি স্বার্থগুলো রক্ষাই করতে চায়, তাহলে অর্থহীন আলোচনা বা ফলাফলহীন সহযোগিতার পেছনে না দৌড়ে তা স্বীকার করা উচিত তাদের।'
জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন, ইইউয়ের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ক্যাথরিন অ্যাশটন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সমালোচনা করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। তাদের মতে, 'বাকপটুতার জন্য বিখ্যাত হলেও মানবাধিকারের বিষয়টি ওবামা প্রায়ই এড়িয়ে চলেন।' দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ জড়িত থাকায় চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মিসর বা বাহরাইনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র চুপ মেরে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়। বিশ্বের অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে উদীয়মান শক্তিতে পরিণত হওয়ায় চীনের ব্যাপারে পশ্চিমা দেশগুলো নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে। ৬৪৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে। 'ইইউভুক্ত দেশগুলোর ভেতরেই অভিবাসী, মুসলিম, রোমা (ইউরোপীয় যাযাবর গোষ্ঠী) ও অন্যদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।' সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট।

জীবাশ্ম তুলে ধরছে বরফযুগের জীবনধারা

যুক্তরাষ্ট্রের জীবাশ্মবিদরা কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের রকি মাউন্টেইনস থেকে সর্বশেষ তুষার যুগের জীবাশ্মের সন্ধান পেয়েছেন। কোনো একটি একক জায়গা থেকে এযাবৎ পাওয়া জীবাশ্মের মধ্যে এসবের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। এসব জীবাশ্মের বয়স দেড় লাখ থেকে ৫০ হাজার বছর।

রকি মাউন্টেইনসের স্নোমাস ভিলেজে নতুন জলাধার নির্মাণের জন্য বাঁধ তৈরির সময় ঠিকাদাররা খননকাজ করতে গিয়ে এই বিপুল জীবাশ্মের সন্ধান পান। তাঁরা প্রথম একটি 'ম্যামাথ' (অতিকায় দাঁতবিশিষ্ট বিলুপ্ত হস্তিবিশেষ)-এর কমপক্ষে ৬০০টি হাড় উদ্ধার করেন। এরপর জীবাশ্মবিদরা সেখানে অনুসন্ধান চালিয়ে আরো চারটি কলোম্বিয়ান 'ম্যামাথ', ১০টি আমেরিকান ম্যাসটাডান (আরেক ধরনের অতিকায় দাঁতবিশিষ্ট বিলুপ্ত হস্তিবিশেষ), চারটি বাইসন (বুনো মোষবিশেষ), দুটি তুষার যুগের হরিণ ও টাইগার স্যালামান্ডার (এক ধরনের সরীসৃপ)-এর জীবাশ্ম খুঁজে পান।
গবেষকরা আশা করছেন, আসন্ন বসন্তে এসব এলাকার বরফ গলে যাওয়ার পর তারা পুনরায় অনুসন্ধান চালিয়ে আরো কিছু জীবাশ্ম উদ্ধার করতে পারবেন। লন্ডনের রয়্যাল হলোওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা এসব আবিষ্কারের মাধ্যম জানতে চেষ্টা করছেন, কিভাবে সে সময় এসব প্রাণী সে জায়গায় বসবাস করত এবং এই নির্দিষ্ট ভূতাত্তি্বক আদলটাই বা কী রকম ছিল।
এ আবিষ্কারকে 'রত্নসম্ভার' বলে মনে করেন কলোরাডোর 'ডেনভার মিউজিয়াম অব নেচার অ্যান্ড সায়েন্স'-এর কিউরেটর (জাদুঘর পরিচালক)। তিনি বলেন, 'এসব ফসিলের অনেকগুলোই আদি-অকৃত্রিম। খুবই ভালো সংরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া গেছে এগুলো। অনেকগুলো হাড় এখনো সাদা বর্ণের, এমনকি যেসব জীবাশ্ম-উদ্ভিদের পাতা পাওয়া গেছে_সেগুলো এখনো সবুজ রয়েছে, গাছের শাখার বাকল পর্যন্ত ঝরে যায়নি।'
এই জাদুঘরের জীবাশ্মবিদরা মাত্র দুই সপ্তাহে এক একর ভূমি খনন করে সাতটি ভিন্ন প্রজাতির ২৫টি আলাদা প্রাণীর জীবাশ্ম উদ্ধার করেছেন। গবেষকরা মনে করছেন, এসব প্রাণী দেড় লাখ থেকে ৫০ হাজার বছর আগে ইউরোপের উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর আমেরিকায় বসবাস করত। সর্বশেষ তুষার যুগে এর বেশির ভাগই হিমবাহে ঢেকে গিয়েছিল। সূত্র : টেলিগ্রাফ।

লেনিনের মরদেহ সমাহিত করার পক্ষে বেশির ভাগ রুশ

স্কোর রেড স্কয়ারে বিশেষ ধরনের স্মৃতিসৌধে সংরক্ষিত ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের মরদেহ কবরে সমাহিত করার পক্ষে প্রায় ৭০ শতাংশ রুশ নাগরিক ভোট দিয়েছে। রাশিয়ার ক্ষমতাসীন দল ইউনাইটেড রাশিয়া অনলাইনে এই ভোটাভুটির আয়োজন করে।

গতকাল সোমবার গুডবাইলেনিন ডট আরইউ ওয়েবসাইটি ভোটের ফল জানায়। তবে কমিউনিস্ট পার্টি এর তীব্র সমালোচনা করেছে। মার্কসবাদী বিল্পবী লেনিন রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নায়ক। তাঁর নেতৃত্বে ১৯১৭ সালের 'অক্টোবর বিপ্লব' সংগঠিত হয়। সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে সোভিয়েত রাশিয়া আত্মপ্রকাশ করে। ১৯২৪ সালের ২১ জানুয়ারি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বলশেভিক নেতা লেনিন দেশটির প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন। মৃত্যুর পর তাঁর মরদেহ সংরক্ষণ করে রাখার অনুরোধ করে সারা দেশ থেকে সরকারের কাছে ১০ হাজারেরও বেশি টেলিগ্রাম আসে। তখন রেড স্কয়ারে তাঁর মরদেহ সুসজ্জিত পোশাকে সংরক্ষণ করে রাখা হয়।
১৯৯১ সালে সমাজতন্ত্রের পতনের পর থেকেই লেনিনের মরদেহ সমাহিত করার পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক শুরু হয়। গত সপ্তাহে ক্ষমতাসীন দলের এমপি ভ্লাদিমির মেদিনিস্কি লেনিনের মরদেহ সমাহিত করার পক্ষে জোরাল অবস্থান নেন। এরপর এ ব্যাপারে জনমত যাচাইয়ের জন্য ভোটাভুটির আয়োজন করে সরকারি দল।
গতকাল সকালে দুই লাখ ৫৫ হাজার ৩৪৯ জন অনলাইনে ভোট দেন। এদের মধ্যে এক লাখ ৭৮ হাজার ২২ জন অর্থাৎ ৬৯.৭ শতাংশ মানুষ লেনিনের মরদেহ সমাহিত করার পক্ষে মত দেয়।
তবে কমিউনিস্ট পার্টি এ উদ্যোগের সমালোচনা করেছে। তাদের দাবি, এ ভোট পক্ষপাতমূলক। এর মাধ্যমে সরকার নিজেদের 'কবর খুঁড়ছে'। সূত্র : এএফপি, দ্য হিন্দুস্তান টাইমস্।

দাতারা অঙ্গীকার না রাখলে কোটি শিশুর মৃত্যুর আশঙ্কা

শিশুরোগ প্রতিরোধে তহবিল জোগাতে দাতা দেশগুলো তাদের অঙ্গীকার পূরণে ব্যর্থ হলে বিশ্বে কোটি কোটি শিশু মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়বে। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন এ আশঙ্কা করছে। তহবিলে অর্থ দেওয়ার ব্যাপারে দাতারা অঙ্গীকার করলেও অর্থনৈতিক মন্দার কারণে তা পূরণ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সেভ দ্য চিল্ড্রেন জানায়, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার মতো সহজে নিরাময়যোগ্য রোগেই বছরে বিশ্বে প্রায় ৮০ লাখ শিশু মারা যায়। এ সংখ্যা ম্যালেরিয়া ও এইচআইভি সংক্রমণে শিশু মৃত্যুর হারের প্রায় তিন গুণ। অথচ নিয়মিত টিকা দেওয়া হলে শিশু মৃত্যুর হার এক-চতুর্থাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনা যাবে।
গরিব দেশগুলোতে কম দামে প্রতিষেধক পেঁৗছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে দাতা দেশগুলোর সংগঠন জি-এইটের সদস্যদের নিয়ে একটি সহায়তা কর্মসূচি হাতে আছে সেভ দ্য চিল্ড্রেনের। গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন' (জিএভিআই) নামের এ কর্মসূচির আওতায় ২০০০ সাল থেকে তহবিল সংগ্রহ শুরু হয়। গরিব বা উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছে কম দামে প্রতিষেধক বিক্রির জন্য ওষুধ কম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তির কাজে ওই অর্থ ব্যবহার করা হয়। এই কর্মসূচির আওতায় এ পর্যন্ত প্রায় ২৮ কোটি ৮০ লাখ শিশুর কাছে প্রতিষেধক পেঁৗছেছে। জিএভিআইয়ের কর্মসূচি সফল করতে বছরে ৫০ কোটি পাউন্ডের তহবিলের প্রয়োজন। আগামী পাঁচ বছর টানা এই পরিমাণ অর্থ খরচ করলে টিকা কর্মসূচির ক্ষেত্রে যে ঘাটতি আছে, তা মেটানো সম্ভব।
তহবিল জোগাতে ইতিমধ্যে সেভ দ্য চিল্ড্রেন 'নো চাইল্ড বর্ন টু ডাই' নামে আরেকটি কর্মসূচি চালু করেছে। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন পেশার খ্যাতিমানরা এই কর্মসূচির সমর্থনে প্রচার চালাচ্ছেন।
এখন সংস্থাটির আশঙ্কা, মন্দার কারণে টিকাদান কর্মসূচিতে অর্থায়নের অঙ্গীকার থেকে পিছিয়ে যাবে দাতারা। সংস্থার প্রধান নির্বাহী জাস্টিন ফরসিথ বলেন, 'আমরা শিশু মৃত্যুর জন্য দায়ী কারণগুলোর মূল উপড়ে ফেলার কাছাকাছি পেঁৗছে গেছি। তবে ঠিক এ সময়টাতেই তহবিলের সংকট দেখা দিয়েছে। এর সুরাহা না হলে শিশু মৃত্যুর হার অব্যাহত থাকবে। তহবিল বাড়লে আরো অনেক গরিব ও প্রান্তিক শিশুর কাছেই হয়তো পেঁৗছাতে পারব আমরা।' সূত্র : স্কাই নিউজ।

২৭ জানুয়ারির নির্বাচনে সেনা মোতায়েন নয়

নির্বাচন কমিশন অনেকটা নাটকীয়ভাবে জানিয়ে দিল, আগামী ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় ১২টি পৌরসভা এবং জাতীয় সংসদের হবিগঞ্জ- ১ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের উপনির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন হচ্ছে না।

গতকাল সোমবার এসব নির্বাচন নিয়ে ঢাকার আগারগাঁওয়ের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া জানানো হয়েছে, ১৩টি পৌরসভায় নির্বাচনের কথা থাকলেও আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে ঝালকাঠিতে নির্বাচন হচ্ছে না।
গতকালের ওই বৈঠকে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি লে. কর্নেল তৌফিককে নির্বাচন
কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন জিজ্ঞেস করেন, ‘২৭ জানুয়ারির নির্বাচনে কি সেনা, নৌবাহিনী মোতায়েন হচ্ছে?’ লে. কর্নেল তৌফিক বলেন, এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ জবাব পাওয়ার পর ছহুল হোসাইন বৈঠকে উপস্থিত সবার উদ্দেশে বলেন, “তাহলে আমরা এর জবাব ‘না’ ধরে বিকল্প ব্যবস্থা নিতে পারি। কারণ আমাদের হাতে আর সময় নেই।”
বৈঠক শেষে ছহুল হোসাইন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে কি লাভ? তারা তো কোনো উপকারে লাগছে না।
প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত ছিল-১৩টি পৌরসভার মধ্যে মাগুরা, ঝালকাঠি, মাধবদী, মাদারীপুর, কক্সবাজার, চকরিয়া ও টেকনাফে ভোট গ্রহণের দুই দিন আগে থেকে মোট পাঁচ দিনের জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে। আর চরফ্যাশন ও মহেশখালীতে মোতায়েন থাকবে নৌবাহিনী। কিন্তু গত রবিবারই সে সিদ্ধান্ত পাল্টে যায়।
নির্বাচন কমিশন ১৩টি পৌরসভার মধ্যে মাগুরা, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, মাধবদী, কক্সবাজার ও চকরিয়া পৌরসভার জন্য দুই প্লাটুন করে এবং চরফ্যাশন, মহেশখালী, পার্বতীপুর, জাজিরা, মদন, দাগনভূঞা ও টেকনাফে এক প্লাটুন করে বিজিবি মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি পৌরসভার জন্য এক থেকে দুই কম্পানি/প্লাটুন করে র‌্যাব মোতায়েনেরও সিদ্ধান্ত হয়। রবিবার নির্বাচন কমিশন আরো সিদ্ধান্ত নেয়-বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরা ভোট গ্রহণের দুই দিন আগে (২৫ জানুয়ারি) থেকে নির্বাচনী এলাকা ও ভোটকেন্দ্রে টহল দেবেন। আর ভোট গ্রহণের দিন প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে স্থায়ীভাবে মোতায়েন থাকবেন এবং ভোটগ্রহণ শেষে গণনার আগে থেকে গণনাকক্ষের চারপাশে নিরপত্তাবলয় সৃষ্টি করে দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরা কেন্দ্রভিত্তিক ফল ঘোষণার পর রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে ফলাফল একীভূত করা এবং ফল ঘোষণার আগে থেকে ওই কার্যালয়ের চারপাশে নিরাপত্তাবলয় তৈরি করে প্রবেশপথেও দায়িত্ব পালন করবেন।
নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব (পৌর-১) মো. আবদুল বাতেন স্বাক্ষরিত একটি চিঠি রবিবার স্বরাষ্ট্রসচিবসহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে পাঠিয়ে এ বিষয়ে পরিপত্র জারির অনুরোধ করা হয়।
গতকালের বৈঠকে স্বরাষ্ট্রসচিব আবদুস সোবহান সিকদার যথসময়ে সে চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, তিনি বিষয়টি নিয়ে রবিবারই সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছেন। তবে সব পৌরসভায় বিজিবি মোতায়েনে সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, পার্বতীপুর, মাগুরা, মাধবদী, মদন, দাগনভূঞা, কক্সবাজার, চকরিয়া ও টেকনাফে বিজিবি মোতায়েন করা যেতে পারে। মাদারীপুর ও জাজিরায় বিজিবির বদলে অতিরিক্ত র‌্যাব সদস্য মোতায়েন সম্ভব হবে। বাকি দুটি পৌরসভা চরফ্যাশন ও মহেশখালীতে কোস্টগার্ড বা নৌবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করলে ভালো হয়।
এ প্রস্তাবে লে. কর্নেল তৌফিক বলেন, ‘মহেশখালীতে যাতায়াতের বিষয়ে আমরা যানবাহন দিয়ে সহায়তা করতে পারি, কিন্তু আমাদের জনবল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’
এদিকে নির্বাচন কমিশন ভোট গ্রহণের দিন প্রতি কেন্দ্রে বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যদের স্থায়ীভাবে মোতায়েন রাখার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এর বিপক্ষে মত দেন র‌্যাবের মহাপরিচালক মো. মোখলেছুর রহমান ও নরসিংদীর জেলা প্রশাসক অমৃত বাড়ৈ। র‌্যাবের মহাপরিচালক বলেন, কোনো স্থানে ৯ জনের কমে র‌্যাব সদস্য মোতায়েন সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে প্রতি ভোটকেন্দ্রে তাঁদের স্থায়ীভাবে রাখতে হলে প্রচুরসংখ্যক র‌্যাব সদস্যের প্রয়োজন হবে, যা সম্ভব নয়।
বৈঠকে বিজিবি প্রতিনিধিও জানিয়ে দেন, কয়েকটি পৌরসভায় ২০ জন করে বিজিবি সদস্য দেওয়া সম্ভব হতে পারে।
নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভোট গ্রহণের দুই দিন আগে অর্থাৎ আজ মঙ্গলবার সকালেই সব নির্বাচনী এলাকায় বিজিবি ও র‌্যাব মোতায়েন হওয়ার কথা রয়েছে।
পুলিশসহ স্থানীয় প্রশাসনকে ইসির ভর্ৎসনা : প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এ টি এম শামসুল হুদা দেশের বাইরে থাকায় নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইনের সভাপতিত্বে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। শুরুতেই পুলিশসহ স্থানীয় প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের ভর্ৎসনার শিকার হয়। কক্সবাজার-৪ আসনের (টেকনাফ) সরকারদলীয় সংসদ সদস্যের আচরণের বিষয়েও কড়া মন্তব্য করা হয়। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও এসপির উদ্দেশে বলেন, ‘ইউ ডোন্ট কেয়ার সংসদ সদস্য। টেকনাফে নির্বাচনের সময় প্রতিবার আমাদের লোককে মারধর করা হচ্ছে। জানি না আপনারা এটা কিভাবে সহ্য করেন। এ অবস্থা চলতে পারে না।’
জবাবে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে সংসদ সদস্যের চাচাকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সংসদ সদস্যকে আমি পরামর্শ দিয়ে বলেছি, নির্বাচনের সময় আপনি সেন্ট মার্টিনে অথবা ঢাকায় নির্বাসনে থাকেন। তাহলে সবার জন্যই ভালো হবে। এ ছাড়া তাঁকে বলেছি, আবারও এ ধরনের ঘটনা ঘটলে আপনাকে গ্রেপ্তার করা হবে।’
এম সাখাওয়াত হোসেন গত ১৮ জানুয়ারি পৌরসভা নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেটসহ বেশ কয়েকজন নির্বাচন কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের গায়ে হাত দেওয়াটা সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়ছে বলে মনে হচ্ছে। এটা ঠেকাতে হবে। তিনি প্রশ্ন করেন, নোয়াখালী এলাকার পৌরসভাগুলোয় যেসব ঘটনা ঘটেছে, এর জন্য সংশ্লিষ্ট ওসিদের সাসপেন্ড করা হয়নি কেন? বিভাগীয় তদন্তের ব্যবস্থা কি নেওয়া হয়েছে?
নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন সেনবাগ, নোয়াখালী, সোনাগাজী, কবিরহাট, ফেনী, নাঙ্গলকোট, ঘাটাইল-এসব পৌরসভার নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসারদের ওপর হামলা, ব্যালট পেপার ও বক্স ছিনতাই-এসব নির্বাচনী অপরাধের তথ্য উপস্থাপন করে বলেন, ‘যে সুষ্ঠু নির্বাচনী সংস্কৃতি আমরা শুরু করেছিলাম, যে ব্যক্তিকে জনগণ চাইবে তিনিই নির্বাচিত হবেন-এসব এলাকায় সে সংস্কৃতির কী হলো? পুলিশ, আনসার, আর্মি-এত সব বাহিনীর ব্যূহ ভেদ করে কিভাবে এসব ঘটতে পারে? কিভাবে তাদের চোখের সামনে ব্যালট বাক্স ভাঙার, পোড়ানোর মহোৎসব হয়?’
এর জবাবে স্বরাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘সরকার চায় সুষ্ঠু নির্বাচন। পুলিশ আহত না হয়ে ব্যালট পেপার আহত হওয়া উচিত নয়। সরকারি নিয়মনীতির বাইরে যারা কাজ করেছে, তাদের এর জবাব দিতে হবে।’
স্বরাষ্ট্রসচিব আরো বলেন, ‘নির্বাচনী আইনকানুন এখন অনেক কড়া। এ ধরনের আইনকানুন যখন ছিল না তখনো নোয়াখালীর মতো ঘটনা ঘটেনি। কে সরকারের লোক, কে নয় সেটা তো কারো দেখার কথা নয়। যা ঘটেছে তা ক্ষমাযোগ্য অপরাধ নয়। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী অপরাধ ঘটানো হলে প্রিসাইডিং অফিসাররা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিতে পারেন। কিন্তু নিজেরা সে ক্ষমতা সম্পর্কে অবহিত না থাকার কারণে তাঁরা হয়তো সে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেননি।’
পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, ‘বেশির ভাগ জায়গায় নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। তবে গ্লাসের সামান্য অংশ খালি ছিল। এটা অনবধানতাবশত হয়েছে। আমাদের লোকজন হয়তো কিছু জায়গায় ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। প্রিসাইডিং অফিসাররা তাদের কমান্ড করতে পারেননি। ঘাটাইলে যখন ঘটনা ঘটে তখন আমি সেখানে রাবার বুলেট ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছিলাম। এ ছাড়া সামাজিক বাস্তবতার কারণে সব জায়গায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি।’
র‌্যাবের মহাপরিচালক মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘কোনো ঘটনায় হাজার হাজার লোক যখন জড়িত হয়ে পড়ে তখন আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে গেলে হতাহতের ঝুঁকি থাকে। তা ছাড়া আমরা যে একেবারেই ভালো কিছু করতে পারিনি তা তো নয়।’
র‌্যাবের মহাপরিচালকের এ মন্তব্যে ছহুল হোসাইন বলেন, ‘৯৫ শতাংশ পৌরসভায় নির্বাচন ভালো হয়েছে-এই খুশিতে যদি থাকেন, তাহলে আরো বিপর্যয় হতে পারে। একটি জায়গার খারাপ ঘটনা অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে কতক্ষণ?’

ইউনিপের থাবা এখন ঢাকায়

ন্দেহভাজন মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কম্পানি 'ইউনিপে টু ইউ বাংলাদেশ লিমিটেড' চট্টগ্রাম ও সিলেটের পর এখন ঢাকায়ও ব্যবসা ফেঁদে বসেছে।

'ইউনিপে-তে টাকা রাখুন, ১০ মাসে দ্বিগুণ লাভ করুন/স্বাবলম্বী হোন/দারিদ্র্য বিমোচন করুন'-এমনই চটকদার স্লোগানে গ্রাহক আকৃষ্ট করে তারা ধানমণ্ডিতে নতুন শাখা অফিস খুলেছে। অথচ এ ধরনের কম্পানির গ্রাহক প্রতারণা সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কিছুদিন আগে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। সরকারি তথ্য বিবরণীতেও এমএলএমের গ্রাহক প্রতারণা থেকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে। ইউনিপে টু ইউ কর্তৃপক্ষের দাবি, এ ব্যবসায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন রয়েছে। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির কোনো বৈধ অনুমোদনই নেই। বরং বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুরোধে প্রতিষ্ঠানটির সন্দেহজনক কার্যক্রম দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) খতিয়ে দেখছে। ইউনিপেও এ ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ব্যবসা ফেঁদে বসেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত রবিবার হাইকোর্টে ইউনিপের কার্যক্রম চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন দায়ের হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এরই মধ্যে ইউনিপে টু ইউ সারা দেশ থেকে অন্তত ছয় লাখ গ্রাহক সংগ্রহ করেছে। কম্পানিটির ব্যবসায় খাটছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। ঢাকার ধানমণ্ডির পুরনো ২৭ নম্বর সড়কে তারা একটি চকচকে ছয় তলা অফিস ভবনও ভাড়া করেছে। সেখানে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে আসা তরুণ গ্রাহকদের ভিড় লেগেই আছে। ইউনিপের কর্মকর্তারা জানান, প্রতিজন গ্রাহককে তাঁরা অনলাইনে একটি আইডেন্টিফিকেশন নম্বর ও পাসওয়ার্ড দেন। এরপর তাঁদের নগদ লেনদেনের পুরোটিই হয় অনলাইনে। তাঁদের দাবি, এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ ও বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত। একজন গ্রাহক মাত্র চার হাজার ২০০ টাকা থেকে শুরু করে আট হাজার ৪০০ টাকা দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। এর ওপরে তাঁরা নির্দিষ্ট হারে লভ্যাংশ দিয়ে থাকেন। দুই লাখ ১২ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে গ্রাহকরা ১২ শতাংশ লভ্যাংশ পাবেন। এ বছর ফেব্রুয়ারি থেকে এ লভ্যাংশের হার ২০ শতাংশ হতে যাচ্ছে। এভাবে ১০ মাসে তাঁরা দ্বিগুণ পর্যন্ত লভ্যাংশ দিয়ে থাকেন। তবে লভ্যাংশের এই বিপুল পরিমাণ অর্থ কোথা থেকে আসছে, কর্মকর্তারা তা বলতে নারাজ।
ফরিদপুর জেলার বাসিন্দা আনিসুজ্জামান নামের একজন গ্রাহক অভিযোগ করে কালের কণ্ঠকে জানান, তিনি নিজে বিনিয়োগের পাশাপাশি পরিচিত অনেককে দিয়ে ইউনিপে-তে বিনিয়োগ করিয়েছেন। এখন ইউনিপে সম্পর্কে নানা খবর প্রকাশ হওয়ার পর বিনিয়োগকারীদের অনেকেই তাঁদের অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করছেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ১০ মাস শেষ হওয়ার আগে কোনোভাবেই বিনিয়োগের টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না। অথচ এ নিয়ম কোথাও লিখিত আকারে নেই।
ইউনিপে টু ইউ বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান শহিদুজ্জামান শাহীন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনতাসির মামুনও ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। তবে তাঁরা কেউই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি নন।
তবে নিজেকে ইউনিপের মুখপাত্র দাবি করে এ প্রতিষ্ঠানের আইন কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট মোহাম্মাদ সারোয়ার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এটি সারা বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত এমএলএম ব্যবসা। সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, নেপালসহ বিভিন্ন দেশে ইউনিপে টু ইউ সাফল্যের সঙ্গে ব্যবসা করছে। ই-কমার্স মেথডে ইউনিপে টাকা ১০ মাসে দ্বিগুণ করে যে লাভ দিচ্ছে, তা মোটেই আজগুবি নয়। সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে অর্থ খাটিয়ে কম্পানিটি এ মুনাফা দিতে পারছে। এ নিয়ে গ্রাহকদের কোনো অভিযোগ নেই।’
চট্টগ্রাম ও সিলেটে গ্রাহক প্রতারণার অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে মোহাম্মদ সারোয়ার বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে কোথাও কোনো প্রতারণার অভিযোগ নেই। আমাদের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি মহল বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। আমরা গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আমাদের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করার আহ্বান জানিয়েছি। প্রয়োজনে সরকার আমাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করুক।’
অ্যাডভোকেট সারোয়ার আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের লেনদেন আছে। আমরা সরকার অনুমোদিত বলেই বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করতে পারছি। আমাদের বিরুদ্ধে সরকারেরও কোনো অভিযোগ নেই।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রাহকদের বিনিয়োগের অর্থ কোনোভাবেই বিদেশে যাচ্ছে না, বরং মালয়েশিয়ার সঙ্গে নেট সার্ভার ব্যবহার করার কারণে বিদেশ থেকে এ দেশে টাকা আসছে।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক দেবপ্রসাদ দেবনাথ কালের কণ্ঠকে বলেন, ইউনিপের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের লেনদেনের প্রশ্নই আসে না। বরং মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কম্পানিগুলোর এ ধরনের গ্রাহক প্রতারণা সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কিছুদিন আগে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। সরকারি তথ্যবিবরণীও এমএলএমের গ্রাহক প্রতারণা থেকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়ে সম্প্রতি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এ ছাড়া রাতারাতি অর্থশালী করে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে চট্টগ্রাম ও সিলেটে ইউনিপে টু ইউয়ের বিরুদ্ধে গ্রাহক প্রতারণার অভিযোগ ওঠায় সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে দুর্নীতি দমন কমিশন তাদের কার্যক্রম খতিয়ে দেখছে।
দেবপ্রসাদ জানান, এমএলএম কম্পানিগুলো বিশ্বের নানা দেশে আইনের ফাঁক গলে চটকদার বিজ্ঞাপনের আড়ালে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। কানাডায়ও এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান প্রতারণার ব্যবসা খুলে বসলে সে দেশের সরকার তাদের আইন আরো কঠোর করেছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক কর্নেল হানিফ ইকবাল কালের কণ্ঠকে জানান, কমিশন যাতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে, সে জন্য আইনজীবীরা সংশ্লিষ্ট আইনি দিকগুলো খতিয়ে দেখছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান এর আগে সাংবাদিকদের জানান, ইউনিপে টু ইউ নামের প্রতিষ্ঠানটি রাতারাতি ভাগ্য পরিবর্তনের প্রচারণা চালিয়ে অর্থ সংগ্রহ করে প্রতারণা করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের অর্থ নিয়ে একাধিক ব্যাংকে রাখা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, টাকা নিয়ে বিদেশে গ্রাহকদের নামে স্বর্ণ কিনে ভল্টে রাখা হচ্ছে। যাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে, তাদের ২০ শতাংশ হারে সুদ দেওয়া হবে বলেও জানানো হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে প্রতিষ্ঠানটি টাকা নিয়ে লুটে খাচ্ছে, কোথাও কোনো স্বর্ণ ক্রয় করছে না, যা বাংলাদেশ ব্যাংক চিহ্নিত করেছে। তিনি আরো বলেন, জানা গেছে, এরই মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ওঠানো হয়েছে। কিন্তু ওই টাকা কোথায় রাখা হয়েছে, কী করা হয়েছে, ইউনিপে টু ইউয়ের কাছ থেকে এর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।
এদিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শেয়ারবাজারের ভয়াবহ পতনের জন্য অন্যান্য কারণের পাশাপাশি ইউনিপে টু ইউয়ের গ্রাহক প্রতারণাকেও দায়ী করেছেন। গত ৯ জানুয়ারি সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমরা শেয়ারবাজারের কারসাজির সঙ্গে দায়ী কাউকে ছেড়ে দেব না। ইউনিপে টু ইউ এক সপ্তাহে দ্বিগুণ লাভ দেওয়ার লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে যাচ্ছে। আমরা তাদেরও ধরব।’
ইউনিপের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের রুল
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম জানায়, ‘স্বর্ণ কেনার নামে বিনিয়োগ পুঁজি সংগ্রহ কেন বন্ধ করা হবে না’ মর্মে ইউনিপে টুইউ এবং সরকারের চার প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। অন্যরা হচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ও রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কম্পানিজ।
চট্টগ্রাম উত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মোহাম্মদ আইয়ুব ও মুক্তিযোদ্ধা গোরী শংকরের জনস্বার্থে দায়ের করা রিট পিটিশনের (পিটিশন নম্বর ৭৮৩ তারিখ ২৩-০১-১১) পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
গত রবিবার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রিটের শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
এ ছাড়া আদালত আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে কেন স্বর্ণ কেনার নামে অর্থ আদায় কার্যক্রম বন্ধ করা হবে না মর্মেও কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। বেঞ্চ একই সঙ্গে ইউনিপের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে আবেদন জানানোর জন্যও পরামর্শ দেন।
রিটকারীদের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট বেলাল হোসেন জয়, অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন ও অ্যাডভোকেট কে এম জাবির।

শেরপুরের সীমান্ত থেকে প্রায় ১৪ হাজার তাজা গুলি উদ্ধার

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী বাকাকুড়া গ্রামের একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে পুলিশ গত ১৭ ডিসেম্বর ২০১০ শনিবার রাইফেলের ১৩ হাজার ৬৮০টি তাজা গুলি উদ্ধার করেছে।

বাকাকুড়া গ্রামের অছির উদ্দিনের (৮৫) বাড়ির একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে এসব গুলি উদ্ধার করা হয়। তবে এ ঘটনায় কেউ আটক বা গ্রেপ্তার হয়নি। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সকাল সাতটার দিকে ঝিনাইগাতীর বাকাকুড়া গ্রামের অছির উদ্দিনের বাড়িতে এ অভিযান চালায় পুলিশ। ওই বাড়ির একটি পরিত্যক্ত ঘরের চৌকির নিচে আটটি বস্তায় ভরে রাখা হয় এসব গুলি। বস্তা খুলে পুলিশ ৫৭টি প্যাকেটের ভেতরে রাখা ১৩ হাজার ৬৮০টি গুলি উদ্ধার করে। এ সময় বাড়ির মালিক বৃদ্ধ অছির উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও গুলির কোনো উৎস জানতে পারেনি পুলিশ।
শেরপুরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় উপপরিদর্শক (এসআই) তাজুল ইসলাম থানায় মামলা করেছেন। একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়েছে। ঘটনা তদন্ত করে গুলির উৎস ও এর মালিকের নাম-পরিচয় জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার জানান, দু-তিন দিন আগে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের কাউকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সংস্থা আটক করেছে কি না, সে বিষয়টি তাঁর জানা নেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড় সীমান্তে ভারতের আসাম রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফা নানা ধরনের তৎপরতা চালিয়ে আসছে। গত ১৭ জুলাই উলফার নেতা হিসেবে পরিচিত মাসুদ রঞ্জন চৌধুরী ওরফে রঞ্জু চৌধুরী এবং তাঁর সহযোগী প্রদীপ মারাককে র্যাব সদস্যরা অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেন। বর্তমানে এ দুজন কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে আটক রয়েছেন।
অপরদিকে ২০০৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বিডিআর বাকাকুড়া গ্রামের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মাটি খুঁড়ে প্লাস্টিকের ড্রামভর্তি অবস্থায় ২৯ হাজার ১০০টি গুলি উদ্ধার করে। সে সময় বিডিআর রাসেল সাংমা নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করে। তিনি নিজেকে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী একটি সংগঠনের সদস্য বলে দাবি করেন। ২০০৯ সালের ২৬ আগস্ট শেরপুরের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভারতীয় নাগরিক রাসেল সাংমাকে অস্ত্র আইনে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। বর্তমানে তিনি শেরপুর জেলা কারাগারে আটক রয়েছেন। রাসেল সাংমাকে গ্রেপ্তারের পর বিডিআর সদস্যরা ২০০৭ সালের ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর গারো পাহাড় এলাকা ঘেরাও করে আরও ১০ হাজার গুলি উদ্ধার করে। এসব গুলি উলফার বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়।

সদস্যপদ বাঁচাতে সংসদে যেতেই হবে খালেদা জিয়াকে

বম জাতীয় সংসদের অষ্টম অধিবেশন আজ মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় বসছে। অধিবেশনের শুরুতেই রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সংসদে ভাষণ দেবেন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি আজ অধিবেশনে যোগ দিচ্ছে না।

তবে চলতি অধিবেশনে যোগ না দিলে টানা (একাদিক্রমে) ৯০ দিন অনুপস্থিতির জন্য সংসদ সদস্যপদ বাতিলের সাংবিধানিক বিধির ফাঁদে পড়বেন বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া। সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া সর্বশেষ গত বছরের ৪ এপ্রিল সংসদ অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন। এরপর টানা ৫০ কার্যদিবস তিনি অনুপস্থিত রয়েছেন। আরো ৪০ দিন অনুপস্থিত থাকলে সংবিধানের ৬৭(খ) বিধি অনুযায়ী তাঁর সংসদ সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে। এ বিধিতে আছে-‘কোন সংসদ সদস্যের পদ শূন্য হইবে, যদি সংসদের অনুমতি না লইয়া তিনি একাদিক্রমে ৯০ বৈঠক দিবস অনুপস্থিত থাকেন।’ সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে গতকাল সিদ্ধান্ত হয়েছে, চলতি অধিবেশন ৪৪ দিন চলবে। ফলে খালেদা জিয়া এ বিধির ফাঁদে পড়বেন।
জানা যায়, অধিবেশন ১০ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ৪০ ঘণ্টা আলোচনারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে রাষ্ট্রপতির ভাষণের পর অধিবেশন এক সপ্তাহের জন্য মুলতবি হয়ে যাবে। ১ ফেব্র“য়ারি থেকে আবার অধিবেশন শুরু হয়ে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত ৪৪ কার্যদিবস চলবে।
গতকাল সোমবার বিকেলে সংসদ ভবনে সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকের পর সংসদের চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ সংসদের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সংসদের প্রতি কার্যদিবস বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। তবে প্রথম দিন বিকেল ৩টায় অধিবেশন শুরু হবে।
সংসদ অধিবেশনে বিরোধী দলের যোগ না দেওয়া সম্পর্কে সরকার ও বিরোধী দল পরস্পরকে দুষছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার এমপি বলেন, ‘সংসদে যোগ
না দেওয়ার কথা আমরা বলিনি। আমরা চাই সংসদ কার্যকর হোক। এ জন্য নজিরবিহীনভাবে আমরা নবম সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিন যোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু সংসদে বসা নিয়ে সরকারি দলের আক্রোশের শিকার হয়েছি। যত নোটিশ দিয়েছি তার একটিও আলোচনার জন্য আমলে নেওয়া হয়নি। আমাদের নেতা শহীদ জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তাঁর পরিবারসহ আমাদের নেতা-নেত্রীর নাম ধরে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করা হয়। হামলা-মামলা চলছে। এ অবস্থায় সংসদে যোগ দিয়ে তাদের গালাগাল শুনে জাতির কোনো লাভ আছে বলে মনে করি না। যদি গালাগাল বন্ধ করা হয়, সংসদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং দেশ ও জনগণের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে দেওয়া হয়, মাইক বন্ধ না করা হয়-তাহলে অবশ্যই আমরা সংসদে যাব।’
বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদীন ফারুক বলেন, বিএনপি সংসদকে কার্যকর করতে সবসময় সংসদে যেতে প্রস্তুত। কিন্তু এর আগে সরকারকে সংসদের পরিবেশ ঠিক করতে হবে। সংসদের চিফ হুইপ আবদুস শহীদের টেলিফোন করার কথা স্বীকার করে ফারুক বলেন, সংসদে যোগ না দেওয়ার ব্যাপারে বিএনপি আগের সিদ্ধান্তেই অটল। তিনি বলেন, দেশ পরিচালনায় বর্তমান মহাজোট সরকার দুই বছর যেভাবে ব্যর্থ হয়েছে, সেভাবে বিএনপিকেও সংসদে নিতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। অধিবেশনে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনার পর বলতে পারব-সংসদে ফিরে যাব কি না।
অধিবেশনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে গত রবিবার সংসদের চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদীন ফারুককে টেলিফোন করেন। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে আবদুস শহীদ বলেন, সংসদের পরিবেশ ঠিক আছে, আশা করি বিরোধী দল অধিবেশনে যোগ দিয়ে সংসদকে কার্যকর করতে ভূমিকা রাখবে।
এদিকে চলতি অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের মধ্য দিয়েই চালু হচ্ছে সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনের যাত্রা। এ জন্য সংসদ ভবনের পঞ্চম তলায় একটি কক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। অধিবেশন চলাকালে সংসদের কার্যক্রম এ চ্যানেলের মাধ্যমে প্রচারিত হবে। এ ছাড়া অধিবেশন বন্ধ থাকা অবস্থায় প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ চ্যানেলের সম্প্রচার কার্যক্রম চলবে।
বিএনপির একটি সূত্রে জানা যায়, সংসদে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে দলের নেতারা আলোচনা করছেন। কারণ বিরোধী দলের নেতাসহ কয়েকজনের সদস্যপদ বহাল রাখতে হলে এ অধিবেশনে বিরোধী দলকে সংসদে যোগ দিতেই হবে।
জানা গেছে, নবম সংসদের ১৭৪ কার্যদিবসের মধ্যে বিএনপির সংসদ সদস্যরা ছিলেন ৪৬ কার্যদিবস আর বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া ছিলেন মাত্র পাঁচ দিন। অষ্টম অধিবেশনে যোগ না দিলে টানা ৯০ কার্যদিবস অনুপস্থিত থাকার কারণে খালেদা জিয়াসহ দলের কয়েকজন সংসদ সদস্য তাঁদের সদস্যপদ হারাবেন।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, অধিবেশনে সংসদ সদস্যদের উপস্থিতির রেকর্ডে বিএনপি চেয়ারপারসন সর্বশেষ গত বছরের ৪ এপ্রিল সংসদে যোগ দিয়েছিলেন। এর ফলে গত ৯ ডিসেম্বর শেষ হওয়া সপ্তম অধিবেশন পর্যন্ত সংসদে তাঁর টানা অনুপস্থিতি ৫০ কার্যদিবস। এ ছাড়া বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য বরকতউল্লাহ বুলু (নোয়াখালী-৩) সর্বোচ্চ ৫৭ দিন সংসদে অনুপস্থিত রয়েছেন। সংসদ সদস্য মজিবর রহমান সরওয়ার (বরিশাল-৫) ও কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ (কুমিল্লা-৩) টানা ৫৩ দিন সংসদ বর্জন করে চলেছেন। চট্টগ্রাম-১৬ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোস্তফা কামাল পাশা টানা ৫১ দিন সংসদে অনুপস্থিত রয়েছেন।
এদিকে সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত অষ্টম অধিবেশনের জন্য এখন পর্যন্ত মোট ১১টি সরকারি বিল এসেছে। এর মধ্যে কমিটিতে বিবেচনাধীন আছে ৯টি। পাসের অপেক্ষায় আছে একটি ও উত্থাপনের অপেক্ষায় আছে একটি বিল।

ফেরি করে অবৈধ রক্ত বিক্রি by আবুল খায়ের

রাজধানীসহ সারাদেশে চলছে অবৈধভাবে রক্ত বেচাকেনা । এমনকি ফেরি করে রক্ত বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব রক্তে থাকছে হেপাটাইটিস বি,সি ও ই এবং এইচআইভি এইডসের ভাইরাস। পেশাদার রক্তদাতারা মরণব্যাধি ভাইরাসযুক্ত রক্ত বিক্রি করছে অবাধে।

এছাড়া নেশার উপকরণ ক্রয় করার জন্য মাদকাসক্তরা নিয়মিত রক্ত বেচাকেনা করছে। তাদের দেহে এসব ভাইরাস থাকার আশংকা একশত ভাগ বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে কমিশনের লোভে এক শ্রেণীর ডাক্তার বাইরের বস্নাড ব্যাংক থেকে রোগীর অভিভাবকদের রক্ত ক্রয় করে আনার পরামর্শ দেন। ডাক্তারের পছন্দের বস্নাড ব্যাংক থেকে রক্ত এনে রোগীর দেহে পুশ করা হয়। কিন্তু এসব প্রাইভেট বস্নাড ব্যাংকে পেশাদার রক্তদাতা ও মাদকাসক্তদের রক্ত ক্রয় করা হয়ে থাকে। সেই রক্তই রোগীর নিকট বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া ফেরি করে রক্ত বেচাকেনার প্রমাণ পেয়েছে ভেজাল বিরোধী মোবাইল কোর্ট। এই রক্ত রোগীর জন্য অতি বিপজ্জনক বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সতর্ক করে দিয়েছেন।

ভাইরোলজি, লিভারব্যাধি, চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে পেশাদার রক্তদাতার (ডোনার) ২৯ ভাগের দেহে হেপাটাইটিস বি, সি ও ই রয়েছে। এছাড়া সিফিলিস ও গনোরিয়ার জীবাণু ৫০ ভাগের এবং মরণব্যাধি এইডসের জীবাণু রয়েছে বেশিরভাগের দেহে। ডোনারের রক্ত ক্রয় না করে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহিত করা উচিত। নিজেদের পরিবারের সুস্থ সদস্যের রক্ত নিলে কোন ধরনের ক্ষতি হয় না। এতে রোগী রোগমুক্ত নিরাপদ রক্ত পায় বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ অভিমত ব্যক্ত করেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতর ও ভেজাল বিরোধী মোবাইল কোর্ট সূত্রে জানা যায়, রাজধানীসহ সারাদেশে বৈধ প্রাইভেট বস্নাড ব্যাংকের সংখ্যা প্রায় অর্ধশত। এর বাইরে অলিগলিতে শতাধিক অবৈধ বস্নাড ব্যাংক রয়েছে।

সাধারণত বস্নাড ব্যাংকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন অনুযায়ী পাঁচটি ঘাতক ব্যাধি হেপাটাইটিস বি,সি, এইচআইভি/ এইডস, ম্যালেরিয়া ও সিফিলিস পরীক্ষার বিধান রয়েছে। পাশাপাশি বস্নাড ব্যাংকে থাকতে হবে রক্ত পরিসঞ্চালন বিশেষজ্ঞ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডাক্তার, প্রযুক্তিবিদ, টেকনিক্যাল সুপারভাইজার, রেজিস্টার্ড নার্স ও ল্যাব সহকারী। ঘাতক রোগের পরীক্ষার ব্যবস্থা ও যন্ত্রপাতিও থাকতে হবে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইনে উলেস্নখ রয়েছে। এই সকল ব্যবস্থা থাকলেই কেবল প্রাইভেট বস্নাড ব্যাংক সরকারি অনুমোদন পেতে পারে। কিন্তু ৯৮ ভাগ বস্নাড ব্যাংকে এসব যন্ত্রপাতি ও জনবল নেই। শুধুমাত্র বস্নাড সংগ্রহ করা এবং কোন কোন বস্নাড ব্যাংকে সিফিলিস ও গনোরিয়া শনাক্তে রক্তের ভিডিআরএল পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে।

গত বছর র্যাবের তত্ত্বাবধানে ভেজাল বিরোধী মোবাইল কোর্টের ম্যাজিস্ট্রেট এএইচএম আনোয়ারের নেতৃত্বে রাজধানীর ২১টি বস্নাড ব্যাংকে অভিযান চালিয়ে ৪২ জনকে ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এদের মধ্যে ২৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এসব বস্নাড ব্যাংকে কোন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই ডোনারের রক্ত সংগ্রহ করে দিনের পর দিন রোগীর নিকট বিক্রি করার প্রমাণ পায় মোবাইল কোর্ট। এদের নেই কোন যন্ত্রপাতি ও অভিজ্ঞ জনবল। তারা বিষয়টি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারও করেছে।

সম্প্রতি যাত্রাবাড়ী এলাকায় পরীক্ষা ছাড়াই ডোনারের রক্ত রোগীর নিকট বিক্রি করার সময় একজন ডাক্তারকে মোবাইল কোর্ট হাতে-নাতে ধরে ফেলে। ডাক্তারকে কারাদণ্ড দিয়ে মোবাইল কোর্ট কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। মোবাইল কোর্টকে তারা আরও জানায় যে, পেশাদার ডোনারকে এক ব্যাগ রক্তের জন্য ৯০ থেকে ১২০ টাকা দেয়া হয়। মাদকসেবীরাও প্রতি ব্যাগ অনুরূপ মূল্য পায়। দালালের মাধ্যমে আসলে দালালকে প্রতিব্যাগের জন্য ৩০ থেকে ৫০ টাকা দেয়া হয়। প্রতিব্যাগ রক্ত নিম্নে ৫০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি করে থাকে। এদের ডোনাররা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত এবং তারা ফুটপাতে কিংবা অলিগলিতে ও পার্কে ময়লা-আবর্জনার মধ্যে দিন-রাত অবস্থান করে। মাদকাসক্তদেরও একই অবস্থা। দিনের পর দিন গোসল করে না এবং কাপড়-চোপড় ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত। হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিক থেকে রোগীর জন্য রক্তের প্রয়োজন হলে ফোন করে। ঐ সময় একজন ডোনারকে ডেকে এনে গলির কোন একটি নির্ধারিত কক্ষে নিয়ে রক্ত সংগ্রহ করে সঙ্গে সঙ্গে রোগীর কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়। বর্তমানে ফেরি করেও রক্ত বিক্রি করা হয়ে থাকে। প্রতি ব্যাগ থেকে ডাক্তারকে কমিশন দেয়া হয়। মোবাইল কোর্ট রাজধানীতে অবৈধ রক্ত বেচাকেনার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে গেলে তারা ব্যবসার ধরন পরিবর্তন করে ফেলে। বর্তমানে রক্তের প্রয়োজনে তারা ক্রেতা ও ডোনারকে রক্তের গ্রুপ বি হলে 'চশমার ফ্রেম', এ হলে 'এঙ্গেল', ও হলে 'আলু' এবং এবি হলে 'ডাবল' সঙ্গে পজেটিভ ও নেগেটিভ বলে দেয়। এইভাবেই চলছে অবৈধ রক্ত বেচাকেনার বাণিজ্য।

চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এমএন হুদা বলেছেন, এদেশে সরকারিভাবে এইচআইভি বাহক ও এইডসে আক্রান্তের সংখ্যা দুই সহস্রাধিক। কিন্তু বেসরকারিভাবে হাজার হাজার হবে। পেশাদার ডোনার ও মাদকাসক্তদের রক্তে ঘাতক ব্যাধি থাকার আশংকা একশত ভাগ। এই রক্ত দেয়া আর রোগীর দেহে বিষ ঢুকানো একই কথা বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

লিভার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মবিন খান বলেন, ২০ বছর আগে এক জরিপে দেখা যায়, পেশাদার রক্তদাতার ও মাদকাসক্তের মধ্যে ২৯ ভাগের দেহে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস রয়েছে। বর্তমানে এইডসসহ অন্যান্য ঘাতকব্যাধির জীবাণু পেশাদার রক্তদাতা ও মাদকাসক্তদের শরীরে রয়েছে বেশি। পেশাদার ডোনারদের রক্ত পরিহার করে পরিবারের সদস্যদের রক্ত দানে উৎসাহিত করা উত্তম কাজ। বিশ্বে কোথাও এদেশের মত রক্ত বেচাকেনা হয় না। মরণব্যাধির হাত থেকে জাতিকে রক্ষা করত অবৈধ রক্ত বেচাকেনা বন্ধ করা জরুরি বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। ভাইরোলজিস্ট ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম একই মতামত দিয়েছেন।

এদিকে ঢাকার বাইরেও অবৈধভাবে রক্ত বেচাকেনা চলছে প্রকাশ্যে। গ্রামাঞ্চলের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা স্বেচ্ছায় রক্ত দিতে রাজী হয় না। তাদেরকে দালালরা রক্ত দিলে মারা যাওয়াসহ নানা ধরনের কথা বলে ভয়ভীতি দেখায়। এ কারণে তারা ডোনারের রক্ত ক্রয় করতে বেশি উৎসাহী বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খন্দকার সিফায়েত উলস্নাহ বলেন, অবৈধভাবে রক্ত বেচাকেনা এবং পেশাদার ডোনার ও মাদকাসক্তের রক্ত সংগ্রহ বন্ধ করার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এই বিপজ্জনক বাণিজ্য করতে দেয়া হবে না বলে মহাপরিচালক জানান।

পুঁজিবাজারের মুনাফা থেকে লভ্যাংশ দিতে পারবে না ব্যাংকগুলো

পুঁজিবাজার থেকে অর্জিত মুনাফা শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ হিসাবে দিতে পারবে না ব্যাংকগুলো। বিদায়ী বছরে পুঁজিবাজার থেকে অর্জিত এ মুনাফা শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণ না করে রিজার্ভে রেখে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

পরবর্তী সময়ে ব্যাংকগুলো এ অর্থের একটি নির্দিষ্ট অংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে। সম্প্রতি ছয়টি ব্যাংকের সঙ্গে অনুষ্ঠিত ভিন্ন ভিন্ন বৈঠকে এ নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এস কে সুর চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা ব্যাংকগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পুঁজিবাজার থেকে অর্জিত মুনাফা লভ্যাংশ হিসাবে বিতরণ না করে রিজার্ভে রেখে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। তাহলে ঘুরেফিরে এ মুনাফার একটি নির্দিষ্ট অংশ পুঁজিবাজারে আবার বিনিয়োগে আসবে।'
তিনি বলেন, 'পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক ধসের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে ব্যাংক খাতের সীমাতিরিক্ত বিনিয়োগ ও উচ্চ মুনাফা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে পুঁজিবাজারে এ খাতের বিনিয়োগ ও মুনাফা বাজার ধসের ক্ষেত্রে কোনো প্রভাবই ফেলেনি। সার্বিকভাবে পুঁজিবাজার থেকে ব্যাংকগুলোর মুনাফা এসেছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। শেয়ারবাজারে সূচক বৃদ্ধি বা হ্রাসে এ টাকার ভূমিকা খুবই নগণ্য।'
বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় একটি সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত পুঁজিবাজার থেকে উচ্চ মুনাফাকারী ছয়টি ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ব্যাংকগুলো হচ্ছে_ন্যাশনাল ব্যাংক, এবি ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া ও ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড। বৈঠকে ব্যাংকগুলোর দেওয়া তথ্যানুযায়ী, এদের দুটি সর্বোচ্চ আড়াই শ কোটি টাকা পুঁজিবাজার থেকে মুনাফা করেছে। বাকি ব্যাংকগুলোর একটির এক শ কোটি টাকার কিছু বেশি এবং বাকিগুলোর মুনাফা ৫০ কোটি টাকার কাছাকাছি। সার্বিকভাবে ব্যাংকিং খাতে পুঁজিবাজার থেকে মুনাফা এসেছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। বৈঠকে তাদের পুঁজিবাজার থেকে অর্জিত মুনাফা শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণ না করে তা রিজার্ভে রেখে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সংরক্ষিত ডিসেম্বরভিত্তিক তথ্য থেকে দেখা যায়, পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর সর্বমোট বিনিয়োগ ১২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা, যা পুঁজিবাজারে মোট শেয়ারমূল্য তিন লাখ ৫০ হাজার ৮০০ কোটি টাকার মাত্র ৩.৫৮ শতাংশ। অপরদিকে পুঁজিবাজারের মোট শেয়ারের পরিমাণ তিন লাখ তিন হাজার ৪৩২টির মধ্যে ব্যাংকগুলো মাত্র ৭.৪১ শতাংশ ধারণ করে আছে। অর্থাৎ ব্যাংকগুলোর হাতে বর্তমানে শেয়ার রয়েছে ২২ হাজার ৪৭৯টি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পুঁজিবাজার থেকে অর্জিত মুনাফা রিজার্ভে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক দিয়ে থাকলে এটা ভালো সিদ্ধান্ত বলেই আমি মনে করি। রিজার্ভে এ লভ্যাংশ নিয়ে গেলে ব্যাংকগুলোর মূলধন বাড়বে এবং ভিত্তি শক্ত হবে।' এ ছাড়া এ সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতাও বাড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, সার্বিকভাবে ব্যাংকগুলো মোট দায়ের ৫-২৮ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছে। এ বিনিয়োগ পুঁজিবাজারের মোট বিনিয়োগের মাত্র ৩.৫৮ শতাংশ। যদি ব্যাংকগুলো আইনি সীমার সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বিনিয়োগ করে, তাহলে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ দাঁড়াবে পুঁজিবাজারের মোট বিনিয়োগের প্রায় ৭ শতাংশ। এই অবস্থায় সূচকের পতন ঠেকাতে ব্যাংকিং খাত নির্ভরতা কতটুকু যৌক্তিক_এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'এ পরিসংখ্যান অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বাড়ানোয় সূচকের তেমন পরিবর্তন আসবে না। তাই আমি বরাবরই শুধু ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নির্ভরশীল না হয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য পরামর্শ দিয়েছি। তবে সরকার বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানোর চেষ্টা করছে। তাই হয়তো বারবার আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনিয়োগে ফেরানোর কথা বলে সাধারণ মানুষকে বিনিয়োগে ফেরানোর কথা বলছে।
সাবেক ডেপুটি গভর্নর ও কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সিদ্ধান্ত একদিকে যেমন ব্যাংকগুলোর জন্য উপকারী, অন্যদিকে তা পরিচালকদের জন্য শাস্তিস্বরূপ। ব্যাংকগুলোর এ মুনাফা রিজার্ভে রেখে দেওয়াই যুক্তিসংগত।'
ব্যাংকগুলোর মুনাফার একটি অংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সরকারের যে সিদ্ধান্ত, সে সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমি মনে করি, সরকার এসইসিকে পুনর্গঠন ছাড়া যত সিদ্ধান্তই নিক না কেন, তাতে জনগণের আস্থা ফিরবে না। কারণ সূচকের ধস ঠেকাতে এই এসইসি বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, যখন সূচক অতি দ্রুত বাড়ছিল তখন তারা উদ্যোগ নেয়নি কেন। তাই আমি বলব, সরকার কোনো উদ্যোগ নেওয়ার আগে এসইসির পুনর্গঠন জরুরি।'
তিনি বলেন, '৩০ লাখ লোক পুঁজিবাজারে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। এদের অনেকেই শিক্ষিত বেকার। সরকার যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজার থেকে অর্জিত মুনাফার একটি অংশ আবার বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে নিয়ে আসার অনুরোধ করে তখন বাংলাদেশ ব্যাংক তার মনিটরিং পলিসি ও ব্যাংকিং আইন ঠিক রেখে এ ক্ষেত্রে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কারণ আমি আগেই বলেছি, এখানে অনেক শিক্ষিত বেকারের কর্মসংস্থান রয়েছে।'
বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ বলেন, 'পুঁজিবাজার থেকে ব্যাংকগুলোর মুনাফা যদি আমি দুই হাজার কোটি টাকাও ধরি, তাহলে এ মুনাফার জন্য এদের যেভাবে অভিযুক্ত করা হচ্ছে, সেভাবে কিন্তু ব্যক্তি বা সিন্ডিকেটকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে না। সরকারের উচিত ১৫ দিনের আগেই কমিটি গঠন করা, কমিটির রিপোর্টের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া। এর ফলে ব্যক্তি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সরকার দ্রুত চিহ্নিত ও ব্যবস্থা নিতে পারবে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরো বাড়বে।'