Tuesday, December 21, 2010

সাকা চৌধুরীর বিষয়ে জাতিসংঘে অভিযোগ করবে বিএনপি

বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক জানিয়েছেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর বিষয়ে তারা বুধবার জাতিসংঘের কাছে অভিযোগ করবে। মঙ্গলবার সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের সদস্যদের সাথে ধানমন্ডির বাসায় বিএনপির সংসদীয় কমিটির সদস্যরা সাক্ষাৎ করে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, সরকার স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ চালাচ্ছে। যে দেশে সংসদ অকার্যকর, বিনা ওয়ারেন্টে সংসদ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়, তিনবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানাতে বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জে এমপিদের ঢুকতে দেয়া হয় না, সে দেশে গণতন্ত্র থাকতে পারে না। এ সময় তিনি সরকারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্থাপন করেন।
বিএনপির সংসদীয় কমিটির অন্যান্য সদস্যের মধ্যে খায়রুল কবির খোকন, নিলুফার মনি চৌধুরী, শাম্মী আকতার, আশরাফ উদ্দিন নিজান, রাশেদা বেগম হীরা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এমআরএম/২১-১২-১০

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ঃ ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক

গন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে মারধরের জের ধরে আজ মঙ্গলবার দলের দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। পরে বিকেল তিনটায় আজকের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করা হয়। সংঘর্ষ চলাকালে সদরঘাট থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তি সূত্রে জানা যায়, দুুপুর সোয়া একটার দিকে ছাত্রলীগের সভাপতি কামরুল হাসান দলের সাধারণ সম্পাদক গাজী আবু সায়ীদের পক্ষের আপন নামের এক কর্মীকে মারধর করেন। ওই সময় পাশে থাকা সাধারণ সম্পাদকের পক্ষের জ্যেষ্ঠ নেতারা এর প্রতিবাদ করেন। এই নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। সভাপতির পক্ষের কর্মীরা বেলা দেড়টার দিকে এক হয়ে ক্যাম্পাস থেকে জোর করে সাধারণ সম্পাদক পক্ষের কর্মীদের বের করে দেন।
এর ১৫ মিনিট পর সাধারণ সম্পাদক পক্ষের লোকজন সংগঠিত হয়ে লাটিসোঁটা নিয়ে সভাপতির পক্ষের লোকজনের ওপর হামলা চালান। এভাবে ঘণ্টাব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের বাইরে ও ভেতরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। তাঁদের মধ্যে ২০-২৫ জনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে চিকিত্সা দেওয়া হয়।
পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারশেল ও শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পুলিশ এ সময় ছয়-সাতজন সাংবাদিককে মারধর করে বলে কয়েকজন সাংবাদিক অভিযোগ করেন।
‘খবরপত্র’ পত্রিকার আহত সাংবাদিক ইব্রাহীম প্রিন্স জানান, সাংবাদিকেরা দাঁড়িয়ে ঘটনা দেখছিলেন। এ সময় পুলিশের কাছে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও পুলিশ সাংবাদিকদের মারধর এবং সাংবাদিক সমিতির কক্ষ ভাঙচুর করে। একই সঙ্গে পুলিশ ডিবেটিং সোসাইটির কক্ষ ভাঙচুর ও কয়েকজনকে মারধর করে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি নিয়ে উপাচার্য মেজবাউদ্দিন আহমেদ, প্রক্টর কাজী আসাদুজ্জামান ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বৈঠকে বসেছে।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী আবু সায়ীদ জানান, ‘দলের সভাপতি এবং তাঁর কর্মীরা আমাদের ক্যাম্পাসে রাজনীতি করতে দিতে চায় না। তাই প্রায়ই তাঁরা আমাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালায়।’
এদিকে ছাত্রলীগের সভাপতি এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘দলের জুনিয়র কিছু উচ্ছৃঙ্খল কর্মী এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। সাংগঠনিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পৌরসভা নির্বাচনঃ সরকারি দল পুলিশ-প্রশাসন ব্যবহার করে জিতবে: দেলোয়ার

সন্ন পৌরসভা নির্বাচনে সরকারি দল আওয়ামী লীগ যেকোনো মূল্যে জিততে চায় বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, সরকার পুলিশ ও প্রশাসন ব্যবহার করে নির্বাচনে জিতবে। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন এসব কথা বলেন।

বিএনপির মহাসচিবের মতে, সরকার কারচুপি করে জিতলে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন না দেওয়ায় সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এটি সরকারের দূরভিসন্ধিমূলক আচরণ।’ সরকারি দল পরাজয়ের ভয়েই নির্বাচন দিচ্ছেন না বলে তিনি দাবি করেন।
খোন্দকার দেলোয়ার বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ভাবতেও পারেনি আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জিতে বিরোধী দলের ওপর এমনভাবে নির্যাতন করবে। মানুষ এখন সেটা বুঝতে পারছে। আর বুঝতে পারছে বলেই বিএনপির আন্দোলনে যোগ দিচ্ছে।
বিএনপি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল কি না—জানতে চাইলে মহাসচিব বলেন, ‘দল সাংগঠনিকভাবে দুর্বল না। তবে সুসংগঠিত হতে একটু সময় লাগবে।’ তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিবুন নবী খানের বিরুদ্ধে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে মামলা হয়েছে।

শিশুদের শ্রমে চলে অধিকাংশ আফগান পরিবার

বদুল ওহাবের বয়স মাত্র ১১ বছর। এ বয়সে তার স্কুলে যাওয়ার কথা, মেতে ওঠার কথা শৈশবের দুরন্তপনায়। কিন্তু ওহাবের সময় কাটে জ্বলন্ত হাপরের কাছে। পেটের টানে, পরিবারের রুটি-রুজির জোগান দিতে বাবার কামারশালায় কাজ করতে হয় তাকে। সারা দিন হাড়ভাঙা খাটুনি। ভারী হাতুড়ি দিয়ে লাল টকটকে লোহা পিটিয়ে তৈরি করতে হয় গাড়ির যন্ত্রাংশ। আগুনের তাপ আর হাতুড়ির ওজন বইতে বইতে ঘর্মাক্ত হয় ওয়াহাবের শরীর। তবু থামার উপায় নেই। কারণ, হাতুড়ির ওঠানামা বন্ধ হলে পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার উঠবে না।

আফগানিস্তানের শিশুশ্রম পরিস্থিতি বুঝতে একজন ওহাবের গল্পই যথেষ্ট। দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক শিশু। অবাক করার মতো হলেও সত্য; এ শিশুদের মধ্যে ৪০ শতাংশই কোনো না কোনো কাজের সঙ্গে জড়িত। আর তাদের শ্রমের অর্থেই চলে পরিবার রুটিরুজি।
আফগান সরকারের তথ্যমতে, দেশটিতে প্রায় ১২ লাখ শিশুশ্রমিক রয়েছে, যারা ওহাবের মতোই শ্রম দেয়। ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে। কেউবা করে খণ্ডকালীন কিংবা পূর্ণকালীন কাজ। দেশটির সরকার বলছে, যুদ্ধ, দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও বড় পরিবারের প্রবণতা সে দেশে বৃহত্ একটি শিশুশ্রম বাজার সৃষ্টি করেছে।
তবে শিশুশ্রম নিয়ে ২০১০ সালে আফগানিস্তান স্বাধীন মানবাধিকার কমিশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশটির প্রায় এক কোটি ৫০ লাখ শিশুর মধ্যে ৪০ শতাংশই কাজে নিয়োজিত। আর মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, দেশটিতে শিশুশ্রম আইনের প্রতি নিয়মিতভাবেই তাচ্ছিল্য দেখানো হচ্ছে।
আফগানিস্তানের আইন অনুযায়ী, সে দেশের ১৪ বছর বয়সী শিশুরা সপ্তাহে ৩৫ ঘণ্টা কাজ করতে পারবে। তবে তাদেরকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত করা যাবে না। কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। দেশটিতে অনেক শিশুই ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
ওহাব আক্ষেপ করে বলছিল, ‘বাবা আমাদের ভরণ-পোষণ দিতে পারেন না। কারণ, বাজারে খাবারের দাম বেশ চড়া। আমরা সরকারে কাছ থেকেও কোনো সহায়তা পাই না। আমি স্কুলে যেতে চাই। কিন্তু বাবা যে একা। তাই তাঁকে সাহায্য করতে আমাকে এখানে কাজ করতে হয়।’
ওহাবের বাবা আবদুল রেজাক বলেন, ‘আমার ছেলে এখানে কাজ করুক, তা আমি চাই না। আমি চাই সে স্কুলে যাক। কিন্তু আমাদের কাজ করতে হয়।’
আফগানিস্তানের শিশুদের মধ্যে কেউ কেউ যন্ত্রপাতি তৈরির কাজ করে, কেউবা করে কৃষিকাজ। আবার অনেকেই করে কার্পেট সেলাই, রাস্তায় পণ্য বিক্রি, ভিক্ষা কিংবা টোকাইয়ে কাজ।
বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, আফগানদের বার্ষিক গড় আয় ৩৭০ মার্কিন ডলার। অনেক আফগান পরিবার তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর পরিবর্তে কাজে নিয়োজিত করাটাকেই বেশি পছন্দ করে। এটা না করে তাদের উপায়ও নেই। বলা চলে, পরিবার চালাতে সাধারণ আফগানরা তাদের শিশুদের কাজে পাঠাতে একরকম বাধ্যই হয়।
আফগানিস্তানের মানবাধিকার কমিশনের পক্ষে নাদের নাদেরি বলেন, দেশটির অধিকাংশ শিশুই নয় বছর বয়সেই কাজে যোগ দেয়। এ শিশুরাই তাদের পরিবারের রুটি-রুজির জোগানদাতা।
দীর্ঘ ৩০ বছরের যুদ্ধে আফগানিস্তান বিশ্বের একটি দরিদ্রতম রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। সেখানকার জনসংখ্যার অর্ধেকই শিশু। এ শিশুদের এক-চতুর্থাংশই পাঁচ বছর বয়সের আগেই মারা যায়। দারিদ্র্যের কষাঘাত, অপুষ্টি, বঞ্চনা—এসবের দুষ্টচক্রে আফগানদের গড় আয়ুষ্কাল মাত্র ৪৪ বছরে নেমে এসেছে। সূত্র: রয়টার্স।

পৌর নির্বাচনঃ দলীয় প্রার্থী ঠিক করতে হিমশিম খাচ্ছে আ.লীগ

জোটগতভাবে পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত থাকলেও দলীয় একক প্রার্থী ঠিক করতেই হিমশিম খাচ্ছে আওয়ামী লীগ। অনেক স্থানে তৃণমূলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। এ অবস্থায় আগে দলীয় প্রার্থী ঠিক করার কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এরপর মহাজোটের প্রার্থী সমর্থন নিয়ে শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হবে। তবে ভেতরে ভেতরে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদের মধ্যে এ নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। উভয় দলের নেতারা জোটগত প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে দলীয়ভাবে ছাড় দিতে সম্মত বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, দুই দিন ধরে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকেরা দলীয় প্রার্থী সমর্থনের জন্য টানা বৈঠক করে যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত ৬০ শতাংশ পৌরসভায় একক প্রার্থী সমর্থন হয়ে গেছে বলে নেতারা জানিয়েছেন। গতকাল রাতে ধানমন্ডির দলীয় কার্যালয়ে দীর্ঘ সময় তাঁরা বৈঠক করেন। আজ-কালের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঠিক হয়ে যাবে বলে নেতারা বলছেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় প্রার্থী সমর্থন দেওয়ার পর মহাজোটের সঙ্গে আলোচনা হবে। আজকের মধ্যেই দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত হবে।
একক প্রার্থী সমর্থন দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয়ভাবে তৃণমূলের নেতাদের জন্য একটি মানদণ্ড ঠিক করে দিয়েছে। এরই মধ্যে তৃণমূলের নেতাদের ভোটে অনেক স্থানেই একক প্রার্থী ঠিক হয়েছে। তা ছাড়া মন্ত্রী-সাংসদের আত্মীয়দের প্রার্থী হতে কেন্দ্রীয়ভাবে বারণ করে দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, মহাজোটের শরিকদের মধ্যে জাতীয় পার্টি ও ওয়ার্কার্স পার্টির দুটি তালিকা আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে দেওয়া হয়েছে। কাজী জাফর উল্যাহর নেতৃত্বে সাংগঠনিক সম্পাদকেরা তালিকায় দেওয়া প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা যাচাই-বাছাই করে দেখছেন। আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, জয়লাভের জন্য শুধু মহাজোটের শরিক নয়, মুত্তিযুদ্ধের পক্ষের যেকোনো প্রার্থীর পক্ষে ছাড় দিতে তাঁরা প্রস্তুত। ভালো প্রার্থী পেলে তাঁরা দলীয় প্রার্থীকে বসিয়ে দেবেন।
সূত্র জানায়, প্রার্থী সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদের মধ্যে ইতিবাচক আলোচনা হচ্ছে। জনপ্রিয় প্রার্থী থাকলে দুই দলই ছাড় দিতে প্রস্তুত। নেতারা আশা করছেন, মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময়সীমার মধ্যেই মহাজোটের একক প্রার্থী ঠিক হয়ে যাবে। তবে অনেক পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বাইরে মহাজোটের প্রার্থী নেই। এমনকি কোথাও কোথাও বিএনপি বা জামায়াতের প্রার্থীও নেই। এসব পৌরসভায় প্রার্থিতা দলীয়ভাবে উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বলে নেতারা জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, সিলেট বিভাগে ১৫টি পৌরসভায় নির্বাচন হবে। এর মধ্যে মৌলভীবাজার সদর, হবিগঞ্জ সদর ও কুলাউড়া পৌরসভায় একক প্রার্থী সমর্থন করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। এ বিভাগে মহাজোটের কোনো প্রার্থী নেই। ছাতক ও জগন্নাথপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী থাকলেও বিএনপি বা জামায়াতের প্রার্থী নেই। ফলে এ দুটি পৌরসভায় তৃণমূলের ভোট করা হবে না বলে এ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মিজবাহউদ্দিন সিরাজ জানিয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিভাগে শরিক দলের ভালো প্রার্থী নেই। আবার তারা দাবিও করছে না।
সূত্র জানায়, রংপুর বিভাগে ২৩টি পৌরসভায় নির্বাচন হচ্ছে। এর মধ্যে দিনাজপুর সদর, গাইবান্ধা সদর ও সৈয়দপুর পৌরসভায় প্রার্থী সমর্থন নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। অন্য পৌরসভায় প্রার্থী সমর্থন মোটামুটি ঠিক হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টি দলগতভাবে রংপুরে শক্তিশালী বলে আওয়ামী লীগের নেতারা এ বিভাগে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন। জয়ী হওয়ার মতো প্রার্থী পেলে তাঁরা ছাড় দেবেন।
সূত্র জানায়, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ ছাড়া ১৪ দলের শরিক অন্য কোনো দলের প্রার্থী নেই। আওয়ামী লীগের নেতারা ১৪ দলের এই দুই শরিকের সম্ভাব্য প্রার্থী সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা জানিয়েছেন, মহাজোটগত প্রার্থী ঠিক করার চেয়ে দলীয় প্রার্থী ঠিক করতেই তাঁদের বেশি সমস্যা হচ্ছে।

পৌর নির্বাচনঃ শরিকদের কোনো ছাড় দিচ্ছে না বিএনপি

ত সংসদ নির্বাচনে ভোলা-১ আসনে বিজয়ী হন চারদলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) প্রার্থী। এলাকাটি বিজেপির ঘাঁটি হিসেবেও পরিচিত। কিন্তু আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে ভোলা পৌরসভায় মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন স্থানীয় বিএনপির নেতা। একইভাবে কক্সবাজারের মহেশখালী ও চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জামায়াতের প্রার্থীরা। সেখানেও চেয়ারম্যান পদে বিএনপির প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

জামায়াত প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে, এমন সব পৌরসভায় বিএনপিও প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। জামায়াতের এক নেতার দাবি, ৭০ থেকে ৮০টি পৌরসভায় চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের নেতারা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগের অন্তত ৪০টি পৌরসভায় জামায়াতের শক্তিশালী সাংগঠনিক অবস্থা থাকলেও সেখানে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওই নেতা। তিনি বলেন, বিএনপির কারণে জামায়াত অনেক জায়গায় প্রার্থী দেয়নি।
প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে চারদলীয় জোটের অন্য শরিকদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি বিএনপি। এরই মধ্যে ২৫২টি পৌরসভায় বিএনপি দলীয়ভাবে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। ১৯ ডিসেম্বর ছিল এসব পৌরসভায় মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময়।
বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা জানিয়েছেন, পৌরসভা নির্বাচন জোটগতভাবে করার কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে স্থানীয়ভাবে শরিক ও সমমনা দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হতে পারে। কেন্দ্রীয়ভাবে এ ব্যাপারে খুব বেশি কিছু করা হবে না। সূত্র জানায়, বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে প্রার্থী মনোনয়নের জন্য তদারকি সেল গঠন করেছে। কিন্তু ওই সেলের উদ্যোগে শরিক দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি।
জানা গেছে, পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর চারদলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। অবশ্য বৈঠকটি হয়েছিল সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে। বৈঠকে পৌরসভা নির্বাচন নিয়েও কথা হয়। শরিক দল খেলাফত মজলিসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসহাক খালেদা জিয়ার কাছে জানতে চান, পৌরসভা নির্বাচনে চারদলীয় জোট কীভাবে প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। খালেদা জিয়া জোটগত নির্বাচনের ব্যাপারে তাঁর নেতিবাচক মনোভাবের কথা জানিয়ে দেন।
মোহাম্মদ ইসহাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘খালেদা জিয়া জোটবদ্ধ নির্বাচনের ব্যাপারে ইতিবাচক ছিলেন না। তিনি আমাদের জানিয়ে দেন, বিএনপি প্রার্থী মনোনয়নের জন্য একটি সেল করে দিয়েছে। প্রয়োজনে ওই সেল শরিকদের সঙ্গে কথা বলবে। আনুষ্ঠানিকভাবে জোট নেতাদের এ ব্যাপারে কোনো কিছু করার নেই।’ তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিকভাবে পৌর নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে জোটগত আলোচনা হয়নি।
বিএনপির তদারকি সেলের প্রধান এম কে আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘চেয়ারপারসন (খালেদা জিয়া) আমাকে প্রধান করে একটি সেল করে দিয়েছেন। আমি বিভাগীয় কমিটি করেছি। তারা প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। আমার জানামতে, প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে কোনো বড় সমস্যা হয়নি।’ তিনি বলেন, সব পৌরসভায় বিএনপির একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। শরিক দলের সঙ্গে কেন্দ্রীয়ভাবে নয়, স্থানীয়ভাবে আলোচনার জন্য বলা হয়েছে। তাদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করতে বলা হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর সাংসদ আ ন ম শামসুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রামের বাঁশখালী, চন্দনাইশ, পটিয়া ও সন্দ্বীপ পৌরসভা থেকে জামায়াত নিজেদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে বিএনপিকে সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু জামায়াত প্রার্থী দিয়েছে, এমন সব পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী আছে। তাঁর আশা, আলোচনার মাধ্যমে একক প্রার্থী নির্ধারণ করা যাবে।
জামায়াত ছাড়া অন্য শরিকদের প্রার্থী নেই: চারদলীয় জোটের তিন শরিক বিজেপি, ইসলামী ঐক্যজোট ও খেলাফত মজলিসের কোনো প্রার্থী মেয়র পদে নির্বাচন করছেন না। তবে কাউন্সিলর পদে দলের স্থানীয় কয়েকজন নেতা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
বিজেপি ভোলা জেলার চারটি পৌরসভায় বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে। খেলাফত মজলিস জানিয়েছে, তাঁদের কোনো প্রার্থী নির্বাচন করছে না। তাঁরা বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার জন্য স্থানীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আবদুল লতিফ নেজামী বলেছেন, ‘এখনই বলা যাচ্ছে না আমাদের দলের প্রার্থী আছে কি না। আমরা এখন ২৬ ডিসেম্বরের হরতাল কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত আছি।’