Sunday, February 05, 2012

শীতল পাটি তৈরি করে সংসার চালান রামুর ছেনুয়ারা বেগম

কাজ পাগল গৃহবধূ ছেনুয়ারা বেগম। শীতল পাটি তৈরি করে ধরে রেখেছেন সংসারের হাল।
পাটি বিক্রির টাকায় চলে তিন সন্তানের লেখাপড়া আর সংসারের ভরণ পোষণ।

এছাড়াও হাঁস-মুরগি, ছাগল পালন, ঘরের চালে শিমসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেন ছেনুয়ারা বেগম। এসব কাজের মাঝে অবসর পেলে স্থানীয় লোকজনের পানের বরজেও কাজ করেন তিনি। এতে বাড়তি আয় জুটে তার। জীবিকার তাগিদেই এমন সংগ্রামী জীবন কাটাচ্ছে ছেনুয়ারা বেগম। ছেনুয়ারা বেগম কক্সবাজারের রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের মনিরঝিল পশ্চিমপাড়ার দিনমজুর মুফিজুর রহমানের স্ত্রী।
প্রায় ১৩ বছর আগে ছেনুঅয়ারা বেগমের বিয়ে হয়। এর পর থেকেই পাটি তৈরির করে আসছেন তিনি। তার তৈরি পাটি বিক্রির অর্থই বর্তমানে এ সংসারের জীবিকার প্রধান উত্স।
ছেনুয়ারা বেগম জানান, ১২-১৩ বছর ধরে তিনি পাটি তৈরির কাজ করে আসছেন। পাটি বিক্রির টাকায় তিনি সংসারের অধিকাংশ ব্যয় নির্বাহ করেন। তিনি আরও জানান, তিনি শীতল ও বুকার এ দু’ধরনের পাটি তৈরি করেন। বড় আকারের একটি শীতল পাটি তৈরি করতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ দিন। আর তা বিক্রি হয় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়। ছোট আকারের শীতল পাটি তৈরিতে সময় অনেক কম লাগে। বিক্রি হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। বড় সাইজের বুকার পাটি তৈরি করতে সময় লাগে ৪-৫ দিন। এটি বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। আর ছোট বুকার পাটি বিক্রি হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। পাটি তৈরির প্রধান উপকরণ জাম আর রং কিনে নিতে হয়। ছেনুয়ারা বেগম পাটি তৈরির পাশাপাশি হাঁস, মুরগি, ছাগল পালন, ঘরের চালে শিম এবং বাড়ির পাশে খোলা জায়গায় বিভিন্ন সবজিও চাষ করেন যা দিয়ে ঘরের চাহিদা পূরণসহ বিক্রি করে সংসারের অনেক খরচ মেটাতে পারেন।
ছেনুয়ারা বেগমের তিন ছেলে-মেয়ের সবাই স্কুলে পড়াশোনা করছে। এর মধ্যে বড় মেয়ে মিতা নুর আকতার ষষ্ঠ শ্রেণী, ছোট মেয়ে আসমাউল হুসনা প্রথম শ্রেণী এবং ছেলে মো. সায়েম শিশু শ্রেণীতে অধ্যয়নরত আছে। সম্প্রতি ছেনুয়ারা বেগম পাটি বিক্রির টাকায় ছেলে মেয়েদের পড়ালেখার জন্য চেয়ার টেবিলও তৈরি করেছেন। ছেনুয়ারা বেগমের স্বামী মুফিজুর রহমান জানান, ভিটেবাড়ি ছাড়া তাদের বাড়তি কোনো জমি নেই। তাই স্ত্রীর এসব আয়েই তার সংসার ভালোভাবে কেটে যাচ্ছে। তিনি মাঝে মধ্যে দিনমজুর হিসেবে কাজ করলেও সে টাকায় তার সংসার এবং সন্তানদের লেখাপড়া চালানো সম্ভব হতো না। ছেনুয়ারা বেগমের পাশে দাঁড়িয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। হতদরিদ্র কর্মসূচির আওতায় পাটি তৈরির ক্ষুদ্র ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে ওই সংস্থার পক্ষ থেকে ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে ছেনুয়ারা বেগমকে ৪ হাজার টাকা দেয়া হয়। ব্র্যাক হতদরিদ্র কর্মসূচি রামু কাউয়ারখোপ কার্যালয়ের শাখা ব্যবস্থাপক আবদুর রশিদ মোল্লা জানান, ছেনুয়ারা বেগম পাটি তৈরি করে সংসারের হাল ধরে রেখেছে। তার এ উদ্যোগকে টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি ওই পরিবারের সদস্যদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করতে ব্র্যাক ছেনুয়ারা বেগমকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। এ সহায়তা ঋণ নয় এবং তা পরিশোধও করতে হবে না।

ঋণ দিয়েছে কৃষি ব্যাংকঃ রামুর সংরক্ষিত বনে মুরগির খামার

কক্সবাজারের রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের সংরক্ষিত বনের গহিন অরণ্যে প্রায় দুই একর জমি দখল করে মুরগির খামার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
 
এরই মধ্যে কয়েক শ গাছ কেটে দ্বিতল ভবনের কাঠামো দাঁড় করানো হয়েছে।

‘আরিশাহ মিশ্র খামার’ নামের মুরগির খামারটি করছেন বেসরকারি সংস্থা ‘গ্রিন কক্সবাজার’-এর নির্বাহী পরিচালক ও কক্সবাজার পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল কাদের চৌধুরী। এ জন্য তিনি কৃষি ব্যাংক, কক্সবাজার শাখা থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ঋণ (এসএমই) প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৭৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে বন কর্মকর্তা জানান, নির্মাণাধীন ভবনটি বনবিভাগের গেজেটের আরএস-৪০০৫ দাগের অন্তর্ভুক্ত জমিতে পড়েছে। তাঁদের নির্দেশে ছয়-সাত দিন আগে ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ভবনের মালিক ফজলুল কাদের চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা জীবন পাহাড় কাটা ও সমুদ্র সৈকত দখলসহ পরিবেশ রক্ষা নিয়ে আন্দোলন করেছি। এখন আমি পরিবেশ নষ্ট হয়—এমন কাজ করব কেন? বনবিভাগ দাবি করছে, এই জমি নাকি তাদের। প্রমাণ হলে জমি ছেড়ে দেব।’
স্থানীয় লোকজন জানান, গহিন অরণ্য ও পাহাড়ের ভেতর গাছপালা কেটে ভবন তৈরি করার সময় স্থানীয় লোকজন বাধা দেন। তখন তাঁদের বলা হয়, এটি সরকারি খামার প্রকল্প। কৃষি ব্যাংকের টাকায় ভবন তৈরি করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পাঁচ শতাধিক লোকের কর্মসংস্থান হবে। এ কারণে ভবন নির্মাণে এত দিন কেউ বাধা দেননি। অনেক দিন ধরে এ ভবনে অস্ত্রধারী কিছু যুবকের অবস্থান লক্ষ করা যায়। বিষয়টি সন্দেহ হলে গত ৩১ ডিসেম্বর স্থানীয় বাসিন্দারা প্রধানমন্ত্রী, বন ও পরিবেশমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে একটি অভিযোগপত্র পাঠান। এতে কৃষি ব্যাংক ও বনবিভাগের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশ থাকার অভিযোগ আনা হয়।
২২ জানুয়ারি সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের সবুজবাগ এলাকার বনতলায় বহুতল ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ভবনের দ্বিতীয় তলার কাঠামো দাঁড় করানো হয়ে গেছে। এর কয়েক শ গজ দূরে পানেরছড়া বনবিট কার্যালয়। এটি তৈরি করতে কয়েক শ ইউকেলিপ্টাস ও আকাশমনিগাছ কাটা হয়েছে বলে বন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এর চারপাশ ঘিরে আরও অনেক গাছ দেখা গেছে। এর উত্তরে একটি কাঁচাঘর আছে। উল্টো দিকে আরেকটির খুঁটি পোঁতা হয়েছে। এসবের দেখভাল করছেন কয়েকজন শ্রমিক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শ্রমিক জানান, বনবিভাগের লোকজন কয়েক দিন আগে এসে ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। তাই তাঁরা অলস বসে আছেন।
কক্সবাজার (দক্ষিণ) বনবিভাগের পানেরছড়া বনবিট কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এ বিটের দায়িত্ব নিয়েছি দেড় মাস আগে। এর আগেই ভবনটি তৈরি হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, যেখানে ভবনটি উঠছে, সেখানে বনবিভাগের গেজেটের আরএস-৪০০৫ দাগের অন্তর্ভুক্ত সংরক্ষিত বন। ফজলুল কাদের এ দাগের প্রায় দুই একর বনভূমি নিজের দাবি করে ভবনটি নির্মাণ করছেন।
পানেরছড়া বনরেঞ্জ কর্মকর্তা তাপস সন্যাল জানান, ভবনটি গহিন অরণ্যের যেখানে তৈরি করা হচ্ছে, সেখানে কোনো লোকজনের আসা-যাওয়া নেই। জঙ্গলের কারণে এটি দেখা যায় না। কিছুদিন আগে বনাঞ্চল পরিদর্শনে গিয়ে ভবনটি নজরে পড়ে। তখনই কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কক্সবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) বিপুল কৃষ্ণ দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সরেজমিন অনুসন্ধান করে এ ব্যাপারে আইনিব্যবস্থা নেব। সংরক্ষিত বনের জমিতে কাউকে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না।’
কৃষি ব্যাংক, কক্সবাজারের মুখ্য আঞ্চলিক কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন বলেন, ‘জমির বিপরীতে দলিল দেখেই ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আমরা এ পর্যন্ত প্রায় ৭৫ লাখ টাকা ফজলুল হক চৌধুরীকে দিয়েছি। যা দিয়ে তিনি সেখানে বহুতল ভবন তৈরি করছেন। এখন যদি ওই জমি বনবিভাগের বলা হয়, তাহলে সমস্যা দেখা দেবে।’

টেকনাফের প্রাচীন বৌদ্ধবিহার নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে

দখলদারদের থাবায় বিলুপ্ত হতে বসেছে কক্সবাজারের টেকনাফের প্রাচীন হ্নীলা বৌদ্ধবিহার (সেনপ্রু ক্যাং)।
প্রায় ২০০ বছর আগে জমিদার রাপুয়া চৌধুরী এই বিহারটি প্রতিষ্ঠা করেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভাষাগত সংখ্যালঘু রাখাইন জনজাতির বৌদ্ধবিহারের ১১ একর জমি দখলের উদ্দেশ্যে সেখানে চালানো হয়েছে দফায় দফায় হামলা। দখলদার-সন্ত্রাসীরা কয়েক দফায় মন্দিরের দরজা-জানালা, আসবাবপত্র, কাঠের সিঁড়ি ও অবকাঠামো খুলে নিয়ে গেছে। চুরি হয়েছে মন্দিরের ২০টি প্রাচীন বুদ্ধ মূর্তির মধ্যে ১৮টিই। কোনো রকমে এখন টিকে আছে কয়েকটি নড়বড়ে খুঁটির ওপর মন্দিরের টিনের চালাটি। বিহার এলাকার বড় বড় গাছও কেটে ফেলেছে দখলদাররা। অরক্ষিত এলাকাটিতে রাখাইন জনজাতির লোকজন দিন-দুপুরেও যেতে ভয় পায়। উপরন্তু বিহারের জমিতে একে একে গড়ে উঠছে নতুন নতুন ঘর-বসতি।
রাখাইন নেতারা অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মাদ আলী ২০০১ সালে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে চুক্তি করে বিহারের প্রায় ১০ একর জমি ৯৯ বছরের জন্য ইজারা নেন। দেবোত্তর সম্পত্তি ইজারা দেওয়া বেআইনি বলে এক বছর পর ওই চুক্তি বাতিল করা হয়। কিন্তু দুই বছর ধরে বিহারের জমি দখলের চেষ্টার অংশ হিসেবে মোহাম্মাদ আলী ও তাঁর ছেলে রাশেদ মোহাম্মাদ আলী সদলবলে মন্দিরের সম্পদ লুঠপাট করে চলেছেন।
মোহাম্মাদ আলী এসব অভিযোগ স্বীকার করেননি। তিনি দাবি করে বলেন, প্রয়াত মন্দির পুরোহিত (ভান্তে) অধ্যক্ষ উপঞা বংশ মহাথেরোর কাছ থেকে বৈধভাবে বিহারের জমি ইজারা নিয়ে তিনি সেখানে ফলদ ও বনজ গাছের আবাদ করছেন। মন্দিরের সম্পদ লুটপাটের সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পর্ক নেই।
বাংলাদেশ রাখাইন-মারমা সংঘ কাউন্সিল চেয়াম্যান ভেন উ পণ্ডিত মহাথেরো অভিযোগ করে বলেন, মোহাম্মাদ আলী বিহারের জমি দখলের জন্য দফায় দফায় সেখানে লুঠতরাজসহ নানা সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, নিরাপত্তার অভাবে সেখানে পুরোহিত দেওয়া যাচ্ছে না। সন্ত্রাসীরা কয়েক দফায় বিহারের তত্ত্বাবধায়ক ও নিরাপত্তা প্রহরীদের মারপিট করে সেখান থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।
ভেন উ পণ্ডিত মহাথেরো জানান, প্রায় ২০০ বছর আগে জমিদার রাপুয়া চৌধুরী ওই বিহারটি প্রতিষ্ঠা করেন। এর প্রথম পুরোহিত বা ভান্তে ছিলেন উ কাওয়ানা মহাথেরো। বিভিন্ন সময় পাঁচজন ভান্তে সেখানে পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করেন।
হ্নীলা বৌদ্ধবিহার রক্ষা কমিটির সদস্যসচিব ক্য জ' অং জানান, বিহার এলাকায় দুই বছর ধরে মাটির ঘরবাড়ি তুলে চার-পাঁচটি পরিবার বসতি গড়ে তুলেছে। তারা বিহারের জমিতে চাষবাসও করছে। তিনি বলেন, বিহারের জমি ও মন্দির রক্ষায় সেখানে একটি পুলিশ ফাঁড়ি প্রতিষ্ঠা করা না গেলে শিগগিরই প্রাচীন মন্দিরটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বিহারের জমিও পুরোপুরি বেদখল হয়ে যাবে।
স্থানীয় কৃষক মো. ইদ্রিস বলেন, সন্ত্রাসীদের ভয়ে রাখাইনরা এখন বিহার এলাকায় ঢুকতে ভয় পায়। আগে এখানে রাখাইন ছেলেমেয়েরা নিয়মিত লেখাপড়া করত। বিহারে নানা ধর্মীয় উৎসবও হতো।
রাখাইনপল্লী চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা ক্রং কেয়াং (৮২) বলেন, 'দুই বছর ধরে আমরা হ্নীলা বৌদ্ধবিহারে প্রার্থনা করতে আসতে পারি না। সন্ত্রাসীরা বিহারের মূর্তি চুরি করেই থেমে নেই, তারা এর দরোজা-জানালাও খুলে নিয়ে গেছে। তারা মন্দিরের খুঁটিগুলোও ভেঙে ফেলেছে।'
হ্নীলা বাজার এলাকার রাখাইন গৃহিণী নিমা (৫৫) বলেন, সন্ত্রাসীরা পাহারা বসিয়ে দিন-দুপুরে বিহার এলাকার পুরনো আম-কাঁঠাল গাছগুলোও কেটে নিয়ে গেছে। তাদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক জয়নুল বারী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'দেবোত্তর সম্পত্তি বিক্রি বা ইজারা দেওয়া সম্পূর্ণ বেআইনি। প্রাচীন হ্নীলা বৌদ্ধবিহারটি সন্ত্রাসীদের কবল থেকে উদ্ধার করে আমরা এটিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ নেব। কোনো ক্রমেই ভাষা ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু রাখাইনদের বিহার এবং মন্দির বেহাত হতে দেওয়া যায় না।'
জেলা পুলিশ সুপার সেলিম মো. জাহাঙ্গীর জানান, এরই মধ্যে সহকারী পুলিশ সুপারের (উখিয়া সার্কেল) তদন্তে হ্নীলা বৌদ্ধবিহার দখলের নেপথ্যে একটি প্রভাবশালী মহলকে চিহ্নিত করা হয়েছে। রাখাইনরা আদালতে মামলা করলে পুলিশের পক্ষে বিহার ও মন্দিরের জমি দ্রুত পুনরুদ্ধারে সুবিধা হবে।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, বিহারের জমি রক্ষায় রাতারাতি সেখানে পুলিশ ফাঁড়ি বসানো সম্ভব না হলেও টহল জোরদার করা হবে। তবে বিহারটি রক্ষায় রাখাইনদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
এদিকে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মাদ আলী তাঁর বিরুদ্ধে উত্থাপিত সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, 'বিহারের ইজারাকৃত জমিতে আমার ছেলে (রাশেদ মোহাম্মাদ আলী) ৩২ হাজার ফলদ ও বনজ গাছ লাগিয়েছে। এখন প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ পেলে আমি ইজারার দাবি ছেড়ে দেব। মন্দিরের টিলা নিয়ে আমি কি করব?' তিনি আরো বলেন, বিহার এলাকায় রাখাইন বসতি না থাকায় সেখানের মন্দিরের সম্পদ চুরি হচ্ছে। প্রয়াত মন্দির পুরোহিত বিহারের জমি বিক্রি করে সেখানে বাঙালি বসতি গড়ার অনুমতি দিয়েছেন। তাই এখন সেখানে ঘরবাড়ি উঠছে।

কুতুবদিয়ায় মন্ত্রী-আমলার আগমন ছাড়া রাস্তাঘাট সংস্কার হয় না

কুতুবদিয়ার প্রধান সড়কসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের সড়কগুলোর বেহাল দশা।
১৯৯১ সালে ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত রাস্তাগুলোর তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি দীর্ঘ ২০ বছর।

স্থানীয় নেতা ও ঠিকাদাররা রাস্তাগুলো সংস্কার করলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
১নং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজদৌল্লাহ জানান, তার এলাকার রাস্তাগুলোর এত করুণ অবস্থা যা না দেখলে বুঝা যাবে না। রাস্তাগুলো হচ্ছে বাইঙ্গাকাটা রোড, জুম্মাপাড়া রোড, আজিজিয়া রোড, সতরুদ্দীন রোড, চাইন্দারপাড়া রোড ও পোড়ারপাড়া রোড।
দ্বীপের বিসিক শিল্প নগরীখ্যাত এলাকা লেমশীখালী। লবণের মৌসুমে সব সময় লবণ আনা-নেওয়ায় ব্যস্ত থাকে এই এলাকার রাস্তাঘাট। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আখতার হোসাইন জানান, ইউনিয়নের মতিবাপের পাড়া রোড, সেন্টার রোড, মিরাখালী রোড, গাইনা কাটা রোড ও দরবার ঘাট রোডের অবস্থা খুব খারাপ।
উপমহাদেশের আধ্যাত্মিক সাধক হযরতুল আল্লামা শাহ্ আব্দুল মালেক আল-কুতুবী (রহ.) প্রতিষ্ঠিত কুতুব শরীফ দরবার ও বাতিঘরখ্যাত দ্বীপের ২নং দক্ষিণ ধূরুং ইউনিয়ন। প্রতিদিন হাজার হাজার পুণ্যার্থী জিয়ারত করতে আসেন দরবার শরিফে। প্রতি বৎসর ১৯ ফেব্রুয়ারি বার্ষিক ফাতিহায় শরিফে লক্ষ লক্ষ ভক্তের ঢল নামে। তাই ফাতিহা শরিফে আগত ভক্তবৃন্দ ও জনসাধারণের চলাচলে ভাঙাচোরা রাস্তা সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন দরবার শরিফের পরিচালক শাহজাদা শেখ ফরিদ আল কুতুবী।
গত বৎসর প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফসারুল আমিন ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আব্দুল করিম ও আগমন উপলক্ষে রাস্তাঘাটের বেশ সংস্কার করা হয়। যা ১০-১৫ দিনের মধ্যে আবারও পুরনো রূপ ফিরে পায়। দ্বীপবাসীর বড় দুঃখ হল সরকারের উচ্চপর্যায়ের সচিব বা মন্ত্রীদের আগমন ছাড়া দ্বীপের রাস্তাঘাটের কোন উন্নয়ন হয় না। তাই ভালোভাবে রাস্তা সংস্কারের দাবি কুতুবদিয়াবাসীর।

মহেশখালীর বজল ডাকাত ও পুলিশ অফিসার পরেশ হত্যাকারীদের গ্রেফতার দাবি

মহেশখালীর শীর্ষ সন্ত্রাসী, কুখ্যাত বজল ডাকাত ও তার বাহিনীর অন্য সদস্য
এবং পুলিশ অফিসার এসআই পরেশ কুমার কারবারীর হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে

স্থানীয় উত্তর নলবিলায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী জনগণকে সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষার দাবিতে চট্টগ্রামের মহেশখালী উন্নয়ন ফোরাম ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানবন্ধনে মহেশখালীর প্রবেশ দ্বার উত্তর নলবিলা গ্রামের চালিয়াতলীতে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে সচেতন নাগরিক ও সুশীল সমাজের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

আবাদি জমিতে তামাক চাষ

চকরিয়ায় এ বছরও বিপুল পরিমাণ আবাদি জমিতে চাষ হয়েছে তামাক।
স্থানীয়ভাবে তামাক কোম্পানিগুলো চাষিদের বেশি মুনাফার প্রলোভনে ফেলে তামাক চাষ করেছে।

তামাকের আগ্রাসনে হুমকির মুখে পড়েছে উপজেলার খাদ্য নিরাপত্তা। জমি হারাচ্ছে উর্বরতা শক্তি। এ অবস্থার কারণে ব্যাপক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে পরিবেশ সচেতন মহল। প্রতি বছর তামাক চাষের পরিধি বাড়তে থাকায় হ্রাস পাচ্ছে আবাদি জমি। অন্যদিকে মালিকরা তামাক জমির ইজারা বেশি পাওয়ায় ইরি-বোরো ও সবজি চাষের জমি সাধারণ কৃষকদের অল্প টাকায় বর্গা দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে।
চকরিয়ার সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, ফাসিয়াখালী, চিরিংগা, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী হারবাং ও বমুবিলছড়ি ইউনিয়নে ব্যক্তিমালিকাধীন আবাদি জমিতে এ বছরও তামাকের ব্যাপক চাষ হয়েছে। উপজেলা কৃষি বর্গাচাষি সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন জানিয়েছেন, আবাদি জমিতে তামাক আগ্রাসনের কারণে জমির মালিকরা প্রতি বছর ইজারামূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। তারা তামাক ক্ষেতের জমি বর্গা দিতে পারলে আর্থিকভাবে লাভবান হবে বেশি, তাই ইরি-বোরো ও সবজিচাষিরা ওই মূল্যে জমি বর্গা নিতে পারেন না। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এসএম জাহাঙ্গীর আলম বুলবুল বলেন, তামাক চাষ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক, এতে কোনো সন্দেহ নেই; কিন্তু এখানে নিয়োজিত টোব্যাকো কোম্পানিগুলোর ফাঁদে আটকে পড়ে কৃষকরা এ চাষ করতে বাধ্য হচ্ছেন। তামাক চাষ বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন। তামাকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলনে নিয়োজিত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা উবিনীগ, কক্সবাজারের আঞ্চলিক সমন্বয়ক রফিকুল হক টিটো বলেন, তামাক চাষের কারণে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আতিক উল্লাহ বলেন, বোরো চাষের বরাদ্দকৃত সার তামাক ক্ষেতে যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে এরকম কোনো ঘটনায় ডিলার, খুচরা বিক্রেতা ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।