Monday, January 31, 2011

প্রতিশোধের রাতে অনেক রেকর্ড বার্সেলোনার

প্রতিশোধের রাতে দারুণ এক অর্জনে সমৃদ্ধ বার্সেলোনা। যথারীতি এ অর্জনেও সবচেয়ে বড় ভূমিকা লিওনেল মেসির। আর্জেন্টাইন তারকার ২ গোলে হারকিউলিসকে ৩-০-তে উড়িয়ে স্প্যানিশ প্রিমেরা লিগায় টানা ১৫ জয়ের রেকর্ড স্পর্শ করেছে পেপ গার্দিওলার দল।

আলফ্রেডো ডি স্টেফানোর রিয়াল মাদ্রিদের গড়া রেকর্ডটির পাশে দাঁড়াতে পেরে উচ্ছ্বসিত বার্সা কোচের আনন্দ বাড়িয়ে দিয়েছে প্রতিশোধের সফল মিশনও। মৌসুমের শুরুতে স্প্যানিশ লিগের নবাগত দলটির কাছেই যে হেরেছিল তারা! বার্সেলোনার অনেক পাওয়ার রাতে এসি মিলান আর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডেও জয়ের উচ্ছ্বাস। কাতানিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে ইতালিয়ান সিরি ‘এ’র শিরোপা-স্বপ্ন আরো উজ্জ্বল করে তুলেছে মিলান। অন্যদিকে পিছিয়ে পড়েও সাউদাম্পটনের সঙ্গে ২-১ গোলে জিতে এফএ কাপের পঞ্চম রাউন্ডে উঠেছে ম্যানইউ। তবে হতাশার বৃত্তে বন্দি চেলসি ১-১ গোলে ড্র করেছে এভারটনের সঙ্গে।
এবারের স্প্যানিশ লিগে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেই হারকিউলিসের কাছে ০-২ গোলে হেরে গিয়েছিল বার্সেলোনা। তাও আবার নিজেদের মাঠ ন্যু ক্যাম্পে! হারকিউলিসের মাঠে সেই হারের প্রতিশোধের লক্ষ্যে নামার আগেই দানি আলভেসকে ফিরে পাওয়ার সুখবর পেয়েছে স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নরা। মেসির দুটি আর পেদ্রোর একটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ না হলে শুরুতে তারা এগিয়েও যেতে পারত। তা হয়নি, বরং ২০ মিনিটে স্বাগতিকরা ভয় পাইয়ে দিয়েছিল বার্সাকে। ১১ সেপ্টেম্বরের সেই ম্যাচে হারকিউলিসের দুটি গোলই করা নেলসন ভালদেজের ব্যাক হেড থেকে গোলের সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন ডেভিড ত্রেজেগে। কিন্তু ভিক্টর ভালদেসকে একা পেয়েও ফ্রান্সের সাবেক স্ট্রাইকার বলে ঠিকমতো পা ছোঁয়াতে পারেননি। প্রথমার্ধে প্রায় সমান তালে লড়লেও হারকিউলিস পিছিয়ে পড়েছে বিরতির মিনিট দুয়েক আগে। জাভির কোনাকুনি পাস ধরে ডান পায়ের জোরালো শটে গোলটা করেছেন দলের একঝাঁক তারকার মধ্যেও ক্রমেই উজ্জ্বল হয়ে ওঠা পেদ্রো। গোল পেয়ে অনুপ্রাণিত বার্সার আক্রমণাÍক ফুটবলের সামনে আর দাঁড়াতে পারেনি হারকিউলিস। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ডেভিড ভিয়া আর জাভির দুটি শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট কিংবা ৬৫ মিনিটে পেদ্রোর আরেকটি গোল অফসাইডের কারণে বাতিলও বার্সেলোনাকে নিরুৎসাহী করতে পারেনি। একের পর এক আক্রমণ গড়ে প্রতিপক্ষের জালে আরো দুইবার বল পাঠিয়েছে তারা। অবশ্য ৮৫ মিনিটে ফারিনোসের দ্বিতীয় হলুদ কার্ডও সাহায্য করেছে প্রিমেরা লিগায় হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কাতালানদের। এর দুই মিনিট পরই ডিফেন্সভেদী এক দৌড়ের পর মেসির বাঁ পায়ের শট ২-০ গোলে এগিয়ে দিয়েছে বার্সাকে। শেষ মুহূর্তে দারুণ এক আক্রমণকে পূর্ণতা দিতেও সমস্যা হয়নি ফিফা ব্যালন ডি’অর বিজয়ীর। মৌসুমে এটা মেসির ৩৭ ও লিগে ২১তম গোল। ২২টি নিয়ে এখনো লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতার মর্যাদা ধরে রাখলেও মৌসুমের হিসাবে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে বেশ পিছিয়েই আছেন ৩২ গোল করা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
১৯৬০-৬১ মৌসুমে ‘গ্রেট’ ডি স্টেফানোর দলের গড়া রেকর্ড ছুঁতে পেরে গার্দিওলা বেশ আবেগাক্রান্তই হয়ে পড়লেন ম্যাচ-শেষে, ‘লিগে টানা ১৫টি ম্যাচ জিতে (আলফ্রেডো) ডি স্টেফানোর রিয়াল মাদ্রিদের রেকর্ড স্পর্শ করা সত্যিই এক অসাধারণ সম্মান। ৫০ বছর পেরিয়ে যাওয়ায়ই প্রমাণিত, কাজটা কতটা কঠিন।’ হারকিউলিস সফর থেকে জয় নিয়ে ফেরায় রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে ব্যবধান আবার ৭ পয়েন্টে নিয়ে গেল বার্সা। এ রাউন্ডে রিয়ালের প্রতিপক্ষ ওসাসুনা। ম্যাচটি গত রাতেই হয়ে যাওয়ার কথা।
গত সপ্তাহে বায়ার্ন মিউনিখ থেকে এসি মিলানে যোগ দেওয়া মার্ক ফন বমেলের সিরি ‘এ’ অভিষেক মোটেও ভালো হয়নি। ৫৪ মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে বেরিয়ে গেছেন ডাচ মিডফিল্ডার। তবে ১০ জন হওয়ার পরই জ্বলে ওঠা রবিনহো আর ইব্রাহিমোভিচের গোলে প্রতিপক্ষের মাঠ থেকে মূল্যবান তিনটি পয়েন্ট নিয়ে ফিরেছে মিলান। তাই ২২ ম্যাচে ৪৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে তারা আরো সুসংহত।
এফএ কাপে তৃতীয় বিভাগের দল সাউদাম্পটনের সঙ্গে বিরতির ঠিক আগে গোল খেয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল রুনি-ন্যানি-গিগস-বারবাতভবিহীন ম্যানইউ। তবে দ্বিতীয়ার্ধে মাইকেল ওয়েন আর হাভিয়ের হার্নান্দেজের গোল শেষ ষোলোতে ঠিকই জায়গা করে দিয়েছে ‘রেড ডেভিল’দের। কিন্তু ইংলিশ চ্যাম্পিয়ন চেলসি তা পারেনি। লুই সাহার গোলে পিছিয়ে যাওয়া ‘ব্ল–জ’ সলোমন কালুর লক্ষ্যভেদে সমতায় ফিরলেও জিততে পারেনি। এএফপি, রয়টার্স

মোস্তফা নূরুজ্জামানের বই 'স্নেহ-প্রীতি-ভালোবাসার ডালি'

ব্যতিক্রমধর্মী ও ভিন্ন আমেজের কবিতার বই মোস্তফা নূরুজ্জামানের 'স্নেহ-প্রীতি-ভালোবাসার ডালি'। তিনি যা ভালোবেসেছেন, তাই ধরে রাখতে চেয়েছেন কাব্যিক আঙ্গিকে। অমর একুশে বইমেলা ২০০৯-এ প্রকাশিত হয়েছিল তার এই দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থটি।

চাকরি জীবন থেকে অবসর নিয়েছেন তিনি বছর পাঁচ আগে। ষাটোর্ধ এই তরুণ কবি নিজস্ব প্রাণ-বন্যায় ভাসেন এবং ভাসান সকলকে। বিয়ে-শাদী-জন্মদিন ও স্মরণীয় মুহূর্তকেন্দ্রিক তাঁর এই কবিতাগুলো উৎসব আনন্দের স্বভাবজ প্রকাশ। তিনি অনন্য তাঁর নাতি-নাতনি তথা শিশু-প্রীতিতে। বইটি উৎসর্গও করেছন তাঁর কাঁচা-পাকা নাতি-নাতনিদের। বিষয় ও বৈচিত্র্যের বিন্যাসে তাঁর কবিতার স্বাদ পাঠককে আমোদিত করবে। লেখক বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে সময়োপযোগী কাব্য, অনুকাব্য ইত্যাদি লিখে দিয়ে প্রয়োজনে তা ফ্রেমে বেঁধে উপহার দিয়েছেন তাঁর প্রিয়জনদের। এসব অনুকাব্য-কাব্য প্রশংসিত হতো সবার কাছে। কিন্তু প্রথমদিকে তিনি এসব কাব্য-অনুকাব্যের কপি নিজের কাছে রাখেননি। তাঁর বন্ধু-বান্ধব-সুহূদদের অনুরোধে সামপ্রতিককালে লেখকের কিছু কবিতা, প্যারোডি গান, ধামাইল গান, আশীর্বাদ বাণী ইত্যাদি নিয়ে প্রকাশ হয়েছে এ বইটি।

বইটির প্রথম কবিতাটি চন্দ্রঘোনাস্থ চম্পাকুঁড়ি খেলাঘর-এর সদস্যদের উদ্দেশ করে লিখেছেন_'তোমরা যারা চম্পাকুঁড়িরা / হয়েছো আজ জড় / দুদিন পরে তোমরাইতো/ হয়ে যাবে বড়।' স্নেহসিক্ত নাতির জন্মদিন উপলক্ষে কবি লিখেছেন_'পূর্ণ শশীর আলোতে যেমন ধরা ঝলমল, / তোমার ব্যক্তিত্ব হোক তেমনি সমুজ্জ্বল।' এরকমভাবে অনেক কবিতাই বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে লেখা। সুন্দর অলঙ্করণে ছাপানো এ কবিতার বইটি প্রকাশ করেছে উৎস প্রকাশনী, প্রচ্ছদ এঁকেছেন বিমান তালুকদার, বইটির দাম আশি টাকা।

ইত্তেফাক সাময়িকী ২১ জানুয়ারি সংখ্যার পাঠপ্রতিক্রিয়া

ত্তেফাক সাময়িকী ২১ জানুয়ারি সংখ্যার মূল আয়োজন ছিল নির্বাচিত দশ কবির বইমেলায় প্রকাশিতব্য কবিতার বই থেকে দশটি কবিতা। নির্বাচিত কবিরা হলেন_মুজিব মেহেদী, টোকন ঠাকুর, আশরাফ রোকন, মজনু শাহ, আপন মাহমুদ, মামুন খান, পিয়াস মজিদ, নওশাদ জামিল, বিজয় আহমেদ ও নির্লিপ্ত নয়ন।

এ বিভাগ সম্পর্কে 'আয়োজনটি সুন্দর' বলে প্রথম মন্তব্যটি করেন শামীম আজাদ। এরপরের মন্তব্য মোহাম্মদ নূরুল হকের। মজনু শাহ-এর কবিতা সম্পর্কে তার মূল্যায়নধমর্ী মন্তব্য, 'মৃতু্য' কবিতাটিতে ক্রমবিবর্তমান মানব আচরণ ও প্রাপঞ্চিক ধারণার পরিবর্তনীয় বিষয়ের স্বীকৃতি রয়েছে। এখানে কবি একই সাথে প্রপঞ্চের স্রষ্টা ও দ্রষ্টা। পিয়াস মজিদের কবিতা 'রূপনারাণ' সম্পর্কে তার মত, 'কবিতায় পঙক্তিকে প্রবচনীয় মর্যাদা দানের ক্ষেত্রে তার চেষ্টা মুগ্ধকর। ভাবনায় তাকে রবীন্দ্রনাথের মানসসঙ্গী বলেই ধরে নিয়েছি। প্রকাশে তার স্বাতন্ত্র্য আমাকে মুগ্ধ করেছে। এখানেই কবির বিশিষ্ট হয়ে ওঠার সোপান। এভাবেই কবি অগ্রজকে আত্মস্থ করে হয়ে ওঠেন নিজেও স্বতন্ত্রস্বর। আনোয়ার শাহাদাতের মন্তব্য, 'সাধারণ উদ্যোগ। তার চেয়েও অসাধারণ কবিতাগুলো।' এরপরের মন্তব্য প্রদানকারী সৈয়দা আমিনা ফারহিন। তার অনুভূতি, 'হাইরাজ ঘেঁষে আসা ফাটকা বাতাস যখন বীথিটার চুল নিয়ে খেলছিল, অদূরেই প্রান্তরে দাঁড়ানো একলা গাছের নিচে দেশলাইয়ে বিড়ি ধরাতে আমি প্রাণান্ত ছিলামঃ',_মুজিব মেহেদীর অাঁকা ছবিটা চোখে লেগে আছে। টোকন ঠাকুরের 'অসম্ভব সম্ভবত সম্ভব হয়ে ওঠার আগ পর্যন্তই অসম্ভব' লাইনটা পড়ে বিস্ময়ে চোখ ঠিকরে আসছে। আবার 'হতে পারে পাখি বা পালক ছিলাম/হঠাৎ খেয়াল করি, আমার কল্পিত ডানায় রোদ বৃষ্টি ধূলোরাই/ ভুল করে ৪১ না লিখে লিখে দিচ্ছে ১৪ বছর' অসাধারণ। মজনু শাহের 'কেনবা একটা করে বেড়াল বসে থাকতে দেখি সমস্ত অধ্যায় শেষে' গায়ে কাঁটা লাগিয়ে দিচ্ছে'। আশরাফ রোকনের 'পোকাদের সংসারে বোকা হয়ে আছি', পিয়াস মজিদের 'ফিরে ফিরে রোববার ঘণ্টা/ কনফেশন। এত হিমমেঘলা স্মৃতি সন্ধ্যা', বিজয় আহমেদের 'বোনরে আমি হারতে চাই নাই। নিমপাতা আনতে গিয়েই দেখা হলো তেঁতুল তলার ভুত্নীর সাথে', নওশাদ জামিলের 'প্রাচীন অক্ষরগুলো ভেসে ভেসে জানিয়ে দিয়েছ/ ভবিতব্যরেখা। জানি ডায়েরির শেষ পৃষ্ঠাটিই/ শেষ নয়, শুরু', লাইনগুলো উলেস্নখ করে ভাল লাগার কথা জানিয়েছেন। আবার নির্লিপ্ত নয়নের 'আমার ঘরটি গভীর হতে হতে একমুষ্টি রাত ঢুকে পড়লো' পড়ে বিষণ্নতায় ঘরটাই ভেসে যাচ্ছে বলে অনুভূতি ব্যক্ত করেন। মামুন খানের 'ঢেউ ছেড়ে জল-কাদা মল ছেড়ে/ হূদয়ের পাড়ে এসে যখন দাঁড়াও/ মনে হয়, এই প্রথম দেখছি- ভোরের পৃথিবী'কে বলেছেন বড় সি্নগ্ধ। আপন মাহমুদের 'অথচ তার মুখের দিকে/ তাকিয়ে কখনোই মনে হয়নি জীবনে একটাও প্রজাপতি তার/ খোঁপায় বসেছে' কে বড্ড গভীর বলে উলেস্নখ করেছেন। সে সঙ্গে আয়োজন সম্পর্কে অনুভূতি ব্যক্ত করেন অসাধারণ একটা কালেকশন বলে। আলতাফ হোসেন 'খুব ভালো উদ্যোগ' বলে তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

'লিটল ম্যাগাজিন আর ব্যবসা এক সঙ্গে হয় না' শীর্ষক আব্দুলস্নাহ আবু সায়ীদের সাক্ষাৎকারের উপর প্রথম মন্তব্যটি মোহাম্মদ নূরুল হকের। তার মতে, আব্দুলস্নাহ আবু সায়ীদের সাক্ষাৎকারের উত্তরগুলো শতভাগ সত্য। সে সাথে এও সত্য, লিটলম্যাগ কখনো কোনো যুগের দাবি মেটায় না, নতুন যুগের সৃষ্টি করে। আব্দুলস্নাহ আবু সায়ীদ সম্পাদিত কণ্ঠস্বর যুগের দাবিতে সৃষ্ট একটি কাগজ। যে কাগজ বৈশ্বিক স্রোতের টানে স্বদেশেও একটি স্রোত সৃষ্টির স্বপ্ন দেখেছিল মাত্র। তাই তার কাগজ কোনো যুগ সৃষ্টিতে সমর্থ হয়নি। কথাগুলো তার মুখ থেকে শুনতে পারলেই তার সাহিত্যপ্রেম ও আন্তরিক সততার সাক্ষর পেতাম।' এরপর সাবরিনা আনাম উলেস্নখ করেন, 'সাক্ষাৎকারে তাঁর চিরায়ত পরিশীলিত রুচি ও আদর্শিক চেতনা নিয়ে হাজির হয়েছেন। লিটলম্যাগের বৈশিষ্ট্য সনাক্ত করতে গিয়ে পক্ষান্তরে তিনি লিটলম্যাগ সম্পাদক-লেখকদের জন্য পথ নির্দেশ করেছেন।' জালাদী রায়, 'বরাবরের মতো আব্দুলস্নাহ আবু সায়ীদ এখানেও হূদয়গ্রাহী' বলে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।'

একমাত্র গল্পের নাম 'যাপিত জীবন'। লেখক একরামুল হক শামীম। গল্পটি সম্পর্কে মোহাম্মদ নূরুল হক অনুভূতি ব্যক্ত করেন এভাবে, 'খুব সাধারণ ও প্রথাগত একটি গল্প। সংলাপ রচনায় দৌর্বল্য নবিশি গল্পকারদের প্রাথমিক প্রচেষ্টার কথা স্মরণ করিয়ে দিলেও চিরকালীন অনুভবকে সম্মান দেখানোর জন্য গল্পকারকে ধন্যবাদ দিতেই হয়।' ফাতেমা আবেদীন নাজলা, মোহাম্মদ নূরুল হককে উদ্দেশ করে বলেন, 'এই লেখাটা আমার খুব প্রিয় একটা লেখা। এই গল্পটি পড়তে গিয়ে কোথাও থামতে হয়নি। এটাই একটা গল্পের বড় যোগ্যতা হতে পারে।'

এ সংখ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন ছিল মনির ইউসুফ রচিত 'পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে : দ্বিতীয় দরিয়ানগর কবিতামেলা'। প্রতিবেদনটি সম্পর্কে প্রথম মন্তব্য পাওয়া যায় মোজাফফর হোসেনের। তিনি উলেস্নখ করেন, 'ভালো লাগলো। কবিতা মেলায় থাকতে পারলে আরো ভালো লাগতো।' এরপর মোহাম্মদ নূরুল হক সংশয়সূচক মন্তব্যটি করেন। তার মতে, 'এই উদ্যোগ ভালো। কিন্তু তিনশ কবির মিলনমেলা উলেস্নখ করায় খটকা লাগলো মনে। ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার মতো যদি ঘরে ঘরে কবিতার রচনা হিড়িক পড়ে তো কবির ভিড়ে পাঠকের শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃতু্যবরণ করার ঘটনা ঘটলেও অবাক হবার কিছু থাকবে না।' কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার আপাতত সরল মন্তব্যের প্রতিউত্তরে মোহাম্মদ নূরুল হকের স্বরে ঝরে পড়ে কিছুটা বক্রোক্তি, 'ঝাঁকে ঝাঁকে পুঁটি থেকে রুই-কাতলা বের হতেতো কখনো শুনিনি। রুই-কাতলা ঝাঁকে ঝাঁকে চলে না, কবিরাও না। কবির প্রকৃত আরাধনা একার সন্ন্যাসে। প্রকৃত কবি মাত্রই নিভৃতচারী। হাত তুলে শপথ করা কবির কাজ নয়। কবি পাপপুণ্যে বিশ্বাসী নন, তাই তার শপথবাক্য উচ্চারণও অর্থহীন।' এ মন্তব্যের বিপরীতে মুহম্মদ নূরুল হুদার প্রতিউত্তর, 'এক পাতায় ১১জন কবির কবিতা ছেপেছে ইত্তেফাক সাময়িকী। সব কবিতাই আমার কাছে সুপাঠ্য বলে মনে হলো।' এরপর সৈয়দ সাইফুর রহমান সাকিব বলেন, 'এ মহতী উদ্যোগের প্রয়াস আরো ব্যাপক আকারে হওয়া উচিত'। ফেসবুকে এ মন্তব্য, প্রতিক্রিয়া চলে মঙ্গলবার বেলা ১১টা পর্যন্ত। এরপর মন্তব্য-প্রতিক্রিয়াগুলো গ্রন্থনা শুরু হয়। উলিস্নখিত বিভাগগুলো ছাড়াও প্রতিক্রিয়ার বিভাগ নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেন মোজাফফর হোসেন।

স্বপ্নভাষার অনুধাবন by মোবাশ্বির আলম মজুমদার

য়নরত মানুষের আবক্ষ শরীর দুই হাতে ধরা বই। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েন বই পড়তে পড়তে আর চলে যান স্বপ্নের দেশে। এভাবেই আয়ারল্যান্ডের শিল্পী এরিন কুইন তাঁর স্বপ্ন বিষয়কে উপস্থাপন করেছেন। নানান দেশের স্বপ্নবান শিল্পীরা তুলে ধরেছেন তাদের বিষয়গুলোকে এভাবে।

দৃক আর পাঠশালা ইনস্টিটিউট অব ফটোগ্রাফির আয়োজনে নগরীর সাতটি ভেনু্যতে এ প্রদর্শনী একযোগে চলছে। বিশ্বের ২৯টি দেশ এ আয়োজনে অংশ নিয়েছে। এবারের ছবি মেলার মূল প্রতিপাদ্য বিষয়_'স্বপ্ন'।

মানব মনের বিচিত্র ভাবনা, নানান দেশের মানুষের চেতনা, প্রকৃতি, পরিবেশ, সংগ্রাম, সাহসী মানুষের মুখ উঠে এসেছে এ প্রদর্শনীতে। বাংলাদেশ, মেক্সিকো আর নাইজেরিয়ার তিন আলোকচিত্রী প্রয়াত নাইবউদ্দিন আহমদ, পেদ্রো মেয়ার এবং জে ডি ওখাইওজেইকেরেকে আজীবন সম্মাননা প্রদানের মাধ্যমে প্রদর্শনীর যাত্রা শুরু হয়।

আয়ারল্যান্ডের শিল্পী এরিন কুইন তাঁর স্বপ্ন ভাবনাকে প্রকাশ করেছেন এভাবে_যখন কোনো ব্যক্তি বেঁচে আছেন কিন্তু ঘুমন্ত তখন তার স্বপ্ন বিছানায়_শান্ত হয়ে বিশ্রামরত। বাহুবন্দি হাতের নিচে তখন আপন স্বপ্ন তার জন্য অপেক্ষা করে। বিভিন্ন বয়সী মানুষের শয়নরত অবস্থানকে স্বাপি্নক একরঙা উপস্থাপনে শিল্পীর স্বপ্নের প্রকাশকে ব্যক্ত করে। আবছা আলোয় ঢেকে যায় শিশুমুখ। লরেন্স লেবলানক এসেছেন ফ্রান্স থেকে স্বপ্নকে এভাবে নিয়ে। স্বপ্ন বলতে ধূসরতা মনে হলেও তিনি ভেবেছেন প্রকৃতিতে মানুষের পাশাপাশি আকাশ, গাছ, মাটি, প্রকৃতির তাবৎ অনুষঙ্গও স্বপ্নে জড়িয়ে পড়ে। তাঁর দেশের প্রকৃতিকে সব সময়ই ভাবনায় রাখতে চান। স্বপ্ন নিয়ে তার ভাবনা একেবারেই অন্যরকম জীবন আর মৃতু্য দুয়ের স্বল্প পরিক্রমাকে তিনি উপলব্ধি করেন গভীরভাবে।

প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের আলোকচিত্রী মুনেম ওয়াসিফ 'নোনা পানির আহাজারি', দেবাশীষ সোমের 'ঢাকা : আমার স্বপ্ন আমার বাস্তবতা' শীর্ষক ছবিগুলো পানিহীন নাগরিকের স্বপ্ন ও প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা, ঢাকার জনজীবনের দুর্ভোগ মুক্তির স্বপ্ন উঠে এসেছে নান্দনিকরূপে।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, দৃক গ্যালারি, অলিয়ঁস ফ্রাসেজ, চারুকলা ইনস্টিটিউট লিচুতলা, ব্রিটিশ কাউন্সিল, গ্যেটে ইনস্টিটিউট, এশিয়াটিক গ্যালারি অব ফাইন আর্টসে একযোগে শুরু হওয়া প্রদর্শনী চলবে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

সাহিত্যের প্রচলিত ছক, শাখা, ভাগ একটা গড় ব্যাপার

ত্তেফাক সাময়িকী : প্রথম গল্প লিখতে গিয়ে কি কখনো প্রশ্ন জাগেনি, কেন আপনাকে গল্পই লিখতে হবে? হাসান আজিজুল হক : আমি আজ পর্যন্ত কখনো বলিনি যে, প্রথম গল্প 'শকুন' লিখতে গিয়ে আমি ঠিক করে ফেলেছিলাম যে, আমাকে গল্পই লিখতে হবে।

বরং এর ঠিক উল্টো কথাই আমি বরাবর বলে এসেছি। সেটা তো তোমাদের খেয়াল করার কথা। আমি বলেছি, বড় লেখা_উপন্যাসই বলো, আর যাই বলো আমার বরাবরই প্রথম ইচ্ছা ছিল । যে গল্পটির কথা বলছো, তার আগেই অন্তত একটি অসমাপ্ত দীর্ঘ লেখা_ছাপলে প্রায় ১০০ পৃষ্ঠা হতে পারে_লিখেছিলাম। আর তার কিছুকাল পরে একটি পুরো ছোট উপন্যাসও লিখেছিলাম। টুকটাক গল্প বা কবিতাও কম লিখিনি। কাজেই প্রথম গল্প লেখার সময় আমি কখনো মনস্থ করিনি, আমাকে গল্পই লিখতে হবে। খুব ছোটবেলার একটা ঘটনার স্মৃতি মাথায় ছিল। সাঁঝের অাঁধারে রাতকানা এক শকুন এসে পড়েছিল খোলা খামারবাড়িতে। পথ-বিপথে ছোটা, এই বিভ্রান্ত শকুনটির পিছু নিয়েছিলাম আমরা। সেটার বর্ণনা দিয়েই গল্প শুরু হয়। গল্পের কলা-কৌশল, আঙ্গিক, কল-কব্জা কোনো কিছুরই ধারণা ছিল না। গল্পটি বের হওয়ার পর এ পর্যন্ত যত কথা শুনেছি, তা সবই পাঠকদের বিচার-বিশেস্নষণ এবং মন্তব্য। এ সমস্ত বিচার ও মন্তব্যের বৈচিত্র্যের মধ্যে আমার কথা ঘুরতে থাকে। বেশ বিভ্রান্ত ও হতবুদ্ধি হয়ে পড়ি। এই এতগুলো কথা হলো তোমার প্রশ্নের জবাব।

ইত্তেফাক সাময়িকী : সাহিত্যের প্রেক্ষাপটে গল্প ফর্মটিকে আলাদাভাবে কেন বিবেচনা করা দরকার?

হাসান আজিজুল হক : এ ব্যাপারে বলি, তুমি তো বরং বেশ উল্টো কথাই বলে ফেললে। আমি আগাগোড়া বলে এসেছি, সেদিনও একটি দীর্ঘ প্রবন্ধে বলেছি_সাহিত্যের প্রচলিত ছক, শাখা, ভাগ একটা গড় ব্যাপার। খুব নির্দিষ্ট কিছু নয়। তাহলে আমি কেন বলতে যাব, ছোটগল্প বলে খুব আলাদা একটা সাহিত্যের ফর্ম আছে?

ইত্তেফাক সাময়িকী : 'শকুন' আপনার লেখা পাঠক সাধারণের কাছে বহুল পঠিত প্রথম গল্প। এই গল্প লেখার আগেও আপনি বেশ কয়েকটি গল্প লিখেছেন বলে আমরা জানি। পূর্বের লেখা সেই গল্পগুলোকে ছাপিয়ে 'শকুন' গল্পটি পাঠক এত উৎসাহের সঙ্গে গ্রহণ করলো কেন?

হাসান আজিজুল হক : আগে সেই সব লেখালেখি সাধারণ পাঠকদের কাছে তো পেঁৗছায়নি। স্থানীয় কোনো মফস্বল-গঞ্জ থেকে প্রকাশিত ভুলেভরা পত্রপত্রিকা ক'জন পাঠকইবা পড়েছে? সেই সব গল্পের কথা আমার নিজেরও মনে নেই। মনে হয়, বেশি পাঠক পড়লেও নিশ্চয়ই মনে রাখার মতো কিছু সেখানে ছিল না। দু'একটি লেখা হয়তো কোনোদিন প্রকাশিতও হয়নি। কাজেই তোমার প্রশ্নের আর কি জবাব হতে পারে?

ইত্তেফাক সাময়িকী : এই গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয় সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত 'সমকাল' পত্রিকায় ১৯৬০ সালে। কীভাবে গল্পটি এই পত্রিকার দপ্তরে পেঁৗছেছিল? এই গল্পটি পেঁৗছানোর পেছনের গল্পটি একটু বলুন।

হাসান আজিজুল হক : এই পেছনের গল্পটাও আগে নানাভাবে বলেছি। আমার হাতের লেখা প্রায় প্রথম থেকেই দুষ্পাঠ্য_আজও তাই। কাজেই ওই গল্পটির মূল কপি একটা বাঁধানো খাতায় এখনো লেখা আছে। খাতায় গল্পটির মাথার পাশে গল্পটি লেখা শুরু করার তারিখটিও লেখা আছে। আমার বড় বোনের হাতের লেখা সুন্দর ছিল। তিনি গল্পটি কপি করে দিয়েছিলেন। রেজিস্ট্রি করে ডাকে পাঠিয়েছিলাম। ছাপা_অল্পদিন পরেই সমকালের মার্চ সংখ্যাতে বেরিয়েছিল। সমকালে নিজের লেখা চোখে দেখে রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম_সন্দেহ নেই।

ইত্তেফাক সাময়িকী : শুধু একটি বিদঘুটে ও হিংস পাখি শকুনকে নিয়ে একটি গল্প তৈরি হতে পারে তা আপনার ভাবনা জগতে কীভাবে ধরা দিল?

হাসান আজিজুল হক : জবাব তো আগেই দিলাম। কোনো পরিকল্পনা-টরিকল্পনার ব্যাপার নেই। বরেন্দ্রের ঝাঁঝাঁ রোদের মধ্যে, ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে, চৌকিতে বুকের তলায় বালিশ দিয়ে শুয়ে, একটা সরু নিভওয়ালা শেফার্স কলম দিয়ে এলেবেলেভাবে গল্পটি লেখা শুরু করি। আলো এত কম ছিল, নিজের লেখা নিজেই দেখতে পাই না। এই তো ব্যাপার।

ইত্তেফাক সাময়িকী : ঝপ করে একটি শকুন খামারবাড়িতে নামার পরে গাঁয়ের ছেলেরা তাকে দেখতে পেল। কিন্তু তারা শকুনটিকে ঘিরে একটি দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করল। তার পিছু পিছু দৌড়াল এবং প্রায় সারা রাতে তারা মাঠে মাঠে শকুনটিকে তাড়িয়ে কাটালো। গল্পটির গল্পকার হিসেবে কেন এমন করেছেন বলে আপনি মনে করেন?

হাসান আজিজুল হক : কোনো কারণ নেই। ঘটনাটি ওরকমই ছিল। গল্প বেরিয়ে এসেছে লেখার পরে। আমি লিখতে লিখতে এটা-ওটা-সেটা ভেবে থাকতে পারি। কিছু মিশেল কর্মও করে থাকতে পারি। কিন্তু সেটা কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে করেছিলাম বলে কোনোমতেই আমি মেনে নিতে পারবো না। কাজেই প্রশ্নের জবাব যদি পেতেই হয়, তাহলে গল্পটি পড়ে পাঠকরা নিজেরাই এই প্রশ্নের জবাব বের করে নেবেন।

ইত্তেফাক সাময়িকী : গল্পে কিশোরদের মুখের কথার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার এবং বিভিন্ন শ্রেণী ও বিত্তের কিশোর ছেলেরা সংঘবদ্ধভাবে কেন একটি নির্দিষ্ট বিষয়কে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে বলে আপনি মনে করেন? বিশেষত শকুনের ওপর সেই কিশোর বালকরা নানাভাবে আনন্দমাখা অত্যাচার করতে উৎসাহী হয়ে উঠল কেন?

হাসান আজিজুল হক : সরল জবাব হচ্ছে, কোথাও কারো কোনো পরিকল্পনা ছিল না। সাধারণভাবে জিনিসটা নাও না! গাঁয়ের ছেলে-মেয়েরা দুষ্টুমি করে বেড়ায় না! মানুষের উপদ্রবও করে, ক্ষতিও করে ফেলে। এই কারো মাচা থেকে শসা চুরি করছে, কারো গাছ থেকে বাতাবিলেবু পেড়ে ফুটবল খেলছে। পাখির বাচ্চা কেউ পুষছে, কেউ মেরে ফেলছে। ধূসরিত, গরিব, ছন্নছাড়া ছেলেগুলোর স্বভাব নানারকম। সকলের অবস্থাও একরকম নয়। কেউ সচ্ছল। কেউ দুপুরের খাওয়ার পর আর কিছু খেতে পারেনি। কেউ গরু চড়ায়, কেউ স্কুলে যায়। সবারই পরনে নোংরা পোশাক, ধুলায় ধুলায় ধূসরিত এইসব বালক যদি দেখতে পায়, বিরাট এক শকুন তাদের নাগালের মধ্যে চলে এসেছে, তখন তাকে নিয়ে মজা করা, সারা প্রান্তর জুড়ে তাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ানো, তার পালক খসিয়ে নেয়া_এসব তো করবেই। এটাই স্বাভাবিক। তাই-ই তারা করছে। আর আমি সেটা ফোটাতে গিয়েই অবিকল তাদের মুখের ভাষা ব্যবহার করেছি। আর তাদের কথা ও চিন্তার মধ্যে যেসব কথা লিখেছি সেসব কিছুটা আন্দাজ করেছি। যেমন_পাখিটাকে সুদখোর মহাজনের সঙ্গে তুলনা কিংবা গল্পের একেবারে শেষে অবৈধ, অসামাজিক যৌন সম্পর্ক, আর প্রায় পশু জীবন হয়তো যোগ করেছি। তখন ভাবিনি, এখন ভাবি_লেখা হয়তো এরকম করেই হয়।

ইত্তেফাক সাময়িকী : ৫০ বছর আগে 'শকুন' গল্পটি লিখেছেন আপনি। গল্পটি প্রকাশের ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে এ বছর। এখন যদি এই গল্পটির দিকে আবার ফিরে তাকান তাহলে কীভাবে এই গল্পের গল্পকার হিসেবে গল্পটি মূল্যায়ন করবেন?

হাসান আজিজুল হক : এর এক কথায় জবাব হচ্ছে, সাধারণত আমি আমার পুরানো দিনে ফেলে আসা লেখাগুলো আবার কখনোই পড়ি না। 'শকুন' যদি পড়ি, আবার কী মনে হবে সে জল্পনা-কল্পনা করতে চাই না।

ইত্তেফাক সাময়িকী : তাহলে আপনার গল্পের নন্দন ভুবনটি কোথায়?

হাসান আজিজুল হক : আমার গল্পের নন্দন ভুবনটি হচ্ছে, ঠিক এই_মাটির পৃথিবীর কোনো কোনো ভূ-খণ্ডের মানুষ আর তার মৌলিক বেঁচে থাকাটার মধ্যে।

জনতার নিয়ন্ত্রণে কায়রো

মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের পদত্যাগের দাবিতে রাজপথে নামা মানুষের বিক্ষোভ আরও জোরালো হয়েছে। গতকাল রোববার কায়রোর কেন্দ্রস্থল তাহরির স্কয়ার ছিল বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে। স্কয়ারের আশপাশ ও বিভিন্ন রাজপথে ট্যাংকসহ সেনাসদস্যদের দেখা গেলেও তাঁরা বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি।

বরং জনতার সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানেই আগ্রহ দেখা গেছে তাঁদের মধ্যে। আলেকজান্দ্রিয়া ও সুয়েজ শহরেও টানা ষষ্ঠ দিনের মতো বিক্ষোভ হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন প্রেসিডেন্ট মোবারক। গণবিক্ষোভ অব্যাহত থাকায় প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে।
নজিরবিহীন সরকারবিরোধী বিক্ষোভের মধ্যে মিসরের বিভিন্ন স্থানে লুটপাটসহ নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির বেশ কয়েকটি কারাগার থেকে হাজার হাজার বন্দী পালিয়ে গেছে। গত মঙ্গলবার শুরু হওয়া সরকারবিরোধী বিক্ষোভে আইনশৃৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে এ পর্যন্ত অন্তত ১২৫ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে দুই হাজারেরও বেশি মানুষ।
বিক্ষোভের খবর প্রচার করায় কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল-জাজিরার প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে মিসরীয় কর্তৃপক্ষ। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি সরকার-বিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর বলপ্রয়োগ না করতে এবং সহিংসতা বন্ধে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে মোবারকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
কারফিউ সত্ত্বেও কায়রোর তাহরির স্কয়ারে অনেক বিক্ষোভকারী রাতভর অবস্থান করেন। গতকাল সকালের দিকে বিক্ষোভকারীরা সেখানে জড়ো হতে থাকেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। লোকজন দলে দলে বিক্ষোভে যোগ দিতে থাকেন। একপর্যায়ে এটি প্রেসিডেন্ট মোবারকের ৩০ বছরের শাসনামলের মধ্যে সবচেয়ে বড় সমাবেশে পরিণত হয়। গতকালের বিক্ষোভে বিরোধীদলীয় নেতা মোহাম্মদ এলবারাদি যোগ দেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সমাবেশস্থলে যাওয়ার মুখে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের দেহ তল্লাশি করেন। স্কয়ারে জড়ো হয়ে বিক্ষোভকারীরা মোবারকবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁরা বলেন, ‘মোবারক চলে যাও, তোমার জন্য বিমান প্রস্তুত রয়েছে’, ‘মোবারক, আর নয়’। একজন বিক্ষোভকারী আশা প্রকাশ করে বলেন, মোবারক পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যাবেন। বিক্ষোভে যোগ দিতে যাওয়ার পথে আরেকজন বিক্ষোভকারী বলেন, ‘মিসরের জনগণ আমূল পরিবর্তন চায়। তার শুরু হতে হবে প্রেসিডেন্ট মোবারকের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে।’ এলবারাদি বলেন, ‘আমরা নতুন যুগের সূচনা করতে যাচ্ছি। মোবারককে ক্ষমতা ছাড়তেই হবে।’
বিক্ষোভের মধ্যে কায়রোসহ বিভিন্ন শহরে, বিশেষ করে, আলেকজান্দ্রিয়ায় ব্যাপক লুটপাটের খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় লোকজন দল বেঁধে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন। স্থানীয় একজন অভিযোগ করেন, এই লুটপাটের সঙ্গে সরকারের পুলিশ বাহিনী জড়িত। লুটপাটের সময় একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে আটক করে তাঁরা সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছেন বলেও ওই ব্যক্তি জানান। আলেকজান্দ্রিয়া শহরে একটি সুপার মার্কেটেও লুটপাটের খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া কায়রোতে একটি জাদুঘর লুটপাটের চেষ্টা করা হয়েছে।
প্রত্নসম্পদের জন্য বিশ্বখ্যাত মিসরের এ বিষয়ক সর্বোচ্চ পরিষদের মহাসচিব জাহি হাওয়াস জানান, লুটপাটের উদ্দেশ্যে দুই ব্যক্তি ছাদ দিয়ে জাদুঘরে প্রবেশ করে। তারা কোনো কিছু নিতে না পারলেও কিছু জিনিসের ক্ষতি করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বেশ কয়েকটি কারাগারের নিরাপত্তাকর্মীরা দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ায় বন্দীরা কারাগার ভেঙে পালিয়ে গেছে। কায়রোর উত্তরাঞ্চলের একটি কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় পদপিষ্ট হয়ে আটজন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। কোনো কোনো কারাগারে বন্দীরা দাঙ্গা সৃষ্টি করে ফটক ভেঙে পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া বন্দীদের মধ্যে দেশটির নিষিদ্ধঘোষিত দল মুসলিম ব্রাদারহুডের ৩৪ নেতা-কর্মীও রয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার ওই নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়।
তাহরির স্কয়ারের আশপাশে গতকালও সেনাসদস্যদের ট্যাংক নিয়ে অবস্থান করতে দেখা যায়। আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ ভবনে সেনাসদস্যদের সতর্ক অবস্থান লক্ষ করা গেছে। তবে তাঁদের আগের দিনের মতো অ্যাকশনে যেতে দেখা যায়নি। বরং বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সেনাদের আচরণ ছিল বন্ধুসুলভ। বিক্ষোভকারীরা ট্যাংকের ওপরে উঠে মোবারকবিরোধী স্লোগান দেন। সেনাসদস্যদের সঙ্গে তাঁদের কোলাকুলিও করতে দেখা যায়। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা একজন সেনাসদস্যকে কাঁধে তুলে নিয়ে নাচতে থাকেন।
এদিকে প্রেসিডেন্ট মোবারক গতকাল দেশটির সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
গতকাল কায়রোসহ বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে পুলিশ দেখা যায়নি। বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিক্ষোভ দমনে ব্যর্থ হওয়ায় পুলিশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট মোবারক এখন বিক্ষোভ দমনে সেনাসদস্যদের দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিতে পারেন। আর এই উদ্দেশ্যেই ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বিশ্লেষকেরা এও বলছেন, রোববার বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সেনাসদস্যদের আচরণ দেখে মন হয় না জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে মোবারককে প্রেসিডেন্ট হিসেবে টিকিয়ে রাখার দায় তাঁরা নেবেন। তবে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বৈঠকের পর তাহরির স্কয়ারের ওপর দুটি জঙ্গি বিমান ও একটি হেলিকপ্টারকে বারবার চক্কর দিতে দেখা গেছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন মিসরের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। মিসরের পরিস্থিতি নিয়ে গত শনিবার জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। পরে হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে শান্ত থাকতে এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করা ও রাজনৈতিক সংস্কার এগিয়ে নিতে মিসরের কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা নিরস্ত্র জনগণের প্রতি কোনো ধরনের বলপ্রয়োগ না করতে ও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের অধিকার নিশ্চিত করতে প্রেসিডেন্ট মোবারকের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বেশ কিছু দেশ তাদের নাগরিকদের মিসর ভ্রমণ না করতে সতর্ক করে দিয়েছে। কায়রোতে মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোনো মার্কিন নাগরিক মিসর ছাড়তে চাইলে তাকে সহায়তা দেওয়া হবে।
প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক প্রায় ৩০ বছর ধরে মিসরের ক্ষমতায় রয়েছেন। ‘এপ্রিল ৬ মুভমেন্ট’ নামের একটি যুবসংগঠন দুর্নীতি, বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসি।
দেশের মোবাইল ফোন কম্পানিগুলোতে বিদেশি জনবল নিয়োগের পরিমাণ মোট জনবলের ১ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। আর সিইও (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা), সিএফও (প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা) এবং সিটিওর (প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা) মতো ব্যবস্থাপনা বা ঊর্ধ্বতন নির্বাহীর পদগুলোর ৫০ শতাংশে বাংলাদেশিদের নিয়োগ করতে হবে। যেসব মোবাইল ফোন কম্পানি এই শর্ত পূরণ করবে না, তাদের লাইসেন্স নবায়ন করা হবে না।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় দেশের মোবাইল ফোন কম্পানিগুলোর লাইসেন্স নবায়নের জন্য যে খসড়া নীতিমালা প্রস্তুত করেছে, তার ৩৪ দফায় ‘এমপ্লয়মেন্ট রেগুলেশন অব দ্য কম্পানি’ পর্বে এই শর্তের কথা জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘টেলিযোগাযোগ খাতে দেশের নাগরিকদের কর্মসংস্থান বাড়ানোর লক্ষ্যেই এ শর্ত আরোপের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণের স্বার্থেই মোবাইল ফোন কম্পানিগুলোর উঁচু পদগুলোতে দেশি জনবল থাকা উচিত বলে আমাদের ধারণা।’
মোবাইল অপারেটররা এ ধরনের শর্ত আরোপের এখতিয়ার ডাক ও টেলিকম মন্ত্রণালয় রাখে কি না তা জানার চেষ্টা করছে। তাদের ধারণা, বিষয়টি বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ ও বাণিজ্যনীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হবে না। অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটর অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) সেক্রেটারি জেনারেল আবু সাইদ খান এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা খসড়া নীতিমালার বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখছি। আইনগত অসংগতিসহ এ নীতিমালা সম্পর্কে আমাদের মতামত ৯ ফেব্র“য়ারির মধ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে জানাব।’
এদিকে খসড়া নীতিমালায় লাইসেন্স নবায়ন এবং স্পেকট্রাম ইকুইজিশন ফিসহ অন্য যেসব চার্জের কথা বলা হয়েছে, তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে সরকার চারটি মোবাইল ফোন কম্পানির কাছ থেকে এককালীন রাজস্ব আয় করবে ১৪ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা। লাইসেন্স নবায়ন ও স্পেকট্রামের জন্য গ্রামীণফোনকে সাত হাজার ৫৬ কোটি, বাংলালিংককে তিন হাজার ৩০০ কোটি, রবিকে তিন হাজার ১৬৩ কোটি এবং সিটিসেলকে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা এককালীন দিতে হবে।
প্রসংগত, চলতি বছরের ১১ নভেম্বরের আগেই মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি ও সিটিসেলের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে।
এ চার মোবাইল ফোন অপারেটরের গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গ্রাহকসংখ্যা ও গ্রাহকপ্রতি আয়ের ভিত্তিতে আগামী ১৫ বছরে তাদের সম্ভাব্য আয় নির্ধারণ করে লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে তার ১৫ শতাংশ হারে রাজস্ব আদায়ের পরোক্ষ প্রস্তাব রয়েছে খসড়া নীতিমালায়।
বিটিআরসির হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গ্রাহকপ্রতি মাসে আয় ছিল গ্রামীণফোনের ২২৭, বাংলালিংকের ১৬০, রবির ১৯৭ ও সিটিসেলের ১৮০ টাকা। আর গ্রাহক ছিল গ্রামীণফোনের দুই কোটি ৮০ লাখ, বাংলালিংকের এক কোটি ৮০ লাখ, রবির এক কোটি ১০ লাখ এবং সিটিসেলের ১৯ লাখ। এই গ্রাহকসংখ্যা ও গ্রাহকপ্রতি আয় অনুযায়ী লাইসেন্স নবায়নের পর আগামী ১৫ বছরে এ চার কম্পানির সম্ভাব্য আয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৯০ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে গ্রামীণফোন ৯০ হাজার ৭২০ কোটি, বাংলালিংক ৫৮ হাজার ৩২০ কোটি, রবি ৩৫ হাজার ৬৪০ কোটি এবং সিটিসেলের ছয় হাজার ১৫৬ কোটি টাকা সম্ভাব্য আয় ধরা হয়েছে। এই সম্ভাব্য আয়ের ১৫ শতাংশ অর্থাৎ ২৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব হিসেবে আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা লাইসেন্স নবায়নের সময়ই আদায়ের পক্ষে খসড়া নীতিমালা প্রস্তুত করা হয়েছে।
কবে নাগাদ এ নীতিমালা চূড়ান্ত হতে পারেএ প্রশ্নে ডাক ও টেলিযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব সুনীল কান্তি বোস গতকাল রবিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ বিষয়ে সময় বাড়াতে চাচ্ছেন। তবে চার মোবাইল অপারেটরের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এটি চূড়ান্ত করা হবে। জনবল নিয়োগের শর্ত সম্পর্কে তিনি বলেন, বিষয়টি প্রচলিত আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।

সীমাছাড়া বখাটেপনা

ভ টিজিং বা যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে ওঠার পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নজরদারির মধ্যেও বখাটেদের উৎপাত থেমে নেই। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে যৌন হয়রানির ঘটনা। সীমাহীন হয়ে উঠছে বখাটেদের উৎপাত।

এমনকি স্কুলশিক্ষকের কাছেও নিরাপদ নয় ছাত্রীরা। গতকাল রবিবার এ রকমই এক ঘটনা ঘটেছে কিশোরগঞ্জে। সেখানে পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অপরাধে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে তিন মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বগুড়ায় এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ জানানোয় কলেজশিক্ষক বাবাকে রবিবার রামদা দিয়ে কুপিয়েছে এক বখাটে যুবক। গুরুতর আহত ওই শিক্ষক এখন হাসপাতালে। বরগুনায় বখাটেপনার শিকার হয়েছেন এক নববিবাহিত গৃহবধূ। যৌন হয়রানির প্রতিবাদে জুতাপেটা করতে চাওয়ায় প্রতিশোধ হিসেবে এক বখাটে শনিবার ওই গৃহবধূর ওপর হামলা চালিয়ে তাঁর জিহ্বা কেটে দিয়েছে।
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকালে সদর উপজেলার স্বল্পযশোদল দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুর রহমানের যৌন হয়রানির শিকার হয় পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রী। অভিযোগে জানা যায়, স্কুলের অফিস কক্ষ ঝাড়ু দেওয়ার কথা বলে ওই ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে জড়িয়ে ধরে যৌন হয়রানি করেন ওই শিক্ষক। মেয়েটি বাড়িতে গিয়ে এ ঘটনা তার মা-বাবাকে জানায়। এ ঘটনা শুনে শত শত নারী-পুরুষ স্কুলে এসে প্রধান শিক্ষককে তাঁর কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখে। তারা প্রধান শিক্ষককে মারধর করে এবং তাঁর বিচারের দাবিতে স্কুলমাঠে বিক্ষোভ করতে থাকে। খবর পেয়ে কিশোরগঞ্জ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং বিষয়টি ভ্রাম্যমাণ আদালতকে অবহিত করে। ভ্রাম্যমাণ আদালত সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুর রহমানকে তিন মাসের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক মাসের কারাদণ্ড দেন। কিশোরগঞ্জের প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরে আলম সিদ্দিকী এ রায় দেন। রফিকুর রহমানের বাড়ি কিশোরগঞ্জ শহরের তারাপাশা এলাকায়।
কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেন জানান, রফিকুর রহমানকে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বগুড়া অফিস জানায়, বখাটে যুবকের রামদার আঘাতে আহত আকতার আলম নিশিন্দারা ফকির উদ্দিন (এফইউ) স্কুল ও কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক। তাঁকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত শিক্ষক ও তাঁর সহকর্মীরা জানান, গতকাল বিকেলে কলেজ শেষে তিনি যখন বাসায় ফিরছিলেন, তখন বখাটে যুবক শাকি (১৯) তাঁর পথ রোধ করে তাঁকে রামদা দিয়ে আঘাত করে। তাঁর মাথা লক্ষ্য করে প্রথম আঘাত করতে গেলে তিনি দৌড় দেন। দৌড়ে কিছু দূর গিয়ে তিনি পড়ে গেলে ওই বখাটে তাঁর ডান হাতে কুপিয়ে পালিয়ে যায়।
আকতার আলমের সহকর্মী গণিত বিভাগের প্রভাষক জাহাঙ্গীর হোসেন মিলকী জানান, তিনি বাড়ি ফেরার পথে হৈচৈ শুনে এগিয়ে গিয়ে দেখেন রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে আছেন আকতার। স্কুল শাখার শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের সহায়তায় তাঁকে শজিমেক হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের ইন্টার্নি চিকিৎসক ডা. লিলি জানান, আকতার আলমের বেশ রক্তক্ষরণ হয়েছে। মাথার আঘাত গুরুতর না হলেও হাতের চোট মারাত্মক। তবে বর্তমানে তিনি বিপদমুক্ত।ত্ম
চিকিৎসাধীন আকতার আলম জানান, তাঁর বড় মেয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। সেই মেয়েকে প্রতিনিয়ত রাস্তায় উত্ত্যক্ত করাসহ নানাভাবে হেনস্তা করছিল শাকি নামের এক বখাটে। সে নিশিন্দারা ফকির উদ্দিন (এফইউ) স্কুল ও কলেজের স্কুল শাখার শিক্ষক নূরুল হুদার সম্বন্ধীর ছেলে এবং পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হায়দার আলীর ভাতিজা। তিনি নিজে ওই যুবককে কয়েকবার ডেকে উত্ত্যক্ত করতে নিষেধ করেন। কিন্তু তাতে সে কর্ণপাত করেনি। গত মাসে একইভাবে স্কুলের গেটে এসে তাঁর মেয়ের সঙ্গে অশালীন আচরণ করলে স্কুল ও কলেজ শাখার কয়েকজন শিক্ষক শাকিকে আটক করেন। এ সময় নূরুল হুদা বিষয়টি মধ্যস্থতা করেন। তিনি নিজ জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেন। সে সময় শিক্ষকরা বিষয়টি নিয়ে একটি মুচলেকা তৈরি করলেও সেটি নূরুল হুদা নিজের কাছে রেখে দেন। গতকাল বাসায় ফেরার পথে আকতারের ওপর রামদা নিয়ে হামলা চালায় শাকি। ঘটনার পর থেকে বখাটে শাকি পলাতক।
আকতারের ওপর হামলার বিষয়ে শাকির ফুফা ও স্কুল শাখার শিক্ষক নূরুল হুদার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘তারা ছেলেকে ধরে এনে মারপিট করার কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে সে এমনটি করতে পারে।’ তবে শাকিই যে এ কাজ করেছে, তা নিশ্চিত নয় দাবি করে তিনি বলেন, ‘আকতার সাহেব বলছেন শাকি তাকে মেরেছে। অন্য কেউ তো তা বলেনি।’
বিষয়টি নিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হায়দার আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। পরে আমার বক্তব্য জানাব।’
বগুড়া সদর থানার ওসি এ কে এম খালেকুজ্জামান বলেন, থানায় সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে এমন ঘটনা ঘটলে অবশ্যই বখাটেকে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বরগুনা প্রতিনিধি জানান, বেতাগী উপজেলার দক্ষিণ বেতাগী গ্রামের গৃহবধূর (২০) শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে শনিবার রাতে তাঁর জিহ্বা কেটে নেওয়া প্রতিবেশী বখাটে শাহজালালকে (২৫) রাতেই বেতাগী থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। আহত গৃহবধূকে বেতাগী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত গৃহবধূর মা জাহানারা বেগম জানান, তাঁর মেয়ে বেতাগী ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। দুই বছর ধরে প্রতিবেশী আবদুল গনি হাওলাদারের ছেলে শাহজালাল তাঁর মেয়েকে উত্ত্যক্ত করে আসছে। সীমাহীন উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে তাঁর পরিবার মেয়েকে ওই বখাটের সঙ্গেই বিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ওই বখাটে ও তার পরিবার মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হয়নি। বছরখানেক আগে বেতাগী উপজেলার রানীপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের সঙ্গে মেয়েকে বিয়ে দেয় তাঁর পরিবার।
যৌন হয়রানির শিকার গৃহবধূর পরিবারের অভিযোগ, গত ১০-১২ দিন আগে তিনি বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। সাত-আট দিন আগে শাহজালাল দিনের বেলায় ওই বাড়িতে গিয়ে তাঁর শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায়। গৃহবধূ সেদিন ঘরের দোতলায় উঠে দরজা বন্ধ করে নিজেকে রক্ষা করেন এবং শাহজালালকে জুতাপেটা করার ভয় দেখান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শাহজালাল শনিবার রাতে কৌশলে ঘরে ঢুকে আবার তাঁর শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায়। তাঁর বাধার মুখে একপর্যায়ে সে তাঁকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে চলে যায়। এলাকাবাসী এ সময় ডাকাত এসেছে বলে চিৎকার করতে থাকে। বেতাগী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং শাহজালালকে গ্রেপ্তার করে। বেতাগী হাসপাতালের চিকিৎসক জানান, আহত গৃহবধূর জিহ্বায় পাঁচটি সেলাই দিতে হয়েছে। মাথায় কোপের আঘাত রয়েছে। নাক থেঁতলে গেছে।
বেতাগী থানার উপপরিদর্শক সেলিম জানান, জাহানারা বেগম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। জাহানারা বেগম ও তাঁর স্বামী আবদুল আজিজ জানান, তাঁদের মোবাইল ফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

নরওয়ের পত্রিকার ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ অ্যাসাঞ্জ

রওয়ে থেকে প্রকাশিত পত্রিকা আফটেনপোস্টেন-এর কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, গোপন মার্কিন কূটনৈতিক বার্তা প্রকাশ করে তারা ভিন্নধারার সংবাদমাধ্যম উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে ক্ষিপ্ত করেছে। আফটেনপোস্টেন নিজেদের মর্জিমতো বার্তাগুলো প্রকাশ করার কারণেই অ্যাসাঞ্জের এই ক্ষোভ।
গত ডিসেম্বর থেকে আফটেনপোস্টেন নিয়মিতভাবে উইকিলিকসের ফাঁস করা প্রায় আড়াই লাখ গোপন মার্কিন কূটনৈতিক বার্তা নিজেদের মর্জি অনুযায়ী প্রকাশ করে আসছে।
গত নভেম্বরে প্রথম গোপন কূটনৈতিক বার্তা প্রকাশ করে বিশ্বজুড়ে হইচই ফেলে দেয় উইকিলিকস কর্তৃপক্ষ। ওই সময় তারা ঘোষণা দেয়, তাদের হাতে এ ধরনের আড়াই লাখের বেশি বার্তা রয়েছে।
ওই বার্তাগুলো নিয়মিতভাবে প্রকাশ করার জন্য বিশ্বে বহুল প্রচারিত ও জনপ্রিয় পাঁচটি পত্রিকার সঙ্গেও চুক্তি করে উইকিলিকস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আফটেনপোস্টেন ওই পাঁচটি পত্রিকার মতো কোনো চুক্তি বা শর্ত মেনে বার্তাগুলো প্রকাশ করছে না। নরওয়ের ওই পত্রিকা কর্তৃপক্ষের মাত্র তিনজন জানেন কীভাবে উইকিলিকসের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ওই সব গোপন নথি পাওয়া গেছে।
আফটেনপোস্টেন-এর বার্তা সম্পাদক ওলে এরিক আলমলিদ বলেন, ‘এগুলো (গোপন নথি) পাওয়ার জন্য আমাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। শুধু একটি ই-মেইলের মাধ্যমে এগুলো আমাদের হস্তগত হয়নি। তবে আমরা এর জন্য কোনো অর্থ ব্যয় করিনি এবং এগুলো দেওয়ার বিনিময়ে কোনো শর্তও আরোপ করা হয়নি। আমাদের স্বাভাবিক কঠোর সম্পাদকীয় নীতিমালা অনুসরণ করেই আমরা এই বার্তাগুলো প্রকাশ করতে পারি।’
নরওয়ের রাজধানী ওসলোতে সুসজ্জিত কার্যালয়ে ৩০ জন সংবাদকর্মী দিনরাত পরিশ্রম করে সতর্কতার সঙ্গে ওই আড়াই লাখ গোপন মার্কিন কূটনৈতিক তারবার্তা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করছে। উইকিলিকস যেভাবে বুঝেশুনে সতর্কতার সঙ্গে ওই নথিগুলো প্রকাশ করছে, সেই নীতি না মেনে আফটেনপোস্টেন তাদের নিজেদের মর্জিমাফিক আগেভাগেই বিভিন্ন বার্তা প্রকাশ করে দিচ্ছে।
চলতি মাসের শুরুতে অ্যাসাঞ্জ নরওয়ের একটি অর্থনীতিবিষয়ক পত্রিকাকে বলেছিলেন আফটেনপোস্টেন তাদের ‘মিডিয়া পার্টনার’।
তবে তাঁর এই দাবি পুরোপুরি সমর্থন করে না ওই পত্রিকার কর্তৃপক্ষ। অ্যাসাঞ্জের পরিকল্পনা অনুযায়ী তার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ পাঁচটি পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস, গার্ডিয়ান, দের স্পিগেল, এল পাইস ও লা মঁদ এবং উইকিলিকস হিসাব করে নিজেদের নীতিমালা অনুযায়ী গোপন বার্তাগুলো ফাঁস করবে। কিন্তু নরওয়ের পত্রিকাটি ওই নীতিমালা না মেনে নিজেদের মতো করে গোপন নথিগুলো প্রকাশ করে দিচ্ছে।
গত কয়েক সপ্তাহে পত্রিকার পাতাগুলোয় ওই সব গোপন কূটনৈতিক বার্তার বরাত দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। একটি সংবাদে জানানো হয়, ইসরায়েল গাজার অর্থনীতি ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল, আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে একটি বাণিজ্যিক কৃত্রিম উপগ্রহের ছদ্মবেশে একটি গোয়েন্দা উপগ্রহ উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করেছে।
অন্য একটি খবরে জানানো হয়েছে, দামেস্কে স্ক্যান্ডেনেভিয়ার দেশগুলোর দূতাবাসে চালানো হামলায় সমর্থন দিয়েছে সিরিয়ার কর্তৃপক্ষ। এএফপি।

পিরামিড ভেঙে এখন পেটমোটা প্রশাসন

প্রশাসনের আদর্শ কাঠোমো ধরা হয় পিরামিড আকৃতিকে। এ দেশের প্রশাসনের মূল কাঠামোও এত দিন ছিল পিরামিড। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে সেটা ভেঙে হয়ে গেছে ‘পেটমোটা প্রশাসন’। আর এ কারণে দেখা দিচ্ছে নানান ‘অসুস্থতা’। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিকৃত চেহারার প্রশাসন আর চলতে পারছে না।
এর আশু নিরাময় দরকার। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নির্ধারিত পদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণসংখ্যক কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ায় ফুলে-ফেঁপে উঠেছে প্রশাসনিক কাঠামোর মাঝের দুই স্তর। আবার অর্ধেকের বেশি পদ খালি থাকায় নিচের দুই স্তর হয়ে গেছে সরু। ফলে মোটা পেট নিয়ে জনপ্রশাসন প্রায় অচল হয়ে পড়ায় একে গতিশীল করতে গত দুই বছরে সরকারের ওপর মহল থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে ১১টি বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। এমনকি, শূন্য পদ না থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি দেওয়ার সময় অডিটর জেনারেল অফিস থেকে আপত্তি তোলা হয়; কিন্তু সেটাও আমলে নেওয়া হয় না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক সংস্থাপনসচিব ড. এ এম এম শওকত আলী এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রশাসনের স্বাভাবিক গতি অব্যাহত রাখার জন্য প্রথম কাজই হচ্ছে শূন্য পদের বিপরীতে পদোন্নতি দেওয়া। এর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু শূন্য পদ না থাকার পরও অতিরিক্ত পদোন্নতির কারণে প্রশাসনের কাঠামো অস্বাভাবিক হয়ে পড়েছে। এতে কাজের স্বাভাবিক গতিও হারিয়ে গেছে। পাশাপাশি পদের চেয়ে কর্মকর্তা বেশি হওয়ায় পদায়নের জন্য তদবিরের মাত্রাও বেড়ে গেছে। পদায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে চলছে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট
কম মেধাবীরা তদবিরের মাধ্যমে ভালো পদে নিয়োগ পাচ্ছেন। আর মেধাবীরা অসহায় হয়ে পড়ছেন। ওএসডি হওয়ার আশঙ্কায় তাঁরাও একই পথ ধরেন। সব মিলিয়ে গোটা জনপ্রশাসন মেধাশূন্য হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তাই জরুরি ভিত্তিতে প্রশাসন সংস্কারসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ এখনই নেওয়া প্রয়োজন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. আকবর আলি খানও বলেন, প্রশাসনের মূল কাঠামো ভেঙে পড়ায় পদে পদে ফাইল আটকে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই এ প্রশাসনের কাছ থেকে আর ভালো কিছু আশা করা যায় না। নির্ধারিত পদের বাইরে পদোন্নতি দেওয়ায় বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তাকে অহেতুক ওএসডি করে রাখতে হচ্ছে। এঁদের কাছ থেকে সার্ভিস পাওয়া না গেলেও তাঁদের পেছনে ব্যয় হচ্ছে সরকারের বড় অঙ্কের অর্থ। এসব কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে কাজের স্পৃহা হারিয়ে ফেলছেন। এ অবস্থা থেকে উদ্ধারের একমাত্র উপায় হচ্ছে গোটা প্রশাসনকে ঢেলে সাজানো। জরুরি হয়ে পড়েছে জনপ্রশাসন সংস্কার।
তবে সংস্থাপনসচিব ইকবাল মাহমুদের মুখে ভিন্ন সুর। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রশাসন কাঠামোর তেমন কোনো বিকৃতি হয়নি। কাজের স্বাভাবিক গতি অব্যাহত আছে। বরং উপসচিব পর্যায়ের ডেস্ক থেকেই অনেক কাজ শুরু হয়। এতে প্রশাসনিক প্রক্রিয়া এক ধাপ কমে এসে কাজ দ্রুত সম্পন্ন হচ্ছে।’
‘পদ না থাকার পরও বিপুলসংখ্যাক কর্মকর্তাকে উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি কেন দেওয়া হয়েছে?’জানতে চাইলে সচিব সরাসরি কোনো জবাব না দিয়ে বলেন, ‘আমরা সুপার নিউমারি (নির্দিষ্ট মেয়াদে অস্থায়ী পদ) পদ সৃষ্টি করছি।’
উল্লেখ্য, যুগ্ম সচিব ও উপসচিবের জন্য নির্ধারিত পদের বাইরে এ মুহূর্তে ৭৮৯ জন অতিরিক্ত কর্মকর্তা থাকলেও সুপার নিউমারি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে শুধু উপসচিবের জন্য, মাত্র ২৬০টি।
‘স্বাভাবিক থাকলে কাজের গতি বাড়ানোর কথা উল্লেখ করে কিছু দিন পর পর সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নানা ধরনের নির্দেশনা পাঠাচ্ছে কেন?’জানতে চাইলে সংস্থাপনসচিব বলেন, এটি রুটিন ওয়ার্ক।
এক হিসাবে দেখা গেছে, পদের চেয়ে কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি হওয়ায় ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, যাঁদের কোনো কাজ নেই) হয়ে আছেন ৪৯৩ জন। এ ছাড়া শূন্য পদের অভাবে পদায়ন না পাওয়া বিভিন্ন স্তরের প্রায় ৯০ জন কর্মকর্তাকে প্রেষণে প্রশাসনের বাইরে সরকারের অন্যান্য দপ্তরে নিয়োগ দিতে হয়েছে এবং তাঁদের মূল বেতনের ২০ শতাংশ প্রেষণ-ভাতা দিতে হচ্ছে। এতে করেও সরকারের মোটা অঙ্কের টাকা গচ্চা যাচ্ছে।
প্রশাসনের স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনতে গত দুই বছরে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যে ১১টি বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে২০০৯ সালের ১২ মার্চ খোদ প্রধানমন্ত্রীর উদ্বেগের কথা জানিয়ে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের চিঠি দেয় তাঁর কার্যালয়। যাঁদের কারণে প্রশাসন স্থবির হয়ে পড়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয় ওই চিঠিতে। এ ছাড়া সচিবরা রুলস অব বিজনেসের বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘন করে প্রশাসনে ফাইলজটের সৃষ্টি করছেন অভিযোগ এনে ওই বছরের ২৬ এপ্রিল অর্থসচিব ও ৭ মে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং পরের বছর ২৪ নভেম্বর আবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব তিন দফা চিঠি ছাড়েন। ওদিকে তদবিরবাজদের চাপে মন্ত্রণালয়ের স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হচ্ছে উল্লেখ করে ২০০৯ সালের ৪ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক চিঠিতে সচিবালয়ের পাস ইস্যুর সংখ্যা সীমিত রাখাসংক্রান্ত সরকারের এক আদেশ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নজরে আনে।
এ ছাড়া ২০০৯ সালের ১ জুলাই সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের উদ্দেশে একটি চিঠি দেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোল্লাহ ওয়াহেদুজ্জামান। এ চিঠিতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সর্বশেষ জারি করা প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা অর্পণসংক্রান্ত আদেশের তথ্য, অনিষ্পন্ন পেনশন কেসের সংখ্যা ও নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণ, অডিট আপত্তির সংখ্যা ও অর্থের পরিমাণসহ ১১টি বিষয়ে তথ্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাড়া অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির ব্যাপারে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের আগ্রহ সামান্যই। পেনশন নিষ্পত্তিতেও ঢিলেঢালা ভাবটাই চলছে। আর প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা অর্পণের বিষয়টির বাস্তবায়ন নেই বললেই চলে। ফলে উপসচিব, যুগ্ম সচিব বা অতিরিক্ত সচিবের ডেস্ক থেকে যেসব নথি নিষ্পত্তি হওয়ার কথা, সেগুলো কোনো কারণ ছাড়াই সরাসরি সচিব বা মন্ত্রীর দপ্তরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে সচিবালয় নির্দেশিকা অনুযায়ী নথি ছাড়ার সর্বোচ্চ সময়সীমা ৭২ ঘণ্টা কার্যকর হচ্ছে না।
বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফাইল ছাড় করার ব্যাপারে নানা দিক চিন্তা করেন তাঁরা। নেতিবাচক মন্তব্য দিলে সরকারের নীতি-নির্ধারকদের বিরাগভাজন হয়ে ওএসডি হতে পারেনএমন আশঙ্কায় কোনো স্তরের কর্মকর্তাই ঝুঁকি নিতে চান না। আর পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তারা তো জুনিয়রদের অধীনে চলে যাওয়ায় এখন কাজের স্পৃহাই হারিয়ে ফেলেছেন।
এসব কারণেই মূলত বারবার নির্দেশ হাঁকার পরও তেমন ফল হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা। উল্লেখ্য, বর্তমান সরকার এ পর্যন্ত প্রশাসনের উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে ৯৫০ জনকে পদোন্নতি দিয়েছে। আর প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকার পরও পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন ৬৯৭ জন।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের তিনজন সচিব, চারজন অতিরিক্ত সচিব ও তিনজন উপসচিব (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) প্রশাসনিক কাজের দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে একমত পোষণ করে বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ২৭ শতাংশ। একই সময় গত অর্থবছরে এ হার ছিল ২৯ শতাংশ।
তবে সংস্থাপনসচিব ইকবাল মাহমুদ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এ নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। শেষ ছয় মাসে এডিপি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো সম্ভব হবে।
সংস্থাপন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসন কাঠামোর মাঝের দুই স্তরে যুগ্ম সচিবের জন্য নির্ধারিত ৪৩০টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৫৬৮ জন এবং উপসচিবের ৮৩০ পদের বিপরীতে আছেন এক হাজার ৪৮১ জন। অর্থাৎ এ দুই পদে অতিরিক্ত কর্মকর্তা আছেন ৭৮৯ জন। অন্যদিকে প্রশাসনের নিচের দুই স্তরসহকারী সচিবের জন্য নির্ধারিত পদ দুই হাজার ৯৪টি হলেও এ মুহূর্তে কর্মরত আছেন এক হাজার ৪৫০ জন ও সিনিয়র সহকারী সচিবের এক হাজার ৭৭৪টি পদের বিপরীতে আছেন ৭৭৩ জন। অর্থাৎ নিচের দুই স্তরে কর্মকর্তার ঘাটতি এক হাজার ৬৪৫ জন। পদ না থাকার পরও সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে ৫৬৯ জনকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়াতেই মূলত প্রশাসনিক কাঠামোর নিচের দিক সরু ও মাঝের স্তর মোটা হয়ে গেছে। আবার শূন্য পদের বিপরীতে পদোন্নতি না দিয়ে যুগ্ম সচিব পদে ২৪৯ জনকে পদোন্নতি দেওয়ায় মাঝের স্তর আরো মোটা হয়ে গেছে।
প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে কর্মরত ক্যাডার সার্ভিস কর্মকর্তাদের পদোন্নতির সুপারিশ করতে গঠিত সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের অন্যতম সদস্য ও সরকারের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল আহমেদ আতাউল হাকিম কালের কণ্ঠকে বলেন, নির্ধারিত পদের বাইরে পদোন্নতি দেওয়ায় সরকারের বাজেটবহির্ভূত ব্যয় বেড়ে যায়, আর এটা আইন লঙ্ঘনের শামিল। কারণ একটি অর্থবছরের জন্য জাতীয় বাজেট হচ্ছে একধরনের আইন। যখন পদ না থাকার পরও পদোন্নতি দেওয়া হয়, তখন অডিটর জেনারেল অফিস থেকে আপত্তি দেওয়া হয়। তবে সরকার যদি বিশেষ প্রয়োজনে নির্ধারিত পদের বাইরে পদোন্নতি দেওয়া জরুরি মনে করে, সে ক্ষেত্রে সুপার নিউমারি পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতি দিতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।