Monday, January 31, 2011

সীমাছাড়া বখাটেপনা

ভ টিজিং বা যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে ওঠার পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নজরদারির মধ্যেও বখাটেদের উৎপাত থেমে নেই। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে যৌন হয়রানির ঘটনা। সীমাহীন হয়ে উঠছে বখাটেদের উৎপাত।

এমনকি স্কুলশিক্ষকের কাছেও নিরাপদ নয় ছাত্রীরা। গতকাল রবিবার এ রকমই এক ঘটনা ঘটেছে কিশোরগঞ্জে। সেখানে পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অপরাধে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে তিন মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বগুড়ায় এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ জানানোয় কলেজশিক্ষক বাবাকে রবিবার রামদা দিয়ে কুপিয়েছে এক বখাটে যুবক। গুরুতর আহত ওই শিক্ষক এখন হাসপাতালে। বরগুনায় বখাটেপনার শিকার হয়েছেন এক নববিবাহিত গৃহবধূ। যৌন হয়রানির প্রতিবাদে জুতাপেটা করতে চাওয়ায় প্রতিশোধ হিসেবে এক বখাটে শনিবার ওই গৃহবধূর ওপর হামলা চালিয়ে তাঁর জিহ্বা কেটে দিয়েছে।
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকালে সদর উপজেলার স্বল্পযশোদল দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুর রহমানের যৌন হয়রানির শিকার হয় পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রী। অভিযোগে জানা যায়, স্কুলের অফিস কক্ষ ঝাড়ু দেওয়ার কথা বলে ওই ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে জড়িয়ে ধরে যৌন হয়রানি করেন ওই শিক্ষক। মেয়েটি বাড়িতে গিয়ে এ ঘটনা তার মা-বাবাকে জানায়। এ ঘটনা শুনে শত শত নারী-পুরুষ স্কুলে এসে প্রধান শিক্ষককে তাঁর কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখে। তারা প্রধান শিক্ষককে মারধর করে এবং তাঁর বিচারের দাবিতে স্কুলমাঠে বিক্ষোভ করতে থাকে। খবর পেয়ে কিশোরগঞ্জ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং বিষয়টি ভ্রাম্যমাণ আদালতকে অবহিত করে। ভ্রাম্যমাণ আদালত সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুর রহমানকে তিন মাসের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক মাসের কারাদণ্ড দেন। কিশোরগঞ্জের প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরে আলম সিদ্দিকী এ রায় দেন। রফিকুর রহমানের বাড়ি কিশোরগঞ্জ শহরের তারাপাশা এলাকায়।
কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেন জানান, রফিকুর রহমানকে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বগুড়া অফিস জানায়, বখাটে যুবকের রামদার আঘাতে আহত আকতার আলম নিশিন্দারা ফকির উদ্দিন (এফইউ) স্কুল ও কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক। তাঁকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত শিক্ষক ও তাঁর সহকর্মীরা জানান, গতকাল বিকেলে কলেজ শেষে তিনি যখন বাসায় ফিরছিলেন, তখন বখাটে যুবক শাকি (১৯) তাঁর পথ রোধ করে তাঁকে রামদা দিয়ে আঘাত করে। তাঁর মাথা লক্ষ্য করে প্রথম আঘাত করতে গেলে তিনি দৌড় দেন। দৌড়ে কিছু দূর গিয়ে তিনি পড়ে গেলে ওই বখাটে তাঁর ডান হাতে কুপিয়ে পালিয়ে যায়।
আকতার আলমের সহকর্মী গণিত বিভাগের প্রভাষক জাহাঙ্গীর হোসেন মিলকী জানান, তিনি বাড়ি ফেরার পথে হৈচৈ শুনে এগিয়ে গিয়ে দেখেন রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে আছেন আকতার। স্কুল শাখার শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের সহায়তায় তাঁকে শজিমেক হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের ইন্টার্নি চিকিৎসক ডা. লিলি জানান, আকতার আলমের বেশ রক্তক্ষরণ হয়েছে। মাথার আঘাত গুরুতর না হলেও হাতের চোট মারাত্মক। তবে বর্তমানে তিনি বিপদমুক্ত।ত্ম
চিকিৎসাধীন আকতার আলম জানান, তাঁর বড় মেয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। সেই মেয়েকে প্রতিনিয়ত রাস্তায় উত্ত্যক্ত করাসহ নানাভাবে হেনস্তা করছিল শাকি নামের এক বখাটে। সে নিশিন্দারা ফকির উদ্দিন (এফইউ) স্কুল ও কলেজের স্কুল শাখার শিক্ষক নূরুল হুদার সম্বন্ধীর ছেলে এবং পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হায়দার আলীর ভাতিজা। তিনি নিজে ওই যুবককে কয়েকবার ডেকে উত্ত্যক্ত করতে নিষেধ করেন। কিন্তু তাতে সে কর্ণপাত করেনি। গত মাসে একইভাবে স্কুলের গেটে এসে তাঁর মেয়ের সঙ্গে অশালীন আচরণ করলে স্কুল ও কলেজ শাখার কয়েকজন শিক্ষক শাকিকে আটক করেন। এ সময় নূরুল হুদা বিষয়টি মধ্যস্থতা করেন। তিনি নিজ জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেন। সে সময় শিক্ষকরা বিষয়টি নিয়ে একটি মুচলেকা তৈরি করলেও সেটি নূরুল হুদা নিজের কাছে রেখে দেন। গতকাল বাসায় ফেরার পথে আকতারের ওপর রামদা নিয়ে হামলা চালায় শাকি। ঘটনার পর থেকে বখাটে শাকি পলাতক।
আকতারের ওপর হামলার বিষয়ে শাকির ফুফা ও স্কুল শাখার শিক্ষক নূরুল হুদার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘তারা ছেলেকে ধরে এনে মারপিট করার কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে সে এমনটি করতে পারে।’ তবে শাকিই যে এ কাজ করেছে, তা নিশ্চিত নয় দাবি করে তিনি বলেন, ‘আকতার সাহেব বলছেন শাকি তাকে মেরেছে। অন্য কেউ তো তা বলেনি।’
বিষয়টি নিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হায়দার আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। পরে আমার বক্তব্য জানাব।’
বগুড়া সদর থানার ওসি এ কে এম খালেকুজ্জামান বলেন, থানায় সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে এমন ঘটনা ঘটলে অবশ্যই বখাটেকে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বরগুনা প্রতিনিধি জানান, বেতাগী উপজেলার দক্ষিণ বেতাগী গ্রামের গৃহবধূর (২০) শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে শনিবার রাতে তাঁর জিহ্বা কেটে নেওয়া প্রতিবেশী বখাটে শাহজালালকে (২৫) রাতেই বেতাগী থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। আহত গৃহবধূকে বেতাগী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত গৃহবধূর মা জাহানারা বেগম জানান, তাঁর মেয়ে বেতাগী ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। দুই বছর ধরে প্রতিবেশী আবদুল গনি হাওলাদারের ছেলে শাহজালাল তাঁর মেয়েকে উত্ত্যক্ত করে আসছে। সীমাহীন উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে তাঁর পরিবার মেয়েকে ওই বখাটের সঙ্গেই বিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ওই বখাটে ও তার পরিবার মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হয়নি। বছরখানেক আগে বেতাগী উপজেলার রানীপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের সঙ্গে মেয়েকে বিয়ে দেয় তাঁর পরিবার।
যৌন হয়রানির শিকার গৃহবধূর পরিবারের অভিযোগ, গত ১০-১২ দিন আগে তিনি বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। সাত-আট দিন আগে শাহজালাল দিনের বেলায় ওই বাড়িতে গিয়ে তাঁর শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায়। গৃহবধূ সেদিন ঘরের দোতলায় উঠে দরজা বন্ধ করে নিজেকে রক্ষা করেন এবং শাহজালালকে জুতাপেটা করার ভয় দেখান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শাহজালাল শনিবার রাতে কৌশলে ঘরে ঢুকে আবার তাঁর শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায়। তাঁর বাধার মুখে একপর্যায়ে সে তাঁকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে চলে যায়। এলাকাবাসী এ সময় ডাকাত এসেছে বলে চিৎকার করতে থাকে। বেতাগী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং শাহজালালকে গ্রেপ্তার করে। বেতাগী হাসপাতালের চিকিৎসক জানান, আহত গৃহবধূর জিহ্বায় পাঁচটি সেলাই দিতে হয়েছে। মাথায় কোপের আঘাত রয়েছে। নাক থেঁতলে গেছে।
বেতাগী থানার উপপরিদর্শক সেলিম জানান, জাহানারা বেগম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। জাহানারা বেগম ও তাঁর স্বামী আবদুল আজিজ জানান, তাঁদের মোবাইল ফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

No comments:

Post a Comment