Monday, December 13, 2010

পোশাকশ্রমিকদের মতো মানুষও একদিন জেগে উঠবে

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, সরকারের অসহিষ্ণুতার চিহ্ন ফুটে উঠছে। অসহিষ্ণুতার কারণে পোশাকশ্রমিকরা সহিংস হয়ে উঠেছেন। আচরণ পরিবর্তন না হলে পোশাকশ্রমিকদের মতো একদিন দেশের সাধারণ মানুষও সরকারের বিরুদ্ধে জেগে উঠবে। তখন তাদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সরকারের হাতে থাকবে না।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত ‘আমরা তোমাদের ভুলি নাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় খন্দকার মোশাররফ এসব কথা বলেন।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, যারা অন্য রাষ্ট্রের তাঁবেদার হতে চায়, তারাই বুদ্ধিজীবীদের হত্যায় মদদ দিয়েছে। তখনকার সরকার ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে চিহ্নিত করলেও বুদ্ধিজীবী হত্যার নায়কদের চিহ্নিত করেনি।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমীন গাজীর সভাপতিত্বে সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহ-উপাচার্য আ ফ ম ইউছুফ হায়দার, সাংবাদিক আমানউল্লাহ কবির, চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।

টিআইবির প্রতিবেদনকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে মনে করছে পুলিশ

পুলিশ, জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগকে রাষ্ট্রের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে আখ্যায়িত করাকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে মনে করছে পুলিশ প্রশাসন। পুলিশ কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আজ সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়।

অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ‘এর পেছনে ষড়যন্ত্র আছে বলে আমি মনে করি। এটা রহস্যজনক এবং অন্য কোনো উদ্দেশ্যে এটা করা হয়েছে।’
দুর্নীতি নজরদারি সংস্থা ট্র্যান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল গত বৃহস্পতিবার জনগণের অভিমত ও অভিজ্ঞতাভিত্তিক সমীক্ষা ‘গ্লোবাল করাপশন ব্যারোমিটার’ (বৈশ্বিক দুর্নীতি পরিমাপক) প্রকাশ করে। এতে পুলিশকে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। টিআইবির এ প্রতিবেদন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতেই আজ দুপুরে পুলিশ সদর দপ্তরে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ কে এম শহীদুল হক বলেন, পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা যখন তাঁদের ভাবমূর্তি দিয়ে দেশের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছেন, তখন টিআইবি যে প্রতিবেদন প্রকাশ করছে, সেটা উদ্দেশ্যমূলক, বাস্তবতা-বিবর্জিত ও ষড়যন্ত্রমূলক। রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে ক্ষুণ্ন করে বিশেষ মহলের স্বার্থে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে কি না, সেটা বিবেচনার দাবি রাখে।
অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি ও সিআইডির প্রধান মোখলেসুর রহমান বলেন, পুলিশের সুনাম আন্তর্জাতিকভাবে যখন বাড়ছে, জাতিসংঘ মিশনে যখন পুলিশ সাফল্য দেখানোর কারণে তাদের চাহিদা বাড়ছে, সে সময় এ ধরনের প্রচারণা চালিয়ে পুলিশে কালিমা লেপন করা হয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশ ধোয়া তুলসিপাতা নয়। তার পরও তারা নিজের জীবন বাজি রেখে জনগণের জান ও মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। রাতের রাস্তায় কুকুর আর পুলিশ ছাড়া কাউকেই মেলে না।
অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি ও ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার বেনজির আহমেদ বলেন, যাদের মতামত নিয়ে এই প্রতিবেদন করা হয়েছে, তাদের পরিচয় প্রকাশ করতে হবে। এরা জঙ্গি, মাদকসেবী না ব্যবসায়ী তা জানতে হবে। এরা পুলিশের সেবা পেয়েছে কি না বা এদের মধ্যে কারা পুলিশকে ঘুষ দিয়েছে তা-ও জানা প্রয়োজন। তিনি এ ধরনের জরিপ চালানোর সময় পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো বেসরকারি সংস্থাকে রাখার প্রস্তাব করেন।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান বলেন, পুলিশ এ সমাজের সন্তান। এ সমাজে সবাই কম বেশি দুর্নীতি করে। তা হলে শুধু পুলিশকে দোষারোপ করা হচ্ছে কেন?
টিআইবির এ প্রতিবেদনের ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

 চতুর্থ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘স্বপ্নঘুড়ি’

গামী বছরের জানুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে ‘৪র্থ আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব বাংলাদেশ’। উৎসবের জন্য নির্বাচিত হয়েছে বৃত্তা রায় দীপার কাহিনি, চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় নির্মিত টেলিছবি ‘স্বপ্নঘুড়ি’। ১৩-১৪ বছরের একটি ছেলের স্বপ্নের নানা বিষয় এবং পাওয়া না-পাওয়া নিয়ে নির্মিত হয়েছে টেলিছবি স্বপ্নঘুড়ি।
টেলিছবির কাহিনিতে দেখা যাবে ১৩-১৪ বছরের বাদশা গ্রামের অবারিত মাঠে ঘুড়ি উড়িয়ে, বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করে দিন কটিয়ে দেয়। কিন্তু হঠাৎ ঋণের দায়ে ওদের শেষ সম্বল চাষের জমিটুকু হাতছাড়া হয়ে যায়। অভাবের তাড়নায় একপর্যায়ে গ্রাম ছাড়ে বাদশারা। ঠাঁই হয় ঢাকার বস্তিতে। টিকে থাকার তাগিদে বাদশা রিকশা চালানোর মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে। শহরের ব্যস্ত রাস্তায় রিকশা চালাতে চালাতেও বাদশার মন বারবার হারিয়ে যায় আকাশের গভীর নীলে। খুঁজে ফেরে স্বপ্নঘুড়ি। হঠাৎ কখনো এই নির্মম শহরের আকাশেও একঝাঁক ঘুড়ির দেখা মিলে যায়। তখনই ঘটনা মোড় নেয় অন্যদিকে।
টেলিছবিটি সম্পর্কে দীপা বলেন, ‘শিশুদের নিয়ে আমাদের এখানে সেভাবে কাজ হয় না বললেই চলে। আমি সে জায়গাটাতে একটু গুরুত্ব দিতে চেয়েছি। আগামী বছরের জানুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে চতুর্থ আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উত্সব বাংলাদেশ। স্বপ্নঘুড়ি টেলিছবিটি সেখানে নির্বাচিত হয়েছে। টেলিছবিটি ওই উৎসবে প্রথম প্রদর্শিত হবে। তারপরই টিভি দর্শকেরা এটি দেখতে পারবেন।’
স্বপ্নঘুড়ি টেলিছবির অভিনয়শিল্পীরা হলেন—রোকেয়া প্রাচী, ঋদ্ধ অনিন্দ্য, বাকার বকুল প্রমুখ।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিদেশিরা সম্মাননা পাবেন

গামী বছর স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তি উদযাপন করা হবে। যেসব বিদেশি নাগরিক দেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের সম্মাননা দেওয়া হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এ তালিকা তৈরি করছে।
আজ সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাদ আজাদ সংবাদ ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্ত জানান।
সম্প্রতি ২২-২৩ নভেম্বর রাশিয়ায় বাঘ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণ, ২৪ থেকে ২৭ নভেম্বর বেলজিয়াম সফর, বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা কমিটির ৩৬তম অধিবেশনে ১১ থেকে ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশি প্রতিনিধিদলের অংশগ্রহণ সম্পর্কে অভিহিত করা হয়েছে।

নেতা-নেত্রীদের সম্পদের হিসাবঃ সবকিছু প্রকাশ করা হোক

প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার বিপুল সম্পদের হিসাব ও উৎস জানতে চাওয়ার পরদিন বিএনপির মহাসচিব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দেশে-বিদেশে সম্পদের উৎস জানতে চেয়েছেন। বিরাজমান রাজনীতির তপ্ত হাওয়ায় এ রকম পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এবং তার ভাষা ও প্রকাশভঙ্গি সুস্থ মনোভাবের পরিচয় নয়। প্রধানমন্ত্রী সংসদে শুধু খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাসার সম্পদের বিবরণ তুলে ধরে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। এই হিসাব বাড়িয়ে দেখানোর অভিযোগ বিএনপির মহাসচিব তুলতে পারেন। কিন্তু তিনি যে প্রধানমন্ত্রীর পিতা, পঁচাত্তরের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে সপরিবারে নিহত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আয়করের টিআইএন নম্বর জানতে চেয়েছেন, তা সত্যিই নিন্দনীয়। এ ধরনের বক্তব্য জাতির জন্যও অবমাননাকর।

কিন্তু মন্দের যেমন কিছু ভালো দিক থাকে, তেমনি এখানেও একটা ভালো দিক বেরিয়ে এসেছে, তা হলো, যাঁরা দেশ পরিচালনা করেন, তাঁদের সম্পদের হিসাব জনসমক্ষে প্রকাশের প্রশ্ন। বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কাছ থেকে। আগেও বহুবার এ প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু ব্যাপারটা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য শুধু বাগ্যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবেই ব্যবহূত হয়ে এসেছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অথচ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। রাজনীতি যদি মানুষের জন্য হয়ে থাকে, তাহলে সেই মানুষকে আস্থায় নিয়ে সব নেতা-নেত্রীর সম্পদের পূর্ণ বিবরণ ও তার উৎস প্রকাশ করা উচিত।
প্রচলিত আইন অনুযায়ী, করযোগ্য আয় থাকলে আয়কর ও সেই সঙ্গে সম্পদ বিবরণী দেওয়া বাধ্যতামূলক। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য সম্পদ বিবরণী দেওয়াও বাধ্যতামূলক। উপরন্তু আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলই তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে সম্পদ বিবরণী প্রকাশের অঙ্গীকার করেছে। আওয়ামী লীগ তাদের ইশতেহারের ৫.৩ অনুচ্ছেদে বলেছে, ‘প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য এবং সংসদ সদস্য ও তাঁদের পরিবারের সম্পদের হিসাব ও আয়ের উৎস প্রতিবছর জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে।’ কিন্তু সেটা কথার কথা রয়ে গেছে। কয়েক মাস আগে শুধু অর্থমন্ত্রী তাঁর সম্পদের হিসাব প্রকাশ করে অন্যদেরও তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছেন মাত্র।
অন্যদিকে বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহারের ৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচনের পর শপথ গ্রহণের ৩০ দিনের মধ্যে সকল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে সম্পদের বিবরণী প্রকাশ করতে হবে।’ কিন্তু তাঁরাও এ ব্যাপারে নির্লিপ্ত। হিসাব দেওয়ার চেয়ে সরকারবিরোধী রাজপথের আন্দোলনেই তাঁরা এখন বেশি উৎসাহী। তাতে আপত্তি নেই, কিন্তু ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি পালনে তাঁদের এত অনীহা কেন? সহায়-সম্পদের ব্যাপারে গোপন করার কিছু না থাকলে তা প্রকাশ করতে আপত্তি কেন?
অপ্রীতিকর সত্য হলো, দেশের নেতা-নেত্রীদের সম্পদ নিয়ে মানুষের মধ্যে আলোচনা ও প্রশ্ন রয়েছে। সে কারণেই রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ইশতেহারে সম্পদ বিবরণী প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দেয়। সব কাজে স্বচ্ছতার কথা বলা হয়। কিন্তু বাস্তবে রাখঢাকই প্রধান। এ পরিস্থিতির অবসান দরকার। কথায় বলে, আপনি আচরি ধর্ম পরকে শেখাও। এখন প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী নিজেরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিজেদের সম্পদের হিসাব ও তার উৎস জনসমক্ষে প্রকাশ করুন। এরপর অন্য নেতারাও এগিয়ে আসুন। দেশে বা বিদেশে কার কত সম্পদ আছে, তা প্রকাশ করা হলে দেশে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে বিরাট সাহায্য হবে।

ছাত্রদের উদ্বাস্তু দশাঃ দূরদর্শিতার অভাবই বড় সমস্যা

প্রথম আলো পত্রিকায় একটি ছবি ছাপা হয়েছে গতকাল শনিবার, যা দেখে উদ্বাস্তু শিবির মনে হওয়াই স্বাভাবিক। ছবিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জসীমউদ্দীন হলের। এর সঙ্গে ছাপা খবরটিতে ভুল ভেঙে দেওয়ার জন্য তাই শিরোনাম দেওয়া হয়েছে, ‘উদ্বাস্তু নন, তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র’। খবরের শুরু হয়েছে এভাবে, ‘প্রত্যেকের হাতে খাবারের থালা। খোলা আকাশের নিচে রাখা কয়েকটি বড় হাঁড়ি ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন সবাই। থালায় খাবার নিয়ে মাঠে বসেই চলছে তাঁদের খাওয়া।’ এক মাস ধরে এমন দুর্দশার মধ্যে ছাত্রদের খাওয়াদাওয়া করতে হচ্ছে। কারণ, একই সঙ্গে হলের মেস ও ক্যানটিনে সংস্কারকাজ চলছে। সংস্কারকাজ নিশ্চয়ই করতে হবে, কিন্তু এমন কোনো ব্যবস্থা কি নেওয়া যেত না, যাতে ছাত্রদের দুর্ভোগ এড়ানো যেত? নিশ্চয় যেত। এ জন্য যা প্রয়োজন ছিল তা হচ্ছে দূরদর্শিতা। ঘাটতি সেখানেই।
প্রথমত, হলের মেস ও ক্যানটিন দুটি একসঙ্গে সংস্কারে হাত না দিয়ে পর্যায়ক্রমে করা যেত। তাতে ছাত্রদের আর যা-ই হোক খোলা আকাশের নিচে বসে খাবার খেতে হতো না। দ্বিতীয়ত, কখন সংস্কারকাজটি করতে হবে, সেটিও বড় বিবেচনা। সংস্কারকাজে এত দীর্ঘ সময় লাগার বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, মাঝে ঈদের বন্ধের কারণে যে গতিতে কাজ হওয়ার কথা ছিল, তা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, কাজটি এ সময়ে শুরু না করলেই হতো। ১৪ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শীতকালীন ছুটি শুরু হচ্ছে। তখন কাজ শুরু করলে বর্তমান পরিস্থিতি এড়ানো যেত।
জসীমউদ্দীন হলের প্রাধ্যক্ষ বলেছেন, দু-এক দিনের মধ্যেই হলের ক্যানটিন খুলে দেওয়া হবে। যখন হলের ক্যানটিন খুলে দেওয়া হবে, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতকালীন ছুটি শুরু হয়ে যাবে। ছাত্রদের এই উদ্বাস্তু পরিস্থিতি শিগগিরই কেটে যাবে, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু আমরা যে বিষয়টির দিকে দৃষ্টি দিতে চাই তা হলো, যেকোনো কাজ শুরুর আগে এর প্রভাব-প্রতিক্রিয়া ভেবে দেখা উচিত। ভবিষ্যতে কোনো কাজ করার আগে যদি পূর্বাপর বিবেচনা করা হয়, তাহলে এ ধরনের সমস্যা খুব সহজেই এড়ানো যাবে। হলের প্রাধ্যক্ষ ভবিষ্যতে এ ধরনের সংস্কারকাজের ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে কাজ করার বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। এই বোধোদয়কে আমরা স্বাগত জানাই।