Wednesday, June 20, 2012

সংরক্ষিত বনে তিন মাসে ১৩০০ ঘর!

বন আইনে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া সংরক্ষিত বনাঞ্চল দখল করে দেদারসে বসতবাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে।

গত তিন মাসে এই বনের জমি দখল করে এক হাজার ৩০০টির বেশি বসতঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এতে বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং ওই এলাকার জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়েছে।
কক্সবাজার বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন আইন ১৯২৭ (২০০০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতরে ঘরবাড়িসহ কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
১২ জুন সরেজমিনে দেখা গেছে, বারবাকিয়া বনবিটের অধীন সংরক্ষিত বনাঞ্চলের লাইনের শিরা এলাকায় ২০০৩, ২০০৪ ও ২০০৬ সালে সৃজিত বনের ভেতরে বাঁশের বেড়া ও শণের ছাউনি দিয়ে বসতঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই এলাকার বনভূমি দখল করে স্থানীয় মোহামঞ্চদ নূর, জামাল হোসেন, শামসুল আলম, রমিজ উদ্দিন ও আবুল হোছন দুটি করে; নেজাম উদ্দিন ও বদি আলম একটি করে; নূর মোহামঞ্চদ ও আশকর আলী তিনটি করে এবং দুলা মিয়া চারটি বসতঘর নির্মাণ করেছেন।
দখলদার নূর মোহামঞ্চদ, বদি আলম ও জামাল হোসেন জানান, সংশ্লিষ্ট বনবিটের কর্মকর্তাকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ দিয়ে বনভূমি দখলে নিয়ে বসতঘর নির্মাণ করছেন। গত তিন মাসে তাঁদের কেউ বাধা দেয়নি।
পাশের আরগিলার দাঁরা, লম্বা শিরা, ছনখোলার জুম, সংগ্রামের জুম, আবাদিঘোনা, হঁউতুইল্লাহ, পুটিবিন্না, ঢালার মুখ, টৈটং বিটের বটতলী, খুইন্যাভিটা, ডাইনের ছড়া, মধুখালী, বনকানন, পুঁইছড়ির টিলা, বড় জিরিসহ বেশ কিছু এলাকায় এক হাজার ৩০০টির বেশি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন দখলদার জানান, গত তিন মাসে সংরক্ষিত বনের জমিতে এক হাজার ৩১২টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে এখানে আরও কমপক্ষে এক হাজার ঘর নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। বনের গাছ কেটেই বেশির ভাগ ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে বনাঞ্চল উজাড়ের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যও ধ্বংস হচ্ছে।
স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, বারবাকিয়া বনবিটের মালী সোহাগের মাধ্যমে বিট কর্মকর্তা কাউসার হোসেন পাঁচ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত উৎকোচ নিয়ে বনভূমি দখলের সুযোগ দিচ্ছেন। গত ২৩ মে বেলা ১১টায় বড়ছড়া এলাকার অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের কাছ থেকে মাসোয়ারা তুলতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হন এক বনকর্মী।
উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে কাউসার হোসেন জানান, সংঘবদ্ধভাবে কিছু লোক সংরক্ষিত বনভূমি দখল করে বসতঘর নির্মাণ করছে। লোকবলসংকটের কারণে এসব বসতঘর উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না।
চট্টগ্রাম (দক্ষিণ) বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মাকসুদুর রহমান জানান, পুলিশ ও বন বিভাগ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে এসব বসতঘর উচ্ছেদ করবে। আর অবৈধভাবে বসতি স্থাপনে সহায়তার সঙ্গে কোনো বন কর্মকর্তা বা কর্মচারী জড়িত থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্যারাবন নিধন করে চিংড়ি ঘের নির্মাণ চলছেই

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের ঘটিভাঙ্গা এলাকায় নতুনভাবে প্যারাবন নিধন করেই চিংড়ি ঘেরের বাঁধ নির্মাণকাজ চলছে।

প্রকাশ্যে পরিবেশ ধ্বংস করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রায় ১০০ একরের বনভূমি জবরদখল করে এ চিংড়ি ঘেরের বাঁধ নির্মাণ করছে। তবে বেশ কয়েকবার স্থানীয় বনকর্মীরা বাঁধা দিলেও তা উপেক্ষা করে ভূমিদস্যুরা কাজ চালাচ্ছে। ফলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হলেও তা দেখার যেন কেউ নেই।
জানা গেছে, উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের ঘটিভাঙ্গা এলাকার মোসখালী খালের পাশে প্যারাবন নিধন করে দুই সপ্তাহ ধরে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বনভূমি জবরদখল করে অবৈধভাবে চিংড়ি ঘেরের বাঁধ নির্মাণ করছে। প্রায় একশ' একরের এ ঘের করতে ইতিমধ্যে তিন হাজারের অধিক বাইন গাছ কাটা পড়েছে। আর দিনদুপুরে প্যারাবন কেটে ঘেরের জন্য বাঁধ নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে নির্বিচারে প্যারাবন নিধন করার ফলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
ঘটিভাঙ্গার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রকাশ্যে প্যারাবন নিধন করেই স্থানীয় আবদুুল মালেকসহ বেশ কয়েকজন মিলে দুই সপ্তাহ ধরে প্রায় ১০০ একরের একটি চিংড়ি ঘের করার জন্য বাঁধ নির্মাণ করছে। ইতিমধ্যে প্যারাবন নিধন করে বাঁধ নির্মাণ করার সময় বনকর্মী ও পরিবেশ অধিদফতরের লোকজন বেশ কয়েকবার বাধা দেন। কিন্তু কয়েক দিন বাঁধ নির্মাণকাজ বন্ধ থাকলেও আবার শতাধিক শ্রমিক দিয়ে ওই প্রভাবশালী লোকজন প্যারাবন কেটে বাঁধ নির্মাণের কাজ চালাচ্ছে। এতে পরিবেশের ক্ষতি হলেও তা দেখার কেউ নেই।
পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজার অফিস সূত্রে জানা গেছে , 'বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫'-এর আওতায় ১৯৯৯ সনে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সোনাদিয়া দ্বীপ ও এর পাশের ঘটিভাঙ্গা মৌজাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে। ইসিএর জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য পরিবেশ অধিদফতর ও এর সহযোগী সংস্থা নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (নেকম) ও সুখী বাংলা ফাউন্ডেশন (এসবিএফ) কাজ করছে। আর এ প্রকল্পের মাধ্যমে সোনাদিয়া দ্বীপের ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণ ও সৃজন, বালিয়াড়ির উদ্ভিদ সংরক্ষণ ও সৃজন, সামুদ্রিক কাছিম সংরক্ষণ, প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভরশীল দরিদ্র ও হতদরিদ্র মানুষ নিয়ে দল গঠন ও তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য আর্থিক সহযোগিতা প্রদান এবং বিভিন্ন সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে উপকূলীয় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করছে। আর ইসিএর প্যারাবন নিধন করে অবৈধ চিংড়ি ঘের নির্মাণ ও পরিবেশ নষ্ট করলে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)-এর ৫(১) ও ৫(৪) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ ।
পরিবেশ অধিদফতরের সহযোগী এনজিও সংস্থা সুখী বাংলা ্ফাউন্ডেশনের জীববিদ আবদুুল কাইয়ুম বলেন, প্রায় একশ' একরের মতো চিংড়ি ঘের করার জন্য ওই প্রভাবশালী লোকজন প্যারাবন উজাড় করেই বাঁধ নির্মাণ করছে। তিনি বলেন, গত ২৮ মে সরেজমিন গিয়ে ওই ঘেরের বাঁধ নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিই এবং জবরদখলকারীদের পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু এর পরও বিচ্ছিন্নভাবে প্যারাবন নিধন করেই ওই প্রভাবশালীরা বাঁধ নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে ঘটিভাঙ্গা বিট কর্মকর্তা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, প্যারাবন কেটে বাঁধ নির্মাণ করার সময় বনকর্মীরা বেশ কয়েকবার বাধা দেন। কিন্তু বনকর্মীদের বাধা উপেক্ষা করেই ভূমিদস্যু আবদুুল মালেকের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন লোক বনভূমি জবরদখল করেই ঘেরের বাঁধ নির্মাণকাজ চালিয়ে নেন। কিন্তু লোকবল চরম সংকটের কারণে ভূমিদস্যুদের কবল থেকে বনভূমি রক্ষা করতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে।
উপকূলীয় বন বিভাগের গোরকঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ইকবাল বলেন, প্যারাবন নিধন করে নতুন করে চিংড়ি ঘেরের বাঁধ নির্মাণ করার অভিযোগে ভূমিদস্যু আবদুল মালেকসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে বন ও পরিবেশ আইনে আদালতে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম কাউসার হোসেন বলেন, ঘটিভাঙ্গায় নতুন করে প্যারাবন নিধন করেই চিংড়ি ঘের নির্মাণের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বন বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পেকুয়ার ৮ সড়ক চলাচল অনুপযোগী

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার অভ্যন্তরীণ ৮টি সড়ক চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় এসব সড়ক বেহাল।

এ ছাড়া গত বর্ষা মৌসুমে বন্যায় লণ্ডভণ্ড হয়েছে শিলখালী ইউনিয়নের দুটি সড়ক। এসব সড়ক সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পেকুয়া উপজেলার কাটাফাঁড়ি ব্রিজ-উজানটিয়ার করিমদাদ মিয়ার ঘাট সড়ক, পূর্ব গোয়াখালী-ছিরাদিয়া সড়ক, শিলখালীর কাছারি মোড়া-বারবাকিয়া সওদাগর হাট সড়ক, বারবাকিয়ার ফাঁসিয়াখালী-মৌলভীবাজার সড়ক, মগনামার ফুলতলা স্টেশন-কাজির মার্কেট সড়ক, পেকুয়ার মৌলভীপাড়া-বারবাকিয়া বাজার সড়ক, পশ্চিম গোয়াখালী রাবার ড্যাম-জালিয়াখালী সড়ক, টৈটং বাজার-বাঁশখালী সড়ক বর্তমানে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এসব বেহাল সড়ক দিয়ে যান চলাচল তো দূরের কথা হাঁটাও কষ্টসাধ্য। পূর্ব গোয়াখালী এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ শাহজাহান জানান, পূর্ব গোয়াখালী সড়কটি গত এক যুগ ধরে সংস্কার করা হচ্ছে না। গত সরকারের সময়ে পেকুয়ায় ব্যাপক উন্নয়ন হলেও এ সড়কটিতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।
এলজিইডির পেকুয়া উপজেলা প্রকৌশলী মোল্লা আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, বর্তমানে কয়েকটি সড়কের সার্ভে চলছে। শিগগিরই এসব সড়ক সংস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।
উজানটিয়া ইউনিয়নের সোনালী বাজার এলাকার ওসমান গণি, নুরুল আজিম, ফেরাসিঙ্গা পাড়ার মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন জানান, এখানে কোনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স না থাকায় যে কোনো রোগীকে উপজেলা সদরে নিয়ে যেতে হয়। তার ওপর রাস্তার নাজুক অবস্থার কারণে এখানে কোনো প্রকার যানবাহন পাওয়া যায় না। তার জন্য দায়ী এই ভাঙাচোরা রাস্তা। এদিকে গত অর্থবছরে চকরিয়া পেকুয়ার বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত সংসদ সদস্য সাফিয়া খাতুন উজানটিয়ার সোনালী বাজার থেকে উজানটিয়া স্টিমার ঘাট পর্যন্ত সড়কের সংস্কার কাজের জন্য প্রায় ৭৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়।
পেকুয়া এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী হারু কুমার পাল জানান, পেকুয়া বাজার থেকে আরবশাহ বাজার, চড়াপাড়া থেকে বারবাকিয়া সওদাগর হাট, মগনামার আরএসডি থেকে উচ্চ বিদ্যালয়, কাটাফাঁড়ি থেকে সোনালী বাজার সড়কের সার্ভে চলছে। শিগগিরই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসব সড়ক পরিদর্শন করবেন।
এ বিষয়ে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-ই-খাজা আলামিন বলেন, অতিরিক্ত লবণবোঝাই নিয়ে ট্রাক আসা যাওয়ার কারণে মগনামার সড়কগুলো নষ্ট হচ্ছে। পেকুয়ার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর বেহাল অবস্থার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন মহলকে অবহিত করা হয়েছে।

কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়নে ব্যয় হবে ৪১৬ কোটি টাকা

পর্যটন নগরী কক্সবাজারে বিমানবন্দর উন্নয়নে ৪১৬ কোটি টাকা ব্যয় করতে যাচ্ছে সরকার। আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ নিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে তুরস্কের কুয়ানতা ইনসাত তাহাত নামের একটি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এ-সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য আজ বুধবার সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উঠছে।
সূত্র জানায়, কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) ঠিকাদার নিয়োগের জন্য ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য ২০ মে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের জন্য একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছিল। প্রস্তাবে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে তুরস্কের কুয়ানতা ইনসাত তাহাতের নাম সুপারিশ করা হয়েছিল। বৈঠকে প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহী নির্মাতা সংস্থাটির সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছিল। ২৮ মে আবার ক্রয় কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হলে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির রানওয়ে পেভমেন্ট নির্মাণে নিরাপত্তা এবং গুণগত মান নিশ্চিত করা, মূল্য পরিশোধের সময় মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি টাকার বিনিময় হার কীভাবে নির্ধারণ করা হবে এবং দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের রানওয়ে পেভমেন্ট কাজের অভিজ্ঞতা, একসঙ্গে একাধিক কাজ করার যোগ্যতা ও সামর্থ্যের বিষয়টি আমলে নিয়ে দরপ্রস্তাবটি পুনর্মূল্যায়ন করার সুপারিশ করে।
সূত্র জানায়, তুরস্কের ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের রানওয়ে পেভমেন্ট নির্মাণকাজের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে কি-না তা যাচাইয়ের জন্য তুরস্কে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। দূতাবাস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ৫ জুন তাদের মতামত পাঠায়। এতে প্রতিষ্ঠানটির এক কোটি ৮০ লাখ ডলারের বেশি পেভমেন্ট কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে বলে জানানো হয়। প্রতিষ্ঠানটি যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকে রানওয়ে পেভমেন্ট নির্মাণ করেছে বলেও জানানো হয়। প্রতিষ্ঠানটি আঙ্কারা চেম্বার অব কমার্সের নিবন্ধিত একটি প্রতিষ্ঠান। সূত্র জানায়, এ কাজের জন্য দেশীয় কোম্পানি আবদুল মোনেম লিমিটেড(এএমএল) ও ট্রান্স রিসোর্সেস করপোরেশন (টিআরসিএসবি) নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে দরপত্রে অংশ নিয়েছিল। তাদের দরপ্রস্তাব ছিল ৪৪৭ কোটি টাকা। ফলে তারা দ্বিতীয় দরদাতা হিসেবে পরিগণিত হয়। নিয়ম অনুযায়ী সর্বনিম্ন দরদাতার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। ক্রয় কমিটির বৈঠকে তুরস্কের প্রতিষ্ঠানটির প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।

শরণার্থী দিবস পালন করছে না কক্সবাজারের রোহিঙ্গারা

আজ ২০ জুন বিশ্ব শরণার্থী দিবস। বিগত বছরগুলোতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো কক্সবাজারে অবস্থিত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীরাও দিবসটি পালন করে আসছিলেন।

সম্প্রতি মিয়ানমারে আরকানে রোহিঙ্গা মুসলিম ও রাখাইনদের মধ্যে দাঙ্গা সৃষ্টি হওয়ায় বিশ্ব শরণার্থী দিবসের আয়োজন করছেন না রোহিঙ্গা শরণার্থীরা।
অনেকে মতে, বিশ্ব শরণার্থী দিবস রোহিঙ্গাদের ভাগ্য পরিবর্তনের বড় কোনো আবেদন না থাকায় রোহিঙ্গারা এ দিবস উদযাপনে অনাগ্রহী হয়ে পড়েছে।

অপরদিকে আবারো আরকানে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর রাখাইনদের সহিংসতা চলছে। যেকোনো ধরনের অনুপ্রবেশের বিরোধিতা করছে স্থানীয় বাংলাদেশীরা। তারা মনে করছে রোহিঙ্গাদের কারণে সমগ্র কক্সবাজারে আর্থসামাজিক অবস্থার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

এ ব্যাপারে রোহিঙ্গা শরণার্থী যুবক মুজিবুর রহমানের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, আমি ১৯৯১ সালে মা-বাবার সঙ্গে মিয়ানমার সামরিক জান্তার অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে আশ্রায় নিই। বাংলাদেশ সরকার বলছে আমরা মিয়ানমারে রোহিঙ্গা, অপরদিকে মিয়ামান সরকার বলছে আমরা বাঙালি। মাঝখানে আমরা দেশবিহীন জাতি পরিণত হয়েছি।

সরেজমিন পরিদর্শনে জানা গেছে, কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে এক হাজার ১৯৮ পরিবারে ১০ হাজার ১৬১ জন এবং টেকনাফের নয়াপাড়া শরনার্থী শিবিরে এক হাজার ৭৭১ পরিবারের ১৪ হাজার ৭২১ জনসহ প্রায় ২৫ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছে।

তবে ইউএনএইচসিআর’র সূত্র মতে, দুটি শিবিরে শিশুসহ বৈধ শরণার্থীর সংখ্যা ২৮ হাজারেরও বেশি। এছাড়া উখিয়া-টেকনাফের দু’টি নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের প্রায় ২৮ হাজার রোহিঙ্গা ছাড়া টেকনাফের লেদা অনিবন্ধিত ২২ হাজার আর উখিয়া কুতুপালং ক্যাম্পের পাশ্ববর্তী লক্ষাধিক অনিবন্ধিত শরণার্থী রছে। এছাড়া কক্সবাজার, বান্দবন ও চট্রগ্রাম জেলায় আরো চার লাখ রোহিঙ্গা অবৈধ বসবাস করছে।

সম্প্রতি আরকান রাজ্যে আবারো রোহিঙ্গা মুসলিম ও রাখাইনদের মধ্যে সহিংসতা সৃষ্টি হওয়ায় অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ১৯৯২ সালের শুরুর দিকে মিয়ানমারে তৎকালীন সামরিক জান্তা সরকারের নির্যাতনের শিকার হয়ে দুই লাখ ৫২ হাজার রোহিঙ্গা  বাংলাদেশে চলে এসেছিল।

পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের মধ্যস্থতায় দুই লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৯ জন শরণার্থী স্বদেশে ফিরে গেলেও মিয়ানমার সরকারের ছাড়পত্র না দেয়ার কারণে আরো ২৫ হাজার শরণার্থী দেশে ফেরত যায়নি। সর্বশেষ ২০০৫ সালে ২৯ জনের শরণার্থী দল স্বদেশে গিয়েছিল, তারা আবার বাংলাদেশে ফিরে আসে।

গত চার বছরে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ফিরে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অবৈধভাবে অবস্থান করছে কুতুপালং শরণার্থী শিবির সংলগ্ন চার-পাঁচটি পাহাড়ে। এছাড়া নয়াপাড়া ক্যাম্প সংলগ্ন লেদা গ্রামে অবস্থান করছে প্রায় ২০ হাজার রোহিঙ্গার সবাই অনিবন্ধিত শরণার্থী। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই বিপুলসংখ্যক বৈধ অবৈধ রোহিঙ্গার কারণে উখিয়া টেকনাফে দেখা দিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা অবনতিসহ নানা সামাজিক অস্থিরতা। রোহিঙ্গারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে এদেশের মূল জনগোষ্ঠীর মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। এই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা কক্সবাজারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

টেকনাফ উপজেলা নিবার্হী অফিসার আনম নাজিম উদ্দিন বার্তা২৪ ডটনেটকে জানান, ‘বর্তমান সরকার দ্বি-পাক্ষিক কুটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন কার্যক্রম আবারো শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।’

সম্প্রতি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির ও শাহপরী দ্বীপ সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউএনএইচসিআর এর প্রতিনিধি ক্রেইক সেন্ডাস। সেখানে তিনি ইউএনএইচসিআর এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে সার্বিক বিষয়ে কথা বলেন। পরে তিনি টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের যে পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছিল-সেসব স্থান পরিদর্শন করেন।

এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “মিয়ানমারের জাতিগত দাঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা শান্ত করতে প্রথমে মিয়ানমারকেই উদ্যোগ নিতে হবে।”

স্থানীয়রা মনে করেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন বন্ধ থাকার সুযোগে আরো নতুন নতুন রোহিঙ্গা আসার সুযোগ পাচ্ছে। এভাবে আরো রোহিঙ্গা আসতে থাকলে এই অঞ্চলে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত সাতটি এনজিওকে সতর্ক

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ও টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে কর্মরত সাতটি বেসরকারি সংস্থাকে (এনজিও) মিয়ানমারের অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে নাক না গলাতে সতর্ক করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেল চারটায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সভায় ওই এনজিওর কর্মকর্তাদের এ নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জয়নুল বারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার সেলিম মো. জাহাঙ্গীর, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) খন্দকার জহিরুল ইসলাম, এনজিও সংস্থা এমএসএফ হল্যান্ড, এসিএফ, মুসলিম এইড, ভার্ক, আরটিআই, রিভ ও সেভ দ্য চিলড্রেনের কর্মকর্তারা।
এডিসি (শিক্ষা) খন্দকার জহিরুল ইসলাম গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশি তহবিল নিয়ে এই সাতটি এনজিও কয়েক বছর ধরে উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে শিক্ষা, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু কিছু এনজিও কর্মকর্তা চিকিৎসার নাম দিয়ে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাই রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে নাক না গলাতে কর্মকর্তাদের সতর্ক করা হয়। যদিও বৈঠকে তাঁরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
পুলিশ সুপার সেলিম মো. জাহাঙ্গীর জানান, সাতটি এনজিওর মধ্যে কয়েকটির সীমান্ত এলাকায় কাজ করার অনুমোদন নেই। কয়েকটির অনুমোদন থাকলেও ইতিমধ্যে তার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তাই নতুনভাবে জেলা প্রশাসন থেকে অনুমোদন নিয়ে কাজ করার জন্য সাতটি এনজিওর কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন ছাড়া রোহিঙ্গা শিবিরে কাজ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলে দেওয়া হয়েছে।

টেকনাফে আরও ১৫ রোহিঙ্গা আটক

কক্সবাজারের টেকনাফে অনুপ্রবেশের অভিযোগে ১৫ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও পুলিশ।

বিজিবি ও পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল মঙ্গলবার ভোরে নাফ নদী অতিক্রম করে অনুপ্রবেশের পর উপজেলার সাবরাং এলাকার বেড়িবাঁধ থেকে তাদের আটক করা হয়। অন্যদিকে, গতকাল বিকেলে টেকনাফ থানা পুলিশ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা এলাকা থেকে চারজন রোহিঙ্গাকে আটক করে। তাঁরা সবাই মিয়ানমারের মংডু টাউনশিপের বাসিন্দা।
৪২ বর্ডার গার্ড টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত মেজর সাইফুল ওয়াদুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মিয়ানমারের ১৫ নাগরিককে আটক করা হয়েছে। হঠাৎ করে সাগর ও নাফ নদী উত্তাল হওয়ায় তাদের এখনই ফেরত পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। আবহাওয়া ভালো হলে তাদের ফেরত পাঠানো হবে।’