Wednesday, January 19, 2011

বান্দরবানের বুদ্ধধাতু জাদি মন্দির স্থাপত্যকলার অপূর্ব নিদর্শন

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি খ্যাত পার্বত্য জেলা বান্দরবানের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম স্পট হিসেবে বুদ্ধ ধাতু জাদি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এটি বুদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় হিসেবে গড়ে তোলা হলেও এখন এটি স্থাপত্যকলার অপূর্ব নিদর্শন হিসেবে সকলের কাছে পরিচিতি লাভ করেছে।

বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু (ভান্তে) উচহ্লা ভান্তে কতর্ৃক প্রতিষ্ঠিত এই বুদ্ধ ধাতু জাদি এখন লোকজনের মুখে মুখে স্বর্ণ জাদি বা স্বর্ণ মন্দির হিসেবে সমধিক পরিচিতি পেয়েছে। জাদিটির মূল অংশ অর্থাৎ যেখানে বুদ্ধ ধর্মাবলম্বী ও উচহ্লা ভান্তের অনুসারীরা উপাসনা করে, সেখানে বুদ্ধ মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে সেই মূল অংশটি স্বর্ণাবরণে তৈরি বলে এটি স্বর্ণ জাদি বা স্বর্ণ মন্দির হিসেবে বেশি পরিচিত।

এ জাদি বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে বান্দরবান-চন্দ্রঘোনা সড়কের বালাঘাটা পুলপাড়ায় অবস্থিত। এই জাদিটি এখন বৌদ্ধ সমপ্রদায়ের তীর্থস্থানই কেবল নয়, এটি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় স্পটে পরিণত হয়েছে। অপূর্ব নির্মাণ শৈলী ও নানা কারুকার্য খচিত এ জাদি দেখে মনে হবে যেন আপনি অন্য দেশে অবস্থান করছেন।

শহরের বালাঘাটা পেরিয়ে অল্প কিছুদূর গিয়ে সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের পুলপাড়ায় প্রায় ৪০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় চোখে পড়বে সোনালী কারুকার্যখচিত এই জাদি। এ বুদ্ধ ধাতু জাদি যেন এক মনোরম দর্শনীয় স্থান। পার্বত্য বান্দরবানে গড়ে ওঠা এ জাদি শুধু বাংলাদেশে নয় বিদেশেও সুনাম অর্জন করেছে।

বুদ্ধ ধাতু জাদিটি নানা কারণে অত্যন্ত সুনাম ও পরিচিতি পেয়েছে। ইতিমধ্যে এ জাদি পরিদর্শন করে গেছেন মিয়ানমারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খিন নিউন্ত ও মন্ত্রী পরিষদবর্গ, ভারতের হাই কমিশনারসহ বিপুল সংখ্যক দেশি-বিদেশি পর্যটক। এর নির্মাণশৈলী দেখে অভিভূত হয়েছেন তারা। মিয়ানমারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এই স্বর্ণ জাদির জন্য ৪০ হাজার মার্কিন ডলার অনুদান দিয়েছিলেন।

বান্দরবানের উলেস্নখযোগ্য কয়েকটি দর্শনীয় স্থানের মধ্যে বুদ্ধ ধাতু জাদি অন্যতম। মিয়ানমার ও চীনের বৌদ্ধ তীর্থস্থান বা প্যাগোডার আদলে ২০০০ সালে প্রায় ৪শ' ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় বিহারাধ্যক্ষ উপঞা জোতথেরো (প্রকাশ উচহ্লা ভান্তে) এই বৌদ্ধ বিহারটি নির্মাণে প্রধান ভূমিকা পালন করেন। জানা গেছে, মিয়ানমারের শোয়েডাগং প্যাগোডা, সুলে প্যাগোডা, শোয়েডং নিয়াত প্যাগোডাসহ ৫টি প্যাগোডার অনুকরণে বান্দরবানে বুদ্ধ জাদিটি নির্মাণ করা হয়েছে। এটি নির্মাণের পর থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ধর্মপ্রাণ বুদ্ধ নর-নারী পুণ্য লাভের আশায় প্রতি বছর বুদ্ধ ধাতু জাদি পরিদর্শন ও উপাসনা করতে আসেন। শুধু বাংলাদেশ নয় প্রতিবেশী মিয়ানমার, থাইল্যান্ডসহ বৌদ্ধ প্রধান রাষ্ট্রগুলোতেও এর সুনাম ছড়িয়ে পড়ায় সেসব দেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরাও এই বুদ্ধ ধাতু জাদি পরিদর্শন করতে আগমন করেন। প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসে এ জাদি প্রাঙ্গণে বসে ৩ দিনব্যাপী ধমর্ীয় মেলা। এতে অংশ নেয় হাজার হাজার পুণ্যাথর্ী ও দেশ- বিদেশের পর্যটক।

মিয়ানমারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এই ধাতু জাদিটি দেখতেই বান্দরবানে আগমন করেছিলেন। মিয়ানমারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খিন নিউন্ত মিয়ানমারের সেক্রেটারী-১ থাকাকালীন বান্দরবান বুদ্ধ ধাতু জাদিটির জন্য ব্যক্তিগতভাবে ৫ লাখ কিয়েট অনুদান প্রদান করেন। বিহারটিতে ভিক্ষু শ্রমন মিলে মোট ২০ জন অনাথ রয়েছে। মিয়ানমারের প্রধানমন্ত্রী খিন নিউন্ত জাদির উন্নয়নে যে ৪০ হাজার মার্কিন ডলার অনুদান দিয়েছিলেন তা দিয়ে নির্মিত হয়েছে লাইব্রেরী, মিউজিয়াম ও অন্যান্য স্থাপনা। এছাড়া ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধ নর-নারী ও উচহ্লা ভান্তের অনুসারীরাও ব্যক্তিগতভাবে এই জাদির উন্নয়নে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছে।

বুদ্ধ জাদিটির মূল অংশে আরোহণ করতে কিছুটা বেগ পেতেই হয়। দীর্ঘ পাহাড়ি পথ ও ১৭০ ধাপ সিঁড়ি বেয়ে যেতে হয় সেখানে। তবে কষ্ট স্বীকার করে উঠতে পারলেই জাদির চারিদিকের আকর্ষণীয় দৃশ্য পাহাড়ে ওঠার ক্লান্তি মস্নান করে দেবে। এর মূল প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকেই প্রথমে চোখে পড়বে বৌদ্ধ মিউজিয়াম। মিউজিয়ামে থরে থরে সাজানো রয়েছে গৌতম বুদ্ধের সময়ের বিভিন্ন ঘটনাপঞ্জির বাহারি মূর্তি। এসব মূর্তির নির্মাণ কাজে রয়েছে অভিজ্ঞতার ছাপ। মিয়ানমারের বিখ্যাত সব কারিগরদের নিপূণ হাতের ছোঁয়া রয়েছে প্রতিটি কাজে। মিউজিয়াম পেরুলেই জাদির মূল অংশ, যেখানে ধর্মপ্রাণ নারী-পুরুষ প্রার্থনা করে। জাদির শীর্ষে আরোহণ করলে চোখে পড়বে শহরের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। এর চূড়ায় বাতাসের দোলায় টুংটাং করে বাজতে থাকা ঘন্টার ধ্বনি যে কাউকেই অন্যরকম আবেশে মোহিত করে। এ চূড়া থেকেই চোখে পড়বে জাদির পাশেই গড়ে উঠা দেবনাগ রাজ পুকুর (দেবতা পুকুর)সহ জাদির অন্যান্য স্থাপত্য কলা। এই দেবতা পুকুরটি সাড়ে ৩শ' ফুট উঁচুতে হলেও সব মওসুমেই সেখানে পানি থাকে। বৌদ্ধ ভান্তেদের মতে এটা দেবতার পুকুর, তাই এখানে সব সময় পানি থাকে।

চাকরি না ব্যবসা by মোর্শেদ নাসের

ছাত্রাবস্থায় পড়াশোনার মূল উদ্দেশ্য কিন্তু আর কিছু নয়। সেটা হলো পেশা। এই পেশাকে সামনে রেখেই সবাই যার যার দক্ষতা বৃদ্ধি করে। সেটা পড়াশোনার মাধ্যমেই হোক আর বিভিন্ন কোর্স করার মাধ্যমেই হোক। তবে, পৃথিবীতে সবাই কিন্তু একই রকম পেশা বেছে নেয় না।

কেউ হয়তো চিকিৎসক হবে কিংবা কেউবা চায় স্বাধীনভাবে চলতে। কেউবা চায় শিক্ষকতা। কিন্তু একটা বিতর্কের বিষয় থেকেই যায়। পেশা হিসেবে কোনটা ভালো, চাকরি না কি ব্যবসা। আসলে এই বিষয় নিয়ে মনে প্রশ্ন জাগেনি_এমন তরুণের সংখ্যা খুব কমই পাওয়া যাবে। তাই খোঁজা যাক প্রশ্নের উত্তর_কোনটা বেশি মাননসই চাকরি, না কি ব্যবসা।

চাকরি ব্যাপারটা মানেই হলো মাস শেষে নির্দিষ্ট অঙ্কের একটা বেতন পাওয়া সেটা ছোট অঙ্কেরও হতে পারে কিংবা হতে পারে বিশাল অঙ্কের। তবে অনেকেরই আবার বসকে তেল দেওয়া বা তোষামোদ করার মতো মন-মানসিকতা নেই। তাদের কাছে চাকরি ভালো লাগবে না_এটাই স্বাভাবিক নয় কি? চাকরিতে আছে প্রতিদিন বসের ঝাড়ি খাবার সম্ভাবনা। নিজের মুখ ফুটে যে নিজের মতামত প্রকাশ করবেন, সেটাও করা সম্ভব হয় না অনেকের ক্ষেত্রে। তবে, মানিয়ে নেওয়াটাই হলো আসল কথা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় চাকরিজীবি পরিবারের তরুণ-তরুণীরা চাকরি করতেই অভ্যস্ত। তাদের কাছে চাকরি মানে নিশ্চিন্ত জীবন, মাস শেষে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা এই আর কি। তাদের কাছে পড়াশোনার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে জ্ঞান অর্জন নয়; ডিগ্রি অর্জন আর একটা চাকরি। চাকরি ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন তারা, যারা একটু ঠোঁটকাটা স্বভাবের। দেখা যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা সহকর্মীদের সাথে তো বিতর্কে জড়িয়ে পড়েনই, এমনকি বসের মুখের উপরও যখন তখন না বুঝে-শুনে দুম করে একটা কিছু বলে বসেন। তাদের জন্যে চাকরি না করাই ভালো। তবে চাকরিতে একটা ভালো দিক হলো যে, লাভ-লোকসান নিয়ে খুব একটা বেশি মাথা ঘামাতে হয় না। কাজ করো মন দিয়ে আর মাস শেষে টাকা পাও। লাভ-লোকসান নিয়ে চিন্তা করবেন বস। বলা হয়ে থাকে, চাকরি করলে নাকি নিজের উপর আত্মবিশ্বাস খানিকটা কমে যায়। কেননা, ব্যবসা যারা করে, তারা রিস্ক নিতে ভয় পায় না। কিন্তু চাকরিজীবী কেউ একজন জীবনের যেকোনো ক্ষেত্রে রিস্ক নিতে সাত-পাঁচ ভেবে চিন্তা করে, এগোবে না কি পিছাবে। প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবসা করার জন্য বিভিন্ন অঞ্চলে পাড়ি জমিয়েছে বণিকরা। সেসময় শুধুমাত্র একটা শ্রেণীই ব্যবসা বাণিজ্য

করত। বলা হতো বাণিজ্যে লক্ষ্মীর বসতি। সময় পাল্টেছে, সেইসাথে পাল্টেছে ব্যবসার পদ্ধতি আর ধ্যান-ধারণাও। কিন্তু ব্যবসাতে আগ্রহ আছে সবার এখনও। বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ফ্যামিলির সন্তানরাই ব্যবসাতে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করে। ফ্যামিলিতে ব্যবসার চল না থাকলে নাকি পাকা ব্যবসায়ী হওয়া যায় না_এ রকম ধ্যান-ধারণা ভেঙ্গে অনেকেই এখন ব্যবসায় হাত পাকানো শুরু করেছে। তরুণ-তরুণীদের কাছে ব্যবসাটাও ইদানিংকার আগ্রহের বিষয়। কেননা, চাকরিতে নাকি শটকার্টে বড়লোক হবার সুযোগ নেই, কিন্তু ব্যবসাতে সেটা আছে। তবে, এক্ষেত্রে যে ব্যবসা করবে, তাকে অবশ্যই ভালোভাবে ব্যবসাকে বুঝতে হবে। কেননা, ব্যবসা ভালোভাবে না বুঝে করলে লাভের চেয়ে যে ক্ষতির পালস্নাটাই ভারী হবে_এটাই স্বাভাবিক। ব্যবসায় যেমন উপরে উঠা যায় তাড়াতাড়ি, তেমনি নামায়ও খুব তাড়াতাড়ি। যে সকল তরুণ একটু স্বাধীনচেতা, ফ্যামিলিতে আগে ব্যবসা করার অভিজ্ঞতা আছে কিংবা অফিসে কাজ করতে ভালো লাগে না, তারাই সাধারণত ব্যবসায় আসে। ব্যবসাতে আছে রিস্ক। তাই দেখে শুনে বুঝে পা ফেলতে হয়। কেননা, ঠান্ডা মাথায় কাজ না করে যদি ঝোঁকের মাথায় কিছু করে বসেন, তাহলেই কিন্তু সমূহ বিপদের আশঙ্কা। ব্যবসার কিছু কৌশলও আছে, সেগুলো বুঝতে পারলেই লাভ হবে কিন্তু না বুঝলেই ঠেলা সামলাতে হবে ব্যবসায়ীকে। পরিণামে মাথায় হাত দিয়ে হায় হায় করা ছাড়া আর কোনো উপায় সামনে থাকবে না। সেদিক থেকে চাকরি অনেক নিরাপদ। অতশত দিক চিন্তা না করলেও চলে। শুধু বসের নির্দেশ মেনে ঠিকঠাক কাজ করলেই হলো। চাকরিজীবীর সুবিধা হলো দিন শেষে আছে ছুটির হাতছানি। অনেকটা ঠিক রুটিনের ছকের মধ্যে চলাফেরা করেন চাকরিজীবীরা। কিন্তু একজন ব্যবসায়ীর জীবনে কাজ করতে হয় আনলিমিটেডভাবে। বেশিরভাগ চাকরিজীবীই যখন শুক্রবারে নাক ডাকিয়ে ঘুমান, তখন ব্যবসায়ীদের হয়তো শ্বাস ফেলারও জো নেই। তবে, সময়ের পরিবর্তনের সাথে পুরোনো ধ্যান-ধারণাও পাল্টাচ্ছে। তেমনি ব্যবসা বা চাকরির পদ্ধতি, সুযোগ-সুবিধা, চিন্তাও বদলাচ্ছে। তবে ব্যবসা বা চাকরি কোনটা ভালো, সেটা বলা মুশকিল। আসলে দুটি পেশাই দুটো দিক থেকে আলাদা। দুটো ক্ষেত্রেই আছে সফলতার সম্ভাবনা। তবে সেজন্য দরকার চিন্তা, দক্ষতা ও সঠিক পদক্ষেপ। আজকের তরুণ প্রজন্ম ব্যবসা বা চাকরি যেটাই বেছে নেন না কেন, তাদের সেটাই বুঝে শুনে নিষ্ঠার সাথে করতে হবে।

কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে না

দেশের দারিদ্র্য বিমোচন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হচ্ছে না। বর্তমান এ ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে দারিদ্র্য কমার পরিবর্তে আরো বাড়বে। এই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে সরকারকে এখনি কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন অন্বেষণের নিয়মিত মাসিক অর্থনৈতিক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, স্বাধীনতার পর থেকে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ কিছুটা অগ্রগতি লাভ করলেও এখনও দেশের প্রায় অর্ধেক জনগণ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। ভিশন-২০২১ এর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে দারিদ্রতার এ হার ২০০৫ সালে শতকরা ৪০ দশমিক ৪০ ভাগ থেকে কমিয়ে শতকরা ১৫ ভাগে নামিয়ে আনার কথা। কিন্তু তথ্য উপাত্ত বিশেস্নষণে দেখা যায় যে, লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে দারিদ্রতার এ হার যে ভাবে কমার কথা ঠিক সেভাবে কমছে না। কারণ হিসেবে উন্নয়নের ধীর গতি, বিনিয়োগে মন্দাভাব, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের অভাব অনেকটা দায়ী। বিগত বছরগুলোতে (১৯৯০-২০০৫) দারিদ্র্যেতার হার বছরে শতকরা শূন্য দশমিক ৭৮ ভাগ করে কমলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যথেষ্ট অপ্রতুল। যদি কোন রেডিক্যাল কর্মসূচী না নেওয়া হয় এবং হ্রাসের বর্তমান হার অব্যাহত থাকলে নির্দিষ্ট সময় সীমা (২০২১) শেষে এটি শতকরা ২৭ দশমিক ৯ ভাগে দাঁড়াতে পারে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২.৯ ভাগ বেশী।

পরিসংখ্যান বিশেস্নষণে দেখা যায় যে, বাংলাদেশ সব লক্ষ্যমাত্রায় পোঁছানোর জন্য সঠিক পথে না থাকলেও অগ্রগতি একেবারে অসন্তোষজনক নয়। যদিও কাগজে কলমে অনেক পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়, কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান দেশকে অগ্রগতির পথে এগিয়ে নেবার এ সরকারের এখনও তিন বছর সময় আছে। এই লক্ষ্যমাত্রায় পেঁৗছাতে সরকারকে অবশ্যই তার কৌশল, নীতি ও বাস্তবায়ন পর্যালোচনা করতে হবে। সরকারকে সৃষ্টিশীল হতে হবে, কার্যকরী কৌশল গ্রহণের ক্ষেত্রে এবং তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

মসলা চাষে আশানুরূপ ঋণ বিতরণ হচ্ছে না

ডাল, মসলা এবং তেলবীজ জাতীয় ফসলে ঋণ বিতরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা আমলে নিচ্ছে না রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো। এসব খাতে ব্যাংকগুলোর জন্য সুদ ভতর্ুকির ব্যবস্থা থাকলেও ব্যাংকগুলো বিতরণে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এ খাতে আশানুরূপ ঋণ বিতরণ না করায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।

সূত্র জানায়, রাষ্টায়ত্ত খাতের সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী এবং বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ডাল, মসলা এবং তেলবীজ জাতীয় ফসলে যথেষ্ট কৃষি ঋণ বিতরণ করছে না। এই কারণে তাদের এই ফসল খাতে ঋণ বিতরণ বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সেমিনার কক্ষে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সাথে বৈঠকে এ বিষয়ে তাগাদা দেয়া হয়।

সূত্র জানায়, চার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ১৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা বিতরণ করেছে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা ১৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ বিতরণ করা হয়েছে। মসলা খাতে ঋণ বিতরণে অসন্তোষ প্রকাশ করে গভর্নর বলেন, এ বছর (২০১০) রূপালী ব্যাংকের ১ কোটি ৪০ লাখ টাকাসহ এখাতে মোট ৯৬ কোটি ৫ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঋণ বিতরণ আশানুরূপ হয়নি।

বৈঠকে গভর্নল এ খাতে শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য তাগিদ দিয়ে আরো বলেন, এ ব্যাপারে কালক্ষেপনের সময় নেই। আপনাদের ক্লোজিং শেষ হয়েছে। এ খাতের ঋণ বিতরণ বাড়াতে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করতে হবে।

'কৃষি ও পলস্নী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচি' নীতিমালায় পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ বিভিন্ন মসলা চাষে কৃষককে উৎসাহিত করতে মাত্র ২ শতাংশ সুদে ঋণ প্রদান করার বিধান। এর জন্য ব্যাংকগুলোকে সরকারের পক্ষ থেকে ঋণের সুদের উপর ভতর্ুকি প্রদান করা হয়। অন্যদিকে কৃষকদের ১০ টাকার ব্যাংক হিসাবে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকার স্থিতির ওপর প্রযোজ্য আবগারী শুল্ক মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সমপ্রতি এ সংক্রান্ত একটি সার্কূলার জারি করেছে সরকার।

আতিউর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ৯০ লাখের অধিক কৃষক ব্যাংক হিসাব খুলতে পারা আর্থিক অন্তর্ভুক্তির একটি বিরাট অর্জন। এর মধ্য দিয়ে শুধু কৃষকদের কাছে ভর্তুকির টাকা পৌঁছে দিলে চলবে না। এসব হিসাবগুলোকে বিভিন্ন উপায়ে কাজে লাগাতে হবে। তাহলে কৃষকরা প্রকৃত সুফল পাবেন।

গভর্নর এমডিদের উদ্দেশ্যে বলেন, কৃষকদের এ হিসাব খুলতে উৎসাহিত করতে হবে। ছোট ছোট সঞ্চয় যেমন, যদি কোন কৃষক ১০০ টাকা জমা দিতে আসে তবে আপনারা তা ঝামেলা মনে করবেন না। বরং তাদের উদ্বুদ্ধ করবেন।

ব্যাগবোকে মানবাধিকার লঙ্ঘন সম্পর্কে জাতিসংঘের হুঁশিয়ারি

ইভরি কোস্টে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা দখল করে থাকা ল্যঁরা ব্যাগবো ও অন্যান্য কর্মকর্তার মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন জাতিসংঘের উর্ধতন এক কর্মকর্তা।

শুক্রবার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার নাভি পিলাই জেনেভায় এক বিবৃতিতে বলেন, ব্যক্তিগতভাবে বাগবো ও অন্যান্য কর্মকর্তা মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হতে পারেন বলে চিঠি পাঠিয়ে তাদেরকে হুঁশিয়ার করা হয়েছে।

ওদিকে নতুন বছর উপলক্ষে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে ক্ষমতা না ছাড়ার প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করে ব্যাগবো বলেন, আইভোরিয়ানরা তাদের ভোটে আমাকে যে স্থান দিয়েছেন সেখানে আমি থাকবো। আমরা হার মানবো না।

গত ২৮ নভেম্বরের দ্বিতীয় দফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আলাসানে ওয়াত্তারাকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করে জাতিসংঘ সমর্থিত নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন। কিন্তু সে ফল প্রত্যাখ্যান করে সাংবিধানিক পরিষদের সমর্থনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ব্যাগবো।

ওয়াত্তারার কোছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর আঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোট ইকোওয়াস বার বার আহ্বান জানিয়ে আসলেও তা নাকচ করছেন ব্যাগবো।

আইভরি কোস্টে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর চলছে হত্যা, নির্যাতন, আটক ও দমন-পীড়ন। জাতিসংঘের তথ্যমতে, নির্বাচনের পর সহিংসতায় দেশটিতে এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ জনের মৃতু্য হয়েছে। গৃহযুদ্ধের মুখে পড়ার ভয়ে দেশ ছেড়ে প্রতিবেশী লাইবেরিয়ায় পালিয়ে গেছে অসংখ্য মানুষ।

পিলাই বলেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের আওতায় তাদের কর্মকাণ্ডের ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ব্যক্তিগতভাবে তারা দায়ী থাকবেন এবং বিচারের মুখোমুখি হবেন_এ বিষয়টি তাদের স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। জাতিসংঘের এ হুঁশিয়ারি বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান ব্যাগবোর এক মুখপাত্র।

২০২৫ নাগাদ চীনকে পিছনে ফেলে জনসংখ্যায় শীর্ষে পৌঁছবে ভারত

র মাত্র ১৪ বছর বাকি। ২০২৫ সাল নাগাদ জনসংখ্যার মাপকাঠিতে প্রতিবেশি চীনকে টপকে এক নম্বর স্থানে চলে যাবে ভারত। ক্রমশ বাড়ছে ভারতের জনসংখ্যা। আমেরিকার 'সেনসাস বু্যরো সংশিস্নষ্ট দু'টি দেশের জনসংখ্যার চলতি ট্রেন্ড বা গতিপ্রকৃতি বিশেস্নষণ করে এই আগাম হিসাব দিয়েছে।

তারা জানাচ্ছে, ২০২৫ সাল নাগাদ ভারতের জনসংখ্যা হতে পারে আনুমানিক ১৩৯ কোটি ৬০ লক্ষ। সেখানে চীনের জনসংখ্যা হতে পারে প্রায় ১৩৯ কোটি ৪০ লক্ষ। আর এই ট্রেন্ড বা ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৫০ নাগাদ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ হিসাবে ভারতের আসন পাকা হবে। তখন ভারতের জনসংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ১৬৫ কোটি ৬০ লক্ষ। সেখানে চীনের জনসংখ্যা বেশ কমে দাঁড়াবে ১৩০ কোটিতে। খবর বর্তমান পত্রিকার।

বর্তমানে কমিউনিস্ট চীনের জনসংখ্যা ১৩৩ কোটি। তার ঠিক পরই ১১৭ কোটি ৩০ লক্ষ জনসংখ্যা নিয়ে ভারত আছে দু'নম্বরে। তৃতীয় স্থানে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাদের জনসংখ্যা ৩১ কোটি। ২০২৫ সাল নাগাদ বারাক ওবামা-হিলারি ক্লিনটনদের দেশের জনসংখ্যা বেড়ে ৩৫ কোটি ৭০ লক্ষ দাঁড়াতে পারে। ২০৫০ নাগাদ তা আরও বেড়ে হতে পারে প্রায় ৪৩ কোটি ৯০ লক্ষ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির দৌড়ে ভারতের পাশেই আছে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। জনসংখ্যার মাপকাঠিতে দু'দেশের স্থান যথাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম।

তবে আগামী দু'টি দশকে জনসংখ্যা ও শ্রমশক্তি হ্রাস পেলেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে কিন্তু ভারতের চেয়ে এগিয়েই থাকবে চীন। ভবিষ্যতে জনসংখ্যার ভারসাম্যের অদলবদল চীনকে আর্থিক ক্ষেত্রে ছাড়িয়ে যেতে ভারতকে সাহায্য করবে, এই ধারণা উড়িয়ে দিয়ে এম ওয়ান জিন নামে জনৈক চীনা বিশেষজ্ঞ বলেছেন, চীন ও তার উন্নয়নের পদ্ধতি-পন্থা বদলাচ্ছে। ফলে ভারত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মাপকাঠিতে চীনকে ছাড়াতে পারবে কি না, তা এখনই বলার সময় আসেনি। চীনা অ্যাকাডেমি অব সোস্যাল সায়েন্সস-এর ইনস্টিটিউট অব ইকনমিক্স'-এ কর্মরত ঐ বিশেষজ্ঞ জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ভারত চীনকে আর্থিক সমৃদ্ধির বিচারে টপকে যাবে, এহেন ধারণায় গুরুত্ব দিতে চাননি। তিনি বলেছেন, তথাকথিত জনসংখ্যার ভারসাম্য অনুকূলে থাকার সুবিধা দ্রুত উবে যাবে না, বরং আরো দু'টি দশক থাকবে। তিনি তথ্য দিয়েছেন, ২০২৫ নাগাদ চীনের সক্রিয় শ্রমিকের সংখ্যা কমে হতে পারে ৯৯ কোটি। যদিও ঐ সময় ভারতের সক্ষম কমর্ী মানুষের সংখ্যা হতে পারে ৯৪ কোটি। অর্থাৎ তখনও এগিয়ে থাকবে চীন।

ব্রিটিশ কারাগারে দাঙ্গা আগুন

ব্রিটেনের একটি কারাগারের দাঙ্গাবাজ বন্দিরা কয়েকটি ভবনে শনিবার আগুন ধরিয়ে দেয়। ইংল্যান্ডের অ্যারানডালের নিকট ফোর্ড কারাগারের প্রায় ৪০ বন্দি ঐ দাঙ্গায় অংশ নেয়। এ ব্যাপারে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত শুরু হয়েছে। দাঙ্গায় কেউ হতাহত হয়নি বলে কতর্ৃপক্ষ জানিয়েছে। প্রায় ১২ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সরকার যখন কারাখাতে বরাদ্দ কমানোর কথা ভাবছে, তখন এ দাঙ্গা সে পরিকল্পনা পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন বিশেস্নষকরা। প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত ঐ উন্মুক্ত কারাগারে প্রায় পাঁচশ বন্দি রয়েছে। সেখানে নিয়মনীতি কিছুটা শিথিল। বন্দিরা কারাগারের ভেতরে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পায়।

কারা কর্মকর্তাদের সংগঠন প্রিজন্স অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপ সাধারণ সম্পাদক মার্ক ফ্রিম্যান বলেন, নববর্ষে বন্দিদের অনেকে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে পড়ে। তখন কারা কর্মীরা তাদের রক্তে অ্যালকোহলের মাত্রা পরিমাপ করতে গেলে বন্দিরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। প্রথমে ভাংচুর ও পরে তারা ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঐ সময় কারাগারে দুই কারা কর্মকর্তা এবং চারজন কর্মী ছিলেন। তবে দাঙ্গা বাধার পর প্রায় ২০০ কারারক্ষী ঐ কারাগারে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে কাঠের একটি ভবন আগুনে পুড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাশের কয়েকটি ভবনও।

কারা কর্মকর্তা ফ্রিম্যান স্কাই-নিউজকে বলেন: সরকার কারাখাতে ব্যয় কমিয়ে কারা কর্মকর্তার সংখ্যা কমানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। কিন্তু এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, ফোর্ড কারাগারের ঘটনা তাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো। ফ্রিম্যান বলেন, আমাদের এখনই ১ হাজার কারা কর্মকর্তার ঘাটতি রয়েছে, আরো কর্মকর্তা প্রয়োজন। কারাগার সংক্রান্ত মন্ত্রী ক্রিসপিন বস্নান্ট বলেন:কম নিরাপত্তা ব্যবস্থাসম্পন্ন ঐ কারাগারে দাঙ্গার ঘটনা জঘন্য এবং অভূতপূর্ব। কেননা এ কারাগারের বন্দিরা ভাল আচরণ করে বলে বিশ্বাস করা হয়ে থাকে।

গাজা সীমান্তে গত বছর ২৬ শিশুকে হত্যা করে ইসরায়েল

সরায়েলি সৈন্যরা গাজা সীমান্তে গত বছর ২৬ ফিলিস্তিনি শিশুকে হত্যা করেছে। বিশ্বে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে শিশুমৃত্যু নিয়ে 'সেভ দ্য চিলড্রেন' এর প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৬টি শিশুকে হত্যা করা হয়েছে ইসরায়েলের নির্ধারণ করে দেওয়া গাজা সীমান্তের ৩০০ মিটার 'প্রবেশ নিষিদ্ধ' এলাকার বাইরে। সেপ্টেম্বর মাসে গাজার ৭০০ মিটার ভেতরে দুই বালককে তাদের দাদাদেরসহ গুলি করে হত্যা করে ইসরায়েলি সেনারা।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, গাজা আগ্রাসনের সময় ইসরায়েল যেসব বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছিল তার সব এখনো পুনর্নির্মাণ সম্ভব হয়নি। অবরোধের কারণে বাড়িঘর তৈরির উপকরণের ঘাটতির কারণে তা সম্ভব হয়নি। ইসরায়েলের অবরোধের কারণে সেখানকার অর্থনীতি পুরো ভেঙে পড়েছে এবং শিশুরা স্কুল ছেড়ে দিয়ে নির্মাণের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত হয়ে পরিবারকে সাহায্য করছে।
এদিকে সোমবার আবুধাবিতে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের প্রধান বান কি মুন পূর্ব জেরুজালেমসহ অধিকৃত ফিলিস্তিনি এলাকায় ইহুদি বসতি সম্প্রসারণ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। পূর্ব জেরুজালেমে বসতি স্থাপনকারীদের জন্য আরো ১৪০০ নতুন বাড়ি তৈরির অনুমোদন দেবে_ইসরায়েলি সংবাদ মাধ্যমে এ খবর প্রকাশ হওয়ার এক দিন পর বান কি মুন এ আহ্বান জানালেন। তিনি আরো বলেন, বসতি সম্প্রসারণ বন্ধের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া ও জাতিসংঘকে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।

জাহাজ ভাঙা বন্ধ ১০ মাস-৩৮০টি স্টিল ও রি-রোলিং কারখানাও বন্ধ

নজিওর তৎপরতায় ১০ মাস ধরে ভাঙার জন্য পুরনো জাহাজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। জাহাজ ভাঙার ১০০টি ইয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ১৬টিতে এখন জাহাজ রয়েছে। জাহাজ ভাঙার লোহা কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে রড ও স্টিল তৈরি করে রি-রোলিং ও স্টিল মিলগুলো।

কাঁচামাল না পাওয়ায় এ দুটি খাতের ৩৮০টি কারখানা এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বেকার হয়েছে কয়েক লাখ শ্রমিক। বাকি কারখানাগুলোও কাঁচামালের অভাবে ধুঁকছে। যেকোনো মুহূর্তে এসব কারখানাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি জাফর আলম বলেন, ‘কিছু এনজিও ষড়যন্ত্র করে পরিকল্পিতভাবে আদালতকে ভুল তথ্য দিয়ে রায় বের করে নিয়েছে। এসব এনজিও জাহাজ ভাঙা শিল্প ও এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল রি-রোলিং মিল, স্টিল মিল, মোল্ডিং ওয়ার্কশপ, কেব্ল্ শিল্প, আবাসন শিল্পসহ প্রায় ৫০টি খাত ধ্বংস করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নেমেছে। ষড়যন্ত্রকারীদের নেতৃত্ব দিচ্ছে বেলা নামের একটি এনজিও। এর সঙ্গে কিছু সরকারি আমলাও রয়েছে।’
কালের কণ্ঠকে জাফর আলম আরো বলেন, ‘বর্তমান সরকার জাহাজ ভাঙা শিল্প চালু রাখার পক্ষে, কিন্তু জাহাজ আমদানি বন্ধ থাকায় সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। কারণ জাহাজ ভাঙা বন্ধ থাকলে রি-রোলিং ও স্টিল মিলগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। এতে রডের দাম বাড়লে প্রভাব পড়বে আবাসন ব্যবসা ও সাধারণ মানুষের ওপর। লোহার ওপর নির্ভরশীল অন্যান্য খাতও বন্ধ হয়ে যাবে। তখন বিভিন্ন খাতের লাখ লাখ বেকার শ্রমিক রাস্তায় নেমে আসবেন।’
জানা গেছে, পরিবেশ দূষণের অভিযোগ তুলে জাহাজ ভাঙা শিল্পের বিরুদ্ধে বেলা হাইকোর্টে রিট করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ বহনকারী জাহাজ আমদানি বন্ধ রাখার রায় দিয়েছেন। এরই মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর একটি নীতিমালা তৈরির কাজ করছে। সে নীতিমালা না হওয়ায় জাহাজ আমদানির জন্য কোনো ছাড়পত্র দিচ্ছে না অধিদপ্তর। এ কারণে গত বছরের মে মাস থেকে জাহাজ আমদানি বন্ধ রয়েছে।
শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, পরিবেশসম্মতভাবেই জাহাজ ভাঙার কাজ করতে চান তারা। এরই মধ্যে এ খাতে মালিকরা ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত শ্রমিকদের সংখ্যা ১০ লাখ। এ খাতের মালিকরা ইতিমধ্যে শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করেছে। তাদের জন্য ১৫০ শয্যাবিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতাল গড়ে তোলা হচ্ছে।
বাংলাদেশ রি-রোলিং মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আলী হোসাইন কালের কণ্ঠকে জানান, এনজিওর তৎপরতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে জাহাজ আমদানি বন্ধ থাকায় রি-রোলিং মিলগুলো কাঁচামাল সংকটে ভুগছে। কাঁচামালের অভাবে এ খাতের ৩০০ কারখানার মধ্যে ১৮০টি ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, সরকারের এদিকে নজর দেওয়া উচিত। বছরে মাত্র দু-একটি বর্জ্যবাহী জাহাজ মধ্য সমুদ্রে বর্জ্য অপসারণের পর তা নিয়ে এনজিওগুলো হইচই শুরু করে। কিন্তু ইয়ার্ডে কখনো ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্যবাহী জাহাজ আসেনি। তিনি বলেন, ডাইং ও ফিনিশিং কারখানাগুলো থেকে যে পরিমাণ ক্ষতিকর রাসায়নিক নদীতে যাচ্ছে, জাহাজ ভাঙা শিল্প থেকে এর চারভাগের একভাগ দূষণও ঘটছে না।
বাংলাদেশ স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ ফজলুর রহমান বকুল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘৩০-৪০ বছর ধরে জাহাজ ভাঙা হচ্ছে। পরিবেশ রক্ষার নামে হঠাৎ করে জাহাজ আমদানি বন্ধ করে দেওয়া মোটেই সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। আমরাও চাই পরিবেশসম্মতভাবে এ শিল্প গড়ে উঠুক। এ জন্য হঠাৎ সিদ্ধান্ত না নিয়ে কয়েক বছর ধরে এ শিল্পকে পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তুলতে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল।’

কিছু এনজিওর তৎপরতায় শিল্প খাতে অস্থিরতা, বাড়ছে বেকারত্ব

কদিকে নেই কোনো সুস্পষ্ট নীতিমালা, অন্যদিকে একের পর এক আসছে নানা ধরনের নির্দেশনা। দুইয়ের মাঝে পড়ে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন আবাসন, জাহাজ ভাঙা, স্টিল ও রি-রোলিং মিল এবং সংশ্লিষ্ট তিন শতাধিক উপশিল্প খাতের উদ্যোক্তারা।

জাহাজ ভাঙা, নির্মাণ শিল্প, অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিপুল বিনিয়োগও ঝুঁকির মধ্যে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সারা জীবনের সঞ্চয় ও ব্যাংক ঋণ বিনিয়োগ করে যাঁরা অধীর অপেক্ষায় দিন গুনছেন স্বপ্নের ফ্ল্যাট ও প্লটে ওঠার জন্য, চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন তাঁরাও।
উদ্যোক্তারা বলছেন, বিশ্বব্যাপী পরিবেশদূষণের জন্য সবার আগে দায়ী যেসব শিল্পোন্নত দেশ, তাদের অনেকেই পরিবেশবিষয়ক
বিশ্ব সনদে স্বাক্ষর করেনি। যুক্তরাষ্ট্র কিয়োটো প্রটোকলে স্বাক্ষর করেনি। এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন ও উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রথম দিকে থাকা প্রতিবেশী দেশ ভারতও পরিবেশ রক্ষার নামে উন্নত দেশগুলোর চাপিয়ে দেওয়া শিল্পবিরোধী শর্ত মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের মতো ক্ষুদ্র অর্থনীতির একটি দেশে হাতে গোনা কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠনের কারণে একের পর এক আইনি জটিলতার আবর্তে আটকে যাচ্ছে এসব খাতের উন্নয়ন। বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত এসব এনজিও কাদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছে, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। অন্যথায় উল্লিখিত খাতগুলোতে বিপর্যয়ের কারণে সরকার ব্যাপক হারে জনপ্রিয়তা হারাবে, যার বিরূপ প্রভাব পড়বে আগামী জাতীয় নির্বাচনেÑএমন মন্তব্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।
ব্যবসায়ীদের যুক্তি, বিদ্যমান সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর অনুমতি বা ছাড়পত্র নিয়েই আবাসন ও জাহাজ ভাঙা শিল্পগুলো কয়েক দশকে গড়ে উঠেছে এবং বিকাশ লাভ করেছে। সরকারি অনুমোদন যাচাই-বাছাই করেই ব্যাংকগুলো অর্থ বিনিয়োগ করেছে। এসব শিল্পকে ঘিরে গড়ে উঠেছে নানা উপখাত। দেশের লাখ লাখ মানুষের জীবিকা, স্বপ্ন ও বিনিয়োগ আবর্তিত হচ্ছে এসব খাত-উপখাতকে ঘিরে।
পরিবেশবাদীদের সম্পৃক্ত রেখে ঢাকা মহানগরীর জন্য প্রণীত ভবিষ্যৎমুখী মহাপরিকল্পনাÑডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) এখনো অনুমোদিত হয়নি। জাহাজ ভাঙা শিল্পকে পরিবেশবান্ধব করার জন্য পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এসব বিষয় চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রচলিত পরিবেশ আইন এবং আনুষঙ্গিক অন্য নিয়মনীতির আলোকেই শিল্পগুলোর কর্মকাণ্ড চলার কথা। এ ক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় ঘটলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আইন লঙ্ঘনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই পারে। কিন্তু শুধু পরিবেশের দোহাই দিয়ে সামগ্রিকভাবে কোনো শিল্পকে স্থবির করে দেওয়ার প্রচারণাকে দেশীয় পুঁজি ও শ্রমঘন শিল্পের বিরুদ্ধে দেশি ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই দেখছেন আবাসন, জাহাজ ভাঙা ও রি-রোলিং শিল্পের উদ্যোক্তারা। তাঁদের মতে, যেসব এনজিও এ ধরনের শিল্পের বিরুদ্ধে কাজ করছে, তারা কাদের প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়ন করছে, তা এখনই খুঁজে দেখা প্রয়োজন। তাঁরা বলছেন, আবাসন শিল্পে রয়েছে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ। এর এক-তৃতীয়াংশই প্রবাসী বাংলাদেশিদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা। মধ্য আয়ের মানুষের সঞ্চয় ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ ঋণের টাকাও গচ্ছিত আছে এ খাতে। এ খাতকে ঘিরে গড়ে উঠেছে প্রায় ২৭০টি উপখাত। এগুলোতে রয়েছে ছোট-বড় প্রায় ১০ হাজার শিল্প, যেখানে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত।
জাহাজ ভাঙা শিল্পে রয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১০ লাখ মানুষের জীবিকা জড়িয়ে আছে এ শিল্পের সঙ্গে। স্টিল ও রি-রোলিং মিলে নিয়োজিত আছে প্রায় তিন লাখ শ্রমিক। উদ্যোক্তারা বলেন, জাহাজ ভাঙা খাতের স্থিতিশীলতার ওপরই স্টিল ও রি-রোলিং খাতসহ এমএস রডের বাজারের স্থিতি নির্ভর করছে। দেশি রডের সরবরাহ কমলে দাম বাড়বে, যার প্রভাব পড়বে নির্মাণ ও অবকাঠামো উন্নয়নকাজে। দেশি রডের সরবরাহে ঘাটতির অজুহাতে কোনো কোনো মহল রড আমদানির চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
বাংলাদেশ স্টিল ও রি-রোলিং মিলস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা গত রবিবার বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলেছেন, দেশে চার শরও বেশি রি-রোলিং মিল রয়েছে। কারখানাগুলোতে উৎপাদিত এমএস রড দেশের সম্পূর্ণ চাহিদা পূরণ করে। এ শিল্পে বছরে প্রায় ৩৫ লাখ টন কাঁচামালের দরকার হয়। এর ৮০ শতাংশই আসে দেশের জাহাজ ভাঙা শিল্প থেকে। জাহাজ ভাঙা বন্ধ থাকায় কাঁচামালের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে স্ক্র্যাপের দামও বাড়ছে। এভাবে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার অপচেষ্টা চলছে। কাঁচামালের অভাবে ইতিমধ্যে অনেক মিল বন্ধ হয়ে গেছে। আরো কিছু বন্ধ হওয়ার পথে। শিল্প বন্ধ হওয়ায় লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হচ্ছে। এতে সমাজে নানা অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে।
কাঁচামাল সমস্যার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনগুলো নিয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস দেন বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান। তিনি বলেন, পরিবেশসম্মতভাবে জাহাজ ভাঙা শিল্প গড়ে তুলতে নেদারল্যান্ডসের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। দেশটি সহায়তা দেবে বলে প্রতিশ্র“তি দিয়েছে। পরিবেশ ও উন্নয়নের মধ্যে ভারসাম্য রেখে জাহাজ ভাঙা শিল্প গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয় নীতিমালা তৈরির কাজ করছে। নীতিমালা প্রকাশিত হলে জাহাজ আমদানিতে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত সাত সদস্যের মন্ত্রিসভা কমিটি ড্যাপ নিয়ে কাজ করছে। তাদের সুপারিশ এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত না হওয়ায় ড্যাপ কার্যকর হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতেও গুটিকয়েক বেসরকারি সংস্থা দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে জড়িত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে তীব্র বিরোধিতায় নেমেছে। তারা আবাসন খাত, ভূমি উন্নয়ন খাতের সঙ্গে জড়িত কোটি কোটি মানুষের কর্মসংস্থান, এসব খাতে বিনিয়োগ করা হাজার হাজার কোটি টাকার ভবিষ্যৎ বিবেচনায় না নিয়ে শুধু পরিবেশ রক্ষার নামে নানা ধরনের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে আবাসন উন্নয়ন এবং ভূমি উন্নয়ন খাতে ধস নামার আশঙ্কা রয়েছে।
রাজউকের হিসাব অনুযায়ী আবাসন উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় দুই শতাধিক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে রাজউক ২৬টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। বাকি ১৭৪টি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এসব প্রকল্পে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। জাতীয় অর্থনীতিতে এ খাতের অবদান শতকরা ২১ ভাগ। এ খাতে বিনিয়োগ করা টাকার ৩০ শতাংশ এসেছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ থেকে। তাঁরা ২১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এসব খাতে সরাসরি প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক কাজ করছে। তাদের সঙ্গে জড়িত প্রায় আড়াই কোটি মানুষ। এসব মানুষের অন্ন সংস্থান হচ্ছে উল্লিখিত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো থেকেই। হাউজিং এবং ভূমি উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত ৩০০টি শিল্প উপখাত। এসব খাতেও যেমন বিনিয়োগ করা হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা, তেমনি শিল্পগুলোতে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করছে দেড় কোটি এবং পরোক্ষভাবে তিন কোটি মানুষ। তাদের সঙ্গে জড়িত তাদের প্রত্যেকের পরিবার। আবাসিক এবং ভূমি উন্নয়নকাজ কোনোভাবে ব্যাহত হলে কোটি কোটি লোক বেকার হয়ে যাবে। চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়বে এসব শ্রমিকের পরিবারগুলো।
প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন বিধিমালার বিভিন্ন ধারায় বিধিনিষেধগুলো সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ করা হয়েছে। বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা ২০০৪-এর ১৬(৩) বিধিতে যেকোনো ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচারের বিষয়ে বলা হয়েছে। জলাধার সংরক্ষণ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা অমান্য করে মাটি ভরাটের মাধ্যমে জমির শ্রেণী পরিবর্তনের জন্য শাস্তির বিধান স্পস্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা ২০০৪ জারির আগে থেকে বিদ্যমান প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম অব্যাহত রাখার বিষয়ে ওই বিধিমালার সংশ্লিষ্ট ধারায় সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। এসব আইন কার্যকর হচ্ছে কি না তা দেখভালের দায়িত্ব রাজউক বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু এসব সংস্থা যথাযথভাবে কাজ না করায় আবাসন খাত উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ করেছেন এমন সাধারণ মানুষ নিঃস্ব হতে বসেছেন।
রাজউকের কাছে অনুমোদনপ্রত্যাশী ১৭৪টি প্রকল্প দীর্ঘ ১৫-১৬ বছর ধরে জাতীয় প্রচারমাধ্যমগুলোতে বিজ্ঞাপন প্রচার করে আসছে। কিন্তু রাজউক এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ বা বাধা দেয়নি। এমনকি অনুমোদনপ্রত্যাশী প্রকল্পগুলোর বিরুদ্ধে রাজউক কোনো ব্যবস্থাও নেয়নি। ফলে বিজ্ঞাপন দেখে সাধারণ মানুষ এসব প্রকল্প থেকে প্লট বা ফ্ল্যাট কিনেছে জীবনের সব সঞ্চয় দিয়ে। এ অবস্থায় পরিবেশ রক্ষার নামে দু-একটি এনজিও লাখ লাখ মানুষের সোনালি স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এনজিওগুলো সাধারণ ক্রেতার কথা বিবেচনায় না নিয়ে আবাসন খাত উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে।
ঢাকা মহানগরের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ড্যাপ পর্যালোচনার জন্য সরকারের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি ১৬টি আবাসন প্রকল্প ও স্থাপনা এবং দুই হাজার ৭২৪টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ড্যাপের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ (নন-কনফার্মিং) হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কমিটি প্রকল্পগুলো অনুমোদন না দিতে এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো সরিয়ে নেওয়ার সুপারিশ করেছে। আবাসন প্রকল্পগুলোর মধ্যে ছয়টি সরকারি এবং ১০টি বেসরকারি। ড্যাপ নিয়ে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। ওই প্রতিবেদনে ড্যাপ বাস্তবায়িত হলে সরকার রাজনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ড্যাপ বাস্তবায়িত হলে আগামী ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) নির্বাচন ও সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যে কারণে ঢাকা ও এর আশপাশের ২৯টি সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্যরা ড্যাপ মেনে নিতে পারছেন না। সরকারদলীয় সদস্যরাও ড্যাপের প্রচণ্ড বিরোধিতা করছেন। এই ড্যাপ বাস্তবায়ন করতে হলে পাঁচ লাখেরও বেশি স্থাপনা ভাঙতে হবে। এতে জাতীয় অর্থনীতির ওপরও ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ড্যাপের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বিপুলসংখ্যক মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠবে। এ সুযোগে বিরোধী দলও একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে সরকারকে ঠেলে দেওয়ার সুযোগ পাবে। ফলে ঢাকার বর্তমান অবকাঠামোগত অবস্থাকে আমলে নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য করণীয় নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
দীর্ঘ চার পৃষ্ঠার ওই গোপনীয় প্রতিবেদনের শিরোনাম ‘রাজধানী ঢাকার ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) বাস্তবায়নে প্রতিকূলতা প্রসঙ্গে’। সরকার যাতে বিপাকে না পড়ে, এ জন্য গোয়েন্দা সংস্থার তরফ থেকে কিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদে ‘মন্তব্য ও সুপারিশ’ শীর্ষক উপশিরোনামের ‘ক’ থেকে ‘চ’ পর্যন্ত রয়েছে ছয়টি সুপারিশ। একটিতে বলা হয়েছে, এই ড্যাপ বাস্তবায়িত হলে আর্মি হাউজিং সোসাইটি প্রকল্প বাধাগ্রস্ত হবে। এতে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের মনোবলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা আছে, যা বর্তমান সরকারের প্রতি তাঁদের আস্থা অর্জনের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। কিছু এনজিও পরিবেশ রক্ষার নামে সরকারকে দিয়ে এসব কাজ করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা সফল হলে দেশের অর্থনীতি মারাÍকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ব্যবসায়ীরা সরকারের বিরুদ্ধে খেপে উঠবে। এনজিওগুলো মূলত পরিকল্পিতভাবে সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের খেপিয়ে তোলার চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে নানাভাবে। শুধু ব্যবসায়ীদেরই নয়, সাধারণ মানুষকেও নানাভাবে উত্তেজিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ইতিমধ্যেই গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ রাস্তায় নেমে এসে এর প্রমাণ দিয়েছে। কাজেই এসব এনজিও কাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে, তারা কাদের নীলনকশা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে, তা এখনই খুঁজে বের করা প্রয়োজন এবং একই সঙ্গে এমন পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, যাতে এ ধরনের এনজিওগুলো আর সরকার এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করতে না পারে।

সীমান্তে হত্যা বন্ধের উপায় খুঁজতে রাজি ভারত

বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের প্রথম দিন সীমান্তে হত্যা বন্ধ করতে বিকল্প উপায় খুঁজতে ভারত রাজি হয়েছে বলে জানা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার বৈঠকে দুই পক্ষই সীমান্তে হত্যাকাণ্ডকে নিজেদের জন্য ‘বিব্রতকর’ বলে আখ্যায়িত করেছে। আজ বুধবার যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক শেষে এ বিষয়ে যৌথ ঘোষণা দেওয়ার পর দুই দেশের স্বরাষ্ট্রসচিবদের নেতৃত্বে বৈঠক শুরু হবে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, গতকাল বৈঠকের শুরুতেই নিরপরাধ ও নিরস্ত্র বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনা সরকারের জন্য বিব্রতকর বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশ তা বন্ধের দাবিতে জোরালো যুক্তি উপস্থাপন করে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষও বাংলাদেশের আবেগ ও যুক্তি বুঝতে পেরে সীমান্তে গুলি করে হত্যা না করে বিকল্প অনুসন্ধানে সম্মত হয়। আর এ বিষয়গুলো ‘যৌথ আলোচনার দলিলে’ (জয়েন্ট রেকর্ডস অব ডিসকাশনস) তুলতেও রাজি হয়েছে ভারতীয় পক্ষ।
ঢাকায় শেরাটন হোটেলে গতকালের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (রাজনৈতিক) ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন সে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (উত্তর-পূর্ব) শম্ভু সিং।
সূত্র জানায়, যুগ্ম সচিব পর্যায়ের এ বৈঠক থেকে পাওয়া ‘জয়েন্ট রেকর্ডস অব ডিসকাশনস’ অনুযায়ী আজ বিকেল ৩টায় একই স্থানে আবার বৈঠক হবে। তাতে সচিব পর্যায়ের বৈঠকের আলোচ্যসূচি নির্ধারিত হবে। সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন স্বরাষ্ট্রসচিব আবদুস সোবহান শিকদার। ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন সে দেশের স্বরাষ্ট্রসচিব জি কে পিল্লাই।
গতকাল বৈঠক শেষে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা যুগ্ম সচিব (রাজনৈতিক) কামাল উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, সীমান্ত, নিরাপত্তা ও পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়েই মূলত কথা হয়েছে। বৈঠকে সীমান্তে বাংলাদেশিদের গুলি করে হত্যার ঘটনায়
বাংলাদেশের কঠোর মনোভাবের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
জানা গেছে, কিশোরী ফেলানী হত্যার বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বৈঠকে তুলে ধরা হয়। এছাড়াও নিরস্ত্র ও নিরীহ বাংলাদেশিদের গুলি করে হত্যা করা বন্ধ করতে জোরালো যুক্তি ও দাবি উপস্থাপন করে বাংলাদেশ।
সীমান্তে নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে প্রাণঘাতী নয় (নন লিথাল) এমন অস্ত্র দেওয়া যায় কি না, তাও ভেবে দেখতে রাজি হয়েছে ভারত। যুগ্ম সচিব (রাজনৈতিক) কামাল উদ্দিন আহমেদ একে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে আখ্যায়িত করেছেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, ‘দণ্ডিত বন্দি বিনিময়, ফৌজদারি অপরাধ বিষয়ে আইনি সহায়তা এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, সংঘটিত অপরাধ ও অবৈধ মাদক চোরাচালান প্রতিরোধবিষয়ক তিনটি চুক্তির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা হয়েছে। জানা গেছে, শুধু অনুপ চেটিয়া নয়, দুই দেশেরই দণ্ডিত বন্দি নাগরিকদের বিনিময় নিয়ে কথা হয়েছে।
বাংলাদেশ আজকের বৈঠকগুলোতেও সীমান্তে হত্যার প্রতিবাদ জানাবে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন এবং স্বরাষ্ট্রসচিব আবদুস সোবহান শিকদার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
অধিকার : এদিকে মানবাধিকার সংস্থা অধিকার এক বিবৃতিতে বলেছে, ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বেপরোয়া হত্যা বন্ধে শুধু প্রতিবাদ নয়, সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা ও বিচার দাবি প্রয়োজন।

যশোরে প্রকাশ্যে কুপিয়ে যুবককে হত্যা

শোরে প্রকাশ্যে কয়েক শ মানুষের সামনে সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মোহাম্মদ সেলিম (২৪) নামের এক যুবককে হত্যা করেছে। হত্যার পর সন্ত্রাসীরা বোমা ফাটিয়ে পালিয়ে যায়। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শহরের ধর্মতলা মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। সেলিমের বাড়ি শহরের লোন অফিসপাড়ায়।

তাঁর বাবার নাম আব্দুর রহমান। চৌরাস্তা এলাকায় তাঁদের ‘নাজমা হোটেল’ নামে একটি হোটেল রয়েছে। গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, ঘটনাস্থলে যাত্রী ছাউনির পাশে সেলিম তাঁর এক বন্ধুকে নিয়ে চা খাচ্ছিলেন। এ সময় ছয়-সাতজন সন্ত্রাসী সেখানে হাজির হয়ে রামদা, গাছিদা দিয়ে সেলিমকে কোপাতে থাকে। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। পরে এলাকাবাসী তাঁকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সেলিমকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী গৃহবধূ বিউটি বেগম বলেন, ‘ঘটনাস্থলে আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম। এ সময় ধর্মতলা এলাকার শাকিল, কাম, মো. শাওন, জুয়েল, জনিসহ ছয়-সতজন সন্ত্রাসী এসে দা দিয়ে কুপিয়ে সেলিমকে মেরে ফেলে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ওই সন্ত্রাসীরাই ২০-২২ দিন আগে আমার ভাই বাবুকেও কুপিয়েছিল।’ সেলিমের বাবা আব্দুর রহমান বলেন, ‘সন্ধ্যার আগে সেলিম হোটেল থেকে ৩০০ টাকা নিয়ে একটি মোবাইল ফোন পেয়ে বন্ধু শাওনকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলে বের হয়। যাওয়ার সময় সে বলে, জরুরি কাজে যাচ্ছি। সন্ধ্যার পর আমি তার মৃত্যুর খবর জানতে পারি। জেলখানায় আটক সন্ত্রাসী হাঁস সোহেল তার সহযোগীদের দিয়ে আমার ছেলেকে হত্যা করিয়েছে।’ মা সুফিয়া বেগম হাসপাতালে বলেন, ‘ওরা আমার ছেলেকে বাঁচতে দিল না। আমি ছেলের খুনের বিচার চাই।’
হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘সেলিমের বুকে ও কোমরে গভীর ক্ষত রয়েছে। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।’ এ ব্যাপারে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘কী কারণে খুন হয়েছে, প্রাথমিকভাবে তা বলা যাচ্ছে না। আসামিদের আটকের চেষ্টা চলছে।’
গতকালের এ খুনের ঘটনায় শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি শহরের ষষ্টিতলা পাড়ায় কামাল নামে এক যুবদলকর্মীকে একইভাবে হত্যা করা হয়।

পৌর নির্বাচন! পুরনো চেহারায় ভোট

নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরে ব্যাপক গোলযোগের মধ্য দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার শেষ হয়েছে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পৌরসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ব্যাপক কারচুপি, কেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ভাঙচুর, গুলিবর্ষণ, গাড়িতে আগুন, জাল ভোটের ঘটনা ঘটেছে এ তিন জেলার বিভিন্ন স্থানে।

এসব ঘটনার প্রতিবাদে আজ বুধবার নোয়াখালী ও ফেনীতে সকাল-সন্ধ্যা এবং লক্ষ্মীপুরে অর্ধদিবস হরতাল ডেকেছে বিএনপি।
নোয়াখালীতে ব্যালট বাক্স ছিনতাইসহ বিভিন্ন অনিয়মের ঘটনায় ১৭টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। এ ছাড়া রিটার্নিং অফিসারের গাড়িসহ সাংবাদিকদের গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে এ জেলায়। বিভিন্ন ঘটনায় দুজন প্রার্থীসহ ২০ জন আহত হয়েছে। ফেনীর তিনটি পৌরসভায় সহিংসতা, জাল ভোট দেওয়া ও বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছে ২২ জন। বাতিল হয়েছে দুই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ। মহিপাল এলাকায় প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখা হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক।
লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন কেন্দ্রে ব্যাপক অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, কেন্দ্র দখল, মারধর এবং রামগতির একটি কেন্দ্রে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ভোটগ্রহণ চলাকালেই লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপি লক্ষ্মীপুর ও রামগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন বয়কট করে আজ সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল ডেকেছে। তারা ফলাফল বাতিল করে এ দুটি এলাকায় পুনর্নির্বাচন দাবি করেছে।
এর বাইরে চাঁদপুর, সাতকানিয়া, রাঙ্গুনিয়া, মিরসরাই, দাউদকান্দিসহ কয়েকটি পৌরসভায় বিচ্ছিন্নভাবে কিছু অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। তবে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বেশির ভাগ পৌরসভায়ই নির্বাচন হয়েছে শান্তিপূর্ণ।
নোয়াখালী : নিজস্ব প্রতিবেদক সামসুল হাসান মীরনের পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়Ñব্যালট বাক্স ছিনতাই, জাল ভোটসহ ব্যাপক সহিংসতার মধ্য দিয়ে গতকাল শেষ হয়েছে নোয়াখালী পৌরসভা নির্বাচন। রিটার্নিং অফিসারের গাড়িসহ তিনটি গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা ও আসবাবপত্র ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষুব্ধ বিএনপিকর্মীরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। বিভিন্ন কেন্দ্রে দুই কাউন্সিলর পদপ্রার্থীসহ ২০ জন আহত হয়। নানা অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচন কমিশন ১৭টি কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত করেছে। জেলা বিএনপি আজ বুধবার নোয়াখালীতে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে রিটার্নিং অফিসার ও তাঁর স্ত্রী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।
সকাল ৮টা থেকে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবেই চলছিল। ১১টার দিকে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে পুলিশ লাইন প্রাইমারি কেন্দ্রে দুই কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর মধ্যে বিরোধের জের ধরে এক প্রার্থী কেন্দ্রে ঢুকে ৪ নম্বর বুথের ব্যালট বাক্স নিয়ে পানিতে ফেলে দেন। এ সময় বেশ কিছু লোক ওই বুথের ব্যালট পেপারও ছিনিয়ে নেয়। পরে প্রিসাইডিং অফিসার পানি থেকে ভাঙা ও ভিজে যাওয়া ব্যালট বাক্স উদ্ধার করলেও ব্যালট পেপার উদ্ধার করতে পারেননি। এ সময় ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পর আবার ভোটগ্রহণ শুরু হয়।
মাইজদী অরুণ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রেও দুই কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে গেলে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। এ সময় বিএনপির কর্মীরা জাল ভোটের অভিযোগ এনে স্কুলসংলগ্ন একটি বাড়িতে হামলা চালায়। দুপুর ১২টায় ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মহিউদ্দিন আলমগীর ফকিরপুর মাদ্রাসা কেন্দ্রে এলে প্রতিপক্ষ নুরনবী সোহাগের লোকজন তাঁর ওপর হামলা চালিয়ে তাঁকে আহত করে। এ সময় তাঁর স্ত্রীও আহত হন। ওই কেন্দ্রে ব্যাপক জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দুপুরে সোনাপুর ব্রাদার এন্দেজ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। এ সময় কাউন্সিলর পদপ্রার্থী রাজু প্রতিপক্ষের হাতে আহত হন। এ ছাড়া বিক্ষুব্ধ লোকজন ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী দেলোয়ার হোসেনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। সকাল ১১টার পর থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা জাল ভোট দিচ্ছে বলে অভিযোগ এনে বিএনপির কর্মীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। একপর্যায়ে তারা মাইজদী বাজারে রিটার্নিং অফিসার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শাখাওয়াত হোসেনের গাড়িতে হামলা, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ভাঙচুর করে। একই সময় বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা মাইজদী পাবলিক কলেজ কেন্দ্রের কাছে রাখা শহর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলামের গাড়িতে (ঢাকা মেট্রো জ ১৪-১৭৭৮) অগ্নিসংযোগ করে সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেয়। তারা শহরের কল্যাণ স্কুলের কাছে দৈনিক যুগান্তরের জেলা প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান চৌধুরীর গাড়িসহ অন্য একটি গাড়ি ভাঙচুর করে। বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা শহরে লাঠি নিয়ে মিছিল করে জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা চালিয়ে আসবাবপত্র ভাঙচুর করে।
এ ছাড়া নোয়াখালী জেলার ৯টি ওয়ার্ডের ১৫টি কেন্দ্রে জাল ভোট, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
এসব ঘটনায় নির্বাচন কমিশন নোয়াখালী পৌরসভার ২৫টি কেন্দ্রের মধ্যে মাইজদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অরুণ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়, এমএ রশিদ উচ্চ বিদ্যালয়, প্রি-ক্যাডেট একাডেমী, মাইজদী পাবলিক কলেজ, আলফারুক একাডেমী, ফকিরপুর মাদ্রাসা, নোয়াখালী উচ্চ বিদ্যালয়, নোয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ব্রাদার এন্দেজ উচ্চ বিদ্যালয়, গোপাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোপাই মাদ্রাসা, প্রভাতি স্কুল, মাইজদী প্রভাতি স্কুল, দারুস্ সুন্নাহ আরাবিয়া মাদ্রাসা, মধ্যকরিমপুর বালিকা বিদ্যালয়, ইসলামিয়া আলিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করে।
দুপুরে জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শাহজাহানের বাসভবনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হারুনুর রশিদ সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি অভিযোগ করেন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শিহাবউদ্দিন শাহীনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা তাঁর এজেন্টদের বের করে দেয়। তারা ভোটারদের হাত থেকে সিল ছিনিয়ে নিয়ে দলীয় প্রার্থীর প্রতীক আনারসে সিল মারে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কর্মরত প্রার্থীর চাচাতো ভাই এনএসআইয়ের সহকারী পরিচালক শামিম নোয়াখালী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে তাঁর ভোটারদের বের করে নিজের হাতে সিল মারেন বলে হারুনুর রশিদ অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে মো. শাহজাহান অবিলম্বে নির্বাচন বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানান। একই সঙ্গে নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতি’র প্রতিবাদে আজ বুধবার নোয়াখালীতে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করা হয়।
বিকেল ৪টায় নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে মহাজোট সমর্থিত প্রার্থী গোলাম মহিউদ্দিন লাতু সংবাদ সম্মেলনে জানান, নির্বাচনে ভোট গণনার সময় রিটার্নিং অফিসার ৯টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছেন। তিনি ও তাঁর স্ত্রী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শামীমা সুলতানা বিএনপির পক্ষে কাজ করেছেন। লাতু অবিলম্বে রিটার্নিং অফিসার ও তাঁর স্ত্রীকে প্রত্যাহারের দাবি জানান।
সেনবাগে নির্বাচন স্থগিত : বিভিন্ন অনিয়ম, জাল ভোট ও ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগে নির্বাচন কমিশন সেনবাগ পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে। সকাল থেকে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ হলেও সকাল ১১টা থেকে সেনবাগ পাইলট স্কুল, কাদরা হামিদীয়া মাদ্রাসা, সেনবাগ সিনিয়র মাদ্রাসা, সেনবাগ কলেজ ও অষ্ট্রাদ্রোন প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় নির্বাচন কমিশন সেনবাগ পৌরসভার ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে। সেনবাগ পৌরসভা নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং অফিসার তোফায়েল হোসেন জানান, ভোটগ্রহণ নিয়ে প্রার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া গেছে। কয়েকটি কেন্দ্র থেকে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনায় বিকেল ৩টায় নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
নোয়াখালীর অপর পাঁচ পৌরসভা চৌমুহনী, চাটখিল, বসুরহাট, কবিরহাট ও হাতিয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হয়েছে।
ফেনী : কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক বিপ্লব রহমান ও ফেনী প্রতিনিধি আসাদুজ্জামান দারার পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়Ñভোটকেন্দ্র দখল ও সহিংসতার মধ্য দিয়ে গতকাল ফেনী জেলার সদর, পরশুরাম ও সোনাগাজী পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সরেজমিনে বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, জাল ভোট দেওয়া, বহিরাগতদের ব্যালট বাক্স ও ব্যালট পেপার ছিনতাই, প্রিসাইডিং অফিসারকে মারধর, বোমাবাজি, ফাঁকা গুলিবর্ষণ ও ভোটকেন্দ্র দখলের ঘটনায় ২০টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ এক থেকে দুই ঘণ্টা স্থগিত থাকে। দুটি কেন্দ্রে ভোট বাতিল করা হয়। ব্যাপক জাল ভোটের প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ প্রার্থীদের সমর্থকরা মহিপালে প্রায় দুই ঘণ্টা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। বাকি কেন্দ্রগুলোতে মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে।
ফেনী পৌরসভার বারাহিপুর ও মধুপুর মালেক মিয়ার বাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোট বাতিল করা হয়। বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষে তিন পৌরসভায় ২০ থেকে ২২ জন আহত হয়েছে। দুপুরে বিএনপি সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী মো. ফারুক হারুন ও স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী নুরুল আবসার নির্বাচন বর্জন করে পুনর্নির্বাচন দাবি করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, সরকার দলের সমর্থকরা বিভিন্ন কেন্দ্র দখল করে ব্যাপক জাল ভোট দিয়েছে।
নির্বাচন অফিস সূত্র ও ভোটাররা জানান, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ফারুক হারুনের এজেন্ট রাসেল ভূঁইয়াকে (৩৫) মারধর করে বের করে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফেনী সদর পৌরসভার বালিকা বিদ্যানিকেতন কেন্দ্রে বহিরাগত যুবকরা ঢুকে প্রিসাইডিং অফিসার শাহ আলম পাটোয়ারীকে মারধর করে। খবর পেয়ে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও বর্ডার গার্ড সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। একই সময় বারাহিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুটি ব্যালট বাক্স ও বেশ কিছু ব্যালট পেপার ছিনতাই হলে জেলা রিটার্নিং অফিসার আলতাফ হোসেন চৌধুরী এ কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বাতিল করেন। সহদেবপুরের খায়রুল এছাক প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুজন কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে আট থেকে ১০ জন আহত হয়। তাদের মধ্যে সাইফুল ও সুমন নামে দুজনকে ফেনী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুপুর ১২টার দিকে সদরের ট্রাংক রোডের পাশে ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে ১৪-১৫টি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। জিএ একাডেমী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনায় প্রায় এক ঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে।
এদিকে বিএনপি সমর্থিত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিক্ষুব্ধ সমর্থকরা নির্বাচনে জাল ভোট, কারচুপি ও গোলযোগের অভিযোগে দুপুর ১টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মহিপাল এলাকায় অবরোধ গড়ে তোলে। এতে বিপুুলসংখ্যক দূরপাল্লার যানবাহন আটকে পড়ে। অবরোধকারীরা চার-পাঁচটি যানবাহনের কাচ ভাঙচুর করে। প্রায় এক ঘণ্টা পর জেলা পুলিশ সুপার মো. ইমাম হোসেনের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পরশুরাম পৌরসভায় সেনা ও পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতেই বাঁশপদুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ৯টার দিকে দুই শতাধিক বহিরাগত যুবক কেন্দ্রের দখল নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় তারা সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার সাদ আহমেদকে মারধর ও বেশ কিছু ব্যালট পেপার ছিনতাই করে। বহিরাগতদের হামলায় কাউন্সিলর পদপ্রার্থী নূরুল ইসলাম, মাইনুদ্দিন ভূঁইয়া সেলিম ও সামছুল হুদা আহত হন। এসব ঘটনায় ভোটগ্রহণ প্রায় এক ঘণ্টা বন্ধ থাকে। বাইরে থেকে এসে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগে বিক্ষুব্ধ ভোটাররা মেজবাহ ও সবুজ নামে দুই যুবককে ধরে পিটুনি দেয়। এ সময় ভোটাররা বিক্ষোভ মিছিল করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে ঘণ্টাখানেক পর ভোটগ্রহণ শুরু হয়।
সোনাগাজীতে অজ্ঞাতপরিচয়ের সন্ত্রাসীরা সকাল থেকে বিভিন্ন গ্রামের ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করে বলে ভোটাররা অভিযোগ করেন। ফলে কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল কম। সেখানে ভোটকেন্দ্রে হামলার ঘটনায় পাঁচ-ছয়জন আহত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের আদালত এলাকায় প্রতিপক্ষের কর্মীদের হামলায় কাউন্সিলর পদপ্রার্থী সিরাজুল হক, কর্মী মাহফুজুল হক, ছাবের পাইলট হাই স্কুল কেন্দ্রে কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আবু তাহেরসহ কয়েকজন আহত হন। তাঁদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অনিয়মের অভিযোগে ছাবের পাইলট হাই স্কুল কেন্দ্রে ৬৭টি ভোট ও প্রি-ক্যাডেট ইনস্টিটিউট কেন্দ্রে ১৫৭টি ভোট বাতিল করা হয়।
সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) মো. ইয়াকুব আলী মিয়া কালের কণ্ঠকে জানান, দু-একটি ছোটখাটো ঘটনা ছাড়া সোনাগাজীতে মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে।
এদিকে ফেনী পৌর নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী মো. ফারুক হারুন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল আবসার নির্বাচন বর্জন করে পুনর্নির্বাচন দাবি করেছেন।
জেলা রিটার্নিং অফিসার আলতাফ হোসেন চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স ছিনতাইসহ নানা অনিয়মের কারণে দুটি কেন্দ্রের ভোট বাতিল করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বালিকা বিদ্যানিকেতন কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসারের আহত হওয়ার কথা তিনি শুনেছেন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
গতকাল সন্ধ্যায় এসএসকে রোডে জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বুধবার ফেনীতে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেওয়া হয়। এতে লিখিত বক্তব্য দেন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন মিস্টার। পরে হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল বের করা হয়।
আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী নিজাম হাজারী নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করেন।
লক্ষ্মীপুর : কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক তৌফিক মারুফ ও লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি মীর ফরহাদ হোসেন সুমন জানান, এ জেলায় ভোট নিয়ে যেসব অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে, তার জন্য প্রশাসনের নির্লিপ্ততা অনেকাংশে দায়ী। তবে লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মো. জহুরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যেসব অভিযোগ শুনেছি, সবই তদন্ত করে দেখেছি। এগুলোর কোনোটিই ঠিক নয়। দু-এক জায়গায় কিছু বিশৃঙ্খলার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীকে পাঠানো হলে সব ঠিক হয়ে যায়। এ ছাড়া রামগতির ঘটনা ঘটেছে কেন্দ্রের বাইরে, ভেতরে এর কোনো প্রভাব পড়েনি।’
কুয়াশাঢাকা সকালে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু পরিবেশে শুরু হয় লক্ষ্মীপুরের চার পৌরসভার ভোটগ্রহণ। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লক্ষ্মীপুর শহরসহ অন্য নির্বাচনী এলাকার বেশির ভাগ কেন্দ্রের ভেতরে শুরু হয় বিশৃঙ্খলা ও অনিয়ম। কেন্দ্রের বাইরে সেনাবাহিনীর টহল চলাকালেও বেশির ভাগ কেন্দ্রে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের নিষ্ক্রিয়তা ছিল চোখে পড়ার মতো। এ সুযোগে কেন্দ্রে কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী আবু তাহেরের দেয়ালঘড়ি প্রতীকের ব্যাজধারী কর্মীদের বেপরোয়া বিচরণ শুরু হয়। এসব কর্মী কোনো কোনো কেন্দ্রে ঢুকে প্রকাশ্যেই দেয়ালঘড়ির ব্যালটে সিল মারতে বাধ্য করে ভোটারদের। বেশ কিছু কেন্দ্রে এমন পরিস্থিতিতে প্রিসাইডিং অফিসার অসহায় হয়ে পড়েন। একজন প্রিসাইডিং অফিসার কালের কণ্ঠের কাছে অভিযোগ করেন, কেন্দ্রের ভেতরের পরিবেশ সুন্দর করার জন্য প্রশাসনের কাছে সহায়তা চেয়েও তিনি পাননি। রায়পুর ও রামগঞ্জেও কোনো কোনো কেন্দ্রে এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে।
সকাল সাড়ে ৯টায় লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের মাঠে ভোটারদের সারির ফাঁকে ফাঁকে দেখা যায়, দেয়ালঘড়ির ব্যাজধারী কর্মীরা ভোটারদের ধরে ধরে কানে কানে কথা বলছেন। এখানে ১২টি বুথের মধ্যে অধিকাংশই ভোটারশূন্য অবস্থায় দেখা যায়।
৯টা ৫০ মিনিটে লক্ষ্মীপুর পাবলিক স্কুল কেন্দ্রে দেখা যায় নারী ভোটারদের ঠাসাঠাসি অবস্থান। এর মধ্যেই দেয়ালঘড়ির ব্যাজধারী পুরুষ কর্মীরা বেপরোয়াভাবে ঘুরে ঘুরে প্রকাশ্যেই তাদের মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য প্রভাবিত করতে থাকে। এ সময় ওই কর্মীদের কয়েকজনকে প্রিসাইডিং অফিসারের কক্ষে অবস্থান করতে দেখা যায়।
দুপুর ১টায় দক্ষিণ বাঞ্ছানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ৭ নম্বর বুথে ভোট চলাকালেই দেয়ালঘড়ির ব্যাজধারী তিন যুবক সেখানে ঢুকে প্রকাশ্যেই প্রথমে এক মহিলা ভোটারের হাত থেকে মেয়র পদপ্রার্থীর ব্যালট ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় ওই ভোটার প্রতিবাদ জানালে এক যুবক তাঁকে গালাগাল করে। ওই যুবকরা মেয়র পদের ব্যালট ভোটারদের হাতে না দিয়ে তাদের দিয়ে দেওয়ার জন্য চিৎকার করে। এ সময় ওই বুথে উপস্থিত সংবাদকর্মীর দিকে চোখ পড়তেই যুবকদের একজন এগিয়ে এসে বিনয়ের ভঙ্গিতে বলে, ‘ভাই, মাফ করে দেবেন। অতীতে বিএনপির নির্যাতনে এলাকায় থাকতে পারিনি, তাই এবার জয় না পেলে রক্ষা নেই। এ জন্যই একটু চেষ্টা করছি।’ এ বিষয়ে কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. আলীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি কোনো কথা না বলে অন্য দিকে হেঁটে যান।
দুপুর ২টায় লক্ষ্মীপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভেতরে পুরো মাঠ ও বুথের বারান্দাজুড়ে দেখা যায় দেয়ালঘড়ির ব্যাজধারীদের ছড়াছড়ি। বুথে ঢুকে ভোটারদের হাত থেকে মেয়র পদের ব্যালট নিয়ে সিল মারতেও দেখা যায় ওই ব্যাজধারী যুবকদের।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ হয়ে একটি বুথের সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সাংবাদিকদের সামনেই প্রিসাইডিং অফিসার এ কে এম আব্দুর রাজ্জাকের কাছে অনুরোধ জানান। আব্দুর রাজ্জাক বিষয়টি দেখার জন্য তাঁর কক্ষে বিশ্রামরত লক্ষ্মীপুর সদর থানার এসআই প্রকাশ চন্দ্র সরকারকে বলেন। পুলিশ কর্মকর্তা প্রকাশ চন্দ্র এ সময় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘খোলামেলা জায়গার কারণে চেষ্টা করেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছি না।’
ভোটগ্রহণের শেষ পর্যায়ে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রামগতি পৌরসভার চরহাসান-হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে সেখানে গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চারজনকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন রুহুল আমিন, শাহীন, সেলিম ও আজাদ। এ ঘটনায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ পরস্পরকে দায়ী করে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে।
দুপুর ১টায় লক্ষ্মীপুর সদর পৌরসভার বিএনপি সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী হাসানুজ্জামান চৌধুরী মিন্টু স্থানীয় বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানির লক্ষ্মীপুর শহরের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেন। বিকেল ৩টার দিকে রামগঞ্জের মেয়র পদপ্রার্থী রোমান হোসেন পাটোয়ারীও নির্বাচন বয়কটের কথা জানান সাংবাদিকদের। বিকেল সাড়ে ৪টায় আরেক সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল খায়ের ভূইয়া এমপি অনিয়মসহ নানান অভিযোগে আজ লক্ষ্মীপুর জেলায় সকাল-দুপুর হরতাল ঘোষণা করেন।
আবু তাহের তাঁর বিরুদ্ধে করা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।
চাঁদপুর : চাঁদপুরের ছেঙ্গারচর পৌরসভায় দুই মেয়র পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সকাল ১১টায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। এতে এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়। আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী হাজি মো. বিল্লালের কর্মী-সমর্থকরা প্রায় সব ভোটকেন্দ্র দখল করে ভোটদান এবং বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের মারধরের অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী আমেনা বেগম। দুপুর পৌনে ১টার দিকে আমেনা বেগম মৌখিকভাবে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার মো. গোলাম কবির। সকাল সাড়ে ১১টায় ১ নম্বর ওয়ার্ডের ছেঙ্গারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর সমর্থকরা জোরপূর্বক কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট পেপারে অবৈধভাবে সিল দেওয়া শুরু করলে এ কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করেন রিটার্নিং অফিসার।
কচুয়া পৌরসভায় কাউন্সিলর পদপ্রার্থী জয়নাল আবদীনের সমর্থক কয়েক যুবক সকাল ১১টার দিকে ১ নম্বর ওয়ার্ডের বালিয়াতলী রেজি. প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জোরপূর্বক ঢুকে সিল দেওয়া শুরু করে। এ সময় পোলিং অফিসাররা যুবকদের কাছ থেকে ব্যালট বই কেড়ে নিতে সক্ষম হন। পরে যুবকদের সিল দেওয়া ১১টি ব্যালট পেপার বাতিল করা হয়েছে বলে জানান ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার। তবে যুবকদের কাউকে আটক করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সাতকানিয়া : বিএনপি সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী হাজি মোহাম্মদুর রহমানের অভিযোগ, পৌরসভার আলিয়া মাদ্রাসা ও ঢেমশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্র দখল করে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থীর সমর্থকরা প্রিসাইডিং অফিসারের স্বাক্ষরবিহীন ব্যালট পেপারে সিল দিয়ে বাক্সবন্দি করেছে। তিনি ওই দুই কেন্দ্রের পুনর্নির্বাচন দাবি করেন। ঢেমশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, সন্ত্রাসীরা ব্যালট পেপার লুটের চেষ্টা করেছিল, তবে তারা সফল হয়নি। এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, পশ্চিম ঢেমশা ও ছমদরপাড়া কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর সন্ত্রাসীরা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের লাঞ্ছিত করেছে।
রাঙ্গুনিয়া : দক্ষিণ নোয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গোলযোগ সৃষ্টির অভিযোগে আবু তাহের নামে একজন এবং জাকির হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স ছিনতাই হয়েছেÑএমন গুজব ছড়ানোর অভিযোগে কাউন্সিলর পদপ্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমকে আটক করেছে পুলিশ। এ ছাড়া এই দুই কেন্দ্র থেকে চার এজেন্টকে বহিষ্কার করা হয়।
মিরসরাই : মিরসরাই ও বারইয়ারহাট পৌরসভার কয়েকটি কেন্দ্রে বেশ কিছু জাল ভোট পড়ার খবর পাওয়া গেছে। বারইয়ারহাটের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার সময় নোমান নামের এক যুবককে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণ হয়েছে দাবি করা হলেও বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের কিছু চিহ্নিত ভোটারকে কেন্দ্রে যাওয়ার পথে বাধা দিয়েছে আওয়ামী লীগের লোকজন।
দাউদকান্দি : নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে আলী আশরাফ, আলাউদ্দিন ভুঁইয়া ও জাকির হোসেন নামের তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আশরাফকে ১৫ দিনের কারাদণ্ড এবং আলাউদ্দিনকে ও জাকিরকে সাত দিনের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ ছাড়া হাজীগঞ্জ, শাহরাস্তি, ফরিদগঞ্জ, মতলব, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, মাটিরাঙা, পটিয়া, রাউজান, সুনামগঞ্জ, জগন্নাথপুর, ছাতক, দিরাই, কানাইঘাট ও চন্দনাইশ পৌরসভায় শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে বলে আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।

শতাব্দীর ২য় দশকে দেশের অর্থনীতি যে পথে এগুবে by ড. শামসুল আলম

ত নির্বাচনে রূপকল্প ২০২১ জাতির সামনে পেশ করা ছিল আওয়ামী লীগের জন্য দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ঐতিহাসিক এক পদক্ষেপ। বাংলাদেশ ২০২১ সাল নাগাদ কোথায় পেঁৗছুবে সেখানে ছিল সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের কথা।

জাতি সমৃদ্ধি অর্জনে এগিয়ে যেতে চায়, বর্তমান আর্থ-সামাজিক অবস্থা থেকে পরিবর্তন চায় এর প্রমাণ হল, যখনই আওয়ামী লীগ ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখালো, মধ্যম আয়ের উন্নত দেশ হবার কথা বললো, বিগত নির্বাচনে সত্তরের নির্বাচনের পুনরাবৃতি ঘটিয়ে বিজয়ী হল। বলা হয়ে থাকে নবীন ভোটাররা বিপুল সংখ্যায় গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে। এ কথা সত্য যে, নবীন প্রজম্ম পরিবর্তনের জন্য উন্মুখ। তারা হতাশার কথা শুনতে চায় না, দ্বন্দ্ব দেখতে চায় না। আর এ জন্যই নেতিবাচক রাজনীতি করে কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষেই এখন টিকে থাকা কঠিন হবে। যা হোক, পরিবর্তনের কথায় আসি। আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের প্রধান উৎস অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। সম্পদের বৃদ্ধি সাধন। জাতিগতভাবে সম্পদের বৃদ্ধিকে পরিমাপ করা হয় জাতীয় উৎপাদনের মাধ্যমে, যাকে অর্থনীতির পরিভাষায় বলা হয় জিডিপি বা গ্রস ডমেষ্টিক প্রডাক্ট। প্রবৃদ্ধির হার ছয় শতাংশ বৃদ্ধি পেলে, মোটামুটি মাথাপিছু আয় বাড়ে চার শতাংশ। দারিদ্র্যের সংখ্যা কমে যায় প্রায় আড়াই শতাংশ। রূপকল্পের ভিশন অনুযায়ী মধ্যম উন্নত দেশ হতে হলে ২০১৫ সালের মধ্যে জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার হতে হবে অন্তত আট শতাংশ এবং তৎপরবর্তী কাল নাগাদ নয় শতাংশ এবং ২০২১ সালের পূর্বেই ১০ শতাংশ জাতীয় প্রবৃদ্ধি অর্জন।

একবিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকে সরকারের দু'টি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে। বাংলাদেশ মধ্যমেয়াদি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পথ ছেড়েছে ২০০২ সালে এবং সেটা ছিল আওয়ামী লীগ সরকার প্রণীত পঞ্চম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। ২০০২ জুলাই থেকে তিন বছর মেয়াদী দারিদ্র্য নিরসন কৌশলপত্র (পি,আর,এসপি) বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল। সংশোধিত দ্বিতীয় পি,আর,এসপি যা এখনো বাস্তবায়নাধীন আছে যার মেয়াদ শেষ হবে জুন ২০১১ তে। এই পি,আর,এসপি নামীয় কৌশলপত্রের মূল প্রেরণাদাতা হল বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ। খণ্ডিত এই পরিকল্পনা কৌশল ছেড়ে বর্তমান সরকার পুনরায় মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং জুন ২০১১ এর পূর্বেই এই পরিকল্পনা দলিল চূড়ান্ত রূপ পাবে। এই সরকারের এটি তাৎপর্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত এই জন্য যে, এতে ২০১৫ সালের মধ্যে আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা ও সেসব অর্জনের বাস্তবানুগ কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২১ সাল হবে বাংলাদেশে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী বছর এবং ভিশন ২০২১ এর আলোকে এই সরকার একটি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১১-২০২১)-এর রূপরেখাও প্রণয়ন করেছে যা অনুমোদনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এই প্রেক্ষিত পরিকল্পনার রূপরেখার ভিত্তিতেই ষষ্ঠ ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী দু'টো পরিকল্পনা প্রণীত হবে। এই জন্যই একবিংশ শতকের এই দ্বিতীয় দশক হবে বাংলাদেশের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা মাফিক লক্ষ্য অর্জনের অর্থনৈতিক সংগ্রাম। উলেস্নখযোগ্য হল যে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ কি অর্জন করতে চায় ২০২১ সাল নাগাদ, প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় তা স্পষ্টায়ন করা হয়েছে। ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রেক্ষিত পরিকল্পনার ভিত্তিতে লক্ষ্যসমূহ নির্ধারণ ও কৌশল চিহ্নিত হয়েছে। এই দশকের উন্নয়ন কৌশলের প্রধান চালিকাশক্তি হবে বেসরকারি খাত। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য হল উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন ও সর্বোচ্চ কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং এর মধ্যদিয়েই ২০১৫ সাল নাগাদ দারিদ্র্যের হার ২৯ শতাংশ কিংবা এর নীচে নামিয়ে আনা। ২০২১ সাল নাগাদ দারিদ্র্যের হার ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশ্ব মন্দার সময়েই মহাজোট সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পায় এবং ২০০৮-০৯ বছরে প্রদ্ধির হার ছিল ৫.৭ ভাগ এবং ২০০৯-১০ সালে ৬.০ শতাংশ। বিশ্ব মন্দার প্রেক্ষাপটে এ প্রবৃদ্ধির হার সন্তোষজনকই বলতে হবে। তবে বর্তমান আর্থিক বছরে প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলন করা হয়েছে ছয় দশমিক সাত শতাংশ। জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধির মাধ্যম হল কৃষি, শিল্প, ম্যানুফেকচারিং ও সেবামূলক কাজে উৎপাদক ও ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা শ্রেণীর অংশগ্রহণ। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারও সম্পদ ও পুঁজি সৃষ্টি করে থাকে। তবে সরকারের এ বিনিয়োগ মাত্র (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী) মোট জাতীয় আয়ের চার দশমিক এক শতাংশ। এ ছাড়াও সরকার বেতন-ভাতাদি খাতে ব্যয় করে থাকে, সে ব্যয়ও জাতীয় আয়ের প্রায় সাড়ে বার ভাগ। এটা বিনিয়োগ নয় বরং সরকারী ভোগ ব্যয়। মূল কথা হচ্ছে, জাতীয় সম্পদ সৃষ্টিতে আর যে ছিয়ানব্বই শতাংশ বিনিয়োগ সে সবটাই হচ্ছে বেসরকারী বা ব্যক্তি বিনিয়োগ। এখন অর্থনীতির ব্যাপক প্রবৃদ্ধি অর্জন চাইলে এই ছিয়ানব্বই ভাগ বিনিয়োগের দক্ষতা প্রসারতার উপরই বহুলাংশে নির্ভর করে জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার। মূল কথা হচ্ছে বা বাস্তবতা হচ্ছে, বেসরকারী খাতই আমাদের প্রবৃদ্ধি অর্জনের মূল বা প্রায় একমাত্র চালিকাশক্তি। এই বেসরকারী খাত বিনিয়োগে কতটা এগিয়ে যেতে পারে বা কত বেশী বিনিয়োগ করতে পারবে, তা নির্ভর করে যোগাযোগসহ অবকাঠামো খাত কতটা দক্ষ এবং সুযোগ দিতে পারে। শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠান চালানোর জন্য কতটা প্রয়োজনীয় জ্বালানি শক্তি পাওয়া যায় তার উপর। সড়ক জনপথ, কমিউনিকেশন বন্দরসহ শিল্প, বিদু্যৎ ও জ্বালানি খাতে অবকাঠামো গড়ে তোলাই হচ্ছে সরকারী বার্ষিক উন্নয়ন ব্যয়ের অন্যতম লক্ষ্য। সরকারী বিনিয়োগ এই কারণেই জাতীয় আয়ের অংশ হিসেবে কম হলেও গুরুত্বপূর্ণ। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে যা বরাদ্দ প্রাক্কলন করা হোক, তার পুরোটা বাস্তবায়ন হয় না। গত আর্থিক বছরে সর্বোচ্চ ব্যয়িত হয়েছিল একানব্বই শতাংশ। সরকারী বিনিয়োগ ব্যয়ের দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কাজ না করেই কোটি টাকা ব্যয়ের নজীরও রয়েছে অতীতে এদেশে। সড়ক পাকা করার কয়েক মাসের মধ্যেই দেখা যায় খোয়া উঠে যাচ্ছে। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও দেখা যায় আমাদের দেশের সর্বোচ্চ বিনিয়োগ হচ্ছে না। এখন তার প্রধান কারণ হচ্ছে প্রয়োজনীয় বিদু্যৎ বা জ্বালানির অপ্রতুলতাসহ অপর্যাপ্ত ও অদক্ষ অবকাঠামো সুবিধা। আমাদের জাতীয় আয়ের বিনিয়োগ উপযোগী সঞ্চয়ের পরিমাণ হচ্ছে বত্রিশ শতাংশ, যা টাকার অংকে প্রায় দুই লক্ষ বিশ হাজার নয়শ' তিরাশি কোটি টাকা। বিনিয়োগ হচ্ছে জাতীয় আয়ের চবি্বশ শতাংশ মাত্র যা টাকার অংকে প্রায় এক লক্ষ পঁয়ষট্টি হাজার সাতশ' সাঁইত্রিশ কোটি টাকা। বিনিয়োগযোগ্য অব্যবহূত পঞ্চান্ন হাজার দুইশ' ছিচলিস্নশ কোটি টাকা যা জাতীয় আয়ের ছয় শতাংশ এবং মার্কিন ডলারে সাত দশমিক ঊননব্বই বিলিয়ন টাকা। আমরা গড় যা বার্ষিক বিদেশী ঋণ সহায়তা পেয়ে থাকি তা আমাদের জাতীয় স্থূল আয়ের মাত্র এক দশমিক চুরানব্বই শতাংশ, টাকার অংকে যা প্রায় তের হাজার তিনশ' সাতানব্বই কোটি টাকা। এ অংক থেকে এটা স্পষ্ট যে আমরা আমাদের বিনিয়োগ সামর্থ্যের পুরোটা কাজে লাগাতে পারলে, বৈদেশিক ঋণ সহায়তার দ্বারস্থ হতে হয় না এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে দাতাদের খবরদারিত্ব মেনে নিতে হয় না। বর্তমানে জাতীয় আয়ের চার শতাংশ বিনিয়োগে গেলে জাতীয় আয় বৃদ্ধি প্রায় এক শতাংশ। জাতীয় স্থূল আয়ের (জিডিপি'র), বর্তমান ২৪ শতাংশ বিনিয়োগে আমাদের প্রকৃত বার্ষিক প্রবৃদ্ধির গড় হার এখন ছয় শতাংশ। প্রতিবছর আট শতাংশ প্রবৃদ্ধি চাইলে জাতীয় আয়ের বত্রিশ শতাংশই বিনিয়োজিত হতে হবে। আট শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলে বছরে দারিদ্র্যের সংখ্যা কমে যাবে সাড়ে তিন শতাংশ হারে। ২০১১ সালের অর্থনীতির খাতে মূল চ্যালেঞ্জ হলো জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার অন্তত সাত শতাংশে পেঁৗছানো, (সরকারী টার্গেট ছয় দশমিক সাত শতাংশ)। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জনগণকে যে স্বপ্নতাড়িত করেছে, তা অর্জনের প্রায় একমাত্র নিয়ামক হল এই প্রবৃদ্ধির হার শুধু ছয় শতাংশে ধরে রাখা নয়। ক্রমান্বয়ে তা সাত এবং পরবর্তীতে আট শতাংশে পেঁৗছানো। বেসরকারী বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়াতে হলে, দেশের মেধা-মননকে সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে চাইলে, জনগণের শক্তি বিকাশের সব ব্যবস্থা হাতে নিতে হবে। বাজার ব্যবস্থার উপর নির্ভর করেই ব্যক্তিখাতের সব অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালতি হয়ে থাকে। বাজার ব্যবস্থা হবে উন্মুক্ত, প্রতিযোগিতমূলক। বাজার সৃষ্টির প্রতিবন্ধকতা থাকলে (যেমন, যোগাযোগ ব্যবস্থার ত্রুটি থাকলে বাজার সৃষ্টি বাধাপ্রাপ্ত হয়), বাজরে প্রতিযোগিতা কোন কারণে ব্যাহত হলে, বাজারে পণ্যের গুণগত মান রক্ষিত না হলে, এসব বিষয়গুলো, বাজারের তত্ত্বাবধান হিসেবে সরকারকেই দেখতে হবে। সরাসরি সরকার ব্যবসায় নামবে না বা ব্যবসা করবে না। আজকের প্রেক্ষাপটে এটিই চরম বাস্তবতা। এই আলোকেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১ জানুয়ারী বাণিজ্য মেলায় উদ্বোধনী বক্তব্যে উলেস্নখ করেছেন 'ব্যবসায়ীরাই ব্যবসা করবে, সরকার ব্যবসা করবে না'। কথাগুলো তিনি সহজভাবেই গুছিয়ে বলেছেন, যার নীতিগত মূল্য অপরিসীম। সরকার ব্যবসা করলে কি লণ্ডভণ্ড অবস্থা হয়, আদমজি পাটকল ধ্বংস হয়ে যাওয়াই এর প্রকৃত উদাহরণ ( যেখানে আশি হাজার শ্রমিকের জন্য ছুটা শ্রমিক রাখা হত চলিস্নশ হাজার)। এই বক্তব্যের আলোকেই সরকারের সব লোকসানী শিল্প-কারখানা থেকে হাত গুটিয়ে নেয়া উচিত। মুনাফাভিত্তিক ব্যক্তিখাত সুযোগ পেলেই, গলাকাটা মুনাফা কিংবা রক্তচোষায় পরিণত হতে পারে। সে কারণেই বাজার তদারকী এবং যথাসময়ে প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ করে বাজারকে সঠিক ধারায় রাখার জন্য, প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারকেও যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে উঠতে হয়।

দেশের জন্য এবং দেশের বাইরের জন্য যাতে প্রয়োজনীয় পণ্য বাজার গড়ে উঠে এবং যে পণ্য বাজার সৃষ্টি হয়েছে সেগুলো বিনা বাধায় যাতে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে, সার্বিকভাবে এই বিষয়গুলো দেখাই সরকারের মৌলিক ও প্রধান দায়িত্ব। সুযোগ পেলে, প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর সুবিধা পেলে, বেসরকারী খাত অসাধ্য সাধন করতে পারে। এই বেসরকারী হাত দিয়েই আমরা খাদ্য উৎপাদনে স্বাধীনতার পরে এক কোটি টন থেকে এখন তিন কোটি পঞ্চাশ লক্ষ টনে পেঁৗছিয়েছি। তিনশ' মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি আয়কে ষোল দশমিক দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছি। ব্যক্তিখাতের ওষুধ রপ্তানির আয় এখন প্রায় এক বিলিয়ন ডলারে পেঁৗছেছে। ব্যক্তিখাতের রেমিটেন্স আয় এখন দশ দশমিক বাহাত্তর বিলিয়ন মার্কিন ডলার। উন্নত প্রযুক্তির জাহাজ রপ্তানির সামথর্্যও অর্জন করেছে ব্যক্তিখাত। কাজেই ব্যক্তিখাতই হবে আমাদের উন্নয়নের চালিকাশক্তি। সেই চালিকাশক্তিকে আরো গতি দিতে সরকারকে মানবসম্পদ উন্নয়নে ব্যাপক প্রয়াস নিতে হবে। সড়ক, জনপথ, বন্দরের মত ভৌত অবকাঠামো, বিদু্যৎ উৎপাদন ও জ্বালানি অনুসন্ধানের সর্বোচ্চ ব্যয়ের পরিকল্পনা এবং সেই সংগে বাজার চাহিদা উপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টিতে সরকারের জন্য এখন হবে শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ ব্যয়। আমাদের প্রতিবেশী চীনে প্রবৃদ্ধির হার বার থেকে তের শতাংশ, ভারতে নয়-দশ শতাংশের বিবেচনায় আমাদের প্রবৃদ্ধির হার এখনো অনেক পেছনে। একুশ শতকের দ্বিতীয় দশক বাংলাদেশের জন্য চিহ্নিত হতে হবে প্রবৃদ্ধির জন্য উলস্নম্ফনের দশক হিসেবে। উচ্চতর প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের যে স্বপ্ন স্বাধীনতার দল আওয়ামী লীগ জাগিয়েছে তা বাস্তবায়নে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।

তাহেরের গোপন বিচারের কিছু তথ্য মিলেছে

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল এম এ তাহেরের গোপন বিচারের কিছু তথ্য খুঁজে পেয়েছে সরকার। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে তাহেরের কয়েদি নম্বর, কোন ধারায় সাজা হয়েছিল, থানার নাম ও মামলা নম্বর, ট্রাইব্যুনালের নাম ও মামলা নম্বর, রায় ঘোষণা ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের তারিখ। তবে রায়ের অনুলিপি এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, তাহেরের গোপন বিচারের আগে যে মামলা হয়েছিল, সে-সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য যেহেতু বের হয়ে এসেছে, সেহেতু এসব তথ্যের সূত্র ধরেই এ ব্যাপারে অগ্রগতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে কিসের ওপর ভিত্তি করে তাহেরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল, তা বের হয়ে আসবে।
প্রসঙ্গত, হাইকোর্ট গত ২৩ আগস্ট এম এ তাহেরের গোপন বিচারের নথি তলব করেন। একই সঙ্গে তাহেরের গোপন বিচারের জন্য ১৯৭৬ সালের ১৬ নম্বর সামরিক ফরমানের (মার্শাল রেগুলেশন) আওতায় আদালত গঠন, এর আওতায় গোপন বিচার ও তাহেরের ফাঁসি কার্যকর করা কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে সরকারের প্রতি রুল জারি করা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কর্নেল তাহেরের গোপন বিচারের এসব তথ্যসংবলিত একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন শাখা থেকে আজ মঙ্গলবার ঢাকার জেলা ও দায়রা জজের কাছে পাঠানো হচ্ছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘কর্নেল তাহের বীর উত্তমকে মৃত্যুদণ্ড প্রদানকারী সামরিক ট্রাইব্যুনালের রায়ের আদেশ/ডকুমেন্টস অনুসন্ধান করে এ-সংক্রান্ত ফলাফল মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রাপ্ত প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট কিছু তথ্য না থাকায় চাহিত রায়ের আদেশ/ডকুমেন্টস সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি।’
মন্ত্রণালয় জেলা জজকে যেসব তথ্য পাঠিয়েছে, এর মধ্যে তাহেরের কয়েদি নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে ৩৬২১/এ। সে সময় তাহেরের নামে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়। মামলা নম্বর ছিল ০৮(৬)৭৬। বিচার করা হয়েছিল বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনালে। ট্রাইব্যুনালের মামলা নম্বর ছিল ০১/৭৬। ১২১-এ দণ্ডবিধির ১৯৭৫ সালের ১৩ এমএলআর ধারায় বিচার করা হয়েছিল। তাহেরের বিচারের রায় ঘোষণা করা হয়েছিল ১৯৭৬ সালের ১৭ জুলাই। মৃত্যদণ্ড কার্যকর করার তারিখ ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই।
রিট আবেদনকারীর পক্ষের আইনজীবী শাহ্দীন মালিক এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, কিছু তথ্য বের হয়ে এসেছে, এটি অবশ্যই ভালো দিক। তবে তিনি এ মামলার আইনজীবী বলে কোনো মন্তব্য করা সঠিক মনে করেন না। গোপন বিচারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে এ রিট করা হয়।
জানা গেছে, সম্প্রতি অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক ইফতেখার আহমেদ এক চিঠিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানান, তাঁদের কাছে কর্নেল তাহেরের মৃত্যদণ্ডের রায়ের তারিখ ও তাঁর গ্রামের নাম ছাড়া গোপন বিচারের বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য নেই।
সংশ্লিষ্ট আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, সশস্ত্র বিভাগ থেকে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে জানানো হয়, ‘স্পেশাল মার্শাল ল ট্রাইব্যুনাল রেগুলেশন, ১৯৭৬ অনুযায়ী গঠিত স্পেশাল মার্শাল ল’ ট্রাইব্যুনালে বিচারের মাধ্যমে তাহেরকে মৃত্যদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
ওই বিচারের অনেক আগেই ১৯৭২ সালের ৬ অক্টোবর তাহের অবসরে যান এবং ১৯৭৩ সালের ৬ জুলাই সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন। যে কারণে তাহেরের বিচার স্পেশাল মার্শাল ল ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়, কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে করা হয়নি। এসব কারণে বিচারের বিষয়ে কোনো নথিপত্র বা রায়ের আদেশ সেনা সদরে নেই।
সূত্র জানায়, ১৩ জানুয়ারি এ মামলার শুনানিতে তৎকালীন ঢাকার জেলা প্রশাসক ও সাবেক সচিব এম এম শওকত আলীকে আজ আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তাহেরের গোপন বিচারের জন্য গঠিত বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনালে বিচারক নিয়োগ প্রসঙ্গে তাঁকে বক্তব্য দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে ১২ জানুয়ারি শুনানিতে পঁচাত্তরের নভেম্বর থেকে ’৭৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় থাকা সেনাসদস্যদের নাম-ঠিকানা ও বর্তমান অবস্থান জানাতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আদালত ওই সময় বিচারের জন্য গঠিত বিশেষ সামরিক ট্রাইব্যুনালের বেসামরিক ও সামরিক চার সদস্যের অবস্থান জানতে চেয়েছেন। আজ এসব বিষয় জানাতে বলা হয়েছে।
তাহেরের গোপন বিচারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তাঁর ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আনোয়ার হোসেন, তাহেরের স্ত্রী লুৎফা তাহের ও সামরিক আদালতের বিচারে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আরেক ভাই প্রয়াত ফ্লাইট সার্জেন্ট আবু ইউসুফ খানের স্ত্রী ফাতেমা ইউসুফ হাইকোর্টে রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩ আগস্ট আদালত তাহেরের গোপন বিচার প্রশ্নে রুল জারি করেন।