Thursday, May 31, 2012

কক্সবাজার জেলা বিএনপির শহীদ জিয়ার ৩১ তম শাহাদৎ বার্ষিকী পালন

বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহান স্বাধীনতার ঘোষক, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩১ তম শাহাদৎ বার্ষিকী উপলক্ষ্যে

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি কক্সবাজার জেলা শাখা যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনব্যাপী কর্মসূচী পালন করে। ভোরে কালো পতাকা উত্তোলন, দলীয় পতাকা অর্ধনমিত করণ, কালো ব্যাজ ধারণ, সকাল ১০ টায় পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স এর মোটেল উপল-এ আলোচনা সভা ও বিশেষ দোয়া মাহফিল এবং দুপুর ১২ টায় মেজবানের আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না, সহ-সভাপতি সিরাজুল হক বিএ, সরওয়ার কামাল চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক আবু ছিদ্দিক ওসমানী, প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক আকতার চৌধুরী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম, সহ দপ্তর সম্পাদক ভাইস চেয়ারম্যান নাছিমা আক্তার বকুল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি অধ্যাপক আজিজুর রহমান, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এম. মোকতার আহমদ প্রমুখ।

কক্সবাজার শহরের ঐতিহ্যবাহি লালদিঘী দখল

এবার কক্সবাজার শহরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহি লালদিঘীর জমিও দখল হয়ে গেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অফিস নির্মাণের জন্য লালদিঘীর দক্ষিণ পাড়ে রাতারাতি গড়ে উঠছে পাকা দালান।

এদিকে সংক্ষুব্ধ কিছু যুবক ‘ভূমিদস্যু গ্রুপের কার্যালয়’ শীর্ষক একটি সাইনবোর্ড শহরবাসীর মধ্যে কৌতুকের জন্ম দিয়েছে। আজ (বুধবার) সকাল ১১টার দিকে কিছু সংখ্যক যুবক বাংলাদেশ আাওয়ামী লীগ, কক্সবাজার জেলা শাখা, জাসদ, যুব জাসদ, কক্সবাজার জেলা কার্যালয়, জাতীয় পার্টি ও অঙ্গ সংগঠনের জেলা কার্যালয়ের পাশাপাশি ‘ভূমিদস্যু গ্রুপের কার্যালয়’ শীর্ষক সাইনবোর্ডটি টাঙ্গানো হয়।
প্রায় আড়াই‘শ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহি কক্সবাজার শহরের প্রাণ কেন্দ্রে লালদিঘী অবস্থিত। শহরবাসীর পানির সমস্যার দিকে দৃষ্টি রেখেই লালদিঘী নির্মাণ করা হয়েছিণ। বিগত সাত বছর পূর্বে কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র সরওয়ার কামাল লালদিঘীর দক্ষিণ পাড় ভরাট করে পরিবেশ সম্মত গাছ এবং ফুল গাছ লাগাবার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু বর্তমান ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিকদের কাছে বিষয়টি ভাল ঠেকেনি। এতে করে জেলা আওয়ামী লীগ লালদিঘীর দক্ষিণ পাড়ের গাছ কেটে নির্মাণ কাজ শুরু করে দলীয় কার্যালয়। তাদের দেখা দেখি জাতীয় পার্টি, জাসদও লালদিঘীর পাড়ের জমি দখল করে তাদের দলীয় কার্যালয় নির্মাণ ক্জা শুরু করে। লালদিঘী দখলের প্রতিবাদে স্থানীয় সংক্ষুদ্ধ যুবকেরা আজ সকালে এই ব্যতিক্রমধর্মী সাইনবোর্ডটি টাঙ্গিয়ে দেয়।
লালদিঘীর দক্ষিণ পাড় দখল এবং এখানে অবৈধভাবে দলীয় কার্যালয় নির্মাণের ব্যাপারে কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র রাজবিহারী দাশের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কোন রাজনৈতিক দলকে লালদিঘী পাড়ের জমি দখলের অনুমতি দেওয়া হয়নি এবং জমি লিজ দেওয়া হয়নি। তারা পৌরসভাকে পাশ কাটিয়ে, এমনকি পৌরসভাকে অবজ্ঞা করে পৌরসভার মালিকানাধীন জমি দখল করে দলীয় কার্যালয় নির্মাণ করছে। তিনি আরো দাবী করেন পৌরসভার জমি দখল করার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে।
এব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোঃ জয়নুল বারী বলেছেন, ‘কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র লালদিঘীর দক্ষিণপাড়ের জমি দখল করে রাজনৈতিক দলের অফিস নির্মাণের বিষয়টি আমাকে মোবাইলে অবহিত করেছেন। আমি তাঁকে বলেছি লালদিঘীর সম্পত্তি আপনার সম্পত্তি। তার রক্ষার ব্যবস্থা আপনাকে করতে হবে। নিজেরা উচ্ছেদ করতে না পারলে পৌরকর্তৃপক্ষকে আমাদেরকে অফিসিয়ালি উচ্ছেদের চিঠি দিতে হবে। কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষ এখনো পর্যন্ত কোন চিঠি আমাদেরকে দেননি।’

তীব্র গণ-আন্দোলনের মুখে সরকারের পতন ঘটানো হবেঃ সালাহউদ্দিন আহমদ

“১০ জুনের মধ্যে তত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি মেনে না নিলে তীব্র গণ আন্দোলনের মুখে এ স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদ সরকারের পতন ঘটানো হবে।

কেননা আওয়ামীলীগের দু:শ্বাসনের বিরুদ্ধে এ দেশের সাধারণ মানুষ ফুঁসে উঠেছে। আজ দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন, অর্থনীতি বিপর্যস্থ। এভাবে দেশ চলতে পারেনা। শুধুমাত্র ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য বাকশালী এ সরকার বিরোধী রাজনীতি নিশ্চিহ্ন করার অংশ হিসেবে বিরোধী দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দদেরকে কারাগারে নিক্ষিপ্ত করছে। কিন্তু বাংলাদেশের কারাগারের ধারণ ক্ষমতার বেশী নেতা কর্মীকে কারাগারে নিক্ষিপ্ত করা হলেও বিএনপির রাজনীতি থেমে থাকবে না।”
গতকাল ৩০ মে কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সফর উপলক্ষ্যে কক্সবাজার জেলা বিএনপি আয়োজিত বিশেষ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদ একথা বলেন। তিনি আরো বলেন, যাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে এ সরকার ক্ষমতায় এসেছে তাদের সেসব বিদেশী প্রভুরাও আজ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আর তাই গণতন্ত্রকে বিকিয়ে দিয়ে দেশে হত্যা, খুন, গুম আর লাশের রাজনীতি শুরু করেছে আওয়ামীলীগ। তিনি আরো বলেন, এ সরকার যেভাবে দেশ চালাচ্ছে তাতে তাদের পরিণতি সাবেক স্বৈরশাসকদের চেয়ে ভয়াবহ হবে। এ সরকারের বিরুদ্ধে এমন আন্দোলন করতে হবে যাতে আওয়ামীলীগের শিকড পর্যন্ত উপড়ে যায়। কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কনফারেন্স হলে জেলা বিএনপি আয়োজিত এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন, জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরী। এসময় অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট শামিম আরা স্বপ্না, সহ-সভাপতি সিরাজুল হক বিএ, সরওয়ার কামাল চৌধুরী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম, সহ-দপ্তর সম্পাদক ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা আক্তার বকুল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি অধ্যাপক আজিজুল হক, জেলা মৎস্যজীবি দল সভাপতি হামিদ উদ্দিন ইউছুপ গুন্নু, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোখতার আহমদ, জেলা ছাত্রদল সভাপতি সৈয়দ আহমদ উজ্জল, কুতুবদিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন, টেকনাফ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো: আবদুল্লাহ, উখিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরওয়ার জাহান চৌধুরী, জেলা বিএনপির সদস্য শাহাব উদ্দিন চৌধুরী, সৌদি আরব কক্সবাজার প্রবাসী বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মহিউদ্দিন চৌধুরী,কুতুবদিয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম কুতুবি, রামু উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মো: আবদুশ শুক্কুর, মহিলাদল নেত্রী ফরিদা ইয়াসমিন, তাহেরা বেগম, ছাত্রদল নেতা আমীর আলী, রাশেদুল হক রাসেল, শাহ মোশারফ হোসেন, জামাল মাহমুদ, মোহাম্মদ আলী, আবদুস সালাম প্রমূখ। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আবু ছিদ্দিক ওসমানী ও প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক আকতার চৌধুরী। মূল অনুষ্ঠানস্থলে বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত নেতা-কর্মীদের অভ্যর্থনা জানান জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ বদরী।

কক্সবাজারে নোংরা পানির রমরমা বাণিজ্য

পর্যটন শহর কক্সবাজারে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের নামে নোংরা পানি বাজারজাত করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী।

শহরে বে, দারুচিনি ও হিমছড়ি নামের তিনটি পানীয় জলের (ড্রিংকিং ওয়াটার) কম্পানি অবৈধভাবে পানি বাজারজাতকরণে জড়িত বলে অভিযোগ ওঠেছে। এসব কম্পানি দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার শহরের পর্যটন জোনে শত শত হোটেল, রেস্টুরেন্ট, অফিস ও বাসা-বাড়িতে বিশুদ্ধ পানির নামে জারের নোংরা পানি সরবরাহ করে আসছে। এমনকি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে দুটি কারখানায় এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় ও কারখানা সিলগালা করা হলেও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা শহর জুড়ে অবৈধভাবে জারভর্তি পানি বাজারজাত করছে। ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকেও কম্পানিগুলোকে নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
সরেজমিন দেখা যায়, কক্সবাজারে হিমছড়ি ড্রিংকিং ওয়াটার, বে ড্রিংকিং ওয়াটার ও দারুচিনি ড্রিংকিং ওয়াটার নামের তিনটি কম্পানি জারভর্তি পানি বাজারজাত করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বে ও দারুচিনি ড্রিংকিং ওয়াটার কম্পানির বিএসটিআই লাইসেন্স নেই। তারা অবৈধভাবে বিএসটিআই এর মানচিহ্ন ব্যবহার করে কার্যক্রম চালাচ্ছে। অপরদিকে, হিমছড়ি ড্রিংকিং ওয়াটার কম্পানিটির বিএসটিআই লাইসেন্স থাকলেও তা নবায়ন করা হয়নি। এছাড়া অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন, পর্যাপ্ত খোলামেলা জায়গার অভাব ও সরাসরি মোটর পাম্প থেকে নলের মাধ্যমে জারে পানি ভর্তি করাসহ নানা অনিয়মের কারণে কম্পানিটি লাইসেন্সের শর্তও ভঙ্গ করেছে। শহরের কয়েকটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে জারের মধ্যে পানি ভর্তি করা হয়। জারে ভর্তি করার পর পিকআপ ভ্যান এ করে শহরের বিভিন্ন হোটেল- রেস্তোঁরা, অফিস ও বাসা-বাড়িতে বিশুদ্ধ পানির নামে নোংরা পানি সরবরাহ করা হয়ে থাকে। ইতোপূর্বে দুই দফা ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালিত হয়েছে পানির এসব কারখানায়।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খালেদ মাহমুদ ও নায়েরুজ্জামান অবৈধ পন্থায় নোংরা পানি বাজারজাত করার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়ে দুই দফা জরিমানা আদায় করে। সর্বশেষ গত ১৮ ফেব্রুয়ারি র‌্যাব-৭ এর সহযোগিতায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়ে কারখানা সিলগালা করে দেওয়া হয়। কিন্তু এর পরও বিএসটিআই এর অনুমোদন ছাড়া নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানির নামে নোংরা পানি বাজারজাত করে আসছে তারা।
এ বিষয়ে 'বে ড্রিংকিং ওয়াটার' এর ম্যানেজার সরওয়ার জানান, বিএসটিআই এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের পানি বাজারজাত করতে বলা হয়েছে। কিন্তু অবৈধভাবে পানি বাজারজাত করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এটি আমাদের অপরাধ নয়-আমরা যোগাযোগ করলেও বিএসটিআই কর্মকর্তারা লাইসেন্স দিচ্ছেন না।'
কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়া এলাকায় 'পাহাড়িকা' নামক একটি ভবনের নিচতলায় 'হিমছড়ি ড্রিংকিং ওয়াটার' এর নামে জারভর্তি করে বিশুদ্ধ পানির নামে নোংরা পানি বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। 'হিমছড়ি' ব্র্যান্ডের এ জারের পানি বাজারজাত করতে শহরের প্রধান সড়কের তারাবনিয়ারছড়া এলাকায় আল-মোস্তফা কর্পোরেশন নামের একটি দোকানও রয়েছে। বিশুদ্ধ পানির নামে সাধারণ পানি জারে ভর্তি করে বিক্রি করা হচ্ছে। 'পাহাড়িকা' ভবনের নিচতলায় জারে পানিভর্তির কারখানায় গিয়ে দেখা যায় সেখানে পানি বিশুদ্ধ করার যন্ত্রপাতি ও মান যাচাইয়ের জন্য কেমিস্ট এবং প্রয়োজনীয় কোনো ল্যাবরেটরি নেই। এমনকি কারখানার পরিবেশও নোংরা। রয়েছে নানা অব্যবস্থাপনা। সরাসরি মোটর পাম্প থেকে নলের সাহায্যে জারে পানি ভর্তি করা হয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে এ কারখানার বিরুদ্ধে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট ওই কম্পানির কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে।
এছাড়া কক্সবাজার শহরের আলিরজাঁহাল এলাকায় সাইফুল কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন 'গ্রিন প্যালেস' নামের ভবনের নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে কারখানা স্থাপন করে 'দারুচিনি ড্রিংকিং ওয়াটার' নামে পানি বাজারজাত করা হচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এর অনুমোদন না নিয়েই বিএসটিআই এর মানচিহ্ন ব্যবহার করা হয়। এ বিষয়ে মেসার্স মাজেদ এন্টারপ্রাইজ এর মালিক মাজেদ বলেন, 'আমরা দু বন্ধু মিলে সেবামূলক একটি ব্যবসায় নেমেছি। বিএসটিআই কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকবার তার কারখানা পরিদর্শন করেছে। তাদের নির্দেশনামতো কারখানা তৈরি করা হচ্ছে।' এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, গত তিনমাস আগে পানির কম্পানিগুলোকে নোটিশ ইস্যু করা হয়েছিল। কিন্তু এখনও তারা নোটিশের কোনো জবাব দেননি। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেন, 'শিগ্গিরই এসব পানির কারখানায় অভিযান পরিচালনা করা হবে।'

ফিশিং বোটের অবৈধ কারখানা উচ্ছেদ

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় গতকাল সোমবার বিকেলে অবৈধ ফিশিং বোট তৈরির একটি কারখানা উচ্ছেদ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এ সময় ওই কারখানা থেকে সংরক্ষিত বনের বিপুল পরিমাণ কাঠসহ দুটি বোট জব্দ করা হয়।

বন বিভাগের মহেশখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ বজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বিকেল তিনটার দিকে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ টি এম কাউসার হোসেনের নেতৃত্বে বনকর্মীরা অভিযান চালিয়ে কুতুবজোম ইউনিয়নের তাজিয়াকাটা এলাকায় সাব্বির ফিশিং ইন্ডাস্ট্রিজ নামের একটি অবৈধ ফিশিং বোট তৈরির কারখানা উচ্ছেদ করেন।
এ সময় ওই কারখানা থেকে সংরক্ষিত বনের বিপুল পরিমাণ কাঠসহ নির্মাণাধীন দুটি ফিশিং বোট জব্দ করেন।

মহেশখালীর সংরক্ষিত বনে ১০ হাজার অবৈধ বসতি

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় সংরক্ষিত বনের ভেতরে অন্তত ১০ হাজার অবৈধ বসতি স্থাপন করা হয়েছে। এসব বসতিতে প্রায় ৫০ হাজার লোক বসবাস করছে।

সংরক্ষিত বনে এভাবে বসতি গড়ায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এসব বসতি উচ্ছেদের ব্যাপারে বন বিভাগ কার্যকর কোনো ভূমিকা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
বন বিভাগের মহেশখালী রেঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৬০ সালের পর থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে সংরক্ষিত বনে অবৈধভাবে বসতি স্থাপন করে বসবাস করছে। বনকর্মীদের হাত করে স্থানীয় লোকজন সংরক্ষিত বনের পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নিয়ে উপকূলীয় মাতারবাড়ি, ধলঘাট, বাঁশখালী ও কুতুবদিয়ার লোকজন এসব পাহাড়ে বসতি স্থাপন করে অবৈধভাবে বসবাস করে আসছে।
গত রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার কালামারছড়া, হোয়ানক, বড় মহেশখালী, ছোট মহেশখালী ও শাপলাপুর এলাকায় লোকজন সংরক্ষিত বনে বসতি স্থাপন করে বসবাস করছে। আর কালারমারছড়া ইউনিয়নের চালিয়াতলি এলাকায় পাহাড় কেটে অবৈধভাবে বসতি স্থাপনের প্রস্তুতি চলছে।
চালিয়াতলি এলাকার বাসিন্দারা জানান, বনকর্মীদের হাত করে স্থানীয় লোকজন রাতে সংরক্ষিত বনের পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন করছে। এ নিয়ে বনকর্মীদের কাছে অভিযোগ করলেও কোনো কাজ হয় না। শাপলাপুর বিট কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, কয়েক যুগ ধরে এলাকার লোকজন সংরক্ষিত বনভূমিতে অবৈধভাবে বসতি স্থাপন করে বসবাস করে আসছে। তাদের সেখান থেকে সরে যেতে বলা হলেও তারা সরছে না। তবে বনের ভেতরে নতুন করে বসতি স্থাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বনকর্মীদের বাধার মুখে স্থানীয় লোকজন নতুন করে বসতি স্থাপন করতে পারছে না।
কালারমারছড়ার আঁধারঘোনা পূর্ব পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত নুরুল ইসলাম, মনির হোসেন ও রহিমা বেগম জানান, দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ি বনভূমিতে কোনো রকম বসতঘর নির্মাণ করে তাঁরা বসবাস করে আসছেন। অন্যত্র গিয়ে বসতবাড়ি নির্মাণ করার মতো সামর্থ্য তাঁদের নেই। একই কথা বললেন শাপলাপুর ইউনিয়নের জেএম ঘাট পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত নুরুল কাদের, ইকবাল হোসেন ও জয়নাল আবেদিন।
বন বিভাগের মহেশখালী রেঞ্জ কার্যালয় সূত্র জানায়, কালারমারছড়া, হোয়ানক, বড় মহেশখালী, ছোট মহেশখালী ও শাপলাপুর এলাকায় বন বিভাগের ১৮ হাজার ২৮৬ একর সংরক্ষিত বনভূমি রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার একর পাহাড়ি বনভূমি অবৈধ দখলে রয়েছে। উপকূলীয় বন বিভাগের মহেশখালীর রেঞ্জ কর্মকর্তা বজলুর রহমান বলেন, ১০ হাজার একর সংরক্ষিত পাহাড়ি বনভূমিতে অন্তত ১০ হাজার অবৈধ বসতি স্থাপন করে লোকজন বসবাস করছে। ইতিমধ্যে শাপলাপুর ও ছোট মহেশখালী এলাকায় সংরক্ষিত পাহাড়ের বনভূমিতে বসবাসরত অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করার জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে বেশ কয়েকবার আবেদন করেও কোনো কাজ হয়নি। তবে পাহাড় কাটা বন্ধ করার জন্য বনকর্মীরা চেষ্টা করছেন বলে তিনি দাবি করেন।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ টি এম কাউসার হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পাহাড় কেটে সংরক্ষিত বনভূমি দখল করে লোকজন অবৈধভাবে বসতি স্থাপন করায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।

দুই জেলায় তামাকচুল্লি বানাতে দেড় লাখ গাছ

কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার আট উপজেলায় এ বছর ৪৫ হাজার একর জমিতে তামাকের চাষ হয়েছে। প্রতি আড়াই একর বা এক হেক্টর জমির তামাকপাতা শুকাতে একটি চুল্লি লাগে।

সেই হিসাবে এই দুই জেলায় প্রায় ১৮ হাজার চুল্লি বানাতে হয়েছে। একটি চুল্লি তৈরিতে মাঝারি আকৃতির আটটি ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিগাছ লাগে। সেই হিসাবে এবার শুধু তামাকচুল্লি তৈরির জন্য এক লাখ ৪৪ হাজার গাছ কাটা পড়েছে।
প্রতিটি চুল্লিতে মৌসুমে গড়ে ৫০০ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। সেই হিসাবে ১৮ হাজার চুল্লিতে এবার ৯০ লাখ মণ কাঠ পুড়ছে। এই গাছ ও কাঠ সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও সামাজিক বনায়ন থেকে এসেছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় তামাক চাষি ও কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার সদর, রামু, চকরিয়া, পেকুয়া, উখিয়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা ও আলীকদম উপজেলায় প্রায় ৪৫ হাজার একর জমিতে তামাকের চাষ হয়েছে। বর্তমানে এ দুই জেলার ৭০ শতাংশ জমির তামাকপাতা তোলা হয়ে গেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর, কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, তামাকচুল্লি থেকে ছড়িয়ে পড়া বিষাক্ত ধোঁয়ায় এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যহানি যেমন বাড়ছে, তেমনি বায়ুদূষণও হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর বায়ুদূষণকারী এসব চুল্লির মালিকদের তালিকা তৈরির কাজ চালাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ দুই জেলায় ১৮ হাজার তামাকচুল্লি রয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, শিল্পকারখানা ও ইটভাটা স্থাপনের আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের যেমন ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক, তামাকচুল্লির ক্ষেত্রেও পরিবেশের ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক করা হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কক্সবাজারের উপপরিচালক নরেশচন্দ্র বারই জানান, তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করার জন্য কৃষি বিভাগ নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। তার পরও তামাক চাষ বন্ধ করা যাচ্ছে না। তামাক চাষের জমির প্রকৃত হিসাব কৃষি বিভাগে নেই।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল, গর্জনিয়া, রাজারকুল, কচ্ছপিয়া, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার আদর্শগ্রাম, সদর, বাইশারী, ঘুমধুমসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে চুল্লি তৈরি করে শুকানো হচ্ছে তামাকপাতা। অধিকাংশ চুল্লিতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বনের কাঠ। বেশির ভাগ চুল্লি বাঁকখালী নদীর দুই তীরে স্থাপন করা হয়েছে।
ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের অফিসেরচর গ্রামের একটি চুল্লিতে তামাকপাতা শুকাচ্ছিলেন মমতাজ আহমদ। চুল্লির বিষাক্ত ধোঁয়ায় কাশছিলেন তিনি। মমতাজ বলেন, ‘বেশি লাভের আশায় ফসলের মাঠে কয়েক বছর ধরে তামাকের চাষ করছি। তামাকের ধোঁয়ায় স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। তামাকের আবাদ আর করব না বলে ঠিক করেছি।’ একটি চুল্লি তৈরিতে কমপক্ষে আটটি গাছ লাগে বলে জানান এই তামাক চাষি।
কক্সবাজার (উত্তর) বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) এম খালেক খান জানান, কাঠ পুড়িয়েই চুল্লিতে তামাক উৎপাদন করা হচ্ছে। সংরক্ষিত বনাঞ্চল রক্ষার জন্য বনপ্রহরীদের রাত-দিন ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে।
নাইক্ষ্যংছড়ির আদর্শ গ্রামের তামাক চাষি আবুল মনজুর জানান, দশ ফুট দীর্ঘ, আট ফুট প্রস্থের মাটির ছোট ও উঁচু একটি ঘরকে তামাকচুল্লি বানানো হয়। ওই আকৃতির একেকটি চুল্লি বানাতে আটটি গাছ লাগে। সাধারণত মাঝারি আকৃতির ইউক্যালিপটাস, আকাশমণিগাছ চুল্লি বানানোর কাজে ব্যবহূত হয়। তবে অনেকে সংরক্ষিত বন থেকে গাছ কেটে এনেও চুল্লি বানায়।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা জানান, দুই জেলার প্রধান দুই নদী মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর দুই তীরে কম করে হলেও ৩০ হাজার একর জমিতে আগে ধানসহ মৌসুমি রবিশস্যের চাষ হতো। কয়েক বছর ধরে সেখানে তামাকের চাষ হচ্ছে।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন কাজল কান্তি বড়ুয়া জানান, তামাক চাষের কারণে বিভিন্ন এলাকায় মানুষের শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, শিশুদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাসহ নানা ধরনের রোগ দেখা দিচ্ছে। ইটভাটার মতো তামাকচুল্লি তৈরির আগে পরিবেশ ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক করা হলে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি বনও রক্ষা পাবে বলে মত দেন তিনি।