Wednesday, January 26, 2011

ফুঁসে উঠেছে মিসরীয়রা

প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের পতনের দাবিতে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে মিসরে। গতকাল মঙ্গলবার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের দাবিতে দেশটিতে বিক্ষোভ দিবস পালন করে সরকারবিরোধীরা। সরকারের নিষেধাজ্ঞা ও পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ এ কর্মসূচিতে অংশ নেয়।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সব বড় শহরেই মোবারকের পতনের দাবিতে বিক্ষোভ চলছিল। দেশটির ইতিহাসে এমন আন্দোলনের ঘটনা বিরল। বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্প্রতি তিউনিসিয়ায় সফল গণ-আন্দোলনের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই মিসরের এ বিক্ষোভ হয়েছে।
এ বছর ক্ষমতা গ্রহণের ৩০ বছর পূর্ণ করছেন মোবারক। এ দীর্ঘ শাসনামলে বিরোধীদের কঠোর হস্তে দমন করেছেন তিনি। দেশটির সবচেয়ে বড় বিরোধী দল মুসলিম ব্রাদারহুডকে দীর্ঘদিন ধরে নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছে। সেখানে সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো মিছিল-সমাবেশ করা নিষিদ্ধ। স্বল্প পরিসরেও সরকারবিরোধী কোনো বিক্ষোভ শুরু হলে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এমন পরিস্থিতিতেই ইন্টারনেটে প্রচারের মাধ্যমে মঙ্গলবারের বিক্ষোভ আয়োজন করে তরুণরা। এ দিনটিকে 'নির্যাতন, দারিদ্র্য, দুর্নীতি ও বেকারত্বের বিরুদ্ধে বিপ্লব দিবস' হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। তিউনিসিয়ার ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে মোবারকের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামার জন্য তারা দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানায়। বিষয়টি টের পেয়ে বিক্ষোভের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দেয় সরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হাবিব আল আদলি স্পষ্ট বলে দেন, নির্দেশ অমান্য করে রাস্তায় নামলে গ্রেপ্তারের মুখোমুখি হতে হবে বিক্ষোভকারীদের। গতকাল সকাল থেকে দেশটির সব বড় শহরে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কেবল রাজধানী কায়রোতেই মোতায়েন রয়েছে ৩০ হাজার পুলিশ।
তবে সব বাধা উপেক্ষা করে গতকাল দুপুরে মিসরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীরা সমবেত হয়। রাজধানী কায়রো ছাড়াও আলেকজান্দ্রিয়া, মানসুরা, ইসমাইলিয়া ও আল মাহদিয়া শহরে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। বার্তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, কায়রোতে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙেই বিক্ষোভকারীরা এগিয়ে যায়। পরে সুপ্রিম কোর্টের সামনে জড়ো হয়ে তারা 'তিউনিসিয়াই সমাধান', 'মোবারকের পতন চাই' ইত্যাদি স্লোগান দেয়।
সূত্র : এএফপি, রয়টার্স।

চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হবে ৪.৪ শতাংশ

বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা এখন আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে। তবে ইউরোপের দেশগুলোয় অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হওয়ায় ঝুঁকি রয়েই গেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গতকাল তাদের নতুন পূর্বাভাসে এ আশঙ্কাই ব্যক্ত করেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে সংস্থাটির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের এক বৈঠক শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। আইএমএফের পূর্বাভাস প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশগুলোর বর্তমান অবস্থা সন্তোষজনক। কিন্তু উন্নত দেশগুলোয় কর্মসংস্থানহীনতার উচ্চ হার এবং ইউরোপীয় অঞ্চলের অর্থ সংকটের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি এখনো আশঙ্কামুক্ত নয়।
প্রতিবেদনে আইএমএফ জানায়, চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হবে ৪.৪ শতাংশ। এর আগে সংস্থাটি গত বছরের অক্টোবরে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৪.২ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়া অর্থ সংস্কারের নতুন পদক্ষেপ চলতি বছরের দ্বিতীয় অর্ধে (জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত) অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি আরো বাড়িয়ে দেবে বলে আইএমএফ মনে করছে।
প্রতিবেদনে আইএমএফ পূর্বাভাস দেয়, ২০১১ ও ১২ সালে উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি ২.৫ শতাংশ করে হবে। এতে চলতি বছর ও আগামী বছরে যুক্তরাষ্ট্রে যথাক্রমে ৩ ও ২.৭ শতাংশ, জাপানে ১.৬ ও ১.৮ শতাংশ, ইউরো অঞ্চলে ১.৫ ও ১.৭ শতাংশ, জার্মানিতে ২.২ ও ২ শতাংশ, ইতালিতে ১ ও ১.৩ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়।
অন্যদিকে আইএমএফের নতুন পূর্বাভাস অনুযায়ী, বর্ধনশীল ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি উভয় বছরেই ৬.৫ শতাংশ করে হবে। ২০১১ ও ২০১২ উভয় বছরেই এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি হবে যথাক্রমে ৮.৪ শতাংশ করে। আর এ দুই বছরে লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ৪.৩ শতাংশ ও ৪.১ শতাংশ হারে এবং মধ্য ও পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ৩.৬ শতাংশ ও ৪ শতাংশ হারে হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়।
পূর্বাভাস প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০১০ ও '১২ সালে প্রবৃদ্ধির দিক থেকে উন্নয়নশীল এশিয়ার দেশ ভারত ও চীনের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি হবে। এর মধ্যে ভারতের প্রবৃদ্ধি যতাক্রমে ৮.৪ ও ৮ শতাংশ হারে এবং চীনের প্রবৃদ্ধি ৯.৬ ও ৯.৫ শতাংশ হারে হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়।
এ ছাড়া প্রতিবেদনে আইএমএফ জানায়, চলতি বছরেও বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ধারা অব্যাহত থাকবে। এ সময় আবহাওয়াজনিত কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্রব্যের সরবরাহ কমে যাওয়ার ফলে মূল্যজনিত 'ধাক্কা' খেতে পারে বিশ্ব অর্থনীতি। আর তেলের মূল্য ব্যারেলপ্রতি ৯০ ডলারের কাছাকাছি হতে পারে।
এর আগে গত বছরে অক্টোবরে আইএমএফ চলতি বছর ব্যারেলপ্রতি তেলের মূল্য ৭৯ ডলার করে হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল। এএফপি।

ফাঁসির আসামিকে মুক্তি বিচারক ও জেল সুপারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার

পিল অনুমতির আবেদন (লিভ টু আপিল) চলাকালে ফাঁসির দুই আসামিকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট বিচারক ও কারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানানো হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার আপিল বিভাগে এ আবেদনের অনুমতিও নেওয়া হয়েছে।

সাতক্ষীরার চাঞ্চল্যকর শিশু অর্ণব দাস হত্যা মামলার বাদী নিশান চন্দ্র দাস গতকাল হলফনামা সম্পাদন করে সাতক্ষীরার জেলা ও দায়রা জজ মো. আবুল হোসেন খান এবং সাতক্ষীরার জেল সুপার নুরুন্নবী ভুইয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানাতে অনুমতি নেন। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. একরামুল হক টুটুল ও খোন্দকার দিলারুজ্জমান বাদীর পক্ষে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ বিচারপতি এস কে সিনহার কাছে অনুমতি চান। আদালত অনুমতি দেন।
মামলা আপিল বিভাগে থাকা অবস্থায় অর্ণব হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছেড়ে দেওয়ায় বাদী এ আবেদন করতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। আসামিরা হচ্ছে খলিলুর রহমান ও ফারুক হোসেন। গত ৯ জানুয়ারি সাতক্ষীরার দায়রা জজ মো. আবুল হোসেন খান আসামিদের মুক্তির আদেশ দেন। আর কারা কর্তৃপক্ষ গত ১১ জানুয়ারি দুজনকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়।
জানা গেছে, গত বছর ২৪ আগস্ট হাইকোর্ট আসামিদের আপিল শুনানি শেষে এ মামলার পাঁচ আসামিকে বেকসুর খালাস দেন। এরপর হাইকোর্টের রায় স্থগিত করতে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন জানালে আপিল বিভাগ গত বছর ৩১ আগস্ট হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেন। পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল অনুমতির আবেদন (লিভ টু আপিল) করা হয়।
হাইকোর্টের রায় স্থগিত করার বিষয়টি সাতক্ষীরার দায়রা জজ আদালত ও সাতক্ষীরার জেলা কারাগারকে জানানোর পরও কারাগারে থাকা ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মুক্তি দেওয়া হয়। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু কালের কণ্ঠকে বলেন, হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগ স্থগিত করার পর ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মুক্তি দেওয়া যায় না। আর রায় স্থগিতের বিষয়টি জেনেও আসামিদের মুক্তির নির্দেশ আদালত অবমাননার শামিল।
উল্লেখ্য, ২০০০ সালের ১৮ জুন সকালে সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার সাঁইহাটি গ্রামের বিমল দাসের ছেলে সাঁইহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র অর্ণব দাসকে বিদ্যালয় থেকে পাখি দেওয়ার নাম করে ডেকে নেয় খলিষানি গ্রামের আবু দাউদের ছেলে মুকুল গাজী। ২১ জুন সকালে সাঁইহাটি গ্রামের আবদুর রউফ মোড়লের (মেম্বার) বাড়ির পাশে বাঁশবাগানের নালার মধ্যে অর্ণবের লাশ পাওয়া যায়। এক হাত কাটা, দু চোখ উপড়ানো ছিল অর্ণবের।

সরকারের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড

মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের জোরালো প্রতিশ্রুতি থাকলেও দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও দায়মুক্তির সংস্কৃতি-দুটোই অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ)।

সংস্থাটির গত সোমবার প্রকাশিত বিশ্ব প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে আরো বলা হয়, এ দেশে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও অন্য বাহিনীগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। সুধী সমাজ ও গণমাধ্যমের ওপর আঘাত এসেছে। নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন পোশাক শিল্প শ্রমিকরা। আর এসবের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দায়মুক্তি পেয়েছেন।
প্রতিবেদনে সিডও সনদের ২ নম্বর অনুচ্ছেদে বাংলাদেশের অনুস্বাক্ষর না করার এবং সমকামিতার অপরাধে এ দেশে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থাকার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া সীমান্তে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে এ দেশের জনগণের হতাহত হওয়া এবং দুর্নীতির মামলা তদন্তে বৈষম্য ইত্যাদি বিষয় স্থান পেয়েছে প্রতিবেদনে।
এতে বলা হয়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সালে মানবাধিকার রক্ষার ব্যাপারে দেওয়া জোরালো প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতন যেমন চলছে, তেমনি এর জন্য দায়ী আইনশৃৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়মুক্তি পেয়েছেন। এ ছাড়া সরকার গণমাধ্যম ও বিরোধী দলের স্বাধীন মত প্রকাশের ওপরও আঘাত করেছে। মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকরা ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্যাতনের লক্ষ্য। অনেক ক্ষেত্রে তাদের গ্রেপ্তার করে কারাগারেও পাঠানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরপরই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড মেনে না নেওয়ার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু ২০১০ সালে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়নি। র‌্যাব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্য বাহিনীগুলোর কোনো ভুল করার কথাও অস্বীকার করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্য কর্মকর্তারা। র‌্যাব স্বীকার করেছে, ২০০৪ সালে বাহিনীটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে গোলাগুলির সময় ‘ক্রসফায়ারে’ কমপক্ষে ৬২২ জন নিহত হয়েছে। র‌্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, অপরাধীদের সহযোগীরা র‌্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার পর আÍরক্ষার্থে তাঁরাও গুলি ছোড়েন এবং ‘ক্রসফায়ারে’ পড়ে নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ ও র‌্যাব ওই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডতত্ত্ব প্রয়োগ করে কয়েক শ মানুষকে হত্যা করেছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, র‌্যাবের হেফাজতে থাকা অবস্থায়ই অনেককে হত্যা করা হয়েছে। ২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন র‌্যাবের বিরুদ্ধে সব হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন কমিশন গঠন করার সুপারিশ করলেও এখনো একজনেরও বিচার হয়নি। এদিকে ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে ক্রসফায়ারে লুৎফর ও খায়রুল খালাসী নিহত হওয়ার ঘটনায় র‌্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে নাÑতা স্বপ্রণোদিত হয়ে হাইকোর্ট সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন। তবে এ ব্যাপারে আর কোনো আদেশ জারি হওয়ার আগেই ওই বিচারকদের বেঞ্চ পুনর্গঠন করা হয়। এর পর ওই মামলার আর শুনানি হয়নি।
প্রতিবেদনে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলা হয়েছে, মাহমুদুর রহমান আদালতে অভিযোগ করেন, পুলিশ ও র‌্যাব কর্মকর্তারা তাঁকে নির্যাতন করেছেন। এ ছাড়া গত বছরের ২২ মার্চ দৃক আয়োজিত ‘ক্রসফায়ার’ শীর্ষক প্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়ার কথাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ২০১০ সালে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে আন্দোলনরত পোশাক শ্রমিকদের ওপর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের হামলার পাশাপাশি ওই আন্দোলনকে উসকে দেওয়ার অভিযোগে বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির (বিসিডাব্লিউএস) পরিচালকদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালানোর বিষয় প্রতিবেদনে স্থান পেয়েছে।
প্রতিবেদনে দায়মুক্তি শিরোনামে এক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগ সত্ত্বেও ২০১০ সালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়মুক্তি পেয়েছেন।
এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধের বিচার বিষয়ে বলা হয়েছে, ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন করে এ বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা এখনো আন্তর্জাতিক মানের হয়নি। গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর জামায়াতে ইসলামীর পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করার পর থেকে বিচারের অপেক্ষায় রাখা হয়েছে।
সিডও সনদের ২ নম্বর অনুচ্ছেদ বাংলাদেশ এখনো অনুস্বাক্ষর করেনি উল্লেখ করে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে আইন ও নীতি প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
সীমান্তে হত্যা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ২০০০ সাল থেকে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কমপক্ষে ৯৩০ জন বাংলাদেশি বিএসএফের হাতে নিহত হয়েছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সীমান্তে হত্যা বন্ধে সংযম প্রদর্শনের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তা দেখা যাচ্ছে না।
দুর্নীতির মামলায় বৈষম্য অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় সংকল্পের কথা বললেও রাজনৈতিক হয়রানি বিবেচনায় তাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে শত শত দুর্নীতির মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে।
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ ছাড়া নতুন করে কোনো রোহিঙ্গাকে শরণার্থী হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে না।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিদেশি রাষ্ট্রগুলো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও দায়মুক্তির ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পোশাক শিল্পের শীর্ষ শ্রমিক নেতাদের গ্রেপ্তারের পর গত বছরের আগস্ট মাসে মার্কিন কংগ্রেসের পক্ষ থেকে পোশাক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশের ওপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি করে পোশাক শ্রমিকদের মুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়া মার্কিন কংগ্রেস শ্রমিকদের অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশকে জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স (জিএসপি) সুবিধা না দেওয়ারও আহ্বান জানায়।

মস্কোর বিমানবন্দরে হামলা চালায় নারী আত্মঘাতী

স্কোর দোমোদেদোভো বিমানবন্দরে এক নারী আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই নারী মুসলিম উত্তর ককেসাস অঞ্চলের জঙ্গি। নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা গতকাল মঙ্গলবার এ কথা জানিয়েছে।

ওই হামলার জন্য বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থাকে দায়ী করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ। দোমোদেদোভো বিমানবন্দরের অভ্যর্থনাকক্ষে গত সোমবার বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ৩৫ জন নিহত ও দেড় শতাধিক লোক আহত হয়। হতাহতদের মধ্যে বিদেশি নাগরিকও আছে। বিস্ফোরণের পরপরই গোয়েন্দা সদস্যরা জানান, এক ব্যক্তির মাথা বিচ্ছিন্ন পাওয়া গেছে। এই ব্যক্ত্যিই আত্মঘাতী হামলাকারী হতে পারেন। তাঁকে দেখে আরব বংশোদ্ভূত মনে হচ্ছে।
একজন রুশ নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, এক নারী ব্যাগ খোলার সঙ্গে সঙ্গে ওই বিস্ফোরণ ঘটে। ওই নারীই সম্ভবত আত্মঘাতী হামলাকারী। তাঁর সঙ্গে একজন পুরুষও ছিলেন। ওই পুরুষ তাঁর পাশে দাঁড়ানো ছিলেন। বিস্ফোরণে পুরুষটির মাথা উড়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, হামলার বৈশিষ্ট্য ও আলামত দেখে মনে হচ্ছে, উত্তর ককেশাস অঞ্চলের জঙ্গিরাই এ হামলা চালিয়েছে।
রাশিয়ার কোমারসান্ত পত্রিকার খবরে বলা হয়, এই হামলা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। উত্তর ককেশাসের নারী আত্মঘাতী একটি জঙ্গি দল মস্কোতে ঢুকেছে। এর এক সদস্য সোমবার আত্মঘাতী হামলা চালান। এই দলের আরেক সদস্য গত ৩১ ডিসেম্বর মস্কোর একটি স্পোর্টস ক্লাবে হামলা চালান।
পত্রিকায় আরও বলা হয়, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে ওই আত্মঘাতী হামলাকারী একাই মস্কোতে ঢুকেছেন। বরং তিনি একটি বড় আত্মঘাতী দলের অংশ হতে পারেন। এতে বলা হয়, গত ৩১ ডিসেম্বর আত্মঘাতী হামলা চালানো নারীর স্বামী জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেওয়ার দায়ে এখন কারাগারে।
উত্তর ককেশাসের বিদ্রোহীরা রাশিয়ায় চলতি বছরের পার্লামেন্ট নির্বাচন এবং আগামী বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে গুরুত্বপূর্ণ শহর ও বাণিজ্যকেন্দ্রে হামলার হুমকি দিচ্ছে। হামলার জন্য দোমোদেদোভো বিমানবন্দরকে বেছে নেওয়ায় মনে হচ্ছে, হামলাকারীরা রাশিয়া সীমান্তের বাইরেও উদ্বেগ সৃষ্টি করতে চাইছে।
আত্মঘাতী হামলার জন্য বিমানবন্দরের দুর্বল নিরাপত্তাব্যবস্থাকে দায়ী করে প্রেসিডেন্ট মেদভেদেভ এক টেলিভিশন ভাষণে বলেন, ‘এটি অবশ্যই সন্ত্রাসী এবং অনেক পরিকল্পিত হামলা। সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য ছিল যত বেশি সম্ভব ক্ষয়ক্ষতি করা। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থায় ঘাটতি ছিল। এ জন্যই হামলাকারী নিরাপত্তাব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে বিমানবন্দরের অভ্যর্থনাকক্ষে ঢুকতে পেরেছে।’
মেদভাদেভ বলেন, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং ওই সময় সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের অবশ্যই কৈফিয়ত দিতে হবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা আরইএ নোভোস্তি জানায়, এক সপ্তাহ আগেই কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা হয়েছিল, এক মাসের মধ্যে মস্কোর কোনো একটি বিমানবন্দরে হামলা হতে পারে। এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি ও এপি।