Thursday, December 09, 2010

বিশ্বকাঁপানো উইকিলিকসঃ স্বচ্ছতা ও কৌশলের কাছে দাপটের পরাজয়

স্বাধীন সংবাদমাধ্যম উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে বিশ্বের পরাশক্তি রাষ্ট্রগুলো, বিশেষত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চলমান লড়াইটি পৌরাণিক ডেভিড ও গলিয়াথের লড়াইয়ের চেহারা পেয়েছে। সেই গল্পে খুদে ডেভিড পরাক্রমশালী গলিয়াথকে কৌশলে পরাজিত করেছিল। একইভাবে উইকিলিকসের জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ যেন সাম্রাজ্যের গোমর ফাঁস করতে নেমেছেন এবং অনেকাংশে সফলও হয়েছেন। তাঁর ফাঁস করে দেওয়া প্রায় আড়াই লাখ গোপন মার্কিন কূটনৈতিক নথি বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রসহ বহু রাষ্ট্রের পরিচালকদের ভাবমূর্তি ভয়ানকভাবে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার করার পরও উইকিলিকস তার কাজ অব্যাহত রাখায় প্রমাণিত হয়, কৌশলের কাছে শক্তির দাপট অকার্যকর হচ্ছে।

কার্যত, উইকিলিকস এবং তার প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে আইনি অভিযোগ আনা কঠিন। তিনি মার্কিন নাগরিক নন বিধায় যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক গোপনীয়তা ভঙ্গের অভিযোগে তাঁর বিচার করা যাবে না। অন্যদিকে, তিনি যে তথ্যভান্ডার ফাঁস করেছেন, সেই একই তথ্যভান্ডার প্রকাশ করে চলেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমস, জার্মানির ডার স্পিগেল, ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ান, স্পেনের এল পাইস-এর মতো সংবাদমাধ্যম। উইকিলিকসকে গোপনীয়তা ভঙ্গের অভিযোগ করতে গেলে এসব নামকরা গণমাধ্যমকেও অভিযুক্ত করতে হয়। সেটা সম্ভব না হওয়ার কারণেই সম্ভবত তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা করানো হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, যিনি সেই অভিযোগ করেছেন, তিনি একসময় সিআইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
উইকিলিকসের প্রকাশিত তথ্যকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো দেশের সরকার মিথ্যা দাবি করেনি। যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি ছাড়া গণতন্ত্র কার্যকর হয় না, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের সত্য প্রকাশ তাতেই ভূমিকা রেখেছে। জনগণের জানার অধিকার মান্য করলে, অ্যাসাঞ্জকে খলনায়ক নয় বরং বীরই মনে হবে। যে যুক্তরাষ্ট্র মতপ্রকাশের অধিকারের কথা বলে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সমালোচনা করে, চীনের গুগল সার্চ ইঞ্জিন বন্ধ করে দেওয়ার নিন্দা করে, সেই যুক্তরাষ্ট্রই এখন উইকিলিকসের ওয়েবসাইট, তহবিলসহ যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ করে নগ্নভাবে স্ববিরোধিতা করছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের স্পিকার এবং কানাডাসহ পশ্চিমা কয়েকটি দেশের আইনপ্রণেতারা প্রকাশ্যে যেভাবে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন, তাতে তাঁদের বিষয়ে উইকিলিকসের ফাঁস করা তথ্যগুলোই আবার প্রমাণিত হয়।
উইকি-কাণ্ডের আসল দিক হলো তথ্যবিপ্লবের এ যুগে নতুন তথ্যযুদ্ধের প্রথম বৈশ্বিক মহড়া। এত দিন রাষ্ট্র ও করপোরেশন ব্যক্তির গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন করে তথ্য চুরি করেছে, এখন ব্যক্তি নিজেই ক্ষমতাবান সরকার ও করপোরেশনের মুখোশ খুলে দিচ্ছে। কেবল তা-ই নয়, পাল্টা সাংবাদিকতার এই আক্রমণের মুখে পরাশক্তির সব ক্ষমতা ও নিরাপত্তা ভঙ্গুর বলেও দেখা গেছে। বলা যায়, এ ঘটনা করপোরেট গণমাধ্যম ও সরকারি ব্যর্থতার মুখে নাগরিক নজরদারি ও মুক্ত গণমাধ্যমের প্রয়োজনকেই আরও ওপরে তুলে ধরেছে। সে কারণেই বিশ্বব্যাপী অজস্র মানুষ জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।
আমরা চাই, উইকিলিকস চালু থাকুক, আন্তর্জাতিক কূটনীতি এবং রাষ্ট্রগুলোর আচরণ আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহির মধ্য দিয়ে চলুক। পাশাপাশি, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগের তদন্ত যথাযথ আইনি প্রক্রিয়াতেই হোক; তিনি যেন কোনোভাবেই প্রতিহিংসার শিকার না হন। কেননা, তাতে জনগণের জানার অধিকারই আহত হবে।

জাতীয় শিক্ষানীতিঃ বাস্তবায়নেই সবাইকে মনোযোগী হতে হবে

ঙ্গলবার জাতীয় সংসদে জাতীয় শিক্ষানীতি অনুমোদন লাভ করেছে, এটি নিঃসন্দেহে আনন্দের সংবাদ। তবে এই আনন্দ পূর্ণ মাত্রা পেত, যদি প্রধান বিরোধী দল জাতীয় সংসদে উপস্থিত থেকে কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা রাখত। কোনো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে সংকীর্ণ রাজনীতি বা দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা সমীচীন নয়। জাতীয় শিক্ষানীতি এমন একটি বিষয়, যাতে গোটা জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকা উচিত। এবার জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি খসড়া প্রতিবেদনটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়ে মতামত চেয়েছে। একই সঙ্গে তারা বিভিন্ন পেশাজীবী গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনাও করেছে। সেই বিবেচনায় এটিকে চাপিয়ে দেওয়া শিক্ষানীতি বলা যাবে না।
এবারের জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণীত হয়েছে ১৯৭৪ সালের কুদরাত-এ-খুদা কমিশনের আলোকে। সেই সময়ে এই কমিশনের প্রতিবেদনটি সর্বমহলে প্রশংসিত হলেও পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে তা বাস্তবায়িত হতে পারেনি। এর আগে ও পরে যতগুলো শিক্ষানীতি বা প্রতিবেদন হয়েছে, প্রতিটির বিষয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ তথা ছাত্রসমাজের প্রবল আপত্তি ছিল। সামরিক সরকারের আমলে প্রণীত শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে একাধিকবার আন্দোলনও হয়েছে। দেশের শিক্ষানীতি নিয়ে রাজনৈতিক বিভাজন ও বৈরিতা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
এবারের শিক্ষানীতিতে প্রাথমিক শিক্ষার স্তর অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত উন্নীত করা হয়েছে, মাদ্রাসাশিক্ষাকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে এবং তথ্যপ্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষার ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এগুলো মৌলিক ও প্রয়োজনীয় পরিবর্তন বলে আমরা মনে করি। শিক্ষানীতির ওপর বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী সংসদে যে শিক্ষাকে দক্ষ জনশক্তি গড়ার প্রধান হাতিয়ার করা কিংবা অর্থনৈতিক উন্নতির সোপান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, তার সঙ্গে কেউ দ্বিমত করবেন না। তিনি বলেছেন, এমন ব্যবস্থা করা উচিত যাতে ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষানীতিও বদলে না যায়। আমরাও মনে করি, কেবল শিক্ষানীতি নয়, সব জাতীয় নীতির ব্যাপারে জাতীয় মতৈক্য থাকা প্রয়োজন। রাজনৈতিক দল নিজস্ব নীতি ও কর্মসূচি নিয়ে জনগণের কাছে যাবে, জনগণ যেই দলের নীতি ও কর্মসূচি সমর্থন করবে, তারা ক্ষমতায় যাবে। কিন্তু জাতীয় শিক্ষানীতির মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ন্যূনতম মতৈক্য থাকা প্রয়োজন। সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে এসব নীতি বদলাতে পারে না। তবে যেকোনো নীতিতে সময়ের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সংযোজন বা বিয়োজন হতে পারে। তাই বলে নীতিটি আমূল বদলে দেওয়ার মাধ্যমে কৃতিত্ব জাহির করার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। কোনো কোনো মহল থেকে এবারের শিক্ষানীতির বিরোধিতা করার চেষ্টা চলছে। এদের উদ্দেশ্য যে সৎ নয়, তা নিশ্চিত করে বলা যায়।
আশা করব, জাতীয় সংসদে শিক্ষানীতিটি অনুমোদনের পর এ নিয়ে আর কোনো বিতর্ক কাম্য নয়। আরেকটি জরুরি কথা হলো, প্রণীত শিক্ষানীতি যত ভালোই হোক না কেন, ঠিকমতো বাস্তবায়িত না হলে দেশবাসী তার সুফল পাবে না। আমাদের দেশে অনেক ভালো নীতি আছে, কিন্তু এর বাস্তবায়ন নেই। বিশেষ করে শিক্ষার মানের ক্রমাবনতি ঠেকাতে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে একাগ্রচিত্তে কাজ করতে হবে। কেবল শিক্ষার হার বাড়লেই হবে না, দক্ষ ও যোগ্য জনশক্তি গড়তে শিক্ষার মানও বাড়াতে হবে।

পুরাকীর্তি ধ্বংসের আশ্চর্য কীর্তিঃ মহাস্থানগড় বাঁচান, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন

বানরের গলায় মুক্তার হার যেমন, বাংলাদেশের প্রত্নস্থানগুলোও যেন তেমন। প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনের সঙ্গে ‘অসভ্য’ আচরণ করছে বগুড়ার জেলা প্রশাসন। মহাস্থান মাজার নামে পরিচিত হজরত শাহ সুলতান মাহী সওয়ারের (রা.) মাজারসংলগ্ন স্থানে বড় একটি চারতলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। যে ভূমির ওপর এটি করা হচ্ছে, তা ‘প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান’ হিসেবে পরিচিত। অর্থাৎ প্রত্নতাত্ত্বিক ভান্ডারটিকেও জেনেশুনে নষ্ট করা হচ্ছে। কীভাবে সুস্থ মস্তিষ্কে এ রকম একটি স্থানে ভবন নির্মাণের অভিলাষ কারও জাগতে পারে, তা সবার জন্য বিস্ময়ের হলেও এ ধরনের কাজ অহরহই করা হচ্ছে। কাজটি আইনত দণ্ডনীয় এবং এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সেই দণ্ডই উপযুক্ত প্রাপ্য হওয়া উচিত।

ইতিহাসের পুন্ড্রনগরই আজকের মহাস্থানগড়। বাংলা অঞ্চলের প্রাচীনতম সভ্যতার কেন্দ্র ছিল এখানেই। পুন্ড্রনগরকে উপমহাদেশই কেবল নয়, বিশ্বের মধ্যেও গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থান হিসেবে মান্য করা হয়। কিন্তু বিশ্ববরেণ্য হলেও বগুড়ার জেলা প্রশাসন, স্থানীয় ক্ষমতাবান চক্র ও মহাস্থান মাজার কমিটি সময়ে সময়ে এর যথেষ্ট ক্ষতিসাধন করেছে। ১৯৯৫ সালে ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে সরাসরি প্রত্নকীর্তিকে চাপা দিয়ে, নষ্ট করে মাজার সম্প্রসারণ করা হয়। অনেক প্রতিবাদ সত্ত্বেও বগুড়ার তৎকালীন জেলা প্রশাসন অপকর্মটি চালিয়ে যায়। এই ক্ষতি এতই অপূরণীয় যে, যা গেল তা চিরকালের জন্যই গেল। এখন আবার সেই একই জায়গায় শুরু হয়েছে নতুন ভবনের আগ্রাসন। মাজারের পাশের উঁচু টিলাটি সম্পূর্ণভাবে ভবনের নিচে ঢেকে দেওয়ার পরিকল্পনাও বাস্তবায়িত হচ্ছে। বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এই অপকর্মে সরাসরি জড়িত বলে গত সোমবারের প্রথম আলোয় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁদের নেতৃত্বেই মাজার উন্নয়ন প্রকল্প কমিটি কাজটি চালাচ্ছে। ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা এবং সরকারি দলের নেতার এ রকম ভূমিকা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অবিলম্বে কাজ বন্ধ করার চিঠি দেওয়ার পরও তাঁরা বিরত হননি। অভিযোগ রয়েছে, ভবন নির্মাণের এ কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা আর্থিক সুবিধার জন্যই এমন মরিয়া হয়ে উঠেছেন। আশার কথা যে, উচ্চ আদালত স্থানটির ক্ষতিসাধন অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। সম্প্রতি ঢাকার লালবাগ কেল্লার জন্য ক্ষতিকর নির্মাণকাজের বিষয়ে উচ্চ আদালত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। কিন্তু সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কী কারণে ঘটনার কয়েক দিন পরও পুরাকীর্তির ধ্বংস বন্ধ করেনি, তার ব্যাখ্যাও প্রয়োজন।
পুরো পুন্ড্রনগর এলাকার প্রতিটি ইঞ্চি মাটির নিচেই প্রাচীন নিদর্শন লুকিয়ে আছে। অথচ সেসব মাটির ওপর ঘরবাড়ি উঠছে, চাষাবাদ হচ্ছে। এমনকি প্রাচীন স্থাপনা থেকে ইট-পাথর খুলে নিয়ে ওই এলাকার অজস্র বাড়িঘরও বানানো হয়েছে। সহস্র বছর পুরোনো শিলা ব্যবহূত হয়েছে পুকুরে কাপড় ধোয়ার কাজে। কেবল মহাস্থানগড়ই নয়, সারা দেশের প্রত্নকীর্তিগুলো এ রকমভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে। বগুড়ার বিষয়েও সরকারের উচ্চ মহলের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। একই সঙ্গে এ রকম অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে একদিকে আইনের বরখেলাপ হবে, অন্যদিকে ভবিষ্যতে এ রকম অপকর্ম করতে তারা আরও উৎসাহিত হবে।

জলদস্যুর কবলে বাংলাদেশের জাহাজঃ নাবিকদের মুক্ত করার উদ্যোগ নিন

সোমালীয় জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশের জাহাজটি উদ্ধার ও জিম্মি নাবিকদের মুক্ত করার কাজটি কঠিন হয়ে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। জলদস্যুরা জাহাজটিকে ইতিমধ্যে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি যেখানে গিয়ে ঠেকেছে, তাতে আমরা উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশ সময় রোববার দুপুরে এমভি জাহান মণি নামের জাহাজটি যখন জলদস্যুদের কবলে পড়ে, তখন সেটি ছিল ভারতের জলসীমায়। তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হলে জাহাজটিকে জলদস্যুরা সহজে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নিয়ে যেতে পারত না। বলা যায়, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ক্ষেত্রে দ্রুত সাড়া দিতে ব্যর্থ হয়েছে অথবা বিষয়টি তারা গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বাংলাদেশের এই জাহাজের ২৬ জন নাবিককে জলদস্যুরা জিম্মি করেছে। তাঁরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। জাহাজ উদ্ধার এবং এই নাবিকদের নিরাপদ মুক্তি নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। সার্বিক বিবেচনায় মনে হচ্ছে, এ ধরনের ঘটনায় যত তৎপর ভূমিকা পালন করা উচিত ছিল, সরকার দুঃখজনকভাবে তা দেখাতে পারেনি। জাহাজটি যখন ভারতীয় জলসীমায় জলদস্যুদের কবলে পড়ে, তখন জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠান ও জলদস্যুতা তদারকির সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ভারতীয় উপকূলরক্ষীদের সহায়তা চাওয়া হয়েছিল। ভারতের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে সরকারি পর্যায়ে কেন সহায়তা চাওয়া হলো না? বাংলাদেশ সরকার যদি তাৎক্ষণিকভাবে ভারত সরকারকে অনুরোধ জানাত, তাহলে নিশ্চয়ই তারা উপেক্ষা করতে পারত না। একটি দেশের জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী তার সরকারের অনুমতি ছাড়া অন্য কোনো দেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আবেদনে সাড়া দিয়ে অভিযানে নেমে পড়বে, এ প্রত্যাশা করা কঠিন। ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে, জলদস্যুরা জাহাজটিকে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।
এ ধরনের জলদস্যুতা নতুন ঘটনা নয় এবং বিষয়টি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। বাংলাদেশের জাহাজটি যখন জলদস্যুদের কবলে পড়ল, তখনই আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের তৎপর হওয়া প্রয়োজন ছিল। সেটা করা গেলে পরিস্থিতি হয়তো এতটা জটিল হয়ে পড়ত না। বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরাপদে বাংলাদেশের ২৬ জন নাবিক ও জাহাজটিকে উদ্ধারের প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। সরকারের তরফে অবশ্য বলা হয়েছে যে জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধারে সব ধরনের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সরকার যোগাযোগ রক্ষা করছে বলেও সরকারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
আমরা মনে করি, সব ধরনের পথ খোলা রেখেই সরকারের অগ্রসর হওয়া উচিত। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও প্রতিষ্ঠানের সাহায্য চাওয়া এবং তাদের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগের চেষ্টার পাশাপাশি জলদস্যু মোকাবিলা নিয়ে কাজ করে, এমন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টাও করে যেতে হবে। কারণ মূল লক্ষ্য হচ্ছে ২৬ জন জিম্মি নাবিককে নিরাপদে মুক্ত করা। আমরা আশা করব, সরকার আর বিলম্ব না করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে।

বিশ্বে দুর্নীতির মাত্রা বেড়েই চলছে: ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, বিশ্বের দুর্নীতির মাত্রা বেড়েই চলেছে। বর্তমান বিশ্বে দুর্নীতির মাত্রা বেড়েই চলছে। বর্তমান বিশ্ব যতটা দুর্নীতিগ্রস্ত, তিন বছর আগেও নাকি এমনটা ছিল না। টিআইর গ্লোবাল করাপশন ব্যারোমিটার-২০১০ শীর্ষক এক জরিপে এ কথা উঠে এসেছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের পরিচালিত ওই জরিপে ৫৬ শতাংশ মানুষ বলেছে, তাদের দেশ আগের চেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। সংস্থাটির জরিপ অনুযায়ী, আফগানিস্তান, নাইজেরিয়া, ইরাক ও ভারত বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ।

এ ছাড়া এ তালিকায় চীন, রাশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশই রয়েছে। অন্যদিকে বিবিসির এক জরিপে বলা হয়েছে, এ মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত সমস্যার নাম দুর্নীতি। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন বলেছে, গত মাসে তারা অন্য বিষয়ের সঙ্গে দুর্নীতি-সংক্রান্ত আলোচনা করেছে।
টিআইর জরিপে বলা হয়েছে, মানুষ নিজ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকেই সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করে। এ ছাড়া এই সমস্যা মোকাবিলায় তাদের সরকারগুলো অকার্যকর বলে ৫০ শতাংশ সাক্ষাৎকারদাতা জরিপে মত দিয়েছে।
টিআইর জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রতি চারজনের মধ্যে একজন বলেছে, গত বছর তারা ঘুষ দিয়েছে। এ ঘুষ গ্রহীতাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল পুলিশ।
জরিপ অনুযায়ী, প্রায় ২৯ শতাংশ ঘুষ পুলিশ গ্রহণ করেছে, ২০ শতাংশ ঘুষ গ্রহণ করেছে নিবন্ধক ও অনুমতি প্রদান কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা এবং ১৪ শতাংশ ঘুষ গ্রহণ করেছে বিচার বিভাগের সদস্যরা।
জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অনেক আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলো সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ২০০৪ সালে ৭১ শতাংশ সাক্ষাৎকারদাতা রাজনৈতিক দলগুলো সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান বলে মত দিলেও, এ বছর মত দিয়েছেন ৮০ শতাংশ সাক্ষাৎকারদাতা।
সাক্ষাৎকারদাতাদের মতে, দিন দিন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও চরম দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। ২০০৪ সালে ২৮ শতাংশ সাক্ষাৎকারদাতা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে মনে করত। তবে ২০১০ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩ শতাংশ। বিবিসি।

নকল ওষুধ

বার পাওয়া গেল নকল ওষুধের কারখানা। নামিদামি ওষুধ কম্পানির জনপ্রিয় ওষুধগুলো নকল করে বাজারজাত করছে একটি চক্র। মানুষের জীবন রক্ষা করে যে ওষুধ, সেই ওষুধকেই মানুষের প্রাণঘাতী করে তোলা হচ্ছে। নকল ওষুধের কারখানা এর আগেও বহুবার আবিষ্কার হয়েছে। নকল প্যারাসিটামলসহ অন্যান্য ওষুধ সেবনে শিশুমৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে; কিন্তু বন্ধ হয়নি নকল ওষুধ তৈরির প্রবণতা। মানুষ হিসেবে কতটা নিচে নামলে মানুষের জীবন নিয়ে এভাবে ব্যবসা করা যায়? নকল ও ভেজাল ওষুধের কারবারিরা ধরা পড়ছে, আবিষ্কার হচ্ছে নতুন নতুন ভেজাল ওষুধের কারখানা, কিন্তু ভেজাল ওষুধ তৈরি তো বন্ধ হচ্ছে না।

বন্ধ হচ্ছে না এই প্রতারকচক্রের অবৈধ ব্যবসা। ফলে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ মানুষের জীবনহানির কারণ হচ্ছে। ওষুধ সেবন করে সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে মানুষ আরো বেশি করে অসুস্থ হচ্ছে।
বাংলাদেশে নকল ও ভেজাল ওষুধ কী পরিমাণে তৈরি হয়, তার কোনো নির্দিষ্ট তথ্য সম্ভবত নেই। নকল ও ভেজাল ওষুধ তৈরি ও বাজারজাত করার কাজে অনেক ছোট কম্পানিও জড়িত আছে_এমন তথ্য পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হয়েছে। নানা ধরনের সিরাপ, ট্যাবলেট, ক্যাপসুল নকল হচ্ছে। এর পাশাপাশি আছে নিম্নমানের ওষুধ তৈরি। এর আগে অনেক ট্যাবলেট-ক্যাপসুল পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সেগুলোর ভেতরে সাধারণ আটা-ময়দা ছাড়া কিছুই নেই। সিরাপের মধ্যে আছে শুধু রং। ওষুধ কোনটা ভেজাল বা নকল, সেটা অনেক সময় খুচরা ওষুধ বিক্রেতারাও ধরতে পারেন না। ফলে সরল বিশ্বাসে ওষুধ কিনে প্রতারিত হন ক্রেতা। যিনি সেই ওষুধ সেবন করেন, তাঁর শরীরে দেখা দেয় উল্টো প্রতিক্রিয়া। ১৯৯২ সালে ভেজাল প্যারাসিটামল খেয়ে তিন শতাধিক শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। গত বছর ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ সেবনে শিশুমৃত্যুর ঘটনায় প্রশাসন নড়েচড়ে বসলেও আবার সেই ভেজালচক্র সক্রিয়। এবার ঢাকার ওষুধের বাজার হিসেবে খ্যাত মিটফোর্ড মার্কেটের পাশে বাবুবাজার এলাকায় ভেজাল ওষুধের কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে। ওই কারখানায় অনেক নামি কম্পানির ওষুধ যেমন নকল করা হয়, তেমনি অনেক অখ্যাত কম্পানির ওষুধ নামি ওষুধ কম্পানির লেবেল লাগিয়ে বাজারজাত করা হয়। ভেজাল ওষুধের কাঁচামালও পাওয়া গেছে সেখানে। অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে র‌্যাব তিনজনকে গ্রেপ্তারও করেছে।
দেশে একসময় ভেজালবিরোধী অভিযান চালানো হয়েছিল। সরকারের সে অভিযান বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ভেজাল এখন সবখানেই ছড়িয়ে গেছে। এ থেকে যেন কোনোভাবেই মুক্তি পাওয়া যাচ্ছে না। অন্তত জীবন রক্ষাকারী ওষুধে যেন ভেজাল না হয়, সেদিকে সবার দৃষ্টি দেওয়া উচিত। জীবন রক্ষাকারী ওষুধ যেন জীবননাশের কারণ না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

জাতীয় শিক্ষানীতি

কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশনের আলোকে যুগের উপযোগী করে প্রণীত শিক্ষানীতি দীর্ঘ আলোচনা-পর্যালোচনার পর জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়েছে। এর মাধ্যমে আধুনিক একটি শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হলো। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯ নিয়ে সরকারের সদিচ্ছার কথা অনেক আগে থেকেই আলোচিত হয়ে আসছিল। ২০১৪ সালের মধ্যে দেশকে নিরক্ষরমুক্ত করার উচ্চাশা নিয়ে সরকারের পদযাত্রা সূচিত হলেও প্রায় দুই বছর লেগে যায় এই শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে তা জাতীয় সংসদে পাস করাতে। ফলে দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে যে আকাশচুম্বী বিভাজন ছিল, তা কিছুটা হলেও দূর হবে বলে আশা করা যায়।

বিশেষ করে এত দিন মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে যে নেতিবাচক প্রচারণা চলে আসছিল, পরিবর্তিত শিক্ষানীতির মাধ্যমে সে বিতর্কের অবসান হবে বলে আশা করা যায়। এত দিন পর্যন্ত মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার যে প্রবণতা ছিল, তা দূর হবে। কারণ নতুন শিক্ষানীতিতে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষাস্তরকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বিস্তৃত করা, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা অনুষ্ঠানের মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়_এই শিক্ষানীতিকে সামনে রেখেই চালু হয়েছে। ইতিমধ্যে তা প্রায় সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। মাধ্যমিক শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত সম্প্রসারণ করার যে পরিকল্পনা রয়েছে, তাকেও অনেকেই উচ্চাশা বলে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, দেশে কয়েক বছরে শিক্ষা খাতে যে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে, তাতে এই আশঙ্কা হয়তো কেটে যেতে পারে।
নতুন শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের জন্য সরকার আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছে। এর মধ্যে প্রধান দিক হচ্ছে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ। কারণ নতুন নীতি কার্যকর করতে হলে প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ অপরিহার্যর্। মাধ্যমিক শিক্ষা যেহেতু দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বিস্তৃত হবে, তাই সেখানে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়েও পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হবে। নতুন শিক্ষানীতি কার্যকর করতে গেলে অবকাঠামোগত কিছু পরিবর্তন করতে হবে। সেদিকেও যে সরকার নজর দিয়েছে, তা বোঝা যায়।
সরকার শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার আগেই বিনা মূল্যে বই চলে যাবে শিক্ষার্থীদের হাতে। আর এ কাজ শুরু হবে ১৫ ডিসেম্বর থেকে। সেশনজট সৃষ্টি হতে পারে_এমন কোনো সুযোগ যাতে তৈরি না হয়, সেদিকেও সরকার যথেষ্ট সজাগ রয়েছে, যা প্রমাণিত হয় ২০১১ সালে অনুষ্ঠেয় এসএসসি পরীক্ষার রুটিনকে অনড় রাখার মাধ্যমে। বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলার সঙ্গে মিল রেখে পরীক্ষার রুটিন প্রণয়ন করা হয়েছে। যাতে খেলার কারণে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশ নেওয়া বিঘি্নত না হয়। শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার ব্যাপারেও সরকারের নতুন চিন্তার কথা জানানো হয়েছে জাতীয় সংসদে। বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া বন্ধ করার ব্যাপারে অধিক হারে টিফিনের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বিনা মূল্যে বই দেওয়ার ইচ্ছা আছে সরকারের।
তবে পাঠ্য বই মুদ্রণ ও শিক্ষার্থীদের হাতে ঘোষিত সময়ের মধ্যে পেঁৗছানোর ক্ষেত্রে নানা ঘাপলার কথা জানা যাচ্ছে_এ ব্যাপারে সরকারেরর ত্বরিত দৃষ্টি দেওয়া দরকার।
আন্তরিকতা এবং সততার মাধ্যমে গৃহীত শিক্ষানীতি শিক্ষাব্যবস্থায় সুপরিবর্তন আনবে এবং দেশের উন্নয়নে তা সুনির্দিষ্ট প্রভাব ফেলবে_এমন প্রত্যাশা সবার।

নরসিংদী ট্রেন দুর্ঘটনাঃ পাঁচ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল শুরু

রসিংদীতে দুর্ঘটনার প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল আবার শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেন উদ্ধারের কাজও চলছে। উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছে সেনাবাহিনীর একটি দল। এছাড়া ঢাকা ও আখাউড়া থেকে আসা দুটি উদ্ধারকারী ট্রেন কাজ করছে। বুধবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন) মেজর এ এম এম মতিউর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অন্য রেলপথটি দিয়ে রাত পৌনে ১০টার দিকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনটি নরসিংদী স্টেশন অতিক্রম করেছে।
তিনি জানান, একটি লাশ উদ্ধারের কাজ চলছে। আহত এক থেকে দেড়শ' যাত্রীকে স্থানীয়রা উদ্ধার করেছে। সন্ধ্যায় নরসিংদী রেলস্টেশনে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ পর্যন্ত সাতজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আরো অনেক যাত্রী হতাহত হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সন্ধ্যা পৌনে ৫টার দিকে আন্তনগর ট্রেন চট্টলা এক্সপ্রেস ও মহানগর গোধূলীর মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়।

উদ্ধার কাজে নিযুক্ত ৪৭ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেডের কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ আহমেদ আলী বলেন, ইতোমধ্যে আহত ২৬ জনকে স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ১২ জনকে পাঠানো হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। নরসিংদী জেলা প্রশাসক অমৃত বাড়ৈ জানান, আহতদের মধ্যে ২৩ জনকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে নরসিংদী সদর হাপাতালের জরুরি বিভাগের কর্মচারী কামাল জানান, হাসপাতালে এ পর্যন্ত আহত ১৭ জনকে আনা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনকে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা হচ্ছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিনিধি জানান, দুর্ঘটনায় আহত চট্টলা এক্সপ্রেসের চালক রফিক উদ্দিনসহ (৫০) ও গোধূলীর সহকারী চালক আরিফুর রহমান রাসেলসহ (৩৫) ছয়জনকে সেখানে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে রাসেলকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

আহত বাকিরা হলেন- যাত্রী মাহবুব (২২), মাঈনুদ্দিন (৩০), হুমায়ুন (২৪) ও রেলওয়েল নিরাপত্তাকর্মী মো. জসিম (২৫)। রফিক উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রেলপথটির সংকেত পেয়েই তিনি ট্রেন চালিয়ে আসেন।বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিনিধি জানান, ঘটনাস্থলে আরো কয়েকটি লাশ দেখা গেছে। হতাহতের সংখ্যা অনেক হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নরসিংদীর পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট আক্কাস উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, সংঘর্ষে একটি ট্রেন আরেকটি ট্রেনের ওপর ওঠে গেছে। এখন পর্যন্ত সাতজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে চারটি লাশ নরসিংদী সদর হাসপাতাল এবং তিনটি ঘটনাস্থলে রয়েছে।

তিনি জানান, উদ্ধার কাজ চলছে। এই রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক টি এ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এখন পর্যন্ত নিহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। আমারা ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। পরে বিস্তারিত জানানো হবে।"তিনি জানান, চট্টলা এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসছিলো। অন্যদিকে মহানগর গোধূলী ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাচ্ছিলো।

নরসিংদী রেলওয়ের কর্মকর্তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। বিক্ষুব্ধ জনতা স্টেশন ঘেরাও করে রেখেছে। বহু হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে।নরসিংদীর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মনিরুজ্জামান জানান, উদ্ধার কাজ পুরোদমে শুরু হলে আরো কিছু লাশ পাওয়া যেতে পারে।নরসিংদী রেলস্টেশনের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চট্টগ্রাম থেকে আসা চট্টলা এক্সপ্রেস নরসিংদী স্টেশনে না দাঁড়িয়ে সরাসরি প্রধান রেলপথ হয়ে ঢাকা চলে যাওয়ার কথা ছিলো।অন্যদিকে মহানগর গোধূলী এই ট্রেনটিকে পাশ দেওয়ার জন্য স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিলো। কিন্তু সংকেত ভুল করায় একই লাইনে চট্টলা ট্রেনটি চলে আসে। এতে দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।

রেলের উপসহকারী পরিচালক দিলীপ কুমার বোসের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি উদ্ধারকারী দল সরঞ্জাম নিয়ে ঘটনাস্থলে রওনা হয়েছে।

দিলীপ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ঘণ্টা খানেকের মধ্যে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবো।"যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের জানান, উদ্ধারকারী একটি ট্রেন সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় নরসিংদীর উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। রাত সাড়ে ১১টার মধ্যে দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেন দুটি উদ্ধার করে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।ঘটনার খবর পাওয়ার পরই যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সড়ক ও রেলপথ বিভাগের সচিব মোজাম্মেল হক খান এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক টি এ চৌধুরী ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন বলে তিনি জানান।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্রেনে সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনায় শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি উদ্ধার কাজে অংশ নিতে সামরিক ও বেসামরিক কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।প্রধানমন্ত্রী শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। আহতদের যথাযথ চিকিৎসা দেওয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।