Saturday, January 08, 2011

মজুদদাররা ধান মজুদ শুরু করায় চালের দাম বাড়ছে

চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার খোলাবাজারে ন্যায্যমূল্যে চাল বিক্রি শুরু করলেও তা কাজে আসছে না। আমনের ভরা মৌসুমে শুক্রবার দাম আরেক দফা বেড়েছে। বেড়েছে ভোজ্যতেল ও আটার দামও। তবে অন্যান্য পণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।

গতকাল রাজধানীর নিউমার্কেট, মহাখালী বাজার ও কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি মোটা চাল ২ টাকা বেড়ে ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য চালও কেজিতে ১ থেকে ২ টাকা বেড়ে মিনিকেট মানভেদে ৪৮ থেকে ৫২ টাকা, পাইজম ৪০ থেকে ৪২ টাকা, লতা ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা, পারি ৪৩ থেকে ৪৪ টাকা, নাজিরশাইল ৪৭ থেকে ৫০ টাকা, স্বর্ণা ৩৮ থেকে ৩৯ টাকা ও হাসকি ৩৮ থেকে ৩৯ টাকায় বিক্রি হয়।

চালের দাম বাড়ার কারণ হিসাবে রাজধানীর পাইকারী ব্যবসায়ীরা বলেছেন, মজুদদাররা ধান মজুদ শুরু করেছেন। এর প্রভাবে হাটবাজারে ধানের দাম বেশি। বর্তমানে মোটা ধান ৭৬০ থেকে ৮০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে বলে তারা জানান। রাজধানীর চালের বড় পাইকারী বাজার বাবুবাজারের জনপ্রিয় রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী হাজী মো: আব্দুল করিম ইত্তেফাককে বলেন, প্রতি বছর এই সময়ে চালের দাম কমতির দিকে থাকলেও এবার উল্টো দাম বাড়ছে। তিনি বলেন, মোকামে চালের দাম বেশি। মিনিকেট, পুরনো নাজিরশাইল, বি-আর ২৮, ২৯ ও মোটা চালের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।

গতকাল নিউমার্কেটে বাজার করতে আসা চাকরিজীবী আমজাদ কবীর বলেন, এখন আমনের মৌসুম। কিন্তু তারপরও চালের দাম বাড়ছে। নিশ্চয়ই কোন কারসাজি রয়েছে। এছাড়া তেলের দামও বাড়ছে লাগামহীনভাবে। এভাবে অযৌক্তিভাবে হঠাৎ করে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়লে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ে।

এদিকে গতকাল বাজারে চালের পাশাপাশি আরো দাম বেড়েছে খোলা সয়াবিন, পামঅয়েল ও আটার। সরকারের সংস্থা টিসিবির হিসাবে গতকাল খুচরা বাজারে প্রতি কেজি সয়াবিনে ১ থেকে ২ টাকা বেড়ে ৯৮ টাকা ও পামঅয়েল ৮৮ টাকায় বিক্রি হয়। তবে বাস্তবে দাম আরো বেশি। মৌলভীবাজারের পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী মোঃ আলী ভুট্টো ইত্তেফাককে বলেন, আন্তজার্তিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেশি। আর দেশের ভোজ্যতেলের বাজার পুরোপুরিই আমদানি নির্ভর। তাই বিশ্ববাজারে দাম না কমলে দেশীয় বাজারে দাম কমার সম্ভাবনা কম। তবে সরকার যদি ভোজ্যতেলের উপর থেকে ভ্যাট তুলে দেয় তাহলে দাম কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে।

তবে অন্যান্য পণ্যের দাম কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি নতুন পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। ভারতীয় পিঁয়াজ আমদানি শুরু হলে দাম কমবে বলে কারওয়ান বাজারের পিঁয়াজ ব্যবসায়ী তোফায়েল জানিয়েছেন। এছাড়া মসুর ডাল ( তুরস্ক/ কানাডা) মানভেদে ৭৫ থেকে ৮৬ টাকা, দেশী মসুর ৯৫ থেকে ১০২ টাকা, নেপালি মসুর ৯৮ থেকে ১০৪ টাকা, মুগ ডাল ১০৪ থেকে ১২৫ টাকা, এ্যাংকর ডাল ২৬ থেকে ৩০ টাকা, ছোলা ৪৮ থেকে ৫২ টাকা, রসুন ১২০ থেকে ১৮০ টাকা, শুকনা মরিচ ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা, চিনি ৫৪ থেকে ৫৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। মাংসের মধ্যে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১১৫ থেকে ১২৫ টাকা, গরুর মাংস ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা ও খাসির মাংস ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়। গতকাল বাজারভেদে বিভিন্ন ধরনের সবজির মধ্যে ফুলকপি প্রতিটি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, পাতাকপি ২০ থেকে ২৫ টাকা, পেঁপে ১০ থেকে ১২ টাকা, শসা ২৪ থেকে ২৫ টাকা, আলু ১৩ থেকে ১৫ টাকা, শিম ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, মুলা ১৬ থেকে ১৮ টাকা, গোল বেগুন ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, মরিচ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, টমেটো ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, বরবটি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৪২ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।

এছাড়া প্যাকেট আটা ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা, খোলা আটা ৩৩ থেকে ৩৪ টাকা, প্যাকেট ময়দা ৩৯ থেকে ৪০ টাকা, খোলা ময়দা ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।

কনজু্যমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) পণ্যমূল্য ও সেবা সার্ভিসের ব্যয়বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদনে-২০১০ বলা হয়েছে, গত বছর প্রায় প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্যের ক্ষেত্রেই বিরাজ করেছে অস্থিরতা। ব্যয় প্রভাব জনজীবনের ওপর প্রচণ্ড চাপ ফেলেছে। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের অসঙ্গতি বাড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে হতাশা বাড়ছে।

ক্যাব-এর সভাপতি কাজী ফারুক বলেন, পণ্যমূল্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষের যে সামান্য আয় বৃদ্ধি, সেটাও খেয়ে ফেলছে পণ্যের উচ্চ মূল্যবৃদ্ধি। এর ফলে নিন্মবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ইত্তেফাককে বলেছেন, স্বল্প আয়ের মানুষের কথা বিবেচনা করে সরকার সারাদেশে নায্যমূল্যে চাল বিক্রি শুরু করেছে। শিগগির

এই আমলাদের দিয়ে দিন বদল হবে না by ড. মিজানুর রহমান

হাজোট সরকারের দিনবদলের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বর্তমান আমলাতন্ত্রকে অন্তরায় হিসেবে দেখছেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সেমিনারে তিনি বলেন, 'সরকার দিনবদলের যে অঙ্গীকার করে ক্ষমতা গ্রহণ করেছে তা যদি বাস্তবায়ন করতে হয়, তাহলে সে রকম লোক লাগবে, সে রকম আমলা লাগবে।

কিন্তু সে রকম লোকবল এবং আমলা নেই। আমলাতন্ত্রের মধ্যেই ঘাপটি মেরে রয়েছে প্রতিক্রিয়াশীলরা। এদের সনাক্ত করে সরিয়ে ফেলতে না পারলে দিনবদল সম্ভব নয়।'

দিন বদলের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার বৃহস্পতিবার দুই বছর পূর্ণ করল। দুই বছর পূর্তিতে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানা ক্ষেত্রে সাফল্য দাবি করে সরকারের কর্মসূচির ফল পেতে দেশবাসীকে আরেকটু ধৈর্য ধরার অনুরোধ করেছেন।

রাজনীতিতে দুবর্ৃত্তায়নের সমালোচনা করে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, 'আমাদের দেশ একটি গরিব দেশ। এখানে মানুষ দু'বেলা দু'মুঠো খেতে পায় না। এখানে রাজনীতিকরা দুর্নীতি করেন, দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হন। সে টাকা আবার বিদেশে পাচার করেন। তাদের এ দেশে রাজনীতি করার অধিকার আছে কি-না, কমিশনের পক্ষ থেকে আমি জনগণের কাছে প্রশ্ন রাখছি।'

মানবাধিকার ও বাসযোগ্য পরিবেশ সুরক্ষায় 'পুলিশ-গণমাধ্যম ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ভূমিকা' শীর্ষক আয়োজিত এই সেমিনারে মিজানুর রহমান আরো বলেন, অবিলম্বে সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকের শূন্য পদ পূরণ করতে হবে। এক্স-রে মেশিনসহ বিভিন্ন ধরনের মেশিন বিকল থাকায় চিকিৎসকরা ক্লিনিকে তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বাধ্য করেন। এছাড়া শিশুসদনগুলোতে শিশুদের দিয়ে রান্না না করিয়ে বাবুর্চির মাধ্যমে রান্নার ব্যবস্থা করার দাবিও করেন তিনি। বাঁধের ওপর অবস্থান নেয়া আইলা দুর্গতদের দ্রুত সুপেয় পানির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছেন তিনি। সমপ্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তিনি বলেন, 'মানবাধিকার পরিস্থিতি সন্তোষজনক পর্যায়ে নেই।'

কাঁটাতারে আটকেপড়া কিশোরীকে গুলি, লাশও নিয়ে গেলো বিএসএফ

সীমান্তে কাঁটাতারে আটকেপড়া বাংলাদেশি এক কিশোরীকে গুলি চালিয়ে হত্যার পর লাশ নিয়ে গেছে ভারতের সীমান্ত রক্ষীরা। মানবাধিকার সংগঠনের হিসেবে সীমান্তে গত বছর ৭৪ বাংলাদেশি নিহত হওয়ার পর নতুন বছরের শুরুতেই শুক্রবার কুড়িগ্রাম সীমান্তে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলো। লাশ ফেরত চেয়ে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী- বিএসএফকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে বিডিআর জানিয়েছে।

পুলিশ ও বিডিআর জানিয়েছে, ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ফেলানী (১৫) নামে ওই কিশোরীকে হত্যা করা হয়। ফেলানী নাগেশ্বরী উপজেলার দক্ষিণ রামখানা ইউনিয়নের বানার ভিটা গ্রামের নুরুল ইসলাম নূরুর মেয়ে।

পুলিশ জানিয়েছে, নূরু ভারতের দিল্লিতে কাজ করেন। তার সঙ্গে সেখানে থাকতেন ফেলানী। দেশে বিয়ে ঠিক হওয়ায় বাবার সঙ্গে ফেরার পথে বিএসএফের হামলার শিকার হয় সে। বিডিআরের ফুলবাড়ীর কোম্পানি কমান্ডার নায়েক সুবেদার আব্দুল জব্বার সাংবাদিকদের জানান, ফেলানী অনন্তপুর সীমান্তের ৯৪৭ আন্তর্জাতিক সীমানা পিলারের ৩ ও ৪ এস পিলারের কাছ দিয়ে ভারত থেকে দেশে ফেরার সময় বিএসএফের চৌধুরী হাট ক্যাম্পের সদস্যরা তার ওপর গুলি চালায়।

তিনি বলেন, "এতে ঘটনাস্থলে ফেলানীর মৃত্যু হয়। পরে তার লাশ ভারতে নিয়ে যায় বিএসএফ সদস্যরা।" এ ঘটনার পর সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। স্থানীয়দের উদ্ধৃতি দিয়ে ফুলবাড়ী থানার ওসি মোনায়েম সরকার সাংবাদিকদের বলেন, মেয়েকে নিয়ে সীমান্ত দিয়ে ফিরছিলেন নূরু।

"ফেলানীর বাবা প্রথমে মই দিয়ে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া পার হয়ে দেশে ঢুকে পড়েন। তবে পার হওয়ার সময় কাঁটাতারে ফেলানীর জামা-কাপড় আটকে যায়। এ সময় ভয়ে সে চিৎকার শুরু করে। তখন বিএসএফ সদস্যরা তাকে লক্ষ করে গুলি চালায়", বলেন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, নূরু অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছিলেন।

বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন অধিকার'র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১০ সালে বিএসএফ ৭৪ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করে। একই সময়ে বিএসএফের গুলি ও নির্যাতনে আহত হন ৭২ জন, অপহৃতের সংখ্যা ৪৩। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউমেন রাইটস ওয়াচ গত ডিসেম্বরে এক প্রতিবেদনে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি হত্যার প্রতিবাদ জানায়। এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী সীমান্ত রক্ষীদের বিচার করতেও নয়া দিল্লির প্রতি আহ্বান জানায় তারা।