Saturday, May 10, 2014

লড়াইটা জমিয়েছেন কেজরিওয়াল by সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় @প্রথম আলো

শুক্রবার সকাল থেকে বারানসির জগদ্বিখ্যাত অলিগলি ও রাজপথে একটাই আলোচনা, আগের রাতে নরেন্দ্র মোদির চার কিলোমিটার যাত্রাপথে কত মানুষের ঢল নেমেছিল? কারও মতে, এক লাখ। কারও ধারণা, কয়েক লাখ। বেনারস (এই প্রাচীন নগরের আরেক নাম) হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দলীয় কার্যালয়ের চার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে মোদির গাড়িবহরের সময় লাগে চার ঘণ্টা। এ পুরো সময় মোদি সারা দেশের টেলিভিশনের প্রাইম টাইমে আর কাউকে এক ইঞ্চি জায়গা ছাড়লেন না, আনুষ্ঠানিক 'রোড শো' না হলেও সেটা শেষ পর্যন্ত তা-ই হয়ে গেল। দ্বিতীয়ত, জাতীয় নির্বাচন কমিশন ও বারানসির জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইয়ে জয় হলো বিজেপির। এত কিছুর পরও বারানসির মোদি বাহিনী তক্কে তক্কে আছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের জন্য। আম আদমি পার্টির (এএপি) নেতা আর যাই হোক, এ তীর্থ নগরের মোদিবিরোধীদের সমীহ কিন্তু আদায় করে ছেড়েছেন। গোটা নগর এককথায় স্বীকার করছে, (এমনকি নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে যাঁদের পাগলামির শেষ নেই তাঁরাও) আর কিছু না হোক, লড়াইটাকে উপভোগ্য করে তুলেছেন এই অরবিন্দ কেজরিওয়াল। সকাল থেকেই মাথায় সাদা টুপি, হাতে দুর্নীতি তাড়ানোর ঝাঁটা (নির্বাচনী প্রতীক) নিয়ে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে আম আদমি পার্টির সদস্যরা শহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। গ্রামে গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ছেন। লোকজনকে তাঁরা ভোট দেওয়ার যন্ত্র ইভিএমের ছাপমারা কাগজ দিচ্ছেন, যাতে ভোটের বোতাম কোথায় টিপতে হবে বুঝতে অসুবিধা না হয়। এই যে কয়েক শ মানুষ কেজরিওয়ালের জন্য জীবনপণ করে বারানসির নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন, এঁদের সঙ্গে হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) নেতাদের অদ্ভুত মিল। সংঘের মানুষজনের মতোই আদর্শে ভর করে লক্ষ্যে অবিচল থেকে আম আদমি পার্টির লোকজন অনেক কষ্টে মোদির অর্থবল, লোকবল, বাহুবল ও কৌশলের মোকাবিলা করছেন। এঁদের অধিকাংশই বাইরের লোক। প্রচারণা শেষে এঁদের বারানসি ছেড়ে চলে যেতে হবে। প্রশাসনের হুকুম, প্রচারণা শেষ, এলাকার বাইরের লোকজনেরও বারানসিতে থাকার মেয়াদ শেষ।
কেজরিওয়ালের জন্য বিজেপির তক্কে তক্কে থাকার কারণ তাঁর রোড শো। দুই দফায় 'ঝাড়ু পার্টি' (এখানে এএপিকে এই নামেই ডাকা হচ্ছে) সেই শো গতকাল করল ঠিকই, কিন্তু মেজাজে বা জৌলুশে তা মোদির ধারেকাছেও আসতে পারল না। কী করেই বা আসবে? একদিকে দেশের করপোরেটকুলের দেদার দাক্ষিণ্য, অন্যদিকে দুয়োরানির দারিদ্র্যমাখা মালিন্য! মোদি-সমর্থকেরা আরও উৎফুল্ল যখন দেখলেন শেষবেলায় প্রচারে এসে মায়াবতীও তেমন একটা দাগ কাটতে পারলেন না। খুব শোনা যাচ্ছিল, মায়াবতীকে সামনে রেখে 'হাতি পার্টি' ধীর লয়ে শহরে দাপিয়ে বেড়াবে। কিন্তু 'বহিনজি' বাইরে বাইরে থেকে পাশ কাটিয়ে গেলেন 'সাম্প্রদায়িক' মোদিকে গালমন্দ করে। মোদি এলে দেশের মানুষের কী ধরনের বিপদের মোকাবিলা করতে হবে, সে বিষয়ে দেহাতের মানুষকে শিক্ষিত করে তিনি ভিভিআইপি আসন বারানসির আশা ত্যাগ করে পূর্বাঞ্চলের অন্যত্র মনোনিবেশ শ্রেয় মনে করছেন। মায়াবতীর কৌশলী রাজনীতিতে এটাই ঠিক। অর্থাৎ, বারানসি এসেও এলেন না। মুলায়ম নিজে আসবেন না ঠিক করেছেন। তবে তাঁর ছেলে অখিলেশ মনে করছেন, তিনিও না এলে বারানসির মুসলমানরা 'ভুল বার্তা' পেতে পারেন। সেটা বিধানসভার পরের ভোটে খারাপ প্রভাব ফেলবে। তাই আজ শনিবার সাইকেল পার্টির মনোবল বাড়াতে অখিলেশ রোড শো করবেন। কিন্তু অখিলেশ নন, বিজেপির আগ্রহ যাঁকে ঘিরে তিনি রাহুল গান্ধী। তাঁকে বেইজ্জত করতে মোদি যদি আমেথি যেতে পারেন, রাহুল তবে কেন বারানসি আসবেন না? এই যে পাল্লা, সাদা বাংলায় যাকে ইটের বদলে পাটকেল বলা হয় আজ প্রচারের শেষ দিনে সেই পাটকেল ছুড়তেই রাহুলের বারানসি আসা। তবে একটু তফাত রয়েছে। মোদি আমেথিতে গিয়ে জনসভা করেছিলেন, রাহুল করবেন রোড শো। তার প্রভাব কতটা পড়বে বারানসির ভোটারদের মনে, আপাতত সেই জল্পনাতেই শহর মশগুল। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ এখানে এসেছেন। রাহুলের রোড শো নিয়ে ঠাট্টা করলেন, 'কেজরিওয়াল বা রাহুলেরা রোড শো করুন বা এয়ার শো, বারানসিতে মোদির স্টাম্প লেগে গেছে।'
পাঁচ বছর আগে বিজেপির মুরলী মনোহর জোশি বারানসি থেকে কোনোরকমে ১৭ হাজার ভোটে জিতেছিলেন। মোদি এবার সেই আসনকে প্রায় হেলায় ঝোলায় পুরলে কে তার জন্য দায়ী হবেন? রাহুল গান্ধীর শুনতে খারাপ লাগতে পারে, তবে ঘটনা হলো এ আসনের সাড়ে তিন লাখের বেশি মুসলমান ভোটারের অধিকাংশ মনে করেন, কংগ্রেসই তার জন্য দায়ী। কেন? কারণ, কংগ্রেস গড়িমসি করতে করতে একেবারে শেষবেলায় অজয় রাইকে টিকিট দিল। অথচ অরবিন্দ কেজরিওয়াল তার এক মাস আগে থেকে এখানে ঘাঁটি গেড়ে বসে। নিট ফল? মুসলমানদের বেশির ভাগ ভোট এবার চিরায়ত হাতের পাঞ্জা ছেড়ে ঝাড়ুতেই আশ্রয় নিচ্ছে। ইটের বদলে পাটকেল মারতে রাহুল বারানসি না এলেই ভালো করতেন। তাতে আর যাই হোক, তিনি যে প্রতিহিংসাপরায়ণ নন, তা বোঝানো যেত।

২০১৪ হবে রাশিয়ার বছর- ক্রিমিয়া সফরে পুতিন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গতকাল শুক্রবার ক্রিমিয়া সফর করেছেন৷ ইউক্রেনের ওই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটি গত মার্চে রাশিয়া নিজেদের অংশ করে নেওয়ার পর সেখানে এটিই পুতিনের প্রথম সফর৷ ১৯৪৫ সালে নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয় উপলক্ষে ক্রিমিয়ার সিভাস্তোপোলে নাবিকদের একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পুতিন৷ তাঁর এই সফরকে 'ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের গুরুতর লঙ্ঘন' বলে মন্তব্য করেছে কিয়েভ৷ বন্দরনগর সিভাস্তোপোলে নৌঘাঁটিতে একটি সামরিক নৌযানের ওপর দাঁড়িয়ে পুতিন যখন নৌসেনাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন, তখন আকাশে কসরত প্রদর্শন করে রুশ জঙ্গি বিমানের বহর৷ পুতিন বলেন, 'আমি নিশ্চিত, ২০১৪ সাল হবে আমাদেরই একটি বছর৷ ঐতিহাসিক সত্য ও আমাদের পূর্বপুরুষদের স্মৃতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে এখানকার মানুষ এ বছর রাশিয়ার সঙ্গে থাকার মতো একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷'
এর আগে নাৎসি বাহিনীকে পরাজিত করার ৬৯তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজ করে রাশিয়া৷ বিজয় দিবসে মস্কোতে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, এটা এমন একটি দিন, যখন 'দেশপ্রেমের জয়' হয়৷ ক্রিমিয়ায় যে কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়েছিল, সেটি আকারে তেমন বড় ছিল না৷ তবে লোকজনের আগমন ছিল চোখে পড়ার মতো৷ তারা পতাকা নেড়ে পুতিনকে স্বাগত জানায়, পুতিন হাত নেড়ে তার জবাব দেন৷ রুশ উসকানির আশঙ্কা ইউক্রেনের: ইউক্রেন সংকট প্রশ্নে সম্প্রতি সুর নরম করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন৷ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে কথা বলেছেন, দেশটির পূর্বাঞ্চলের বিিচ্ছন্নতাবাদীদের গণভোট বন্ধ করতে বলেছেন এবং ইউক্রেন সীমান্ত থেকে রুশ সেনাদের সরিয়ে নেওয়ার কথাও বলেছেন৷ তবে এটাকে রাশিয়ার উসকানির পূর্বলক্ষণ হিসেবে দেখছেন ইউক্রেনের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী আরসেনিয়ে ইয়াটসেনিউক৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয় দিবস উপলক্ষে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে তিনি বলেন, 'আমি ভ্লাদিমির পুতিনের ওই বিবৃতি নিয়ে উদ্বিগ্ন৷ এটা একটা খারাপ অনুভূিত সৃষ্টি করছে৷ কারণ, তারা বলে এক, করে আরেক৷ ওই বিবৃতির পর, আমি ৯ মে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলাম৷' বিবিসি ও এএফিপ৷

নারায়ণগঞ্জে সাত খুন- ‘ইজ্জতের রশি’ দিয়ে লাশ বাঁধা

নদী এলাকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অস্ত্র নিয়ে চলাচলের সময় সঙ্গে রশি রাখতে হয়। সেই রশির এক মাথায় অস্ত্র বাঁধা থাকে, যাতে পানিতে পড়ে গেলে রশি দিয়ে হদিস মেলে। পুলিশ সদস্যরা রসিকতা করে বলেন, 'ইজ্জতের রশি।' পুলিশ প্রবিধানের ৯৬১ ধারা অনুসারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সরকারি-ভাবে এ রশি সরবরাহ করা হয়। নারায়ণগঞ্জের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাত খুনের মামলার তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নিহত ব্যক্তিদের শরীরের সঙ্গে ইটভরা বস্তাগুলো এ ধরনের রশি দিয়ে বাঁধা ছিল। সাত খুনের মামলা তদন্ত করছে নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মামুনুর রশিদ মণ্ডল। তদন্তের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, তদন্তকারী কর্মকর্তারা ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালত থেকে সাদাপোশাকে অস্ত্রসহ আটক হওয়া র‌্যাব সদস্য মোস্তফা কামালকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম অভিযোগ করেন, র‌্যাব সদস্যরা আগে থেকেই নজরুলকে নজরে রাখছিলেন। নজরুলের আদালতে হাজিরার দিন ২৭ এপ্রিল আদালতের ভেতরে র‌্যাবের একজন সদস্য সাদাপোশাকে অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করার সময় নজরুলের লোকজন সন্দেহবশত আটক করেছিলেন। পরে র‌্যাবের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর লোকটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওই সদস্যের নাম ও পরিচয় পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ দেন। গত বৃহস্পতিবার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে মোস্তফা কামাল সব অভিযোগ অস্বীকার করেন বলে জানা গেছে।
নারায়ণগঞ্জ পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পুলিশ ২৭ এপ্রিল দিবাগত রাত তিনটার দিকে একটি মাইক্রোবাসসহ তিনটি গাড়িকে তল্লাশির জন্য রাস্তায় থামায়। তিনটি গাড়ির সামনের গাড়িতে ছিলেন র‌্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মাদ। পেছনের গাড়িতে ছিলেন মেজর আরিফ হোসেন। র‌্যাবের অধিনায়ক গাড়ি থেকে নেমে টহল পুলিশকে জানান, তাঁরা বিশেষ অভিযানে যাচ্ছেন। এরপর পুলিশ গাড়িগুলো ছেড়ে দেয়। পুলিশ সদস্যরা জানান, গাড়িগুলো নারায়ণগঞ্জের নদীর পাড় দিয়ে চলে যায়। ৪৫ মিনিট পরে আবার সেগুলো র‌্যাব কার্যালয়ের দিকে চলে যায়। ওই তিনটি গাড়ি নিয়ে নানা সন্দেহ তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। এর আগে হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে চাকরি হারানো র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক তারেক সাঈদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার এম এম রানাকে অকালীন ও বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়। তাঁরা এখনো সেনানিবাসে আছেন বলে গেছে। সেনা সদর দপ্তরের প্রজ্ঞাপন অনুসারে এসব কর্মকর্তা সব ধরনের সুবিধা পাবেন। এ কারণে তাঁরা অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটি ভোগ করবেন এক বছর। ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুলসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাঁদের ছয়জনের এবং পরদিন একজনের লাশ ভেসে ওঠে।