Monday, January 14, 2013

চকরিয়ার ৭ উপকূলীয় ইউনিয়নে বোরো চাষ অনিশ্চিত

চকরিয়ায় মাতামুহুরি নদীর বাঘগুজারা পয়েন্টে রাবার ড্যামের ব্যাগ স্থাপনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কাজে ধীরগতির অভিযোগ উঠেছে। এতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে উপকূলের সাত ইউনিয়নের ৪০ হাজার একর জমির বোরো চাষাবাদ।
গত ৭ জানুয়ারি উপজেলা পরিষদে মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিনের কাছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন উপজেলার উপকূলীয় সাত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।
অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যানরা উল্লেখ করেন, সঠিক সময়ে ড্যামের সংশ্লিষ্টরা রাবার ব্যাগ স্থাপন না করায় চলতি মৌসুমে উপজেলার কোনাখালী, বিএম চর, ঢেমুশিয়া, পশ্চিম বড় ভেওলা, বদরখালী, পূর্ব বড় ভেওলা ও সাহারবিল ইউনিয়নের ৪০ হাজার একর জমিতে সেচ সুবিধার অভাবে বোরো চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ সময় জেলা প্রশাসক বিষয়টির সত্যতা জানতে সভায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কোনো কর্মকর্তা উপস্থিত রয়েছে কিনা জানতে চান। ওই দিন সভায় তাদের কোনো কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না।
ইউপি চেয়ারম্যানরা জানান, জমিতে সেচ সুবিধা নিশ্চিত না হওয়ায় চাষাবাদ নিয়ে চলতি মৌসুমে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। বিএম চর ইউপি চেয়ারম্যান বদিউল আলম, বদরখালী ইউপি চেয়ারম্যান নূরে হোছাইন আরিফ, পূর্ব বড় ভেওলা ইউপি চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিল ও কোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার সমকালকে জানান, প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে মিঠাপানির সেচ সুবিধা নিয়ে বোরো ও রবিশস্যের চাষাবাদ করা হয়। এক সময় উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দের অনুকূলে নদীর পৃথক দুটি পয়েন্টে মাটির তৈরি অস্থায়ী ক্রসবাঁধ নির্মাণ করে নদীর মিঠাপানি আটকিয়ে কৃষকদের মধ্যে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করা হতো। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার মাতামুহুরি নদীর বাঘগুজারা ও রামপুর-পালাকাটা পয়েন্টে অস্থায়ী ক্রসবাঁধ নির্মাণের পরিবর্তে স্থায়ী দুটি রাবার ড্যাম নির্মাণের জন্য একনেকে ৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। বরাদ্দের বিপরীতে কক্সবাজার পাউবো পৃথক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ওই বরাদ্দের অনুকূলে ড্যামের নির্মাণকাজ শুরু করে।
সূত্র জানায়, ২০১০ সালের শেষদিকে রামপুর-পালাকাটা পয়েন্টের রাবার ড্যামের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। তবে ওই সময়ের মধ্যে বাঘগুজারা পয়েন্টের রাবার ড্যামের নির্মাণকাজ সমাপ্তের প্রশাসনিক নির্দেশনা থাকলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এখনও কাজ শেষ করতে পারেনি।
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজার পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈনুদ্দিন বাঘগুজারা ড্যামে রাবার ব্যাগ স্থাপনে ধীরগতির সত্যতা নিশ্চিত করে সমকালকে বলেন, 'ব্যাগের ওপরে ব্যাপক হারে পলি (মাটি) জমে থাকায় ব্যাগ ফোলাতে কিছুদিন সময় লেগেছে। আশা করি, শিগগির কৃষকরা নদী থেকে সেচ সুবিধা নিতে পারবেন।' ওই দিন সভায় পাউবোর কোনো কর্মকর্তা উপস্থিত না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, 'উপজেলা প্রশাসন থেকে সভার ব্যাপারে তাদের জানানো হয়নি বলেই এমনটি হয়েছে।'
এদিকে মাতামুহুরি উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা জানান, পশ্চিম বড় ভেওলার ফুরইনমারা খালে ১০ চেইন জায়গা ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে ঢেমুশিয়া ও পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়নে বোরো চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মিঠাপানির অভাবে ওই এলাকার বোরো চাষের বীজতলা বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের কাছে বিষয়টি অবহিত করার পরও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

No comments:

Post a Comment