Monday, January 14, 2013

রামুর ইউএনও’র অফিস ও বাসভবন ঘেরাও

কক্সবাজারের রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবী চন্দের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে অশোভন আচরণ ও তার মানসিক নির্যাতনে এক গৃহবধূর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
এ অভিযোগে সোমবার বিকেলে ইউএনও কার্যালয় ও বাসভবন ঘেরাও করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। বিক্ষোভ চলাকালে বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এ সময় মিছিল করা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে পুলিশের এসআই উজ্জ্বল পিস্তল বের করে গুলি করার হুমকিও দেন।

জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ কম্পাউন্ডে যাওয়া একটি গরু দুই দিন বেঁধে রাখেন ইউএনও দেবী চন্দ। পরে ওই গরুটি আনতে গিয়ে দফায় দফায় নাজেহাল হন গরুর মালিক গৃহবধূ জ্যোতিকা বড়–য়া ও তার দুই মেয়ে আরজু বড়ুয়া ও পপি বড়–য়া। দুইদিন পর গরু ফিরে পেলেও ইউএনও’র দুর্ব্যবহার ও ভয়ভীতির কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান জ্যোতিকা বড়–য়া (৫০)।

নিহত জ্যোতিকা বড়–য়া রামু উপজেলার ফতেখাঁকুল ইউনিয়নের মেরংলোয়া গ্রামের বংশীবাদক মৃত বাঁশী মোহন বড়ূয়ার স্ত্রী।

আরজু বড়–য়া বাংলানিউজকে জানান, বৃহষ্পতিবার সারাদিন তার মা গরুটির খোঁজ না পেয়ে বিকেলে জানতে পারেন উপজেলা পরিষদ কম্পাউন্ডে ঢোকায় ইউএনও বেঁধে রেখেছেন। এ সময় গরুটি আনতে গেলে ইউএনও অশালীন কথাবার্তা ও পুলিশের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে তাড়িয়ে দেন ও ১ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে গরুটি ছেড়ে দেওয়ার কথা জানান।

তিনি আরও জানান, পরদিন শুক্রবার সকাল ৮টায় তার মা ও কলেজ বোন পপি বড়–য়া  গরু আনতে গিয়ে ইউএনও’র বাসভবনের সামনে কয়েক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় ইউএনও’র গাড়ি চালক প্রদীপ বড়–য়া তাদের বকাঝকা করেন।

পরে ইউএনও বাসা থেকে বের হয়ে তাদের জুতা দিয়ে মেরে তাড়াবে ভয় দেখান ও তাদের ১ হাজার টাকা আনার জন্য বলেন। টাকা না আনলে গরু দেবে না, পুলিশে ধরিয়ে দেবে, গরু খোয়াড়ে দেবে, জবাই করে লোকজনকে খাওয়াবে, খাওয়ার লোকের অভাব নাই, এ ধরনের নানা হুমকি ও অশালীন কথা বলেন। ইউএনও’র হুমকিতে হতদরিদ্র এ গৃহবধূ ও তার মেয়ে পপি বড়–য়া বাড়ি চলে আসেন।

একইদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইউএনও’র কথা অনুযায়ী ১ হাজার টাকা নিয়ে গরু আনতে যান আরজু বড়–য়া।  এ সময় বাসার সামনে গিয়ে গরুর কথা বলতেই ইউএনও তাকে ধমক দিয়ে বলেন, “গরু দেব না, প্রয়োজনে খোয়াড়ে দেব। তোকেও পুলিশে দেব।”

পপি বড়–য়া বাংলানিউজকে জানান, শুক্রবার বিকেলে গরুটি নিয়ে আসার পরও তার মা  ইউএনওর দুর্ব্যবহারের কথা ভেবে কান্নাকাটি করতে থাকেন। এক পর্যায়ে মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। শনিবার বিকেলে অসুস্থ মাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে সেখানে রাত সাড়ে ১১টায় তিনি মারা যান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবী চন্দের মানসিক নির্যাতনে জ্যোতিকা বড়–য়া মৃত্যুর খবর বৌদ্ধ সম্প্রদায়সহ জনমনে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। এরই জের ধরে সোমবার বিকেলে গ্রামবাসী এ ঘটনায় দায়ী ইউএনও দেবী চন্দের কার্যালয় ও বাসভবন ঘেরাও এবং বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করে।

এ বিষয়ে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবী চন্দ বাংলানিউজকে জানান, তিনি জ্যোতিকা বড়–য়া নামে ওই মহিলাকে নির্যাতন করেননি। গরুটি উপজেলা কম্পাউন্ডে আসায় বেঁধে রেখে আইন অনুযায়ী ৫০০ টাকা জরিমানা দিতে বলেছিলেন তিনি। নইলে খোয়াড়ে দেওয়ার কথা বলা হয়।

একটি মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অংশ হিসেবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে দাবি করেন তিনি।

উল্লেখ্য, এ ঘটনার আগেও রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবী চন্দের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।

No comments:

Post a Comment