Saturday, July 16, 2011

একটি ইট থামিয়ে দিল জীবন

সুস্থ মাকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন তিনি। মাকে দেখে হেঁটে আবার বাসায় ফিরছিলেন। কিন্তু নির্মাণাধীন ভবন থেকে ছুটে আসা একটি ইট থামিয়ে দিল তাঁর জীবনের চাকা। মাত্র ২১ বছরেই শেষ হয়ে গেল একটি সম্ভাবনাময় জীবন।

আজ শনিবার রাজধানীর পান্থপথে শমরিতা হাসপাতালের পাশে এ ঘটনা ঘটে। নিহত তরুণের নাম হাবিবুর রহমান। তেজগাঁও কলেজ থেকে এ বছর তিনি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও পারিবারিক সূত্র জানায়, হাবিবুর বাবা-মায়ের সঙ্গে রাজধানীর পূর্ব তেজতুরী বাজার এলাকার একটি বাসায় থাকতেন। আজ তিনি তাঁর অসুস্থ মাকে দেখতে শমরিতা হাসপাতালে আসেন। সেখান থেকে দুপুর ১২টার দিকে বের হয়ে তিনি হেঁটে বাসায় যাচ্ছিলেন। এ সময় হাসপাতালটির বাঁ পাশে সাগুফতার ১৮ তলাবিশিষ্ট নির্মাণাধীন ভবন থেকে একটি ইট তাঁর মাথার ওপর পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই ভবনের শ্রমিক মিজান হোসেন, জোনাথ, ইয়াকুব মিয়া, এবাদুল হক ও আশফাকুল ইসলামকে আটক করেছে।
নিহত তরুণের বাবা আবু কালাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রথম আলোকে জানান, তাঁর দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে হাবিবুর ছিলেন বড়। হাবিবুরের মা মঞ্জু আরা বেগম ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১০-১২ দিন ধরে শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাঁরা বাবা ও ছেলে সময় ভাগ করে হাসপাতালে থাকতেন। তাঁরা দুজন হাসপাতালে আসেন। দুপুরের দিকে তিনি হাবিবুরকে বাসায় গিয়ে গোসল ও খাওয়াদাওয়া করে আবার হাসপাতালে আসতে বলেন। এ জন্য হাবিবুর বাসায় যাচ্ছিলেন। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘একটি ইট কেন কেড়ে নেবে আমার পরিবারের সব স্বপ্ন? কে এর জবাব দেবে?’
নিহত তরুণের ছোট খালা মাহিনুর জানান, হাবিবুর তেজগাঁও বিজ্ঞান কলেজ থেকে এসএসসি পাস করে তেজগাঁও কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে এবার তিনি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেন। মাহিনুর জানান, হাবিবুরের স্বপ্ন ছিল ফ্যাশন ডিজাইনার হবেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ওসমানগঞ্জ গ্রামে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন জানান, এর আগেও ওই ভবনটিকে ঘিরে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। মাস দুয়েক আগে ওই ভবনের এক শ্রমিক ওপর থেকে পড়ে মারা যান। ১৫-২০ দিন আগে একটি পাথরখণ্ড ওপর থেকে পড়েছিল। তবে কেউ না থাকায় হতাহত হয়নি। গতকালও ঘটনার সময় ভবনটির সামনে কোনো জাল ছিল না।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সাগুফতার বিপণন ব্যবস্থাপক আবু শোয়েব খান বলেন, সাগুফতার ভবন থেকে ইট পড়েনি। পাশেই আরও একটি ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। সেখান থেকে ইট পড়তে পারে। তা ছাড়া ১০ তলায় ভেতরের দিকে টাইলসের কাজ চলছিল। ইটের কোনো কাজ চলছিল না।
তবে সরেজমিনে দেখা যায়, সাগুফতার পাশের নির্মাণাধীন ভবনের নিচে কয়েকটি টিন দেওয়া থাকলেও সাগুফতার এমন কিছু ছিল না। সাগুফতার নির্মাণাধীন ভবনটির নিচে কয়েকটি শুকনো বাঁশের ওপর রক্তের দাগ দেখা গেছে। ভবনের বিভিন্ন তলায় অগোছালোভাবে ইটের স্তূপ, টাইলসের জিনিসপত্র, বিভিন্ন ধরনের পাইপসহ বিভিন্ন যন্ত্র বিশৃঙ্খলভাবে পড়ে ছিল।
শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউজ্জামান জানান, সাগুফতা ভবনের ১০ ও ১১ তলায় কাজ চলছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ওই দুই তলার যেকোনো একটি থেকে ইটটি পড়তে পারে। ওসি জানান, ওই ভবনের সামনে নিরাপত্তা হিসেবে একটি নেট দেওয়া থাকলেও সেটি পর্যাপ্ত নয়। ভবন-মালিকদের গাফিলতির বিষয়টি খুবই স্পষ্ট। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।