Sunday, January 30, 2011

জালালউদ্দিন রুমির কবিতা

ই রকম
কেউ যদি শুধায় স্বর্গের হুরিরা কেমন
নিজের মুখখানা দেখিয়ে বলো, এই রকম।
কেউ যদি শুধায় চাঁদ কেমন, ছাদে উঠে বলো, এই রকম।

কেউ যদি উর্বশী খোঁজে, তাকে নিজের মুখখানা খুলে দেখাও
কেউ যদি শুধায় মৃগনাভীর সৌরভ কেমন, নিজের খোঁপা খুলে দাও, বলো, এই রকম।
কেউ যদি বলে, মেঘে ঢাকা চাঁদ কী করে প্রকাশিত হয়?
শাড়ির এক একটি ভাঁজ খুলে ফেলো, বলো, এই রকম।
কেউ যদি শুধায়, মৃতকে জাগিয়ে তুলতেন কী করে যিশু? তার ঠোঁটে চুম্বন করে বলো, এইভাবে।
যদি কেউ জানতে চায় প্রেমে আহুতি দেয় যারা, তারা কেমন? আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়ো তাকে, বলো, এই রকম।
কেউ যদি শুধায় আমি কতটা লম্বা, তোমার বাঁকানো জোড়া ভুরু দেখিয়ে বলো, এই রকম।

ভূমিকা ও অনুবাদ: হাসান ফেরদৌস
ফার্সি কবি জালালউদ্দিন রুমির কবিতা কেউ পাঠ করে ঈশ্বরের খোঁজে। কেউ বা প্রেমের। যারা প্রেমিক ও ঈশ্বরের কোনো তফাত দেখে না, তারা রুমির কবিতায় দুজনকেই খুঁজে পায়। এ যেন অনেকটা রবীন্দ্রনাথের নৈবেদ্য পর্যায়ের কবিতাগুলোর মতো, যেখানে প্রভু ও প্রেমিকের কোনো তফাত থাকে না।
রুমির জন্ম আফগানিস্তানের বালখ শহরে ১২০৭ সালে। রবীন্দ্রনাথের জন্ম তার সাড়ে ৬০০ বছর পর, ১৮৬১ সালে। রুমি প্রথম পারস্যের খোরাসানে, পরে তুরস্কের কনিয়া প্রদেশে শিক্ষালাভ করেন মুখ্যত তাঁর মৌলবি পিতার পরিচর্যায়। এই তুরস্কেই তিনি কবি ও মৌলানা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। প্রথম জীবনে রুমি ধার্মিক ছিলেন কোনো সন্দেহ নেই, আর দশটা-পাঁচটা মাদ্রাসা-মক্তবের মৌলবির মতো। কিন্তু তাঁর যখন ৩৭ বছর বয়স, সে সময় পরিচয় হয় পারস্যের তাবরিজ থেকে আসা এক পথভোলা দরবেশের সঙ্গে। তাঁর নাম শামস-আল দিন। এই লোকটির ভেতরে রুমি তার প্রার্থিত ঈশ্বরের প্রতিরূপ দেখতে পেলেন। কিন্তু কেবল ঈশ্বর নয়, শামস-আল দিন তাঁর কাছে আবির্ভূত হলেন প্রেমিক হিসেবেও। যে ‘ঈশ্বরসম-প্রেমিক’ তিনি এত দিন খুঁজছিলেন, রুমি তার দেখা পেলেন শামস-আল দিনের ভেতর।
রুমি ও শামসের প্রেমের স্বরূপ আমাদের জানা নেই। এটুকু জানি, তাঁদের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা প্রবল বিতর্কিত হয়ে ওঠে এবং একসময় রুমির ভক্তদের আক্রমণের মুখে শামস-আল দিনকে কনিয়া ছেড়ে পালাতে হয়। রুমি তাঁকে পাগলের মতো খুঁজেছেন, পুত্রকে দামেস্ক পাঠিয়েছেন তাঁকে ফিরিয়ে আনতে। শামসের উদ্দেশে তিনি লিখেছিলেন, ‘ফিরে এসো, ফিরে এসো, তোমা বিনা আমার হূদয় শুষ্ক, বিশ্বাস পলাতক।’ ফিরে এসেছিলেন শামস, কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আততায়ীর হাতে নিহত হন। রুমি বিশ্বাস করেননি তাঁর শামস—যার অর্থ সূর্য—আর নেই। ‘এ কী করে হয় যে সূর্য আর উঠবে না?’ শামসের জন্য তাঁর অন্বেষণ ও বেদনার আধার হয়ে ওঠে কবিতা। ‘সে নেই, স্বর্গও এখন আমার কাছে নরকসম’, লিখেছেন রুমি।
যে ঐশ্বরিক প্রেমিকের খোঁজে ছিলেন রুমি, সে কি রক্তমাংসের মানব, নাকি বিদেহী ঈশ্বর? এ প্রশ্নের জবাব আমরা তাঁর কবিতা থেকে যে যার মতো করে খুঁজে নিই। যেমন নিই রবীন্দ্রনাথের কবিতায়। এখানে মুদ্রিত কবিতাটি ফাতেমেহ কেশাভারজের ইংরেজি অনুবাদ অনুসরণে রচিত।

No comments:

Post a Comment