Thursday, February 23, 2012

ইনানী সৈকতের ঝাউবন দখল করে পিকনিক স্পট

মালিক বন ও পরিবেশমন্ত্রীর ভাই রাসেল মাহমুদসহ চট্টগ্রামের শহিদুল্লাহ শহীদ ও কক্সবাজারের মনজুর আলম।।
কক্সবাজারের ইনানী সৈকতে বন বিভাগের গড়ে তোলা সবুজ বেষ্টনীর পাঁচ একর ঝাউবন দখল করে একটি প্রভাবশালী মহল গড়ে তুলেছে 'ইকো বিলাস' নামে পিকনিক স্পট।


প্রভাবশালী মহলটি সরকারি জমি দখলে নিয়ে এখানে কটেজ, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে পর্যটকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আয় করছে। প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এ সৈকত এলাকা ইজারা দেওয়া এবং এখানে কোনো রকম স্থাপনা নির্মাণ নিষিদ্ধ হলেও 'ইকো বিলাসে'র উদ্যোক্তরা দাবি করেন, তারা জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা নিয়েই পর্যটকদের জন্য ট্যুরিস্ট স্পটটি গড়ে তুলেছেন। তবে জেলা প্রশাসন এ ভূমি ইজারা দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে। গতকাল সোমবার ওই এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সৈকতের প্রায় পাঁচ একর ঝাউবন দখল করে বাঁশের খুঁটি দিয়ে ঘের দেওয়া হয়েছে। বাঁশের বেড়া ও ছন দিয়ে এখানে নির্মাণ করা হয়েছে দুটি রেস্টুরেন্ট এবং ১২টি ছোট কটেজ। ১০টি তাঁবুও এখানে খাটানো হয়েছে। এ
ছাড়া রয়েছে আরও কিছু স্থাপনা।
পর্যটকদের কাছে প্রতিটি তাঁবু একদিনের জন্য ভাড়া দেওয়া হচ্ছে দেড় হাজার টাকায়। পিকনিক পার্টির কাছ থেকে একদিনের জন্য ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৭ হাজার
টাকা।
প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ জানান, তারা জেলা প্রশাসন থেকে এক সনা লিজ নিয়ে পিকনিক স্পটটি গড়ে তুলেছেন। তিনি জানান, এ প্রতিষ্ঠানের তিনজন মালিকের মধ্যে রয়েছেন বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের ভাই রাসেল মাহমুদ, তার স্ত্রীর বড় ভাই চট্টগ্রামের শহিদুল্লাহ শহীদ এবং কক্সবাজারের ঝিলংজা এলাকার মনজুর আলম। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মনজুর আলম জানান, স্থানীয় প্রশাসন থেকে এক সনা লিজ নিয়ে তারা এ প্রতিষ্ঠান করেছেন। তিনি জানান, ইজারা নেওয়া হয়েছে রাসেল মাহমুদের আত্মীয় শহিদুল্লাহ শহীদের নামে। সরকার ঘোষিত প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় ঝাউবন কীভাবে ইজারা নিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমরা পরিবেশের কোনো রকম ক্ষতি না করেই সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে পিকনিক স্পটটি গড়ে তুলেছি।'
শহিদুল্লাহ শহীদ জানান, প্রশাসনের প্রয়োজনীয় অনুমোদন নিয়ে তারা সম্পূর্ণ অস্থায়ীভাবে পিকনিক স্পট তৈরি করেছেন। এখানে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকার কোনো রকম ক্ষতি হচ্ছে না। এ ছাড়া তারা ঝাউবনও রক্ষণাবেক্ষণ করছেন। ওই প্রতিষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা রাসেল মাহমুদের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। পরে অবশ্য তার অফিসের কর্মকর্তা পরিচয়ে একজন ফোন রিসিভ করে জানান, ইনানীতে পিকনিক স্পটের ওই জমি তারা ইজারা নিয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার কথা বলে তিনি ফোন কেটে দেন।
কক্সবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (দক্ষিণ) বিপুল কৃষ্ণ দাশ বলেন, 'ওই স্থানের ঝাউবাগান বন বিভাগের হলেও ভূমির মালিক জেলা প্রশাসন। ওই খাসজমি ইজারা দেওয়া হয়েছে কি-না তা আমাদের জানা নেই।'
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ জসিম উদ্দিন জানান, ইনানী সৈকতের ওই ভূমি কখনও কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে কক্সবাজার সৈকতের এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। মেরিন ড্রাইভ সড়কের পশ্চিম পাশে সৈকতের তীর ধরে সব অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে শিগগির অভিযান পরিচালনা করা হবে।

রামু রাবার বাগান বন্যহাতির অভয়ারণ্য রাবার কষ আহরণ বন্ধ

রামু রাবার বাগান এখন বন্যহাতির অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
প্রতিদিন বন্যহাতির পাল বাগানে অবস্থান নিয়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে। এতে ৫০০ একর বাগানে রাবার আহরণ বন্ধ থাকায় উত্পাদনে ধস নেমেছে।


গত দুই মাস ধরে বাগানের রাবার উত্পাদন এলাকায় একাধিক হাতির পাল প্রতিনিয়ত হানা দিচ্ছে। অনেক জায়গায় হাতির পাল সপ্তাহ ধরে বসবাস করছে। এতে আতঙ্কিত শ্রমিকরা ওইসব এলাকায় রাবার কষ আহরণ বন্ধ রেখেছে।
৫টি উত্পাদনশীল এলাকায় ১০৭টি বল্গক রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে হাতির উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০টি বল্গকে রাবার কষ আহরণ সম্ভব হচ্ছে না। উত্পাদনশীল এলাকাগুলো হাতির অবাধ বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি বল্গকে একজন করে রাবার উত্পাদনের দায়িত্বে থাকলেও তারা ওইসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যেতে পারছে না।
বাগানে রাবার উত্পাদনে দায়িত্বরত ব্যক্তিরা জানান, অব্যাহতভাবে হাতির উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে রাবার উত্পাদনশীল ১ হাজার ৩২০ একর জমির মধ্যে ৫০০ একর জমিতে রাবার উত্পাদন বন্ধ রয়েছে। ৫টি উত্পাদনশীল এলাকার মধ্যে ৩ নং-এর জুমছড়ি, ৪ নং-এর আশিসনের বাগান, চৌধুরী খামার এবং ৫ নং-এর লোহাতলা, ডেপারঝিরি ও হাতিখাইয়া এলাকায় হাতির উপদ্রবে রাবার উত্পাদন ব্যাহত হচ্ছে।
রামুর রাবার বাগান কয়েক মাস আগেও লাভজনক ছিল। কিন্তু সম্প্রতি হাতির অব্যাহত উপদ্রবের ফলে বর্তমানে অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে। বর্তমানে বাগানে ১ হাজার ৩২০ একর জমিতে দৈনিক ২ হাজার কেজি রাবার কষ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। অথচ আহরণ করা সম্ভব হচ্ছে মাত্র ১ হাজার ৩০০ কেজি। ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে রাবার কষ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ১০০ কেজি, তখন আহরণ করা হতো ২ হাজার ২০০ কেজি।
জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি, আওয়ামী লীগ নেতা কামাল শামসুদ্দিন আহমেদ প্রিন্স আমার দেশ কে জানান, নির্বিচারে বনাঞ্চল উজাড় হওয়ায় কয়েক মাস ধরে বন্যহাতির দল রাবার বাগানে তাণ্ডব চালাচ্ছে। তিনি আরও জানান, হাতির ভয়ে বাগানের শ্রমিকরা উত্পাদনশীল এলাকায় গিয়ে রাবার কষ আহরণ করতে পারছে না। জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মহলজ্জামা জানান, বন্যহাতির দল রাবার বাগানের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন বসতবাড়িতেও হামলা চালাচ্ছে এবং বোরো চাষাবাদের বীজতলা ও কৃষকের ফসলি ক্ষেতে তাণ্ডব চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতি করছে।
জুমছড়ি এলাকার সুলতান আহমদ জানান, সম্প্রতি বন্যহাতির দল রাবার বাগানে তাণ্ডব চালিয়ে ফেরার সময় তার বসতঘরটি ভেঙে ফেলে। দুই সপ্তাহ আগে স্থানীয় এক কৃষকের মহিষ হাতির আক্রমণে মারা যায়। এর আগে মানুষের প্রাণহানিও ঘটেছে।
বাগানে রাবার কষ উত্পাদনে দায়িত্বরত কয়েকজন শ্রমিক জানান, প্রতিদিনই বাগানে হাতির পাল আসে। প্রতিটি পালে ৪ থেকে ১০-১২টি হাতি থাকে। গত দেড় মাসে এসব হাতির পাল প্রায় ২ হাজার উত্পাদনশীল রাবার গাছ উপড়ে ফেলেছে। হাতির বিচরণ ও আক্রমণে রাবার কষ আহরণে ব্যবহৃত পাঁচ হাজার ট্যাপিং বাটি ভেঙে গেছে। এছাড়া প্রতিদিন উত্পাদনশীল রাবার গাছের নিচের অংশ কষ আহরণের উদ্দেশ্যে কেটে দেয়া হয়। কিন্তু হাতির ভয়ে ওই এলাকায় যেতে না পারায় গাছের ওই অংশ কেটে দেয়া ও কষ আহরণ দুটিই সম্ভব হচ্ছে না।
রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আইয়ুব আমার দেশকে জানান, বাগানে প্রতিদিন বন্যহাতির দল হানা দিচ্ছে। হাতির ভয়ে শ্রমিকরা রাবার কষ আহরণের জন্য যায় না। এ কারণে বর্তমানে রাবার উত্পাদনে ধস নেমেছে। এভাবে চলতে থাকলে অচিরে লাভজনক এ বাগান অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। গভীর বনাঞ্চল থেকে আসা এসব হাতি বাগানের গাছ এবং সরঞ্জামও নষ্ট করছে। তিনি এসব হাতির পাল যাতে বনাঞ্চল থেকে আসতে না পারে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বনবিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন।