Thursday, March 01, 2012

উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নিয়ে বিশিষ্টজনরা কী বলেন ...

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়া অনুমোদন ও মাস্টার প্ল্যান
আটকে থাকার বিষয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর মোসতাক আহমেদ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন,


'শুধু কক্সবাজারবাসী নয়, বিশ্বের পর্যটকরা যারা কক্সবাজার বেড়াতে আসবেন সবাই কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সুফল ভোগ করবেন। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন অনুমোদন জেলাবাসীর জন্য খুশির সংবাদ।'
জেলার বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সে মহাপরিচালক আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন অনুমোদন আমাদের জন্য অত্যন্ত খুশির সংবাদ। তবে কর্তৃপক্ষের বাস্তব এবং পরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এগিয়ে নিতে হবে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থ বিবেচনায় রেখে।'
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, 'একটি আদর্শ পর্যটন শহর হিসেবে কক্সবাজারকে গড়তে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষই মাস্টার প্ল্যানসহ সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করবে।' কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী কালের কণ্ঠকে জানান, মাস্টার প্ল্যান ঝুলিয়ে রাখার মাধ্যমে এতদিন কক্সবাজারের উন্নয়ন আটকে রাখা হয়েছে। বর্তমান সরকার কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের মধ্য দিয়ে কক্সবাজারকে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছেন। তবে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারে গতিশীল ও উন্নয়নকামী লোকজনকে বসাতে হবে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এর সহ-সভাপতি এম এ শুক্কুর বলেন, 'কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন অনুমোদনে খুবই খুশি হয়েছি। তবে সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে নিতে পারে এমন লোকজনকে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে।'

রাজনীতির ঊর্ধে উঠে পরিকল্পিত নগরী বানাতে হবেঃ আহমদ হোছাইন

'দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজারকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে
প্রধানমন্ত্রী বরাবরই আন্তরিক-এটা প্রমাণ হলো কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) গঠনের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে।


এমনিতেই জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের এক মহাসন্ধিক্ষণের স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে সাগরপাড়ের শহর কক্সবাজার। ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার এক অন্ধকার সময়ে জাতিরজনক বেশ কিছুদিনের সময় অতিবাহিত করেছেন এখানেই। তাই পর্যটনকেন্দ্র এই কক্সবাজারের গুরুত্ব এসব ঐতিহাসিক কারণেও কম নয়। এ কারণে আমি সরকার প্রধান ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এগিয়ে আসায়।'
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রবীণ আইনজীবী এ্যাডভোকেট এ,কে আহমদ হোছাইন গতকাল কালের কণ্ঠকে এসব বলেন।
তিনি বলেন, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) গঠনের মাধ্যমে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যের শহর কক্সবাজারকে সাজানো হবে অপরূপ সাজে। আর কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) নেতৃত্বে সরকারি কর্মকর্তা নাকি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থাকবেন সেটা বড় কথা নয়-আসল কথা হচ্ছে একটি পরিকল্পিত আধুনিক নগরী বলতে যা বুঝায় সেরকম একটি নগরী গড়ে তোলার প্রয়াস চালাতে হবে।'
কক্সবাজারের প্রবীণ এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এ প্রসঙ্গে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত যেটি ব্যক্ত করেছেন সেটি হচ্ছে, 'আমরা কে কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃত্ত রয়েছি সেটার চাইতে আমাদের সবাইকে রাজনৈতিক বিবেচনার ঊধর্ে্ব থেকেই পরিকল্পিত নগরী গড়ার কাজে শামিল হতে হবে। তাঁর মতে কক্সবাজার হচ্ছে একটি আন্তর্জাতিকমানের পর্যটন শহর। এটি পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের শহর হবার কারণে এখানে আসেন দেশ-বিদেশের ভ্রমণপিপাসু লোকজন। তাদের কাছে রাজনীতি নয় অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাদিই সবচেয়ে বড় বিষয়। এ কারণে আমি রাজনীতির ঊর্ধে থেকে কাজ করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি বেশি।'

কক্সবাজারের উন্নয়নঃ গেজেট প্রকাশের অপেক্ষায় মাস্টার প্ল্যান by তোফায়েল আহমদ

সুন্দর ও পরিকল্পিত পর্যটন নগরী গড়তে কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত ৮০ হাজার একর জমি নিয়ে ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান (মাস্টার প্ল্যান) চূড়ান্ত করেছে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর। গত কয়েক মাস আগে এই মাস্টার প্ল্যানের অনুমোদন দেয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এখন শুধু গেজেট প্রকাশের কাজটি বাকি আছে।


২০১১ সালের ১১ মে এই মাস্টার প্ল্যানের খসড়া প্রকাশ করেছিল নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর। মাস্টার প্ল্যানের অগ্রগতি বিষয়ে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি শাহীনুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, মাস্টার প্ল্যানের কাজটি গত কয়েক মাস আগে মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত অনুমোদনের পর গেজেট প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। গেজেট প্রকাশের পর ২০ বছর মেয়াদি এই মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করবে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের শহর কক্সবাজারে পর্যটনশিল্পের প্রসার শুরু হয় এক যুগ আগে। বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আগমনে মুখরিত কক্সবাজারে দেখা দেয় আবাসন, বিনোদনসহ নানা সংকট। আর এ সুযোগে পর্যটকদের সুবিধা দিতে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত গড়ে উঠে শত শত বহুতল ভবন। গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে কক্সবাজার সাগরপাড়কে হোটেল মোটেল জোন ঘোষণার মাধ্যমে গড়ে তোলা হয় 'বিএনপি পল্লী'। আর সেখানে পরে গড়ে তোলা হয় বহুসংখ্যক অপরিকল্পিত অট্টালিকা।
হোটেল মোটেল জোনের পূর্ব পাশে গণপূর্ত বিভাগের আবাসিক এলাকায় শতাধিক গেস্ট হাউস বাণিজ্যিকভাবে হোটেল ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ঢাকায় যেখানে দুইটি পাঁচ তারকা মানের হোটেল নেই, সেখানে কক্সবাজারে গড়ে উঠেছে এক ডজনেরও বেশি পাঁচ তারকা মানের হোটেল। নির্মিত হচ্ছে আরো বেশ ক'টি হোটেল। এছাড়া স্টুডিও টাইপ তিন তারকা ও পাঁচ তারকা মানের অ্যাপার্টমেন্টও রয়েছে অর্ধশতাধিক। এসব নির্মাণে কক্সবাজারে বর্তমানে ৫৭ টি ডেভেলপার কম্পানি কাজ করছে বলে জানা গেছে।
দেশ-বিদেশের ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করেছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। ফলে কক্সবাজার একটি দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনৈতিক অঞ্চলে রূপ নিতে যাচ্ছে। কিন্তু সরকারিভাবে কোন ধরনের মাস্টার প্ল্যান না থাকায় পুরো কক্সবাজারেই অপরিকল্পিত নগরায়ণ শুরু হয়। এ অবস্থায় সরকারের পক্ষে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর ও বেসরকারি সংস্থা শেলটেক কনসালটেন্ট যৌথভাবে মাস্টার প্ল্যান তৈরির উদ্যোগ নেয়। প্রায় দুই বছর কাজ করার পর গত ১১ মে মাস্টার প্ল্যানের খসড়া প্রকাশ করে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর। 'প্রিপারেশন অব ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান অব কক্সবাজার টাউন অ্যান্ড সি- বিচ আপ টু টেকনাফ' নামক প্রকল্পের আওতায় এ মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হয়।
মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান শেলটেক সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের মহেশখালী পৌরসভা ও আদিনাথ মন্দির এলাকা থেকে শুরু করে কক্সবাজার পৌরসভা, কক্সবাজার সদর উপজেলার একাংশ, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে টেকনাফ সৈকত পর্যন্ত এলাকা, রামু ও উখিয়া উপজেলার একাংশ, টেকনাফ পৌরসভা এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রায় ৮০ হাজার একর জমি নিয়ে মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে।
খসড়া মাস্টার প্ল্যানে পুরো কক্সবাজারকে নয়টি গুরুত্বপূর্ণ জোনে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলে মহেশখালী ইকোনমিক অ্যান্ড হিস্টোরিক্যাল জোন, কক্সবাজার সিটি ডেভেলপমেন্ট এরিয়া, হিমছড়ি মাল্টিকালচার ট্যুরিস্ট জোন, ইনানী এঙ্ক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন, হোয়াই্যকং ইকোনমিক জোন, নাফ ট্যুরিস্ট জোন, টেকনাফ ট্যুরিস্ট জোন, শাহপরীর দ্বীপ ট্যুরিস্ট জোন এবং ইকোলজিক্যাল ক্রিটিকেল জোন। এসব জোনে রাখা হয়েছে- আরবান রেসিডেন্সিয়াল জোন, কর্মাশিয়াল জোন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন, মিঙ্ড ইউজড জোন, এডমিনিস্ট্রেটিভ জোন, রূরাল সেটেলমেন্ট জোন, ওপেন স্পেস, অ্যাগ্রিকালচারাল অ্যান্ড প্রাইমারি অ্যাক্টিভিটি জোন, লো টাইডাল জোন, ট্যুরিস্ট ফ্যাসিলিটিজ জোন, বিচ রিক্রিয়েশন জোন, ইনস্টিটিউশনাল জোন, ফরেস্ট অ্যান্ড ভেজিটেশন জোন, ওয়াটার বডি এবং রেসটিক্টেট জোন। এছাড়া মাস্টার প্ল্যানে সৈকত থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে কোনো স্থাপনা না করা, ৫০০ থেকে ১০০০ মিটারের মধ্যে ১৫ ফুট উচ্চতার কটেজ সিস্টেম, ১০০০ মিটার থেকে ১৫০০ মিটার পর্যন্ত ৫০ ফুট উচ্চতা, ১৫০০ মিটার থেকে ২০০০ মিটার পর্যন্ত ৭০ ফুট উচ্চতা, ২ হাজার মিটার থেকে ২৫০০ মিটার পর্যন্ত ১১০ ফুট উচ্চতা ও ২৫০০ মিটার থেকে ৩০০০ মিটার পর্যন্ত ১১০ ফুট এর বেশি উচ্চতার স্থাপনা নির্মাণ করার বিধান রাখা হয়েছে।
এই বিধানের ফলে ইতোমধ্যে সৈকতের ৫০০ মিটারের মধ্যে গড়ে উঠা অসংখ্য বহুতল ভবনের ভাগ্যে কী ঘটবে তা নিয়ে নতুন করে দেখা দিয়েছে বিতর্ক। এর মধ্যেই গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভায় কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর ৩ কোটি ৮৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত মাস্টার প্ল্যান তৈরির কাজ শুরু করে। গেল বছরের জুন মাসে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়।
খসড়া প্ল্যানে কক্সবাজারের মহেশখালী, কক্সবাজার সদর, রামু, উখিয়া, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রায় ছয় লাখ লোক অধ্যুষিত ৩৩ টি মৌজার ৭৯ হাজার ৬৫৭ একর জমি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্ল্যান প্রণয়নকারী প্রকল্পের টিম লিডার ড. নুরুল ইসলাম নাজেম এক সেমিনারে জানিয়েছিলেন, প্রকল্পটিতে দুই স্তর বিশিষ্ট উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম স্তর হচ্ছে স্ট্র্যাকচার প্ল্যান ২০ বছর (২০১১-২০৩১) এর আওতায় কাঠামো পরিকল্পনা নীতি ও কৌশল নির্ধারণপূর্বক পরবর্তী পরিকল্পনার অবকাঠামো ও দিকনিদের্শনা। আর দ্বিতীয় স্তরে রয়েছে ৫-১০ বছর (২০১১-২০২০) এর আওতায় বিস্তারিতভাবে নির্দিষ্ট এলাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা ও উন্নয়নের নিয়ন্ত্রণ। তিনি আরো বলেছিলেন, কক্সবাজার অঞ্চলের এই মহাপরিকল্পনা আগামী ২০ বছর কক্সবাজার শহর, সমুদ্রসৈকত এলাকা, মহেশখালী, টেকনাফ, শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিন অঞ্চলে উন্নয়ন প্রসারণ ও নিয়ন্ত্রণ করবে। ফলে পুরো অঞ্চলটি হবে প্রাকৃতিক ভারসাম্যযুক্ত একটি আদর্শ উন্নয়ন প্রবৃদ্ধির এলাকা।
কিন্তু কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ না থাকায় পর্যটন শহর কক্সবাজারের এ মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নকারী সংস্থা কে হবে তা নিয়ে সংশয় ছিল। অবশেষে ২৭ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) খসড়া আইন মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এদিকে গত ১০ মাস ধরে রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ এর ৪(১) ধারা মোতাবেক কক্সবাজারের জেলা প্রশাসককে সভাপতি করে গঠিত ৭ সদস্যের একটি কমিটি কক্সবাজারের সকল উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তবে উক্ত কমিটির কাছে পূর্ণাঙ্গ কোনো ক্ষমতা না থাকায় অনেক কিছুই তারা করতে পারছেন না। এ কমিটি কেবল শহরে অবকাঠামো নির্মাণের সিদ্ধান্ত দিতে পারলেও সৈকত ও মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন এলাকায় কোনো অবকাঠামো গড়ার ক্ষেত্রে কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারছে না। কমিটির কর্মকর্তারা বলেছেন, এসব এলাকা প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে গণ্য হবার কারণে তারা নানা জটিলতার সম্মুখীন হন।
অন্যদিকে কক্সবাজারে বিনিয়োগকারী ডেভেলপার্স কম্পানিগুলো তাদের স্থাপনাগুলোর ডিজাইন অনুমোদন দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন। কিন্তু বর্তমানে বিদ্যমান থাকা কমিটি নানা সীমাবদ্ধতা থাকার কারণে যত্রতত্র স্থাপনার অনুমোদন দিতে পারছে না বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক এবং কক্সবাজারের উন্নয়ন তদারকির জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেছেন, 'পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা না থাকায় এক্ষেত্রে নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এর পরেও কক্সবাজারের স্বার্থে আইন অনুসারে ইতোমধ্যে ৫৭টি ডেভেলপার্স কম্পানির নিবন্ধন, ১০টি ডেভেলপার্স কম্পানির অবকাঠামো ডিজাইন অনুমোদন ও ৭টি ব্যক্তি মালিকানাধীন অবকাঠামো অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।'

মামা ভয়ংকর!

কক্সবাজারের চকরিয়ায় সাদিয়া মণি ময়না (১৫) নামের
শারীরিক প্রতিবন্ধী কিশোরীকে জবাই করে হত্যা করেছে আপন মামা আবদুর রহিম!


গত রবিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ ছড়ারকুল গ্রামের পার্শ্ববর্তী আলু খেতে লোমহর্ষক এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মামাকে গ্রেপ্তার করেছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমি বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর কাছ থেকে শুনেছি দক্ষিণ ছড়ারকুল গ্রামের আবদুল জলিলের প্রতিবন্ধী কিশোরী সাদিয়া মণি ময়নাকে পার্শ্ববর্তী আলু খেতে নিয়ে গিয়ে জবাই করে হত্যা করে আপন মামা আবদুর রহিম। এ সময় ঘটনাকে ভিন্নখাতে নিতে সুচতুর মামা নিজেও একটু বিষ পান করে কিশোরীকে মুমূর্ষু অবস্থায় চকরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ েনিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। এরপর মামাও হাসপাতালে ভর্তি হয়। নিহত সাদিয়া শারীরিকভাবে একজন প্রতিবন্ধী এবং তার মামার বাড়ি ও বাপের বাড়ি একই স্থানে।'
এলাকাবাসী জানায়, নিহত কিশোরী ময়না তার নিজ বাড়িতে থাকতো ছোট দুইভাইকে নিয়ে। ময়নার বাবা গত তিনমাস পূর্বের একটি হত্যা মামলায় আত্মগোপনে রয়েছেন এবং মা হামিদা বেগম বেলু ওই মামলায় বর্তমানে জেলে। আগের হত্যা মামলায় পলাতক থাকা বাবার ইন্ধনে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মামা এ ধরনের নাটক সাজিয়েছেন।
স্থানীয় লোকজনের মতে, জবাই করার পর গুরুতর অবস্থায় কিশোরীকে নিয়ে মামা আবদুর রহিম প্রায় ২টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাতে কিশোরীকে নিয়ে আসে অপর দুই ব্যক্তি। একই সময় বিষ পান করে হাসপাতালে ভর্তি হন মামাও। এতে সন্দেহ হলে পুলিশে খবর দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে পুলিশ মামাকে হাসপাতাল থেকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
চকরিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ ইয়াছিন বলেন, 'প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী মামা আবদুর রহিমই এ ঘটনার সাথে জড়িত রয়েছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। তবে মামা কি কারণে কিশোরীকে হত্যা করেছে সেই রহস্য উদ্ঘাটনের জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন জানান, সামপ্রতিক সময়ে একই এলাকায় আরেকটি হত্যা মামলায় ওই কিশোরীর মা বর্তমানে কারাগারে বন্দি। পলাতক রয়েছেন কিশোরী সাদিয়ার বাবাও। তাই অধিকতর তদন্ত ছাড়া এখনই এ হত্যাকাণ্ডের আসল রহস্য বলা যাচ্ছে না। তিনি জানান, নিহত কিশোরীর দাদা নবী হোছন বাদী হয়ে সোমবার রাতে থানায় একটি মামলা করেছেন।
চকরিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ ফরহাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রতিপক্ষের লোকজনকে ফাঁসাতে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি হয়েছে মর্মে প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে। এই সূত্র ধরেই কিশোরী হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেমেছে পুলিশ এবং গ্রেপ্তারকৃত মামাকে প্রয়োজনে রিমান্ডে আনা হবে।

এখানকার উন্নয়নে চেয়ারে বসাতে হবে এখানকার মানুষকেইঃ লুৎফর রহমান কাজল

কক্সবাজার সদর-রামু আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য লুৎফর রহমান কাজল বলেন,
'দীর্ঘদিন পরে হলেও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নামের একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান গঠনের অনুমোদন পেয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।'


তিনি বলেন, 'এতদিন কক্সবাজারে একক কোনো প্রতিষ্ঠান না থাকায় পর্যটন শহরের উন্নয়ন ও বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। পর্যটন শহরে প্রায় এক বছর ধরে কোনো ধরনের অবকাঠামোগত কাজের নকশা অনুমোদন না পাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা পিছু হটেছেন।'
তিনি বলেন, 'মাস্টারপ্ল্যান এর ধোয়া তুলে কক্সবাজারে এখন কাজের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। যতটুকু জানি মাস্টারপ্ল্যানে কক্সবাজারের বহুল প্রত্যাশিত গভীর সমুদ্রবন্দরকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। সেখানে জনমতের কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। এরপরও কাঙ্ক্ষিত সেই মাস্টারপ্ল্যানের কোনো দেখা নেই। অথচ মাস্টারপ্ল্যানের কথা বলে থমকে দেওয়া হয়েছে কক্সবাজারের উন্নয়নকে।' বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত ও পাহাড় ঘেরা এ পর্যটন শহরকে সাজাতে পরিকল্পিত উন্নয়নের দাবি করে তিনি বলেন, 'জাতীয় সংসদে এ বিষয়ে আমি একাধিকবার প্রস্তাব উত্থাপন করেছি।' সৈকত দখল, পাহাড় কাটা, পরিবেশ ধ্বংস রোধ করে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য একটি শক্তিশালী কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কোনো বিকল্প নেই বলে জানান তিনি।
একই সাথে তিনি বলেন, 'কোনো আমলা দিয়ে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চালিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এটি জনপ্রতিনিধিদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। কক্সবাজারের উন্নয়নের জন্য কক্সবাজারের মানুষকে চেয়ারে বসাতে হবে। এছাড়া রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন এর অনুকূলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে সভাপতি করে গঠিত ৭ সদস্যের কমিটিও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে শহরে কোথায় কী হবে না হবে তার সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না। এ অবস্থায় পর্যটন শহরের উন্নয়নের জন্য কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নামের একটি পূর্ণাঙ্গ স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। এটি আরো আগে করা প্রয়োজন ছিল।'