Sunday, January 02, 2011

আন্দোলন তীব্র হলে সরকার মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে __মির্জা ফখরুল

রকারের ব্যর্থতার কারণে মানুষ এখন আন্দোলনমুখী হয়ে উঠেছে। ধীরে ধীরে যখন আন্দোলনের তীব্রতা বাড়তে থাকবে, তখন সরকার মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে।

আজ রোববার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের বিক্ষোভ মিছিলের আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন। চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, রসুনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ মিছিল করে মহিলা দল।
মির্জা ফখরুল জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের জন্য মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মহাজোট সরকার দুই বছরে কোনো ক্ষেত্রে সফলতা দেখাতে পারেনি। তারা দেশ চালাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে সরকার বিরোধী দলকে দমনের কাজে নেমেছে। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘হয় দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করুন, নইলে পদত্যাগ করে চলে যান।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশ আজ আওয়ামী দুঃশাসনের কবলে পড়েছে। সরকার দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। বর্তমানে মানুষের ন্যূনতম নিরাপত্তা নেই। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা। চাল, ডাল, তেলের দাম নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে। অথচ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিল, ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে, ঘরে ঘরে চাকরি দেবে, বিনা মূল্যে সার দেবে। কিন্তু তারা কিছুই করতে পারেনি।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বলেন, দ্রব্যমূল্য কমাতে না পারলে প্রধানমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি বিজয়নগর সড়ক হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এতে মহিলা দলের সভাপতি নুরে আরা সাফা ও সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা নেতৃত্ব দেন।

নাটোরে সড়ক দুর্ঘটনায় চারজন নিহত

নাটোর সদর উপজেলার বাকশোরঘাট গ্রামে বাসের চাপায় চারজন নিহত হয়েছেন। আজ রোববার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। যাত্রীদের উদ্ধার করতে গিয়ে দমকল বাহিনীর ছয় সদস্য উত্তেজিত জনতার হামলায় আহত হয়েছেন। জনতা দমকল বাহিনীর গাড়িও ভাঙচুর করে।

নাটোর সদর থানা ও দমকল সূত্র জানায়, আজ সন্ধ্যা ছয়টার দিকে নাটোর থেকে বগুড়া যাওয়ার সময় ঝটিকা পরিবহন নামের যাত্রীবাহী একটি বাস বাকশোরঘাট গ্রামের কাছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে চাপা দেয়।
এতে দুর্ঘটনাস্থলে নাটোরের সিংড়া উপজেলার বামনমাঝ গ্রামের সুধানন্দ চন্দ্র দাস (৫৫), নাটোর শহরের কানাইখালী মহল্লার অটোরিকশার চালক বাবুল প্রামাণিক (৪৫), অটোরিকশা যাত্রী শফিকুল ইসলাম (৩৫) ও অজ্ঞাত একজন নিহত হন।
খবর পেয়ে নাটোর দমকল স্টেশনের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছলে উত্তেজিত জনতা সড়ক অবরোধ করে এবং দমকল কর্মীদের গাড়িতে হামলা চালায়। এতে নাটোর দমকল স্টেশনের কর্মকর্তা আবদুর রউফসহ ছয়জন আহত হন। উত্তেজিত জনতা দমকলের গাড়িও ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে সদর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তারা আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
নাটোর সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কৃষ্ণমোহন ঘটনাস্থল থেকে মুঠোফোনে ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন। দমকল কর্মী হায়দার আলীও ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন।

টিকিট কেনা নিয়ে সংঘাত, ভাংচুর

বিশ্বকাপ ক্রিকেটের টিকিট কেনার লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে রাজধানীর মিরপুর ও ধানমণ্ডিতে সংঘর্ষ ও কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর হয়েছে। রোববার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে মিরপুর-১ নম্বর সেকশনে সিটি ব্যাংকের সামনে এ সংঘাত বাঁধে বলে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়।

সিটি ব্যাংকের ৫০টি আর অগ্রণী ব্যাংকের ৩০টি শাখার মাধ্যমে টিকিট বিক্রি রোববার সকালেই শুরু হয়। টিকিটের জন্য শনিবার একদিন আগে থেকেই লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন ক্রিকেটমোদীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মিরপুরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে লাইনে আগে-পিছে থাকাকে কেন্দ্র করে ধাক্কধাক্কি শুরু করে। এ অবস্থা বেশ কিছুক্ষণ চলতে থাকে। বেলা সোয়া ১২টার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হলে পুলিশ তা থামাতে যায়। তখন পুলিশে সঙ্গে টিকিটপ্রার্থীদের সংঘর্ষ শুরু হয়।

দারুস সালাম থানার ওসি আব্দুল মালেক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হট্টগোল সৃষ্টি হলে পুলিশ মৃদু লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই সময় একটি বাস ভাংচুর হয় বলে জানান তিনি। তবে স্থানীয়রা বলছেন, তিন থেকে চারটি গাড়ি ভাংচুর হয়েছে।

ধানমণ্ডি ২ নম্বর সড়কে সিটি ব্যাংকের সামনেও দুপুর ১২টার দিকে লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে সংঘর্ষ হয়। ওই সময় ইট ছোড়াছুড়িতে আহত হন কালের কণ্ঠের আলোকচিত্রী মীর ফরিদ। তবে আধা ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। টিকিট কেনার জন্য অন্য স্থানগুলোর মতো মিরপুরে ও ধানমণ্ডিতেও দীর্ঘ লাইন রয়েছে।

ঢাকায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে পথচারী গুলিবিদ্ধ

রাজধানীর কদমতলী থানায় দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় পথচারী এক গৃহবধূ গুলিবিদ্ধ হয়েছে। রোববার দুপুর ১টার দিকে মোহাম্মদবাগ এলাকায় এই ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়। সংঘর্ষের সময় ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন এক জন।

গুলিবিদ্ধ মাকসুদা বেগম (২৭) সন্তানকে স্কুল থেকে আনতে যাওয়ার সময় সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন বলে তার স্বামী মোহাম্মদ শাহীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন। তাদের বাসা কদমতলীর ওয়াসা পুকুর পাড়ে। কদমতলী থানার ওসি আইয়ুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে শুক্রবার থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশাচালক আনোয়ারের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স চালক রাজিবের বিরোধ চলছিলো।

"এর জের ধরে শনিবার রাজিব তার ৮/১০জন সঙ্গী নিয়ে আনোয়ারের ওপর হামলা চালালে দুই পক্ষে সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় আনোয়ার ছুরিকাঘাতে আহত হয়", বলেন তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ওসি জানান, সংঘর্ষের সময় দুই পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি বিনিময় হয়।

ওই সময় মাকসুদার ডানপায়ে গুলি লাগে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওসি জানান, এই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

নাটোরে বিষাক্ত মদ পানে পাঁচজনের মৃত্যু

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার রাজাপুর খ্রিষ্টানপাড়ায় গতকাল শনিবার রাতে বিষাক্ত মদ পানের পর এক নারীসহ পাঁচজন মারা গেছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন মাদকদ্রব্যের ব্যবসায়ী গীতা রানি সরকার, বড়াইগ্রামের গোপালপুর গ্রামের নাহিদ ও একই উপজেলার ওয়ারেছপাড়ার টুটুল।

বড়াইগ্রাম থানা ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাত সাড়ে ১১টায় বড়াইগ্রাম উপজেলার রাজাপুর খ্রিষ্টানপাড়ার মাদকদ্রব্যের ব্যবসায়ী গীতা রানি সরকার ও তাঁর কয়েকজন ক্রেতা মদ পান করেন। এর পরই তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। আজ রোববার সকালে স্থানীয় লোকজন ওই বাড়ির উঠানে গীতা রানিসহ পাঁচজনকে পড়ে থাকতে দেখেন। পরে দেখা যায়, এর মধ্যে চারজনই মৃত। নাহিদ নামের একজনকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিত্সাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
গোপালপুর গ্রামের বকুল সরকার বলেন, ‘ঘটনাটি গভীর রাতে হওয়ায় আমরা কেউ জানতে পারিনি। তবে সকালে গীতা রানীর বাড়িতে গিয়ে লাশ পড়ে থাকতে দেখেছি।’
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজাহার আলীও ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে ঘটনাস্থল নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা ও পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার মধ্যবর্তী হওয়ায় কোনো থানার পুলিশই নিহত ব্যক্তিদের ব্যাপারে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেনি। আজ বিকেল চারটায় বড়াইগ্রাম থানাধীন বনপাড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মদ পান করে পাঁচজন নিহত হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তবে ঘটনাস্থল নিয়ে জটিলতা রয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উড়াল সড়কের কার্যাদেশ চূড়ান্ত করতে বাধা নেই

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে প্রকল্পের অধীনে উড়াল সড়ক নির্মাণের চূড়ান্ত কার্যাদেশ দেওয়া এবং তার আগের কার্যক্রম পরিচালনায় বাধা নেই বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আজ রোববার এ নিয়ে শিকদার রিয়েল এস্টেট-কেসিসিজেভি লিমিটেডের আর্থিক প্রস্তাব উন্মুক্ত করাসংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ।

রুলের নিষ্পত্তি না করা পর্যন্ত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করা হয়। একই সঙ্গে পক্ষগুলোকে রুল নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।
আজ প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ সেতু কর্তৃপক্ষের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।
আদালতে সেতু কর্তৃপক্ষের পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এম জহির ও মোস্তাফিজুর রহমান খান।
জানা যায়, গত বছরের ৬ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে এয়ারপোর্ট-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর ও ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের কুতুবখালী পর্যন্ত উড়াল সড়ক নির্মাণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। সেতু কর্তৃপক্ষের দরপত্র আহ্বানের পর ওই বছরের ২৩ নভেম্বর প্রাক-যোগ্যতাসম্পন্ন চার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুটি দরপত্র জমা দেয়। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড ও শিকদার রিয়েল এস্টেট। একই দিন দরপত্র মূল্যায়নের জন্য অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
জানা গেছে, কমিটি কারিগরি প্রস্তাব মূল্যায়নের জন্য সাতটি মানদণ্ড নির্ধারণ করে। শিকদার রিয়েল এস্টেট সাতটি মানদণ্ডের মধ্যে তিনটি পূরণে ব্যর্থ হয়। গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর কমিটি যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় শিকদার রিয়েল এস্টেটের আর্থিক প্রস্তাব ফেরত পাঠানোর সুপারিশ করে। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে শিকদার রিয়েল এস্টেট রিট করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ ডিসেম্বর আদালত শিকদারের আর্থিক প্রস্তাব খোলা ও তা কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করতে পারে বলে আদেশ দেন। এতে স্থগিতাদেশ চেয়ে সেতু কর্তৃপক্ষ আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন করলে গত ২৯ ডিসেম্বর আদালত বিষয়টি আজ আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন। সকালে আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদালত এই আদেশ দেন।

ঝিনাইদহ ও রামগড় পৌরসভার নির্বাচন বাতিল

ঝিনাইদহ ও রামগড় পৌরসভার নির্বাচন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেওয়ার ঘটনায় কমিশন এ সিদ্ধান্ত নেয়। আজ রোববার নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘বিদ্যমান পরিস্থিতি নির্বাচনের জন্য সন্তোষজনক না হওয়ায় ঝিনাইদহের সদর পৌরসভা ও খাগড়াছড়ির রামগড় পৌরসভার নির্বাচনের তফসিল বাতিল করা হয়েছে। পরে এ দুই পৌরসভায় নির্বাচনের নতুন তফসিল ঘোষণা করা হবে।’
নির্বাচন কমিশনার আরও জানান, প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে সাভার ও পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (পৌর নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা) প্রত্যাহার করে অন্যত্র বদলির জন্য সভায় সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে নির্দেশনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে ফেনী জেলা প্রশাসককে সতর্ক করে দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী অপরাধে আজই প্রথমবারের মতো দুটি পৌরসভার নির্বাচন বাতিল করা হলো।

দুস্থদের পুনর্বাসন করে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করা হবে __প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকার দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের পুনর্বাসন করে চিরতরে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করতে চায়। আজ রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে জাতীয় সামাজিক কল্যাণ দিবস-২০১০ উপলক্ষে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেন আমাদের দেশের জনগণ রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করবে? আমরা বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসুবিধা প্রদানের মাধ্যমে সমাজের প্রত্যেক সুবিধাবঞ্চিতদের পুনর্বাসিত করতে চাই।’ শিশুদের পঙ্গু করে এবং অন্যদের জোর করে ভিক্ষাবৃত্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে—এমন অশুভ চক্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। ‘ভবঘুরে ও অনাশ্রিত মানুষ বিল-২০১০’-এর খসড়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছেও বলে জানান তিনি।
দেশের প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অন্যান্য খাতের মতো আমরা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের বিকেন্দ্রীকরণ ঘটাতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় ডিগ্রি পর্যায় পর্যন্ত ছাত্র ও ছাত্রী উভয়কে বিনা বেতনে শিক্ষা প্রদানের জন্য ফান্ড গঠন করার কথা বলেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় প্রতিটি বিভাগীয় শহরে বিশেষ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা, তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া, দরিদ্রদের জন্য সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করাসহ বিভিন্ন বিষয়ের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন্নেছা খানমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সমাজকল্যাণমন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বক্তব্য দেন। ইউএনবি।

‘ক্রসফায়ার’ বন্ধ হয়নি, নতুন প্রবণতা ‘গুপ্তহত্যা’

দেশে ‘ক্রসফায়ার’ বা বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ হয়নি। গত বছর এর সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে ‘গুপ্তহত্যা’ এবং মানুষকে ‘নিখোঁজ’ করে দেওয়ার ঘটনা।

২০১০ সালের দেশের মানবাধিকারের চিত্র তুলে ধরে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। গতকাল শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ২০১০ সালে ‘ক্রসফায়ার’, ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘এনকাউন্টারের’ নামে দেশে ১৩৩টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তথ্য তুলে ধরা হয়। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘ক্রসফায়ারের’ পাশাপাশি দেশে নতুন প্রবণতা হিসেবে যুক্ত হয়েছে ‘নিখোঁজ’ বা ‘গুপ্তহত্যা’র ঘটনা। এটা আরও উদ্বেগজনক। অনেক ঘটনায়ই নিখোঁজ বা গুপ্তহত্যার পর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধারের পর ভুক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে তাদের স্বজনদের সাদা পোশাকে র্যাব বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তুলে নিয়েছিল। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। কার্যকর কোনো তদন্তের উদ্যোগও নেওয়া হয়নি।
আসকের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল বলেন, ‘সরকার তার নির্বাচনী ইশতেহারে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত বন্ধ হয়নি। এটা অঙ্গীকার ভঙ্গের শামিল। এ ব্যাপারে সরকারের কাছ থেকে নীতিগতভাবে স্পষ্ট অবস্থান পাচ্ছি না। র্যাব বলছে, তারা আত্মরক্ষার্থে গুলি করছে এবং এতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে না।’
আসকের মিডিয়া অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভোকেসি শাখার সমন্বয়ক সাঈদ আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। আরও বক্তব্য দেন আসকের পরিচালক মোহাম্মদ নূর খান।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত বছর জুড়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল নাজুক। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতা, বেশ কজন মেধাবী ছাত্রের মৃত্যু, ছিনতাইকারীদের হাতে গণমাধ্যমকর্মীসহ আরও কিছু হত্যাকাণ্ড, মানুষের নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার প্রবণতা ও এর ফলে গণপিটুনির (গণপিটুনিতে ১২৭ জন নিহত) ঘটনা ঘটেছে।
নারীদের উত্ত্যক্ত করার ঘটনা বেড়েছে। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে খুন হয়েছেন ২০ জন। গত বছর পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ২৯৮ জন সাংবাদিক নানাভাবে হয়রানি, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
এ ছাড়া বিরোধী দলের হরতালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত বল প্রয়োগ এবং বিরোধী দল কর্তৃক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা, দুর্নীতি, খুন, ডাকাতি, ধর্ষণের অনেক মামলাকে ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা’ হিসেবে প্রত্যাহার করার সমালোচনা করে আসক।
অধিকারের প্রতিবেদন: মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনেও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে গত বছরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সবচেয়ে খারাপ নজির হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। তাতে বলা হয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে সরকার বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা গত বছর অব্যাহত ছিল। ২০১০ সালে ১২৭ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটিত হয়েছে র্যাব ও পুলিশ অথবা র্যাব পুলিশের যৌথ বাহিনী কর্তৃক। অধিকার-এর তথ্যানুযায়ী, গত বছর গড়ে প্রতি তিন দিনে একজন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে।
সীমান্তে ৭৪ বাংলাদেশিকে হত্যা: অধিকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ৭৪ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করে। এদের মধ্যে ২৪ জনকে নির্যাতন এবং ৫০ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই সময়ে ৭২ জন বিএসএফের হাতে আহত হয়েছে। একই সময়ে ৪৩ জন বাংলাদেশি বিএসএফের হাতে অপহূত হয়েছে।

সরকারের মন্ত্রীরা কাজ জানেন না: খালেদা

বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া মনে করেন, সরকারের মন্ত্রীরা কাজ জানেন না। [তারা] আইনও বোঝেন না। সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খালেদার দাবি, "প্রধানমন্ত্রী ও তার কয়েকজন উপদেষ্টা দেশ পরিচালনা করছেন।" তিনি সরকারকে দুই বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনগণের কাছে প্রকাশ করার আহ্বান জানান।
সংসদের ক্ষেত্রে বিরোধীদলীয় নেতা মনে করেন, "স্পিকার নিরপেক্ষ হতে চান। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী স্পিকারকে পরিচালনা করছেন।" "একইভাবে বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ করে তিনি [প্রধানমন্ত্রী] প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নিয়ে বসে আছেন," দাবি করে খালেদা বলেন, "কেবল তাই নয়, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের [উপাচার্যের] দায়িত্বও তিনি পালন করছেন। এভাবে প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতার সব কিছু নিজের হাতে নিয়ে এক দলীয় বাকশাল কার্যকর করেছেন।" সংসদে বিরোধী দলকে কথা বলতে দেওয়া হয় না অভিযোগ করে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা বলেন, "সংসদে জনগণের কোনো কথা বলা যায় না। আমাদের সংসদ সদস্যরা যেসব মূলতবি প্রস্তাব আলোচনার জন্য দেন, তা গ্রহণ করা হয় না।

"একইভাবে সংসদের বাইরে সভা-সমাবেশ করে কথা বলতে চাইলে সেখানেও বাধা দেওয়া হচ্ছে। পল্টন ময়দান, দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আমাদের সমাবেশ করতে অনুমতি দেওয়া হয় না। অথচ আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে সভা-সমাবেশ করা হচ্ছে। সেখানে কোনো বাধা নেই।" বিএনপির সহযোগী ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার মহানগর নাট্যমঞ্চ প্রাঙ্গণে এক ছাত্রসমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছিলেন খালেদা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ওপর 'পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের' নিন্দা জানিয়ে দলটির চেয়ারপার্সন খালেদা বলেন, "এভাবে নির্যাতন আমাদের দেশের লোকজনের পক্ষে করা সম্ভব নয়। অন্য কোনো দেশের লোক এটা করেছে।" শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে 'সরকারি দলের দখলবাজি, টেণ্ডারবাজি ও সন্ত্রাসের চিত্র'ও সমাবেশে তুলে ধরেন খালেদা। তিনি কারাবন্দি ছাত্রদলসহ দলীয় নেতাদের মুক্তি দাবি করেন।

সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে দেশবিরোধী সব চুক্তি করেছে বলেও দাবি করেন খালেদা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মেরও অভিযোগ করেন তিনি। ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিরোধীদলীয় নেতা ছাত্রদলের ওয়েব সাইটিি (.িঔপফথনহঢ়.ড়ৎম) ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে নির্মিত গানের একটি সিডি উদ্বোধন করেন খালেদা জিয়া।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, "সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। সংগঠনের শৃঙ্খলা ও ঐক্য ঠিক রাখা চাই। [কেউ] বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।" ছাত্রদলের নতুন কমিটি দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "প্রকৃত ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে কমিটি হতে হবে।"

এর আগে শুক্রবার রাত ১২টায় কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদ্বোধন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সকালে শেরে বাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অর্পণ করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।

ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সিনিয়র সহসভাপতি শহীদুল ইসলাম বাবুলসহ ছাত্রনেতারা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া, সহসভাপতি আবদুল¬াহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুল মান্নান, শামসুজ্জামান দুদু, মীর নাসির উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী, মজিবর রহমান সারওয়ার, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবীর খোকন, বিরোধী দলের প্রধান হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, ছাত্র দলের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ ক ম গোলাম হোসেনসহ সাংসদ, কেন্দ্রীয় ও সাবেক ছাত্রদল নেতারা।