Tuesday, August 09, 2011

এসব কি গুপ্তহত্যা? by গোলাম মর্তুজা

১ জুলাই, সকাল নয়টা, দয়াগঞ্জ বাজার মোড়। স্থানীয় তরুণ জুয়েল গিয়েছিল চিনি, চা-পাতা কিনতে। আর রাজীব বের হয়েছিল নাশতা করতে। এখান থেকেই এদের ধরে নিয়ে যায় সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি দল। এরা নিজেদের ‘ডিবি’ বলে পরিচয় দিয়েছিল। আরেক তরুণ ওয়ার্কশপ কর্মী মিজানুর হোসেনকেও এদের সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর পাঁচ দিন পর ৫ আগস্ট এই তিনজনের মধ্যে দুজনের লাশ পাওয়া যায় গাজীপুরের পুবাইলে রাস্তার ঢালে। ঢাকা-মাওয়া সড়কের পাশ থেকে পাওয়া যায় আরেক তরুণের লাশ। তিনজনেরই হাত-পা বাঁধা ছিল গামছা দিয়ে। মুখেও গোঁজা ছিল গামছা। জুয়েলের কপালের বাঁ পাশে ও গলায় আর রাজীবের মাথার চাঁদিতে গুলির চিহ্ন ছিল। মিজানের শরীরে গুলির কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে তাঁর বাবা জানিয়েছেন। তিন যুবক নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে পরিবারগুলো গেন্ডারিয়া ও যাত্রাবাড়ী থানায় পৃথক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের মুখপাত্র ও গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) উপকমিশনার মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিবির এ ধরনের হত্যার কালচার নেই। ডিবি আসামি ধরে, মামলা ডিটেক্ট করে, আসামি আদালতে চালান দিয়ে দেয়। ওই সময় যারা ডিবির নাম বলেছে, তারা অবশ্যই মিথ্যা পরিচয় দিয়েছে।’
কারা এ গুপ্তহত্যা ঘটাচ্ছে? কী তাদের উদ্দেশ্য? এসব প্রশ্নের জবাব মেলেনি। পুলিশের দায়িত্বশীল কেউ এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছেন না।
তবে যোগাযোগ করা হলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ এস এম শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে বা যারাই এ ঘটনা ঘটাক না কেন, আমাদের এজেন্সিগুলো তা খুঁজে বের করবে বলে আমি আশা করি।’
তিন তরুণের পরিচয়: গাজীপুরের পুবাইল থেকে উদ্ধার হয় জুয়েল সরদার (১৮) ও মিজানুর হোসেনের (২০) লাশ। আর সিরাজদিখান থেকে উদ্ধার হয় রাজীব সরদারের (২৩) লাশ।
জুয়েল আর রাজীব চাচাতো ভাই। দয়াগঞ্জের ৩১/১ সরদারবাড়ি তাদের ঠিকানা। তাদের স্বজনেরা জানান, জুয়েল একটি এসি-ফ্রিজ মেরামতের দোকানে কাজ করত। রাজীব বড় ভাইয়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনের ব্যবসা ও টিউশনি করত। মিজানুরের বাড়ি দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীতে। ভাইয়ের সঙ্গে ওয়ার্কশপে কাজ করত সে।
তবে মিজানুর হোসেন চার বছর আগে দয়াগঞ্জে মোহন হত্যা মামলার ৩ নম্বর আসামি। অন্য দুজনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। অবশ্য রাজীবের এক ভাই রানা সরদার ২০০৫ সালে সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হয়।
রাজীব আর জুয়েলের বিষয়ে জানতে চাইলে গেন্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক আহমেদ বলেন, গেন্ডারিয়া থানার কাজ শুরু হয়েছে দেড় বছর আগে। এই সময়ের মধ্যে এ দুজনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আসেনি। এদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা জিডি নেই।
ওসি বলেন, ১ আগস্ট রাজীব ও জুয়েলের পরিবার তাদের নিখোঁজ হওয়ার কথা জানিয়ে থানায় দুটি জিডি করে।
যেভাবে নিখোঁজ: জুয়েলের বাবা সালাম সরদার বলেন, স্থানীয় জনি চৌধুরীর এসি-ফ্রিজ মেরামতের দোকানে কাজ করত জুয়েল। ৩১ জুলাই খুব সকালে তাদের এক জায়গায় এসি মেরামতে যাওয়ার কথা ছিল। জুয়েল ঘুম থেকে উঠে জনির বাসায় যায়। এর কিছুক্ষণ পরই শোনা যায়, বাজারের মোড়ে কারা যেন জুয়েলকে মারধর করে ধরে নিয়ে গেছে।
জুয়েলের দোকানমালিক জনি চৌধুরী জানান, সকালে জুয়েল কাজে যাওয়ার জন্য বাসায় এলে তাঁর মা জুয়েলকে চিনি ও চা-পাতা কিনতে পাঠান। টাকা নিয়ে বের হয়ে যায় জুয়েল। বেশ কিছু সময় পরও ফিরে না আসায় জনি ফোন করলে জুয়েল বলে, তাকে পুলিশ ধরেছে। এরপর জনি দয়াগঞ্জ বাজার মোড়ে যান।
জনি বলেন, ‘আমি গিয়া দেহি, সিটি তেহারির দোকানের সামনে কয়েকজন মিল্লা জুয়েলরে সমানে মারতাছে। আমি ভয়ে আর সামনে আগাইলাম না। আমি দৌড়ায়া মহল্লায় আইয়া জুয়েলের এক চাচিরে কইলাম, জুয়েলরে ডিবি ধরছে। এরপর পঞ্চায়েতের সরদার ফরিদ চাচারে কইলাম। পরে ফরিদ চাচাসহ মোড়ে গিয়া দেহি, হ্যারা কেউই নাই।’
জুয়েলের বাবা সালাম সরদার বলেন, ‘বাজারের মোড়ে গিয়া আমরা শুনি, ডিবির লোক আইছিল। সাদা মাইক্রোতে জুয়েল আর রাজীবরে তুইল্লা নিয়া গ্যাছে। তারা ওইহানেই মাইরা জুয়েলের মাথা ফাটায়া ফালাইছে। এই সময় একটা পোলা আবার দৌড় পাইড়া ভাগছে।’
রাজীবের ভাই রনি সরদার জানান, সকালে মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নাশতা করার জন্য বের হয় রাজীব। এর একটু পরেই শোনা যায়, রাজীবকে ধরে নিয়ে গেছে ডিবি।
দয়াগঞ্জ বাজার মোড়ে স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী জানান, ওই দিন সকালে সশস্ত্র কয়েকজন লোক সিটি তেহারির দোকানের সামনে জুয়েল আর রাজীবকে পাকড়াও করে। এ সময় জুয়েল তাদের সঙ্গে তর্কাতর্কি শুরু করে। একপর্যায়ে তারা দুজনকে ধরে কী যেন জিজ্ঞেস করতে করতে মারতে থাকে। এ সময় মনে হয়, জুয়েলের মাথাও ফেটে যায়। স্থানীয় কয়েকজন এগিয়ে আসার চেষ্টা করলে ওই লোকগুলো নিজেদের ‘ডিবির লোক’ পরিচয় দেয়। তারা তাদের আশপাশে কাউকে ভিড়তে দেয়নি। তাদের হাতে ছোট পিস্তল ও শটগান ছিল।
একটি রেস্তোরাঁর কর্মী বলেন, রাস্তার ওপর দুজনকে পেটাতে দেখে সেনাবাহিনীর একটি পিকআপ ভ্যান ওইখানে দাঁড়ায়। এ সময় জুয়েল আর রাজীবকে মারধরকারী ব্যক্তিদের একজন এগিয়ে গিয়ে নিজের পরিচয়পত্র দেখালে সেনাবাহিনীর পিকআপটি চলে যায়। একটু পরেই সাদা একটি মাইক্রোবাসে রাজীব আর জুয়েলকে তুলে নিয়ে যায় তারা। এ সময় এক যুবক দৌড়ে পালিয়ে যায়।
জুয়েল আর রাজীব স্থানীয় হওয়ায় তাদের এলাকার প্রায় সব ব্যবসায়ীই চেনেন। স্থানীয় একাধিক ব্যবসায়ী বলেছেন, ওই দিন এলাকার অনেক ব্যবসায়ীই জুয়েল আর রাজীবকে হাতকড়া লাগিয়ে সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যেতে দেখেছেন। প্রথমে কেউ কেউ ভেবেছিলেন, স্থানীয় যুবকদের মধ্যে মারামারি লেগেছে। মুরব্বিরা এগিয়ে এলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওই দলটির একজন বলেন, ‘আমরা ডিবির লোক। আমাদের কাজ করতে দেন, এখানে ভিড় করবেন না।’
নিহত মিজান হোসেনের বাসা ৩৬ বি দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী। সেখানে তার বাবা ফারুক হোসেনের সঙ্গে কথা হয়। ফারুক জানান, ৩১ জুলাই সকালে কাজে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিল মিজান। রাজীব তাকে ফোন করে ডেকে নেয়। ওই দিন দুপুরে তাঁকে একজন খবর দেন যে মিজানকে ডিবি ধরে নিয়ে গেছে।
ফারুক হোসেন বলেন, তাঁদের সঙ্গে রাজন নামের করাতিটোলার এক তরুণকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওই দলটি ধরেছিল। পরে রাজন দৌড় দিয়ে পালিয়ে যায়। এখন আর রাজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
খোঁজাখুঁজি: রাজীব ও জুয়েলকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা গেন্ডারিয়া থানা, মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়, মালিবাগের সিআইডি কার্যালয়, র‌্যাব-১০, র‌্যাব-৩ এবং অন্যান্য জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তাদের পাননি।
রাজীবের ভাই রনি সরদার বলেন, ‘থানায় যাওয়ার পর প্রথমে থানা জিডি নিতে চায়নি। থানার এক দারোগা কইল, হয়তো সন্দেহ করে আটক করছে। চার-পাঁচ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ হইলে ছাইড়া দিব। এই কতা শুইনা আমার মায় একটু সান্ত্বনা পাইল।’
গেন্ডারিয়া থানা থেকে একই রকম সান্ত্বনার বাণী শুনেছেন জুয়েলের বাবা সালাম সরদারও। তিনি বলেন, ‘থানায় যাওয়ার পর দারোগারা কইছে, চিন্তা কইরেন না, ডিবি ধরলে তদন্ত শ্যাষে ছাইড়া দিব।’
মিজানের বাবা ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমি সব জায়গায় খুঁইজাও কোথায় পাইনি। যাত্রাবাড়ী থানায় জিডি করতে গ্যালে ডিবির কথা হুইনা হ্যারা প্রথমে জিডি নিতে চায়নি। এক দিন পর নিছে।’

মিলন হত্যায় পুলিশের সহায়তা ছিল by মাহবুবুর রহমান

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে কিশোর শামছুদ্দিন মিলনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় পুলিশের সহায়তা ছিল। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে করা প্রাথমিক তদন্তে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। কমিটি গত রাতে তাদের খসড়া প্রতিবেদন জেলা পুলিশ সুপারের কাছে জমা দিয়েছে।
এদিকে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিক উল্লাহকে গতকাল প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর আগে এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে তিন পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এদিকে আমলি আদালতে করা মিলনের (১৬) মা কহিনুর বেগমের মামলা গত রাতে থানায় এফআইআর হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি বিশ্বাস আফজাল হোসেন কোম্পানীগঞ্জে আসছেন।
গত ২৭ জুলাই সকালে কিশোর মিলনকে কোম্পানীগঞ্জের টেকেরহাট মোড়ে পুলিশের গাড়ি থেকে নামিয়ে জনতার হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশের উপস্থিতিতে জনতা কিশোরটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। পরে পুলিশ তার লাশ গাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে যায়।
পুলিশ সুপার হারুন-উর-রশীদ হাযারী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুব রশিদের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটির খসড়া প্রতিবেদনে মিলন হত্যাকাণ্ডে পুলিশের সহায়তার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
গতকাল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুব রশীদের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি প্রথম ঘটনাস্থল বেপারী বাড়ির মসজিদ এলাকা, টেকেরহাট বাজার, মিলনের স্কুলপড়ুয়া আত্মীয়ের বাড়ি এবং মিলনের বাড়িতে যায়। মাহবুব রশীদ প্রথম আলোকে জানান, ‘প্রতিটি স্পটে গিয়েছি। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে কথা বলেছি। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গেও কথা হয়েছে। বিচার-বিশ্লেষণ করছি, কেন ঘটনাটি ঘটল। এ ঘটনায় কারা কীভাবে দোষী।’
গত রাতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুব রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘চরকাঁকড়া ইউনিয়নের টেকেরহাট বাজারে পুলিশের কাছ থেকে নিয়ে মিলনকে পিটিয়ে হত্যার সময় পুলিশ যথাযথ ভূমিকা নেয়নি। এমনকি দায়িত্ব পালনে চরম গাফিলতির বিষয়টি তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। পুলিশ তখন মিলনকে রক্ষায় কোনো উদ্যোগ নেয়নি বলেই তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।’
গতকাল ঘটনাস্থল টেকেরহাট বাজারে গিয়ে ব্যবসায়ীদের কয়েকজনের কাছে ওই দিনের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তাঁরা কেউই নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ওসি রফিক উল্লাহ ও স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি গত রোববার টেকেরহাট বাজারে গিয়ে ব্যবসায়ীদের পুলিশের গাড়ি থেকে কিশোর মিলনকে নামিয়ে দেওয়ার কথা তদন্ত কমিটির কাছে বলতে নিষেধ করেন। ‘ডাকাত হিসেবেই জনতা তাকে পিটিয়ে মেরেছে’—এমনটি বলতে বলা হয় তাঁদের। অন্যথায় গণপিটুনির মামলায় তাঁদের জড়ানো হবে বলে শাসিয়ে দেওয়া হয়।
সেদিন আসলে কী ঘটেছিল—জানতে চাইলে বর্তমানে থানার দায়িত্বে থাকা হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থানীয় লোকজনের মোবাইল ফোনে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে আটক মিলনকে থানায় নিয়ে আসতে এসআই আকরাম শেখকে পাঠানো হয়েছিল। পথে যা ঘটেছে বা হয়েছে, তা তো সবার জানা।’
কোম্পানীগঞ্জে ওই দিন ডাকাত সন্দেহে পৃথক স্থানে ছয়জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে পুলিশ দাবি করেছিল। এর মধ্যে টেকেরহাট মোড়ে মারা হয় তিনজনকে। তাদেরই একজন কিশোর শামছুদ্দিন মিলন। মিলনকে মারা হয় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে, আর বাকি দুজনকে মারা হয়েছিল ভোরবেলায়। মিলনকে হত্যার পুরো ঘটনা উপস্থিত কেউ একজন ভিডিও চিত্রে ধারণ করেন। সেই ভিডিও চিত্র লোকজনের হাতে ছড়িয়ে পড়লে পৈশাচিক ওই ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়।
এ ঘটনায় থানায় দায়ের হওয়া ডাকাতি ও খুনের মামলায় নিরপরাধ কিশোর মিলনকেও আসামি করা হয়েছে। তবে মামলার বাদী ডাকাতের গুলিতে নিহত রিকশাচালক মোশাররফ হোসেন মাসুদের বাবা রফিক প্রথম আলোকে জানান, তিনি কেবল সেই রাতে যে কয়েকজনকে চিনেছেন, তাদের নাম পুলিশকে বলেছেন। পরে পুলিশ ওই নামের সঙ্গে যারা গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে, তাদেরও আসামি করেছে বলে শুনেছেন। মিলন নামে কাউকে আসামি করেছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি অশিক্ষিত মানুষ। তারা (পুলিশ) আমাকে কাগজ দিয়েছে, আমি স্বাক্ষর করেছি।’
মিলনের প্রতিবেশী আবদুল হাই জানান, মিলন বাচ্চা ছেলে। টাকার অভাবে লেখাপড়া করতে পারেনি। চট্টগ্রামে চলে গেছে কাজ শিখতে। ১৪-১৫ দিন আগে বাড়ি এসেছিল। তিনি বলেন, ছেলেটি কখনো এলাকায় কোনো অন্যায় কাজ করেছে বলে কেউ বলতে পারবেন না।
গতকাল চরফকিরা ইউনিয়নের চরফকিরা গ্রামে মিলনের বাড়িতে গেলে তার মা কহিনুর বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বারবার প্রথম আলোকে বলতে থাকেন, ‘সেই দিন (২৭ জুলাই) সকালে মিলন আমাকে ফোন করে বলে, “মা, কিছু লোক আমাকে বেপারী বাড়ির স্কুলের ঘাটলায় আটকে রেখেছে, তুমি...” এ কথা বলার পরই লাইন কেটে যায়। আমি বহুবার চেষ্টা করেও ফোনে আর কথা বলতে পারিনি। তা ৎ ক্ষণিক আমার ভাশুর জসিম উদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যাই। লোকজন জানায়, আমার নিরপরাধ ছেলেকে মারধর করে সঙ্গে থাকা টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে জামাল উদ্দিন মেম্বার (স্থানীয় ইউপি সদস্য) ও মিজানুর রহমান ওরফে মানিক পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে।’
কান্না সামলিয়ে কহিনুর বলেন, ‘সেখান থেকে থানার উদ্দেশে যাওয়ার পথে টেকেরহাট বাজারে লোকজনকে বলাবলি করতে শুনি, পুলিশ এক ছেলেকে ডাকাত বলে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। পুলিশই তার লাশ থানায় নিয়ে গেছে। থানায় গিয়ে দেখি পাঁচটি লাশের সঙ্গে মিলনের লাশ পড়ে আছে। থানার ভেতর ঢোকার চেষ্টা করেও পুলিশের বাধার কারণে পারিনি।’
চরফকিরা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের চরফকিরা গ্রামের সৌদিপ্রবাসী গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মিলন। চার ভাইয়ের মধ্যে মিলন সবার বড়। সে ২০১০ সালে স্থানীয় কবি নজরুল উচ্চবিদ্যালয়ে দশম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়। এরপর আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে পরীক্ষা দেয়নি। মিলনের ছোট তিন ভাইয়ের একজন বর্তমানে একই স্কুলে দশম শ্রেণীতে পড়ে। বাকি দুজন (যমজ) জহিরুদ্দিন রুবেল ও সাইফুদ্দিন ফয়সাল উত্তর চরফকিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে।
মিলনের বাবা গিয়াসউদ্দিন প্রায় আড়াই বছর আগে পৈতৃক ভিটা (দুই শতক জায়গা) চাচাতো ভাইয়ের কাছে বিক্রি করে সৌদি আরবে যান। শর্ত ছিল, বিদেশে গিয়ে রোজগার করে টাকা পাঠাবেন এবং ওই টাকায় জমি কিনে বাড়ি করা পর্যন্ত তাঁরা এই ভিটায় থাকবেন।
লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর প্রথম কিছুদিন কক্সবাজারে গিয়ে ছোটখাটো কাজ করে মিলন। পরে বাবা খবর পাঠায় ওয়েল্ডিংয়ের কাজ শেখার জন্য, তাহলে তাঁকে বিদেশে নিয়ে যাবেন। তিন-চার মাস আগে চাচা সাহাবউদ্দিনের সঙ্গে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে গিয়ে ওয়েল্ডিংয়ের কারখানায় কাজ শিখতে শুরু করে মিলন। এর মধ্যে বাড়িতে পল্লি বিদ্যুতের মিটারে সমস্যা হওয়ায় এবং বাবার পাঠানো টাকায় কেনা জমি নিবন্ধনে মাকে সহায়তা করতে ১৪-১৫ দিন আগে বাড়িতে আসে সে।
মিলনের মা জানান, কিছুদিন আগে জমি কেনার জন্য এক লাখ ২৫ হাজার টাকা পাঠান মিলনের বাবা। ওই টাকায় ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কামাল মেম্বারের কাছ থেকে এক খণ্ড জমি কিনেছেন তাঁরা। সেই জমি রেজিস্ট্রি ও দলিল লেখানোর জন্য ২৭ জুলাই বাড়ি থেকে ১৪ হাজার টাকা নিয়ে সকাল সাড়ে আটটার দিকে বের হয়েছিল মিলন। আর ফিরল লাশ হয়ে।
কহিনুর বেগম বলেন, ‘শুনেছি, উপজেলা সদরে যাওয়ার পথে চরকাঁকড়ার বেপারী বাড়ির বায়তুল নূর জামে মসজিদের ঘাটলায় বসে মিলন অপেক্ষা করছিল চরকাঁকড়া একাডেমি উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া তাঁর (মিলনের মায়ের) ফুফাতো বোনের মেয়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য। স্কুলে তার পরীক্ষা চলছিল।’
মিলনের মায়ের করা মামলার আসামি চরকাঁকড়া ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী সাংসদ ফেরদৌস আরা বেগমের স্বামী মিজানুর রহমান মানিক বলেন, ‘অপরিচিত দেখে আমি ছেলেটিকে এখানে বসে থাকার কারণ জিজ্ঞেস করি। স্কুলে তাঁর আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য বসে আছে বলে জানায় সে। বাড়ি কোথায় জানতে চাইলে সে জানায়, চরফকিরা। এর মধ্যে আশপাশের কিছু লোক জড়ো হয়। তারা ছেলেটিকে ডাকাত বলে সন্দেহ করে। কারণ, ওই দিন ভোর রাতে আশপাশের এলাকায় ডাকাত ধরে গণপিটুনি দেওয়া হয়েছিল।’
মানিক জানান, ওই সময় ঘটনাস্থলে স্থানীয় ইউপি সদস্য জামালউদ্দিন আসেন। তিনিও মিলনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এরপর আমরা পার্শ্ববর্তী স্কুল থেকে ওই মেয়েটিকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করি। প্রথমে সে কিছু না বলে চুপ করে থাকে। সম্ভবত অনেক লোক দেখে চুপ করে ছিল। পরে আমি ধমক দিলে ছেলেটিকে তার আত্মীয় বলে জানায় মেয়েটি।
মানিক দাবি করেন, ‘এর পরও উপস্থিত লোকজন মিলনকে ডাকাত সন্দেহে হালকা মারধর করে। আমি এবং জামাল মেম্বার ছেলেটিকে মক্তবের ভেতর আটকে রাখি এবং থানায় খবর দিই। পুলিশ এলে তাদের কাছে সোপর্দ করি।’
চরকাঁকড়া একাডেমি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, ওই মেয়ে ছেলেটিকে তাদের আত্মীয় বলে স্বীকার করেছে।
মিলনের ওই খালাতো বোন গতকাল স্কুলে যায়নি। তার গ্রামের বাড়ি চরকাঁকড়া গ্রামে গেলে তার বাবা মিলনকে তাদের আত্মীয় বলে স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটাই করেননি। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছে বলে বলছে। আমি এ সম্পর্কে কিছুই জানি না।’ মেয়েটির সঙ্গে কথা বলতে দিতেও রাজি হননি তিনি।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এই পরিবারটিকে এ বিষয়ে মুখ না খুলতে কোম্পানীগঞ্জ থানার পুলিশের পক্ষ থেকে চাপ দেওয়া হয়েছে। পুলিশকে বাঁচাতে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধিও দৌড়ঝাঁপ করছেন বলে ওই সূত্রগুলো জানায়।

ছাত্রলীগের রোষানলে শিক্ষকেরা by শরীফুল ইসলাম

য়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ধাওয়া ও হামলায় পাঁচজন শিক্ষকসহ ২০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় ক্যাম্পাসে ব্যাপক ভাঙচুর ও দুটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
ছিনতাইয়ে জড়িত অভিযোগে ছাত্রলীগের দুই কর্মীকে পুলিশে সোপর্দের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের কর্মীরা শিক্ষকদের ধাওয়া ও হামলা করেন। এদিকে রোববার রাতে প্রক্টরকে গালিগালাজ ও তাঁর বাসভবনের সামনে ভাঙচুরের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি গতকাল দুপুর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রলীগের পাঁচ নেতা-কর্মী আরিফুল ইসলাম, নূর মোহাম্মদ, সাজ্জাদ হোসেন, সুমন চন্দ্র রায় ও শাকিল গত রোববার দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনে যান। তাঁরা সেখানে আপত্তিকর অবস্থায় তিন জুটিকে দেখে জুটিগুলোর কাছে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় তাঁরা তিনটি মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওই পাঁচজন সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদীচীর ধারে নদীর পাড়ে যান। সেখানে তাঁদের তিনজন থেকে যান এবং আরিফুল ও নূর মোহাম্মদ নদীর পাড় দিয়ে হেঁটে বৈশাখী চত্বরের দিকে যান। ওই দুজনকে নিরাপত্তাকর্মীরা আটক করেন। খবর পেয়ে প্রক্টর আবু হাদী নুর আলী খান সেখানে গিয়ে ওই দুজনকে মারধর করেন এবং তাঁদের নিজ গাড়িতে করে ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানায় সোপর্দ করেন।
প্রশাসন সূত্র জানায়, নূর মোহাম্মদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হল ও আরিফুল ফজুলল হক হলের আবাসিক ছাত্র। প্রক্টর আবু হাদী অভিযোগ করেন, এ দুজনকে পুলিশে সোপর্দ করার জের ধরে রোববার রাত ১০টার দিকে ছাত্রলীগের একাংশ তাঁর ক্যাম্পাসের ডি/৩ বাসার সামনে গিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, ফুলের টব ভাঙচুর করে ও গেটে লাথি মারে।
শিক্ষকদের সূত্র জানায়, রাতের ওই ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের গ্যালারিতে জরুরি সভা হয়। সভা শেষে বেলা একটার দিকে ওই ঘটনার প্রতিবাদে এবং এর সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের শাস্তির দাবিতে শিক্ষক সমিতির ব্যানারে মৌন মিছিল বের হয়। ক্যাম্পাসের জব্বারের মোড়ে ছাত্রলীগের একাংশের কর্মী-সমর্থকেরা মিছিলে অংশ নেওয়া শিক্ষকদের লক্ষ্য করে কটূক্তি করেন। একপর্যায়ে কয়েকজন শিক্ষক ধাওয়া করে চার শিক্ষার্থী নূরে আলম, আহসান হাবিব, রাসেল আহমেদ ও ওয়ালীউল্লাহকে ধরে ফেলেন। শিক্ষকেরা ওই চারজনকে টেনেহিঁচড়ে প্রক্টর কার্যালয়ে নিয়ে যান এবং পরে পুলিশে সোপর্দ করেন।
সূত্র জানায়, ওই চারজনকে আটক করা নিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুজ্জামান ইমন ও জ্যেষ্ঠ নেতা-কর্মীদের বাগিবতণ্ডা হয়। তাঁরা ওই চারজনকে পুলিশে সোপর্দ না করার অনুরোধ জানান। একপর্যায়ে কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হাতাহাতি শুরু হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানকে মারধর করা হয়। এ সময় প্রক্টর কার্যালয়, ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টার কার্যালয়, টিএসসি, প্রশাসন ভবন, কৃষি অনুষদ ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া একটি ছাত্রাবাস ও শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ব্যবহূত কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। দুটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগও করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। শিক্ষকেরা সেখান থেকে সরে গিয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে আশ্রয় নেন। ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা রামদা, রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে শিক্ষকদের ধাওয়া করেন এবং ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। ইটের আঘাতে পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুবাস চন্দ্র দাস গুরুতর আহত হন। তিনি রাত নয়টা পর্যন্ত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে অচেতন অবস্থায় ছিলেন।
ছাত্রলীগের ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল প্রতীক সিদ্দিক, প্রক্টরসহ চার শিক্ষক ও কর্মকর্তা এবং ছাত্র মিলিয়ে আরও কমপক্ষে ১৫ জন আহত হন। হামলার ছবি তুলতে গেলে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সাংবাদিকের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেন ছাত্রলীগ কর্মীরা।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষক সমিতি জরুরি বৈঠক করে দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা না নেওয়ার তা ৎ ক্ষণিক ঘোষণা দেন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য শিক্ষকেরা বিকেল চারটার দিকে উপাচার্যের বাসভবনে যান।
বিকেল চারটার দিকে উপাচার্য প্রক্টরিয়াল বডি, ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার উপস্থিত ছিলেন। তবে শিক্ষক সমিতির সঙ্গে উপাচার্য বৈঠক করেননি।
এ সময় ছাত্রলীগ আটক চারজনের মুক্তির দাবিতে সহস্রাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী নিয়ে ক্যাম্পাসে মিছিল করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করে। বিকেল পাঁচটার দিকে উপাচার্য ছাত্রলীগের সঙ্গে বৈঠক করেন।
ওই বৈঠকে উপস্থিত ছাত্রলীগের নেতা ও শিক্ষকদের সূত্র জানায়, বৈঠকে ছাত্রলীগ গতকাল আটক হওয়া চার কর্মীর মুক্তি এবং ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা ও প্রক্টরের পদত্যাগ, ছাত্রলীগের কর্মীদের আটকের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। দাবি অনুযায়ী সন্ধ্যা সাতটার দিকে উপাচার্যের নির্দেশে ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তাফিজুর রহমান কোতোয়ালি থানা থেকে ওই চারজনকে ছাড়িয়ে আনেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শামছুদ্দিন আল আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুজ্জামান ইমন এ বিষয়ে বলেন, ‘ছাত্রলীগ এ ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নয়। কোনো প্রকার তদন্ত কমিটি ছাড়া শিক্ষকদের ছাত্র প্রহার ও ধরপাকড়ের ঘটনা পুরোপুরি অন্যায়। কাজেই সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে আমরা ওই ছাত্রদের মুক্তি দাবি করেছি। এ ঘটনায় আমরা প্রক্টরসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সবার ও জড়িত শিক্ষকদের পদত্যাগ দাবি করেছি।’
প্রক্টর আবু হাদী নূর আলী খান বলেন, জড়িত সবাইকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। তাঁর পদত্যাগ দাবির বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘দুঃখের কথা আর কী বলব! ছাত্রদের হাতে আজকের আমার এই গণপিটুনির কথা কোনো দিন ভুলব না।’ তিনি এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মো. সামছুল আলম জানান, প্রক্টরের বাসায় হামলার প্রতিবাদে ও জড়িতদের শাস্তির দাবিতে দুপুর থেকেই অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষক সমিতি। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় আবার বৈঠক করে পরবর্তী কর্মসূচি নেওয়া হবে।
ঘটনার বিষয়ে জানতে উপাচার্য এম এ সাত্তার মণ্ডলের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সারোয়ার বলেন, ‘রোববার ছিনতাইয়ের অভিযোগে আটক দুই ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল চার ছাত্রকে শিক্ষকেরা দুপুরে আমাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন, ইফতারের সময় শিক্ষকেরাই আবার তাঁদের ছাড়িয়ে নিয়ে গেছেন।’ তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত চার প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।