Saturday, May 03, 2014

অপহরণ ও হত্যা সুশৃঙ্খল গোষ্ঠীর কাজ @মানবজমিন

নারায়ণগঞ্জে ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ সাত জনকে অপহরণ এবং হত্যার ঘটনা কোন সুশৃঙ্খল গোষ্ঠীর কাজ বলে মনে করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক (তদন্ত) নূর খান৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, এই ঘটনা নিয়ে তাঁরা তদন্ত শুরু করেছেন৷ নূর খান জানান, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) নারায়ণগঞ্জে ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ সাত জনকে অপহরণ এবং হত্যার ঘটনা তদন্ত শুরু করেছে৷ আর তদন্তের শুরুতেই তাঁরা নিহত সাত জনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ তাঁরা অপহরণের দিন থেকে মৃতদেহ উদ্ধার এবং হত্যার ধরন নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন৷ নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, নিহত সাত জন বিশেষ করে ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে পুলিশ প্রশাসনকে তাৎক্ষণিকভাবে জানানোর পরও তারা অপহৃতদের উদ্ধারে কার্যকর এবং দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি৷ পদক্ষেপ নিলে তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হত৷ নূর খান জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই নীরবতা তাত্পর্যপূর্ণ৷ এ ছাড়া তাদের কাছে মনে হয়েছে, অপরাধীরা কোনো চাপের মুখে ছিল না বা তাদের নিয়ন্ত্রণ করার সামর্থ্য স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ছিলনা৷
নূর খান বলেন, সাত জনকে একই প্রক্রিয়ায় হত্যা করা হয়েছে এবং তাদের লাশ নদীতে ফেলে দেয়ার প্রক্রিয়াও এক৷ আর যারা এই কাজ করেছেন তারা তা করেছেন ঠাণ্ডা মাথায়, ভেবেচিন্তে চাপমুক্ত অবস্থায়৷ তিনি আরও বলেন, সব কিছু বিশ্লেষণ এবং পর্যালোচনা করে তাদের কাছে মনে হয়েছে সাত জনকে অপহরণ এবং হত্যার ঘটনায় একটি, দক্ষ, পেশাদার এবং সুশৃংঙ্খল গোষ্ঠী জড়িত৷ এবং সুপরিকল্পিতভাবে এই কাজ করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, অতীতে আরো অনেক অপহরণ এবং হত্যার ধরনের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের নৃশংস ঘটনার মিল রয়েছে৷ ফলে অতীতের মতো একই গোষ্ঠী এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে তাদের কাছে মনে হয়েছে৷ এই ঘটনার সঙ্গে সাধারণ কোনো অপরাধী বা অপরাধী গ্রুপ জড়িত বলে মনে করেনা আসক তদন্ত দল৷ নূর খান জানান, তাঁরা তদন্ত শেষে প্রতিবেদন প্রকাশ করবেন এবং তা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কেও দেবেন৷
এদিকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, দেশ এখন বিশেষ সন্ধিক্ষণ অতিক্রম করছে৷ প্রত্যেকের ভেতরে আতঙ্ক ও ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে৷ এ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন, শঙ্কিত ও চিন্তিত৷ এ অবস্থা থেকে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর ভূমিকা নিতে হবে৷ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, দেশের এ অবস্থার প্রধান দায় বর্তায় রাষ্ট্রের ওপর৷ তবে এ কথাও মনে রাখতে হবে নাগরিকদের নিরাপত্তা, মানবাধিকার সুরক্ষা রক্ষা করা কেবল সরকারের একার দায়িত্ব হতে পারে না৷ আর এটা পারস্পরিক দোষারোপের বিষয়ও নয়৷ রাষ্ট্র ও সরকারের ওপর দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে নীরবে বসে থাকা যুক্তিযুক্ত নয়৷ শুক্রবার ঢাকার বাইরে একটি মানবাধিকার কর্মশালায় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান এ সব কথা বলেন৷ সূত্র: ডয়েচ ভেলে

ভূতের সঙ্গে হলিউড অভিনেত্রীর ২ বার ‘উপভোগ্য যৌন সম্পর্ক’ @মানবজমিন

ইউক্রেনের বংশোদ্ভূত হলিউড অভিনেত্রী ও সাবেক মডেল নাতাশা ব্ল্যাসিক অদ্ভুত এক দাবি করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন। বলাই যায় যে, এ মন্তব্য করে তিনি এখন লাইম-লাইটে। নাতাশার দাবি, ভূতের সঙ্গে দুইবার যৌন সম্পর্কে মিলিত হয়েছেন তিনি এবং সেটা তিনি বেশ উপভোগও করেছেন। হলিউডের এ অভিনেত্রী জানান, বাড়িতে একা থাকার সময় একদিন অদৃশ্য এক শক্তি তাকে বিছানায় ফেলে দেয় এবং জোর করেই তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে। খবরটি দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। নাতাশা ব্ল্যাসিক বলছিলেন, কিছু একটা ঘরে প্রবেশ করেছে বলে মনে হলো আমার। কিন্তু, কাউকে দেখতে পেলাম না। হঠাৎ করেই আমি অনুভব করলাম যে কেউ আমাকে স্পর্শ করছে। আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের হাত আমাকে ধাক্কা দিলো। এরপর আমি আমার শরীরের ওপর তাদের শরীরের ওজন অনুভব করলাম। কিন্তু, আমি কাউকে দেখতে পাইনি। প্রথমদিকে আমি বেশ দ্বিধগ্রস্ত ছিলাম। এরপর শিথিলভাবে থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম। আর এটা ছিল সত্যিই আনন্দদায়ক। প্রকৃতপক্ষেই আমি বিষয়টি উপভোগ করেছিলাম। তিনি জানান, ভূতটি সেদিন চলে যায় এবং ১ মাসেরও বেশি সময় পর ফিরে আসে এবং পুনরায় তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হয়।

মনমোহন সিংকে মানুষ দুঃখী মানুষ হিসেবে মনে রাখবে: অমর্ত্য সেন @মানবজমিন

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং একজন ট্রাজিক ব্যাক্তি হয়ে উঠেছেন। দুর্নীতি দূর করার ক্ষেত্রে তিনি তার উচ্চাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। কাজ করার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত রাজনৈতিক ক্ষমতা না থাকায় তিনি অসহায়তার শিকার হয়েছেন। অমর্ত্য সেন স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে, দুর্ণীতি দূর করার ইচ্ছে থাকলেও মনমোহন সিংয়ের হাতে ছিল না রাজনৈতিক ক্ষমতা। আর তাই তাকে যারা চেনেন তারা তাকে একজন দুঃখী মানুষ হিসেবেই মনে রাখবেন। দীর্ঘ ১৩ বছর বাদে এবার শান্তিনিকেতেন অমর্ত্য সেন লোকসভা নির্বাচনে  ভোট দিয়েছেন। ভোট দেবার পর আগের মতই তিনি জানিয়েছেন, নরেন্দ্র মোদীকে তিনি প্রধানমন্ত্রী দেখতে চান না। তিনি চান ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবেন একজন ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাক্তি। তবে হিন্দুস্থান টাইমসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশকুমারের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবার যোগ্যতা রয়েছে। বিহারে নীতিশকুমার হয়তো জিততে পারবেন না, তাই বলে তিনি সফল নন একথা বলা যায় না।  অমত্য সেন অবশ্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনমোহনের প্রশংসাও করেছেন। তিনি বলেছেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে তিনি এমন কিছু উদ্যোগ নিযেচেন যা প্রশংসার যোগ্য। তিনি মনে করেন, চীনের মত দেশের উন্নয়নের হারকে প্রায় ধরে ফেলার ক্ষেত্রে ভারতের দ্বিতীয ইউপিএ সরকার দেশের অর্থনীতিকে  সর্বোচ্চ হারে নিয়ে যেতে সফল হয়েছে। ভারতের নতুন সরকারের সামনে দু ধরণের ইস্যু থাকবে বলে তিনি জানিয়েচেন। একটি হল স্বল্পমেয়াদী, অন্যটি হল দীর্ঘমেয়াদী। স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য হতে হবে সমৃদ্ধিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং মুদ্রস্ফীতিকে কমানোর জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহন। তবে সরকারের দীর্ঘমেয়াদী নীতির পরিবর্তন না করে এটা করা খুব সহজ নয় বলে মনে করেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। ভারতের অর্থনীতিকে বিশ্বের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থায় নিয়ে আসাটাও খুব জরুরি বলে তিনি জানান।

সরকার গুম ও অপহরণের দায় এড়াতে পারে না- ওবায়দুল কাদের @মানবজমিন

সরকার কোনভাবেই গুম ও অপহরণের দায় এড়াতে পারেনা বলে মন্তব্য করেছেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শনিবার দুপুরে লক্ষ্মীপুরের আলেকজান্ডার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, একটি মহল দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করার জন্য কিছুদিন ধরে  যে হারে অপহরণ ও গুম চলাচ্ছে, যেহেতু আমরা সরকারে আছি, সেহেতু গুম ও অপহরণের দায় সরকার কোনভাবে এড়াতে পারে না। দেশে অচিরে দেশে গুম ও অপহরণ বন্ধ হবে বলে আশা করেন তিনি। যারা এসব ঘটনার সাথে জড়িত সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়াও আশ্বাস দেন তিনি। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার দেশে বিদ্যুৎ, যোগাযোগসহ বিভিন্ন খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। যা অন্য কোন সরকার করতে পারেনি। একটি মহল সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র চলাচ্ছে। এসব যড়যন্ত্র ও অপপ্রচার কোন কাজে আসবেনা। তাই সবাইকে এসব বিষয়ে সর্তক থাকার পরামর্শ দেন। এ সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ শরীফুল ইসলাম, রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন, রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মাওলা চৌধুরী, রামগতি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল ওয়াহেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আসামে ৩২ মুসলিম হত্যা, ৭০ বাড়িতে আগুন @মানবজমিন

ভারতের আসাম রাজ্যের কোকরাঝাড় ও বকশা জেলায় গত ২ দিনে উগ্রপন্থীদের সহিংস হামলায় ৩২ মুসলিম নিহত হয়েছেন। সহিংসতায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও ১৪ জন। তাদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বকশা জেলায় মানস জাতীয় উদ্যানের কাছে বেকি নদীর তীর ঘেঁষা মুসলিম সম্প্রদায়ের কমপক্ষে ৭০টি বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে উগ্রপন্থীরা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন জি নিউজ। ওই জেলার খগড়াবাড়ি গ্রাম থেকে গতকাল গভীর রাতে ৪ শিশু ও ২ নারীসহ ৭ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করা শিশু দুটির নাম ইলিনা খাতুন ও আরিফুল ইসলাম। বেকি নদীর কাছে একটি জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা ৩টি শিশুকেও উদ্ধার করে পুলিশ। তাদের বয়স ৭ থেকে ১০ বছরের মধ্যে। গতকাল রাত পর্যন্ত শিশু ও নারীসহ ২৩টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা ৩২ জনে উন্নীত হয়েছে। এ সহিংসতায় আতঙ্ক বিরাজ করছে জনমনে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আসামের মানুষকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানিয়ে একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী আসামে সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। মনমোহন সিংয়ের পক্ষ থেকে এ আবেদন জানানো হয়। এদিকে সহিংসতা আক্রান্ত অঞ্চলগুলোতে অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি করা হয়েছে। সেনাবাহিনী মোতায়েনের পরও হামলা অব্যাহত ছিল আসামের জেলা দুটিতে।

আটক বাণিজ্য: দুই মন্ত্রীর তোপের মুখে পড়েছিলেন মিজানুর @প্রথম আলো

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেছেন, 'আমি অনেক আগে সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছিলাম যে সরষের ভেতর ভূত আছে, সেই ভূত চিহ্নিত করুন, সমস্যার সমাধান করুন। বলেছিলাম, দেশে আটক বাণিজ্য চলছে, এ বাণিজ্য বন্ধ করুন। এসব বক্তব্যের কারণে তখন অন্তত দুজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী আমার সমালোচনা করে বলেছিলেন, আমি নাকি জামায়াত-শিবিরে রূপান্তরিত হয়েছি। তাঁদের আজ প্রশ্ন করি, যারা নতুন করে অপহূত হলো, উদ্ধার করা হলো, তাদের অপহরণকারীদের মধ্যে দুজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। এখন তাঁরা কী বলবেন?' আজ শনিবার দুপুরে বরগুনায় মানবাধিকার কর্মী সমাবেশ উদ্বোধনকালে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
দেশের বর্তমান অবস্থা 'চরম ভীতিকর' উল্লেখ করে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, 'আমরা অনেক আগেই আপত্তি তুলেছি, সাদা পোশাকে যেন কাউকে আটক করা না হয়। এখন অবস্থা যখন ভীতির পর্যায়ে চলে গেল, তখন প্রজ্ঞাপন করে সাদা পোশাকে কোনো অভিযান না চালাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে এই পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। কোনো অভিযোগে কাউকে গ্রেপ্তার বা আটক করতে হলে অবশ্যই পোশাক পরিহিত অবস্থায় এবং সংশ্লিষ্ট বাহিনীর পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড) দেখাতে হবে। এমনকি যাঁকে গ্রেপ্তার বা আটক করা হবে অবশ্যই সেই এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাক্ষী রেখে আটক করতে হবে। এ জন্য রাষ্ট্রের অতিরিক্ত বাজেট বা বরাদ্দের দরকার নেই। এটা নিশ্চিত করা হলে দেশে খুন, গুম, অপহরণের এই ভয়ানক অবস্থা অনেকাংশে কমে যাবে।'
মিজানুর রহমান বলেন, 'এই শঙ্কাময় জীবন আমরা চাই না। নাগরিকদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। এটা কোনো ছোট বিষয় নয়।' খুন, অপহরণের বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমরা জানতে চাই, এর পেছনে কারা জড়িত?'
দলীয় 'রেড অ্যালার্ট' জারি প্রসঙ্গে
নাম উল্লেখ না করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, একটি দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি দলটি লাল সংকেত (রেড অ্যালার্ট) জারি করে তাঁদের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছে। ওই দলের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, সারা দেশের মানুষের কথা, নিরাপত্তার কথা না ভেবে কী করে নিজের দলের নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে ?
'চাটুকারদের কাছ থেকে দূরে থাকুন'
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমার মুখে এসব কথা শোভা পায় না। তবু বলি, চাটুকরদের কাছ থেকে দূরে থাকুন এবং দলের যে নেতাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তাঁদের বলুন সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে। কঠোরভাবে বলে দিন, কাজের মধ্য দিয়ে তাঁদের যোগ্যতা, দক্ষতা নির্ধারিত হবে, অন্য কোনো পন্থায় নয়। তার পরও ব্যর্থতার এই দায় আপনি নেবেন না। এসব অপরাধ নির্মূলে উদ্যোগ নেবেন। আমাদের প্রত্যাশা, আপনি দৃঢ় হবেন।'
দুই দলের উদ্দেশে
প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের নেতাদের উদ্দেশ করে মিজানুর রহমান বলেন, 'দেশের বর্তমান এই ভীতিকর অবস্থাকে রাজনৈতিক বুলি আউরে পাড় পাবেন না। এ নিয়ে রাজনৈতিক খেলা কাম্য নয়। একে অপরকে দোষারোপ করার মধ্য দিয়ে নাগরিক জীবনকে আরও শঙ্কার মধ্যে ফেলে দেবেন না। বর্তমানে দেশের এ অবস্থার প্রধান দায় বর্তায় রাষ্ট্রের ওপর।'
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে এই কর্মশালায় কর্মী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন কমিশনের সদস্য কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, কমিশনের সচিব এম এ সালাম, ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশনের সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন খান, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক বনশ্রী মিত্র নিয়োগী, বরগুনা জেলা প্রশাসক আবদুল ওহাব ভূইঞা ও পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ।
কর্মশালায় 'মেয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার নিশ্চয়তায় চাই উত্পীড়নমুক্ত শিক্ষাঙ্গন ও জনপদ' শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বরগুনার প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক এম জসীম উদ্দীন। কর্মশালায় বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলার প্রশাসনের কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মী ও তৃণমূল পর্যায়ের মানবাধিকারকর্মীসহ ২০৫ জন প্রতিনিধি অংশ নেন।

গণমাধ্যমের প্রতিপক্ষ নয় প্রগতিশীল গণতন্ত্র: ইনু @প্রথম আলো

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের প্রতিপক্ষ নয় প্রগতিশীল গণতন্ত্র, বরং নব্বইয়ের যে শক্তিকে পরাজিত করা হয়েছে, সেই শক্তি এবং সাম্প্রদায়িকতার শক্তি। আজ শনিবার বিশ্ব মুক্ত সাংবাদিকতা দিবস উপলক্ষে পিআইডি মিলনায়তনে তথ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় ইনু খালেদা জিয়াকে জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক বলে অভিহিত করেন। সাংবাদিকদের উদ্দেশে তথ্যমন্ত্রী বলেন, শুধু ওয়েজ বোর্ড নিয়ে আন্দোলন করলে চলবে না। জঙ্গিবাদ ও এর পৃষ্ঠপোষককে চিহ্নিত করতে হবে। আজ পত্র-পত্রিকায় আন্তর্জাতিক একটি জরিপের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, মুক্ত সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আরও তিন ভাগ পিছিয়েছে। এই প্রসঙ্গটি টেনে ইনু সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের এ বিষয়ে একটি জরিপ চালানোর অনুরোধ জানান। ইনু বলেন, পাঁচ বছর আগেও সংবাদমাধ্যমের ওপর যে নিয়ন্ত্রণ ছিল, এখন সেটুকুও নেই। তাঁর (ইনু) সময়কালে সংবাদমাধ্যম সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছে। তিনি গুম ও খুনের ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমকে তথ্য দিয়ে সবাইকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।

কাল গণ-অনশনে থাকবেন খালেদা @প্রথম আলো

বিএনপির আগামীকালের গণ-অনশন কর্মসূচিতে যোগ দেবেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কাল রোববার সারা দেশে এ কর্মসূচি পালন করবে দলটি। কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে কর্মসূচি পালন করা হবে। এতে বিকেল চারটায় যোগ দেবেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আজ শনিবার সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ কথা জানান। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা ও গুম-খুনের প্রতিবাদে গত ২৬ এপ্রিল এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল দলটি। আজকের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সকাল নয়টা থেকে গণ-অনশন শুরু হয়ে চলবে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত।

গলাচিপায় লঞ্চডুবি, সাতজনের লাশ উদ্ধার

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় গলাচিপা নদীতে কালবৈশাখীর কবলে পড়ে এমভি শাথিল নামের একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবে গেছে। দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শনিবার বেলা সোয়া দুইটার দিকে উপজেলার কলাগাছিয়া লঞ্চঘাট থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিণে এ ঘটনা ঘটে। উদ্ধার হওয়া সাতটি লাশের মধ্যে একটি শিশুর, পাঁচটি নারীর ও একটি পুরুষের। এদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন গলাচিপা উপজেলার ইটবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা রুহিনা বেগম (২৪), রাঙ্গাবালী উপজেলার সেনের হাওলা গ্রামের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম (৫০), রাঙ্গাবালী উপজেলার ১৯ নম্বর গ্রামের লুত্ফা বেগম (২১)।
প্রথম আলোকে লঞ্চ ডুবির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. দুলাল। তিনি জানান, লঞ্চ ডুবির পর স্থানীয় লোকজন ট্রলার ও নৌকা নিয়ে উদ্ধারকাজ করছেন। পটুয়াখালী নৌবন্দরের সহকারী পরিচালক এস এম বদরুল আলম জানান, ডুবে যাওয়া লঞ্চটি উদ্ধারের জন্য উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তমকে বরিশাল থেকে ঘটনাস্থলের দিকে রওনা হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রুস্তম বরিশাল থেকে গলাচিপায় উদ্দেশে রওনা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী মো. সায়েমুজ্জামান জানান, তাঁরা ঘটনাস্থলে থেকে উদ্ধারকাজ পর্যবেক্ষণ করছেন। নিহত প্রত্যেক ব্যক্তির দাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।
দুর্ঘটনার পর সাঁতরে তীরে উঠে আসা ওই লঞ্চের যাত্রী মো. পলাশ প্রথম আলোকে বলেন, ঝড় উঠেছে টের পেয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ কেবিন থেকে বের হয়ে আসেন তিনি। যখন বুঝতে পারেন লঞ্চটি ডুবে যাচ্ছে, তখন স্ত্রী-সন্তানসহ নদীতে ঝাঁপ দেন। পরে তাঁরা সাঁতরে তীরে উঠে আসেন। পেছনে ফিরে দেখেন, লঞ্চটি পুরোপুরি ডুবে গেছে। তিনি জানান, তাঁর মতো লঞ্চের আট থেকে ১০ জন যাত্রী সাঁতরে তীরে উঠেতে পেরেছেন। জানা গেছে, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গলাচিপা থেকে পটুয়াখালীর উদ্দেশে যাত্রা করে এমভি শাথিল। এতে কতজন যাত্রী ছিল, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, লঞ্চটিতে প্রায় ১০০ জন যাত্রী ছিল।

অশালীন আচরণ, পুনম পান্ডে গ্রেপ্তার

আবারও উল্টা-পাল্টা কীর্তি ঘটিয়ে খবরের শিরোনাম হলেন বলিউডের আলোচিত মডেল ও অভিনেত্রী পুনম পান্ডে। গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে মুম্বাইয়ের রাস্তায় অশালীন আচরণের অভিযোগে পুনমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে অবশ্য সতর্ক করে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পুনমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গভীর রাতে মুম্বাইয়ের মিরা রোডে গাড়ির ভেতর ছেলেবন্ধুর সঙ্গে অশালীন অবস্থায় দেখা যায় তাঁকে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুনমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে সাজা ভোগ করতে হয়নি। শুধু সতর্ক করে অল্প কিছুক্ষণ পরই তাঁকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। এক খবরে এ তথ্য জানিয়েছে ওয়ান ইন্ডিয়া। এদিকে খবরটি ছড়িয়ে পড়লে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক গল্প ফেঁদে বসেন পুনম। এক টুইটার-বার্তায় তিনি লেখেন, 'গাড়ির ভেতর বসে আমার এক ভাইয়ের সঙ্গে গান শুনছিলাম। গাড়ির ভেতর গান শোনা নিশ্চয়ই কোনো অশালীন আচরণ নয়। অযথাই আমাকে নিয়ে এ রকম আজেবাজে খবর রটানোর কোনো মানে হয় না।'

আফগানিস্তানে ভূমিধসে নিহতের সংখ্যা ২১০০ ছাড়িয়েছে

আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য এলাকার একটি প্রত্যন্ত গ্রামে এক ভয়াবহ ভূমিধসে প্রায় ২১০০ মানুষ মারা গেছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। গতকাল শুক্রবার প্রবল বৃষ্টির পর ভূমিধসের ফলে দেশটির উত্তর-পূর্বে বাদাখশান প্রদেশে এ ঘটনা ঘটে। পাহাড় ধসে পড়ে শত শত বাড়ি মাটি-পাথরের নিচে চাপা পড়েছে। সেখানকার শত শত ঘর এখনো কাদা ও পাথরের নিচে চাপা পড়ে আছে। উদ্ধারকাজ চলছে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল শুক্রবারের এই ভূমিধসে চার হাজারেরও বেশি মানুষ গৃহহারা হয়ে পড়েছে। এখন মূল লক্ষ্য হলো এদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। বাদাখশানের প্রাদেশিক গভর্নরের মুখপাত্র নায়েদ ফোরোটন আজ শনিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, '৩০০ পরিবারের প্রায় দুই হাজার ১০০ সদস্যের সবাই মারা গেছে।' তাজিকিস্তান, চীন ও পাকিস্তান সীমান্তে অবস্থিত একটি দূরবর্তী প্রদেশ হলো বাদাখশান।

বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্বের বিকল্প নেই- সেমিনারে ইতিহাসবিদেরা

দেশ বিভাগ বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্ব ও উত্তর-পূর্বের মানুষের জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন দুই দেশের ইতিহাসবিদেরা। তবু এখনো একই হিমালয় পর্বতমালা থেকে দুই দেশের মানুষ পানি পায়। এই এলাকার মানুষের ভাষা, সংস্কৃতি, শিল্প, সাহিত্যের ঐতিহ্য প্রায় এক। তাই দুই দেশের বন্ধুত্বের কোনো বিকল্প নেই।
'১৯৭১: বাংলাদেশ এবং পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারত: স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যত্' শীর্ষক আন্তর্জাতিক এক সেমিনারে আজ শনিবার বাংলাদেশ ও ভারতের ইতিহাসবিদেরা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী বাংলা একাডেমিতে দুই দিনব্যাপী এই সেমিনারের আয়োজন করেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ইতিহাসের শিক্ষক ও গবেষক ছাড়াও সেমিনারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও গবেষকেরা অংশ নিচ্ছেন। সকালে উদ্বোধনী অধিবেশনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ১৯৭১ সালে ত্রিপুরায় আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশি শরণার্থীর সংখ্যা ছিল ত্রিপুরার মোট জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। বাংলাদেশের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর সম্পর্ক উন্নত হচ্ছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ওই অঞ্চলে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনের সভাপতিত্ব একই অধিবেশনে ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ সরন বলেন, দ্বন্দ্ব হচ্ছে অনুন্নয়নের চিহ্ন। অতীতে দেখা গেছে, এক দেশের দুর্বলতাকে অন্য দেশ পুঁজি করে লাভবান হতে চাইছে। আসলে দরকার, প্রতিবেশী দেশের সামর্থ্যকে কাজে লাগিয়ে উন্নতি করার মানসিকতা। সেমিনারের প্রথম কর্ম-অধিবেশনে ভারতের ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মহাদেব চক্রবর্তী বলেন, ১৯৭১ সালে ত্রিপুরা রাজ্যের জনসংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ৫৬ হাজার। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর বাংলাদেশ থেকে সমান সংখ্যক শরণার্থী ত্রিপুরায় আশ্রয় নেয়। এ রকম ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে আর দ্বিতীয়টি নেই। তিনি বলেন, পাকিস্তান বাহিনী চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র ধ্বংস করার পর আগরতলার অন্তত তিনটি স্থান থেকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছিল। ত্রিপুরার ৩৮টি কেন্দ্র থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের চিকিত্সাসেবা দেওয়া হয়েছিল। দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের টানাপোড়েনের উল্লেখ করে তিনি বলেন, দিল্লির অনুমতি ছাড়া একা ত্রিপুরা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে পারে না।
একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, মানবতার কারণেই পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসামের সাধারণ মানুষ মুক্তিযুদ্ধে একাত্ম হয়েছিলেন। ত্রিপুরায় আহমদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি ৫২ জন মুক্তিযোদ্ধার লাশ পারিবারিক কবরস্থানে কবর দিয়েছিলেন। এ রকম বহু সাধারণ মানুষের অবদানের কথা ইতিহাসে গুরুত্ব পায়নি। মেঘালয়ের ইংলিশ অ্যান্ড ফরেন ল্যাংগুয়েজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কৈলাস এস বড়ালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিকেলের অধিবেশনে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, ভারতের ভিসা পেতে বাংলাদেশের মানুষকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। কাল সমাপ্তি অধিবেশন ছাড়াও পৃথক দুটি কর্ম-অধিবেশনের মধ্য দিয়ে এই সেমিনার শেষ হবে।

বিদেশি পরামর্শকদের ওপর নির্ভরতা কমানোর আহ্বান হাসিনার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বড় কোনো প্রকল্প গ্রহণ, প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে বিদেশি পরামর্শকদের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি স্থানীয় প্রকৌশলীদের সমর্থন চেয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি সরকারের নেওয়া পাবলিক প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশকে (আইইবি) নিজস্ব সদস্য দ্বারা কয়েকটি পরামর্শক দল গঠনের পরামর্শ দেন। প্রধানমন্ত্রী আজ শনিবার আইইবি প্রাঙ্গণে আইইবির ৫৫তম কনভেনশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ আহ্বান জানান। খবর বাসসের।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'আমাদের অনেক মেধাবী ও যোগ্য জনশক্তি থাকা সত্ত্বেও বিদেশি পরামর্শকেরা উন্নয়ন প্রকল্পগুলো থেকে বড় অঙ্কের অর্থ নিয়ে যাচ্ছে।' এখন থেকে পাবলিক প্রকল্পগুলোতে যেন স্থানীয় পরামর্শকেরা অগ্রাধিকার পান, সেটি নিশ্চিত করার ব্যাপারে তিনি প্রকৌশলীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা চান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ দিয়ে আমাদের সরকার আর জনগণের অর্থের অপব্যবহার করতে চায় না। এ জন্য কেবল প্রয়োজন দেশীয় প্রকৌশলীদের আত্মবিশ্বাস ও নৈতিকতা।'
অনুষ্ঠানে আইইবির সভাপতি অধ্যাপক শামীমুজ্জামান বসুনিয়া ও সাধারণ সম্পাদক মিয়া মো. কাইয়ুম এবং আইইবি, ঢাকা কেন্দ্রের সভাপতি মহসীন আলী ও সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরীফ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক উপাচার্য ইমেরিটাস অধ্যাপক আবদুল মতিন পাটোয়ারীকে তাঁর কর্মময় জীবনে অসামান্য অবদানের জন্য আইইবি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে এ পদক পরিয়ে দেন।

গলাচিপায় লঞ্চডুবি, পাঁচজনের লাশ উদ্ধার

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় গলাচিপা নদীতে কালবৈশাখীর কবলে পড়ে এমভি শাথিল নামের একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবে গেছে। দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শনিবার বেলা সোয়া দুইটার দিকে উপজেলার কলাগাছিয়া লঞ্চঘাট থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিণে এ ঘটনা ঘটে। উদ্ধার হওয়া পাঁচটি লাশের মধ্যে চারটি নারীর ও একটি পুরুষের। এদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন গলাচিপা উপজেলার ইটবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা রুহিনা বেগম (২৪), রাঙ্গাবালী উপজেলার সেনের হাওলা গ্রামের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম (৫০), রাঙ্গাবালী উপজেলার ১৯ নম্বর গ্রামের লুত্ফা বেগম (২১)।
প্রথম আলোকে লঞ্চ ডুবির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. দুলাল। তিনি জানান, লঞ্চ ডুবির পর স্থানীয় লোকজন ট্রলার ও নৌকা নিয়ে উদ্ধারকাজ করছেন। পটুয়াখালী নৌবন্দরের সহকারী পরিচালক এস এম বদরুল আলম জানান, ডুবে যাওয়া লঞ্চটি উদ্ধারের জন্য উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তমকে বরিশাল থেকে ঘটনাস্থলের দিকে রওনা হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রুস্তম বরিশাল থেকে গলাচিপায় উদ্দেশে রওনা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী মো. সায়েমুজ্জামান জানান, তাঁরা ঘটনাস্থলে থেকে উদ্ধারকাজ পর্যবেক্ষণ করছেন। নিহত প্রত্যেক ব্যক্তির দাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।
দুর্ঘটনার পর সাঁতরে তীরে উঠে আসা ওই লঞ্চের যাত্রী মো. পলাশ প্রথম আলোকে বলেন, ঝড় উঠেছে টের পেয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ কেবিন থেকে বের হয়ে আসেন তিনি। যখন বুঝতে পারেন লঞ্চটি ডুবে যাচ্ছে, তখন স্ত্রী-সন্তানসহ নদীতে ঝাঁপ দেন। পরে তাঁরা সাঁতরে তীরে উঠে আসেন। পেছনে ফিরে দেখেন, লঞ্চটি পুরোপুরি ডুবে গেছে। তিনি জানান, তাঁর মতো লঞ্চের আট থেকে ১০ জন যাত্রী সাঁতরে তীরে উঠেতে পেরেছেন। জানা গেছে, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গলাচিপা থেকে পটুয়াখালীর উদ্দেশে যাত্রা করে এমভি শাথিল। এতে কতজন যাত্রী ছিল, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, লঞ্চটিতে প্রায় ১০০ জন যাত্রী ছিল।

বিশিষ্ট নাগরিকদের মানববন্ধনের মাইক কেড়ে নিল পুলিশ-অপহরণ, গুম ও খুনের প্রতিবাদ

গুম, খুন ও অপহরণের কারণে আজ শনিবার রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের মানববন্ধন ও সমাবেশে বাধা দিয়েছে পুলিশ। সমাবেশের জন্য আনা মাইকের নিয়ন্ত্রক ও যে রিকশায় মাইক ছিল তার চালককে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় সমাবেশের ব্যানার ফেস্টুন ও লিফলেট কেড়ে নেয় পুলিশ। তবে পুলিশের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ। তারা দেশব্যাপী যে গুম, খুন ও অপহরণ শুরু হয়েছে, তার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের শাস্তির দাবি জানিয়েছে। সমাবেশে টিআইবির চেয়ারপারসন এবং আইন ও শালিস কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল বলেন, 'সারা দেশে গুম, অপহরণ হত্যা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন শঙ্কিত। আমাদের এই শঙ্কা জানাতেই এই সমাবেশের আয়োজন করেছিলাম। এতেও যে পুলিশ বাধা দিয়েছে, তার প্রতি আমরা ধিক্কার জানাই। আমাদের শেষ মৌলিক অধিকারটুকু সঙ্কুচিত হতে চলেছে। এটা হতে পারে না। আমরা আশা করি সরকার তা বুঝতে পারবে। গুম অপহরণের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির ব্যবস্থা করবে।'
আইনজীবী শাহদিন মালিক বলেন, 'এ দেশে যেন গুম ও অপহরণ না হয় সে দাবি জানাতেই আমরা একত্রিত হয়েছি। এ সমস্ত অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।' তিনি নারায়ণগঞ্জের র্যাব-১১ এর সব সদস্যকে প্রত্যাহারের দাবি জানান।' সুজনের কেন্দ্রীয় সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার সমাবেশে বলেন, 'যেকোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ জানানো নাগরিকের মৌলিক অধিকার। সেই অধিকারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাধা সৃষ্টির ক্ষমতা রাখে না।' সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, হেফাজতে ইসলামের লাখো লাখো সদস্য সশস্ত্র অবস্থায় সমাবেশ করতে পারে। আর আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে এলে তাতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, গুম, অপহরণ ও হত্যাকারীদের বিচার সরকারও চায়। তাহলে এই বিচার চাওয়া কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে কেন? আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, পুলিশের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। পুলিশের সব ক্ষমতা র্যাব কেড়ে নিয়েছে। পুলিশকে তার ক্ষমতা ফিরে পেতে সোচ্চার হতে হবে। সংসদ ভবনের সামনে যখন উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের সমাবেশ যখন চলছিল তখন পুলিশের সাজোয়াযান শব্দ করে চারদিকে টহল দিচ্ছিল।

২১০ বিদ্যালয় বন্ধ রেখে প্রতিমন্ত্রীকে সংবর্ধনা @প্রথম আলো

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ২১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রেখে শিক্ষকেরা আজ শনিবার মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দকে সংবর্ধনা দিয়েছেন। উপজেলা পরিষদ চত্বরে বেলা ১১টার দিকে এ সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ সময় প্রতিমন্ত্রীকে শিক্ষকেরা তুলে দেন সাড়ে ছয় ভরি ওজনের রুপার নৌকা। উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্র জানায়, ডুমুরিয়া উপজেলায় ২১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে।
>>খুলনার ডুমুরিয়ায় উপজেলা শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দকে রুপার নৌকা উপহার দিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ছবি: প্রথম আলো
আয়োজক শিক্ষকনেতাদের সঙ্গে কথা বলে ও সরেজমিনে দেখা গেছে, ডুমুরিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের সমন্বয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ও মন্ত্রীর কয়েকজন আস্থাভাজন শিক্ষকনেতার উদ্যোগে ওই সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠান সফল করতে উপজেলার ২১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে শিক্ষকদের সেখানে যেতে বলা হয়। ওই অনুষ্ঠানের আগে ডুমুরিয়া সদরের মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোলনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভান্ডারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গুটুদিয়া পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে তালা ঝুলতে দেখা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, 'শনিবার বিদ্যালয় বন্ধ ছিল। প্রতিমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য বিদ্যালয়ে ছুটি দেওয়া হয়েছে বলে আমার ছেলে জানিয়েছে। এর আগেও গত ২৬ এপ্রিল স্কুল বন্ধ ছিল। ওই সময় পরীক্ষা চলছিল।' ওই অভিভাবক জানান, তাঁর ছেলে সাজিয়াড়া বিদ্যালয়ের ছাত্র। এ প্রসঙ্গে মিকশিমিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মজিদ গাজী বলেন, 'বছরে প্রধান শিক্ষকের তিন দিন বিদ্যালয় ছুটি দেওয়ার ক্ষমতা আছে। সেভাবে বিদ্যালয়ে ছুটি দিয়ে আমরা এই অনুষ্ঠানে এসেছি।' পূর্ব শোভনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ আনিছুর রহমান বলেন, 'উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ের পরামর্শে বিদ্যালয়ে ছুটি দিয়েছি।' স্কুলে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে ডুমুরিয়া সদরের মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, 'সংরক্ষিত ছুটি দেওয়া হয়েছে।' তবে ভান্ডারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি শেখ সিরাজুল ইসলাম দাবি করেন, 'স্কুলে ছুটি দেওয়ার বিষয়ে আমাদের কিছু জানানো হয়নি।'
অনুষ্ঠানে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষকের অভিযোগ, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও মন্ত্রীর এক ভাতিজার উদ্যোগে এই সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে। মন্ত্রীর এ অনুষ্ঠানে যোগ না দিলে বিপদে পড়তে হতো বলে তাঁরা দাবি করেন। জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম বলেন, 'শনিবার স্কুলের দিন হলেও প্রধান শিক্ষকের সংরক্ষিত ছুটি থেকে বিদ্যালয়ে ছুটি দেওয়া হয়েছে। আর শিক্ষক সমিতি থাকলেও কতিপয় প্রভাবশালী নেতার উদ্যোগে সব শিক্ষকের পক্ষ থেকে এই সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে।' তবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির সভাপতি ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান খান আলী মুনসুর বিদ্যালয় বন্ধ রেখে প্রতিমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়ার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'এটি ছুটির দিন বা বিকেলে হতে পারত। একে তো বিভিন্ন কারণে বছরের ছয় মাসের বেশি স্কুল বন্ধ থাকে; সেখানে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের নামে স্কুল বন্ধ রেখে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ক্ষতি করায় প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে কারণ দর্শাতে বলা হবে।'
>>প্রতিমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য স্বাক্ষর নেওয়া হয়। ছবি: প্রথম আলো
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন্ত কুমার পোদ্দার প্রথম আলোকে বলেন, 'শিক্ষক নেতারা এই অনুষ্ঠানের আয়োজক। যেহেতু শিক্ষকদের মধ্যে কয়েকটি পক্ষ রয়েছে, সে কারণে আমাকে অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করার সিদ্ধান্ত নেন শিক্ষক নেতারা।' অনুষ্ঠানস্থলে শিক্ষকদের হাজিরা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, 'উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হাজিরা নেওয়া হয়েছে।' রুপার নৌকা দেওয়া প্রসঙ্গে তাঁর ভাষ্য, 'শিক্ষকেরা নিজেরা অর্থ দিয়ে সাড়ে ছয় ভরি রুপা দিয়ে এটি তৈরি করেছেন।' ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সামছুদ্দৌজা বলেন, 'বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে এ ধরনের আয়োজন করা ঠিক হয়নি। তবে আমি জানতে চাইলে, তাঁরা জানান তাঁদের ঐচ্ছিক ছুটি থেকে এই ছুটি নিয়েছেন। বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত।'

নূর হোসেনের বাড়ি থেকে আটক ৩, গাড়ি জব্দ

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও তাঁর চার সহযোগী অপহরণ মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের বাড়ি থেকে তিনজনকে আটক ও একটি মাইক্রোবাস জব্দ করেছে পুলিশ। অভিযানের সময় বাড়িতে ছিলেন না নূর হোসেন। এজাহারভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার খন্দকার মুহিদ উদ্দিন বলেছেন, 'আমরা খোঁজখবর করছি। তদন্ত চলছে।' আসামি বিদেশে পালিয়ে গেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমরা তেমনটি মনে করি না। তিনি দেশেই আছেন।'
আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নজরুল ইসলাম হত্যার প্রধান আসামি নূর হোসেনের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলের বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালায়। জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মইনুর রহমান অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পরে বেলা পৌনে একটার দিকে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নারায়ণগঞ্জের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। নূর হোসেনের বাড়িতে অভিযান সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার খন্দকার মুহিদ উদ্দিন বলেন, পুলিশ নূর হোসেনের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন নিহত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারের মুঠোফোন ব্যবহার করেছেন।
আটক ব্যক্তিদের পরিচয় কী বা কোথা থেকে তাঁদের আটক করা হয়েছে জানতে চাইলে খন্দকার মুহিদ উদ্দিন বলেন, 'তদন্তের স্বার্থে আমরা কিছু বলছি না। নূর হোসেনের বাড়ি থেকে একটি মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। মাইক্রোবাসটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) খবর দেওয়া হয়েছে।' এজাহারভুক্ত আসামিকে কেন গ্রেপ্তার করতে পারলেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমরা খোঁজখবর করছি। তদন্ত চলছে।' আসামি বিদেশে পালিয়ে গেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমরা তেমনটি মনে করি না। তিনি দেশেই আছেন।' নূর হোসেনের বাড়িতে এত দিন পরে কেন অভিযান চালানো হলো এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ওই বাড়িতে কয়েকজন গোপনে বৈঠক করছিলেন। এ খবরের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। এত দিন অভিযান কেন চালানো হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এত দিন আমার কাছে খবর ছিল না। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা অভিযান চালাই।'
গতকাল ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামকে অপহরণের ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার খন্দকার মুহিদ উদ্দিন বলেন, তাঁকে অপহরণ করে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় রাখা হয়েছিল—এমন খবরের ভিত্তিতে সেখানে পুলিশ অভিযান চালাতে যায়। পুলিশের অভিযানের খবর পেয়ে অপহরণকারীরা সাইফুল ইসলামকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ফেলে রেখে যায়। তিনি বলেন, সাইফুল ইসলামকে অপহরণের ঘটনায় একজন নারী ও তাঁর স্বামীকে আটক করা হয়েছে। আজকে দুপুরে শীতলক্ষ্যা নদীতে লাশ উদ্ধারের ঘটনা প্রসঙ্গে জেলা পুলিশ সুপার খন্দকার মুহিদ উদ্দিন বলেন, 'নানা কারণে খুন হয়। আমরা বিষয়টি দেখছি।'
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) গোলাম ফারুক বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে একের পর এক অপহরণ ঘটলেও নারায়ণগঞ্জবাসীকে স্বস্তি দেওয়া হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অপরাধীরা সবাই ধরা পড়বে। আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীকে স্বস্তি দিতে চাই।
জেলা আইনজীবী সমিতির সমাবেশ
নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ ও হত্যার প্রতিবাদে আগামীকালের ডাকা হরতালের সমর্থনে সমাবেশ করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি। আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আইনজীবীরা নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সমাবেশে সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'আমরা আইনজীবী। আমাদের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক নেই। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল করব। দেশ থেকে সব ধরনের গুম, অপহরণ বন্ধ হোক।'

কাল নারায়ণগঞ্জে হরতাল আহ্বান- নিহতদের চিরবিদায় জানাল পরিবার

নারায়ণগঞ্জে অপহরণের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার ছয়জনের লাশের দাফন গত বৃহস্পতিবার সম্পন্ন হয়েছে। নিহত অপরজন আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারের মরদেহ গত বুধবার রাতে দাহ করা হয়। এ ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এদিকে চন্দন সরকারের খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে আগামীকাল রোববার নারায়ণগঞ্জে সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত হরতাল ডেকেছে জেলা আইনজীবী সমিতি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বৃহস্পতিবার থেকে নারায়ণগঞ্জে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার শীতলক্ষ্যা নদী থেকে বৃহস্পতিবার সকালে অপহূত লিটনের লাশ উদ্ধার করা হয়। বুধবার একই স্থান থেকে উদ্ধার করা হয় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তাঁর বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহিমের লাশ। নিহত লিটনও কাউন্সিলর নজরুলের বন্ধু। এই সাতজন গত রোববার দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক থেকে অপহূত হন।
নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন দুলাল চন্দ্র চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, 'আমরা ময়নাতদন্তের সময় প্রত্যেক লাশে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পেয়েছি। খুব নৃশংসভাবে খুনগুলো করা হয়েছে। আর লাশ উদ্ধারের ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা আগেই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে।' জানাজায় হাজারো মানুষ: বৃহস্পতিবার সকালে কাউন্সিলর নজরুল ও তাঁর বন্ধু তাজুল ইসলামের জানাজা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মৌচাকে অনুষ্ঠিত হয়। ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষ জানাজায় শরিক হন। পরে তাঁর লাশ সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি এলাকায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। একই দিন মনিরুজ্জামানের লাশ সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলীতে জানাজা শেষে দাফন করা হয়। লিটন ও জাহাঙ্গীরের লাশও কদমতলীতে দাফন করা হয়। বুধবার গভীর রাতে চন্দন সরকারের লাশ মাসদাইর পৌর শ্মশানে দাহ করা হয়। ইব্রাহিমের লাশ তাঁর গ্রামের বাড়ি সোনারগাঁয়ে দাফন করা হয়।
নজরুল ইসলামের জানাজার আগে তাঁর ছেলে নাঈম ইসলাম অশ্রুসিক্ত হয়ে বলেন, 'আমি জানি, আমার বাবাকে চক্রান্ত করে খুন করা হয়েছে। আমি খুনিদের ফাঁসি চাই। আর কাউকে যেন এভাবে মরতে না হয়।' জানাজার আগে নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ নজরুল ইসলাম বলেন, '২২ বছর ধরে নজরুল ভাইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। যারা তাঁকে খুন করেছে, তাদের বিচার করতেই হবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাই। তারা যত শক্তিশালীই হোক, বিচার হতেই হবে।' নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, 'নজরুল বেশ কিছুদিন ধরেই আতঙ্কে ভুগছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা দলীয় নেতা, পুলিশ, র‌্যাব সবাইকে জানিয়েছিলাম। তারা যদি ব্যবস্থা নিত, এই খুন হতো না।' নূর হোসেনের কার্যালয়ে আগুন: নজরুল ইসলামের জানাজা শেষে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল ট্রাকস্ট্যান্ডে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং এ মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের কার্যালয় এবং পাশেই একটি যাত্রা প্যান্ডেলে আগুন ধরিয়ে দেয় ক্ষুব্ধ মানুষ। ওই সময় র‌্যাব-১০, বিজিবি এবং পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বৃহস্পতিবার রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পশ্চিমপাড়া এলাকায় মামলার ২ নম্বর আসামি ও আওয়ামী লীগের নেতা ইয়াছিন মিয়ার বাসভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে জনতা। চন্দন সরকারের বাড়িতে আইনজীবী নেতারা: বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সহসভাপতি আইনজীবী খন্দকার মাহাবুব হোসেন এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন বৃহস্পতিবার সকালে চন্দন সরকারের জালকুঁড়ির বাসভবনে যান। তাঁরা শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সমবেদনা জানান। খন্দকার মাহবুব হোসেন এ সময় বলেন, এ ঘটনা অত্যন্ত নৃশংস, ভয়াবহ। এ ঘটনার পর এখন নিহত আইনজীবীর পরিবার নিরাপত্তাহীন। তিনি ঘটনার বিচার এবং খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান। গতকাল শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক, জেড আই খান পান্না এবং মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল চন্দন সরকারের বাড়িতে যান এবং তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

অপহরণচক্রে নারায়ণগঞ্জ-এবার ব্যবসায়ী অপহরণ, ২৪ ঘণ্টা পর মুক্ত

নারায়ণগঞ্জে মা-বোনের অশ্রু, স্ত্রীর আহাজারি, সন্তানের কান্না যেন আর থামার নয়। দিনদুপুরে সাত-সাতটি মানুষকে অপহরণ ও খুনের ঘটনার রেশ কাটতে না-কাটতেই আরেকজন ব্যবসায়ীকে অপহরণ করা হলো। তাঁর নাম সৈয়দ সাইফুল ইসলাম। ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি, দিনভর বিক্ষোভ-আলটিমেটাম শেষে অপহরণের ২৪ ঘণ্টা পর গত রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাভারের নবীনগরে অপহরণকারীরা সাইফুলকে একটি হোটেলের সামনে ফেলে যায়। হোটেলের লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। কিন্তু পুলিশ আসার আগেই র‌্যাব এসে তাঁকে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়।
রাত পৌনে দুইটার দিকে র‌্যাব-৪-এর সাভার ক্যাম্পে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয় সাইফুলকে। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা থেকে তাঁকে গাড়িতে তুলে নেয় অপহরণকারীরা। একপর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। চেতনা ফেরার পর তিনি বুঝতে পারেন, চোখ, হাত-পা বাঁধা অবস্থায় কাঁচা মেঝেতে পড়ে আছেন। পরে এক সময় তাঁকে আবার গাড়িতে তুলে এক জায়গায় এনে বাঁধন খুলে ও কোমরে লাথি মেরে ফেলে দেয়। পরে তিনি জানতে পারেন এটি নবীনগর। তিনি বলেন, তাঁর কোনো শত্রু নেই। তাই কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তা তিনি জানেন না।
গত সপ্তাহে অপহূত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের ছবি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারে দ্বারে ঘুরেছিলেন তাঁর স্ত্রী সেলিনা ইসলাম। চার দিনের মাথায় তিনি স্বামীর ক্ষতবিক্ষত লাশ পেয়েছেন শীতলক্ষ্যা নদীতে। গতকাল হাতে স্বামী সৈয়দ সাইফুল ইসলামের (৩৫) ছবি আর চোখে অশ্রু নিয়ে রাস্তায় বেরোতে হয়েছে তাঁর স্ত্রী সাদিয়া আফরিনকে। গত সপ্তাহে নির্বিবাদী আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারের ছবির দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলতে দেখা গেছে তাঁর মেডিকেল কলেজের শিক্ষিকা মেয়েকে। গতকাল ব্যবসায়ী বাবার ছবি হাতে নির্বাক বসে থাকতে দেখা গেল সাইফুলের দুই শিশুসন্তানকে।
এই বিভীষিকাময় সময়ে প্রশাসনকে পাশে না পেয়ে আতঙ্কের পাশাপাশি ক্ষোভও জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সপ্তাহজুড়ে কাউন্সিলর নজরুলের সমর্থকদের নেতৃত্বে সাধারণ মানুষ মহাসড়ক অবরোধ করে ক্ষোভ-বিক্ষোভ জানিয়েছেন। গতকাল রাস্তায় নেমেছেন ব্যবসায়ী, এলাকাবাসী সবাই। সাইফুল সিদ্ধিরগঞ্জের সোনা মিয়া মার্কেটের সামিয়া সুপার শপ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক। নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় তাঁর স্ত্রী সাদিয়া আফরিন গতকাল সকালে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাইফুল ইসলামের দোকানের ব্যবস্থাপক আবদুল হান্নানকে আটক করেছে।
সাদিয়া আফরিন জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে সাইফুলের সঙ্গে তাঁর মুঠোফোনে শেষ কথা হয়। মুঠোফোনে সাইফুল তাঁকে জানান, তিনি এলাকার সানারপাড়ে আছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়ি ফিরছেন। এর আগে ফিরোজ নামে একজনের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন বলে তাঁকে জানিয়েছিলেন। ফিরোজের কাছে সাইফুল এক লাখ টাকা পাবেন। কিন্তু ফিরতে দেরি হওয়ায় তিনি দ্বিতীয় দফায় ফোন করলে সাইফুলের মুঠোফোন বন্ধ পান। এর পর থেকে ফোনটি বন্ধ পান। সাদিয়া আফরিন সাংবাদিকদের জানান, একটি অপরিচিত নম্বর থেকে তাঁর কাছে ফোন করে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে।
অপহরণের এই ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বেলা ১১টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। দুপুর পৌনে ১২টায় সহকারী পুলিশ সুপার জাকারিয়া শুক্রবার রাতের মধ্যে সাইফুল ইসলামকে উদ্ধারের আশ্বাস দেন। ব্যবসায়ীরা সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়ে সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেন। সাইফুলের স্ত্রী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তিনি আশ্বস্ত হতে পারছেন না। কারণ এর আগে অপহূত সাতজনকে পুলিশ উদ্ধারের আশ্বাস দিলেও পরে তাঁদের লাশ পাওয়া গেছে। গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে সাইফুল উদ্ধার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ লোকজন আবার সানারপাড় রওশন আরা কলেজ গেট এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং বেশ কয়েকটি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আমিনুল ইসলাম জানান, জিডিতে ব্যবসায়ী সাইফুলের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হলেও অপহরণের বিষয়টি উল্লেখ ছিল না। তবে পুলিশ ইতিমধ্যে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মঈনুর রহমান জানান, সাইফুল ইসলামের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি তাঁরা খতিয়ে দেখছেন। পুলিশ সুপার সৈয়দ মহিদ উদ্দিন বলেন, নিখোঁজ ব্যক্তিকে উদ্ধারে পুলিশ সর্বাত্মক চেষ্টা করছে।
ভায়রাও নিখোঁজ!: ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামের স্ত্রী সাদিয়া আফরিনের বোন লাভলী অভিযোগ করেন, তাঁর স্বামী রহমত উল্লাহ ওরফে সেন্টু গত বছরের ৯ মার্চ ঢাকা থেকে নিখোঁজ হন। তাঁকে প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে গেছে। এখনো তাঁর কোনো খোঁজ নেই। জানতে চাইলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মতিন বলেন, 'সেন্টু ঢাকার সায়েদাবাদ বার্স টার্মিনাল এলাকার শ্রমিকনেতা খায়রুল হত্যা মামলার আসামি। তিনি ঢাকাতেই থাকেন। তিনি বিয়ে করেছেন সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড়ে। তবে তাঁকে অপহরণের ব্যাপারে অমরা কিছুই জানি না।'

‘পা কাটার কথা বলিনি মাকে’

'রগ কাটেনি। কুপিয়ে মাসুদের ডান পা আলাদা করে ফেলেছে শিবির ক্যাডাররা। তবে পা কাটার কথা মাকে এখনো বলিনি। উনি মানসিক রোগী। জানলে উনি মারা যাবেন।' সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের (আইসিইউ) বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাসুদের বড় ভাই আয়াতুল্লাহ বেহেস্তী। গত ২৯ এপ্রিল সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মাসুদকে কোপায় দুর্বৃত্তরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বিভাগের ছাত্র মাসুদের সঙ্গে থাকা একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা মোহাম্মাদ সালেহকেও কোপানো হয়। মাসুদের ভাই আয়াতুল্লাহ এবং সালেহর বাবা জালালউদ্দিনের দাবি, ছাত্রশিবির ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের অভিযোগ, ঘটনার সময় পুলিশ কাছে থাকলেও কেউ মাসুদ ও সালেহকে রক্ষায় এগিয়ে আসেননি।
গুরুতর অবস্থায় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে আনা হয়। পঙ্গু হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম জানান, সালেহ কিছুটা সুস্থ; তবে মাসুদের অবস্থা ভালো নয়। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, 'মাসুদের ডান পা তো কাটাই পড়েছে। বাঁ পায়ের অবস্থা ভালো নয়। মাসুদের জ্বর না কমা ভালো লক্ষণ নয়। কিডনিতে প্রভাব পড়তে পারে।' অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম আরও জানান, মাসুদের ঘাড়ে এলোপাতাড়ি কোপানো হয়েছে। পাঁচ ইঞ্চির মতো গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর পুরো শরীরে ১২টির মতো সেলাই লেগেছে। অবস্থা ভালো না হওয়ায় গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের আইসিইউয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে মাসুদকে। সেখানে অনেকটাই নিথর পড়ে আছেন আছেন তিনি। ডান পা গোড়ালির ওপর থেকে কাটা। বাঁ পায়ের পুরোটা, মাথা, দুই হাত ব্যান্ডেজ করা।
এ অবস্থায় মাসুদ অনেকটাই মনের জোরে বেঁচে আছেন—এমনটাই মনে করছেন তাঁর ভাই আয়াতুল্লাহ বেহেস্তী। তিনি জানান, বাম পা কেবল চামড়ার ওপর ঝুলে আছে। বিদেশে নেওয়া হলে হয়তো মাসুদের একটি পা রক্ষা করা যাবে। তবে বিদেশ কেন, দেশে চিকিত্সা করানোর মতো আর্থিক সংগতি মাসুদের পরিবারের নেই। আর বেঁচে থাকলে জীবনের বাকিটা সময় শারীরিক যন্ত্রণা ভোগাবে মাসুদকে। বড় ভাই বেহেস্তী বলেন, 'কথা বলতে গেলে মুখ ব্যথা করে মাসুদের। তবুও মায়ের সঙ্গে সময় পেলেই মুঠোফোনে কথা বলতে হচ্ছে ওকে। কারণ মা কিছুই জানেন না। আমার বাবাও বেঁচে নেই। তাই মাকে দেখারও কেউ নেই।' এদিকে পঙ্গু হাসপাতালের সিডি ওয়ার্ডে ৩৯ নম্বর বেডে শয্যাশায়ী আছেন সালেহ। তাঁর মাথায় ও ডান পায়ে কোপানো হয়েছে। ঘটনার পর থেকে তার প্রচণ্ড জ্বর ছিল। তবে আজ সকালে আর জ্বর আসেনি।
সালেহ বাবা জালাল উদ্দিন বলেন, 'পায়ের রগ কাটতে পারেনি শিবিরের লোকজন। তবে ডান পায়ের রক্ত নালি কাটা পড়ায় আগামী কাল সকালে সালেহর আরও একটি অপারেশন করা হবে। কিন্তু এত বড় ঘটনার সময় পুলিশও নীরব ছিল। আর এখন প্রশাসনও চুপ আছে।' এদিকে জানা গেছে, নৃশংস এই হামলার ঘটনায় এখনো পর্যন্ত মামলা হয়নি। আজকালের মধ্যে মাসুদ ও সালেহর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হতে পারে।

কাউন্সিলর নজরুলসহ সাতজনকে অপহরণের পর হত্যা- ছয় দিনেও কূলকিনারা করতে পারেনি প্রশাসন by শরিফুল হাসান @প্রথম আলো

সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন—সবাই ব্যর্থ। নারায়ণগঞ্জে যেন সন্ত্রাসীদেরই একচ্ছত্র আধিপত্য। প্যানেল মেয়রসহ সাতজনকে দিনদুপুরে অপহরণ, এরপর তাঁদের হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া এবং এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনের সর্বোচ্চ সতর্কতার মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে আরেকজন ব্যবসায়ী অপহূত হওয়ার ঘটনা সরকারের সব পদক্ষেপকে অকার্যকর প্রমাণিত করেছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ছয়জনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় গত রোববার। পরদিন থানায় মামলা করেন নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম। কিন্তু পুলিশ বা প্রশাসন তাঁদের কোনো হদিস বের করতে পারেনি। তিন দিন পর বুধবার একে একে ছয়জনের এবং পরদিন আরেকজনের লাশ পাওয়া যায় শীতলক্ষ্যা নদীতে।
রবি থেকে শুক্র—পেরিয়ে গেছে ছয় দিন। কিন্তু নৃশংস এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার তো দূরে থাক, অপরাধীদের শনাক্তই করতে পারেনি পুলিশ। নিহত ব্যক্তিদের স্বজনসহ নারায়ণগঞ্জের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, যেভাবে প্রকাশ্যে দলে দলে মানুষকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তাতে মনে হয়, এরা সাধারণ কোনো অপরাধী নয়; বরং প্রশিক্ষিত কোনো বাহিনীই এর সঙ্গে জড়িত। নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম থানায় যে অভিযোগ দিয়েছিলেন, তাতে বলেছেন, র‌্যাব পরিচয়ে তাঁর স্বামীসহ সাতজনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
কিন্তু কেন খুন করা হলো সাতজনকে? পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও দ্বিতীয় প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের সঙ্গে আরেক কাউন্সিলর নূর হোসেনের বিরোধ ছিল। সেই বিরোধের জের ধরেই নজরুলকে খুন করা হয়েছে বলে দাবি করছে তাঁর পরিবার। আর বাকি ছয়জনের অপরাধ, তাঁরা খুনিদের চিনে ফেলেছিলেন। সে কারণে তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিহত সাতজনের একজন চন্দন সরকার, পেশায় আইনজীবী। ৩০ বছর ধরে তিনি আইন পেশায় জড়িত। অবসরে তিনি বাঁশি বাজাতেন, কবিতা লিখতেন। সহজ-সরল ভালো মানুষ হিসেবে সুনাম আছে তাঁর। তাঁর সঙ্গে নজরুলের কোনো যোগাযোগও ছিল না।
পরিবার ও সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার (২৭ এপ্রিল) বেলা দেড়টার দিকে নারায়ণগঞ্জ আদালত থেকে লিংক রোড ধরে জালকুড়ির বাসায় আসছিলেন চন্দন সরকার। আর একই সময়ে আদালত থেকে একই পথ দিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন নজরুল ইসলাম। দুজনের গাড়িই একই মডেলের (টয়োটা এক্স-করোলা)। গাড়ি দুটি খুব কাছাকাছি থাকায় নজরুলকে কারা অপহরণ করেছে, সেটি দেখে ফেলেছিলেন চন্দন সরকার। আর সে কারণেই তাঁকেও তুলে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। চন্দন সরকারের মেয়ে চক্ষু বিশেষজ্ঞ সুস্মিতা সরকার প্রথম আলোকে বলেন, 'আমার বাবাকে নারায়ণগঞ্জের সবাই ভালো মানুষ হিসেবে জানে। তাঁর কোনো শত্রু নাই। তাঁকে হত্যার কোনো কারণ খুঁজে পাই না।' চন্দন সরকারের গাড়িচালক ইব্রাহিমের এক বছরের একটি শিশুসন্তান আছে। তাঁর স্ত্রী হনুফা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, 'আমার স্বামীকে মারার তো কোনো কারণ থাকতে পারে না। কেন তাঁকে খুন করা হলো?'
নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান আলাপকালে বলেন, 'আমাকে যদি বলেন নারায়ণগঞ্জ থেকে একজন ভালো আইনজীবী ও ভালো মানুষকে খুঁজে বের করতে, সবার আগে আমি চন্দন সরকারের নাম বলব। তাঁকে খুন করার কোনো কারণ থাকতে পারে না।' তাহলে কেন তাঁকে খুন করা হলো? সাখাওয়াত বলেন, 'চন্দন সরকার হয়তো দেখে ফেলেছিলেন, কারা নজরুলকে অপহরণ করছে। আর সেটাই হয়েছে কাল।' এই হত্যাকারীরা কারা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'যেকোনো ঘটনা ঘটলেই র‌্যাব ছুটে যায়। কিন্তু চন্দন সরকার নিখোঁজ হওয়ার পর আমরা র‌্যাবের কার্যালয়ে গিয়ে তাঁর ব্যাপারে জানার চেষ্টা করি। কিন্তু র‌্যাব আমাদের ঢুকতেই দেয়নি। তাদের কাজ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। কিন্তু তারা নারায়ণগঞ্জে মধুশালা পেয়েছে।' তিনি বলেন, 'নারায়ণগঞ্জের ডিসি-এসপিকে বদলি করা হয়েছে। কিন্তু তাতে মানুষের আস্থা ফেরেনি। আমরা চাই, র‌্যাবের অধিনায়ক থেকে শুরু করে সবাইকে এখান থেকে বদলি করা হোক। আর যদি কেউ এই খুনের সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে তাকে গ্রেপ্তার করে বিচার করা হোক। এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না।'
নারায়ণগঞ্জের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, 'লিংক রোডের যে জায়গা থেকে দিনের বেলা তাঁদের তুলে নেওয়া হয়, সেই রাস্তায় সব সময় লোক থাকে। আর সাতজন লোককে অপহরণ করতে হলে ২০ থেকে ২৫ জন লোক এবং কয়েকটি গাড়ি দরকার। আবার নজরুলের কাছে বেশির ভাগ সময়ে অস্ত্র থাকে। কাজেই সাধারণ কোনো সন্ত্রাসী বাহিনী অপহরণ করতে এলে সেখানে সংঘর্ষ বেধে যেত। কাজেই প্রশিক্ষিত কোনো বাহিনী ছাড়া এ ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়। ওই বাহিনী যখন নিজেদের পরিচয় দিয়েছে, তখন আর কারও কথা বলার সাহস থাকে না। তা ছাড়া সাতজনকে হত্যা এবং তাঁদের শরীরে ইট বাঁধা হয়েছে সুপরিকল্পিতভাবে।' এ ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার খন্দকার মোহিদ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত চলছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশেনর মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী প্রথম আলোকে বলেন, 'একের পর এক গুম-হত্যার ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের মানুষ এখন আতঙ্কে আছে। এখনাকার পুলিশ, প্রশাসন সবাই যেন ব্যর্থ। এখানে যাঁরাই দায়িত্ব পালন করতে আসেন, প্রভাবশালী কিছু মানুষের কাছে জিম্মি হয়ে যান। কিন্তু মানুষ স্বস্তি চায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সবার কাছে অনুরোধ, আপনারা ব্যবস্থা নিন। নারায়ণগঞ্জের মানুষকে রেহাই দিন।' র‌্যাবের তিন কর্মকর্তাকে ফেরত: একসঙ্গে সাতজনকে অপহরণ ও হত্যা ঘটনার পর র‌্যাবের অধিনায়কসহ তিনজনকে নিজ নিজ বাহিনীতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। গত বুধবার এ তিন কর্মকর্তার দুজন সেনাবাহিনী ও একজন নৌবাহিনীতে যোগ দেন।
র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুসারে এসব কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। বদলি হওয়া তিন কর্মকর্তা হলেন, র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাইদ মাহমুদ, মেজর আরিফুর রহমান ও লে. কমান্ডার মাসুদ রানা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও এক আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি অপহরণের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরপরই র‌্যাব কর্মকর্তাদের সরানো হয়। একই সিদ্ধান্তে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকেও সরিয়ে দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, গত বছরের আগস্টে র‌্যাব-১১ এর পরিচালক হিসেবে যোগ দেন তারেক সাইদ। এরপরই লক্ষ্মীপুরে রক্তাক্ত অভিযান চালায় র‌্যাব। এই অভিযানে র‌্যাবের বিরুদ্ধে মিছিলে গুলি চালিয়ে এক যুবদল নেতাকে হত্যা করে লাশ গুমের অভিযোগ ওঠে। ওই সময় বিক্ষুব্ধ বিএনপি-জামায়াত নেতা-কর্মীরা র‌্যাবের দলটিকে দিনভর লক্ষ্মীপুর পুলিশ লাইনে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে।
২৭ এপ্রিল
দিনদুপুরে অপহূত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজন
৩০ এপ্রিল
দুপুরে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে উদ্ধার করা হয় তাঁদের ছয়জনের লাশ। বৃহস্পতিবার সকালে পাওয়া যায় আরও একজনের লাশ
১ মে
রাতে অপহূত হন ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম। ২৪ ঘণ্টা পর তাঁকে গত রাত সাড়ে ১১টায় সাভারের নবীনগরে ফেলে যায় অপহরণকারীরা

উদ্বেগ আরও বেড়েছে by সোহরাব হাসান fromনারায়ণগঞ্জ @প্রথম আলো

শীতলক্ষ্যা থেকে সাতটি লাশ উদ্ধারের পর ধারণা করা গিয়েছিল, নারায়ণগঞ্জে আর অঘটন ঘটবে না। ঘাতকদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে মানুষ আন্দোলন গড়তে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে পারবে। প্রশাসন সর্বোচ্চ সজাগ ও সতর্ক হবে। বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ নিজ নিজ অবস্থান থেকে সাত খুনের প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির ডাকা রোববারের হরতালের প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সমর্থন জানিয়েছে। গতকাল সকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত সমাবেশেও সিপিবি ও বাম দলের নেতারা হরতালের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
সাত খুনের ঘটনার পর সরকার নারায়ণগঞ্জে প্রশাসনিকভাবে কিছু পদক্ষেপ নেয়। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার পদে পরিবর্তন আনে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দু-এক দিনের মধ্যে বড় খবর দেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছিলেন। বড় খবর মানে দুর্বৃত্তরা পাকড়াও হবে, এটাই ধরে নিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জবাসী। কিন্তু শুক্রবার ভোরে খবর আসে, বৃহস্পতিবার রাতে সিদ্ধিরগঞ্জে আরও একজন ব্যবসায়ী অপহূত হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই এ খবরে নারায়ণগঞ্জবাসীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বেড়ে যায়। সাতজন মানুষকে গুম ও হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনার মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় আরেকটি অপহরণ। তাহলে কি নারায়ণগঞ্জে কখনোই শান্তি আসবে না? এভাবে হত্যা ও অপহরণ চলতেই থাকবে?
এতে প্রমাণিত হয়, এখানকার আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। তারা মৌখিক আশ্বাস ও প্রশাসনিক রদবদলের মধ্যেই তৎপরতা সীমিত রেখেছে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর গতকালের বক্তব্য আরও হতাশাব্যঞ্জক। তিনি বলেছেন, পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পরই অপরাধীদের ধরা সম্ভব হবে। পরিস্থিতি শান্ত হওয়া বলতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কী বোঝাচ্ছেন? এ মুহূর্তে নারায়ণগঞ্জে কোনো রাজনৈতিক হানাহানি নেই। যা আছে তা মানুষের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ। বিক্ষোভ। নজরুল হত্যা মামলার দুই আসামির বাড়ি ও অফিসে নিহত নজরুলের সমর্থকেরা যে হামলা করেছেন, তা ছিল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। সরকার মামলার আসামিদের দ্রুত পাকড়াও করলে এ অঘটন এড়ানো যেত।
নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে যাঁদের সঙ্গে আলাপ করেছি, তাঁরা একবাক্যে বলেছেন, সাত খুনের আসামিদের ধরলেই পরিস্থিতি শান্ত হবে। অনেকেই বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। তবে যারাই জড়িত থাকুক না কেন দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। আসামিরা যত দিন ধরা না পড়বে, তত দিন সাত খুনের ঘটনা নিয়ে নানা নিয়ে গুজব তৈরি হবে। নারায়ণগঞ্জের মানুষের মনে ভয় ঢুকেছে যে অতীতের অন্যায়ের বিচার চাইতে গেলেই নতুন করে কাউকে অন্যায়ের শিকার হতে হয়। ত্বকী হত্যার ঘটনায়ও সেটি ঘটেছে। যাঁরা ত্বকী হত্যার বিচারের ব্যাপারে সোচ্চার ছিলেন বা আছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি তাঁদের আত্মীয়স্বজনেরাও মিথ্যা মামলার শিকার হচ্ছেন।
কেউ কেউ বলছেন, ত্বকী হত্যার খুনিরা শাস্তি পেলে সাত খুনের ঘটনা ঘটত না।
গতকালের নারায়ণগঞ্জ ছিল উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় ভরা। সবার জিজ্ঞাসা ছিল, আবার কোনো দুঃসংবাদ না শুনতে হয়। নারায়ণগঞ্জে নতুন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের পদায়ন কোনো সুসংবাদ দিতে পারেনি। তাঁদের গতানুগতিক উত্তর, তদন্ত চলছে।
তবে সাংসদ নাসিম ওসমানের জানাজার আগে তাঁর ভাই সাংসদ শামীম ওসমান বলেছেন, 'আগে ভাই ছিলেন, উত্তেজিত হলে আমাকে থামিয়ে দিতেন। এখন ভাই নেই। তাই থামানোরও কেউ নেই।' তাঁর এ বক্তব্যকে অনেকেই হুমকি বলে মনে করছেন।
সাত খুনের অন্যতম শিকার কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও প্রধান আসামি নূর হোসেন দুজনই তাঁর ঘনিষ্ঠ শিষ্য। গতকাল গুজব ছিল, নাসিম ওসমানের জানাজায় শরিক হয়েছেন নূর হোসেন। শেষ পর্যন্ত জানা যায়, তিনি আসেননি। তবে ত্বকী হত্যা মামলার আসামি আজমেরী ওসমান জানাজায় ছিলেন।

‘হাত বেঁধে রাস্তায় ফেলে দেয়’

নারায়ণগঞ্জে অপহূত ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামকে ছেড়ে দিয়েছে অপহরণকারীরা। শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর অদূরে সাভারের নবীনগরে স্মৃতিসৌধের বিপরীত দিকে বিসমিল্লাহ হোটেলের সামনে সাইফুলকে ফেলে চলে যায় অপহরণকারীরা। এর পর থেকে তিনি সাভারে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৪-এর (র‌্যাব) কার্যালয়ে আছেন। রাতে র‌্যাব কার্যালয়ে সাইফুল ইসলাম তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া এবং ছেড়ে দেওয়ার ঘটনার কথা সাংবাদিকদের জানান।
সাইফুল ইসলাম উপস্থিত সাংবাদিকেদের বলেন, '১ মে আনুমানিক রাত নয়টার মধ্যে আমাকে অপহরণ করে। হঠাত্ পেছন থেকে চার-পাঁচজন আমাকে ধরে গাড়িতে তোলে। গাড়িতে তুলেই তারা আমাকে পায়ের নিচে শুইয়ে দেয়। এরপর আমার কিছুই মনে নেই। জ্ঞান ফেরার পর দেখি একটা ঘরের কাঁচা মেঝেতে বসে আছি। জ্ঞান ফেরার চার-পাঁচ মিনিট পরে একজন লোক আসে। আজ সকালে তারা আমাকে পাউরুটি ও পানি খেতে দিয়ে চলে যায়। চোখ বাঁধা থাকায় আমি কিছু দেখতে পাইনি। এরপর তারা আমাকে গাড়িতে তোলে। রাতে পেছনে হাত বাঁধা অবস্থায় কোমরে লাথি মেরে রাস্তায় ফেলে দেয় অপহরণকারীরা। এরপর একজন লোককে ধরে আমি হোটেল আসি।'

২৪ ঘণ্টা পর পাওয়া গেল নোয়াখালীর ব্যবসায়ীকে

অপহরণের ২৪ ঘণ্টা পর আজ শনিবার সকালে চোখ বাঁধা অবস্থায় রাস্তার পাশে পাওয়া গেছে নোয়াখালীর ব্যবসায়ী আবুল বাসারকে। বেগমগঞ্জ উপজেলার জিরতলী ইউনিয়নের বাংলাবাজারের প্রধান সড়কের পাশে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁকে পাওয়া যায়। বেগমগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার কাজী এহসানুল কবির জানান, অপহরণকারীরা একটি গাড়িতে করে তাঁকে নিয়ে আসে। পরে ওই এলাকায় তাঁকে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। পরে আবুল বাসারকে বেগমগঞ্জ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। আবুল বাসারের বড় ভাইয়ের মেয়ের স্বামী জাহাঙ্গীর আলম জানান, পরিবারের সদস্যরা এখনো তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। তবে আবুল বাসারের গায়ে আঘাতের চিহ্ন আছে। তিনি কিছুটা অসুস্থ।
অপহূত আবুল বাসার উত্তর আলাইয়াপুর গ্রামের মো. ফয়েজ কন্ট্রাক্টরের ছেলে। গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে একদল সন্ত্রাসী তিনটি মোটরসাইকেলে গিয়ে আবুল বাসারকে বাড়ির সামনে থেকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায়। বেগমগঞ্জ উপজেলার আলাইয়াপুর ইউনিয়নের উত্তর আলাইয়াপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এর পর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। অপহরণের পর গতকাল লোক মারফত অপহরণকারীরা পরিবারের কাছে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। গতকালও নারায়ণগঞ্জ থেকে সৈয়দ সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ীকে অপহরণের ২৪ ঘণ্টা পর একটি হোটেলের সামনে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।
এর আগে গত ২৯ এপ্রিল সদর উপজেলার এওজবালিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য আবুল হোসেন ওরফে আবদুলকে অপহরণ করে একদল সন্ত্রাসী। পরে বিভিন্ন মহলের চাপের মুখে সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর তাঁকে ছেড়ে দেয় অপহরণকারীরা। স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আবুল বাসার দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন। কয়েক মাস আগে দেশে ফিরে তিনি মাটির ব্যবসা ও মাছের খামারের ব্যবসা শুরু করেন। সূত্র জানায়, অপহরণকারী দলের মধ্যে এলাকার সন্ত্রাসী ফরহাদ, মহিন, জাঙ্কা ও রুবেলকে স্থানীয় লোকজন চিনতে পেরেছেন। গতকাল রাতে পুলিশ সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের পরিবারের চার সদস্যকে আটক করে।