Sunday, September 25, 2011

নানা কৌশলে সীমান্তে হত্যা-নির্যাতন চলছেই by মেহেদী হাসান

ভারতের পক্ষ থেকে বারবার আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি হত্যা বন্ধ হয়নি, বরং সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট সীমান্তে বাংলাদেশিদের ওপর ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) পাশাপাশি সে দেশের খাসিয়া জনগোষ্ঠীর লোকজনও গুলি ছুড়ছে। সীমান্তে ভারতের নির্মিত কাঁটাতারের বেড়া বিদ্যুতায়িত করে রাখার কারণে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এবং বিএসএফের ছোড়া পাথরের আঘাতে বাংলাদেশি নাগরিক হতাহত হচ্ছে। আটকের পর নিতম্বে ইনজেকশনের মাধ্যমে পেট্রল-জাতীয় তরল পদার্থ পুশ করে নতুন কায়দায় নির্যাতনের ঘটনাও ঘটছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সীমান্ত সম্মেলনে সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি হত্যা ও নির্যাতনের এ বিষয়গুলো উঠবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। আজ রবিবার ঢাকায় শুরু হচ্ছে বিজিবি ও বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ের এ সম্মেলন। চলবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ছয় দিনের সম্মেলন হচ্ছে পিলখানায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দপ্তরে। এর আগে গত মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে নয়াদিলি্লতে পাঁচ দিনব্যাপী সীমান্ত সম্মেলন হয়। রীতি অনুযায়ী এবারের সম্মেলন হচ্ছে ঢাকায়।
গতকাল বিজিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এবারের সীমান্ত সম্মেলনে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোসহ আরো কিছু দ্বিপক্ষীয় ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে।
সম্মেলনে যোগ দিতে বিএসএফ মহাপরিচালক রমন শ্রীবাস্তবের নেতৃত্বে ২১ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল আজ রবিবার ঢাকায় এসে পেঁৗছবেন। সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আনোয়ার হোসেন ২৩ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন।
সীমান্তে হত্যা-নির্যাতন : বাংলাদেশের বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের হিসাব অনুযায়ী, ২০০০ সাল থেকে গত আগস্ট মাস পর্যন্ত বিভিন্ন সীমান্তে মোট ৯৯৮ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে বিএসএফের হাতে ৯২৩ এবং ভারতীয় বেসামরিক নাগরিকদের হাতে ৭৫ জন। একই সময়ে বিএসএফের হাতে ৬৬১ এবং ভারতীয় বেসামরিক নাগরিকদের হাতে ৩৩৫ জন বাংলাদেশি আহত হয়। প্রায় ১১ বছরে সীমান্তে ৯৫৭ জন অপহৃত এবং ১০৭ জন বাংলাদেশি নিখোঁজ হয়। ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৪ জন বাংলাদেশি।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গত বছর এক প্রতিবেদনে সীমান্তে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরও বিএসএফ জওয়ানরা পার পেয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছে।
জানা গেছে, সিলেটের গোয়াইন ঘাট উপজেলার পান্তুমাই গ্রামের আবদুল মজিদের ছেলে তেরা মিয়া (১৮) গত ১১ সেপ্টেম্বর পাদুয়া সীমান্তে বাংলাদেশি ভূমিতে গরু চরানোর সময় গুলিবিদ্ধ হন। সীমান্তের ওপর থেকে আসা ওই গুলি বিএসএফ ছোড়েনি। তাদের উপস্থিতিতে ভারতীয় খাসিয়ারা গুলি করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফের কাছে প্রতিবাদলিপি পাঠানো হয়। এর আগে ১২ আগস্ট ওই সীমান্তের বিছনাকান্দি এলাকায় কামাল উদ্দিন জহুর (৩২) ও কামাল আহমদ (৩০) নামের দুই বাংলাদেশি পাথর কোয়ারিতে কাজের সময় ভারতীয় খাসিয়াদের গুলিতে নিহত হন।
অধিকারের তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্টে বিএসএফ একজন বাংলাদেশিকে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করেছে। বিএসএফের গুলিতে আহত হয় আরো একজন। এর আগে ২২ জুলাই চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা থানার ঠাকুরপুর গ্রামের লিয়াকত হোসেনের ছেলে মো. সেলিম উদ্দীন (২২) ভারতের রাঙ্গিয়ারপোতা থেকে ৯০ নম্বর সীমান্ত পিলারের পাশ দিয়ে দেশে ফেরার পথে বাঁশের বিদ্যুতায়িত বেড়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। চোরাচালান রোধের অজুহাতে বিএসএফ রাত ৮টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত সীমান্তের এ বেড়ায় ১১ হাজার ভোল্টের বৈদ্যুতিকসংযোগ দিয়ে বিদ্যুতায়িত করে রাখে বলে অভিযোগ রয়েছে। সীমান্তে যেখানে কাঁটাতারের বেড়া এখনো নির্মিত হয়নি, সেখানে বাঁশ দিয়ে বেড়া দিয়েছে ভারত।
মে মাসের প্রতিবেদনে অধিকার বলেছে, গত ৭ মে দিনাজপুর জেলার সুন্দরা সীমান্ত এলাকায় ফয়জুর রহমানের ছেলে হাফিজুর রহমান (৩০) বিএসএফের গুলিতে নিহত হন। এর আগের দিন কুড়িগ্রামের রাজিবপুর সীমান্তে রউফ মিয়া নামের এক বাংলাদেশি কৃষককে বিএসএফ অপহরণ করে নিয়ে যায়।
গোয়াইনঘাট উপজেলার ভিতরগুল গ্রামের আবদুল মালেকের ছেলে রুবেলকে (১৬) গত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে সিলেটের গোয়াইনঘাট সীমান্তে অপহরণের পর গুলি করে হত্যা করে ভারতীয় খাসিয়ারা। নিহতের পরিবার ও স্বজনরা জানিয়েছে, এই কিশোর তার দুই বন্ধুসহ সীমান্তের কাছাকাছি বাংলাদেশের ভূখণ্ডেই পায়চারি করছিল। গত ১৮ এপ্রিল সাতক্ষীরা জেলার গাজীপুর সীমান্তে মনসুর আলীর ছেলে রেকাতুল ইসলাম (১৭) বিএসএফের গুলিতে মারা যায়।
বারবার আশ্বাস : গত ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার সময় বিএসএফের গুলিতে কিশোরী ফেলানি নিহত হওয়ার কয়েক দিন পরই ঢাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়। বৈঠকে ভারতীয় স্বরাষ্ট্রসচিব গোপাল কৃষ্ণ পিল্লাই সীমান্তে হত্যা বন্ধের আশ্বাস দেন। এর আগেও প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন পর্যায়ে আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি জানিয়ে সাংবাদিকরা এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ভারতের স্বরাষ্ট্রসচিব বলেছিলেন, 'ভারত আবারও সীমান্তে হত্যার সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনার আশ্বাস দিচ্ছে এবং এটি নিশ্চিত করতে বিএসএফ সদস্যের সঙ্গে কাজ করছে।'
ভারতীয় স্বরাষ্ট্রসচিবের নতুন করে আশ্বাসের পরও সীমান্তে হত্যা দৃশ্যত থামেনি। ওই মাসে মোট চারজন বাংলাদেশি বিএসএফের গুলি ও নির্যাতনে নিহত হয়। পরের মাসে বিএসএফের নির্যাতনে এক বাংলাদেশি নিহতসহ ছয়জন আহত হয়। মার্চ মাসে দুজন বাংলাদেশি সীমান্তে নিহত হয়েছে ভারতীয় বেসামরিক নাগরিকের গুলিতে। একই মাসে বিএসএফের গুলিতে আহত হয় ২১ জন। এপ্রিল মাসে বিএসএফের গুলিতে পাঁচ ও ভারতীয় বেসামরিক ব্যক্তিদের গুলিতে একজন বাংলাদেশি প্রাণ হারায়। ওই মাসেই বিএসফের গুলি ও নির্যাতনে আহত হয় ১২ বাংলাদেশি। অন্যদিকে, ভারতীয় বেসামরিক ব্যক্তিদের গুলিতে আহত হয় আরো দুজন। মে মাসে বিএসএফের গুলি ও নির্যাতনে চারজন এবং ভারতীয় বেসামরিক ব্যক্তিদের নির্যাতনে একজন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়। জুনে বিএসএফের গুলিতে দুজন এবং নির্যাতনে একজন নিহত হয়। জুলাই মাসে বিএসএফের গুলিতে একজন এবং নির্যাতনে দুজন মারা যায়। আগস্ট মাসে মারা যায় বিএসএফের হাতে একজন। এ সময় ভারতীয় বেসামরিক নাগরিকদের গুলিতে নিহত হয় আরো দুজন।
আশ্বাস সত্ত্বেও সীমান্তে হত্যা-নির্যাতন চলার বিষয়ে গত ৭ জুন ঢাকায় সাংবাদিকরা জানতে চাইলে সফররত ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব (বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রাষ্ট্রদূত) নিরুপমা রাও বলেছিলেন, 'আমরা সব ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে। অনেক সময় ভারতীয়রা মারা যায়, কখনো কখনো বাংলাদেশিরা। কারো মৃত্যুই আমাদের কাম্য নয়। রাতে সীমান্তে কারফিউ থাকে। চোরকারবারীরা সাধারণত রাতে সীমান্ত অতিক্রম করে। নিরস্ত্র সাধারণ মানুষও করে। আমরা এ হত্যা বন্ধে রূপরেখা নিয়ে কাজ করছি। এর মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে সীমান্তের কয়েকটি অংশে বিএসএফকে প্রয়োজনে প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।'
এরপর ৭ জুলাই ঢাকা সফরের সময় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণা সাংবাদিকদের বলেন, 'সীমান্তে এখনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চলছে। অপরাধ ঠেকানোর সর্বশেষ উপায় হলো হত্যা। হতাহতের শিকার হওয়া ৪০ শতাংশ ভারতীয় নাগরিক। বাংলাদেশের মতো বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রের নাগরিকদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়ার জন্য বিএসএফকে বলা হয়েছে। সীমান্ত একটি স্পর্শকাতর ইস্যু।'
গত ৩০ জুলাই ঢাকায় সফরকালে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত হওয়াবিষয়ক এক প্রশ্নের উত্তরে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সীমান্ত পাড়ি দেওয়া ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে যাতে কোনো অবস্থাতেই গুলি ছোঁড়া না হয়, সেজন্য বিএসএফ জওয়ানদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ওই নির্দেশনা দেওয়ার পর এ বছর সীমান্তে নিহতের সংখ্যা সাতে নেমে এসেছে। বিএসএফ জওয়ানরা হামলার শিকার হয়ে আত্মরক্ষার্থে গুলি ছুঁড়তে বাধ্য হয়েছে বলে তিনি জানান।
হত্যা বন্ধে ভারতীয় কৌশল : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কূটনীতিক কালের কণ্ঠকে বলেছেন, সীমান্তে হত্যা বন্ধে কয়েক মাস আগে বিএসএফ পরীক্ষামূলকভাবে প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর দৃশ্যত ওই বাহিনীর গুলিতে হতাহতের ঘটনা কমেছে। কিন্তু বিএসএফের উপস্থিতিতে সীমান্তে বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে ভারতীয় বেসামরিক নাগরিকদের অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ অত্যন্ত উদ্বেগের। কার স্বার্থে কে ওই অস্ত্রের জোগান দেয়, তার অনুসন্ধান করা উচিত।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম কেবল আত্মক্ষার্থেই বিএসএফ গুলি চালায় বলে যে মন্তব্য করেছিলেন, তা খুব একটা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন না ওই কূটনীতিক। তিনি বলেন, প্রতিটি হতাহতের ঘটনাতেই বিএসএফ আত্মরক্ষার্থে গুলি করেছে বলে দাবি করে থাকে। অথচ হতাহতদের নিরস্ত্র অবস্থায় পাওয়া যায়।
বিজিবির সাবেক এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, মারণাস্ত্রের বিকল্প ব্যবহারের কথা শুনে তিনি খুব একটা আশাবাদী ছিলেন না। সবাই গুলি বন্ধের দাবি করে। কিন্তু গুলি ছাড়াও শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে হতাহতের অনেক ঘটনা ঘটে। এগুলোও বন্ধ হওয়া উচিত।
গত ২২ জুন বিএসএফের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি) পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে মারণাস্ত্রের বিকল্প ব্যবহার শুরুর কথা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বিএসএফ জওয়ানদের হাতে পাম্প অ্যাকশন গান বা ছড়রা বন্দুক তুলে দেওয়া হয়েছে, যা সাধারণত ছোট আকারের পাখি মারার কাজে ব্যবহার করা হয়।
বিএসএফের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশিদের নিতম্বে ইনজেকশনের মাধ্যমে পেট্রল পুশ করার অভিযোগও উঠেছে। জানা গেছে, যশোর জেলার শার্শা উপজেলার সীমান্তবর্তী ধান্যখোলা গ্রামের আবদুস সামাদের ছেলে শরিফুল ইসলাম (২৬), মিজানুর রহমানের ছেলে শাহিন (২৫) ও ময়েনুদ্দিনের ছেলে মুলফিক্কারকে (২৫) বিএসএফ গত ১৬ জুন রাতে হকিস্টিক ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে নিতম্বে দুই সিরিঞ্জ করে পেট্রল পুশ করে।
ঢাকায় আজ থেকে সীমান্ত সম্মেলন
গত ৩০ জুলাই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা স্বাক্ষর হয়। এ ছাড়া গত ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং ঢাকা সফরের সময় '৭৪-এর স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য একটি প্রটোকল স্বাক্ষর হয়। এবারের সীমান্ত সম্মেলন ওইসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
বিজিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে সীমান্ত এলাকায় নিরস্ত্র বাংলাদেশিদের গুলি করে হত্যা ও আহত করা, অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম বা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ, বাংলাদেশিদের আটক ও ধরে নিয়ে যাওয়া, বাংলাদেশি নাগরিক অপহরণ ইত্যাদি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, ভারতীয় প্রতিনিধিদলে থাকবেন বিএসএফ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ফ্রন্টিয়ার ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজি), ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। সম্মেলন উপলক্ষে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএসএফ মহাপরিচালকের স্ত্রীও বাংলাদেশ সফর করবেন।
বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে বিজিবির উপমহাপরিচালক, পরিচালক (অপারেশন ও প্রশিক্ষণ), সংশ্লিষ্ট সেক্টর কমান্ডার, বিজিবি সদর দপ্তরের স্টাফ অফিসার ছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর এবং যৌথ নদী কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশ নেবেন।
আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জয়েন্ট রেকর্ড অব ডিসকাশন্স (জেআরডি) স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে সম্মেলন শেষ হবে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

তিতাসের সাড়ে ৯০০ কোটি টাকা 'নাই' by আরিফুজ্জামান তুহিন

রকারি গ্যাস বিতরণ কম্পানি তিতাসের ব্রাহ্মণবাড়িয়া-আশুগঞ্জ এলাকা আরেক সরকারি প্রতিষ্ঠান বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানির কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। এই বিক্রি-প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিতাসের প্রায় সাড়ে ৯০০ কোটি টাকা 'নাই' হয়ে গেছে। তিতাসের অডিট করা হিসাব বাদ রেখে পেট্রোবাংলা নিজেরা অডিট করে ওই সম্পদের মূল্য প্রায় হাজার কোটি টাকা কম দেখিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশঙ্কা করছেন, পরবর্তী সময়ে বাখরাবাদকে কম টাকায় বেসরকারি খাতে বেচে দেওয়া এবং পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ ফাঁকি দেওয়ার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলার নির্দেশেই এটা করা হয়েছে।

জানা গেছে, তিতাসের ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আশুগঞ্জ এলাকাটি বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানির কাছে ২৬৮ কোটি ২০ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়। অথচ তিতাসের নিয়োজিত অডিট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এলাকাটির মূল্য এক হাজার ২০৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। সেই হিসাবে ৯৩৯ কোটি ২৫ লাখ টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান হোসেন মনসুর কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এগুলো হলো পেট্রোবাংলার অধীন কম্পানি। তিতাস তাদের নিয়োজিত অডিট ফার্ম দিয়ে নিজেদের মতো হিসাব করে অঞ্চলটির মূল্য অনেক বেশি দেখায়। তিতাসের হিসাব ও বাখরাবাদের হিসাব দুই রকম হওয়ায় পেট্রোবাংলা আরেকটি কম্পানিকে দিয়ে অডিট করিয়ে মন্ত্রণালয়কে বিক্রির সুপারিশ করে।' তিনি বলেন, তিতাসের এ অঞ্চলটি হস্তান্তরও হয়ে গেছে। তিতাসের বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত বাতিল না করে কেন পেট্রোবাংলা এ রকম সিদ্ধান্ত নিল_এমন প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, 'দীর্ঘদিন বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বাংলাদেশের জ্বালানি খাত বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার জন্য সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসছে। সেই চাপেরই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে এখানে। তিতাস একটি লাভজনক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, এই প্রতিষ্ঠানকে হুট করে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া যায় না। তাই ধীরে ধীরে তারা এভাবে বাস্তবায়ন করছে।' তিনি আরো বলেন, 'কম দাম দেখিয়ে তিতাসের ব্রাহ্মণবাড়িয়া-আশুগঞ্জ এলাকা ছেড়ে দেওয়া হলো, এর কারণ পরবর্তী সময়ে বাখরাবাদ যখন বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হবে, তখন এই
প্রতিষ্ঠানের মূল্য যেন কম দেখানো যায়। বেসরকারীকরণ হলে তা বিদেশি বহুজাতিক কম্পানির হাতে চলে যাবে। এর ভাগ স্থানীয় কিছু দালাল লুটেরাও পাবে। জ্বালানি খাত বিদেশি বহুজাতিক কম্পানি দখলের যে চেষ্টা করছে, এটা সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ।'
তিতাস সূত্রও জানায়, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি বেসরকারি খাতে ছাড়ার চক্রান্ত চলছে। এদের সহায়তায় বাখরাবাদ চলে যাবে ব্যবসায়ীদের হাতে। তিতাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হস্তান্তর শেষ হয়েছে, এখন খুব শিগগির পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে বাখরাবাদ। পুঁজিবাজারে বাখরাবাদের তালিকাভুক্ত হওয়ার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে অনুমোদিত হয়ে আছে। তিতাসের শেয়ারহোল্ডারদের আর্থিকভাবে ঠকানোর জন্যই মূল্য কম দেখানো হয়েছে বলে সূত্র অভিযোগ তুলেছে।
সূত্রে জানা যায়, তিতাস মেসার্স আহমেদ অ্যান্ড আকতার নামের একটি ফার্ম দিয়ে অডিট করায়। তারা তিতাসের এ এলাকাটির মূল্য এক হাজার ২০৭ কোটি ৪৫ লাখ এক হাজার ৬৫৪ টাকা বলে প্রতিবেদন দেয়। প্রতিবেদনটি গত বছরের ১৯ অক্টোবর তিতাসের ৬১৩তম সভায় অনুমোদনও করা হয়। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, বাখরাবাদ শতকরা ২০ ভাগ টাকা এককালীন (ডাউন পেমেন্ট) দেবে, বাকিটা ১৫ বছরের কিস্তিতে পরিশোধ করবে। ২৫ অক্টোবর এই সিদ্ধান্ত পেট্রোবাংলাকে জানিয়ে দেয় তিতাস কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশন (এসইসি), ডিএসই ও সিএসইকেও জানানো হয়। তিতাসের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করে নতুন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-আশুগঞ্জ অঞ্চলটি অডিট করায় পেট্রোবাংলা। তাদের মনোনীত অডিট ফার্ম হোদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কম্পানি তিতাসের ওই অঞ্চলটির মূল্য নির্ধারণ করে ২৬৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি পেট্রোবাংলার ৪১৭তম বোর্ড সভায় তা অনুমোদনও করা হয়।
তিতাসের বোর্ড সভায় পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানও সদস্য। পেট্রোবাংলার এই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে মো. আলাউদ্দিন ও মো. সাঈদ নামের তিতাস গ্যাসের দুজন শেয়ারহোল্ডার হাইকোর্টে একটি রিট মামলা (নং-৫৮১৭/২০১১) করেন। রিট আবেদনটি উচ্চ আদালত খারিজ করে দেন। রিট আবেদনকারীরা তখন খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন।
রিট আবেদনকারীর আইনজীবী মো. নুরুল ইসলাম চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মামলাটি বর্তমানে চূড়ান্ত শুনানির অপেক্ষায় আছে। আদালত খুললে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে।'
পেট্রোবাংলার কাছে তিতাসের অডিট প্রতিবেদনের চিঠি পাঠানোর প্রায় পাঁচ মাস পর গত ২৪ মার্চ পেট্রোবাংলা তিতাসকে চিঠি দিয়ে এলাকাটির নতুন মূল্যের বিষয়টি অবহিত করে। পেট্রোবাংলার মনোনীত হোদা ভাসি অডিট ফার্মের প্রতিবেদনটি গত ২০ মে তিতাসের বোর্ড সভায় 'বাস্তবতাবর্জিত' বলে মত দেন কম্পানির পরিচালকরা। সরকার ও সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন সে জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আশুগঞ্জ প্রকল্পের উপযুক্ত মূল্য নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ওই সভায়। এ কারণে পরবর্তী সময়ে আরো আলোচনা করার সুপারিশও করা হয়।
জানা যায়, তিতাসের পরিচালনা বোর্ডের কাছে হোদা ভাসির করা অডিট প্রতিবেদনের হিসাবে বেশ গরমিল ধরা পড়ে। পেট্রোবাংলার অডিটে মেনটেইনেবল প্রফিট পদ্ধতিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-আশুগঞ্জ এলাকার ভবিষ্যৎ রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে শতকরা মাত্র ২ ভাগ। অথচ তিতাসের ২০০৮-০৯, ২০০৯-১০ এবং ২০১০-১১ অর্থবছরে ওই এলাকার রাজস্ব প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ১৩.৪৯, ১৭.১৭ ও ১২.৪৬ শতাংশ। পেট্রোবাংলার অডিটে ওই এলাকায় গ্যাসস্বল্পতার কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে তিতাস কর্তৃপক্ষের দাবি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-আশুগঞ্জ এলাকায় কোনো গ্যাসস্বল্পতা নেই।
তিতাস বোর্ড সূত্রে জানা যায়, হোদা ভাসির করা অডিট প্রতিবেদনে ডিসকাউন্ট ক্যাশ ফ্লো (ডিসিএফ) পদ্ধতিতে ২০১০-১১ অর্থবছরে এলাকাগুলোর আর্নিং বিফোর ইন্টারেস্ট অ্যান্ড ট্যাঙ্সে (ইবিআইটি) ধরা হয়েছে ৩৯২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এটা আগের বছরের তুলনায় শতকরা ৫৩ দশমিক ৫৬ ভাগ কম। অথচ এর আগের বছরে এ ক্ষেত্রে আয় ছিল ৯০৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
তিতাসের দাবি, এ হিসাব নিরীক্ষণের কোনো আইনি এখতিয়ার নেই পেট্রোবাংলার। কেননা তিতাস পেট্রোবাংলার অধীন কম্পানি হলেও তারা একটি স্বতন্ত্র কম্পানি। শুধু এই দুটি প্রকল্পের দাম কম দেখাতেই পেট্রোবাংলা নিজেদের মতো অডিট করিয়েছে বলে তিতাসের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অভিযোগ করেন।
এত কিছুর পরও তিতাসের ৬৩০তম বোর্ড সভায় হোদা ভাসির অডিট প্রতিবেদনটির অনুমোদন দেওয়া হয়। তিতাসের বোর্ড সভার এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'তিতাস বাধ্য হয়েই অনুমোদন দিয়েছে। এর পেছনে মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলার বড় ধরনের চাপ ছিল।'
অন্যদিকে যে কম্পানি তিতাসের এলাকাটি কিনে নিচ্ছে সেই বাখরাবাদ কোনো অডিট করেনি। নিয়মানুযায়ী বাখরাবাদেরও অডিট করার কথা। তিতাস পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কম্পানি হওয়ায় হিসাবটি এসইসি, ডিএসই ও সিএসইরও মূল্যায়ন করার কথা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসইসির নির্বাহী পরিচালক এ টি এম তারিকুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এ ব্যাপারে কোনো কাগজপত্র আমাদের কাছে আসেনি। তাই আমরা কিছু বলতে পারছি না।' তবে এসইসির একটি সূত্র দাবি করে, এটি একটি খারাপ নজির।
তিতাসের জনসংযোগ কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল আজিজ খান স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ভারতে অবস্থান করছেন। তাঁর ফিরতে দেরি হবে। তিতাসের ভারপ্রাপ্ত এমডি ও পেট্রোবাংলার প্রশাসন বিভাগের পরিচালক মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে 'তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলবেন না'_এ কথা তাঁর অধীন কর্মকর্তাদের বলে দিয়েছেন বলে অফিস সূত্রে জানা যায়।

চিনির দাম কমাচ্ছে না মিলগুলো by আবুল কাশেম

সন্ন দুর্গাপূজা ও ঈদুল আজহা পর্যন্ত কোনো অবস্থাতেই তেল-চিনির দাম বাড়তে দেবে না সরকার। আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি, ভোজ্য তেল ও চিনির মজুদ ও অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা পর্যালোচনা করে মিলমালিকদের পরিষ্কারভাবে এ কথা জানিয়ে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তা সত্ত্বেও গত বুধবারও বিভিন্ন কলমালিকরা ৬৪ টাকার নিচে মিলগেট থেকে চিনি বের করেননি।

এ অবস্থায় মিলমালিক ও পরিবেশকদের কারসাজি রুখতে চলমান মনিটরিং ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সরকারিভাবে টিসিবিও ৩০টি খোলা ট্রাকে ঈদ পর্যন্ত তেল ও চিনি বিক্রি করবে। এ ছাড়া পরিশোধিত চিনি আমদানিকারকরাও ইতিমধ্যে বিপুল চিনি আমদানি করেছেন। তাঁরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব করেছেন, মিলমালিকদের চেয়ে কম দামে চিনি বিক্রিতে আগ্রহী তাঁরা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, চিনির দাম বাড়াতে মিলমালিকরা নানাভাবে তৎপরতা দেখালেও পরিশোধিত চিনি আমদানিকারকরা মিলমালিকদের চেয়ে অনেক কম দামে পর্যাপ্ত পরিমাণ চিনি সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছেন আমাদের কাছে। ঢাকার মৌলভীবাজারের আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ী গোলাম মওলার নাম উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলেছেন, মিলমালিকদের চেয়েও কম দামে সরকার যে পরিমাণ চাবে, সে পরিমাণ চিনি সরবরাহ করবেন। ওই কর্মকর্তা জানান, ভোজ্য তেল ও চিনির দাম যে বাড়ানো হচ্ছে না, তা ব্যবসায়ীদের স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার পরও তাঁরা বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করলে মনিটরিং টিম কঠোর ব্যবস্থা নেবে। একই সঙ্গে সরবরাহে সরবরাহ ও দাম স্থিতিশীল রাখতে টিসিবিও তেল-চিনি নিয়ে মাঠে থাকবে।
মৌলভীবাজার ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মওলার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, এই মুহূর্তে চিনির দাম বাড়ানো মানে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যারিফ কমিশনের অনুমোদন ছাড়াই মিলমালিকরা ৬৪ টাকা আট পয়সা কেজি দরে মিলগেট থেকে চিনি বিক্রি করছেন। অথচ আমাদের অনেক বন্ধু-বান্ধব বিপুল পরিমাণ চিনি আমদানি করেছেন। এসব চিনির বড় অংশ বন্দরের কাছাকাছি এসেছে। ৬৩ টাকা দরেই তাঁরা সব চিনি সরকারকে দিতে আগ্রহী। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ওই তথ্য জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনোয়ার হাবিব গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, গতকাল মেঘনা, সিটি, আবদুল মোনেম গ্রুপের চিনির মিলগুলোয় চিনি আনতে যাওয়ার আগে ফোন করেছিলাম। তারা সবাই ৬৪ টাকা কেজি দরে দাম চেয়েছে। ফলে আমি কোনো চিনি আনিনি। টিসিবির (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সারোয়ার জাহান তালুকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, দুর্গাপূজা ও ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে টিসিবি অক্টোবর মাসের প্রথম বা দ্বিতীয় দিন থেকে ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে ৩০টি ট্রাকে ভোজ্য তেল ও চিনি বিক্রি করবে। টিসিবির হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ চিনির মজুদ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিপুল ভোজ্য তেলও আমাদের হাতে এসে পেঁৗছাচ্ছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ চিনির সঙ্গে শুরুতে পাঁচ হাজার টন ভোজ্য তেল নিয়ে মাঠে নামবে টিসিবি। পরে সরকারের সিদ্ধান্ত ও বাজার চাহিদার নিরিখে ভোজ্য তেল ও চিনির পরিমাণ আরো বাড়ানো হতে পারে। টিসিবির ভোজ্য তেল ও চিনির দাম এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, বাজার মূল্যের চেয়ে বেশ কম দামেই এ দুটি পণ্য বিক্রি করবে টিসিবি। টিসিবির কর্মকর্তারা জানান, আগামী ঈদ পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণ চিনি সরবরাহ করার ক্ষমতা টিসিবির রয়েছে। টিসিবির গুদামে তেলও আছে। তা সত্ত্বেও মালয়েশিয়া থেকে শিগগিরই ভোজ্য তেলের একটি চালান চট্টগ্রাম বন্দরে পেঁৗছাচ্ছে। এর আগে অভ্যন্তরীণভাবে সিটি গ্রুপের কাছ থেকে চার হাজার টন, মেঘনা ও টিকে গ্রুপের কাছ থেকে তিন হাজার টন করে মোট ১০ হাজার টন ভোজ্য তেল কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে মালয়েশিয়া থেকে দুই হাজার টন তেল আসায় এখন স্থানীয় মিলগুলো থেকে তিন হাজার টন তেল কিনছে টিসিবি।

কয়লা নিয়ে পথ খুঁজে পাচ্ছে না সরকার by অরুণ কর্মকার

বাণিজ্যিক জ্বালানি হিসেবে কয়লার ব্যবহার বাড়ানোর পথ পাচ্ছে না সরকার। বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার বিপুল ব্যবহার পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু দেশীয় কয়লা উত্তোলন কিংবা বিদেশ থেকে আমদানির উদ্যোগ এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে।

এ অবস্থায় সরকার কয়লানীতি চূড়ান্ত করার জন্য আবার নতুন একটি কমিটি গঠন করেছে। পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেনকে আহ্বায়ক করে গঠিত ১৫ সদস্যের এ কমিটি বর্তমান সরকারের সময়ে গঠিত দ্বিতীয় কমিটি।
গত বছর এপ্রিল মাসে জ্বালানিসচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিনকে প্রধান করে গঠিত কমিটিকে কয়লানীতি চূড়ান্ত করার জন্য যে কার্যপরিধি দেওয়া হয়েছিল, নতুন গঠিত কমিটিকেও একই কার্যপরিধি দেওয়া হয়েছে। নতুন কমিটিকে আগামী চার মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
যদিও আগের কমিটির চূড়ান্ত করা নীতিটি সম্পর্কে মতামত নেওয়ার জন্য গত বছরের ২৪ অক্টোবর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। পাওয়া মতামতের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি চূড়ান্তও করা হয়। তখন থেকে বর্তমান কমিটি গঠনের আগে পর্যন্ত বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী একাধিকবার বিভিন্ন স্থানে বলেছেন যে চূড়ান্ত কয়লানীতি শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।
এরপর আবার কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তা কী, জানতে চাইলে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র প্রথম আলোকে বলেন, সরকার আসলে কী করবে বুঝতে পারছে না। সে জন্যই একই কার্যপরিধি দিয়ে আবার কমিটি গঠন করে কিছু সময় নেওয়া হচ্ছে।
শুরুর কথা: কয়লানীতি প্রণয়নের কাজ প্রথম শুরু করা হয় ২০০৬ সালে। তখন একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হয়েছিল। তাদের খসড়াটি আটবার সংশোধন করার পর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে চূড়ান্ত করার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়।
প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক উপাচার্য আবদুল মতিন পাটোয়ারিকে প্রধান করে গঠিত ওই কমিটি খসড়া নীতির প্রতিটি লাইন ধরে আলোচনা করে একটি চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করে সরকারকে দেয়। সরকারি পর্যায়েও কিছু কাজ করে সেটি চূড়ান্ত করা হয়। অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ ধরনের একটি জাতীয় নীতি চূড়ান্ত করতে পারে না বলে সুশীল সমাজের একাংশ দাবি জানালে নীতিটি ওই অবস্থাতেই রেখে দেওয়া হয়।
নীতির মৌলিক বিষয়: সেই কয়লানীতির খসড়ার মৌলিক বিষয় ছিল—কয়লা তোলার পদ্ধতি নির্ধারিত হবে প্রতিটি খনির ভূ-তাত্ত্বিক, পরিবেশ-প্রতিবেশ ও খানা এলাকার সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে। কয়লা রপ্তানি করা যাবে না, উত্তোলন করা হবে জাতীয় চাহিদা অনুযায়ী। কয়লা উত্তোলন হবে সরকারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব ও ব্যবস্থাপনায়। প্রয়োজনে তারা দেশের আইনকানুন অনুযায়ী সহযোগী হিসেবে কোনো দেশি বা বিদেশি কোম্পানিকে সঙ্গে নিতে পারবে। রয়্যালিটি নির্ধারণের প্রয়োজন হলে তা হবে বিভিন্ন দেশের হার পর্যালোচনা করে তার ভিত্তিতে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে। খনির জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হলে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন করতে হবে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী। খনি এলাকার লোকদের যোগ্যতা অনুযায়ী খনির কাজে নিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
এ ছাড়া বিশেষজ্ঞ কমিটির একটি সুপারিশ ছিল, খনির জন্য যাঁদের জমি অধিগ্রহণ করা হবে, ৩০ বছর পর ওই জমি পুনরুদ্ধার করে তাঁদের ফিরিয়ে দিতে হবে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ বিষয়টিতে একমত হয়নি।
বর্তমান সরকারের উদ্যোগ: বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালের ১২ এপ্রিল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল অবদুল মুহিত এক চিঠিতে জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে কয়লানীতি চূড়ান্ত করতে বলেন। চিঠিতে চূড়ান্ত কয়লানীতিতে অন্তত ২৫ বছর কোনো কয়লা রপ্তানি না করার বিধান রাখতে বলা হয়। চিঠি পাওয়ার পর ২১ এপ্রিল জ্বালানি সচিবকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির প্রতিবেদন ওয়েবসাইটে প্রকাশ এবং চূড়ান্ত করার পর আবার ৮ সেপ্টেম্বর নতুন কমিটি করা হলো।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা: বিদ্যুৎ খাত মহাপরিকল্পনায় (২০৩০ সাল পর্যন্ত) বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি বহুমুখীকরণের নীতি নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ১৫ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। অথচ খনি থেকে কয়লা উত্তোলন বাড়ানোর কোনো কার্যকর উদ্যোগ সরকার এখন পর্যন্ত নিতে পারেনি।
বর্তমানে দেশের একমাত্র কয়লাখনি বড়পুকুরিয়া থেকে বছরে সাত থেকে আট লাখ টন কয়লা তোলা যাচ্ছে, যার অধিকাংশ ব্যবহূত হচ্ছে সেখানকার ২৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালাতে।
এ অবস্থায় সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা আমদানির উদ্যোগ নেয়। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে অবস্থিত আটটি দেশের দূতাবাসে প্রায় ছয় মাস আগে চিঠি পাঠায়। তবে এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে সরকারি সূত্র জানায়।
কয়লার মজুদ: এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত দেশের পাঁচটি কয়লাক্ষেত্রে মোট মজুদের পরিমাণ প্রায় ৩০০ কোটি টন। এর সবই উন্নতমানের বিটুমিনাস কয়লা। এর মধ্যে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে উত্তোলনযোগ্য প্রায় ১৮০ কোটি টন। এ কয়লা দিয়ে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় ৫০ বছর ধরে। তবে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খনির কাজ শুরুর আগেই জনবসতি স্থানান্তর, কৃষিজমি হারানো ও পরিবেশ-প্রতিবেশগত অনেক সমস্যার সমাধান করতে হবে।
ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে উত্তোলন করলে কয়লা তোলা সম্ভব হবে সর্বোচ্চ ৪০ কোটি টন। বাকি কয়লা মাটির নিচেই থেকে যাবে। এ পদ্ধতিতে ভূমিধসের আশঙ্কা থাকে। তবে তা হবে খনি থেকে কয়লা তোলা শুরু করার পরে।
নির্বাচনী অঙ্গীকার: আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছে, ‘এযাবৎ প্রাপ্ত কয়লার অর্থনৈতিক ব্যবহার এবং কয়লাভিত্তিক শিল্প নির্মাণে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। নতুন কয়লা ও অন্যান্য খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।’

কোলন ক্যান্সারঃ সতর্ক থাকুন by ডা. সাবরিনা শারমিন

বিশ্বজুড়ে যত রোগী ক্যান্সার আক্রান্ত হয়, তার মধ্যে আক্রান্তের হিসাবে তৃতীয় বৃহত্তম হলো কোলোরেক্টাল ক্যান্সার। কোলোরেক্টাল ক্যান্সার বলতে বৃহদান্ত্রের ক্যান্সার বোঝায় সিকাম, এসেন্ডিং কোলন, ট্রান্সভার্স কোলন, ডিসেন্ডিং কোলন, রেক্টাম ও এপেন্ডিঙ্-এর ক্যান্সার।

কোলন ক্যান্সারে বেশি আক্রান্ত হন উন্নত বিশ্বের বাসিন্দারা। রোগীর দুই-তৃতীয়াংশই উন্নত বিশ্বের। তার পরও বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কোলোরেক্টাল ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ২০১০ সালে গ্লোবোক্যান (ক্যান্সার গবেষণা প্রতিষ্ঠান) এর হিসাব অনুসারে ২০ লাখ লোক কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় ও প্রতিবছর ছয় লাখ লোক এই রোগে মৃত্যুবরণ করে।

লক্ষণ
বৃহদান্ত্রের কোনো অংশ ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে আর তা কতদূর বিস্তার লাভ করেছে তার ওপর রোগের লক্ষণগুলো নির্ভর করে। গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণগুলো হলো_
পায়ুপথে রক্তক্ষরণ : কখনো পরিমাণে বেশি হতে পারে আবার কখনো সামান্যও হতে পারে। এটি গাঢ় লাল তাজা রক্ত হতে পারে আবার পুঁজমিশ্রিত কালচে লাল রক্তও হতে পারে। কখনো পায়খানা কালো হতে পারে।
* মলত্যাগের প্রাত্যহিক অভ্যাসের পরিবর্তন অর্থাৎ কখনো ডায়রিয়া বা কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।
* মলত্যাগ অসম্পূর্ণ_এমন অনুভূতি হয়। এ কারণে রোগী বারবার টয়লেটে গিয়ে মলত্যাগের চেষ্টা করে।
* পেটে চাকা অনুভূত হয়। এ ক্ষেত্রে রোগী হঠাৎ করেই পেটে চাকা টের পায়।
* পেটে বা পায়ুপথে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
* কোলনের মল সঞ্চালন বন্ধ হয়ে (কখনো ক্যান্সার অনেক বড় হয়ে এমনটি হতে পারে) পায়খানা আটকে যায়। ফলে পেট ফুলে যায়, পেটে ব্যথা হয় ও বমি হতে পারে।
* কখনো রোগীর অন্য কোনো অসুবিধা থাকে না শুধু রক্তশূন্যতা হয়। সাধারণত ডানদিকের কোলন অর্থাৎ সিকাম বা এসেন্ডিং কোলনের ক্যান্সারে রোগী শুধু রক্তশূন্যতা ও দুর্বলতা নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসে।
* বামদিকের বড় টিউমার হলে অনেক সময় তা বাম দিকের মূত্রনালিকে চেপে রাখে ফলে বামদিকের কিডনি ফুলে যায়। যা হাইপোনেফ্রসিস নামে পরিচিত।
* রোগীর ওজন অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়, রুচি কমে যায়।
মনে রাখতে হবে, লক্ষণ প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে রোগীর চিকিৎসা ফলপ্রসূ হয় ও ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর আশঙ্কা অনেক কমে যায়। রোগ যদি একেবারে প্রাথমিক অবস্থায় থাকে অর্থাৎ টিএনএম স্টেজ এক ও দুই থাকে_ সেক্ষেত্রে ক্যান্সার শুধু বৃহদান্ত্রের দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। তখন চিকিৎসা করলে ৯০ শতাংশ রোগী পাঁচ বছরের বেশি বেঁচে থাকে। কিন্তু যদি টিএনএম স্টেজ তিন অর্থাৎ বৃহদান্ত্রের বাইরের চারপাশে ও লিম্ফনোডে ছড়ায় সে ক্ষেত্রে সব ধরনের চিকিৎসা করা হলেও (এমনকি উন্নত বিশ্বেও) মাত্র ৪০ শতাংশ রোগী পাঁচ বছর পর্যন্ত বাঁচে। আর কোলন ক্যান্সার যদি স্টেজ চার-এ অর্থাৎ কোলন থেকে দূরবর্তী স্থানেও ছড়ায় সে ক্ষেত্রে সব ধরনের আধুনিক চিকিৎসা সত্ত্বেও মাত্র ৫-৭ শতাংশ রোগী সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। কাজেই সংকোচ, দ্বিধা ইত্যাদি বশবর্তী হয়ে কখনোই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে দেরি করবেন না।

কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কাদের বেশি?
কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত কারা হবেন তা আগে থেকে বলা কঠিন। তবে কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলো কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
বয়স
যদিও অল্প বয়সেও কোলন ক্যান্সার হওয়া সম্ভব তার পরও বেশি বয়সে যেমন ৫০ বছরের পর কোলন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে। প্রতিবছর কোলন ক্যান্সারে যে পরিমাণ রোগী আক্রান্ত হয় এর মধ্যে শতকরা ৯০ জনের বয়সই ৫০-এর বেশি। তাই এ বয়সে যদি হঠাৎ মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তন হয়, পায়ুপথে রক্ত যায় অথবা অকারণেই রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে রক্তের অকাল ব্লাড টেস্ট ও কোলনস্কোপি করা উচিত।
লিঙ্গ
যদিও কোলোরেক্টাল ক্যান্সারে নারী-পুরুষ উভয়েরই সমভাবে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, তবে আমেরিকান সোসাইটি ফর ক্যান্সার রিসার্চের তথ্য অনুসারে নারীরা কোলন ক্যান্সার ও পুরুষরা রেক্টাল ক্যান্সারে বেশি আক্রান্ত হয়।
বংশগত
নিকট আত্মীয়, যেমন মা-বাবা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজনের মধ্যে কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে এই ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। একের অধিক নিকটাত্মীয় এ ধরনের সমস্যার শিকার হলে কোলন ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা আরো অনেক বেশি থাকে। বংশগত কোলন ক্যান্সার আবার দুই রকম হতে পারে।
হেরেডিটারি ননপলিপসিস কোলন ক্যান্সার : এ ক্ষেত্রে এইচএনপিসিই জিনের পরিবর্তনের কারণে কোলন ক্যান্সার হয়ে থাকে। শতকরা ৩-৫ শতাংশ কোলন ক্যান্সার এ কারণে হয়। সাধারণত ৪৪-৪৬ বছর বয়সে ধরা পড়ে। বংশে কারো থাকলে অথবা পরপর দুই জেনারেশন অথবা দুই বা এর অধিক আত্মীয় আক্রান্ত হলে কোলন ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। তাই আপনার বংশে এমন থাকলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন ও নিশ্চিত হোন।
ফ্যামিলিয়াল এডিনোমেটাস পলিপসিস : এ ক্ষেত্রে এপিসি জিনের মিউটেশনের কারণে ক্যান্সার হয়। ১-২ শতাংশ কোলন ক্যান্সার এ কারণে হয়। এ ক্ষেত্রে রেক্টাল ও কোলনে শতাধিক পলিপ থাকে। বয়োসন্ধিতেই এসব পলিপ পাওয়া যায় ও ২০-৩০ বছর বয়সের মধ্যেই তা ক্যান্সারে রূপ নেয়। কাজেই কারো বংশে এ ধরনের ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে অথবা অল্প বয়সে কোলন ক্যান্সারের ঘটনা থাকলে ১০-১২ বছর বয়সেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে সার্জারি করে নিন।
খাদ্যাভ্যাস
যাঁরা মাংস, বিশেষ করে গরু ও খাসির মাংস বেশি খান ও আঁশসমৃদ্ধ খাবার কম খান তাঁদের মধ্যে কোলন ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। আঁশসমৃদ্ধ খাবার বৃহদান্ত্রের সঞ্চালন বা পেরিস্টালসিসকে দ্রুততর করে ফলে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদানগুলো কোলনের সংস্পর্শে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। ফলে কোলন ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কাও কমে। তৈলাক্ত খাবার, টিনজাত খাবার ও ফাস্টফুডও ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণেই উন্নত বিশ্বে কোলন ক্যান্সার হওয়ার হার বেশি। তাই মাংস ও
ফাস্টফুড কমিয়ে দিয়ে মাছ, সবজি ইত্যাদি বেশি করে খান।
ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিক রোগীদের কোলন ক্যান্সারে ভোগার আশঙ্কা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি। তাই রক্তের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
বৃহদান্ত্রের অন্য সমস্যা
কারো যদি কোলনে এডেনোমা বা পলিপ থাকে তা বর্তমানে ক্যান্সার নয়, সেখান থেকেও ক্যান্সার হতে পারে। তাই প্রথম অবস্থায়ই সতর্ক হন। কারো যদি ইনফ্ল্যামেটরি বাউল ডিজিজ যেমন আলসারেটিভ কোলাইটিস থাকে, সেখান থেকেও ক্যান্সার হতে পারে। তাই যাদের দীর্ঘদিন ধরে প্রায়ই রক্তমিশ্রিত পায়খানা হয়, পেটে ব্যথা হয়, ডায়রিয়া হয় তাঁরা পরীক্ষা করিয়ে নিন।
ধূমপান
ধূমপান কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। সিগারেটের ক্ষতিকারক পদার্থ মুখের লালার মধ্যে দ্রবীভূত হয়ে পেটে যায় ও ক্যান্সার তৈরি করতে পারে।
মদ্যপান
যাঁরা বেশি মদ্যপান করেন তাঁদের কোলন ক্যান্সার বেশি হয়। অতিরিক্ত মদ্যপান শরীরের ফলিক এসিডের পরিমাণ কমিয়ে দেয় যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
মেদ বা অতিরিক্ত ওজন
কায়িক পরিশ্রমের অভাব ও শরীরচর্চায় অনাগ্রহ, অতিরিক্ত ওজন ইত্যাদিও কোলন ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
শরীরের অন্যান্য অংশের ক্যান্সার
শরীরের অন্যান্য অংশ যেমন মহিলাদের এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার বা ওভারিয়ান ক্যান্সার থাকলে বা পুরুষদের প্রস্টেট ক্যান্সারের জন্য রেডিও থেরাপি নিলেও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।
তবে মনে রাখতে হবে, ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্র ছাড়া ক্যান্সার হবে না বা দুই-তিনটা ঝুঁকির কারণ থাকলেই ক্যান্সার হবে_এমন কোনো কথা নেই।

চিকিৎসা
কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসা নির্ভর করে এটি কোন স্টেজে আছে তার ওপর। কোলন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে অপারেশনই কার্যকরী চিকিৎসা। তবে কখনো বাইপাস বা প্যালিয়েটিভ বা ফিকাল ডাইভারশনের কারণেও সার্জারিও করা হয়। অপারেশনের আগে বা পরে অথবা উভয় ক্ষেত্রেই কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়।
কোলন ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

দেশে কোলন ক্যান্সার কেন ভয়ের কারণ

* আমাদের দেশে পায়ুপথের সমস্যা যেমন পায়ুপথে রক্তক্ষরণ, পায়ুপথে কোনো বৃদ্ধি বা গ্রোথ ইত্যাদি হলে প্রায় সবাই এটিকে গোপন রাখতে চায়। ফলে সংকোচ, লজ্জা ও দ্বিধায় থেকে পরিবারের কাউকে এটি সে জানায় না, চিকিৎসাও করে না।
* পায়ুপথে যেকোনো সমস্যা হলেই পাইলস বলে মনে করে ও দেশের বিভিন্ন স্থানে 'অর্শ ভগন্দর পাইলস' ইত্যাদি কবিরাজি চিকিৎসালয়ের শরণাপন্ন হয়ে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে অর্থ, সময় ইত্যাদি নষ্ট করে।
* বাংলাদেশে কোলন ক্যান্সারের জন্য কোনো রুটিন চেকআপ করা হয় না। বংশে কারো কোলন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলেও অনেকে এ ব্যাপারে মোটেই সচেতন নন। আবার দেশের অনেক স্থানেই এখনো কোলনস্কোপি ও জেনেটিক টেস্টের সুবিধা নেই।
* বাংলাদেশে ধূমপান, তামাক, বিড়ি ইত্যাদি সেবনকারী মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি, যা কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ক্যান্সার বিভাগের সাবেক প্রধান ডা. লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোফাজ্জল হোসেন (অব.)-এর মতে, বাংলাদেশে সর্বাপেক্ষা বেশি সংঘটিত পাঁচটি ক্যান্সারের একটি হলো কোলোরেক্টাল ক্যান্সার এবং দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, দেশে রোগী যখন চিকিৎসকের কাছে আসে ও কোলন ক্যান্সার হিসেবে চিহ্নিত হয়, তখন ইতিমধ্যেই তা জটিলতা ধারণ করেছে। তাই অনেক ক্ষেত্রেই সুচিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না।

প্রতিরোধ

* ধূমপান পরিহার করুন।
* ওজন কমান।
* গরু ও খাসির মাংস কম খান।
* মাছ বেশি খান।
* শাকসবজি ও ফল বেশি খান।
* ভিটামিন ডি ও ফলিক এসিড খান।
* ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
* কোনো সমস্যা হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিন।
* অপচিকিৎসা বর্জন করুন।
* বংশে কোলন ক্যান্সার হওয়ার ঘটনা থাকলে আগেই ব্যবস্থা নিন।

প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে শান্তির মডেল উপস্থাপন করলেন

বিশ্বকে পাল্টে দিতে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে 'জনগণের ক্ষমতায়ন' মডেলের রূপরেখা বিশ্বনেতাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা পালনে এই মডেল বাস্তবায়নের জন্য জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে তিনি বলেন, এই শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে জনগণের ক্ষমতায়ন এবং মানবিক সক্ষমতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে তাঁর সরকারের অঙ্গীকার এবং বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদা দিতে বিশ্বনেতাদের সমর্থনও কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় শনিবার দুপুরে (বাংলাদেশ সময় শনিবার রাতে) জাতিসংঘের ৬৬তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে 'আন্তর্জাতিক বিরোধ নিরসনে শান্তিপূর্ণ মধ্যস্থতা' শীর্ষক মূল প্রতিপাদ্যে বক্তব্য দিতে গিয়ে এ মডেল উপস্থাপন করেন শেখ হাসিনা। বরাবরের মতো প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেন। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো বাংলায় ভাষণ দিলেন তিনি। ১৯৭৪ সালে প্রথমবারের মতো সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের সময় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটভুক্ত দলগুলোর পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ভবনের সামনে শান্তি সমাবেশ করা হয়েছে। সেখানে বিএনপির নেতিবাচক ভূমিকার কারণে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে নেতারা অভিযোগ করেন। তাঁরা বিরোধী দলের এসব কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেন। এ সমাবেশে পূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, জাসদ নেত্রী শিরীন আক্তারসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে 'যেখানেই শেখ হাসিনা সেখানেই প্রতিবাদ কর্মসূচি'র আলোকে একই সময় বিএনপি-জামায়াত জোটের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা শওকত মাহমুদ এই বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন।
শেখ হাসিনা তাঁর উপস্থাপিত শান্তির মডেলে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণ, বৈষম্য দূরীকরণ, বঞ্চনার লাঘব, ঝরে পড়া মানুষকে সমাজের মূলধারায় অন্তর্ভুক্তি, মানবসম্পদ উন্নয়ন ত্বরান্বিত ও সন্ত্রাসবাদের মূলোৎপাটন করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এই ছয়টি পরস্পর ক্রিয়াশীল বিষয় শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। সারা জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে প্রণীত এই মডেলে গণতন্ত্র এবং উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সব মানুষকে সমান চোখে দেখা এবং মানবিক সামর্থ্য উন্নয়নের কাজে লাগানোকে তাঁর মডেলের মূল বিষয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, একমাত্র শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই এসব বাস্তবায়ন এবং সমৃদ্ধি অর্জন সম্ভব।
এ লক্ষ্যে প্রতিটি রাষ্ট্রকে আন্তরিকভাবে সঠিক ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানেও এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলে মত প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। শান্তিকেন্দ্রিক উন্নয়ন মডেল প্রয়োগের মাধ্যমে সাত বিলিয়ন মানুষের বিশ্বকে পাল্টে দেওয়া এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুখ-শান্তি নিশ্চিত করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারের জন্য একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে তাঁর সরকার। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা ছাড়া শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়_মন্তব্য করে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র আরো শক্তিশালী হবে। 'আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রোম সনদের অনুস্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ' বলেন তিনি। অতীত ভুলের সংশোধনের এটিই একমাত্র পথ এবং এর মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য সুসংহত হবে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের ব্যাপারে নিজের অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমি ব্যক্তিগতভাবে সন্ত্রাসের শিকার।' এ প্রসঙ্গে তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনা উল্লেখ করেন। পাশাপাশি নাইন-ইলেভেনসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী হামলার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এ ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিচারের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, 'শান্তির জন্য ন্যায়বিচার প্রয়োজন, আর শান্তি হচ্ছে উন্নয়নের পূর্বশর্ত।'
১৯৬৪ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত অন্যায্য কর্মকাণ্ডে বিশ্বে পাঁচ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের প্রাণ হারানোর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা জোরদার করার মাধ্যমে এ ধরনের অপমৃত্যু রোধ করা যেত।
আন্তর্জাতিক শান্তি এবং নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি আন্তরাষ্ট্র জাতিগত সংঘাত নিরসন, সন্ত্রাসবাদ দমন, আন্তসীমানা অপরাধ দমন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবিলা, দারিদ্র্য বিমোচন, পানি ও জ্বালানি নিরাপত্তা তৈরি এবং ধনী ও গরিবের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য বিলোপ করাও জাতিসংঘের কাজ বলে মত প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বিশ্বের প্রায় ৩০০ মিলিয়ন মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে উল্লেখ করে বাংলাকে জাতিসংঘের অন্যতম দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে গ্রহণ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের আবেদনের প্রতি সবার সমর্থন কামনা করেন শেখ হাসিনা। বিশ্বের শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে ৩৬টি দেশের ৫২টি মিশনে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত লক্ষাধিক শান্তিরক্ষী পাঠিয়েছে।
জাতিসংঘের শান্তি স্থাপন কমিশনে 'ন্যাম'-এর সমন্বয়কারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সব সময়ই সংঘাত-পরবর্তী সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা, উন্নয়ন এবং প্রতিকারমূলক কূটনীতির পক্ষে অভিমত দিয়ে আসছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তবে 'দ্য রোল অব দ্য ডিপার্টমেন্ট অব পিস কিপিং মিশন' (ডিপিকেও)-তে পরিকল্পনা এবং কৌশল প্রণয়নে বাংলাদেশের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের কৌশল সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে মিল রেখে প্রণয়ন করা হয়েছে_মন্তব্য করে ২০১৫ সালের মধ্যে দেশের ১২ মিলিয়ন মানুষকে দারিদ্র্যের কশাঘাত থেকে মুক্ত করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
নারীর ক্ষমতায়নে তাঁর সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার প্রণীত নারী নীতিমালায় নারীর ক্ষমতায়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ, তাদের সুরক্ষা এবং জেন্ডার সমতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতি এবং বিভিন্ন সেক্টরে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জাতীয় সংসদে ৬৪ জন এবং স্থানীয় সরকার পরিষদের সংরক্ষিত আসনে ১২ হাজার ৮২৮ জন নারী নির্বাচিত হয়েছেন।
মন্ত্রিসভায় পাঁচজন নারী সদস্যের এবং জাতীয় সংসদের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির দুজন নারী চেয়ারপারসনের অন্তর্ভুক্তির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমি নিজে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও বিরোধী দলের নেতা, সংসদ উপনেতা এবং জাতীয় সংসদের একজন হুইপ নারী।'
বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সব সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানে সরকারের দৃঢ়সংকল্পের কথা ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার কথা পুনর্ব্যক্ত করে এ লক্ষ্যে তাঁর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা বিশ্বনেতাদের অবহিত করেন। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের এসব উদ্যোগ সফল করতে এবং জনগণের আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সহায়তা কামনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, 'উন্নত বিশ্বের বাজারে আমাদের পণ্যের অবাধ প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি, বাণিজ্য বাধা অপসারণ, বৈদেশিক সাহায্যের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবিলায় সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে এসব সহায়তা আসতে পারে।'
গত মে মাসে ইস্তাম্বুলে কৃষি, জ্বালানি অবকাঠামো, পানি, অভিবাসন বিষয়ে যেসব অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে সেগুলোর বাস্তবায়ন স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হবে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। দোহা রাউন্ডের সফল সমাপ্তির জন্য মন্তারাই, প্যারিস ও ব্রাসেলসে উন্নয়ন সহযোগীরা যেসব অঙ্গীকার করেছে, তা বাস্তবায়নের এখনই উপযুক্ত সময় বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বিপর্যয়ের কথাও প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনেতাদের সামনে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, 'বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বৃদ্ধি পেলে আমাদের এক-পঞ্চমাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে। এতে ৩০ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুহারা হয়ে পড়বে এবং এটা হবে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহতম মানবিক বিপর্যয়।'
ভবিষ্যৎ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের উদ্যোগের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার নিজস্ব অর্থায়নে ৩০০ মিলিয়ন ইউএস ডলারের ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড এবং দাতাদের সহযোগিতায় ১০০ মিলিয়ন ইউএস ডলারের ক্লাইমেট চেঞ্জ রেজিলিয়ান্স ফান্ড প্রতিষ্ঠা করেছে। পাশাপাশি সরকার ১৩৪ দফা অ্যাডাপটেশন অ্যান্ড মাইগ্রেশন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, যার আওতায় নদী খনন, ২০ শতাংশ ভূমির বনায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সক্ষম ফসলের জাত উদ্ভাবনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অর্ধশতাব্দী ধরে নিজের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা এবং নিজেকে শান্তির পক্ষের একজন নির্ভীক যোদ্ধা দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, 'অসাম্য, অর্থনৈতিক বৈষম্য, বঞ্চনা, দারিদ্র্য, সাম্প্রদায়িকতা, নারী ও ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর অধিকারহীনতা এবং সরকারি কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব মানুষের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে কাজ করে।'
প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যের শুরুতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনের সভাপতি জোসেফ ডেইসকে এবং এ বছর সাধারণ অধিবেশনের মূল প্রতিপাদ্য 'আন্তর্জাতিক বিরোধ নিরসনে শান্তিপূর্ণ মধ্যস্থতা' শীর্ষক সময়োচিত প্রতিপাদ্য নির্বাচনের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনকে ধন্যবাদ জানান। এ ছাড়া তিনি বিশ্ব মানচিত্রে স্থান পাওয়া নতুন রাষ্ট্র দক্ষিণ সুদান জাতিসংঘের ১৯৩তম সদস্য হওয়ায় সুদানের জনগণকে অভিনন্দন জানান।
সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, অ্যাম্বাসাডর-এট-লার্জ জিয়াউদ্দিন প্রমুখ।

শেয়ারবাজারে লাগাতার দরপতন, বিশেষজ্ঞরাও ধোঁয়াশায় by টিটু দত্ত গুপ্ত

রকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর নানামুখী পদক্ষেপের পরও শেয়ারবাজার কেন স্থির হচ্ছে না, তা বিশেষজ্ঞদেরও বোধগম্য নয়। 'স্বাভাবিক' অবস্থার সংজ্ঞা নিয়েও তাঁরা নিশ্চিত নন। সর্বশেষ ধ্বংসের আগের অবস্থা অর্থাৎ সূচকের ৮৯১৯ পয়েন্ট যদি 'স্বাভাবিক' অবস্থার মাপকাঠি হয়, তাহলে দেশের শেয়ারবাজার কবে নাগাদ সে অবস্থায় পেঁৗছাবে, এ ব্যাপারে কোনো ধারণা নেই তাঁদের। তবে তাঁদের পরামর্শ, বর্তমানে সূচক যেভাবে হিসাব করা হয়, তাতে শেয়ারবাজারের প্রকৃত চিত্র ফুটে ওঠে না। সূচক নিয়ে বিচলিত না হয়ে লগি্নকারীদের উচিত কম্পানির মৌল ভিত্তি বিবেচনায় নিয়ে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া ও অপেক্ষা করা। ঋণের টাকায় নয়, নিজের সঞ্চয়ের একটি নিরাপদ অংশ দিয়েই যেন তারা শেয়ার কেনে।

বিশ্লেষকদের মতে, বাজারে নতুন করে আস্থাহীনতা তৈরি হওয়ার মতো কোনো ঘটনা দেশের অর্থনীতিতে ঘটেনি। বিক্ষোভকারীদের নানা দাবি মেনে নেওয়ার পর সরকারেরও আর তেমন কিছু করার নেই। তবে অর্থমন্ত্রীর আগের ঘোষণা অনুযায়ী সরকারি শেয়ার জরুরি ভিত্তিতে বাজারে ছাড়ার তাগিদ দিয়েছেন তাঁরা। বাজারে যখন এমনিতেই শেয়ারের দাম পড়ছে, তখন কম্পানির উদ্যোক্তাদের শেয়ার বিক্রির হিড়িক শেয়ারের দামের নিম্নগতিকে ত্বরান্বিত করছে। তা ছাড়া বাজারে ওই কম্পানি সম্পর্কে সাধারণ লগি্নকারীদের মনে একটি নেতিবাচক ধারণাও তৈরি করছে বলে তাঁরা মনে করছেন।
শেয়ারবাজার হবে শিল্প স্থাপন ও অবকাঠামো নির্মাণের জন্য অর্থায়নের বিকল্প উৎস, যা ব্যাংকের ওপর চাপ কমাবে_এমনিটিই আশা দেশের ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তাদের। কিন্তু বাস্তবে শেয়ারবাজার নিজেই হয়ে পড়েছে ব্যাংকনির্ভর। 'তারল্য সংকটের' কথা বলে হাত গুটিয়ে নিয়েছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। আর পড়তি দামেই নিজেদের শেয়ার বেচে বাজার থেকে বের হতে চাইছেন কম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা। তারল্য সংকট নিরসনের দাবিতে বিক্ষোভ-ভাঙচুরের প্রেক্ষাপটে গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর একক ঋণ সমন্বয়ের সময়সীমা এক বছর বাড়িয়ে দিল। তার পরও শেয়ারের দামের পতন থামছে না। এ অবস্থায় মন্দাবস্থা হয়তো প্রলম্বিত হবে_এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশ্লেষকদের কেউ কেউ।
বাজারের এমন আচরণের কারণ বুঝে উঠতে পারছেন না তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, 'বাজারে কেন এ রকম অবস্থা চলছে তা বলা মুশকিল।'
শেয়ারবাজারের জন্য সরকারের আর কী করার আছে জিজ্ঞেস করা হলে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) সাবেক এ চেয়ারম্যান বলেন, সরকার এখন যা করতে পারে সেটি হলো, দ্রুতগতিতে সরকারি শেয়ার বাজারে ছাড়া। এতে সরবরাহের ঘাটতি কিছুটা কমবে। ড. মির্জ্জা আজিজ বলেন, 'আমি মনে করি, নতুন শেয়ার আসা দরকার। যেকোনো আইপিও এলেই ওভার-সাব্সক্রাইব্ড হয়। এতে বাজারে নতুন অর্থ আসবে।' ইনডেঙ্ (সূচক) দেখে বিনিয়োগ না করার পরামর্শও দিলেন তিনি।
অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, শেয়ারবাজারের বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র দৃশ্যমান উপায় হচ্ছে ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমিয়ে দেওয়া। তিন প্রশ্ন করেন, 'ব্যাংকে টাকা রেখে যদি ১৪ শতাংশ সুদ পাওয়া যায় তাহলে মানুষ কেন শেয়ারবাজারে আসবে?' তবে তাঁর ধারণা, আইএমএফের চাপে সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংক তা করতে পারবে না, ফলে শেয়ারবাজারে মন্দাবস্থারও দ্রুত অবসান হবে না।
শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. ওসমান ইমাম বলেন, শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলো আগেই বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ করেছিল। এটি কমিয়ে আনার জন্য তাদের খুব কম সময় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তিনি মনে করেন, চার থেকে পাঁচ বছর সময় পেলে ব্যাংকগুলো নিজেদের গুটিয়ে আনতে পারত, বাজারেও প্রভাব পড়ত না। শেয়ারবাজারকে শিল্পে অর্থায়নের বিকল্প উৎস হিসেবে গড়ে তোলার সত্যিকারের ইচ্ছা সরকার বা নিয়ন্ত্রক সংস্থার আছে বলে মনে করেন না ড. ওসমান। তিনি বলেন, বাজেটেও এ ব্যাপারে কোনো দিকনির্দেশনা নেই।
লন্ডন স্টক এঙ্চেঞ্জে সাম্প্রতিক মন্দাবস্থার সময় বড় বড় কম্পানি বাজার থেকে নিজেদের শেয়ার কিনে নিয়েছে। দাম পড়ে যাওয়ায় শেয়ারহোল্ডারদের ধারণকৃত শেয়ারের মূল্যমান সমান রাখা বা বাড়ানোর জন্যই এ শেয়ার কিনে নেওয়া হচ্ছে বলে কম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়। অথচ বাংলাদেশে একদিকে যখন সরকার শেয়ার বাই-ব্যাক আইন কঠোর করার উদ্যোগ নিচ্ছে, অন্যদিকে তখন ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এঙ্চেঞ্জে কম্পানির পরিচালকরা মন্দার বাজারে শেয়ার বিক্রি করে চলেছেন। গত এক সপ্তাহে অন্তত ১৩টি কম্পানির পরিচালকরা তাঁদের হাতে থাকা ৭০ লাখেরও বেশি শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে প্রায় ১২১ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে মির্জ্জা আজিজ বলেন, বাজারের এ অবস্থায় তাঁরা নিজেরাই যদি নিজেদের শেয়ার বিক্রি করে দেন তাহলে বাজারে ভুল সংকেত যাবে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মনে সংশ্লিষ্ট কম্পানি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে।
১৯৯০ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জের (ডিএসই) সাধারণ সূচক ছিল ৫০০ পয়েন্টের নিচে। '৯৬-এর জুলাই মাসে তা ১০০০-এর ঘর অতিক্রম করে চার মাসের মাথায় সূচক ৩০০০ পয়েন্ট ছাড়িয়ে যায়। চার মাসের মাথায় আবার নেমে আসে ৯৫০-এর কোটায়। এর মধ্যে ঘটে যায় বাংলাদেশের উঠতি শেয়ারবাজারের প্রথম ভয়াবহ ধস, অসংখ্য ব্যক্তি লগি্নকারীর সারা জীবনের সঞ্চয় চলে যায় গুটিকয়েক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে। তারপর আট বছর লেগেছে সূচকের ১০০০-এর ঘর পার হতে। ২০০৪-এর ডিসেম্বরে একবার ২০০০ ছুঁই ছুঁই করলেও ২০০৬ সালের জুলাই মাস নাগাদ সূচক পড়ে যায় ১৪০০ পয়েন্টে। অবশ্য পরের দেড় বছরে অর্থাৎ ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে ডিএসইর মূল্যসূচক আবার পেঁৗছায় ৩০০০-এ। ওঠা-নামার মধ্য দিয়ে ২০০৯-এর মার্চে সূচক ২৫০০-এর নিচে নেমে এলেও পরের ২০ মাস ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জের শুধুই উল্লম্ফন। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৮৯১৯ পয়েন্ট ছোঁয় ডিএসই জেনারেল ইনডেঙ্ বা ডিজেন। এ উত্থান যেন ঘটেছিল পতনের জন্যই। মাত্র দুই মাসের মাথায়, অর্থাৎ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এটি নেমে আসে ৫২০০-এর ঘরে। এর মধ্যে রাস্তায় ব্যাপক বিক্ষোভ, তদন্ত কমিটি গঠন ও নির্ধারিত সময়ের আগেই তার প্রতিবেদন পেশ, দেরিতে হলেও সেই প্রতিবেদনের আলোর মুখ দেখা, প্রতিবেদন অনুযায়ী বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া, কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়াসহ বাজেটে ঘোষিত কিছু পদক্ষেপ, সবশেষে শেয়ারবাজারে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বাড়তি বিনিয়োগ কমিয়ে আনার সময় বাড়ানো। এক একটি উদ্যোগের পর সূচকের ঊর্ধ্বমুখী নড়াচড়া, পরের দিন আবার নিম্নমুখিতা, রাস্তায় বিক্ষোভ।
গত সপ্তাহে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জে (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। সাধারণ মূল্যসূচক পাঁচ হাজার ৯৬৬.৫১ পয়েন্ট নিয়ে গত সপ্তাহের লেনদেন শুরু হয়েছিল ডিএসইতে। আর সপ্তাহের শেষে এসে মূল্যসূচক দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৬৫২.৩২ পয়েন্ট। ফলে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সূচক কমেছে ৩১৪.১৯ পয়েন্ট। শেষ দিন হরতালে রাজধানীতে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকলেও ডিএসইর সূচক অবশ্য ২.৮৮ পয়েন্ট বেড়ে ৫৬৫২.৩২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
গত সপ্তাহে ঢাকার স্টক মার্কেট এলাকায় যখন শেয়ারবাজারে ব্যাংকের অর্থ সরবরাহ বাড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভ চলছিল, তখন বিক্ষোভকারীরা নিউ ইয়র্ক স্টক এঙ্চেঞ্জ ও ওয়ালস্ট্রিট দখলের ঘোষণা দিয়ে দাবি করেছে, দেশের এক শতাংশ লোভী ও দুর্নীতিবাজ মানুষের কাছে ৯৯ শতাংশ মানুষ জিম্মি হয়ে থাকতে পারে না। দেশের অর্থনীতির নীতি শুধু এক শতাংশ মানুষের সুখের জন্য রচিত হতে পারে না।
ব্যাংকের টাকা দিয়ে শেয়ারবাজার টিকিয়ে রাখার দাবির যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজ। তাঁর মতে, শেয়ার মার্কেট হবে শিল্পে অর্থায়নের একটি নির্ভরযোগ্য উৎস। এখন ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে এটি চলছে। ব্যাংকের টাকা আমানতকারীদের সম্পদ। এটি বিনিয়োগ করার কথা উৎপাদনমুখী খাতে, শেয়ারবাজারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ খাতে ব্যাংকের অর্থ বিনিয়োগের একটি নিরাপদ সীমারেখা থাকতে হবে। অথচ তারল্য সংকটের কথা বলে ব্যাংকের আরো টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের দাবি তোলা হচ্ছে। এর যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ নেই।
বিশ্বজুড়েই শেয়ারবাজারে মন্দা চলছে। চলতি মাসে আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এ নিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। তারা অর্থনীতিতে মন্দার কারণে দেশগুলোতে নেওয়া নানা কৃচ্ছ্র কর্মসূচির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। তবে কোথাও রাস্তায় বিক্ষোভ করে শেয়ারবাজারের পতন ঠেকানোর জন্য ব্যাংক থেকে অর্থ সরবরাহ বাড়ানোর দাবি জানানো হয়নি। আমেরিকার নিউ ইয়র্কে গত সপ্তাহে বিক্ষোভ হয়েছিল দুর্নীতি আর লোভের হাত থেকে অর্থনীতিকে রক্ষা করার দাবিতে।

তিন মাসের কর্মসূচি দেবে চার দল by মোশাররফ বাবলু

গামী অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসের ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বরের মহাসমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। কর্মসূচির মধ্যে থাকতে পারে রোডমার্চ, বিক্ষোভ-সমাবেশ এবং বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়ার ১৯টি জেলা সফর। কর্মসূচির মধ্যে এক দিনের একটি হরতাল রাখা যায় কি না সে নিয়ে আলোচনা চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের সঙ্গে সমমনা ছোট দলগুলোর নেতারা একমঞ্চে উঠবেন আগামী মঙ্গলবার। জোটনেত্রী খালেদা জিয়া সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। কর্মসূচি নিয়ে জোটের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা হলেও এখনো তা চূড়ান্ত হয়নি। দু-এক দিনের মধ্যে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের এবং চারদলীয় জোটের নেতারা আলোচনার মাধ্যমে কর্মসূচি চূড়ান্ত করবেন। তবে বিএনপির ওপর শরিক কোনো কোনো দলের চাপ রয়েছে কর্মসূচিতে হরতাল রাখার জন্য।
জানা গেছে, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির কথা ভাবছে বিএনপি। এর মধ্যে সিলেট বিভাগে প্রস্তাবিত টিপাইমুখ বাঁধ অভিমুখে কিংবা পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁও অভিমুখে রোডমার্চ, বিক্ষোভ-সমাবেশ এবং ১৯ জেলা সফর কর্মসূচি রয়েছে। খালেদা জিয়া নিজে এই জেলাগুলো সফর করবেন। তবে সরকার বৈরী আচরণ করলে তাৎক্ষণিক হরতাল ঘোষণা করা হতে পারে।
জানা গেছে, বিএনপি ও জোটের শরিক জামায়াত এই মহাসমাবেশে লোক সমাগম বেশি করার উদ্যোগ নিয়েছে। সে ক্ষেত্রে তারা ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলো থেকে নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছে। এ ব্যাপারে এরই মধ্যে বৈঠক করা হয়েছে জেলা নেতাদের সঙ্গে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই বৈঠক করেন। গতকাল শনিবার রাতে গুলশানের কার্যালয়ে দলীয় নেতাসহ ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলার সাবেক সংসদ সদস্য ও সংসদ সদস্য প্রার্থী এবং সমমনা আট দলের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বৈঠকে মহাসমাবেশ সফল এবং পরবর্তী কর্মসূচি বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
এ ছাড়া অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে দুর্গা পূজা এবং নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঈদুল আজহার মতো ধর্মীয় দুটি উৎসবের ওপর বিএনপির কর্মসূচির কারণে যাতে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব না পড়ে সে বিষয় নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয় বলে সূত্র জানায়।
জানা গেছে, চারদলীয় জোটের ব্যানারে আগামী মঙ্গলবার মহাসমাবেশ করা হবে। জোট নেতা খালেদা জিয়া প্রধান অতিথি হিসেবে কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে বক্তব্য দেবেন। জামায়াতসহ শরিক দলের নেতারা থাকবেন বিশেষ অতিথি। তবে মহাসমাবেশে জামায়াত নেতাদের বক্তব্য কী হবে তা নিয়ে শরিকদের মধ্যে কিছুটা সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে মহাসমাবেশে জামায়াত নেতারা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক তাঁদের পাঁচ শীর্ষ নেতার মুক্তি দাবি করতে পারেন। আর সেটি বিএনপিসহ কারো কারো জন্য বিব্রতকর হতে পারে। কারণ, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে অভিযোগ তুলেছে, বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে মিলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে সচেষ্ট। আবার বিএনপির অবস্থান হচ্ছে, তারা সত্যিকারের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়।
বিএনপির একাধিক নেতা বিষয়টি স্বীকার করলেও এ ক্ষেত্রে কৌশলী ভূমিকা নেওয়ার কথা জানান। কারণ গত ১৫ সেপ্টেম্বর জামায়াত নেতা ডা. মো. তাহের মুক্তি পেলে তাঁকে নিয়ে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন জামায়াতের তখনকার ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম। ওই সময় আজহার ২৭ সেপ্টেম্বরের সমাবেশে তাঁদের দলের শীর্ষ পাঁচ নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মোহাম্মাদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লার মুক্তির দাবির বিষয়টি তুলে ধরেন। ১২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত চারদলীয় জোটের বৈঠকেও বিষয়টি খালেদা জিয়ার নজরে আনেন জামায়াত নেতারা। এ নিয়ে বিএনপির নেতারা আলোচনাও করেন। কেউ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিপক্ষে না হলেও জোটের স্বার্থে এই ইস্যুতে কৌশলী ভূমিকা নেওয়ার কথা বলেন। তবে জামায়াত নেতারা বলছেন, তাঁরা তাঁদের নেতাদের মুক্তি চেয়ে বক্তব্য দেবেন।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা সব সময়ই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করে আসছি। তবে সেই বিচার করতে গিয়ে যেন রাজনৈতিকভাবে কেউ হয়রানির শিকার না হন। স্বচ্ছভাবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচার হতে হবে।' মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কারাবন্দি জামায়াত নেতাদের মুক্তি চেয়ে বক্তব্য দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমাবেশে জামায়াত কী বক্তব্য দেবে তা তাঁর জানার কথা নয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, সিএনজিসহ সব ধরনের জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে জনদুর্ভোগ বাড়ছে। সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। তাই আর ঘরে বসে থাকার সময় নেই। সবাই চায় আন্দোলন। ২৭ সেপ্টেম্বরের সমাবেশ থেকে তাঁদের নেত্রী খালেদা জিয়া আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। কর্মসূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে তিনি জানান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, 'আমরা সত্যিকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। এটা নিয়ে যেন রাজনীতি না করা হয়।' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'জামায়াতের জন্য আমরা হরতাল ডাকব কেন? জামায়াত তো বিএনপির কোনো নেতার মুক্তির জন্য আন্দোলন করেনি।'
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ২৭ সেপ্টেম্বরের সমাবেশে জামায়াত নেতারা কী বক্তব্য দেবেন তা তাঁদের জানার কথা নয়। এটা সম্পূর্ণ জামায়াতের ব্যাপার। এ নিয়ে বিএনপির কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ সমাবেশ তো বিএনপি একা করবে না, এটা চারদলীয় জোটের। শরিক দলের নেতা ও সমমনা দলগুলোর নেতারা একমঞ্চে বক্তব্য দেবেন। তিনি বলেন, যেভাবেই যে বক্তব্য দিন না কেন, বিএনপি সব সময় সত্যিকারের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে। তবে এই বিচারের নামে যেন রাজনৈতিকভাবে কাউকে হয়রানির শিকার হতে না হয়, সেটাই তাদের দাবি।
জামায়াতের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ২৭ সেপ্টেম্বর চারদলীয় জোটের সমাবেশ। জাতীয় ইস্যু হচ্ছে সরকার একতরফাভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবির পাশাপাশি নিজস্ব ইস্যু ও দাবি সামনে রেখে নেতারা বক্তব্য দেবেন। বিএনপির নেতারা তারেক রহমান ও কোকোর ব্যাপারে বক্তব্য দিতে পারেন। আমিনী তাঁর দলের সমস্যা তুলে ধরতে পারেন। জামায়াতের শীর্ষ পাঁচ নেতার মুক্তি দাবিতে তাঁদের নেতারা বক্তব্য দিতেই পারেন। এসব বিষয় নিয়ে বিএনপির মধ্যে বিব্রত কিংবা মতবিরোধ থাকা কাম্য হতে পারে না।
বিএনপি অভিযোগ করেছে, ২৭ সেপ্টেম্বর পল্টন ময়দানে সমাবেশ করার জন্য ক্রীড়া পরিষদের কাছে আবেদন করেছিল তারা। কিন্তু তাদের আবেদন অনুমোদন করা হয়নি। এ জন্য নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের আয়োজন করা হচ্ছে।
সমমনাদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠক : ২৭ সেপ্টেম্বরের মহাসমাবেশে ব্যাপক শোডাউন করার প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। এই লক্ষ্যে গতকাল রাতে গুলশানের কার্যালয়ে দলীয় নেতাসহ ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলার সাবেক সংসদ সদস্য ও সংসদ সদস্য প্রার্থী এবং সমমনা আট দলের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বৈঠকে মহাসমাবেশ সফল করা এবং পরবর্তী কর্মসূচি বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে রাত সাড়ে ৮টা থেকে রাত পৌনে ১০টা পর্যন্ত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী জেলা নেতাদের বৈঠক হয়। এরপর সমমনাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। সমমনা আট দলের নেতাদের মধ্যে ছিলেন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) প্রধান শফিউল আলম প্রধান ও সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) সভাপতি শেখ শওকত হোসেন নিলু ও মহাসচিব ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মুসলিম লীগের সভাপতি এ এইচ এম কামারুজ্জামান খান ও মহাসচিব আতিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও সাধারণ সম্পাদক হামদুল্লাহ আল মেহেদী, ইসলামিক পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল মবিন ও সাধারণ সম্পাদক এম এ রশীদ প্রধান, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) সভাপতি খন্দকার গোলাম মুর্তজা ও মহাসচিব আলমগীর মজুমদার, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান শেখ আনোয়ারুল হক ও মহাসচিব হাসরত খান। সমমনাদের সঙ্গে বৈঠকের সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এর আগে ঢাকা জেলা ও আশপাশের জেলা নেতাদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকের সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহানগর আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল মান্নান, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী সোহেল, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ।

কাঁদছে সোনাবরুর গ্রাম by সোহেল হাফিজ

দারিদ্র্য মানতে না পেরে শিশু সোনাবরু আত্মহত্যা করায় এখন বিবেকের দংশনে পুড়ছেন তার স্কুলের শিক্ষক ও গ্রামবাসী। বরগুনার কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের জাকিরতবক গ্রামের সর্বত্র এখন শোকের আবহ। ছোট্ট সোনাবরুর (১০) ছোট্ট স্কুল জাকিরতবক প্রাইমারি স্কুলে গতকাল শনিবার গিয়ে দেখা যায়, কাঁদছে ছাত্র-শিক্ষক সবাই। চোখ মুছতে মুছতে প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'সবাই যখন বলে, তোমরা থাকতে কী করে অতটুকু মেয়েটা ক্ষুধার জ্বালায় আত্মহত্যা করল? তখন কোনো উত্তর দিতে পারি না। যদি জানতাম ওর মধ্যে এত অভিমান কাজ করছে তবে ওকে আমি আমার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে আমার বাড়িতে রেখে পড়াতাম।'

গত বুধবার ১০ টাকা দিয়ে একটি কেক কিনে সহপাঠীদের সঙ্গে নিজের জন্মদিন পালন করে সোনাবরু। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে হাঁড়িতে ভাত না পেয়ে আত্মহত্যা করে সে। তার সহপাঠী সৌজিয়া ফুঁপিয়ে কাঁদছিল। সে কালের কণ্ঠকে বলে, 'কিছুদিন পরেই আমার জন্মদিন। সোনাবরু বলেছিল, এরপরের জন্মদিনগুলো আরো সুন্দর করে পালন করব। নিজেরা কম খাব। স্যারদের জন্য বেশি কেক রাখব।'
আদরের ছোট বোন: সোনাবরুর ১৩ বছর বয়সী ভাই ফেরদৌস অভাবের তাড়নায় ঢাকায় চলে গিয়েছিল মাস দুয়েক আগে। কচুক্ষেত এলাকার একটি স্টুডিওতে ফাই ফরমাস খাটার কাজ করে ৫০০ টাকা বেতন পেয়েছিল সে। একটি স্কুল ব্যাগ কিনে আনতে সোনাবরুর আবদার রক্ষায় গত ঈদে বাড়ি ফেরার সময় সে বেতনের ২০০ টাকা খরচ করে ফেলে। ভাইয়ের ব্যাগ হাতে নিয়ে সোনাবরু বলেছিল, 'দেখিস দাদা, যদি বেঁচে থাকি তবে কোনোদিনই পরীক্ষায় দ্বিতীয় হব না।' পিঠেপিঠি ভাই ফেরদৌস এখন সবাইকে সেই ব্যাগ দেখিয়ে শুধুই কাঁদছে।
মা আকলিমার জানান, রাতে বিছানায় তাঁর পাশে শুয়ে সোনাবরু প্রায়ই জিজ্ঞেস করত, 'মা, আমরা এত গরিব কেন?' কখনো কখনো প্রশ্ন করত, 'মা, আমার বাবা নেই কেন?' সোনাবরুর ওড়না হাতে কেঁদে তিনি বলেন, 'আমার মাইয়ার কতার জবাব আমি দেতে পারি নায়। পারি নায় ওর লইগগা দুফারের ভাত রানতেও।'
গ্রামবাসীর হাহাকার: সানাবরুর স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন কালের কণ্ঠকে জানান, 'বিষয়টি একটি অপমৃত্যু হলেও একে ছোট হিসেবে দেখা উচিত নয়। কারণ সোনাবরুর মতো আমাদের গ্রামাঞ্চলে হাজার হাজার শিশু প্রতিনিয়ত চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়ছে। তাই এমন প্রবণতা যদি সেই সব শিশুর মাঝেও ছড়িয়ে পড়ে তবে তা হবে অনেক বেশি ভয়ংকর।' গ্রামবাসী আলম সিকদার (৫০) বলেন, 'আমাগো রাজনৈতিক নেতারা গ্রামে আয় খালি ভোটের কালে। ভোট অইয়া গেলে আর কেউ গ্রামের খোঁজ লয় না। কেডা খাইয়া মরলে, আর কেডা না খাইয়া মরলে হ্যা দ্যাহনের সময় নাই হ্যাগো।'
বরগুনার তরুণ আইনজীবী হাসান তারেক পলাশ বলেন, 'এমন মর্মান্তিক একটি ঘটনায় বরগুনার সব রাজনৈতিক নেতার সোনাবরুর মায়ের পাশে এসে সমবেদনা জানানো উচিত ছিল। শুধু সমবেদনা নয়, তাঁদের উচিত বিষয়টি খতিয়ে দেখা। যদি দারিদ্র্যের কারণেই সোনাবরু আত্মহত্যার আশ্রয় নেয় তবে বুঝতে হবে বরগুনায় আমাদের বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠনগুলো (এনজিও) ঠিকভাবে কাজ করছে না। তারা শুধু আমাদের দারিদ্র্যকে পুঁজি করে কিংবা সোনাবরুদের নাম ভাঙিয়ে বিদেশি দাতা সংস্থার কাছ থেকে শুধু টাকাই আনছে, যথাযথভাবে তা খরচ হচ্ছে না।'

মুশফিকের জন্য সমর্থন চাইলেন আশরাফুল

নুশীলনের ফাঁকে আগেও কোচ-নির্বাচকদের সঙ্গে কথা বলেছেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু গতকাল আকরাম খান ও হাবিবুল বাশারের সঙ্গে তাঁর আলাপ অন্য যে কোনো দিনের চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী। তার চেয়েও বেশি আকর্ষক। ফটো সাংবাদিক এবং টিভি ক্রুর হুড়োহুড়ি দেখে মনে হচ্ছিল বুঝি গতকাল ক্রিকেটের সবচেয়ে নজরকাড়া ফ্রেমটি বন্দি করতে চলেছেন সবাই। প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সম্ভাবনা কিংবা ব্যক্তিগত প্রস্তুতির চেয়ে তাই মোহাম্মদ আশরাফুলকেও বেশি বলতে হলো অধিনায়ক মুশফিককে নিয়ে। যেসব প্রশ্নের উত্তরে নতুন অধিনায়কের প্রতি সবার সমর্থনটাই বেশি চেয়েছেন আশরাফুল। সমর্থনহীন অধিনায়কত্ব যে কতটা কঠিন, তা তো ভালোমতই জানেন তিনি!

২০০৭ বিশ্বকাপের পর মহাসমারোহে অধিনায়কত্বের মুকুট মাথায় তুলেছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। চারপাশের আবহে মনে হচ্ছিল হাবিবুল বাশারের হাত ঘুরে আশরাফুলের অধিষ্ঠানেই বুঝি দেশের ক্রিকেটের যাবতীয় সমস্যার সমাধান হয়ে গেল। কিন্তু এর দুই বছর পর, ২০০৯ সালের টোয়েন্টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর সেই আশরাফুলেই অন্তহীন সমস্যা! ক্রিকেট অধিনায়কের ওপর বরাবরই সবার 'নজর'টা থাকে বেশি। বাংলাদেশে তো আরো বেশি। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরুতে নাঈমুর রহমানকে দেখেছেন। দেখেছেন খালেদ মাহমুদের প্রতি দর্শকদের নির্মম আচরণ। সে কারণেই কিনা, বিসিবি কাপ ফাইনালে ব্যক্তিগত ৫ রানে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরা মুশফিকুর রহিমের প্রতি দর্শক দুয়োর বিষয়টি ভুলতে পারেননি আশরাফুল, 'বিসিবি কাপ ফাইনালে কিছু দর্শক অধিনায়ককে সমর্থন করেননি। আমি মনে করি দুঃসময়েও অধিনায়ককে সমর্থন করা দরকার। এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত।'
সমর্থন শুধু গ্যালারি কিংবা ক্রিকেট অনুসারীদের পক্ষ থেকেই নয়, ক্রিকেটসংশ্লিষ্ট সব মহল থেকেই যেন পান নতুন অধিনায়ক, সে অনুরোধও করেছেন আশরাফুল, 'অধিনায়ককে সমর্থন দেওয়া খুব দরকার। এটা আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখে মনে হয়েছে। সমর্থকদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে তাঁরা যেন নতুন অধিনায়ককে পর্যাপ্ত সমর্থন দেন। দলের একজন খেলোয়াড় হিসেবে আমি এবং আমরা যারা আছি, সবাই ওকে সমর্থন দেব।' আশরাফুল মনে করছেন যোগ্যতা আছে বলেই মুশফিক অধিনায়ক হয়েছেন এবং এ পদে যথাযথ সমর্থনও সে কারণেই তাঁর প্রাপ্য, 'মুশফিকের অভিজ্ঞতা আছে। যুব দলেও অধিনায়কত্ব করেছে। সাফল্য আছে। তাই আমার মনে হয় আমাদের সবার ওকে সমর্থন করা উচিত।'
সমর্থনের সীমানা সহ-অধিনায়কের চারপাশেও ছড়িয়ে দিয়েছেন মোহাম্মদ আশরাফুল। এ শুধু সমর্থনই নয়, বিসিবি কাপ ফাইনালে মাহমুদ উল্লাহর ম্যাচ জেতানো অপরাজিত ৭৮ রানের ইনিংসকে 'শিক্ষামূলক'ও মনে করছেন তিনি, 'সেদিন রিয়াদ (মাহমুদ উল্লাহ) যে ইনিংস খেলেছে, তাতে ওর আত্মবিশ্বাস নিঃসন্দেহে বাড়বে। সেই সঙ্গে ওর কাছ থেকেও আমরা ব্যাপারটা শিখতে পারব যে ওই রকম অবস্থা থেকেও ম্যাচ জেতানো যায়। ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতিকে মোটেও কঠিন মনে হবে না রিয়াদের। তেমনি একজন টিমমেটের এমন ব্যাটিং দেখার পর আমরাও বিশ্বাস করব যে সম্ভব, এমন পরিস্থিতিতেও ম্যাচ জেতা সম্ভব।'
আত্মবিশ্বাসের ফুল আশরাফুলের মনেও ফুটতে শুরু করেছে। নানা ঘটনায় নতুন কোচ এবং নেতৃত্বে পরিবর্তনের ফলে দলে নিজের অবস্থানে ইতিবাচক প্রভাব পড়ল কি না, প্রশ্নটি এগিয়ে গেলেও জিম্বাবুয়ে সফর-পূর্ব সময়ের চেয়ে এখন যে কিছুটা আত্মবিশ্বাসী, তা অস্বীকার করেননি তিনি, 'আসলে জিম্বাবুয়ে সফরের আগে আমি অতটা ভালো ক্রিকেটও খেলছিলাম না। প্রায় সাত-আট মাস দলে নিয়মিত সুযোগ পাইনি। এরপর নতুন কোচ এসেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে 'এ' দলের হয়ে সেঞ্চুরি করেছি। ওই সফরের প্রতিটা ইনিংসেই ভালো ব্যাটিং করেছি। সে কারণেই জিম্বাবুয়ে সিরিজের জন্য নির্বাচকরা আমাকে দলে নিয়েছেন। সেখানে একমাত্র টেস্টে ভালো করেছি। দেশে ফিরে বিসিবি কাপ খেললাম। আমার মনে হচ্ছে ব্যাটিংটা আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছে নিজেকে।'
এ আত্মবিশ্বাস চুরমার করে দেওয়ার জন্য আছে বিশ্বকাপে মিরপুর স্টেডিয়ামেই ক্যারিবীয়দের কাছে ৫৮ রানে ধুলোয় মিশে যাওয়ার ঘটনা। সেটাকে অবশ্য নিছকই দুর্ভাগ্য বলে মনে করছেন আশরাফুল, 'ওয়েস্ট ইন্ডিজের যে দল আসছে, সেটিতে গেইলের মতো ক্রিকেটার নেই। তা ছাড়া খেলা হবে আমাদের মাঠে। তাই আমি মনে করি এ দলের বিপক্ষে ভালো করা সম্ভব। আর বিশ্বকাপের ওই ম্যাচটি স্রেফ দুর্ভাগ্য।' সেই ভালো করার সূত্রও জানেন আশরাফুল, 'প্রথমে টোয়েন্টি টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে সিরিজের মোট চারটি খেলা আছে। এগুলোতে ভালো করলে টেস্টের আত্মবিশ্বাস পাওয়া যাবে। ওয়ানডেতে ২৪০ রান করতে পারলে আমাদের জয়ের সম্ভাবনা আশি ভাগ। ব্যাটসম্যানরা এ কাজটা করে দিতে পারলে ভালো কিছুই হবে।'
ক্রিস গেইল নেই তো কি, ফিডেল এডওয়ার্ডস-কেমার রোচরা তো আছেন। তবে হোম সিরিজে বাংলাদেশের তাঁবুতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফাস্ট বোলাররা নন, বেশি গুরুত্ব পাচ্ছেন আইসিসির বর্ষসেরা উঠতি তারকা দেবেন্দ্র বিশু। স্বীকার করছেন মোহাম্মদ আশরাফুলও, 'টেস্টের জন্য সব দলই একজন লেগস্পিনার চায়। একজন লেগস্পিনারই পারে যেকোনো মুহূর্তে টেস্টের মোড় ঘুরিয়ে দিতে। তাই বিশু অবশ্যই আমাদের জন্য হুমকি।' আপাতত বিশুকে সামলানোর প্রস্তুতিটা নুর হোসেনকে খেলেই সারতে হচ্ছে জাতীয় দলের ব্যাটসম্যানদের।

গণমাধ্যমকে ‘পরামর্শ’ দিত ডিজিএফআই

ড়াই লাখ মার্কিন তারবার্তা ফাঁস করেছে উইকিলিকস। মার্কিন কূটনীতিকদের ভাষ্যে এসব তারবার্তায় বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশের রাজনীতি ও ক্ষমতার অন্দরমহলের খবর।

সাংবাদিকদের কাছে ফোন করে খবর ছাপা না ছাপার ব্যাপারে ‘পরামর্শ’ দেওয়ার কথা সফরকারী মার্কিন মন্ত্রীর কাছে স্বীকার করেছিলেন গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের শীর্ষ দুই কর্মকর্তা। উইকিলিকসের ফাঁস করা মার্কিন দূতাবাসের তারবার্তায় এ কথা বলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রমবিষয়ক উপসহকারী মন্ত্রী এরিকা বার্কস-রাগেলস সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের মে মাসে বাংলাদেশ সফর করেন। বার্কস-রাগেলস শুনতে পান, সরকারি কর্মকর্তারা, বিশেষ করে, সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই সাংবাদিকদের নানা রকম হয়রানি করছে। সাংবাদিকেরা অভিযোগ করেন, কোন খবর কীভাবে প্রকাশ করতে হবে, আর কোনটি প্রকাশ করাই যাবে না, এ বিষয়ে ঘন ঘন ফোন করে নির্দেশনা দিচ্ছে ডিজিএফআই, যা ভীতির সঞ্চার করছে। ১৯ থেকে ২১ মে ঢাকা সফরকালে এরিকা বার্কস-রাগেলস বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান। তখন সাংবাদিকদের ফোন করে নির্দেশনা দেওয়ার বিষয়টি তাঁর কাছে স্বীকার করেন ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ ও সন্ত্রাস দমন বিভাগের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ টি এম আমিন। সামরিক কর্মকর্তাদের এ ধরনের তৎপরতা অবিলম্বে বন্ধ করতে বলেন মার্কিন মন্ত্রী। রাজনৈতিক বিষয়ে ডিজিএফআইয়ের তৎপরতার ব্যাপারে বার্কস-রাগেলস বলেন, বেসামরিক বিষয়ে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার নাক গলানো বন্ধ করা উচিত।
বাংলাদেশ সফরে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন এরিকা বার্কস-রাগেলস। তিনি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা ও একটি টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের কথা বলেন।
এদিকে বার্কস-রাগেলসের সঙ্গে বৈঠকের সময় একটি আইনের খসড়ার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ। তিনি জানান, এতে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ ‘তুচ্ছ’ ও ‘বিরক্তিকর’ অভিযোগ করলে তার জন্য জেল-জরিমানার বিধান থাকবে। আইন উপদেষ্টা বলেন, প্রস্তাবিত আইনটি ‘অত্যন্ত আপত্তিকর’ এবং এটি কার্যকর হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে দায়মুক্তির মনোভাব কাজ করতে পারে। বার্কস-রাগেলস ও মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি এ ধরনের আইনের ব্যাপারে ডিজিএফআই ও সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ডিজিএফআইয়ের প্রধান ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা স্বীকার করেন, এ ধরনের আইন হলে তা আইনটির লক্ষ্যকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে। উভয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি দেন।

কৌশলে নিষেধাজ্ঞা অবজ্ঞা শামীম ওসমানের by শেখ সাবিহা আলম ও আসিফ হোসেন

নিষেধাজ্ঞা থাকলেও জনসভা করে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন শামীম ওসমান। আর সেলিনা হায়াত আইভী নগরের বিভিন্ন স্থানে জনসংযোগ করেন পায়ে হেঁটে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী দুজন শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াত আইভী, আর বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী তৈমুর আলম খন্দকার। তৈমুর গতকাল সিদ্ধিরগঞ্জের নিমাইকাশারী এলাকায় পথসভা করার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ক্ষমতাসীন দলের একজন সম্ভাব্য প্রার্থী রাস্তা বন্ধ কর্রেমঞ্চ বানিয়ে জনসভা করছেন, সেখানে পুলিশ কিছু বলছে না।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ৩০ অক্টোবর। তফসিল ঘোষণার পর মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জনসভা করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাই প্রার্থীরা ভোটারদের ঘরে ঘরে যাক। এতে তাঁদের পয়সাও কম খরচ হবে। কিন্তু কেউ ভিন্ন আঙ্গিকে জনসভা করে কৌশলে ভোট চাইলেও আমরা কিছু করতে পারছি না। কারণ, জনসভার আয়োজন করা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে। আর নির্বাচনী আচরণবিধিতে নির্বাচনী জনসভা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে আয়োজিত জনসভার ক্ষেত্রে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না।’
শামীম ওসমানের দাবি, তাঁর জনসভা নির্বাচনী প্রচারণার অংশ নয়। জনসভায় তিনি বলেন, ‘কেউ কোনো দিন বলতে পারবে না, আমি কারও কাছে ভোট চেয়েছি। আমি শুধু বলছি, আমি এই নারায়ণগঞ্জের জন্য কী করেছি এবং কী করব। ৩০ তারিখের মধ্যে অনেক কিছু ঘটতে পারে।’
শীতলক্ষ্যায় জনসভা: গতকাল ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের সচেতন নাগরিকের ব্যানারে আয়োজিত স্বাধীনতাবিরোধীদের তাণ্ডবের প্রতিবাদে জনসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শামীম ওসমান। প্রায় ৫০০ লোকের জমায়েতে তিনি বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে একটি চক্র দল ভাঙার চেষ্টা করছে। সেলিনা হায়াত আইভীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, অহংকার করবেন না। আল্লাহ অহংকারীকে ভালোবাসেন না। তাঁর অভিযোগ, নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে কেউ কেউ জামায়াতকেও একই চোখে দেখছে। কিন্তু তিনি জামায়াতের সমর্থন চান না। তিনি কৃষক, শ্রমিক ও মধ্যবিত্তের জন্য রাজনীতি করেন।
আইভীর জনসংযোগ: গতকাল আদমজীনগর এলাকায় পায়ে হেঁটে জনসংযোগ করেন সেলিনা হায়াত আইভী। সোনামিয়া বাজারে অল্প কিছুসংখ্যক কর্মী-সমর্থক নিয়ে জনসংযোগ শুরুর পর তাঁকে অনুসরণ করেন প্রায় দুই শ মানুষ। আইভী দোকানে দোকানে গিয়ে মানুষের দোয়া চান।
সেনা মোতায়েনের দাবি: জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর আলম খন্দকার নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি জানান এবং জেলা প্রশাসকের অপসারণ দাবি করেন। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক একটি গোষ্ঠীর পক্ষে কাজ করছেন। তৈমুর গতকাল নারায়ণগঞ্জ শহরের পাইকপাড়া, বাবুরাইল, আমলাপাড়া ও সিদ্ধিরগঞ্জে জনসংযোগ করেন।
পোস্টার-ব্যানারশূন্য নগর: নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর থেকেই শহরটি শামীম ওসমানের নির্বাচনী পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে যায়। আইভী ও তৈমুর আলমেরও কিছু পোস্টার ছিল। তফসিল ঘোষণার পর গত শুক্রবার সিটি করপোরেশন এলাকা থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ উদ্যোগে রঙিন পোস্টার ও ব্যানার সরিয়ে নেন।
লড়াই হবে সমানে সমান: নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে শামীম ওসমান, নাকি আইভী মনোনয়ন পান, তা নিয়ে এখন আলোচনা সর্বত্র। পাইকপাড়া, সিদ্ধিরগঞ্জ ও শীতলক্ষ্যা এলাকায় অনেক সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের কেউ কেউ বলেন, আওয়ামী লীগের অন্তর্দ্বন্দ্বের সুযোগে বিএনপির প্রার্থী জিতে যেতে পারেন। আদমজী এলাকায় একজন শ্রমিক আলতাফুর রহমান বলেন, তাঁদের এলাকায় শামীম ওসমান অনেক কাজ করেছেন। তাঁর সঙ্গে বসে থাকা পোলট্রি ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন বলেন, ‘লড়াই হইব তিরিমুখী, আইভির সমর্থন ব্যাপক। সে নিষ্কলঙ্ক। আবার দুইজনের ঝগড়ায় আর কেউ বাইর হইয়া যাইতে পারে।’ ফজলুল হক নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, জাতীয় নির্বাচনে মানুষ মার্কা দেখে ভোট দিলেও স্থানীয় নির্বাচনে ব্যক্তি দেখে ভোট দেয়।

সংস্কারে দলগুলোর ব্যর্থতাই আমার মূল উদ্বেগঃ মইন

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণের ১৬ মাস পর হতাশা প্রকাশ করে তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ বলেছিলেন, এত দিন পরও নিজেদের সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোর ‘ব্যর্থতাই’ তাঁর মূল উদ্বেগ। তিনি প্রশ্ন তোলেন, দুর্নীতি ও অন্যান্য অভিযোগে ইতিমধ্যে আদালতে দোষী সাব্যস্ত ৫৪ জন নেতাকে দলগুলো কেন বহিষ্কার করছে না।
২০০৮ সালের ৬ মে ঢাকায় নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টির সঙ্গে বৈঠকে সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ এসব কথা বলেছিলেন বলে উইকিলিকসের ফাঁস করা তারবার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে। ৭ মে ওয়াশিংটনে এ কূটনৈতিক তারবার্তাটি পাঠান রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি।

তারবার্তার ভাষ্যমতে, সেনাপ্রধান মইন রাজনৈতিক দলের প্রত্যাশিত সংস্কার না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করলেও মরিয়ার্টিকে বলেন, কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রম করবে না।
ঢাকাসহ সারা বিশ্বের মার্কিন দূতাবাসের পাঠানো আড়াই লাখ তারবার্তা গত ৩০ আগস্ট ফাঁস করে দিয়েছে ওয়েবসাইট উইকিলিকস।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত সেনাপ্রধানকে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনেক সংস্কার কার্যক্রম সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে এবং তা রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর কিছুটা চাপ সৃষ্টি করেছে। রাষ্ট্রদূত বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কারের জন্য সময় লাগবে, তবে এটা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকেও সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করতে হবে।
সেনাপ্রধান জানান, রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের আগে ওই দিনই তিনি ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে দলগুলোকে সংস্কারে রাজি করানোর জন্য তাঁদের উৎসাহিত করেছেন। কেননা বাংলাদেশ আবার সেই এক-এগারোর আগের অবস্থায় ফিরতে পারে না।
মইন উ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ‘প্রতিবেশী দেশের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েছে’ এবং তাদের পথ অনুসরণ করতে চায় না। সেনাবাহিনী বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠানে হস্তক্ষেপ করেনি উল্লেখ করে মইন জানান, এমনকি তিনি নিজেও কোনো মন্ত্রণালয়ে যাননি যাতে কেউ এ কথা না বলতে পারে যে তিনি হস্তক্ষেপ করছেন।
জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে সেনাপ্রধান বলেন, পরাজিত দল যাতে পরে নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে, সে জন্য এটা প্রয়োজন।
মইন উ আহমেদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা শিগগিরই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। এ ছাড়া তিনি জরুরি অবস্থা পর্যায়ক্রমে শিথিল করারও ঘোষণা দেবেন।
মইন উ আহমেদ রাষ্ট্রদূতকে বলেন, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশন। ‘কোনো পরিস্থিতিতেই’ নির্বাচন এ সময়সীমা অতিক্রম করবে না।
সেনাপ্রধান আরও বলেন, আসন্ন রাজনৈতিক সংলাপে সেনাবাহিনীকেও অংশ নেওয়ার জন্য বিভিন্ন পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে কিন্তু তা সত্ত্বেও সেনাবাহিনী এ প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে না। এটা বেসামরিক উপদেষ্টাদের কাজ।