Sunday, September 25, 2011

মুশফিকের জন্য সমর্থন চাইলেন আশরাফুল

নুশীলনের ফাঁকে আগেও কোচ-নির্বাচকদের সঙ্গে কথা বলেছেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু গতকাল আকরাম খান ও হাবিবুল বাশারের সঙ্গে তাঁর আলাপ অন্য যে কোনো দিনের চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী। তার চেয়েও বেশি আকর্ষক। ফটো সাংবাদিক এবং টিভি ক্রুর হুড়োহুড়ি দেখে মনে হচ্ছিল বুঝি গতকাল ক্রিকেটের সবচেয়ে নজরকাড়া ফ্রেমটি বন্দি করতে চলেছেন সবাই। প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সম্ভাবনা কিংবা ব্যক্তিগত প্রস্তুতির চেয়ে তাই মোহাম্মদ আশরাফুলকেও বেশি বলতে হলো অধিনায়ক মুশফিককে নিয়ে। যেসব প্রশ্নের উত্তরে নতুন অধিনায়কের প্রতি সবার সমর্থনটাই বেশি চেয়েছেন আশরাফুল। সমর্থনহীন অধিনায়কত্ব যে কতটা কঠিন, তা তো ভালোমতই জানেন তিনি!

২০০৭ বিশ্বকাপের পর মহাসমারোহে অধিনায়কত্বের মুকুট মাথায় তুলেছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। চারপাশের আবহে মনে হচ্ছিল হাবিবুল বাশারের হাত ঘুরে আশরাফুলের অধিষ্ঠানেই বুঝি দেশের ক্রিকেটের যাবতীয় সমস্যার সমাধান হয়ে গেল। কিন্তু এর দুই বছর পর, ২০০৯ সালের টোয়েন্টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর সেই আশরাফুলেই অন্তহীন সমস্যা! ক্রিকেট অধিনায়কের ওপর বরাবরই সবার 'নজর'টা থাকে বেশি। বাংলাদেশে তো আরো বেশি। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরুতে নাঈমুর রহমানকে দেখেছেন। দেখেছেন খালেদ মাহমুদের প্রতি দর্শকদের নির্মম আচরণ। সে কারণেই কিনা, বিসিবি কাপ ফাইনালে ব্যক্তিগত ৫ রানে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরা মুশফিকুর রহিমের প্রতি দর্শক দুয়োর বিষয়টি ভুলতে পারেননি আশরাফুল, 'বিসিবি কাপ ফাইনালে কিছু দর্শক অধিনায়ককে সমর্থন করেননি। আমি মনে করি দুঃসময়েও অধিনায়ককে সমর্থন করা দরকার। এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত।'
সমর্থন শুধু গ্যালারি কিংবা ক্রিকেট অনুসারীদের পক্ষ থেকেই নয়, ক্রিকেটসংশ্লিষ্ট সব মহল থেকেই যেন পান নতুন অধিনায়ক, সে অনুরোধও করেছেন আশরাফুল, 'অধিনায়ককে সমর্থন দেওয়া খুব দরকার। এটা আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখে মনে হয়েছে। সমর্থকদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে তাঁরা যেন নতুন অধিনায়ককে পর্যাপ্ত সমর্থন দেন। দলের একজন খেলোয়াড় হিসেবে আমি এবং আমরা যারা আছি, সবাই ওকে সমর্থন দেব।' আশরাফুল মনে করছেন যোগ্যতা আছে বলেই মুশফিক অধিনায়ক হয়েছেন এবং এ পদে যথাযথ সমর্থনও সে কারণেই তাঁর প্রাপ্য, 'মুশফিকের অভিজ্ঞতা আছে। যুব দলেও অধিনায়কত্ব করেছে। সাফল্য আছে। তাই আমার মনে হয় আমাদের সবার ওকে সমর্থন করা উচিত।'
সমর্থনের সীমানা সহ-অধিনায়কের চারপাশেও ছড়িয়ে দিয়েছেন মোহাম্মদ আশরাফুল। এ শুধু সমর্থনই নয়, বিসিবি কাপ ফাইনালে মাহমুদ উল্লাহর ম্যাচ জেতানো অপরাজিত ৭৮ রানের ইনিংসকে 'শিক্ষামূলক'ও মনে করছেন তিনি, 'সেদিন রিয়াদ (মাহমুদ উল্লাহ) যে ইনিংস খেলেছে, তাতে ওর আত্মবিশ্বাস নিঃসন্দেহে বাড়বে। সেই সঙ্গে ওর কাছ থেকেও আমরা ব্যাপারটা শিখতে পারব যে ওই রকম অবস্থা থেকেও ম্যাচ জেতানো যায়। ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতিকে মোটেও কঠিন মনে হবে না রিয়াদের। তেমনি একজন টিমমেটের এমন ব্যাটিং দেখার পর আমরাও বিশ্বাস করব যে সম্ভব, এমন পরিস্থিতিতেও ম্যাচ জেতা সম্ভব।'
আত্মবিশ্বাসের ফুল আশরাফুলের মনেও ফুটতে শুরু করেছে। নানা ঘটনায় নতুন কোচ এবং নেতৃত্বে পরিবর্তনের ফলে দলে নিজের অবস্থানে ইতিবাচক প্রভাব পড়ল কি না, প্রশ্নটি এগিয়ে গেলেও জিম্বাবুয়ে সফর-পূর্ব সময়ের চেয়ে এখন যে কিছুটা আত্মবিশ্বাসী, তা অস্বীকার করেননি তিনি, 'আসলে জিম্বাবুয়ে সফরের আগে আমি অতটা ভালো ক্রিকেটও খেলছিলাম না। প্রায় সাত-আট মাস দলে নিয়মিত সুযোগ পাইনি। এরপর নতুন কোচ এসেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে 'এ' দলের হয়ে সেঞ্চুরি করেছি। ওই সফরের প্রতিটা ইনিংসেই ভালো ব্যাটিং করেছি। সে কারণেই জিম্বাবুয়ে সিরিজের জন্য নির্বাচকরা আমাকে দলে নিয়েছেন। সেখানে একমাত্র টেস্টে ভালো করেছি। দেশে ফিরে বিসিবি কাপ খেললাম। আমার মনে হচ্ছে ব্যাটিংটা আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছে নিজেকে।'
এ আত্মবিশ্বাস চুরমার করে দেওয়ার জন্য আছে বিশ্বকাপে মিরপুর স্টেডিয়ামেই ক্যারিবীয়দের কাছে ৫৮ রানে ধুলোয় মিশে যাওয়ার ঘটনা। সেটাকে অবশ্য নিছকই দুর্ভাগ্য বলে মনে করছেন আশরাফুল, 'ওয়েস্ট ইন্ডিজের যে দল আসছে, সেটিতে গেইলের মতো ক্রিকেটার নেই। তা ছাড়া খেলা হবে আমাদের মাঠে। তাই আমি মনে করি এ দলের বিপক্ষে ভালো করা সম্ভব। আর বিশ্বকাপের ওই ম্যাচটি স্রেফ দুর্ভাগ্য।' সেই ভালো করার সূত্রও জানেন আশরাফুল, 'প্রথমে টোয়েন্টি টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে সিরিজের মোট চারটি খেলা আছে। এগুলোতে ভালো করলে টেস্টের আত্মবিশ্বাস পাওয়া যাবে। ওয়ানডেতে ২৪০ রান করতে পারলে আমাদের জয়ের সম্ভাবনা আশি ভাগ। ব্যাটসম্যানরা এ কাজটা করে দিতে পারলে ভালো কিছুই হবে।'
ক্রিস গেইল নেই তো কি, ফিডেল এডওয়ার্ডস-কেমার রোচরা তো আছেন। তবে হোম সিরিজে বাংলাদেশের তাঁবুতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফাস্ট বোলাররা নন, বেশি গুরুত্ব পাচ্ছেন আইসিসির বর্ষসেরা উঠতি তারকা দেবেন্দ্র বিশু। স্বীকার করছেন মোহাম্মদ আশরাফুলও, 'টেস্টের জন্য সব দলই একজন লেগস্পিনার চায়। একজন লেগস্পিনারই পারে যেকোনো মুহূর্তে টেস্টের মোড় ঘুরিয়ে দিতে। তাই বিশু অবশ্যই আমাদের জন্য হুমকি।' আপাতত বিশুকে সামলানোর প্রস্তুতিটা নুর হোসেনকে খেলেই সারতে হচ্ছে জাতীয় দলের ব্যাটসম্যানদের।

No comments:

Post a Comment