Sunday, September 25, 2011

গণমাধ্যমকে ‘পরামর্শ’ দিত ডিজিএফআই

ড়াই লাখ মার্কিন তারবার্তা ফাঁস করেছে উইকিলিকস। মার্কিন কূটনীতিকদের ভাষ্যে এসব তারবার্তায় বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশের রাজনীতি ও ক্ষমতার অন্দরমহলের খবর।

সাংবাদিকদের কাছে ফোন করে খবর ছাপা না ছাপার ব্যাপারে ‘পরামর্শ’ দেওয়ার কথা সফরকারী মার্কিন মন্ত্রীর কাছে স্বীকার করেছিলেন গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের শীর্ষ দুই কর্মকর্তা। উইকিলিকসের ফাঁস করা মার্কিন দূতাবাসের তারবার্তায় এ কথা বলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রমবিষয়ক উপসহকারী মন্ত্রী এরিকা বার্কস-রাগেলস সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের মে মাসে বাংলাদেশ সফর করেন। বার্কস-রাগেলস শুনতে পান, সরকারি কর্মকর্তারা, বিশেষ করে, সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই সাংবাদিকদের নানা রকম হয়রানি করছে। সাংবাদিকেরা অভিযোগ করেন, কোন খবর কীভাবে প্রকাশ করতে হবে, আর কোনটি প্রকাশ করাই যাবে না, এ বিষয়ে ঘন ঘন ফোন করে নির্দেশনা দিচ্ছে ডিজিএফআই, যা ভীতির সঞ্চার করছে। ১৯ থেকে ২১ মে ঢাকা সফরকালে এরিকা বার্কস-রাগেলস বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান। তখন সাংবাদিকদের ফোন করে নির্দেশনা দেওয়ার বিষয়টি তাঁর কাছে স্বীকার করেন ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ ও সন্ত্রাস দমন বিভাগের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ টি এম আমিন। সামরিক কর্মকর্তাদের এ ধরনের তৎপরতা অবিলম্বে বন্ধ করতে বলেন মার্কিন মন্ত্রী। রাজনৈতিক বিষয়ে ডিজিএফআইয়ের তৎপরতার ব্যাপারে বার্কস-রাগেলস বলেন, বেসামরিক বিষয়ে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার নাক গলানো বন্ধ করা উচিত।
বাংলাদেশ সফরে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন এরিকা বার্কস-রাগেলস। তিনি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা ও একটি টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের কথা বলেন।
এদিকে বার্কস-রাগেলসের সঙ্গে বৈঠকের সময় একটি আইনের খসড়ার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ। তিনি জানান, এতে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ ‘তুচ্ছ’ ও ‘বিরক্তিকর’ অভিযোগ করলে তার জন্য জেল-জরিমানার বিধান থাকবে। আইন উপদেষ্টা বলেন, প্রস্তাবিত আইনটি ‘অত্যন্ত আপত্তিকর’ এবং এটি কার্যকর হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে দায়মুক্তির মনোভাব কাজ করতে পারে। বার্কস-রাগেলস ও মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি এ ধরনের আইনের ব্যাপারে ডিজিএফআই ও সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ডিজিএফআইয়ের প্রধান ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা স্বীকার করেন, এ ধরনের আইন হলে তা আইনটির লক্ষ্যকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে। উভয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি দেন।

No comments:

Post a Comment