Sunday, September 25, 2011

কৌশলে নিষেধাজ্ঞা অবজ্ঞা শামীম ওসমানের by শেখ সাবিহা আলম ও আসিফ হোসেন

নিষেধাজ্ঞা থাকলেও জনসভা করে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন শামীম ওসমান। আর সেলিনা হায়াত আইভী নগরের বিভিন্ন স্থানে জনসংযোগ করেন পায়ে হেঁটে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী দুজন শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াত আইভী, আর বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী তৈমুর আলম খন্দকার। তৈমুর গতকাল সিদ্ধিরগঞ্জের নিমাইকাশারী এলাকায় পথসভা করার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ক্ষমতাসীন দলের একজন সম্ভাব্য প্রার্থী রাস্তা বন্ধ কর্রেমঞ্চ বানিয়ে জনসভা করছেন, সেখানে পুলিশ কিছু বলছে না।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ৩০ অক্টোবর। তফসিল ঘোষণার পর মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জনসভা করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাই প্রার্থীরা ভোটারদের ঘরে ঘরে যাক। এতে তাঁদের পয়সাও কম খরচ হবে। কিন্তু কেউ ভিন্ন আঙ্গিকে জনসভা করে কৌশলে ভোট চাইলেও আমরা কিছু করতে পারছি না। কারণ, জনসভার আয়োজন করা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে। আর নির্বাচনী আচরণবিধিতে নির্বাচনী জনসভা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে আয়োজিত জনসভার ক্ষেত্রে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না।’
শামীম ওসমানের দাবি, তাঁর জনসভা নির্বাচনী প্রচারণার অংশ নয়। জনসভায় তিনি বলেন, ‘কেউ কোনো দিন বলতে পারবে না, আমি কারও কাছে ভোট চেয়েছি। আমি শুধু বলছি, আমি এই নারায়ণগঞ্জের জন্য কী করেছি এবং কী করব। ৩০ তারিখের মধ্যে অনেক কিছু ঘটতে পারে।’
শীতলক্ষ্যায় জনসভা: গতকাল ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের সচেতন নাগরিকের ব্যানারে আয়োজিত স্বাধীনতাবিরোধীদের তাণ্ডবের প্রতিবাদে জনসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শামীম ওসমান। প্রায় ৫০০ লোকের জমায়েতে তিনি বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে একটি চক্র দল ভাঙার চেষ্টা করছে। সেলিনা হায়াত আইভীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, অহংকার করবেন না। আল্লাহ অহংকারীকে ভালোবাসেন না। তাঁর অভিযোগ, নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে কেউ কেউ জামায়াতকেও একই চোখে দেখছে। কিন্তু তিনি জামায়াতের সমর্থন চান না। তিনি কৃষক, শ্রমিক ও মধ্যবিত্তের জন্য রাজনীতি করেন।
আইভীর জনসংযোগ: গতকাল আদমজীনগর এলাকায় পায়ে হেঁটে জনসংযোগ করেন সেলিনা হায়াত আইভী। সোনামিয়া বাজারে অল্প কিছুসংখ্যক কর্মী-সমর্থক নিয়ে জনসংযোগ শুরুর পর তাঁকে অনুসরণ করেন প্রায় দুই শ মানুষ। আইভী দোকানে দোকানে গিয়ে মানুষের দোয়া চান।
সেনা মোতায়েনের দাবি: জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর আলম খন্দকার নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি জানান এবং জেলা প্রশাসকের অপসারণ দাবি করেন। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক একটি গোষ্ঠীর পক্ষে কাজ করছেন। তৈমুর গতকাল নারায়ণগঞ্জ শহরের পাইকপাড়া, বাবুরাইল, আমলাপাড়া ও সিদ্ধিরগঞ্জে জনসংযোগ করেন।
পোস্টার-ব্যানারশূন্য নগর: নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর থেকেই শহরটি শামীম ওসমানের নির্বাচনী পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে যায়। আইভী ও তৈমুর আলমেরও কিছু পোস্টার ছিল। তফসিল ঘোষণার পর গত শুক্রবার সিটি করপোরেশন এলাকা থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ উদ্যোগে রঙিন পোস্টার ও ব্যানার সরিয়ে নেন।
লড়াই হবে সমানে সমান: নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে শামীম ওসমান, নাকি আইভী মনোনয়ন পান, তা নিয়ে এখন আলোচনা সর্বত্র। পাইকপাড়া, সিদ্ধিরগঞ্জ ও শীতলক্ষ্যা এলাকায় অনেক সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের কেউ কেউ বলেন, আওয়ামী লীগের অন্তর্দ্বন্দ্বের সুযোগে বিএনপির প্রার্থী জিতে যেতে পারেন। আদমজী এলাকায় একজন শ্রমিক আলতাফুর রহমান বলেন, তাঁদের এলাকায় শামীম ওসমান অনেক কাজ করেছেন। তাঁর সঙ্গে বসে থাকা পোলট্রি ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন বলেন, ‘লড়াই হইব তিরিমুখী, আইভির সমর্থন ব্যাপক। সে নিষ্কলঙ্ক। আবার দুইজনের ঝগড়ায় আর কেউ বাইর হইয়া যাইতে পারে।’ ফজলুল হক নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, জাতীয় নির্বাচনে মানুষ মার্কা দেখে ভোট দিলেও স্থানীয় নির্বাচনে ব্যক্তি দেখে ভোট দেয়।

No comments:

Post a Comment