Friday, June 08, 2012

রামুর বাগানে সাদা ‘রস’ সংগ্রহের ধুম

কক্সবাজারের রামুতে রাবার বাগানে সাদা ‘রস’ সংগ্রহের ধুম লেগেছে। বাগানের ৬৯ হাজার গাছ থেকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাবার রস সংগ্রহের কাজ করছেন শ্রমিকেরা।

সম্প্রতি এক সকালে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কসংলগ্ন রামু রাবার বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, বাগানের হাজার হাজার গাছে ঝুলছে ছোট ছোট মাটির পাত্র। গাছ থেকে সাদা রঙের রস (কষ) ঝরে পড়ে ওই পাত্রে।
শ্রমিকেরা জানান, কাঁচা রস বালতিতে ভরে প্রথমে কারখানায় সরবরাহ করা হয়। সেখানে কষের সঙ্গে পানি ও এসিড মিশিয়ে নির্ধারিত স্টিলের জারে (ফ্রেমে) জমা রাখা হয়। এরপর রোলার মেশিনের মাধ্যমে রস থেকে পানি বের করে ড্রিপিং শেডে শুকানো হয়। পরে ‘ধুম ঘরে’ (আগুনে পোড়ানো হয় যেখানে) তা পোড়ানো হয়। ওই প্রক্রিয়া শেষে রাবার বস্তাভর্তি করে গুদামজাত করা হয়।
রাবারশ্রমিক মো. হারুন ও মিজানুর রহমান বলেন, প্রতিদিন গড়ে একজন শ্রমিক ৩৫ থেকে ৪০ কেজি রস সংগ্রহ করতে পারেন। প্রতি কেজি রস সংগ্রহের জন্য তাঁরা পাঁচ টাকা পারিশ্রমিক পান।
রাবার উৎপাদন কারখানার তত্ত্বাবধায়ক নুরুল আনোয়ার জানান, কারখানা থেকে প্রতিদিন গড়ে চার হাজার কেজি রাবার উৎপাদিত হয়। সারা বছর রাবার উৎপাদন চলে। তবে বর্ষায় রস আহরণ কিছুটা কমে গেলে উৎপাদনও কমে যায়। মূলত শীত মৌসুমে গাছ থেকে বেশি রস পাওয়া যায়।
নুরুল আনোয়ার বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে রাবারের চাহিদা বাড়ায় চলতি বছর রাবারের দাম বেড়েছে। গত বছর প্রতি কেজি রাবার বিক্রি হতো ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। জানুয়ারি মাস থেকে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ২৮৫ টাকায়। রাবার দিয়ে জুতা, ফুটবল, টায়ার-টিউব, গাড়ির যন্ত্রাংশ, আঠা বা গ্লু, ওষুধ, ব্যাগ, বেল্ট তৈরি হয় বলে তিনি জানান।
বন মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন বাগানটির তত্ত্বাবধান করছে। বাগানের ব্যবস্থাপক মো. আয়ুব আলী বলেন, রাবারের উৎপাদন বাড়াতে আগামী জুলাই মাসে বাগানের আরও ৫০ একর জায়গায় ১২ হাজার গাছ লাগানো হবে। আয়ুব আলী জানান, গত অর্থবছরে বাগানে উৎপাদিত এক লাখ ২২ হাজার ৩৩১ কেজি রাবার বিক্রি করে এক কোটি ৩২ লাখ ৫০ হাজার ৮১৫ টাকা লাভ হয়েছে। চলতি অর্থবছর লাভের পরিমাণ আরও বাড়বে।
জানা যায়, ১৯৬০ সালে রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা, কাউয়ারকূপ ও গর্জনিয়া ইউনিয়নে বন বিভাগের ৬০০ একর জমি ইজারা নিয়ে এ রাবার বাগানটি গড়ে তোলা হয়। পরে বাগানটির পরিধি বেড়ে দুই হাজার ১৩১ একরে দাঁড়ায়। বর্তমানে বাগানে গাছ আছে এক লাখ ৫৬ হাজারটি। এর মধ্যে ৮৭ হাজার ১২০টি গাছ রস উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। বাগানের একজন কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি প্রতিদিন বাগানে ঢুকে বিপুল পরিমাণ রাবার চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। বাগানের সীমানাবেষ্টনী না থাকায় চুরি রোধ করা যাচ্ছে না।

কক্সবাজারে শুক্রবার শুরু হচ্ছে ‘বে অব বেঙ্গল ফেস্টিভ্যাল’

বিশ্ব মহাসমুদ্র দিবস উপলক্ষে কক্সবাজারে ২ দিনব্যাপী ‘বে অব বেঙ্গল ফেস্টিভ্যাল ২০১২’ শুক্রবার শুরু হচ্ছে। নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ৮ ও ৯ জুন যৌথভাবে এ উৎসবের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ট্যুরিজম বোর্ড ও সেইফ।

বৃহস্পতিবার বিকেলে কক্সবাজারের মোটেল শৈবালে আয়োজিত প্রেস বিফ্রিংয়ে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হয়।
এতে লিখিত বক্তব্যে সেইফ-এর প্রধান নিবার্হী মশিউর রহমান বলেন, বে অব বেঙ্গল পৃথিবীর সর্ববৃহৎ উপসাগর, যা বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার ও শ্রীলংকার সঙ্গে সংযুক্ত। বে অব বেঙ্গলই এ অঞ্চলের নীল অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশাল অবদান রেখেছে।

সি ফুড, ট্যুরিজম, শিপিং, তেল ও গ্যাস এর উপাদান। সমুদ্র হলো বিশাল খাদ্য ভাণ্ডার, স্বাস্থ্য, বেঁচে থাকা, পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্যের অসীম সম্ভার। বিশ্ব মহাসমুদ্র দিবস হলো পৃথিবীর সব চেয়ে বড় সমুদ্র উৎসব।

তিনি জানান, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমুদ্র ও জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ‘বে অব বেঙ্গল ফেস্টিভ্যাল ২০১২’ আয়োজন করা হয়েছে।

উৎসবে দ্য লংগেস্ট বিচ ম্যারাথন, দ্য লংগেস্ট বিচ ওয়াকাথন, দ্য লংগেস্ট বিচ সার্ফিং কর্মসূচি রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে সাইক্লিং ও ওশান ক্লিনআপসহ নানা আয়োজন রয়েছে। এতে সারাদেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেবে।

প্রেস বিফ্রিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান হেমায়েত উদ্দিন তালুকদার, ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী আখতারুজ্জামান খান, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সৈয়দ নুরুল বাসির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে দলমতের ঊর্ধ্বে ওঠার আহবান

কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে এক যোগে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্রশাসক মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাক আহমদ চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার জেলা প্রেস ক্লাবে কক্সবাজারবাণীর দ্বিতীয় বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ আহবান জানান। কেক কেকে তিনি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।

কক্সবাজারবাণীর প্রধান সম্পাদক আতাহার ইকবালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন কক্সবাজারবাণী সম্পাদক ও প্রকাশক ফরিদুল মোস্তাফা খান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী। আরো বক্তব্য দেন কক্সবাজার হোটেল মোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার, জিয়া গেস্ট ইন এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুর রহমান।

অনুষ্ঠানে বক্তারা সাম্প্রতিক সময়ে দৈনিক কক্সবাজারবাণী অফিসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় জড়িতদের কাউকে গ্রেফতার না করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

টেকনাফে চাকমাপল্লিতে সন্ত্রাসীদের হামলাঃ পুলিশ ও চাকমাদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্ষ্যং ইউনিয়নের আমতলী গ্রামের দুর্গম চাকমাপল্লিতে সন্ত্রাসীদের হামলা ও নির্যাতনের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ উঠেছে।
চাকমা জনগোষ্ঠীর অভিযোগ, ওই হামলার সঙ্গে পুলিশ জড়িত। তবে পুলিশ বলছে, একটি মামলার দুই আসামিকে আটক করে নিয়ে আসার পথে কয়েকজন চাকমা সন্ত্রাসী দুজনকে ছিনিয়ে নেয় এবং এক পুলিশ সদস্যের পায়ের রগ ও মাথা কেটে হাত-পা বেঁধে ফেলে দেয়।
গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে আমতলী চাকমাপল্লির শতাধিক নারী-পুরুষ। চাকমাপল্লির বাসিন্দা ওরেংগ্যা চাকমা ও অদিকে চাকমা বলেন, গত ২৯ মে রাত ১০টার দিকে স্থানীয় ‘ভূমিদস্যু’ আবদুল হকের নেতৃত্বে ১০-১১ জন সন্ত্রাসী চাকমাপল্লিতে হামলা চালায়। বান্তচিং চাকমা ও চিংক্যহ্লা চাকমাকে মারধর করলে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসে। এ সময় আরেক দল সন্ত্রাসী তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে কয়েকজন আহত হন।
ওরেংগ্যা ও অদিকের অভিযোগ, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সাদা পোশাকের পুলিশের দুজন সদস্য ছিল। তবে তাঁদের নাম জানেন না। পরদিন ভোররাতে টেকনাফ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বখতিয়ারের নেতৃত্বে একদল পুলিশ আমতলীতে এসে তল্লাশির নামে চাকমাদের ওপর হামলা চালায়।
পার্বত্য চুক্তিবিরোধী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সদস্য তরন সিং তংচইঙ্গ্যা বলেন, তল্লাশির সময় পুলিশ চাকমা নারীদের শ্লীলতাহানি, বৃদ্ধাকে নির্যাতন, প্রসূতি নারীকে আঘাতসহ ঘরবাড়ি ও সম্পত্তি নষ্ট এবং টাকা লুটপাট করে বলে গ্রামের লোকজন তাঁদের কাছে অভিযোগ করেছেন।
পুলিশ সুপারের সংবাদ সম্মেলন: চাকমাপল্লিতে হামলার ঘটনায় পুলিশকে জড়িয়ে একটি মহল ফায়দা লুটছে বলে দাবি করেছেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার সেলিম মো. জাহাঙ্গীর।
গতকাল দুপুর ১২টার দিকে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ সুপার বলেন, ১৫ একরের বেশি বনভূমি দখল নিয়ে চাকমাদের সঙ্গে স্থানীয় আবদুল হক ও তাঁর লোকজনের মধ্যে গত ১২ মে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় ১২-১৫ জন সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে মামলা করেন আবদুল হক। গত ২৯ মে রাতে চাকমাপল্লিতে অভিযান চালিয়ে দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেন পুলিশের নায়েক শিপন মিয়া। কিন্তু কয়েকজন চাকমা সন্ত্রাসী শিপনকে মারধর করে দুই আসামিকে ছিনিয়ে নেয় এবং শিপনের বাঁ পায়ের রগ কেটে দেয়। তারপর মাথা ও গলায় দা দিয়ে কুপিয়ে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে একটি পাহাড়ি ঝিরি বা ছড়াতে নিক্ষেপ করে।
পুলিশ সুপার জানান, পরদিন ভোরে পুলিশ ওই গ্রামে অভিযান চালিয়ে সাত সন্ত্রাসীকে আটক করে এবং আহত শিপনকে উদ্ধার করে। প্রথমে শিপনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এবং অবস্থার অবনতি হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এক পা হারিয়ে তিনি এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুল হক বলেন, পুলিশের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ৩৭ সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে চাকমাপল্লির বাসিন্দা উছা থাইন, ছা থাইং চাকমা, নয়ন চাকমা, ছা থাই ছিং চাকমা, হেলাল উদ্দিন, কাদের হোসেন ও মো. শরীফকে। বর্তমানে তাঁরা কক্সবাজার জেলা কারাগারে।
পরিদর্শন: গত মঙ্গলবার দুপুরে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা টেকনাফের আমতলী চাকমাপল্লি পরিদর্শন করেন। ওই দলের নেতৃত্ব দেন জেলা গণফোরামের সভাপতি ইদ্রিস আহমদ। তিনি জানান, পরিদর্শনের সময় চাকমা নারী-পুরুষের ওপর পুলিশের হামলা ও নির্যাতনের সত্যতা পাওয়া যায়নি।
জেলা জাসদের সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। কিন্তু ভূমিসংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে চাকমাপল্লিতে হামলার অভিযোগে পুলিশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। ১৫ একরের বেশি বনভূমি দখলের জন্য একটি প্রভাবশালী মহল চাকমাদের একটি অংশকে লেলিয়ে দিচ্ছে।’