Friday, June 08, 2012

টেকনাফে চাকমাপল্লিতে সন্ত্রাসীদের হামলাঃ পুলিশ ও চাকমাদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্ষ্যং ইউনিয়নের আমতলী গ্রামের দুর্গম চাকমাপল্লিতে সন্ত্রাসীদের হামলা ও নির্যাতনের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ উঠেছে।
চাকমা জনগোষ্ঠীর অভিযোগ, ওই হামলার সঙ্গে পুলিশ জড়িত। তবে পুলিশ বলছে, একটি মামলার দুই আসামিকে আটক করে নিয়ে আসার পথে কয়েকজন চাকমা সন্ত্রাসী দুজনকে ছিনিয়ে নেয় এবং এক পুলিশ সদস্যের পায়ের রগ ও মাথা কেটে হাত-পা বেঁধে ফেলে দেয়।
গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে আমতলী চাকমাপল্লির শতাধিক নারী-পুরুষ। চাকমাপল্লির বাসিন্দা ওরেংগ্যা চাকমা ও অদিকে চাকমা বলেন, গত ২৯ মে রাত ১০টার দিকে স্থানীয় ‘ভূমিদস্যু’ আবদুল হকের নেতৃত্বে ১০-১১ জন সন্ত্রাসী চাকমাপল্লিতে হামলা চালায়। বান্তচিং চাকমা ও চিংক্যহ্লা চাকমাকে মারধর করলে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসে। এ সময় আরেক দল সন্ত্রাসী তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে কয়েকজন আহত হন।
ওরেংগ্যা ও অদিকের অভিযোগ, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সাদা পোশাকের পুলিশের দুজন সদস্য ছিল। তবে তাঁদের নাম জানেন না। পরদিন ভোররাতে টেকনাফ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বখতিয়ারের নেতৃত্বে একদল পুলিশ আমতলীতে এসে তল্লাশির নামে চাকমাদের ওপর হামলা চালায়।
পার্বত্য চুক্তিবিরোধী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সদস্য তরন সিং তংচইঙ্গ্যা বলেন, তল্লাশির সময় পুলিশ চাকমা নারীদের শ্লীলতাহানি, বৃদ্ধাকে নির্যাতন, প্রসূতি নারীকে আঘাতসহ ঘরবাড়ি ও সম্পত্তি নষ্ট এবং টাকা লুটপাট করে বলে গ্রামের লোকজন তাঁদের কাছে অভিযোগ করেছেন।
পুলিশ সুপারের সংবাদ সম্মেলন: চাকমাপল্লিতে হামলার ঘটনায় পুলিশকে জড়িয়ে একটি মহল ফায়দা লুটছে বলে দাবি করেছেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার সেলিম মো. জাহাঙ্গীর।
গতকাল দুপুর ১২টার দিকে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ সুপার বলেন, ১৫ একরের বেশি বনভূমি দখল নিয়ে চাকমাদের সঙ্গে স্থানীয় আবদুল হক ও তাঁর লোকজনের মধ্যে গত ১২ মে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় ১২-১৫ জন সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে মামলা করেন আবদুল হক। গত ২৯ মে রাতে চাকমাপল্লিতে অভিযান চালিয়ে দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেন পুলিশের নায়েক শিপন মিয়া। কিন্তু কয়েকজন চাকমা সন্ত্রাসী শিপনকে মারধর করে দুই আসামিকে ছিনিয়ে নেয় এবং শিপনের বাঁ পায়ের রগ কেটে দেয়। তারপর মাথা ও গলায় দা দিয়ে কুপিয়ে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে একটি পাহাড়ি ঝিরি বা ছড়াতে নিক্ষেপ করে।
পুলিশ সুপার জানান, পরদিন ভোরে পুলিশ ওই গ্রামে অভিযান চালিয়ে সাত সন্ত্রাসীকে আটক করে এবং আহত শিপনকে উদ্ধার করে। প্রথমে শিপনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এবং অবস্থার অবনতি হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এক পা হারিয়ে তিনি এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুল হক বলেন, পুলিশের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ৩৭ সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে চাকমাপল্লির বাসিন্দা উছা থাইন, ছা থাইং চাকমা, নয়ন চাকমা, ছা থাই ছিং চাকমা, হেলাল উদ্দিন, কাদের হোসেন ও মো. শরীফকে। বর্তমানে তাঁরা কক্সবাজার জেলা কারাগারে।
পরিদর্শন: গত মঙ্গলবার দুপুরে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা টেকনাফের আমতলী চাকমাপল্লি পরিদর্শন করেন। ওই দলের নেতৃত্ব দেন জেলা গণফোরামের সভাপতি ইদ্রিস আহমদ। তিনি জানান, পরিদর্শনের সময় চাকমা নারী-পুরুষের ওপর পুলিশের হামলা ও নির্যাতনের সত্যতা পাওয়া যায়নি।
জেলা জাসদের সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। কিন্তু ভূমিসংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে চাকমাপল্লিতে হামলার অভিযোগে পুলিশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। ১৫ একরের বেশি বনভূমি দখলের জন্য একটি প্রভাবশালী মহল চাকমাদের একটি অংশকে লেলিয়ে দিচ্ছে।’

No comments:

Post a Comment