কক্সবাজারের চকরিয়ার ঐতিহ্যবাহী ও সুপরিচিত হারবাং রাখাইন পল্লীর একমাত্র আয়ের উৎস হস্তচালিত তাঁতশিল্প এখন বিলুপ্তির পথে।
এ পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, সুতাসহ কাপড় তৈরির উপকরণের মূল্য আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়া, মূলধন সংকট, সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না পাওয়া, অনাধুনিক উৎপাদন পদ্ধতি, মিয়ানমারের কাপড়ে দেশীয় বাজারে সয়লাব হওয়াসহ বিভিন্ন প্রতিকূলতায় রাখাইন তাঁতশিল্প হুমকিতে পড়েছে।

এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নৃতাত্তি্বক জনগোষ্ঠী উন্নয়ন কমিটির সদস্য মাস্টার মংয়াই জানান, রাখাইনরা এ অঞ্চলের আধিবাসী। প্রায় তিনশ' বছর ধরে তারা পেকুয়া ও চকরিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করে আসছেন। এসব পল্লীর সব পরিবারে হস্তচালিত তাঁতশিল্প চালু ছিল। মহিলারা তাঁতে কাপড় তৈরি করতেন আর পুরুষরা হাটবাজারে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তখন হারবাং রাখাইন পল্লীর ৯০ শতাংশ পরিবার আর্থিকভাবে সচ্ছল ছিল। ১৯৯০ সালের পর তাঁতিরা আর এ শিল্প ধরে রাখতে পারেননি। এ পল্লীর বেশির ভাগ পরিবারের ভিটিবাড়ি ছাড়া কোনো জমিজমা নেই। তাই তারা বিকল্প বা অন্য পেশায়ও যুক্ত হতে পারছেন না। ফলে চরম অভাব-অনটনের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন তারা। তিনি জানান, বর্তমানে রাখাইন সম্প্রদায়ের হারবাংয়ে ২৭০, মানিকপুরে ৭৫, মগবাজারে ৫৫, বমুতে ৩৫ ও গয়ালমারায় ২টি পরিবার বসবাস করছে। এর মধ্যে হারবাংয়ে প্রায় ৮০০, মানিকপুরে ১০০, মগবাজারে ৫০ ও বমুতে ২০টি তাঁত চালু ছিল। প্রতিটি পরিবারে ২-৩টি তাঁত ছিল। বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে তা দুইশ' থেকে আড়াইশ'তে নেমে এসেছে।
হারবাংয়ে তাঁতশিল্পের সঙ্গে জড়িত সুমী মংলা, অনি রাখাইন, অং চং রাখাইনসহ একাধিক রাখাইন নারী জানান, একটি তাঁতে পুরো দিন মিলে ৫-৬ গজ কাপড় তৈরি করা যায়। এ কাপড় বাজারে বিক্রি করে পোষায় না। তাই এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন অনেকে। চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম জানান, সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ প্রদান, মিয়ানমারের কাপড় দেশে প্রবেশ বন্ধ, সুতাসহ উপকরণের মূল্য সহনীয় রাখলে তাঁতিরা তাদের পেশায় সচ্ছলতার মুখ দেখবেন।