Wednesday, June 06, 2012

হারবাং রাখাইন পল্লীর তাঁতিরা ভালো নেই

কক্সবাজারের চকরিয়ার ঐতিহ্যবাহী ও সুপরিচিত হারবাং রাখাইন পল্লীর একমাত্র আয়ের উৎস হস্তচালিত তাঁতশিল্প এখন বিলুপ্তির পথে।

এ পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, সুতাসহ কাপড় তৈরির উপকরণের মূল্য আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়া, মূলধন সংকট, সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না পাওয়া, অনাধুনিক উৎপাদন পদ্ধতি, মিয়ানমারের কাপড়ে দেশীয় বাজারে সয়লাব হওয়াসহ বিভিন্ন প্রতিকূলতায় রাখাইন তাঁতশিল্প হুমকিতে পড়েছে।
জানা গেছে, এ ইউনিয়নের হারবাং রাখাইন পরিবারের মেয়েরা যুগ যুগ ধরে টঙঘরের ফাঁকা জায়গায় হস্তচালিত তাঁতে কাপড় বুনে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ১৯৯০ সালের পর সুতাসহ কাপড় তৈরির সব উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি ও মিয়ানমারের তৈরি কাপড় দেশের বাজার দখল করায় তারা আর কাপড় তৈরি করতে পারছেন না। এ কারণে হারবাং রাখাইন পল্লীর সব তাঁত এখন বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। শুধু হারবাং নয়, এ পেশায় জড়িত পেকুয়ার বারবাকিয়ার রাখাইন পল্লী, মানিকপুর, খতিয়ারঘোনা, বমুর প্রায় ৫০০ পরিবার চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে। অর্ধাহার-অনাহারে তারা বেকারত্বের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। অথচ রাখাইন নৃতাত্তি্বক ঐতিহ্য অনুযায়ী একজন রাখাইন নারী মানে একটি তাঁত। এ হিসাবে এক হাজার তাঁত থাকার কথা। বর্তমানে তাঁতের সংখ্যা কমে দুইশ' থেকে আড়াইশ'তে নেমে এসেছে। এতে কাজ করছেন শতাধিক নারী। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় অধিকাংশ তাঁত আজ অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত দুই শতাধিক রাখাইন পরিবারের ৩০০-৪০০ নারী ও পুরুষ বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অনেকে বিকল্প পেশা হিসেবে মুদির দোকান ও সেলুন ব্যবসা করছেন। আবার অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য পার্শ্ববর্তী বান্দরবান, রাঙামাটি ও কক্সবাজার শহরে চলে গেছেন।
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নৃতাত্তি্বক জনগোষ্ঠী উন্নয়ন কমিটির সদস্য মাস্টার মংয়াই জানান, রাখাইনরা এ অঞ্চলের আধিবাসী। প্রায় তিনশ' বছর ধরে তারা পেকুয়া ও চকরিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করে আসছেন। এসব পল্লীর সব পরিবারে হস্তচালিত তাঁতশিল্প চালু ছিল। মহিলারা তাঁতে কাপড় তৈরি করতেন আর পুরুষরা হাটবাজারে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তখন হারবাং রাখাইন পল্লীর ৯০ শতাংশ পরিবার আর্থিকভাবে সচ্ছল ছিল। ১৯৯০ সালের পর তাঁতিরা আর এ শিল্প ধরে রাখতে পারেননি। এ পল্লীর বেশির ভাগ পরিবারের ভিটিবাড়ি ছাড়া কোনো জমিজমা নেই। তাই তারা বিকল্প বা অন্য পেশায়ও যুক্ত হতে পারছেন না। ফলে চরম অভাব-অনটনের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন তারা। তিনি জানান, বর্তমানে রাখাইন সম্প্রদায়ের হারবাংয়ে ২৭০, মানিকপুরে ৭৫, মগবাজারে ৫৫, বমুতে ৩৫ ও গয়ালমারায় ২টি পরিবার বসবাস করছে। এর মধ্যে হারবাংয়ে প্রায় ৮০০, মানিকপুরে ১০০, মগবাজারে ৫০ ও বমুতে ২০টি তাঁত চালু ছিল। প্রতিটি পরিবারে ২-৩টি তাঁত ছিল। বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে তা দুইশ' থেকে আড়াইশ'তে নেমে এসেছে।
হারবাংয়ে তাঁতশিল্পের সঙ্গে জড়িত সুমী মংলা, অনি রাখাইন, অং চং রাখাইনসহ একাধিক রাখাইন নারী জানান, একটি তাঁতে পুরো দিন মিলে ৫-৬ গজ কাপড় তৈরি করা যায়। এ কাপড় বাজারে বিক্রি করে পোষায় না। তাই এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন অনেকে। চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম জানান, সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ প্রদান, মিয়ানমারের কাপড় দেশে প্রবেশ বন্ধ, সুতাসহ উপকরণের মূল্য সহনীয় রাখলে তাঁতিরা তাদের পেশায় সচ্ছলতার মুখ দেখবেন।

মহেশখালীতে অনুমোদনহীন করাতকল বাড়ছে

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় লাইসেন্সবিহীন করাতকলের আগ্রাসনের কারণে রেহাই পাচ্ছে না সরকারের সংরক্ষিত বন সামাজিক বনায়নের গাছ।

উপজেলার আশপাশে ২২টি করাতকলে দিন-রাত প্রকাশ্যে চলছে সরকারি বনাঞ্চল ও সামাজিক বনায়নের কাঠ চেরাই। সংঘবদ্ধ কাঠ চোর ও সন্ত্রাসীরা মাসের পর মাস এসব অবৈধ করাতকল চালু রেখে বনাঞ্চলের অপূরণীয় ক্ষতিসাধনসহ পরিবেশের ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি করে আসছে। বনাঞ্চল নিধনের ক্ষেত্রে ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হচ্ছে এ অবৈধ করাতকলগুলো। যত্রতত্র অবৈধ করাতকল হওয়ায় সংঘবদ্ধ কাঠ চোরেরা সরকারের সংরক্ষিত বাগানের মূল্যবান গাছ কেটে করাতকলে চেরাই করে কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অনায়াসে নিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন বন কর্মকর্তারা অবগত থাকা সত্ত্বেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় বন বিভাগের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন মহল। উপজেলার হোয়ানক, কালারমারছড়া, শাপলাপুর, বড় মহেশখালী, কুতুবজুম ও পৌরসভা এলাকার গুটিকয়েক ব্যক্তির সংঘবদ্ধ একটি চক্র বন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সরকারি বাগানের মূল্যবান কাঠ চেরাই অব্যাহত রেখেছে। সূত্রে জানা যায়, মহেশখালী উপজেলার রেঞ্জ অফিস ও বিটের অধীনে রয়েছে বিশাল পাহাড়ি বনভূমি। মহেশখালীর সংরক্ষিত এ বনাঞ্চলে হাজার হাজার কোটি টাকার মূল্যবান কাঠ ছিল। কিন্তু কয়েক বছর ধরে অবৈধ করাতকল বসিয়ে সংঘবদ্ধ কাঠ চোরেরা প্রতিনিয়ত সংরক্ষিত বাগান ও সামাজিক বনায়নের মূল্যবান গাছ কেটে চেরাই অব্যাহত রেখেছে। করাতকলে সাইজ করা এসব কাঠ পাচার হচ্ছে নৌপথে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। মহেশখালীর বনাঞ্চল থেকে প্রতি মাসে কমপক্ষে অর্ধ কোটি টাকার মূল্যবান কাঠ অবৈধ করাতকলে চেরাই করে পাচার হয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। জানা যায়, মহেশখালী উপজেলার গোরকঘাটায় ৪টি, বরুনা ঘাটে একটি, বানিয়ার দোকানে দুটি, নতুন বাজারে ৩টি, কুতুবজোমে দুটি, হোয়ানকে দুটি, নোনাছড়িতে ৩টি, কালারমারছড়ায় দুটি, ইউনুছখালীতে একটি, শাপলাপুর জেমঘাটে দুটিসহ মোট ২২টি অবৈধ করাতকল রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৫-৭টি করাতকলের বৈধ লাইসেন্স থাকলেও বাকি সব করাতকল সরকারের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গাছ কেটে সাবাড় করছে। রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থাকা কিছু বনদস্যু এসব করাতকলের অঘোষিত মালিক। এ ছাড়া বন বিভাগের কিছু কর্মকর্তা, হেডম্যান ও ভিলেজাররা স্থানীয় বন বিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিট কর্মকর্তা এবং বন প্রহরীদের ম্যানেজ করে অবৈধ করাতকলগুলো স্থাপন করছে। পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, অবৈধ করাতকলের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে কিছু লোক লাভবান হলেও বৃহৎ জনগোষ্ঠী তথা সরকারের ক্ষতি হচ্ছে বেশি। জনস্বার্থ এবং সরকারি সম্পদ রক্ষার স্বার্থে অবিলম্বে এসব অবৈধ করাতকল উচ্ছেদ করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন সচেতনমহল। অন্যথায় মহেশখালী উপজেলার বনভূমি বিরানভূমিতে পরিণত হবে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, এভাবে চলতে থাকলে আগামী ৫ বছরের মধ্যে সরকারি বনের ছোট-বড় সব বৃক্ষ উজাড় হওয়ার পর সামাজিক বনায়নের গাছপালাও শেষ হয়ে যাবে। মূল ভূখণ্ড থেকে বিছিন্ন হলেও দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর পাহাড়ে অতীতের নানা রকম জীবজন্তু হাতি, বাঘ, হরিণ, বানর, ভল্লুক, সাপ, অতিথি পাখির চারণভূমি ছিল। এমনকি কালারমারছড়াতে হাতির খেদা (হাতি ধরার ফাঁদ) ছিল। রোহিঙ্গাসহ জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে নির্বিচারে বনভূমির বৃক্ষ নিধন এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার চোরা দৃষ্টিতে মহেশখালীর পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী বড় বৃক্ষে ইতিহাস হারিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি বন উজাড়ের ফলে জীববৈচিত্র্য পরিবেশ ধবংসের মুখে। অভিযোগ রয়েছে, বন বিভাগের কিছু হেডম্যান ও ভিলেজার স্থানীয় বন বিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিট কর্মকর্তা এবং বন প্রহরীদের ম্যানেজ করে অবৈধ করাতকলগুলো স্থাপনে উৎসাহিত করেছে। করাতকলের এক ম্যানেজার জানান, বন বিভাগের লোকজন সপ্তাহ ও মাসিক চুক্তির ভিত্তিতে নিয়মিত মাসোহারা নিয়ে এসব অবৈধ করাতকলগুলো চালানোর অনুমতি দিয়েছে। জানা গেছে, করাতকলের মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না বন বিভাগের কর্মকর্তারা। এদিকে উপজেলার পাহাড় নেই এমন ইউনিয়নেও ২-৩টি করাতকল স্থাপন করে পাহাড়, সামাজিক বনায়নের ও বেড়িবাঁধে সরকারের রোপণ করা বৃক্ষ উজাড় করা হচ্ছে। গত ২-৩ বছরের মধ্যে উপজেলায় অধিকাংশ অবৈধ করাতকল স্থাপন হলেও বন বিভাগের ভূমিকা দর্শকের মতো। বিগত কয়েক মাস আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম কাউছার হোসেন তিনটি করাতকল উচ্ছেদ করার পর মালিকরা হাজতবাস করে জামিনে মুক্ত হয়ে ফের তা চালু করে বলে সূত্রে প্রকাশ। এ ব্যাপারে উপজেলার রেঞ্জ কর্মকর্তা বজলুর রহমান জানান, পর্যায়ক্রমে এসব অবৈধ করাতকল উচ্ছেদ করা হবে।

পূর্ণিমার প্রভাবে প্রবল জোয়ারে বিস্তীর্ণ উপকূল প্লাবিত

পূর্ণিমার প্রভাবে প্রবল জোয়ারে সোম ও মঙ্গলবার টেকনাফ উপজেলার নাফ নদী বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশে পানি ঢুকে ২৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

এতে বসতবাড়ি, বিদ্যালয়, চিংড়ি ঘের, শুঁটকি মহাল ও ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। প্লাবিত এসব গ্রামের রান্নাঘরে আগুন জ্বলেনি। তারা উঁচু স্থানে গিয়ে কোনোরকমে দিনাতিপাত করছে। আবার কেউ ঘরের ছাদে ঝুঁকি নিয়ে আছে বলে জানিয়েছেন সাবরাং বাজারপাড়ার মোঃ রফিক। টেকনাফের নাফ নদীর বেড়িবাঁধের অংশটি মেরামতের জন্য সরকার চতুর্থ দফায় টাকা বরাদ্দ দিলেও বাঁধ সংস্কারের নামে ঠিকাদার প্রহসন করছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
পাউবো ওটকনাফ অঞ্চলের উপ-সহকারী প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক ঠিকাদারের মাধ্যমে ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। মূল ভাঙা অংশের উভয় পাশে ২০ চেইন করে কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। বেড়িবাঁধের মূল ভাঙা অংশ যদি মেরামত করা না হয়, তবে তা সংস্কার করেও লাভ হবে না।
পূর্ণিমার জোয়ারে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত
পেকুয়া-কুতুবদিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি জানান, কক্সবাজারের সাগর উপকূলীয় দ্বীপ কুতুবদিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা সোমবার ও গতকাল মঙ্গলবার সকালে পূর্ণিমার জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে। পাউবোর বেড়িবাঁধ না থাকায় বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে জোয়ারের পানি ঢুকে শতাধিক বসতঘর এবং কয়েকশ' হেক্টর আউশের ফসলি জমি ও বীজতলা প্লাবিত হয়েছে। জ্যৈষ্ঠের খরতাপে শুকিয়ে যাওয়া পুকুরগুলোয় সাগরের লবণ পানি ঢুকেছে। বর্তমানে প্লাবিত এলাকার লোকজন সুপেয় পানীয় জলের চরম সংকটে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কুতুবদিয়ার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ আব্বাস উদ্দিন জানান, পূর্ণিমার জোয়ারে লেমশিখালী পেয়ারাকাটা এলাকায় ৫ চেইন, উত্তর ধুরুং ফয়জনের বাপেরপাড়ায় এক কিলোমিটার, চর ধুরুংয়ে এক কিলোমিটার, তাবলরচরে এক কিলোমিটার, কুমিরারছড়ার জেলেপাড়ায় অর্ধকিলোমিটার ও আজম কলোনি এলাকায় এক কিলোমিটার বাঁধ ভাঙা থাকায় কূলে জোয়ারের পানি ঢুকেছে। চলতি পূর্ণিমায় জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ২-৩ ফুট উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
কুতুবদিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বনি আমিন খান জানান, আসন্ন বর্ষা মৌসুমে কুতুবদিয়া দ্বীপে ৩ হাজার ৩০০ হেক্টর আউশ চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে দেড়শ' হেক্টরে বীজতলা রয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে ভাঙা বেড়িবাঁধ মেরামত করা না হলে চাষিরা আউশ চাষাবাদে চরম দুর্ভোগে পড়বেন। প্লাবনের ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি।

মিয়ানমারে যাচ্ছে তেল আসছে ইয়াবা

কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ২৭১ কিলোমিটারের ৩৫টি পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারে পাচার হয়ে যাচ্ছে ভোজ্য ও জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী।

বিনিময়ে আসছে মরণ নেশা ইয়াবাসহ বিভিন্ন বোতলজাত মাদকদ্রব্য। পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যসামগ্রী উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চোখে ধুলো দিয়ে পাচার হয়ে আসা বিশাল অঙ্কের চোরাই পণ্যের চালান অনায়াসে দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হয়ে যাচ্ছে।
ভর্তুকি দিয়ে আমদানি করা জ্বালানি ও ভোজ্যতেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী মিয়ানমারে অপ্রতুল, পাশাপাশি দামও আকাশচুম্বি। তাই সীমান্তের একশ্রেণীর চোরাকারবারিসহ এলাকার চিহ্নিত কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী মিয়ানমারে তেল পাচারের জোর দিয়েছে। এসব ব্যবসায়ী স্থানীয়ভাবে বাজারজাতকরণের নাম ভাঙিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতিপত্র নিয়ে প্রতি সপ্তাহের শত শত ব্যারেল জ্বালানি ও ভোজ্যতেল গুদামজাত করে সুযোগ বুঝে পাচারকারীদের হাতে তুলে দেয়। জ্বালানি ও ভোজ্যতেল পাচার সংক্রান্ত তথ্যবহুল সংবাদ স্থানীয়, আঞ্চলিক ও জাতীয় পত্রিকাগুলোয় প্রচার হওয়ার সুবাদে সীমান্তরক্ষী বিজিবি সদস্যরা তৎপর হয়ে ওঠে। এ উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের এক ব্যবসায়ীর প্রায় ৫০ ব্যারেল জ্বালানি তেল আটক করে। এ ছাড়া মরিচ্যা বিজিবির সদস্যরা পৃথক অভিযান চালিয়ে পাচারের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়ার সময় প্রায় ২৫০ ব্যারেল জ্বালানি ও ভোজ্যতেল আটক করলেও এসব ব্যবসায়ী ইউএনও প্রদত্ত অনুমতির দোহাই দিয়ে ওই তেল ছাড়িয়ে নিতে সক্ষম হয়। সম্প্রতি হ্নীলা বিজিবি সদস্যরা কক্সবাজার টেকনাফ সড়কে হোয়াইক্যং এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৫৭০ লিটার ভোজ্য ও ৪৪০ লিটার জ্বালানি তেলসহ ২ জনকে আটক করে।
উপজেলা মাসিক আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় মরিচ্যা বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার হাজি নুরুল ইসলাম জ্বালানি তেল পাচারের ওপর গুরুত্বারোপের একপর্যায়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জহিরুল ইসলাম স্থানীয়ভাবে চাহিদার সমপরিমাণ জ্বালানি তেলের অনুমতি শুধু স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দেওয়া হচ্ছে বলে ব্যক্ত করেন। উপস্থিত বালুখালী ও পালংখালী বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার ইউএনওর বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, স্থানীয়ভাবে বাজারজাতকরণের নাম ভাঙিয়ে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার জ্বালানি ও ভোজ্যতেল মিয়ানমারে পাচার করছে।
অপর দিকে মিয়ানমার সীমান্তের ৩টি ইয়াবা কারখানায় উৎপাদিত সব ইয়াবা বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে সড়কপথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে এ উপজেলার কুতুপালংয়ে অবস্থিত রোহিঙ্গা ঝুপড়িতে বসবাসরত প্রায় অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গার ইয়াবাসহ মিয়ানমার থেকে আসা বোতলজাত মাদকদ্রব্য বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা পৃথক অভিযান চালিয়ে প্রায় ১২শ' ইয়াবাসহ ৩ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে। ইয়াবা পাচার হয়ে আসার ঘটনা নিয়ে অভিভাবক মহল শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাপড়ূয়া ছাত্রসহ স্থানীয় যুব সমাজ অধিক লাভের আশায় ইয়াবা পাচারের সঙ্গে জড়িত হচ্ছে। এ সময় উখিয়া পুলিশ যাত্রীবাহী গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে রুবি বালা নামের এক মহিলার কাছ থেকে ৩৯৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। মরিচ্যা বিজিবির ক্যাম্প কমান্ডার নুরুল ইসলাম জানান, ঘন ঘন আটকের পর চোরাকারবারিরা পাচারের ধরন পাল্টে এবার বোরকা পরিহিত যুবতীদের ব্যবহার করে ইয়াবা পাচার করছে। সহকারী পুলিশ সুপার চত্রধর ত্রিপুরা জানান, বিজিবির পাশাপাশি পুলিশ ইয়াবা উদ্ধারের ব্যাপারে তৎপর রয়েছে। এমনকি উপকূলের মেরিন ড্রাইভ দিয়ে যাতে ইয়াবা পাচার হতে না পারে সে ব্যাপারে ইনানি পুলিশ ফাঁড়িকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জমি দখলেও পুলিশ!

সাবরাং সিকদারপাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি জবরদখলে পুলিশের প্রত্যক্ষ সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ভুক্তভোগী ব্যক্তি পুলিশের এএসআইসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় এজাহার দায়ের করেছে।

বেশ কিছুদিন ধরে সাবরাং ইউনিয়নের সিকদারপাড়ার তরণী কুমার শর্মার মালিকানাধীন ভিটা নিয়ে পার্শ্ববর্তী অনিল কুমার শর্মার সঙ্গে জমির বিরোধ চলছিল। এ সূত্র ধরে গত রোববার বিকেলে টেকনাফ থানার এএসআই জাফর তার সঙ্গীয় একজন কনস্টেবল ও অনিল কুমার শীল, সন্তোষ কুমার শীল, তরণী কুমার শর্মা ভিটায় অনধিকার প্রবেশ করে ভিটার পূর্ব ও পশ্চিম পাশের বেড়া লম্বা কিরিচ দিয়ে কেটে তছনছ করে। এ সময় পুলিশের উপস্থিতিতে অনিল কুমার শীল ও সন্তোষ কুমার শীল জমিটি অবৈধভাবে দখলে নেয়। পুলিশের উপস্থিতিতে ভিটা জবরদখলের দৃশ্য দেখতে অনেক উৎসুক জনতা সেখানে ভিড় জমায়। এ ঘটনায় তরণী কুমারের ছেলে সঞ্জয় কুমার শর্মা বাধা দিলে এএসআই জাফর তাকে ধাক্কা দিয়ে সবার উদ্দেশে হুমকি দিয়ে বলে_ কোনো শালা এ জমিতে পা রাখলে তার হাত-পা ভেঙে জেলে দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে এএসআই জাফর বলেন, একপক্ষ থানায় এক অভিযোগ দায়ের করলে তার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ঘটনাস্থল দেখতে যান বলে জানান।
টেকনাফ থানার ওসি মাহবুবুল হক জানান, এএসআই জাফরকে বিরোধপূর্ণ ঘটনাস্থলে তাকে পাঠানো হয়নি। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া বলে জানান।

মহেশখালীতে ১৮ গ্রামে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় গতকাল সোমবার সকালে চারটি ইউনিয়নের অন্তত ১৮টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

ফলে গতকাল ও গত রোববার দুই দিনে পূর্ণিমার জোয়ারের কবলে পড়ে ২০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল সকালে উপজেলার ছোট মহেশখালী, মাতারবাড়ী, ধলঘাটা ও শাপলাপুর ইউনিয়নের অন্তত ১৮টি গ্রামে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া ধলঘাটার সরইতলা ও নতুন ঘোনায় দুটি স্থানে বেঁড়িবাধ ভেঙে গিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। বসতবাড়িতে পানি ওঠায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে চার ইউনিয়নের অন্তত ২০ হাজার মানুষ। ধলঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহ বলেন, পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে ধলঘাটার পশ্চিমে দুটি স্থানে বাঁধ ভেঙে গিয়ে লোকালয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে শতাধিক ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে।

টেকনাফে বালু ও পাথর তোলার হিড়িক

সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কক্সবাজারের টেকনাফে আবাদি জমি ও সংরক্ষিত পাহাড়ি বন থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার ঘনফুট বালু ও পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। আর এগুলো দিয়ে গড়ে উঠছে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে সেন্ট মার্টিন, টেকনাফ ও কক্সবাজারকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা হয়। সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করা হয় এখান থেকে বালু ও পাথর উত্তোলন অপসারণ, শামুক-ঝিনুক, প্রবাল-শৈবাল আহরণ ও বিক্রি। কিন্তু একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে অবাধে পাথর ও বালু উত্তোলন করে চলেছেন।
জেলা বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা বলেন, এভাবে বালু ও পাথর ওঠানোর ফলে ফসলি জমি ও পাহাড়ি বনাঞ্চল বিপন্ন হওয়ার পাশাপাশি ভূগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সেন্ট মার্টিন, টেকনাফের শীলবনিয়াপাড়া, খানকারপাড়া, ডেইলপাড়া, কলেজপাড়া, লম্বরী, লেঁঙ্গুরবিল, রাজারছড়া, মিঠাপানিরছড়া, বাহারছড়ার শীলখালী, চৌকিদারপাড়া, জাহাজপুরা, বানিয়াপাড়া, মাঠপাড়া, উত্তর শীলখালী, শামলাপুর, মনখালী, মারিষবনিয়া, হ্নীলার লেদা, আলীখালী, রঙ্গিখালী, পানখালীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ওঠানো হচ্ছে বালু ও বোল্ডার পাথর। প্রভাবশালী চক্র স্থানীয় বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে প্রকাশ্যে পরিবেশ ধ্বংসাত্মক এসব কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
ওই সব এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ফসলি জমিতে ২০-২৫ জন পুরুষ মাটির নিচ থেকে পাথর আহরণের কাজ করছেন। প্রথমে তাঁরা মাটি সরিয়ে গর্ত খোঁড়েন। পাথর বের হলে লোহার রড দিয়ে তাতে সাত-আট ইঞ্চি দীর্ঘ সরু ছিদ্র করেন। ছিদ্র দিয়ে বারুদ ফেলে কেরোসিন ভেজানো সুতার একটা মাথা বারুদের সঙ্গে এবং অন্য মাথায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আগুন বারুদ স্পর্শ করামাত্র বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে বিশাল বিশাল পাথর টুকরা হয়ে ছিটকে পড়ে। বিস্ফোরণের সময় ভূমিকম্পের মতো কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা।
সৈয়দ হোসেন (৩৮), নবী হোসেন (৩২), খলিলুর রহমান (৩৫) ও আমির আহমদ (৩৫) নামের কয়েকজন শ্রমিক বলেন, ‘আমরা দৈনিক ৩৫০ টাকা মজুরিতে পাথর উত্তোলন করছি। এই কাজ বৈধ, না অবৈধ—তা আমরা জানি না।’
টেকনাফ উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, আবাদি জমি থেকে পাথর ওঠানোর ফলে মাটির ওপরের অংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জমি উর্বরতা শক্তি হারাচ্ছে।
বাহারছড়ার শীলখালী বন বিভাগ রেঞ্জের কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বালু ও পাথর উত্তোলনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এগুলো উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। কিছুদিন আগেও বেশ কিছু পাথর জব্দ করা হয়েছে।
হোয়াইক্যং রেঞ্জের কর্মকর্তা মহিউদ্দিন বলেন, উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে গত কয়েক মাসে ২৫টির বেশি মামলা এবং প্রায় এক হাজার ৪০০ ঘনফুট বোল্ডার পাথর ও এ কাজে ব্যবহূত ২৮টি যান জব্দ করা হয়েছে।
জেলার (দক্ষিণ) সহকারী বন সংরক্ষক মোহাম্মদ আবদুর রহমান বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে যেতে যেতেই উত্তোলনকারীরা পালিয়ে যায়।’
পরিবেশ অধিদপ্তর, কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, পুরো জেলায় লোকবল-সংকটের কারণে সঠিকভাবে অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আ ন ম নাজিম উদ্দিন বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।