Monday, December 06, 2010

গৃহবধূকে উত্ত্যক্তের অভিযোগঃ রাজধানীতে এক ভাইয়ের দণ্ড, অন্যজনের বিরুদ্ধে মামলা

রাজধানীর রামপুরার বনশ্রী এলাকায় এক গৃহবধূকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে মামাতো-ফুফাতো দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে মামাতো ভাই নূর উদ্দীনকে (৪৮) তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ফুফাতো ভাই সোহেলের (২৬) বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করে তাঁকে বিচারিক হাকিমের আদালতে পাঠানো হয়। আজ সোমবার ঢাকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আল-আমিনের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত এ রায় দেন।
সোহেলের দাবি, বাড়ির ভাড়াটে ওই নারীকে তাঁরা উত্ত্যক্ত করেননি, বাসা ছেড়ে দিতে বলেছিলেন। এরই জের ধরে ওই নারী ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগকারী নারী আদালতকে জানান, সোহেল তাঁকে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন, বাসায় ঢুকে কুপ্রস্তাবও দেন। রাজি না হওয়ায় তিনি তাঁকে গালাগাল করেন। বিষয়টি নূর উদ্দীনকে জানানো হলে তিনিও তাঁকে উত্ত্যক্ত করা শুরু করেন।
তবে নূর উদ্দীন বলেন, বাসা ছেড়ে না দেওয়ায় কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে তিনি মহিলাকে গালাগাল করেছেন। আদালত তাঁকে তিন মাসের কারাদণ্ড দেন।
আজ সকাল নয়টার দিকে বনশ্রীর ব্লক বি-এর ২ নম্বর সড়কের ওই বাড়িটির নিচতলায় আদালত বসেন। সেখানে বাদী-বিবাদী, পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন। রামপুরা থানার পুলিশ জানায়, অভিযোগকারী যে বাড়িতে থাকেন, আসামিরা সেই বাড়ির মালিকপক্ষ। তাঁরা বাড়ির মালিকের ভাই। মালিক না থাকায় তাঁরাই ওই ছয়তলা বাড়িটির দেখাশোনা করেন। আর ওই নারীর স্বামী ঢাকার বাইরে চাকরি করেন।
ম্যাজিস্ট্রেট আল-আমিন জানান, নারীকে উত্ত্যক্ত করার (ইভ টিজিং) অভিযোগে দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারা মোতাবেক নূর উদ্দীনকে তিন মাসের সাজা দেওয়া হয়েছে। অন্যজন অভিযোগ স্বীকার না করায় তাঁর বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হয়েছে।

 সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদঃ বিকেলে হরতাল ঘোষণা, সন্ধ্যায় প্রত্যাহার

বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে ২৬ ডিসেম্বর সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল করার ঘোষণা দিয়েছেলেন সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদের সভাপতি মাওলানা মুহিউদ্দিন খান। তবে সন্ধ্যায় সংগঠন থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২৬ তারিখের পরে হরতাল আহ্বান করা হবে। বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবার থেকে সারা দেশে লাগাতার বিক্ষোভ কর্মসূচিও পালনের কথাও বলা হয়।
আজ সোমবার বিকেলে পুরানা পল্টনে মাসিক মদিনা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করেন মাওলানা মুহিউদ্দিন খান। শিক্ষানীতির খসড়া সংশোধনের দাবিতে সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদের সদস্যরা দুপুরে জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে স্মারকলিপি দিতে যান। তবে মত্স্য ভবন মোড়ে পুলিশ তাঁদের আটকে দেয়। সেখানে পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর বিকেলে পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে মুহিউদ্দিন খান অভিযোগ করেন, পুলিশ তাঁদের ওপর নির্যাতন করেছে। এর প্রতিবাদে আগামী ২৬ ডিসেম্বর হরতাল করা হবে বলে।
মুহিউদ্দিন খান বলেন, ‘যদি জানতাম স্মারকরিপি দিতে গিয়ে বর্বরতা শিকার হতে হবে, তাহলে আমরাও সেভাবে যেতাম, সিন ক্রিয়েট করতাম।’ এরপর কাল মঙ্গলবার বিক্ষোভ ও সামনে হরতাল করার ঘোষণা দেন তিনি। কবে হরতাল দেবেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কয়েকজন সহকর্মী হজে গেছেন। এখনো তারা আসেননি। ডিসেম্বরে অনেক স্কুলের ভর্তি পরীক্ষা, বার্ষিক পরীক্ষা আবার বিজয় দিবস আছে। সব শেষ হয়ে আসলে ২৬ ডিসেম্বর দেশব্যাপী হরতাল।
পরিষদের সভাপতি বলেন, ‘কাল থেকে লাগাতার বিক্ষোভ করব, দেখি কয় দিন বানচাল করতে পারে। মসজিদে মসজিদে আলোচনা করব, দেখি কয়টা মসজিদ দখল করতে পারে।’
পরিষদের নেতা ও খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মো. ইসহাক বলেন, ‘আমরা তো গোলমাল করতে যাইনি। ৬০ বছর ধরে রাজনীতি করছি। অন্তত হাজারবার স্মারকলিপি দিয়েছি। এটি একটি গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি। কিন্তু পুলিশ এতটাই মারমুখি ছিল যে দাঁড়াতেই পারলাম না।’
সংবাদ সম্মেলনে নেতারা অশোভন আচরণকারী পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। এ সময় সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, আবদুল লতিফ নেজামী, যাইনুল আবেদীন, আলমগীর মজুমদার, মহিউদ্দিন রব্বানী, খলিলুর রহমান মাদানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
তবে সন্ধ্যায় ওলামা মাশায়েখ পরিষদ যে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দিয়েছে তাতে দাবি করা হয়, মত্স্য ভবনের সামনে পুলিশ ওলামা-মাশায়েখদের ওপর লাঠিপেটা করেছে। এরপর ওলামা নেতারা হেঁটে প্রেসক্লাবে এলেও তাঁদের সেখানে ঢুকতে বা রাস্তায় দাঁড়াতে দেয়নি পুলিশ। এরপর বলা হয়, পরবর্তী সময়ে তাঁদের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে সেখানে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচি অনুযায়ী আগামীকাল বিক্ষোভ সমাবেশ এবং ২৬ তারিখের পরে হরতাল।
সংবাদ সম্মেলন ও প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দুই ধরনের বক্তব্যের বিষয়ে পরিষদের নেতা ও ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, ‘ঠিক নির্দিষ্ট করে তারিখের ঘোষণা করা হয়নি। তবে ২৫ তারিখের পর যেকোনো দিন হরতাল করব।’
তবে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিবলী নোমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুপুরে প্রধানমন্ত্রী সচিবালয় থেকে নিজ বাসভবনে যাবেন। তাঁর নিরাপত্তার কথা ভেবেই সেখানে কাউকে দাঁড়াতে দেইনি।’
জানা গেছে, পুলিশ সংগঠনের ব্যানার কেড়ে নিয়ে তাঁদের ধাক্কা দিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। এ সময় কর্মীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল মারে। ঘটনাস্থল থেকে ১০ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

সংসদে প্রশ্নোত্তরঃ জানুয়ারিতে রাজধানীতে দ্বিতল সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু

যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন বলেছেন, আগামী জানুয়ারিতে রাজধানীতে দ্বিতল সড়ক (এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) নির্মাণের কাজ শুরু হবে। আর এটাই হবে রাজধানীর যানজট নিরসনের সবচে বড় অস্ত্র। আজ সোমবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সাংসদ মজিবুল হক চুন্নুর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে যোগাযোগমন্ত্রী এ কথা বলেন।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-সাতরাস্তা-মগবাজার রেল করিডর-খিলগাঁও-কমলাপুর-গোলাপবাগ-চট্টগ্রাম রোড (কুতুবখালী) রুটে এই দ্বিতল সড়ক নির্মিত হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর নির্মাণের জন্য দাতাদের কাছ থেকে এ পর্যন্ত মোট ১৮ হাজার কোটি টাকা পাওয়া গেছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরকে পাশ্ববর্তী দেশগুলোর ব্যবহারের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এ কাজ বাস্তবায়ন করছে।
সাংসদ বজলুল হক হারুনের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বিআরটিসির বিভিন্ন ডিপোতে ২১৬টি যাত্রীবাহী বাস অকেজো হয়ে পড়ে আছে। অকেজো বাসগুলোর মধ্যে বেশকিছু বাসের মেরামত অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক নয়। অকেজো যাত্রীবাহী বাসগুলোর মধ্যে থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক বাসগুলো দ্রুত মেরামত করে সচল করার পরিকল্পনা আছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের আড়াই হাজার একরের চেয়েও বেশি জায়গা অবৈধ দখলে আছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে আবুল হোসেন বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট নিরসনের লক্ষ্যে সরকার মহাসড়কটি দুই লেন থেকে চার লেনে করার কাজ শুরু করেছে। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই কাজ শেষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

বন্দর ব্যবহারের বিনিময়ে রড রপ্তানির সুযোগ দাবি

ট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের সুবিধার বিনিময়ে বিনাশুল্কে ভারতে রড রপ্তানির সুযোগ চান সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। সোমবার তারা বিষয়টি বাণিজ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং এন্ড স্টিল মিলস্ অ্যাসোসিয়েশনের এক প্রতিনিধি দল বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খানের সঙ্গে সচিবালয়ে তার কার্যালয়ে দেখা করে এ বিষয়ে সরকারের সহায়তা চান। ভারতে বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার রড রপ্তানি করা সম্ভব বলে জানান সংগঠনের মহাসচিব আবুল কাশেম মজুমদার।
আবুল কাশেম মন্ত্রীকে জানান, বর্তমানে দেশের স্টিল ও রি-রোলিং মিলগুলোর বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৮০ লাখ মেট্রিক টন। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে উৎপাদন ক্ষমতার মাত্র ৪০ ভাগ (৩২ লাখ মেট্রিক টন) রড উৎপাদিত হচ্ছে। তবে দেশে রডের চাহিদা ২০ লাখ মেট্রিক টন হওয়ায় বছরে ১২ লাখ মেট্রিক টন রড উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। দেশে বর্তমানে ৪৩টি অটো রি-রোলিং এবং প্রায় আড়াইশটি রি-রোলিং মিল রয়েছে।

বর্তমানে ভারত বিপুল পরিমাণ শুল্ক আরোপ করায় এবং আমাদের এসএম প্রডাক্টের টেস্টিং রিপোর্ট গ্রহণ না করায় বাংলাদেশ থেকে ভারতে রড রপ্তানি করা যাচ্ছে না বলে জানান স্টিল মিলস্ এসোসিয়েশনের মহাসচিব। তিনি মন্ত্রীকে বলেন, "ভারতকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার বিপরীতে সরকারের উচিৎ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যে বিনাশুল্কে রড রপ্তানির সুযোগ আদায় করা।"

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এমএস রড রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের রড টেস্টিং ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হবে। এতে রডের মান উন্নত হওয়ার পাশাপাশি দেশের চাহিদা মিটিয়ে রড রপ্তানি করে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রীর এ বক্তব্য জানানো হয়।

বৈঠকে উত্থাপন করা রড ব্যবসায়ীদের অন্য দাবির মধ্যে রয়েছে, স্টিল ও রি-রোলিং মিলের কাঁচামাল মেল্টিং স্ক্র্যাপ ও রি-রোলেবল স্ক্র্যাপ আমদানি পর্যায়ে প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশন (পিএসআই) প্রথা রহিত করা, এ শিল্পের যাবতীয় কাঁচামাল, কেমিক্যাল ও যন্ত্রপাতির উপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করা, বন্দরে অতিরিক্ত চার্য আদায় বিলোপ করা ইত্যাদি।

উপজেলা আইন সংশোধনে বিলঃ জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করা যাবে

পজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী সদস্যদের অপসারণের বিধান রেখে আজ সোমবার জাতীয় সংসদে উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) বিল-২০১০ উত্থাপন করা হয়েছে। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বিলটি উত্থাপন করেন। প্রস্তাবিত বিলে বলা হয়েছে, যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া পরপর তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকলে, রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অপরাধে আদালত কর্তৃক দণ্ডিত হলে, ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলে, হলফনামায় অসত্য তথ্য দিলে, শারীরিক ও মানসিকভাবে অক্ষম হলে, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য ছিলেন প্রমাণিত হলে এবং বার্ষিক ১২টি সভার মধ্যে নয়টি সভায় গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়া যোগদানে ব্যর্থ হলে সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী সদস্যদের তাঁদের পদ থেকে অপসারণ করতে পারবে।
তবে অপসারণের আগে উপজেলার জনপ্রতিনিধিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হবে। আর অপসারণ আদেশের তারিখ থেকে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে অপসারিত ব্যক্তি সরকারের কাছে আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
প্রস্তাবিত আইনে আরও বলা হয়েছে, কোনো জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে অপসারণের কাজ শুরু হলে এবং আদালত তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা আমলে নিলে, সরকার সেই ব্যক্তিকে সাময়িকভাবে অপসারণ করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচিত চেয়ারম্যানকে প্যানেল চেয়ারম্যানের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব সম্পর্কে প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, নির্বাহী কর্মকর্তা পরিষদের মুখ্য কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন এবং পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা দেবেন।
বিলটির ব্যাপারে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সাংসদ রাশেদ খান মেনন বলেন, উপজেলা আইন নিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। তিনি বিলটি পুনর্বিবেচনার জন্য আবারও মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে উপস্থাপনের প্রস্তাব করেন।
তবে তাঁর প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে সৈয়দ আশরাফ বলেন, বিলটি কমিটিতে পাঠানো হলে সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ থাকবে।
এ ছাড়াও আজ সংশ্লিষ্ট কমিটি থেকে বর্ডার গার্ড বিল-২০১০, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা বিল-২০১০, বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল বিল-২০১০, ভোটার তালিকা (সংশোধন) বিল-২০১০-এর প্রতিবেদন সংসদে উপস্থাপন করা হয়।

'স্বৈরাচারকে নিয়ে গণতন্ত্র হত্যার ষড়যন্ত্র করছে সরকার'

ব্বইয়ের 'স্বৈরাচার' ও বর্তমান 'ফ্যাসিস্ট' সরকার এক হয়ে গণতন্ত্র হত্যার ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। সোমবার 'স্বৈরাচার পতন দিবস' উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ অভিযোগ করেন। মির্জা ফখরুল দেশের বর্তমান চিত্র তুলে ধরে বলেন, "সরকার যেভাবে দেশকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে- তাতে আমরা শঙ্কিত। আজ দেশের স্বাধীনতা ও সাবভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার পাশাপাশি মানুষের মৌলিক অধিকারকে তারা হরণ করেছে। এই অপশক্তিকে রুখতে হবে।'' এ জন্য তিনি দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের বিশেষ করে ছাত্র সমাজকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর জেনারেল এইচ এম এরশাদ ক্ষমতা ছেড়ে দিলে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদ তিনজোটের রূপরেখা অনুযায়ী নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
বিএনপি এ দিনটিকে স্বৈরাচার পতন দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে 'স্বৈরাচার পতন দিবস- বর্তমান প্রেক্ষিত ও করণীয়' শীর্ষক এই আলোচনা সভায় সাবেক ছাত্র নেতারা নব্বইয়ের আন্দোলনের নানা দিক তুলে ধরেন। তারা ওই সময়ের ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের কথিত দেশ রক্ষার আন্দোলনে প্রস্তুতি নিতে বলেন। নব্বইয়ের সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের ভাইস প্রেসিডেন্ট আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় ওই সময়ের সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের নেতাদের মধ্যে শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, সালাউদ্দিন আহমেদ, রহুল কবির রিজভী, ফজলুল হক মিলন, হাবিবুর রহমান হাবিব, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, লুৎফর রহমান খান, খায়রুল কবীর খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, নাজিম উদ্দিন আলম, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আবুল লতিফ জনি, আসাদুজ্জামান আসাদ, তকদীর হোসেন মো. জসিম, শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক জাফরুল হাসান, যুব দলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নিরব, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

পৌর মেয়রদের পদ ছেড়ে নির্বাচন করতে হবে: সাখাওয়াত

নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, আসন্ন পৌর নির্বাচনে বর্তমান মেয়ররা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইলে তাঁদের মেয়রের পদ ছেড়ে দিতে হবে। আজ সোমবার নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
পৌর আইনের বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় লাভজনক পদে থেকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা যায় না। এই বিধানের উল্লেখ করে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বর্তমানে যাঁরা মেয়র আছেন, বিধান অনুযায়ী তাঁদের প্যানেল মেয়রের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।
সাখাওয়াত হোসেন জানান, এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। তবে যেসব সরকারি কর্মকর্তা অবসরকালীন ছুটিতে আছেন, তাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। আবার যাঁদের বিরুদ্ধে মামলায় আদালত অন্তত দুই বছরের সাজা দিয়েছেন এবং যেসব অভিযুক্ত ব্যক্তি আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন বা আপিল করেছেন, তাঁরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। তবে মামলা বা সাজার ওপর আদালতের স্থগিতাদেশ থাকলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা যাবে।

ভর্তি পরীক্ষার সময় ছাত্রদল-ছাত্রলীগের সংর্ঘষ, আহত ১০

য়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার সময় ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ছাত্রলীগের ছয় কর্মীসহ অত্যন্ত ১০ জন আহত হয়েছেন। আহত ছাত্রদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিত্সা দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, আজ ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা ছিল। দুপুরে পরীক্ষার সময় ছাত্রদলের নেতা সাহাবুলকে মোটরসাইকেলে করে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা উঠিয়ে নিয়ে যায় বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে।
এর প্রতিবাদে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসের মূল গেটে ছাত্রলীগের নেতাদের ধাওয়া শুরু করেন। এর পরই ছাত্রলীগের কর্মীরা ক্যাম্পাসের ভেতর থেকে লাঠি নিয়ে ছাত্রদলের কর্মীদের পাল্টা ধাওয়া করে। এ ঘটনায় দুপুর ১২টায় প্রথম শিফটের পরীক্ষা শেষ হলে ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। ইটপাটকেল ও লাঠির আঘাতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। তাঁদেরও অধিকাংশই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। গুরুতর আহত সাব্বির আহমেদকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত অন্যদের মধ্যে আবু কায়ছার, জয়, সজীব, আপেল ও মনিরকে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিত্সা দেওয়া হয়।
এ দিকে সংঘর্ষের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিকেলের পরীক্ষা এক ঘণ্টা পিছিয়ে দেয়। দুইটার পরীক্ষা তিনটায় নেওয়া হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
ছাত্রলীগের সদস্য মনির জানান, ছাত্রদল আকস্মিক ও অতর্কিতে হামলা চালায়। এ ঘটনার পর ছাত্রলীগ আত্মরক্ষার জন্য পাল্টা হামলা চালায়। এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য ছাত্রদলের কাউকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গিয়াসউদ্দিন আহমেদ এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, পরীক্ষার্থীরা যেন সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা দিতে পারে, সে জন্যই বিকেলের পরীক্ষা এক ঘণ্টা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

২৬ ডিসেম্বর হরতাল ডেকেছে সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদ

গামী ২৬ ডিসেম্বর দেশব্যাপী হরতালের ডাক দিয়েছে সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদ। শিক্ষানীতির সংশোধন ও স্পিকারকে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে পুলিশি লাঠিপেটার প্রতিবাদে এ হরতালের ডাক দেওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার বিকেলে পুরানা পল্টনের মাসিক মদিনা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে হরতালের ঘোষণা দেন পরিষদের সভাপতি মাওলানা মুহিউদ্দিন খান। এ ছাড়া কাল মঙ্গলবার থেকে লাগাতার বিক্ষোভ কর্মসূচিরও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, আজ সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদের নেতা-কর্মীরা শিক্ষানীতির সংশোধন চেয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকারকে ২৪ দফা প্রস্তাব-সংবলিত স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য মত্স্য ভবনের সামনে জড়ো হতে থাকেন। এরপর দুপুর দুইটার দিকে তাঁরা মিছিল শুরু করেন। পুলিশ মিছিলে বাধা দিয়ে সংগঠনের ব্যানার কেড়ে নিয়ে তাঁদের ধাক্কা দিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। মাশায়েখ পরিষদের নেতা-কর্মীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছোড়েন। এ সময় পুলিশ ১০ জনকে আটক করে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে বিকেলে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
রমানা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিবলী নোমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ দুপুরে প্রধানমন্ত্রী সচিবালয় থেকে নিজ বাসভবনে যাবেন। তাঁর নিরাপত্তার কথা ভেবেই সেখানে কাউকে দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি।’
পরিষদের সভাপতি মাওলানা মুহিউদ্দিন খান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘যদি জানতাম স্মারকলিপি দিতে গিয়ে হামলার শিকার হতে হবে, তাহলে আমরাও সেভাবে যেতাম। সিন ক্রিয়েট করতাম।’
কর্মসূচি ঘোষণা করে মুহিউদ্দিন খান বলেন, ‘কাল থেকে লাগাতার বিক্ষোভ করব, দেখি কয়দিন বানচাল করতে পারে। মসজিদে মসজিদে আলোচনা করব, দেখি কয়টা মসজিদ দখল করতে পারে।’
মাওলানা ইসহাক বলেন, ‘আমরা তো গোলমাল করতে যাইনি। ষাট বছর ধরে রাজনীতি করছি। অন্তত হাজারবার স্মারকলিপি দিয়েছি। এটি একটি গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি। কিন্তু পুলিশ এতটাই মারমুখী ছিল যে দাঁড়াতেই পারলাম না।’
সংবাদ সম্মেলনে নেতারা পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। এ সময় সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, আবদুল লতিফ নেজামী, যাইনুল অবেদীন, আলমগীর মজুমদার, মহিউদ্দিন রব্বানী, খলিলুর রহমান মাদানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

দেশের সবচেয়ে বড় অপরাধী হচ্ছেন সাহাবুদ্দীন: এরশাদ

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে দেশের সবচেয়ে বড় অপরাধী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আজ সোমবার সংবিধান সংরক্ষণ দিবস পালন উপলক্ষে দলটির এক আলোচনা সভায় এরশাদ সাবেক প্রধান উপদেষ্টার বিচারও দাবি করেন। আজ থেকে ২০ বছর আগে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর গণ-অভ্যুত্থানের মুখে এরশাদ পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন। অন্যরা দিনটিকে ‘গণতন্ত্র দিবস’ বা ‘স্বৈরাচার পতন দিবস’ হিসেবে পালন করলেও জাতীয় পার্টি একে সংবিধান সংরক্ষণ দিবস হিসেবে পালন করে।আজ একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের খবরে বলা হয়, ওই সভায় এরশাদ আরও বলেন, ‘আমরা সংবিধান রক্ষা করেছিলাম। জগতের কাছে পরিচয় দিয়েছিলাম, সামরিক শাসনের মধ্য দিয়ে এলেও আমরা সংবিধান সম্মান করি। গণতন্ত্রকে শ্রদ্ধা করি।’
তবে তিনি বলেন, ‘আজ এ দেশে গণতন্ত্রের বিসর্জন হয়েছে। গণতন্ত্র মুখে আছে, কাজে নেই।’
মহাজোটের প্রধান শরিক দলকে উদ্দেশ্য করে এরশাদ বলেন, ‘আগামীতে নির্বাচন আসছে। গত নির্বাচনে আমাদের ৪৮টি আসন দেওয়ার পর ১৮টি আসন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। সে ইতিহাস আবার যেন ফিরে না আসে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিন এবং এবার আমাদের সঙ্গে সুবিচার করবেন, এটা আশা করি।’
নূর হোসেন হত্যাকাণ্ডের পেছনে লাশের রাজনীতি ছিল দাবি করে এরশাদ বলেন, একটি মানুষকে সাজিয়ে-গুজিয়ে বুকের মধ্যে লেখা হল, ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ এবং তাকে হত্যা করা হলো। গুলি লাগল কোথা থেকে পিঠে। পুলিশ গুলি করলে সামনে দিয়ে গুলি করবে। পেছন দিয়ে তো পুলিশ গুলি করবে না। তাকে মেরে লাশের রাজনীতি করার জন্য এটা সাজানো নাটক ছিল।

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর আরও ৫ দিনের রিমান্ডে

শ ট্রাক অস্ত্র আটক মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। আজ সোমবার বিকেলে শুনানির পর চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান রিমান্ড মঞ্জুরের এই আদেশ দেন। এর আগে একই মামলায় গত ১ নভেম্বর তাঁর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছিল। আদালত সূত্র জানায়, সিআইডি আজ বাবরের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। দুই পক্ষের কৌঁসুলিদের যুক্তিতর্ক শোনার পর হাকিম পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে প্রথম দফায় বাবরকে গত ৭ থেকে ১১ নভেম্বর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গত ৩ অক্টোবর ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
রিমান্ড শুনানিতে অংশ নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) কামালউদ্দিন আহম্মদ আদালতে বলেন, এর আগে তাঁকে ১০ ট্রাক মামলায় ঢাকায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছেন, সিইউএফএল জেটিঘাটে দুটি ট্রলারে অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ খালাসের বিষয়টি তিনি ২০০৪ সালের ২ এপ্রিল ভোরে বিশেষ শাখার তত্কালীন ডিআইজি মো. শামসুল ইসলামের কাছ থেকে জানতে পারেন।
আসামির কৌঁসুলিরা রিমান্ডের বিরোধিতা করে আদালতে বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে বাবর সাহেবকে হয়রানি করতে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। কারণ কোনো আসামি ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে তাঁর নাম বলেননি। এর আগে তাঁকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। একই মামলায় বারবার রিমান্ডে নেওয়া যুক্তিসংগত নয়। এ ব্যপারে হাইকোর্টের অনেক সিদ্ধান্ত আছে।’
তদন্ত সূত্র জানায়, ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাতে সিইউএফএল জেটিঘাট থেকে দশ ট্রাক অস্ত্র আটক করা হয়। উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার জন্য অস্ত্রগুলো আনা হয় বলে বিভিন্ন সাক্ষীর বক্তব্যে জানা গেছে। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার তদন্ত বেশি দূর এগোতে পারেনি। বিগত তত্ত্বাবধায়ক ও বর্তমান সরকারের আমলে অধিকতর তদন্ত শুরু হয়। পরে এই মামলায় কয়েকজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা আদালতে জবানবন্দি দেন। তাঁরা ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য বাবর ও সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব ওমর ফারুককে দায়ী করেন।

 দুর্দান্ত জয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ

য়ের ধারায় ফিরেছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে হারের ধাক্কা কাটিয়ে দ্বিতীয় ম্যাচে সমতা। আর মিরপুরে আজ অনুষ্ঠিত তৃতীয় ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়েকে বিধ্বস্ত করে সিরিজে ২-১-এ এগিয়ে গেছে সাকিব আল হাসানের দল। ফ্লাডলাইটের অপর্যাপ্ত আলোর কারণে ডে-নাইট ম্যাচটি হয়েছে ডে ম্যাচ। তবে ফ্লাডলাইটের আলো না থাকলেও আগের ম্যাচের মতোই আলো ছড়িয়েছে টাইগাররা। সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটের ওপর ভর করে ৭ উইকেটে ২৪৬ রান তোলে বাংলাদেশ। এরপর ব্যাটিংয়ে নামা জিম্বাবুয়েকে ৪৮.১ ওভারে মাত্র ১৮১ রানে গুটিয়ে দিয়েছেন আবদুর রাজ্জাক ও শফিউল ইসলাম। সিরিজে এগিয়ে যাওয়া ম্যাচে বাংলাদেশের জয় ৬৫ রানের।
শুরুটা অবশ্য হতাশারই ছিল বাংলাদেশের। প্রথম ওভারেই তামিম ইকবাল (০) এলবিডব্লিউ! চতুর্থ ওভারের প্রথম বলেই আউট তামিমের জায়গায় খেলতে আসা জুনায়েদ সিদ্দিকী (১)। দলীয় ৪৭ রানে সাজঘরে ফেরেন রকিবুল হাসান (১২)। ৩৩ রান করে ফিরতে হয়েছে ইমরুল কায়েসকেও। দলীয় রান তখন ৪ উইকেটে ৭১। তবে এই বিপর্যয় শেষ পর্যন্ত থাকেনি। ব্যাটিং বিপর্যয় কাটিয়ে বাংলাদেশকে শক্ত অবস্থান এনে দেন সাকিব আল হাসান ও উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম। মুশফিকুরকে ফিরিয়ে এ দুজনের ১১৬ রানের জুটি ভেঙেছেন উেসয়া। কিন্তু ততক্ষণে দলীয় সংগ্রহে ৬৩ রান যোগ করেন মুশফিক। সাজঘরে ফেরার আগে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন সাকিব। নাঈম ইসলাম ২৩ ও মাশরাফি ১১ রানে অপরাজিত ছিলেন। জিম্বাবুয়ের হয়ে সর্বোচ্চ চারটি উইকেট লাভ করেন অধিনায়ক উেসয়া।
আগের ম্যাচে আবদুর রাজ্জাক ও সাকিবের ঘূর্ণিতে বিধ্বস্ত হয়েছিল জিম্বাবুয়ে। আজ সফরকারীদের বিধ্বস্ত করেছেন রাজ্জাক ও শফিউল। ৪৭ রানেই জিম্বাবুয়ের ছয় উইকেট নেই! ৯৫ রানে সাত, আর ১২০ রানে ৮ উইকেট! তার পরও জিম্বাবুয়ে যে ১৮১ রান তুলতে পেরেছে, তার কৃতিত্ব উেসয়ার। সতীর্থদের বিপর্যয়ের মধ্যেও ৬৭ রানের ইনিংস খেলেন এই ব্যাটসম্যান। ১০ ওভার বোলিং করে মাত্র ১৪ রানের বিনিময়ে চারটি উইকেট শিকার করে জিম্বাবুয়ের টপ অর্ডার বিধ্বস্ত করায় ম্যাচসেরা নির্বাচিত হন আবদুর রাজ্জাক।

জোটবদ্ধভাবে মহাজোটের নির্বাচন করার ঘোষণা বেআইনি

পৌরসভা নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবে মহাজোটের প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণাকে বেআইনি বলে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) অভিযোগ করেছে বিএনপি। আজ সোমবার বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ টি এম শামসুল হুদার সঙ্গে দেখা করে এ অভিযোগ করেন। এ ছাড়া নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করতে মাঠ পর্যায়ে সেনা মোতায়েনের দাবি জানায় দলটি। সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
এম কে আনোয়ার বলেন, ‘আইনি সুযোগ না থাকায় পৌর নির্বাচনে বিএনপি দলীয় বা জোটবদ্ধভাবে কোনো প্রার্থী দেবে না। এ বিষয়ে মহাজোট থেকে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনের যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তা আইনসম্মত নয়। এ বিষয়ে আমরা কমিশনের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছি। কারণ ক্ষমতাসীনরা দলীয়ভাবে প্রার্থী দিলে নির্বাচন প্রভাবমুক্ত থাকবে না।’
গত বৃহস্পতিবার পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরের দিনই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, তাঁরা জোটবদ্ধভাবেই নির্বাচন করবেন।
এম কে আনোয়ার আরও অভিযোগ করেন, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা নির্বাচনসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকলে সেখানে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব কাজ করবে। কর্মকর্তারা সরকারদলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কাজ করতে পারবেন না। যে কারণে বিএনপি আপিল কর্তৃপক্ষ হিসেবে কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের নিয়োগ করার সুপারিশ করেছে।
পৌর নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অবাধ করতে সেনা মোতায়েন করা জরুরি বলে মনে করে বিএনপি। এম কে আনোয়ার বলেন, ‘বিদ্যমান পরিস্থিতি নির্বাচনের অনুকূল নয়, এ কথা আমরা বলছি না। তবে কমিশনের কাছে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছি।’
বিএনপির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের জানান, কমিশন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। প্রয়োজন হলে স্বল্প নোটিশে সেনা মোতায়েন করা হবে।

জলদস্যুরা জাহাজটিকে সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছে

লদস্যুরা বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’কে সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আজ সোমবার পাওয়া সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায় জাহাজটি সোমালিয়া উপকূল থেকে এক হাজার ১০০ নটিক্যাল মাইল পূর্বে অবস্থান করছিল। এটি ঘণ্টায় নয় নটিক্যাল মাইল বেগে সোমালিয়ার দিকে যাচ্ছিল। উপগ্রহের সহায়তায় জাহাজটির অবস্থান ও গতিবিধি তদারককারী সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মুখ্য কর্মকর্তা ক্যাপ্টন হাবিবুর রহমান এ তথ্য জানান।
ক্যাপ্টন হাবিবুর রহমান গতকাল সন্ধ্যা থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করে জাহাজটির গতিবিধির ওপর নজর রাখছেন। তিনি জানান, স্বাভাবিক অবস্থায় জাহাজটি ১২ নটিক্যাল মাইল বেগে চলে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ সময় গতকাল বেলা তিনটার দিকে জলদস্যুরা জাহাজটি আক্রমণ করে। সোয়া তিনটার মধ্যে তারা জাহাজটির পূর্ণ দখল নেয়। এরপর তারা জাহাজের সব বেতার যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। আক্রান্ত হওয়ার পরপরই জাহাজের ক্যাপ্টেন ফরিদুল ইসলাম দুবাই-ভিত্তিক জলদস্যুতা তদারকি সংস্থা ইউকে এমওটিসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সংস্থাকে ঘটনার কথা জানান।
জাহাজটিতে ২৬ জন বাংলাদেশি নাবিক আছেন। এর মধ্যে একজন কর্মকর্তা সপরিবারে ওই জাহাজে আছেন। জাহাজটির মালিক এস আর শিপিংয়ের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাহাজটি ইন্দোনেশিয়া থেকে নিকেলের আকরিক নিয়ে গ্রিসে যাচ্ছিল। মাঝপথে মালদ্বীপ ও ভারতের লাক্ষা দ্বীপের মাঝামাঝি জায়গায় এটি জলদস্যু দ্বারা আক্রান্ত হয় বলে আমরা খবর পেয়েছি। দুবাই-ভিত্তিক জলদস্যুতা তদারকি সংস্থা ইউকে-এমটিও আমাদের কাছে এ বার্তা পাঠিয়েছে।’
জাহাজ মালিক সূত্রে জানা যায়, ৪৩ হাজার মেট্রিক টন পণ্য পরিবহনে সক্ষম বিশালাকৃতির ওই জাহাজটির বর্তমান বাজারমূল্য ১০০ কোটি টাকারও বেশি। জলদস্যু আক্রান্ত হওয়ার সময় এটিতে ৪১ হাজার মেট্রিক টন পণ্য ছিল। জাহাজটি বাংলাদেশি মালিকের হলেও এটি আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথে ভাড়ায় পরিচালিত হচ্ছিল।

গরিবের রক্ত চুষলে ধরা খেতেই হয়, ড. ইউনূস সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'গরিবের রক্ত চুষে খেলে ধরা খেতেই হয়। ধোঁকাবাজি বেশি দিন চলে না, তা আবারও প্রমাণিত হলো।' দেশের একমাত্র নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে দারিদ্র্য দূর করার জন্য বিদেশ থেকে পাওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ গ্রামীণ ব্যাংকের তহবিল থেকে সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ড. ইউনূস সম্পর্কে আওয়ামী লীগ নেতাদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, বিদেশি অর্থ অন্য তহবিলে সরানোর অভিযোগের তদন্ত ব্যাপকভাবে করা হবে। বিস্তারিত তদন্তে আরো অনেক
কিছুই বেরিয়ে আসবে।
রাশিয়া, বেলজিয়াম ও জাপানে প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক সফরের অর্জন সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করতে গতকাল সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমের কয়েকজন সম্পাদকও ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক জনগণের ব্যাংক, কিন্তু এটাকে ড. ইউনূস এমনভাবে কব্জা করেছেন যেন মনে হয়, এটি একজনের ব্যক্তি-সম্পত্তি। গ্রামীণ ব্যাংককে ভালোবেসে তিনি এটা নিজের করে নিচ্ছেন।
গত মঙ্গলবার নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক প্রামাণ্যচিত্রে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংকের কোটি কোটি ডলার নিয়মবহির্ভূতভাবে অন্য তহবিলে সরানোর অভিযোগ তোলা হয়। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গত শুক্রবার উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ইউনূস বাংলাদেশের জন্য একটি মডেল এবং সরকার এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নিচ্ছে। পরের দিন শনিবার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ সিলেটে বলেন, "ড. ইউনূস যে 'দুর্নীতিবাজ', তা আবারও প্রমাণিত হলো।" একই দিনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, সমঝোতার মধ্য দিয়ে তহবিল সরানো হলে দোষের কিছু নয়।
গতকাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ অনেক কিছুতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। জনগণের টাকা নিয়ে ভোজবাজি খেলার এটাও একটা দৃষ্টান্ত। দরিদ্র মানুষকে ঋণ দিয়ে অর্থ চুষে খাওয়া হয়। কোথাও দরিদ্র মানুষের উন্নয়ন হয় না। তিনি বলেন, 'দরিদ্র মানুষকে দেখিয়ে বাইরে থেকে শুধু টাকা নিয়ে আসা হয়েছে। দরিদ্র মানুষগুলোকে সব সময় গরিব রেখে তাদের গিনিপিগ বানানো হয়েছে। দারিদ্র্য লালন করা হয়েছে। আমি কখনোই এটা সমর্থন করিনি; বরং বিভিন্ন সময়ে এর প্রতিবাদ করেছি।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষকে নিয়ে ধোঁকাবাজি কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।
শেখ হাসিনা বলেন, 'দারিদ্র্য বিমোচনের নামে ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে দরিদ্র মানুষের রক্ত চুষে খান তিনি (ইউনূস)। এ ঋণ নিয়ে কেউ দরিদ্রতা থেকে সর্বাত্মক মুক্তি পায়নি। গরিব মানুষের রক্ত চুষে বেশি দিন টেকা যায় না, সেটাই প্রমাণিত হয়েছে।'
শুরুতে গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারি শেয়ার ৬০ শতাংশ হলেও এখন তা ২৫ শতাংশে নেমে এসেছে_এ তথ্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শেখ হাসিনা বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের সরকারি অংশও ড. ইউনূস নিজের দখলে নিয়ে নিয়েছেন। গ্রামীণ ব্যাংক আসলেই সরকারি ব্যাংক, কিন্তু এটাকে এমনভাবে কব্জা করা হয়েছে যেন মনে হয়, এটি একজনের ব্যক্তি-সম্পত্তি।
ইউনূসকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'উনি পারলে সরকারকে শূন্য করতে চান। এরও তদন্ত করা উচিত। গরিব মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে। ভালো ভালো কথা বলে গরিব মানুষের রক্ত চুষে খাওয়া হচ্ছে। এখন অনেক কিছুই বেরিয়ে আসবে।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশে সব কিছুই নিজের দখলে নেওয়ার একটি সংস্কৃতি চালু হয়েছে। বিরোধীদলীয় নেত্রীও ব্যক্তি স্বার্থে রাজনীতি করছেন। বাড়ির জন্য হরতাল দিচ্ছেন। সেনানিবাসের বাড়ির জন্য খালেদা জিয়ার ভালোবাসাকে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতি ড. ইউনূসের ভালোবাসার সঙ্গে তুলনা করে শেখ হাসিনা বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক জনগণের সম্পত্তি। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংককে ভালোবেসে নিজের করা হচ্ছে। ইউনূস সাহেব গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতি ভালোবাসায় পড়ে গেছেন।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশে বসে বাংলাদেশে যেন কর দিতে না হয়, সে জন্য এই ট্রিকস্। কিভাবে জনগণের টাকা নিয়ে খেলা দেখানো যায়, সে খেলাই দেখানো হয়েছে।'
সমঝোতার মধ্য দিয়ে তহবিল সরানো দোষের কিছু নয় বলে অর্থমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছিলেন, সে প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমরা সবাই চাই বাংলাদেশের ভাবমূর্তি রক্ষা হোক এবং অর্থমন্ত্রীও তাই চেয়েছেন।'
গ্রামীণফোনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'প্রথমে আমিও ধোঁকায় পড়েছিলাম। প্রথমে বলা হয়েছিল, গ্রামের সাধারণ মেয়েরা ফোনের ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হবে। এতে আমিও পুলকিত হয়েছিলাম। এখন তো দেখছি, গ্রামের মেয়েরা যে অবস্থায় ছিল, সে অবস্থায়ই আছে। যাদের টাকা পাওয়ার তারা টাকা লুটে খেয়ে চলে যাচ্ছে। মানুষকে নিয়ে এত ধোঁকাবাজি, এটা কারো কাম্য নয়।' এটারও তদন্ত করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
'গ্রামীণফোনের উপকারভোগী নারীরা আর নেই, ৫০ হাজার গ্রামেও একটি পল্লীফোনের দেখা মেলেনি' শিরোনামে নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন আরো একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সম্প্রতি।

প্রধান বিচারপতি, আইন প্রয়োগ করুনঃ বিচারপতিদের সম্পদের বিবরণী

হিলা জজ অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সাধারণ সম্মেলনে আপিল বিভাগের বিচারপতি এস কে সিনহা বলেছেন, ‘সাবেক প্রধান বিচারপতি নিম্ন আদালতের বিচারকদের সম্পদের বিবরণ দিতে বলেছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বিবরণ দিয়েছেন, কেউ কেউ দেননি। আমি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের আমন্ত্রণ জানাব, আপনারাও সম্পদের হিসাব দেবেন। নিম্ন আদালতের বিচারকেরা বিবরণী দেবেন, আমরা দেব না, তা গ্রহণযোগ্য নয়।’ আমরা তাঁর বক্তব্যের সারমর্ম সমর্থন করি। ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার-এ প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সম্পদের বিবরণী দেওয়ার বিষয়ে প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক উদ্যোগ নিয়েছেন। এই উদ্যোগ যত দ্রুত বাস্তবায়িত হবে, ততই মঙ্গল।
আমরা বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৬(৪) অনুচ্ছেদের আওতায় প্রণীত আচরণবিধি অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের সম্পদের বিবরণী প্রকাশে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। সদ্য অবসরে যাওয়া বিচারপতি মো. ফজলুল করিম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েই সম্পদের বিবরণী প্রকাশের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। সে সময় প্রথম আলো ‘আমরা প্রধান বিচারপতির দিকে তাকিয়ে’ শীর্ষক সম্পাদকীয় লিখে তার সাধুবাদ জানিয়েছিল। তখন আইনবিদ শাহ্দীন মালিক প্রথম আলোতেই ঈষৎ বঙ্কিম-কটাক্ষে মন্তব্য করেছিলেন, ‘যত দিন খুশি আমরা যেন তাকিয়ে থাকি।’ তাঁর আশঙ্কাই সত্যে পরিণত হয়েছিল। আমরা লিখিতভাবে সাবেক প্রধান বিচারপতির প্রতি তাঁর সম্পদের বিবরণী প্রদানে আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু সে আহ্বান নিষ্ফল রোদনে পরিণত হয়।
২০০৩ সালের সংশোধিত আচরণবিধিতে নির্দিষ্টভাবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের সম্পদের বিবরণী আদায়ে প্রধান বিচারপতিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। বলা আছে, প্রধান বিচারপতি আহ্বান জানালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকেরা সম্পদের বিবরণী দেবেন। সুতরাং প্রধান বিচারপতিকেই তা চাইতে হবে। আর সম্পদের বিবরণী প্রকাশ মানে রাষ্ট্রপতির কাছে নয়, দেশবাসী তা সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখতে চায়। আগের প্রধান বিচারপতিরা তাঁদের ওপর অর্পিত সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন না করে অবসরে গেছেন। এই ধারার অবসান ঘটুক।
নিম্ন আদালতের বিচারকেরা জরুরি অবস্থায় সম্পদের বিবরণী দিয়েছিলেন। সেই বিবরণী ফিতাবন্দী থাকা অবস্থায় সুপ্রিম কোর্ট নতুন করে এবং বিস্তারিতভাবে সম্পদের বিবরণী চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের এই দৃষ্টিভঙ্গি ও নিস্পৃহতা গ্রহণযোগ্য নয়। ধারণা করি, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিচারক বহু আগেই তাঁদের সম্পদের বিবরণী জমা দিয়েছেন। অথচ তা যাচাই-বাছাইয়ের কোনো প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।
সমাজে আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়, এমন জীবনব্যবস্থা ক্রমেই ‘সামাজিক’ স্বীকৃতি পেয়ে চলেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটা আমাদের সংস্কৃতির গভীরে প্রোথিত হচ্ছে। রাজনীতিকেরা আশাভঙ্গের কারণ হয়েই থাকছেন। তবে সুপ্রিম কোর্টের কাছ থেকে অনুকরণীয় দৃষ্টান্তই প্রত্যাশিত। প্রতিবেশী দেশ ভারতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকেরা ইতিমধ্যে সম্পদের বিবরণী প্রকাশ করেছেন। এমনকি কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এসেছেন এবং তাঁদের সম্পদের বিবরণীও সুপ্রিম কোর্টের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে স্থান পেয়েছে। একই সঙ্গে আমরা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদেরও সম্পদের বিবরণী প্রকাশের আহ্বান জানাই। সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠায় তাঁদের দায় অবসর নিলেই চুকেবুকে যায় না। প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বলেছেন, ‘বিচারকদের মনের স্বাধীনতা মরে গেলে কোনো সংবিধান বা ধর্মগ্রন্থ দিয়ে তা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়।’ খুবই মূল্যবান কথা। বিচারক-মনের এহেন স্বাধীনতার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর একটি উপায় হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের সম্পদের বিবরণী প্রকাশ করা।

কবে দূর হবে এ ধরনের কুসংস্কার? পীরের প্রাণঘাতী ‘চিকিৎসা’

সাফল্যের সঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন বলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। মাত্র ১৮ বছর বয়স: স্বপ্নময়, কর্মদীপ্ত এক জীবনের পুরোটাই রয়েছে সামনে। এমন সময় এ কী ঘটে গেল রিফাতের! সিলেটের আম্বরখানার এই তরুণীর মৃত্যুর ঘটনাকে কী বলে বর্ণনা করা যায়? ৩০ নভেম্বর রিফাত হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে চিকিৎসকের কাছে না নিয়ে তহুরা বেগম নামের এক নারীর কাছে নেওয়া হয়, যিনি সিলেটের জামতলা এলাকায় থাকেন এবং জামতলার ‘পীরানি’ নামে পরিচিত। তহুরা বেগম যথারীতি ঘোষণা করেন, রিফাতের ওপর জিনের আছর হয়েছে।
সেলামি হিসেবে নগদ ৭৭ হাজার টাকার বিনিময়ে পীরানি তহুরা বেগম ঝাড়ফুঁক, পানিপড়া খাওয়ানো, তেলমালিশ ইত্যাদি ‘চিকিৎসা’ চালান রিফাতের ওপর সারা রাত। রিফাত গুরুতর অসুস্থ হলে ভোররাতের দিকে তাঁকে প্রথমে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নেওয়া হয়, সেখানে তাঁর অবস্থার আরও অবনতি হলে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
কথিত পীরানির এই উদ্ভট ও প্রাণঘাতী ‘চিকিৎসা’, একটি গরু ও এক ভরি সোনা নিয়ে তাঁর অন্তর্ধান এবং রিফাতের মা ও মামাসহ পরিবারের লোকজনের আচরণের বিবরণ শনিবারের প্রথম আলোয় ছাপা হয়েছে। কোনো অজগণ্ডগ্রামের নিরক্ষর পরিবার নয়, একটি বিভাগীয় শহরে বসবাসরত বেশ সচ্ছল, শিক্ষিত একটি পরিবারের সদস্যরা কী গভীর কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে আছেন, তা এ ঘটনা থেকে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়। রিফাতের মাসহ পরিবারের সদস্যরা অসুস্থ রিফাতকে চিকিৎসকের কাছে না নিয়ে ওই প্রতারক ‘পীরানি’র কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁদের গৃহকর্মী রোকেয়া বেগমের (৩০) পরামর্শে। এটা বড়ই দুর্ভাগ্যজনক যে তাঁরা নিজেদের বিচারবুদ্ধি না খাটিয়ে একজন কুসংস্কারাচ্ছন্ন অশিক্ষিত নারীর পরামর্শকে গুরুত্ব দিয়েছেন। পুলিশ রোকেয়া বেগমকে আটক করেছে। আমাদের পরামর্শ, রোকেয়া বেগম কথিত পীরানি তহুরা বেগমের দালাল কি না, তা যেন খতিয়ে দেখা হয়। কারণ জানা যাচ্ছে, সিলেট শহরের বিভিন্ন এলাকায় তহুরা বেগমের নিয়োজিত দালাল রয়েছে, যারা অসুস্থ ও বিভিন্ন বালামুসিবতের শিকার লোকজনকে পীরানির কাছে যেতে প্ররোচিত করে।
পীরানি তহুরা বেগমকে পুলিশ এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তিনি সম্ভবত তাঁর কোনো ভক্ত-অনুসারীর আশ্রয়ে আত্মগোপনে আছেন। সে রকম হলে আমরা তাঁর আশ্রয়দাতার বোধোদয় কামনা করি: তহুরা বেগম মোটেও পীর নন, তিনি রিফাতের হত্যাকারী। তাঁকে ধরিয়ে দেওয়া উচিত। পুলিশেরও উচিত গ্রেপ্তার অভিযান জোরদার করা। তহুরা বেগমের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি। আর ঝাড়ফুঁক, তাবিজ-কবজ, পানিপড়া-তেলপড়াসহ যাবতীয় অবৈজ্ঞানিক ও ক্ষতিকর ‘চিকিৎসা’ প্রয়াসে যাঁরা বিশ্বাস করেন, রিফাতের এই মর্মান্তিক অকালমৃত্যুর মধ্য দিয়ে তাঁদের কুসংস্কারগুলো যেন দূর হয়। 

ভারতীয় উপকূলে বাংলাদেশি জাহাজ জলদস্যু-আক্রান্ত

মুদ্রগামী বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’ আজ রোববার বিকেলে ভারতীয় উপকূলে জলদস্যু-আক্রান্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। জাহাজটির ২৬ জন নাবিকের সবাই বাংলাদেশি। এর মধ্যে একজন কর্মকর্তা সপরিবার ওই জাহাজে আছেন বলে জানা গেছে। শিপিং সূত্রে জানা গেছে, জলদস্যুরা নাবিকসহ জাহাজটিকে জিম্মি করে অজ্ঞাত স্থানের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ভারতীয় জলদস্যুদের সহায়তায় সোমালিয়ার জলদস্যুরা এই ঘটনা ঘটাতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মহল থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে।জাহাজটির বাংলাদেশি মালিক এস আর শিপিংয়ের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন ‘ইন্দোনেশিয়া থেকে নিকেলের আকরিক নিয়ে জাহাজটি গ্রিসের দিকে যাচ্ছিল। মাঝপথে মালদ্বীপ ও ভারতীয় লাক্কা দ্বীপের মাঝামাঝি জায়গায় এটি জলদস্যু-আক্রান্ত হয় বলে আমরা খবর পেয়েছি। দুবাইভিত্তিক জলদস্যুতা তদারকি সংস্থা ইউকে-এমটিও আমাদের কাছে এই বার্তা পাঠিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘জলদস্যুরা জাহাজটির বেতার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। এরপর ওই জাহাজ ও নাবিকদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা আর বলতে পারছি না।’
জলদস্যুকবলিত জাহাজটির অবস্থান নির্ণয়ের জন্য আজ গভীর রাত পর্যন্ত উপগ্রহ তদারক করছিলেন সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মুখ্য কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন হাবিবুর রহমান। রাত সাড়ে ১১টায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে জলদস্যুরা এমভি জাহান মণিকে ঘিরে ফেলে এবং সোয়া চারটার দিকে পুরো জাহাজটিকে নিজেদের কবজায় নেয়। এরপর তারা জাহাজটিকে সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। তিনি বলেন, ‘যেখানে জাহাজটি আক্রান্ত হয়েছে, সেখান থেকে সোমালিয়া দ্বীপের দূরত্ব এক হাজার মাইলেরও বেশি। এ কারণে সন্দেহ করছি, ভারতীয় জলদস্যুদের সহায়তায় কাজটি করা হয়েছে।’
জাহাজমালিক সূত্রে জানা যায়, ৪৩ হাজার মেট্রিক টন পণ্য পরিবহনে সক্ষম ওই জাহাজটির বর্তমান বাজারমূল্য এক শ কোটি টাকারও বেশি। জলদস্যু-আক্রান্ত হওয়ার সময় এটিতে ৪১ হাজার মেট্রিক টন পণ্য ছিল। জাহাজটি বাংলাদেশি মালিকের হলেও এটি আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথে ভাড়ায় পরিচালিত হচ্ছিল। জাহাজটি ছিনতাইয়ের পর জলদস্যুরা নাবিকদের জিম্মি করে মুক্তিপণ চাইতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশঙ্কা করছেন।

তদন্তকে স্বাগত জানালেন ইউনূস

গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে 'তহবিল স্থানান্তর' অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ ইউনূস। রোববার রাতে গ্রামীণ ব্যাংকের প্যাডে পাঠানো এক বিবৃতিতে নোবেল বিজয়ী ইউনূস বলেন, "মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কে সংবাদপত্রে যে আলোচনা হয়েছে সেই ব্যাপারে তদন্ত হওয়া উচিৎ বলে মন্তব্য করেছেন। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আমি আশা করি, যত দ্রুত সম্ভব এই তদন্ত সম্পন্ন করে প্রকৃত পরিস্থিতি দেশবাসীর সামনে তুলে ধরে এই বিতর্কের অবসান করা হবে।"
এর আগে রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে 'তহবিল স্থানান্তর' অভিযোগ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেছেন, "গরীব মানুষের রক্ত চুষে বেশি দিন টেকা যায় না সেটাই প্রমাণিত হয়েছে। এই অভিযোগের ভালোভাবে তদন্ত হওয়া উচিৎ।" ইউনূসকে নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন নেতার পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের সূত্র ধরে এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

মঙ্গলবার নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক প্রামাণ্যচিত্রে শান্তিতে নোবেলজয়ী ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংকের কোটি কোটি ডলার নিয়ম বহির্ভূতভাবে অন্য তহবিলে সরানোর অভিযোগ তোলা হয়। গ্রামীণ ব্যাংক অবশ্য ওই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে।

মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংকের তহবিল সরানোর অভিযোগ তদন্ত হওয়া উচিত। তিনি বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনের নামে ঋণ দিয়ে গরিব মানুষের রক্ত চুষে খাওয়া হচ্ছে। কোথাও গরিব মানুষের উন্নয়ন হয়নি। কীভাবে জনগণের টাকা নিয়ে ভোজভাজি হয়, এটাও একটা দৃষ্টান্ত।
প্রধানমন্ত্রী আজ রোববার তাঁর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। রাশিয়া, বেলজিয়াম ও জাপান সফর শেষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।আমাদের সময় পত্রিকার সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান প্রশ্ন করেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের মালিকানা আছে। কিন্তু কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। এ ব্যাপারে মুহাম্মদ ইউনূস নীরব থাকেন। এটাই তাঁর রক্ষাকবচ। গ্রামীণ ব্যাংক দিয়ে তিনি অনেক প্রতিষ্ঠান করেছেন। এখানে অনেক ফাঁকিবাজি আছে। তদন্ত হওয়া দরকার।’
এ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দরিদ্র মানুষকে দেখিয়ে শুধু টাকা আনা হলেও কোথাও তাদের উন্নয়ন হয়নি। মানুষকে ঋণ দিয়ে অর্থ চুষে খাওয়া—আমি এটা কখনোই সমর্থন করিনি। প্রতিবাদ করেছি।’ তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংককে এমনভাবে কবজা করা হয়েছে, যেন এটা ব্যক্তিসম্পত্তি। এরও তদন্ত হওয়া উচিত। গরিব মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে। ভালো ভালো কথা বলে গরিব মানুষের রক্ত চুষে খাওয়া হচ্ছে। এখন অনেক কিছুই বেরিয়ে আসছে। সেনানিবাসের বাড়ির প্রতি খালেদা জিয়ার যে ভালোবাসা, ড. ইউনূসেরও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতি সে রকম ভালোবাসা। তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক জনগণের সম্পত্তি। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংককে ভালোবেসে নিজের করা হচ্ছে। ইউনূস সাহেব গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতি ভালোবাসায় পড়ে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৮ সালে ব্যাংকটা বসে যাচ্ছিল। তখন সরকারের পক্ষ থেকে ৪০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। কিন্তু এটাকে এমনভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যেন ব্যক্তিসম্পত্তি। গ্রামীণফোন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘প্রথম প্রথম আমিও ধোঁকায় পড়েছিলাম। বলা হয়েছিল, গ্রামীণফোন চালু করে গরিব মহিলাদের উন্নয়ন করা হবে। তারা স্বাবলম্বী হবে। তাই গ্রামীণফোনের ব্যবসার অনুমোদন দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আর গরিব মহিলাদের ফোন নেই। গ্রামের মেয়েরা যে অবস্থায় ছিল, সে অবস্থাতেই আছে। মানুষকে নিয়ে এত ধোঁকাবাজি করা হচ্ছে—এটা কারও কাম্য নয়। এটারও তদন্ত হওয়া উচিত।’
নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক প্রামাণ্যচিত্রে শান্তিতে নোবেলজয়ী ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংকের ১০ কোটি ডলার নিয়মবহির্ভূতভাবে অন্য তহবিলে সরানোর অভিযোগ তোলা হয়। গ্রামীণ ব্যাংক অবশ্য এ অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলেছে।