Tuesday, June 26, 2012

কক্সবাজারের ৫০ গ্রাম পানিবন্দি, সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে কক্সবাজার জেলার উপকূলবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জেলার অনন্ত ৫০টি গ্রামের মানুষ।

রামু উপজেলার খুনিয়া পলাং এলাকায় একটি ব্রিজ বিধ্বস্ত হয়ে কক্সবাজার-টেকনাফের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা বিএম মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, রোববার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২১৫ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শনিবার রাতভর থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হলেও রোববার ভোর থেকে মুষলধারে বর্ষণ হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, মৌসুমী বায়ু প্রবল থাকায় সমুদ্র বন্দরগুলোকে তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত অব্যাহত রাখা হয়েছে। দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস, যা অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে সর্বোচ্চ ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হতে পারে। এবারের জুন-জুলাই মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে বলেও তিনি জানান।

টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান শফিক মিয়া বাংলানিউজকে জানান, ভারী বৃষ্টিপাতে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কেরুনতলী, উলুবনিয়া, লম্বাবিল, মহেশখালীয়া পাড়া, হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার, হোয়াব্রাং, পানখালী, লেচুয়া প্রাং, ক্যাং পাড়া, রঙ্গিখালী, আলীখালী, লেদা, জাদিমোরা, বাহারছরা ইউনিয়নের মাথাভাঙ্গা, কচ্চপিয়া, জাহাজপুরা, শীলখালী, টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া, চৌধুরী পাড়া, সাবরাং ইউনিয়নের নাফনদী সংলগ্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। 

বৃষ্টির কারণে কক্সবাজার টেকনাফ সড়কের রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ব্রিজ ভেঙে গেছে। এর কারণে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বিকল্পভাবে কোটবাজার হয়ে মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।

প্রশাসন এবং বিভিন্ন উপজেলা থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার হারবাং, কৈয়ারবিল, বরইতলী, কাকারা, ফাঁসিয়াখালী, লইক্ষ্যারচর, কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁও, ইসলামাবাদ, জালালাবাদ, পিএমখালী, ঝিলংজা, রামু উপজেলার চাকমারকুল, ফতেকার কুল, রাজারকুল, কাউয়ারখোপ ও কচ্ছপিয়া এলাকার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। মাতামুহুরী, বাঁকখালী, ঈদগাঁওসহ জেলার প্রধান প্রধান নদী ও খালের পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

একই সঙ্গে বিভিন্ন উপকূল ভাঙনের কবলে রয়েছে।

পরিকল্পনার অভাবঃ বর্ষার শুরুতেই ভাঙছে মেরিন ড্রাইভ

ভাঙছেই মেরিন ড্রাইভ। বর্ষার শুরুতে তীব্র ভাঙনের মুখে পড়েছে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক। বেশ কিছুদিন ধরে মেরিন ড্রাইভের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন শুরু হয়।

বাস্তবসম্মত পরিকল্পনার অভাবে এ অবস্থার কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই। এমনকি জিইও (বালুভর্তি বস্তা ফেলার ব্যবস্থা) দিয়েও ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না। এরই মধ্যে মেরিন ড্রাইভের অসংখ্য কালভার্ট দিয়ে পাহাড়ের পানি সাগরে ধাবিত হচেছ। অপর দিকে জোয়ারের তোড়ে প্রচন্ড ঢেউ এসে সরাসরি আঘাত করছে সড়কের এসব স্থানে। এতে সড়কের ভাঙন বাড়ছে। ফলে ভেঙে যাওয়া সড়ক রক্ষাণাবেক্ষণ করতে দিনরাত চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হচ্ছে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন (ইসিবি)।
জানা যায়, পর্যটন শিল্পের বিকাশ, বনজ সম্পদ সংরক্ষণ এবং সামুদ্রিক জ্বলোচ্ছাস থেকে রক্ষার জন্য মেরিন ড্রাইভ সড়কের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে যেমন গুরুত্ববহন করে তেমনি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চলতি বর্ষা শুরু হতেই মেরিন ড্রাইভ সড়কের হিমছড়ি নামক স্থান থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার জায়গায় অসংখ্য ভাঙন । যার ফলে সাগরের তীব্র ঢেউয়ের আঘাতে মেরিন ড্রাইভ সড়কটির অস্থিত্ব বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত বছরও বর্ষার সময় এ সড়কটি বিধ্বস্ত হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।

সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর রিয়াজ কালের কণ্ঠকে বলেন, সড়কটি সাগরের ঢেউ হতে রক্ষা করার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বিশেষ করে জিইও পদ্ধতি ব্যবহার করে ভাঙন ঠেকানোর জন্য সেনাসদস্যরা রাতদিন কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তিনি আরো জানান, গত বছর মেরিন ড্রাইভ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ছয় কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু গত অর্থ বছর ও চলতি অর্থ বছরে কোন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। এরপরও সেনাবাহিনীর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভাঙন রোধ করার জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি। তা না পেলে মেরিন ড্রাইভ রক্ষা করা কঠিন হতো। এদিকে সময়মতো টাকা না পেলে মেরিন ড্রাইভের কাজ আগামী তিন বছরের মধ্যে শেষ করাও সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মেরিন ড্রাইভ সড়কটি নির্মাণে নকশা ভুল ছিল বলে প্রতিবছর সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে এ সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়াও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যুরো অব রিসার্চ, টেষ্টিং এন্ড কনসালটেশনের (বিআরটিসি) কারিগরি সম্ভাব্যতা যাচাই-বাচাই যথাযথ ছিল না বলেও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

জানা যায়, ১৯৯৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রায় ১১৭ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন (ইসিবি) মেরিন ড্রাইভ প্রকল্পটির কাজ শুরু করে। ১৯৯৪ সালের জুলাইয়ে এটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে প্রকল্পটির আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। এরপর প্রায় ১৪৮ কোটি টাকা ব্যয় ধার্য করে প্রকল্পটি ফের সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থের সংকুলান না থাকায় ৮০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই প্রকল্পকে তিন ভাগে ভাগ করে তিন পর্বে সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৩ সালে প্রকল্পটি যখন হাতে নেওয়া হয় তখন জিনিসপত্রের দাম ছিল কম। এখন নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকল্পের খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ প্রকল্প এবং এর আশপাশে যাঁরা বিনিয়োগ করেছেন তাঁরা ধারণা করেন, দ্রুত ও নিয়মিত অর্থ বরাদ্দ দিলে দ্বিতীয় পর্বের কাজও এত দিনে অর্ধেকের বেশি শেষ হয়ে যেত। তাঁরা আরো মনে করেন, সরকার চাইলেই প্রকল্পটির জন্য বৈদেশিক সাহায্য নিয়ে তা দ্রুত সম্পন্ন করতে পারে।

এছাড়াও কক্সবাজার হতে ইনানীর মোহাম্মদ শফির বিল পর্যন্ত সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু ভাঙনের কবল থেকে এটি রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছেনা। প্রতিবছর বর্ষায় এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে।

মহেশখালী কুতুবদিয়ার বিস্তীর্ন অঞ্চল পানির নিচে

গত তিন দিনে আষাঢ়ের ধারাবাহিক বৃষ্টিপাত ও সমুদ্রে অমাবস্যার জোয়ারের প্রভাবে কক্সবাজারের উপকূলীয় দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী, কুতুবদিয়ার নিম্নাঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

অব্যাহত বৃষ্টি ও বেড়ি বাঁধের ভাঙ্গনের কারণে মহেশখালীর ধলঘাটায় অমানবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় চেয়াম্যান আহছান উল্লাহ বাচ্চু। কুতুবদিয়াতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন।
মহেশখালীর কালারমার ছড়ার বাসিন্দা সৈয়দুল কাদের বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, মহেশখালী  ধলঘাটায় অমাবশ্যার জোয়ারে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্রায় সহস্রাধিক বসতবাড়িতে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। ভেসে গেছে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের চিংড়ি পোনা।

গত ২৪ জুন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, ঝড়ো বৃষ্টি ও অমাবশ্যার জোয়ারে মহেশখালীর ধলঘাটায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্রায় সহস্রাধিক বসতবাড়ি জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। পাশাপাশি প্রায় ২০ টি চিংড়ি ঘের জোয়ারের পানিতে ডুবে যাওয়ার কারণে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের চিংড়ি পোনা ভেসে গেছে বলে জানা গেছে।

ধলঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহ বাচ্চু বাংলানিউজকে জানান, ঝড়ো হাওয়ার কারণে জোয়ারের পানি অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়ে সরাইতলা ও নয়াঘোনা এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে পুরো ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। সরাইতলাসহ বিভিন্ন এলাকায় এক হাজারেরও বেশি বসতবাড়ি এখন পানির নিচে।

ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় অনেক বাসিন্দা এখন সাইক্লোন শেল্টার সেল্টারে অবস্থান নিয়েছে। সদ্য নির্মিত বেড়িবাঁধে দেওয়া ব্লকগুলো উপড়ে গেছে। মানুষ আতংকিত হয়ে পড়ায় ইতিমধ্যে ধলঘাট ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যেতে শুরু করেছে।

সুতরিয়া ইউপি সদস্য  আনসার উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, এই ওয়ার্ডের সাইক্লোন সেল্টারগুলো চরম ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় মানুষ আশ্রয় নিতে পারছে না।

চিংড়ি মৌসুমের শুরুতে ঘের গুলোতে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ায় চাষীরাও দিশেহারা হয়ে পড়েছে। জোয়ারের পানি ও ঝড়ো হাওয়ায় এই ওয়ার্ডের প্রায় অর্ধশত বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাছাড়া মহেশখালীর পৌরসভা, কুতুবজোম, তেলীপাড়াসহ দুটি প্রধান সড়কে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে বিদুৎ বিতরণেও সমস্যা হয় বলে স্থানীয় বিদুৎ অফিস সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে কুতুবদিয়ায় বেড়িবাঁধের ভাঙ্গন ও বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ না থাকায় দ্বীপের নিম্মাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। ৬টি ইউনিয়নের ১৭টি জায়গায় বেড়িবাধ ভাঙ্গা থাকায় সমুদ্রের জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে।

কুতুবদিয়ার কৈয়াবিল এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান আজমগীর মাতব্বর সাংবাদিকদের জানান, এমন অবস্থায় তার এলাকায় বেড়িবাঁধের বাইরে পরাণ সিকদার পাড়া, মহাজন পাড়া, ঘিলাছড়ি, বিন্দাপাড়া, মফজল ডিলার পাড়ায় বাসিন্দা ৫শ’ পরিবারের ৫ হাজার লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এসব এলাকার তিন হাজারের মত লোক বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাছাড়া আলীআকবর ডেইল তবলার চর, কুমিরার ছড়ি, জাইল্যা পাড়া এলাকায় বেড়িবাঁধ না থাকায় ফসলি জমিতে লোনা পনি ঢুকে পড়েছে। তাছাড়া আনিছের ডেইল, পূর্ব তবলার চরের ব্যাপক এলাকা তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। একইভাবে লেমশিখালী, পেয়ারাকাটা, বড়ঘোপের আজম কলোনি, দক্ষিণ আজমখালী, উত্তর দ্রুং, ফয়জনের বাপের পাড়াসহ দ্বীপের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

রোববার রাত সাড়ে ৯ টায় মহেশখালীর ধলঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহছান উল্লাহ বাচ্চু বাংলানিউজকে জানান, তার এলাকায় ব্যাপক ভাবে সমুদ্রের পানি ঢুকে পড়ায় এক প্রকার মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিএম কাউছার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, তারা ক্ষয়ক্ষতির যথাযথ তথ্য বিস্তারিতভাবে  জানতে না পারায় সাহায্যের কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।

মিয়ানমার সীমান্তে ৮ দিন ধরে বাণিজ্য বন্ধ

টেকনাফ সীমান্তে মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য এবং ট্রানজিট ৮ দিন ধরে অঘোষিতভাবে বন্ধ রয়েছে। গত ১৭ জুন ৯০ টন হিমায়িত রুই মাছ নিয়ে একটি ট্রলার স্থলবন্দরে আসে।

এরপর থেকে আর কোনো পণ্যবাহী জাহাজ বন্দরে আসেনি। মিয়ানমারের জাতিগত সংঘাতের পরবর্তী পরিস্থিতি এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে এ অবস্থা দেখা দিয়েছে। এতে দৈনিক গড়ে প্রায় ৩০ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা বাংলানিউজকে জানান, ১৯৯৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর টেকনাফ-মিয়ানমারের সীমান্ত বাণিজ্য চালু করা হয়। এর পর থেকে উভয় দেশের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পণ্যসামগ্রী আমদানি রফতানি বাণিজ্য চলতে থাকে। এবারই প্রথমবারের মতো কোনো কারণে অনেকদিন ধরে সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে।

সরেজমিন টেকনাফ স্থলবন্দর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বন্দরের জেটিতে একটি মাত্র ট্রলার নোঙর অবস্থায় রয়েছে।

ব্যবসায়ী এম আবছার সোহেলের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স শফি অ্যান্ড ব্রাদার্সের মাধ্যমে গত ১৭ জুন ৯০ টন হিমায়িত রুই মাছ নিয়ে একটি ট্রলার স্থলবন্দরে আসে। মাছভর্তি ট্রলারটি পণ্য খালাস করা হলেও সাগর উত্তাল থাকায় মিয়ানমারে আর ফিরে যেতে পারেনি।

এদিকে, ৮ দিন ধরে অঘোষিতভাবে সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা কাজের অভাবে বেকার জীবন-যাপন করছেন।

টেকনাফ স্থলবন্দরের অভিবাসন কেন্দ্র ও কায়ুকখালীয়া খালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) নিয়ন্ত্রণাধীন একদিনের ট্রানজিট ঘাট দিয়ে ৮ জুনের দাঙ্গার পর থেকে যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। মিয়ানমার থেকে আসা আটকে পড়া ব্যবসায়ীরা স্বদেশে ফিরে যেতে স্থলবন্দরের অভিবাসন কেন্দ্রে ভিড় করছেন।

টেকনাফ স্থলবন্দরের অভিবাসন কেন্দ্রের কর্মকর্তা আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বাংলানিউজকে জানান, মিয়ানমার সরকার অঘোষিতভাবে নৌপথ বন্ধ রাখায় এখনও বাংলাদেশি ৪ নাগরিক আব্দুল জলিল, আবু বক্কর, রিয়াজ উদ্দিন ও জসিম উদ্দিন মিয়ানমারে আটকা পড়ে আছেন। তাদের ফেরত পাঠানোর জন্য একাধিক চিঠি পাঠানো হয়েছে।

নাসাকাবাহিনী ও মিয়ানমার অভিবাসন কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে যোগাযোগ করে একটি ট্রলারে করে  রোববার ২৬ জনকে মিয়ানমারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) টেকনাফের ৪২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. জাহিদ হাসান বাংলানিউজকে জানান, মিয়ানমারে জাতিগত দাঙ্গার পর থেকে ৮ দিন ধরে টেকনাফ-মিয়ানমারে একদিনের ট্রানজিট বন্ধ রয়েছে।

টেকনাফ স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর বাংলানিউজকে বলেন, “৮ দিন ধরে সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ থাকায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।” আমদানি ও রফতানিকারকদের দৈনিক কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।

ইউনাইটেড ল্যান্ডপোর্ট টেকনাফ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক আব্দুল মোহাইমেন বাংলানিউজকে বলেন, “মিয়ানমারের জাতিগত সংঘাতের কারণে দু’দেশের সীমান্ত বাণিজ্য অঘোষিতভাবে বন্ধ রয়েছে।”

টেকনাফ শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তা কাজী আবুল হোসাইন বাংলানিউজকে জানান, মিয়ানমারের জাতিগত দাঙ্গার কারণে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় দৈনিক ৩০ লাখ টাকা করে কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

টেকনাফে বেড়িবাঁধে ভাঙন, পানিবন্দী শতাধিক পরিবার

সামুদ্রিক জোয়ারের তোড়ে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ ও নাজির পাড়ার প্রায় এক কিলোমিটা বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। ফলে জোয়ারের পানি ঢুকে জালিয়াপাড়া, কোনারপাড়া, মিস্ত্রিপাড়াসহ বেশ কয়েকটি প্লাবিত হয়েছে।

পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েকশ’পরিবার। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও অমাবস্যার জোয়ারে নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরে পানি বেড়ে যায়। এতে উপকূলীয় এলাকায় পানি ঢুকে এলাকার রাস্তা ঘাট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মকতব, চিংড়ি ঘের, ফসলি জমি, বসত বাড়ি প্লাবিত হয়। এমনকি  উপকূলীয় এলাকাবাসীকে ঘর-বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হচেছ।
সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, বঙ্গোপসাগর ও নাফনদী বেড়িবাঁধের কিছু এলাকায় ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। যেকোনো মুহূর্তে শাহপরীরদ্বীপ বঙ্গোপসাগরে বিলীন হয়ে যেতে পাড়ে বলে আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।

কর্মশালায় ইসি সচিবঃ রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না

‘অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের কোনো অবস্থাতেই ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। এ ব্যাপারে সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’

গত রোববার কক্সবাজার শহরের একটি হোটেলে হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রণয়নসংক্রান্ত দিনব্যাপী কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব মোহামঞ্চদ সাদিক এসব কথা বলেন। মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশন ছবিযুক্ত নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন করেছিল। এখন সেই তালিকা হালনাগাদের কাজ চলছে। এই তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন ১০ মার্চ থেকে সারা দেশে ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণের কাজ শুরু করে। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাপ্রধান অঞ্চল হিসেবে কক্সবাজার, বান্দরবান ও রাঙামাটি জেলাকে বিশেষ অঞ্চল ঘোষণা দিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের এ কাজ চলছে। আগামী ১ জানুয়ারি যাঁদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তাঁদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ ছাড়া যেসব ভোটারের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে।
নির্বাচন কমিশন আয়োজিত কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব ও এসইএমবির জাতীয় প্রকল্প পরিচালক সিরাজুল ইসলাম, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব এন আই খান, জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আখতারুজ্জামান সিদ্দিকী প্রমুখ। কর্মশালায় জেলার সাতটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, নির্বাচন কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।

সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা লুট

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার লক্ষারচর ইউনিয়নের জিদ্দাবাজার এলাকায় গত শনিবার রাতে একটি মাইক্রোবাস থামিয়ে সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা লুট করেছে একদল লোক।

এর সাত লাখ টাকা পুলিশ উদ্ধার করলেও বাকি টাকার হদিস পাচ্ছে না। পুলিশ ও স্থানীয় ব্যক্তিরা জানায়, শনিবার রাত ১১টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে আসা একটি মাইক্রোবাস জিদ্দাবাজার এলাকায় পৌঁছালে ২০-৩০ জন লোক বাসটি থামায়।

এখনো আসছে রোহিঙ্গারা

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকছে। দিনের বেলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ড বাহিনীর সদস্যরা সীমান্ত ও নাফ নদীতে তত্পর থাকেন।

তাই অনুপ্রবেশের জন্য রোহিঙ্গারা রাতের অন্ধকারকেই বেছে নিচ্ছে। টেকনাফ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিক মিয়া জানান, দিনের বেলায় রোহিঙ্গারা ছোট ছোট নৌকা নিয়ে নাফ নদীতে অবস্থান করে। রাতের বেলায় তারা বাংলাদেশ সীমান্তে এসে নদী সাঁতরে বাংলাদেশে ঢোকে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত তিন দিনে উপজেলার নীলা, জাদিমুরা, শাহপরীর দ্বীপ, জালিয়াপাড়া, সাবরাংসহ ১০-১২টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে পাঁচ শতাধিক রোহিঙ্গা ঢুকে বিভিন্ন লোকজনের বাড়িতে আত্মগোপন করেছে।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুল হক জানান, সীমান্তে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অবৈধভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেওয়ার সময় বহু রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। অন্যদেরও আটক করা হবে। গত কয়েক দিন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে স্থানীয় পাঁচজনকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বিজিবির টেকনাফ ৪২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. জাহিদ হাসান জানান, মিয়ানমারে জাতিগত দাঙ্গার পর থেকে রোহিঙ্গারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা চালাচ্ছে। ১৬ দিনে প্রায় এক হাজার রোহিঙ্গাকে আটক করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে।