Wednesday, June 20, 2012

শরণার্থী দিবস পালন করছে না কক্সবাজারের রোহিঙ্গারা

আজ ২০ জুন বিশ্ব শরণার্থী দিবস। বিগত বছরগুলোতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো কক্সবাজারে অবস্থিত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীরাও দিবসটি পালন করে আসছিলেন।

সম্প্রতি মিয়ানমারে আরকানে রোহিঙ্গা মুসলিম ও রাখাইনদের মধ্যে দাঙ্গা সৃষ্টি হওয়ায় বিশ্ব শরণার্থী দিবসের আয়োজন করছেন না রোহিঙ্গা শরণার্থীরা।
অনেকে মতে, বিশ্ব শরণার্থী দিবস রোহিঙ্গাদের ভাগ্য পরিবর্তনের বড় কোনো আবেদন না থাকায় রোহিঙ্গারা এ দিবস উদযাপনে অনাগ্রহী হয়ে পড়েছে।

অপরদিকে আবারো আরকানে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর রাখাইনদের সহিংসতা চলছে। যেকোনো ধরনের অনুপ্রবেশের বিরোধিতা করছে স্থানীয় বাংলাদেশীরা। তারা মনে করছে রোহিঙ্গাদের কারণে সমগ্র কক্সবাজারে আর্থসামাজিক অবস্থার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

এ ব্যাপারে রোহিঙ্গা শরণার্থী যুবক মুজিবুর রহমানের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, আমি ১৯৯১ সালে মা-বাবার সঙ্গে মিয়ানমার সামরিক জান্তার অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে আশ্রায় নিই। বাংলাদেশ সরকার বলছে আমরা মিয়ানমারে রোহিঙ্গা, অপরদিকে মিয়ামান সরকার বলছে আমরা বাঙালি। মাঝখানে আমরা দেশবিহীন জাতি পরিণত হয়েছি।

সরেজমিন পরিদর্শনে জানা গেছে, কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে এক হাজার ১৯৮ পরিবারে ১০ হাজার ১৬১ জন এবং টেকনাফের নয়াপাড়া শরনার্থী শিবিরে এক হাজার ৭৭১ পরিবারের ১৪ হাজার ৭২১ জনসহ প্রায় ২৫ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছে।

তবে ইউএনএইচসিআর’র সূত্র মতে, দুটি শিবিরে শিশুসহ বৈধ শরণার্থীর সংখ্যা ২৮ হাজারেরও বেশি। এছাড়া উখিয়া-টেকনাফের দু’টি নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের প্রায় ২৮ হাজার রোহিঙ্গা ছাড়া টেকনাফের লেদা অনিবন্ধিত ২২ হাজার আর উখিয়া কুতুপালং ক্যাম্পের পাশ্ববর্তী লক্ষাধিক অনিবন্ধিত শরণার্থী রছে। এছাড়া কক্সবাজার, বান্দবন ও চট্রগ্রাম জেলায় আরো চার লাখ রোহিঙ্গা অবৈধ বসবাস করছে।

সম্প্রতি আরকান রাজ্যে আবারো রোহিঙ্গা মুসলিম ও রাখাইনদের মধ্যে সহিংসতা সৃষ্টি হওয়ায় অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ১৯৯২ সালের শুরুর দিকে মিয়ানমারে তৎকালীন সামরিক জান্তা সরকারের নির্যাতনের শিকার হয়ে দুই লাখ ৫২ হাজার রোহিঙ্গা  বাংলাদেশে চলে এসেছিল।

পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের মধ্যস্থতায় দুই লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৯ জন শরণার্থী স্বদেশে ফিরে গেলেও মিয়ানমার সরকারের ছাড়পত্র না দেয়ার কারণে আরো ২৫ হাজার শরণার্থী দেশে ফেরত যায়নি। সর্বশেষ ২০০৫ সালে ২৯ জনের শরণার্থী দল স্বদেশে গিয়েছিল, তারা আবার বাংলাদেশে ফিরে আসে।

গত চার বছরে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ফিরে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অবৈধভাবে অবস্থান করছে কুতুপালং শরণার্থী শিবির সংলগ্ন চার-পাঁচটি পাহাড়ে। এছাড়া নয়াপাড়া ক্যাম্প সংলগ্ন লেদা গ্রামে অবস্থান করছে প্রায় ২০ হাজার রোহিঙ্গার সবাই অনিবন্ধিত শরণার্থী। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই বিপুলসংখ্যক বৈধ অবৈধ রোহিঙ্গার কারণে উখিয়া টেকনাফে দেখা দিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা অবনতিসহ নানা সামাজিক অস্থিরতা। রোহিঙ্গারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে এদেশের মূল জনগোষ্ঠীর মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। এই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা কক্সবাজারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

টেকনাফ উপজেলা নিবার্হী অফিসার আনম নাজিম উদ্দিন বার্তা২৪ ডটনেটকে জানান, ‘বর্তমান সরকার দ্বি-পাক্ষিক কুটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন কার্যক্রম আবারো শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।’

সম্প্রতি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির ও শাহপরী দ্বীপ সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউএনএইচসিআর এর প্রতিনিধি ক্রেইক সেন্ডাস। সেখানে তিনি ইউএনএইচসিআর এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে সার্বিক বিষয়ে কথা বলেন। পরে তিনি টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের যে পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছিল-সেসব স্থান পরিদর্শন করেন।

এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “মিয়ানমারের জাতিগত দাঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা শান্ত করতে প্রথমে মিয়ানমারকেই উদ্যোগ নিতে হবে।”

স্থানীয়রা মনে করেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন বন্ধ থাকার সুযোগে আরো নতুন নতুন রোহিঙ্গা আসার সুযোগ পাচ্ছে। এভাবে আরো রোহিঙ্গা আসতে থাকলে এই অঞ্চলে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

No comments:

Post a Comment