Tuesday, January 11, 2011

অ্যাসাঞ্জসহ উইকিলিকস-সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে তথ্য চায় যুক্তরাষ্ট্র

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জসহ উইকিলিকসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পাঁচ ব্যক্তির বিস্তারিত ব্যক্তিগত তথ্য জানাতে জনপ্রিয় মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারকে নির্দেশ দিয়েছে মার্কিন সরকার। আদালতের নথি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ, উইকিলিকসের কাছে গোপনীয় নথিপত্র পাচারের জন্য অভিযুক্ত এক মার্কিন সেনা, আইসল্যান্ডের একজন এমপি ও দুজন কম্পিউটার বিশেষজ্ঞের ব্যক্তিগত বার্তা, যোগাযোগের তথ্য, ব্যাংক হিসাব নম্বর ও অন্যান্য ব্যক্তিগত বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়েছেন। ভার্জিনিয়ায় মার্কিন ডিস্ট্রিক্ট আদালতের একজন বিচারক এসব ব্যক্তিগত তথ্য হস্তান্তর করার জন্য টুইটারকে নির্দেশ দেন।
এ সম্পর্কে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে টুইটার। তবে সাইটটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোম্পানির নীতি হচ্ছে, সরকার যদি এ ধরনের কোনো অনুরোধ জানায়, তাহলে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীকে জানানো হয়।
অ্যাসাঞ্জের ধারণা, তথ্য দেওয়ার জন্য ফেসবুক ও গুগলকেও এ ধরনের অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ওই দুই কোম্পানি। আদালতের এ ধরনের নির্দেশে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ও আইসল্যান্ডের পার্লামেন্ট সদস্য বিরগিত্তা জোন্সদোত্তির। আদালতের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।
অ্যাসাঞ্জ মার্কিন সরকারের বিরুদ্ধে ‘হয়রানি’র অভিযোগ তুলেছেন। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ইরান সরকার যদি সাংবাদিক, বিদেশি মানবাধিকারকর্মীর কাছ থেকে জোরপূর্বক এসব তথ্য আদায়ের চেষ্টা করে, তাহলে সারা বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ নিয়ে কথা বলবে।
দুই লাখ ৫০ হাজার গোপনীয় কূটনৈতিক তারবার্তা প্রকাশের ঘটনায় অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র।
আদালতের আদেশে যাঁদের সম্পর্কে তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে মার্কিন সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিশ্লেষক ব্র্যাডলি ম্যানিং, ডাচ্ হ্যাকার রোপ গনগ্রিগ্রিজপ ও মার্কিন কম্পিউটার প্রোগ্রামার জ্যাকব অ্যাপেলবাউমের নাম রয়েছে।
জোন্সদোত্তির তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার জন্য টুইটারকেই বেছে নেন। তিনি বলেন, ২০০৯ সালের ১ নভেম্বর থেকে তাঁর সব টুইট সম্পর্কে জানতে চেয়েছে মার্কিন সরকার। তিনি বলেন, ‘তারা কি বুঝতে পারছে যে আমি আইসল্যান্ডের পার্লামেন্টের সদস্য?’
এই এমপি বলেন, আদালতের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য তাঁর হাতে ১০ দিন সময় রয়েছে। জোন্সদোত্তির আবারও বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের কোনো তথ্য হস্তান্তর করার কোনো ইচ্ছাই তাঁর নেই।
ফাঁস হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ: এদিকে উইকিলিকস শত শত মানবাধিকারকর্মী, বিভিন্ন দেশের সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীর পরিচয় ফাঁস করে দেওয়ায় তাঁদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। তাঁদের নিরাপত্তার ব্যাপারে সম্ভাব্য সব কিছু করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে দেশটির পক্ষ থেকে। ইতিমধ্যে তাঁদের অল্প কয়েকজনকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত বৃহস্পতিবার এ কথা জানানো হয়েছে।
মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আফগানিস্তান থেকে জিম্বাবুয়ে পর্যন্ত মার্কিন দূতাবাসকর্মীদের কাছে যেসব বিদেশি মার্কিন স্বার্থসংশ্লিষ্ট মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করত, উইকিলিকস তাদের অনেকের পরিচয় প্রকাশ করে দিয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি ওই বিদেশি ব্যক্তিদের জীবনেও নিরাপত্তার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য মার্কিন কর্মকর্তারা স্বীকার করেন, পরিচয় প্রকাশ হয়ে যাওয়া কেউ হামলার শিকার হয়েছেন—এমন তথ্য তাঁরা এখনো পাননি। তবে তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ওই ঘটনার পর অনেক ভিন্নমতাবলম্বী নিজ নিজ সরকারের হাতে হেনস্তা হচ্ছেন। যাঁদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, তাঁদের ব্যাপারে কিছু জানাতে অস্বীকার করেন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা।
উইকিলিকস এ পর্যন্ত প্রায় আড়াই লাখ গোপন মার্কিন তারবার্তা প্রকাশ করেছে। এ ঘটনার পর অনেক ক্ষেত্রে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে মার্কিন সরকার এবং এর সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন দেশের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে। টেলিগ্রাফ ও বিবিসি।

No comments:

Post a Comment