Thursday, December 30, 2010

যুবলীগের সংঘর্ষে তিনজন নিহত

পৌর নির্বাচন নিয়ে সরকার সমর্থক যুবলীগের দুই গ্র"পের সংঘর্ষে ঝিনাইদহ শহরে তিনজন নিহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে শহরের পবহাটি চৌরাস্তা মোড়ে দুই গ্র"পের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। নিহতরা হলেন- ভুটিয়ারগাতি গ্রামের বজলুর রহমান (৪০), পবহাটি এলাকার আলমগীর হোসেন ওরফে আলম (৩৫) ও সোহান ওরফে সোহাগ (২৭)।
এরা তিনজন স্থানীয় যুবলীগের কর্মী বলে জানিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট (এসপি) মো. রেজাউল করিম। এসপি জানান, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আগে থেকেই পবহাটি এলাকার যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীরের সঙ্গে মাসুদ গ্র"পের বিরোধ চলে আসছিলো।

আসন্ন পৌর নির্বাচনে মাসুদ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রার্থী জাহিদুল ইসলামের পক্ষ নেন। অপরদিকে জাহাঙ্গীর গ্র"প আরেক প্রার্থী আকতার হোসেনকে সমর্থন করে। এ নিয়ে রাত সাড়ে ৭টার দিকে দুই গ্র"পের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষের সময় প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জাহাঙ্গীরের বড় ভাই আলমগীর এবং মাসুদ গ্র"পের বজলু ও সোহান গুরুতর জখম হন।

পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আহতদের ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর আলমগীর ও বজলুর রহমান মারা যান। ঢাকা নেওয়ার পথে মারা যান সোহান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে এসপি জানান। জেলা যুবলীগের নজরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মাসুদ পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক। জাহাঙ্গীর কোনো পদে নেই।

তিনি আরো বলেন, নিহতরা দুই জনের সমর্থক ছিলেন। এটা রাজনৈতিক কোন ঘটনা নয়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ চলছিলো। এর মধ্যে পৌর নির্বাচনে তারা দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষ নেয়। ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান বলেন, "এটা কোনো রাজনৈতিক ঘটনা নয়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মাসুদ ও জাহাঙ্গীরের সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়েছে।"

টিআইবি'র উপাত্ত পর্যালোচনায় সুপ্রিম কোর্টের কমিটি

সুপ্রিম কোর্টকে টিআইবি'র দেওয়া সর্বশেষ জরিপের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনায় চারজন বিচারপতিকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের একজন শীর্ষ কর্মকতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সুপ্রিম কোর্টের ওই কর্মকর্তা জানান, বুধবার বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বে চারজন বিচারপতিকে নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি জানান, ইত্যেমধ্যে ওই কমিটি টিআইবির দেওয়া তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা শুরু করেছে।

গত বৃহস্পতিবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) প্রকাশিত এক জরিপে বলা হয়, সেবা খাতের মধ্যে বিচার বিভাগেই দুর্নীতি বেশি হয়। এর মধ্যে ঘুষ লেনদেন বেশি হয় উচ্চ আদালতে। গত মঙ্গলবার ওই জরিপের সংশ্লিষ্ট তথ্য চেয়ে টিআইবিকে চিঠি দেয় দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

বৃহস্পতিবারই জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, "টিআইবির জরিপ দুর্নীতির সার্বিক চিত্র নয়। এটা আংশিক চিত্র। দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা আরো অনেক বেশি।"

রোববার চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় দুটি মামলায় টিআইবিপ্রধান এম হাফিজউদ্দিন খান, নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ও গবেষক ওয়াহিদ আলমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। কুমিল্লার যে মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয় সেটি সেদিন সন্ধ্যায় আবার বাতিল করে আদালত।

এছাড়া চট্টগ্রামে টিআইবিপ্রধান হাফিজউদ্দিন খানসহ তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আরো দুটি মামলা হয়। ওই দুই মামলায় তাদের জানুয়ারি মাসের দুটি আলাদা তারিখে আদালতে সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই জরিপ প্রসঙ্গে রোববারই আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, "কিছু লোকের দোষ পুরো বিচার বিভাগের ওপর চাপানো হয়েছে।"

পৌরসভা ও উপ-নির্বাচন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অগি্নপরীক্ষা ___বিএনপি

বিএনপি নেতারা বলেছেন, আসন্ন পৌরসভা ও দু'টি সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের জন্য অগি্নপরীক্ষা । বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তাই বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশন নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করার চক্রান্ত করতে পারে জেনেও গণতন্ত্রকে নিরাপদ ও শক্তিশালী করার প্রত্যয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নবীগঞ্জ-বাহুবলের উপ-নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা বলেন, বিচার বিভাগকে দলীয় আদালতে পরিণত করায় টিআইবির রিপোর্ট সঠিক।

গতকাল বুধবার বিকালে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে একথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এসময় মঙ্গলবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্তসমূহ পাঠ করে শোনান তিনি। বৈঠকের সিদ্ধান্তে বলা হয়, প্রবীণ নেতা বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন, সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, সাবেক ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকীকে জনগণের চোখে হেয় ও রাজনৈতিক কারণে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে বানোয়াট মামলা করা হয়েছে। সভায় এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এমপিকে রিমাণ্ডে নিয়ে দৈহিকভাবে নির্যাতন এবং নতুন করে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তার আশু মুক্তি ও নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়।

একই সঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সভাশেষে দলের মনোনয়ন বোর্ড এই দুই আসনে দলীয় প্রার্থী দেয়ার ক্ষমতা দলের চেয়ারপারসনকে প্রদান করে। সভা আশা করে যে, নির্বাচনের সঙ্গে সংশিস্নষ্ট সকল মহল অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সকল বাধা দূর করবে এবং ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে তা নিশ্চিত করবে।

স্থায়ী কমিটির সভা আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে সব ধরনের সহিংসতা, কারচুপি, সন্ত্রাস ও ভোট ডাকাতি রোধের কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনসহ সংশিস্নষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানায়।

সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এড. আহম্মদ আজম খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এরশাদের বিচার হতেই হবেঃ সপ্তম সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ে হাইকোর্ট

সামরিক শাসন জারির জন্য এইচ এম এরশাদ ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার সমান অপরাধ করেছেন। এ জন্য তাঁর ও তাঁর সহযোগীদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। শুধু এরশাদই নন, এর আগে ১৯৭৫ সাল থেকে যাঁরা সামরিক শাসন জারি করে দেশ চালিয়েছেন এবং তাঁদের মধ্যে যাঁরা এখনো জীবিত আছেন, তাঁদের বিচারও হতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে কেউ সামরিক শাসন জারি বা জারির চেষ্টা করতে না পারেন, সে জন্যই তাঁদের প্রত্যেকেরই বিচার হওয়া উচিত।

সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী বাতিল করে দেওয়া হাইকোর্টের রায়ে এসব কথা বলা হয়েছে। গত ২৬ আগস্ট দেওয়া রায়ে সংবিধানের সপ্তম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এ-সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ রায় গতকাল বুধবার প্রকাশ করা হয়েছে।
বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের বেঞ্চ এ রায়ে স্বাক্ষর করেছেন।
যেসব বিচারক সামরিক শাসকদের সহযোগিতা করবেন তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
রায়ে বলা হয়েছে, দণ্ডবিধির ১২১ ক (রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র), ১২৪ (কোনো আইনানুগ ক্ষমতা প্রয়োগে বাধ্য করার বা বাধা দান করার অভিপ্রায়ে রাষ্ট্রপতি, গভর্নর প্রমুখ ব্যক্তিকে আক্রমণ করা) ও ১২৪ ক (রাষ্ট্রদ্রোহ) ধারা অনুযায়ী এরশাদ অপরাধ করেছেন, বিষয়টি প্রতিষ্ঠার জন্য সাক্ষ্যপ্রমাণ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখবে সংসদ।
আদালতের রায়ে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের নজির উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এরশাদসহ এ দেশে অন্য সামরিক শাসকদের আমাদের ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
রায়ে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে যাতে কেউ সামরিক শাসন জারি করার সাহস না পান সেজন্য সামরিক শাসকদের শাস্তির ব্যবস্থা করে নির্ভুল আইন প্রণয়ন করতে হবে। বারবার সামরিক শাসন জারির ফলে দেশে, সমাজে দুর্নীতি ও অস্ত্রবাজি বাড়ে বলেও রায়ে বলা হয়।
রায়ে বিশ্বের সামরিক শাসক সুহার্তো, পিনোসে, গর্টিয়ারি, ইদিআমিন, আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া, জিয়াউল হক ও পারভেজ মোশাররফের পরিণতির কথা উল্লেখ করে বলেন, তাঁদের ভাগ্যে কী ঘটেছিল তাও সামরিক শাসকদের খতিয়ে দেখা উচিত। দিনের শেষে সামরিক শাসকদের এমনই পরিণতি বরণ করতে হয়। এ কারণে আমাদের দেশের সামরিক শাসকদেরও ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে বিচারের ব্যবস্থা করা জরুরি।
রায়ে আরো উল্লেখ করা হয়, এরশাদ প্রত্যক্ষভাবে সংবিধানের কোনো মূল স্তম্ভ ধ্বংস করেননি। তবে জিয়াউর রহমান যেভাবে সংবিধানের মূল স্তম্ভ ধ্বংস করেছেন তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে তিনি সংবিধান ধ্বংসের অপরাধ করেছেন যা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধের শামিল। তিনি জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা ও জনগণের সাংবিধানিক অধিকার পদদলিত করে বাংলাদেশের সংবিধান দীর্ঘ চার বছর স্থগিত রেখেছিলেন। এর ফলে সামরিক আদালত বা ক্যাঙ্গারু আদালতের মাধ্যমে দেশে বিচার চলেছে।
আদালত রায়ে বলেন, দেশে সামরিক শাসনের দ্বার উন্মোচন করেন খন্দকার মোশতাক আহমদ ও জিয়াউর রহমান। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় রাজাকারদের চক্রান্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর সংবিধানের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেন মোশতাক-জিয়াচক্র। তাঁরাই সামরিক শাসনের মাধ্যমে সংবিধানের প্রতি প্রথম কুঠারাঘাত করেন।
রায়ে উল্লেখ করা হয়, জিয়া শুধু সামরিক আইন প্রণয়ন করেই ক্ষান্ত হননি। তিনি সংবিধানের দুটি মূল স্তম্ভ ধর্ম নিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ ধ্বংস করে দিয়েছেন। সাম্প্রদায়িকতার দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি বাঙালি থেকে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ প্রচলন করেন।
রায়ে উল্লেখ করা হয়, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনা ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদকে প্রতিষ্ঠিত করা। এ জন্য আপামর জনসাধারণ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতীয়তাবাদকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেন। অথচ জিয়া সামরিক কায়দায় ক্ষমতায় গিয়ে এই তত্ত্বটি ধূলিসাৎ করে দেন। দেশের জনগণের পাসপোর্ট ও অন্যান্য দলিলপত্রের কারণে আপাতত বাঙালি জাতীয়তাবাদ সংবিধানে পুনঃ প্রতিষ্ঠিত না হলেও অচিরেই বাঙালি জাতীয়তাবাদ আবার সংবিধানে ফিরে আসবে বলে রায়ে আশা করা হয়েছে।
রায়ে বলা হয়, যে ‘জয় বাংলা’ ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার উদ্দীপক স্লোগান, তা পাল্টিয়ে জিয়াউর রহমান পাকিস্তানি কায়দায় ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ প্রচলন করেন। তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন রাজাকার শাহ আজিজুর রহমানকে দেশের প্রধানমন্ত্রী, আরেক শীর্ষ রাজাকার কর্নেল মোস্তাফিজুর রহমানকে পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে এনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে বসান। এ ছাড়াও বাংলাদেশবিরোধী লোকজনকে দেশের উচ্চতর পদমর্যাদায় বসিয়েছিলেন।
যেখানে পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণ করেছিল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ভাষণ দিয়েছিলেন সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সেসব স্মৃতি মুছে ফেলার জন্য জিয়াউর রহমানের সময় সে স্থানটি শিশু পার্কে পরিণত করা হয় বলে রায়ে অভিমত জানান আদালত।
‘আমি রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতি কঠিন করে দেব’ জিয়ার এ বক্তব্য উদ্ধৃত করে রায়ে বলা হয়, তিনি বহু অপ্রত্যাশিত ব্যক্তিকে রাজনীতিতে নিয়ে আসেন। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে উচ্চ মর্যাদায় চাকরি দেন।
সংবিধান সংশোধনী বিষয়ে আদালত রায়ে বলেন, হাইকোর্ট কোনো আইন অবৈধ ঘোষণা করলে এমনিতেই তা বাতিল হয়ে যায়। এ জন্য সংশোধনীর জন্য তা সংসদে উত্থাপন করার প্রয়োজন নেই। কারণ হাইকোর্ট আইন প্রণয়ন করে না বরং সংবিধানের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ হলে তা বাতিল করে। এটি হাইকোর্টের চিরন্তন ক্ষমতা।
সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী-সংক্রান্ত রায়কে একটি বৈপ্লবিক রায় উল্লেখ করে আদালত বলেন, সংসদ ছাড়া আইন প্রণয়ন করার ক্ষমতা কারোর নেই। সংসদই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আইন প্রণয়ন করতে পারে।
রায়ে আরো বলা হয়েছে, সংবিধানের ১৫০ অনুচ্ছেদে মুজিবনগর সরকার গঠন থেকে সংবিধান কার্যকর করার সময় পর্যন্ত গৃহীত সমস্ত কাজকে ক্রান্তিকালীন বিধান হিসেবে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে সামরিক শাসকরা তাঁদের অবৈধ কাজকে ওই অনুচ্ছেদে যুক্ত করে বৈধতা দিয়েছেন। এই অনুচ্ছেদে ভবিষ্যতে কোনো বিধান যুক্ত করার পথ চিরতরে বন্ধ করা হলো। কোনো সংসদ সংবিধানপরিপন্থী কোনো আইন পাস করতে পারে না এবং বৈধতা দিতে পারে না। সামরিক আইন, আদেশ অবৈধ হওয়ায় এর অধীনে জারি করা সমস্ত কাজ, ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা এবং সেই আদালতে বিচারও অবৈধ।
এরশাদের সামরিক শাসনের সময় চট্টগ্রামের একটি সামরিক আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত সিদ্দিক আহমেদের দায়ের করা রিট আবেদনে সপ্তম সংশোধনী অবৈধ বলে রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ক্ষমতা গ্রহণকে অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ জারি করা সামরিক শাসন, ওই সময় থেকে ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত জারি করা সামরিক আইন, সামরিক বিধি, সামরিক আদেশসহ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের সমস্ত আদেশ ও নির্দেশকে সংবিধানপরিপন্থী এবং অবৈধ ঘোষণা করা হয়।
এরশাদের সামরিক শাসনামলের সকল আদেশ, কার্যক্রম, রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের আদেশ অবৈধ। তবে ওই সময়ে জনস্বার্থে নেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত বা কাজ ভবিষ্যৎ বিশৃঙ্খলা এড়ানোর জন্য ক্ষমা করা হয়। রায়ে বলা হয়, মার্জনার অর্থ এই নয় যে, এসব কাজ বৈধ হয়ে গেল। ভবিষ্যতের জন্য এমন কাজ কেউ করলে তা অবৈধ হবে।
আদালত রায়ে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর খন্দকার মোশতাক, আবু সা’দাত মোহাম্মদ সায়েম, জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছেন। জিয়ার উত্তরসূরি বিচারপতি আবদুস সাত্তারের কাছ থেকে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছেন জেনারেল এইচ এম এরশাদ। অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী হিসেবে এরশাদ তাঁর দায় এড়াতে পারেন না। এরশাদ ক্ষমতা দখল করে সামরিক আইন জারি করেছেন। সংবিধান স্থগিত করেছেন। সামরিক ফরমান জারির মাধ্যমে সামরিক আইনকে দেশের সর্বোচ্চ আইন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। অথচ সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন। সংবিধান স্থগিত করে সামরিক আইন মেনে নেওয়া যায় না। এমন কার্যক্রম মার্জনীয় নয়। আরো বলা হয়, সংবিধান জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন। জনগণই সকল ক্ষমতার মালিক। সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন। এই আইনের ওপর সামরিক আইনসহ কোনো আইনেরই অবস্থান হতে পারে না।
রিট আবেদনকারীর বিচারের বিষয়ে আদালত বলেছেন, ন্যায়বিচার পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার তাঁর অবশ্যই রয়েছে। সামরিক আদালত ক্যাঙ্গারু আদালত ছাড়া কিছুই নয়, কিন্তু কিছু জটিলতার কারণে রিট এখতিয়ারের মাধ্যমে তাঁর প্রতিকার পাওয়া সম্ভব নয়। তাই তাঁকে প্রতিকার পেতে হলে তাঁকে অন্য কোনো আইনি পন্থায় আবেদন করতে হবে, অবশ্য যদি তিনি চান। রিট আবেদনকারীর সাজার বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করে তাঁকে নিম্ন আদালতে আÍসমর্পণ করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

শিশুদের পঙ্গু করে নামানো হচ্ছে ভিক্ষায়

ট-নয় বছরের এক শিশুকে জড়সড় করে আটকে রাখা হয়েছিল অ্যালুমিনিয়ামের পাতিলের ভেতর। টানা ছয় মাস। খাবার বলতে দিনে একবার সামান্য ভাত অথবা রুটি আর পানি। এতে দিনে দিনে শিশুটি হয়ে পড়ে কঙ্কালসার। এরপর তাকে ভাড়া দেওয়া হয় ভিক্ষাবৃত্তিতে।

শিশুদের নিয়ে এমন ঘৃণ্য ব্যবসা জমিয়ে তুলছে একটি সন্ত্রাসী চক্র। তারা শুধু শিশুদের পাতিলের ভেতরই রাখছে না, কারও হাত কেটে দিচ্ছে, কারও পায়ের রগ কেটে পঙ্গু করছে। র্যাব কর্মকর্তারা গতকাল বুধবার এক বিশেষ অভিযান চালিয়ে এ চক্রের সদস্য শরিফুল ইসলাম ওরফে কোরবানকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তারের পর সাংবাদিকদের সামনে এসব অপকর্মের কথা স্বীকার করেন কোরবান।
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, পথেঘাটে এমন কঙ্কালসার শিশু দেখে হূদয়বান মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন, সাহায্য করছেন। কিন্তু তাঁরা জানেন না, সে অর্থ চলে যাচ্ছে সন্ত্রাসী চক্রের হাতে। ভয়ংকর এ সন্ত্রাসী চক্রের আস্তানাটি গড়ে উঠেছে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের আশ্রাফাবাদে।
শিশুদের নিয়ে ব্যবসা ফাঁদার এই নিষ্ঠুর ও ঘৃণ্য চক্রের সঙ্গে জড়িত এক সদস্যকে গ্রেপ্তারের খবর জানাতে গতকাল দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে র্যাব। সংবাদ সম্মেলনে এ চক্রের সর্বশেষ শিকার শিশু নিয়ামুল ও তার দরিদ্র মাকে হাজির করা হয়। শিশুটি তার ওপর নির্যাতনের ভয়াবহ বিবরণ দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও জনসংযোগ শাখার পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল বলেন, একটি বেসরকারি টেলিভিশনের এক অনুষ্ঠানের সূত্র ধরে তাঁরা এ চক্রের সন্ধান পান। বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এলিনা খান ও ব্ল্যাক ট্রুথ প্রডাকশনস সেন্টারের পরিচালক অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী ওই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন। তাঁরা অনুষ্ঠান করতে গিয়ে এ চক্রের হদিস পান। তাঁদের অনুষ্ঠানে ওই চক্রের হোতারা তাদের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে। এরপর তথ্য-প্রমাণসহ অনুষ্ঠানের আয়োজকেরা বিষয়টি র্যাবকে জানান। গতকাল রাজধানীর উত্তরা এলাকার ১২ নম্বর সেক্টর থেকে কোরবানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। সংবাদ সম্মেলনে টিভি অনুষ্ঠানের দুই আয়োজকও উপস্থিত ছিলেন।
র্যাবের পরিচালক বলেন, কামরাঙ্গীরচরের এ চক্রের মূল হোতা ওমর ফারুক নামের এক সন্ত্রাসী। কামরাঙ্গীচরের আশ্রাফাবাদে তাঁর একটি ক্লাবঘর আছে। সেখানেই এসব অপকর্ম চলে। ওমর ফারুকের সঙ্গে আছে সালাউদ্দিন, এমরান, রাসেল, রনি, সাদ্দাম, কাওসারসহ কয়েকজন। এরা ওমর ফারুকের নির্দেশে ছিনতাই করে। আর পথে পথে ঘুরে বেড়ানো শিশুদের দেখলেই তাদের ধরে নিয়ে যায়। এরপর সেই শিশুকে ভিক্ষাবৃত্তির ‘উপযোগী’ করতে পঙ্গু করা হয়।
র্যাব পরিচালক জানান, গ্রেপ্তার হওয়া কোরবান স্বীকার করেন যে চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের কাজ করে আসছে। এর মধ্যে ২০০৪ সালে শরীফ নামের এক বালককে তারা কামরাঙ্গীরচরের বেড়িবাঁধে নিয়ে হাতের কবজি কেটে পঙ্গু করে দেয়। এরপর তাকে দিয়ে ভিক্ষা করানো হয়। শরীফের বাড়ি কোথায়, তা তারা জানে না। তবে সে খুলনার আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলত। ২০০৬ সালে রাহাত নামের আরেক শিশুকে তারা পায়ের রগ কেটে দেয়। রাহাতের বাড়ি যশোরে। ২০০৮ সালে অজ্ঞাতনামা একটি শিশুকে তারা ছয় মাস একটি পাতিলের মধ্যে আটকে রাখে। পরে তাকে বিকলাঙ্গ করে ভিক্ষায় ভাড়া দেওয়া হয়। কোরবান জানান, এ চক্রের সর্বশেষ শিকার ছিল নিয়ামুল। দরিদ্র রিকশাচালক উমেদ আলীর ছেলে নিয়ামুলকে তারা এ বছরের ৬ সেপ্টেম্বর অপহরণ করে। এরপর ব্লেড দিয়ে তার পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলে, গলা ও বুকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। কিন্তু একপর্যায়ে শিশুটি মারা গেছে বলে মনে করে তারা তাকে ফেলে দিয়ে চলে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে ব্ল্যাক ট্রুথ প্রডাকশনস সেন্টারের পরিচালক অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী বলেন, টিভি অনুষ্ঠান করতে গিয়ে তাঁরা শিশুটির এ ভয়ংকর ঘটনার হদিস পান। তাঁরা জানতে পারেন, আহত শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে খবর পেয়ে চক্রের সদস্যরা নিজেরাই আসামি ও বাদী সেজে কামরাঙ্গীরচর থানায় একটি সাজানো মামলা করে। পরে নিজেরা আপস করেছে বলে সেই মামলা তুলে নেয়। কিন্তু শিশু নিয়ামুল হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তার বাবা উমেদ আলী এ নিয়ে মামলা করতে গেলে থানা আর মামলা নেয়নি। পরে তাঁরা আদালতে যান। তিনি বলেন, ঘটনার এখানেই শেষ নয়। সন্ত্রাসী চক্রের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার পর সন্ত্রাসীরা আরেকটি সাজানো মামলা করে শিশুটির পিতা ও তাঁর মামলার সাক্ষীদের আসামি করে। এ মামলায় তারা অভিযোগ করে, র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া কোরবানকে অপহরণ করা হয়েছে। রাজধানীর কদমতলী থানার পুলিশ সেই মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তারও করে। শিশুটির বাবা এখন এই সাজানো মামলার আসামি।
হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এলিনা খান অভিযোগ করেন, এ চক্রের সঙ্গে কদমতলী ও কামরাঙ্গীরচর থানার পুলিশের সখ্য আছে। তারা প্রকৃত নির্যাতনকারীর মামলা না নিলেও সাজানো মামলা নিয়ে আসামি গ্রেপ্তার করেছে। তাদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করে আসামি ধরতে অনুরোধ করা হলেও তারা সহযোগিতা করেনি।
গ্রেপ্তার হওয়া কোরবান সাংবাদিকদের জানান, এ সন্ত্রাসী চক্রের সদস্য আট-নয়জন। তাদের নেতা ওমর ফারুক। সবকিছু হয় তাঁরই নিয়ন্ত্রণে। দলের সবাই তাঁর কথামতো সবকিছু করে। কামরাঙ্গীরচরের আশ্রাফাবাদ নতুন গলিতে স্কুলের ডান পাশে ওমর ফারুকের ক্লাবঘর। ওমর ফারুক এলাকায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত। তিনি দিনের বেলায় ঘুমান। সন্ধ্যার পর ক্লাবে এসে এলাকার বিচার-সালিসের নামে চাঁদাবাজি করেন। আর রাতের কারবারের হিসাবনিকাশ নেন। ভোরবেলা ঘুমাতে যান। কত শিশুকে নির্যাতন করে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামানো হয়েছে, তার সঠিক হিসাব তিনি জানেন না। তবে সংবাদ সম্মেলনে ‘কয়েকটি ঘটনা মনে পড়ছে’ বলে উল্লিখিত ঘটনাগুলোর বিবরণ দেন।

পতনের পর এই সরকারের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা হবে

র্তমান সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে—এমন অভিযোগ তুলেছেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, এই সরকারের পতন হলে তাদের সময় মানবতাবিরোধী যত অপরাধ ঘটেছে, সেগুলোর বিচার করা হবে।

আজ বুধবার বিকেলে পুরানা পল্টনে ঢাকা মহানগর জামায়াতের কার্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সমাবেশে এ টি এম আজহার এ কথা বলেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে ‘ডিজিটাল কারচুপির নির্বাচন’ আখ্যা দিয়ে এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে জামায়াত।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আজহার বলেন, ‘সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে যুদ্ধাপরাধের কথা বলে তাদের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করছে।...আওয়ামী লীগ আসলে যুদ্ধাপরাধীদের আতঙ্কে ভুগছে। এই অসুখে আপনারা (আওয়ামী লীগ) শেষ হয়ে যাবেন। এই অসুখের চিকিত্সা কী জানি না।’
স্বাধীনতার এত বছর পর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা আইনসম্মত নয় বলেও দাবি করেন জামায়াতের এই নেতা। তিনি বলেন, ‘৩৯ বছর আগে কারা খুন করেছেন, তার সাক্ষী জোগাড় করে বিচার করা যায় না। যাঁরা বলেন বিচার করা যায়, তাঁরা মিথ্যা কথা বলছেন। যেসব দেশে দীর্ঘদিন পর বিচার করা হয়েছে, সেসব দেশে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হয় সঙ্গে সঙ্গে মামলা করা হয়েছিল, নয় তাঁরা আটক ছিলেন বা বিদেশে পালিয়ে ছিলেন। কিন্তু জামায়াতের নেতাদের ক্ষেত্রে এসবের কোনোটিই খাটে না।...মানবতাবিরোধী অপরাধ শুধু যুদ্ধের সময়ই হয়নি। এই সরকারের আমলেও মানবতাবিরোধী অপরাধ হচ্ছে। এই সরকারের পতন হলে মানবতাবিরোধী যত অপরাধ হয়েছে, সেগুলোর বিচার করা হবে।’
ঢাকা মহানগর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির সাংসদ হামিদুর রহমান আযাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। দলের কেন্দ্রীয় প্রচারবিষয়ক সেক্রেটারি তাসনীম আলম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য নূরুল ইসলাম, আবদুল হালিম প্রমুখ এ সময় বক্তব্য দেন।
সাম্প্রতিক সময় এই এলাকায় আয়োজিত সমাবেশগুলোর তুলনায় আজকের সমাবেশটি ছিল একটু অন্য রকম। অন্য সমাবেশগুলোতে জামায়াত ও তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। তারা পুরানা পল্টনে গ্র্যান্ড আযাদ হোটেলের সামনের গলিতে যানচলাচল বন্ধ করে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। অথচ কার্যালয়ের সামনের জায়গা একদম ফাঁকা ছিল।

সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণাঃ এরশাদ রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ করেছেন

সামরিক শাসন জারির জন্য এরশাদ ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ করেছেন। এ বিষয়ে সাক্ষ্য ও প্রমাণ আছে কি না, সরকার তা খতিয়ে দেখবে। দণ্ডবিধির ১২২ ও ১২৪ ধারায় মামলা করার সাক্ষ্য আছে কি না, সরকার তা খতিয়ে দেখবে বলে আদালত প্রত্যাশা করে। ভবিষ্যতে যাতে কেউ এ ধরনের সামরিক শাসন জারির প্রচেষ্টা করতে না পারে, সে জন্য সামরিক শাসকদের বিচার হওয়া আবশ্যক। আর তাই নির্ভুল আইন প্রণয়ন হওয়া জরুরি।

আজ বুধবার সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে প্রকাশিত হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে এসব কথা বলা হয়। গত ২৬ আগস্ট সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে এরশাদের সামরিক শাসনকে সংবিধানপরিপন্থী ঘোষণা করা হয়। এ সংশোধনীতে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলের বৈধতা দেওয়া হয়েছিল। বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এ রায় দেন।
রায়ে আরও বলা হয়, পারভেজ মোশাররফদের ভাগ্যে কী আছে তা স্মরণ রাখা দরকার। দিনের শেষে কোনো সামরিক শাসকের ভাগ্যেই সুফল আসেনি।
এ ব্যাপারে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের নজির তুলে ধরে আদালত রায়ে বলেন, এরশাদসহ সামরিক অভিলাসীদের ক্ষমা করা হলেও তাঁদের ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। যেসব বিচারপতি সামরিক শাসনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, তাঁরাও অসদাচরণের দায়ে শাস্তিযোগ্য অপরাধী হবেন।
যদিও এরশাদ প্রত্যক্ষ্যভাবে সংবিধানের কোনো স্তম্ভ ধ্বংস করেননি কিন্তু জিয়াউর রহমান সংবিধানের মূল স্তম্ভ ধ্বংস করেছিলেন। এর ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এরশাদ সংবিধান ধ্বংসের অপরাধ করেছেন, যা রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধের শামিল।
এ ছাড়া এরশাদ জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও তাঁদের সাংবিধানিক অধিকার পদদলিত করে দীর্ঘ চার বছর সংবিধান স্থগিত রেখেছিলেন। ক্যাঙারু আদালতের মাধ্যমে বিচার চালিয়েছিলেন।
দেশে প্রথম সামরিক শাসনের দ্বার উন্মুক্ত করেন জেনারেল জিয়া ও মোশতাক। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় রাজারকারদের চক্রান্তের ফলে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর সংবিধানের প্রতি বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে জিয়া-মোশতাক চক্র সামরিক শাসন প্রচলন করে সংবিধানের ওপর প্রথম কুঠারাঘাত করেন। জিয়া শুধু সামরিক আইন প্রণয়ন করেই ক্ষান্ত হননি, তিনি সংবিধানের দুটি মূল স্তম্ভ ধূলিসাত্ করে দিয়েছেন। একটি হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা ও অপরটি বাঙালি জাতীয়তাবাদ। সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ প্রবর্তন করেন তিনি।
‘জয় বাংলা’ স্লোগান ছিল স্বাধীনতা-উদ্দীপক স্লোগান। মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার স্লোগান পাল্টিয়ে পাকিস্তানি কায়দায় জিয়া ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ প্রবর্তন করেন। তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিপূর্ণ রাজাকার শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। এ ছাড়া শীর্ষ রাজাকার কর্নেল মোস্তাফিজকে (আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচারক) পাকিস্তান থেকে এনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত করেন। বাংলাদেশবিরোধী বহু ব্যক্তিকে উচ্চমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেন।
এরশাদের শাসনামলে সামরিক আদালতের রায়ে সাজাপ্রাপ্ত চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সিদ্দিক আহমেদ হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ এপ্রিল হাইকোর্ট রুল জারি করেন। সাবেক সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ক্ষমতা গ্রহণ ও ১৯৮২ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত জারি করা সামরিক আইন, ফরমান, আদেশ ও নির্দেশকে বৈধতাদানকারী সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী কেন অবৈধ নয়, তা জানাতে চাওয়া হয়। রুলের ওপর সাত দিন শুনানি শেষে গত ২৬ আগস্ট আদালত রায় দেন।
ফিরে দেখা হত্যা মামলা ও সপ্তম সংশোধনী: ১৯৮৪ সালের ১২ নভেম্বর চট্টগ্রামের মসলা ব্যবসায়ী আবু তাহের খুন হন। ওই বছরের ২৪ ডিসেম্বর এ ঘটনায় চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। সাধারণ আদালতে মামলাটি চলছিল। ১৯৮৬ সালের ১২ মার্চ এক আদেশে মামলাটি বিশেষ মার্শাল ল আদালত-৩ ( চট্টগ্রাম) স্থানান্তর করা হয়। ওই বছরের ২০ মার্চ আদালত সিদ্দিক আহমেদ, নূর মোহাম্মদ ও নুরুল আনোয়ারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে রায় দেন। রায়ের সময় সিদ্দিক আহমেদ পলাতক ছিলেন। এরপর ২০০৬ সালের ২ আগস্ট তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ বছরের ২৪ জানুয়ারি সামরিক শাসন জারি, সামরিক আদালতে বিচার ও দণ্ডের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটটি দায়ের করেন সিদ্দিক আহমেদ। বর্তমানে তিনি জামিনে আছেন।
উল্লেখ্য, গত ২ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের আবেদন খারিজ করেন আপিল বিভাগ। ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট দেওয়া হাইকোর্টের রায়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত খন্দকার মোশতাক আহমেদ, আবু সা’দাত মোহাম্মদ সায়েম ও জিয়াউর রহমানের শাসনকে বেআইনি ঘোষণা করা হয়।

মার্কিন সিনেটরের পদটা জামায়াতের দখলে? by সিপাহসালার

মার্কিন সিনেটর আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে যে চিঠি লিখেছেন তাতে সন্দেহ হচ্ছে মার্কিন সিনেটরের পদটা কি জামায়াত দখল করেছে? না হলে এমন চিঠিতো লেখার কথা নয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত সিনেটর জন বুজম্যান যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও বাংলাদেশের সংবিধান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি চিঠি লিখেছেন। গত ৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে প্রেরিত এ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ (আদালত) অ্যাক্ট ১৯৭৩ (ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) অ্যাক্ট অব ১৯৭৩) বিষয়ে এ চিঠি লিখছি। ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধের বিচারের যে উদ্যোগ বাংলাদেশ সরকার নিয়েছে সে বিষয়ে আমার সমানুভূতি আছে। আপনার সরকার অতীতের এ অপরাধের বিচার সম্পন্ন করে যে নজির স্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছে তার সঙ্গে আমি একমত। সে লক্ষ্যে বিশেষ আদালত স্থাপন, বিচারক প্যানেল গঠন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ (আদালত) অ্যাক্টকে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ করার লক্ষ্যে বিতর্কিত কিছু ধারাও পরিবর্তন করা হয়েছে মর্মে জেনেছি আমি।
চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত স্বচ্ছ বিচারের যে মানদণ্ড রয়েছে তা বাংলাদেশের আইনটিতে অনুপস্থিত রয়েছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। আইনটির বিষয়ে সবচেয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে যেসব সংস্থা থেকে সেগুলো হল—হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এশিয়া বিভাগ, দ্য ওয়ার ক্রাইমস কমিশন অব দ্য ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশন, দ্য ওয়ার ক্রাইমস প্রজেক্ট এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত অন্যান্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা এই আইনকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না এবং এই আইনের মাধ্যমে তাদের যে সাজা প্রদান করা হবে তার বিরুদ্ধেও তারা কোনো প্রতিকার চাইতে পারবে না—বিদ্যমান সংবিধানে যাই থাকুক না কেন। এ জাতীয় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা আছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ (আদালত) আইনে।
অন্যান্য অপরাধ আইনের ক্ষেত্রে যে নিয়ম প্রযোজ্য তা এই অ্যাক্টের ক্ষেত্রে রাখা হয়নি। এ কারণে এ আইনটির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগও রাখা হয়নি যা সংবিধানে স্বীকৃত অধিকার হরণের মাধ্যমে করা হয়েছে। আইনের চোখে সবাই সমান বলে যে মৌলিক বিধান আছে তাও এখানে খর্ব করা হয়েছে। বিচারকে আন্তর্জাতিক মানের এবং স্বচ্ছ করার জন্য এ আইনের সংশোধন খুবই জরুরি। ওই আইন এবং বিচারকে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না মর্মে যে সাংবিধানিক সুরক্ষা প্রদান করা হয়েছে তা-ই আইনটিকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ বিচারের পরিপন্থী করে তুলেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তির নীরব থাকা, নিজেকে নির্দোষ ঘোষণার অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে এবং সাক্ষীর দায়-দায়িত্ব সম্পর্কে কোনো কিছু বলা হয়নি আইনে। আইনটি যেহেতু যুগোস্লাভিয়া এবং রুয়ান্ডা যুদ্ধাপরাধ আদালত গঠনের (এ আদালতের ধারা আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন হিসেবে স্বীকৃত) আগে প্রণীত হয়েছে তাই ২০০২ সালে প্রণীত রোম সংবিধি অনুযায়ী আইনটি সংস্কার করা উচিত। বাংলাদেশও রোম সংবিধিতে স্বাক্ষরকারী একটি দেশ। প্রয়োজনীয় সংশোধন ছাড়া এই আইনের মাধ্যমে বিচার কাজ চালিয়ে গেলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিতর্ক বাড়বে। উদাহরণস্বরূপ বর্তমান আইন অনুযায়ী যিনি সাধারণ সামরিক আদালতের বিচারক হওয়ার যোগ্য তিনি ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বা মেম্বার হতে পারবেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক বিধান অনুযায়ী সামরিক আদালতের বিচারকরা কেবল সামরিক বাহিনী সংক্রান্ত বিষয়েই বিচার করতে পারেন। উপরন্তু, এই আইনে রয়েছে ট্রাইব্যুনালের কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা যাবে না এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি ট্রাইব্যুনালের কোনো ধারার বিরুদ্ধেও কোনো চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন না। আমার আশঙ্কা, আইনটিকে সংশোধন করে যদি আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা না হয় তাহলে এ আইনের মাধ্যমে বিচার কাজ পরিচালনা করা হলে অভিযুক্ত ব্যক্তির মানবাধিকার রক্ষা অসম্ভব হবে। আইনটি বর্তমানে যে অবস্থায় আছে তাতে দায়মুক্তি থেকে বের হয়ে আসার যে উদ্যোগ আপনার সরকার নিয়েছে তা যেমন চাপা পড়ে যাবে তেমনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এ বার্তা ছড়িয়ে পড়বে যে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্যই এ আয়োজন করা হচ্ছে।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ মোতাবেক ধর্মীয় অনভূতিতে আঘাত করার মতো ক্ষুদ্র বিষয়ের সঙ্গে জড়িয়ে জামায়াতের প্রথম সারির বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব অভিযোগে গ্রেফতার করে তাদেরকে যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এতে করে আইনটি রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে। যেহেতু আপনার সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ দলের একনিষ্ঠ মিত্র জামায়াত। তাই জামায়াতকে ক্ষতিগ্রস্ত করার মাধ্যমে প্রধান প্রতিপক্ষকে দুর্বল করাই হলো ট্রাইব্যুনালের প্রথম কাজ। এ বিশ্বাসই সমাজে এখন বিদ্যমান। আইনটি যথাযথ সংশোধন করে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির জন্য একটি নিরপেক্ষ ও ভয়ভীতিমুক্ত বিচার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আপনার সরকার ন্যায় বিচারকে সমুন্নত রাখবে এবং দায়মুক্তির সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার উদ্যোগকে সামনে এগিয়ে নেবে বলে আশা করি। যুদ্ধাপরাধ আদালত গঠনের উদ্যোগকে আন্তর্জাতিক বিচার অঙ্গনের অনেকেই স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচার অনুষ্ঠানে অনাগ্রহের বিষয়ে তারা সবাই উদ্বিগ্ন যে, এর মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা হতে পারে। আমি আশা করি আপনার সরকার রোম সংবিধি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ধারা মোতাবেক আইনটি সংশোধনের যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। আইনটি যথোপযুক্ত সংশোধন করে প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় আনার বিষয়ে আপনার সরকার উদ্যোগ নিলে আমি সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি।