Thursday, January 06, 2011

সাফল্য দাবি, ধৈর্য ধরার অনুরোধ

দু'বছরে নানা খাতে সরকারের সাফল্য দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে জনকল্যাণমুখী বিভিন্ন কর্মসূচির ফল পেতে দেশবাসিকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার বলেছেন, "দেশবাসির কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা একটু ধৈর্য ধরুন। আমাদের সহযোগিতা করুন। আমরা আমাদের প্রতিশ্র"তি পূরণ করবই, ইনশাআল্লাহ।"

"গত দুই বছরে জনকল্যাণে আমরা যেসব কর্মসূচি গ্রহণ করেছি, তার সবগুলোর ফল হয়তো এখনই পাওয়া যাবে না। সময়ের পরিক্রমায় দেশবাসি এসব কর্মসূচির ফল দেখতে পাবেন।" আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের দু'বছর পূর্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাতে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে শেখ হাসিনা দেশবাসির কাছে এই আহবান জানান। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে আধ ঘণ্টা ভাষণ দেন তিনি।

যোগাযোগ, আইন-শৃঙ্খলা, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি, দারিদ্র্য বিমোচন, স্বাস্থ্যসেবা, পররাষ্ট্র এবং অর্থনৈতিক খাতে সরকার দুবছরে সাফল্য পেয়েছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।

বাধা থাকলেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবেন বলে দৃঢ় অঙ্গিকার প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, "জাতির প্রত্যাশা ও আকাক্সক্ষা অনুযায়ী চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব এ বিচার কাজ শুরু হবে।"

একটা চিহ্নিত গোষ্ঠীর বাধা অব্যাহত থাকলেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে দেশবাসীর সহযোগিতা চান তিনি। নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে বলেও দাবি করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, "দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিচার বিভাগ এখন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে।" প্রধামন্ত্রী বলেন, "আমাদের সবকিছু শুরু করতে হয়েছে নতুন করে। আমাদের পূর্ববর্তী সরকারগুলো কোন উন্নয়ন কর্মসূচি রেখে যায়নি। বরং শিক্ষার হার, বিদ্যুৎ উৎপাদন, স্বাস্থ্যসেবা সর্বক্ষেত্রে দেশকে পিছিয়ে রেখে গেছে।" মহাজোট সরকার সংসদকে গণতন্ত্র চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।

বিরোধী দলের 'ব্যর্থতায়' প্রধানমন্ত্রী দুঃখিত
বিরোধী দল হিসাবে জাতীয় সংসদে নিজেদের ভূমিকা পালনে বিরোধী দল [বিএনপি] সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিষয়টি দুঃখের।

তিনি বলেছেন, "দুঃখের বিষয় সংসদে আমাদের প্রধান বিরোধী দল তাদের যথাযথ ভূমিকা পালন করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তারা জাতীয় সংসদের ১৭৪টি কার্য দিবসের মধ্যে মাত্র ৪৪ কার্য দিবস উপস্থিত ছিল। বিরোধীদলের নেতা মাত্র পাঁচদিন সংসদে উপস্থিত ছিলেন।"

মহাজোট সরকার সংসদকে গণতন্ত্র চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে বলে দাবি করেন শেখ হাসিনা। ১৩০টি আইন পাশসহ নবম জাতীয় সংসদের কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে বলেও দাবি করেন শেখ হাসিনা।

সরাসরি কারো নাম উল্লেখ না করে শেখ হাসিনা বলেন, "জনগণের সম্পদ লুট করে যারা সম্পদের পাহার গড়ে তুলেছে, যারা জনগণের সম্পদ বিদেশে পাচার করেছে। অতীতের মতো এখনো তারা চেষ্টা করছে দেশের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে।"

'চালের দাম বৃদ্ধি তদন্ত হচ্ছে'
ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ার বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও ভাষণে জানান প্রধানমন্ত্রী। কৃষকের উৎপাদন মূল্য নিশ্চিত করতেই চালের দাম বৃদ্ধি হয়েছে বলে ভাষণে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, "যে চালের দাম ছিল প্রতি কেজি ৪৫ টাকা, আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে তা ১৮-২০ টাকায় নেমে আসে। পরবর্তীতে কৃষকের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে আমরা চালের দাম বাড়িয়ে ২৮ টাকা করি।"

'বিএনপি-জামায়াত জোটের সঙ্গে তুলনা করুন'
মহাজোটের সাফল্য বিচারের ভার জনগণের ওপর ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। তবে তিনি তার সরকারের সময়কে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে তুলনা করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে মহাজোট সরকারের আন্তরিকতার বিষয়টি নিশ্চিত করে শেখ হাসিনা বলেন, "দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আমি এবং আমার সহকর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি আপনাদের আস্থার প্রতি সম্মান দেখিয়ে সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের।"

বিএনপি নেতৃত্বধানী গত চারদলীয় জোট সরকারের পাঁচ বছর এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরে দেশের সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়েছিলো বলে দাবি করেন সরকারপ্রধান হাসিনা।

'যোগাযোগ আমূল পাল্টেছে, জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় হবে'
মহাজোট সরকারের দুই বছরে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, "রেল সংযোগসহ বহু আকাক্সিক্ষত পদ্মা বহুমূখি সেতুর মূল নির্মাণ কাজ এবং পদ্মা সেতুর উভয় প্রান্তে রেললাইন স্থাপনের কাজও শিগগিরই শুরু হবে।"

ঢাকার যানজট নিরসনে উড়াল সেতু ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, কমিউটার ট্রেন ও ওয়াটার বাস সার্ভিস চালুর বিষয়টিও শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী জানান, প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কারিগরি স্কুল হচ্ছে। একই সঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করা হচ্ছে। প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে সকল ছাত্রছাত্রীর মধ্যে বই বিতরণ, পঞ্চম শ্রেণীতে সমাপনী পরীক্ষা, অষ্টম শ্রেণীতে জুনিয়র স্কুল ও দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষা পদ্ধতি চালুর বিষয়টি উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, "এক হাজার ৬২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিও ভুক্ত করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ছয়টি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে।" প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, "আমরা ইতোমধ্যে ৩০টি মডেল মাদ্রাসা স্থাপন করেছি। ১০০টি মাদ্রাসায় ভোকেশনাল কোর্স খোলা হয়েছে। ৩১টি মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে।"

বিদ্যুৎ সংকটে বিরোধী দলকেই দুষলেন প্রধানমন্ত্রী
দেশের চলমান বিদ্যুৎ সংকটের জন্য আবারো বিরোধী দলকে দায়ী করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভাষণে তিনি বলেন, "আজকে দেশব্যাপী বিদ্যুৎ-জ্বালানির যে তীব্র সঙ্কট, তার মূলে রয়েছে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের চরম ব্যর্থতা এবং এখাতে ব্যাপক লুটপাট দুর্নীতি। তবে আমরা কঠোর পরিশ্রম করে সংকট কাটিয়ে উঠছি।"

চারদলীয় জোট সরকারের পাঁচ বছর 'এক মেগাওয়াট বিদ্যুতও উৎপাদিত হয়নি' দাবি করে তিনি বলেন, "কিন্তু লুটপাট হয়েছে হাজার কোটি টাকা।" ৩৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ শুরু কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "এতে ২ হাজার ৯৪১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে।"

৩ হাজার ৮৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতা-সম্পন্ন আরো ২৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বানের কথাও বলেন তিনি। আগামী পাঁচ বছরে প্রায় ১২ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কর্মসূচি নেওয়ার কথাও প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন।

তিনি বলেন, "গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি আমরা তরল জ্বালানি, কয়লা, ডুয়েল ফুয়েল এবং নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ শুরু করেছি।" রাশিয়ার সহযোগিতায় রূপপুরে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, "এখানে পর্যায়ক্রমে দু'হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।"

"২০১২ সালের মধ্যে ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে," বলেন প্রধানমন্ত্রী। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিনামূল্যে এক কোটি পাঁচ লাখ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী সিএফএল বাল্ব বিতরণ করা হয়েছে। আরো এক কোটি ৭৫ লাখ বিতরণ করা
হবে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত অর্থনৈতিক, খাদ্য, শিক্ষা ও বিদ্যুত খাতে সফলতার চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সে সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৬০০ মেগাওয়াট থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪৩০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছিল।

'পাটের জন্মরহস্য আবিষ্কার সবচেয়ে বড় সাফল্য'
পাটের জন্ম রহস্য আবিষ্কার মহাজোট সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য বলে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, "আমাদের সবচেয়ে বড় সাফল্য পাটের জেনোম সিকোয়েন্স বা জন্ম রহস্য আবিষ্কার। এ আবিষ্কারের ফলে আমরা পাটের উন্নত জাত উদ্ভাবন এবং বহুবিধ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারব। তিনি আরো বলেন, "আমরা পাট শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করেছি। পাটের মণ প্রতি দাম ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা।"

'গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে নির্বাচিত হয় মহাজোট'
ভাষণের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে মহাজোট সরকার গঠন করেছে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট জয়লাভ করে। পরের বছরের ৬ জানুয়ারি তারা সরকার গঠন করে। সরকার পরিচালনায় সহযোগিতা করার জন্য দেশবাসিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি জনগণের সঙ্গে ধোকাবাজি __বিএনপি

ত দুই বছরে সরকার জনগণের জন্য কিছুই করতে পারেনি। এই সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উন্নয়নের ফিরিস্তিও দৃশ্যমান নয়। তাই এটা স্পষ্ট যে জনগণকে দেওয়া সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি কেবলই ধোকাবাজি।

জাতির উদ্দেশে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ভাষণের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে প্রথম আলোকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। দুই বছর পর জনগণকে আরও ধৈর্য ধরার কথা বলে মূলত সরকার দেশ পরিচালনায় তাঁর অপরারগতা প্রকাশ করেছে।
এম কে আনোয়ার বলেন, সরকার দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা বলছেন। অথচ সরকারের এই দেরিতে বোধোদয়ের কারণে একটি গোষ্ঠী জনগণের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেন, তাহলে কি কাউকে সুবিধা দিতে এত দিন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি। তিনি বলেন, এই সরকার ১০ টাকা কেজিতে চাল খাওয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এদের কারণে আগের চেয়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিরোধী দল সংসদ কার্যকর করতে ব্যর্থ হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এম কে আনোয়ার বলেন, গত তিনটি সাধারণ নির্বাচনের পর দেখা গেছে বিরোধী দল সংসদ বর্জন করছে। কিন্তু এবারই বিরোধী দল সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিনে সংসদে যোগ দিয়ে সেই ধারা ভেঙেছে। সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণের পরও আবার বিরোধী দল সংসদে ফিরেছে। কিন্তু এরপর কেন বিরোধী দল সংসদ যায় না, তা সরকার ও দেশের জনগণ ভালো করেই জানে। তিনি বলেন, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের ক্ষেত্রে এই সরকার শতভাগ সফল হয়েছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপিও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। কিন্তু তা হতে হবে স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। সরকারের দুই বছরের শাসন আমল অতীতের সব দুঃশাসনকে ছাড়িয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। পুঁজি বাজারে অস্থিরতাকে সরকারের আরেক ব্যর্থতা বলে উল্লেখ করেন স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।

হাজী সেলিমের স্ত্রীকে আদালতে আত্মসমর্পনের নির্দেশ

বৈধ সম্পদ অর্জনে সহযোগিতার দায়ে দায়ের করা এক মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা হাজী মো. সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরাকে নিু আদালতে আত্মসমর্পনের নির্দেশ দিয়েছে আপিল বিভাগ। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনে এ আদেশ দেয়।

হাজী সেলিমকে সহযোগিতার দায়ে ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল সংসদ ভবনের বিশেষ জজ আদালত স্ত্রী গুলশান আরাকে তিন বছরের সাজা ও এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়। হাজী সেলিম ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

এ রায় চ্যালেঞ্জ করে গুলশান আরা ২০০৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর একটি রিট আবেদন করলে হাইকোর্ট ওই দণ্ডাদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়। পরে দুদক আপিল অবেদন করে।

এ বিষয়ে গুলশান আরার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুফিয়া খাতুন বিডিনিউজ টোয়েন্টফোর ডটকমকে বলেন, গুলশান আরা হাইকোর্টে করা তার রিট আবেদনটি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তাই আগের দণ্ডাদেশ বহাল রেখে উচ্চ আদালত তাকে নিু আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছে। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এমএ আজিজ খান।

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে হাজী সেলিম দম্পতির বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর লালবাগ থানায় মামলা করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক মুহম্মদ মাহবুবুল আলম। ওই মামলায় হাজী সেলিমের ১৩ বছর কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা হয়।

এরপর ২০০৮ সালের ১ এপ্রিল ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ দম্পত্তির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ পরিচালক মো. আবু সাঈদ।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, হাজী সেলিম জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ প্রায় ২৬ কোটি ৯২ লাখ টাকার সম্পদ অর্জন করেন। এছাড়া, কমিশনে জমা দেওয়া হিসাব বিবরণীতে তিনি প্রায় ১০ কোটি ৪ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেন।

অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, হাজী সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা তার স্বামীর অর্জিত প্রায় চার কোটি ৮৮ লাখ টাকা নিজ নামে রেখে এবং স্বামীকে সহায়তা করে অপরাধ করেছেন। হাজী সেলিম ও গুলশান আরা সম্পদ বিবরণীতে প্রায় ৫৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকার হিসাব দেন।

৫৬টি পৌরসভায় সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত

গামী পৌরসভা নির্বাচনে ৫৬টি পৌরসভায় সেনাবাহিনী ও ৫২টি পৌরসভার ভোটকেন্দ্রে বিজিবি সদস্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদার সভাপতিত্বে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন সাংবাদিকদের জানান, ২৯টি জেলার ৫৬টি পৌরসভায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। তা ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় যশোর, বাগেরহাট, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ আটটি জেলাতে ১৪টি পৌরসভায় সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড (বিজিবি) উভয়ই থাকবে।
আগামী ১২, ১৩, ১৭, ১৮ ও ২৭ জানুয়ারি দেশের আড়াই শতাধিক পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

পুঁজিবাজারে দরপতনের পর বিক্ষোভ-লাঠিপেটা

ঢাকার পুঁজিবাজারে সাধারণ সূচক দুইশ'রও বেশি পয়েন্ট কমে যাওয়ায় আগের দিনের মতোই বিক্ষোভ শুরু করলে বিনিয়োগকারীদের লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে লেনদেনের শেষ পর্যায়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সামনের সড়কে মিছিল নিয়ে নেমে পড়লে ওই সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

বিক্ষোভকারীরা একটি বাস ও একটি প্রাইভেট কার ভাংচুর করলে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াও হয়। এরপর ডিএসই'র সামনের সড়ক আটকে সেখানে বেঞ্চ ও চেয়ার নিয়ে বসে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। বিকাল ৪টার দিকে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। ওই সময় এক রাউন্ড রবার বুলেটও ছোড়ে পুলিশ। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারী ছয় জনকে পুলিশ আটক করেছে।

সোয়া ৪টা থেকে সড়কে গাড়ি চলাচল শুরু হয়েছে। ডিএসইতে দিনের লেনদেন শেষে সাধারণ সূচক ৭৭৩৫ দশমিক ২১ এ দাঁড়িয়েছে, যা দিনের শুরুর চেয়ে ২১৩ দশমিক ২১ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৬৮ শতাংশ কম। সারাদিনে ২৪৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ২৩১টির দামই কমেছে, বেড়েছে ১২টির। ৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দিনে প্রায় ৯৭০ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

তারল্য প্রবাহের ঘাটতি ও শেয়ার বিক্রির চাপের মধ্যে গত তিন দিন ধরেই ঢাকার পুঁজিবাজারে দরপতন চলছে। বুধবার বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ করলে পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে। বুধবার লেনদেন হওয়া ২৪৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের মধ্যে ১৫৮টিরই দাম কমে। মঙ্গলবার সাধারণ সূচক আগের দিনের চেয়ে ২০৩ পয়েন্ট কমে। সোমবার কমেছিলো ১১৯ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট।

প্রথম আলো জনমত জরিপঃ সরকারের জনপ্রিয়তা কমেছে

ওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের জনপ্রিয়তা গত দুই বছরে কমেছে। কমেছে সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে নাগরিকদের সন্তোষের পরিমাণও। শিক্ষা ও কৃষিতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপে গত বছরের চেয়ে এবার সমর্থন বেড়েছে অনেক বেশি। বিপরীতে হতাশার মাত্রা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও বিদ্যুৎ-পরিস্থিতি নিয়ে।
সংসদ পরিচালনা, বিরোধী দলকে সংসদে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা এবং বিরোধী দলের প্রতি আচরণ নিয়েও সরকারের প্রতি নাগরিকদের নেতিবাচক মনোভাব গত বছরের চেয়ে এ বছর উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সার্বিকভাবে দেশের রাজনীতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন নাগরিকেরা।
মহাজোট সরকারের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রথম আলোর উদ্যোগে পেশাদার জরিপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ‘ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড’ পরিচালিত সাম্প্রতিক এক জরিপে দেশবাসীর এসব মতামত পাওয়া গেছে। দেশের সাতটি বিভাগের ২০টি জেলার তিন হাজার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ওপর এই জরিপ চালানো হয়। জেলাগুলো হলো: ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, বগুড়া, পঞ্চগড়, খুলনা, বরিশাল, কুমিল্লা, পাবনা, কুষ্টিয়া, পটুয়াখালী, কুড়িগ্রাম, মাগুরা, লক্ষ্মীপুর, কক্সবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, নরসিংদী ও জামালপুর। ২০১০ সালের ২৭ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই জরিপ চালানো হয়। ২০০৮ সাল থেকে প্রথম আলো এ ধরনের জনমত জরিপ পরিচালনা করে আসছে। ভবিষ্যতেও প্রতি এক বছর অন্তর প্রথম আলো দেশব্যাপী এ ধরনের জনমত জরিপ পরিচালনা করবে।
এবারের জরিপে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম, বিভিন্ন খাতে সরকারের প্রচেষ্টা, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের ভূমিকা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, যুদ্ধাপরাধের বিচার, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক, ট্রানজিট প্রসঙ্গ, ’৭২-এর সংবিধানের পুনঃপ্রবর্তন, গণমাধ্যমের প্রতি সরকারের আচরণ ইত্যাদি বিষয়ে নাগরিকদের একটি মূল্যায়ন উঠে এসেছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং এর সমর্থক সংগঠন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কর্মকাণ্ড নিয়ে জনগণ যেমন নেতিবাচক মতামত দিয়েছেন, তেমনি বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়েও তাঁরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। বিপুলসংখ্যক মানুষ সংসদে বিরোধী দলের অনুপস্থিতিকে অনুমোদন করেননি। সংসদের বাইরেও বিরোধী দলের কার্যকর ভূমিকা রাখার ব্যাপারে দেশবাসীর অসন্তোষ এ বছর আরও বেড়েছে।
জরিপে আরও দেখা গেছে, জনপ্রিয়তার বিচারে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এগিয়ে আছেন, কিন্তু গত বছরের চেয়ে তাঁর জনপ্রিয়তার মাত্রা নেমেছে। পক্ষান্তরে, জনপ্রিয়তার দৌড়ে খালেদা জিয়া পিছিয়ে থাকলেও, আগের বছরের তুলনায় তা এ বছর বেড়েছে।
উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো, এখন নির্বাচন হলে দেশবাসী কোন রাজনৈতিক দলকে কী পরিমাণ ভোট দেবেন, তা-ও এই জরিপে উঠে এসেছে। এখন নির্বাচন হলে জনমত জরিপ অনুযায়ী আওয়ামী লীগ ভোট পাবে ৪৬ শতাংশ, বিএনপি ৩৯ শতাংশ এবং জাতীয় পার্টি ৬ শতাংশ। আগের বছরের জরিপে এই ফল ছিল যথাক্রমে ৫৬, ২৫ ও ৩ শতাংশ। দেখা যাচ্ছে, এক বছরের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা কমেছে ১০ শতাংশ এবং বিএনপির জনপ্রিয়তা বেড়েছে ১৪ শতাংশ।

সরকারের কার্যক্রম
সুশাসন ও অর্থনীতির সূচকে সরকারের সফলতা গত বছরের তুলনায় কমেছে বলে জরিপে অংশগ্রহণকারীরা মনে করছেন। এ ক্ষেত্রে সরকার সঠিক পথে রয়েছে, এমন মতামত প্রদানকারীর সংখ্যা আগের বছরের চেয়ে ৩ শতাংশ কমেছে।
যেসব খাতে এগিয়ে: জরিপ অনুযায়ী সফলতার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে শিক্ষা খাত। নাগরিকদের ৮৯ শতাংশ বলেছেন, শিক্ষা খাতে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ সফল ছিল। কৃতিত্বের দিক থেকে এর পরপরই এগিয়ে আছে কৃষি। জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের তিন-চতুর্থাংশ মনে করেন, কৃষি খাতের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ ঠিক ছিল। গত বছরের চেয়ে এই হার বেড়েছে ৭ শতাংশ। যোগাযোগ ও অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে সরকারের ভূমিকা নিয়েও জনগণ অনেকটাই সন্তুষ্ট বলে জরিপের ফল থেকে ধারণা পাওয়া গেছে। প্রায় ৭০ শতাংশ উত্তরদাতা কমবেশি তাঁদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন।
যেসব খাতে পিছিয়ে: বিদ্যুৎ ও দ্রব্যমূল্যের পরিস্থিতি সম্পর্কে নাগরিকেরা নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন সবচেয়ে বেশি। ২০১০ সালে বিদ্যু-পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, এমন বক্তব্যের পক্ষে আগের বছর ৪৩ শতাংশ উত্তরদাতা সমর্থন জানালেও এবার তা কমে এসেছে মাত্র ২৮ শতাংশে। অন্যদিকে ৪৭ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, বিদ্যুৎ-পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ২০০৯ সালে এই মনোভাব ছিল ২৩ শতাংশের। ৭২ শতাংশ নাগরিক বলেছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার অনেকাংশে বা পুরোপুরি ব্যর্থ। অথচ আগের বছর এ ব্যাপারে সরকারকে ব্যর্থ মনে করেছিলেন ৪১ শতাংশ উত্তরদাতা। জরিপের তুলনামূলক বিচারে দেখা যাচ্ছে, ২০০৯ সালের তুলনায় ২০১০ সালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গত বছর ৬৫ শতাংশ উত্তরদাতা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে মনে করেছিলেন। এ বছর সেই হার ছয় শতাংশ কমেছে।
অপরিবর্তিত ও বিভক্ত মত: জরিপের ফল থেকে জানা গেছে, ২০০৯-এর তুলনায় ২০১০ সালে দুর্নীতির চিত্র তেমন একটা বদলায়নি। তবে আগের বছরের মতো এবারও সরকারের পক্ষেই জনসমর্থন বেশি। বর্তমান সরকারের আমলে দুর্নীতি কমেছে—এমন মত প্রকাশ করেছেন ৪৩ শতাংশ উত্তরদাতা। আগের বছর এই মত ছিল ৪২ শতাংশের।
কর্মসংস্থান সৃষ্টির ব্যাপারে সরকার তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করছে—এমন বক্তব্যের পক্ষে-বিপক্ষে জনমত প্রায় বিভক্ত ছিল। ৪৮ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেছেন, সরকার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করছে, সমানসংখ্যক উত্তরদাতা সেটা মনে করেন না।
জীবনযাত্রার মান সরকারের প্রথম ও দ্বিতীয় বছরে কমবেশি একই রকম ছিল বলে উত্তরদাতারা মত দিয়েছেন। আগেরবার এ ব্যাপারে ৫১ শতাংশ ইতিবাচক মত দিয়েছিল, এবার ২ শতাংশ বেড়েছে।

সরকারের ভূমিকা
দলীয়করণ: আগের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের তুলনায় বর্তমান সরকারের আমলে দলীয়করণ বেড়েছে বলে ২০০৯ সালের চেয়ে এবার মত প্রকাশ করেছেন বেশি উত্তরদাতা। এবারের উত্তরদাতাদের ৪৭ শতাংশ মনে করেন, দলীয়করণ বেড়েছে। আগের বছর এই ধারণা ছিল ৪১ শতাংশের।
বিরোধী দলের সঙ্গে সরকারের আচরণ: ২০১০ সালে ৩৮ শতাংশ উত্তরদাতা মত দিয়েছেন, বিরোধী দলের সঙ্গে সরকারের আচরণ যথার্থ ছিল। অথচ এক বছর আগে এই ধারণা ছিল ৫৭ শতাংশ উত্তরদাতার। অন্যদিকে সরকারের আচরণ যথার্থ ছিল না, এমন ধারণা আগেরবারের ৪২ শতাংশ থেকে এবার বেড়ে ৬০ শতাংশ হয়েছে। বিরোধী দলকে সংসদে ফিরিয়ে আনতে সরকারের উদ্যোগ যথাযথ ছিল—এই ধারণার পক্ষেও নাগরিকদের সমর্থন বেশ কমে এসেছে। আগেরবার ৬৩ শতাংশ উত্তরদাতা এমনটি মনে করেছিলেন। এবার তা কমে ৪৯ শতাংশ হয়েছে।

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান
সংসদ: সংসদকে কার্যকর রাখার ব্যাপারে বতর্মান সরকারের কার্যক্রম নিয়ে আগের বছর ৬৫ শতাংশ উত্তরদাতা সন্তোষ প্রকাশ করলেও এবার তা ৫২ শতাংশে নেমে এসেছে।
বিচারব্যবস্থা: ৪৮ শতাংশ নাগরিক বলেছেন, সরকারের দুই বছরে বিচারব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। এক বছর আগে এই মত জানিয়েছিলেন ৫২ শতাংশ। বিচারব্যবস্থার অবনতি হয়েছে বলে মত দিয়েছেন ২৮ শতাংশ, যা আগের বছর ছিল ১৬ শতাংশ। ২৩ শতাংশ নাগরিক বলেছেন, পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এই হার আগের বছর ছিল ৩২ শতাংশ।
নির্বাচন কমিশন: নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে জনগণের মধ্যে আস্থা আগের তুলনায় বেড়েছে। কমিশন বর্তমান সরকারের আমলে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে—এমন মন্তব্য করেছেন ৫৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। ৩৮ শতাংশ এর বিপরীত মত দিয়েছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন: দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে কি না—এ বিষয়ে জনমত প্রায় বিভক্ত। এ ব্যাপারে ৪৮ শতাংশ নাগরিক ইতিবাচক ও ৪৫ শতাংশ নাগরিক নেতিবাচক মত প্রকাশ করেন।

রাজনীতির নানা দিক
রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন: দেশের রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে বলে ২০০৯ সালে ৫৯ শতাংশ উত্তরদাতা মত দিয়েছিলেন। ২০১০ সালে সেই মত ৪৭ শতাংশে নেমে এসেছে।
নৈরাজ্যের রাজনীতি: হরতাল-ভাঙচুর-সন্ত্রাসের মতো পুরোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতি ফিরে আসার ব্যাপারে জনগণের মধ্যে হতাশার মাত্রা বেড়েছে। আগেরবার ৫৯ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছিলেন, তাঁরা মনে করেন, রাজনীতিতে নৈরাজ্যের সংস্কৃতি আর ফিরে আসবে না। এবারের জরিপে এই হার ৫৩ শতাংশে নেমে এসেছে।
ধর্মভিত্তিক দলগুলোর রাজনীতি: ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে রাজনীতি করতে দেওয়া উচিত কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ৪০ শতাংশ সমর্থন দিলেও সমর্থন জানাননি ৫৯ শতাংশ উত্তরদাতা।

আওয়ামী লীগের ভূমিকা
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ও এর সমর্থক সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ডে সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন সব মিলিয়ে ৫৯ শতাংশ উত্তরদাতা। এবার তা নেমে এসেছে ৪২ শতাংশে। আওয়ামী লীগ দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে—আগেরবার এমন মনে করতেন ৪৭ শতাংশ উত্তরদাতা। এবার তা দুই শতাংশ কমেছে। বাকি প্রায় সবাই এর বিপরীত ধারণা প্রকাশ করেছেন।

বিরোধী দলের ভূমিকা
২০০৯ ও ২০১০ সালের জরিপে ৮০ শতাংশের বেশি উত্তরদাতা সংসদে বিরোধী দলের অংশ না নেওয়ার বিষয়টি পছন্দ করেননি। এবারের জরিপে ৬০ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, বিরোধী দল সংসদের বাইরে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। এ ছাড়া বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে বিরোধী দলগুলোর ভূমিকা নিয়ে ৩৯ শতাংশ উত্তরদাতা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন, সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ২৪ শতাংশ।

নেত্রী ও দল
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া: দুবারের জরিপেই বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছেন দুই নেত্রী। তবে তুলনামূলকভাবে দুজনের মধ্যে শেখ হাসিনার অবস্থান খালেদা জিয়ার চেয়ে ভালো। ২০১০ সালের জরিপে শেখ হাসিনাকে ভালো বলেছেন ৭৫ শতাংশ উত্তরদাতা, খারাপ বলেছেন ২৩ শতাংশ। খালেদা জিয়াকে ভালো বলেছেন ৭৬ শতাংশ, খারাপ বলেছেন ২২ শতাংশ উত্তরদাতা। দুই নেত্রীর মধ্যে কাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান—এই প্রশ্নের জবাবে ৪৮ শতাংশ শেখ হাসিনাকে এবং ৪০ শতাংশ উত্তরদাতা খালেদা জিয়াকে সমর্থন জানিয়েছেন।

অন্যান্য আলোচিত বিষয়
খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ি: খালেদা জিয়াকে যেভাবে তাঁর সেনানিবাসের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে হয়েছে, তার বিরুদ্ধে মত দিয়েছেন ৬১ শতাংশ উত্তরদাতা। কিন্তু বাড়ি ছাড়ার ইস্যু নিয়ে বিরোধী দলের হরতাল কমসূচির বিরোধিতা করেছেন ৭৫ শতাংশ নাগরিক।
যুদ্ধাপরাধের বিচার: বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারছে বলে এবার মনে করছেন গতবারের চেয়ে কমসংখ্যক উত্তরদাতা। এক বছর আগে ৮৬ শতাংশ নাগরিক এ প্রশ্নের ইতিবাচক জবাব দিয়েছিলেন, এবার তা নেমে এসেছে ৫৭ শতাংশে।
বিচারবহির্ভূত হত্যা: ২০০৯ সালের মতো ২০১০ সালেও বিচারবহির্ভূত হত্যার বিপক্ষে প্রায় একই সমান নাগরিক তাঁদের মত প্রকাশ করেছেন। এবারের জরিপে এই হার ছিল ৭৭ শতাংশ, আগেরবার এই হার ছিল ৭৮ শতাংশ।
সংবিধান: ’৭২-এর সংবিধানের মূলনীতিগুলো ফিরিয়ে আনার বিষয়ে নাগরিকদের মধ্যে সংশয়ের মাত্রা বেশি দেখা গেছে। ২৩ শতাংশ নাগরিক মূলনীতিগুলো ফিরিয়ে আনার পক্ষে মত দিলেও ৪১ শতাংশ উত্তরদাতা এর বিরোধিতা করেছেন। ৩৭ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তাঁরা বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত নন।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক: আগেরবারের মতো এবারও বেশির ভাগ উত্তরদাতা মনে করছেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। আগেরবার এই মনোভাব ছিল ৭৬ শতাংশের, এবার ৭২ শতাংশের। ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার প্রশ্নে অর্ধেকের কিছু বেশি উত্তরদাতা মত দিয়েছেন, দেশ এ থেকে লাভবান হবে। ক্ষতি হবে মনে করছেন ৩৮ শতাংশ নাগরিক।
গণমাধ্যমের প্রতি সরকারের মনোভাব: উত্তরদাতাদের ২৭ শতাংশ গণমাধ্যমের প্রতি সরকারের আচরণকে সমর্থন করলেও ৬৪ শতাংশ নাগরিকই বলেছেন, সরকারের আচরণ সঠিক ছিল না।