Wednesday, June 27, 2012

কক্সবাজারে পাহাড়ধস ও বজ্রপাতে ৭ জনের মৃত্যু

কক্সবাজারের অব্যাহত বৃষ্টির কারণে ২৬জুন মঙ্গলবার বজ্রপাত, পাহাড়ি ঢল ও ধসের ঘটনায় ৭ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে মহেশখালী উপজেলায় ৪ জন, কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুলে ১ জন, চকরিয়া উপজেলায় ১ জন এবং পেকুয়া উপজেলায় ১ জন নিহত হয়েছেন।

প্রবল বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসে ও পানিতে ডুবে মঙ্গলবার কক্সবাজারের মহেশখালী দ্বীপে ৪ জন নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে আরো ৫ জন।
দ্বীপের কালারমারছড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ ঝাপুয়ায় পাহাড় ধসে একটি বাড়ি চাপা পড়ে ঘটনাস্থলে মারা যান সখিনা বেগম (৪৫) নামে এক গৃহবধূ। এ ঘটনায় তার স্বামী শফিউল আলম (৫৩) আহত হয়েছেন। একই সময় উত্তর ঝাপুয়া গ্রামে পাহাড় ধসে ২টি ঘর চাপা পড়ে সাদ্দাম হোসেন (২৪) নামে এক তরুণ ও কিশোরী রাফি আকতার (১২) নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ৪ জন। দ্বীপের শাপলাপুর ইউনিয়নের জে.এম.ঘাট এলাকায় পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে ভেসে মারা গেছেন আবদুল মজিদ (৩৫) নামে এক ব্যক্তি। তিনি একজন মৃগী রোগী ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

এবিষয়ে মহেশখালী থানার পরিদর্শক (ওসি) রণজিত কুমার বড়ুয়া ৪ জন নিহত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। একিকে, বিকেল ৩টায় পেকুয়া উপজেলার সাবজীবন পাড়ার মৃত মোহাম্মদ সব্বিরের ছেলে মুবিনুল হক (৩২) বজ্রপাতে মারা গেছেন। এতে আহত হয়েছেন আবদুল আজিজ (২০) নামে আরও একজন।

পেকুয়া থানার পরিদর্শক (ওসি) মনিরুজ্জামান হতাহতের ঘটনা নিশ্চিত করেছেন। মঙ্গলবার একই সময়ে কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নে কাউয়ার পাড়া এলাকার মনজুর আলম (৪০) নামে এক ব্যক্তির বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে। খুরুশকুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুর রহিম জানান, মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়। অপরদিকে, চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের ৩নং ব্লকের খালকাচা পাড়ায় বজ্রপাতে একজন নিহত ও অপর একজন আহত হয়েছেন। বিকেল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিক আহমদ জানান, নিহত আলী আকবর (২৫) বদরখালী ইউনিয়নের ৩নং ব্লকের খাল কাঁচাপাড়ার ছাবের আহমদের ছেলে। আহত আলী আজগরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। একই সঙ্গে কক্সবাজার জেলার ৬ উপজেলার ৭৫ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। প্রায় একশ কিলোমিটার বেঁড়িবাধ ভেঙে জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে। জেলার ৩টি প্রধান নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

প্রবল বর্ষণে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রামঃ পরিস্থিতি চরম অবনতি

রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম শহরের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা তলিয়ে গেছে। গতকাল সকাল থেকে চট্টগ্রামে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরে পণ্য ওঠানামা ছিল বন্ধ।

বিকেলে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ গত রাতে ঢাকা ও সিলেটের সঙ্গে চট্টগ্রামের ট্রেন যোগাযোগও বন্ধ হয়ে যায়। পুরো শহরই কার্যত বিচ্ছিন্ন। পাহাড় ধসে ও দেওয়াল চাপায় মারা গেছেন অন্তত ১১জন।
নগরের বাকুলিয়া, চান্দগাঁও, আগ্রাবাদ, সিডিএ আবাসিক এলাকা, হালিশহরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গতকাল বিকেল থেকে ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ বিদ্যুতের সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সন্ধ্যার পর এসব এলাকা পানির সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। শহরের দুই-তৃতীয়াংশ তলিয়ে যাওয়ায় নগরে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় রিকশাই ছিল একমাত্র ভরসা।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে রেকর্ড ৩৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সারা দিনে নগরের প্রধান প্রধান সড়ক, উপসড়ক, অলিগলি ডুবে বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়ে। নগরের বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, চান্দগাঁও, খতিবেরহাট, বাকলিয়া, চাক্তাই, আছদগঞ্জ, আগ্রাবাদ, ট্রাঙ্ক রোড, সিডিএ আবাসিক এলাকা, মোগলটুলী, হালিশহর, এক্সেস রোড, ডিসি রোড, ষোলশহর, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, নালাপাড়া, মুরাদপুর, প্রবর্তক, কাপাসগোলা, বাদুড়তলাসহ বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গেছে।

চকবাজারের নাসির কলোনিতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি বাসায় হাঁটুপানিতে দাঁড়িয়ে আছে বাসিন্দারা। এই বৃষ্টিতে পাহাড়ি এলাকা খ্যাত নগরের আসকার দীঘিরপাড়, জামালখান, লালখান বাজারেও পানি উঠেছে। জামালখানের বাসিন্দা সৌমেন দত্ত জানান, ভারী বর্ষণের কারণে নালা ডুবে গিয়ে তাঁদের বাসায় পানি ঢোকে। এতে বাসার আসবাব নষ্ট হয়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার থেকে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় বৃষ্টিপাত শুরু হয়। গতকাল ভোর ছয়টা থেকে টানা বৃষ্টিতে নগরের বিভিন্ন স্থানে পানি উঠতে শুরু করে।

চট্টগ্রাম বন্দর: চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব সৈয়দ ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ জানান, বৃষ্টির কারণে বহির্ণোঙরে ১৩টি জাহাজ থেকে মালামাল খালাস হয়নি। বহির্ণোঙর থেকে বন্দর জেটিতে গতকাল আটটি জাহাজ ভেড়ার কথা ছিল, কিন্তু ভিড়েছে মাত্র চারটি। একটি জাহাজ বন্দর জেটি ছেড়ে গেছে। কনটেইনার জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানামা হয়েছে।

শাহ আমানত বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক স্কোয়াড্রন লিডার রবিউল হোসেন বলেন, ‘রানওয়েতে পানি উঠে যাওয়ায় বিকেল সাড়ে চারটা থেকে বিমানবন্দর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’ তিনি জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় রানওয়ের বাতি থেকে পর্যাপ্ত আলো পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার পর পানি নেমে গেলে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। তাতেও স্বাভাবিক হয়ে আসতে অন্তত ছয়-সাত ঘণ্টা তো লাগবেই।’

রেলওয়ে সূত্র জানায়, গতকাল বিকেল থেকে শুরু হওয়া ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সীতাকুণ্ডের কুমিরা ও ভাটিয়ারী এলাকায় রেললাইন তলিয়ে যায়। ফলে কুমিরা ও ভাটিয়ারীর মাঝামাঝি জায়গায় ৩৪ নম্বর সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকা ও সিলেটের ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। গতকাল সন্ধ্যার পর ঢাকাগামী তূর্ণা ও ঢাকা মেইল ও সিলেটগামী উদয়নের যাত্রা বাতিল করা হয়। একইভাবে ঢাকা ও সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনগুলো চট্টগ্রাম স্টেশনে ভিড়তে পারেনি।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী আখতারুজ্জামান হায়দার বলেন, ‘বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সীতাকুণ্ডের কুমিরা ও ভাটিয়ারি স্টেশনের মাঝামাঝি ৩৪ নম্বর রেল সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকা ও সিলেটের রেলযোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তাই আমরা সন্ধ্যার পর সব ধরনের ট্রেন চলাচল বাতিল করেছি।’

পিডিবির প্রধান প্রকৌশলী রইসউদ্দিন সরকার বলেন, ‘প্রবল বর্ষণে সাব-স্টেশন ও বিতরণকেন্দ্রগুলোর যন্ত্রপাতি পানিতে তলিয়ে যায়। নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছি। আরও কিছু এলাকায় ট্রান্সফরমারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়।’