Friday, February 15, 2013

কক্সবাজারে জামায়াতকর্মীসহ অন্তত ৭জন নিহত, কাল থেকে ৪৮ ঘন্টার হরতাল

শুক্রবার কক্সবাজার শহরে বিপুল রক্তপাত হয়েছে। পুলিশের গুলিতে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরকর্মীসহ অন্ততঃ সাত জন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অর্ধশতাধিক।
তাদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের স্থানীয় হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।

এছাড়াও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) বাবুল আকতারসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ এবং দুই শতাধিক জামায়াত-শিবির কর্মী ও শহরের বাসিন্দা আহত হয়েছেন।

নিহতরা হলেন- কক্সবাজার সদস উপজেলার কলিমুল্লাহর ছেলে তোফায়েল আহমেদ (২২), ইসলামপুর ইউনিয়নের ধর্মছড়া এলাকার মোহাম্মদ আলমের ছেলে নুরুল হক ওরফে মিয়া (৪২), পিএমখালী ইউনিয়নের নয়াপাড়ার মোস্তাক আহমদের ছেলে আবদুল্লাহ (২৭), রাবেতা আলমে ইসলামি আবাসিক মাদ্রাসার শিক্ষক নুরুল আলম (৪০) ও চট্টগ্রামের সাতকানিয়া এলাকার হামিদ আলীর ছেলে সালেহ আহমদ (৪২)।

নাম জানা গেলেও বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি নিহত  ফারুক আহমদের (২৫)।  এছাড়াও গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন অজ্ঞাত পরিচয়ের এক নারী। প্রত্যক্ষদর্শীরা শহরের ফুয়াদ আল খতীব হাসপাতালে তার লাশ নিয়ে যেতে দেখেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জুমার নামাজের পরে মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় কারাবন্দি জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মুক্তির দাবিতে ‘আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মুক্তি পরিষদের’ ব্যানারে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা মিছিল বের করলে পুলিশ গুলি ছোঁড়ে।

এ ঘটনায় দেশের প্রধান পর্যটন শহরটিতে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে। শহরে বিকেল ৪টা ২০ মিনিটের দিকে শহরে তিন জনের বেশি মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। শহরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি)সদস্যরা টহল দিচ্ছে। এ পর্যন্ত দুই শতাধিক জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।

মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মুক্তি দাবি ও পুলিশের গুলিতে কর্মী নিহত হওয়ার এ ঘটনার প্রতিবাদে জেলায় শনিবার সকাল থেকে ৪৮ ঘন্টার হরতাল ডেকেছে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মুক্তি পরিষদ।

পুলিশের নির্বিচার গুলিতে বিপুল রক্তপাত ও জামায়াতের হরতাল ঘোষণায় পর্যটন শহরটিতে অবস্থানরত দেশি-বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, জুমার নামাজের পর হাশেমিয়া আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ‘আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মুক্তি পরিষদে’র ব্যানারে জামায়াত ও ছাত্রশিবির বিক্ষোভ মিছিল বের করার চেষ্টা করলে শত শত পুলিশ তাদের বাধা দেয়।

এ সময় পুলিশের সাথে সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষ শুরু হলে পুলিশ একতরফা রাবার বুলেট ও গুলিবর্ষণ শুরু করে। সংঘর্ষ দ্রুত হাশেমিয়া মাদ্রাসা এলাকা থেকে শহরে প্রধান সড়কের খুরুস্কুল রাস্তার মাথা হয়ে টেকপাড়া পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।

সংঘর্ষ বিকাল ৩টা পর্যন্ত সংঘর্ষ স্থায়ী হয়। এরপর জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীরা হাশেমিয়া মাদ্রাসা ও খুরুস্কুল রাস্তার মাথা এলাকায় সড়ক অবরোধ করে।

প্রত্যক্ষদর্শিরা দাবি করেছেন, বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে র‌্যাবের একটি দল প্রধান সড়কের পূর্ব দিক দিয়ে এসে সড়ক অবরোধকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে।

ঘটনার পর থেকে একে একে লাশ ও আহতদের কক্সবাজার শহরের ফুয়াদ আল খতিব হাসপাতালে আনা হয়। এই হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা  ডা. শাহআলম জানান, ‘বিকাল ৩টা পর্যন্ত তাদের হাসপাতালে দুইজনের লাশ আনা হয়েছে। এছাড়াও অন্তত ৩০ জন আহতকে ভর্তি করা হয়েছে।’

তবে ফুয়াদ আল খতীব হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা দাবি করেছেন, হাসপাতালে ৩ জনের লাশ রয়েছে। এদের মধ্যে একজন মহিলা রয়েছে।

হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের তৃতীয় তলায় দুইজনের লাশ স্ট্রেচারে পড়ে রয়েছে। আহতদের দু’টি অপারেশন থিয়েটারে জরুরি চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে নিহত আরেকজন মহিলার লাশ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

কক্সবাজার জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জি এম রহিম উল্লাহ জানান, পুলিশের গুলিতে তাদের ৪ জন কর্মী ‘শাহাদত’ বরণ করেছেন। পুলিশের একতরফা গুলিতে তাদের মৃত্যু হয় দাবি করে তিনি বলেনন, ‘পুলিশ শান্তিপূর্ণ মিছিলের চেষ্টার শুরুতেই গুলিবর্ষণ করেছে।’

ঘটনার ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার মো. আজাদ মিয়া বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মাঠে নামানো হয়েছে।
কক্সবাজার ১৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. খালেকুজ্জামান বলেন, ‘বেলা দুইটার দিকে বিপুলসংখ্যক বিজিবির সদস্য মাঠে নেমেছেন। আমরা পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছি।’

No comments:

Post a Comment