Tuesday, December 07, 2010

মহাস্থানগড়ের আশপাশে ইমারত নির্মাণকাজ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশ

গুড়ার মহাস্থান গড়ের ঐতিহাসিক স্থাপনার আশপাশে ইমারত নির্মাণকাজ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বগুড়ার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে ওখানকার মাজার উন্নয়ন কমিটির সভাপতি মমতাজ উদ্দিনকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সব নির্মাণসামগ্রী অপসারণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জনস্বার্থে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে তিন আইনজীবী রিটটি দায়ের করেন। প্রাথমিক শুনানির পর আদালত রুল জারিসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন।
রুলে ঐতিহাসিক নিদর্শন মহাস্থানগড়ের আশপাশের এলাকায় ভবন নির্মাণ বন্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণে নিষ্ক্রিয়তাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। সংস্কৃতিসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিবসহ আটজনকে তিন সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া নির্দেশ বাস্তবায়নের পরবর্তী পাঁচ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিট আবেদনকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। সরকারপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আলতাফ হোসেন।
শুনানিতে মনজিল মোরসেদ বলেন, কয়েক শ বছর আগে সেন, পাল, মৌর্য ও গুপ্ত রাজাদের রাজধানী ছিল মহাস্থানগড়। বাণিজ্য ও সংস্কৃতির একটি প্রধান কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছিল এটি। মহাস্থানগড় রক্ষায় সরকারের দায়িত্ব রয়েছে। আইনের বিধান অনুসারে ঐতিহাসিক স্থাপনার আশপাশে নির্মাণের ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তা সত্ত্বেও আশপাশে মাজার উন্নয়ন কমিটির নামে বহুতল ভবন নির্মাণ চলছে। এর ফলে মহাস্থানগড়ের বৈশিষ্ট্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক ওই নিদর্শনের স্বাভাবিক সৌন্দর্য দর্শনে বঞ্চিত হবে।
শুনানির পর আদালত রুল জারি করে এ আদেশ দেন।

'জামায়াতি শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা'

'জামায়াতি শিক্ষকদের বিরুদ্ধে' অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে একথা জানান তিনি। ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছেন। গত জোট সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া জামায়াতি শিক্ষকরা দলীয় আদর্শ ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বিস্তার করছে অভিযোগ করে চট্টগ্রাম-৮ আসনের সাংসদ নুরুল ইসলাম বিএসসি শিক্ষামন্ত্রীর কাছে জানতে চান-তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না?
নুরুল ইসলাম বিএসসির ওই প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, "ওই সময়ে নিয়োগ পাওয়া জামায়াতি শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে বিধি মোতাবেক অবশ্যই আইনানানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।" এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী জানান, চট্টগ্রাম বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির দক্ষ ও দৃঢ় একজনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।

"আগামী ফেব্র"য়ারির মধ্যে প্রত্যেক সাংসদের কাছ থেকে এমপিওভুক্তির জন্য উপযুক্ত অন্তত তিনটি স্কুলের নাম সংগ্রহ করা হবে," বলেন শিক্ষামন্ত্রী । নওগাঁ-৪ আসনের সাংসদ ইমাজ উদ্দিনের প্রশ্নের জবাবে নাহিদ জানান, বর্তমান সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরে ১৬২৪টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। ২০১০-২০১১ অর্থবছরে প্রচলিত নীতিমালার আলোকে উল্লে�খযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পর্যায়ক্রমে এমপিওভুক্ত করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। ২০১২ সালে শিক্ষাক্রমে উত্ত্যক্ততার বিরুদ্ধে সচেতনতা
নূর-ই হাসনা লিলি চৌধূরীর প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী জানান, উত্ত্যক্ততা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে পাঠ্যপুস্তকে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আগামী শিক্ষাক্রম পরিমার্জনে এ বিষয়ে বিবেচনা রেখে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হবে।

২০১২ সালের পাঠ্যপুস্তকে তা অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী। নওগাঁ-৬ আসনের সাংসদ মো. ইসলাইল আলমের এক প্রশ্নের জবাবে নুরুল ইসলাম নাহিদ জানান, ২০১১ শিক্ষাবর্ষে ৩ কোটি ২৪ লাখ ৭৩ হাজার ১৬৮ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ২৩ কোটি ২০ লাখ ৫৪ হাজার ২৩৪ সংখ্যক পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও সরবরাহ কাজ চলছে।

এতে মাধ্যমিক, এসএসসি (ভোকেশনাল), ইবতেদায়ী দাখিল ও দাখিল (ভোকেশনাল) এ মোট ৩৩৫ কোটি টাকা এবং প্রাথমিক স্তরের ১৮০ কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট রয়েছে। কুমিল্ল�া-৮ আসনের সাংসদ নাছিমুল আলম চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে নুরুল ইসলাম নাহিদ জানান, দেশের ২৩ জেলাসহ বরিশাল ও সিলেট বিভাগের একটি করে মোট দু'টি মহিলাসহ ২৫টি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট স্থাপনের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।

এর মধ্যে ১০ জেলায় (গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, খাগড়াছড়ি, গাইবান্ধা, নীলফামারী, নাটোর, বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গা ও পিরোজপুর) একটি করে পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট এবং বরিশাল ও সিলেট বিভাগে একটি করে মহিলা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট স্থাপনের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে।

পাথরঘাটার কয়লা কারখানাগুলোয় অবাধে পুড়ছে সুন্দরবনের কাঠ

সুন্দরবন সংলগ্ন বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বলেশ্বর নদের তীরবর্তী সংরক্ষিত বন এলাকার মাদারতলী, বকুলতলা এবং পাশের রায়হানপুর, মানিকখালী, বাঁশতলা, বাদুরতলা গ্রামের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে কাঠকয়লা তৈরির ১০-১২টি কারখানা। এসব কারখানা থেকে নির্গত কার্বন মনো-অক্সাইড আশপাশের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা আবু আল ফাত্তাহ বলেন, ‘ঘনবসতিপূর্ণ এবং সংরক্ষিত বন এলাকায় এভাবে কাঠকয়লা পোড়ানো হলে এখান থেকে নির্গত কার্বন মনো-অক্সাইডের প্রভাবে গাছপালার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত এবং বিশেষ করে শিশুদের শ্বাসতন্ত্রের স্থায়ী ক্ষতিসহ মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এ ছাড়া জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব তো আছেই।’জানা গেছে, পাথরঘাটায় ১০-১২টি কাঠকয়লা উৎপাদন কারখানায় ৪০ থেকে ৪৫টি চুলা রয়েছে। একেকটি চুলায় ৫০০ মণ কাঠ টানা চার-পাঁচ দিন জ্বলতে থাকে। এ থেকে প্রায় ৩০০ মণ কয়লা উৎপাদিত হয়। এসব কয়লা ঢাকা, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলার হোটেল এবং স্টিল মিলে ব্যবহূত হয় বলে কয়েকজন কারখানা মালিক জানান।
এলাকাবাসী জানায়, এসব কারখানার অদূরে মানিকখালী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মানিকখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কয়েকটি হাটবাজার, বাসস্ট্যান্ড, চরদুয়ানী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি ও বন বিভাগের চৌকি।
উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় কারখানাগুলো বন্ধের সিদ্বান্তের কথা স্বীকার করে পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মরিয়ম চৌধুরী বলেন, কয়লা কারখানাগুলো বন্ধের ব্যাপারে সিদ্বান্ত হলেও উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না তা আমার কাছে বোধগম্য নয়।
সম্প্রতি সরেজমিনে উপজেলার কাঁঠালতলীর ইউনিয়নের সংরক্ষিত বন এলাকার বকুলতলার একটি কাঠকয়লা তৈরির কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে, চুলাগুলোর চারপাশে ও পাশের জঙ্গলের মধ্যে সুন্দরী কাঠের বড় বড় গুঁড়ি স্তূপ করে রাখা হয়েছে। একপাশে স্তূপাকারে রাখা হচ্ছে পোড়ানো কয়লা। বিশাল আকৃতির চুলাগুলো জ্বলছে, বেরোচ্ছে দুর্গন্ধ। কারখানার মালিক জাহাঙ্গীর বলেন, ‘পাথরঘাটায় এ রকম ১০-১২টি কারখানা আছে। কেউ লাইসেন্স নেয়নি। কোথা থেকে লাইসেন্স নিতে হয় তাও জানি না।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক জানান, কারখানার চারটি চুলায় দিন-রাত কাঠ পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে কয়লা।
কাঁঠালতলী ইউনিয়নের মানিকখালী গ্রামের সিদাম মিয়ার বাজারে একটি কারখানা আছে। এ ছাড়া মানিকখালী খালের পাড়ে আরও চার-পাঁচটি কারখানা নির্মিত হচ্ছে। বাজারের কারখানাটির মালিক পনু হাওলাদার। এখানে চারটি চুলায় দিন-রাত কাঠ পোড়ানোয় এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা। পনু হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের কারখানার কোনো অনুমতি নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছি। সমস্যা হচ্ছে এমন অভিযোগ কেউ করেনি।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করেন, বলেশ্বর নদের পশ্চিম পাড়ে সুন্দরবন। নদের পূর্ব পাড়ে এসব কয়লা কারখানা স্থাপন করায় খুব সহজেই সুন্দরবনের কাঠ এনে কয়লা উৎপাদন করা যাচ্ছে। এ ছাড়া কারখানার আশপাশেই হরিণঘাটা, লালদিয়া, জ্ঞানপাড়া, চরদুয়ানী, লাঠিমারাসহ বেশ কয়েকটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকেও সহজে কাঠের সংস্থান হয়।
জানা গেছে, সুন্দরবনের কচিখালী, বগী, সুপতি, শরণখোলা ও চান্দেশ্বর এলাকা থেকে পাথরঘাটার সংঘবদ্ধ একটি চক্র কয়লা তৈরির জন্য সুন্দরীগাছ কেটে আনছে। সম্প্রতি চরদুয়ানী বনকেন্দ্রের কর্মকর্তারা বকুলতলার জাহাঙ্গীরের কয়লা কারখানা থেকে ২৩০ ঘনফুট সুন্দরী কাঠ উদ্ধার করেন।
বন বিভাগের পাথরঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল লতিফ খান বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েক দিন আগে জাহাঙ্গীরের কারখানার চুলাগুলো ভেঙে দিয়েছিলাম। অচিরেই আমরা অভিযানে নামব।’ তিনি আরও বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের সনদ ছাড়া কোনোভাবেই এসব কারখানা গড়ে তোলা যায় না। কারখানাগুলো বনের জন্য ক্যানসারের মতো। এখানে বনের ভারী কাঠ, প্রধানত সুন্দরী কাঠ ব্যবহূত হয়। পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইএনও) মো. সোহরাব হোসেন বলেন, ‘এ ব্যাপারে অভিযান চালানোর জন্য পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি।’

ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলা শুরু হচ্ছে আজ

ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলা আজ বুধবার শুরু হচ্ছে। ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেলা চলবে। তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ আজ বিকেল চারটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে এ মেলার উদ্বোধন করবেন। মেলায় এবারের প্রতিপাদ্য ‘রূপকল্প ২০২১: রূপায়নে গ্রন্থ’। সচিবালয়ের তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন-কক্ষে গতকাল মঙ্গলবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী জানান, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে এ বইমেলা হচ্ছে।
এর আগে ‘ঢাকা বইমেলা’ নামে ১৪ বার মেলাটি হয়। আর এবার নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলা’ নামে মেলাটি হচ্ছে। ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন বেলা দুইটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত মেলা চলবে। ছুটির দিন মেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত।
১৫১টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সংস্থার ২২৩টি স্টল থাকছে এবারের মেলায়। মেলার বাজেট ৩০ লাখ টাকা। দর্শনার্থীদের মেলায় ঢুকতে লাগবে পাঁচ টাকা। বিদেশি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভারতের ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট, ইরান কালচারাল সেন্টার এবং বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস বইমেলায় অংশ নেবে।
মেলা উপলক্ষে আজ সকাল নয়টায় গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের চত্বর থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়ক পর্যন্ত বর্ণাঢ্য ‘বুক-র‌্যালি’ অনুষ্ঠিত হবে। বইমেলার মঞ্চে প্রতিদিন সন্ধ্যায় সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া সেমিনার, লেখক-পাঠক-প্রকাশক মুখোমুখি অনুষ্ঠান, রাজধানী ঢাকার ৪০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে মুক্ত আলোচনা, মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক বিশেষ আলোচনা ও নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের মতো অনুষ্ঠান থাকছে।
রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা- পনায় ছাত্রছাত্রী দলগতভাবে বিনা টিকিটে বইমেলা পরিদর্শনের সুযোগ পাবে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে সংস্কৃতিসচিব সুরাইয়া বেগম, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক কবি রফিক আজাদ এবং প্রধান তথ্য কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী: ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলা উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান বলেন, বই অতীত ও বর্তমানের মধ্যে সেতুবন্ধ রচনাসহ যুগে যুগে বিভিন্ন মনীষীর লব্ধ জ্ঞান, চিন্তাচেতনা ও সৃজনশীলতা এক যুগ থেকে আর যুগে পৌঁছে দেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য অত্যন্ত সময়োপযোগী। নতুন পাঠক তৈরি, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং গ্রন্থ প্রচারে এ বইমেলা কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

 তৃতীয় প্রান্তিকে ভারতের প্রবৃদ্ধি ৮.৯ শতাংশ

ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান দপ্তরের এক প্রতিবেদনে আজ বুধবার এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও প্রবৃদ্ধির এই হারকে ভারতের অর্থনীতির একটি সাফল্য হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। একই সময় ভারতে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৮ শতাংশ এবং নির্মাণ খাতে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, কৃষি উত্পাদন ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারতের অর্থনীতি চাঙা হয়ে উঠেছে। পর্যাপ্ত মৌসুমি বৃষ্টিপাতের কারণে কৃষি উত্পাদন বেড়েছে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ । বৈশ্বিক মন্দা থেকে বেরিয়ে আসতে দেশের ১২০ কোটি মানুষকে ব্যাপক প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় নিয়ে আসায় ওই প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে বলেও অনেকে মত দিয়েছেন।
বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভারত অন্যতম দ্রুত অগ্রসরমাণ দেশ। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি চীনের পরই অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ভারতের অবস্থান। একই সময় চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৯ দশমিক ৬ শতাংশ।
ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় কিছুদিন আগে দারিদ্র্যের হার কমিয়ে নিয়ে আনতে আগামী ২০১১ সালের মধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ডাবল ডিজিটে উন্নীত করার লক্ষ্যের কথা বলেছিলেন। বাসস।

যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে ফাইল আদান-প্রদানের সাইট বন্ধ!

ম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে ফাইল আদান-প্রদানের ৭০টিরও বেশি ওয়েবসাইট ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় জড়িত প্রতিষ্ঠান ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস ইনফোর্সমেন্ট এজেন্সি (আইসিই) থেকে এসব ওয়েবসাইট ব্লক করার ব্যাপারে অভিযোগে বলা হয়, এ সাইটগুলোর মাধ্যমে অনুমোদনহীন গান, ভিডিওচিত্র ও চলচ্চিত্র ডাউনলোডের পর বিপণন করা হয়। তবে শুধু ফাইল আদান-প্রদানই নয়, এসব সাইটের মাধ্যমে চুরি হওয়া বিভিন্ন পণ্যও বিক্রির অভিযোগ রয়েছে।
এর আগে সম্প্রতি সুইডেনে একটি আদালতের রায়ে ফাইল আদান-প্রদানের অন্যতম একটি সাইট পাইরেট বে-এর বিরুদ্ধে রায় দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রে এরই মধ্যে টরেন্ট সার্চ ইঞ্জিন সাইট বিটটরেন্ট ও টরেন্ট ফাইন্ডার (www.torrent-finder.com), পণ্য বিপণনের অনুমোদনহীন সাইট লুইসভিতনআউটলেটস্টোর (www.louis-vuitton-outlet-store.com) ও বুরব্যারিআউটলেটশপ (www.burberryoutletshop.com), গান নামানোর র‌্যাপগডফাদার্স (www.rapgodfathers.com) এবং ভিডিও ও চলচ্চিত্র বিপণনে মাইড্রিমওয়াচেসসহ (www.mydreamwatches.com) বেশ কিছু ওয়েবসাইট ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। ব্লক করে দেওয়ার পর এখনো বিকল্প উপায়ে এসব সাইট তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে এখন পর্যন্ত ঠিক কতগুলো ওয়েবসাইট ব্লক করা হয়েছে, সে তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। এ ব্যাপারে আইসিই চূড়ান্তভাবে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
ব্লক করা সাইটগুলোতে এ মুহূর্তে প্রবেশ করার পর আইসিইর একটি বার্তা দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের ডোমেইনের (.uk) আওতায়ও এ ধরনের কার্যক্রম চালানো হবে বলে জানা গেছে। —বিবিসি অবলম্বনে নুরুন্নবী চৌধুরী

অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ সংশোধন বিল সংসদে উত্থাপিত

র্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ (সংশোধন) বিল-২০১০ আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। সংসদে উত্থাপিত এই বিলে বাংলাদেশের নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দাদের কাছে অর্পিত সম্পত্তি ফেরত দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। এ আইন কার্যকর হওয়ার ২১০ দিনের মধ্যে প্রত্যর্পণযোগ্য অর্পিত সম্পত্তি জেলাওয়ারি তালিকা প্রস্তুত করে সরকারি গ্রেজেট প্রকাশ করা হবে।এ ছাড়া সংসদে আজ দুটি বিল পাস হয়েছে। বিল দুটি হলো বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল বিল-২০১০ এবং বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা বিল-২০১০।
ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম অর্পিত সম্পত্তি বিলটি উত্থাপন করেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আগামী এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বিলটি ভূমি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। আইনে প্রত্যর্পণযোগ্য অর্পিত সম্পত্তির তালিকা সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হওয়ার ৩০ দিন পর সরকার যত দ্রুত সম্ভব ওই সম্পত্তি প্রত্যর্পণ করবে।
প্রস্তাবিত এ আইনে আরও বলা হয়েছে, প্রত্যর্পণযোগ্য সম্পত্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নয় এরূপ কোনো সম্পত্তি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে সরকারের নামে রেকর্ডভুক্ত হলে যদি কোনো ব্যক্তি ওই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করেন, তাহলে তিনি ওই তালিকা প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে সব কাগজপত্র ও প্রয়োজনীয় প্রমাণাদিসহ সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা মহানগর কমিটির সভাপতির কাছে অবমুক্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন।
বলা হয়, আবেদন প্রাপ্তির সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার ১২০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা মহানগর কমিটি প্রাপ্ত সব আবেদন যাচাই-বাছাই করে আবেদনকারীর শুনানি গ্রহণ করবে এবং প্রয়োজনে সরেজমিন তদন্ত করবে। এ ব্যাপারে কমিটির সুপারিশসহ ৪৫ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠাবে। ৩০ দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসন তার সিদ্ধান্ত দেবে।
তবে এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তিনি জেলা প্রশাসকের সিদ্ধান্তের ৩০ দিনের মধ্যে ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে আবেদন করতে পারবেন। এ আপিল আবেদন প্রাপ্তির ৬০ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটি পক্ষগুলোর শুনানি গ্রহণ করে লিখিতভাবে সিদ্ধান্ত দেবে। এতে কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।

গদ্যকার্টুনঃ অল্প স্বল্প গল্প

ই কৌতুকটা মার্কিন রাজনীতি নিয়ে। ওই দেশে প্রধান রাজনৈতিক দল দুটো। রিপাবলিকান আর ডেমোক্র্যাট। দুজন আমেরিকান রাজনীতিক গেছেন বনের ধারে তাঁবুবাস করার জন্য। একজন রিপাবলিকান আর একজন ডেমোক্র্যাট। তাঁরা পাশাপাশি তাঁবু গাড়লেন। রিপাবলিকান ভদ্রলোক তাঁর সঙ্গে এনেছেন দুই ধরনের ছুরি আর একটা বন্দুক। সঙ্গে আরও আছে রান্না করার কড়াই। আর ডেমোক্র্যাট ভদ্রলোক এনেছেন বিখ্যাত প্রামাণ্য ছবি ফারেনহাইট ৯/১১-এর ডিভিডি। মাইকেল মুরের এই ছবিটি ভীষণভাবে বুশবিরোধী।তাঁবুবাস শুরু হলো।
এ সময় একটা নেকড়ে আক্রমণ করায় দুজনেই মারা গেলেন।
মৃত্যুর পর তাঁদের জিজ্ঞেস করা হলো, আশ্চর্য তো, তোমাদের হাতে এত অস্ত্র ছিল, বন্দুক ছিল, ছুরি ছিল, তার পরও তোমরা বাঁচার চেষ্টা করলে না কেন?
ডেমোক্র্যাট বললেন, নেকড়েটাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমি বন্দুকটা হাতে নিলাম। তখন আমার মনে হলো, বন্দুক হলো একটা ডানপন্থী অস্ত্র। একজন ডেমোক্র্যাট হয়ে আমি এটা ব্যবহার করতে পারি না। তারপর আমি একটা ছুরি হাতে নিলাম। নেকড়েটার ওপরে চড়াও হতে যাব, তখন মনে হলো, নেকড়ে হলো বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী। একে আমি মারতে পারি না। তখন ভাবলাম, কড়াইটার ওপর কাঠ দিয়ে বাড়ি দিয়ে শব্দ করি। তাহলে নেকড়েটা পালাবে। তখন মনে হলো, এখন যদি আমি শব্দ করি, তাহলে পরিবেশদূষণ হবে।
আর তারপর মনে হলো, এই যে কাঠগুলো আনা হয়েছে রান্নার জন্য, এতে কার্বন নিঃসরিত হবে। পৃথিবীর জলবায়ুর ক্ষতি হবে। তখন আমি জ্বালানি কাঠগুলো সব বনের ভেতরে ছুড়ে মারলাম। আর কড়াইটাকে ছুড়ে মারলাম আরেক দিকে।
তার পরও তোমার হাতে তো ফারেনহাইট ৯/১১-এর ডিভিডিটা ছিল। তুমি তো ওটা চালাতে পারতে।
আসলে আমি তাই করছিলাম। আমি যখন ছবিটা চালাতে লাগলাম, তখন এতই আত্মহারা হয়ে গেলাম যে নেকড়ে আমাকে খেয়ে ফেলল।
আচ্ছা, আর রিপাবলিকান, তুমি মারা গেলে কীভাবে? তুমি তো আর বন্দুক চালাতে দ্বিধা কর না।
রিপাবলিকান বলল, ঠিক তাই। নেকড়েটা যখন ডেমোক্র্যাটটাকে আক্রমণ করল, আমি তাতে বাধা দেওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি।
তোমার নিশ্চয়ই একটা নেকড়ে মারতে বিবেকে বাধে, না?
বিবেক? একটা নেকড়ের জন্য সহানুভূতি। এসব থাকলে আমি রিপাবলিকান কেন?
তাহলে তুমি কী করলে?
আসলে নেকড়েটা আমার দিকে এগিয়ে আসতেই বন্দুক তুলে নিয়ে আমি ট্রিগারে চাপ দিই। নেকড়ে মারা যায়।
তাহলে তুমি মারা গেলে কীভাবে?
আসলে ডেমোক্র্যাটটা আমার রান্নার কড়াই আর কাঠগুলোকে ছুড়ে মেরেছিল। আর আমি বাধ্য হয়েছিলাম নেকড়ের মাংস রান্না না করেই ভক্ষণ করতে। সেই অখাদ্য সহ্য করতে না পেরে আমি মারা যাই।
গল্পটার মধ্যে তেমন মজা নেই। কিন্তু দুই দলের রাজনৈতিক প্রবণতাগুলো এই গল্পে তীব্রভাবে উপস্থিত।
ভাবছি, গল্পটাকে বাংলাদেশের উপযোগী করতে হলে কী করতে হবে।
আওয়ামী লীগ আর বিএনপির দুজন বনে গেছেন বনের ধারে বনভোজন করতে।
এ সময় একটা বাঘ এল।
আওয়ামী লীগার বন্দুক তুললেন, তখন তাঁর মনে পড়ল, শেখ হাসিনা কেবল বাঘ সম্মেলন থেকে ফিরেছেন। একজন আওয়ামী লীগার হয়ে বাঘ তিনি মারতে পারেন না।
তখন তিনি ভাবলেন, বাঘটাকে তাড়িয়ে দেওয়া দরকার। তিনি বন্দুক দিয়ে ফাঁকা আওয়াজ করতে লাগলেন।
বিএনপির রাজনীতিক বলে উঠলেন, ফাঁকা আওয়াজ, ফাঁকা আওয়াজ। বাঘ আওয়ামী লীগারকে খেয়ে ফেলল।
তখন বিএনপির ভদ্রলোক বন্দুক চালিয়ে বাঘটাকে মেরে ফেললেন। তারপর বাঘটাকে রান্না করেই খেয়ে ফেললেন। তাহলে তিনি মারা গেলেন কেন? কারণ বাঘের পেটে আওয়ামী লীগার ছিলেন। বিএনপির পক্ষে আওয়ামী লীগকে হজম করে ফেলা সম্ভব নয়।
এটা স্রেফ গল্প। এটা নিয়ে বেশি কিছু না ভাবাই ভালো।
আরেকটা গল্প।
প্রেসিডেন্ট বুশ তাঁর নিজের এলাকায় প্রাতর্ভ্রমণ করছেন। দেখলেন, একটা বাচ্চা ছেলে কতগুলো সদ্য জন্ম নেওয়া কুকুরের ছানা নিয়ে পথের ধারে খেলছে। বুশ জিজ্ঞেস করলেন, বাবু, তোমার কুকুরছানাগুলো রিপাবলিকান, নাকি ডেমোক্র্যাট?
রিপাবলিকান। বালক জবাব দিল।
বুশ খুশি হয়ে বিদায় নিলেন।
কয়েক দিন পর আবার সেই বালকের সঙ্গে একই জায়গায় বুশের দেখা। তিনি আবারও জিজ্ঞেস করলেন, বাবু, তোমার কুকুরছানাগুলো রিপাবলিকান, নাকি ডেমোক্র্যাট?
ছেলেটা জবাব দিল, ডেমোক্র্যাট।
বুশ আশাহত হয়ে বললেন, কয়েক দিন আগেই না বললে ওরা রিপাবলিকান?
হ্যাঁ, তখন ওরা রিপাবলিকান ছিল।
আর এখন?
ওরা ডেমোক্র্যাট হয়ে গেছে।
কী করে?
কারণ এই কদিনে ওদের চোখ ফুটে গেছে।
আমেরিকা থেকে আবার দেশে আসি। দেশের খবর হলো, বিএনপি বলে দিয়েছে তারা জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনে যাবে না।
কিন্তু সংসদ সদস্য হিসেবে যে বেতন তাঁরা পান, সেটা কি তাঁরা উত্তোলন করবেন?
আর উপজেলা চেয়ারম্যানরা বলেছেন, তাঁদের দাবি না মানা হলে তাঁরা আমরণ অনশন করবেন।
আমাদের নেতারা শক্তিশালী স্থানীয় সরকার চান না কেন?
আচ্ছা, এই কৌতুকটা বলে শেষ করে দিই। তিনজন স্বর্ণকেশিনী বরফঢাকা এক নির্জন প্রান্তরে আটকা পড়েছে। তাদের গাড়ি অচল হয়ে পড়েছে। তুষারপাতের কারণে ওই রাস্তা বন্ধ। এই সময় ওরা একটা প্রদীপ কুড়িয়ে পেল। সেটাতে ঘষা দিতেই বেরিয়ে এল আলাউদ্দিনের দৈত্য। সে বলল, তোমরা তিনজন। প্রত্যেকে একটা করে হুকুম দাও। আমি তালিম করব।
প্রথমজন বলল, আমাকে আমার বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাও।
একটু পরে দেখা গেল, বাড়িতে নিজের বিছানায় সে শুয়ে আছে।
দ্বিতীয়জন বলল, আমাকে একটা রাজপ্রাসাদে নিয়ে যাও।
সে দেখতে পেল, একটা রাজপ্রাসাদের ভেতরে সে প্রবেশ করেছে।
তৃতীয়জন বলল, আমার খুব একা একা লাগছে। ওদের দুজনকে ফিরিয়ে আনো।
এটা হলো বোকামির গল্প।
কিন্তু জাতীয় সংসদ থেকে সংসদ সদস্যদের বের করে আনতে পারলে আসলে কার লাভ হবে?
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।

দাম যৌক্তিক হওয়া উচিতঃ মিল্ক ভিটা তরল দুধ

মিল্ক ভিটার ব্যবস্থাপনা কমিটি তাদের তরল দুধের খুচরা দাম লিটারপ্রতি দুই টাকা বাড়িয়ে ৫০ টাকা নির্ধারণের একটি সিদ্ধান্ত গত সপ্তাহে গ্রহণের পরপরই প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে বাতিল করা হয়েছে। ইচ্ছামতো দাম বাড়ানোর জন্য যখন ভোজ্যতেলের ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বাণিজ্যমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে দাম কিছুটা কমাতে বাধ্য করলেন, তখন সরকারের আওতাধীন একটি প্রতিষ্ঠান কীভাবে দুধের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে পারে? মন্ত্রণালয় ও সমবায় অধিদপ্তর বলছে, তারা এ ব্যাপারে কিছু জানত না। মিল্ক ভিটা কর্তৃপক্ষ একতরফাভাবে দাম বাড়াতে পারে না।
এই মুহূর্তে দুধের দাম বাড়ানোর কোনো কারণ নেই, তাই দাম বাড়ানোর উদ্যোগটি বাতিল করা হয়েছে। এর আগেও আমরা দেখেছি, মিল্ক ভিটা হঠাৎ করে দাম বাড়ায়, কাউকে কিছু জানানোর প্রয়োজনও বোধ করে না। এক সকালে দোকানে কিনতে গিয়ে ক্রেতা জানতে পারে যে দুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর আগে ছিল লিটারপ্রতি ৪৬ টাকা। এখন ৪৮ টাকা। কয়েক বছর আগে ছিল ২৮ টাকা লিটার। এরপর হঠাৎ দফায় দফায় দাম বাড়ানো হতে থাকে।
এটা ঠিক যে বাজারে অনেক জিনিসের দাম বছর বছর বাড়ে। কিন্তু অন্তত সরকারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্যের দাম যেন খেয়ালখুশিমতো বাড়ানো না হয়, সেটা নিশ্চিত করা দরকার। কারণ সরকারই যদি দাম বাড়ায়, বেসরকারি মালিকেরা কেন বাড়াবেন না?
মিল্ক ভিটা নিয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। আগে হিসাব নেওয়া হোক প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ে সামঞ্জস্য আছে কি না, প্রতিষ্ঠানটির দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ হয়েছে কি না। মিল্কভিটা সদ্য সমাপ্ত ২০০৯-১০ অর্থবছরে প্রায় ১৬ কোটি টাকা মুনাফা অর্জনের রেকর্ড করেছে। কাজেই এই মুহূর্তে মিল্ক ভিটাকে লাভজনক করার জন্য দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করা হলে মিল্ক ভিটার লাভের অভাব হওয়ার কথা নয়। আমরা আশা করব, ভবিষ্যতে দাম কমানোর বিষয়টি সরকার সক্রিয় বিবেচনায় নেবে।

সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হোকঃ গ্রামীণ ব্যাংক বিতর্ক

গ্রামীণ ব্যাংক এবং এর প্রতিষ্ঠাতা শান্তিতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে সাম্প্রতিককালে যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে, তা যেমন অনাকাঙ্ক্ষিত, তেমনি শিষ্টাচারের সীমাও অতিক্রম করেছে বলে আমাদের ধারণা। যেসব ব্যক্তি তাঁদের কর্ম ও সাধনা দিয়ে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন, মুহাম্মদ ইউনূস নিঃসন্দেহে তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য। যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির সমালোচনা হওয়া উচিত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে। গয়রহ অভিযোগ এনে কোনো সিদ্ধান্তে আসা বা মন্তব্য করা হলে সেটি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রতি অবিচারই করা হয়।
সম্প্রতি নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ক্ষুদ্রঋণের ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রচারের পর এই বিতর্কের সূচনা হয়েছে। ওই প্রামাণ্যচিত্রের বরাত দিয়ে দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৯৭ সালে গ্রামীণ ব্যাংককে নোরাডের দেওয়া ১০ কোটি ডলারের তহবিল এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ কল্যাণে স্থানান্তর করেছেন, যা নিয়ে নরওয়ে সরকারের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল। এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়েছে। তারা বলেছে, বিষয়টি ১৯৯৮ সালেই নিষ্পত্তি হয়ে গেছে এবং নরওয়ে সরকার তাদের যুক্তি মেনে নিয়েছে।
রোববার সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন, সেটি অনভিপ্রেত। তদন্তের আগেই কাউকে দোষারোপ করা যায় না। এ ব্যাপারে সরকারের মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারাও পরস্পরবিরোধী বক্তব্য রেখেছেন। জাতীয় সংসদের আইন দ্বারা পরিচালিত গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদে ক্ষুদ্র গ্রাহক প্রতিনিধিদের পাশাপাশি সরকারেরও তিনজন প্রতিনিধি আছেন। প্রতিষ্ঠানটি যদি এতই অনিয়ম করে থাকে, সরকার আগে তদন্ত করল না কেন? প্রশ্ন হলো, তহবিল স্থানান্তরে কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না, কিংবা এর মাধ্যমে মুহাম্মদ ইউনূস ব্যক্তিগত সুবিধা নিয়েছেন কি না? তহবিল স্থানান্তর করে তিনি সুবিধা নিয়েছেন, সেই দাবি কিন্তু নরওয়ের টেলিভিশন বা প্রামাণ্যচিত্রের নির্মাতাও করেননি।
দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রঋণের উপযোগিতা নিয়ে মতভেদ থাকতে পারে এবং আছেও। তবে স্বীকার করতে হবে, প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থায় যাঁরা ঋণ পাওয়ার যোগ্য নন, গ্রামীণ ব্যাংক তাঁদেরই ঋণ দিয়ে থাকে। গ্রাহকদের ৯০ শতাংশ নারী বলে তাঁদের ক্ষমতায়নেও বিরাট ভূমিকা রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে দেশে এই মডেলে বহু আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণসেবা দিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশ তো বটেই, ইউরোপ-আমেরিকার বহু দেশে গ্রামীণ ব্যাংক মডেল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ ব্যাংকের তহবিল স্থানান্তরসহ সব বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন। মুহাম্মদ ইউনূসও প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘আমরাও মনে করি, অভিযোগগুলো নিয়ে তদন্ত হোক এবং তদন্তের মাধ্যমে বিতর্কের অবসান হোক।’ এখন সরকারের দায়িত্ব হবে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা। কাজটি অভিভাবক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও করতে পারে। যেই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে লাখ লাখ মানুষের জীবনজীবিকা ও দেশের ভাবমূর্তি জড়িত, সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে অহেতুক বিতর্ক কাম্য নয়। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব এই বিতর্কের অবসান হওয়া উচিত

জাগ্রত চৌরঙ্গী by সাইফুল ইসলাম খান

ডান হাতে গ্রেনেড, বাঁ হাতে রাইফেল। লুঙ্গি পরা, খালি গা, খালি পা আর পেশিবহুল এ ভাস্কর্যটি গাজীপুরের জয়দেবপুর চৌরাস্তার ঠিক মাঝখানে সড়কদ্বীপে অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের মহান শহীদদের অসামান্য আত্মত্যাগের স্মরণে নির্মিত এ ভাস্কর্যটির নাম 'জাগ্রত চৌরঙ্গী'। মতিঝিলের শাপলা চত্বরের শাপলার ভাস্কর আবদুর রাজ্জাক জাগ্রত চৌরঙ্গী নির্মাণ করেন। এ স্মৃতিসৌধটি ১৯৭৩ সালে নির্মাণ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নির্মিত এটি প্রথম ভাস্কর্য। ১৯৭১ সালের মার্চ মাস। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের পর পরই পাকিস্তান সরকার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে তাদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে তৎপর হয়।
এরই অংশ হিসেবে ১৯ মার্চ দুপুরে ঢাকা থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একদল সৈন্য পাঁচটি ভ্যানে জয়দেবপুরে অবস্থিত সেনাবাহিনীর ছাউনিতে পেঁৗছে। তারা ছাউনিতে পেঁৗছার পর পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের একটি দলকে নিরস্ত্র করার চেষ্টা করে। ফলে পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক সম্মুখযুদ্ধ হয়। ওই যুদ্ধের সংবাদ আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তেই স্থানীয় জনগণ জয়দেবপুর শহরে জমায়েত হয় ও তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বড় বড় গাছের গুঁড়ি ফেলে মুক্তিকামী মানুষ জয়দেবপুর শহরে ঢোকার এবং বের হওয়ার একমাত্র রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়। এতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় জনগণের যুদ্ধ বেধে যায়। একদিকে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, অন্যদিকে স্থানীয় জয়দেবপুরবাসী। বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পাকিস্তানি সৈন্যরা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। এতে হুরমত আলীসহ কমপক্ষে ২০ মুক্তিকামী মানুষ শহীদ ও ১৬ জন আহত হন। কিন্তু পাকিস্তান সরকার তা অস্বীকার করে। সরকারি হিসাবে তিনজনকে নিহত ও পাঁচজনকে তাদের বিবৃতিতে আহত দেখানো হয়। ওই দিন বিকেল পৌনে ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত এ প্রতিরোধ যুদ্ধ চলে। এরপর সন্ধ্যা ৬টা থেকে জয়দেবপুরে অনির্দিষ্টকালের জন্য সান্ধ্য আইন জারি করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। অসহযোগ আন্দোলন শুরু হওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে বাঙালিদের হতাহতের ঘটনা ঘটলেও এটিই ছিল মুক্তিযুদ্ধের সূচনাপর্বে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ। আর এই প্রতিরোধ যুদ্ধে শহীদ হুরমত আলী ও অন্যান্য শহীদের অবদান ও আত্মত্যাগকে জাতির চেতনায় সমুন্নত রাখতে জয়দেবপুর চৌরাস্তার সড়কদ্বীপে দৃষ্টিনন্দন এই স্থাপত্যকর্ম স্থাপিত হয়, যা জাগ্রত চৌরঙ্গী নামে অভিহিত। ভিত বা বেদিসহ জাগ্রত চৌরঙ্গীর উচ্চতা ৪২ ফুট ২ ইঞ্চি। ২৪ ফুট ৫ ইঞ্চি ভিত বা বেদির ওপর মূল ভাস্কর্যের ডান হাতে গ্রেনেড ও বাঁ হাতে রাইফেল। কংক্রিট, গ্রে সিমেন্ট, হোয়াইট সিমেন্ট ইত্যাদি দিয়ে ঢালাই করে নির্মিত এ ভাস্কর্যটিতে ১৬ শ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৩ নম্বর সেক্টর ও ১১ নম্বর সেক্টরের শহীদ সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের নাম লিপিবদ্ধ করা আছে। 'ডান হাতে তাজা গ্রেনেড আমার/বাম হাতে রাইফেল/বিদ্রোহী আমি মুক্তিপিয়াসী/প্রাণ সদা উদ্বেল।/ আমি তোমাদের চেনা/আমি যে মুক্তিযোদ্ধা।' স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী উপলক্ষে ১৯৯৬ সালে জাগ্রত চৌরঙ্গীর মূল বেদির সম্মুখভাগে ভাওয়াল রত্ন মো. নুরুল ইসলামের (নুরু স্যার) লেখা কবিতার এ লাইন কয়টি একটি ফলকে লিপিবদ্ধ করা আছে। এই ভাস্কর্য আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ ও সংগ্রামের প্রতিচিত্র।

নৈতিকতার প্রশ্ন by কুলদীপ নায়ার

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের দেওয়া বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছিল, উইকিলিকসের তথ্য ফাঁস করাটা বিশ্বশান্তির পরিপন্থী। কিন্তু তাঁর এ বিবৃতি কি ধোপে টেকার মতো? কিংবা ওয়াশিংটনের ওপর থেকে বিশ্বাস ভঙ্গ করার যে অভিযোগ, তা-ও কোনোমতেই তলিয়ে যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা প্রকাশিত তথ্য সম্পর্কে যে বক্তব্য প্রদান করেছেন, তাতেও মনে হয় না যে বিষয়টি গৌণ হিসেবে গণ্য হতে পারে। সংশ্লিষ্ট দেশের নেতারা যুক্তরাষ্ট্রকে এখন থেকে কিভাবে দেখবে? যে নাকি প্রকাশ্যে হাসিমাখা সুরে একরকম বলছে এবং ভেতরে ভেতরে করছে তার বিপরীত। এটা কোনোমতেই কূটনীতি হতে পারে না।
এটাকে বিশ্বাসঘাতকতা বলাই উত্তম। প্রেসিডেন্ট ওবামা, যিনি স্বচ্ছতার কথা বলে নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি যা করলেন তাকে ডবল স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে উল্লেখ করা যায়। তাঁর বাগাড়ম্বর যুক্তরাষ্ট্রের এ ঘটনাগুলোকে অবশ্যই ঢেকে দিতে পারবে না। প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের বলেন যে এটা নিশ্চিতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধী শক্তির গুপ্তচরদের কাজ, তখন প্রেসিডেন্ট ওবামার নৈতিক শক্তি বলতে আর কি কিছু থাকে? তখন তাঁদের সামনে উদাহরণ হিসেবে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারিই চলে আসে, যার পরিণতি হিসেবে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিঙ্নকে পদত্যাগ করতে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল।
মনে হতে পারে, যুক্তরাষ্ট্র চাইছে সুবিধাপ্রাপ্ত দেশগুলো তাদের শেখানো বুলি আওড়িয়ে যাক। তবে মিসেস ক্লিনটন কিন্তু একটা স্পষ্ট কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ওবামা এবং তিনি ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য স্পষ্টভাবে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে যাচ্ছেন, যা নাকি দেশগুলো মেনে চলবে। কোন ধরনের নীতিমালা প্রণয়ন করতে চাইছেন তাঁরা? তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, জাতীয় স্বার্থের বিষয়টি সর্বাগ্রে স্থান পাবে সে নীতিমালায়। কারণ যুক্তরাষ্ট্র মোটেও অন্যদের চেয়ে আলাদা নয়। কিন্তু এর পরও এমন ভান কেন তারা করছে, ওয়াশিংটন সর্বত্রই পরহিতার্থে কাজ করে থাকে। উইকিলিকস বিশ্বের জন্য বড় একটা কাজ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ ক্ষুব্ধ হতে পারে, কারণ তাদের সরকার বিশ্বে মার্কিন নাগরিকদের গ্রহণযোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রকে একনায়কতন্ত্র থেকে আলাদা করার সুযোগ আছে? পাকিস্তানের কাছ থেকেও যুক্তরাষ্ট্র এককথায় অবাধ্যসুলভ একটি ঘটনাই প্রত্যক্ষ করল সম্প্রতি। যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল, পাকিস্তানের পারমাণবিক জ্বালানি পরিকল্পনা পরিবর্তন করা হোক। পাকিস্তান কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সে আহ্বানে সাড়া দেয়নি। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রবিষয়ক মুখপাত্র বলেছেন, পাকিস্তানের পারমাণবিক গবেষণা ক্ষেত্র থেকে জ্বালানি প্রযুক্তি স্থানান্তরের কোনো পরিকল্পনাই পাকিস্তান গ্রহণ করবে না। যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান ত্যাগ করার বিষয়টি ভারতের জন্য উদ্বেগজনক হতে পারে। তুরস্ক এবং আরব আমিরাত ভবিষ্যতে এতদবিষয়ক কোনো আলোচনায় ভারতের অংশগ্রহণকে প্রয়োজনীয় মনে করছে না। সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, দেশ দুটি পাকিস্তানকে প্রশমিত করারও চেষ্টা করছিল। মিসেস ক্লিনটনের বার্তা থেকে ভারতের সন্দেহ তৈরি হতে পারে_জাতিসংঘে স্থায়ী সদস্য হিসেবে ভারতের আসনপ্রাপ্তির বিষয়টিও। নয়াদিলি্লতে প্রেরিত ওয়াশিংটনের বার্তাটিও ভারত সরকারের জন্য সুখকর নয়। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক যেন আগের মতোই থাকে, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া দরকার।
নয়াদিলি্ল থেকে হাজার হাজার বার্তা ওয়াশিংটনে পাঠানো হয়েছে_এমন তথ্য উইকিলিকসের হাতে আছে। সবচেয়ে খারাপ বার্তাটি সম্পর্কে শিগগিরই জানা যাবে বলে মনে হচ্ছে। ভারত মনে করছে, যেহেতু উইকিলিকসের তথ্যগুলো ২০০৫ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যবর্তী সময়ের সেহেতু এগুলো যে পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত তা মনে করা যায়। এটা সত্য যে পারমাণবিক চুক্তি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ চাপের মধ্যে আছেন। অত্যন্ত আলোচিত এ ইস্যুতে কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্কসসিস্ট) সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বাধীন জোট থেকে বের হয়ে গেছে। নীরা রাদিয়ার বিশিষ্ট সাংবাদিক ও শিল্পপতিদের সঙ্গে টেলিফোন সংলাপ বিষয়টি রেকর্ড অবস্থায় ফাঁস হয়ে যাওয়ার কারণে এমনিতেই ভারত বেকায়দায় পড়েছে। টেলিফোন রেকর্ড বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে যে এটার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। শিল্পপতি রতন টাটাকে আদালতের শরণাপন্ন হতে হয়েছে এ বিষয়ে। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এমন অনুমতি প্রদান করে কি গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করেনি?
লেখক : ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিক।
দ্য ডন থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর মোস্তফা হোসেইন।

উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ গ্রেপ্তার

লোচিত ওয়েবসাইট উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে লন্ডন পুলিশ আজ মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করেছে।
ব্রিটেনের পুলিশ সংস্থা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড বলছে, ইউরোপীয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ভিত্তিতে অ্যাসাঞ্জকে আজ বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে তিনটায় লন্ডন পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাঁকে লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার ম্যাজিস্ট্রেটস আদালতে পরে হাজির করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এর আগে গতকাল অ্যাসাঞ্জের ব্রিটিশ আইনজীবী মার্ক স্টিফেনস বিবিসিকে জানিয়েছিলেন, তিনি ও তাঁর মক্কেল ব্রিটিশ পুলিশের সঙ্গে সাক্ষাত্ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে তিনি ব্রিটিশ পুলিশের সঙ্গে সাক্ষাত্কারের কোনো সুনির্দিষ্ট সময় জানাননি।
সুইডেন পুলিশ অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে সে দেশে যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। এর ধারাবাহিকতায় ইন্টারপোলও তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
এদিকে ব্রিটিশ পুলিশ গতকাল সোমবার জানিয়েছে, সুইডেনে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কাগজপত্র তারা হাতে পেয়েছে।
অ্যাসাঞ্জের ওই আইনজীবী জানিয়েছেন, গতকাল শেষ বিকেলে লন্ডন পুলিশ তাঁকে জানিয়েছে, তারা সুইডেনের কাছ থেকে অ্যাসাঞ্জকে হস্তান্তরের একটি অনুরোধ পেয়েছে।
মার্ক স্টিফেনস বলেছেন, ‘ব্রিটিশ পুলিশ অ্যাসাঞ্জকে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুরোধ জানিয়েছে। তবে তিনি কোনো মামলায় অভিযুক্ত হননি। আমরা পুলিশের সঙ্গে সাক্ষাত্ করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এটি হবে পূর্বনির্ধারিত সাক্ষাত্কার।’
সুইডেনের আইনি কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা ব্রিটিশ পুলিশের কাছে তাদের অনুরোধকৃত সব তথ্য হস্তান্তর করেছে।
সম্প্রতি উইকিলিকস ধারাবাহিকভাবে আফগান ও ইরাক যুদ্ধ নিয়ে মার্কিন গোপন দলিল এবং মার্কিন গোপন কূটনৈতিক তারবার্তা ফাঁস করে ওয়াশিংটনের তোপের মুখে পড়ে। অ্যাসাঞ্জ আশঙ্কা করছেন, তিনি ও তাঁর সহযোগীরা গুপ্ত হত্যার শিকার হতে পারেন। অ্যাসাঞ্জ বর্তমানে ব্রিটেনে আত্মগোপন করে আছেন বলে সে দেশের একটি প্রভাবশালী সংবাদপত্রের খবরে বলা হয়েছে। বিবিসি।

জুলিয়ান অ্যাস্যাঞ্জ গ্রেপ্তার

যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ গোপন নথি ফাঁস করে দুনিয়াজুড়ে আলোচনার ঝড় তোলা উইকিলিক্সের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাস্যাঞ্জ যুক্তরাজ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন। লন্ডন পুলিশ মঙ্গলবার অ্যাস্যাঞ্জকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে। তারা বলছে, সুইডেনের একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় উইকিলিক্সের প্রতিষ্ঠাতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
যৌন নিপীড়নের অভিযোগে অ্যাস্যাঞ্জের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে সুইডিশ কর্তৃপক্ষ। তবে সে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে অ্যাস্যাঞ্জ বলে আসছেন, এ সব তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। লন্ডন পুলিশের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "অনৈতিক বলপ্রয়োগের একটি ধারা, যৌন নিপীড়নের দুইটি ধারা ও ধর্ষণের একটি ধারায় সুইডিশ কর্তৃপক্ষ অ্যাস্যাঞ্জের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে। এ অপরাধগুলোর সবকয়টি ২০১০ সালের অগাস্টে ঘটেছে।"

মঙ্গলবার লন্ডনের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টায় অ্যাস্যাঞ্জকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে পুলিশ জানায়। ইরাক, আফগান যুদ্ধ ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লাখ লাখ গোপন নথি উইকিলিক্সের ওয়েবসাইটে প্রকাশ হলে বিপাকে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারিকে অন্য দেশগুলোর কাছে দুঃখও প্রকাশ করতে হয়।

৩৯ বছর বয়সি অস্ট্রেলীয় অ্যাস্যাঞ্জকে আশ্রয় না দিতে মিত্র দেশগুলোর প্রতি ওয়াশিংটন আহ্বান জানায় বলে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়। সুইডেনের আদালতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর বেশ কিছুদিন ধরে অজ্ঞাতবাসে ছিলেন অ্যাস্যাঞ্জ। তবে স�প্রতি যুক্তরাজ্যের দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট জানায়, অ্যাস্যাঞ্জ যুক্তরাজ্যে রয়েছেন।

ইব্রাহিম ও সাব্বির হত্যা মামলা চাঞ্চল্যকর মামলায় অন্তর্ভুক্তির নির্দেশ

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন আরও দুটি মামলাকে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। একটি যুবলীগের কর্মী ইব্রাহিম হত্যা মামলা এবং অপরটি বসুন্ধরা গ্রুপের টেলিযোগাযোগ শাখার পরিচালক হুমায়ুন কবির সাব্বির হত্যা মামলা। আজ মঙ্গলবার চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার মনিটরিং সেলের ৬৮তম বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন।
আজকের বৈঠকে ১০টি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এসব মামলার তদন্ত করে দ্রুত পুলিশ রিপোর্ট দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়। সভায় আজ চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা হিসেবে আরও দুটি মামলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মামলা দুটি হলো—আদাবরের রাকীব দেওয়ান শেখের হত্যা মামলা এবং গফরগাঁওয়ে মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম হত্যা মামলা।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের আইজিপি, অতিরিক্ত সচিব, উপসচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ আগস্ট আওয়ামী লীগের সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরীর পিস্তলের গুলিতে যুবলীগের কর্মী ইব্রাহিম নিহত হন। এ ঘটনায় সাংসদের গাড়ির চালক বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন। পুলিশ ২ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে অপমৃত্যুর মামলাটি শেষ করে এবং এ ঘটনায় অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে হত্যা মামলা দায়ের করে।
অবশ্য তার আগে ১৮ আগস্ট ইব্রাহিমের ভাই মাসুম আহমেদ বাদী হয়ে সাংসদ নুরুন্নবীসহ আটজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়েরের জন্য আদালতে নালিশি আবেদন করেন।
বসুন্ধরা গ্রুপের টেলিযোগাযোগ শাখার পরিচালক হুমায়ুন কবির সাব্বির ২০০৬ সালের ৪ জুলাই নৃশংসভাবে খুন হন। পুলিশ সাব্বিরের হত্যাকাণ্ডে শাহ আলমের ছেলে সানবীরের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে।
সাব্বির হত্যা মামলা থেকে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের ছেলে সাফায়েত সোবহান সানবীরের নাম বাদ দিতে তত্কালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে ২১ কোটি টাকা ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে সিআইডি ২০০৮ সালের ৮ মে রমনা থানায় এ মামলা করে। মামলায় বসুন্ধরার মালিক আহমেদ আকবর সোবহানসহ চারজনকে আসামি করা হয়।

অপহূত জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধারে সরকার তৎপর

লদস্যুদের হাতে অপহূত বাংলাদেশি জাহাজ এবং জাহাজের নাবিকদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সব ধরনের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। সরকারের একটি দায়িত্বশীল সূত্র এ কথা জানিয়েছে। এ ব্যাপারে সোমালিয়া কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সরকার নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় পাওয়া সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, ‘এমভি জাহান মণি’ জাহাজটি সোমালিয়া উপকূল থেকে এক হাজার নটিক্যাল মাইল পূর্বে অবস্থান করছিল। উপগ্রহের সহায়তায় জাহাজটির অবস্থান ও গতিবিধি তদারককারী সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মুখ্য কর্মকর্তা ক্যাপ্টন হাবিবুর রহমান এ তথ্য জানান।
জাহাজের মালিকপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, জাহাজটি পুরোপুরি জলদস্যুদের কবজায় চলে গেছে বলে তাঁরা মনে করছেন। এটি তাঁদের পক্ষে উদ্ধারে আপাতত কোনো সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ সময় গত রোববার বেলা তিনটার দিকে জলদস্যুরা এমভি জাহান মণি আক্রমণ করে। সোয়া তিনটার মধ্যে তারা জাহাজটির পূর্ণ দখল নেয়। এরপর তারা জাহাজের সব বেতার যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। আক্রান্ত হওয়ার পরপরই জাহাজের ক্যাপ্টেন ফরিদুল ইসলাম দুবাই-ভিত্তিক জলদস্যুতা তদারকি সংস্থা ইউকে এমওটিসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সংস্থাকে ঘটনার কথা জানান।
জাহাজটিতে ২৬ জন বাংলাদেশি নাবিক আছেন। এর মধ্যে একজন কর্মকর্তা সপরিবারে ওই জাহাজে আছেন। জাহাজটির মালিক এস আর শিপিংয়ের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাহাজটি ইন্দোনেশিয়া থেকে নিকেলের আকরিক নিয়ে গ্রিসে যাচ্ছিল। মাঝপথে মালদ্বীপ ও ভারতের লাক্ষা দ্বীপের মাঝামাঝি জায়গায় এটি জলদস্যু দ্বারা আক্রান্ত হয়।’ জাহাজের মালিকপক্ষ সূত্রে আজ জানা গেছে, ৪৩ হাজার মেট্রিক টন পণ্য পরিবহনে সক্ষম বিশালাকৃতির ওই জাহাজটির বর্তমান বাজারমূল্য ১০০ কোটি টাকারও বেশি। জলদস্যু আক্রান্ত হওয়ার সময় এটিতে ৪১ হাজার মেট্রিক টন পণ্য ছিল। জাহাজটি বাংলাদেশি মালিকের হলেও এটি আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথে ভাড়ায় পরিচালিত হচ্ছিল।

 চট্টগ্রামে জামায়াতের ১১ কর্মী আটক

ট্টগ্রামে স্মারকলিপি জমা দিতে যাওয়ার পথে পুলিশের সঙ্গে উশৃঙ্খল আচরণ করার অভিযোগে আজ মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ১১ নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, জামায়াতের নেতা-কর্মীরা আজ সকালে নগরের চন্দনপুরায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন । পরে তাঁরা সাংসদ মাওলানা শামসুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিতে চায়।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যাওয়ার সময় জেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনে পুলিশ তাদের থামতে বলে। কিন্তু তাঁরা না থেমে পুলি উশৃঙ্খল আচরণ করে। এ সময় পুলিশ ১১ জনকে আটক করে। তার আগেই সাংসদ। ঘটনাস্থল থেকে সরে যান
কতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল কালাম আজাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মুফতি হান্নানকে ঢাকায় আনা হচ্ছে

রকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান মুন্সি ও আরিফ হাসান ওরফে সুমনকে ঢাকায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সদর দপ্তরে নেওয়া হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার সকালে একটি বিশেষ গাড়িতে করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও পুলিশের পাহারায় সিআইডি তাঁদের নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছে।
সিআইডি সূত্র জানিয়েছে, দুই আসামিকে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে বানিয়ারচর ক্যাথলিক গির্জায় বোমা হামলা-সংক্রান্ত হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দায়ের মামলায় যথাক্রমে সাত ও পাঁচ দিনের রিমান্ড শুনানির জন্য সিআইডি সদর দপ্তরে নেওয়া হচ্ছে।
সিআইডির গোপালগঞ্জ অফিসের পরিদর্শক আক্তারুজ্জামান জানান, ঈদের আগে এই দুই জঙ্গিকে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর অঞ্চলের বিচারিক হাকিমের আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত তা মঞ্জুর করেছিলেন। কিন্তু তখন কৌশলগত কারণে তাঁদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। আজ তাঁদের আবার ওই আদালতে হাজির করা হয়। হাকিমকে বিষয়টি অবহিত করে তাঁদের সিআইডির সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
সিআইডি পরিদর্শক বলেন, মুফতি আবদুল হান্নান মুন্সি ও আরিফ হাসান ওরফে সুমন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বানিয়ারচর গির্জায় বোমা হামলা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়ায় এর আগে তাঁদেরকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ৩ জুন সাপ্তাহিক প্রার্থনার দিনে বানিয়ারচর ক্যাথলিক গির্জায় বোমা বিস্ফোরণে ১০ জন নিহত ও অর্ধশত লোক আহত হয়। পুলিশ ওই দিন হত্যা ও পরের দিন বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করে।

 একপক্ষের বর্জনে চলছে চট্টগ্রাম চেম্বারের ভোট গ্রহণ

কপক্ষের বর্জনের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলছে। আজ মঙ্গলবার ভোট গ্রহণ শুরু হলে সাবেক চেম্বার সভাপতি সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ব্যবসায়ী পরিষদ অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচন বর্জন করেছে। সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘আমরা নির্বাচন বর্জন করেছি। আজ বেলা একটায় সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।’
অপরদিকে চেম্বার পরিষদের নেতা বর্তমান চেম্বারের সভাপতি এম এ লতিফ বলেন, ব্যবসায়ীয়া নির্বাচন বর্জন করেছেন কি না সেটা মূল বিষয় নয়; তবে ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের নির্বাচন স্থগিত করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেওয়া সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা হাইকোর্ট স্থগিত করেন। আদেশে বলা হয়, নির্বাচনে কোনো প্রক্সি (জাল) ভোট দেওয়া যাবে না। তাহলে নির্বাচন বাতিল হবে। একই সঙ্গে নির্বাচন স্থগিতের কার্যক্রম কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে আদালত। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চার সপ্তাহের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতেও বলা হয়।
আদেশ প্রসঙ্গে রোকনউদ্দিন মাহমুদ বলেছিলেন, আজ মঙ্গলবার নির্বাচন হবে। তবে কেউ প্রক্সি ভোট দিতে পারবেন না।
মন্ত্রণালয়ের স্থগিতাদেশের নথি পাওয়ার পর চেম্বারের নির্বাচনী বোর্ড গত রোববার নির্বাচন স্থগিতের আনুষ্ঠানিক আদেশ জারি করে। চেম্বারের বর্তমান সভাপতি আওয়ামী লীগের সাংসদ এম আবদুল লতিফের সমর্থনপুষ্ট চেম্বার পরিষদ প্যানেল বিদ্যমান ভোটার তালিকার ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। অন্যদিকে চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের আরেক সাংসদ আখতারুজ্জামান চৌধুরীর ছেলে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সমর্থিত ব্যবসায়ী পরিষদ প্যানেল বিদ্যমান ভোটার তালিকাকে ত্রুটিপূর্ণ আখ্যায়িত করে নতুন তালিকা করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি তোলে। এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়লে ভোটার তালিকায় অনিয়মের অভিযোগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চেম্বারের নির্বাচন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে।

তেল নিয়ে...

তেল নিয়ে তেলেসমাতি আপাতত বন্ধ হচ্ছে বলে মনে করা যেতে পারে। গত রবিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ভোজ্য তেলের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর সয়াবিন তেলের নতুন মূল্য ঘোষণা করেন বাণিজ্যমন্ত্রী কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান। তেলের দাম নিয়ে তুঘলকি কারবার চলছিল বেশ কয়েক দিন থেকেই। এর আগে বাণিজ্যমন্ত্রী তেল ব্যবসায়ীদের বেশ কড়া স্বরেই ধমক দিয়েছিলেন। রবিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দীর্ঘ বৈঠকের পর ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনের দাম ৮৬ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
আর চট্টগ্রাম ও এর আশপাশের এলাকায় খোলা সয়াবিনের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৪ টাকা। নতুন দর অনুযায়ী ঢাকার মিলগেটে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন পাইকারি ৮৩ টাকা ও চট্টগ্রামে ৮১ টাকা দরে বিক্রি করতে হবে। বোতলজাত সয়াবিনের ক্ষেত্রে খোলা সয়াবিনের চেয়ে দাম বাড়বে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ। অর্থাৎ ঢাকায় প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৯৮ টাকা ৯০ পয়সা এবং চট্টগ্রামে ৯৬ টাকা ৬০ পয়সা হবে। আজ থেকে এ দর কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তেল নিয়ে তেলেসমাতি এটাই প্রথমবারের মতো নয়। এটা লক্ষ করা গেছে, আমাদের বাজারে একবার তেলের দাম বেড়ে গেলে সেটা আর কমে না! তেলের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সব সময়ই আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দেওয়া হয়ে থাকে। তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়লে আমাদের এখানেও বাড়ে; কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলে তার প্রভাব আমাদের বাজারে খুব কমই পড়ে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলে আমাদের দেশের বাজারে তার প্রভাব পড়তে দেখা যায় না। বাংলাদেশের বাজারে একবার কোনো জিনিসের দাম বাড়লে তার দাম কমে না_এটাই যেন স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে অবস্থা থেকেও এবার মুক্তি মিলবে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। কারণ এবার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মনিটরিং টিম বাজার তদারকি করবে। কাজেই আশা করা যায়, এবার ভোক্তারা বাজারে গিয়ে অন্তত দামের ক্ষেত্রে প্রতারিত হবেন না। সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারিত হয়ে যায় মিল গেটেই। মিলগেট থেকে যে দামে পাইকারি বিক্রেতারা তেল কেনেন, তার ওপর নির্ধারিত হয় খুচরা বাজারের দাম। খুচরা বিক্রেতারা সাধারণত কেনার ওপরই লাভ করে থাকেন। তাঁরা পাইকারি বাজার থেকে কেজিদরে সয়াবিন তেল কিনে সেটা বাজারে বিক্রি করেন লিটার হিসাবে! এখান থেকেই খুচরা বিক্রেতাদের ৭ শতাংশ লাভ হয়ে যায় বলে প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নেওয়া এবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাজারে সয়াবিন তেল মিলগেট থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা বাজার_সবখানেই বিক্রি হবে লিটার হিসাবে।
বাজারে সব জিনিসের দামই বাড়তির দিকে। তেলের দাম চলে গিয়েছিল আয়ত্তের বাইরে। কোনোভাবেই তেলের বাজার সামাল দেওয়া যাচ্ছিল না। এমন অবস্থায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। ভোক্তাসাধারণ এতে একটু হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এই নির্ধারিত মূল্যে সয়াবিন তেল খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে কি না, সেটা দেখার দায়িত্ব ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মনিটরিং টিমের। সে দায়িত্ব তারা ঠিকমতো পালন করে কি না_সেটাই এখন দেখার বিষয়।

প্রত্নতত্ত্ব ধ্বংস নয়

তিহাসের অলিন্দে কোদাল-শাবল চালানো হচ্ছে বগুড়ার মহাস্থানগড়ে, যেখানে সুপ্ত আছে আমাদের সভ্যতা, যা শত শত বছর ধরে অপেক্ষা করছে_কখন উন্মোচিত হবে পরবর্তী প্রজন্মের সামনে। হয়তো বা অনেক আগেই সুপ্ত চিহ্নগুলো আবিষ্কৃত হতো, কিন্তু হয়নি। তাও মানুষেরই অনিচ্ছায়। সেখানে পদদলিত হয়েছে ইতিহাস। মাজারের জমি হিসেবে চিহ্নিত প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শনের এলাকাটুকু যেহেতু মাজারের জায়গা, তাই মাটি খুঁড়ে প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শন ধ্বংস করতেও যেন দ্বিধা নেই কারো। কোপে কোপে ধ্বংস হচ্ছে দুই হাজার ৩০০ বছর আগের সেই সভ্যতার চিহ্নগুলো। শ্রমিকরা বলছেন, এখানে মনে হয় মানুষের বসতি ছিল।
পাকা ভিটা দেখা যাচ্ছে, মাটির তৈজসপত্রও আছে। সেগুলোর বেশির ভাগই কোদালের আঘাতে গুঁড়ো হয়ে গেছে। কিছু চাপা পড়েছে মাটির নিচে। বাকি আছে আরো কিছু। এদিকে জেলা প্রশাসক বলেছেন, 'প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শন রক্ষায় কেউ যেন বেশি উৎসাহ না দেখায়।' এ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি কি হুমকি দিলেন কারো প্রতি? নাকি নিজেই হুমকিতে পড়ে অনাকাঙ্ক্ষিত কথা শুনিয়ে দিলেন, তাও ভেবে দেখা প্রয়োজন। সর্বোপরি কে কী বলেছে, তা না ভেবে ইতিহাসের চিহ্ন সংরক্ষণে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। আর মাজার কমিটিরও নমনীয় হওয়া প্রয়োজন। তাদেরও ভাবতে হবে, ইতিহাস-ঐতিহ্যকে অস্বীকার করে কোনো জাতি টিকে থাকতে পারে না। তাদের প্রয়োজনীয় ভবনটি মাজারের কাছাকাছি অন্য কোথাও হতে দোষ কী? ইবাদতখানা করতে হলে মাজারের লাগোয়া জায়গাতেই হতে হবে, এমন তো কথা নেই। সে ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব হবে প্রয়োজনীয় জায়গার ব্যবস্থা করে দেওয়া। যাতে মাজারে আসা মানুষ তাঁদের ধর্মকর্ম নির্বিঘ্নে পালন করতে পারেন।
মাজার উন্নয়ন কমিটির সব সদস্যই জানেন জায়গাটির প্রত্নতাত্তি্বক মূল্য ব্যাপক। এ জায়গা সংরক্ষণ করা শুধু সরকারেরই দায়িত্ব নয়, জাতীয় সম্পদ হিসেবে স্থানীয় অধিবাসীদেরও দায় আছে। মাজার খোঁড়াখুঁড়ি করার আগেই প্রশাসনকে জানানোর পর তারা এ বিষয়ে কোনো গুরুত্ব দেয়নি। একাধিক চিঠি পাওয়ার পরও কিভাবে মাজার কমিটি সেই জায়গায় কোদাল চালাতে পারে! যে উন্নয়ন কাজের জন্য এত বড় সর্বনাশ করা হলো, সেই কাজ সম্পর্কে মাজার কমিটির সদস্যরাও অবগত নন বলে জানা গেছে। গতকাল মাজার কমিটি তাদের কাজ স্থগিত করেছে। কিন্তু যেসব প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শন কোদাল-বেলচার আঘাতে ভেঙে গেছে সেগুলো সংরক্ষণে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। জেলা প্রশাসন ও মাজার কমিটি দ্রুত এ কাজটি আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করুক। ভবন তৈরির জন্য যেসব জায়গায় গর্ত করা হয়েছে, সেগুলোকে কিভাবে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সংরক্ষণ করা যায় সে ব্যবস্থাও দ্রুত করতে হবে। মাজার অক্ষত ও অক্ষুণ্ন রেখে মাজারকেন্দ্রিক কার্যক্রমকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেওয়া যায় কি না, তাও মাজার কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভেবে দেখা দরকার। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে যাতে কোনো অবস্থায় সেখানে অনুমোদন ছাড়া কেউ কোদাল-শাবল চালাতে না পারে, সেই ব্যবস্থাও করতে হবে। লালবাগ কেল্লা এলাকায় নির্মাণকাজ বন্ধে হাইকোর্টকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। তাই শুধু মহাস্থানগড় নয়, সারা দেশের প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শনগুলো রক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। নইলে ঐতিহ্যবিমুখ জাতি হিসেবে আমরা নিন্দিতই হতে থাকব।

ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে ৯৩০ কোটি ডলারের পরমাণু চুক্তি সই

বেসামরিক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে গতকাল সোমবার ফ্রান্স ও ভারতের মধ্যে ৯৩০ কোটি ডলারের একটি চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী মহারাষ্ট্র রাজ্যে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করবে ফ্রান্স। এদিকে নয়াদিল্লিতে সফররত ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মধ্যে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে চুক্তির বিষয় ছাড়াও দুই নেতার মধ্যে অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষাসংশ্লিষ্ট আলোচনা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট সারকোজি গত শনিবার তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ছাড়াও ফ্রান্সের ৬০ জন ব্যবসায়ী প্রতিনিধির বিশাল বহর নিয়ে চার দিনের সফরে ভারতে যান।
সফরের তৃতীয় দিনে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী ফ্রান্সের প্রধান পারমাণবিক বিদ্যুৎ কোম্পানি আরিভা এসএ মহারাষ্ট্রের জয়পুরে দুটি পারমাণবিক চুল্লি স্থাপন করবে। ওই চুল্লি দুটির প্রতিটি এক হাজার ৬৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হবে। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটানোর জন্য ভারত মোট ২০টি পারমাণবিক চুল্লি স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রথম ধাপে দুটি চুল্লি স্থাপন করা হচ্ছে। বাকি ১৮টি চুল্লি স্থাপনের কাজ পাওয়ার জন্য পরমাণু ক্ষমতাধর বেশ কয়েকটি দেশ ভারতের মন জয়ের চেষ্টা চালাচ্ছে।
বেসামরিক পরমাণু প্রযুক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের পরই ফ্রান্সের অবস্থান। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জ্বালানি-প্রযুক্তি রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে ভারত বর্তমানে ফ্রান্সকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এবং বেসামরিক পরমাণু-প্রযুক্তি রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন নিউক্লিয়ার সাপ্লাইয়ার্স গ্রুপের সদস্য হিসেবে সারকোজি ভারতকে সমর্থন করায় ভারতের সঙ্গে ফ্রান্সের বিশেষ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। বিবিসি ও হিন্দুস্তান টাইমস অনলাইন।

অ্যাসাঞ্জের ব্যাংক হিসাব জব্দ যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা স্থাপনার তালিকা ফাঁস

ইকিলিকস যেসব নথি ফাঁস করেছে, তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্থাপনা ও অবকাঠামোর একটি দীর্ঘ তালিকা রয়েছে। তেলের পাইপলাইন থেকে বসন্তের টিকা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত স্থাপনা ও অবকাঠামোর নাম এ তালিকায় স্থান পেয়েছে। প্রকাশিত নথিগুলোর মধ্যে এই নথিটি সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে গতকাল সোমবার সুইজারল্যান্ডে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের ব্যাংক হিসাব (অ্যাকাউন্ট) জব্দ করা হয়েছে। অ্যাসাঞ্জ বলেছেন, জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন কূটনীতিকদের গোয়েন্দাগিরির বিষয়ে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অনুমোদনের বিষয়টি প্রমাণিত হলে তাঁর পদত্যাগ করা উচিত। গত রোববার স্প্যানিশ পত্রিকা এল প্যারিস-এ প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। খবর এএফপি, বিবিসি ও গার্ডিয়ান অনলাইন।
উইকিলিকসের নথির তথ্যমতে, ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বিদেশে সব মার্কিন মিশনকে ওই সব দেশের এমন সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার তালিকা তৈরির নির্দেশ দেয়, যেসব প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হলে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। এই তালিকায় তেলের পাইপলাইন, যোগাযোগ ও পরিবহনবিষয়ক বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। রয়েছে ব্রিটেনের কিছু কেব্ল লোকেশন ও স্যাটেলাইট সাইট এবং টিকা তৈরি ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিএই সিস্টেমসের নাম। এই প্রতিষ্ঠানটি ল্যাঙ্কাশায়ারে অবস্থিত। তালিকায় জিবুতির জাহাজ চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ সব লেন এবং মিসরের সুয়েজ খালের জাহাজ টার্মিনাল ও ইরাকের বসরার তেলের টার্মিনালের নাম রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নাম। এই তালিকা প্রকাশের ঘটনায় গতকাল সোমবার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ব্রিটেন।
গতকাল ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের ডাউনিং স্ট্রিট কার্যালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা বিনা অনুমতিতে এসব গোপন তথ্য প্রকাশ করার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।’ তিনি বলেন, এসব তথ্য ফাঁস ও প্রকাশ করার ঘটনায় ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের জাতীয় নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এদিকে অজ্ঞাত স্থান থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে স্প্যানিশ পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ আইন মেনে চলে—যদি এ কথা বিশ্বাস করা হয়, তাহলে জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন কূটনীতিকদের গোয়েন্দাগিরির নির্দেশ ও অনুমোদনের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত সব কর্মকর্তারই পদত্যাগ করা উচিত। এই নির্দেশের বিষয়টি এতই গুরুতর যে, এতে হয়তো বা প্রেসিডেন্টের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়েছিল।
অ্যাসাঞ্জ বলেন, এই অবৈধ নির্দেশ সম্পর্কে ওবামা কখন কী জানতেন, এ ব্যাপারে তাঁকে অবশ্যই জবাব দিতে হবে। তিনি যদি জবাব না দেন বা এই নির্দেশে তাঁর অনুমোদন দেওয়ার প্রমাণ মেলে, তাহলে তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের আড়াই লাখেরও বেশি গোপন নথি প্রকাশ শুরু করার পর থেকে সে দেশের কূটনীতিকদের জটিল পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে উইকিলিকস। এসব নথির তথ্য থেকে বিদেশি নেতা ও রাজনীতিকদের নিয়ে মার্কিন কূটনীতিকদের বিভিন্ন মন্তব্য ও ধারণা বের হয়ে এসেছে। এর মধ্যে একটি নথির তথ্য অনুযায়ী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের টেলিফোন ও ই-মেইল নম্বর এবং ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়েছেন।
অ্যাসাঞ্জের ব্যাংক হিসাব জব্দ: সুইজারল্যান্ডের পোস্ট অফিস ব্যাংক ও পোস্ট ফিন্যান্স গতকাল অ্যাসাঞ্জের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে। এর ফলে তাঁর ৩১ হাজার ইউরোর সমপরিমাণ সম্পদ জব্দ হয়েছে।
আল-জাজিরা দরকষাকষির হাতিয়ার: কাতার আরব টিভি চ্যানেল আল-জাজিরাকে তার বৈদেশিক নীতিতে দরকষাকষির মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। বৈদেশিক নীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারা নিজেদের মর্জিমাফিক প্রতিবেদন প্রচার করে থাকে। কিছু প্রতিবেদন আছে, যা অন্য দেশ বা নেতার ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করবে। সে ক্ষেত্রে তারা ওই প্রতিবেদন প্রচার না করার বিনিময়ে বড় ধরনের ছাড় পাওয়ারও প্রস্তাব করে। উইকিলিকসের প্রকাশিত গোপন মার্কিন নথিতে এই তথ্য রয়েছে। মার্কিন কূটনীতিকদের বার্তায় এসব বলা হয়েছে।
বার্তায় বলা হয়, চ্যানেলটি সম্পাদকীয়ভাবে নিরপেক্ষ বলে সম্প্রচারকারীদের জোর দাবি সত্ত্বেও এটি ‘কাতারের সবচেয়ে মূল্যবান রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অস্ত্রের একটি।’ এতে বলা হয়, উপসাগরীয় এই দেশটি বিদেশি অন্য নেতাদের নিজেদের পছন্দমতো কাজে লাগাতে আল-জাজিরার কাভারেজকে ব্যবহার করে।

হ্যামিলিনের বংশীবাদক উইকিলিকস

হ্যামিলিনের বংশীবাদকের মতোই সারা দুনিয়ায় তোলপাড় করা বাঁশি বাজিয়েছে উইকিলিকস নামে ওয়েবভিত্তিক একটি সংগঠন। পরাশক্তিরা সারা দুনিয়ায় অতি গোপনে যেসব কাজকর্ম করে চলেছে, দশকের পর দশক ধরে, তারই কিছু গুরুত্বপূর্ণ দলিল সাধারণ মানুষের কাছে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। তাতে পরাশক্তিগুলোর টনক নড়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি উত্তেজিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা ওয়েবসাইটটি বন্ধ করে দিয়েছে। তবে বহু বিশ্লেষকই মনে করছেন, উইকিলিকসের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এ হেন ব্যবস্থা 'অত্যন্ত বিলম্বিত ও অতিসামান্য'; কারণ তাদের মতে, উইকিলিকসের প্রকাশিত তথ্যগুলো ইতিমধ্যেই পৃথিবীর বড় বড় গণমাধ্যমের হাতে পেঁৗছে গেছে।
তা ছাড়া উইকিলিকস আরো অনেক নেট-সংযোগের মাধ্যমে তথ্য প্রকাশের কাজটি চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি 'এনক্রিপ্টেড' আকারে শতাধিক সাইটে তাদের তথ্যাবলি সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে, যা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। উইকিলিকসের ফাঁস করা আড়াই লাখ নথির মধ্যে বাংলাদেশ সম্পর্কেও দুই হাজার ১৮২টি নথি রয়েছে। শনিবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ৬৮৩টি নথি প্রকাশিত হয়েছে। বাকিগুলোও শিগগিরই প্রকাশিত হবে। প্রকাশিত নথিগুলোতে দেখা যায়, ইসলামাবাদে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো নথিতে বাংলাদেশে লস্কর-ই-তৈয়বার আস্তানা থাকতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে লস্কর-ই-তৈয়বার বেশ কিছু জঙ্গি ধরাও পড়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেই নথির ভিত্তিগুলো ধরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর তথ্য পেতে ওয়াশিংটনের সহযোগিতা চাইতে পারে। বাংলাদেশ ছাড়াও ইরাক যুদ্ধ, আফগান যুদ্ধ, চীন ও ইরান সম্পর্কে মার্কিন নীতি ও কার্যক্রমের অনেক আভাস পাওয়া যায় ওয়েবসাইটটির প্রকাশিত নথিগুলো থেকে।
উইকিলিকসের পেছনে কারা আছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে জনসাধারণের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে একে একটি বড় ধরনের উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। কারণ বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যবাদী নীতি এবং সিআইএর কর্মকাণ্ডের যেসব ঘৃণিত নমুনা অতীতে মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে, সে কারণেই উইকিলিকসের এসব তথ্য প্রকাশকে সাধারণ মানুষ স্বাগত জানিয়েছে। একইভাবে উইকিলিকসের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এভাবে উঠেপড়ে লাগাটাকে মানুষ ভালো চোখে দেখছে না। কারণ ওয়েবসাইটটির এ ধরনের তথ্য প্রকাশে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়াসহ শক্তিধর বড় অনেক দেশই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র যত ক্ষিপ্তই হোক, দুনিয়াব্যাপী সাধারণ মানুষ এখনো উইকিলিকসের তথ্য প্রকাশে আনন্দিত। অবাধ তথ্য অধিকার, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতার এই যুগে যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের রাগান্বিত প্রতিক্রিয়া কতটা কাম্য, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। কারণ যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বই বর্তমানে তথ্য অধিকার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বড় প্রবক্তা। আমরা চাই, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘি্নত হয়_ এমন সব তথ্য থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্ব এ ব্যাপারে রাগান্বিত নয়, যুক্তিসংগত পদক্ষেপ নেবে। বরং উইকিলিকসের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এর একটি কাম্য সমাধানে আসা যেতে পারে।

এলপিজির ব্যবহার

গ্যাসের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি অপচয় রোধ করাও। গ্যাসের অপচয় রোধকল্পে ইতিমধ্যে জনসচেতনতামূলক উদ্যোগ কম পরিলক্ষিত হয়নি বটে, কিন্তু এর সুফল আশানুরূপ নয়। পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহের কারণে এই অপচয় বেশি হচ্ছে_ এ যুক্তি অমূলক নয়, অগ্রাহ্য করার মতোও নয়। এদিকে জ্বালানি সংকট ক্রমেই তীব্র হয়ে উঠছে। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে সরকার এলপিজির (লিকুইফায়েড পেট্রোলিয়াম গ্যাস) ব্যবহার বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে।
এ লক্ষ্যেই এ ক্ষেত্রে শুল্ক ও কর কমানোর কথাও ভাবছে সরকার। আমরা মনে করি, সরকারের এই ভাবনা অত্যন্ত ইতিবাচক এবং দূরদর্শী। সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারে মানুষকে অধিকতর আকৃষ্ট করা গেলে একদিকে অপচয় রোধ হবে, অন্যদিকে, জনবিড়ম্বনাও লাঘব হবে অনেকটাই। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারকে কিছু জরুরি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে।
প্রথমেই দৃষ্টি দিতে হবে সিলিন্ডারজাত গ্যাসের প্রক্রিয়াজাতকরণের খরচ হ্রাস করার দিকে। দেশে বেশ কিছু সিলিন্ডার গ্যাস কম্পানি রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটির ব্যবসায়িক সুনাম তুঙ্গে। তাদের ক্ষেত্রে সরকার যদি সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে, তাহলে সরকার, জনগণ এবং ব্যবসায়ী_ এই ত্রয়ীরই যথেষ্ট কল্যাণ নিশ্চিত করা সম্ভব। এলপিজিসহ সিলিন্ডারের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ও কর কমানোই যথেষ্ট নয়, আমদানির সব রকম পথও মসৃণ করা দরকার। দেশীয় আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন, ক্ষমতা এবং বাজার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট দক্ষতা রয়েছে। কিন্তু তারা নানা রকম প্রতিবন্ধকতা-প্রতিকূলতা মোকাবিলা করার কারণে মানুষের সহযোগিতায় যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে তারা যথাযথ সরকারি সহযোগিতা পেলে সিলিন্ডারসহ তৎসংশ্লিষ্ট সব কিছুর মূল্যই সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে রাখতে সক্ষম হবে, অন্যদিকে, সরবরাহও পর্যাপ্ত করা সম্ভব। বৃহদাকারের সিলিন্ডার বা ট্যাংকের মাধ্যমে তা আরো ব্যাপকভাবে বাজারজাত করা গেলে শিল্পকারখানায়ও এর ব্যবহার বাড়বে। বিশেষ করে, আবাসিক ও ছোট গ্রাহকদের মধ্যে এলপিজির ব্যবহার বাড়াতে পারলে এর ইতিবাচক দিক হবে বহুমুখী। বর্তমানে এলপিজির দাম বেশি হওয়ায় তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। সরকারের নতুন উদ্যোগ যদি যথাযথভাবে কার্যকর হয়, তাহলে এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান চিত্র পাল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় সরকার এবং এলপিজির আমদানিকারক, বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সমন্বয়ের ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিলে অবশ্যই মানুষ উপকৃত হবে এবং জ্বালানি সংকট মোকাবিলা সহজ হবে। তবে সরকারকে এ ব্যাপারে অধিকতর এগিয়ে যেতে হবে। সাশ্রয়ী মূল্য নিশ্চিত করতে হলে শুল্ক, কর হ্রাসের পাশাপাশি সহযোগিতার ক্ষেত্র আরো প্রসারিত করতে হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে আবাসিক ও গৃহস্থালি কাজে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহে বাংলাদেশ ব্যতিক্রমী উদাহরণ। এ পদ্ধতি সামগ্রিকভাবে আমাদের জন্য ক্ষতিকর। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এলপিজির দাম সহনীয় পর্যায়ে আনা ও এর ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব নয়। বসুন্ধরাসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের যথেষ্ট সক্ষমতা যেহেতু রয়েছে, সেহেতু এ ব্যাপারে সরকারের উচিত দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাওয়া। ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবিলার প্রয়োজনে সরকারের তরফে এ জন্য গতিশীল কার্যক্রম দরকার। উচ্চারণসর্বস্ব ঘোষণা আর প্রতিশ্রুতির মধ্যে বিষয়টি বন্দি না রেখে ত্বরিত কাজের কাজ করা প্রয়োজন।

নিজেকে রক্ষা করতে মেয়েটি আর কী করতে পারতেন? বখাটের দায়ের কোপ

কোনোভাবেই নিজেকে রক্ষা করতে পারলেন না মেয়েটি। কলেজে যাওয়া বন্ধ করেও না, থানা-পুলিশের কাছে আশ্রয় চেয়েও না। বখাটের দায়ের কোপে ক্ষতবিক্ষত মেয়েটির আপাতত আশ্রয় হয়েছে হাসপাতালে। সে কোপ এতই ভয়াবহ যে বাকি জীবন পঙ্গু হয়ে কাটাতে হতে পারে বরগুনার এই মেয়েটিকে। হামলায় ১৮ বছর বয়সী এই মেয়েটির যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তা একজন চিকিৎসকের পক্ষেও সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। ‘পেশাগত জীবনে এমন বর্বরতা আর দেখিনি’—এ মন্তব্য মেয়েটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া চিকিৎসকের।
মেয়েটিকে বাকি জীবন যদি পঙ্গু হয়ে কাটাতে হয়, তবে আমাদের কি ধরে নিতে হবে, এটাই তাঁর নিয়তি ছিল! এলাকার বখাটে মহসিন উৎপাত শুরু করায় ছয় মাস ধরে তাঁর কলেজে যাওয়া বন্ধ। এভাবে চলবে না ভেবে গত নভেম্বরে বরগুনা থানায় গিয়ে নিজের ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে এসেছেন মেয়েটি। থানার আশ্বাসও মিলেছে। নির্বাচনী পরীক্ষা বাদ দিলে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়াই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। মেয়েটি একা বের হওয়ার সাহস পাননি, বাবাকে নিয়েই রওনা হয়েছিলেন পরীক্ষা দিতে। ভয়ংকর এ ঘটনা ঘটে পথের মধ্যেই। বখাটে মহসিনের দায়ের কোপে মেয়ে-বাবা দুজনই ক্ষতবিক্ষত। বরগুনা থানার পুলিশ যাকে ‘খুঁজে’ পায় না, মেয়েটি বাড়ি থেকে বের হওয়ামাত্রই যখন সেই ‘নিখোঁজ’ বখাটের হামলার শিকার হন, তখন ঘটনাটিকে মেয়েটির নিয়তি বলে মেনে নেওয়া ছাড়া আর কী বলা যায়! নিজেকে রক্ষার জন্য মেয়েটি আর কী করতে পারতেন?
বাকি জীবন এই দিনমজুরের মেয়ের পঙ্গু অবস্থায় কাটাতে হবে কি না, এই যখন আশঙ্কা—তখন পুলিশ ও প্রশাসনে আমরা কিছু নড়াচড়া লক্ষ করছি। পুলিশের তিনটি আর র‌্যাবের একটি দল এখন বখাটে মহসিনকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। মেয়েটি জিডি করার পরও ব্যবস্থা না নেওয়ায় এক এসআইকে ক্লোজ করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও হয়েছে। সমাজও জেগে উঠেছে, ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়েছে। এ ধরনের আরও অনেক কিছুই হয়তো হবে। কিন্তু কোনো কিছুই মেয়েটি ও তাঁর পরিবারকে আর আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে পারবে না। তবে এই মেয়েটিকে কেন নিরাপত্তা দেওয়া গেল না, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা গেলে, ঘটনাটি থেকে শিক্ষা নিলে ও বখাটে মহসিনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে হয়তো এ ধরনের ঘটনা কমানো সম্ভব।

ওয়াসার দূষিত উপহার

ত মৌসুমেও হয়নি, আগামী শুষ্ক মৌসুমেও হবে না। ঢাকাবাসীর ভাগ্যে এবারও অপেক্ষা করছে শোধনের অযোগ্য দূষিত-দুর্গন্ধযুক্ত পানি। নদীদূষণ বাড়ে, শোধনের ব্যবস্থা বাড়ে না। সমস্যা সংকটে গড়ায়, কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের টনক নড়ে না। তাঁরা চলেন গদাই লশকরি চালে, আর সমস্যা বাড়ে রকেটগতিতে। নদীর দূষিত পানি শোধনের আগে প্রাক-শোধনযন্ত্র অনেক আগেই বসানোর কথা থাকলেও এখনো সেই কাজ শুরুই হয়নি। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন, ‘আমাদের আরও সময় অপেক্ষা করতে হবে।’ কিসের অপেক্ষায় তাঁরা সময়ের কাজ সময়ে করতে ব্যর্থ হচ্ছেন, তার ব্যাখ্যা দেওয়া দরকার।
কোনো ব্যাখ্যা নেই, কিন্তু অকাতরে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগসহ ঢাকার নদ-নদীগুলোতে কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। গত রোববারের প্রথম আলোর ছবি সাক্ষী, এই দূষণ বাধাহীনভাবে ঘটেই চলেছে। ২০০৩ সালে ঢাকার নদীদূষণের কারণ হিসেবে ৩৬টি শিল্প-কারখানাকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ২০১০ সালের শেষেও এসব দূষণের কারখানা না কমে বরং অনেক বেড়েছে। ঢাকার শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগেরই দূষণ দূর করার প্ল্যান্ট (ইটিপি) নেই। বহু আবেদন-নিবেদনের পরও হাজারীবাগের ট্যানারি-শিল্পকে সেখান থেকে সরানো যায়নি। যে কায়েমি মহল নদী দখল ও দূষণের জন্য দায়ী, তাদের দাপট গগনচুম্বী। একশ্রেণীর আমলা-রাজনীতিক-ভূমিদস্যুর ত্রিভুজ ক্ষমতার কাছে সরকারি তৎপরতা সমুদ্রে ঢিল ছোড়ার মতোই অর্থহীন হয়ে যাচ্ছে। আর এর মাশুল দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
নগরবাসীকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার দায়িত্ব ওয়াসার। নদীর পানি শোধন করা এবং এর দেখভাল করার দায়িত্বও তার। পাশাপাশি শিল্প মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়েরও দায় কম নয়। অথচ এখনো তারা কথা বলছে ধারণার ভিত্তিতে, নিশ্চিত আশ্বাস ছাড়াই। ওয়াসার পরিচালক বলেছেন, ‘আমাদের ধারণা ছিল, এবারের শুষ্ক মৌসুম শুরুর আগেই প্রাক-পরিশোধনযন্ত্র বসানো যাবে, কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তা সম্ভব হচ্ছে না।’ শুধু কথায় চিঁড়ে ভেজে না। প্রায় দেড় কোটি নগরবাসীর পানিপ্রাপ্তির প্রশ্ন যেখানে, সেখানে ধারণার ভিত্তিতে কথা বলা কেমন দায়িত্বশীলতা? প্রাক-শোধনযন্ত্র তো গতবারই বসানোর কথা। কেন এবং কার গাফিলতির জন্য তা হয়নি, সেটাই জনগণের জানা প্রয়োজন।
দূষণ চলবে, প্রতিকার চলবে না এবং অস্বাস্থ্যকর দূষিত পানি মানুষের শরীরকেও দূষিত করে যাবে—এটা নিয়তি হতে পারে না। আশা করি, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এই ব্যর্থতার বিষয়ে তদন্ত করবে এবং নগরবাসীর ভোগান্তির নিয়তি বদলানোয় দৃশ্যমান কাজ করবে।

পাকিস্তানের রাজনীতিতে ‘মুন্নি’?

রাজনীতিবিদেরা একে অপরকে ঘায়েল করতে কত রকমই না প্রচারণাকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন। কিন্তু কোনো গান যদি হয় এ ক্ষেত্রে হাতিয়ার, তাহলে তো বেশ আশ্চর্যই হতে হয়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এমনই ঘটনা ঘটছে পাকিস্তানের রাজনীতিতে। কারণ, দেশটির রাজনীতিবিদেরা একে অপরের দোষ চাপাতে কথার একপর্যায়ে বলেই ফেলছেন ‘মুন্নি বদনাম হুয়ি ডারলিং তেরে লিয়ে’। হ্যাঁ, দাবাং-এর এই জনপ্রিয় গানটি শুধু শ্রোতা-দর্শকদের নয়, বরং পাকিস্তানের রাজনীতিবিদদের রাজনৈতিক আলোচনায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
এই তো বেশ কিছুদিন আগে ক্ষমতাসীন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা ইমতিয়াজ সাফদার ওয়ারিস এক অনুষ্ঠানে বিরোধী দল পাকিস্তান মুসলিম লিগকে (পিএমএল-এন) ইঙ্গিত করে বলেই ফেললেন, ‘আমরা অন্যজনের দোষে দোষী হই। এমন পরিস্থিতিতে আছি যেখানে আমরা শুধু এটুকুই বলতে পারি, “মুন্নি বদনাম হুয়ি ডার্লিং তেরে লিয়ে”।’
রুপালি পর্দার ‘মুন্নি’ যে দর্শকদের হূদয় ছুঁয়ে রাজনীতিবিদদের স্তূতিতে পরিণত হবে, তা-ই বা জানত কজন। তবে এটা ঠিক, উভয় ক্ষেত্রেই বেশ আনন্দ পাচ্ছেন উভয় জগতের পাঠকেরা। হয়তো, এমন খবর শুনে হাসছেন গানটির পেছনের মানুষগুলোও। কারণ, যেভাবেই হোক, গানটি তো সব শ্রেণীর মানুষের মুখে মুখে। দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।