Tuesday, December 07, 2010

হ্যামিলিনের বংশীবাদক উইকিলিকস

হ্যামিলিনের বংশীবাদকের মতোই সারা দুনিয়ায় তোলপাড় করা বাঁশি বাজিয়েছে উইকিলিকস নামে ওয়েবভিত্তিক একটি সংগঠন। পরাশক্তিরা সারা দুনিয়ায় অতি গোপনে যেসব কাজকর্ম করে চলেছে, দশকের পর দশক ধরে, তারই কিছু গুরুত্বপূর্ণ দলিল সাধারণ মানুষের কাছে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। তাতে পরাশক্তিগুলোর টনক নড়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি উত্তেজিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা ওয়েবসাইটটি বন্ধ করে দিয়েছে। তবে বহু বিশ্লেষকই মনে করছেন, উইকিলিকসের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এ হেন ব্যবস্থা 'অত্যন্ত বিলম্বিত ও অতিসামান্য'; কারণ তাদের মতে, উইকিলিকসের প্রকাশিত তথ্যগুলো ইতিমধ্যেই পৃথিবীর বড় বড় গণমাধ্যমের হাতে পেঁৗছে গেছে।
তা ছাড়া উইকিলিকস আরো অনেক নেট-সংযোগের মাধ্যমে তথ্য প্রকাশের কাজটি চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি 'এনক্রিপ্টেড' আকারে শতাধিক সাইটে তাদের তথ্যাবলি সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে, যা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। উইকিলিকসের ফাঁস করা আড়াই লাখ নথির মধ্যে বাংলাদেশ সম্পর্কেও দুই হাজার ১৮২টি নথি রয়েছে। শনিবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ৬৮৩টি নথি প্রকাশিত হয়েছে। বাকিগুলোও শিগগিরই প্রকাশিত হবে। প্রকাশিত নথিগুলোতে দেখা যায়, ইসলামাবাদে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো নথিতে বাংলাদেশে লস্কর-ই-তৈয়বার আস্তানা থাকতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে লস্কর-ই-তৈয়বার বেশ কিছু জঙ্গি ধরাও পড়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেই নথির ভিত্তিগুলো ধরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর তথ্য পেতে ওয়াশিংটনের সহযোগিতা চাইতে পারে। বাংলাদেশ ছাড়াও ইরাক যুদ্ধ, আফগান যুদ্ধ, চীন ও ইরান সম্পর্কে মার্কিন নীতি ও কার্যক্রমের অনেক আভাস পাওয়া যায় ওয়েবসাইটটির প্রকাশিত নথিগুলো থেকে।
উইকিলিকসের পেছনে কারা আছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে জনসাধারণের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে একে একটি বড় ধরনের উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। কারণ বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যবাদী নীতি এবং সিআইএর কর্মকাণ্ডের যেসব ঘৃণিত নমুনা অতীতে মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে, সে কারণেই উইকিলিকসের এসব তথ্য প্রকাশকে সাধারণ মানুষ স্বাগত জানিয়েছে। একইভাবে উইকিলিকসের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এভাবে উঠেপড়ে লাগাটাকে মানুষ ভালো চোখে দেখছে না। কারণ ওয়েবসাইটটির এ ধরনের তথ্য প্রকাশে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়াসহ শক্তিধর বড় অনেক দেশই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র যত ক্ষিপ্তই হোক, দুনিয়াব্যাপী সাধারণ মানুষ এখনো উইকিলিকসের তথ্য প্রকাশে আনন্দিত। অবাধ তথ্য অধিকার, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতার এই যুগে যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের রাগান্বিত প্রতিক্রিয়া কতটা কাম্য, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। কারণ যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বই বর্তমানে তথ্য অধিকার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বড় প্রবক্তা। আমরা চাই, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘি্নত হয়_ এমন সব তথ্য থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্ব এ ব্যাপারে রাগান্বিত নয়, যুক্তিসংগত পদক্ষেপ নেবে। বরং উইকিলিকসের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এর একটি কাম্য সমাধানে আসা যেতে পারে।

No comments:

Post a Comment