Thursday, January 13, 2011

কিছু কেন্দ্রে অনিয়ম হলেও খুলনা-বরিশাল নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে: বিএনপি

কিছু কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ তুললেও খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ৪৯টি পৌরসভায় নির্বাচন মোটামুটি শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বরিশালের গৌরনদী, মেহেন্দীগঞ্জ ও পিরোজপুরের স্ব্বরূপকাঠী পৌরসভার নির্বাচন নিয়ে বিএনপি অভিযোগ তুলেছে।

দলটি এই তিন পৌরসভায় আবারও নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এসব কথা বলেন। নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘তিনটি স্থান (গৌরনদী, মেহেন্দীগঞ্জ ও স্ব্বরূপকাঠী) ছাড়া মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ হয়েছে। ওইসব কেন্দ্রে ভোট কারচুপি হয়েছে। আমাদের কোনো এজেন্টকে সেখানে থাকতে দেওয়া হয়নি। সাধারণ ভোটাররাও ভোট দিতে পারেননি। তাই ওইসব পৌরসভায় আমরা আবারও নির্বাচনের দাবি জানাই।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘গৌরনদী, মেহেন্দীগঞ্জ ও স্ব্বরূপকাঠীতে এ ঘটনা না ঘটলে আমরা সরকারকে শুভেচ্ছা জানাতাম। শুভেচ্ছা জানাতে কার্পণ্য নাই। কিন্তু এ ঘটনাগুলো না ঘটলে আমরা অভিনন্দন জানাতাম।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সহসভাপতি সেলিমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিবউন নবী খান, সাধারণ সম্পাদত শরাফত আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্বকাপে আশরাফুলের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন রয়েছে

‘দেশের হয়ে দেড়শর বেশি ওয়ানডে খেলা কোনো খেলোয়াড়ের অভিজ্ঞতা একেবারেই হেলাফেলার বিষয় নয়। তাই আসন্ন বিশ্বকাপে আশরাফুলের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের বাংলাদেশ দলে প্রয়োজন রয়েছে।’ যাকে দলে নেওয়া না নেওয়া নিয়ে এ মুহূর্তে চারদিকে বিতর্কের ঝড় সেই মো. আশরাফুল সম্পর্কে এমনই মূল্যায়ন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক ও প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদের।

প্রথম আলো অনলাইনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ফারুক বলেন, ‘আশরাফুলের ব্যাপারে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। এটা ঠিক যে সে তাঁর প্রতিভা অনুযায়ী ধারাবাহিকতার সঙ্গে কখনো খেলতে পারেনি। তবে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের মতো আসরে আশরাফুলের অবশ্যই দলে থাকা উচিত। আমাদের ক্রিকেট এখনো সেই পর্যায়ে পৌঁছায়নি যে হুট করে দেড়শ ওয়ানডে খেলা একজন খেলোয়াড়কে আমি বাদ দিয়ে দেব। তাহলে তো ওর প্রতি ক্রিকেট বোর্ডের যে বিনিয়োগ তার পুরোটাই অপচয় হবে।’
আশরাফুলের ব্যাপারে নিজের সহানুভূতি থাকলেও দর্শক সমর্থকদের অনুভূতির ব্যাপারটিও আশরাফুলকে মাথায় রাখতে হবে বলেও মনে করেন ফারুক।
সাবেক প্রধান নির্বাচক হিসেবে বর্তমান নির্বাচক কমিটির মূল্যায়ন করতে গিয়ে ফারুক বলেন, ‘২০০৭ সালে আমরা যে পর্যায়ে দলকে রেখে এসেছিলাম, সেই পর্যায়ের তুলনায় প্রথম দিকে বর্তমান কমিটির কাজকর্ম একটু অগোছালো ছিল। হতে পারে, আইসিএল একটা সমস্যা সৃষ্টি করেছিল সে সময়। তবে এ মুহূর্তে সেই সমস্যা থেকে রফিকুল আলমের নেতৃত্বাধীন কমিটি অনেকটাই বেরিয়ে এসেছে।’ এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ আরও ভালো করবে বলেই ফারুক বিশ্বাস করেন।
বর্তমান নির্বাচক কমিটি ঠিক পথে এগোলেও নতুন তারকা তৈরির ক্ষেত্রে এই কমিটি বেশ পিছিয়ে আছে বলে মনে করেন ফারুক। তবে দল হিসেবে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে হলে অতিরিক্ত পরিবর্তন কাম্য নয় বলেই তিনি মনে করেন।
তামিম ইকবালের সহ-অধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া চমত্কার একটি সিদ্ধান্ত বলেই মানছেন ফারুক। তিনি মনে করেন, ক্রিকেটে সহ-অধিনায়কের ভূমিকাটা একজন সিনিয়র খেলোয়াড়ের মতোই। তাই তামিমের মতো খেলোয়াড় এই ভূমিকায় দলকে দারুণ সাহায্য করতে পারবে বলে মনে করেন তিনি। ফারুক আরও বলেন, একজন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান প্রথমে মাঠে নেমে ম্যাচের মেজাজটা অন্য যেকোনো খেলোয়াড়ের চেয়ে অনেক ভালো বোঝে। সেই হিসেবে তামিম দলকে ভালোই সাহায্য করতে পারবে।
সাকিবের অধিনায়ক হওয়া নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই বলে মনে করেন ফারুক। তিনি বলেন, সাকিবের রেকর্ডই বলে দেয় অধিনায়ক হিসেবে সে অবশ্যই ‘অটোমেটিক চয়েস’।
মাশরাফি বিশ্বকাপে খেলতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ফারুক। ফারুকের মতে, মাশরাফি খেলতে না পারলে তা হবে দলের জন্য একটা বড় আঘাত।
নিজে বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ দলের অংশ হতে পারায় দারুণ গর্ব অনুভব করেন ফারুক আহমেদ। ফারুক তাঁর বিশ্বকাপ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘নিরানব্বইয়ের বিশ্বকাপে খেলতে গিয়ে প্রতিটি মুহূর্তই দারুণ উপভোগ করেছি। স্কটল্যান্ড আর পাকিস্তানকে হারানো মধুরতম অভিজ্ঞতা।’

জনশক্তি রপ্তানিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুন

বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার ধ্বংসের জন্য একশ্রেণীর অসাধু আদম বেপারি উঠেপড়ে লেগেছে। বিগত সব সরকারের সময় বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত শ্রমবাজার ধ্বংসের জন্য ওইসব অসাধু আদম বেপারি দেশে সমান্তরাল সরকারব্যবস্থা চালু করেছিল।

এতে মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব, কুয়েতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এর সঙ্গে মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীও জড়িত। বাংলাদেশের অভিবাসন ব্যয় পৃথিবীর সর্বোচ্চ। এখানে একজন শ্রমিককে বিদেশে যেতে দুই লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা খরচ করতে হয়, যা পৃথিবীর কোনো দেশে নেই। একজন সাধারণ শ্রমিকের পক্ষে এ খরচ ১০ বছরেও তুলে আনা সম্ভব হয় না। ফলে অতিরিক্ত অভিবাসন খরচ পুষিয়ে নিতে শ্রমিকরা অবৈধ ও অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ে। এতে তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভিসার মেয়াদ শেষেও অবৈধভাবে থেকে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ ছাড়াও জাল ভিসা, গলাকাটা পাসপোর্ট, টুরিস্ট ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসা, ওমরাহ ভিসা, ভিসা অন এরাইভালসহ বিভিন্ন অসৎ পন্থায় আদম বেপারিরা বিদেশে লোক পাঠানোর ফলে বাংলাদেশের শ্রমবাজার আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। সর্বোপরি বিশ্বমন্দার প্রভাবের কথাটিও আমাদের স্মরণ রাখতে হবে।
বর্তমান শ্রমমন্ত্রী আমাদের এই ধ্বংসপ্রায় শ্রমবাজারকে পুনরুদ্ধারের প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী সংসদ অধিবেশনে মানবপাচারের বিরুদ্ধে 'এন্টি ট্রাফিকিং ল' পাশের যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। জনশক্তি রপ্তানিতে শৃংখলা ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
ডা. মো. আবদুর রহমান
চেয়ারম্যান, প্রবাসী মানবকল্যাণ ফাউন্ডেশন, বনানী, ঢাকা।

সময় এখন পূর্ণিমার

ত বছরের শেষের দিকে পূর্ণিমার ক্যারিয়ারের মোড় আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। পরপর দুটি ছবির সাফল্য তাঁকে আবার আলোচনার শীর্ষে এনে দিয়েছে। রাতারাতি সব বড় নির্মাতা আবার তাঁর কাছে ভিড়তে শুরু করেছেন। কিন্তু পূর্ণিমার এখন আর শিডিউল দেওয়ার উপায়ও নেই।

হাতে আছে এক ডজনের মতো ছবি। এগুলোর মধ্যে অন্যতম 'এই যে দুনিয়া কিসের লাগিয়া', 'জজ ব্যারিস্টার পুলিশ কমিশনার', 'রাজা সূর্য খাঁ', 'গরিবের দাম অনেক বেশি', 'সে আমার মন কেড়েছে', 'অস্ত্র ছাড় কলম ধর', 'আই লাভ ইউ', 'ছোট্ট সংসার', 'মায়ের বাড়ি' ইত্যাদি। প্রতিটি ছবিই বিগ বাজেটের এবং তারকাবহুল। তাই নির্মাতারা একটু সময় নিচ্ছেন। বাধ্য হয়ে পূর্ণিমাকেও অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, 'আগের মতো আর দৌড়ঝাঁপ দিয়ে ছবি করার ইচ্ছে নেই। এখন খুব বেছে, বুঝেশুনে ছবি করতে চাই। ভালো নির্মাতা, ভালো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান না হলে অভিনয় করার প্রয়োজনই দেখি না।' প্রথম থেকেই পূর্ণিমার অভিনয়ের প্রশংসা চতুর্দিকে। এমনকি তাঁর শ্বশুরবাড়ি পর্যন্ত! পূর্ণিমার স্বামীই তাঁর অভিনয়ের বড় ভক্ত। এই তো গত ডিসেম্বরে, 'ওরা আমাকে ভালো হতে দিল না' মুক্তি পেলে তিনি নিজেই প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখে এসেছেন।
পূর্ণিমার সিদ্ধান্তগুলো এখন আর একা নিতে হয় না। যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে দুজনই সমান অংশ নেন। স্বামীর ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও পূর্ণিমা কম সাহায্য করেন না। ফলে কারো মাথার ওপর একক চাপ পড়ে না। সময় পেলেই রাত-বিরাত বেরিয়ে পড়েন ঢাকা শহর ঘুরতে। শুধু ঢাকা নয়, দুজনে ঠিক করেছেন বছরে অন্তত তিনবার বিদেশ যেতে হবে। এতে নাকি মন-মানসিকতা ভালো থাকে। কাজের প্রতি অবহেলাও কমে। দুজনে মিলে প্রতিদিনের একটি রুটিনও করেছেন ইতিমধ্যে। সে রুটিনে বেশ কয়েকটি কাজ আছে, যা বিনা অজুহাতেই করতে হবে। কোনোভাবেই 'আজ না কাল' করা যাবে না। যেমন_পূর্ণিমার ছবি মুক্তি পেলে তা দেখতে হবে প্রেক্ষাগৃহে। প্রথম দিনই। আবার যেদিন আকাশে চাঁদ উঠবে, সেদিন জোছনা পোহাতে হবে মাঝরাত্রি পর্যন্ত দুজনকেই।
কাল মুক্তি পাবে আহমেদ নাসিরের 'মায়ের জন্য পাগল'। পূর্ণিমার সঙ্গে আছেন মারুফ, ববিতা ও ইমন। পূর্ণিমা খুব আশাবাদী।

খাদ্য আমদানি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সরকারের

জ দুপুরে খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এক আন্ত-মন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ও বাণিজ্যমন্ত্রী মো. ফারুক খান উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সহনশীল পর্যায়ে রাখতে খাদ্য আমদানি আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

চাল আমদানির পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন লাখ টন, এখন সেটাকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১২ লাখ টন। চিনি এক লাখ থেকে বাড়িয়ে দুই লাখ টন, গম সাড়ে সাত লাখ থেকে ১০ লাখ টন, অপরিশোধিত ভোজ্যতেল দুই লাখ টন, ডাল ১০ হাজার টন ও ২০ হাজার টন ছোলা আমদানি করা হবে।
আন্ত-মন্ত্রণালয় এই বৈঠক শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী মো. ফারুক খান এ কথা জানান। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্য অস্থির। এ কারণে দেশে দ্রব্যমূল্য সহনশীল পর্যায়ে রাখতে সরকারের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তার চেয়ে মজুদ বাড়ানো হচ্ছে।
এ ছাড়া এই সময় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (টিসিবি) অধিকতর কার্যকর করার লক্ষ্যে এক হাজার কোটি টাকার তহবিল চাওয়া হবে বলেও জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে উভয় মন্ত্রণালয়ের সচিবেরা উপস্থিত ছিলেন।

নারী-পুরুষ সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন সিডও সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন

নারী ও পুরুষের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন সিডও সনদের পূর্ণ অনুমোদন ও বাস্তবায়ন। তাই অবিলম্বে সিডও সনদের ওপর রাষ্ট্রের সংরক্ষণবাদী নীতি প্রত্যাহার করতে হবে। গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে আয়োজিত সিডও সম্মেলনে বক্তারা এ দাবি করেন।

৩৮টি বেসরকারি ও মানবাধিকার সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত প্লাটফর্ম সিটিজেনস ইনিশিয়েটিভস অন সিডও বাংলাদেশ এ সম্মেলনের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, সিডও সনদ বাস্তবায়নে সরকার এরই মধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। গৃহীত কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইউএন সিডও কমিটির কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
সিডও বিকল্প প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সভাপতি ড. হামিদা হোসেন এবং উইমেন ফর উইমেনের সদস্য রওশন জাহান। স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকারের সঞ্চালনায় এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানমের সভাপতিত্বে সম্মেলনে সিডও বিকল্প প্রতিবেদনে উলি্লখিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন নারী নেত্রী সালমা খান, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী, নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর, পিএসটিসির নিতাই কান্তি দাস প্রমুখ।

কর্নেল তাহেরের বিচারঃ ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের অবস্থান জানান __ হাইকোর্ট

র্নেল তাহেরের বিচারে গঠিত সামরিক ট্রাইব্যুনালের বিচারক প্যানেলের সদস্যদের বর্তমান অবস্থান জানাতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল বুধবার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

তাহেরের গোপন বিচারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের শুনানিকালে আদালত এ আদেশ দেন। সংস্থাপন ও প্রতিরক্ষাসচিবকে এ ব্যাপারে তথ্য জানাতে বলা হয়েছে। আদেশে সামরিক ট্রাইব্যুনালের বেসামরিক সদস্য মো. আবদুল আলী, হাসান মোরশেদ এবং সামরিক সদস্য উইং কমান্ডার আবদুর রশিদ ও অ্যাক্টিং কমান্ডার সিদ্দিক আহমেদ সম্পর্কে জানাতে বলা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের প্রধান কর্নেল ইউসুফ হায়দার ইতিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন।
গতকালের আদেশে ১৯৭৫ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত সেনাসদস্যদের নাম-ঠিকানা ও বর্তমান অবস্থান জানাতেও সরকারকে নির্দেশ দেন আদালত। আগামী ১৮ জানুয়ারির মধ্যে তাঁদের ব্যাপারে তথ্য জানাতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি ১৯৭৬ সালের ৪ জুন মোহাম্মদপুর থানায় তাহেরের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার এজাহার ও অন্যান্য কাগজপত্র এই সময়ের মধ্যে দাখিল করার নির্দেশ দেন আদালত।
বেলা আড়াইটায় আদালত এসব নির্দেশ দেন। তার আগে সামরিক আদালতে লে. কর্নেল এম এ তাহেরের গোপন বিচারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিটের ওপর তৃতীয় দিনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে মাহমুদুর রহমান মান্না ও সার্জেন্ট সৈয়দ রফিকুল ইসলাম বক্তব্য দেন।
জিয়া ক্ষমতা নিষ্কণ্টক করতে তাহেরকে ফাঁসি দেন : নিজের ক্ষমতা নিষ্কণ্টক করতে জিয়াউর রহমান কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেওয়ার জন্যই ক্যাঙ্গারু আদালত বানিয়েছিলেন। ডাকসুর সাবেক ভিপি ও সামরিক আদালতে গোপন বিচারে খালাসপ্রাপ্ত মাহমুদুর রহমান মান্না গতকাল হাইকোর্টে এ বক্তব্য দেন।
মান্না বলেন, তাহেরের মৃত্যুই ছিল ওই বিচারের প্রধান লক্ষ্য। একই বিচারে মেজর জলিলকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখায় তাঁর শাস্তি কমিয়ে যাবজ্জীবন করা হয়। তবে তাহেরের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখা হয়। মান্না আরো বলেন, 'এটি ছিল সাজানো মামলা। আর ওই মামলায় কেন আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তা আজ পর্যন্ত আমি জানতে পারিনি।'
আদালতে ওই মামলার অপর আসামি সার্জেন্ট রফিকুল ইসলামও বক্তব্য দেন। তিনিও সামরিক আদালতের বিচারকে প্রহসনের বিচার বলে দাবি করেন। এ প্রহসনের বিচার করা হয় জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিস্বার্থ চারিতার্থ করার জন্য। একই মামলায় সামরিক আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হাসানুল হক ইনুও গতকাল আদালতে বক্তব্য দেন। আগের দিন কর্নেল তাহের ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন বক্তব্য দেওয়ার সময় জিয়াউর রহমানকে মীর জাফর আখ্যায়িত করেন।

ব্রাজিলে বন্যা ও ভূমিধসে ২৭০ জনের প্রাণহানি

ব্রাজিলের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা, ভূমিধস ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে অন্ততপক্ষে ২৭০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। তবে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়াবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রিও ডি জেনেরিওর নিকটবর্তী পার্বত্য শহরগুলোতে প্রবল বন্যা ও ভূমিধসে বুধবার অন্ততপক্ষে ২৫৭ জন নিহত হয়েছে।

আগেরদিন মঙ্গলবার ভারী বর্ষণে সাও পাওলো প্রদেশে ১৩ জন নিহত হয়েছে। রিও'র ৬২ মাইল উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চল টেরেসোপোলিসে অন্ততপক্ষে ১৩০ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন নগর কর্তৃপক্ষ। পেট্রোপোলিসে ২০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। নোভা ফ্রিবার্গোতে মারা গেছে ১০৭ জন। এক ই-মেইল বিবৃতিতে প্রাদেশিক কর্মকর্তারা এই পরিসংখ্যান জানান।

পরিস্থিতির ভয়াবহতা সম্পর্কে একজন গৃহকর্মী গ্লোবো নেটওয়ার্ক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানান, "ধনী-গরীর সবার ঘরই ধ্বংস হয়েছে।" গ্লোবো টেলিভিশনকে ব্রাজিলের পরিবেশমন্ত্রী কার্লোস মিঙ্ক বলেন, "এখনো পর্যন্ত মৃতের যে খবর জানানো হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ মারা গেছে বলে আমার ধারণা।" উপদ্রুত অঞ্চলে যাওয়ার আগে মিঙ্ক আরো বলেন, "অনেক মানুষ ঘুমের মধ্যেই মারা গেছে।"

টেরেসোপোলিসের মেয়র জর্জ মারিও জানান, শুধু টেরেসোপোলিসেই ৫০ জন মানুষ নিখোঁজ হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মারিও আরো বলেন, "সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোতে উদ্ধারকারী দল সবে পৌঁছাতে শুরু করেছে।" তিনি আরো যোগ করেন, ১ হাজার মানুষ গৃহচ্যুত হয়েছে। "এটি এই শহরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্যোগ," মন্তব্য করেন মারিও।

ওই এলাকায় টেলিফোর লাইন অকার্যকর হয়ে পড়েছে, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। শহরটির অধিবাসীর সংখ্যা এক লাখ ৮০ হাজার। ভূমিধসে শহরটির কয়েকশ বাড়িঘর চাপা পড়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় ব্রাজিলের নতুন প্রেসিডেন্ট ডিলমা রৌসেফ ৪৬ কোটি জরুরি সহায়তার ঘোষণা করেছেন।

লেবাননে জোট সরকার পতন

লেবাননের জোট সরকার থেকে শিয়াপন্থী হিজবুল্লাহ ও তার মিত্র রাজনৈতিকদলগুলোর ১১ মন্ত্রী বুধবার পদত্যাগ করেছেন। এর ফলে প্রধানমন্ত্রী সাদ আল হারিরির নেতৃত্বাধীন ঐকমত্যের সরকারের পতন হয়েছে। দেশটির জ্বালানি মন্ত্রী জিব্রান বাসিল জানিয়েছেন, সাদ হারিরির বাবা লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরির হত্যাকাণ্ড নিয়ে জাতিসংঘ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত নিয়ে টানাপোড়েনে তারা সরকার থেকে বেরিয়ে গেছেন।
বিবিসি জানিয়েছে, তারা এমন সময়ে পদত্যাগের ওই ঘোষণা দেন যখন ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে বৈঠক করছিলেন লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি। ২০০৫ সালে রফিক হারিরির হত্যাকাণ্ডে হিজবুল্লাহ সদস্যরা জড়িত- জাতিসংঘ ট্রাইব্যুনালের তদন্তে এমন অভিযোগ উঠে আসার আভাস পাওয়ার পর থেকেই দেশটিতে রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

হিজবুল্লাহ ঘোষণা দিয়েছিলো, তাদের কোনো সদস্যকে জড়িয়ে অভিযোগ তোলা হলে তা মেনে নেওয়া হবে না। কর্মকর্তারা জানান, লেবাননে রাজনৈতিক সমঝোতা প্রতিষ্ঠায় মঙ্গলবার সিরিয়া ও সৌদি আরবের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। বিরোধীদের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের কারণেই সম্ভাব্য সমঝোতা হয়নি। সাদ হারিরির সঙ্গে বৈঠক শেষে বারাক ওবামা বলেন, সরকারের কাজে বাধা দিতেই হিজবুল্লাহ সর্বশেষ এ পদক্ষেপ নিয়েছে।

লেবাননে ২০০৯ সালে ঐকমত্যের সরকার গঠন ও ক্ষমতা ভাগাভাগি চুক্তির মাধ্যমে পাঁচ মাসের রাজনৈতিক অচলাবস্থা দূর হয়। ওই সময় ৩০ সদস্যের মন্ত্রিসভায় হিজবুল্লাহকে ২টি পদ দেওয়া হয়। হিজবুল্লাহর রাজনৈতিক মিত্র 'দ্য শিয়া আমল মুভমেন্ট'সহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল মন্ত্রিসভায় আরো ৮টি পদ লাভ করে।

সাদ হারিরির সুন্নি ফিউচার মুভমেন্ট ও তার মিত্রদের মন্ত্রিসভায় ১৫টি পদ আছে। বাকি ৫ মন্ত্রীকে মনোনয়ন দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মিশেল সুলেইমান। বুধবার গুঞ্জন উঠেছিলো, হিজবুল্লাহ সমর্থিত ১০ মন্ত্রীর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট মনোনীত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আদনান সাইয়েদ হুসেইনও পদত্যাগ করে সরকার পতনে বাধ্য করবেন। অবশেষে সাইয়েদ হুসেইনও পদত্যাগী মন্ত্রীদের সঙ্গে যোগ দেন। এর ফলে সরকার পতন ঘটাতে মন্ত্রিসভার এক তৃতীয়াংশের বেশি সদস্যের পদত্যাগের যে বাধ্যবাধকতা ছিলো তা পূরণ হয়।

দেশের রাজনৈতিক এই অচলাবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সাদ হারিরি তার সফর সংক্ষিপ্ত করেছেন বলে জানা গেছে। তবে হোয়াইট হাউসে ওবামার সঙ্গে বৈঠকের পর সরকার পতন সম্পর্কে সাদ হারিরির কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বৈরুত ফেরার আগে চলমান সঙ্কট নিয়ে তিনি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে প্যারিস যেতে পারেন। সরকারের এই পতন লেবাননে আবার সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সর্বশেষ ২০০৮ সালে দেশটিতে শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে ভয়াবহ দাঙ্গা হয়।

হালকা প্রকৌশল শিল্পঃ কারিগরির বিস্ময় ধোলাইখালে

পুরান ঢাকার ধোলাইখালের দিদার ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড গাড়ির নানান যন্ত্রাংশ তৈরি করে। ২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মিলবার্ট ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই দিদার ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে যন্ত্রাংশ আমদানির চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী যন্ত্রাংশ তৈরিও করেছে তারা। নমুনা পরীক্ষা করে সনদও দিয়েছে বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক)।

নিউ মিলবার্ট ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী নিশান রহিম কালের কণ্ঠকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় খুচরা ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পেলে তাঁরা প্রতি মাসে ৫০ হাজার ডলারের যন্ত্রাংশ কিনবেন বাংলাদেশ থেকে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিক কম্পানিসহ তিনটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে গাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানির ইচ্ছা জানিয়ে ই-মেইল
পাঠিয়েছে বিটাকের অতিরিক্ত পরিচালক ড. ইহসানুল করিমের কাছে।
শুধু তাই নয়, ধোলাইখালের এই দিদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উৎপাদিত যন্ত্রাংশের নমুনা সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবে পাঠানো হয়েছিল। সৌদি আরবের ব্যবসায়ীরা নমুনা দেখে পছন্দ করে ৪৫ দিনের মধ্যে বিপুল পরিমাণ যন্ত্র কেনার প্রস্তাব করেছেন। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘আমাদের পুরনো প্রযুক্তি দিয়ে এত কম সময়ে বিপুল পরিমাণ যন্ত্রাংশ উৎপাদন সম্ভব কি না, তা ভেবে বেকায়দায় আছি।’
এ রকম সাফল্য হালকা প্রকৌশল শিল্পের অনেকেরই রয়েছে। যশোরের একটি প্রতিষ্ঠান লোহা দিয়ে তৈরি করেছে গম থেকে আটা তৈরির মেশিন। এ মেশিন তারা অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানিও করছে। চীন থেকে ইঞ্জিন আমদানি করে ব্যাটারিচালিত গাড়ি তৈরি করেছে বগুড়ার রহিম ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ। গাড়ির নিজস্ব শক্তি থেকে চার্জ করা ব্যাটারিচালিত এ গাড়ি ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে। এইচটি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস নামের অন্য একটি প্রতিষ্ঠান ১৭ বছর আগেই নিফ ভালভ তৈরি করেছে। এটি এখন কাগজ কলের পাল্পের ফ্লো নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হচ্ছে। রাজধানীর লালবাগের মাফিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস নানা ধরনের কমপ্লিট মেশিনারি তৈরি করছে। এর মধ্যে রয়েছে সিলিং অ্যান্ড কাটিং মেশিন, পিপিপিই ফিল্ম মেকিং মেশিন, রোটারি ডাই সিস্টেম, হিপস অ্যান্ড পিপিসেট মেকিং মেশিন, পেলু প্যাক মেশিন, পাউন্স কাটিং মেশিন।
সফটওয়্যার ছাড়া সাধারণ প্রযুক্তিতে সম্ভব এমন সব ধরনের যন্ত্র ও যন্ত্রাংশই তৈরি করতে পারেন হালকা প্রকৌশল শিল্পের উদ্যোক্তারা। পাটকলের সব যন্ত্রাংশ, চা প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহƒত সিটিসি মেশিন বাদে সব যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ, সমিলের ব্লেড বাদে সব যন্ত্র তৈরি হয় ধোলাইখালে। ইস্পাহানি চায়ের সব যন্ত্র ও মেশিন দেশি উদ্যোক্তাদের তৈরি। ধোলাইখালেই তৈরি হচ্ছে ব্যাংকের এটিএম বুথের ঘর। এ ছাড়া পরিবহন সেক্টরের প্রায় সব যন্ত্রই পাওয়া যায় এখানে। আর সেচপাম্প, পাওয়ার পাম্প, পাওয়ার টিলারসহ নানা ধরনের কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে বগুড়ায়। দেশের চাহিদার প্রায় ২০ শতাংশ মিটিয়ে এগুলো ভারতসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও করা হচ্ছে।
ধোলাইখালের নিপুণ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মালিক আবুল হাশিম বলেন, ‘কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চোখের কন্টাক্ট লেন্স আমদানি করে ঢাকার এক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সঙ্গে দেওয়া টু ওয়ে কাটার দিয়ে লেন্স কাটার পরই তা ভেঙে যাচ্ছিল। আমদানিকারকরা বেকায়দায় পড়ে যান। তাঁরা আলোচনা করেন আমার সঙ্গে। আমি লেন্স আমদানিকারকদের আশ্বস্ত করে কয়েক দিন সময় নিয়ে ফোর ওয়ে কাটার তৈরি করে দিই। মহাখুশি হন আমদানিকারকরা। তাঁরা আমাকে বলেন, আপনি নিশ্চয়ই যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের কাটার তৈরি করতে দেখেছেন; না হলে কিভাবে ধোলাইখালে বসে এ রকম যন্ত্র তৈরি করলেন আপনি?’
আশির দশকে সরকার শুল্কমুক্তভাবে ডিজেল ইঞ্জিন আমদানির সুযোগ দেয়। স্থানীয় উদ্যোক্তারা ওই ডিজেল ইঞ্জিনকে নৌ (বোট) ইঞ্জিনে রূপান্তর করেন। সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রেও একই ধরনের সফলতা দেখান হালকা প্রকৌশল শিল্পের উদ্যোক্তারা। তাঁরা সেচপাম্পের ডিজেল ইঞ্জিন দিয়ে থ্রি হুইলার যান তৈরি করেন।
বিইআইওএর সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক জানান, এ শিল্পের মালিকরা যেকোনো যন্ত্র একবার মাত্র দেখেই তৈরি করতে পারেন। বর্তমানে এ শিল্পের উদ্যোক্তারা প্রায় ৩৮ হাজার রকমের যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ তৈরি করছেন। এসব যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ শিল্প, গৃহস্থালি, কৃষি, বৈদ্যুতিক, যানবাহন, খেলনা ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহƒত হচ্ছে। এসবের মধ্যে কাগজ ও সিমেন্ট কারখানার যন্ত্রাংশ, বাইসাইকেল, ফ্যান্সি লাইট ফিটিং, নির্মাণ যন্ত্র, ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার, আয়রন চেইন, কার্বন রড, অটোমোবাইল পার্টস, বৈদ্যুতিক ও স্টেনলেস স্টিল ওয়্যার রপ্তানি হচ্ছে। মূলত ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হচ্ছে এসব পণ্য।
বিটাক আশা করছে, দেশের হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পকে উপযুক্ত প্রণোদনা দিতে পারলে এক দশকের মধ্যেই এটি দেশের প্রধান রপ্তানি খাতে পরিণত হবে। জাহাজ ভাঙা লোহা থেকে তৈরি গাড়ির যন্ত্রাংশ, ইলেকট্রিক পণ্য ও কৃষি খাতের যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ তৈরির পর তা রপ্তানি করলে মুনাফাও হবে অনেক বেশি।
বিটাকের অতিরিক্ত পরিচালক ড. ইহসানুল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নিউ মিলবার্টের সঙ্গে রপ্তানি চুক্তি স্বাক্ষরের পাঁচ দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিক কম্পানিসহ মোট তিনটি প্রতিষ্ঠান টেলিফোন ও ই-মেইলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে বাংলাদেশ থেকে গাড়ির পার্টস আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এসব দেশ এখন গাড়ির যন্ত্রাংশ উৎপাদন করে না। তারা মূলত চীন, তাইওয়ান ও ভারত থেকে এসব যন্ত্রাংশ আমদানি করে থাকে। কিন্তু ওই সব দেশের চেয়ে বাংলাদেশ তুলনামূলক কম দামে যন্ত্রাংশ রপ্তানি করতে পারবে।’ তিনি আরো জানান, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) কর্মকর্তারাও বাংলাদেশ থেকে গাড়ির পার্টস আমদানির প্রস্তাব করেছেন। কানাডার বেশ কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও এ ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
ড. ইহসানুল করিম বলেন, ‘এসব দেশে যন্ত্রাংশ রপ্তানি করতে পারলে আমাদের আর বাজার খুঁজতে হবে না। ১০ বছরের মধ্যেই গার্মেন্টকে পেছনে ফেলে প্রধান রপ্তানি পণ্যে পরিণত হবে হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং খাত।’
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) দুই ঊর্ধ্বতন গবেষক নাজনিন আহমেদ ও জায়েদ বখতের ২০১০ সালের জুন মাসে করা ‘লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রি ইন বাংলাদেশ : এ কেস স্টাডি’-এর তথ্য অনুযায়ী, এ শিল্পের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ ছয় লাখ টাকা থেকে ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত। তারা মাত্র দুই থেকে তিন লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে এ ব্যবসা শুরু করে। ফলে এ শিল্পে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করাও সহজ।

৬৫ হাজার মেট্রিক টন ভোজ্য তেলের মজুদ গোপনের তথ্য ফাঁস

সংকটকে দায়ী করে দাম যখন লাগামছাড়া, তখনই ৬৫ হাজার মেট্রিক টন ভোজ্য তেলের মজুদ গোপন করার ঘটনা ধরা পড়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও শুল্ক কর্তৃপক্ষের সরেজমিন তদন্তে এ জালিয়াতির তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

গত ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের আমদানিকারক রিফাইনারিগুলো সরকারকে এক লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন অপরিশোধিত ভোজ্য তেল মজুদ থাকার কথা জানালেও একই সময়ে চট্টগ্রামের তেল মজুদকারী টার্মিনালগুলোতে ট্যারিফ কমিশনের সদস্যদের উপস্থিতিতে পরিচালিত তদন্তে এর মজুদ ধরা পড়ে এক লাখ ৮৯ হাজার ৩৭২ মেট্রিক টন। এর ফলে দেখা যাচ্ছে, প্রায় ৬৫ হাজার টন ভোজ্য তেল মজুদের তথ্য গোপন করা হয়েছে সরকারের কাছে। গতকাল বাণিজ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তদন্ত প্রতিবেদনটি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া ভোজ্য তেলের মজুদসংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সরকারের নির্দেশমতো ভোজ্য তেলের ট্যাংকে মজুদ তেল মেপে ওই প্রতিবেদন তৈরি করেছি।
আমরা মনে করি, যে তথ্য আমরা সরেজমিন তদন্তে পেয়েছি সেটাই সঠিক। তা ছাড়া ভোজ্য তেল মজুদ সংকট ও আমদানি হচ্ছে না বলে আমদানিকারকদের পক্ষ থেকে যে কথা উঠেছে সে প্রসঙ্গে কাস্টমস কমিশনার বলেন, ভোজ্য তেলের আমদানি স্বাভাবিক রয়েছে।
ভোজ্য তেলের দাম সরকারিভাবে নির্দিষ্ট করে দেওয়ার পরও এর দাম তো কমেইনি বরং অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে। অজুহাত হিসেবে ভোজ্য তেল আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়া ও দেশে পর্যাপ্ত মজুদ না থাকাকে দায়ী করেন। এ অবস্থায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চট্টগ্রাম শুল্ক কর্তৃপক্ষকে মজুদ পরিস্থিতি জানাতে নির্দেশ দেয়। তারই ধারাবাহিকতায় শুল্ক কর্তৃপক্ষ ঢাকা থেকে যাওয়া ট্যারিফ কমিশনের সদস্যদের উপস্থিতিতে পর্যবেক্ষণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতিবেদনটির আলোকে করণীয় নির্ধারণ করতে গতকাল তা সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে জরুরি ফ্যাক্স করে পাঠায়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভোজ্য তেল পরিশোধনকারী সমিতি সরকারকে জানিয়েছে চট্টগ্রামের ছয়টি ট্যাংক টার্মিনালে মোট অপরিশোধিত সয়াবিন তেল মজুদ রয়েছে ৬৩ হাজার টন আর অপরিশোধিত পাম-অয়েল রয়েছে ৬১ হাজার টন। সব মিলিয়ে অপরিশোধিত ভোজ্য তেলের মজুদ দেখানো হয়েছে এক লাখ ২৪ হাজার টন। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের একজন শুল্ক কর্মকর্তা গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, যে পরিমাণ ভোজ্য তেল মজুদের তথ্য গোপন করা হয়েছে, বার্ষিক চাহিদার গড় হিসাবে তা সারা দেশের প্রায় ১৫ দিনের তেলের চাহিদার সমান। বাজারে ভোজ্য তেলের মজুদ থাকা সত্ত্বেও সংকট দেখিয়ে দাম বাড়ানোর একটি অপচেষ্টা হতে পারে এটি।
অথচ তদন্তে ওই ছয় অয়েল ট্যাংক টার্মিনালে ভোজ্য তেলের মজুদ পাওয়া গেছে এক লাখ ৮৯ হাজার ৩৭২ টন। ইলিয়াছ ব্রাদার্স লিমিটেডের টার্মিনালে মোট ভোজ্য তেল মজুদ রয়েছে ৩১ হাজার ৪২৩ টন। অথচ সরকারকে এ টার্মিনালে মজুদের পরিমাণ জানানো হয়েছে ২৪ হাজার ৫০০ টনের। কম দেখানো হয়েছে ছয় হাজার ৪২৩ টন। এ টার্মিনালে সরকারি তদন্তে যে মজুদ পাওয়া গেছে তা হলোÑমেরিন ভেজিটেবল অয়েলের ১৯ হাজার ৯২৬ টন, এস আলম সুপার এডিবল অয়েলের চার হাজার ৮২৩ টন ও ইলিয়াছ ব্রাদার্সের ছয় হাজার ৬৬৩ টন। ভ্যান ওমেরনি ট্যাংক টার্মিনাল ও ইন্টারন্যাশনাল অয়েল টার্মিনালে মজুদ দেখানো হয়েছে তার সঙ্গে সরকারি তদন্তে পাওয়া মজুদের মিল রয়েছে। ভ্যান ওমেরনি টার্মিনালে অপরিশোধিত ভোজ্য তেলের মজুদ ৩৯ হাজার ৭৫৭ টন। এর মধ্যে ইউনাইটেড এডিবল অয়েলের পাঁচ হাজার ৪০৭ টন, এস আলমের আট হাজার ৮০১ টন, এম এম ভেজিটেবলের ৩৭ টন, সুপার অয়েলের তিন টন, দীপা ফুডের পাঁচ হাজার ৬৭৬ টন, বে ফিশিংয়ের পাঁচ হাজার ৯৬৬ টন, উত্তম অয়েলের এক হাজার ১৩৪ টন, ডিউটিটি অয়েলে এক হাজার ৩৮২ টন, শবনম ভেজিটেবলের চার হাজার ৯৮৭ টন, জাসমির ভেজিটেবলের পাঁচ হাজার ১৫৬ টন, ফারজানা অয়েলের এক হাজার ১৯৩ টন ও রুবাইয়া ভেজিটেবলের ১৪ টন তেল রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল অয়েল মিলস লিমিটেড ট্যাংক টার্মিনালে মোট মজুদ রয়েছে ২১ হাজার ৭২৪ টন। এর মধ্যে এস আলম অয়েলের এক হাজার ২৪২ টন, সুপার অয়েলের ছয় হাজার ৮৯০ টন, ফারজানা অয়েলের তিন হাজার ৯৬৩ টন, দীপা ফুডের পাঁচ হাজার ২৭৪ টন ও রুবাইয়া ভেজিটেবলের চার হাজার ৩৫৪ টন তেল আছে।
পরিশোধনকারীদের পক্ষ থেকে বে ফিশিং করপোরেশন টার্মিনালে কোনো মজুদ নেই বলে জানানো হলেও সেই ট্যাংক টার্মিনালে সরকারি তদন্তে মজুদ ভোজ্য তেল পাওয়া গেছে ২৬ হাজার ৩২১ টন। এর মধ্যে শবনম ভেজিটেবলের ১১ হাজার ৪৯৪ টন ও বে ফিশিং করপোরেশনের ১৪ হাজার ৮২৬ টন তেল আছে।
পরিশোধনকারীদের পক্ষে সাউথ ইন্টারন্যাশনাল ট্যাংক টার্মিনালে মজুদ ভোজ্য তেলের পরিমাণ জানানো হয়েছিল ২৩ হাজার টন। অথচ তদন্তে মজুদ ভোজ্য তেল পাওয়া গেছে ৫৬ হাজার ৯৬ টন। এর মধ্যে এস আলমের ২২ হাজার ৬১০ টন, বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের তিন হাজার ৩০০ টন, সামান্নাজ সুপার অয়েলের ১২ হাজার ৯৩১ টন, এসজি অয়েলের দুই হাজার ৩৫৩ টন, ইউনাইটেড এডিবল অয়েলের সাত হাজার ৪৪০ টন ও তানভীর অয়েলের সাত হাজার ৪৫৬ টন তেল রয়েছে।
ইস্টার্ন ফিশারিজ ট্যাংক টার্মিনালে মজুদ ভোজ্য তেল পাওয়া গেছে ১৪ হাজার ৪৯ টন। সরকারকে জানানো হয়েছে ১৪ হাজার টনের তথ্য। গোপন করা হয়েছে ৪৯ টনের তথ্য। তদন্তে পাওয়া মুজদের মধ্যে এস আলমের দুই হাজার ৩১৩ টন, এম এম ভেজিটেবলের সাত হাজার ৭৫৭ টন, মারিন ভেজিটেবলের তিন হাজার ৯৭৮ টন ও রুবাইয়া ভেজিটেবল অয়েলের এক মেট্রিক টন অপরিশোধিত ভোজ্য তেলের মজুদ রয়েছে।

আবার ক্রসফায়ার ঢাকায়

ত তিন দিনে তৃতীয় ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটলো ঢাকায়। র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে সর্বশেষ পুরান ঢাকায় নিহত হলেন এক যুবক। বৃহস্পতিবার ভোরে কোতোয়ালি থানায় নিহত যুবকের নাম অপু (২৭)। তার বাবা মৃত শেখ আহমেদ। বাসা বংশালের বেচারাম দেওরী এলাকায়।

সকালে সোয়া ৯টার দিকে চিত্রামহল প্রেক্ষাগৃহের পূর্বপাশের রাস্তা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যায় কোতোয়ালি থানা পুলিশ। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে সেখানে বন্দুকযুদ্ধে অপু নিহত হন বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-১০ এর উপপরিচালক ইসমত হায়াত।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, র‌্যাব-১০ এর একটি গোয়েন্দা দল সাদা পোশাকে টহল দিচ্ছিলো। "ভোর সাড়ে ৪টার দিকে চিত্রা মহল সিনেমা হলের কাছে ৪/৫ জন যুবককে সন্দেহজনকভাবে জড়ো হতে দেখে তাদের চ্যালেঞ্জ করে। ওই সময় যুবকরা গুলি করলে র‌্যাব সদস্যরাও পাল্টা গুলি চালায়।" 'বন্দুকযুদ্ধে' অপু নিহত হলে অন্যরা পালিয়ে যায় বলে র‌্যাব কর্মকর্তা জানান। পরে তারা পুলিশকে খবর দেন।

ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও চার রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে বলে র‌্যাব জানিয়েছে। ঢাকায় এর আগে মঙ্গলবার এক সরকারি কর্মকর্তা দম্পতির কলেজপড়–য়া ছেলে এবং বুধবার অন্য একজন র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। র‌্যাব তাদের সন্ত্রাসী বললেও সে দাবি ঠিক কি না, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

অপুর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে কিনা, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। দেশ ও বিদেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলো 'ক্রসফায়ারের সমালোনা করে আসছে। তারা বলছে, এর মধ্য দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। ক্রসফায়ার নিয়ে আদালতেরও অসন্তোষ রয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের হিসাবে দেশে ২০১০ সালে ১২৭ জন বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে 'ক্রসফায়ারে' নিহতের সংখ্যা ১০১ জন।

সিঙ্গাপুরের অরচার্ড রোড হবে ঢাকার রাস্তা!

টা জানা কথা যে বিশ্বকাপ ক্রিকেট উপলক্ষে ঢাকার রাস্তাঘাট সাজবে অন্য সাজে। এবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল জানালেন, ‘সিঙ্গাপুরের অরচার্ড রোড গত ক্রিসমাসে যে সাজে সেজেছিল, সেসব উপকরণই সাজানোর জন্য নিয়ে আসছি আমরা।’
বেশ ব্যয়সাপেক্ষ হলেও ইতিমধ্যেই সে জন্য অর্থের সংস্থানও করে ফেলেছে দেশের ক্রিকেট প্রশাসন। কাল তারা ঢাকার সৌন্দর্যবর্ধন বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে ১০ কোটি টাকার এক চুক্তি করেছে। উপকরণ কেনার খরচের পুরোটা এখান থেকে উঠে গিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা সাশ্রয় হবে বলেও জানিয়েছেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী মঞ্জুর আহমেদ।
চুক্তি অনুযায়ী বিমানবন্দর থেকে বিজয় সরণি হয়ে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম এবং বিজয় সরণি থেকে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম পর্যন্ত রাস্তা লাইট, বেলুন, এলইডি ব্যাকলিট ডিসপ্লে বল ও চোখকাড়া অন্যান্য উপকরণ দিয়ে সাজাবে বিসিবি। এসব উপকরণে ইসলামী ব্যাংকের লোগোও শোভা পাবে। সৌন্দর্যবর্ধনের অংশ হিসেবে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ১৫টি গেটও নির্মিত হবে। যার দুটির সাজসজ্জা করবে বিসিবি। বাকি ১৩টির দায়িত্ব ইসলামী ব্যাংকের। এ ছাড়া খেলোয়াড়দের বহনকারী দুটি মার্সিডিজ বেঞ্জ ও বিআরটিসির ২৫টি দ্বিতল বাসে নিজেদের খরচে ব্র্যান্ডিং করবে ইসলামী ব্যাংক। এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিসিবিকে দেওয়া টাকার বাইরেও এসব খাতে তাদের সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা খরচ হবে।

হঠাৎ বন্যায় দিশেহারা কুইন্সল্যান্ড ১০ জনের মৃত্যু, নিখোঁজ ৭৮

স্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড প্রদেশে সুনামির মতো আকস্মিক বন্যায় গত সোমবার চার শিশুসহ অন্তত ১০ জন মারা গেছে। এখনো নিখোঁজ আছে ৭৮ জন। কুইন্সল্যান্ডের তিন-চতুর্থাংশ এলাকাকে দুর্যোগপূর্ণ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। প্রদেশের রাজধানী ব্রিসবেনেও গতকাল বন্যাসতর্কতা জারি করা হয়েছে।
লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। হাজার হাজার মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বাড়ি-ঘর ছাড়ছে। কর্মকর্তারা জনান, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির পর সোমবার ব্রিসবেনের পশ্চিমে টোওম্বা শহরে সুনামির মতো আকস্মিক বন্যার পানি ঢুকে। দ্রুতবেগে পানি ঢোকায় লোকজন দিশেহারা হয়ে পড়ে। মারা যায় ১০ জন। নিখোঁজ হয় অন্তত ৭৮ জন। নিহত লোকজনের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের বেশির ভাগই রাস্তায় গাড়িতে থাকার সময় বন্যার তোড়ে ভেসে গেছে। সোমবারের বন্যায় কোনো পূর্বসতর্কতাও জারি করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
টোওম্বার মেয়র পিটার টেলর বলেন, 'ভারী বর্ষণের কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই শহর প্লাবিত হয়ে গেছে। এটা নজিরবিহীন। অনেকেই একে সুনামির সঙ্গে তুলনা করছে। সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টারে করে দুর্গত এলাকায় উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে।' আবহাওয়াবিদরা আরো বৃষ্টিপাতের পূর্বাবাস দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ড গতকাল সতর্ক করেছেন, উদ্ধার কর্মকাণ্ড শেষ করতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। কুইন্সল্যান্ডের সরকারপ্রধান আনা ব্লাই সোমবারের প্লাবনকে গত নভেম্বরের শেষ দিকে শুরু হওয়া বন্যার মধ্যে 'সবচেয়ে বিপজ্জনক সময়' বলে অভিহিত করেন। বলেন, 'আমাদের জরুরি উদ্ধারকর্মীরা সর্বোচ্চ সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে।'
ব্রিসবেন কর্তৃপক্ষ জানায়, পাশের ব্রিসবেন নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ৩০টিরও বেশি শহরতলি অঞ্চল প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। ব্রিসবেনের মেয়র ক্যাম্পবেল নিউম্যান সতর্ক করেছেন, সাড়ে ছয় হাজার বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হতে পারে। স্থানীয় এক কর্মকর্তা জানান, মাত্র এক ঘণ্টায় পানির স্তর চার ফুট ১০ ইঞ্চি বেড়ে গেছে। এই বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পানির স্তর সর্বোচ্চ সীমায় পেঁৗছে যেতে পারে। ব্রিসবেনের এক বাসিন্দা বালেন, 'সুপারমার্কেটগুলো ইতিমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। রাস্তার মানুষ দিশেহারা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দোকানপাট ও রেল চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ব্রিসবেনের একটি শহরতলিতে আমি আটকা পড়েছি। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার তালিকায় এ এলাকার নাম রয়েছে।'
১৮৯৩ সালের পর এটাই কুইন্সল্যান্ডে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা। প্রদেশজুড়ে বন্যায় প্রায় দুই লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া বন্যায় কয়েক শ কোটি ডলার অর্থের ক্ষতি হয়েছে।
সূত্র : বিবিসি।

ভোজ্যতেলের দর বেঁধে দিতে পারেনি মন্ত্রণালয়

ভোজ্যতেলের উত্পাদন, বিপণন ও মূল্য-পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আজ বুধবার বৈঠকে বসেছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পরিস্থিতি পর্যালোচনা হলেও সরকারের পক্ষ থেকে দামদর বেঁধে দেওয়া সম্ভব হয়নি। বৈঠক শেষে বাণিজ্যসচিব গোলাম হোসেন বলেন, ‘যে সূত্রের ওপর ভিত্তি করে দর পুনর্নির্ধারণ করা হয়, তাতে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে।
ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যানকে প্রধান করে গত মাসে যে কমিটি করা হয়েছিল, সেই কমিটি রোববারের মধ্যে একটি উপায় বের করবে। তারপর তা জানানো হবে।’ নয় সদস্যের কমিটিতে তিনজনই ব্যবসায়ী প্রতিনিধি বলে জানান বাণিজ্যসচিব।
বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খানের সভাপতিত্ব বৈঠকে ব্যবসায়ীদের দিক থেকে চাওয়া ছিল তৃতীয়বারের মতো ভোজ্যতেলের দর পুনর্নির্ধারণ করা। এর আগে দুবার ভোজ্যতেলের দর বাড়ানো হয়েছে ৭ ডিসেম্বর ও ২৩ ডিসেম্বর।
তবে বাজারে নির্ধারিত দরের চেয়ে ১০ থেকে ১২ টাকা বেশি দামে ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে। সরকারের সঙ্গে ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানার মালিকদের যৌথ বৈঠকে যে দর নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা মানা হচ্ছে না। অসহায় ভোক্তারা বেশি দাম দিয়ে সয়াবিন ও পাম তেল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। তার পরও ব্যবসায়ীরা চাচ্ছেন দর আরও বাড়াতে।
নির্ধারিত দর অনুযায়ী বাজারে খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার ৯০ টাকা আর পাম তেল ৮৬ টাকা দরে বিক্রি হওয়ার কথা। সরকারি বিক্রয়কারী সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, আজ খোলা সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১০১ থেকে ১০৩ টাকা আর পাম তেল বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ৯২ টাকা লিটার দরে।
আজ আড়াই ঘণ্টার বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যসচিব গোলাম হোসেন এবং বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি এ কে আজাদ বক্তব্য দেন। এর আগেই বৈঠক ত্যাগ করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানার মালিক সমিতির সভাপতি এম এ রউফ চৌধুরীকে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানানো হলেও তিনি অসম্মতি জানান। তবে মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ও সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যসচিব গোলাম হোসেন বলেন, ‘নানা কারণে বাজারে ভোজ্যতেলের দর কিছুটা হলেও বাড়তি; যে হারে বেড়েছে তা উচিত ছিল না। আমাদের পাওয়া তথ্য ও গোয়েন্দা প্রতিবেদন মিলিয়ে দেখা গেছে, মিলগেটে দর অনেকটা মানা হয়েছে। খুচরা বাজারে তেমন একটা মানা হয়নি।’

বাংলাদেশের জলবিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা দেবে ভুটান

বাংলাদেশের জলবিদ্যুৎ খাতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে ভুটান। গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী জিগমে ইউসেফ থিনলের আনুষ্ঠানিক বৈঠকে এ আশ্বাস দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'বৈঠকে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের ভৌগোলিক সাদৃশ্য ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্যাকেজ ট্যুরিজমের প্রস্তাব সমর্থন করেন। শেখ হাসিনা ভুটানের প্রধানমন্ত্রীকে ভবিষ্যতের প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ অংশীদার বা বিদ্যুতের সরাসরি ক্রেতা হিসেবে বাংলাদেশকে বিবেচনা করার অনুরোধ জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, 'এই মুহূর্তে ভুটানের পক্ষে নতুন শরিকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব না হলেও আশা করি ভবিষ্যতে আমাদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে তারা সক্ষম হবে।' প্যাকেজ ট্যুরিজম সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ভুটানের পাহাড় ও উপত্যকা এবং বাংলাদেশের কক্সবাজারের সোনালি সৈকতসহ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে। এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টিতেও সহায়ক হবে। তিনি বলেন, ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যৌথ নদী ব্যবস্থাপনার কৌশল প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থা রক্ষায় ভুটানের সহায়তা প্রত্যাশা করে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও ভুটান একে অপরের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় সহায়ক হতে পারে। এ ছাড়া বাণিজ্য ও ব্যবসাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে দুই দেশ নতুন করে গতিশীলতা আনতে পারে। ভুটানে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির পরিমাণ কম হওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পরিস্থিতি উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করতে হবে। আইটি, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ, শিক্ষা ও নির্মাণের মতো সম্ভাবনাময় খাতে বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করা যেতে পারে।
বৈঠক শেষে স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা-সংক্রান্ত দুই দেশের মধ্যে সই হওয়া সমঝোতা স্মারকের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষি খাতেও এ ধরনের সহযোগিতা সম্প্রসারিত করা যেতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভারত, মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ডের মধ্যে সবার জন্য লাভজনক সম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি ভুটানকে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যাপকভাবে ব্যবহার এবং অন্যান্য সুযোগ গ্রহণের আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'পারস্পরিক স্বার্থে আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য ট্রানজিট ও যোগাযোগ সম্পর্কিত সব বিষয় একটি একক কাঠামোর আওতায় আনার প্রচেষ্টা চলছে।' বৈঠককালে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় আস্থা প্রকাশ করে বলেন, শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার রূপকল্প-২০২১-এর লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক, তথ্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, অ্যাম্বাসেডর অ্যাটলার্জ এম জিয়াউদ্দিন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম আবদুল আজিজ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব এম এ করিম, পররাষ্ট্রসচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস ও প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সংস্কৃতি বিনিময় চুক্তি সই
বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে সংস্কৃতি বিনিময়ের একটি চুক্তি ও স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতার ব্যাপারে একটি সমঝোতা স্মারক গতকাল মঙ্গলবার সই হয়েছে। ভুটানের পররাষ্ট্রসচিব দাশো দাউ পেনজো এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব সুরাইয়া বেগম সংস্কৃতি বিনিময় চুক্তিতে এবং স্বাস্থ্যসচিব হুমায়ুন কবির স্বাস্থ্য খাতের সমঝোতা স্মারকে সই করেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, স্বাস্থ্য খাতের সমঝোতা স্মারকের ভিত্তিতে বাংলাদেশের চিকিৎসকরা ভুটানে চাকরি করতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লিওনচেন জিগমে ইয়োসার থিনলে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. এ এফ এম রুহুল হক, তথ্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মাদ আবদুল আজিজ, মুখ্যসচিব এম এ করিম, পররাষ্ট্রসচিব মোহাম্মাদ মিজারুল কায়েস, প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

মধ্যপ্রাচ্যে চাকরির নামে চার শতাধিক বাংলাদেশিকে নেপালে পাচার

চাকরি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানোর নামে চার শতাধিক বাংলাদেশিকে নেপালে পাচার করেছে একটি চক্র। ওই চক্রের প্রধান এক বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে নেপাল পুলিশ। তাদেরকে নেপালি সাজিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানোর চেষ্টা চলছিল।
নেপালের কাঠমান্ডু টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আদম পাচার চক্রের প্রধান বাংলাদেশি শেখ আবদুল আলিমকে নেপালের পুলিশ গত সপ্তাহে রাজধানী কাঠমান্ডুর শম্ভু এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে সে চার শতাধিক বাংলাদেশি নাগরিককে নেপালে পাচার করার কথা স্বীকার করে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, পাচার হওয়া বাংলাদেশিদের কাছে দেশে ফেরার মতো টাকা নেই বলে পুলিশ ধারণা করছে। জীবিকার তাগিদে মধ্যপ্রাচ্য যেতে গিয়ে তারা নেপালে আটকা পড়েছে। কাঠমাণ্ডুর বিভিন্ন স্থানে তারা অবৈধভাবে কাজ করছে।
নেপাল পুলিশের এক কর্মকর্তা কাঠমাণ্ডু টাইমসকে জানান, শেখ আবদুল আলিমের চক্র সুসংগঠিত। তারা বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক এনে নেপালি ভাষা শিখিয়ে আরব দেশগুলোতে পাঠায়। চক্রটি নেপালের এজেন্সিগুলোর সহায়তা নিয়ে এ কাজটি করে থাকে।
কাঠমাণ্ডু পুলিশের সিনিয়র সুপারিনটেনডেন্ট রানা বাহাদুর চন্দ বলেছেন, অবৈধভাবে অবস্থানকারী বাংলাদেশিদের সম্ভাব্য কর্মস্থলগুলোতে অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য পুলিশ অভিযান শুরু করবে। ইতিমধ্যে আলিমের দুই সহযোগীকে ধরতে পুলিশ জোরদার অভিযান শুরু করেছে। একজন বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে বলে পুলিশ মনে করছে।
নেপালের অভিবাসন বিভাগ গত এক বছরে ২৪ জনেরও বেশি বাংলাদেশিকে নেপালের জাল পাসপোর্টসহ আটক করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে ঢাকার একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ বিমানসহ বিভিন্ন এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে বাংলাদেশিরা সহজে নেপাল যেতে পারে। নেপালে বাংলাদেশিদের জন্য অন-অ্যারাইভাল ভিসা পাওয়ার সুবিধা থাকায় পাচারকারী চক্র চাকরি প্রত্যাশীদের পর্যটক সাজিয়ে দেশটিতে নিয়ে যায়। পরে কাঠমাণ্ডু ও বিভিন্ন শহরের চক্রগুলোর যোগসাজশে তাদের নেপালি ভাষা শেখানোর পাশাপাশি নেপালি আদব-কায়দা শেখানো হয়। এরপর নেপালের জাল পাসপোর্ট সংগ্রহ করে তাদের মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পাঠানো হয়।