Saturday, August 20, 2011

মন্ত্রীদের ব্যর্থতায় নেতারা বিব্রত by জাহাঙ্গীর আলম

যোগাযোগমন্ত্রী ও নৌপরিবহনমন্ত্রীসহ কয়েকজন মন্ত্রীর ব্যর্থতা এবং বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের দায়ভার নিতে চায় না ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক দলগুলো। এমনকি আওয়ামী লীগের নেতা-সাংসদেরাও এসব মন্ত্রীর কর্মকাণ্ডে বিব্রত, ক্ষুব্ধ। মহাজোটের শরিকদের আশঙ্কা, ভবিষ্যতে এই মন্ত্রীদের নিয়ে মহাজোট আরও বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে পারে। এ জন্য তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের ব্যর্থতা নিয়ে মহাজোটে ব্যাপক আলোচনা আছে। তাঁদের কর্মকাণ্ড, বক্তব্য ও দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতায় শরিক দলগুলো প্রকাশ্যেই সমালোচনামুখর।
এসব মন্ত্রীর পদত্যাগ চায় দলগুলো। মহাজোটের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের কারণেই তাঁদের সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে মনে করেন দলগুলোর নেতারা। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যেও আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। তাঁদের বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডে দলে অসন্তোষ আছে। বিশেষ করে, মন্ত্রীদের পরস্পরের প্রতি দায় চাপানোর প্রবণতায় নেতারা বিব্রত। সরকারের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কথাও বলছেন তাঁরা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী জনগণের অনুভূতির খবর রাখেন। দল মন্ত্রীদের ব্যর্থতার দায় নেবে না। নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রী সময়মতো পদক্ষেপ নেবেন।
একইভাবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এই কয়েকজন মন্ত্রীর ব্যর্থতা দল বা মহাজোটের ওপর বর্তায়। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে তাঁদের নিজে থেকেই চলে যাওয়া উচিত।’ ক্ষমতাসীন দলের আরও কয়েকজন সাংসদ এ ধরনের মন্তব্য করেছেন। তবে তাঁরা নাম প্রকাশ করতে চাননি।
সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত দেশের যোগাযোগব্যবস্থার বেহাল অবস্থা। দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো বাস চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় মানুষ এখন চরম দুর্ভেঅগে রয়েছে। এটি এখন জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকেও যোগাযোগমন্ত্রীর ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সর্বশেষ জাতীয় সংসদে সাংসদদের তোপের মুখে পড়েন যোগাযোগমন্ত্রী।
একইভাবে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান পরীক্ষা ছাড়াই সাড়ে ২৪ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। অদক্ষ চালকদের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়লেও নৌমন্ত্রী তাঁর অবস্থানে অনড় রয়েছেন।
এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের দেশ পরিচালনার মেয়াদ পাঁচ বছর। চলার পথে গতি কখনো শ্লথ হবে, কখনো বাড়বে। একটা ত্রুটি হয়েছে, এটা আমরা কাটিয়ে উঠব।’
মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহাজোটে আমরা রাজনৈতিকভাবে আছি। সরকার পরিচালনায় আমাদের ভূমিকা নেই। এসব ব্যর্থ মন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী দেখেশুনে ব্যবস্থা নেবেন।’
মেনন বলেন, আইনের প্রয়োগ ছাড়া কারও ইচ্ছায় গাড়ি চালানোর পেশাদার লাইসেন্স দেওয়া যায় না। আর সরকার যতই বলুক, পুলিশের বাড়াবাড়ির কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে।
অপর শরিক জাসদের হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘মন্ত্রীদের দুর্নীতি, অদক্ষতা, ব্যর্থতার দায় আমরা নেব না। এ জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকেই জবাবদিহি করতে হবে, কৈফিয়ত দিতে হবে। মহাজোটকে বিব্রত না করে এঁদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করা উচিত। তা না হলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দ্রুত ব্যবস্থা চাই।’
মহাজোটের নেতারা জানান, বাণিজ্যমন্ত্রীর ব্যর্থতা ও অদক্ষতায় মজুদদারি ও অতি মুনাফাখোরি চক্রের কাছে সরকার পুরোপুরি অসহায় হয়ে পড়েছে। ফলে দ্রব্যমূল্য বেড়েই চলছে। ‘ভোগ্যপণ্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’ গড়ে তোলার আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি থাকলেও গত আড়াই বছরেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।
বাজার-ব্যবস্থাপনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্বলতা ও তদারকির অভাব, অসাধু ব্যবসায়ীদের তৎপরতা, বাজারকে প্রতিযোগিতামূলক করতে না পারা এবং সরকারের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণ বলে মনে করে মহাজোট ও সরকারের শীর্ষ পর্যায়। পাশাপাশি পরিবহনে চাঁদাবাজি, টিসিবিকে শক্তিশালী করতে না পারায় বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় বাণিজ্যমন্ত্রী জনগণকে কম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়ায় সব মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, পুলিশের উপস্থিতিতে গণপিটুনিতে নিরীহ মানুষ হত্যার ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতাকে দায়ী করা হচ্ছে। চাঁদাবাজি ও দখলবাজি নিয়ন্ত্রণেও পুলিশ সফলতা পায়নি।
মহাজোটের নেতারা মনে করেন, পুলিশের ওপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি কম থাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।
সম্প্রতি পুলিশের উপস্থিতিতে রাজধানীতে ছয় ছাত্র হত্যার ঘটনা সমাজে আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে। নোয়াখালীতে পুলিশ মিলন নামের এক তরুণকে গাড়ি থেকে নামিয়ে জনতার হাতে তুলে দেয়। গণপিটুনিতে সে নিহত হলে পুলিশ আবার গাড়িতে তুলে নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কাদেরকে অপরাধী বানাতে পুলিশ মিথ্যা গল্প সাজিয়েছে। র‌্যাবের গুলিতে লিমনের পঙ্গু হওয়ার ঘটনায় সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের নেতারা মনে করেন, এসব ঘটনা জনগণ ভালোভাবে নেয়নি।
এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অযোগ্য, ব্যর্থ ও অকর্মণ্য মন্ত্রীদের দায়ভার নেব না। এদের বিদায় দেওয়া না হলে মহাজোট বিপর্যয়ে পড়বে।’
১৪ দলের শরিক কমিউনিস্ট কেন্দ্রের যুগ্ম আহ্বায়ক অসিত বরণ বিশ্বাস বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী যেদিন কথা বলেন, সেদিনই জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। ১৪ দলের ২৩ দফায় আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের কথা বলা ছিল। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে অগ্রগতি নেই। কাজেই অযোগ্য মন্ত্রীদের দায়ভার ১৪ দল নেবে না।
মহাজোটের শরিক ও নিজের দলের নেতাদের দাবির মুখে পদত্যাগ করবেন কি না, জানতে চাইলে যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা করতে হলে আগে আমাকে ভাবতে হবে। যাঁরা আমাকে ভোট দিয়েছেন, আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষ কী মনে করেন। পাশাপাশি আমার নিয়োগকর্তা কী বলেন।’
আপনার নিজের বিবেচনায় কী মনে হয়, পদত্যাগ করা উচিত? মন্ত্রী বলেন, ‘আমার ত্রুটির কারণে এ সমস্যা দেখা দেয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বরাদ্দ কম থাকার কারণে রাস্তাঘাটের এ অবস্থা হয়েছে।’
দেশের রাস্তাঘাটের বেহাল দশার কথা শুধু যে এখন বলা হচ্ছে, তা নয়। গত ৪ ফেব্রুয়ারি সংসদে এ নিয়ে উত্তপ্ত আলোচনা হয়। সেদিন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সাংসদ এ প্রসঙ্গ তুলে বলেছিলেন, গত আড়াই বছরে দেশের কোথাও সড়কের উন্নয়নে কাজ হয়নি। রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ। এরপর রাশেদ খান মেননও সংসদে এ প্রসঙ্গ নিয়ে বক্তব্য দেন। কিন্তু যোগাযোগমন্ত্রী বা সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের বক্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

পুলিশের অভিযোগপত্রে আসামি শুধুই পরিমল

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বসুন্ধরা শাখার দশম শ্রেণীর ছাত্রী ধর্ষণ মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। এতে চাকরিচ্যুত শিক্ষক পরিমল জয়ধরকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মামলার এজাহারভুক্ত দুই আসামি ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগম এবং বসুন্ধরা শাখার ভারপ্রাপ্ত শাখাপ্রধান লুৎফর রহমানকে অভিযোগ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

ধর্ষণের শিকার মেয়েটির পরিবারের সদস্যরা পুলিশের অভিযোগপত্র প্রত্যাখ্যান করে প্রথম আলোকে জানান, পুলিশ প্রভাবিত হয়ে মামলা তদন্ত করে অধ্যক্ষসহ দুই শিক্ষককে অভিযোগ থেকে বাদ দিয়েছে। তাঁরা এ অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দেবেন বলেও জানান।
জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার পরিদর্শক এস এম শাহাদত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ১১ আগস্ট মামলার অভিযোগপত্র তৈরি করা হয় এবং তা ১৪ আগস্ট আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। পরিমল জয়ধরের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগম ও বসুন্ধরা শাখার প্রধান লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। তাই তাঁদের অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ধর্ষণের শিকার ছাত্রীটি আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে জানায়, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত ভাড়া বাসার কোচিং সেন্টারের একটি কক্ষে আটকে রেখে পরিমল জয়ধর তাকে দুই দফা ধর্ষণ করেছেন। গত ১১ জুলাই পরিমল জয়ধর মেয়েটিকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, আদালতে দেওয়া মেয়েটির জবানবন্দি ও আসামি পরিমলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনা এবং সার্বিক তদন্তে প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণে আসামি পরিমল জয়ধরের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ সংশোধিত ২০০৩ এর ৯(১) ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে।
অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগম ও শাখাপ্রধান লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে আলামত বিনষ্ট করা, ভয়ভীতি দেখানো ও মেয়েটিকে স্কুল থেকে বহিষ্কারের হুমকির অভিযোগে মামলা করার পর ওই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হয়। এ ঘটনায় ৩৫ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। তদন্তে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। এ জন্য তাঁদের অব্যাহতির জন্য আদালতে আবেদন জানানো হয়েছে।
অভিযোগপত্রের ব্যাপারে জানতে চাইলে ধর্ষণের শিকার মেয়েটির পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, অধ্যক্ষ মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছিলেন। মেয়েটির স্বজনদের বক্তব্য অভিযোগপত্রে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলেও মেয়েটির স্বজনেরা অভিযোগ করেন।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত থেকে তিনি এ মামলার নিরপেক্ষ তদন্ত করেছেন।
গত ৭ জুলাই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ পরিমল জয়ধরকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ১১ জুলাই তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। ভিকারুননিসা কর্তৃপক্ষ পরিমলকে চাকরিচ্যুত করে। তবে এ ঘটনার পর অধ্যক্ষ হোসনে আরার অপসারণের দাবিতে ভিকারুননিসার ছাত্রী ও অভিভাবকেরা আন্দোলন শুরু করেন। এ অবস্থায় হোসনে আরাকে তিন মাসের ছুটি দিয়ে মঞ্জুআরা বেগমকে অধ্যক্ষের চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তদন্ত প্রতিবেদন: ছাত্রী ধর্ষণ ও পরবর্তী সময়ে সৃষ্ট ঘটনার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিকে দায়ী করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ফাহিমা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, কাল রোববার প্রতিবেদনটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রতিবেদনে এই ঘটনায় সৃষ্ট পরিস্থিতির জন্য অধ্যক্ষ হোসনে আরাসহ প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে দায়ী করা হয়েছে। কমিটি মনে করে, কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেরি করেছে। এরপর পরিচালনা কমিটির কয়েকজন সদস্যের কার্যকলাপ দেখে মনে হয়েছে তাঁরা ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চেয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে কিছু শিক্ষকও দায়ী। ২৪ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে এত বেশি শাখা না খোলা, এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের কমিটি করার সুপারিশ করা হয়েছে। কমিটির প্রধান ছিলেন বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস এম ওয়াহিদুজ্জামান।

ঈদে বাড়ি যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় মানুষ by ইফতেখার মাহমুদ ও অনিকা ফারজানা

দূরপাল্লার বাসের অগ্রিম টিকিটের জন্য চলছে হাহাকার। ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হচ্ছে কাল রোববার। বেহাল মহাসড়কের কারণে বাস চলাচলও বিপর্যস্ত। তাই এবার প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপনের জন্য বাড়ি যাওয়া নিয়ে মানুষ এখনো রয়েছে অনিশ্চয়তায়, শঙ্কায়।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর গাবতলী, শ্যামলী, কল্যাণপুর, কলাবাগান ও সায়েদাবাদে অধিকাংশ বাস কাউন্টারের কর্মীরা জানিয়েছেন, তাঁদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। বাসমালিক-শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, বিধ্বস্ত সড়কের কারণে প্রতিদিনই মহাসড়কে বাস বিকল বা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ জন্য বাসের ট্রিপ (যাত্রা) কমিয়ে দিতে হয়েছে। ট্রিপ কমে যাওয়ায় টিকিটও কমেছে।
হানিফ পরিবহনের কাউন্টারের কর্মী জামিল জানান, অন্যান্য বছরের মতো এবার ঈদে অতিরিক্ত বাস নামানোর বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ভাঙা রাস্তার কারণে মালিকপক্ষও এ ব্যাপারে আগ্রহী নয়। উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ—দুই দিকেই স্বাভাবিক সময়ে হানিফের প্রায় ৬০টি করে বাস চলে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম পথে চলাচল করা এস আলম পরিবহনের ফকিরেরপুল কাউন্টারের মো. মানিক জানান, ২৫ তারিখের পরের কোনো টিকিট নেই। সব বিক্রি হয়ে গেছে। স্বাভাবিক সময়ে এই পথে ৩৫-৪০টি বাস চলে। ঈদের সময় চার-পাঁচটি অতিরিক্ত বাস নামানো হয়। কিন্তু এবার অতিরিক্ত বাস নামানো হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
কল্যাণপুরে কুষ্টিয়া, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, রাজশাহীসহ উত্তরবঙ্গে চলাচলকারী বাসের টিকিট কাউন্টারগুলোর কর্মীরা দাবি করেন, আগামী ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে এশিয়া পরিবহনের ব্যবস্থাপক আবদুর রব জানান, দিনে সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে ২০টি পথে প্রায় এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৮০০ বাস ছেড়ে যেত। এক সপ্তাহ ধরে বাসের সংখ্যা এক হাজারে নেমে এসেছে। ঈদ উপলক্ষে যাত্রীর চাপ বাড়তে শুরু করলেও বাসের সংখ্যা বাড়ছে না।
সায়েদাবাদ টার্মিনাল বাস মালিক সমিতি ঘোষণা দিয়েছে, তারা অগ্রিম টিকিট বিক্রি করবে না। কয়েকটি কোম্পানি ২১ আগস্ট থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রির কথা জানিয়েছে। অনেকে গতকাল থেকেই অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেছে।
অগ্রিম টিকিটের জন্য যাত্রীদের এক কাউন্টার থেকে আরেক কাউন্টারে হন্যে হয়ে ঘুরতে দেখা গেছে। কিন্তু তাদের অনেককেই ফিরতে হয়েছে খালি হাতে।
সায়েদাবাদে শ্যামলী পরিবহন কাউন্টারে গিয়ে দেখা গেল, কাউন্টারের ব্যবস্থাপক হেলালউদ্দিন যাত্রীদের অগ্রিম টিকিট নেই বলে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলা শুরু করলে যাত্রীদের কাছে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেন তিনি। তিনি জানান, দিনে বাস ছাড়া যাচ্ছে না। রাতে অল্প কিছু বাস চলায় টিকিট কম।
বাসমালিক ও শ্রমিকেরা জানান, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে যাত্রাবাড়ী অতিক্রম করতে দুই থেকে চার ঘণ্টা লাগছে। চট্টগ্রাম রুটের বাসগুলোকে কুমিল্লার গৌরীপুর থেকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পর্যন্ত ভাঙাচোরা রাস্তা অতিক্রম করতে লেগে যায় আরও তিন থেকে চার ঘণ্টা। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামে যেতে আগে সময় লাগত ছয় ঘণ্টা, এখন ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টায় গিয়ে ঠেকেছে।
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে, এই টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রায় আড়াই হাজার বাসে দৈনিক প্রায় আট হাজার চালক ও শ্রমিক কাজ করেন। প্রতি ট্রিপে চালক, সুপারভাইজার ও হেলপার মিলে দূরত্ব বুঝে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা পান। বাসের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এবং যানজটের কারণে তাঁরা আগের মতো ট্রিপ পাচ্ছেন না। অর্ধেক শ্রমিক-চালকের কাজ নেই।
কালোবাজারি: কাউন্টার থেকে টিকিট শেষ বলা হলেও গাবতলী ও শ্যামলীতে কালোবাজারে বেশি দামে বিভিন্ন গন্তব্যের টিকিট বিক্রি হতে দেখা গেছে। গাবতলীতে প্রায় আড়াই ঘণ্টা রাজশাহীর পাঁচটি টিকিটের খোঁজ করছিলেন সুরুজ মিয়া। দালাল নুরুদ্দিন টিকিটপ্রতি ১৫০ টাকা বেশি চান। দর-কষাকষির একপর্যায়ে টিকিটপ্রতি ১০০ টাকা বেশি দিয়ে কাঙ্ক্ষিত টিকিটগুলো কেনেন তিনি। রংপুর-ভূরুঙ্গামারী পথের বাসের কাউন্টারে কোনো টিকিট নেই। কিন্তু কাউন্টারের সামনে থাকা আবদুস সালামের কাছে ছিল অনেক টিকিট। এই প্রতিবেদক ক্রেতা সেজে দাম জানতে চাইলে টিকিটপ্রতি ৮০ টাকা বাড়তি চান।
শ্যামলীতে হানিফ পরিবহনের কাউন্টারে গিয়ে জানা গেল, কুষ্টিয়ার কোনো টিকিট নেই। ওই কাউন্টারের ২০-৩০ গজ দূরে একটি চায়ের দোকানে বেশ ভিড় দেখে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ২৮ ও ২৯ আগস্টের টিকিট রয়েছে। তবে ৩০০ টাকার টিকিট ৬০০ টাকা। ওই দামেই টিকিট কিনে লটারি জয়ের মতো খুশি হলেন হাসান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘টাকা দিয়ে কী হবে, টিকিট তো পেলাম। বাড়ি গিয়ে মায়ের হাতে রান্না খেতে পারব, এর চেয়ে বেশি আর কী চাই।’
মহাখালীতে ভিন্ন চিত্র: মহাখালী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। যাত্রী প্রায় নেই। কাউন্টারের কর্মীরা কেউ ঘুমাচ্ছেন, কেউ খবরের কাগজ পড়ছেন। যাত্রী নেই কেন—জানতে চাইলে ঢাকা-টাঙ্গাইল পথে চলাচল করা গোপালপুর পরিবহনের কাউন্টারের জহির জানান, একে তো রাস্তা খারাপ, তার ওপর কয়েক দিনের সড়ক দুর্ঘটনার কারণে যাত্রীরাও আসেন না। যোগাযোগমন্ত্রীর ওপর ক্ষোভ ঝেড়ে তিনি বলেন, ‘তাঁর কারণে ঈদের বাজারে যাত্রী নাই। আমাগো দিন কাটব কেমনে?’
কমেছে বাসের সংখ্যা: রাজধানী থেকে বরিশাল-বাগেরহাট মহাসড়কের প্রায় ১৬ কিলোমিটার রাস্তা ভাঙাচোরা থাকায় এই পথে বাস চলাচলও কমে গেছে। ফলে এই পথের বাসের টিকিটও কমে গেছে। তাই কাউন্টারে এসে অনেকে টিকিট পাচ্ছেন না। কিশোরগঞ্জ পথের অবস্থাও একই রকম। বরিশাল ও বাগেরহাট পথে স্বাভাবিক সময়ে ১৫০টি ও কিশোরগঞ্জ পথে ২০০টি বাস চলত। এই দুই পথে বাসের সংখ্যা ৫০ থেকে ৭০টি কমে গেছে।
ট্রেনে চাপ বেড়েছে: মহাসড়কের বেহাল অবস্থার কারণে কয়েক দিন ধরে ট্রেনে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। ঈদ উপলক্ষে এই চাপ আরও বাড়বে। গতকালও কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, কাউন্টারের সামনে টিকিটের জন্য আসা মানুষের লম্বা সারি। কেউ কেউ সারিতে আছেন দীর্ঘক্ষণ। কিন্তু কাউন্টারে পৌঁছে শুনলেন, তাঁর গন্তব্যের টিকিট নেই। স্বাভাবিক সময়ে যাত্রার জন্য টিকিট না পেয়ে ফিরতে হচ্ছে অনেককে। রোববার থেকে ঈদ উপলক্ষে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হলে টিকিটের জন্য হাহাকার আরও বাড়বে বলে জানালেন যাত্রীরা।
কাউন্টার থেকে ‘টিকিট নেই’ বলা হলেও গতকাল কয়েকজন দালালের হাতে টিকিট দেখা গেছে। টিকিটপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশিতে তারা টিকিট বিক্রি করছে। মেরাদিয়া থেকে আসা পোশাককর্মী খলিল টাঙ্গাইলে যাবেন। তিনি জানান, তাঁর মা অসুস্থ। বাড়ি থেকে খবর এসেছে। তাই দালালের সঙ্গে দর-কষাকষি করে ৮০ টাকা দিয়ে শনিবারের একতার একটি টিকিট কিনেছেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাহসিন জানান, কাউন্টার থেকে ব্রহ্মপুত্রের টিকিট পাননি। কিন্তু দালাল ১০০ টাকা বেশি নিয়ে টিকিটের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য স্টেশনমাস্টার কামরুজ্জামানকে পাওয়া যায়নি। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও তাঁর দেখা মেলেনি।
কবে কোন দিনের টিকিট বিক্রি হবে: রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে রোববার থেকে। সেদিন বিক্রি হবে ২৬ আগস্টের টিকিট। ২২ তারিখ বিক্রি হবে ২৭ আগস্টের টিকিট। ২৩ তারিখ বিক্রি হবে ২৮ আগস্টের টিকিট। ২৪ তারিখ বিক্রি হবে ২৯ আগস্টের টিকিট। ২৫ তারিখ বিক্রি হবে ৩০ আগস্টের টিকিট। একসঙ্গে চারটির বেশি টিকিট কেনা যাবে না।

ভারত দুর্নীতিমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবেঃ হাজারে

য়াদিল্লির রামলীলা ময়দানে বানানো মঞ্চের পেছনে টাঙানো ভারতের স্বাধীনতাসংগ্রামের নায়ক মহাত্মা গান্ধীর বিশাল এক ছবি। মঞ্চে এসে বসলেন সমাজকর্মী আন্না হাজারে। সমবেত জনতা স্লোগান তুলল, ‘ভারত মাতা কী জয়’, ‘ভারত মাতা কী জয়’। আন্না হাজারে ঘোষণা দিলেন, ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতাসংগ্রাম শুরু হলো।’ এর পরই নামে প্রবল বৃষ্টি।
দুর্নীতি প্রতিরোধে শক্তিশালী লোকপালের দাবিতে রামলীলা ময়দানে গতকাল শুক্রবার এভাবেই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে সমাজকর্মী আন্না হাজারের ১৫ দিনের অনশন।

এবারের অনশন কর্মসূচির মাধ্যমে শুরু হওয়া দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনকে তিনি আখ্যায়িত করছেন ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতাসংগ্রাম’ বলে। আমরণ অনশন শুরু করেছিলেন গত মঙ্গলবার থেকেই। সেদিনই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। অনশনের সময়সীমা নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে দর-কষাকষির পর সমঝোতা হলে মুক্তি দেওয়া হয় আন্নাকে।
রামলীলা ময়দানে কয়েক হাজার সমর্থকের উদ্দেশে ৭৪ বছর বয়সী আন্না বলেন, ‘গত কয়েক দিনে আমার ওজন তিন কেজি কমেছে। কিন্তু সেটা কিছু নয়, আপনারাই আমার শক্তি। রাজনৈতিক নেতাদের লুটপাট বন্ধ করতেই হবে।’ একটি শক্তিশালী লোকপাল পদ প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত রামলীলা ময়দান থেকে নড়বেন না বলে ঘোষণা দেন আন্না হাজারে। অনশনের চার দিন চললেও গতকাল তাঁকে মোটামুটি সুস্থই দেখা গেছে।
গত মঙ্গলবার থেকে জেপি পার্কে আন্না হাজারের অনশন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সমস্যার কথা বলে এক দিন আগে অনশনের অনুমতি বাতিল করে পুলিশ। এর পরও মঙ্গলবার অনশন করতে গেলে সহস্রাধিক সমর্থকসহ আন্নাকে আটক করা হয়। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় তিহার কারাগারে। রাতে ছেড়ে দেওয়া হলেও তিনি দাবি তোলেন, অনশনের অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত কারাগার ছাড়বেন না। গত বৃহস্পতিবার আন্নার সঙ্গে সরকারের সমঝোতা হয়। রামলীলা ময়দানে তাঁকে ১৫ দিন অনশনের অনুমতি দেয় কর্তৃপক্ষ।
গতকাল সকালেই তিহার কারাগার থেকে বের হন আন্না হাজারে। এ সময় দেশের পতাকা আন্দোলিত করে তাঁকে স্বাগত জানান হাজার হাজার সমর্থক। তাঁদের উদ্দেশে আন্না হাজারে বলেন, ‘গত ৬৪ বছরেও আমরা পূর্ণ স্বাধীনতা পাইনি। ১৬ আগস্ট থেকে দ্বিতীয় স্বাধীনতাসংগ্রাম শুরু হয়েছে। বিপ্লব শুরু হয়েছে। আমি বেঁচে থাকি আর না থাকি, আন্দোলনের এ অগ্নিশিখা নিভতে দেবেন না। ভারত দুর্নীতিমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এ আগুন জ্বলবে।’
এরপর রামলীলা ময়দানের উদ্দেশে একটি খোলা ট্রাকে উঠে পড়েন আন্না। তাঁর সঙ্গ নেন দুই-তিন হাজার সমর্থক। তবে রামলীলা ময়দানে যাওয়ার আগে দুই জায়গায় থামেন তিনি। দুর্নীতি প্রতিরোধে লোকপাল নিয়োগের জন্য বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন সেনাবাহিনীর সাবেক ড্রাইভার সমাজসেবক আন্না হাজারে। এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি, টাইমস অব ইন্ডিয়া।

আন্না হাজারের আন্দোলন নিয়ে বিভক্ত ভারতের সুশীল সমাজ

দুর্নীতি প্রতিরোধে একটি শক্তিশালী লোকপাল গঠনের দাবিতে আন্দোলন করছেন ভারতের প্রখ্যাত সমাজকর্মী আন্না হাজারে। এই আন্দোলনের পেছনে সাধারণ মানুষের সমর্থন থাকলেও সুশীল সমাজ এ নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বলেই মনে হচ্ছে।

প্রখ্যাত মানবাধিকারকর্মী স্বামী অগ্নিবেশ বলেছেন, আন্না হাজারের আন্দোলনের পেছনে সর্বস্তরের মানুষের সমর্থন আছে। আর অন্যদিকে আরেক সমাজকর্মী ও নিবন্ধকার শবনম হাশমি মনে করেন, হাজারে কট্টরপন্থা অবলম্বন করছেন এবং ডানপন্থী গ্রুপগুলো তাঁকে সমর্থন দিচ্ছে।
গত কয়েক মাসে দেখা গেছে, লেখক, শিল্পী-সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীদের একটি অংশ হাজারের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। এতে করে আন্দোলন জোরদার হয়েছে, কিন্তু একই সঙ্গে এর সীমাবদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
গত জুনে মৃত্যুর এক মাস আগেও শিল্পী মকবুল ফিদা হুসেন কার্টুন এঁকে আন্না হাজারের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। ফিদা হুসেন বলেছিলেন, ‘দুর্নীতিবিরোধী এই আন্দোলনকারী আরেকটি নতুন বিপ্লবের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ভারত থেকে দুর্নীতি নির্মূলের দায়িত্ব নিয়েছে নতুন প্রজন্ম। এটা দেখে আমি রোমাঞ্চিত এবং আমি তাদের সাফল্য কামনা করি।’
জনপ্রিয় কল্পকাহিনী লেখক চেতন ভগতও হাজারের আন্দোলনের পক্ষে প্রকাশ্যে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রতিবাদ এড়িয়ে চলা একটি রসিকতা ছাড়া কিছু নয়। আমি তাঁর (হাজারে) পক্ষে কথা বলে যাব।’
হাজারের বিপক্ষে সরকারের অবস্থানের সমালোচনা করেছেন ওডিশা রাজ্যের বিখ্যাত বালু ভাস্কর সুদর্শন পট্টনায়েক। গত সোমবার তিনি বলেছেন, ‘দুর্নীতি আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে মাকড়সার জালের মতো ঘিরে ফেলেছে এবং আমাদের তা ছিন্ন করতেই হবে।’ পুরিতে ভারতের জাতীয় তিন রঙের জমিনে হাজারের মুখমণ্ডলের একটি বালুর ভাস্কর্য তিনি হাজারেকে উৎসর্গ করেন।
তবে হাজারের বিপক্ষেও কথা বলছেন অনেক শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী। প্রখ্যাত লেখিকা অরুন্ধতী রায় বলেছেন, ‘দুর্নীতির জন্য যে ব্যবস্থা দায়ী তা পরিবর্তনে হাজারের এই আন্দোলনে কোনো সুনির্দিষ্ট আহ্বান নেই। আমার মতে, দুর্নীতি বন্ধের জন্য প্রথমেই সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সম্পদ বেসরকারীকরণ বন্ধ করতে হবে। এটা হলে দুর্নীতি এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে। আর তখন লোকপালও কার্যকর হবে।’
প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী মল্লিকা সারাভাই একসময় আন্না হাজারের সমর্থক ছিলেন। কিন্তু হাজারে পল্লি উন্নয়নে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করায় সারাভাই তাঁর অবস্থান পরিবর্তন করেছেন।
হাজারের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে শুধু সারাভাই নন, অন্য বুদ্ধিজীবীদেরও সংশয় রয়েছে। শিল্পী-সমাজকর্মী রাম রহমানের মতে, ‘হাজারের আন্দোলন আসলে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের উদ্যোগ। দুর্নীতি একটি জটিল বিষয়। কিন্তু বিপ্লব ভিন্ন জিনিস। এসব নিয়ে মানুষের পরিষ্কার ধারণা নেই।’