Thursday, December 16, 2010

হা-মীম গ্রুপের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডঃ নেভানোর ব্যবস্থা ছিল, কাজে লাগেনি

শুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকায় হা-মীম গ্রুপের পোশাক কারখানায় শর্টসার্কিট থেকে আগুন লেগেছে বলে মনে করছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ। তবে হা-মীম গ্রুপের পক্ষ থেকে এ ধারণা নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। এদিকে আগুন নেভানোর মতো যন্ত্রপাতি ওই ভবনে থাকলেও তা কাজে লাগেনি। শ্রমিকেরা জানান, তাঁদের এ ব্যাপারে কোনো প্রশিক্ষণ ছিল না।
অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলো অক্ষতই আছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে শর্টসার্কিট থেকে আগুন লেগেছে। তদন্ত করে বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানা যাবে।
জানতে চাইলে হা-মীম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন জানান, শ্রমিকদের মধ্যাহ্নবিরতির সময় সব তলার মেইন সুইচ বন্ধ করে দেওয়া হয়। মঙ্গলবারও দশম তলায় মধ্যাহ্নবিরতির সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। এ কারণে শর্টসার্কিটের আশঙ্কা কম। নাশকতার আশঙ্কা করা হচ্ছে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্তে সব তথ্য বের হয়ে আসবে।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, নাশকতার অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ থানায় একটি জিডি করেছে।
গত মঙ্গলবার দুপুরে আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকায় হা-মীম গ্রুপের পোশাক কারখানার ১০ ও ১১ তলায় আগুন লেগে ২৬ জনের মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে ২৩ জনের নাম-পরিচয় মিলেছে। তিনজনের ব্যাপারে কেউ কোনো কিছু জানাতে পারছেন না। এ ঘটনায় আহত হন দুই শতাধিক শ্রমিক। গতকাল অনেকে অভিযোগ করেন, তাঁরা স্বজনদের কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না।
আগুনে পুড়ে যাওয়া ১০ ও ১১ তলা পুরো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আগুনে ছাদের পলেস্তারা খসে রড বেরিয়ে গেছে, ফাটল ধরেছে বিভিন্ন জায়গায়। দশম তলার এক পাশে ফিনিশিং আর অন্য পাশে প্যাকেজিং বিভাগ। প্যাকেজিং বিভাগের এক পাশজুড়ে ছিল স্তূপ করে রাখা পোশাক। এই কাপড়গুলো থেকেই আগুনের সূত্রপাত বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি।
মঙ্গলবার দুপুরে দশম তলায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা হেলালউদ্দীন জানান, প্যাকেজিং বিভাগের এক কোণ থেকে (ভবনের পশ্চিম-দক্ষিণ) আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুন খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রচণ্ড কালো ধোঁয়া বের হতে থাকে। তবে তখন দশম তলায় খুব বেশি শ্রমিক ছিলেন না। তাঁরা সবাই মধ্যাহ্নবিরতিতে বাইরে অথবা ক্যানটিনে ছিলেন।
শ্রমিকেরা জানান, প্রায় ছয় মাস আগে হা-মীম গ্রুপ ১১ তলার টিনের স্থাপনাটি সরিয়ে নেওয়ার কথা তাদের জানিয়েছিল। কিন্তু সরানো হয়নি। ছাদটা ফাঁকা থাকলে অনেক মানুষকে সেখান থেকে হেলিকপ্টারে করে সরিয়ে নেওয়া যেত। এ ছাড়া অগ্নিনির্বাপণের জন্য হাইড্রেন্ট বা স্প্রিংকলারও ছিল না। সহনীয় মাত্রার চেয়ে তাপমাত্রা বেশি হলে স্প্রিংকলার থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি বের হয়। কারখানাটির ব্যবস্থাপনা বলতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র আর কিছু হোস পাইপ। সেগুলোও ঠিকমতো কাজ করেনি।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আরও জানান, কারখানার দশম তলার ছাদে চুইয়ে চুইয়ে পানি পড়ছে, পুরো ভবনটি না হলেও কয়েকটি তলা বেশ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে কারখানার উপপরিচালক দেলোয়ার হোসেন জানান, অগ্নিনির্বাপণের জন্য হাইড্রেন্ট আছে, পর্যাপ্তসংখ্যক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রও আছে। দরজায় তালা দেওয়ার অভিযোগও অস্বীকার করেন তিনি।
কর্তৃপক্ষের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী গতকাল সকালে শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিতে আসেন। নিচের তলাগুলোতে তাঁরা মেশিনে বসলেও কাজ করেননি। ‘সহকর্মীদের লাশ ফেরত চাই’ স্লোগান তুলে তাঁরা বিক্ষোভ করে কারখানা থেকে বের হয়ে আসেন। তাঁরা কারখানা প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিলও করেন।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নিটিং অপারেটর মিজানুর রহমান জানান, আগুন লাগার সময় কারখানায় অনেক লোক ছিল। তাদের অনেককেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নিরাপত্তাকর্মীরা পেছনের দরজাগুলোতে তালা মেরে দেন। আর সামনের দিকে আগুন জ্বলছিল। ফলে শ্রমিকেরা ১১ তলা থেকে দড়ি অথবা কাপড় দিয়ে ঝুলে ঝুলে নামতে বাধ্য হয়েছেন।
স্বজনের সঙ্গে শেষ কথা: নিখোঁজ স্বজন, বন্ধু আর সহকর্মীদের খুঁজতে গতকাল সকাল থেকে কারখানার প্রধান ফটকে ভিড় জমায় অনেক মানুষ। হাসপাতাল, মর্গে ঘুরে ঘুরে আর পত্রিকার পাতায় প্রিয়জনকে খুঁজে না পেয়ে তারা ভিড় জমায় কারখানার গেটে। এ রকমই একজন রঞ্জু মিয়া। তিনি খুঁজতে এসেছেন স্ত্রী শাহনাজ বেগম আর ভাতিজি শাহনাজকে। বোন শাহীন আর ভগ্নিপতি ওমর ফারুকের খোঁজে এসেছেন নাজমা। চাচাতো ভাই নজরুল ইসলামের খোঁজে এসেছেন জাহাঙ্গীর আলম। মেয়ে রাজিয়ার খোঁজে এসেছেন সুফিয়া বেগম। ছেলে হালিমকে খুঁজতে এসেছিলেন বাবা সাত্তার।
ধ্বংসস্তূপ থেকে: ভবনের ১১ তলার ক্যানটিনের পাশেই ভবনটির সবচেয়ে সুসজ্জিত প্রদর্শনী কক্ষ (ডিজাইন স্টুডিও)। এখানেই বিদেশি ক্রেতাদের বসানো হতো ও নমুনা দেখানো হতো। পুরো প্রদর্শনী কক্ষটি পুড়ে কালো হয়ে রয়েছে। কোনো কিছুই আস্ত নেই। তাপে কুঁকড়ে গেছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, ফ্রিজ আর মাইক্রোওয়েভ ওভেন। আধা গলে যাওয়া মূর্তিগুলো (ম্যানিকুইন) দাঁড়িয়ে রয়েছে বিধ্বস্ত অবস্থায়। কক্ষটির পাশেই নমুনা হিসেবে রাখা কাপড়ের স্তূপ পুড়ে কয়লা হয়ে আছে।
তল্লাশি: ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। তবে রাত নয়টার দিকে আগুন একদম নিভে যায়। রাত ১১টার দিকে ফায়ার সার্ভিস ও রেড ক্রিসেন্টের কর্মীরা পুড়ে যাওয়া তলাগুলোতে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও আর কোনো লাশ পাননি। রাত দেড়টার দিকে অভিযান স্থগিত করা হয়। সকালে আরেক দফা তল্লাশি চালায় ফায়ার সার্ভিস।
২০টি লাশ হস্তান্তর: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে কাল ২০টি লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঢাকার জেলা প্রশাসন লাশ হস্তান্তর করে।
নিহতরা হলেন দিনাজপুরের মোজাম্মেল হোসেন (৫২), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মারুফ (২২), বরগুনার তানিয়া সুলতানা (১৮), জামালপুরের অঞ্জনা (২৮), দিনাজপুরের ফরিদুল (৩৫), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হালিমা (২৫), বগুড়ার রুহুল আমিন (২৯), মাদারীপুরের রাসেল (২৫), ময়মনসিংহের বাবুল (২৩), মানিকগঞ্জের হিমেল (২৮), গাইবান্ধার রেজাউল মণ্ডল (২২), বরিশালের রুনা (৩০), ফরিদপুরের দেলোয়ার চৌধুরী (৩০), ফরিদপুরের মানসুরা (৩০), বাগেরহাটের মামুম খান (৩৪), সিরাজগঞ্জের সেলিম রেজা (২০), বগুড়ার শাহীনুর রহমান (৩৮), যশোরের ইমরান (২৮), মানিকগঞ্জের চান মিয়া (২৫) ও রংপুরের সুজন (২২)। গতকাল অজ্ঞাত দুজন মারা যান।
==========================
গোলাম মর্তুজা ও অরূপ রায়, আশুলিয়া থেকে | তারিখ: ১৬-১২-২০১০

ট্রেন দুর্ঘটনাঃ চালকের চা পান তত্ত্ব নিয়ে প্রশ্ন by সুমন মোল্লা

রসিংদীতে দুর্ঘটনাকবলিত চট্টলা ট্রেনটি ভৈরবে যাত্রাবিরতি করেছিল মাত্র চার মিনিট। একটি ইঞ্জিন ও ১৭টি বগি নিয়ে ট্রেনটি ভৈরবের আগের স্টেশন আশুগঞ্জ ছেড়ে আসে বিকেল তিনটা ৫৮ মিনিটে। ভৈরব স্টেশনে যাত্রাবিরতি করে চারটা আট মিনিটে। মাত্র চার মিনিট অবস্থান করে চারটা ১২ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায় ট্রেনটি। ভৈরবের পরের স্টেশন দৌলতকান্দি অতিক্রম করে চারটা ২০ মিনিটে। ঢাকাগামী চট্টলা ট্রেনটির এই সময়সূচি গত বছরের ডিসেম্বরের। ভৈরব রেলস্টেশনের তথ্যকেন্দ্র থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

রেলওয়ের দুটি তদন্ত প্রতিবেদনে ভৈরব স্টেশনে চা পান করে চালকের অচেতন হয়ে পড়াকে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দুর্ঘটনার এ কারণ জানার পর রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেই এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
ভৈরবের স্টেশন মাস্টার আবদুল মোতালিব প্রথম আলোকে বলেন, ভৈরব ছেড়ে যাওয়ার পর বিমানবন্দর ছাড়া আর কোনো স্টেশনে যাত্রাবিরতি নেই চট্টলার। ট্রেনটি ভৈরব স্টেশনে আসার নির্ধারিত সময় বেলা দুইটা এবং যাত্রাবিরতির সময় তিন মিনিট। দুর্ঘটনার দিন ট্রেনটি দুই ঘণ্টা আট মিনিট বিলম্বে ভৈরব স্টেশনে আসে এবং চার মিনিট যাত্রাবিরতি করে।
ভৈরব স্টেশনের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্ল্যাটফরম ছাড়া ভৈরব স্টেশনের আর কোথাও চায়ের দোকান নেই। তা ছাড়া ফেরি করেও এই স্টেশনে চা বিক্রি করতে দেওয়া হয় না। ট্রেনটি থামার পর ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি প্রধান প্ল্যাটফরমের বাইরে চলে যায়। অর্থাৎ ইঞ্জিনটি চলে যায় চায়ের দোকান থেকে তিন থেকে চার শ ফুট সামনে। দ্রুতগতিতে হেঁটে এলেও আসা-যাওয়ায় তিন মিনিট লাগে। আর এক কাপ চা তৈরি করতে অন্তত দেড় থেকে দুই মিনিট সময় লাগে। এই সময়ের মধ্যে তিন থেকে চার শ ফুট পিছিয়ে এসে চা কিনে ফ্লাস্কে ভরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
কর্মকর্তাদের অনেকে স্মরণ করিয়ে দেন যে ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম মেইল ট্রেনের চালক সংকেত অমান্য করে গাজীপুরের পুবাইল স্টেশনের কাছে চলে যায়। অন্য একটি ট্রেনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হওয়ার আগমুহূর্তে পুলিশ ও পরিচালক চেইন টেনে ট্রেনটি থামান। ওই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনে একই কারণ উল্লেখ করা হয়েছিল। ওই ঘটনায় দুজন চায়ের দোকানিকে জেল খাটতে হয়। পরে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
ভৈরব রেলওয়ে তথ্যকেন্দ্র সূত্র জানায়, ভৈরব থেকে নরসিংদী স্টেশনের দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। আর ভৈরব থেকে নরসিংদীর আমিরগঞ্জ স্টেশনের দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার।
তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, চা পানের পর দৌলতকান্দি, শ্রীনিধী, মেথিকান্দা, হাঁটুভাঙ্গা, খানাবাড়ী ও আমিরগঞ্জ স্টেশন পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার পথ নিয়মের মধ্যে অতিক্রম করে ট্রেনটি। আমিরগঞ্জ স্টেশন ছাড়ার পর পাঁচ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে গিয়ে অচেতন হয়ে পড়েন চালক।
গতকাল সকালে ভৈরব স্টেশনে গিয়ে ২ নম্বর প্ল্যাটফরমে ছয়টি চায়ের দোকান দেখা যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে কাছের চায়ের দোকানের কর্মচারী রবি মিয়া জানান, বুধবার তাঁরা ট্রেনের কোনো চালকের কাছে চা বিক্রি করেননি। পাশের চা-দোকানি জামাল মিয়া বলেন, পানি ফুটানো থাকলে এক কাপ চা তৈরি করতে দুই মিনিট সময় লাগে। চা-দোকানি মোস্তফা মিয়া বলেন, তাঁদের এখানে কাউকে ফেরি করে চা বিক্রি করতে দেওয়া হয় না।
বিভাগীয় পর্যায়ের তদন্ত কমিটির প্রধান ঢাকা বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সহকারী চালকের দেওয়া বক্তেব্যের আলোকে আমাদের প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।’
উচ্চপর্যায়ের কমিটি-প্রধান রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী ইউসুফ আলী মৃধা গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তদন্তে প্রমাণ মিলেছে, চালক সংকেত অমান্য করে পাঁচ হাজার ৯৩২ ফুট সামনে এগিয়ে যায়। কোনো কারণে অচেতন না হলে এমনটা করা সম্ভব নয়।
মাত্র চার মিনিটে ট্রেন থেকে নেমে চা কিনে আবার ট্রেন চালিয়ে নেওয়া কীভাবে সম্ভব? এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, অনেক সময় চলন্ত ট্রেন থেকে সহকারী চালক প্ল্যাটফরমে নেমে যান। এর চেয়ে বেশি মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
এদিকে তদন্ত প্রতিবেদনে ভৈরব স্টেশন থেকে সব ধরনের চায়ের দোকান তুলে দেওয়ার সুপারিশ করার পর গতকাল প্ল্যাটফরম পরিদর্শনে আসেন ঢাকার বিভাগীয় সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আবু সায়িদ এবং চট্টগ্রাম নিরাপত্তা পুলিশের সহকারী কমান্ডার নাজমুল নেওয়াজ। তাঁরা এসে অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করেন এবং বৈধ দোকানগুলো নিয়ম অনুযায়ী চলছে কি না, খতিয়ে দেখেন।
প্রসঙ্গত, ৮ ডিসেম্বর বিকেলে নরসিংদীতে চট্টগ্রামগামী আন্তনগর মহানগর গোধূলী ও ঢাকাগামী চট্টলা ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক চালকসহ অন্তত ১৩ জন নিহত হন। দুর্ঘটনায় চট্টলা ট্রেনের একটি বগি মহানগর ট্রেনের ইঞ্জিনের ওপর উঠে যায়। এতে দুটি ট্রেনের ইঞ্জিন দুমড়েমুচড়ে যায় এবং তিনটি বগি সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

হা-মীমের কারখানায় আগুন নিয়ে রহস্য ২১ লাশ হস্তান্তর (কালের কন্ঠের সৌজন্যে)

শুলিয়ায় হা-মীম গ্রুপের পোশাক কারখানায় আগুন লাগার ঘটনায় গতকাল বুধবার পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ বের করা যায়নি। দ্যাটস ইট স্পোর্টসওয়্যার লিমিটেডের ১১ তলা ভবনে মঙ্গলবারের ওই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে রহস্যময়তা। দুর্ঘটনার পরপর কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক ধারণা থেকে জানিয়েছিল, শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। কিন্তু গতকাল তাদের এক প্রতিনিধি বলেছেন, দুপুরে আগুন লাগার সময় ১০ তলায় বিদ্যুৎ ছিল না।


আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়া নিয়ে বিস্মিত মালিক-কর্তৃপক্ষ। তাঁরা এটিকে নিছক দুর্ঘটনা বলে মনে করছেন না। তবে নাশকতা বলেও সরাসরি দাবি করেননি তাঁদের কেউ। কর্তৃপক্ষ কারখানায় দুদিনের ছুটি ঘোষণা করেছে। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন ও দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে গতকাল কারখানার প্রধান ফটক ও ভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। পরে মালিকপক্ষের আশ্বাসের ভিত্তিতে তাঁরা শান্ত হন।
হা-মীম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক কর্নেল (অব.) দেলোয়ার হোসেন জানান, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ২১টি লাশ পাঠানো হয়েছিল। গতকাল সব লাশ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
অগি্নকাণ্ডের ফলে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করা যায়নি। তবে কারখানা ভবনের দশম তলার ফিনিশিং সেকশনের গোডাউন ও কার্টনে ভরা সব পোশাক পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনের তাপে গলে গেছে মেশিনপত্র। পুড়ে গেছে একাদশ তলাও। ফাটল দেখা দিয়েছে ভবনের দেয়ালের কয়েকটি অংশে।
আগুন লাগা নিয়ে নানা প্রশ্নের বিষয়ে কর্নেল (অব.) দেলোয়ার হোসেন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'দুর্ঘটনার সময় দশম তলায় বিদ্যুৎ থাকার কথা নয়। আগুন কিভাবে লাগল বা দ্রুত ছড়াল তা নিয়ে তদন্ত চলছে। আমি এখনই নাশকতা বলে মন্তব্য করতে পারি না। এখানে কিছু রহস্য আছে।' শ্রমিকদের অভিযোগ, আগুন লাগলেও সঙ্গে সঙ্গে ইমারজেন্সি বেল বাজেনি। তাই আগুন লাগার ঘটনা দ্রুত টের পাওয়া যায়নি। একাদশ তলার ক্যান্টিন থেকে নিচে নামার সময় একদিকে আগুন, অন্যদিকে কলাপসিবল গেট বন্ধ থাকার কারণে আটকা পড়তে হয় শ্রমিকদের।
কেউ নিশ্চিত নয় : অগি্নকাণ্ডের পর সরকার ও বিজিএমইএর পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটি কাজ শুরু করেছে। আগুনের সূত্রপাতের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস গতকাল পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারেনি। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে গতকাল পরিচালক (অপারেশন) ভরত চন্দ্রকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করেছিলাম বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটই কারণ। তবে এ বিষয়ে আমরা নিশ্চিত নই। তদন্ত কমিটি কাজ করছে। আমরা আমাদের মতো তদন্ত শুরু করেছি।' ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে বলে জানান মহাপরিচালক।
ফায়ার সার্ভিসের ডিইপিজেড স্টেশনের কর্মীরা গতকাল দুপুরেও কারখানার দশম তলায় অনুসন্ধান চালান। স্টেশন অফিসার অপূর্ব বল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এখন ডাম্পিং ডাউন চলছে। ভেতরে আগুন জ্বলছে কি না, লাশ আছে কি না তা দেখা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষকে পুড়ে যাওয়া কাপড় সরাতে বলা হয়েছে। তারা কাপড় সরালে কাজ শেষ হবে।'
দুর্ঘটনার কারণ ও সিঁড়িপথের কলাপসিবল গেট বন্ধ থাকা প্রসঙ্গে অপূর্ব বল বলেন, 'দশম তলার ফিনিশিং গোডাউনে কাপড়ের স্টকের পাশে প্যানেল বোর্ড থেকে আগুন লেগেছে বলে কয়েকজন কর্মী জানিয়েছে। এ বিষয়ে বিভাগীয় তদন্ত চলছে। পশ্চিম পাশের একটি গেটে আমরা ভাঙা তালা ঝুলতে দেখেছি।'
বেল বাজে দেরিতে : কারখানার একাদশ তলার স্যাম্পল সেকশনে কাজ করেন আবদুল হামিদ মিলন। তিনি কাপড় বেয়ে নামার সময় তৃতীয় তলা থেকে পড়ে আহত হন। মিলন এখন আশুলিয়ার ডক্টরস হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তিনি জানান, দুপুরে ক্যান্টিনে খাওয়ার সময় হঠাৎ সিকিউরিটি গার্ড গিয়ে বলেন_নিচে নেমে যান, আগুন লেগেছে। ওই সময় কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় চারপাশ। এর অন্তত পাঁচ মিনিট পর বেল বাজার শব্দ শুনতে পান মিলন। খাবার ফেলে উঠে তখন আর নামা যায়নি। আশপাশে ৫০-৬০ জনকে আটকা পড়তে দেখেন তিনি। মিলনের দাবি, দড়ি বেয়ে নামতে গিয়ে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন রাসেল, শাহ আলম, ইকরাম ও সেলিম। তাঁরা একসঙ্গে একাদশ তলায় কাজ করতেন।
একাদশ তলায় খাবার খেতে যাওয়া মিলনের সহকর্মী রাজু এবং ষষ্ঠ তলার সুইপিং সেকশনের বাছেদ ও আরিফুল ইসলামও জানান, তাঁরা আগুনের বিষয়টি প্রথমে টের পাননি। আগুন-আগুন বলে চিৎকার শোনার অন্তত পাঁচ থেকে দশ মিনিট পর তাঁরা বেল শুনতে পান।
নিজস্ব পানি সরবরাহ ছিল না : একাদশ তলার স্যাম্পল সেকশনের ইনচার্জ এম এ রজব জানান, আগুন লাগার পর তিনি অন্য কর্মীদের আগে নামতে বলে পরে নামেন। তখন আগুন নেভাতে গিয়ে তিনি পানির পাইপলাইনে পানি পাননি। তাই প্রাথমিক অবস্থায় কর্মীরা চেষ্টা করলেও আগুন নেভাতে পারেননি বলে দাবি করেন তিনি।
কালো ধোঁয়াই দায়ী_কর্তৃপক্ষ : কালো ধোঁয়া আর হঠাৎ আগুনের কারণে সবাই নিচে লাফিয়ে পড়েন বলে দাবি করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। উপব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, 'কালো ধোঁয়া আর হঠাৎ আগুন দেখে কর্মীরা লাফিয়ে পড়েন। গেট খোলা ছিল।' ইমারজেন্সি বেল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমরা দুই পদ্ধতিতেই জরুরি বেল বাজাই। বিদ্যুৎ না থাকলে প্রথমে মুখে জানানোর পর হাতের সাহায্যে বেল বাজানো হয়।'
আর লাশ মেলেনি, ২১ লাশ হস্তান্তর : কারখানায় অগি্নকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল আর কোনো লাশ উদ্ধার হয়নি। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আহতদের মধ্যে কারো মৃত্যুর খবরও পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যমতে নিহতের সংখ্যা ২৮ হলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ ২১ জন মারা গেছেন বলে দাবি করেছে। কোনো কোনো গণমাধ্যমে অসমর্থিত সূত্রের বরাত দিয়ে নিহতের সংখ্যা আরো বেশি বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। বিভিন্ন হাসপাতালে এখনো ৩৬ জন চিকিৎসাধীন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। গতকাল বিকেল পর্যন্ত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গ থেকে ২১ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বাশার মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'দুপুর আড়াইটার মধ্যেই ২১ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।'
গতকালও বিভিন্ন হাসপাতালে অন্তত ৩৬ জন ভর্তি ছিলেন। হাসপাতাল ঘুরে জানা গেছে, সিনসিন হাসপাতালে ১২ জন, ডক্টরস হাসপাতালে ১০ জন, সাভার সিএমএইচ হাসপাতালে ছয়জন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনজন, পঙ্গু হাসপাতালে দুজন, সাভারের এনাম মেডিক্যাল হাসপাতালে দুজন আহত ব্যক্তি ভর্তি আছেন। আহতদের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগকেন্দ্র স্থাপন : গতকাল দুপুরে কারখানা ভবনের নিচতলায় অভ্যর্থনা কক্ষে অভিযোগকেন্দ্র খুলেছে কর্তৃপক্ষ। দুপুর ২টা পর্যন্ত নিখোঁজ বা আহতের কোনো খবর ছিল না অভিযোগকেন্দ্রে।
ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি : হা-মীম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক লে. কর্নেল (অব.) দেলোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে জানান, 'বিশাল কারখানা ভবনের দুটি ফ্লোর পুরো ধ্বংস হয়ে গেছে। সম্পূর্ণ প্রস্তুত পোশাকসহ অসংখ্য কার্টন পুড়ে গেছে। কারখানার মেশিনগুলো গলে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এত ব্যাপক যে তা এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'গত বছরের অগি্নকাণ্ডের ক্ষতির চেয়ে এবারের ক্ষতি অনেক বেশি।'
বিজিএমইএ সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী গতকাল সন্ধ্যায় ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কিছু বলতে না পারলেও এর ব্যাপকতা সম্পর্কে ধারণা দিয়ে বলেন, কারখানার দুটি ফ্লোর পুরো 'নাই' হয়ে গেছে। দশম তলায় ফিনিশিং সেকশনে হাজার হাজার কার্টন তৈরি পোশাক রপ্তানির জন্য প্রস্তুত ছিল। আরো বিপুল পরিমাণ পোশাক ইস্ত্রি করার পর কার্টনে ভরার জন্য রাখা ছিল। ফিনিশিং গোডাউন পুরোপুরি ছাই হয়ে গেছে। তিনি বলেন, 'হা-মীম গ্রুপ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের নামকরা প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বড় বড় প্রতিষ্ঠান তাদের তৈরি পোশাকের ক্রেতা। পুড়ে যাওয়া পোশাক ওই সব প্রতিষ্ঠানের অর্ডার করা। এখন গ্রুপটি এ বিপুল পরিমাণ পোশাক কোথা থেকে সংগ্রহ করে বিদেশি ক্রেতাদের দেবে?'
গতকাল আশুলিয়ার নরসিংহপুরের কারখানাটি সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গতবারের আগুনে পোড়া তিনতলা একটি কারখানা ভবন পরিত্যক্তের মতো পড়ে আছে। বিশাল আয়তনের টিনশেড সোয়েটার ফ্যাক্টরিগুলোর পোড়া মেশিনের স্তূপ পড়ে আছে কারখানা প্রাঙ্গণে। প্রায় দেড় বছর পরও ক্ষতচিহ্ন দেখে স্পষ্ট হয়ে ওঠে তখনকার বিপুল ক্ষতির চিত্র।
=========================

ইরানে আত্মঘাতী বোমায় ৩৯ জন নিহত

রানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর শাবাহারের একটি মসজিদের সামনে গতকাল বুধবার আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ৩৯ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। শিয়া মুসলমানদের শোকাবহ আশুরা পালনের এক দিন আগে এ হামলা হলো। ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনা জানায়, সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশের শাবাহার শহরের ইমাম হোসেন মসজিদের বাইরে গতকাল মুসলি্লরা আশুরার একটি মিছিলে অংশ নেওয়ার সময় আত্মঘাতী ওই হামলা ঘটে। সুনি্ন অধ্যুষিত ইরানের এ প্রদেশটি সহিংসপ্রবণ। এখানে শিয়া জনগোষ্ঠী বৈষম্যের শিকার বলে অভিযোগ রয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, আশুরার মিছিলে অংশ নিতে যাওয়া মুসলি্লদের লক্ষ্য করে ওই হামলা চালানো হয়। হামলাটি কারা চালিয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে শাবাহার শহরের নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রধান আলি বাতেনির উদ্ধৃতি দিয়ে ইরনা জানিয়েছে, 'দুজন লোক হামলাটি চালিয়েছে। এদের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।'
সিস্তান-বেলুচিস্তানে জানদাল্লাহ নামের একটি জঙ্গিগোষ্ঠীর কার্যক্রম রয়েছে। অনেকে এ হামলার জন্য জানদাল্লাহর দিকে ইঙ্গিত করছেন। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র জানদাল্লাহকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাভুক্ত করেছে। তেহরান প্রায়ই অভিযোগ করে, যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে জঙ্গিদের মদদ দিচ্ছে।
প্রদেশটির রাজধানী জাহেদানে একটি শিয়া মসজিদে গত জুলাই মাসে এক আত্মঘাতী হামলায় ২৭ ব্যক্তি নিহত হয়। ২০০৯ সালের অক্টোবরে সিস্তান-বেলুচিস্তানের পিশিন অঞ্চলে এক আত্মঘাতী হামলায় ইরানের রেভুলিউশনারি গার্ডসের শীর্ষ কয়েক কমান্ডারসহ ৩১ জন নিহত হয়। জানদাল্লাহ এ হামলার দায় স্বীকার করেছিল।
পাকিস্তান সীমান্তের কাছে সিস্তান-বেলুচিস্তান ইরানের সবচেয়ে বঞ্চিত প্রদেশগুলোর একটি। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে প্রদেশটি আন্তর্জাতিক মাদক বাণিজ্যের প্রধান একটি রুটে পরিণত হয়েছে। সূত্র : বিবিসি।

জামিন পেয়েও জেলে অ্যাসাঞ্জ

জামিন পেলেও এখনো ছাড়া পাননি উইকিলিকসের প্রধান সম্পাদক জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। গত মঙ্গলবার তাঁকে লন্ডনের আদালতে হাজির করার পর জামিনের আদেশ হয়। তবে সুইডিশ আইনজীবীরা আদালতের এ আদেশের বিরুদ্ধে আবেদন করায় আবারও তাঁকে জেলে পাঠানো হয়। ব্রিটেনের আদালত তিন লাখ ৭৮ হাজার ডলার জামানতের শর্তে অ্যাসাঞ্জের জামিন মঞ্জুর করেন। এক সপ্তাহ আগে লন্ডনে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে সুইডেনে যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। অ্যাসাঞ্জ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

জামিন দেওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সুইডিশ আইনজীবীদের আবেদন বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে আদালত জানান। সিদ্ধান্ত পক্ষে গেলে ১১ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত তিনি মুক্ত থাকবেন। অ্যাসাঞ্জ তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, 'আমি সব বুঝতে পারছি।' তাঁর আইনজীবী মার্ক স্টেফেন আদালতের সিদ্ধান্তকে 'লোক দেখানো' অভিহিত করেন। তিনি জানান, অ্যাসাঞ্জের জামিনের প্রায় অর্ধেক অর্থ ইতিমধ্যেই জোগাড় হয়েছে। চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং মানবাধিকারকর্মী মাইকেল মুর অ্যাসাঞ্জের জামিনের জন্য ২০ হাজার ডলার দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।
গত মাসের শেষ দিকে উইকিলিকস যুক্তরাষ্ট্রের গোপন প্রায় আড়াই লাখ কূটনৈতিক নথি ফাঁস করে দিলে বিশ্বজুড়ে আলোচনার ঝড় ওঠে।
সূত্র : এএফপি।